LIVE
Loading latest headlines...

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব অধ্যায়-0১ ইখলাস (০১-৩৬টি হাদীস)

শনিবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
ইখলাস, সত্যবাদিতা ও সৎ নিয়তের প্রতি উদ্বুদ্ধ করণঃ

১ ইখলাস     পরিচ্ছেদঃ
ইখলাস, সত্যবাদিতা ও সৎ নিয়তের প্রতি উদ্বুদ্ধ করণঃ

(صحيح) عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُماَ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى آوَاهُمُ الْمَبِيتُ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الْغَارَ فَقَالُوْا إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ.
فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمُ: اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلًا وَلَا مَالًا فَنَأَى بِيْ فِيْ طَلَبِ شَجرٍ يَوْمًا فَلَمْ أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدْتُهُمَا نَائِمَيْنِ وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلًا أَوْ مَالًا فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ أَنْتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الْفَجْرُ فَاسْتَيْقَظَا فَشَرِبَا غَبُوقَهُمَا اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لاَ يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
قَالَ الْآخَرُ: اللَّهُمَّ كَانَتْ لِيْ بِنْتُ عَمٍّ كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ فَأَرَدْتُهَا عَنْ نَفْسِهَا فَامْتَنَعَتْ مِنِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بِهَا سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءَتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفَعَلَتْ حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا قَالَتْ لاَ أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الْخَاتَمَ إِلاَّ بِحَقِّهِ فَتَحَرَّجْتُ مِنَ الْوُقُوعِ عَلَيْهَا فَانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ لاَ يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهَا. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
قَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ فَأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهَبَ فَثَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الْأَمْوَالُ فَجَاءَنِي بَعْدَ حِينٍ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِي فَقُلْتُ لَهُ كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أَجْرِكَ مِنَ الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ وَالْغَنَمِ وَالرَّقِيقِ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ لَا تَسْتَهْزِئُ بِي فَقُلْتُ إِنِّي لَا أَسْتَهْزِئُ بِكَ فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فَاسْتَاقَهُ فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ.

وفي رواية: أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:
بَيْنَمَا ثَلَاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ يَمْشُونَ إِذْ أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فَأَوَوْا إِلَى غَارٍ فَانْطَبَقَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ إِنَّهُ وَاللَّهِ يَا هَؤُلَاءِ لَا يُنْجِيكُمْ إِلَّا الصِّدْقُ فَليَدْعُ كُلُّ رَجُلٍ مِنْكُمْ بِمَا يَعْلَمُ أَنَّهُ قَدْ صَدَقَ فِيهِ فَقَالَ وَاحِدٌ مِنْهُمْ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّهُ كَانَ لِي أَجِيرٌ عَمِلَ لِي عَلَى فَرَقٍ مِنْ أَرُزٍّ فَذَهَبَ وَتَرَكَهُ وَأَنِّي عَمَدْتُ إِلَى ذَلِكَ الْفَرَقِ فَزَرَعْتُهُ فَصَارَ مِنْ أَمْرِهِ أَنِّي اشْتَرَيْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَأَنَّهُ أَتَانِي يَطْلُبُ أَجْرَهُ فَقُلْتُ لَهُ اعْمِدْ إِلَى تِلْكَ الْبَقَرِ فَسُقْهَا فَقَالَ لِي إِنَّمَا لِي عِنْدَكَ فَرَقٌ مِنْ أَرُزٍّ فَقُلْتُ لَهُ اعْمِدْ إِلَى تِلْكَ الْبَقَرِ فَإِنَّهَا مِنْ ذَلِكَ الْفَرَقِ فَسَاقَهَا فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ مِنْ خَشْيَتِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا فَانْسَاحَتْ عَنْهُمْ الصَّخْرَةُ. فذكر الحديث قريبا من الأول

ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

“তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি বনী ইসরাঈলের মধ্যে থেকে তিন ব্যক্তি একদা কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে গমন করল। রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে তারা একটি গুহায় প্রবেশ করল। হঠাৎ পাহাড়ের উপর থেকে প্রকান্ড একটি পাথর আছড়ে পড়ে গুহার দারদেশ বন্ধ করে দিল। এসময় তারা একে অপরকে বললঃ এই প্রকান্ড পাথর থেকে তোমাদেরকে কেউ মুক্তি দিতে পারবে না। তাই প্রত্যেকে স্বীয় সৎআমলের অসীলায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। এক ব্যক্তি দু’আ করতে লাগলঃ আয় আল্লাহ! আমার পিতামাতা উভয়ই অতিবৃদ্ধ ছিলেন। আমি কখনই তাদের আগে কাউকে দুধ পান করাতাম না, না পরিবারের কোন ব্যক্তিকে না কোন দাস-দাসীকে। একদা গবাদি পশুর জন্য ঘাষ-পাতার অনুসন্ধানে দূরে চলে গিয়েছিলাম। রাতে যখন ফিরে আসি তখন তারা ঘুমিয়ে পড়েন। তাদের জন্য দুধ দহন করে দেখলাম তারা ঘুমন্ত। কিন্তু তাদেরকে দুধ পান করানোর আগে পরিবারের অন্য কাউকে দুধ পান করানো আমি অপছন্দ করলাম। তাই তাদের শিয়রে অবস্থান নিলাম। দুধের পেয়ালা আমার হাতেই থাকল। অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন তারা জাগ্রত হয়। শেষ পর্যন্ত ফজরের আলো উদ্ভাসিত হয়ে গেল। (কোন কোন বর্ণনায় এসেছেঃ সে সময় ছোট ছোট শিশুরা আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করছিল)। তারা জাগ্রত হল। তারপর দুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তষ্টির উদ্দেশ্য করে থাকি, তবে আমাদেরকে এ পাথরের বিপদ থেকে উদ্ধার কর। পাথরটি তখন সামান্য একটু সরে গেল। কিন্তু তারা বের হতে সক্ষম হল না।

নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ দ্বিতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে খুব ভালবাসতাম। তাই তাকে একান্ত কাছে পেতে চাইলাম। কিন্তু সে রাজি হল না। একবার সে দুর্ভিক্ষের সম্মুখিন হয়ে আমার কাছে আসল। আমি তাকে একশত বিশটি স্বর্ণ মুদ্রা দিলাম। এই শর্তে যে, সে আমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিবে। সে রাজি হল। আমি যখন আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে পুরাপুরি প্রস্তুত হলাম, তখন সে বললঃ অধিকার ছাড়া সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া আমি তোমার জন্য হালাল মনে করি না। একথায় আমি ভীত হলাম এবং তাকে ছেড়ে দিলাম। অথচ সে আমার কাছে সর্বাধিক ভালবাসার পাত্র ছিল। যে স্বর্ণমুদ্রা তাকে দিয়েছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম। আয় আল্লাহ! উক্ত কাজ যদি তোমার সম্ভাষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকি তবে আমাদের এই বিপদ দূর করে দাও। ফলে পাথরটি আরও একটু সরে গেল। কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হল না।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তৃতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমি কতিপয় শ্রমিক নিয়োগ করি। প্রত্যেককে তাদের পারিশ্রমিকও দিয়ে দেই। কিন্তু এক ব্যক্তি তার পারিশ্রমিক না নিয়েই চলে যায়। আমি সে পারিশ্রমিকের অর্থ দিয়ে চাষাবাদ করি। ফলে তা থেকে অনেক সম্পদ বৃদ্ধি হয়। বহু দিন পর সে লোক আমার কাছে ফিরে এসে বলেঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমার পারিশ্রমিক দাও। আমি বললামঃ এই উট, গরু, ছাগল ও ক্রীতদাস যা দেখছো তা সবই তোমার পারিশ্রমিক। সে বললঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমার সাথে ঠাট্টা কর না। আমি বললামঃ আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না। তখন সে সবগুলোই নিয়ে নিল। কোন কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! এ কাজ যদি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি, তবে আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করে দাও। তখন পাথরটি সরে গেল এবং তারাও সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হল।

অন্য বর্ণনায় আছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
“তোমাদের পূর্ব জাতির তিন ব্যক্তি রাস্তা চলছিল। তারা বৃষ্টির সম্মুখিন হলে আশ্রয়ের জন্য একটি গুহায় প্রবেশ
করল। এমন সময় গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বললঃ আল্লাহর শপথ এ বিপদ থেকে সত্যবাদিতা ছাড়া তোমাদেরকে কোন কিছুই মুক্ত করতে পারবে না। সুতরাং তোমাদর প্রত্যেকের আল্লাহর কাছে এমন আমলের মাধ্যমে দু’আ করা উচিত যাতে সে সততার পরিচয় দিয়েছে।
একজন বললঃ হে আল্লাহ! তুমি ভাল ভাবেই জান, আমার একজন শ্রমিক ছিল। ধানের একটি নির্দিষ্ট মাপের বিনিময়ে সে আমার নিকট কাজ করেছিল। কিন্তু সে তার প্রাপ্য না নিয়েই চলে যায়। আমি সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান কৃষি কাজে ব্যবহার করি ফলে উৎপাদন এমন হয় যা থেকে আমি কতগুলো গরু খরিদ করি। একদিন সে আমার নিকট এসে তার পারিশ্রমিক চায়। আমি বললামঃ ঐ গরুগুলোর কাছে যাও। এগুলো তোমার সেই প্রাপ্য ধান থেকে হয়েছে। তখন সে গরুগুলো নিয়ে চলে গেল। হে আল্লাহ! উক্ত কাজ যদি আমি আপনার ভয়ে করে থাকি তবে আমাদেরকে উদ্ধার কর। তখন পাথর গুহার মুখ থেকে (কিছুটা) সরে গোল........ |* অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ প্রায় প্রথমটির মতই উল্লেখ করেছেন। (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


ইবনে হিব্বান থেকে বর্ণিতঃ

ইবনে হিব্বান হাদীছটি আবু হুরায়রার বরাতে সংক্ষেপে বর্ণনা করেন। ‘পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার’ অনুচ্ছেদে তার বর্ণনা আসবে। ইনশাআল্লাহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


(صحيح) عَنْ أَبِي فِرَاسٍ رَجُلٍ مِنْ أَسْلَمَ، قَالَ: نَادَى رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: " الْإِخْلَاصُ ".
وفي لفظ آخر قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : سَلُونِي عَمَّا شِئْتُمْ "، فَنَادَى رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْإِسْلَامُ ؟ قَالَ: " إِقَامُ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ "، قَالَ: فَمَا الْإِيمَانُ ؟ قَالَ: " الْإِخْلَاصُ "، قَالَ: فَمَا الْيَقِينُ ؟ قَالَ: " التَّصْدِيقُ بالْقيامةِ. رواه البيهقي

আবু ফেরাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ছিলেন আসলাম গোত্রের লোক। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ডাক দিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঈমান কি? তিনি বললেনঃ “ইখলাস বা একনিষ্ঠতা।”
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (একদা) বললেনঃ
“যা ইচ্ছা তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর।”
তখন জনৈক ব্যক্তি ডাক দিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলাম কি?
তিনি বললেনঃ “সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্ৰদান করা।”
সে বলল, ঈমান কি?
তিনি বললেনঃ “ইখলাস বা একনিষ্ঠতা।"
সে বলল, ইয়াকীন কি?
তিনি বললেনঃ “(ইসলাম ধর্মের যাবতীয় বিষয়কে) সত্য প্রতিপন্ন করা।"
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বায়হাকী)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


(صحيح لغيره) وَعَنْ أبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدِرِيْ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أنه قال في حجة الوداع نَضَّرَ اللهُ عَبْدًا سَمِعَ مَقَالَتِي فَوَعَاهَا , فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ لَيْسَ بِفَقِيهٍ. ثَلاثٌ لا يَغِلُّ عَلَيْهِنَّ قَلْبُ مُؤْمِنٍ : إِخْلاصُ الْعَمَلِ لِلَّهِ وَالنَّصِيحَةُ لأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ ، وَلُزُومُ جَمَاعَتِهِمْ ، فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ ، تُحِيطُ مَنْ وَرَاءَهُمْ. رواه البزار بإسناد حسن

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিদায় হজ্জে বলেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির মুখমন্ডল উজ্জল করুন (তাকে সম্মানিত করুন) যে ব্যক্তি আমার কথা শুনে তা মুখস্ত রেখেছে। কেননা এমন কতই না জ্ঞান বহনকারী রয়েছে, অথচ সে ফকীহ (জ্ঞানী) নয়। তিনটি বিষয়ে কোন মুমিন ব্যক্তির অন্তরে হিংসা প্রবেশ করতে পারে না। (১) আল্লাহর জন্য আমলকে একনিষ্ঠ করা। (২) মুসলমানদের নেতৃবৃন্দকে নসীহত করা। (৩) মুসলমানদের জামাতকে আকড়ে ধরা। কেননা তাদের দু’আ তাদের পরবর্তীদেরকেও বেষ্টন করে।’ (হাদীছটি বাযযার হাসান সনদে বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি


ইবনে হিব্বানও থেকে বর্ণিতঃ

এ হাদীছটি ইবনে হিব্বানও {সহীহ} গ্রন্থে যায়েদ বিন ছাবেত থেকে বর্ণনা করেন। ‘হাদীছ শ্ৰবণ” অনুচ্ছেদে এর বর্ণনা আসবে ইনশাআল্লাহ।
(হাফেজ আবদুল আযীম আল মুনযেরী বলেনঃ হাদীছটি আরো বর্ণিত হয়েছে- ইবনে মাসউদ, মুআয বিন জাবাল, নূমান বিন বাশীর, জুবায়র বিন মুতঈম, আবু দারদা ও আবু কুরছাফা জানদারা বিন খায়শানা ও আরো অনেক ছাহাবী (রাযিআল্লাহ আনহুম) থেকে এদের কিছু সনদ সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


(صحيح) و عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ ظَنَّ أَنَّ لَهُ فَضْلًا عَلَى مَنْ دُونَهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا بِدَعْوَتِهِمْ وَصَلَاتِهِمْ وَإِخْلَاصِهِمْ. رواه النسائي وغيره وهو في البخاري وغيره دون ذكر الإخلاص

মুসআব বিন সা’দ তার পিতা সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মুসআব বিন সা’দ তার পিতা সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (সাদ) একবার মনে করলেন গণীমতের মালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর অন্যান্য সাহাবীর তুলনায়- তার বেশী অধিকার আছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ "আল্লাহ তো এই উম্মতের দূর্বল ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করে থাকেন- তাদের দু’আ, সালাত ও (কৰ্মে) এখলাস তথা একনিষ্ঠতার মাধ্যমে।"
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন নাসাঈ ও আরো অনেকে। হাদীছটি সহীহ বুখারীতে রয়েছে। তবে সেখানে এখলাস শব্দের উল্লেখ নেই)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


(صحيح لغيره) وَعَنْ الضحاك بن قيس قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ أَنَا خَيْرُ شَرِيكٍ فَمَنْ أَشْرَكَ مَعِى شَرِيكًا فَهُوَ لِشَرِيكِى يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَخْلِصُوا أَعْمَالَكُمْ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ مَا أُخْلِصَ لَهُ وَلاَ تَقُولُوا هَذَا لِلَّهِ وَلِلرَّحِمِ فَإِنَّهَا لِلرَّحِمِ وَلَيْسَ لِلَّهِ مِنْهَا شَىْءٌ وَلاَ تَقُولُوا هَذَا لِلَّهِ وَلِوُجُوهِكُمْ فَإِنَّهَا لِوُجُوهِكُمْ وَلَيْسَ لِلَّهِ مِنْهَا شَىْءٌ. رواه البزار بإسناد لا بأس به والبيهقي

যাহহাক বিন ক্বায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা’আলা বলেন, আমি উত্তম শরীক । (কোন আমলে) আমার সাথে কেউ যদি শরীক করে তবে উহা আমার শরীকের জন্যেই সাব্যস্ত হবে। হে লোক সকল! তোমরা একনিষ্ঠভাবে আমল কর। কেননা আল্লাহ তাবরাক ওয়া তা'আলা একনিষ্ঠভাবে যা তার জন্যে করা হয় তা ব্যতীত অন্য কোন আমল কবূল করেন না। তোমরা এরূপ বলো না যে, এ আমলটি আল্লাহর জন্যে এবং আত্মীয়ের জন্যে। কেননা উহা আত্মীয়ের জন্যেই সাব্যস্ত হবে। তাতে আল্লাহর কোন অংশ থাকবে না। তোমরা এরূপ বলো না যে, এ আমলটি আল্লাহর জন্যে এবং তোমাদের সন্তুষ্টির জন্যে। কেননা উহা তোমাদের উদ্দেশ্যেই সাব্যস্ত হবে। তাতে আল্লাহর কোন অংশ থাকবে না।” (হাদীছটি বাযযার এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন)
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি


(حسن ) وَعَنْ أَبِيْ أُماَمَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَرَأَيْتَ رَجُلًا غَزَا يَلْتَمِسُ الْأَجْرَ وَالذِّكْرَ مَالَهُ فَقاَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا شَيْءَ لَهُ فَأَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يَقُولُ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا شَيْءَ لَهُ ثُمَّ قَالَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبَلُ مِنْ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ. رواه أبو داود والنسائي بإسناد جيد

আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর নিকট এসে বললঃ এমন লোক সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন, যে ছোয়াব ও প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে- সে কি প্রতিদান পাবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “তার জন্য কোনই প্রতিদান নেই। লোকটি তিন বার কথাটি পূণরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তার জন্য কিছুই নেই। তারপর তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইখলাছ ও তার সম্ভাষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া কোন আমল কবুল করবেন না।" (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ ও নাসাঈ উত্তম সনদে। এ ধরণের হাদীছ জিহাদ অধ্যায়ে আসবে ইনশাআল্লাহ)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস


(حسن لغيره) وَعَنْ أبِيْ الدَّرْداَءِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال: الدنيا ملعونة ملعون ما فيها إلا ما ابتغي به وجه الله تعالى. رواه الطبراني

আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন
“দুনিয়া অভিশপ্ত। উহার মধ্যস্থিত সকল বস্তুও অভিশপ্ত। তবে যে কাজের মাধ্যমে আল্লাহ সন্তষ্টি কামনা করা হয়
তা অভিশপ্ত নয়।” (হাদীছটি ত্বাবরানী বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি

১০
(صحيح) عن عمر بن الخطاب رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قال: سمعت رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقول: إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بالنية وفي رواية بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ. رواه البخاري ومسلم وأبو داود والترمذي والنسائي

ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে একথা বলতে শুনেছিঃ ‘যাবতীয় আমল (শুদ্ধ না অশুদ্ধ তা) নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে তাই রয়েছে তার জন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রতি হিজরত করবে তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বলেই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত দুনিয়া অর্জন বা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্য হবে, তার হিজরত যে উদ্দেশ্য করেছে সে দিকেই গণ্য হবে।’ (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিয়ী, নাসাঈ)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১১
(صحيح) وَعَنْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْزُو جَيْشٌ الْكَعْبَةَ فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنْ الْأَرْضِ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَفِيهِمْ أَسْوَاقُهُمْ وَمَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ قَالَ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيَّاتِهِمْ. رواه البخاري ومسلم وغيرهما

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “একদল সৈনিক কাবা শরীফে যুদ্ধ করতে আসবে। তারা যখন “বায়দা’ নামক স্থানে পৌছবে কখন তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তিকে নিয়ে যমীন ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। আমি (আয়েশা) বললামঃ কেমন করে তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তিকে যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে, অথচ তাদের মধ্যে এমন লোকও তো রয়েছে যারা হাটে-বাজারে বেচা কেনায় লিপ্ত থাকবে এবং এমনও লোক থাকবে যারা সে সৈনিক দলের অন্তর্ভুক্ত নয়? তিনি বললেনঃ তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তিকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর নিয়ত অনুযায়ী তাদেরকে পূনরুথিত করা হবে।”
(হাদীছটি ইমাম বুখারী, মুসলিম প্রমুখ বৰ্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১২
(صحيح) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي غَزَاةٍ فَقَالَ إِنَّ أَقْوَامًا بِالْمَدِينَةِ خَلْفَنَا مَا سَلَكْنَا شِعْبًا وَلَا وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا فِيهِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ. رواه البخاري وأبو داود

لَقَدْ تَرَكْتُمْ بِالْمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا وَلَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ نَفَقَةٍ وَلَا قَطَعْتُمْ مِنْ وَادٍ إِلَّا وَهُمْ مَعَكُمْ فِيهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَكُونُونَ مَعَنَا وَهُمْ بِالْمَدِينَةِ فَقَالَ: حَبَسَهُمْ الْمَرَضُ.

আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে এলাম। এসময় তিনি বললেনঃ “আমাদের পশ্চাতে কতিপয় লোক মদীনায় রয়ে গেছে। আমরা এমন কোন পর্বতময় পথ ও উপত্যকা অতিক্রম করিনি যেখানে তারা আমাদের সাথে ছিল না। (অর্থাৎ আমাদের বরাবর প্রতিদান লাভ করেছে)। কেননা ওযর তাদেরকে বের হতে বাধা দিয়েছে।”

হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী ও আবু দাউদ, তবে আবু দাউদের বর্ণনা এভাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা মদীনায় একদল লোককে ছেড়ে এসেছ। তোমরা যে পথই চলেছো, যে অর্থই খরচ করেছে এবং যে উপত্যকাই পাড়ি দিয়েছো- তারা তোমাদের সাথেই রয়েছে। তারা প্রশ্ন করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে তারা আমাদের সাথে থাকল, অথচ তারা তো মদীনাতেই রয়েছে? তিনি বললেনঃ (এই কারণে যে) অসুস্থতা তাদেরকে তোমাদের সাথে থাকতে বাধা দিয়েছে।”
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৩
(صحيح لغيره) عنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّمَا يُبْعَثُ النَّاسُ عَلَى نِيَّاتِهِمْ. رواه ابن ماجه بإسناد حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “মানুষকে তাদের নিয়ত অনুযায়ী (কিয়ামতের দিন) উঠানো হবে।” (ইবনে মাজাহ হাদীছটি হাসান সনদে বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

১৪
(صحيح لغيره) ورواه أيضا من حديث جابر إلا أنه قال: يُحْشَرُ النَّاسُ

ইবনে মাজাহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (ইবনে মাজাহ) জাবের (রাঃ) থেকেও অত্র হাদীছটি বর্ণনা করেছেনঃ তবে তিনি বলেন, “মানুষকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে তাদের নিয়ত অনুযায়ী।”
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

১৫
(صحيح) وَعَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لا يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَامِكُمْ وَلا إِلَى صُوَرِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ [وأشار بأصابعه إلى صدره]، [وأعْماَلِكُمْ]" رواه مسلم

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ এবং আকার-আকৃতি দেখেন না; বরং তিনি দেখে থাকেন তোমাদের অন্তর।” [একথা বলে তিনি আঙ্গুল দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন।] এবং তিনি দেখে থাকেন তোমাদের আমল।" (ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৬
(صحيح لغيره) وَعَنْ أَبي كَبْشَةَ الْأَنَّمَارِيُّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ثَلَاثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ قَالَ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلَمَةً فَصَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ عِزًّا وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ.
قَالَ إِنَّمَا الدُّنْيَا لِأَرْبَعَةِ نَفَرٍ عَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالًا وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ وَيَعْلَمُ لِلَّهِ فِيهِ حَقًّا فَهَذَا بِأَفْضَلِ الْمَنَازِلِ وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالًا فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلَانٍ فَهُوَ بِنِيَّتِهِ فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ عِلْمًا فَهُوَ يَخْبِطُ فِي مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ لَا يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَلَا يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ وَلَا يَعْلَمُ لِلَّهِ فِيهِ حَقًّا فَهَذَا بِأَخْبَثِ الْمَنَازِلِ وَعَبْدٍ لَمْ يَرْزُقْهُ اللَّهُ مَالًا وَلَا عِلْمًا فَهُوَ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلَانٍ فَهُوَ بِنِيَّتِهِ فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ
رواه أحمد والترمذي واللفظ له وقال حديث حسن صحيح

مَثَلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ كَمَثَلِ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا وَعِلْمًا فَهُوَ يَعْمَلُ بِعِلْمِهِ فِي مَالِهِ يُنْفِقُهُ فِي حَقِّهِ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يُؤْتِهِ مَالًا فَهُوَ يَقُولُ لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ هَذَا عَمِلْتُ فِيهِ مِثْلَ الَّذِي يَعْمَلُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُمَا فِي الْأَجْرِ سَوَاءٌ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا وَلَمْ يُؤْتِهِ عِلْمًا فَهُوَ يَخْبِطُ فِي مَالِهِ يُنْفِقُهُ فِي غَيْرِ حَقِّهِ وَرَجُلٌ لَمْ يُؤْتِهِ اللَّهُ عِلْمًا وَلَا مَالًا فَهُوَ يَقُولُ لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ هَذَا عَمِلْتُ فِيهِ مِثْلَ الَّذِي يَعْمَلُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُمَا فِي الْوِزْرِ سَوَاءٌ.

আবু কাবশা আল আনমারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেনঃ “তিনটি বিষয়ের উপর আমি শপথ করছি এবং তোমাদের কাছে একটি হাদীছ বর্ণনা করছি, তোমরা তা মুখস্ত করে রাখ। তিনি বলেনঃ উক্ত তিনটি বিষয় হল (১) সাদকা করলে কোন বান্দার সম্পদ কমে না। (২) কোন বান্দার উপর জুলুম করা হলে সে যদি ধৈর্য ধারণ করে, তবে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (৩) যখনই কোন বান্দা ভিক্ষার দরজা খুলে দিবে তখনই আল্লাহ তার জন্য অভাবের দ্বার উন্মুক্ত করে দিবেন।” (অথবা তিনি এ জাতীয় একটা কথা বলেছেন) এবং তোমাদের নিকট আরেকটি হাদীছ বর্ণনা করছি, তোমরা উহা মুখস্ত করে রাখঃ “দুনিয়াটা চার প্রকার মানুষের জন্য। (১) একজন বান্দা, আল্লাহ তাকে সম্পদ ও জ্ঞান দান করেছেন। সে তাতে তার পালনকর্তাকে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে এবং তাতে আল্লাহর হক আছে তাও বুঝে (এবং তা আদায় করে)। এব্যক্তি সর্বোত্তম মর্যাদার অধিকারী। (২) অপর এক বান্দা, আল্লাহ তাকে জ্ঞান দান করেছেন, কিন্তু সম্পদ দেন নাই। কিন্তু সে সৎ নিয়তের অধিকারী। সে বলেঃ আমার যদি সম্পদ থাকত তবে উমুক (প্রথম) ব্যক্তির ন্যায় তা ব্যবহার করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। উভয়ে সমান প্রতিদান পাবে। (৩) তৃতীয় বান্দা, আল্লাহ তাকে সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু জ্ঞান দেন নাই। সে স্বীয় সম্পদ মুর্খতাবশতঃ অন্যায় কাজে ব্যয় করে। তাতে নিজ পালনকর্তাকেও ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্কও রক্ষা করে না, আল্লাহর কোন হকও আদায় করে না। এ ব্যক্তি নিকৃষ্টতম মানের অধিকারী। (৪) চতুৰ্থ বান্দা, আল্লাহ তাকে কোন সম্পদও দেন নাই, জ্ঞানও দান করেন নাই। সে বলেঃ আমার যদি সম্পদ থাকত, তবে উমুক (তৃতীয়) ব্যক্তির মত (অন্যায় কাজে) তা ব্যয় করতাম, সেও তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। আর উভয় ব্যক্তির পাপ এক সমান।”
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, আহমাদ, তিরমিয়ী ও ইবনে মাজাহ।)
 তবে ইবনে মাজার বর্ণনা এভাবেঃ
(সহীহ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
“এ উম্মতের উদাহরণ চার ব্যক্তির ন্যায়ঃ (১) এক ব্যক্তি, আল্লাহ তাকে সম্পদ ও জ্ঞান দান করেছেন। স্বীয় সম্পদে সে ইলম অনুযায়ী আমল করে থাকে। হক পথে তা ব্যয় করে। (২) অপর এক ব্যক্তি, আল্লাহ তাকে জ্ঞান দান করেছেন, কিন্তু কোন সম্পদ দেন নাই। সে বলেঃ এই ব্যক্তির মত যদি আমার (সম্পদ) থাকত তবে তার মত আমি তা ব্যবহার করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ উভয় ব্যক্তি প্রতিদানের ক্ষেত্রে বরাবর। (৩) তৃতীয় এক ব্যক্তি, আল্লাহ তাকে সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু কোন জ্ঞান দান করেননি, ফলে সে তার সম্পদে মূর্খতা সুলভ আচরণ করে, নাহক পথে তা ব্যয় করে। (৪) চতুৰ্থ ব্যক্তি, আল্লাহ তাকে না দিয়েছেন ধন-সম্পদ না দিয়েছেন জ্ঞান। সে বলেঃ এ ব্যক্তির ন্যায় যদি আমার (সম্পদ) থাকত, তবে এমন ভাবে তা ব্যবহার করতাম, যেমন এ ব্যক্তি করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ উভয় ব্যক্তি পাপের ক্ষেত্রে এক সমান।”
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

১৭
(صحيح) وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذَلِكَ فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ سَيِّئَةً وَاحِدَة" زاد في رواية: "أو محاها ولا يهلك [على] الله إلا هالك" رواه البخاري ومسلم

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সম্মানিত মহান পালনকর্তা হতে বর্ণনা করে বলেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সৎ কর্মসমূহ এবং অসৎকর্ম সমূহ লিখে রেখেছেন। অতঃপর উহা স্বীয় কিতাবে (কুরআনে) বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। অতএব যে ব্যক্তি সৎ কাজের ইচ্ছা করে, অতঃপর উহা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম না হয়, তবে আল্লাহ উহা পূর্ণ একটি সৎকর্ম হিসেবে লিখে নেন। আর ইচ্ছা করার পর যদি তা কর্মে বাস্তবায়ন করে, তবে আল্লাহ সে সৎকর্মটিকে দশ থেকে সাতশত থেকে আরো অনেক গুণে বৃদ্ধি করে লিখে নেন। আর যে ব্যক্তি কোন অসৎকর্ম করার ইচ্ছা পোষণ করে। অতঃপর উহা কর্মে বাস্তবায়ন না করে, তবে আল্লাহ উহা একটি পূর্ণ সৎকর্ম হিসেবে লিখে নেন। আর ইচ্ছা করার পর যদি উহা বাস্তবায়ন করে তবে আল্লাহ তা একটি মাত্ৰ পাপ কাজ হিসেবে লিখে থাকেন।”
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম) মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছেঃ
“আল্লাহ তা একটিমাত্ৰ পাপ হিসেবে লিখে থাকেন অথবা তা মিটিয়ে দেন। আর আল্লাহর ব্যাপারে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তি মাত্ৰই ধ্বংস হয়ে থাকে।”
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৮
(صحيح) وَعَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ، أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: " إِذَا أَرَادَ عَبْدِي بعْمَلَ سَيِّئَةً فَلا تَكْتُبُوهَا عَلَيْهِ حَتَّى يَعْمَلَهَا، فإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا بِمِثْلِهَا، وَإِنْ تَرَكَهَا مِنْ أَجْلِي فَاكْتُبُوهَا حَسَنَةً، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَعْمَلَ حَسَنَةً فَلَمْ يَعْمَلْهَا فَاكْتُبُوهَا حَسَنَةً، فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ." رواه البخاري واللفظ له ومسلم

مَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً وَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَعَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ وَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ.

قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا تَحَدَّثَ عَبْدِي بِأَنْ يَعْمَلَ حَسَنَةً فَأَنَا أَكْتُبُهَا لَهُ حَسَنَةً مَا لَمْ يَعْمَلْ فَإِذَا عَمِلَهَا فَأَنَا أَكْتُبُهَا بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا وَإِذَا تَحَدَّثَ بِأَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً فَأَنَا أَغْفِرُهَا لَهُ مَا لَمْ يَعْمَلْهَا فَإِذَا عَمِلَهَا فَأَنَا أَكْتُبُهَا لَهُ بِمِثْلِهَا وَإِنْ تَرَكَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً إِنَّمَا تَرَكَهَا مِنْ جَرَّايَ

থেকে বর্ণিতঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমার বান্দা যখন কোন অসৎ কর্ম করার ইচ্ছা পোষণ করে, তখন তা কর্মে বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত তোমরা (ফেরেশতাকুল) কিছুই লিখিও না। যদি কর্মে বাস্তবায়ন করে তবে সে কর্ম অনুরূপ তার পাপ লিখ। আর যদি তা আমার কারণে পরিত্যাগ করে, তবে উহা তার জন্য একটি পূণ্য হিসেবে লিখে নাও। আর যদি কোন সৎকর্মের ইচ্ছা করে অতঃপর তা বাস্তবায়ন না করে তবে তা একটি পূণ্য হিসেবে লিখে নাও। আর যদি তা কর্মে বাস্তবায়ন করে, তবে তা দশ থেকে সাতশতগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে লিখে নাও।” (বুখারী ও মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে বাক্যগুলো বুখারী থেকে গৃহীত)
মুসলিমের অপর রেওয়ায়াতে এসেছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করে, অতঃপর তা বাস্তবায়ন না করে, তবে তার জন্য একটি পূণ্য লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি সৎকর্মের ইচ্ছা করার পর তা বাস্তবায়ন করে, তবে তার জন্য দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত নেকী লিখা হয়। আর যে ব্যক্তি অসৎ কাজের ইচ্ছা করে তা বাস্তবায়ন না করে, তবে তার কোন পাপ লিখা হয় না। আর যদি বাস্তবায়ন করে তবে তা লিখা হয়।”
মুসলিমের আর এক বর্ণনায় রয়েছেঃ আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “সম্মানিত মহান আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যখন মনে মনে বলে যে, সে একটি সৎকাজ করবে, তখন উহা বাস্তবায়ন না করলে আমি উহা একটি সৎকাজ হিসেবে লিখে নেই। আর যদি বাস্তবায়ন করে, তবে তাকে দশগুণ বৃদ্ধি করে লিখে থাকি। আর যখন আমার বান্দা মনে মনে বলে যে, সে একটি খারাপ কাজ করবে, তখন উহা বাস্তবায়ন না করলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেই। আর যদি বাস্তবায়ন করে, তবে সে কাজের অনুরূপ আমি পাপ লিখে থাকি। আর যদি উহা বাস্তবায়ন করা ছেড়ে দেয় তবে (হে ফেরেশতাকুল) তার জন্য একটি পূণ্য লিখে নাও। কেননা সে উহা একমাত্র আমার কারণেই পরিত্যাগ করেছে।”
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৯
(صحيح) وَعَنْ معن بن يزيد رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قال كَانَ أَبِي يَزِيدُ أَخْرَجَ دَنَانِيرَ يَتَصَدَّقُ بِهَا فَوَضَعَهَا عِنْدَ رَجُلٍ فِي الْمَسْجِدِ فَجِئْتُ فَأَخَذْتُهَا فَأَتَيْتُهُ بِهَا فَقَالَ وَاللَّهِ مَا إِيَّاكَ أَرَدْتُ فَخَاصَمْتُهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَكَ مَا نَوَيْتَ يَا يَزِيدُ وَلَكَ مَا أَخَذْتَ يَا مَعْنُ. رواه البخاري

মা’ন বিন ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু দীনার বের করলেন দান করার উদ্দেশ্যে। অতঃপর মসজিদে গিয়ে এক ব্যক্তির নিকট রেখে দিলেন। (ঘটনাক্রমে আমি ছিলাম সে ব্যক্তি) আমি উহা নিয়ে তার নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করি নাই। তখন ব্যাপারটির ফায়সালার জন্য আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকট পেশ করলাম। তিনি বললেনঃ “হে ইয়ায়ীদ তুমি যা নিয়ত করেছ তার ছোয়াব পেয়ে যাবে। আর হে মা’ন যা তোমার হস্তগত হয়েছে তা তোমারই।” (ইমাম বুখারী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২০
(صحيح) عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُم أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لَأَتَصَدَّقَنَّ الليلة بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدِ سَارِقٍ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ عَلَى سَارِقٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدَيْ زَانِيَةٍ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ اللَّيْلَةَ عَلَى زَانِيَةٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى زَانِيَةٍ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدَيْ غَنِيٍّ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ عَلَى غَنِيٍّ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى سَارِقٍ وَعَلَى زَانِيَةٍ وَعَلَى غَنِيٍّ فَأُتِيَ فَقِيلَ لَهُ أَمَّا صَدَقَتُكَ عَلَى سَارِقٍ فَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعِفَّ عَنْ سَرِقَتِهِ وَأَمَّا الزَّانِيَةُ فَلَعَلَّهَا أَنْ تَسْتَعِفَّ عَنْ زِنَاهَا وَأَمَّا الْغَنِيُّ فَلَعَلَّهُ يَعْتَبِرُ فَيُنْفِقُ مِمَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ.
(رواه البخاري واللفظ له ومسلم والنسائي وقالا فيه: فقيل له أما صدقتك فقد تقبلت ثم ذكر الحديث

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “(বনী ইসরাঈলের) জনৈক ব্যক্তি একদা বলল, অবশ্যই আমি কিছু দান করব। এ উদ্দেশ্যে সে স্বীয় দান নিয়ে বের হল, এবং (গোপনীয়তার কারেণে নিজের অজান্তে) এক চোরের হাতে তা রেখে দিল। সকালে মানুষে বলাবলি করতে লাগল, (কি আশ্চর্য!) আজ রাতে এক চোরকে দান করা হয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহ চোরের হাতে আমার দান যাওয়ার কারণে সকল প্রশংসা তোমার জন্য। অবশ্যই। (আবার) দান করব। অতঃপর সে তার দান নিয়ে বের হল এবং এক ব্যভিচারিনীর হাতে রেখে দিল। সকালে মানুষ বলাবলি করতে লাগল, (কি আশ্চর্য!) গত রাতে একজন ব্যভিচারিনীকে দান করা হয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহ ব্যভিচারিনীকে দান করার কারণে সমস্ত প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। অবশ্যই। (আবার সাদকা করব)। সে তার দান নিয়ে বের হল অতঃপর এক ধনী লোকের হাতে দিয়ে দিল। সকালে মানুষ বলতে লাগল, (আশ্চর্য ব্যাপার!)। আজ রাতে একজন ধনী মানুষকে দান করা হয়েছে। সে বললঃ হে আল্লাহ যাবতীয় প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য চোরের, ব্যভিচারিনী এবং ধনী লোককে দান করার কারণে। তাকে স্বপ্ন মারফত বলা হল, তোমার দান চোরের হাতে যাওয়ার কারণে- হতে পারে সে চুরি থেকে বিরত থাকবে। আর ব্যভিচারিনী, হতে পারে সে এ দানের কারণে ব্যভিচার থেকে পবিত্র হবে। আর ধনী ব্যক্তি এ থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ করে হতে পারে, ফলে সেও তার সম্পদ থেকে দান করবে।”
(বুখারী, মুসলিম ও নাসাঈ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
তবে মুসলিম ও নাসাঈর বর্ণনায় এসেছেঃ তাকে স্বপ্ন মারফত বলা হল, তোমার সাদকা কবূল করা হয়েছে ...। তারপর হাদীছের বাকী অংশ উল্লেখ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২১
(حسن صحيح) عَنْ أبِيْ الدَّرْداَءِ يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ وَهُوَ يَنْوِي أَنْ يَقُومَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ حَتَّى أَصْبَحَ كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ. رواه النسائي وابن ماجه بإسناد جيد ورواه ابن حبان في صحيحه من حديث أبي ذر أو أبِيْ الدَّرْداَءِ.

আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাদীছটি তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি বিছানায় শয়ন করবে এই নিয়তে যে, সে রাতে কিয়ামুল লায়ল তথা নফল ছালাত আদায় করবে। কিন্তু তার চোখ তাকে পরাজিত করে দেয় ফলে (জাগ্রত হতে না পারার কারণে নামাযও আদায় করতে পারে না) সকাল হয়ে যায়। তবে সে যা নিয়ত করেছিল তা তার জন্য লিখে দেয়া হয়। আর নিদ্রা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে সাদকা স্বরূপ হয়ে যায়।
(হাদীছটি নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ উত্তম সনদে বর্ণনা করেন এবং ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ গ্রন্থে আবু যার অথবা আবু দারদা থেকে বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ

পরিচ্ছেদঃ
রিয়া থেকে সতর্কী করণ। কোন ব্যক্তি রিয়ার আশংকা করলে কি বলবে
২২

صحيح [22] عن أبِيْ هُرَيْرَةَ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقول: إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ.
وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ.
وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ. (رواه مسلم والنسائي)
ورواه الترمذي وحسنه وابن حبان في صحيحه كلاهما بلفظ واحد عن الْوَلِيدِ بْنِ أَبِي الْوَلِيدِ أَبُيْ عُثْمَانَ الْمَدَيِْنِيِّ أَنَّ عُقْبَةَ بْنَ مُسْلِمٍ حَدَّثَهُ أَنَّ شُفَيًّا الْأَصْبَحِيَّ حَدَّثَهُ
" أَنَّهُ دَخَلَ الْمَدِينَةَ فَإِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَدِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسُ فَقَالَ مَنْ هَذَا فَقَالُوا أَبُو هُرَيْرَةَ فَدَنَوْتُ مِنْهُ حَتَّى قَعَدْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُوَ يُحَدِّثُ النَّاسَ فَلَمَّا سَكَتَ وَخَلَا قُلْتُ لَهُ أَنْشُدُكَ بِحَقٍّ وَبِحَقٍّ لَمَا حَدَّثْتَنِي حَدِيثًا سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَلْتَهُ وَعَلِمْتَهُ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَفْعَلُ لَأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَلْتُهُ وَعَلِمْتُهُ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً فَمَكَثَ قَلِيلًا ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ لَأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ فَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ لَأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا وَهُوَ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ وَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ أَفْعَلُ لَأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا مَعَهُ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَهُ أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً شَدِيدَةً ثُمَّ مَالَ خَارًّا عَلَى وَجْهِهِ فَأَسْنَدْتُهُ عَلَيَّ طَوِيلًا ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ حَدَّثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
إنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَنْزِلُ إِلَى الْعِبَادِ لِيَقْضِيَ بَيْنَهُمْ وَكُلُّ أُمَّةٍ جَاثِيَةٌ فَأَوَّلُ مَنْ يَدْعُو بِهِ رَجُلٌ جَمَعَ الْقُرْآنَ وَرَجُلٌ يَقْتَتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَرَجُلٌ كَثِيرُ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لِلْقَارِئِ أَلَمْ أُعَلِّمْكَ مَا أَنْزَلْتُ عَلَى رَسُولِي قَالَ بَلَى يَا رَبِّ قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا عُلِّمْتَ قَالَ كُنْتُ أَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلَائِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ إِنَّ فُلَانًا قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ
وَيُؤْتَى بِصَاحِبِ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ أَلَمْ أُوَسِّعْ عَلَيْكَ حَتَّى لَمْ أَدَعْكَ تَحْتَاجُ إِلَى أَحَدٍ قَالَ بَلَى يَا رَبِّ قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا آتَيْتُكَ قَالَ كُنْتُ أَصِلُ الرَّحِمَ وَأَتَصَدَّقُ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلَائِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلَانٌ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ
وَيُؤْتَى بِالَّذِي قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ فِي مَاذَا قُتِلْتَ فَيَقُولُ أُمِرْتُ بِالْجِهَادِ فِي سَبِيلِكَ فَقَاتَلْتُ حَتَّى قُتِلْتُ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلَائِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلَانٌ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ ثُمَّ ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رُكْبَتِي فَقَالَ:
يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أُولَئِكَ الثَّلَاثَةُ أَوَّلُ خَلْقِ اللَّهِ تُسَعَّرُ بِهِمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
وقَالَ الْوَلِيدُ أَبُو عُثْمَانَ فَأَخْبَرَنِي عُقْبَةُ بْنُ مُسْلِمٍ أَنَّ شُفَيًّا هُوَ الَّذِي دَخَلَ عَلَى مُعَاوِيَةَ فَأَخْبَرَهُ بِهَذَا قَالَ أَبُو عُثْمَانَ وَحَدَّثَنِي الْعَلَاءُ بْنُ أَبِي حَكِيمٍ أَنَّهُ كَانَ سَيَّافًا لِمُعَاوِيَةَ فَدَخَلَ عَلَيْهِ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ بِهَذَا عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ قَدْ فُعِلَ بِهَؤُلَاءِ هَذَا فَكَيْفَ بِمَنْ بَقِيَ مِنَ النَّاسِ ثُمَّ بَكَى مُعَاوِيَةُ بُكَاءً شَدِيدًا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ هَالِكٌ وَقُلْنَا قَدْ جَاءَنَا هَذَا الرَّجُلُ بِشَرٍّ ثُمَّ أَفَاقَ مُعَاوِيَةُ وَمَسَحَ عَنْ وَجْهِهِ وَقَالَ صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ (مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ)
وراه ابن خزيمة في (صحيحه) نحو هذا

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে একথা বলতে শুনেছিঃ “কিয়ামত দিবসে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে এমন ব্যক্তি যে শাহাদত বরণ করেছে। তাকে সামনে নিয়ে আসা হবে। তখন (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামতরাজীর পরিচয় করবেন। সে উহা চিনতে পারবে। বলবেন, কি কাজ করেছ তা দ্বারা? সে বলবে, তোমার পথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে গেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি যুদ্ধ করেছ, এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে উমুক ব্যক্তি বীর যোদ্ধা। আর তা তো বলা হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হবে, তখন তাকে মুখের ভরে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এবং (সর্বপ্রথম বিচার করা হবে) সেই ব্যক্তির যে জ্ঞানার্জন করেছিল ও মানুষকে তা শিক্ষাদান করেছিল এবং কুরআন পাঠ করেছিল। তাকে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের পরিচয় করাবেন। সে উহা চিনতে পারবে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, কি আমল করেছ এই নেয়ামত দ্বারা। সে বলবে, জ্ঞানার্জন করেছি এবং মানুষকে তা শিখিয়েছি। আর আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তুমি জ্ঞানার্জন করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, (তোমাকে) বলা হবে আলেম বা জ্ঞানী। কুরআন পাঠ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, (তোমাকে) বলা হবে ক্বারী বা পাঠক। আর তা তো বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তখন তাকে মুখের ভরে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এবং (সর্ব প্রথম বিচার করা হবে) সেই ব্যক্তির, আল্লাহ যাকে প্রাচুর্য দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরণের সম্পদ। তাকে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর (আল্লাহ তা’আলা) তাকে প্রদত্ত নেয়ামত রাজীর পরিচয় করবেন। সে উহা চিনতে পারবে। তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কি কাজ করেছ এই নেয়ামত সমূহ দ্বারা? সে জবাব দিবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন। এ ধরনের সকল পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ সম্পদ ব্যয় করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এরূপ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, (তোমাকে) বলা হবে, সে দানবীর। আর তা তো বলাই হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে। তখন তাকে মুখের ভরে ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম ও নাসাঈ)
হাদীছটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে তাকে হাসান বলেন এবং ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, উভয়ের বাক্যরূপ একইঃ
ওয়ালীদ বিন আবুল ওয়ালীদ আবু উছমান আল মাদীনী হতে বৰ্ণিত। উক্ববা বিন মুসলিম তাঁর কাছে হাদীছ বর্ণনা করেন যে, শুফাইয়া আল আসবাহী বর্ণনা করেন, তিনি (শুফাইয়া) একদা মদীনায় প্রবেশ করলেন, এসময় তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, মানুষ তার নিকট একত্রিত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করলেন, কে এই লোক? তারা বললঃ আবু হুরায়রা। তিনি বলেনঃ একথা শুনে আমি তাঁর নিকটবর্তী হলাম, এমনকি তাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। সে সময় মানুষকে তিনি হাদীছ শুনাচ্ছিলেন। যখন তিনি থামলেন এবং নির্জন হলেন, আমি তাঁকে বললাম, দয়া করে আপনি আমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করুন, যা আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর নিকট থেকে শুনে বুঝেছেন ও জেনেছেন। আবু হুরায়রা বললেনঃ তা করব, আমি অবশ্যই তোমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করব যা আমার নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৰ্ণনা করেছেন। আমি তা বুঝেছি এবং জেনেছি। অতঃপর আবু হুরায়রা চিৎকার দিয়ে উঠলেন (একনকি ভয়ে প্রায় বেহুশ হয়ে গেলেন)। আমরা কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি অবশ্যই তোমার নিকট একটি হাদীছ বৰ্ণনা করব, যা রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। আমি এবং তিনি এই ঘরেই ছিলাম। আমাদের সাথে আমি এবং তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলনা। অতঃপর আবার আবু হুরায়রা চিৎকার দিয়ে উঠলেন। অতঃপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। এবং মুখমন্ডলে হাত বুলালেন। বললেন, তা করব, আমি অবশ্যই তোমার নিকট একটি হাদীছ বর্ণনা করব, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। আমি এবং তিনি এই ঘরেই ছিলাম। আমাদের সাথে আমি এবং তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলনা। অতঃপর আবার আবু হুরায়রা ভীষণ ভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলেন এবং মুখের ভরে পড়ে যেতে লাগলেন। আমি তাঁকে দীর্ঘ সময় সোজা করে ধরে রাখলাম। অতঃপর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। তারপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকট বর্ণনা করেছেনঃ
“কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাবারকা ওয়া তা’আলা বান্দাদের মাঝে বিচার-ফায়সালা করার জন্য অবতরন করবেন। প্রত্যেক জাতি হাঁটুর উপর ভর করে নতজানু অবস্থায় থাকবে। সর্বপ্রথম যাকে ডাকা হবে সে এক ব্যক্তি যে কুরআনের প্রচুর জ্ঞানার্জন করেছিল, আর এক ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে নিহত হয়েছিল এবং এক ব্যক্তি যে অঢেল সম্পদের অধিকারী ছিল। সম্মানিত মহান আল্লাহ কুরআনের ক্বারীকে বলবেন, আমার রাসূলের উপর আমি যা নাযিল করেছিলাম তার জ্ঞান কি তোমাকে দান করি নি? সে বলবে, হাঁ হে আমার প্রতিপালক। তিনি বলবেন, যে জ্ঞান অর্জন করেছ সে অনুযায়ী কি আমল করেছ? বলবে আমি রাত-দিন তা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি তার হক আদায় করেছি। সম্মানিত মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। আর মহান আল্লাহ বলবেনঃ বরং তুমি তো ইচ্ছে করেছিলে যে, (তোমাকে) বলা হবে উমুক ব্যক্তি ক্বারী। আর তা তো বলাই হয়েছে।
সম্পদশালী ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে। সম্মানিত মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আমি কি তোমাকে সম্পদের প্রাচুর্য দান করিনি? এমনকি কারো মুখাপেক্ষী করে তোমাকে রাখিনি? সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার বর। তিনি বলবেনঃ তোমাকে যা দান করেছিলাম তা কোন কাজে ব্যবহার করেছ? সে বলবেঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতাম এবং দান-সাদকা করতাম। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। সুমহান আল্লাহ বলবেনঃ বরং তুমি তো হচ্ছে করেছিলে যে, তোমাকে বলা হবে উমুক ব্যক্তি দানশীল। আর তা তো অবশ্যই বলা হয়েছে।
আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ কি কারনে নিহত হয়েছ? সে বলবে, হে প্ৰভু! আপনার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য আপনি আদেশ করেছিলেন, তাই লড়াই করে নিহত হয়েছি। আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহ বলবেনঃ বরং তুমি তো ইচ্ছে করেছিলে যে, (তোমাকে) বলা হবে উমুক ব্যক্তি বীর যোদ্ধা। আর তা তো অবশ্যই বলা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার হাঁটুর উপর আঘাত করে বললেনঃ “হে আবু হুরায়রা! আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে এরা হল তিন ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে যাদেরকে সর্বপ্রথম জাহান্নামের আগুনে প্রজ্জলিত করা হবে।"
আল ওয়ালীদ আবু উছামান আল মাদীনী বলেনঃ উক্ববা আমাকে সংবাদ দেন যে, শুফাইয়াই আবার মুআবিয়ার নিকট গিয়ে এই হাদীছ বর্ণনা করেন। আবু উছমান বলেন, আর আলা বিন আবু হাকীম আমাকে বলেন যে, তিনি (শুফাইয়া) ছিলেন মুআবিয়ার জন্য তরবারী স্বরূপ। তিনি (আবু উছমান) বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট গিয়ে আবু হুরায়রার বরাত দিয়ে এ হাদীছ বর্ণনা করেন। হাদীছ শুনে মুআবিয়া বলেনঃ এ ধরণের ব্যক্তিদের সাথে এরকম ব্যবহার হবে, তাহলে বাকী মানুষের অবস্থা কি হবে? অতঃপর মুআবিয়া খুব কাঁদতে লাগলেন। তার ক্ৰন্দনের আধিক্যতা দেখে আমরা মনে করলাম তিনি হয়ত মারাই যাবেন। বললামঃ এ লোকটি আমাদের জন্য অমঙ্গল নিয়ে এসেছে। মুআবিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে মুখমন্ডল মুছলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেনঃ (مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ(
“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন এবং তার চাকচিক্য কামনা করবে, আমি তাদের কর্মের প্রতিদান দুনিয়াতেই পুরাপুরি দান করব। এবং তাদের কোন প্রকার কমতি করা হবে না। এদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই। দুনিয়াতে তারা যা করেছে তা ধ্বংস হয়ে গেছে আর যা সম্পাদন করেছে তা বিনষ্ট হয়েছে।"(সূরা হূদঃ১৫-১৬)
হাদীছটি ইবনু খাযায়মা স্বীয় [ছহীহ] গ্রন্থে এরূপই বর্ণনা করেন। দুয়েকটি শব্দ ছাড়া তেমন কোথাও তেমন বৈপরিত্য নেই।

২৩
(صحيح) عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشِّرْ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِالسَّنَاءِ وَالرِّفْعَةِ وَالدِّينِ وَالتَّمْكِينِ فِي الْأَرْضِ فَمَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ عَمَلَ الْآخِرَةِ لِلدُّنْيَا لَمْ يَكُنْ لَهُ فِي الْآخِرَةِ نَصِيبٌ. رواه أحمد وابن حبان في صحيحه والحاكم والبيهقي وقال الحاكم صحيح الإسناد

উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “এই উম্মত (মুহাম্মদী)-কে দ্বীনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সম্মান ও মর্যাদার সুসংবাদ দাও। আর সুসংবাদ দাও পৃথিবীতে আধিপত্য লাভের। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে আখেরাতের কাজ করবে, পরকালে তার জন্য কোনই অংশ থাকবে না।”
(আহমাদ, ইবনে হিব্বান সহীহ গ্রন্থে, হাকেম ও বাইহাকী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)

বাইহাকীর অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
“এই উম্মতকে সুসংবাদ দাও- সহজতা ও দ্বীনের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের। আরো (সুসংবাদ দাও) রাজ্যসমূহে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ও বিজয় লাভের। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে আখেরাতের আমল করবে, তার জন্য পরকালে কোনই অংশ থাকবে না।"
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৪
(صحيح) عن أَبي هِنْدٍ الدَّارِيِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ قَامَ مَقَامَ رِيَاءٍ وَسُمْعَةٍ رَاءى اللَّهُ تَعَالَى بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَسَمَّعَ. رواه أحمد والبيهقي

আবু হিন্দ আদদারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি শুনেছেন নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ "যে ব্যক্তি রিয়া এবং শ্রুতির উদ্দেশ্যে কোন আমল করবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার গুপ্ত অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন এবং সকলের সম্মুখে তাকে লাঞ্ছিত করবেন।”
(হাদীছটি ইমাম আহমাদ উত্তম সনদে ও বায়হাকী বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৫
(صحيح) وَعَنْ أبي هند الداري أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ قَامَ مَقَامَ رِيَاءٍ وَسُمْعَةٍ رَاءيَ اللَّهُ تَعَالَى بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَسَمَّعَ. رواه أحمد بإسناد جيد والبيهقي والطبراني

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি শুনেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি মানুষের সামনে নিজের আমলের কথা শুনিয়ে বেড়াবে, আল্লাহ সৃষ্টিকুলের সামনে তার কথা শুনিয়ে দিবেন এবং তাকে ক্ষুদ্র করে দিবেন এবং লাঞ্ছিত করবেন।”
(হাদীছটি ত্বাবরানী [কবীর] গ্রন্থে কয়েকটি সনদে বর্ণনা করেন। সেগুলোর একটি বিশুদ্ধ এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেন। শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি ইমাম আহমদও বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৬
(صحيح) عن جُنْدَب بن عبد الله قالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ . رواه البخاري ومسلم
জুনদুব বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি প্ৰশংসা শোনার জন্য নিজের আমল মানুষের সামনে প্রকাশ করবে, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার খারাপ নিয়ত প্ৰকাশ করে দিবেন। যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করবে, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার আমল মানুষকে দেখিয়ে দিবেন এবং তাকে সকলের সামনে লাঞ্ছিত করবেন।”
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৭
(صحيح لغيره) عَنْ عَوْفِ بن مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ:"مَنْ قَامَ مَقَامَ رِيَاءٍ رَاءَى اللَّهُ بِهِ، وَمَنْ قَامَ مَقَامَ سُمْعَةٍ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ".رواه الطبراني بإسناد حسن

আউফ বিন মালেক আল আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোন আমল সম্পাদন করবে আল্লাহ তার উক্ত আমল দেখিয়ে দিবেন। যে ব্যক্তি মানুষের প্রশংসা শোনার উদ্দেশ্যে কোন আমল সম্পাদন করবে আল্লাহ তার কথা সৃষ্টিকুলকে শুনিয়ে দিবেন এবং তাকে অপমানিত করবেন।" (হাসান সনদে তাবরানী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

২৮
(صحيح لغيره) وَعَنْ مُعَاذِ بن جَبَلٍ، عَن ْرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:"مَا مِنْ عَبْدٍ يَقُومُ فِي الدُّنْيَا مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ إِلا سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ عَلَى رُءُوسِ الْخَلائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ". رواه الطبراني بإسناد حسن

মুআয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “যে বান্দা পৃথিবীতে শ্রুতি এবং প্রদর্শনের জন্য কোন আমল করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে সমস্ত সৃষ্টির সামনে তার অসৎ নিয়তের কথা মানুষকে শুনিয়ে দিবেন।"
(হাসান সনদে তাবরানী হাদীছটি বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

২৯
(صحيح موقوف) وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: "مَنْ رَاءَى بِشَيْءٍ فِي الدُّنْيَا مِنْ عَمَلٍ وَكَلَهُ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَقَالَ: انْظُرْ هَلْ يُغْنِي عَنْكَ شَيْئًا؟ ". رواه البيهقي موقوفا

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন আমল মানুষকে দেখানোর জন্যে সম্পাদন করেছে। উহা ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কাছে সোপর্দ করবেন এবং বলবেনঃ দেখো তো উহা কি তোমার কোন উপকারে আসবে?
(বায়হাক্বী মাওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন)
হাদিসের মানঃ সহিহ মাওকুফ

৩০
(حسن) عَنْ رُبَيْحِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ فَقَالَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي مِنَ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ قَالَ قُلْنَا بَلَى فَقَالَ: الشِّرْكُ الْخَفِيُّ أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ يُصَلِّي فَيُزَيِّنُ صَلَاتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ* (رواه ابن ماجة والبيهقي)

রুবাইহ বিন আবদুর রহমান বিন আবু সাঈদ খুদরী তাঁর পিতা (আবদুর রহমান) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (আবদুর রহমান) তাঁর (রুবাইহ) দাদা আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (আবু সাঈদ খুদরী) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা আমাদের নিকট বের হয়ে এলেন। সে সময় আমরা মাসীহ দাজ্জালেন কথা আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেনঃ “তোমাদের জন্য দাজ্জালের চেয়ে ভয়ানক বিষয়ের সংবাদ দিব না কি? আমরা বললামঃ হ্যাঁ হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ তা হল গোপন শির্ক। উহা এইরূপ যে, কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করতে দন্ডায়মান হবে। অতঃপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তার সালাতকে সুসজ্জিত করবে।”
(ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩১
(حسن ) وَعَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِيَّاكُمْ وَشِرْكَ السَّرَائِرِ" قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا شِرْكُ السَّرَائِرِ ؟ قَالَ:" أَنْ يُتِمَّ رُكُوعَهَا وَسُجُودَهَا لِمَا يَلْحَظُهُ مِنَ الْحَدَقِ وَالنَّظَرِ فَذَلِكَ شِرْكُ السَّرَائِرِ "رواه ابن خزيمة في صحيحه

