LIVE
Loading latest headlines...

সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৯

রাসূল (সা) এর সুন্নাহ অনুযায়ী সন্তানের বিয়ে ভাবনা

সোমবার, নভেম্বর ১১, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে



রাসূল (সা) এর সুন্নাহ অনুযায়ী সন্তানের বিয়ে ভাবনা



আল কুরআনে ইত্তেবার গুরুত্ব:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। কারণ, আল্লাহর রাসূল হল আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি দূত। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেন। রাসূলের মাধ্যমেই আল্লাহর আদেশ নিষেধ বাস্তবায়িত হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়তাই আল্লাহ মানুষকে তার প্রেরিত রাসূলের অনুকরণ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣ [الانعام: ١٥٣]
আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এ গুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”। [1]
ইমাম কুরতবী রহ. বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যাতে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূলের ইত্তেবা করার আদেশ দিয়েছেন এবং তার পথের ইত্তেবা ছাড়া অন্য সব পথ পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর আয়াতে সীরাতে মুস্তাকীম-এর অর্থ হল, আল্লাহর পথ যে পথের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে আহ্বান করেছেন। আর তা হল রাসূলের ইত্তেবা ও তার সুন্নাতের অনুসরণ। [2]
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ [النور : ٦٣]
অতএব যারা তার নির্দেশের বিরোধিতা করে, তারা যেন তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক্আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সুরা নূর – ৬৩]

আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারাইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের পরের সকল গুনাহ্ক্ষমা রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য হতে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সবসময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্ কসম! আমি আল্লাহ্কে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সলাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই মেয়েদেরকে বিয়েও করি। [] সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। [] [মুসলিম ১৬/, হাঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)


যুব সমাজের আদর্শ হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

সোমবার, নভেম্বর ১১, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

যুব সমাজের আদর্শ হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)
https://www.printfriendly.com/p/g/M8jvnv


মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেমন ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ, তেমনই ছিলেন একজন পরিপূর্ণ আদর্শ যুবক৷ পৃথিবীতে যত ভালো গুণ আছে এর সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর মধ্যে৷ এককথায়, তিনি ছিলেন সর্বগুণের আধার৷
রাসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সুরা কালাম-৪)।
ফরাসি খেক আলফ্রেড তার তুর্কির ইতিহাসের প্রথম খন্ডে লিখেছেন, ‘দার্শনিক, বক্তা, ধর্ম প্রচারক, যোদ্ধা, আইন রচয়িতা, ধর্মমতের ও প্রতিমাবিহীন ধর্ম পদ্ধতির সংস্থাপক মুহাম্মদ (সা.) কে মানুষের মহত্তের যতগুলো মাপকাঠি আছে তা দিয়ে মাপলে, কোনো লোক তাঁর চেয়ে মহত্ হতে পারবে না৷’
মহামানব মুহাম্মদ (সা.) যৌবনে পদার্পণ করে চরম নোংরা পরিবেশে লালিত-পালিত হয়েও নিজের যৌবনকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে সক্ষম হন৷ যে সমাজে অবৈধ প্রেম, কুদৃষ্টি বিনিময় ও ব্যভিচার যুবকদের জন্য ছিল গর্বের ব্যাপার, সে সমাজে এ অসাধারণ যুবক নিজের দৃষ্টিকেও কলুষিত হতে দেননি৷ যেখানে অলিগলিতে ছিল মদ তৈরির কারখানা এবং ঘরে ঘরে ছিল পানশালা, বসত মদ্যপানের জমজমাট কবিতা পাঠের আসর, সেখানে এ যুবক এক ফোঁটা মদও মুখে তোলেননি৷ যেখানে জুয়া জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল, সেখানে আপাদমস্তক পবিত্রতায় মন্ডিত এ যুবক (সা.) জুয়া স্পর্শও করেননি৷ নষ্ট গানবাজনা যেখানে সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেখানে তিনি এসব অপসংস্কৃতির ধারেকাছেও ঘেঁষেননি৷
তাই তার জীবনের শৈশব-কৈশোর, যৌবন-বার্ধক্য প্রতিটি মুহুর্তেই তিনি ছিলেন সমগ্র মানবতার জন্য উত্তম আদর্শ৷ এর সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, যারা আল্ল্নাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে (৩৩-সুরা আহযাব: ২১)৷
আজকের যুব সমাজ কিভাবে রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে একজন আলোকিত মানুষে পরিণত হতে পারে কিভাবে রাসূল (সাঃ) এর মতো একটি আদর্শ সমাজ বির্নিমাণে ভূমিকা রাখতে পারে তা তাঁর (সাঃ) এর জীবন থেকে আমরা আলোচনা করবো৷
১৷ ন্যায়ের পক্ষে হোক নিজের অবস্থান যৌবনেই :
তখন রাসূল (সাঃ) এর বয়স ছিলো মাত্র ২০ বছর৷ কুরাইশ ও কাইস গোত্রের মাঝে পুরানো শত্রুতার কারণে যুদ্ধ বাঁধে৷ এই যুদ্ধে কুরাইশগণ ন্যায়ের উপর ছিলো৷ মুহাম্মাদ (সা) কুরাইশদের পÿে যুদ্ধে যান৷ যুদ্ধে কুরাইশদের জয়ী হয়৷ এই যুদ্ধেরই নাম ফিজারের যুদ্ধ৷
এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন, আমি আমার চাচাগণের দিকে শত্রুদের ছুঁড়ে মারা তীর ও বর্শাগুলো কুড়িয়ে তাদের কাছে দিতাম৷ [1]
২৷ সমাজ সংস্কারে যুবকদের  দফা কর্মসূচী :
একটি শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠায় সে সমাজের অশান্তি দূর করা, জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা, দারিদ্র বিমোচনের উদ্যোগ নেওয়া, বিপদগ্রস্থদের সাহায্য করা এবং কোন অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় না দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে৷
রাসূল (সাঃ) যৌবনকালীন সময়ে যুদ্ধ ছিলো আরবদের নেশা৷ শত শত পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো৷ মানুষের কোন নিরাপত্তা ছিলো না৷ সবাই আতংকের মধ্যে দিন কাটাতো৷ আয যুবাইর ইবনু আবদিল মুত্তালিব ছিলেন একজন কল্যাণকামী ব্যক্তি৷ তিনি এই অবস্থার পরিবর্তনের লÿ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে মত বিনিময় করেন৷ অনুকুল সাড়াও পেলেন৷ শিগগিরই গড়ে উঠলো একটি সাংগঠন৷ নাম তার হিলফুল ফুদুল৷ মুহাম্মাদের (সা) বয়স তখন সতর বছর৷ তিনি সানন্দে এই সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত হন৷ এটি হয়ে ৫৯১ সালে যখন রাসূল (সাঃ) এর বয়স মাত্র ২১৷
হিলফুল ফুদুলের পাঁচ দফা –
১৷ আমরা দেশ থেকে অশান্তি দূর করবো৷
২৷ পথিকের জান-মালের হিফাজাত করবো৷
৩৷ অভাবগ্রস্থদের সাহায্য করবো৷
৪৷ মাযলুমের সাহায্য করবো৷
৫৷ কোন যালিমকে মক্কায় আশ্রয় দেবো না৷
অনেক দশক পরে হিলফুল ফুদুল গঠন বিষয়ে স্বয়ং রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন –
‘‘ আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন জুদ’আন-এর ঘরে সম্পাদিত অঙ্গীকারের সময় উপস্থিত ছিলাম৷ এর বদলে অনেকগুলো লাল উট অর্জন করাও আমি পছন্দ করব না৷ ইসলামেও যদি এ জাতীয় কোন অঙ্গীকারে আমাকে ডাকা হয় তবে অবশ্যই তাতে আমি সাড়া দেব৷
৩৷ বিশ্বস্থতাই যৌবনে করে জনপ্রিয়ঃ
হিলফুল ফুযূল গঠন ও তার পরপরই যবরদস্ত কুরায়েশ নেতার কাছ থেকে বহিরাগত মযলূমের হক আদায়ের ঘটনায় চারিদিকে তরুণ মুহাম্মাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল৷ সবার মুখে মুখে তিনি ‘আল-আমীন’ অর্থাত্ বিশ্বস্ত ও আমানদার বলে অভিহিত হ’তে থাকেন ৷ অল্পবয়স হওয়া সত্ত্বেও কেউ তার নাম ধরে ডাকতো না৷ সবাই শ্রদ্ধাভরে ‘আল-আমীন’ বলে ডাকত ৷ তাঁর বিশ্বস্ততার বিষয়ে প্রসিদ্ধ সীরাতগ্রন্থ ইবনু হিশাম এ বর্ণিত আছে- ‘‘আব্দুল্লাহ বিন আবুল হামসা বলেন, নবুঅত পূর্বকালে আমি রাসূল (ছাঃ) এর নিকট থেকে কিছু খরীদ করেছিলাম৷ সেখানে মূল্য পরিশোধে আমি কিছু বাকী রাখি৷ অতঃপর আমি তাকে ওয়াদা করি যে, এই স্থানেই আমি উক্ত মূল্য নিয়ে আসছি৷ পরে আমি ভুলে যাই৷ তিন দিন পরে স্মরণ হলে আমি এসে দেখি রাসূল (সাঃ) সেখানেই দাঁড়িয়ে আছেন৷ অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কষ্ট দিলে৷ তিন দিন ধরে আমি এখানে তোমার অপেক্ষায় আছি’
