LIVE
Loading latest headlines...

বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

পাথরকুচি পাতার গুনাগুণ

বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

মূত্রনালির যেকোনো সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগের পথ্য হিসেবে এই পাতার গুনাগুণ অতুলনীয়। এছাড়া ব্রণ, ক্ষত ও মাংসপেশী থেঁতলে গেলে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
পাথরকুচি পাতার গুনাগুণ-
সর্দি হলে: সর্দি বসে গেলে বা পুরাতন হয়ে গেলে পাথরকুচি পাতা ছেঁচে রস করে এবং তা গরম করে ২ চা চামচ পরিমাণ সকাল-বিকেল ২ বার পান করতে হবে।
রক্তপিত্তে: পিত্ত জনিত ব্যাথায় রক্ত ক্ষরণ হলে সকাল-বিকেল ২ বার পাথরকুচি পাতার রস পান করলে এ সমস্যা দূর হবে।
মেহ: ঠাণ্ডা-সর্দির কারণে অনেক সময় শরীরে ফোঁড়া হয় এবং ব্যাথা করে। একেই বলে মেহ। এমতাবস্থায় পাথরকুচি পাতার রস এক চা চামচ করে টানা এক সপ্তাহ পান করলে মেহ ভাল হবে।
কাটা-ছিড়া: অনেক সময় কেটে গেলে বা চাপ খেয়ে থেঁতলে গেলে টাটকা পাথরকুচি পাতা হালকা তাপে গরম করে কাটা-ছিড়ার স্থানে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
পেট ফাঁপা হলে: পেট ফেঁপে গেলে পেট ফুলে যায়, হালকা বায়ু, প্রস্রাব আটকে যায় এক্ষেত্রে আধা চামচ পাথরকুচি পাতার রস অল্প পরিমাণ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে গরম করে অল্প পানির সঙ্গে মিশিয়ে রোগীকে পান করাতে হবে। তাহলে এধরনের সমস্যা দূর হবে।
মৃগী রোগ হলে: মৃগী ব্যারাম উঠার সঙ্গে সঙ্গে ৮-১০ ফোটা পাথরকুচি পাতার রস রোগীর মুখে দিলে সাথে সাথে উপকার লক্ষ্য করা যায়।
শিশুদের পেট ব্যাথা হলে: অনেক সময় শিশুদের পেটে ব্যাথা করে। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস ৩০-৪০ ফোটা হালকা গরম করে শিশুর পেটে মালিশ করলে পেট ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে। তবে পেট ব্যাথা কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।
কিডনিতে পাথর হলে: তবে পাথরকুচির সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধী গুণাগুণ হল কিডনী এবং গলব্লাডারে পাথর হলে ২-৩ টি পাথরকুচি পাতা রস করে অথবা চিবিয়ে খেলে পাথর আস্তে আস্তে অপসারণ হয়ে যাবে।
জন্ডিস হলে: জন্ডিস বা লিভারের যে কোনো সমস্যায় পাথরকুচি পাতার রস খুব উপকারী।
উচ্চ রক্তচাপ: মূত্রথলির সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পাথরকুচি খুব উপকার করে।
পাইলস: শুধু পাইলস নয় অর্শ্ব-গেজ হলেও পাথরকুচি পাতা খুব উপকারী। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে অল্প পরিমাণ গোল মরিচ মিশিয়ে পান করতে হবে।
ডায়রিয়া, কলেরা বা আমাশয় হলে: এ ধরনের সমস্যায় ৩ মিলি. পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে সমপরিমাণ জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে একটানা কয়েকদিন খেলে উপকার হবে।
বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে: মৌমাছি, ভ্রমরা, বিচ্ছু ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কোনো পোকায় কামড়ালে পাথরকুচি পাতার রস গরম করে কামড়ানো স্থানে সেঁক দিলে ব্যাথা সেরে যাবে।


নামাজের হেকমত ও গুরুত্ব আলোচনা

বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
নামাজের হেকমত ও গুরুত্ব আলোচনা
পাঠ সংক্ষেপসালাত দ্বীনের স্তম্ভ ও কালেমার পর সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ রোকন। কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম এ বিষয়টির হিসাব হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুকালীন সময়ে নামাজের বিষয়ে উম্মতকে অসিয়ত করে গিয়েছেন। সাহাবাগণ নামাজের জামাআত থেকে যারা দূরে থাকত তাদেরকে মুনাফিক হিসাবে সাব্যস্ত করতেন, নামাজ গুরুত্বপর্ণ হওয়ার সবচেয়ে বড় দিক হলো এটি কোন মাধ্যম ছাড়াই সাত আসমানের উপর ফরজ করা হয়েছে। খুতবায় বিষয়টি বিস্তারিতভাবে দলিল-প্রমাণ সহ তুলে ধরা হয়েছে।

প্রথম খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ جَعَلَ الصَّلَاةَ عِمَادَ الدِّيْنِ، وَجَعَلَهَا كِتَاباً مَوْقُوْتاً عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ فَقَالَ وَهُوَ أَصْدَقُ الْقَائِلِيْنَ :
{حَافَظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُوْمُوْا لِلَّهِ قَانِتِيْنَ } (سورة البقرة : 238)
وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ :
নামাজ পড়ো নামাজ ধরো মুমিন মুসলমান

খুশুখুজুর শিখা নিয়ে থাকো অনির্বাণ।
প্রিয় উপস্থিতি!
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা দীন-ইসলাম দ্বারা এই উম্মতকে সম্মানিত করেছেন। তিনি এই দীনকে পূর্ণতা দিয়েছেন এবং মানুষের জন্য একমাত্র বিধানরূপে সাব্যস্ত করেছেন। যারা এই দীন মোতাবেক চলবে তাদেরকে তিনি এমন উত্তম বদলা ও মনোমুগ্ধকর বাসস্থান দান করবেন, যা প্রতিটি হৃদয় কামনা করে এবং যা দেখে প্রতিটি চক্ষু শীতল হবে।

এই দীন কতিপয় মজবুত ও শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো নামাজ। নামাজ ইসলামের খুঁটি এবং ঈমানের পর অতি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। যারা সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অসংখ্য পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন। হাদীসে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এক নামাজের পর আরেক নামাজ, এ দুয়ের মধ্যখানে কোনো অনর্থক কাজকর্ম না হলে, তা ঊর্ধ্বজগতে লিখা হয় (আবু দাউদ, হাসান)।

অন্য এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নামাজ সর্বোত্তম বিষয়। অতএব যে চায় সে যেন তা বাড়িয়ে নেয় (তাবারানী, হাসান)।নামাজ কল্যাণের আধার। তাই যারা কল্যাণপ্রার্থী, যারা কল্যাণের পাল্লা ভারী করতে চায়, তাদের উচিত নামাজকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা। নামাজ আদায়কে জীবনের অন্যতম মিশন হিসেবে গ্রহন করা।

মুমিন কখনো নামাজে অবহেলা করতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে:
{حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِين }
‘তোমরা সমস্ত নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি’ (সূরা বাকারা : ২৩৮)।
আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার কাছে সবচে’ প্রিয় জিনিস হলো, নারী ও সুগন্ধি। আর আমার চোখের শীতলতা নামাজের মধ্যে নিহিত’ (বুখারী)।

সুপ্রিয় মুসল্লিয়ান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমনিভাবে নামাজকে চক্ষু শীতলকারী বস্তুরূপে গ্রহণ করেছেন তেমনি আপনারাও নামাজকে চক্ষু শীতলকারী বস্তুরূপে গ্রহণ করুন।বস্তুত নামাজে রয়েছে অন্তরের প্রশান্তি ও হৃদয়ের স্থিরতা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা বিলাল রাযি. কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে বিলাল! তুমি আমাদেরকে নামাজের মাধ্যমে আরাম দাও’ (তাবারানী: আল মু‘জামুল কাবীর, সহীহ)।

নামাজ প্রথম ইবাদত যা বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলা ফরয করেছেন এবং নামাজের ব্যাপারেই কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকালের সময় উম্মতকে যে সর্বশেষ অসিয়ত করে গেছেন, তা হল নামাজ। মানুষের ইবাদত বন্দেগীর তালিকা থেকে সর্বশেষে বিলুপ্ত হবে নামাজ। আর নামাজ বিলুপ্ত হলে দীনচর্চার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

নামাজ মানুষকে অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। নামাজ সমাজকে সকল প্রকার অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বাঁচায় । ইরশাদ হয়েছে:
{ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ }
‘নিশ্চয় নামাজ যাবতীয় অন্যায় ও অশ্লীল-অপকর্ম থেকে বিরত রাখে’ (সূরা আনকাবুত: ৪৫)।
নামাজ এমন একটি ইবাদত যা সপ্তাকাশের উপরে জিবরীল (আ)-এর মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি ফরয হয়েছে। নামাজ আল্লাহ ও বান্দার মাঝে এক সেতুবন্ধন।

হে আল্লাহর বান্দাগণ! মুসল্লীদের মধ্যে এমন অনেককে দেখা যায়, যারা নামাজের সময় কাকের মতো ঠোকর মারে। অতি দ্রুত নামাজ শেষ করে বের হয়ে যায়। নামাজে তারা ধীরস্থিরতা অবলম্বন করে না। বস্তুত তারা নামাজের মধ্যে কোনোরূপ স্বাদ ও তৃপ্তি অনুভব করতে ব্যর্থ হয়। নামাজে তারা আল্লাহ তা*আলাকে খুব কমই স্মরণ করে।

নামাজের মধ্যে বারবার এদিক-সেদিক তাকানো, শরীর চুলকানো, নামাজ অবস্থায় স্বীয় মাল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার চিন্তা করা ইত্যাদি নামাজের পরিপন্থি বিষয়। হাদীসে এসেছে:
(أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ الْمَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَعَلَيْكَ السَّلَامُ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ، فَرَجَعَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: وَعَلَيْكَ السَّلَامُ، فَارْجِعْ فَصَلِّ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ "، فَقَالَ فِي الثَّانِيَةِ أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا: عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَأَسْبِغِ الْوُضُوءَ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا، ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلَاتِكَ كُلِّهَا)
‘এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদের এক প্রান্তে বসা ছিলেন। লোকটি নামাজ পড়ে এসে ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ওয়া আলাইকাস সালাম, তুমি ফিরে যাও, নামাজ পড়। কারণ তুমি নামাজ পড়নি’। সে ফিরে গেল, নামাজ পড়ল তারপর এসে সালাম করল। তিনি বললনে, ‘ওয়া আলাইকাস সালাম, তুমি ফিরে যাও, নামাজ পড়। তুমিতো নামাজ পড়নি। দ্বিতীয়বার অথবা তার পরের বার লোকটি বলল, ‘আমাকে শিখিয়ে দিন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললনে, ‘যখন তুমি নামাজে দাঁড়াতে মনস্থ করবে, ভালভাবে অজু করবে। তারপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর তোমার সাধ্যমত কুরআন পড়বে। তারপর রুকুতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে। তারপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদায় যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর মাথা উঠিয়ে ধীরস্থিরভাবে বসবে। অতঃপর আবার সিজদায় যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসবে। অতঃপর পুরা নামাজেই তুমি এরূপ করবে’ (বুখারী)।

মুহতারাম উপস্থিতি! নামাজকে অর্থবহ করে তোলার জন্য, নামাজকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য, নামাজে হৃদয়ের উপস্থিতি সুনিশ্চিত করার জন্য, নামাজে যা পড়া হয় অথবা করা হয় তার অর্থ ও তাৎপর্য হৃদয়ে হাজির করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি যখন নামাজ পড়ার সময় তাকবীর বলে এবং দু’হাত উত্তোলন করে তখন এর দ্বারা সে আল্লাহ তাআলাকে তাযীম তথা সম্মান প্রদর্শন করে। সে যখন বাম হাতের উপর ডান হাত রাখে, তখন সে আল্লাহর সামনে নিজের দীনতা ও হীনতা প্রদর্শন করে। যখন সে রুকু করে তখন সে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করে। যখন সিজদা করে তখন সে মহান আল্লাহর সামনে পূর্ণমাত্রায় বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে। যখন সে বলে
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
তখন আল্লাহ তাআলা আরশে আযীমের উপর থেকে বলতে থাকেনÑ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন সে বলে
الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। যখন সে বলে
مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ

তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার মহিমা বর্ণনা করেছে। যখন সে বলে
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ

তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত। আর আমার বান্দা যা চেয়েছে তা সে পাবে। আর যখন
إِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ
থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করে তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, এটা শুধু আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা যা চেয়েছে তা সে পাবে। আপনি যখন
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمْ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
বলেন, যদিও আপনি খুব ক্ষীণ আওয়াজে বলেন তথাপি আল্লাহ তাআলা তা শুনতে পান। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রকাশ্য-গোপনীয় সব কথা শোনেন এবং সব কাজই দেখেন তা যত ক্ষদ্র কাজই হোক না কেন। এমনিভাবে আপনি যত ছোট বিষয় নিয়েই চিন্তা-ফিকির করেন না কেন, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে অবহিত। আপনি যখন নামাজের মধ্যে সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত করেন তখন আল্লাহ তাআলা আপনাকে দেখেন। আপনি তাশাহহুদ পড়ার সময় যখন আঙ্গুল নেড়ে ইশারা করেন, তখন আল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনার ইশারাও দেখতে পান। কেননা তিনি তার বান্দাকে স্বীয় ইলম ও কুদরত দ্বারা চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে আছেন।

অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন করার পাশাপাশি নামাজসহ আমাদের যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী যাতে বিশুদ্ধভাবে, সুন্দরভাবে আদায় করা সম্ভব হয় সে জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। এ ব্যাপারে হাদীসে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। সাহাবী মুআয রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
( اللَّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحَسُنِ عِبَادَتِكَ )
‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার যিকর, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন’ (আহমদ, আবু দাউদ)।

নামাজে ধীরস্থিরতা, খুশু ও বিনয় নম্রতা অবলম্বন করার গুরুত্ব এখান থেকেও বুঝা যায় যে, মুমিনদের মধ্যে যারা খুশুর সাথে নামাজ আদায় করেন তাদের সফলকাম হওয়ার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সাক্ষী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
{ قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ . الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ . إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ . فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ . }
‘মুমিনগণ অবশ্যই সফলকাম হয়েছে। যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র। যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত। যারা যাকাত প্রদানে সক্রিয় এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ছাড়া এতে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী। আর যারা আমানাত ও অঙ্গীকার রা করে। যারা তাদের নামাজসমূহে যতœবান থাকে। তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে তাঁরা ফিরদাওসের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে’ (সূরা মুমিনূন : ১-১১)।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن ِالْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر ِالحْكِيْمِ, أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو َالْغَفُور ُالرَّحِيْمْ

দ্বিতীয় খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ جَعَلَ الصَّلَاةَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَاباً مَّوْقُوْتاً، وَوَعَدَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا بِجَزِيْلِ الثَّوَابِ، وَتَوَعَّدَ مِنْ تهَاوَنَ بِهَا بَأَلِيمِ الْعِقَابِ. وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ جُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِهِ فِي الصَّلَاةِ، أَمَّا بَعْدُ:

প্রিয় মুসল্লী ভাইয়েরা! বর্তমান সমাজে নামাজের প্রতি অবহেলা তীব্র আকার ধারণ করেছে। অথচ নামাজ মুসলমানের পরিচয়, ঈমান ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারক একটি ইবাদত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ ঈমান ও কুফরের মধ্যে তফাৎ হল নামাজ না পড়া’ (মুসলিম)।

বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমাদের ও তোমাদের মাধ্যে যে অঙ্গীকার, তা হলো নামাজ। অতএব যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করল, সে কুফরী করল’ (আহমদ, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযি)।

ছাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘ঈমান ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিল সে শিরক করল’ (তাবারানী, সহীহ)।

আবদুল্লাহ ইবন শাকীক আল উকাইলি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগণ নামাজ পরিত্যাগ করা ছাড়া অন্য কোনো আমল পরিত্যাগ করাকে কুফরী বলে মনে করতেন না (তিরমিযী আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।মুহতারাম মুসল্লিয়ান! ফরয নামাজ পুরুষের জন্য জামাতের সাথে আদায় করা অত্যাবশ্যক। শরঈ ওযর ছাড়া একাকী নামাজ পড়লে শুধু যে ছাওয়াব কম হয় তাই নয়, বরং নামাজই কবুল হয় না বলে হাদীসে সতর্কবাণী এসেছে।আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, যে ব্যক্তি আযান শোনার পর কোনোরূপ ওযর ছাড়াই জামাতে শরীক হয় না, (বরং আপন স্থানে নামাজ পড়ে নেয়) তার নামাজ কবুল হয় না (ইবনে মাজাহ, হাকিম)।আবুদ-দারদা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে গ্রামে বা মাঠে কমপে তিনজন লোক থাকে অথচ তারা সেখানে জামাতে নামাজ পড়ে না, শয়তান তাদের উপর সওয়ার হয়। অতএব জামাতকে আঁকড়ে ধরো। কেননা দলত্যাগকারী বকরীকেই বাঘে খেয়ে ফেলে (আহমদ, নাসায়ী, আবু দাউদ)।

আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, ‘আমার মনে চায়, আমার কিছু যুবককে এক বোঝা লাকড়ি সংগ্রহ করতে আদেশ দিই, তারপর আমি ঐসব লোকের নিকট যাই যারা বিনা ওযরে ঘরেই নামাজ আদায় করে। এবং গিয়ে তাদের বাড়ীঘর আগুনে পুড়িয়ে দেই’।

এই হাদীস বর্ণনাকারী ইয়াযীদকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এ সতর্কবাণী কি শুধু জুমআর নামাজের জন্য, নাকি সব নামাজের জন্য? উত্তরে তিনি বলেন, আবু হুরাইরা রাযি. উল্লেখ করেননি যে, এটা শুধু জুমআর নামাজের জন্য নাকি সব নামাজের জন্য। যদি আমি তার কাছ থেকে এ হাদীস না শুনে থাকি তাহলে আমার কর্ণদ্বয় বধির হয়ে যাক (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)।

ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, ‘তোমরা যদি অমুক ব্যক্তির ন্যায় ঘরেই নামাজ পড়তে আরম্ভ কর তবে তোমরা নবীজির সুন্নত তরককারী বলে গণ্য হবে। আর যদি তোমরা নবীজির সুন্নত ছেড়ে দাও তবে তোমরা নিশ্চিত গোমরাহ হয়ে যাবে (মুসলিম)।

প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! নামাজ আল্লাহ তাআলার প থেকে ফরয করে দেয়া একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই নিজেরা নামাজ পড়ার সাথে সাথে পরিবারের সকল সদস্যকে নামাজ পড়ার তাগিদ দিতে হবে। নিজদেরকে জাহান্নামের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচানোর সাথে সাথে পরিবারের সকল সদস্যকে দোযখ থেকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ইরশাদ হয়েছে:

{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا }

‘হে মুমিনগন! তোমরা নিজ এবং তোমাদের পরিবারের লোকদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও’ (সূরা আত-তাহরীম: ৬১)।

অন্য আয়াতে তিনি বলেন:
{وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا }
‘তুমি তোমার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দাও এবং তুমি নিজেও এতে অবিচল থাক’ (সূরা তাহা:১৩২)।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বৎসরে উপনীত হলে তোমরা তাদেরকে নামাজের আদেশ করো। তাদের বয়স দশ বৎসরে উপনীত হওয়ার পরও তারা নামাজ না পড়লে তাদেরকে প্রহার করো (আহমদ, আবু দাউদ)।

প্রিয় মুসল্লিয়ান! আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে তাঁর নবীর উপর দরূদ পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
{ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَـٰئِكَـتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِىّ يٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيْهِ وَسَلِّمُواْ تَسْلِيماً }
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং ফিরিশতাগণ নবীর জন্য দু‘আ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করো’ (সূরা আল আহযাব: ৫৬)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন (মুসলিম)।

হে করুণার আধার! আপনি আমাদের আপন আপন দেশে নিরাপত্তা দিন। ইসলাম, মুসলমান ও দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে এমন নেতৃত্ব আমাদেরকে দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করো। যারা এ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের থেকে আমাদেরকে দূরে রাখুন। হে করুণাময় আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে চাই যে আপনি আমাদের সমাজ থেকে সুদ, ঘুষ, ব্যাভিচার এবং এগুলোর যাবতীয় আসবাব-উপকরণ উঠিয়ে নিন। আপনি আমাদেরকে, আমাদের দেশকে এবং গোটা মুসলিম বিশ্বকে হিফাযত করুন ভুমিকম্প ও প্রকাশ্য-গোপনীয় যাবতীয় ফিতনা থেকে। হে দয়াময় প্রভু! আমরা সবাই আপনার কাছে সঠিক পথ প্রার্থনা করি। অতএব হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, আলেম-উলামা এবং প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করো।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ والْمُنْكرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.




সৎসঙ্গ অবলম্বন এবং ব্যক্তি জীবনে তার প্রভাব আলোচনা

বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
পাঠ সংক্ষেপ
সৎসঙ্গ অবলম্বন এবং ব্যক্তি জীবনে তার প্রভাব আলোচনা

খুতবার উদ্দেশ্য : ১ - ইসলামী মূল্যবোধ ও আখলাককেন্দ্রিক তরবিয়ত, ২- অসৎ সঙ্গী থেকে হুঁশিয়ার করা ও মুমিনদের সঙ্গ অবলম্বনের নির্দেশ, ৩ - কন্যা সন্তানের তরবিয়ত ও চরিত্রগঠন এবং তাদের সঙ্গ দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ


প্রথম খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَرْسَلَ رَسُوْلَهُ بِالْهُدَى وَدِيْنِ الْحَقِّ؛ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الْدِّيْنِ كُلِّهِ، وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ. وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ :
সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
মুসল্লিয়ানে কেরাম! ইসলাম একটি স্বভাবজাত ধর্ম। যাদের সৃষ্টিগত ফিতরত অপরিবর্তনীয় রয়েছে এবং যাদেরটা বদলে গেছে উভয়ের জন্যই ইসলাম সমানভাবে উপযোগী। উপরন্তু উভয় প্রকার স্বভাবের জন্য ইসলাম একটি প্রতিষেধকও বটে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
كُلُّ مَوْلُوْدٍ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ وَإِنَّمَا أَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ وَيُمَجِّسَانِهِ
‘প্রতিটি সন্তান ফিতরত তথা ইসলাম নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহূদি, খৃস্টান বা অগ্নীপূজক বানায়।’এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে সঙ্গদোষে মানুষের স্বভাবজাত ফিতরতে পরিবর্তন আসে। ফিতরত তার স্বচ্ছতা হারিয়ে, সরল পথ হারিয়ে ভিন্ন পথে চলতে শুরু করে।

মানুষ সঙ্গীবিহীন একাকী জীবনযাপন করতে পারে না। সে কারণেই মানুষকে সামাজিক জীব বলা হয়। মানবপ্রকৃতি সঙ্গী তালাশ করে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা আদম আ. এর জন্য মা হাওয়া কে সৃষ্টি করেন, যাতে তিনি তার কাছে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। তিনি তাকে একা রাখেননি। তিনি ইরশাদ করেন:
{هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا}
‘তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, ’ (সূরা আল আরাফ : ১৮৯)।

মানুষ অন্যদের সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়। অন্যদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ জীবনযাপন করতে চায়। ইসলাম মানুষের এই স্বভাবকে বাতিল করে দেয়নি, বরং তা আরো বেশী করে লালন করেছে। আরো জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সামাজিকভাবে পালনীয় ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধানসমূহ এদিকেই ইঙ্গিত করে। যেমন জুমার নামায , জামাআতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়, দুই ঈদ ও কুসূফের নামায ইত্যাদি। উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই অন্যদের সাথে একত্রিত হতে হয়, মিলিত হতে হয়। বিষয়টি এরকম নয় যে, ইচ্ছে হলে মিশব ইচ্ছে না হলে মিশব না। বরং বিষয়টি এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জামাতে শরীক হয়ে মিলিতভাবে নামায আদায় করার বিষয়টি আমরা সবাই জানি। এমনকি যেসব লোক জামাতে শরীক হয় না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।

বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার ইচ্ছা হয়, আমি মুআজ্জিনকে আযান দিতে বলি। অতঃপর আমি কাউকে নির্দেশ দেই সে যেন লোকদেরকে নিয়ে জামাতে নামায পড়ে। তারপর আমি লাকড়ির বোঝাসহ কতিপয় লোককে নিয়ে ঐ সমস্ত কওমের কাছে যাই যারা জামাতে নামায পড়ে না। এবং সেখানে গিয়ে তাদের বাড়ীঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিই।

অনুরূপভাবে মুসাফিরকে একাকী নয় বরং দলের সাথে সফর করতে উৎসাহিত করা এবং যে ব্যক্তি একাকী সফর করবে তাকে শয়তান বলে অভিহিত করার দ্বারাও সঙ্গী নির্বাচন করার বিষয়টি পরিস্কার হয়ে ওঠে। আমর ইবনে শুআইব রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে:
( الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ، وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ، وَالثَّلاثَةُ رَكْبٌ )
‘‘ একা সফরকারী এক শয়তান, দুই জন সফরকারী দুই শয়তান এবং তিন জন সফরকারী একটি যাত্রীদল বা কাফেলা’ (তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ)।
অতএব মানবজীবনের একটি অপরিহার্য বিষয় হলো, এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করা, যে বা যারা তাকে ভুলে গেলে স্মরণ করিয়ে দিবে, অমনোযোগী হলে সতর্ক করবে এবং কোনো কিছু না জানলে শিখিয়ে দিবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর দীন, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার বিধান দিয়েছেন যেমনটি তিনি নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর ও তাঁর রাসূলের অপছন্দনীয় যাবতীয় কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে।

সুপ্রিয় মুসল্লিয়ান! বন্ধু বা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তা হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাথেই কেবল বন্ধুত্ব করা। যারা আল্লাহর শত্র“, রাসূলের শত্র“ তাদের সাথে সম্পর্ক বর্জন করা। ইরশাদ হয়েছে:
{ إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ }
‘ তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে’ (সূরা আল মায়েদা: ৫৫)।

অন্য আয়াতে তিনি বলেন:
{ وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ}
‘আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ দলই বিজয়ী’ (সূরা আল মায়েদা: ৫৬)।
এ আয়াতের প্রতি ঈমানের একটি দাবি হল, সৎসঙ্গী গ্রহণ করা। যারা অসৎ, যারা আল্লাহ-বিদ্বেষী, রাসূল বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষী তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা।