মাহমুদ বিন লাবীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বের হয়ে এসে বললেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা গোপন শির্ক থেকে সাবধান!" তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! গোপন শির্ক কি? তিনি বললেনঃ “এক ব্যক্তি সালাতে দন্ডায়মান হবে অতঃপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তার সালাতকে সুন্দর করবে। আর এটাই হল গোপন শির্ক।”
(ইবনু খুযায়মা [সহীহ] গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩২
(صحيح) عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوا وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمُ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً (رواه أحمد بإسناد جيد وابن أبي الدنيا والبيهقي في الزهد وغيره)

মাহমূদ বিন লাবীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “তোমাদের উপর সবচেয়ে ভয়ানক যে বিষয়ের আমি আশংকা করছি তা হল শির্ক আসগার (ছোট শির্ক)।” তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “রিয়া। সম্মানিত আল্লাহ যখন মানুষকে তাদের কর্মফল দান করবেন তখন বলবেনঃ দুনিয়ায় যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা আমল করতে তাদের কাছে যাও। দেখ, তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না?”
(উত্তম সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ, আরো বর্ণনা করেন বায়হাকী ও ইবনু আবীদ দুনিয়া)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৩
(حسن) عَنْ أَبِي سَعْدِ بْنِ أَبِي فَضَالَةَ الْأَنْصَارِيِّ وَكَانَ مِنَ الصَّحَابَةِ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِذَا جَمَعَ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِيَوْمٍ لَا رَيْبَ فِيهِ نَادَى مُنَادٍ مَنْ كَانَ أَشْرَكَ فِي عَمَلٍ عَمِلَهُ لِلَّهِ أَحَدًا فَلْيَطْلُبْ ثَوَابَهُ مِنْ عِنْدِه فَإِنَّ اللَّهَ أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ.
رواه الترمذي وابن ماجه وابن حبان والبيهقي

আবু সাঈদ বিন আবু ফুযালা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবু সাঈদ বিন আবু ফুযালা (রাঃ) তিনি সাহাবী ছিলেন, তাঁর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা যখন কিয়ামত দিবসে —যে দিবসের ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই- সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, যে ব্যক্তি স্বীয় আমল আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার করেছে, সে যেন তার নিকটেই স্বীয় আমলের প্রতিদান তলব করে। কেননা আল্লাহ তা’আলা অংশীদারদের অংশীস্থাপন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।”
(তিরমিয়ী, ইবনু মাজাহ, ইবনে হিব্বান ও বায়হাকী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩৪
(صحيح) عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ فَمَنْ عَمِلَ لِي عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ غَيْرِي فَأَنَا مِنْهُ بَرِيءٌ وَهُوَ لِلَّذِي أَشْرَكَ * رواه ابن ماجه واللفظ له وابن خزيمة في صحيحه والبيهقي

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

সম্মানিত আল্লাহ এরশাদ করেনঃ “আমি অংশীদারদের অংশীস্থাপন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার উদ্দেশ্যে কোন আমল করে তাতে আমার সাথে অন্যকে অংশীদার করে, তবে উক্ত আমল থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। আমলটি তার সেই অংশীদারের জন্যই নির্দিষ্ট (অর্থাৎ তা সম্পূর্ণ বাতিল)।
(ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মা ও বায়হাকী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, তবে হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ থেকে গৃহীত।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৫
(صحيح) وروى البيهقي عَنْ يَعْلَى بْنِ شَدَّادٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: " كُنَّا نَعُدُّ الرِّيَاءَ فِي زَمَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الشِّرْكَ الْأَصْغَرَ "

ইমাম বায়হাকী ইয়ালা বিন শাদ্দাদ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর পিতা শাদ্দাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (শাদ্দাদ) বলেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে রিয়াকে ছোট শির্ক হিসেবে গণ্য করতাম।
(হাদীছটি হাকেমও বর্ণনা করেন।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬
(حسن لغيره) عَنْ أَبِي عَلِيٍّ رَجُلٍ مِنْ بَنِي كَاهِلٍ قَالَ خَطَبَنَا أَبُو مُوسَى الْأَشْعَرِيُّ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا هَذَا الشِّرْكَ فَإِنَّهُ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ فَقَامَ إِلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حَزْنٍ وَقَيْسُ بْنُ المُضَارِبِ فَقَالَا وَاللَّهِ لَتَخْرُجَنَّ مِمَّا قُلْتَ أَوْ لَنَأْتِيَنَّ عُمَرَ مَأْذُونٌ لَنَا أَوْ غَيْرُ مَأْذُونٍ قَالَ بَلْ أَخْرُجُ مِمَّا قُلْتُ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا هَذَا الشِّرْكَ فَإِنَّهُ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ فَقَالَ لَهُ مَنْ شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُولَ وَكَيْفَ نَتَّقِيهِ وَهُوَ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ قُولُوا اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ نُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا نَعْلَمُ * رواه أحمد والطبراني

আবু আলী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বনূ কাহেলের জনৈক ব্যক্তি। তিনি বলেনঃ আবু মূসা আশআরী (রাঃ) একদা আমাদের সম্মুখে বক্তৃতা করলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সমাজ! তোমরা এই শির্ককে ভয় কর। কেননা উহা পিপিলিকার চলার শব্দ থেকেও গোপন ও সুক্ষ্ম। একথা শুনে আবদুল্লাহ বিন হাসান ও কায়স বিন মুযারেব তাঁর কাছে উঠে গিয়ে বললেনঃ আপনি যা বলেছেন অবশ্যই তার সূত্র আমাদেরকে বলবেন। অন্যথা আমরা ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ)এর কাছে যাব, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন বা না দিবেন। তিনি বললেনঃ বরং আমি যা বলেছি তার সূত্র বলছি। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। তিনি বললেনঃ “হে মানব মন্ডলি! তোমরা শির্ককে ভয় কর (তা থেকে বেঁচে থাক)। কেননা উহা পিপিলিকার চলার শব্দ থেকেও গোপন বা সুক্ষ্ম।” তখন আল্লাহ যাকে চাইলেন এমন এক ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আমরা তা থেকে বেঁচে থাকব, অথচ উহা পিপিলিকার চলার শব্দের চেয়েও গোপন? তিনি বললেনঃ তোমরা এই দুআ বলবেঃ
(আরবি) (আল্লাহুম্মা ইন্না নাউযুবিকা মিন আন নুশরেকা বেকা শাইআন তা’লামুহু ওয়া নাসতাগাফেরুকা লিমা লা না’লামুহু) হে আল্লাহ জেনে শুনে কোন কিছুকে তোমার সাথে শরীক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং না জেনে শির্ক হয়ে গেলে তা থেকে তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমদ ও ত্বাবরানী)

হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি




প্রশংসা (স্ত্রীর স্বামীর দাম্পত্য জীবন)

শনিবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
সুযোগ হলেই যে কাজগুলো আমি করতে পছন্দ করি তার একটি হোল স্বামীর কাছে স্ত্রীর এবং স্ত্রীর কাছে স্বামীর প্রশংসা, বিশেষ করে যখন তারা পরস্পরের প্রতি রাগান্বিত থাকে। প্রাত্যহিক জীবনের একঘেঁয়েমি এবং টানাপোড়েনের ঘর্ষনে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক প্রায় সময়ই ক্ষয় হতে হতে এমন স্তরে পৌঁছে যায় যে তারা পরস্পরের ব্যপারে অনেকখানি নির্লিপ্ত হয়ে পড়ে। তখন দেখা যায়, এক সময় পরস্রের যে উত্তম গুণাবলী তাদের মোহিত করত সেগুলো তখন তারা আর দেখেও দেখেনা। অথচ একই গুণাবলী অপর কোন ব্যক্তির মাঝে খুঁজে পেলে তারা আন্দোলিত হয়। অর্থাৎ, ঐ গুণাবলীর প্রতি আকর্ষনের সমাপ্তি নয়, বরং পরস্পরের ব্যপারে অভ্যস্ততাই স্বামী/স্ত্রীর মাঝে এগুলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হবার কারণ। আবার অনেক সময় দেখা যায় একে অপরের যে ত্রুটিবিচ্যুতি একসময় তারা খেয়ালই করতনা তাতে চরমভাবে বিরক্ত বোধ করছে। সেক্ষেত্রে বিরক্তির সূত্রপাত হয়ত অন্য জায়গায় – অফিসে সহকর্মীর ওপর, ঘরে কাজের লোকের ওপর, অভাবের প্রতি, নিজের ব্যর্থতার প্রতি, শারীরিক অসুস্থতার প্রতি – কিন্তু সেটা প্রতিফলিত হয় এই বিষয়ে একেবারেই অনবহিত স্বামী বা স্ত্রীর ওপর, যে বেচারা বুঝে পায়না সে কি অন্যায় করে বসল!
 
এসব ক্ষেত্রে কেউ যদি তাদের নতুন করে মনে করিয়ে দেয় তাদের সঙ্গীটি কতখানি উত্তম তবে তা পুরনো পাঁচিলে নতুন করে সিমেন্ট দেয়ার মত করে কাজ করতে পারে। এটি তাদের মনে করিয়ে দিতে পারে সঙ্গী/সঙ্গীনীর কোন গুনগুলো একসময় তাদের মুগ্ধ করত যা তাদের একত্রে পথ চলাকে সাবলীল করেছিল। হয়ত তাদের স্মরণ হতে পারে সেই সময়ের কথা যখন তাদের সঙ্গীটি তাদের কোন সীমাবদ্ধতাকে সহজভাবে মেনে নিয়েছিল। অথবা সঙ্গীটির দীর্ঘকালীন কোন ত্যাগ স্বীকার যা অভ্যস্ততার কারণে তাদের দৃষ্টির অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছিল। একটি গুনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন হয়ত তাদের একটি ত্রুটি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারে। সর্বোপরি তাদের পুণর্বার অনুধাবন হতে পারে তারা প্রকৃতপক্ষে একে অপরকে পেয়ে কতখানি ভাগ্যবান। যে সংসার তাদের কাছে মনে হচ্ছিল এক কন্টকাকীর্ণ অরণ্য সেটা যে আসলে এক পুষ্পোদ্যান, এই উপলব্ধি সৃষ্টি করতে পারা এক অপার আনন্দের উৎস হতে পারে সুদীর্ঘ সময়ের জন্য যা থেকে থেকে পুলকিত করে অন্তরকে। সুতরাং, এই কাজের পেছনে আমার উদ্দেশ্য একেবারে নিঃস্বার্থ নয়।
 
তবে দুটো পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতি কার্যকর করা মুশকিল। এর একটি আপনার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করে, আরেকটি ব্যর্থ।
মানুষ বড় অদ্ভুত প্রাণী। মানুষকে দেয়া হয়েছে আবেগ এবং বিবেক। আবেগ মানুষকে বিশ্বাস করতে এবং ভালবাসতে শেখায়; বিবেক মানুষকে সাবধান হতে। কিন্তু আবেগের আধিক্য এবং বিবেকের স্বল্পতা অনেক সময় মানুষের মাঝে এমন এক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে যেখানে এই দুটি বৈশিষ্ট্য পরস্পর পরিবর্তিত হয়ে বিপরীত ভূমিকা গ্রহণ করে। যার যা কাজ তা সে ভালই করে যেতে পারে। কিন্তু একে অপরের কাজ করতে গেলেই লেগে যায় বাগড়া। তাই আবেগ যখন বিবেকের কাজ করতে যায়, তখন গণ্ডগোল লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক! কার্যত হয়ও তাই। উল্টোপাল্টা লাগছে? ব্যপার টা উল্টোই বটে! চলুন, একটা উদাহরণ দেয়া যাক। তাহলে হয়ত বুঝতে সুবিধা হবে। ধরুন, আপনি আপনার আবেগী বন্ধুকে বুঝাতে গেলেন এবারের ঝগড়ায় তার স্ত্রীর কোন দোষ নেই। কিন্তু আবেগের আধিক্যে তিনি বিবেকের গলা কেটে দিলেন। আবেগ বিবেকের স্থান দখল করে নিলো বটে কিন্তু বিবেকের কার্যপ্রণালী ভালভাবে বুঝতে না পেরে বিশ্বাসের পরিবর্তে অহেতুক সন্দেহ উৎপাদন করতে শুরু করে দিল। বন্ধু আপনার সুপরামর্শ গ্রহণ করার পরিবর্তে সন্দেহ করতে শুরু করলেন, আপনি আসলে কার পক্ষে। এই আবেগ আপনার পক্ষে ছিল যতদিন আপনি তার সমস্ত দোষত্রুটি, অন্যায়, আবদার মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি যখন তার সংসার বাঁচানোর তাগিদে তাকে সংশোধিত হতে বললেন সাথে সাথে সেই আবেগ চলে গেল আপনার বিপক্ষে। আপনার এত বছরের বন্ধুত্ব, সাহচর্য, বিশ্বাস, ভালবাসা সব শূন্যে পর্যবসিত হোল। আবেগ বিবেকের স্থান দখল করে নিয়ে তাকে বিশ্বাসীর পরিবর্তে সাবধানী না বানিয়ে বরং বানিয়ে দিল সন্দেহবাদী!
 
এই ধরণের মানুষগুলো ভাবে বেশি, বুঝে কম। এদের নিয়ে মুশকিল হোল, এরা নিজেরাই নিজেদের সুখের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একই বিষয় নিয়ে পুণঃ পুণঃ পুঙ্খানুপুঙ্খ চিন্তা গবেষণা বিশ্লেষণ করতে করতে তারা বুঝে উঠতে পারেনা, আপনি এপক্ষ বা ওপক্ষ হতে যাবেন কেন? স্বামী স্ত্রী মিলে একই তো পক্ষ! তার সুখের জন্য, তার সংসার রক্ষা করার তাগিদেই তো নিজের সময় ব্যয় করে তাকে পরামর্শ দেয়া! নিজের কিছু অহম বিসর্জন দিয়ে যদি উভয়ের সুখ নিশ্চিত করা যায়, সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তোলা যায় তবে উভয়ের মাঝে বাঁধার প্রাচীর গড়ে তোলার প্রয়োজনটা কি? কিন্তু সন্দেহ বড় জটিল রোগ। এই রোগ কোন ওষুধে সারেনা। এই রোগের চিকিৎসার জন্য বিশ্বাসের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আবেগ যখন বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাণ্ডব চালায় তখন আর সেই বিশ্বাস নিজের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়না।দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই আবেগের কাছে
 
পরাজিত মানুষগুলোর অধিকাংশই নারী। অনেকের কাছেই এটা স্বাভাবিক ব্যপার। অনেকের কাছেই এটা হাসির খোরাক। কিন্তু বিশদভাবে চিন্তা করলে এটা একটা ভয়াবহ দুর্বলতা এবং যেকোন দুর্বলতাই অতিক্রম করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ এর প্রভাবে যে শুধু মানুষের পার্থিব জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই নয় বরং আখিরাত বিনষ্ট হয়। কিভাবে? মানুষ যদি স্বয়ংসম্পূর্ন হত তাহলে সমাজবদ্ধ জীবনের প্রয়োজন হতনা। সেক্ষেত্রে মানুষে মানুষে সম্পর্ক, আদানপ্রদান আমাদের পার্থিব পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত হতনা। অতিরিক্ত আবেগ মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। এর ফলে মানুষ বন্ধু এবং শত্রু চিনতে ভুল করে, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ক্ষতিটা হয় নিজেরই। কারণ সকলকে অবিশ্বাস করতে করতে সে সকলের সাথে দূরত্ব রচনা করে একসময় একা হয়ে যায়। ক্ষতিটা আখিরাতে আরও মারাত্মক। কারণ নারী পুরুষের পুরস্কার নির্ধারণের ক্ষেত্রে যেমন বিভেদ করা হবেনা, তাদের শাস্তি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও তারতম্য করা হবেনা। প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের কথা, কাজ ও সিদ্ধান্তের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমাদের কথা, কাজ ও সিদ্ধান্ত যাতে ন্যায় ও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্যই মানুষকে বিবেক দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিবেকের স্থান আবেগ দখল করে নিলে মস্তিষ্কের সঠিক কার্যপরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে কথা, কাজ ও সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে যায়। সুতরাং, এটাই স্বাভাবিক নারীপ্রকৃতি বলে নিজেদের জাহান্নামের খোরাক না বানিয়ে এর থেকে উত্তরণ করার চেষ্টার মাঝেই প্রকৃত কল্যাণ রয়েছে।
 
নানাবিধ ঘটনা, দুর্ঘটনা, অভিজ্ঞতা কিংবা জ্ঞানের রাজ্যে আলোড়ন সঞ্চারের ফলে একজন মানুষ এতখানি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে যার ফলে তাঁর সাথীর মনে হতে পারে এই মানুষটিকে তিনি আর চেনেন না। দীর্ঘ সহযাত্রার মাঝপথে কোথাও তাঁর পরিচিত মানুষটি অন্য কারো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি কি প্রশংসা দিয়ে তাঁর সঙ্গীটির মনের শঙ্কা দূর করবেন? বরং কিছু বলতে গেলে আপনার নিজের কাছেই নিজেকে ভণ্ড মনে হবে। এই পরিবর্তন যে সবসময় নেগেটিভ হয় তা নয়, পজিটিভ পরিবর্তনও অনেক সময় নেগেটিভ রূপ ধারণ করতে পারে। আমার পরিচিতা একজন বলেছিলেন তাদের বাবা অত্যন্ত ধার্মিক (তাঁর ভাষায়) ছিলেন। কিন্তু তিনি ধর্ম নিয়ে এতখানি মগ্ন হয়ে যান যে ধীরে ধীরে তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন হয়ে পড়েন। তিনি যাদের নিজের পর্যায়ে ধার্মিক গণ্য করতেন না তাদের প্রতি তাঁর আচরণ এতখানি রূঢ় ছিল যে এমনকি তাঁর সন্তানদের মন কেবল তাঁর প্রতিই নয়, ইসলামের প্রতিও বিরূপ হয়ে যায়। এসকল ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে সম্পর্কোন্নয় প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা স্বীকার করে নেয়া ব্যতীত খুব একটা কোন উপায় থাকেনা।
 
আল্লাহ জানিয়েছেন তাঁর সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজগুলোর একটি হোল স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিভেদ তৈরী করা। এটা শাইত্বানের কাজ। কিন্তু এই কাজটি আমরা অনেকেই করে থাকি, হয়ত না বুঝেই। সরল মনেই হয়ত আমরা পরিচিতজনদের সম্পর্কে এমন অনেক মন্তব্য করি যাতে তাদের সঙ্গীদের হৃদয়ে চারাগাছ আকারে বিদ্যমান সন্দেহ সংশয়গুলো সার পানি পেয়ে বটবৃক্ষের আকার ধারণ করে। আমরা কেউ জানিনা অপরের মনে কি আছে। সুতরাং, আমাদের কথাবার্তা সর্বাবস্থায় নেগেটিভের পরিবর্তে পজিটিভ হওয়া সবদিক থেকে নিরাপদ। সুতরাং, অপরের উপকারার্থে না হোক, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হলেও আমার পদ্ধতিটি আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়। আপনি কি বলেন?


