বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০
আদর্শ সমাজ গঠনে সুরা মাউন এর শিক্ষা
islam-icon
বুধবার, মার্চ ২৫, ২০২০
0
বার দেখা হয়েছে
আদর্শ সমাজ গঠনে সুরা মাউন এর শিক্ষা
-----------ইমামুদ্দিন বিন আব্দুল বাছীর
মানুষ সামাজিক জীব। মানুষকে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হয়। জন্মগত ভাবেই মানুষ সঙ্গী প্রিয়। তারা নিঃসঙ্গ থাকতে পারে না এবং সঙ্গীহিন জীবন পছন্দও করে না। সমাজ বদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হলে কিছু আদব কায়দা তথা শিষ্টাচার বজায় রাখতে হয়।
সুন্নতের অনুসরণ
islam-icon
বুধবার, মার্চ ২৫, ২০২০
0
বার দেখা হয়েছে
পাঠ সংক্ষেপ
খুতবায় যা থাকবে : ১ - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বতের হাকীকত বয়ান, ২ - ইবাদত কখনো কবুল হবে না যদি না তা সুন্নত মুতাবিক হয়, ৩ – ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এ কথায় ঈমান আনার অর্থ একনিষ্ঠভাবে তাঁর অনুসরণ করা
পাঠ সংক্ষেপ
খুতবায় যা থাকবে : ১ - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বতের হাকীকত বয়ান, ২ - ইবাদত কখনো কবুল হবে না যদি না তা সুন্নত মুতাবিক হয়, ৩ – ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এ কথায় ঈমান আনার অর্থ একনিষ্ঠভাবে তাঁর অনুসরণ করা
প্রথম খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ فَتَحَ لَنَا أَبْوَابَ الْهُدَىَ بِمَنْ جَعَلَهُ خَيْرَ الْأَنَامِ، وَجَعَلَ أُمَّتَهُ خَيْرَ الْأُمَمِ وَجَعَلَ الذِّلَّةَ وَالصَّغَارَ عَلَى مَنْ خَالَفَ أَمْرَهُ مِنْ ذَوِيْ الْإِجْرَامِ، نَحْمَدُهُ عَلَى مَا أَسْبَغَ الْأَنَامَ مِنْ جَزِيْلِ الْإِنْعَامِ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ:
মুহতারাম হাযেরীন! আমাদের মাঝে এমন কে আছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসেন না? এমন কে আছেন যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পছন্দের জিনিসকে পছন্দ করেন না? এমন কে আছেন যিনি আখেরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী হওয়ার আশা রাখেন না?
এমন কে আছেন যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফায়াতের প্রত্যাশা করেন না?
হ্যাঁ, সবাই তা চায়। সবাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফায়াতের প্রত্যাশা করে। সবাই তাঁকে ও তাঁর মুহাব্বতের জিনিসকে মুহাব্বত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর পথ ও পদ্ধতি কি? কিভাবে তা লাভ করা যায়?
হ্যাঁ, এর পথ একটিই। পদ্ধতি একটিই। আর সেটা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করা। তাঁর সুন্নতকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসাকে অত্যাবশ্যক করে দিয়েছেন। অতএব, রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া ঈমানই পূর্ণতা লাভ করবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বতের আলামত হলো, তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ করা এবং তাঁর সুন্নতের ইত্তিবা করা। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। হাদীসেও রয়েছে অসংখ্য প্রমাণ। নিম্নে কুরআন ও হাদীস থেকে কয়েকটি প্রমাণ উলে¬খ করা হল:
কোরআনের প্রমাণ:
আল্লাহ তাআলা বলেন :
{ قُلْ أَطِيعُواْ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ }
‘বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না’ (সূরা আলে-ইমরান: ৩২)।
অন্য এক আয়াতে এসেছে :
{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللَّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً }
‘ হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারিদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাওÑ যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর’ (সূরা নিসা: ৫৯)।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
{ منْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ وَمَن تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظاً }
‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি’ (সূরা নিসা: ৮০)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
{ قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ }
‘বল, যদি তোমরা আল¬হকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল¬¬াহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল¬¬াহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আলে ইমরান:৩২)।
তিনি আরো বলেন :
{ وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا }
‘আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে এ অধিকার নেই যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়’ (সূরা আহযাব: ৩৬)।
হাদীসের প্রমাণ :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
( وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَىْ اخْتِلَافاً كَثِيْراً فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ عَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ )
‘আর তোমাদের কেউ বেঁচে থাকলে সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হবেÑ আমার সুন্নত এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অনুসরণ করা। তোমরা এ সুন্নতকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে থাকো এবং সমস্ত বিদআত থেকে বিরত থাকো। কেননা প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা’ (আবু দাউদ, তিরমিযী)।
অন্য এক হাদীসে এসেছে :
(كُلِّ أُمَّتِيْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَىْ قَالُوْا وَمَنْ يَأْبَىْ قَالَ مِنَ أَطَاعَنِيْ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ أَبَىْ )
আবু হুরাইরা রাযি. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে যাবে। তবে যে অস্বীকার করে সে নয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, অস্বীকারকারী কে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আমার অনুকরণ করল সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে-ই অস্বীকারকারী’ (বুখারী)।
সুন্নতের বাইরে বিদআত নির্ভর অক্লান্ত মেহনত-মুজাহাদ করে কোনো লাভ নেই। হাদীসে এসেছে :
( الْقَصْدُ فِي السُّنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الاجْتِهَادِ فِي الْبِدْعَةِ )
‘ সুন্নত অবলম্বন করে মধ্যমপন্থায় চলা, বিদআত অবলম্বন করে অক্লান্ত মেহনত করার চেয়েও উত্তম’ (ইবনে হাজর)।
(وَعَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ :كُنَّا مَعَ ابْنِ عُمَرَ رَحِمَهُ اللَّهُ فِيْ سَفَرٍ فَمَرَّ بِمَكَانٍ فَحَادَ عَنْهُ، فَسُئِلَ لِمَ فَعَلْتَ ذلِكَ؟ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ هَذَا فَفَعَلْتُ )
‘ মুজাহিদ রহ. বলেন, ‘আমরা একদা এক সফরে ইবনে উমর রাযি.-এর সঙ্গে ছিলাম। চলতে চলতে একস্থানে গিয়ে তিনি রাস্তা ছেড়ে অন্য দিকে গেলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কেন আপনি এমনটি করলেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি। তাই আমিও তার অনুকরণে এমনটি করেছি’ (আহমদ)।
মুহতারাম ভায়েরা! ইত্তেবায়ে সুন্নতের বহু ইতিবাচক ফলাফল রয়েছে। আসুন আমরা এসব ফলাফলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করি।
এক. ক্ষতিকর ও গর্হিত মতানৈক্য থেকে সুরক্ষা : পরস্পরে নিন্দিত মতবিরোধ ও ক্ষতিকর মতানৈক্য অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আর এ থেকে কেবল আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্যের মাধ্যমেই বেঁচে থাকা সম্ভব। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
{ وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَلاَ تَنَازَعُواْ فَتَفْشَلُواْ وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوَاْ إِنَّ اللهَ مَعَ الصّابِرِين }
‘ তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর। এবং তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সূরা আনফাল: ৪৬)।
উপরের আয়াত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সুন্নতের ইত্তেবা করা এবং তাকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। আর নিন্দনীয় এখতেলাফ বা মতানৈক্য থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র পথ হল আনুগত্য।
দুই: রাসূলুল্লাহ সাল¬াল¬হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিন্দিত ফেরকা থেকে বেঁচে থাকা এবং নাজাতপ্রাপ্ত ফেরকার সাথে জুড়ে থাকার সুযোগ পাওয়া যায় ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে। হাদীসে এসেছে :
( لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِيْ مَا أَتَى عَلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلَاثِ وَّسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِيْ النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوْا مَنْ هِيَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ ‘ )
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন বনী ইসরাঈলের ওপর যেমন এসেছিল আমার উম্মতের ওপর হুবহু ঐরকম আসবে একেবারে জুতায় জুতায় মিলে যাওয়ার মতো। বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে তিহাত্তর দলে। তন্মধ্যে একটি ছাড়া সবক’টি দলই জাহান্নামে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, সে জান্নাতী দল কোনটি ইয়া রাসূুলাল¬াহ? তিনি বললেন, আমি ও আমার সাহাবাগণ যার ওপর আছি’ (তিরমিযী,সহীহ)।