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
{ لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آَبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ }
‘ যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে তুমি পাবে না এমন জাতিকে এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীতা করে, যদি সেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতিÑগোষ্ঠী হয় তবুও ’ (সূরা আল মুজাদালাহ: ২২)।

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলার শত্র“দেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি অন্যান্য আয়াতে আরো পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআ‘লার বাণী:
{ قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآَءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ }
‘ ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পর্কমুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি এবং উদ্রেক হল আমাদের- তোমাদের মাঝে শত্র“তা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। ’ (সূরা মুমতাহিনাঃ ৪)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
{ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ }
‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর। নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল’(সূরা আল ফাতহ: ২৯)।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ }
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন এক কাওমকে আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসেন এবং তারা তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনম্র এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে’ (সূরা মায়িদা : ৫৪)।

আরো ইরশাদ হয়েছে :
{ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ }
‘হে নবী, কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের ওপর কঠোর হও, আর তাদের ঠিকানা হল জাহান্নাম আর তা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান ’ (সূরা তাওবা ঃ ৭৩)।
উল্লিখিত আয়াতগুলোর বক্তব্য একটিই। আর তা হলো, সৎ ও মুমিন ব্যক্তিদেরকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা। যারা অসৎ এবং আল্লাহ ও রাসূলের শত্র“ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা।

মানুষ যেমন বাঘ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে ঠিক তেমনি বুদ্ধিমান লোকেরা সব সময় খারাপ ও অসৎ লোকদের থেকে দূরে অবস্থান করে। কেননা খারাপ ও অসৎ লোকদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। শুধু তাই নয়, অসৎ ও মন্দলোকেরা এমন এক হতভাগার দল, যাদের সাথে উঠাবসাকারীরাও হতভাগায় পরিণত হয়। ইরশাদ হয়েছে:
{ وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا. يَا وَيْلَتَى لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا. لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا. }
‘আর সেদিন যালিম নিজের হাত দু’টো কামড়িয়ে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোন পথ অবলম্বন করতাম’! ‘হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’। ‘অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক’ (সূরা ফুরকান : ২৭-২৯)।

তাফসীরকারকদের নিকট একথা প্রসিদ্ধ যে, যে জালেমের ব্যাপারে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল সে হলো, উকবা ইবনে আবী মু‘আইত। আর যে তাকে পথভ্রষ্ট করেছিল সে হলো উমাইয়া ইবনে খাল্ফ ও তার ভাই উবাই ইবনে খাল্ফ।সুতরাং যে ব্যক্তি তার বন্ধুকে কুফরীর ক্ষেত্রে অনুসরণ করবে এবং কুফরী অবস্থায়ই মারা যাবে সে উকবা ইবনে আবী মু‘আইতের মতোই শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তা থেকে হিফাযত করুন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিকে যেমন সৎসঙ্গী অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন, ঠিক অন্যদিকে তেমনি অসৎসঙ্গী থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। যেমন আবূ মূসা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে:
( إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السُّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيْرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُهْدِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحاً طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيْرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحاً خَبِيْثَةً )
‘ সৎসঙ্গী ও অসৎসঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো আতর বহনকারী ও হাপরে ফুঁকদানকারী কামারের ন্যায়। আতরওয়ালার কাছে গেলে সে হয়তো তোমাকে বিনামূল্যে কিছু আতর হাদিয়া দিবে, অথবা তার কাছ থেকে তুমি আতর ক্রয় করবে অথবা তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ পাবে। পক্ষান্তরে কামারেরর কাছে গেলে হয়তো তোমার কাপড় পুড়বে নতুবা তোমার নাকে দুর্গন্ধ লাগবে’ ( বুখারী)।

মুহাল্লাব রহ. বলেন, এ হাদীসে নেক লোকদের সাথে উঠাবসার বরকতের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এ কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলেম-উলামাদের সাথে উঠাবসা এবং তালীম ও যিকিরের হালকার সাথে জড়িত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সৎসঙ্গীকে আতরওয়ালার সাথে উপমা দিয়েছেন। বলেছেন, আতরওয়ালার কাছে গেলে তার কাছে থাকা সামগ্রী না পাওয়া গেলেও সুঘ্রাণ পাওয়া থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবে না।

প্রিয় শ্রোতামণ্ডলী! লুকমান আ. তার সন্তানকে উপদেশ দিয়ে বলেন, প্রিয় বৎস! উলামায়ে কিরামের সাথে উঠাবসা করো এবং তাদের সঙ্গ অবলম্বনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। কেননা আল্লাহ তাআলা হেকমতের নূর দ্বারা অন্তরসমূহকে সজীব করেন যেমন সজীব করেন আকাশের বৃষ্টি দ্বারা মৃত যমীনকে।
তিনি আরো বলেন,তুমি তাদের সঙ্গদেওয়ার সময় হয়তো আল্লাহর রহমত তাদেরকে স্পর্শ করবে, আর তাদের সাথে তোমাকেও তা স্পর্শ করবে। এটা হলো তাকওয়া ও পরহেজগারিতে অগ্রণী ব্যক্তিদের সঙ্গ অবলম্বনের ফলাফল।

কোনো এক আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লামা আইনী রহ. বলেন, যাদের কাছে বসলে তোমার দীনী উপকার হয়, ইলমী ও আমলী ফায়েদা হয়, চরিত্র সুন্দর হয়, এমন লোকদের মজলিসে বসার নির্দেশ লুকমান আ.-এর বক্তব্যে রয়েছে। অতএব কোনো মানুষ যখন এমন কোনো লোকের কাছে বসে, যার কাছে বসলে আখেরাতের কথা স্মরণ হয় তখন তার উচিত খুব বেশি পরিমাণে ও বেশী সময় এ ধরনের লোকের কাছে বসা। সর্বোপরি যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে সঙ্গী বানিয়ে নেয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সৎসঙ্গ অবলম্বন করার এবং অসৎসঙ্গ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দিন। আমীন।
أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الْشَّيْطَانِ الْرَّجِيْمِ : {مَنْ عَمِلَ صَالِحاً فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاء فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لّلْعَبِيدِ} ( سورة فصلت : 46)
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ, أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

দ্বিতীয় খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَلِيِّ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالصَّالِحِيْنَ، وَالْصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى رَسُوْلِ اللَّهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ :
মুহতারাম হাযেরীন! এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সৎসঙ্গী বেছে নেওয়ার ফল অপরিসীম। সৎসঙ্গী বেছে নেওয়ার দ্বারা সর্বপ্রথম ব্যক্তিজীবন সুন্দর হয়। আর ব্যক্তিজীবন সুন্দর হওয়ার দ্বারা আদর্শ সমাজ গড়ে উঠে। আর এটা তো পরিস্কার কথা যে, যখন কোনো সমাজ আদর্শ সমাজে পরিণত হয়, তখন সেখানে অবিরত ধারায় আসমান ও যমীন থেকে আল্লাহ তাআলা বরকত নাযিল করতে থাকেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন:
{ وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ. }
‘ আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের ওপর খুলে দিতাম’ (সূরা আল আরাফ:৯৬)।

ইমাম বাগাভী রহ. বলেন, আসমান ও যমীনের বরকত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আসমান থেকে পরিমিত বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া এবং যমীন থেকে প্রয়োজনীয় ফসল ও উদ্ভিদ উৎপন্ন হওয়া। দুর্ভিক্ষ ও অনুর্বরতা না থাকা।জান্নাতবাসীগণ সকলেই সৎসঙ্গী লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
{ إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا }
‘ নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস’ (সূরা আল কাহাফ: ১০৭)।

তিনি আরো বলেন:
{ وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ. لَا يَمَسُّهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ. }
‘ আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে। সেখানে তাদেরকে ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না ’ (সূরা হিজর : ৪৭-৪৮)।

সুপ্রিয় শ্রোতামণ্ডলী! সাহাবায়ে কিরাম ও আমাদের পূর্বসূরীগণ ছিলেন সৎসঙ্গীর উত্তম নমুনা। সহীহ বুখারীতে আবূ জুহাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখ হয়েছে:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমান রাযি. ও আবূদ-দারদা রাযি. ভ্রাতৃত্বেরবন্ধনে আবদ্ধ করেন। একদিন সালমান রাযি. আবূদ-দারদা রাযি. এর সাক্ষাতে গেলেন। তখন তিনি আবূদ-দারদা রাযি. এর স্ত্রীকে জীর্ণ পোশাক ও বিষন্ন অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার একি অবস্থা? উত্তরে আবূ দারদা রাযি. এর স্ত্রী বললেন, আপনার ভাই আবূদ-দারদার তো দুনিয়ার আরাম-আয়শের প্রতি মোটেও মনোযোগ নেই।

এমন সময় আবূদ-দারদা রাযি. বাড়ীতে এসে সালমান রাযি. এর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেন এবং বললেন, আমি রোযা রেখেছি। আপনি আহার গ্রহণ করুন। সালমান রাযি. বললেন, আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আহার গ্রহণ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আহার গ্রহণ করব না। একথা শুনে আবূদ-দারদা রাযি রোযা ভঙ্গ করে সালমান রাযি.-এর সাথে আহার গ্রহণ করলেন।

রাতে যখন ঘুমানোর সময় হলো তখন আবূদ-দারদ রাযি. নামায পড়তে উদ্যত হলেন। সালমান রাযি. তাকে বললেন, এখন ঘুমিয়ে পড়ুন। তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। একটু পর আবার তিনি নামায পড়তে উদ্যত হলেন। সালমান রাযি. বললেন, আরো ঘুমান। তিনি ঘুমিয়ে গেলেন। অতঃপর রাত যখন শেষভাগে উপনীত হলো তখন সালমান রাযি. বললেন, এবার উঠুন।

তারপর তারা উভয়ে নামায পড়লেন। নামায শেষে সালমান রাযি. বললেন, নিশ্চয় আপনার ওপর আপনার প্রতিপালকের হক রয়েছে। অনুরূপভাবে আপনার ওপর আপনার নিজ দেহের হক রয়েছে। আপনার ওপর আপনার স্ত্রীরও হক রয়েছে। অতএব আপনি প্রত্যেকের হক আদায় করুন।পরদিন আবূদ-দারদা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে সালমান রাযি.-এর বক্তব্য পেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সালমান সত্য বলেছে।

অতএব হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন, সাহাবায়ে কেরাম সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যাপারে একে অপরকে কীরূপ সহযোগিতা করতেন। সৎসঙ্গের উপকারিতা এরূপই হয়ে থাকে।পক্ষান্তরে অসৎসঙ্গ অবলম্বনের দ্বারা কোনো উপকার তো হয়-ই না বরং তা মানুষকে আল্লাহবিমুখ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের র চাচা আবূ তালিবের ঘটনা এ ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। সহীহ বুখারীতে সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব রহ. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে:

যখন আবূ তালেবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিকট উপস্থিত হলেন এবং সেখানে আবূ জাহ্ল, আবদুল্লাহ ইবনে আবি উমাইয়াকে পেলেন। তিনি আবূ তালেবকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচা! আপনি বলুন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এটা এমন এক কালেমা যদ্বারা আমি আল্লাহর কাছে আপনার পক্ষে সুপারিশ করব।একথা শুনে আবূ জাহ্ল ও আবদুল্লাহ ইবনে আবি উমাইয় আবূ তালেবকে বলল, তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? এরপর অনেকক্ষণ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাচা আবূ তালেবকে কালেমা পড়তে বলছিলেন আর আবূ জাহ্ল ও আবদুল্লাহ ইবনে আবি উমাইয়া তাকে আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথাটি পুনরাবৃত্তি করছিল।

পরিশেষে আবূ তালেব কালেমা পড়তে অস্বীকার করল এবং আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপরই অটল থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করল।তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে বারণ না করা হবে ততক্ষণ আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। তখন আল্লাহ তাআলা আবূ তালেবের ব্যাপারে এই আয়াত নাযিল করলেন:
{ مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى }
‘ নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী’ (সূরা আত ত্ওাবা: ১১৩)।

আর আবূ তালেবের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে খেতাব করে আল্লাহ তাআলা বললেন:
{ إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ }
‘নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন। আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তিনি ভাল জানেন’ (সূরা আল কাসাস: ৫৬)।

পিতা ও অভিভাবকদেরকে লক্ষ্য করে বলছি, আপনাদের প্রত্যেকেই রক্ষক আর আপনাদের প্রত্যেককেই তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হাদীসে এসেছে :
( كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ )
‘ তোমাদের প্রত্যেকেই তত্ত্বাবধায়ক, আর তোমাদের প্রত্যেককেই তার তত্ত্বাবধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে’।

তাই আপনাদের কর্তব্য হলো, আপনাদের সন্তানদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা। তারা কোথায় গেল, কোথায় খেল, কোথায় রাত্রিযাপন করল এবং মোবাইলে কার কার সাথে কথা বলল এ সব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। যদি আপনারা আপনাদের সন্তানদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর না রাখেন, তারা কোথায় যাচ্ছে, কোথায় সময় কাটাচ্ছে, সেদিকে নযর না দেন এবং পরিশেষে যদি তারা খারাপ স্বভাব ও মন্দ আচরণে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে তাহলে এর দায়ভার কিন্তু অবশ্যই আপনাদেরকে বহন করতে হবে। তাই আসুন, আমরা নিজেরা সৎসঙ্গ অবলম্বন করি এবং যে কোনো মূল্যে অসৎসঙ্গ পরিহার করি। সেই সাথে নিজেদের ছেলেমেয়ে ও অধীনস্থদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

{إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَـٰئِكَـتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِىّ يٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيْهِ وَسَلّمُواْ تَسْلِيماً } ( الأحزاب : 56 )
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الْرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الْطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنْ الْصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الْدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সৎ সঙ্গ অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। অসৎ সঙ্গ থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন। মুমিন, মুত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তিদের সঙ্গ অবলম্বনের তাওফীক দিন। সৎ সঙ্গের সুফলসমূহ ভোগ করার তাওফীক দিন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে নেক আমল করার তাওফীক দিন। আপনি যে সব আমল পছন্দ করেন এবং আপনার রেজামন্দী অর্জনে সহায়তা করে আপনি আমাদের সে সব আমল বেশি বেশি করার তাওফীক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমাদেরকে সকল বালামুসিবত থেকে হিফাযত করুন। আমাদের জীবনকে সকল প্রকার কল্যাণে ভরে দিন। আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামীন।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.