১০০ সুসাব্যস্ত হাদিস- বিভিন্ন প্রকার সুন্নতসমূহ ( ৭৪-১০০ টি হাদীস) পার্ট-৭

শনিবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
বিভিন্ন প্রকার সুন্নতসমূহ  
১০০ সুসাব্যস্ত হাদিস
বিভিন্ন প্রকার সুন্নতসমূহ    
পরিচ্ছেদ ৭৪:
জ্ঞানার্জন করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথে চলে, আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” (মুসলিম ২৬৯৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭৫:
প্রবেশ করার পূর্বে তিনবার অনুমতি চাওয়া

আবূ মুসা আশা’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তিনবার অনুমতি চাইবে। অনুমতি দিলে প্রবেশ করবে, অন্যথায় ফিরে যাবে।” (বুখারী ৬২৪৫, মুসলিম ২১৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭৬:
খেজুর ইত্যাদি চিবিয়ে নবজাত শিশুর মুখে দেওয়া

আবূ মুসা আশা’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করলো। আমি তাকে নিয়ে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি তার নাম রাখলেন, ইবরাহীম এবং খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিয়ে তার জন্য বরকতের দুআ করলেন। (বুখারী ৫৪৬৭, মুসলিম ২১৪৫)
*কোন মিষ্টি জিনিস চিবিয়ে নবজাত শিশুর মুখে দেওয়াকে ‘তাহনীক’ বলা হয়। এটা খেজুর হওয়াই উত্তম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭৭:
আক্বীক্বা করা

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়ের পক্ষ থেকে একটি এবং ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল আক্বীক্বা করার। (আহমদ ২৫৭৬৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭৮:
বৃষ্টির পানি লাগার জন্য শরীরের কোন অংশ খোলা

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে থাকাকালীন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শরীরের কিছু অংশ খুলে ফেললেন যাতে সেখানে বৃষ্টির পানি লাগে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূলুল্লাহ! এ রকম কেন করলেন? তিনি বললেন, ‘কারণ ইহা (এই বৃষ্টির পানি) স্বীয় প্রতিপালকের নিকট থেকে সদ্য আগত।” (মুসলিম ৮৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৭৯:
রোগীকে দেখতে যাওয়া

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোগীকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করতে থাকে।” জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করা কি? তিনি বললেন, “এর ফলমূল সংগ্রহ করা।” (মুসলিম ২৫৬৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮০:
স্নিগ্ধ হাসা

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, “কোন ভাল কাজকে তুচ্ছ ভেবো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করার কাজ হয়।” (মুসলিম ২৬২৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮১:
আল্লাহ্‌র নিমিত্ত কারো যিয়ারত করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি তার ভাইকে দেখার জন্য অন্য এক গ্রামে গেলো। আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তার জন্য রাস্তায় একজন ফেরেশতা মোতায়েন করলেন। সে ব্যক্তি যখন ফেরেশতার কাছে পৌঁছলো, তখন ফেরেশতা জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বললো, আমি এই গ্রামে আমার এক ভাইকে দেখার জন্য যাচ্ছি। ফেরেশতা বললেন, তার উপর তোমার কি কোন অনুগ্রহ আছে, যা তুমি আরো বৃদ্ধি করতে চাও? সে বললো, না। আমি তো শুধু আল্লাহ্‌র জন্য তাকে ভালবাসি। ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তোমার কাছে এ পয়গাম নিয়ে এসেছি যে, আল্লাহ্ তোমাকেও ভালবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তাঁরই জন্য ভালবাসো।” (মুসলিম ২৫৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮২:
মানুষ তার ভাইকে জানিয়ে দেবে যে, সে তাকে ভালবাসে

মিক্বদাদ ইবনে মা’দী কারিবা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) বলেছেন, “যদি তোমাদের কেউ তার কোন ভাইকে ভালবাসে, তাহলে সে যেন তাকে তার ভালবাসার কথা জানিয়ে দেয়।” (আহমদ ১৬৩০৩)
হাদিসের মান নির্ণীত নয়।

পরিচ্ছেদ ৮৩:
হাই তুলা রোধ করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “হাই শয়তান কর্তৃক আসে। অতএব যখন তোমাদের কারো হাই আসে, তখন সে যেন সাধ্যানুসারে তা রোধ করে। কেননা, যখন তোমাদের কেউ হাই তুলে তখন শয়তান হাসে।” (বুখারী ৩২৮৯, মুসলিম ২৯৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮৪:
মানুষের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (মন্দ) ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, (মন্দ) ধারণাই হচ্ছে সব থেকে বড় মিথ্যা।” (বুখারী ৬০৬৬, মুসলিম ০২৬৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮৫:
ঘরের কাজে পরিবারকে সাহায্য করা

আসওয়াদ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাড়িতে কি করেন? উত্তরে তিনি বললেন, তিনি বাড়িতে তাঁর পরিবারের কাজে সহযোগিতা করেন। যখন নামাযের সময় এসে উপস্থিত হয়, তখন নামাযের জন্য বেরিয়ে যান। (বুখারী ৬৭৬)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮৬:
স্বভাবগত অভ্যাস

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “স্বভাবগত অভ্যাস হলো পাঁচটি অথবা পাঁচটি হলো স্বভাবগত অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। খাতনা করা, নাভীর নীচের লোম পরিস্কার করা, বগলের চুল ছিঁড়ে ফেলা, নখ কাটা এবং মোচ খাটো করা।” (বুখারী ৫৮৮৯, মুসলিম ২৫৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮৭:
এতিমদের দেখাশুনা করা

সাহল ইবনে সা’আদ থেকে বর্ণিতঃ

সাহল ইবনে সা’আদ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি ও এতীমদের দেখাশুনার দায়িত্ব গ্রহণকারী জান্নাতে এত দূর ব্যবধানে থাকবো। তারপর তিনি নিজের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলী দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন।” (বুখারী ৬০০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮৮:
ক্রোধ থেকে বিরত থাকা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললো, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, “রাগ করো না।” সে কয়েকবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করলো। আর তিনি বললেন, “রাগ করো না।” (বুখারী ৬১১৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৮৯:
আল্লাহ্‌র ভয়ে কাঁদা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “সাত প্রকারের লোককে আল্লাহ্‌ তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, তাদের মধ্যে একজন হলো এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে চোখের পানি প্রবাহিত করে।” (বুখারী ৬৬০ মুসলিম ১০৩১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯০:
সাদক্বায়ে জারীয়া

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মানুষ যখন মারা যায়, তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের নেকী জারী থাকে। সাদক্বায়ে জারীয়া, ফলপ্রসূ ইল্‌ম এবং সুসন্তান যে তার জন্য দুআ করে।” (মুসলিম ১৬৩১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯১:
মসজিদ তৈরী করা

উসমান ইবনে আফ্‌ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মসজিদ পুনঃ নির্মাণ করেন, তখন লোকেরা তাঁর সমালোচনা করে। তিনি তাদের জবাবে বললেন, তোমরা অনেক কিছু বললে, কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য একটি মসজিদ তৈরী করবে, আল্লাহ্‌ তাঁর জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরী করবেন।” (বুখারী ৪৫০, মুসলিম ৫৩৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯২:
কেনাবেচায় নরম ও সহজ পন্থা অবলম্বন করা

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সেই ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ্ রহম করুন! যে বিক্রি করার সময়, কিনার সময় এবং স্বীয় অধিকার চাওয়ার সময় সহজ ও নরম পন্থা অবলম্বন করে।” (বুখারী ২০৭৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯৩:
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “এক ব্যক্তি পথ চলার সময় পথে একটি কাঁটার ডাল দেখতে পেলে তা রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো। ফলে আল্লাহ্‌ তার প্রতি অনুগ্রহ করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” (বুখারী ৬৫৪, মুসলিম ১৯১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯৪:
সাদক্বাহ করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরের মুল্য পরিমাণ দান করে– আল্লাহ্‌ তো হালাল বস্তু ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহন করেন না- তবে আল্লাহ্ তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তাকে তার দানকারীর জন্য বৃদ্ধি করতে থাকেন যেরূপ তোমাদের কেউ তার অশ্বশাবককে লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে একদিন তা পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।” (বুখারী ১০৮০, মুসলিম ১০১৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯৫:
জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে নেক আমল বেশী বেশী করা

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই (অর্থাৎ, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের) দিনগুলোতে যে আমল করা হয় তার চেয়ে উত্তম আর কোন আমল নেই। সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি উত্তম নয়? তিনি বললেন, “জিহাদও উত্তম নয়।” তবে সেই ব্যক্তির কথা স্বতন্ত্র, যে নিজের জান ও মাল ধ্বংসের মুখে জেনেও জিহাদের দিকে এগিয়ে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।” (বুখারী ৯৬৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯৬:
টিকটিকি হত্যা করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতেই টিকটিকি মারতে সক্ষম হবে, তার নেকীর খাতায় একশত নেকী লিখে দেওয়া হবে। আর দ্বিতীয় আঘাতে মারলে, প্রথমের থেকে কম পাবে এবং তৃতীয় আঘাতে মারলে, তার চেয়েও কম পাবে।” (মুসলিম ২২৪০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯৭:
প্রত্যেক শোনা কথা বলে না বেড়ানো

হাফ্‌স ইবনে আ’সেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কোন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে সব শোনা কথা বলে বেড়াবে।” (মুসলিম ৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯৮:
নেকীর আশায় পরিবারবর্গের জন্য ব্যয় করা

আবূ মাসউদ বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ মাসউদ বাদরী (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “মুসলিম নেকীর আশায় যা কিছু তার পরিবারবর্গের জন্য ব্যয় করে’ তা সবই তার জন্য সাদক্বায় পরিণত হয়।” (মুসলিম ২৩২২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ৯৯:
তাওয়াফে রামাল করা

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম তিন তাওয়াফে রামাল করতেন এবং অবশিষ্ট চার তাওয়াফে স্বাভাবিকভাবে চলতেন।” (বুখারী ১৬৪৪, মুসলিম ১২৬১)
রামাল হলো, ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত চলা। আর এটা হজ্জ বা উমরা আদায়কারী মক্কায় পৌঁছে প্রথম যে তাওয়াফ করবে, সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১০০:
অব্যাহতভাবে কোন নেক আমল করতে থাকা, যদিও তা স্বল্প হয়

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, আমলের, মধ্যে কোন আমলটি আল্লাহ্‌র নিকট অতীব প্রিয়? তিনি বললেন, “এমন আমল যা অব্যাহত করা হয়, যদিও তা স্বল্প হয়।” (বুখারী ৬৪৬৫, মুসলিম ৭৮৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১০১
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মু’মিনের আত্নার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি।’’ (বুখারী ৬৫০২)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস



রাসূল (ছাঃ)-এর পুরা জীবনটাই ছিল দাওয়াত ও জিহাদের জীবন

শনিবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
বাদশাহদের  নিকটে পত্র প্রেরণ
রাসূল (ছাঃ)-এর পুরা জীবনটাই ছিল দাওয়াত ও জিহাদের জীবন
রাসূল (ছাঃ)-এর পুরা জীবনটাই ছিল দাওয়াত ও জিহাদের জীবন। মাক্কী জীবন ছিল এককভাবে দাওয়াতী জীবন। মাদানী জীবনে সশস্ত্র জিহাদের অনুমতি পেলেও তার মধ্যে তিনি সবসময় দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়েছেন। বিভিন্ন গোত্রে দাওয়াতী কাফেলা পাঠিয়েছেন। কখনও সফল হয়েছেন, কখনো বিফল হয়েছেন। ৪র্থ হিজরীর ছফর মাসে আযাল ও ক্বারাহ গোত্রে আছেম বিন ছাবিত (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ১০ জনের এবং নাজদের বনু সুলায়েম গোত্রে মুনযির বিন আমের (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ৭০ জনের যে তাবলীগী কাফেলা পাঠান, তারা সবাই আমন্ত্রণকারীদের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হয়ে যান। শেষোক্তটি বি’রে মাঊনার ঘটনা হিসাবে পরিচিত (সারিইয়া ক্রমিক সংখ্যা ২৪ ও ২৫)। আবার ৬ষ্ঠ হিজরীর শা‘বান মাসে সিরিয়ার দূমাতুল জান্দালের বনু কালব খৃষ্টান গোত্রের নিকটে আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে যে তাবলীগী কাফেলা পাঠানো হয়, তা সফল হয় এবং খৃষ্টান গোত্র নেতাসহ সবাই মুসলমান হয়ে যান (সারিয়াহ ক্রমিক সংখ্যা ৪৪)। এছাড়া নবী ও ছাহাবীগণ সকলে ব্যক্তিগতভাবে সর্বদা দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করতেন। কেননা দাওয়াতই হ’ল ইসলামের প্রচার ও প্রসারের সর্বপ্রধান হাতিয়ার। মাদানী জীবনে
মুশরিক

-মুনাফিক ও ইহুদীদের অবিরতভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধবাদী কর্মকান্ডের ফলে ইসলামের সুস্থ দাওয়াত বাধাগ্রস্ত হয়।

৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে প্রধান প্রতিপক্ষ কুরায়েশদের সাথে হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরের ফলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানদের জীবনে অনেকটা স্বস্তি ফিরে আসে। ফলে এই সময়টাকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ইসলামের দাওয়াত প্রসারের জন্য একটি মহতী সুযোগ হিসাবে কাজে লাগান। এই সময় তৎকালীন আরব ও পার্শ্ববর্তী রাজা-বাদশা ও গোত্রনেতাদের নিকটে পত্র প্রেরণের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত প্রসারে তিনি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। পত্র বাহকের মাধ্যমে পত্রসমূহ প্রেরিত হয় এবং সে যুগের নিয়ম অনুযায়ী পত্রের শেষে সীলমোহর ব্যবহার করা হয়। রাসূল (ছাঃ)-এর আংটিতে মুদ্রিত সীলমোহরটি ছিল রৌপ্য নির্মিত এবং যাতে ‘মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’ খোদিত ছিল। নীচে মুহাম্মাদ, তার উপরে রাসূল এবং তার উপরে আল্লাহ এইভাবে লিখিত ছিল (محمد رسول الله)।[1]

মানছূরপুরীর হিসাব মতে ৭ম হিজরীর ১লা মুহাররম তারিখে এইসব পত্র বিভিন্ন প্রাপকের নিকটে প্রেরিত হয়। তবে আমাদের ধারণা মতে সকল পত্র একই দিনে প্রেরণ করা হয়নি। যেমন ওমান সম্রাটের নিকটে পত্রবাহক হিসাবে আমর ইবনুল আছকে পাঠানো হয়। অথচ তিনি ইসলাম গ্রহণের জন্য মদীনায় আসেন ৭ম হিজরীর প্রথম ভাগে। অতএব ওমানের পত্রটি বেশ পরে পাঠানো হয় বলে অনুমিত হয়। এলাকার ভাষায় অভিজ্ঞ এমন ব্যক্তিকেই পত্রবাহক নিযুক্ত করা হ’ত। যাতে তাদের নিকটে তিনি উত্তমভাবে ইসলামের দাওয়াত তুলে ধরতে সক্ষম হন। নিম্নে পত্রসমূহের কিছু নমুনা তুলে ধরা হ’ল:

১. আছহামা নাজাশীর

নিকটে পত্র (الكتاب إلى النجاشي ملك الحبشة) : আমর ইবনে উমাইয়া যামরী (রাঃ)-এর মাধ্যমে হাবশার সম্রাট আছহামা ইবনুল আবজার (أصْحَمَة بن الأبْجَر) -এর নিকটে প্রেরিত পত্রের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ :

هذا كتاب من محمد رسول الله إلى النجاشي، الأصحم عظيم الحبشة، سلام على من اتبع الهدي، وآمن بالله ورسوله، وشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، لم يتخذ صاحبة ولا ولداً، وأن محمدًا عبده ورسوله، أدعوك بدعاية الإسلام، فإني أنا رسوله، فأسلم تسلم، {يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوْا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ} فإن أبيت فعليك إثم النصارى من قومك-

‘এটি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ-এর পক্ষ হ’তে প্রেরিত পত্র হাবশার সম্রাট আছহামা নাজাশীর নিকটে। শান্তি বর্ষিত হৌক ঐ ব্যক্তির উপরে যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান আনেন এবং সাক্ষ্য দেন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেন না। আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। নিশ্চয়ই আমি তাঁর রাসূল। অতএব ইসলাম গ্রহণ করুন। নিরাপদ থাকুন। (আল্লাহ বলেন, হে নবী!) ‘আপনি বলুন, হে কিতাবধারীগণ! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান এবং তা এই যে, আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারু ইবাদত করব না। আমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করব না এবং আল্লাহ ব্যতীত আমরা কাউকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ করব না। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদের বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থা

যে, আমরা মুসলমান’ (আলে ইমরান ৩/৬৪)। অতঃপর যদি আপনি দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন, তাহ’লে  আপনার উপরে আপনার খৃষ্টান সম্প্রদায়ের পাপ বর্তাবে’।[2] মানছূরপুরী ত্বাবারীর বরাতে যে পত্র উদ্ধৃত করেছেন, তার সাথে অনেকটা গরমিল রয়েছে।

পত্রবাহক আমর ইবনে উমাইয়া যামরী (রাঃ) পত্রখানা বাদশাহ নাজাশীর হাতে সমর্পণ করলে তিনি শ্রদ্ধাভরে পত্রখানা নিজের দু’চোখের উপরে রাখেন। অতঃপর সিংহাসন থেকে নেমে ভূমিতে উপবিষ্ট হয়ে জাফর ইবনে আবু তালিবের হাতে বায়‘আত করে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে জওয়াবী পত্র লেখেন। যা নিম্নরূপ:

بِسْمِ اللهِ الرّحْمَنِ الرّحِيمِ إلَى مُحَمّدٍ رَسُولِ اللهِ مِنَ النّجَاشِيّ أَصْحَمَةَ سَلاَمٌ عَلَيْك يَا نَبِيَّ اللهِ مِنَ اللهِ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ- اللهُ الّذِيْ لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ أَمّا بَعْدُ : فَقَدْ بَلَغَنِي كِتَابُك يَا رَسُولَ اللهِ فِيمَا ذَكَرْتَ مِنْ أَمْرِ عِيسَى فَوَرَبِّ السّمَاءِ وَالْأَرْضِ إنّ عِيسَى لاَ يَزِيْدُ عَلَى مَا ذَكَرْتَ ثُفْرُوْقًا إنّهُ كَمَا ذَكَرْتَ وَقَدْ عَرَفْنَا مَا بُعِثْتَ بِهِ إلَيْنَا وَقَدْ قَرّبْنَا ابْنَ عَمِّك وَأَصْحَابَهُ فَأَشْهَدُ أَنّكَ رَسُولُ اللهِ صَادِقًا مُصَدِّقًا وَقَدْ بَايَعْتُك وَبَايَعْتُ ابْنَ عَمَّك وَأَسْلَمْتُ عَلَى يَدَيْهِ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْن-

‘করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে’- ‘আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের প্রতি আছহামা নাজাশীর পক্ষ হ’তে। আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রেরিত আল্লাহর নবী! আপনার উপরে শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হৌক। আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতঃপর হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকটে আপনার পত্র পৌঁছেছে, তার মধ্যে আপনি ঈসা সম্পর্কে যা কিছু উল্লেখ করেছেন, আসমান ও যমীনের পালনকর্তার কসম! নিশ্চয়ই ঈসা আপনার বর্ণনার চাইতে কণামাত্র অধিক ছিলেন না। নিশ্চয়ই তিনি সেরূপ ছিলেন, যেরূপ আপনি বলেছেন। অতঃপর আপনি যা কিছু নিয়ে আমাদের নিকটে প্রেরিত হয়েছেন, আমরা তার সবকিছু জেনেছি এবং আপনার চাচাতো ভাই ও তার সাথীদের আমরা নিকটবর্তী করে নিয়েছি। অতঃপর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। আপনি সত্যবাদী ও সত্যায়নকারী। আমি আপনার নিকটে বায়‘আত করেছি এবং বায়‘আত করেছি আপনার চাচাতো ভাইয়ের নিকটে এবং আমি তার হাতে ইসলাম কবুল করেছি বিশ্বপালক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য’।[3]

এখানে পত্রের বক্তব্য হিসাবে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, সেটা রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে জা‘ফরের বক্তব্য হ’তে পারে। যেমন ইতিপূর্বেকার নাজাশীর প্রশ্নের জবাবে রাসূল (ছাঃ)-এর বরাত দিয়ে তিনি বলেছিলেন যে, هُوَ عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ وَرُوْحُهُ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إلَى مَرْيَمَ الْعَذْرَاءِ الْبَتُوْلِ ‘তিনি ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তাঁর রূহ ও কলেমা, যা তিনি নিক্ষেপ করেছিলেন কুমারী সতী-সাধ্বী মরিয়ামের প্রতি’।[4] উল্লেখ্য যে, এ সময় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন খৃষ্টান নেতার কাছে লিখিত পত্রে পূর্বে বর্ণিত সূরা আলে ইমরানের ৬৪ আয়াতটি উল্লেখ করতেন।[5]

অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ মতে নাজাশী দু’টি নৌকা করে পত্র বাহক আমর বিন উমাইয়া যামরীর সাথে হযরত জাফর, হযরত আবু মূসা আশ‘আরী প্রমুখ ছাহাবীগণকে মদীনায় পাঠিয়ে দেন। তারা সেখান থেকে খায়বরে গিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্রাট আছহামা নাজাশী ৯ম হিজরীর রজব মাসে ইন্তেকাল করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তার মৃত্যুর দিনেই সবাইকে অবহিত করেন এবং গায়েবানা জানাযা আদায় করেন’। আর এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম গায়েবানা জানাযা।

ফায়েদা :