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবীগণ যে আকীদা-বিশ্বাসের ওপর ছিলেন, যে আমল ও কর্মপন্থার ওপর ছিলেন, তা আঁকড়ে ধরাই জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির পথ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।
তিন: ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে হিদায়েত হাসিল হয়। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
( إِنِّيَ قَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ شَيْئَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهُمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّتِي وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَ عَلَيَّ الْحَوْضَ )
‘ আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এ দু’টির পর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো, আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো আমার সুন্নত। জিনিস দু’টো তোমাদের থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথক হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি হাউজে কাউসারের কাছে উপনীত হবো’ (হাকেম, হাসান)।
চার. ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল¬ামের জামাআতভুক্ত হওয়া যায়, আর সুন্নতের ইত্তেবা ছেড়ে দেয়ার অর্থ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল¬ামের জামাআত থেকে বের হয়ে যাওয়া।
আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার তিন ব্যক্তি নবী করীম সাল-াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবিগণের ঘরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদতের পরিমাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে আসলেন। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো তখন যেন তাদের নিকট তা খুব কম মনে হলো। এমতাবস্থায় তাদের একজন বলল, আরে! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আমাদের কী তুলনা! তাঁর তো পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আজ থেকে আমি সর্বদা সারারাত জেগে নামাজ পড়ব। আরেকজন বলল, আমি দিনের বেলা সর্বদা রোযা রাখব। কখনো রোযা ভাঙ্গব না। তৃতীয়জন বললেন, আমি সর্বদা মহিলাদের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকব, কখনো বিবাহ করব না। এসময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, ‘তোমরাই সেই লোক, যারা এমন এমন বলেছে? শোন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি আল্লাহ তাআলাকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। তথাপি আমি রোযা রাখি এবং রোযা ভঙ্গ করি। নামাজ পড়ি আবার ঘুমাই। আমি মহিলাদের বিয়েও করি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়’ (বুখারী)।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত থেকে বিমুখ থাকার দু’টি পর্যায় রয়েছে। একটি হলো গুনাহের পর্যায় আর অন্যটি হলো কুফরীর পর্যায়।
যদি কেউ অলসতা ও অবহেলাবশত সুন্নত তরক করে তবে তা হবে গুনাহের পর্যায়। অর্থাৎ এরূপ করার কারণে সে শুধু গুনাহগার হবে ঈমানহারা হবে না।
পক্ষান্তরে যদি কেউ সুন্নতকে অবজ্ঞা করে, অস্বীকার করে, দোষারোপ করে তাহলে তা হবে কুফরীর পর্যায়। কেননা সুন্নতের ওপর দোষারোপ করা, তার সমালোচনা করা ও ত্র“টি-বিচ্যুতি বের করাÑ এক প্রকার কুফরীই বটে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথার্থরূপে সুন্নতের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .
দ্বিতীয় খুৎবা
الْحَمْد لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، أَحْمَدُه سُبْحَانَه وَأَشْكُرُه، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَه إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسْولُهُ صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنَ، أَمَّا بَعْدُ:
মুহতারাম হাযিরীন! আমরা ইত্তেবায়ে সুন্নতের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করছিলাম।
পাঁচ. ইত্তেবায়ে সুন্নতের আরেকটি ফল হলো ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে শয়তানের পথ অনুসরণ থেকে পরিত্রাণ মিলে।
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে একটি রেখা টেনে বললেন- এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি তার ডানে ও বামে কয়েকটি রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি সে দাগটির ডানে ও বামে আরো কয়েকটি ছোট রেখা টানলেন। তারপর তিনি বললেন, এটা আমার রাস্তা, এই বলে তিনি লম্বা রেখাটির দিকে ইশারা করলেন এবং বললেন, এটা আমার রাস্তা আর এগুলো অনেক রাস্তা। যার প্রতিটিতে একজন করে শয়তান বসে সেদিকে তোমাদেরকে আহবান করছে। সবশেষে তিনি তার বক্তব্যের সমর্থনে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
{ وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيماً فَاتّبِعُوهُ وَلاَ تَتّبِعُوا السّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ }
‘ আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।’ (সূরা আনআম: ১৫৩)।
অতএব যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের ইত্তেবা করল সে সিরাতে মুস্তাকীমের ইত্তেবা করল এবং শয়তানের যাবতীয় পথ থেকে নিরাপদ রইল।
কোনো এক বড় আলেম বলেন, বেশিরভাগ, গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা কুরআন ও হাদীসকে শক্তভাবে আঁকড়ে না ধরার কারণেই হয়ে থাকে। যেমন ইমাম যুহ্রী রহ. বলেন- ‘আমাদের উলামাগণ বলতেন, সুন্নতকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে নাজাতের পথ’।
ইমাম মালেক রহ. বলেন, ‘সুন্নত হচ্ছে নূহ আ.-এর কিশতির ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে। আর যে আরোহণ না করে পিছনে থেকে যাবে সে ডুবে মরবে। এটা এজন্য যে, সুন্নত ও শরীয়তই হচ্ছে ঐ সিরাতে মুস্তাকীম বা সরল-সহজ পথ, যা বান্দাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আর রাসূল হলেন এ সিরাতে মুস্তাকীমের অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক’।
ছয়. ইত্তেবায়ে সুন্নতের আরেকটি ফল হলো, এর মাধ্যমে আল্লাহর দীনের পুরোটাই হাসিল করা সম্ভব হয়। আর তা এজন্য যে, দীনের অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা হবে না। আর কোন্টা ইবাদত কোন্টা ইবাদত না, তা নির্ণয়ের জন্য আল কুরআন ও সুন্নতে রাসূলের আশ্রয় নেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এ কারণে ইবাদত হলো কুরআন ও হাদীসনির্ভর, যুক্তিনির্ভর নয়। আয়েশা রাযি.-এর বর্ণনা অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র হলোÑ কুরআন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত গোটা দীনকে শামিল করে আছে।
সাত: ইত্তেবায়ে সুন্নতের সপ্তম ফল হল উম্মতের ওপর থেকে সকল প্রকার লাঞ্ছনা ও অপমান দূর হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যখন উম্মতে মুহাম্মদী সুন্নতের অনুসরণ করতে থাকবে তখন তাদের যাবতীয় লাঞ্ছনা ও অপমান দূর হয়ে যাবে। কেননা সুন্নতই হলো দীন। আর দীন পরিত্যাগ করার কারণে উম্মতের ওপর নেমে আসে লাঞ্ছনা ও অপমান।
আট: ইত্তেবায়ে সুন্নতের অষ্টম ফল হলো, মুসলিম জাতি যেসব রোগে আক্রান্ত সেসব রোগ ও তার চিকিৎসার বর্ণনাও সুন্নতের মধ্যে রয়েছে। যেমন:
‘সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ অচিরেই অমুসলিম সম্প্রদায়গুলো পরস্পর পরস্পরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাবে যেভাবে খাবারের বরতনের দিকে আহারকারীদেরকে আহবান করা হয়। তখন কেউ বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেদিন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো’? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না, তোমরা তখন সংখ্যায় বেশিই হবে। কিন্তু সেদিন তোমরা হবে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া খরকুটোর মতো। তোমাদের শত্র“দের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় উঠিয়ে নেয়া হবে এবং তোমাদের অন্তরে ঢেলে দেয়া হবেÑ ‘ওয়াহান’। একজন জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওয়াহান কী জিনিস? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেনÑ ‘ওয়াহান হলো, দুনিয়াকে মহব্বত করা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা’ (আহমদ, আবু দাউদ)।
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রোগ ও অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেনÑ অচিরেই অমুসলিম সম্প্রদায়গুলো পরস্পর পরস্পরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাবে, যেভাবে খাবারের বরতনের দিকে আহারকারিদেরকে আহবান করা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা অক্ষরে অক্ষরে বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর তা এভাবে যে, আজ গোটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো একত্রিত হয়ে বিভিন্ন নিয়ামত ও কল্যাণে ভরপুর মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় সুন্নতের যথার্থ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজদের ইজ্জত বাড়িয়ে নেয়া ছাড়া আমাদের কোন গত্যান্তর নেই। দুনিয়ার মহব্বত হৃদয় থেকে তিরোহিত করে মৃত্যুকে সন্তুষ্টচিত্তে আলিঙ্গন করার জন্য বলিষ্ঠ ঈমান ও আমলের দ্বারা নিজদেরকে প্রস্তুত রাখা ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোনো উপায় নেই।