৪৷ সম্প্রতি  ঐক্য বজায় রাখার চর্চা যৌবনে শুরু :
পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত কাবা৷ একবার পাহাড়ের পানি এসে তার দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে৷ কুরাইশদের নতুনভাবে গড়ে তোলে কাবার দেয়াল৷ নির্মাণ কালে হাজরে আসওয়াদ কাবার কোণ থেকে সরিয়ে রাখা হয়৷ দেয়াল নির্মাণের পর পাথরটি আবার স্বাস্থানে বসাতে হবে৷
কুরাইশদের সব খান্দান এই মহান কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলো৷ এই নিয়ে শুরু হলো বিবাদ৷ যুদ্ধ বেঁধে যাবার উপক্রম৷ আবু উমাইয়াহ ইবনুল মুগীরাহ প্রস্তাব দেন যে, যেই ব্যক্তি সবার আগে প্রাঙ্গণে পৌঁছাবে তার উপর এই বিরোধ মীমাংসার ভার দেয়া হবে৷ সে যেই সিদ্ধান্তে দেবে তা সবাই মেনে নেবে৷ সকলে এই প্রস্তাব মেনে নেয়৷
অতপর দেখা গেলো সকলের ধীর পদে এগিয়ে আসছেন এক যুবক মুহাম্মদ (সা) সবাই ছুটে এলো তাঁর কাছে৷ ফায়সালার দায়িত্ব তুলে দিলো তাঁর হাতে৷ তিনি একটি চাদর আনার নির্দেশ দেন৷ চাদর এনে ছিলো হলো৷ মুহাম্মাদের (সা) নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ তুলে চাদরের মাঝখানে রাখলেন৷ হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করতে ইচ্ছুক প্রত্যেক খান্দানের এক একজন প্রতিনিধকে চাদর ধরে উপরে তুলতে বললেন৷ সকলে মিলে পাথরটি নিয়ে এলো কাবার দেয়ালের কাছে৷ মুহাম্মাদের (সা) চাদর থেকে পাথরটি তুলে যথাস্থানে বসিয়ে দিলেন৷ সবাই খুশী৷ এড়ানো গেলো একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ৷
এই ঘটনাটি ঘটেছিলো ৬০৫ সালে যখন রাসূল (সাঃ) এর বয়স ছিলো ৩৫৷ গবেষক কন্সট্যানটিন গোর্গুয়ের মতে ‘ মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে চিন্তা করেছে সেটা তারা সৃজনী ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়৷ তার মধ্যে যদি এ ধরনের ক্ষমতা না থাকত, তাহলে সে নবী হতে পারত না৷
৫৷ কর্ম  সততা চর্চার শুরু হোক যৌবনেইঃ
বহুদিন ধরে রাসূল (সাঃ) ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করেছেন৷ প্রতারনা, লোক-ঠকানো, নিজের স্বার্থ উদ্ধারে অন্যকে ব্যবহার তত্কালীন সমাজের নিত্যদিনের চিত্র৷ তাই বলে রাসূল (সাঃ) ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি নিজেকে৷ আবার সমাজের মূলধারার সাথে মিশেও যাননি৷ সমাজের বিবেকহীন চর্চায় লিপ্ত হননি, বরং তিনি মন্দ পরিবেশ থেকে খুঁজে নিয়েছেন ভালোকে৷ আল-সা’ইব নামক সত্ ব্যবসায়ীর সাথে সফল ব্যবসায়িক জুটি গড়ে তুলেছেন৷ নিজের পণ্যের খারাপ দিক তিনি অবলীলায় বলে দিতেন৷ এ ব্যাপারে তাঁর সুনাম ছিলো৷ দাম নিয়ে বাদানুবাদ করতেন না৷ রাসূল (সাঃ) আল-সা’ইরে কাছ থেকে শিখেছেন দুর্নীতির হাতছানি যে-সমাজে সুলভ, সেখানে কিভাবে সত্ভাবে জীবিকা উপার্জন করা যায়৷ [7]
৬৷ আদর্শ স্বামী হবার উপযুক্ত সময় এই যৌবনঃ
মাত্র ২৫ বছর যৌবনেই বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক মাধুর্যতার জন্য খাদিজা (রাঃ) সাথে রাসূল (সাঃ) এর বিয়ে হয়৷ খাদিজা (রাঃ) আনহা বলেছিলেন, তিনি তাঁকে ভালোবাসেন তাঁর (রাসূল (সাঃ) এর দয়া, সততা ও সত্যবাদিতার জন্য৷ অথচ রাসূল (সাঃ) স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব আর স্ত্রীর অধিকার থেকে তিনি খাদিজার সাথে আচরণ করেননি বরং ব্যবহার ছিলো নিজের পূণ্যগুণে৷ এই মমতাময় বৈবাহিক সম্পর্কের ইংগিতেই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে –
(২-সুরা বাক্বারা: ২৩৭) পারস্পরিক ব্যাপারে তোমরা উদারতা ও সহৃদয়তার নীতি ভুলে যেয়ো না ।
৭৷ যৌবনেই হোক আদর্শ বন্ধুত্ব নির্বাচনঃ
তত্কালীন আরব সমাজেও আজকের মতো বিদেশী, মূর্তিপূজারী ও খ্রিস্টান সব মতের মানুষ ছিলো৷ রাসূল (সাঃ) যুবক বয়সে বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছেন সুশিক্ষিত ও শ্রদ্ধাবান লোকদের৷ যৌবনে রাসূল (সাঃ এর ৩জন বন্ধুর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যেমন-
আবু বকর আসসিদ্দীকঃ যিনি কখনো মন পান করেননি, মূর্তিপূজা করেননি৷ তারপরও সামাজিক ছিলেন ছিলেন জনপ্রিয় মানুষ৷
হাকিম ইবন্‌ হিযামঃ বুদ্ধিমান ও দানশীল নেতা যিনি হাজীদের মেহমানদারি করতেন৷
জাবরা আররুমিঃ সুশিক্ষিত, বহুভাষী, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের সম্পর্কে ছিলো তার অগাধ জ্ঞান৷
মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) [৫৭০-৬৩২ খ্রি.] এক মহামানবের জীবন৷ যিনি সমগ্র মানবতার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন রহমত হিসেবে৷ যার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা৷ তা শিশু, যুবক, প্রবীণ সবার জন্য৷ আর রাসূল (সাঃ) নিজেই বলেছেন তাকে প্রেরণ করা হয়েছে শিক্ষক হিসেবে৷ তাই আজকের যুব সমাজ যদি তাদের আদর্শ হিসেবে রাসূল (সাঃ) এর যৌবনের আদর্শ লালন করে তবে তা প্রত্যেক যুবকের জন্য সম্মাণ ও গৌরবের৷ আর এই আদর্শের বলিয়ান যুব সমাজই পারবে একদিন এই বাংলাদেশকে মদীনার ইসলামী সমাজের মতো একটি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে৷
– মোঃ আতিকুর রহমান