তাফসীরবিদগণের আলোচনায় আরেকটি বিষয় প্রতিভাত হয় যে, ৫ম নববী বর্ষে মুহাজিরগণের দ্বিতীয় যে দলটি হাবশায় হিজরত করেন, তাদের সাথে হযরত জাফর বিন আবু তালেব সম্ভবতঃ দু’বছর হাবশায় অবস্থান করেন এবং নাজাশী ও তাঁর সভাসদ মন্ডলী এবং পাদরী-বিশপসহ রাজ্যের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নিকটে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। এ সময় নাজাশীর দরবারে জাফরের দেওয়া ভাষণ নাজাশী ও তার সভাসদদের অন্তর কেড়ে নেয়। ইসলামের সত্যতা ও শেষনবীর উপরে তাদের বিশ্বাস তখনই বদ্ধমূল হয়ে যায়। অতঃপর হাবশার মুহাজিরগণ যখন মদীনায় যাওয়ার সংকল্প করেন। তখন সম্রাট নাজাশী তাদের সাথে ৭০ জনের একটি ওলামা প্রতিনিধি দল মদীনায় প্রেরণ করেন। যাদের মধ্যে ৬২ জন ছিলেন আবিসিনীয় এবং ৮ জন ছিলেন সিরিয়। এরা ছিলেন খৃষ্টান সম্প্রদায়ের সেরা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। সংসার ত্যাগী দরবেশ সূলভ পোষাকে এই প্রতিনিধিদলটি রাসূলের দরবারে পেঁŠছলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে সূরা ইয়াসীন পাঠ করে শুনান। সূরা ইয়াসীন শ্রবণকালে তাদের দু’চোখ বেয়ে অবিরল ধারে অশ্রু প্রবাহিত হ’তে থাকে। তারা বলে ওঠেন ইনজীলের বাণীর সাথে কুরআনের বাণীর কি অদ্ভূত মিল! অতঃপর তারা সবাই অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে বায়‘আত করে ইসলাম কবুল করেন।

প্রতিনিধি দলটির প্রত্যাবর্তনের পর সম্রাট নাজাশী প্রকাশ্যে ইসলাম কবুলের ঘোষণা দেন। যদিও প্রথম থেকেই তিনি শেষনবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কিন্তু ধর্মনেতাদের ভয়ে প্রকাশ করেননি। অতঃপর তিনি একটি পত্র লিখে স্বীয় পুত্রের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল মদীনায় পাঠান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ জাহাযটি পথিমধ্যে ডুবে গেলে আরোহী সকলের মর্মান্তিক সলিল সমাধি ঘটে।

উক্ত খৃষ্টান প্রতিনিধিদলের মদীনায় গমন ও ইসলাম গ্রহণের প্রতি ইঙ্গিত করেই সূরা মায়েদাহ ৮২ হ’তে ৮৫ চারটি আয়াত নাযিল হয়। যেখানে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِلَّذِيْنَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُمْ مَوَدَّةً لِلَّذِيْنَ آمَنُوا الَّذِيْنَ قَالُوْا إِنَّا نَصَارَى ذَلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيْسِيْنَ وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لاَ يَسْتَكْبِرُوْنَ، وَإِذَا سَمِعُوْا مَا أُنْزِلَ إِلَى الرَّسُوْلِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ-

‘নিশ্চয়ই আপনি সব লোকের চাইতে ঈমানদারগণের অধিক শত্রু পাবেন ইহুদী ও মুশরিকদের এবং নিশ্চয়ই আপনি সব লোকের চাইতে ঈমানদারগণের অধিক নিকটবর্তী পাবেন ঐসব লোকদের, যারা বলে আমরা নাছারা। এটা এজন্য যে, তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক আলেম ও দরবেশ এবং তারা অহংকার করে না’। ‘আর যখন তারা শ্রবণ করে ঐ বস্ত্ত যা রাসূলের প্রতি নাযিল হয়েছে, তখন আপনি দেখবেন যে, তাদের চক্ষুসমূহ দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছে একারণে যে, তারা সত্যকে চিনতে পেরেছে। অতঃপর তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা আমরা ঈমান এনেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ঈমানের সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করে নাও’ (মায়েদাহ ৫/৮২-৮৩)।

সম্রাট নাজাশীর উপরোক্ত পদক্ষেপ সমূহের কারণে এবং তাঁর প্রকাশ্যে ইসলাম কবুলের খবর জানতে না পারায় ও তাঁর প্রেরিত পত্র হস্তগত না হওয়ায় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁকে ইসলাম কবুলের আহবান জানিয়ে পত্র লেখেন এবং যা তিনি শ্রদ্ধাভরে কবুল করেন।

মুবারকপুরীর তাহকীক্ব মতে আল্লাহর নবী (ছাঃ) বাদশাহ নাজাশীর নিকটে তিনবারে তিনটি চিঠি লেখেন। প্রথমটি ছিল মক্কায় থাকাকালীন সময়ে ৫ম নববী বর্ষের রজব মাসে যখন সেখানে হযরত ওছমান (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ১২ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলার প্রথম হিজরত অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর ৮৩ জন পুরুষ ও ১৯ জন মহিলা হিজরত করেন। পত্র বাহক ছিলেন জা‘ফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ)। সেখানে বক্তব্য ছিল, … وَقَدْ بَعَثْتُ إِلَيْكُمْ ابْنَ عَمِّيْ جَعْفَرَاً وَمَعَهُ نَفَرٌ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ، فَإِذَا جَاءَكَ فَأَقَرَّهُمْ وَدَعِ التَّجْبَرَ ‘আমি আপনার নিকটে আমার চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু তালেবকে পাঠালাম। তার সাথে মুসলমানদের একটি দল রয়েছে। অতএব যখন সে আপনার নিকটে যাবে, আপনি তাকে আশ্রয় দিবেন এবং কোনরূপ যবরদস্তি করবেন না’।

অতঃপর দ্বিতীয় পত্রটি ছিল ৭ম হিজরীর ১লা মুহাররম তারিখে যা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। সবশেষে তৃতীয় পত্রটি ছিল ৯ম হিজরীর রজব মাসে। আছহামা নাজাশীর মৃত্যুর পরে সিংহাসনে আসীন নতুন নাজাশীর নিকটে।

শেষোক্ত পত্রে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নতুন বাদশাহর নাম উল্লেখ করেননি। তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন কি-না তাও জানা যায়নি।[6]

২. মিসর রাজ মুক্বাউক্বিসের নিকটে পত্র (الكتاب إلى المقوقس ملك مصر) : মিসর ও আলেকজান্দ্রিয়ার (الإسكندرية) খৃষ্টান সম্রাট জুরায়েজ বিন মাত্তা (جُرَيْج بن مَتَّي) (ডঃ হামীদুল্লাহ এঁর নাম বলেছেন, বেনিয়ামীন (البنيامين) ওরফে মুক্বাউক্বিসের (المقوقس) নিকটে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি পত্র লেখেন। যার বাহক ছিলেন হযরত হাতেব বিন আবী বালতা‘আহ (রাঃ)। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ :

بِسْمِ اللهِ الرّحْمَنِ الرّحِيمِ مِنْ مُحَمّدٍ عَبْدِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ إلَى الْمُقَوْقِسِ عَظِيمِ الْقِبْطِ سَلاَمٌ عَلَى مَنْ اتّبَعَ الْهُدَى أَمّا بَعْدُ فَإِنّي أَدْعُوْكَ بِدِعَايَةِ الْإِسْلاَمِ أَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللهُ أَجْرَكَ مَرّتَيْنِ فَإِنْ تَوَلّيْت فَإِنّ عَلَيْكَ إثْمَ الْقِبْطِ { يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاّ نَعْبُدَ إِلاَ اللهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُوْنِ اللهِ فَإِنْ تَوَلّوْا فَقُولُوْا اشْهَدُوْا بِأَنّا مُسْلِمُوْنَ-

‘করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে’- ‘আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে ক্বিবতীদের সম্রাট মুক্বাউক্বিসের প্রতি’। শান্তি বর্ষিত হৌক তাঁর প্রতি, যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন। অতঃপর আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন। নিরাপদ থাকুন। ইসলাম গ্রহণ করুন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ ছওয়াব দান করবেন। কিন্তু যদি আপনি মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহ’লে ক্বিবতীদের (অর্থাৎ মিসরীয়দের ইসলাম গ্রহণ না করার) পাপ আপনার উপরে বর্তাবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘হে কেতাবধারীগণ! তোমরা এস…’ (আলে ইমরান ৩/৬৪)।

হযরত হাতেব বিন আবী বালতা‘আহ (রাঃ) পত্র খানা সম্রাটের হাতে সমর্পণ করার পর বললেন, আপনার পূর্বে এই মিসরে এমন একজন শাসক গত হয়ে গেছেন, যিনি বলতেন, أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى، فَأَخَذَهُ اللهُ نَكَالَ الْآخِرَةِ وَالْأُوْلَى  ‘আমিই  তোমাদের বড় পালনকর্তা’। অতঃপর আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলেন’ (নাযে‘আত ৭৯/২৪-২৫)। হাতেব বলেন, فَاعْتَبِرْ بِغَيْرِك وَلاَ يَعْتَبِرُ غَيْرُك بِك   ‘অতএব আপনি অন্যের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং অন্যেরা যেন আপনার থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করে’। জওয়াবে মুক্বাউক্বিস বললেন, إنّ لَنَا دِيْنًا لَنْ نَدَعَهُ إلاّ لِمَا هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ ‘নিশ্চয়ই আমাদের একটি দ্বীন রয়েছে। আমরা তা ছাড়তে পারি না, যতক্ষণ না তার চাইতে উত্তম কিছু পাই’। হাতেব (রাঃ) বললেন, আমরা আপনাকে ইসলামের দিকে আহবান জানাচ্ছি। যার মাধ্যমে আল্লাহ বিগত দ্বীনসমূহের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করেছেন। আমাদের নবী সকল মানুষকে আহবান জানিয়েছেন। কুরায়েশরা শক্তভাবে বিরোধিতা করে, ইহুদীরা শত্রুতা করে। কিন্তু নাছারাগণ নিকটবর্তী থাকে। আমার জীবনের কসম! ঈসার জন্য মূসার সুসংবাদ ছিল যেমন, মুহাম্মাদের জন্য ঈসার সুসংবাদও ছিল তেমন। কুরআনের প্রতি আপনাকে আমাদের আহবান ঐরূপ, যেমন ইনজীলের প্রতি তাওরাত অনুসারীদেরকে আপনার আহবান। যখন কোন নবীর আবির্ভাব ঘটে, তখন সেই যুগের সকল লোক তার উম্মত হিসাবে গণ্য হয়। তখন তাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় তাঁর আনুগত্য করা। আপনি তাদের মধ্যেকার একজন, যিনি বর্তমান নবীর যুগ পেয়েছেন। আমরা মসীহের দ্বীন থেকে আপনাকে নিষেধ করছি না। বরং আমরা তাঁর দ্বীনের প্রতিই আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি’।

মুক্বাউক্বিস বললেন, আমি এ নবীর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছি। আমি তাকে পেয়েছি এভাবে যে, তিনি কোন অপসন্দনীয় কাজের নির্দেশ দেন না। আমি তাঁকে ভ্রষ্ট জাদুকর বা মিথ্যুক গণৎকার হিসাবে পাইনি। আমি তাঁর সাথে নবুঅতের এই নিদর্শন পাচ্ছি যে, তিনি গায়েবী খবর প্রকাশ করছেন এবং পরামর্শের (মাধ্যমে কাজ করার) নির্দেশ দিচ্ছেন। অতএব আমি ভেবে দেখব’। অতঃপর তিনি পত্রখানা সসম্মানে হাতীর দাতের দ্বারা নির্মিত একটি বাক্সে রাখলেন এবং সীলমোহর দিয়ে যত্নসহকারে রাখার জন্য দাসীর হাতে দিলেন। অতঃপর আরবী জানা একজন কেরানীকে ডেকে নিম্নোক্ত জওয়াবী পত্র লিখলেন-

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ لِمُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ مِنْ الْمُقَوْقِسِ عَظِيمِ الْقِبْطِ سَلاَمٌ عَلَيْك أَمّا بَعْدُ فَقَدْ قَرَأْتُ كِتَابَك وَفَهِمْتُ مَا ذَكَرْتَ فِيهِ وَمَا تَدْعُو إلَيْهِ وَقَدْ عَلِمْتُ أَنَّ نَبِيًّا بَقِيَ وَكُنْتُ أَظُنُّ أَنّهُ يَخْرُجُ بِالشَّامِ وَقَدْ أَكْرَمْتُ رَسُوْلَك وَبَعَثْتُ إلَيْك بِجَارِيَتَيْنِ لَهُمَا مَكَانٌ فِي الْقِبْطِ عَظِيمٌ وَبِكِسْوَةٍ وَأَهْدَيْتُ إلَيْك بَغْلَةً لِتَرْكَبَهَا وَالسَّلاَمُ عَلَيْك-

‘করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে’ ‘মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর জন্য ক্বিবতীসম্রাট মুক্বাউক্বিসের পক্ষ হ’তে- আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হউক! অতঃপর আমি আপনার পত্র পাঠ করেছি এবং সেখানে আপনি যা বর্ণনা করেছেন ও যেদিকে আহবান জানিয়েছেন, তা অনুধাবন করেছি। আমি জানি যে, একজন নবী আসতে বাকী রয়েছেন। আমি ধারণা করতাম যে, তিনি শাম (সিরিয়া) থেকে আবির্ভূত হবেন। আমি আপনার দূতকে সম্মান করেছি এবং আপনার নিকটে দু’জন দাসী পাঠিয়েছি, ক্বিবতীদের মাঝে যাদের উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। আপনার জন্য পোষাক এবং বাহন হিসাবে ব্যবহারের জন্য একটি খচ্চর উপঢৌকন স্বরূপ পাঠালাম। আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক!’

মুক্বাউক্বিস এর বেশী কিছু লেখেননি, ইসলামও কবুল করেননি। দাসী দু’জন ছিল মারিয়াহ (مَارِيَةُ) এবং শিরীন (سِيْرِينُ)। মারিয়া ক্বিবতিয়ার গর্ভে রাসূল (ছাঃ)-এর শেষ সন্তান ইবরাহীমের জন্ম হয়। শিরীনকে কবি হাসসান বিন ছাবিত আনছারীকে দেওয়া হয়। ‘দুলদুল’ নামক উক্ত খচ্চরটি মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর যামানা পর্যন্ত জীবিত ছিল’।[7]

৩. পারস্য সম্রাট কিসরার নিকটে পত্র (الكتاب إلى كسرى ملك فارس) :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পারস্য সম্রাট খসরু পারভেযের নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র প্রেরণ করেন, যিনি ছিলেন অর্ধেক প্রাচ্য দুনিয়ার অধিপতি এবং মজূসী বা যারদাশতী ধর্মের অনুসারী, যারা অগ্নিপূজক ছিলেন। পত্রবাহক ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন হুযাফা সাহমী (عَبْدُ اللهِ بْنُ حُذَافَةَ السَّهْمِيُّ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পত্রটি ছিল নিম্নরূপ:

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُوْلِ اللهِ إلَى كِسْرَى عَظِيمِ فَارِسَ سَلاَمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى وَآمَنَ بِاَللهِ وَرَسُوْلِهِ وَشَهِدَ أَنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنّ مُحَمّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ أَدْعُوْكَ بِدِعَايَةِ اللهِ فَإِنِّيْ أَنَا رَسُوْلُ اللهِ إلَى النَّاسِ كَافّةً لِيُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيًّا وَيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِيْنَ- أَسْلِمْ تَسْلَمْ فَإِنْ أَبَيْتَ فَعَلَيْكَ إثْمُ الْمَجُوْسِ-

‘…আমি আপনাকে আল্লাহর দিকে আহবান জানাচ্ছি। কেননা আমি আল্লাহর পক্ষ হ’তে সকল মানব জাতির জন্য প্রেরিত রাসূল’। ‘যাতে তিনি জীবিতদের (জাহান্নামের) ভয় প্রদর্শন করেন এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়’ (ইয়াসীন ৩৬/৭০)। ইসলাম কবুল করুন, নিরাপদ থাকুন। যদি অস্বীকার করেন, তাহ’লে মজূসীদের পাপ আপনার উপরে বর্তাবে’।

পত্রবাহক সাহমী (রাঃ) পত্রখানা (কিসরার গভর্ণর) বাহরায়নের শাসকের নিকটে হস্তান্তর করেন। অতঃপর পত্রটি গভর্ণর তার লোকদের মারফত পাঠান, না সাহমী (রাঃ)-কেই পাঠান, সে বিষয়টি সম্পর্কে মুবারকপুরী নিশ্চিত নন। যাই হোক পত্রটি যখন কিসরাকে পাঠ করে শুনানো হয়, তখন তিনি পত্রটি ছিঁড়ে ফেলেন ও দম্ভভরে বলেন, عَبْدٌ حَقِيْرٌ مِنْ رَعِيَّتِيْ يَكْتُبُ اسْمَهُ قَبْلِيْ ‘আমার একজন নিকৃষ্ট প্রজা তার নাম লিখেছে আমার নামের পূর্বে’। এ খবর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে পৌঁছলে তিনি বলেন, مَزَّقَ اللهُ مُلْكَهُ ‘আল্লাহ তার সাম্রাজ্যকে ছিন্নভিন্ন করুন’! ভবিষ্যতে সেটাই হয়েছিল। কিসরা তার অধীনস্থ ইয়ামনের গভর্ণর বাযান (باذان) -এর কাছে লিখলেন, ‘হেজাযের এই ব্যক্তিটির নিকটে তুমি দু’জন শক্তিশালী লোক পাঠাও। যাতে তারা ঐ ব্যক্তিকে আমার কাছে ধরে নিয়ে আসে’। বাযান সে মোতাবেক দু’জন লোককে একটি পত্রসহ মদীনায় পাঠান, যাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের সাথে কিসরার দরবারে চলে যান। তারা গিয়ে রাসূলের সাথে বেশ ধমকের সুরে কথা বলল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, বেশ তোমরা কাল এসো। এরি মধ্যে ইরানের রাজধানীতে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে যায়। পুত্র শিরওয়াইহ (شيرويه) পিতা খসরু পারভেযকে হত্যা করে রাতারাতি সিংহাসন দখল করে নেয়। ৭ম হিজরীর ১০ জুমাদাল ঊলা মঙ্গলবারের রাতে এ আকস্মিক ঘটনা ঘটে যায়। পরদিন সকালে ঐ দু’জন লোক রাসূলের দরবারে এসে ঘটনা শুনে অবিশ্বাস করে বলে উঠল, আমরা আপনার এই বাজে কথা সম্রাটের কাছে লিখে পাঠাব’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তবে তাকে একথা বলো যে,

وقولا له : إن ديني وسلطاني سيبلغ ما بلغ كسرى وينتهي إلى منتهي الخف والحافر، وقولا له : إن أسلمت أعطيتك ما تحت يدك، وملكتك على قومك من الأبناء-

‘আমার দ্বীন ও শাসন ঐ পর্যন্ত পৌঁছবে, যে পর্যন্ত কিসরা পৌঁছেছেন এবং সেখানে গিয়ে শেষ হবে। যার পরে আর উট ও ঘোড়ার পা যাবে না’। তাকে একথাও বলো যে, ‘যদি তিনি মুসলমান হয়ে যান, তবে তার অধিকারে যা কিছু রয়েছে, সব তাকে দেওয়া হবে এবং তাকে তোমাদের জাতির জন্য বাদশাহ করে দেওয়া হবে’।[8] লক্ষণীয় বিষয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার পত্রে أَسْلِمْ تَسْلَمْ ‘ইসলাম কবুল করুন, নিরাপদ থাকুন’ কথাটি লিখেছিলেন, যা ছিল এক প্রকার ভবিষ্যদ্বাণী স্বরূপ। কিসরা প্রকাশ্যে অস্বীকার করেন ও পত্রটি ছিঁড়ে ফেলে চরম বেআদবী করেন। ফলে তার রাজনৈতিক নিরাপত্তা দ্রুত ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে একই কথা তিনি খৃষ্টান রাজা নাজাশীকে লিখলে তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং তার রাজ্য নিরাপদ ও সুদৃঢ় হয়। অপর খৃষ্টান রাজা মুক্বাউক্বিস ইসলাম কবুল না করলেও প্রত্যাখ্যান করেননি। বরং তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর পত্র ও পত্রবাহক দূতকে সম্মান করেন ও মদীনায় মূল্যবান উপঢৌকনাদি পাঠান। ফলে তার রাজ্য নিরাপদ থাকে।