নয়: ইত্তেবায়ে সুন্নতের নবম ফল হলো, এর মাধ্যমে সকল প্রকার ফিতনা ও আল্লাহর আযাব থেকে নিজদেরকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{ لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنْكُمْ لِوَاذًا فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ }
‘ তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে’ (সূরা নূর: ৬৩)।
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, যারা সুন্নতের বিরোধিতা করবে তারা বিভিন্ন রকম ফিতনা ও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে কুফরী, মুনাফেকী ও বিদআতের মতো ভয়াবহ বিষয়সমূহের উদ্ভব ঘটবে, যার ফলশ্রুতিতে তারা কঠিন ও মর্মন্তুদ শাস্তির সম্মুখীন হবে।
পক্ষান্তরে যারা সুন্নতে রাসূলের অনুসরণ করবে তারা এসব ফিতনা ও শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে।
একবার এক লোক ইমাম মালেক রহ. এর খেদমতে হাজির হয়ে বলল, হে ইমাম! আমি ওমরা করার ইরাদা করেছি। ইমাম মালেক রহ. বললেনÑ তাহলে তুমি ইহরাম বাঁধো। লোকটি বলল, আমি ইহরাম বাঁধব ঠিক, তবে তা মদীনার মসজিদ থেকে। ইমাম মালেক রহ. বললেনÑ বৎস! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো যুল হুলাইফা থেকে ইহরাম বেঁধেছেন। অতএব তুমি যদি তাঁর বিরোধিতা করে মদীনার মসজিদ থেকে ইহরাম বাঁধো তবে তো আমি তোমার ওপর ফিতনা নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। এরপর তিনি তার বক্তব্যের সমর্থনে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
{ فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ }
‘ অতএব যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে’ (সূরা নূর: ৬৩)।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! তাই আমাদের উচিত, প্রথমত ব্যক্তিগত জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠা করা। কেননা ব্যক্তিগত জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজ জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে শহর জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। শহর জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে গোটা দেশে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে গোটা জাতির মধ্যে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর গোটা জাতির মধ্যে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দ্বারা গোটা ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ চাহেন তো সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সবকিছু সংশোধন হয়ে যাওয়ার কারণে সর্বত্র শান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুন্নত অনুযায়ী জীবন গঠন করার তাওফীক নসীব করুন। আমীন।
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الْرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الْطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنْ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার নবীর সুন্নতের অনুসরণের তাওফীক দান করুন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন সুন্নতকে সমুন্নত রাখতে পারি সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন। সকল প্রকার বিদআত থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন। সুন্নত পরিপন্থি কাজকর্ম থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার বালা-মুসীবত ও বিপদ-আপদ থেকে হেফাযত করুন। আমাদের অভাব দূর করে দিন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকর্মে বরকত দিন। আমাদেরকে হালাল কামাই করার তাওফীক দান করুন।
ইয়া রাব্বাল আলামীন! আমাদের যাবতীয় পেরেশানী দূর করে দিন। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে দীনদার, মুত্তাকী ও পরহেযগার বানিয়ে দিন।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ فَتَحَ لَنَا أَبْوَابَ الْهُدَىَ بِمَنْ جَعَلَهُ خَيْرَ الْأَنَامِ، وَجَعَلَ أُمَّتَهُ خَيْرَ الْأُمَمِ وَجَعَلَ الذِّلَّةَ وَالصَّغَارَ عَلَى مَنْ خَالَفَ أَمْرَهُ مِنْ ذَوِيْ الْإِجْرَامِ، نَحْمَدُهُ عَلَى مَا أَسْبَغَ الْأَنَامَ مِنْ جَزِيْلِ الْإِنْعَامِ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ:
মুহতারাম হাযেরীন! আমাদের মাঝে এমন কে আছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসেন না? এমন কে আছেন যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পছন্দের জিনিসকে পছন্দ করেন না? এমন কে আছেন যিনি আখেরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী হওয়ার আশা রাখেন না?
এমন কে আছেন যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফায়াতের প্রত্যাশা করেন না?
হ্যাঁ, সবাই তা চায়। সবাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফায়াতের প্রত্যাশা করে। সবাই তাঁকে ও তাঁর মুহাব্বতের জিনিসকে মুহাব্বত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর পথ ও পদ্ধতি কি? কিভাবে তা লাভ করা যায়?
হ্যাঁ, এর পথ একটিই। পদ্ধতি একটিই। আর সেটা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করা। তাঁর সুন্নতকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসাকে অত্যাবশ্যক করে দিয়েছেন। অতএব, রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া ঈমানই পূর্ণতা লাভ করবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বতের আলামত হলো, তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ করা এবং তাঁর সুন্নতের ইত্তিবা করা। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। হাদীসেও রয়েছে অসংখ্য প্রমাণ। নিম্নে কুরআন ও হাদীস থেকে কয়েকটি প্রমাণ উলে¬খ করা হল:
কোরআনের প্রমাণ:
আল্লাহ তাআলা বলেন :
{ قُلْ أَطِيعُواْ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ }
‘বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না’ (সূরা আলে-ইমরান: ৩২)।
অন্য এক আয়াতে এসেছে :
{ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللَّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً }
‘ হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারিদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাওÑ যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর’ (সূরা নিসা: ৫৯)।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
{ منْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ وَمَن تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظاً }
‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি’ (সূরা নিসা: ৮০)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
{ قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ }
‘বল, যদি তোমরা আল¬হকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল¬¬াহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল¬¬াহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আলে ইমরান:৩২)।
তিনি আরো বলেন :
{ وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا }
‘আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে এ অধিকার নেই যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়’ (সূরা আহযাব: ৩৬)।
হাদীসের প্রমাণ :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
( وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَىْ اخْتِلَافاً كَثِيْراً فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ عَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ )
‘আর তোমাদের কেউ বেঁচে থাকলে সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হবেÑ আমার সুন্নত এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অনুসরণ করা। তোমরা এ সুন্নতকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে থাকো এবং সমস্ত বিদআত থেকে বিরত থাকো। কেননা প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা’ (আবু দাউদ, তিরমিযী)।
অন্য এক হাদীসে এসেছে :
(كُلِّ أُمَّتِيْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَىْ قَالُوْا وَمَنْ يَأْبَىْ قَالَ مِنَ أَطَاعَنِيْ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ أَبَىْ )
আবু হুরাইরা রাযি. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে যাবে। তবে যে অস্বীকার করে সে নয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, অস্বীকারকারী কে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আমার অনুকরণ করল সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে-ই অস্বীকারকারী’ (বুখারী)।
সুন্নতের বাইরে বিদআত নির্ভর অক্লান্ত মেহনত-মুজাহাদ করে কোনো লাভ নেই। হাদীসে এসেছে :
( الْقَصْدُ فِي السُّنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الاجْتِهَادِ فِي الْبِدْعَةِ )
‘ সুন্নত অবলম্বন করে মধ্যমপন্থায় চলা, বিদআত অবলম্বন করে অক্লান্ত মেহনত করার চেয়েও উত্তম’ (ইবনে হাজর)।
(وَعَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ :كُنَّا مَعَ ابْنِ عُمَرَ رَحِمَهُ اللَّهُ فِيْ سَفَرٍ فَمَرَّ بِمَكَانٍ فَحَادَ عَنْهُ، فَسُئِلَ لِمَ فَعَلْتَ ذلِكَ؟ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ هَذَا فَفَعَلْتُ )
‘ মুজাহিদ রহ. বলেন, ‘আমরা একদা এক সফরে ইবনে উমর রাযি.-এর সঙ্গে ছিলাম। চলতে চলতে একস্থানে গিয়ে তিনি রাস্তা ছেড়ে অন্য দিকে গেলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কেন আপনি এমনটি করলেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি। তাই আমিও তার অনুকরণে এমনটি করেছি’ (আহমদ)।
মুহতারাম ভায়েরা! ইত্তেবায়ে সুন্নতের বহু ইতিবাচক ফলাফল রয়েছে। আসুন আমরা এসব ফলাফলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করি।
এক. ক্ষতিকর ও গর্হিত মতানৈক্য থেকে সুরক্ষা : পরস্পরে নিন্দিত মতবিরোধ ও ক্ষতিকর মতানৈক্য অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আর এ থেকে কেবল আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্যের মাধ্যমেই বেঁচে থাকা সম্ভব। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
{ وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَلاَ تَنَازَعُواْ فَتَفْشَلُواْ وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوَاْ إِنَّ اللهَ مَعَ الصّابِرِين }
‘ তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর। এবং তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সূরা আনফাল: ৪৬)।
উপরের আয়াত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সুন্নতের ইত্তেবা করা এবং তাকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। আর নিন্দনীয় এখতেলাফ বা মতানৈক্য থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র পথ হল আনুগত্য।
দুই: রাসূলুল্লাহ সাল¬াল¬হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিন্দিত ফেরকা থেকে বেঁচে থাকা এবং নাজাতপ্রাপ্ত ফেরকার সাথে জুড়ে থাকার সুযোগ পাওয়া যায় ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে। হাদীসে এসেছে :
( لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِيْ مَا أَتَى عَلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلَاثِ وَّسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِيْ النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوْا مَنْ هِيَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ ‘ )
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন বনী ইসরাঈলের ওপর যেমন এসেছিল আমার উম্মতের ওপর হুবহু ঐরকম আসবে একেবারে জুতায় জুতায় মিলে যাওয়ার মতো। বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে তিহাত্তর দলে। তন্মধ্যে একটি ছাড়া সবক’টি দলই জাহান্নামে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, সে জান্নাতী দল কোনটি ইয়া রাসূুলাল¬াহ? তিনি বললেন, আমি ও আমার সাহাবাগণ যার ওপর আছি’ (তিরমিযী,সহীহ)।
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবীগণ যে আকীদা-বিশ্বাসের ওপর ছিলেন, যে আমল ও কর্মপন্থার ওপর ছিলেন, তা আঁকড়ে ধরাই জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির পথ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।
তিন: ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে হিদায়েত হাসিল হয়। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
( إِنِّيَ قَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ شَيْئَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهُمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّتِي وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَ عَلَيَّ الْحَوْضَ )
‘ আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এ দু’টির পর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো, আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো আমার সুন্নত। জিনিস দু’টো তোমাদের থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথক হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি হাউজে কাউসারের কাছে উপনীত হবো’ (হাকেম, হাসান)।
চার. ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল¬ামের জামাআতভুক্ত হওয়া যায়, আর সুন্নতের ইত্তেবা ছেড়ে দেয়ার অর্থ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল¬ামের জামাআত থেকে বের হয়ে যাওয়া।
আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার তিন ব্যক্তি নবী করীম সাল-াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবিগণের ঘরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদতের পরিমাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে আসলেন। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো তখন যেন তাদের নিকট তা খুব কম মনে হলো। এমতাবস্থায় তাদের একজন বলল, আরে! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আমাদের কী তুলনা! তাঁর তো পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আজ থেকে আমি সর্বদা সারারাত জেগে নামাজ পড়ব। আরেকজন বলল, আমি দিনের বেলা সর্বদা রোযা রাখব। কখনো রোযা ভাঙ্গব না। তৃতীয়জন বললেন, আমি সর্বদা মহিলাদের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকব, কখনো বিবাহ করব না। এসময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, ‘তোমরাই সেই লোক, যারা এমন এমন বলেছে? শোন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি আল্লাহ তাআলাকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। তথাপি আমি রোযা রাখি এবং রোযা ভঙ্গ করি। নামাজ পড়ি আবার ঘুমাই। আমি মহিলাদের বিয়েও করি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়’ (বুখারী)।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত থেকে বিমুখ থাকার দু’টি পর্যায় রয়েছে। একটি হলো গুনাহের পর্যায় আর অন্যটি হলো কুফরীর পর্যায়।
যদি কেউ অলসতা ও অবহেলাবশত সুন্নত তরক করে তবে তা হবে গুনাহের পর্যায়। অর্থাৎ এরূপ করার কারণে সে শুধু গুনাহগার হবে ঈমানহারা হবে না।
পক্ষান্তরে যদি কেউ সুন্নতকে অবজ্ঞা করে, অস্বীকার করে, দোষারোপ করে তাহলে তা হবে কুফরীর পর্যায়। কেননা সুন্নতের ওপর দোষারোপ করা, তার সমালোচনা করা ও ত্র“টি-বিচ্যুতি বের করাÑ এক প্রকার কুফরীই বটে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথার্থরূপে সুন্নতের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .
দ্বিতীয় খুৎবা
الْحَمْد لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، أَحْمَدُه سُبْحَانَه وَأَشْكُرُه، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَه إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسْولُهُ صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنَ، أَمَّا بَعْدُ:
মুহতারাম হাযিরীন! আমরা ইত্তেবায়ে সুন্নতের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করছিলাম।
পাঁচ. ইত্তেবায়ে সুন্নতের আরেকটি ফল হলো ইত্তেবায়ে সুন্নতের মাধ্যমে শয়তানের পথ অনুসরণ থেকে পরিত্রাণ মিলে।
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে একটি রেখা টেনে বললেন- এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি তার ডানে ও বামে কয়েকটি রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি সে দাগটির ডানে ও বামে আরো কয়েকটি ছোট রেখা টানলেন। তারপর তিনি বললেন, এটা আমার রাস্তা, এই বলে তিনি লম্বা রেখাটির দিকে ইশারা করলেন এবং বললেন, এটা আমার রাস্তা আর এগুলো অনেক রাস্তা। যার প্রতিটিতে একজন করে শয়তান বসে সেদিকে তোমাদেরকে আহবান করছে। সবশেষে তিনি তার বক্তব্যের সমর্থনে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
{ وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيماً فَاتّبِعُوهُ وَلاَ تَتّبِعُوا السّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ }
‘ আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।’ (সূরা আনআম: ১৫৩)।
অতএব যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের ইত্তেবা করল সে সিরাতে মুস্তাকীমের ইত্তেবা করল এবং শয়তানের যাবতীয় পথ থেকে নিরাপদ রইল।
কোনো এক বড় আলেম বলেন, বেশিরভাগ, গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা কুরআন ও হাদীসকে শক্তভাবে আঁকড়ে না ধরার কারণেই হয়ে থাকে। যেমন ইমাম যুহ্রী রহ. বলেন- ‘আমাদের উলামাগণ বলতেন, সুন্নতকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে নাজাতের পথ’।
ইমাম মালেক রহ. বলেন, ‘সুন্নত হচ্ছে নূহ আ.-এর কিশতির ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে। আর যে আরোহণ না করে পিছনে থেকে যাবে সে ডুবে মরবে। এটা এজন্য যে, সুন্নত ও শরীয়তই হচ্ছে ঐ সিরাতে মুস্তাকীম বা সরল-সহজ পথ, যা বান্দাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আর রাসূল হলেন এ সিরাতে মুস্তাকীমের অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক’।