হজ্ব কত প্রকার ও কী কী? বিস্তারিত কার্যাবলী ও হুকুম আলোচনা

বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

হজ্জ তিন প্রকার
হজ্ব কত প্রকার ও কী কী? বিস্তারিত কার্যাবলী ও হুকুম আলোচনা

(১) হজ্জে কিরান। এক ইহরামে উমরা ও হজ্জ উভয়টি পালন করা।
(২) হজ্জে তামাত্তু। আলাদা আলাদা ইহরাম পরিধান করে উমরা এবং হজ্জ পালন করা।
(৩) হজ্জে ইফরাদ। শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বেধে হজ্জ করা।
এই তিন প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হজ্জ হচ্ছে, হজ্জে কিরান, তারপর হজ্জে তামাত্তু, অতপর হজ্জে ইফরাদ।

হজ্জে কিরান:
এর কাজ সর্বমোট ১৩টি
১। উমরা ও হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাধা। ফরজ।
২। বাইতুল্লায় প্রবেশ করে তাওয়াফে উমরা বা উমরার তাওয়াফ আদায় করা। ফরজ।
৩। তাওয়াফের পর উমরার সায়ী করা। ওয়াজিব।
৪। তাওয়াফে কুদুম করা । সুন্নত।
৫। সায়ী করা। ওয়াজিব।
৬। ৮ই জিলহজ্জ যোহর থেকে ৯ই জিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা। সুন্নত।
৭। ৯ই জিলহজ্জ সূর্য ঢলা থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত উকুফে আরাফা (আরাফায় অবস্থান) করা। হজের অন্যতম ফরজ।
৮।৯ই জিলহজ দিবাগত রাত উকুফে মুজদালিফা (মুজদালিফায় অবস্থান) করা। পুরুষের জন্য ওয়াজিব। মহিলাদের জন্য ওয়াজিব নয়।
৯। ১০,১১ ও ১২ই জিলহজ্ব মিনায় জামারাতে (কংকর নিক্ষেপের স্থানে) কংকর নিক্ষেপ করা। ওয়াজিব।
১০। কোরবানি করা ওয়াজিব।
১১। হলক করে ইহরাম খোলা । ওয়াজিব (হলক বা কছর )
১২। তাওয়াফে যিয়ারত করা ফরজ।
১৩। সর্বশেষ মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বিদায়ী তাওয়াফ করা। ওয়াজিব।
বিদায়ী তাওয়াফ করলে হজ্জে কিরানের কার্যাবলী সমাপ্ত হবে।

হজ্জে তামাত্তু:

এর কাজ সর্বমোট ১৪ টি
১। উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা।ফরজ।
২। বায়তুল্লায় উমরার তাওয়াফ করা। ফরজ।
৩। উমরার সায়ী করা।ওয়াজিব।
৪। হলক করে উমরার ইহরাম খোলা। ওয়াজিব।
৫। ৮ই জিলহজ্জ হজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধা।ফরজ।
৬। ৮ই জিলহজ্জ মিনায় গমন করে সেখান থেকে যোহর আসর মাগরিব এশা এবং ৯ই জিলহজ্জ এর ফজর সর্বমোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। সুন্নত।
৭। ৯ই জিলহজ্জ উকুফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। আর উকুফে আরাফা হজ্জের একটি অন্যতম ফরজ।
৮। ৯ই জিলহজ্জ দিবাগত রাতে উকুফে মুজদালিফা বা মুজদালিফায় অবস্থান করা। পুরুষদের জন্য ওয়াজিব। মহিলাদের জন্য ওয়াজিব নয়।
৯। ১০ ১১ ও ১২ই জিলহজ্জ জামারাতে (কংকর নিক্ষেপের স্থানে) কংকর নিক্ষেপ করা। ওয়াজিব।
১০। পশু কোরবানি করা। ওয়াজিব।
১১। হলক করা। ওয়াজিব।
১২। তাওয়াফে জিয়ারত করা। ফরজ।
১৩। তাওয়াফে জিয়ারত এর সায়ী করা। ওয়াজিব।
১৪। সর্বশেষ মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। বিদায়ী তাওয়াফ করার মাধ্যমে হজ্জে তামাত্তু এর কার্যাবলী সমাপ্ত হবে।

পবিত্র হজ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের নিশানা

হাদিস শরিফে সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ এই জাতি সব বিবাধ ভুলে গিয়ে দলমত-জাতিবর্ণ নির্বিশেষে মহান প্রভুর কুদরতি পায়ে মাথা অবনত করে সেজদায় ইবাদতে মগ্ন হয়।

প্রত্যেক ধর্মেরই কিছু নির্দ্দিষ্ট আচার-অনুষ্টান আছে যার দ্বারা সেই ধর্মের অনুসারিগণ এক স্থানে সমবেত হন। একে অন্যের সাথে সাক্ষাত হয়। কিন্তু পৃথিবীর সব ধর্মের চেয়ে ইসলাম ধর্ম তার অনুসারিদের একত্রিকরনের জন্য রেখেছে ব্যতিক্রম ব্যবস্থা।

হজ্ব হচ্ছে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা আর্থিক ও শারিরিক ইবাদতও বটে। হজ্বের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা, সংকল্প করা। শরিয়তের পরিভাষায় হজ্বের মাস সমূহে বিশেষ কিছু কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট কিছু স্থানের যিয়ারত করাকে হজ্ব বলে।

হজ্বের মাসসমূহঃ- শাওয়াল, যিলক্বাদাহ ও যিলহাজ্জার দশ দিন। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে হজ্ব যখন ওয়াজিব হয় তখনই পালন করা এবং একবারই পালন করা ফরয।
হজ্ব ফরয হওয়ার শর্ত আটটিঃ
(১) মুসলমান হওয়া
(২) জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া
(৩) বালেগ হওয়া
(৪) স্বাধিন হওয়া
(৫) হজ্বের সময় হওয়া
(৬) মধ্যম ধরনের ব্যয় হিসেবে সফরের ব্যয় বহনের সামর্থ থাকা, যদি হজ্ব পালনকারি মআ শরিফে অবস্থান করে তবুও
(৭) যারা মক্কা শরিফের বাহিরে থাকেন তাদের জন্য হজ্ব পালনের শর্ত হল মালিকানা বা ভাড়া সূত্রে স্বতন্ত্রভাবে একটি বাহন বা অন্যকিছু ব্যবহারের সামর্থ থাকা যেমনঃ আমাদের দেশের হাজ্বিগণ বিমান ব্যবহার করে থাকেন। তবে কেউ যদি বিনিময় ছাড়া তার বাহন বা সওয়ারি ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে তা সামর্থ হিসেবে গণ্য হবে। যারা মক্কার আশেপাশে অবস্থান করেন, তাদের উপর তখন হজ্ব ফরয হয়। যখন তারা কষ্ট সহ্য করে নিজ শক্তিতে পায়ে হেটে হজ্ব করতে পারে। কিন্তু হাটতে সক্ষম না হলে সেই ব্যক্তি মক্কার অধিবাসি হোক বা না হোক তার জন্য অবশ্যই বাহনের প্রয়োজন হবে।

(৮) অমুসলিম দেশে ইসলাম গ্রহনকারি ব্যক্তির “হজ্ব ইসলামের একটি রুকন (ফরয)”একথা জানা থাকা বা সে ব্যক্তি মুসলিম দেশের অধিবাসি।

হজ্ব ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাঁচটিঃ 
(১) সুস্থ থাকা
(২) হজ্বে যাওয়ার বাহ্যিক বাধা দূরিভুত হওয়া
(৩) রাস্থাঘাট নিরাপদ থাকা (স্থল ও সামুদ্রিক পথে যদি অধিকাংশ লোক নিরাপদে ফিরে আসে তবেই রাস্থা নিরাপদ বলে ধর্তব্য হবে।)
(৪) মহিলাগন তাদের ইদ্দত অবস্থায় না থাকা
(৫) নারির বেলায় হজ্বে তার সাথে একজন মুসলমান আস্থাভাজন, জ্ঞান সম্পন্ন, বালেগ মাহরাম পুরুষ বা স্বামি থাকা। মাহরাম ব্যক্তি স্তন্যসূত্রে মাহরাম হতে পারে অথবা বৈবাহিক সূত্রেও হতে পারে।

চারটি কাজে হজ্ব পালনঃ চারটি কাজ করলে স্বাধিন ব্যক্তির হজ্বের ফরয বিশুদ্ধভাবে পালিত হয়। এক. ইহরাম। দুই. ইসলাম। এ দুটি হল হজ্বের শর্ত অতঃপর হজ্বের অপর দুই ফরয পালন করা। অর্থাৎ যিলহজ্বের নবম তারিখে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর থেকে কোরবানির দিনের ফযর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্তত এক মূহুর্ত আরাফাতের ময়দানে ইহরাম অবস্থায় থাকা। তবে শর্ত হল এর পূর্বে ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস না করা চাই। দ্বিতিয় ফরয হল তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর যথাসময়ে অর্থাৎ দশম তারিখের ফযরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর পালন করা।

হজ্বের ওয়াজিব সমূহঃ
(১) মিক্বাত হতে ইহরাম বাধা
(২) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা
(৩) যিলহজ্বের দশ তারিখে ফযরের সময় শুরু হওয়ার পর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফায় থাকা
(৪) পাথর নিক্ষেপ করা
(৫) হজ্বে ক্বেরান ও হজ্বে তামাত্তু পালনকারির পশু যবেহ করা
(৬) মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা
(৭) মাথা মুন্ডানোর কাজটি হারাম শরিফে এবং ক্বোরবানির দিন গুলোতে সম্পন্ন করা
(৮) মাথা মুন্ডানোর পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করা
(৯) হজ্বে ক্বেরান ও হজ্বে তামাত্তু পালনকারির পাথর নিক্ষেপ ও মাথা মুন্ডানোর মধ্যবর্তি সময়ে পশু যবেহ করা
(১০) ক্বোরবানির দিনগুলোতে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করা
(১১) হজ্বের মাসগুলোতে সাফা-মারওয়ার মধ্যখানে সায়ী করা
(১২) গ্রহনযোগ্য তাওয়াফের পর সায়ী করা।
(১৩) ওযর ব্যতিত পায়ে হেটে সায়ী করা
(১৪)সাফা থেকে সায়ী আরম্ভ করা
(১৫) বিদায়ি তাওয়াফ করা
(১৬) বায়তুল্লাহ শরিফের সবকটি তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে শুরু করা
(১৭) ডান দিক থেকে তাওয়াফ শুরু করা
(১৮) ওযর ছাড়া পায়ে হেটে তাওয়াফ করা
(১৯) ছোট-বড় উভয় প্রকার হাদাস থেকে পবিত্র থাকা
(২০) সতর ঢাকা
(২১) তাওয়াফে যিয়ারতের অধিকাংশ চক্কর (ক্বোরবানির দিনগুলোতে) সম্পন্ন করার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো সম্পন্ন করা
(২২) নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা যেমনঃ পুরুষরা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা এবং মাথা ও চেহারা ঢাকা, মহিলারা চেহারা ঢাকা, যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলা, গুনাহের কাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, শিকার বা শিকারের প্রতি ইশারা করা কাউকে শিকার দেখিয়ে দেয়া ইত্যাদি।