বলা বাহুল্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রদত্ত উক্ত আগাম খবরে  বাযান ও ইয়ামনে বসবাসরত পারিসকরা সবাই মুসলমান হয়ে যায় ও তাদের শাসিত এলাকার অধিকাংশ লোক মুসলমান হয়ে যায়।

৪. রোম সম্রাট ক্বায়ছার হেরাক্লিয়াসের নিকটে পত্র (الكتاب إلى قيصر ملك الروم) :  রোম সাম্রাজ্যের পূর্ব অংশের শাসক কনষ্ট্যান্টিনোপলের বিখ্যাত খৃষ্টান সম্রাট হেরাকল এ সময় যেরুযালেমে অবস্থান করছিলেন।[9] পত্রবাহক দেহিয়া বিন খালীফা কালবী ওরফে দেহিয়াতুল কালবী (রাঃ) সরাসরি গিয়ে তাকে রাসূলের পত্রটি হস্তান্তর করেন। তবে মুবারকপুরী বলেন, রাসূলের নির্দেশ মতে তিনি পত্রটি বছরার শাসনকর্তার নিকটে হস্তান্তর করেন এবং তিনি এটা রোম সম্রাটকে পৌঁছে দেন। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ :

بسم الله الرحمن الرحيم. من محمد عبد الله ورسوله إلى هرقل عظيم الروم، سلام على من اتبع الهدي، أسلم تسلم، أسلم يؤتك الله أجرك مرتين، فإن توليت فإن عليك إثم الأريسيين {يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ الخ-

‘… ইসলাম কবুল করুন! নিরাপদ থাকুন। ইসলাম কবুল করুন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ ছওয়াব দান করবেন। যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহ’লে আপনার উপরে প্রজাবৃন্দের পাপ বর্তাবে। (আল্লাহ বলেন,) হে কিতাবধারীগণ’!…।

মনছূরপুরীর মতে সম্রাট রাসূল (ছাঃ)-এর দূতকে খুব সমাদর করেন এবং জাঁকজমকপূর্ণ দরবারে তাকে অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে অধিক জানার জন্য মক্কা থেকে আগত কোন ব্যবসায়ীকে দরবারে আনার নির্দেশ দেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণনা করেন যে, ঘটনাক্রমে ঐ সময় আবু সুফিয়ান একটি ব্যবসায়ী কাফেলা নিয়ে শামে অবস্থান করছিলেন। তাঁকে দরবারে ডেকে আনা হয়। হেরাক্বল তার দোভাষীর মাধ্যমে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কথিত নবীর সবচাইতে নিকটাত্মীয় কে? আবু সুফিয়ান বললেন, আমি। আবু সুফিয়ান বলেন, অতঃপর আমাকে তিনি কাছে ডেকে নিলেন এবং আমার সাথীদের পিছনে বসালেন। অতঃপর তিনি আমার সাথীদের বললেন, আমি এঁকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করব। মিথ্যা বললে, তোমরা ধরে দিবে’। আবু সুফিয়ান তখন ইসলামের শত্রুদের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, যদি আমাকে মিথ্যুক বলে আখ্যায়িত করার ভয় না থাকত, তাহ’লে আমি অবশ্যই মুহাম্মাদ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলতাম। ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হেরাকল ও আবু সুফিয়ানের মধ্যকার কথোপকথন ও হেরাকলের মন্তব্য সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হ’ল:

প্রশ্ন-১ : নবীর বংশ মর্যাদা কেমন? উত্তর : উচ্চ বংশীয়।

(হেরাকলের মন্তব্য) : হ্যাঁ। এরূপই হয়ে থাকে। যাতে তাঁর প্রতি আনুগত্যে কারু মনে সংকোচ সৃষ্টি না হয়।

প্রশ্ন-২ : তোমাদের মধ্যে ইতিপূর্বে কেউ নবুঅতের দাবী করেছেন কি?

উত্তর : না’। মন্তব্য : হ্যাঁ। এরূপ হ’লে বুঝতাম যে, বাপ-দাদার অনুকরণে এ দাবী করেছেন।

প্রশ্ন-৩ : নবুঅতের দাবী করার পূর্বে ইনি কি কখনো মিথ্যা বলেছেন বা তার উপরে মিথ্যার অপবাদ দেওয়া হয়েছিল?

উত্তর : না’। মন্তব্য : ঠিক। যে ব্যক্তি মানুষকে মিথ্যা বলে না, সে ব্যক্তি আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে পারে না।

প্রশ্ন-৪ : নবীর বাপ-দাদাদের মধ্যে কেউ কখনো বাদশাহ ছিলেন কি? উত্তর : না’। মন্তব্য : এটা থাকলে আমি বুঝতাম যে, নবুঅতের বাহানায় বাদশাহী হাছিল করতে চায়।

প্রশ্ন-৫ : তাঁর অনুসারীদের মধ্যে গরীব ও দুর্বল লোকদের সংখ্যা বেশী, না অভিজাত শ্রেণীর লোকদের সংখ্যা বেশী?

উত্তর : গরীব ও দুর্বল লোকদের সংখ্যা বেশী’। মন্তব্য : প্রত্যেক নবীর প্রথম অনুসারী দল দুর্বলেরাই হয়ে থাকে।

প্রশ্ন-৬ : এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, না কমছে?

উত্তর : বাড়ছে’। মন্তব্য : ঈমানের এটাই বৈশিষ্ট্য যে, আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায় ও ক্রমে পূর্ণতার স্তরে পেঁŠছে যায়।

প্রশ্ন-৭ : কেউ কি তাঁর দ্বীন ত্যাগ করে চলে যায়?

উত্তর : না’। মন্তব্য : ঈমানের প্রভাব এটাই যে, একবার হৃদয়ে বসে গেলে তা আর বের হয় না।

প্রশ্ন-৮ : এই ব্যক্তি কখনো অঙ্গীকার বা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন কি?

উত্তর : না’। তবে এ বছর আমরা (হোদায়বিয়ার) সন্ধিচুক্তি করেছি। দেখি তার ফলাফল কি দাঁড়ায়।’ আবু সুফিয়ান বলেন, একথাটুকুই মাত্র যুক্ত করেছিলাম। কিন্তু হেরাকল সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন, নবীরা কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেন না। কেবল দুনিয়াদাররাই চুক্তি ভঙ্গ করে থাকে। আর নবীগণ কখনোই দুনিয়াপূজারী হন না।

প্রশ্ন-৯ : এই ব্যক্তির সঙ্গে তোমাদের কখনো যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছি কি?

উত্তর : হয়েছে।

প্রশ্ন-১০ : তার ফলাফল কি ছিল?

উত্তর : কখনো তিনি বিজয়ী হয়েছেন (যেমন বদরে), কখনো আমরা বিজয়ী হয়েছি (যেমন ওহোদে)। মন্তব্য : আল্লাহর নবীদের এই অবস্থাই হয়ে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নবীগণই লাভ করে থাকেন’।

প্রশ্ন-১১ : তাঁর শিক্ষা কি?

উত্তর : এক আল্লাহর ইবাদত কর। বাপ-দাদার তরীকা (মূর্তি পূজা) ছেড়ে দাও। ছালাত, ছিয়াম, সত্যবাদিতা, পবিত্রতা, আত্মীয়তা রক্ষার অপরিহার্যতা অবলম্বন কর।’ মন্তব্য : প্রতিশ্রুত নবীর এইসব নিদর্শনই আমাদের বলা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম যে, নবীর আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছিলাম না যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে হবেন। শুনে রাখ আবু সুফিয়ান! فَإِنْ كَانَ مَا تَقُوْلُ حَقًّا فَسَيَمْلِكُ مَوْضِعَ قَدَمَيَّ هَاتَيْنِ، فَلَوْ أَنِّيْ أَعْلَمُ أَنِّيْ أَخْلُصُ إِلَيْهِ لَتَجَشَّمْتُ لِقَاءَهُ، وَلَوْ كُنْتُ عِنْدَهُ لَغَسَلْتُ عَنْ قَدَمَيْهِ-  ‘যদি তুমি সত্য কথা বলে থাক, তবে সত্বর তিনি আমার পায়ের তলার মাটিরও (অর্থাৎ শাম ও বায়তুল মুক্বাদ্দাসের) অধিকার লাভ করবেন’। ‘যদি আমি জানতাম যে, আমি তাঁর কাছে পৌঁছতে পারব, তাহ’লে আমি তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য সাধ্যমত কষ্ট স্বীকার করতাম’। ‘আর যদি আমি তাঁর কাছে পৌঁছতে পারতাম, তাহ’লে আমি তাঁর দু’ পা ধুয়ে দিতাম’।

অতঃপর হেরাক্লিয়াস রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রেরিত পত্রটি নিয়ে পাঠ করলেন। পত্র পাঠ শেষ হ’লে (ভক্তির আবেশে) সভাসদগণের কণ্ঠস্বর ক্রমেই উচ্চ মার্গে উঠতে লাগল এবং এ সময়ে আমাদেরকে চলে যেতে বলা হ’ল।

আবু সুফিয়ান বলেন যে, রাজদরবার থেকে বেরিয়ে এসে আমি সাথীদের বললাম,لَقَدْ أَمِرَ أَمْرُ ابْنِ أَبِيْ كَبْشَةَ إِنَّهُ يَخَافُهُ مَلِكُ بَنِي الْأَصْفَرِ ইবনু আবী কাবশার ব্যাপারটি মযবুত হয়ে গেল। আছফারদের সম্রাট তাকে ভয় পাচ্ছেন’।[10] আবু সুফিয়ান বলেন, এরপর থেকে আমার বিশ্বাস বদ্ধমূল হ’তে থাকল যে, সত্বর তিনি বিজয় লাভ করবেন। অবশেষে আল্লাহ আমার মধ্যে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিলেন’।[11] অর্থাৎ পরের বছর ৮ম হিজরীর ১৭ রামাযানে মক্কা বিজয় হয় এবং আবু সুফিয়ান সেদিনই ইসলাম কবুল করেন।

রাসূল (ছাঃ)-এর পত্র রোম সম্রাটের উপরে কেমন প্রভাব বিস্তার করেছিল, উপরোক্ত ঘটনায় তা প্রতীয়মান হয়। পত্রবাহক দেহিয়া কালবীকে রোম সম্রাট বহুমূল্য উপঢৌকনাদি দিয়ে সম্মানিত করেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য মূল্যবান হাদিয়া প্রেরণ করেন। আল্লাহ পাকের এমনই কুদরত যে, রাসূলের দুশমনের মুখ দিয়েই আরেক অবন্ধু সম্রাটের সম্মুখে তার সত্যায়ন করালেন এবং সম্রাটকে হেদায়াত দান করলেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ।

৫. বাহরায়নের শাসক মুনযির বিন সাওয়া-র নিকটে পত্র (الكتاب إلى المنذر بن ساوى ملك البحرين ) :

পারস্য সম্রাটের গভর্ণর বাহরায়নের শাসক মুনযির বিন সাওয়ার নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ)-কে পত্রবাহক হিসাবে প্রেরণ করেন। পত্র পেয়ে তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং বাহরায়েনের অধিকাংশ লোক মুসলমান হয়ে যায়। অতঃপর তিনি জবাবী পত্রে রাসূল (ছাঃ)-কে লেখেন, হে রাসূল! বাহরায়েন বাসীদের অনেকে ইসলাম পসন্দ করেছে ও কবুল করেছে, অনেকে অপসন্দ করেছে। আমার এ মাটিতে অনেক মজূসী (অগ্নিউপাসক) ও ইহুদী রয়েছে। অতএব এদের বিষয়ে আপনার নির্দেশ কি আমাকে জানাতে মর্যী হয়। তখন রাসূল (ছাঃ) তার জওয়াবে লিখলেন,

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللهِ إلَى الْمُنْذِرِ بْنِ سَاوَى سَلاَمٌ عَلَيْكَ فَإِنّي أَحْمَدُ إلَيْك اللهَ الَّذِيْ لاَ إلَهَ إلاّ هُوَ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ وَأَنّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ أَمّا بَعْدُ فَإِنّيْ أُذَكّرُكَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَإِنّهُ مَنْ يَنْصَحْ فَإِنّمَا يَنْصَحُ لِنَفْسِهِ وَإِنّهُ مَنْ يُطِعْ رُسُلِيْ وَيَتَّبِعْ أَمْرَهُمْ فَقَدْ أَطَاعَنِيْ وَمَنْ نَصَحَ لَهُمْ فَقَدْ نَصَحَ لِيْ وَإِنّ رُسُلِيْ قَدْ أَثْنَوْا عَلَيْكَ خَيْرًا وَإِنّي قَدْ شَفَعْتُكَ فِيْ قَوْمِك فَاتْرُكْ لِلْمُسْلِمِيْنَ مَا أَسْلَمُوْا عَلَيْهِ وَعَفَوْتُ عَنْ أَهْلِ الذُّنُوبِ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَإِنَّكَ مَهْمَا تُصْلِحْ فَلَنْ نَعْزِلَكَ عَنْ عَمَلِك وَمَنْ أَقَامَ عَلَى يَهُوْدِيَّةٍ أَوْ مَجُوْسِيَّةٍ فَعَلَيْهِ الْجِزْيَةُ-

‘করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে মুনযির বিন সাওয়ার প্রতি। আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক! অতঃপর আমি আপনার নিকটে আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। অতঃপর আমি আপনাকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। কেননা যে ব্যক্তি উপদেশ গ্রহণ করে, সে তার নিজের জন্যই তা করে। যে ব্যক্তি আমার প্রেরিত দূতদের আনুগত্য করে ও তাদের নির্দেশের অনুসরণ করে, সে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করে। যে ব্যক্তি তাদের প্রতি সদাচরণ করে, সে আমার প্রতি সদাচরণ করে। আমার দূতগণ আপনার সম্পর্কে উত্তম প্রশংসা করেছে। আপনার জাতি সম্পর্কে আমি আপনার সুফারিশ কবুল করলাম। অতএব মুসলমানদেরকে তাদের অবস্থার উপরে ছেড়ে দিন। অপরাধীদের আমি ক্ষমা করলাম। আপনিও ক্ষমা করুন। অতঃপর যতদিন আপনি সংশোধনের পথে থাকবেন, ততদিন আমরা আপনাকে দায়িত্ব হ’তে অপসারণ করব না এবং যে ব্যক্তি ইহুদী বা মজূসী ধর্মের উপরে দন্ডায়মান থাকবে, তার উপরে জিযিয়া কর আরোপিত হবে’।[12]

৬. ইয়ামামার খৃষ্টান শাসক হাওযাহ বিন আলীর নিকটে পত্র (الكتاب إلى هَوْذَة بن على صاحب اليمامة) :

পত্রবাহক সালীত্ব বিন আমর আল-আমেরী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মোহরাংকিত পত্রখানা নিয়ে সরাসরি প্রাপকের হাতে সমর্পণ করেন। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ :

بِسْمِ اللهِ الرّحْمَنِ الرّحِيمِ مِنْ مُحَمّدٍ رَسُولِ اللّهِ إلَى هَوْذَةَ بْنِ عَلِيّ سَلاَمٌ عَلَى مَنْ اتّبَعَ الْهُدَى وَاعْلَمْ أَنّ دِينِي سَيَظْهَرُ إلَى مُنْتَهَى الْخُفِّ وَالْحَافِرِ فَأَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَجْعَلْ لَكَ مَا تَحْتَ يَدَيْكَ-

‘… আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে হাওযাহ বিন আলীর প্রতি। শান্তি বর্ষিত হৌক ঐ ব্যক্তির উপরে যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন। আপনি জানুন যে, আমার দ্বীন বিজয়ী হবে যতদূর উট ও ঘোড়া যেতে পারে। অতএব আপনি ইসলাম কবুল করুন, নিরাপদ থাকুন। আপনার অধীনস্থ এলাকা আপনাকে প্রদান করব’।

ওয়াক্বেদী বর্ণনা করেন, এই সময় দামেষ্কের খৃষ্টান নেতা আরকূন (أركون) হাওযাহর নিকটে বসে ছিলেন। তিনি তাকে শেষনবী (ছাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে হাওযাহ বলেন, তাঁর চিঠি আমার কাছে এসেছে। তিনি আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু আমি আমার ধর্মে দৃঢ় থাকতে চাই। তাছাড়া আমি আমার জাতির নেতা। যদি আমি তাঁর অনুসারী হই, তাহ’লে নেতৃত্ব হারাবো’। আরকূন বললেন, হ্যাঁ। তবে আল্লাহর কসম! যদি আপনি তাঁর অনুসারী হন, তাহ’লে অবশ্যই তিনি আপনাকে শাসনক্ষমতায় রাখবেন। অতএব আপনার জন্য কল্যাণ রয়েছে তাঁর আনুগত্যের মধ্যে। নিশ্চয়ই তিনি সেই আরবী নবী, যার সুসংবাদ দিয়ে গেছেন ঈসা ইবনে মারিয়াম। আর আমাদের ইনজীলেও লিখিত আছে, মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’।

অতঃপর হাওযাহ পত্রবাহককে যথাযোগ্য আতিথ্য ও সম্মান প্রদর্শন করেন এবং পত্রের জওয়াবে তিনি লেখেন-

مَا أَحْسَنَ مَا تَدْعُو إلَيْهِ وَأَجْمَلَهُ وَالْعَرَبُ تَهَابُ مَكَانِي فَاجْعَلْ إلَيّ بَعْضَ الْأَمْرِ أَتْبَعُك-

‘কতই না সুন্দর ও উত্তম বিষয়ের দিকে আপনি আমাকে আহবান জানিয়েছেন। আরব জাতি আমার উঁচু স্থানকে ভীতির চোখে দেখে। অতএব আপনার রাজত্বের কিছু অংশ আমাকে দান করুন, তাহ’লে আপনার আনুগত্য করব’। মানছূরপুরী ‘অর্ধেক রাজত্ব (آدهي حكومت) ’ বলেছেন।

অতঃপর হিজরের তৈরী মূল্যবান পোষাক ও উপঢৌকনাদি পত্রবাহককে প্রদান করেন। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,  لَوْ سَأَلَنِيْ سَيَابَةً مِنْ الْأَرْضِ مَا فَعَلْتُ، بَادَ وَبَادَ مَا فِيْ يَدَيْهِ ‘যদি সে আমার নিকটে এক টুকরা শুকনা মাটিও চায়, তাও আমি তাকে দিব না। সে নিজে ধ্বংস হ’ল এবং যেটুকু তার অধীনে ছিল তাও হারালো’। অর্থাৎ নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়াটাই তার ধ্বংসের কারণ।

পরের বছর মক্কা বিজয় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন প্রত্যাবর্তন করেন, তখন জিব্রীল (আঃ) এসে তাঁকে খবর দেন যে, হাওযাহ মৃত্যু বরণ করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَمَا إنّ الْيَمَامَةَ سَيَخْرُجُ بِهَا كَذّابٌ يَتَنَبّأُ يُقْتَلُ بَعْدِي ‘সত্বর ইয়ামামা হ’তে একজন ভন্ড নবীর আবির্ভাব ঘটবে, আমার পরে যাকে হত্যা করা হবে’। জনৈক ব্যক্তি বলে উঠল, কে তাকে হত্যা করবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,أَنْتَ وَأَصْحَابُك ‘তুমি ও তোমার সাথীরা’।[13] রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সময়ে সেটা বাস্তবায়িত হয়েছিল এবং হামযা (রাঃ)-এর হত্যাকারী ওয়াহ্শী ভন্ডনবী মুসায়লামা কাযযাবকে হত্যা করেন। এদিকে ইঙ্গিত করেই সম্ভবতঃ রাসূল (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জান্নাতবাসী হবে, যা দেখে আল্লাহ হাসবেন’।[14]

৭. দামেষ্কের খৃষ্টান শাসক হারেছ বিন আবু শিম্র আল-গাসসানীর নিকটে পত্র (الكتاب إلى الحارث بن أبي شمر الغساني صاحب دمشق) : সিরিয়ার বনু আসাদ বিন খোযায়মা গোত্রভুক্ত ছাহাবী শুজা বিন ওয়াহাব আল-আসাদীকে পত্রবাহক হিসাবে প্রেরণ করা হয়। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ :

بِسْمِ اللهِ الرّحْمَنِ الرّحِيْمِ مِنْ مُحَمّدٍ رَسُولِ اللهِ إلَى الْحَارِثِ بْنِ أَبِيْ شِمْرٍ سَلاَمٌ عَلَى مَنْ اتّبَعَ الْهُدَى وَآمَنَ بِاَللهِ وَصَدّقَ وَإِنّي أَدْعُوْكَ إلَى أَنْ تُؤْمِنَ بِاَللهِ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ يَبْقَى لَكَ مُلْكُك-