ছয়. ইত্তেবায়ে সুন্নতের আরেকটি ফল হলো, এর মাধ্যমে আল্লাহর দীনের পুরোটাই হাসিল করা সম্ভব হয়। আর তা এজন্য যে, দীনের অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা হবে না। আর কোন্টা ইবাদত কোন্টা ইবাদত না, তা নির্ণয়ের জন্য আল কুরআন ও সুন্নতে রাসূলের আশ্রয় নেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এ কারণে ইবাদত হলো কুরআন ও হাদীসনির্ভর, যুক্তিনির্ভর নয়। আয়েশা রাযি.-এর বর্ণনা অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র হলোÑ কুরআন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত গোটা দীনকে শামিল করে আছে।
সাত: ইত্তেবায়ে সুন্নতের সপ্তম ফল হল উম্মতের ওপর থেকে সকল প্রকার লাঞ্ছনা ও অপমান দূর হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যখন উম্মতে মুহাম্মদী সুন্নতের অনুসরণ করতে থাকবে তখন তাদের যাবতীয় লাঞ্ছনা ও অপমান দূর হয়ে যাবে। কেননা সুন্নতই হলো দীন। আর দীন পরিত্যাগ করার কারণে উম্মতের ওপর নেমে আসে লাঞ্ছনা ও অপমান।
আট: ইত্তেবায়ে সুন্নতের অষ্টম ফল হলো, মুসলিম জাতি যেসব রোগে আক্রান্ত সেসব রোগ ও তার চিকিৎসার বর্ণনাও সুন্নতের মধ্যে রয়েছে। যেমন:
‘সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ অচিরেই অমুসলিম সম্প্রদায়গুলো পরস্পর পরস্পরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাবে যেভাবে খাবারের বরতনের দিকে আহারকারীদেরকে আহবান করা হয়। তখন কেউ বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেদিন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো’? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না, তোমরা তখন সংখ্যায় বেশিই হবে। কিন্তু সেদিন তোমরা হবে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া খরকুটোর মতো। তোমাদের শত্র“দের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় উঠিয়ে নেয়া হবে এবং তোমাদের অন্তরে ঢেলে দেয়া হবেÑ ‘ওয়াহান’। একজন জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওয়াহান কী জিনিস? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেনÑ ‘ওয়াহান হলো, দুনিয়াকে মহব্বত করা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা’ (আহমদ, আবু দাউদ)।
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রোগ ও অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেনÑ অচিরেই অমুসলিম সম্প্রদায়গুলো পরস্পর পরস্পরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাবে, যেভাবে খাবারের বরতনের দিকে আহারকারিদেরকে আহবান করা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা অক্ষরে অক্ষরে বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর তা এভাবে যে, আজ গোটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো একত্রিত হয়ে বিভিন্ন নিয়ামত ও কল্যাণে ভরপুর মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় সুন্নতের যথার্থ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজদের ইজ্জত বাড়িয়ে নেয়া ছাড়া আমাদের কোন গত্যান্তর নেই। দুনিয়ার মহব্বত হৃদয় থেকে তিরোহিত করে মৃত্যুকে সন্তুষ্টচিত্তে আলিঙ্গন করার জন্য বলিষ্ঠ ঈমান ও আমলের দ্বারা নিজদেরকে প্রস্তুত রাখা ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোনো উপায় নেই।
নয়: ইত্তেবায়ে সুন্নতের নবম ফল হলো, এর মাধ্যমে সকল প্রকার ফিতনা ও আল্লাহর আযাব থেকে নিজদেরকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{ لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنْكُمْ لِوَاذًا فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ }
‘ তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে’ (সূরা নূর: ৬৩)।
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, যারা সুন্নতের বিরোধিতা করবে তারা বিভিন্ন রকম ফিতনা ও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে কুফরী, মুনাফেকী ও বিদআতের মতো ভয়াবহ বিষয়সমূহের উদ্ভব ঘটবে, যার ফলশ্রুতিতে তারা কঠিন ও মর্মন্তুদ শাস্তির সম্মুখীন হবে।
পক্ষান্তরে যারা সুন্নতে রাসূলের অনুসরণ করবে তারা এসব ফিতনা ও শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে।
একবার এক লোক ইমাম মালেক রহ. এর খেদমতে হাজির হয়ে বলল, হে ইমাম! আমি ওমরা করার ইরাদা করেছি। ইমাম মালেক রহ. বললেনÑ তাহলে তুমি ইহরাম বাঁধো। লোকটি বলল, আমি ইহরাম বাঁধব ঠিক, তবে তা মদীনার মসজিদ থেকে। ইমাম মালেক রহ. বললেনÑ বৎস! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো যুল হুলাইফা থেকে ইহরাম বেঁধেছেন। অতএব তুমি যদি তাঁর বিরোধিতা করে মদীনার মসজিদ থেকে ইহরাম বাঁধো তবে তো আমি তোমার ওপর ফিতনা নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। এরপর তিনি তার বক্তব্যের সমর্থনে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
{ فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ }
‘ অতএব যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে’ (সূরা নূর: ৬৩)।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! তাই আমাদের উচিত, প্রথমত ব্যক্তিগত জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠা করা। কেননা ব্যক্তিগত জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজ জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে শহর জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। শহর জীবনে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে গোটা দেশে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হলে গোটা জাতির মধ্যে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর গোটা জাতির মধ্যে সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দ্বারা গোটা ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ চাহেন তো সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সবকিছু সংশোধন হয়ে যাওয়ার কারণে সর্বত্র শান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুন্নত অনুযায়ী জীবন গঠন করার তাওফীক নসীব করুন। আমীন।
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الْرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الْطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنْ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার নবীর সুন্নতের অনুসরণের তাওফীক দান করুন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন সুন্নতকে সমুন্নত রাখতে পারি সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন। সকল প্রকার বিদআত থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন। সুন্নত পরিপন্থি কাজকর্ম থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার বালা-মুসীবত ও বিপদ-আপদ থেকে হেফাযত করুন। আমাদের অভাব দূর করে দিন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকর্মে বরকত দিন। আমাদেরকে হালাল কামাই করার তাওফীক দান করুন।
ইয়া রাব্বাল আলামীন! আমাদের যাবতীয় পেরেশানী দূর করে দিন। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে দীনদার, মুত্তাকী ও পরহেযগার বানিয়ে দিন।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে করণীয়
islam-icon
বুধবার, মার্চ ২৫, ২০২০
0
বার দেখা হয়েছে
২০২০ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের ১০৩টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে রোগটি
বিস্তার লাভ করেছে। সারা বিশ্বে রোগটির প্রভাবে এ পর্যন্ত ৩৬৪৬ জনেরও বেশি
মানুষ মারা গেছে। চীনের উহানে বিস্তার লাভ করা ভাইরাসটির সাথে
‘এসএআরএস-সিওভি’ প্রজাতির প্রায় ৭০% জিনগত মিল পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে
ভাইরাসটির আভির্ভাবের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে রোগটির কোন অস্তিত্ব না
মিললেও গতকাল ইতালি ফেরত এক বাংলাদেশী পরিবারের তিন জন সদস্যের মধ্যে এই
ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। রোগটি ততটা প্রাণঘাতী না হলেও মানুষের মধ্যে
এর ব্যাপক ভীতি ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আসুন রোগটি যেভাবে ছড়ায় এবং এর
প্রাদুর্ভাব থেকে বেঁচে থাকার কতিপয় উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে জেনে
নিই।
যেসব উপায়ে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে
সাধারণত
এই করোনা ভাইরাস হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে কোন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ
ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যখন কোনো করোনা আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তি
একজন সুস্থ ব্যক্তির সামনে হাঁচি বা কাশি দেয় তখন তার মুখ থেকে অসংখ্য
সুক্ষ্মকণা বা ড্রপ্লেট বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং একজন সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত
হতে পারে। এছাড়াও আক্রান্ত রোগী যদি হাঁচি কাশি দিয়ে পরবর্তিতে যেমন
বিদ্যালয়ের বেঞ্চ, গাড়ির হাতল কিংবা বাসের সিট স্পর্শ করে তাহলেও এর দ্বারা
তার অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ মানুষ ভাইরাসটি দ্বারা সহজেই সংক্রমিত হতে
পারে। এমনকি এর মাধ্যমে খুব দ্রুত রোগটি অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এমনকি এই ভাইরাসটি যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির পায়খানার সাথেও মিশে থাকে তাই
যদি কোন আক্রান্ত ব্যক্তি কারও সাথে টয়লেট শেয়ার করে তাহলে টয়লেট ফ্লাসের
মাধ্যমেও ভাইরাসটি অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের দেশে যে সিলিং বা