হজ্বের কার্যাবলি পুরোপুরিভাবে সম্পাদনের পদ্ধতিঃ যখন কেউ হজ্ব করার ইচ্ছা করবে তখন সে মিক্বাত থেকে ইহরাম বাধবে। ইহরাম বাধার নিয়ম এই যে, ইহরাম বাধার প্রারম্ভে গোসল কিংবা ওযু করে নেয়া। তবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসলই উত্তম। কাজেই হায়েয ও নেফাসগ্রস্থ নারীর যদি গোসল করলে ক্ষতি না হয় তাহলে গোসল করবে। নখ ও গোফ কেটে, বগলের পশম পরিস্কার করে, নাভির নিচের পশম মুড়িয়ে, গোসল করে সুগন্ধি লাগিয়ে তেল ব্যবহার করে সম্পূর্ণরুপে পরিস্কার হওয়া মুস্তাহাব। পুরুষ লোক একটি ইযার ও চাদর পরিধান করবে, যা নতুন কিংবা ধৌতকরা হতে পারে। তবে নতুন সাদা কাপড় উত্তম। চাদরটি বোতামবিহীন হতে হবে। কোন প্রকারের জোড়া বা কাপড় ছিড়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ধরনের কাজ করা মাকরুহ। এ জন্য তার উপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।
হে হজ্ব বা ওমরাহ পালনকারি ব্যক্তি! এবার আপনি দু’রাকাত নামায পড়–ন। অতঃপর বলুন, হে আল্লাহ আমি হজ্ব পালন করার ইচ্ছা করেছি, সুতরাং আপনি আমার জন্য কাজটি সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা ক্ববুল করুন। নামাযের পর তালবিয়া পড়–ন “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদাহ, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা”। যখন আপনি হজ্ব বা ওমরার নিয়তে তারবিয়া পড়লেন তখনই আপনার ইহরাম বাধা হয়ে গেল। সুতরাং এ সময় থেকে আপনি রাফাস তথা স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকবেন। সবসময় তালবিয়া পড়–ন, তবে চিৎকার দেয়ার প্রয়োজন নেই। যার দ্বারা নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয়। যখন আপনি মক্কায় পৌছবেন তখন আপনার গোসল ও দরজায়ে মুআল্লা দিয়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব।

হজ্বের প্রকারভেদঃ হজ্ব মোট তিন প্রকার।
১. হজ্বে ইফরাদ
২. হজ্বে তামাত্তু এবং ৩.হজ্বে ক্বেরান।
হজ্বে ইফরাদের পরিচয়ঃ ইফরাদ শব্দের আভিধানিক অর্থঃ একা, একাকি বা পৃথক। শরিয়তের পরিভাষায় মিক্বাত হতে শুধু হজ্বের নিয়ত করে ইহরাম বেধে শুধুমাত্র হজ্ব সম্পন্ন করার নাম ইফরাদ।
হজ্বে তামাত্তু এর পরিচয়ঃ তামাত্তু এর আভিধানিক অর্থঃ উপকারিতা অর্জন করা, উপভোগ করা। পরিভাষায় মিক্বাত হতে প্রথমে ওমরার ইহরাম বেধে তার কার্যাবলি সমাপন করে হালাল হওয়ার পর হজ্বের সময় হজ্বের ইহরাম বেধে তার আহকাম সমূহ সম্পাদন করাকে তামাত্তু বলে।

হজ্বে ক্বেরান এর পরিচয়ঃ ক্বেরানের শাব্দিক অর্থঃ মিলানো, মিশ্রন করা। পরিভাষায় মিক্বাত হতে একসাথে হজ্ব ও ওমরার নিয়ত করে ইহরাম বেধে উভয়টিকে একই ইহরামে সমাপ্ত করাকে ক্বেরান বলে।

সর্বোত্তম হজ্ব কোনটিঃ তিন প্রকারের হজ্বের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম আবু হনিফা (রহ.)’র মতে হজ্বে ক্বেরান হচ্ছে সর্বোত্তম হজ্ব। এরপর তামাত্তু তারপর ইফরাদ। কেননা নবিয়ে করিম (সা.) বিদায় হজ্বের সময় ক্বেরান হজ্ব করেছেন এবং তার পরিবারবর্গকেও তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া এটা পালন করা খুবই কষ্টকর। কারণ এতে দুটি ইবাদত একসাথে করা হয়।



হজ্বের অর্থ ও তাৎপর্য আলোচনা

বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
পাঠ সংক্ষেপ
হজ্বের অর্থ ও তাৎপর্য আলোচনা

বস্তুত হজ্বের দৃশ্য বড়ই বিস্ময়কর ও হৃদয়স্পর্শী। এ দৃশ্য দেখে মুমিনগণ আনন্দিত হন এবং একত্ববাদীগণ হন সম্মানিত ও গর্বিত। সেই সাথে অপরাধীরা হয় লজ্জিত এবং উদাসীনদের হয় দৃষ্টিভ্রম। এ সুবিশাল সমাবেশ ও মহান মিলনমেলা আমাদেরকে কোনো উপদেশ ও শিক্ষা না দিয়ে বিদায় নেবে তা হতে পারে না।

প্রথম খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ جَعَلَ الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْنَا وَأَمَرَ بِاتِّخَاذِ مَقَامٍ إِبْرَاهِيْمَ مُصَلَّى وَفَرَضَ عَلَى عِبَادِهِ حَجَّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلاً، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ :
হজ্ব, মুমিনের মিলনমেলা ডাকে তোমাকে হাতছানি দিয়ে,ইব্রাহীমি আহ্বান নিয়ে ডাকে শুদ্ধ হতে, ফিরে যেতে নবজাতকের পবিত্রতায়।
মুহতারাম হাযেরীন! আপনারা কি হজ্ব ও তার বিশালত্বের বিষয়টি কল্পনা করেছেন? আপনারা কি দেখেছেন ঈমান ও তার সমুজ্জ্বলতা? লক্ষ্য করেছেন লোকদের বিরাট সমাবেশ, যারা বাইতুল্লাহ শরীফে আগমন করেছে আল্লাহর বড়ত্ব, প্রশংসা ও বুযুর্গী বর্ণনা করতে করতে? বস্তুত হজ্বের দৃশ্য বড়ই বিস্ময়কর ও হৃদয়স্পর্শী। এ দৃশ্য দেখে মুমিনগণ আনন্দিত হন এবং একত্ববাদীগণ হন সম্মানিত ও গর্বিত। সেই সাথে অপরাধীরা হয় লজ্জিত এবং উদাসীনদের হয় দৃষ্টিভ্রম।

অতএব, হে মুসলমানগণ! আমার তো মনে হয় না যে, এই সুবিশাল সমাবেশ ও মহান মিলনমেলা আমাদেরকে কোনো উপদেশ ও শিক্ষা না দিয়েই বিদায় নিবে!
মক্কার পবিত্র ভূমিতে আল্লাহ তা‘আলার দাওয়াতে লোকদের এই বিশাল সমাবেশ সংঘটিত হয়। তারা উপস্থিত হয় আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা ও তার একত্ববাদের ঘোষণা দেয়ার জন্য। তাই যারা সামার্থ্য রাখে তাদের ওপর হজ্ব করে দিয়ে আল্লাহ তাঅ‘লা বলেন:
{ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ البَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً }
‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্ব করা ফরজ’ (সূরা আল ইমরান: ৯৭)।

হজ্বের সমাবেশ অনেক বড় সমাবেশ যা দেখে গোটা বিশ্ব কম্পিত হয়, ইসলামের দুশমনেরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয় এবং ইহুদী-খৃস্টানেরা ঘাবড়ে যায়। এতে কি আপনারা এই দীনের শ্রেষ্ঠত্ব এবং এই উম্মতের মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছেন না?

প্রিয় ভাইয়েরা! হজ্ব হলো উম্মতের বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় একত্রিত হওয়ার ময়দান এবং অপদস্থতার পর ইজ্জত বা সম্মানের মিনারা স্বরূপ। শুধু তাই নয়, হজ্ব মুসলমানদের জীবন ও অস্তিত্বের আলামতও বটে। এ সত্ত্বেও উম্মতের জন্য কি এটা উচিত হবে যে, তারা হজ্বের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ আমলের ভেদ ও রহস্য উদঘাটন করা থেকে নির্লিপ্ত থাকবে?

হজ্ব হলো পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, ঈমানের নবায়ন করা এবং একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার স্থান।
কেননা হজ্ব করতে এসে এক মুসলমান দূরের আরেক মুসলমানের সাথে পরিচিত হয়, তার কথা শুনে এবং সাহায্যের মুখাপেক্ষী হলে তাকে সাহায্য করে।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! হজ্বের রহস্য ও ভেদ জানার জন্য প্রয়োজন হলো হজ্ব সম্পর্কিত আয়াতগুলো সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বায়তুল্লাহ শরীফের বুনিয়াদ রেখেছেন যাতে মানুষ তার একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয় এবং তার ইবাদত করে। যেমন তিনি বলেন:
{ وَإِذْ بَوَّأْنَا لإِبْراهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لاَّ تُشْرِكْ بِى شَيْئًا وَطَهّرْ بَيْتِىَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ }
‘আর স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমকে সে ঘরের (বায়তুল্লাহ্র) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারীদের জন্য, নামাযে দণ্ডায়মানদের জন্য এবং রুকু সেজদাকারীদের জন্য’ (সূরা হাজ্জ: ২৬)।

নিশ্চয় খালেস ও নির্ভেজাল একত্ববাদ আল্লাহর এই যমীনে মানুষের খিলাফতের ভিত্তি এবং সর্বোৎকৃষ্ট ও মহিমান্বিত একটি বিষয়। বস্তুত নির্ভেজাল একত্ববাদই পারে গোটা মানবজাতিকে আল্লাহ তা‘আলার যাত ও সিফাতের মধ্যে শিরক করা থেকে নিরাপদ রাখতে।

একত্ববাদে বিশ্বাসী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকেই কিছু পাওয়ার আশা রাখে, তাকেই সে ভয় পায় এবং তার কাছেই সে সাহায্য প্রার্থনা করে। উপরন্তু সে এটাও কামনা করে যে, আল্লাহর যমীনে যেন আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়, তাঁর বিধি-বিধানই কার্যকর হয়।

হজ্বের অন্যতম শিক্ষা হলো তাওহীদ। হজ্বের প্রতিটি বিধানই তাওহীদী ভাবধারাকে আন্দোলিত করে তোলে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়রাজ্যে।

বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সময় আমরা হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করি অথবা স্পর্শ করি অথবা হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করি। রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণার্থেই আমরা কেবল এরূপ করি। তাছাড়া হাজরে আসওয়াদের আলাদ কোনো বরকত নেই। হাজরে আসওয়াদ কেবলই একটা পাথর মাত্র যা উপকার অপকার কোনোটাই করতে পারে না। উমর রাযি. তার ভাষায় উক্ত বিষয়টিকে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেন:
( إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لَا تَضُرُّ وَلَا تَنْفَعُ، وَلَوْلَا أَنِّيْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ )
‘ আমি জানি, তুমি একটি পাথর বৈ কিছু নও। তুমি না কোনো ক্ষতি করতে পারো, না কোনো উপকার করতে পারো। যদি আমি এটা না দেখতাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে চুম্বন করেছেন তাহলে কখনোই আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না’।

অতএব একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের উচিত যে, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন এবং রুকনে ইয়ামানীর স্পর্শ আমাদের কোনো প্রকার লাভ কিংবা ক্ষতি করতে পারবে না। লাভ-ক্ষতির মালিক একমাত্র আল্লাহ। এ বিষয়ে একমাত্র তাঁরই রয়েছে সর্বময় ক্ষমতা।যদি এই বিশ্বাসে কোনো ত্রুটি আসে তাহলে তা শিরক হবে, যা বাইতুল্লাহ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকেই ব্যহত করবে। তাই আমাদের সবাইকে এই ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে যে কোনো মূল্যে বেঁচে থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর সিদ্দীক রাযি.-কে নবম হিজরীতে হজ্বে পাঠিয়েছিলেন। হজ্বের উদ্দেশ্যে সমবেত মানুষদেরকে তিনি এই ঘোষণা শোনাতে বললেন যে, কোনো মুশরিক এবছরের পর হজ্ব করবে না। কেউ উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফও করবে না’ ( বুখারী ও মুসলিম)।
হজ্ব তাওহীদী আকীদাকে দৃঢ় ও মজবুত করে, শিরক বর্জনের মানিসকতায় সৃষ্টি করে নতুন উত্তাপ। ইরশাদ হয়েছে:
{ ذلِكَ وَمَن يُعَظّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبّهِ وَأُحِلَّتْ لَكُمُ الأنْعَامُ إِلاَّ مَا يُتْلَى عَلَيْكُمْ فَاجْتَنِبُواْ الرّجْسَ مِنَ الأوْثَانِ وَاجْتَنِبُواْ قَوْلَ الزُّورِ }
‘ এটিই বিধান। আর কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয়সমূহকে সম্মান করলে তার রবের নিকট তাই তার জন্য উত্তম। আর তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু, তবে যা তোমাদের কাছে পাঠ করা হয় তা ছাড়া। সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর’ (সূরা আল হাজ্জ:৩০)।

হজ্ব পালনকারীদের আরেকটি বিষয় সম্পর্কে অবগতির প্রয়োজন। তা হলো, হজ্বরত অবস্থায় হজ্বের কার্যাবলী যথাযথভাবে সম্পাদন করলে যেমন পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তেমনি তাতে অবহেলা বা ত্রুটি করলেও কঠোর ধমক ও সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা হজ্বের বিধি-বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন:
{ ذلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَاتَّقُواْ اللَّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ }
‘ এ নির্দেশ তাদের জন্য, যাদের পরিবার-পরিজন মসজিদুল-হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহ্কে ভয় কর। এবং জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্ আযাবদানে কঠোর’ (সূরা বাকারা: ১৯৬)।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা একথা বলেননি যে, নিশ্চয় আল্লাহ পরম দয়াশীল। বরং বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ আযাবদানে কঠোর। এভাবে বলার কারণ হলো, লোকজন যাতে হজ্বের সম্মান যথাযথভাবে বজায় রাখে এবং তাকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করে। আর ধমক তো শুধু অবহেলাকারিদের জন্যই।
হাজীদের আরো একটি বিষয় অবগত হওয়া প্রয়োজন। তা হলো, গরিব ও অভাবগ্রস্থদের কথা বিবেচনায় রাখা। ইরশাদ হয়েছে:
{ لّيَشْهَدُواْ مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُواْ اسْمَ اللَّهِ فِى أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مّن بَهِيمَةِ الأنْعَامِ فَكُلُواْ مِنْهَا وَأَطْعِمُواْ الْبَائِسَ الْفَقِيرَ }
‘ যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ্র নাম স্মরণ করে তাঁর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ্ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও’ (সূরা-হাজ্জ: ২৮)।

অন্য আয়াতে তিনি বলেছেন:
{ فَكُلُواْ مِنْهَا وَأَطْعِمُواْ الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذالِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ }
‘অতঃপর তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু যাঞা করে না তাকে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সূরা-হাজ্জ: ৩৬)।

মুসল্লিয়ানে কেরাম! হজ্বের শিক্ষণীয় বিষয় থেকে আরো একটি বিষয় হলো, হজ্ব তাকওয়া বা পরহেযগারী অবলম্বন করার গুরুত্ব এবং বান্দার আমলে তার সীমাহীন প্রভাবের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দেয়।

তাকওয়া হলো ঐ মাপকাঠি, যদ্বারা আমল ওজন করা হয়। অনুরূপভাবে তার মাধ্যমে মানুষের মর্যাদাও নিরুপন করা হয়। একারণেই হজ্ব সম্পর্কিত আয়াতগুলোতে তাকওয়ার ব্যাপারে অধিক পরিমাণে ওসিয়ত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
{ وَاتَّقُواْ اللَّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ }
‘আর আল্লাহ্কে ভয় কর। এবং জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্র আযাবদানে কঠোর’ (সূরা-বাকারা:১৯৬)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
{ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ ياأُوْلِي الألْبَابِ }
‘আর তোমরা পাথেয় গ্রহণ কর। নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় তাকওয়া। আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর’ (সূরা বাকারা:১৯৭)।

তিনি আরো বলেন :
{ فَمَن تَعَجَّلَ فِى يَوْمَيْنِ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى }
‘অতঃপর যে তাড়াহুড়া করে দ’ুদিনে চলে আসবে, তার কোনো পাপ নেই। আর যে বিলম্ব করবে তারও কোনো অপরাধ নেই। এ বিধান তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমাদেরকে তাঁরই কাছে সমবেত করা হবে’ (সূরা আল-বাকারা: ২০৩)।

অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন:
{ ذلِكَ وَمَن يُعَظّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ }
‘এটাই হলো আল্লাহর বিধান যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই’ (সূরা হজ্জ: ৩২)।

তিনি আরো বলেন :
{ لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَلَاكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ }
‘আল্লাহ্র কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া’ (সূরা আল-হজ্জ: ৩৭)।

বস্তুত তাকওয়া হলো সকল কল্যাণের আধার।
প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহ তা‘আলার দরবারে মানুষের মর্যাদা ও পরিচয় ভাষা, বর্ণ, দৈহিক আকৃতি ও দেশের ভিত্তিতে হয় না। বরং তা হয় একমাত্র তাকওয়ার ভিত্তিতে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
{ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عَندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ }
‘নিশ্চয় তোমদের মধ্যে আল্লাহ্র কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়াসম্পন্ন’ (সূরা হুজুরাত: ১৩)।

আল্লাহর বান্দাগণ! তাকওয়ার ভিত্তিতেই মানুষ মর্যাদার সুউচ্চ আসনে সমাসীন হয় এবং এর দ্বারাই সে অর্জন করে বুযুর্গী ও শ্রেষ্ঠত্ব। যেমন সুহাইব ও সালমান ফারসী রাযি.।

পক্ষান্তরে মানুষের মধ্যে যদি তাকওয়া না থাকে তাহলে তার অপমান ও অপদস্থতা সুনিশ্চিত হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে লাঞ্ছিত ও বেইজ্জত করেন। যেমন তিনি শিরক ও কুফরীর কারণে আবু লাহাবকে লাঞ্ছিত করেছেন। করেছেন সীমাহীন অপমানিত। আর তাকওয়ার কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় ফুফাতো বোন জয়নব বিনতে জাহ্শকে যায়েদ ইবন হারেসা রাযি. এর সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ করেন। অথচ যায়েদ ইবন হারেসা রাযি. ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আযাদকৃত দাস।

হজ্বের আরেকটি রহস্য ও তাৎপর্য হলো, তা এ উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানায়।

হজ্বের সময় হাজীগণ একই স্থানে একত্রিত হন এবং একই সাথে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে নিমগ্ন হন। নামায আদায় এবং সিয়াম সাধনার ক্ষেত্রেও মুসলমানগণ ঐক্যের পরিচয় দেন। মষ্টিগত এই ইবাদতগুলো মুসলিম উম্মাহকে সাম্য ও ঐক্যের শিক্ষা দেয়। সেই সাথে এও জানিয়ে দেয় যে, এ জাতি কখনো সফল হতে পারবে না যদি না তারা ঐক্যবদ্ধ হয়।

একথা আজ দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার যে, বর্তমানে মুসলমানদের উপর কাফির-মুশরিকরা যে আগ্রাসন চালাচ্ছে তা কেবল তাদের দ্বিধা বিভক্তি ও ঐক্যহীনতার কারণেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:
{ وَلاَ تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ }
‘আর তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে’(সূরা আল-আনফাল: ৪৬)।

হজ্বের বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে এটিও একটি যে, হজ্ব ঈমানকে নতুনত্ব দান করে, আত্মাকে সংশোধন করে এবং বিভিন্ন প্রকার আত্মিক ব্যাধি ও কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে। হজ্বের সময় তাওহীদ বা একত্ববাদের বুলন্দ আওয়াজ যমীনকে প্রকম্পিত করে এবং হাজীগণ মশগুল হয় বিভিন্ন প্রকার ইবাদতে যা তাদের গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং ছাওয়াবকে বর্ধিত করে। হাদীসে এসেছে:
( مَنْ حَجَّ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ مِنْ ذُنُوْبِهِ كَيَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ )
‘যে ব্যক্তি হজ্ব করল এবং কোনোপ্রকার অশ্লীল ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হলো না, তবে সে গোনাহ থেকে পবিত্র হয়ে এমনভাবে ফিরে আসবে, যেমন ছিল তার জম্মদিবসে’ (বুখারী)।

হজ্বের তাৎপর্যসূহের মধ্যে এটিও একটি যে, হজ্ব কাফির সম্প্রদায়ের নিকট এ মর্মে পত্র প্রেরণ করে, হে কাফির ও অমুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা চেয়ে দেখো মুসলিম জাতি তাদের ধর্ম পালনে কত অবিচল ও সুশৃঙ্খল! কত মজবুত ও অটল!! এতে কাফিরগোষ্ঠী ভীত-সন্তস্ত্র হয় এবং মুসলমানদের তারা ভয় পায়। তারা মুসলমানদের সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস পায় না। তারা হয়ে যায় বাকশক্তিহীন ।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْم، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

দ্বিতীয় খুৎবা
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على أشرف المرسلين وعلى آله وأصحابه أجمعين، أما بعد:
মুহতারাম হাযেরীন! হজ্বের আরেকটি তাৎপর্য হলো, হজ্ব মানুষকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সেই কঠিন দিবসের ব্যাপারে সতর্ক করে। আল কুরানে ইরশাদ হয়েছে:
{ رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لاَّ رَيْبَ فِيهِ }
‘হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি এমন এক দিনে লোকদেরকে সমবেত করবেন যেদিনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই’ (সূরা আল ইমরান: ৯)।

আরাফার দিনকে একটি ছোটোখাটো কিয়ামতের দিনই বলা যায়। এ দিনটি মানুষকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যেমনিভাবে তোমরা আজকের এই দিনে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হয়েছ, ঠিক তেমনি তোমাদেরকে ভীত-সন্তস্ত্র ও ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে একদিন মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে।

হজ্ব হলো সম্মিলিতভাবে ইবাদত করার এমনি এক বিশাল চিত্র, যা ইতিপূর্বে অন্য কোনো উম্মতকে দেয়া হয়নি। যা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব ও স্থায়িত্বের প্রমাণ বহন করে। উপরন্ত হজ্ব মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে এবং বৃদ্ধি করে মহব্বত ও ভালোবাসা।

হজ্ব ইসলামের পঞ্চম রুকন এবং সুদূরপ্রসারী গভীর তাৎপর্যপূর্ণ একটি ইবাদত।
হজ্বের বিধান যেমন একাধারে যুগ ও কালের সকল সীমানা পেরিয়ে সমগ্র মানবজাতির মনে ঐতিহ্য-চেতনা অম্লান করে রাখে, তেমনি সকল ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করে এক আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মানবজাতির ঐক্য ও অভিন্নতার অনুভূতি জাগ্রত করে দেয়। ভাষা, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষই যে একে অপরের সাথে একটা অভিন্ন ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ এ মনোভাব সৃষ্টিতে হজ্ব যে তুলনাবিহীন একটি অনুষ্ঠান, এ সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

হজ্ব মানবজাতির জন্য একটি বহুমুখী উপকারী ইবাদত এই ইঙ্গিত পবিত্র কুরআনে রয়েছে। এসবের যে কোনো একটি দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা বৃহৎ একটি গ্রন্থের পরিসর সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া স্থল ও সমুদ্র পথের সীমাহীন কষ্টসাধ্য সফরে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে হজ্বের অবদান স্মরণীয়।

হজ্বের সমাবেশে দুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক অবস্থান এবং কুশলাদি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, প্রত্যেক অঞ্চলের সমস্যাদি সম্পর্কে পরামর্শ ও সমাধানের ব্যাপারে একে অন্যের সহযোগিতার পন্থা উদ্ভাবন প্রভৃতিও কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
(إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে হজ্বের প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্য ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে আপনার মর্জি অনুযায়ী হজ্ব আদায় করার তাওফীক দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ থেকে হেফাযত করুন। আমাদের অভাব দূর করে দিন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকর্মে বরকত দিন। আমাদেরকে হালাল কামাই করার তাওফীক দিন।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله :(إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.



নসীহত ও আমানত

বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
নসীহত ও আমানত

পাঠ সংক্ষেপ
নসীহত ও আমানত: নসীহত তথা কল্যাণকামিতা হলো দীনের ভিত্তি,মৌল উপকরণ।বরং দীনের পুরোটাই হলো কল্যাণকামিতা। নসীহত হবে আল্লাহর জন্য,আল্লাহর কিতাবের জন্য, মুসলমানদের নেতা ও কর্ণধার এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য।মানুষ যদি উল্লিখিত বিষয়গুলোয় কল্যাণকামী হয় তবে সে তার দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে নেয়। আর যদি কোনো একটিতে অবহেলা করে তবে অবহেলার মাত্রানুযায়ী দীনকে অপূর্ণাঙ্গ রেখে দেয়। অবশ্য নসীহত তথা কল্যাণকামিতার ক্ষেত্রে একজন মুসলমানকে আমানদারিরও পরিচয় দিতে হবে সমানভাবে। কোনো মানুষকে তোষামোদের আশ্রয়ে না গিয়ে যা সত্য তা প্রকাশ করতে হবে অকুতোভয়ে।

প্রথম খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ خَلَقَ الْخَلْقَ لِيَعْبُدُوهُ، وَأَبَانَ آيَاتِهِ لِيَعْرِفُوْهُ، وَأَرْسَلَ رُسُلَهُ وَأَنْبِيَاءَهُ نُصَحَاءَ أُمَنَاءَ لِيَعْرِفَ النَّاسُ طَرِيْقَ الْوُصُولِ إِلَيْهِ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، وَأَشْهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوُلُهُ صَلََّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ :

আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

মুহতারাম হাযেরীন! আজ আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা রাখব। বিষয়টি এতই জরুরী যে, প্রতিটি মুসলমান নর-নারী তার প্রতি মুখাপেক্ষী। শুধু তাই নয়, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পূর্ণ দীন বলে অভিহিত করেছেন এবং সমস্ত নবী-রাসূল তার ওপর আমল করেছেন। বিষয়টি হলো, নসীহত বা কল্যাণকামিতা।

নসীহত কাকে বলে? এ সম্পর্কে ইমাম খাত্তাবী রহ. ও অন্যান্যরা বলেন, ‘নসীহত হলো, অন্যের ভালো চাওয়া বা কল্যাণ কামনা করা’।
প্রিয় মুসল্লিয়ান! আল্লাহ তা‘আলার একমাত্র মনোনীত দীন হলো ইসলাম। আর ইসলামের মূল ভিত্তি হলো-নসীহত। যেমন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
(الدَّيْنُ النَّصِيْحَةُ، الدَّيْنُ النَّصِيْحَةُ، الدَّيْنُ النَّصِيْحَةُ، قَالُوْا : لِمَنْ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ؟ قَالَ : لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ ‘)
দীন হলো নসীহত, দীন হলো নসীহত, দীন হলো নসীহত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নসীহত কার জন্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: মহান আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, মুসলমানদের ইমাম এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য’ (মুসলিম)।

সুতরাং যখন কোনো বান্দা হাদীসে বর্ণিত ক্ষেত্রসমূহের জন্য পরিপূর্ণরূপে নসীহত বা কল্যাণ কামনা করবে তখন তার দীন পূর্ণ হবে। আর এতে যার যতটুকু কমতি থাকবে তার দীন ততটুকু কম থাকবে।

সুপ্রিয় মুসল্লিয়ান! আল্লাহর জন্য নসীহতের অর্থ, যাবতীয় আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনে আন্তরিক হওয়া। এটা এভাবে করতে হবে যে, প্রতিটি মানুষ নিজকে সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ তা‘আলার দাস বলে মনে করবে, তাঁর যে কোনো ফয়সালা মেনে নিবে, তিনি যা দিয়েছেন তা নিয়েই তুষ্ট থাকবে, তাঁর আদেশগুলো পালন করবে ও নিষেধগুলো বর্জন করবে এবং উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই উদ্দেশ্য ও মকসুদ বানাবে কোনো অবস্থাতেই লৌকিকতা ও সুনাম-সুখ্যাতি কামনা করবে না।

আল্লাহর কিতাবের জন্য নসীহতের অর্থ
আল্লাহর কিতাবের জন্য নসীহতের অর্থ হলো, তা তিলাওয়াত করা, তাতে বর্ণিত আদেশ-নিষেধগুলো মেনে চলা, তার বিষয়সমূহের সত্যায়ন করা, ভ্রান্ত মতালম্বীদের রদবদল ও মুলহিদদের অপব্যাখ্যা থেকে তাকে রক্ষা করা এবং এ বিশ্বাস রাখা যে, এটা মহান রাব্বুল আলামীন, আল্লাহ তা‘আলা র কালাম, যা ওহীর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।
 
আল্লাহর রাসূলের জন্য নসীহতের অর্থ
আল্লাহর রাসূলের জন্য নসীহতের অর্থ হলো, তাঁকে মনেপ্রাণে মহব্বত করা, জাহেরী বাতেনী উভয় দিক দিয়ে তাঁর অনুসরণ করা, তাঁর জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর তাঁকে সাহায্য করা, তাঁর বক্তব্য ও হেদায়েতকে অন্যসব বক্তব্য ও হেদায়েতের ওপর প্রাধান্য দেয়া ইত্যাদি।

মুসলমানদের ইমামের জন্য নসীহতের অর্থ
মুসলমানদের ইমাম বা শাসকগোষ্ঠির জন্য নসীহতের অর্থ হলো, তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা, তাদেরকে ঐসব বিষয়ে সুপরামর্শ দেয়া যেসব বিষয়ে উম্মতের দীন ও দুনিয়ার ফায়দা নিহিত আছে এবং সেই সুপরামর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কথা শোনা ও মানা এবং এই বিশ্বাস রাখা যে, তারা আমাদের অনুসরণীয় ব্যক্তি। কেননা এর বিপরীত করা তাদের নির্দেশাবলীর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন এবং সীমাহীন বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বৈ কিছু নয়।

সমস্ত মুসলমানের জন্য নসীহতের অর্থ
সমস্ত মুসলমানের জন্য নসীহতের অর্থ হলো, নিজের জন্য যা পছন্দ করা হয় তা তাদের জন্য পছন্দ করা, তাদের জন্য কল্যাণের যাবতীয় দরজা খুলে দেয়া, কল্যাণের প্রতি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা, মন্দ ও অকল্যাণের যাবতীয় পথ বন্ধ করা এবং তা থেকে তাদেরকে দূরে রাখা। পরস্পরে ভালোবাসা ও ভ্রাত্বত্বের বিনিময় করা, তাদের সৌন্দর্য ও গুণসমূহের প্রচার করা এবং দোষসমূহ গোপন রাখা। যালেম-মাযলুম উভয়কে সাহায্য করা। তা এভাবে যে, যালেমকে তার যুলম থেকে বিরত রাখা এবং মযলুমকে যুলম থেকে রক্ষা করা।

যখন কোনো সমাজ উল্লিত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে তখন সেখানে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে এবং সমাজের লোকজন স্বাচ্ছন্দময় ও প্রশংসনীয় জীবনযাপন করবে।হে আল্লাহর বান্দাগণ! পূর্বের আলোচনা দ্বারা একথা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, নসীহত বা কল্যাণকামিতা গোটা দীনকে শামিল করে। শামিল করে দীনের ছোট-বড় সকল শাখা-প্রশাখাসহ আল্লাহ ও তার বান্দাদের যাবতীয় হক বা অধিকারসমূহকে।সুতরাং যেখানে আল্লাহর হক পদদলিত করে হারামকর্ম সম্পাদন করার দুঃসাহস দেখানো হয়, সেখানে কি আল্লাহর জন্য নসীহত থাকে?এমনিভাবে যেখানে আমানতের খেয়ানত করা হয় এবং লেনদেনে ধোঁকা দেওয়া হয় সেখানে কি নসীহত থাকে?

অনুরূপভাবে যেখানে মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ার কামনা করা হয় এবং যেখানে তাদের দোষত্র“টি ও পদস্খলন খুঁজে বেড়ানো হয় সেখানে কি নসীহত থাকে? বস্তুত যাদের মধ্যে এগুলো বিদ্যমান তারা নসীহত বা কল্যাণকামিতার গুণ থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে।

কল্যাণকামীদের জন্য সুসংবাদ! আর ধোঁকাবাজদের জন্য আফসোস!! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এবং আপনাদের সবাইকে নসীহতের গুণে গুনান্বিত করুন এবং লাঞ্ছনা ও অপমানের যাবতীয় উপায়-উপকরণ থেকে হেফাযত করুন। আমীন। কল্যাণকামী ব্যক্তিকে কল্যাণ কামনার সময় যেসব বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে

১. নসীহত যার জন্যই হোক না কেন, তাতে কোনো রিয়া বা লৌকিকতা থাকবে না। থাকবে না কোনো সুনাম বা সুখ্যাতি অর্জনের কামনা-বাসনা বরং নসীহত বা কল্যাণকামনা হবে শুধু আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। অন্যকোনো উদ্দেশ্যে নয়। কেননা যেসব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয় না তা আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
{وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ}
‘তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছে যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে’ (সূরা বায়্যিনাহ: ৫)।

২. নসীহত হতে হবে ইলমনির্ভর। অর্থাৎ যে বিষয়ের নসীহত করা হচ্ছে, সে বিষয়ে নসীহতকারীর স্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে।

৩. নসীহতকারীকে অবশ্যই আমানতদার ও বিশ্বস্ত হতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা হূদ আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
{أُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَأَنَا لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ ‘}
আমি তোমাদের নিকট আমার রবের পয়গাম পৌঁছে দেই। আর আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত কল্যাণকামীও বটে’ (সূরা আল আরাফ:৬৮)।

৪. শাসক-শাসিত সবার জন্য নসীহত হবে গোপনে। তবে নসীহত বা কল্যাণকামনার বিষয়টি যদি এমন হয় যে, গোপনে তা সম্পাদন করা সম্ভব নয় তখন তা প্রকাশ্যে করাতে কোনো অসুবিধা নেই। বিশেষ করে বিষয়টি যদি ইজমা তথা সকলের ঐক্যমতে প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয়ের বিরোধিতা প্রতিহত করার জন্য হয় তবে তো সেই নসীহত অবশ্যই প্রকাশ্যে করতে হবে।

৫. যার কল্যাণ কামনা করা হয় তার থেকে কল্যাণাকামীকে বেশী জ্ঞানী, মর্যাদায় বড় এবং ন্যায়পরায়ণতায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হওয়া জরুরী নয়।
ইমাম আহমদ ইবনে ইসহাক বলেন, ‘স্বল্পজ্ঞানী ব্যক্তি যদি অধিকজ্ঞানী ব্যক্তিকে অন্যায় কর্মে বাধা দিতে না পারত, তাহলে আমর বিল মারুফ বা সৎকাজের আদেশ করার বিষয়টি বন্ধ হয়ে যেত এবং আমরা বনী ইসরাঈলের মতো হয়ে যেতাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
{كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ‘}
তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না, যা তারা করত’ (সূরা মায়িদা: ৭৯)।
মোটকথা, কম সম্মানী ব্যক্তি অধিক সম্মানী ব্যক্তিকে এবং পাপাচারী ব্যক্তি নেককার ব্যক্তিকেও নসীহত করতে পারবে। পারবে তাকে অন্যায় ও গর্হিত কর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখতে এবং এসব বিষয়ে তাকে সতর্ক করতে। তবে এক্ষেত্রে তাদের ইজ্জত-সম্মানের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তাদের মর্যাদায় কোনো আঘাত না লাগে।

একবার হাসান বসরী রহ. এক লোককে দেখলেন যে, সে এক ব্যক্তির জানাযা পড়ে ফিরছে। হাসান বসরী রহ. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি এরূপ মনে হয় যে, লোকটি যদি পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে আসতে পারত তবে কি সে নেক আমল করত? লোকটি জবাবে বলল, হ্যাঁ। তখন হাসান বসরী রহ. বললেন, সে তো আর ফিরে আসতে পারবে না এবং নেকআমলও করতে পারবে না কিন্তু তুমি তো জীবিত আছ। তাই তুমি তার স্থলে পৌঁছার আগেই নেক আমল করে নাও।আমরা যদি খুলাফায়ে রাশেদীন এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত ইমামগণের জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখব যে, তাদের কোনো দোষ কেউ ধরিয়ে দিলে তারা তাতে বেশ খুশি হতেন এবং কল্যাণকামী ব্যক্তির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন। এটাকে তারা মোটেই খারাপ মনে করতেন না।

আবূ বকর রাযি. বলেন, কেউ আমাদের দোষ ধরে দিলে আমরা যদি তা গ্রহণ না করি তবে আমাদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। আর তোমাদের মধ্যেও কোনো কল্যাণ নেই, যদি তোমরা আমাদের দোষ-ত্র“টি না ধর’।
উমর রাযি. বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো দোষ ধরিয়ে দিল আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর রহম করুন।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر ِالحْكِيْمِ, أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

দ্বিতীয় খুৎবা
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، أَحْمَدُهُ سُبْحَانَهُ وَأَشْكُرُهُ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ نَبِيَّنَا مُحَمَّدا عَبْدُهُ وَرَسُوُلُهُ صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَعَلَىَ آَلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَىَ يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ:
সুপ্রিয় মুসল্লিয়ান! আমানত একটি বিরাট দায়িত্ব ও ভারী বোঝা। তবে আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য তা হালকা করে দেন তার কথা ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
{إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا.}
‘নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত পেশ করেছিম অতঃপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করেছে এবং এতে ভীত হয়েছে। নিশ্চয় সে ছিল অতিশয় যালিম, একান্তই অজ্ঞ’ (সূরা আহযাব: ৭২)।

আমানত কাকে বলে? আমানত হলো, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তার হক ও ইবাদতসমূহ শরীয়ত সমর্থিত পন্থায় আদায় করা এবং কোনো ধরনের ত্রুটি ও কম না করে মানুষের হকসমূহ আদায় করা।
মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন আমানতকে তার নিজ নিজ হকদারের কাছে পৌঁছে দেই এবং লোকদের মাঝে ন্যায়বিচার করি। বস্তুত এ দুটি বিষয় এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলো ছাড়া আমানতের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না।
প্রিয় মুসল্লিয়ান! আমরা সবাই জানি যে, আমানত রক্ষা করার এই গুরুদায়িত্ব সবখানেই আছে। আছে প্রতিটি জিনিসের মধ্যে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
(كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالْإِمَامُ رَاعٍ، وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِيْ أَهْلِهِ، وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِيْ بَيْتِ زَوْجِهَا، وَهِيَ مَسْؤُوْلَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا ، وَالْخَادِمُ رَاعٍ فِيْ مَالِ سَيِّدِهِ، وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِيْ مَالِ أَبِيْهِ وَهُوَ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ)
‘ সরকারপ্রধান বা আমীর তার প্রজাদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল। সেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। খাদেম তার মনিবের সম্পদে দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ব্যক্তি তার পিতার সম্পদে দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’ (বুখারী)।

প্রিয় মুসল্লিয়ান! আমানতের বিষয়টি কেবল অর্থ-সম্পদ আদায় ও অঙ্গীকার পূরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ।
আমানত হচ্ছে- তাওহীদের বৃক্ষ, ঈমানের ফল, হিজরতকারীদের জন্য ছায়া এবং মুসাফিরের জন্য পাথেয় স্বরূপ।
এটা মূল্যবান মোতি, স্বচ্ছ মণি এবং দক্ষ কারীগরের হাতে নির্ভেজাল খনি সদৃশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
(إِنَّ الْأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِيْ جَذْرِ قُلُوْبِ الْرِّجَالِ ثُمَّ عَلِمُوْا مِنْ الْقُرْآنِ ثُمَّ عَلِمُوْا مِنْ السُّنَّةِ)
‘নিশ্চয় আমানত প্রথমে মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় অবর্তীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তারা তাকে কুরআন থেকে শিখেছে, তারপর শিখেছে হাদীস থেকে’ (বুখারী)

আমানত হলো, আল্লাহ তা‘আলার বিধি-বিধানকে মানবজীবনের প্রতিটি অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
{الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ}
‘তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে’ (সূরা আল-হজ্জ: ৪১)।