‘… আমি আপনাকে আহবান জানাচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন। যিনি একক, যার কোন শরীক নেই। তিনি আপনার রাজত্ব বাকী রাখবেন’।

পত্র পাঠে হারেছ সদম্ভে বলে উঠলেন,مَنْ يَّنْزِعُ مُلُكِيْ مِنِّيْ؟ أَنَا سَائِرٌ إِلَيْهِ ‘কে আমার রাজ্য ছিনিয়ে নেবে? আমি তার দিকে সৈন্য পরিচালনা করব’। তিনি ইসলাম কবুল করলেন না।

মানছূরপুরী বলেন, পত্র পাঠে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি মদীনায় হামলা করব’। পরে ঠান্ডা হয়ে পত্রবাহককে সসম্মানে বিদায় করেন। কিন্তু মুসলমান হননি।

৮. ওমানের সম্রাটের নিকটে পত্র (الكتاب إلى ملك عُمَان) : ওমানের খৃষ্টান সম্রাট জায়ফার ও তার ভাই আবদ-এর নামে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) পত্র লেখেন। পত্রবাহক ছিলেন হযরত  আমর ইবনুল আছ (রাঃ)। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ :

بِسْمِ اللهِ الرّحْمَنِ الرّحِيمِ مِنْ مُحَمّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ إلَى جَيْفَرَ وَعَبْدٍ ابْنَيْ الْجُلَنْدَى سَلاَمٌ عَلَى مَنْ اتّبَعَ الْهُدَى أَمّا بَعْدُ فَإِنّي أَدْعُوكُمَا بِدِعَايَةِ الْإِسْلاَمِ أَسْلِمَا تَسْلَمَا فَإِنّي رَسُولُ اللهِ إلَى النّاسِ كَافّةً لِأُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيّا وَيَحِقّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِينَ فَإِنّكُمَا إنْ أَقْرَرْتُمَا بِالْإِسْلاَمِ وَلّيْتُكُمَا وَإِنْ أَبَيْتُمَا أَنْ تُقِرّا بِالْإِسْلاَمِ فَإِنّ مُلْكَكُمَا زَائِلٌ عَنْكُمَا وَخَيْلِيْ تَحُلّ بِسَاحَتِكُمَا وَتَظْهَرُ نُبُوَّتِيْ عَلَى مُلْكِكُمَا-

‘… আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে জালান্দীর দুই পুত্র জায়ফার ও আবদের প্রতি। শান্তি বর্ষিত হৌক ঐ ব্যক্তির উপরে যে হেদায়াতের অনুসরণ করে। অতঃপর আমি আপনাদের দু’জনকে ইসলামের দিকে আহবান জানাচ্ছি। আপনারা ইসলাম কবুল করুন, নিরাপদ থাকুন। আমি মানবজাতির সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি, যাতে আমি জীবিতদের (জাহান্নামের) ভয় দেখাই এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। অতঃপর যদি আপনারা ইসলাম কবুল করেন, তবে আপনাদেরকেই আমি গভর্ণর নিযুক্ত করে দেব। আর যদি ইসলাম কবুলে অস্বীকার করেন, তাহ’লে আপনাদের রাজত্ব শেষ হয়ে যাবে এবং আমার ঘোড়া আপনাদের ময়দানে প্রবেশ করবে এবং আমার নবুঅত আপনাদের রাজ্যে বিজয়ী হবে’।

আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, পত্রটি নিয়ে আমি ওমান গেলাম এবং ছোট ভাই আবদের নিকটে আগে পেঁŠছলাম। কেননা ইনি ছিলেন অধিক দূরদর্শী ও নম্র স্বভাবের মানুষ। আমি তাকে বললাম যে, ‘আমি আপনার ও আপনার ভাইয়ের নিকটে আল্লাহর রাসূলের দূত হিসাবে এসেছি’। তিনি বললেন, বয়সে ও রাজত্বে ভাই আমার চেয়ে বড়। আমি আপনাকে তাঁর নিকটে পৌঁছে দিচ্ছি, যাতে তিনি আপনার পত্র পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বললেন, وما تدعو إليه؟ ‘কোন দিকে আপনি আমাদের দাওয়াত দিচ্ছেন’? আমি বললাম, আমি আল্লাহর দিকে আহবান জানাচ্ছি। যিনি একক, যার কোন শরীক নেই এবং তিনি ব্যতীত অন্য সকল উপাস্য হ’তে আপনি পৃথক হয়ে যাবেন এবং সাক্ষ্য দিবেন যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি বললেন, হে আমর! আপনি আপনার গোত্রের নেতার পুত্র। বলুন, আপনার পিতা কেমন আচরণ করেছেন? কেননা তাঁর মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় রয়েছে। আমি বললাম, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এমতাবস্থায় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেননি। কতই না ভাল হ’ত যদি তিনি ইসলাম কবুল করতেন ও রাসূলকে সত্য বলে জানতেন। আমিও তাঁর মতই ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে ইসলামের পথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি বললেন, কবে আপনি তাঁর অনুসারী হয়েছেন? আমি বললাম, অল্প কিছুদিন পূর্বে।[15]

তিনি বললেন, কোথায় আপনি ইসলাম কবুল করলেন? বললাম, নাজাশীর দরবারে এবং আমি তাকে এটাও বললাম যে, নাজাশীও মুসলমান হয়ে গেছেন। তিনি বললেন, তাঁর রাজত্বের ব্যাপারে তাঁর সম্প্রদায় কি আচরণ করল? আমি বললাম, তারা তাঁকে স্বপদে রেখেছে ও তাঁর অনুসারী (মুসলমান) হয়েছে। তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, বিশপ ও পাদ্রীগণও তাঁর অনুসারী হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আমর! আপনি কি বলছেন ভেবে-চিন্তে দেখুন। কেননা মিথ্যা বলার চাইতে নিকৃষ্ট স্বভাব মানুষের জন্য আর কিছুই নেই। আমি বললাম, আমি মিথ্যা বলিনি এবং আমাদের ধর্মেও এটা সিদ্ধ নয়। অতঃপর তিনি বললেন, আমার ধারণা হেরাক্বল নাজাশীর ইসলাম কবুলের খবর জানেন না। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি জানেন। তিনি বললেন, কিভাবে এটা আপনি বুঝলেন? আমি বললাম, নাজাশী ইতিপূর্বে তাঁকে খাজনা দিতেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পরে তিনি বললেন, وَاَللهِ لَوْ سَأَلَنِي دِرْهَمًا وَاحِدًا مَا أَعْطَيْتُهُ ‘আল্লাহর কসম! এখন যদি তিনি আমার নিকটে একটি দিরহামও চান, আমি তাকে দেব না’। হেরাক্বলের নিকটে এখবর পৌঁছে গেলে তার ভাই ‘নিয়াক্ব’ (نياق) তাকে বলেন, আপনি ঐ গোলামটাকে ছেড়ে দেবেন, যে আপনাকে খাজনা দেবে না। আবার আপনার ধর্ম ত্যাগ করে একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করবে? জবাবে হেরাক্বল বললেন, একজন লোক একটি ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং তা নিজের জন্য পসন্দ করেছে। এক্ষণে আমি তার কি করব? وَاَللهِ لَوْلاَ الضَّنَّ بِمُلْكِيْ لَصَنَعْتُ كَمَا صَنَعَ ‘আল্লাহর কসম! যদি আমার রাজত্বের খেয়াল না থাকত, তবে আমিও তাই করতাম, যা সে করেছে’। আবদ বললেন, ভেবে দেখুন আমর আপনি কি বলছেন? আমি বললাম, وَاَللهِ صَدَّقْتُكَ আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে সত্য বলছি’। আব্দ বললেন, এখন আপনি বলুন, তিনি কোন কোন বিষয়ে নির্দেশ দেন ও কোন কোন বিষয়ে নিষেধ করেন? আমি বললাম, তিনি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ দেন এবং তাঁর অবাধ্য হ’তে নিষেধ করেন। তিনি সৎকাজের ও আত্মীয়তা রক্ষার আদেশ দেন এবং যুলুম, সীমা লংঘন, ব্যভিচার, মদ্যপান, পাথর, মূর্তি ও ক্রুশ পূজা হ’তে নিষেধ করেন।

আব্দ বললেন, مَا أَحْسَنَ هَذَا الَّذِيْ يَدْعُو إلَيْهِ ‘ইনি কত সুন্দর বিষয়ের দিকেই না আহবান করেন! যদি আমার ভাই আমার অনুগামী হ’তেন, তাহ’লে আমরা দু’জনে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দরবারে গিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতাম ও তাঁকে সত্য বলে ঘোষণা করতাম’। কিন্তু আমার ভাই এ দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলে স্বীয় রাজত্বের জন্য অধিক ক্ষতিকর প্রমাণিত হবেন এবং আপাদ মস্তক গোনাহগার হবেন’। আমি বললাম, যদি তিনি ইসলাম কবুল করেন, তবে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁকে বাদশাহ হিসাবে বহাল রাখবেন। তিনি কেবল ধনীদের নিকট থেকে ছাদাক্বা গ্রহণ করবেন ও গরীবদের মধ্যে তা বণ্টন করবেন। তিনি বললেন, এটা খুবই সুন্দর আচরণ। তবে ছাদাক্বা কি জিনিষ? তখন আমি তাকে বিভিন্ন মাল-সম্পদের এমনকি উটের যাকাত সম্পর্কে বর্ণনা করলাম, যা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ফরয করেছেন। তিনি বললেন, হে আমর! আমাদের চতুষ্পদ জন্তু সমূহ থেকেও ছাদাক্বা নেওয়া হবে, যারা স্বাধীনভাবে ঘাস পাতা খেয়ে চরে বেড়ায়? আমি বললাম, হ্যঁা। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমার মনে হয় না যে, আমার  কওম  তাদের  রাজ্যের প্রশস্ততা ও লোক সংখ্যার আধিক্য সত্ত্বেও এটা মেনে নিবে’।

আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, আমি সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করলাম। তিনি তাঁর ভাইয়ের কাছে গেলেন ও আমার ব্যাপারে তাকে সবকিছু অবহিত করলেন। অতঃপর একদিন তিনি (অর্থাৎ সম্রাট) আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি ভিতরে প্রবেশ করলে তার প্রহরীগণ আমাকে দু’বাহু ধরে নিয়ে গেল। তিনি বললেন, ওকে ছেড়ে দাও। আমাকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল। আমি বসতে গেলাম। কিন্তু তারা আমাকে বসতে দিল না। আমি তখন সম্রাটের দিকে তাকালাম। তিনি বললেন, আপনার প্রয়োজন সম্পর্কে বলুন। তখন আমি মোহরাংকিত পত্রটি তাঁর নিকটে দিলাম। তিনি সীলমোহরটি ছিঁড়লেন অতঃপর পত্রটি পড়ে শেষ করলেন। অতঃপর সেটা তার ভাইয়ের হাতে দিলেন। তিনিও সেটা পাঠ করলেন। আমি দেখলাম যে, তার ভাই তার চাইতে অধিকতর কোমল হৃদয়ের।

অতঃপর সম্রাট আমাকে কুরায়েশদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, تَبِعُوْهُ إمَّا رَاغِبٌ فِي الدِّيْنِ وَإِمَّّا مَقْهُوْرٌ بِالسَّيْفِ ‘তারা তাঁর অনুগত হয়েছে কেউ দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, কেউ তরবারির দ্বারা পরাভূত হয়ে’। তিনি বললেন, তাঁর সাথে কারা আছেন? আমি বললাম, যারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন এবং অন্য সবকিছুর উপরে একে স্থান দিয়েছেন এবং আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়াতের সাথে সাথে নিজেদের জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করেছেন যে, তারা ইতিপূর্বে ভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলেন’। এতদঞ্চলে আপনি ব্যতীত আর কেউ (অর্থাৎ আর কোন সম্রাট তার দ্বীনে প্রবেশ করতে) বাকী আছেন বলে আমার জানা নেই। আজ যদি আপনি ইসলাম কবুল না করেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুগামী না হন, তাহ’লে অশ্বারোহী বাহিনী আপনাকে পদদলিত করবে এবং আপনার শস্যক্ষেত সমূহ ধ্বংস করবে। অতএব আপনি ইসলাম কবুল করুন। নিরাপদ থাকুন। আপনাকে আপনার জাতির উপরে তিনি গভর্ণর নিযুক্ত করবেন এবং আপনার এলাকায় অশ্বারোহী বা পদাতিক বাহিনী প্রবেশ করবে না। সম্রাট বললেন, دَعْنِيْ يَوْمِيْ هَذَا وَارْجِعْ إلَيَّ غَدًا ‘আজকের দিনটা আমাকে সময় দিন। কাল আপনি পুনরায় আসুন’।

সম্রাটের দরবার থেকে বেরিয়ে আমি পুনরায় তাঁর ভাইয়ের কাছে ফিরে গেলাম। তিনি বললেন, يَا عَمْرُو إنِّيْ لَأَرْجُو أَنْ يُسْلِمَ إنْ لَمْ يَضِنَّ بِمُلْكِهِ ‘হে আমর! আমি মনে করি সম্রাট মুসলমান হবেন, যদি তাঁর রাজত্বের কোন ক্ষতি না হয়’।

কথামত দ্বিতীয় দিন সকালে আমি দরবারে গেলাম। কিন্তু তিনি অনুমতি দিতে অস্বীকার করলেন। আমি তার ভাইয়ের কাছে ফিরে গিয়ে বিষয়টি বললাম। তখন তিনি আমাকে পৌঁছে দিলেন। তখন সম্রাট আমাকে বললেন, আমি আপনার আবেদনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছি। দেখুন: যদি আমি এমন এক ব্যক্তির নিকটে আমার রাজত্ব সমর্পণ করি, যার অশ্বারোহীদল এখনো এখানে পৌঁছেনি, তাহ’লে আমি ‘আরবদের দুর্বলতম ব্যক্তি’ (أَضْعَفُ الْعَرَبِ) হিসাবে পরিগণিত হব। আর যদি তার অশ্বারোহী দল এখানে পৌঁছে যায়, তাহ’লে এমন লড়াইয়ের সম্মুখীন তারা হবে, যা ইতিপূর্বে তারা কখনো হয়নি।’ একথা শুনে আমি বললাম, বেশ, আগামীকাল তাহ’লে আমি চলে যাচ্ছি (فَأَنَا خَارِجٌ غَدًا) ।

অতঃপর যখন তিনি আমার চলে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত  হ’লেন, তখন তার ভাইকে নিয়ে একান্তে বৈঠক করলেন। ভাই তাকে বললেন, مَا نَحْنُ فِيْمَا قَدْ ظَهَرَ عَلَيْهِ وَكُلُّ مَنْ أَرْسَلَ إلَيْهِ قَدْ أَجَابَهُ ‘আমরা তাদের তুলনায় কিছুই নই, যাদের উপরে তিনি বিজয়ী হয়েছেন এবং যার নিকটে তিনি দূত পাঠিয়েছেন, তিনি তা কবুল করে নিয়েছেন’।

পরদিন সকালে সম্রাট আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং সম্রাট ও তাঁর ভাই উভয়ে ইসলাম কবুল করলেন ও রাসূল (ছাঃ)-কে সত্য বলে ঘোষণা করলেন। অতঃপর তারা আমাকে ছাদাক্বা গ্রহণ ও এ বিষয়ে লোকদের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ঢালাও অনুমতি দিলেন এবং আমার বিরুদ্ধাচারীদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী হলেন। অতঃপর প্রজাদের অধিকাংশ মুসলমান হয়ে যায়’।[16]

মুবারকপুরী বলেন, উপরোক্ত ঘটনা পরম্পরায় একথা প্রমাণিত হয় যে, অন্যান্য রাজা-বাদশাদের নিকটে পত্র প্রেরণের অনেক পরে উক্ত দু’ভাইয়ের নিকটে পত্র প্রেরণ করা হয় এবং সর্বাধিক ধারণা মতে এটি মক্কা বিজয়ের পরের ঘটনা (والأغلب أنه كان بعد الفتح)।

এভাবে তৎকালীন বিশ্বের ক্ষমতাধর অধিকাংশ রাজা-বাদশাদের নিকটে পত্রের মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন। দু’একজন বাদে প্রায় সকলেই তাঁর দাওয়াত কবুল করেছিলেন। যারা অস্বীকার করেছিল, তাদের কাছেও রাসূল ও ইসলাম পরিচিতি লাভ করে। এভাবে ইসলাম সর্বজন পরিচিত বিশ্ব ধর্মে পরিণত হয়।

পরবর্তী অংশ: রাসূল (ছাঃ)-এর নবগঠিত মাদানী রাষ্ট্রে যাকাত আদায়কারী নিয়োগ

লেখক: ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালিব

[1] ইমাম বুখারী আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে উক্ত আংটি হযরত আবুবকর, পরে ওমর এবং তার পরে ওছমান (রাঃ) ব্যবহার করেন। কিন্তু তাঁর খেলাফতের শেষ দিকে এক সময় আংটিটি ‘আরীস’ (اريس) কুয়ায় পড়ে যায়। সাধ্যমত খুঁজেও তা আর পাওয়া যায়নি; বুখারী হা/৫৮৭৩ ‘আংটি খোদাই’ অনুচ্ছেদ।

[2] বায়হাক্বী ইবনু ইসহাক হ’তে।

[3] যাদুল মা‘আদ ৩/৬০৩।

[4] আহমাদ হা/১৭৪০; ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ১১৫, সনদ ছহীহ; আর-রাহীক্ব পৃঃ ৯৬।

[5] রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/১৫০।

[6] আর-রাহীক্ব ৩৫৩ পৃঃ।

[7] যাদুল মা‘আদ ৩/৬০৪।

[8] ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ৩৬২, সনদ যঈফ।

[9] পারস্য সম্রাট খসরু পারভেয স্বীয় পুত্রের হাতে নিহত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন কিসরা রোম সম্রাটের সাথে সন্ধি করেন এবং তাদের অধিকৃত এলাকাসমূহ ফেরৎ দেন। এ সময় তাদের ধারণা মতে হযরত ঈসাকে হত্যা করার কাজে ব্যবহৃত ক্রুশটিও ফেরৎ দেওয়া হয়। এই অভাবিত সন্ধিতে খুশী হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য রোম সম্রাট যেরুযালেম আসেন এবং ক্রুশটিকে স্বস্থানে রেখে দেন। ৭ম হিজরীতে (মোতাবেক ৬২৯ খৃষ্টাব্দে) এ ঘটনা ঘটে।

[10] (ক) ‘আবু কাবশার ছেলে’ বলতে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। এই উপনামটি রাসূলের দুধ পিতার অথবা তার দাদা বা নানা কারু ছিল। এটি একটি অপরিচিত নাম। আরবদের নিয়ম ছিল, কাউকে হীনভাবে প্রকাশ করতে চাইলে তার পূর্বপুরুষদের কোন অপরিচিত ব্যক্তির দিকে সম্বন্ধ করে বলা হ’ত। আবু সুফিয়ান সেটাই করেছেন। (খ) ‘বানুল আছফার’ বলতে রোমকদের বুঝানো হয়েছে। ‘আছফার’ অর্থ হলুদ। আর রোমকরা ছিল হলুদ রংয়ের।

[11] বুখারী হা/৭; মুসলিম হা/১৭৭৩।

[12] হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম প্রণীত যাদুল মা‘আদ ৩/৬০৫ পৃষ্ঠা হ’তে উদ্ধৃত উপরোক্ত পত্রটি সম্প্রতি ডঃ হামীদুল্লাহ (প্যারিস) কর্তৃক প্রচারিত মূল পত্রের ফটোকপির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। কেবলমাত্র একটি শব্দ ‘হুয়া’-এর পরিবর্তে ‘গায়রুহু’ ব্যতীত। অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লা হুয়া-র পরিবর্তে ফটোকপিতে ‘গায়রুহু’ রয়েছে। উভয়ের অর্থ একই।

[13] যাদুল মা‘আদ পৃঃ ৩/৬০৭-৬০৮।

[14] মুত্তাফাক্ব আলইহ, মিশকাত হা/৩৮০৭ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[15] আর-রাহীক্ব, পৃঃ ৩৪৭ ও টীকা পৃঃ ৩৪৮।

[16] যাদুল মা‘আদ ৩/৬০৬-৬০৭।


ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png