টেবিল ফ্যান ব্যবহার করা হয় তার মাধ্যমেও আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে খুব সহজে
অন্যদের দেহে রোগটি সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক কিছু লক্ষণ
- জ্বর
- অবসাদ
- শুষ্ক কাশি
- শ্বাস কষ্ট
- গলা ব্যাথা
- তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর নাও থাকতে পারে।
করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার কতিপয় উপায়
১। হাত ধোয়ার অভ্যাস গরে তোলা সহ নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
যেহেতু
হাতের মাধ্যমে রোগটি বেশী ছড়ায় তাই নিয়মিত হাত ধুয়ে নেয়া রোগটি থেকে বেঁচে
থাকার সর্বোত্তম উপায়। এজন্য দিনের মধ্যে সুযোগ পেলেই নিজের দুই হাত সাবান
ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে দিনে অন্তত ১৫-২০ বার হাত ধুয়ে
নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে এই রোগের সংক্রমণ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
২। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন
হাঁচি
কাশির পর খেয়াল রাখা উচিত যে আমরা যেন হাঁচি দেওয়ার সময় হাতের তালুতে মুখ
চেপে ধরে না রাখি। মনে রাখতে হবে হাঁচি বা কাশি আটকাতে কখনোই নিজের হাত বা
কনুই ব্যবহার করা উচিত না। হাঁচি দেওয়ার সময় অবশ্যই টিস্যু ব্যাবহার করুন
এবং ব্যবহারের পর সাথে সাথে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিন এবং নিজের হাত সাবান
দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিন। অনুরুপভাবে হাঁচি দেওয়ার পর আমাদের হাত
লিফটের হাতল, চেয়ার টেবিলের হাতল ইত্যাদিতেও মোছা উচিত নয় কারণ আমরা যদি
করোনা আক্রান্ত হোন তাহলেএর মাধ্যমে আমাদের দ্বারা পরবর্তিতে এসব উপাদান
ব্যবহারকারী অন্য যে কেউ এ রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারে।
৩। মুখে মাস্ক পড়ে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে
করোনা
ভাইরাসের তরল উৎস হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক বা সারজিক্যাল মাস্ক
কিছুটা সুরক্ষা দিত পারে। তবে এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো
সম্ভব নয়। এছাড়া, মাস্ক পড়লেও চোখ খোলাই থাকে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তির
দেহে চোখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে অধিক
কার্যকরী এন ৯৫ রেসপাইরেটর ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর মূল্য ও
প্রাপ্যতা বিচারে এর ব্যবহার তেমন উৎসাহ করা হচ্ছেনা।
৪। যতটুকু সম্ভব জন সমাগম এড়িয়ে চলুন
আক্রান্ত
এলাকা থেকে ফিরে থাকলে ১৪ দিন নিজেকে জনসমাগম থেকে 'বিচ্ছিন্ন' রাখুন। তার
মানে হচ্ছে বিশেষ করে মহামারির এই সময় প্রয়জনে কর্মস্থল থেকে শুরু করে
অন্যান্য জনসমাবেশস্থল এড়িয়ে হবে।
৫। পায়খানা শেষে কমোডের ঢাকনা বন্ধ করে তারপর ফ্লাস করুন
আমরা
যখন আমাদের পায়খানার কমোডে টয়লেট সারার পর ফ্লাস করি তখন বিপুল পরিমাণে
এরোসল তৈরি হয় যা বাতাসে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরপাক খেতে থাকে। সচরাচর আমাদের
অভ্যাস হচ্ছে বাথরুমে গিয়ে প্রথমেই আমরা একটা ফ্লাস করি। যদি কোন কারণে
আমার আগে ঐ বাথরুমে করোনা আক্রান্ত কোন রোগী মলত্যাগ করে গিয়ে থাকে আর আমি
এরুপ ফ্লাস করি তাহলে কিন্তু আমার নাক মুখ দিয়েএরোসলের মাধ্যমে ভাইরাস আমার
দেহে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। তাই আমরা যেন টয়লেট ফ্লাস করার আগে অবশ্যই
কমোড বন্ধ আছে কিনা তা খেয়াল রেখে তারপর ফ্লাস করি।
৬। লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিন
আপনার
যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাহলে দেরি না করে সাথে সাথে
নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্প্রতি আপনি যেসব এলাকা
বা দেশ ভ্রমণ করেছেন তা তাকে খুলে বলুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী নিজের ঘরের মধ্যেই অবস্থান করুন।
যেহেতু এখনও পর্যন্ত এ
ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন প্রকার কার্যকরী প্রতিষেধক টিকা আবিস্কার হয়নি তাই
বর্তমানে প্রতিরোধই হচ্ছে একমাত্র পদক্ষেপ রোগটি থেকে বেঁচে থাকার। এজন্য
আসুন আমরা সবাই উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে সর্বদা খেয়াল রেখে আমাদের জীবন যাপন
করি তাহলে আমরা সহজেই এরোগ থেকে অনেকটা নিজেদের দূরে রাখতে পারব।
করোনাভাইরাসের লক্ষণ ও করনীয়
islam-icon
বুধবার, মার্চ ২৫, ২০২০
0
বার দেখা হয়েছে
করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি
প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে বলে আগে ধারণা করা হতো। নতুন এই
ভাইরাসটির কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি
মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯, যা
'করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯'-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
করোনাভাইরাস ১৯৬০-এর
দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস
ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দিকাশিতে আক্রান্ত
রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া
ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই’ এবং ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩’
নামে নামকরণ করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরও বেশ কিছু
প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালের
‘এসএআরএস-সিওভি’, ২০০৪ সালের ‘এইচসিওভি এনএল৬৩’, ২০০৫ সালের ‘এইচকেইউ১’,
২০১২ সালের ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের ‘নভেল করোনাভাইরাস’।
নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) যেভাবে ছড়ায়:
মারাত্মক
ছোঁয়াচে এই ভাইরাস একজন মানুষ থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। শারীরিক
ঘনিষ্ঠতা, এমনকি করমর্দন থেকেও এটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত
বা হাতের ছোঁয়া লাগা কোনো জিনিস থেকেও তা ছড়াতে পারে। হাঁচি-কাশি থেকেও
এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুকি রোধে করণীয়:
- ঘন ঘন দুই হাত সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড যাবত ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
- যেখানে সেখানে কফ ও থুতু ফেলবেন না। হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
- হাঁচি-কাশির
সময়ে টিস্যু অথবা কাপড় দিয়ে বা বাহুর ভাঁজে নাক-মুখ ঢেকে ফেলুন। ব্যবহৃত
টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন ও হাত পরিষ্কার করুন।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর সাধারণ লক্ষণসমূহ:
- জ্বর
- কাশি
- শ্বাসকষ্ট
উপরে বর্ণিত লক্ষণসমূহ কারও মধ্যে দেখা দিলে সাথে সাথেই সতর্কতা অবলম্বন শুরু করা উচিত।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে আসা অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ১৪ দিনের মধ্যে উপরের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে যা করবেন –
- নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।
- সুস্থ ব্যক্তি হতে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
- আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
নভেল
করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তাই
সাবধানী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা তাদের সংস্পর্শে
আসা কারও কাছাকাছি যাবেন না। বারবার সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন।
অপরিষ্কার হাত চোখ-মুখে দেবেন না। আরও সতর্কতার অংশ হিসেবে মুখে মাস্ক
ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি, ময়লা পোশাক এড়িয়ে চলুন। বাসা পরিষ্কার
রাখুন। সচেতনতা অবলম্বন করুন। নিজে সুস্থ থাকুন। আপনার আশেপাশে যারা আছেন
তাদেরকেও সুস্থ থাকতে সহায়তা করুন।
ভাইরাসজনিত জ্বর ডেঙ্গুর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন
islam-icon
বুধবার, মার্চ ২৫, ২০২০
0
বার দেখা হয়েছে
ইদানিং রাজধানীতে অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ যা সবারই
ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত জুলাই হতে অক্টোবর এই সময়টি ডেঙ্গুর
মৌসুম হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই এসময়টিতে দরকার বাড়তি সচেতনতা। চলুন ডেঙ্গুর
কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সন্মন্ধে বিস্তারিত জেনে নিই।
ডেঙ্গু কিভাবে ছড়ায়?
ডেঙ্গু
ভাইরাস বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই জাতীয় মশা কামড় দিলে প্রধানত ডেঙ্গুজ্বর হয়ে
থাকে। কোন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত লোককে এ জাতীয় মশায় কামড়ায় এবং
পরবর্তীতে ঐ একই মশা যদি কোন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলে উক্ত সুস্থ
ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে ভোগার সম্ভাবনা অনেক বেশী। সাধারণত জীবাণু বহনকারী
এডিস মশা কোনো মানুষকে কামড়ানোর চার হতে ছয়দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
হয়ে থাকে। এভাবে ক্রমাগত মশার মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে রোগটি ছড়াতে থাকে।
কাদের ডেঙ্গু বেশি হয়?