নামায একটি আমানত। যখন কোনো ব্যক্তি নামায নষ্ট করে তখন সে নামায ছাড়া অন্যান্য আমলকে আরো বেশি নষ্ট করবে।
ইমাম যুহরী রহ. বলেন, একদা আমি দামেস্কে আনাস ইবনে মালিক রাযি. এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। দেখলাম, তিনি অঝোরে কাঁদছেন। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, কেন কাঁদছেন?
জবাবে তিনি বললেন, এখানে আমি নামায ছাড়া অন্য কোনো আমল ঠিকঠাক মতো কাউকে করতে দেখিনি। আজ দেখছি তাও নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ লোকজন এখন নামায ও ঠিকমত আদায় করছে না (বুখারী)।

যাকাতও আমানত। আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী বলে আখ্যায়িত করেন।
রোযা , হজ্ব, মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা, সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করা এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দীনের ওপর অটল থাকাও আমানত। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ, মুসলমানদের ধন-সম্পদ হিফাযত করা এবং অন্যের মান-সম্মান রক্ষা করাও আমানত। অধিকার সংরক্ষণের শক্তিও এক প্রকার আমানত। যেমন বাদশাহ ইউসুফ আলাইহি সালামকে বলেছিলেন:
{إِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِينٌ أَمِينٌ، قَالَ اجْعَلْنِي عَلَى خَزَائِنِ الْأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ}
‘ নিশ্চয় আজ আপনি আমাদের নিকট মর্যাদাবান ও আস্থাভাজন। সে বলল, আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্ব দিন, নিশ্চয় আমি যথাযথ হিফাযতকারী, সুবিজ্ঞ’ (সূরা ইউসুফ: ৫৪-৫৫)।

নবী শুয়াইব আলাইহিস সালামের কন্যা মূসা আলাইহিস-সালাম সম্পর্কে বলেছিলেন :
{يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ}
‘ হে আমার পিতা! আপনি তাকে মজুর নিযুক্ত করুন। নিশ্চয় আপনি যাদেরকে মজুর নিযুক্ত করবেন তাদের মধ্যে সে উত্তম, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত’ (সূরা কাসাস: ২৬)।

প্রতিটি মানুষকে তার নিজ নিজ মর্যাদা অনুযায়ী সম্মান করা, তাদের হক আদায়ে ত্র“টি না করা এবং সকলের সাথে ন্যায়ানুগ আচরণ করাও আমানত। ইরশাদ হয়েছে
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى}
‘ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর’ (সূরা মায়িদা: ৮)।

আল্লাহর একত্ববাদে সাক্ষ্য দেয়া, মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করা এবং হক বা সত্য বিষয় বর্ণনা করাও আমানত।
অতএব, হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহকে ভয় করুন। একে অপরের কল্যাণ কামনা করুন। কেননা কল্যাণকামিতার নামই হলো দীন। যে জাতির মধ্যে পরস্পর কল্যাণ কামনার নিয়ম চালু নেই, সে জাতির কোনো উন্নতি ও কল্যাণ নেই। আমানতকে তার হকদারের কাছে পৌঁছে দিন। মনে রাখবেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

কেবল নিজকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য মানুষের জন্ম নয় বরং মানব জন্মের উদ্দেশ্য হলো, সে নিজের কল্যাণ চিন্তার পাশাপাশি অন্যের কল্যাণও মনেপ্রাণে কামনা করবে।
প্রিয় মুসল্লিয়ান! আজকের আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করতে পারি যে, আমরা আজ থেকে কেবল নিজের কল্যাণ-চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবো না বরং আমার পরিবারের, আমার সমাজের, আমার দেশের এমনকি সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কল্যাণের জন্য যথাসাধ্য সব কিছুই করব। আমরা এর জন্য জান দেব, মাল দেব, সময় দেব। নিজের জ্ঞান ও মেধা খরচ করে অবিরত চিন্তা করে যাব-কিভাবে তাদের মঙ্গল সাধনা করা যায়। কিভাবে তাদের মুখে হাসি ফুটানো যায়। কিভাবে তাদের দঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা এ কাজটি আনজাম দিয়ে যেতে পারি তাহলে পদে পদে আমরা আল্লাহর সাহায্য ও মদদ প্রাপ্ত হবো। এতে কোনো সন্দেহ নেই। উপরন্তু ইহকালীন শান্তি, সুখ, সম্মান ও পরকালীন অফুরন্ত নেয়ামত তো আছেই।

اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ، صَاحِبِ الْوَجْهِ الْأَنْوَرِ، وَالْجَبِيْنِ الْأَزْهَرِ، وَارْضَ اَللَّهُمَّ عَنِ الْأَرْبَعَةِ الْخُلَفَاءِ أَبِيْ بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ وَعَلِيٍّ، وَعَنْ سَائِرِ أَصْحَابِ نَبِيِّكَ أَجْمَعِيْنَ، وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَىَ يَوْمِ الْدِّيِنِ
হে করুণাময় আল্লাহ! আপনি আমাদের শক্তি দিন, সাহস দিন, অন্যের মঙ্গলসাধন করার জন্য খাঁটি মনে পাক্কা এরাদা করার তাওফীক দিন।
হে দয়াময় রব! যারা দীনে মুহাম্মদীর সাহায্যকারী, আপনি তাদেরকে সাহায্য করুন এবং আমাদেরকে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করুন। আর যারা দীনে মুহাম্মদীকে অপমান ও অপদস্থ করতে চায়, তাদেরকে হিদায়েত করুন। তাদের ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ থেকে হিফাযত করুন। আপনি আমাদের নামায , রোযাসহ ছোট বড় প্রতিটি আমল আপনার শান মোতাবেক কবুল করে নিন।
عِبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله ِ: (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.



১০০ সুসাব্যস্ত হাদিস- যিক্‌র ও দুআ ( ৫৮- ৭৩ টি হাদীস) পার্ট-৬

বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
৬ যিক্‌র ও দুআ    
যিক্‌র ও দুআ 

পরিচ্ছেদ ৫৮:
বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা
আবূ উমামা বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমরা কুরআন পড়ো, কারণ তা কিয়ামতের দিন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আগমন করবে।” (মুসলিম ৮০৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৫৯:
সুন্দর সুরে কুরআন পড়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্‌ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ মধুর সুরে কুরআন তেলাওয়াত করার অনুমতি দিয়েছেন অন্য কোন জিনিসকে ঐরূপ পড়ার অনুমতি দেন নাই। তিনি উচ্চঃস্বরে সুন্দর সুরে তেলাওয়াত করতেন।” (বুখারী ৭৫৪৪, মুসলিম ৭৯২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬০:
সর্বাবস্থায় আল্লাহ্‌র যিক্‌র করা
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাবস্থায় আল্লাহ্‌র যিক্‌র করতেন।” (মুসলিম ৩৭৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬১:
তাসবীহ পাঠ করা
৬১
জুয়াইরিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সকালের নামায পড়ে তাঁর কাছ থেকে উঠে বাইরে গেলেন। তিনি তখন তাঁর মসজিদ (নামাযের স্থানে) বসে ছিলেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাশ্‌তের সময় ফিরে এলেন । তখনও তিনি (জুয়াইরিয়া) বসে ছিলেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম সেই অবস্থাতেই তুমি তখন থেকে বসে রয়েছ? তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমার নিকট থেকে যাওয়ার পর চারটি কালেমা তিনবার পাঠ করেছি। আজ এ পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করেছো তার সাথে ওজন করলে এই কালেমা চারটির ওজনই বেশী। কালেমা গুলো হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিযা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’
অর্থাৎ, আমি আল্লাহ্‌র প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর অগণিত সৃষ্টির সমান, তাঁর সন্তুষ্টি সমান, তাঁর আরশের ওজনের পরিমাণ ও তাঁর কালেমা লিখতে যত কালির প্রয়োজন হয় সেই পরিমাণ। (মুসলিম ২৭২৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬২:
হাচির উত্তর দেওয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয়, তখন সে যেন বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং তার ভাই অথবা সাথী যেন (উত্তরে) বলে, ‘ইয়ারহামু কাল্লাহ’ অতঃপর সে যেন বলে, ‘ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউস্‌লিহ বালাকুম’।” (বুখারী ৬২২৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬৩:
রোগীর জন্য দুআ করা
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে বলতেন, “লা বাসা ত্বহুর ইনশাআল্লাহ্” (চিন্তার কোন কারণ নেই আল্লাহ্ চাহেতো পাপ মোচন হবে)। (বুখারী ৫৬৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬৪:
ব্যথার স্থানে হাত রেখে দুআ পড়া
উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সেই ব্যথার অভিযোগ করলেন, যা তিনি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তাঁর শরীরে অনুভব করে আসছেন। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) বললেন, “শরীরে যেখানে ব্যথা অনুভব করছো সেখানে হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলো এবং সাতবার ‘আউযু বিল্লাহি ওয়া ক্বুদরতিহি মিন শার্‌রি মা আজিদু ওয়া উহাযির’ (আমি আল্লাহ্‌র মর্যাদা এবং তাঁর ক্বুদরতের মাধ্যমে সেই ব্যাথা থেকে আশ্রয় কামনা করছি, যা আমি অনুভব করছি এবং যার আমি আশঙ্কা করছি) পড়ো।” (মুসলিম ২২০২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬৫:
মোরগের ডাক শুনে দুআ এবং গাধার আওয়ায শুনে শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ চাইবে। কারণ, সে ফেরেশতা দেখেছে। আর যখন গাধার আওয়ায শুনবে, তখন আল্লাহ্‌র নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করবে। কারণ, সে শয়তান দেখেছে।’ (বুখারী ৩৩০৩, মুসলিম ২৭২৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬৬:
বৃষ্টি হওয়ার সময় দুআ করা
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বৃষ্টি হতে দেখতেন, তখন বলতেন, “আল্লাহুম্মা সাইয়েবান নাফিআ” (হে আল্লাহ্‌ মুষলধারে উপকারী বৃষ্টি বর্ষাও)। (বুখারী ১০৩২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬৭:
বাড়িতে প্রবেশ করার সময় আল্লাহ্‌র যিক্‌র করা
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “যখন মানুষ স্বীয় বাড়িতে প্রবেশ করার সময় মহান আল্লাহ্‌র যিক্‌র করে নেয়, তখন শয়তান (তার সহচরদের) বলে, না তোমরা রাত্রিবাস করতে পারবে, আর না রাতের খাবার পাবে। কিন্তু প্রবেশ করার সময় যদি আল্লাহ্‌র যিক্‌র না করে, তবে বলে, রাত্রিবাসও করতে পারবে এবং রাতের খাবারও পাবে।” (মুসলিম ২০১৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬৮:
মজলিসে আল্লাহ্‌র যিক্‌র করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “লোকেরা যখন এমন কোন মজলিসে বসে যেখানে তারা না আল্লাহ্‌র যিক্‌র করে, আর না তাদের নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করে, তখন এই মজলিস তাদের অনুতাপের কারণ হয়। এখন আল্লাহ্‌ চাইলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন আবার ক্ষমা করেও দিতে পারেন।” (তিরমিযী ৩৩৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৬৯:
পায়খানায় প্রবেশ কালে দুআ করা
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় প্রবেশ করার ইচ্ছা করতেন, তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল খুবুসী ওয়াল খাবাইস’ (হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার নিকট খবিস জ্বিন নরনারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় কামনা করছি)। (বুখারী ৬৩২২, মুসলিম ৩৫৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭০:
ঝড়-তুফানের সময় দু’আ পড়া
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝড়-তুফানের সময় বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা-ফীহা ওয়া খায়রা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযু বিকা মিন শার্‌রিহা ওয়া শার্‌রি মা-ফিহা ওয়া শার্‌রি মা-উরসিলাত বিহি’ (হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার নিকট উহার (ঝড়-তুফানের) কল্যাণ কামনা করছি এবং আমি উহার ভিতরে নিহিত কল্যাণ চাচ্ছি, আর সেই কল্যাণ যা উহার সাথে প্রেরিত হয়েছে। আর আমি উহার অনিষ্ট হতে, উহার ভিতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যে ক্ষতি উহার সাথে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।) (মুসলিম ৮৯৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭১:
অনুপস্থিত মুসলিমদের জন্য দুআ করা
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দুআ করে, তার সাথে নিযুক্ত ফেরেশতা বলেন, আমীন, তোমার জন্যও অনুরুপ।” (মুসলিম ২৭৩২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭২:
মুসীবতের সময় দু’আ করা
উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে মুসলিমই বিপদে পতিত হলে আল্লাহ্‌র নির্দেশ অনুযায়ী বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন, আল্লাহুম্মা জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফলী খায়রাম মিনহা’ (আমরা আল্লাহ্‌র জন্য এবং আমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ্‌! আমার বিপদে আমাকে নেকী দান করো এবং যা হারিয়ে গেছে তার বদলে তার চাইতে ভাল জিনিস দান করো।) তাহলে আল্লাহ্ তাকে তার চাইতে উত্তম জিনিস দান করেন।’ (মুসলিম ৯১৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭৩:
বেশী বেশী সালাম প্রচার করা
বারা ইবনে ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাতটি জিনিস করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রোগীদের দেখতে যাওয়ার--- এবং সালামের ব্যাপক প্রচলন করার। (বুখারী ৫১৭৫, মুসলিম ২০৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png