[1]  সিরাত ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৭৫ (ইফাবা)।
[2] বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সাঃ), ড. হিশাম আল-আওয়াদী, পৃষ্ঠা- ৮৬-৮৭
[3] সিরাত ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৩৮ (ইফাবা)।
[4] (সীরাত ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৯৮ (আবু দাউদ)
[5] সিরাত ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৮৪-১৮৫ (ইফাবা)।
[6] বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সাঃ), ড. হিশাম আল-আওয়াদী, পৃষ্ঠা- ৮৮
[7] বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সাঃ), ড. হিশাম আল-আওয়াদী, পৃষ্ঠা- ৯০
[8] বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সাঃ), ড. হিশাম আল-আওয়াদী, পৃষ্ঠা- ৯৩



নামাজ শিক্ষা- (নামাজের সময়সূচি)

সোমবার, নভেম্বর ১১, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

নামাজ ফরজ হওয়ার একটি শর্ত হলো নামাজের সময় হওয়া। প্রতিটি মুমিন মুসলমানের ওপর সময়তো নামাজ আদায় করা ফরজ। আমাদের পবিত্র কোরআনুল কারীমে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন,
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنْتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا
অর্থ : অতপর যখন তোমরা সালাত আদায় করে ফেলবে, তখন আল্লাহকে (সর্বাস্থায়) স্মরণ করবে- দাঁড়িয়ে বসে ও শোওয়া অবস্থায়ও। অতঃপর যখন (শত্রুর দিক থেকে) নিরাপদবোধ করবে, তখন সালাত যথারীতি আদায় করবে। নিশ্চয়ই সালাত মুসলিমদের এক অবশ্য পালনীয় (ফরজ) কাজ নির্ধারিত সময়ে। (সূরা: আন নিসা, আয়াত: ১০৩)
ইসলামের প্রাক যুগে ঘড়ির ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না সময় নির্ধারণ করার কোনো যন্ত্র। তারা সূর্য চাঁদ ও দিনের আলোর অবস্থা দেখে সময় বুঝে নিতেন। হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সূর্য চাঁদ ও দিনের ওপর ভিত্তি করে নামাজের সময় নির্ধারণ করে দিলেন। ঋতুর পরিবর্তন হলে নামাজের সময়ের পরিবর্তনের বিষয়টিও সুন্দর করে বর্ণনা করে দিলেন।