গ্রামে
বসবাসকারী লোকজনের চেয়ে শহরের অভিজাত এলাকায় যেখানে বড় বড় দালান কোঠা
রয়েছে সেখানে এর প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এর প্রধান কারণ হলো শরের
দালান কোঠার ছাদে ফুলের টবে কিংবা ড্রেনে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে
যেখানে অনায়াসে এসব মশা দিম পারে এবং বংশ বিস্তার করে থাকে। ডেঙ্গু বড়দের
তুলনায় ছোট শিশুদের বেশী হয়। যাদের আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার
ইতিহাস আছে তাদের পরবর্তী সময়ে রোগটি হলে তাতে রোগীর অবস্থা আরও মারাত্মক
হওয়ার ঝুঁকি থাকে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহঃ
ডেঙ্গু
জ্বর প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। (১) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর এবং (২)
হেমোরেজিক ফিভার। দুই ধরনের জ্বরের লক্ষণ ও তীব্রতা আলাদা ধরনের। নিম্নে
প্রকারভেদে রোগটির লক্ষণ ও তীব্রতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরঃ
ক্লাসিক্যাল
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে সাধারণত তীব্র জ্বরের সাথে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে।
কোন কোন সময় জ্বরের মাত্রা ১০৫ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। এই ব্যথা বিশেষ করে
শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় জোড়ায় যেমন কোমর, পিঠের অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে
তীব্র হয়ে থাকে। এছাড়া মাথায় ও চোখের পেছনে তিব্র ব্যথা হতে পারে। অনেক সময়
ব্যথার মাত্রা এত তীব্র আকার ধারণ করে যে মনে হয় যেন হাঁড় ভেঙে যাচ্ছে।
এজন্য এই জ্বরকে ‘ব্রেক বোন ফিভার’ও বলা হয়। এছাড়া জ্বরের
চার বা পাঁচদিনের সময় সারা শরীরে লালচে দানা যুক্ত অ্যালার্জি বা ঘামাচির
মতো দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি রোগীর বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে। এতে
রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করতে পারে। এছাড়া রোগীর খাওয়া দাওয়ার রুচি অনেক
কমে যায়। কোনো কোনো রোগীর বেলায় জ্বর দুই বা তিনদিন পর আবার আসে বলে একে ‘বাই ফেজিক ফিভার’ ও বলা হয়।
২। হেমোরেজিক ডেঙ্গু ফিভারঃ
হেমোরেজিক
ডেঙ্গু ফিভার হলে অবস্থাটা আরও জটিল আকার ধারণ করে। এইরুপ জ্বরে শরীরের
বিভিন্ন অংশ থেকে যেমন চামড়ার নিচ, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, নাক,
মুখ, দাঁতের মাড়ি কিংবা কফের সাথে রক্ত বমি হতে পারে। এছাড়া কালো পায়খানা
সহ পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বের হতে পারে।, মেয়েদের ক্ষেত্রে অসময়ে
ঋতুস্রাব হতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ অনেকদিন পর্যন্ত অব্যাহত
থাকতে পারে। এই রোগ হলে অনেকের বুকে পানি, পেটে পানি জমা ইত্যাদি উপসর্গ
দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হতে পারে।
আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউরের মত ঘটনা ঘটতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের
ভয়াভহ একটি রূপ হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম যাতে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে
পারে। অন্যান্য জতিলতার মধ্যে নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া,
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, রোগী হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে
যাওয়া সহ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
ডাক্তারের কাছে কখন যাওয়া উচিত?
ডেঙ্গু
জ্বর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই বিভিন্ন উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসকের
পরামর্শ নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা ভালো। যেসব গুরুত্বপূর্ণ
উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত সেগুলো হলো-
- শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকলে।
- রক্ত পরীক্ষায় প্লাটিলেটের মাত্রা কম পাওয়া গেলে
- শ্বাস নিতে কষ্ট হলে।
- পেটে পানি এসে ফুলে গেলে।
- প্রস্রাবের মাত্রা কমে গেলে।
- শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে।
- দেহে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্লান্তিভাব বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
- পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলে কিংবা বমি হলে।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা কিভাবে করবেন?
কেউ
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা না করালেও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে রোগী
সাধারণত ৫-১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে এসময় যাতে ডেঙ্গুজনিত
কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয় এজন্য রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে
সেভাবে চলতে হবে। এজন্য ডেঙ্গুর চিকিৎসায় নিম্নলিখিত চিকিৎসা ব্যবস্থা
গ্রহণ করা যায়।
- সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে।
- ডেঙ্গু হলে প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
- রোগী যদি মুখ দিয়ে খেতে না পারে তাহলে তার শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে।
- রোগীর জ্বর বেশী হয়ে গেলে কমানোর জন্য শুধুম প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধই দেওয়া যাবে। তবে কোন প্রকারেই এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথানাশক খাওয়ানো যাবে না। এসব ওষুধ খেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- এছাড়া জ্বর কমাতে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছানো যেতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়:
ডেঙ্গু
জ্বরের বাহক যেহেতু মশা তাই এই বাহকের প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই রোগের
প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য ডেঙ্গুবাহী মশার বংশবিস্তার রোধের পাশাপাশি মশা যেন
আপনাকে কামড়াতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এডিস মশা যেহেতু অভিজাত
এলাকায়, বড় বড়, সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় বসবাস করে ও সেখানে থাকা স্বচ্ছ
পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে তাই এসব আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এ রোগের
বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ। এজন্য নিম্নের বিষয়গুলির প্রতি নজর দেওয়া
উচিত।
- বাড়ির আশপাশের ঝোঁপঝাড়, জলাশয় কিংবা জঙ্গল থাকলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফেলতে হবে।
- এডিস মশা যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে তাই বাসার ফুলদানি, কোন অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, কিংবা পরিত্যক্ত টায়ার থাকলে সেগুলি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
- লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘরের বাথরুম বা অন্য কোথাও পাঁচদিনের বেশি পানি জমানো অবস্থায় না থাকে যেমন অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচের অংশ ইত্যাদি।
- এডিস জাতীয় মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়িয়ে থাকে। এজন্য দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড় ঢেকে রাখতে, প্রয়োজন হলে মসকুইটো রিপেলেন্ট লাগানো যেতে পারে।
- মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা ও জানালায় মশারীর নেট লাগাতে হবে।
- দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
- বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হাফ প্যান্ট না পরিয়ে তাদের ফুল প্যান্ট পরিয়ে তারপর স্কুলে পাঠানো উচিত।
- মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সাথে মশার কামড় থেকে বাচতে দিনে কিংবা রাতে মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
- সর্বপরি কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে উক্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যেন কোনো মশা তাঁকে কামড়াতে না পারে।
আমাদের
প্রকৃতি থেকে ডেঙ্গু জ্বরের মশা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তাই মশা
প্রজননের এবং বংশবৃদ্ধির পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবারই খেয়াল
রাখতে হবে। নিয়মিত মশারী ব্যাবহার করা একদম ভোলা যাবেনা। একমাত্র সচেতনতা ও
প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই যন্ত্রণাময় রোগের হাত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: এক মহাবিপর্যয়ের হাতছানি
islam-icon
বুধবার, মার্চ ২৫, ২০২০
0
বার দেখা হয়েছে
মা, পেট খারাপ- সিপ্রোসিন খা, পেটে জানি কেমুন করে- দুইটা মেট্রোনিডাজল খা। সবাই যেন ছোটখাটো ডাক্তার। সবচেয়ে বড় ডাক্তার ওষুধের দোকানের কমপাউন্ডার গুলো। এভাবে নিয়ম না মেনে অনবরত এন্টিবায়োটিক বা ঔষধ খেলে কি মারাত্মক পরিনতি হতে পারে আসুন জেনে নিই।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?