সুচিপত্রঃ


আজকের পৃথিবীতে নামাজের সময় নির্ধারণ করার যত যন্ত্র আছে, সবগুলো ওই হাদিসের বর্ণনা দ্বারাকে সামনে রেখে তৈরি হলো। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি নামাজের ওয়াক্ত পৃথকভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের পাতা থেকে সেই সময় জানতে পারি।

ফজরের নামাজের সময়ঃ

সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়ে সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। ফজরের এই সময়টুকু দুই ভাগে ভাগ করা যায়। শরিয়তের পরিভাষায় প্রথম ভাগকে ‘গালাস’ আর দ্বিতীয় ভাগকে ‘ইসফার’ বলে। হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় দ্বিতীয় অংশ তথা ইসফারে ফজরের নামাজ আদায় করতেন। ফিকাহবিদগণ বলেন- প্রথম ভাগ তথা ‘গালাস’ এর সময় মহিলাদের আর দ্বিতীয় ভাগ তথা ‘ইসফার’ এর পুরুষদের ফজর নামাজ আদায় করা উত্তম। (সহিত বুখারি, হাদিস নং ৫১৪, দুররুল মুখতার ০১/২৬৩, আল বাহরুর রায়েক ০১/২৪৪)

ফজরের নামাজের সময়ের হাদিসঃ

হাদিস নং ০১
عن أبي بُرزَة رضي الله عنه قال كان النبي صلي الله عليه وسلم يُصَلّْى الصُّبْحَ وأحدُنا يُعْرفُ جَلِيْسَه ويَقْرَأُ فيها مَا بَين السِّتين ألي المائة، رواه البخاري والمسلم
অর্থ : হজরত আবু বারযাহ রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজর নামাজ আদায় করতেন; যখন আমাদের একজন তার পাশের লোকটিকে চিনতে পারতো আর এই নামাজে তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫১৪।
হাদিস নং ০২
عن رافع ابن خديج رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : أسفرو بالفجر، فإنه أعظم للأجر، رواه البخاري والمسلم
অর্থ : হজরত রাফি ইবনে খাদিজ রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তোমরা ফজরের নামাজ ফর্সা (ইসফার) করে আদায় করো, কেননা এর সওয়াব অনেক বেশি। (তিরমিযি ০১/২২)

যোহরের নামাজের সময়ঃ

ঠিক দ্বিপ্রহরের পর সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর যোহরের নামাজের সময় শুরু হয়। প্রত্যেক জিনিসের ছায়ায়ে আছলি তথা মূল ছায়া ব্যতীত ওই জিনিসের দ্বিগুণ ছায়া হওয়া পর্যন্ত যোহরের নামাজের সময় বাকী থাকে। এই সময় নির্ধারণ করার একটি সহজ পদ্ধতি হলো মাটিতে কোনো লাঠি পুঁতে রেখে তার ছায়ার দিকে লক্ষ করা। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বিগুণ হবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত যোহরের সময় থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫১১, শরহে বেকায়া ০১/২৮)

যোহরের নামাজের সময়ের হাদিস

হাদিস নং ০১
عن أبي بُرزَة رضي الله عنه قال كان النبي صلي الله عليه وسلم يُصَلّْى الصُّبْحَ وأحدُنا يُعْرفُ جَلِيْسَه ويَقْرَأُ فيها مَا بَين السِّتين ألي المائة، رواه البخاري والمسلم
অর্থ : হজরত আনাস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজের নিয়ম ছিল : গরমের মৌসুমে গরম তীব্র হয়ে হ্রাস পাওয়ার পর যোহরের নামাজ আদায় করতেন। শীত কালে আগে আগে আদায় করতেন। (নাসায়ি শরিফ ০১/৫৮)
হাদিস নং ০২
عن رافع ابن خديج رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : أسفرو بالفجر، فإنه أعظم للأجر، رواه البخاري والمسلم
অর্থ : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাফি রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহুকে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, হ্যাঁ, আমি এ সম্পর্কে তোমাকে বলবো। তুমি যোহরের নামাজ আদায় করবে যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়। তারপর ছায়া যখন তোমার দ্বিগুণ হবে তখন আসরের নামাজ আদায় করবে। (মুয়াত্ত মালেক ০৩)

আসরের নামাজের সময়ঃ

যোহরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আসরের নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রত্যেক জিনিসের মূল ছায়া বাদ দিয়ে যখন ছায়া দ্বিগুণ হয়, তখনই আসরের নামাজের সময় শুরু হয়ে যায়। অতপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসরের নামাজের সময় থাকে। তবে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর আসরের নামাজ আদায় করা মাকরুহ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, ০১/৫১, দুররুল মুখতার ০১/২৬৪)

আসরের নামাজের সময়ের হাদিসঃ

হাদিস নং ০১
عن عبد الله بن رافع أنه سأل أبا هُرَيْرَةَ رَضَي اللهُ عنه عن وَقْتِ الصلاةِ، فَقَالَ اَبُوْ هُرَيرَةَ : أَنا أخْبِرُكَ، صلِّ الظهرَ اذا كان ظلك مثلك، والعصرَ اذا كان ظلُّكَ مِثْلَيْكَ،
অর্থ : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাফি রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহুকে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহু বলেন, হ্যাঁ, আমি এ সম্পর্কে তোমাকে বলবো। তুমি যোহরের নামাজ আদায় করবে যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়। তারপর ছায়া যখন তোমার দ্বিগুণ হবে তখন আসরের নামাজ আদায় করবে। (মুয়াত্ত মালেক ০৩)
হাদিস নং ০২
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال : كُنا نُصَلّي العَصْرَ ثُمَّ يَخْرُجُ الإنْسَانُ إلي بَنِي عَمَرِو بْنَ عَوْفِ فَيَجِدُهُمْ يُصلُّوْنَ العصرَ
অর্থ : হজরত আনাস ইবনে মালিক রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আসরের নামাজ আদায় করতাম। নামাজের পর লোকেরা আমর ইবনে আউফ গোত্রের মহল্লায় গিয়ে তাদেরকে নামাজ আদায় করা অবস্থায় পেতো। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫২১)

মাগরিবের নামাজের সময়ঃ

সূর্য ডোবার পর থেকে মাগরিবের সময় শুরু। পশ্চিমাকাশে লাল রং দৃষ্টিগোচর হওয়া পর্যন্ত (সোয়া একঘণ্ট পর্যন্ত) সময় বাকি থাকে। মাগরিবের নামাজ বিলম্ব করা মাকরুহ।
বিঃদ্রঃ মাগরিবের নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করে নেওয়া উত্তম। সাধারণভাবে দুই রাকাত নামাজ পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে, বিনা ওজরে এর থেকে বেশি সময় ব্যয় করা মাকরুহ। (ইমদাদুল ফতোয়া ০১/১৫১, ফাতোয়ায়ে শামি ০১/৩৬৯)

মাগরিবের নামাজের সময়ের হাদিস:

হাদিস নং ০১
عن سلمة رضي الله عنه قال : كنا نصلي مع النبي صلى الله عليه و سلم المغرب إذا توارت بالحجاب
অর্থ : হজরত সালামা রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সূর্য পর্দার আড়াল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৩৪)
হাদিস নং ০২
رافع بن خديج رضي الله عنه قال : كنا نصلي مع النبي صلى الله عليه و سلم فيَنْصَرِفُ أحدُنا وأنه لَيُبْصْرُ موَاقِعُ نبَلِه
অর্থ : হজরত রাফি ইবনে খাদিজ রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাগরিবের নামাজ আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৩২)

এশার নামাজের সময়ঃ

মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পরই এশার নামাজের সময় শুরু হয়। অতপর সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত এশার নামাজের সময় বাকি থাকে। তবে রাতের একতৃতীয়াংশ দেরি করে এশার নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। আর বিনা ওযরে অর্ধ রাতের পর এশার নামাজ আদায় করা মাকরুহ। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম ০২/৫২, আহসানুল ফতোয়া ০২/১৩০, আল বাহরুর রায়েক ০১/২৪৬)

এশার নামাজের সময় হাদিস

হাদিস নং- ০১
عَنْ أبِيْ هريرة رضي الله عنه قال قال ورسول الله صلي الله عليه وسلم : لوْلاَ أن أشقَّ عَلي أمَّتِيْ لأمَرْتُهُم أي يُؤخِّرُوْ العْشَاءَ إلي ثُلُثِ اللَيْلِ أوْ نِصْفَهُ
অর্থ : হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যদি উম্মতের কষ্ট হবে’ আমার মাঝে এই আশঙ্কা না থাকতো, তাহলে আমি অবশ্যই তাদেরকে ইশার নামাজ রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে নির্দেশ দিতাম (তিরমিযি ০১/২৩)
হাদিস নং- ০১
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو – وَهُوَ ابْنُ الْحَسَنِ بْنِ عَلِىِّ بْنِ أَبِى طَالِبٍ – قَالَ – سَأَلْنَا جَابِرًا عَنْ وَقْتِ صَلاَةِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ كَانَ يُصَلِّى الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوا أَخَّرَ
অর্থ : হজরত মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হাসান ইবনে আলী রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা জাবির রাযিআল্লাহ আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম। তিনি বললেন মধ্যাহ্ন গড়ালেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামাজ আদায় করতেন, সূর্য সতেজ থাকতেই আসরের নামাজ আদায় করতেন, সূর্য অস্ত গেলেই মাগরিবের নামাজ আদায় করতেন, লোক বেশি হলে এশার নামাজ আগে আগে আদায় করতেন আর কম হলে বিলম্বে আদায় করতেন। (সহিহ বুখারি হাদিস নং ৫৮, আবু দাউদ শরিফ হাদিস নং ৩৯৭)
প্রিয় পাঠক, যদি আমাদের সামনে হাদিসে বর্ণিত সময়গুলো থাকে, তাহলে কখনো সময় নির্ধারক যন্ত্র না থাকলেও সঠিক সময়ের নামাজ আদায় করতে পারবো। আর একজন মুমিন বান্দার জন্য অবশ্যক হলো নামাজের সময় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।



নামাজ শিক্ষা-(নামাজ পড়ার নিয়ম-২)

সোমবার, নভেম্বর ১১, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। আর ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ বা সালাত । কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা নামাজের হিসাব নিবেন।  নামাজ একটি ফরজ (আবশ্যিক) ইবাদত। রাসূল সা. বলেছেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ যারা সুন্দরভাবে আদায় করে আল্লাহ তা’আলা তাকে ৫টি বিশেষ পুরুস্কার দান করে সম্মানিত করবেন-
  • (১) তার থেকে মৃত্যুও কষ্ট দূর করে দিবেন।
  • (২) কবরের শাস্তি থেকে তাকে মাফ করে দিবেন।
  • (৩) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে ডান হাতে আমালনামা দান করবেন।
  • (৪) তড়িত গতিতে ফুলসিরাত পার করবেন।
  • (৫) বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন ।
অতএব সঠিকভাবে নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা শিখে নেওয়া জরুরী । রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ তা’আলা জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন।

সুচিপত্রঃ

ফরজ নামাজ

দৈনন্দি পাঁচ – ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ ।
  • (১) ফজর – দুই রকাত ফরজ।
  • (২) জোহর – চার রাকাত ফরজ। (শুক্রবার জোহরের পরিবর্তে জুমার দুই রাত ফরজ পড়তে হয়)
  • (৩) আছর – চার রাকাত ফরজ।
  • (৪) মাগরিব – তিন রাকাত ফরজ।
  • (৫) এশা – চার রাকাত ফরজ ।
* সুন্নত ও ওয়াজিব নামাজ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

নামাজের ওয়াক্ত

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয়, হাদীসে পাকে তার সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা এসেছে। এসকল হাদীসের আলোকে বর্তমানে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই নামাজের সময় সূচীর চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরী হয়েছে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয় এসকল ক্যালেন্ডার থেকে আমরা যেনে নিতে পারি ।
ফরয নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয়?
পবিত্রতা অর্জ করে নামাজের নিয়্যত করবে। আপনি কোন নামাজ পড়ছেন মনে মনে এতটুকু থাকাই নিয়্যতের জন্য যথেষ্ট। তবে তার সাথে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। তারপর ক্বিবলামুখি হয়ে দাড়াবে, দুই পায়ের গুড়ালি বরাবর থাকবে এবং দুই পায়ের মাঝে চার আংগুল পরিমাণ ফাকা থাকবে। তারপর তাকবীরে তাহ্রীমা অর্থাৎঃ-
الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবে।, এ ক্ষেত্রে হাতের আংগুলগুলো সাভাবিক অবস্থায় ক্বিবলা মুখি থাকবে আর উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের লতি বরাবর থাকবে। তারপর হাত নামিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বরা হালকা বানিয়ে বাম হাতের কবজি ধরবে আর বাকী আঙ্গুলগুলো বাম হাতের উপর রাখবে। অতঃপর নাভির নিচে বাধবে। দাড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে সেজদার জায়গায়। তারপর ছানা পড়বে…..
سبحانڪ اللهم وبحمدڪ وتبارڪ السمڪ وتعالى جدڪ ولا اله غي
উচ্চারণঃ সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবিহামদিকা অতাবারকাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা অলাইলাহা গইরুকা
অর্থঃ হে আল্লাহ পবিত্রতা তোমোর , প্রশংসা তোমার, তোমার নাম সর্বউচ্চে, তোমার শক্তি মহান, তুমি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই।
তারপর اعوذ بالله من الشيطن الرجيم (উচ্চারণঃ আয়ুজু বিল্লাহি মিনাশ্শাই ত্বর্নিরজীম। অর্থঃ বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) পড়বে এবং بسم الله الرحمن الرحيم (উচ্চারণঃ বিসমিল্লার্হিরহমার্নিরহীম। অর্থঃ পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি) পড়বে।
তারপর সূরা ফাতেহা الحمد لله رب العلمين الرحمن الرحيم مالڪ يوم الدين اياڪ نعبد و اياڪ نستعين اهدنا الصراط المستقيم صراط الذين انعمت عليهم غيرالمغصوب غليهم و لا الضلين পড়বে।
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আররহমানির রহীম মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, ইয়্যাকানা’বুদু অইয়্যাকানাসতাইন। ইহদিনাছছিরতল মুসতাকীম। ছিরতল্লাযিনা আনআ’মতা আলাইহিম গইরিল মাগধুবি আলাইহিম। অলাদ্দল্লিন।
অর্থঃ
  • (১) যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা।
  • (২) যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
  • (৩) যিনি বিচার দিনের মালিক।
  • (৪) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র সাহায্য প্রার্থনা করি।
  • (৫) আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
  • (৬) সে সমস্ত লোকদের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ।
  • (৭) তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে।
তারপর কোআনে কারীম থেকে যে কোন একটি সূরা মিলাবে। যেমন ফীল।
الم تر ڪيف فعل ربڪ باصحب الفيل الم يجعل ڪيد هم في تضليل و ارسل عليهم طيرا ابابيل ترميهم بحجارة من سجيل فجعلهم ڪعصف مآ ڪول
উচ্চারণঃ আলামতার কাইফা ফায়ালা রাব্বুকা বিআছহাবিল ফীল । আলাম ইয়াজ আল কাইদাহুম ফী তাদলীল। অআরসালা আলাইহিম তাইরান আবাবিীল। তারমীহিম বিহিজারতিম মিনসিজ্জীল। ফাজাআলাহুম কাআসফিম মাকূল।
অর্থঃ (১) আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন ? (২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি ? (৩) তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী, (৪) যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করেছিল। (৫) অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।
তারপর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে, হাতের আংগুলগুলো ফাকা রেখে দুই হাত দ্বারা উভয় হাটুকে ভালভাবে আকড়ে ধরবে। এবং মাথা, পিঠ ও মাজা সমান থাকবে কোন উঁচু নিচু থাকবে না। রুকুতে থাকা অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে। তারপর রুকুর তাসবীহ পড়বে।
سبحان ربي العظيم উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম। অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালক পবিত্র।
তিন বার পড়বে। তবে পাঁচ বার , সাত বারও পড়তে পারবে। তারপর سمع الله لمن حمده
(উচ্চারণঃ সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদাহ ।
অর্থঃ যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তার প্রশংসা শুনেন।) বলে রুকু থেকে সুজা হয়ে দাড়াবে। তারপর الله اڪبر বলে সেজদায় যাবে ।
সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাতে হাটু ধরে সর্বপ্রথম উভয় হাটু একত্রে জমীনে রাখবে। তারপর হাতের আঙ্গুলগুলো মিলানো অবস্থায় দুই হাত জমীনে একত্রে রাখবে। এবং চেহারার চওড়া অনুযায়ী দুই হাতের মাঝে ফাঁকা রাখবে।তারপর দুই হাতের মাঝে সেজদা করবে প্রথমে নাক তারপর কপাল রাখবে উভয় হাতের শধ্যখানে বৃদ্ধ আঙ্গুলদ্বয়ের বরাবরে নাক রাখবে ।
নজর নাকের উপর রাখবে । পুরুষের পেট রান থেকে বাহু পাজর থেকে হাতের কনুই জমীন থেকে পৃথক রাখবে। পায়ের আঙ্গুল সমূহকে কিবলামুখী করে রাখবে এবং দুই পায়ে গুড়ালি মিলিয়ে না রেখে বরং টাকনু কাছা কাছি রাখবে। যথা সম্ভব পায়ের আঙ্গুলগুলো জমীনের সাথে চেপে ধরে আঙ্গুলের অগ্রভাগ ক্বিবলার দিকে রাখবে। সেজদার মধ্যে তিন বার سبحان ربي الاعلى পড়বে। তবে পাঁচ বার , সাত বারও পড়তে পারবে। (উচ্চারণঃ সুবহানা রব্বিয়াল আয়লা । অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালক মহা পবিত্র।) তিনবার সাতবারও পড়তে পারবে।
তারপর الله اڪبر বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। প্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠাবে। তারপর বাম পা জমীনে বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর ডান পা দার করিয়ে রাখবে ।
পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে জমীনে রাখবে। দুই হাত উভয় রানের উপর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁকা রেখে আঙ্গুলের মাথার অগ্রভাগ হাটুর কিনারা বরাবর রাখবে।
তারপর اللهم اغفرلى ارحمني وارزقني واهدنى পড়বে। তারপর الله اڪبر বলে দ্বিতীয় সেজদা করবে। দ্বিতীয় সেজদা শেষ করে আবার الله اڪبر বলে সেজদা থেকে সুজা দাড়িয়ে যাবে।
তারপর দ্বিতীয় রাকাতেও ঠিক প্রথম রাকাতের মতই । প্রথম সূরা ফাতেমা পড়বে । তারপর بسم الله الرحمن الرحيم পড়ে যে কোন একটি সূরা মিলাবে। যেমন সূরা ফীল
لايلف قريش الفهم رحلة الشتاء والصيف فليعبدوا رب هذا البيت الذي اطعمهم من جوع و امنهم من خوف
উচ্চারণঃ লইিলাফী কুরাশনি ইলাফিহিম রিহলাতাশশিতাই অছছইফ ফালইয়াবদু রব্বা হাজাল বাইত আল্লাজি আতআমাহুম মিনজু অআমানাহুম মিন খউফ
অর্থঃ (১) কোরায়েশের আসক্তির কারণে, ৯২) আসক্তির কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সফরের। (৩) অতএব তারা যেন এবাদত করে এই ঘরের পালনকর্তার । (৪) যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি থেকে তাদেরকে রিাপদ করেছেন।
তারপর প্রথম রাকাতের মতই রুকু সেজদা করবে। দুটি সেজদা শেষ করে দুই সেজদার মাঝে বসার ন্যায় বসবে এবং দুই হাত রানের উপর হাটু বরারব রাখবে । আর দৃষ্টি থাকবে কোলের দিকে।
তারপর তাশাহ্হুদ পড়বে।
التحيات لله و الصلوات والطيبات السلام عليڪ ايها النبي ورحمة الله وبرڪاته السلام علينا وعلي عباد الله الصلحين اشهد الا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله
উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি অছ্ছলাওয়াতু অত্তয়্যিাবাতু আস্সালা মু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু অরহমাতুল্লাহি অবারকাতুহু আস্সালামু আলানা অআলা ইবাদিল্লাহিছ্ছলিহীন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরসূলুহু। অর্থঃ “মৌখিকভাবে পেশকৃত যাবতীয় সম্মান ও অভিবাদন, শরীরিক ও আর্থিক সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিবেদিত । হে নবী! আপনার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি রহমত ও বর্কত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দার প্রতি বর্ষিত হোক । আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং এও সাক্ষ দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।”
* তাশাহ্হুদ পড়ার সময় ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানাবে এবং اشهد الا اله বলার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি উঠাবে الا الله বলার সময় নামিয়ে ফেলবে। বাকী দুটি আঙ্গুল তালুর সাথে মিলিয়ে রাখবে।
নামাজ যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদে ইব্রাহীম পড়বে।
اللهم صل علي محمد و علي ال محمد ڪما صليت علي ابراهيم و علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيج اللهم بارڪ محمد و علي ال محمد ڪما بارڪت علي ابراهيم ر علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيد
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ শান্তি বর্ষণ কর মুহাম্মদ সা. এর উপর এবং মুহাম্মদ সা. এর পরিবার বর্গের উপর । যেমনি ভাবে শান্তি বর্ষণ করেছ ইব্রাহীম আ. এর উপর এবং ইব্রাহীম আ. এর পরিবার বর্গের উপর। নিশ্চই তুমি প্রশংসিত ও হে আল্লাহ বরকত দান কর মুহাম্মদ সা. এর উপর এবং মুহাম্মদ সা. এর পরিবার পরিজনের উপর। যেমনি বরকত দান করেছ ইব্রাহীম আ. এর উপর এবং ইব্রাহীম আ. এর পরিবার পরিজনের উপর। নিশ্চই তুমি প্রশংসিত।
তারপর দোয়ায়ে মাছুরা পড়বে।
اللهم اني ظلمت نفسي ظلما ڪثيرا و لا يغفر الذنوب الا انت فاغفرلي مغفرة من عندڪ انڪ انت الغفور الرحيم
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফছি জুলমান কাসিরান অলা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরতাম মিন ইন্দিকা ইন্নাকা আন্তাল গফুরুররহীম।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। তুমি ব্যতীত কেউ ক্ষমাশীল নেই অতএব তোমার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
তারপর السلام عليڪم ورحمة الله ( আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ) বলে সালাম ফিরাবে । প্রথমে ডান পাশে তারপর বাম পাশে। সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি থাকবে কাঁেধর দিকে ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় ডন কাঁধের দিকে আর বাম পাশে ফিরানোর বাম কাঁধের দিকে। ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় সালামের দ্বারা নিয়্যত থাকবে ডান পাশের ফেরেশÍাদের আর বাম পাশে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত থাকবে বামপাশের ফেরেশÍাদের ।
আর যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয়, তাহলে দুই রাকাতের পর যে বৈঠক হবে তাহবে প্রথম বৈঠক। এই প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবে আর তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়বে কিন্তু কোন সূরা মিলাবে না। তৃতীয় রাকাত শেষ করে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পরে সালাম ফিরাবে।
নামাজ যদি চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়বে তারপর আরো দুই রাকাত পড়বে।আর এই দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়বে, কোন সূরা মিলাবে না। চতুর্থ রাকাতের পরে শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবে।

সুন্নত নামাজ

  • (১) ফজরের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
  • (২) জোহরের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজআদায় করা সুন্নত।
  • (৩) জুমার ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
  • (৪) মাগরিবের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
  • (৫) এশার ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
এসকল সুন্নত নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। কোন ধরনের ওযর ছাড়া এসুন্নতগুলো তরক কারী গুনাহগার হবে।

সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম

সুন্নত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা মিলাতে হবে আর বাকী সকল নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই। সুন্নত নামাজ যদি সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা ও নফল হয় এবং চার রাকাত বিশিষ্ট হয় , তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদ শরীফ ও দু‘আয়ে মাছুরা পড়াও উত্তম ।
জামা আতের সাথে নামাজ আদায় করলে মুক্তাদিগনের করণীয়
ইমামের পেছনে যারা ইক্তেদা করে তাদেরকে মুক্তাদি বলে । মুক্তাদিগন ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলার পর তাকবীর বলে কান বরাবর হাত উঠাবে । তারপর হাত বাঁধবে । তারপর ছানা পড়ে চুপ করে ইমাম ক্বেরাত একাগ্র চিত্তে শুনতে থাকবে আর যদি ইমামের ক্বেরাত পড়া স্পষ্ট শোনা  না যায় তাহলে আল্লাহ পাকের প্রতি মনোনিবেশ করার চেষ্টা করবে। ইমাম যখন রুকু সেজদার জন্য তাকবীর বলবে মুক্তাদিগনও অনুচ্চ আওয়াজে তাকবীর বলে ইমামসাহেবকে অনুরণ করবে । ইমাম সাহেব যখন সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে উঠবে মুক্তাগণ তখন রাব্বানা লাকালহামদু বলে ইমামের পরে রুকু থেকে সুজা হয়ে দাড়াবে
প্রত্যেক রুকু ও সেজদায় মুক্তাদিগণও রুকু-সেজদার তাসবীহ পড়বে । এবং প্রথম বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়বে এবং দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়বে । তারপর ইমামের সঙ্গে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।

ওয়াজিব নামাজ

বিতর ও দুই ঈদের নামাজ হলো ওয়াজিব।
বিতরের নামাজ তিন রাকাত। বিতরের নামাজের ওয়াক্ত হলো, এশার নামজ আদায় করার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত । এ ওয়াক্তের মধ্যে যে কোন সময় বিতরের নামাজ আদায় করতে হবে। যদি শেষ রাতে জাগার অভ্যাস থাকে তাহলে শেষ রাতে বিতরের নামাজ আদায় করা উত্তম । আর জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস না থাকলে ঘুমানোর আগেই বিতরের নামাজ আদায় করে নিবে ।

বিতরের নামাজ যেভাবে পড়তে হয়

বিতরের নামাজের তিনো রাকাতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা মিলানো ফরজ। আর তৃতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর الله اڪبر বলে কান বরাবর হাত উঠিয়ে আবার নাভীর নিচে হাত বেধে দোয়ায়ে কুনুত পড়বে।
اللهم انا نستعينڪ و نستغفڪ ونؤمن بڪ و نتوڪل عليڪ ونثني عليڪ الخير و نشڪرڪ ولا نڪفرڪ و نخلع ونترڪ من يفجرڪ اللهم اياڪ نعبد ولڪ نصلي و نسجد واليڪ نسعي و نحفد ونرجو رحمتڪ و نخشي عذابڪ ان عذابڪ بالڪفار ملحق
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা ,অনাসতাগফিরুকা,অনু-মিনুবিকা, অনাতাঅক্কালু আলাইকা, অনুসনী আলাইকাল খইরা , অনাশকুরুকা , অলানাকফুরুকা, অনাখলা’ ণাতরুকু, মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু , অলাকানুছল্লি, অনাসজুদু, অইলাইকা নাসআ, অনাহফিদু, অনারজু রহমাতাকা, অনাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিলকুফ্ফারি মুলহিক।
অর্থঃ “হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি । আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করছি । আপনার কাছে ক্ষমার আবেদন করছি । আপনার কাছে তওবা করছি । আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি । আপনার উপর ভরসা করছি । আপনার সকল কল্যাণের প্রশংসা করছি । আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আমরা আপনার অনুগ্রহ অস্বীকার করি না । আমরা পৃথক চলি । এবং পরিত্যাগ করি এমন লোকদের, যারা আপনার বিরুদ্ধাচারণ করে । “হে আল্লাহ ! আমরা আপনারই ইবাদত করি । এবং আপনারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা নামাজ পড়ি ও সিজদা করি । আপনার প্রতিই আমরা ধাবিত হই এবং আমরা আপনার আযাবকে ভয় করি । নিশ্চাই আপনার প্রকৃত আযাব কাফেরদের উপর পতিত হবে । আল্লাহ তা‘আলা নবী সা.-এর প্রতি ও তার পরিবার পরিকনের প্রতি রহমত বর্ষকরুন এবং তাকে শান্তিতে রাখুন ।
তারপর বিতরের নামাজের বাকী নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই।

দুই ঈদের নামাজ

অন্যান্য নামাজের সাথে ঈদের নামাজের পার্থক্য হলো , দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর বলতে হয়। প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে। প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় দুই হাত কান বরাবর উঠিয়ে নাভীর নিচে না বেধে নিচের দিকে ছেড়ে দিবে। তিনটি তাকবীর বলা শেষ হলে নাবীর নিচে হাত বাধবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে একই নিয়মে তারপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। বাকী সব নিয়ম অন্য নামাজের মতই।

মহিলাদের নামাজ

মহিলাদের নামাজের নিয়ম প্রায় পুরুষের নামাজের মতই। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যাবধান আছে তা হলো, দাড়ানো অবস্থায় দুই পা মিলিয়ে রাখবে । তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মহিলারা কাধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। তারপর বুকের উপর হাত বাধবে বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাতের তালু রাখবে । রুকুতে পুরুষের মত উভয় হাতে হাটুতে ভাল করে ধরবে না বরং দুই হাতের আংগুল মিলিত রেখে হাটুকে স্পর্স করবে এবং দুই পায়ের টাখনু মিলিয়ে রাখবে । পুরুষের রুকুর মত মাথা পিঠ ও মাজা সমান হবে না । সেজদার মাঝে মহিলারা দুই পা বাম দিক দিয়ে বের করে ডান নিতম্বের উপর বসবে তারপর হাত জমীনে বিছিয়ে সেজদা করবে। পেট রানের সাথে মিলিয়ে বাহু পাজরের সাথে মিলিয়ে এবং হাতের কনুই জমীনের সাথে মিলিয়ে যথা সম্ভব জমীনের সাথে চেপে ধরে সেজদা করবে । বসার সময় দুই পা বাম দিকে বের করে দিয়ে ডান নিতম্বের উপর বসবে। মহিলাদের নামাযের বাকী নিয়ম পুরুষের নামাযের



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png