সাধারণত ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার জন্য এন্টিবায়োটিকের মাত্রা ভিন্ন হয়। সঠিক পরিমাণে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলে ব্যাক্টেরিয়াগুলো পরোপুরি ধ্বংস না হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন এই ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে উক্ত এন্টিবায়োটিকের আর কোনো প্রভাব থাকেনা। এ অবস্থাকে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলে। যখন কেউ এন্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স সমপন্ন করেনা তখন এ রেজিস্ট্যান্স প্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়াগুলো তৈরি হয়।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ কেন?
আমরা যখন রোগাক্রান্ত হই তখন ডাক্তার আমাদের রক্ত ও অন্যান্য নুমনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান এবং রোগের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়া নির্ণয় করে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কিছু ঔষধ দিয়ে থাকেন। কিছু ঔষধ খাওয়ার পর খানিকটা ভালো অনুভব করলেই অনেকে মনে করে আমিতো ভালো হয়েই গেছি, আর ঔষধ খাওয়ার দরকার কি? ঔষধ খাওয়া ছেড়ে দেয় এবং ডাক্তারের দেয়া এন্টিবায়োটিকের কোর্স পূর্ণ করেনা। ফলে রেজিস্ট্যান্সপ্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়াগুলো যখন দেহ থেকে বের হয়ে প্রকৃতিতে যায় তখন অন্য সাধারণ ব্যাক্টেরিয়াগুলোকেও রেজিস্ট্যান্স করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে যে এন্টিবায়োটিক আগে কাজ করত তখন তা সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও আর কাজ করে না। ফলে একই এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে পরবর্তিতে আর রোগ সারেনা। নতুন কোন এন্টিবায়োটিক বা অতিরিক্ত মাত্রার ডোজের প্রয়োজন দেখা দেয়। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো তাঁর রোগ সারাবার কোন বিকল্প ব্যবস্থা আর থাকবেনা।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন দেখা দেয়?
সঠিক পরিমাণে এবং সময়মতো এন্টিবায়োটিক না নেওয়া হলে।
প্রয়োজন ছাড়াই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে থাকলে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজের ইচ্ছামতো এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে করতে ছেড়ে দিলে।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধের উপায়
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রার এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন।
ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দিজ্বর সাধারণত ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। আর ভাইরাসের উপর এন্টিবায়োটিক কোন কাজ করতে পারেনা। তাই ঠাণ্ডা লাগলে বা সর্দিজ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করবেন না।
চিকিৎসককে বলুন যে খুব প্রয়োজন না হলে যেন আপনাকে এন্টিবায়োটিক না দেয়।
ডাক্তার যতদিন না বলে ততোদিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক গ্রহণ বন্ধ করবেন না।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স একটি মহাবিপর্যয়। যা একবার হয়ে গেলে আর উপায় নেই। তাই সময় থাকতে আজই সচেতন ও সাবধান হোন।এন্টিবায়োটিক গ্রহনের ব্যাপারে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রার ও যথাযথ তাঁর কোর্স পুর্ণ করুন। রেজিস্ট্যান্স হওয়ার আগেই সাবধান হোন এবং ঝুঁকিহীন জীবন যাপন করুন।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?
সাধারণত ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার জন্য এন্টিবায়োটিকের মাত্রা ভিন্ন হয়। সঠিক পরিমাণে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলে ব্যাক্টেরিয়াগুলো পরোপুরি ধ্বংস না হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন এই ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে উক্ত এন্টিবায়োটিকের আর কোনো প্রভাব থাকেনা। এ অবস্থাকে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলে। যখন কেউ এন্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স সমপন্ন করেনা তখন এ রেজিস্ট্যান্স প্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়াগুলো তৈরি হয়।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ কেন?
আমরা যখন রোগাক্রান্ত হই তখন ডাক্তার আমাদের রক্ত ও অন্যান্য নুমনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান এবং রোগের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়া নির্ণয় করে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কিছু ঔষধ দিয়ে থাকেন। কিছু ঔষধ খাওয়ার পর খানিকটা ভালো অনুভব করলেই অনেকে মনে করে আমিতো ভালো হয়েই গেছি, আর ঔষধ খাওয়ার দরকার কি? ঔষধ খাওয়া ছেড়ে দেয় এবং ডাক্তারের দেয়া এন্টিবায়োটিকের কোর্স পূর্ণ করেনা। ফলে রেজিস্ট্যান্সপ্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়াগুলো যখন দেহ থেকে বের হয়ে প্রকৃতিতে যায় তখন অন্য সাধারণ ব্যাক্টেরিয়াগুলোকেও রেজিস্ট্যান্স করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে যে এন্টিবায়োটিক আগে কাজ করত তখন তা সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও আর কাজ করে না। ফলে একই এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে পরবর্তিতে আর রোগ সারেনা। নতুন কোন এন্টিবায়োটিক বা অতিরিক্ত মাত্রার ডোজের প্রয়োজন দেখা দেয়। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো তাঁর রোগ সারাবার কোন বিকল্প ব্যবস্থা আর থাকবেনা।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন দেখা দেয়?
সঠিক পরিমাণে এবং সময়মতো এন্টিবায়োটিক না নেওয়া হলে।
প্রয়োজন ছাড়াই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে থাকলে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজের ইচ্ছামতো এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে করতে ছেড়ে দিলে।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধের উপায়
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রার এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন।
ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দিজ্বর সাধারণত ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। আর ভাইরাসের উপর এন্টিবায়োটিক কোন কাজ করতে পারেনা। তাই ঠাণ্ডা লাগলে বা সর্দিজ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করবেন না।
চিকিৎসককে বলুন যে খুব প্রয়োজন না হলে যেন আপনাকে এন্টিবায়োটিক না দেয়।
ডাক্তার যতদিন না বলে ততোদিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক গ্রহণ বন্ধ করবেন না।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স একটি মহাবিপর্যয়। যা একবার হয়ে গেলে আর উপায় নেই। তাই সময় থাকতে আজই সচেতন ও সাবধান হোন।এন্টিবায়োটিক গ্রহনের ব্যাপারে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রার ও যথাযথ তাঁর কোর্স পুর্ণ করুন। রেজিস্ট্যান্স হওয়ার আগেই সাবধান হোন এবং ঝুঁকিহীন জীবন যাপন করুন।
করোনাভাইরাস কি?
islam-icon
বুধবার, মার্চ ২৫, ২০২০
0
বার দেখা হয়েছে
এ ভাইরাসের জিনোম নিজস্ব আরএনএ দিয়ে গঠিত। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৬ থেকে ৩২ কিলো বেস পেয়ার (kilo base-pair) এর মধ্যে হয়ে থাকে যা এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ। করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। কারণ ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটি দেখতে অনেকটা মুকুটের মত। ভাইরাসের উপরিভাগে প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিন সংক্রামিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে।
চীনের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে।
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।
ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ - এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরসা। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।
২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।
''সার্সের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখনো আমরা ভুলতে পারিনি, ফলে নতুন ভাইরাসের প্রচণ্ড ভীতির তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের রোগ মোকাবেলায় আমরা এখন অনেক বেশি প্রস্তুত,'' বলছেন ওয়েলকাম ট্রাস্টের চিকিৎসক জোসি গোল্ডিং।
কোভিড-১৯
নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: 'চায়না ভাইরাস', 'করোনাভাইরাস', '২০১৯ এনকভ', 'নতুন ভাইরাস', 'রহস্য ভাইরাস' ইত্যাদি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা 'করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯'-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
চীনের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে।
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।
ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ - এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরসা। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।
২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।
''সার্সের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখনো আমরা ভুলতে পারিনি, ফলে নতুন ভাইরাসের প্রচণ্ড ভীতির তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের রোগ মোকাবেলায় আমরা এখন অনেক বেশি প্রস্তুত,'' বলছেন ওয়েলকাম ট্রাস্টের চিকিৎসক জোসি গোল্ডিং।
কোভিড-১৯
নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: 'চায়না ভাইরাস', 'করোনাভাইরাস', '২০১৯ এনকভ', 'নতুন ভাইরাস', 'রহস্য ভাইরাস' ইত্যাদি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা 'করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯'-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
Islamic History
ফটো গ্যালারী
1/6

ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6

মুসলিম নারীর বিধান
3/6

ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6

ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6

মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6

উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব