LIVE
Loading latest headlines...

মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০

নিয়মিত মধু খাওয়ার উপকারিতা ও গুনাগুণ

মঙ্গলবার, মার্চ ৩১, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

মধু একটি পুষ্টিকর খাবার। যদি আমরা মধুর পুষ্টিগুনের দিক তুলে ধরে খাবারের একটি তালিকা করি, তাহলে খাবারের তালিকায় প্রথমে থাকবে মধুর নাম। এটি শরীরের জন্য খুবি উপকারী। যদি নিয়মিত মধু সেবন করা হয়, তাহলে অসংখ্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত।

মধুর উপাদান
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশমন্টোজ। আরও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশএনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।

মধুর উপকারিতা

শক্তি প্রদায়ী : মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
হজমে সহায়তা: এতে যে শর্করা থাকে, তা সহজেই হজম হয়। কারণ, এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে, তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। পেটরোগা মানুষের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা–চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।

রক্তশূন্যতায়: মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ, এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।

ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে: বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস টেনে নেওয়া হয়, তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবে। অনেকে মনে করে, এক বছরের পুরোনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।

অনিদ্রায়: মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা–চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।

যৌন দুর্বলতায়:
পুরুষদের মধ্যে যাঁদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তাঁরা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান, তাহলে বেশ উপকার পাবেন।

প্রশান্তিদায়ক পানীয়: হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়।

মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়: মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে। মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়, এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।

পাকস্থলীর সুস্থতায়: মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুকজ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
তাপ উৎপাদনে: শীতের ঠান্ডায় এটি শরীরকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা–চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
পানিশূন্যতায়: ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে: চোখের জন্য ভালো। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
রূপচর্চায়: মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়।

ওজন কমাতে: মধুতে নেই কোনো চর্বি। পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, ফলে ওজন কমে।
হজমে সহায়তা: মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে।
গলার স্বর: গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে।
তারুণ্য বজায় রাখতে: তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। এটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়ায়।
হাড় ও দাঁত গঠনে:
মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: এতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময়ে:
পুরোনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে।
হাঁপানি রোধে: আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিনবার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়: দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত।
রক্ত পরিষ্কারক: এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রণ খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার করে।
রক্ত উৎপাদনে সহায়তা: রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।
হৃদ্‌রোগে: এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদ্‌রোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়: মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও জোগান দেয়। মধুতে আছে একধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ



ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের বিধান

মঙ্গলবার, মার্চ ৩১, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। আর এই সামাজিকতার এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা হচ্ছে কোন মানুষ একা সবসময় নিজের সব প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হয় না। এজন্যই পরস্পরকে বিভিন্ন উপায় বা লেনদেনের মাধ্যমে মানুষ একে অপরকে সহযোগিতা করে থাকে। এরকমই একটি বড় উপায় হচ্ছে ঋণ। মানব জীবনের পথচলায় ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইসলাম এ বিষয়ে মানুষকে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে ঋণ গ্রহণ করার যেমন অনুমতি দিয়েছেন, তেমনি যথাসময়ে সেই ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছেন। যাপিত জীবনের বাঁকে-বাঁকে যেহেতু আমরা ঋণের সাথে জড়িত থাকি, সেহেতু ঋণের ক্ষেত্রে ইসলামী শরী‘আতের দিক-নির্দেশনা ও বিধি-বিধান সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া ঋণের ভয়াবহতার ব্যাপারে সম্যক ধারণা না থাকার কারণে আমরা ঋণকে হালকা চোখে দেখি। যা পরকালীন জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা এই বিষয়ে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ঋণের পরিচয় : ঋণের আরবী প্রতিশব্দ قَرْض, যা বাংলা ভাষায় ‘কর্য’ নামে পরিচিত। এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে দেনা, ধার, হাওলাত ইত্যাদি। শরী‘আতের পরিভাষায়دَفْعُ مَالٍ إِرْفَاقًا لِمَنْ يَنْتَفِعُ بِهِ وَيَرُدُّ بَدَلَهُ، অর্থাৎ ‘ঋণ হ’ল সহযোগিতার জন্য অপরকে মাল-পণ্য প্রদান করা, যেন গ্রহীতা এর মাধ্যমে উপকৃত হয়, অতঃপর দাতাকে সেই মাল কিংবা তার অনুরূপ ফেরত দেওয়া’।[1] ইসলামী পরিভাষায় একে ‘কর্যে হাসানা’ বলা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, ছওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে কোন কিছু ঋণ দিলে তাকে ‘কর্যে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ বলা হয়। এতে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতে উপকৃত হয় এবং পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় ও সামাজিক ঐক্য সুদৃঢ় হয়। আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় কর্যে হাসানার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ‘কোন সে ব্যক্তি যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে, অতঃপর তিনি তার বিনিময়ে তাকে বহুগুণ বেশী প্রদান করবেন? বস্ত্ততঃ আল্লাহ্ই রূযী সংকুচিত করেন ও প্রশস্ত করেন। আর তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَأَقْرَضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيْمٌ ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়, তাদেরকে দেওয়া হবে বহুগুণ বেশী। আর তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার’ (হাদীদ ৫৭/১৮)। এখানে আল্লাহকে ঋণ দেওয়া অর্থ আল্লাহর পথে দান করা এবং আল্লাহর বান্দাকে কর্য দেওয়া উভয় মর্ম বহন করে। কেননা হাদীছে কুদসীতে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, اسْتَقْرَضْتُ عَبْدِي فَلَمْ يُقْرِضْنِي ‘আমি আমার বান্দার কাছে ঋণ চেয়েছিলাম, কিন্তু সে আমাকে ঋণ দেয়নি’।[2] এতে বুঝা যায় যে, ইসলাম মানুষের নৈতিক ও অর্থনৈতিক দু’দিকেরই উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে।

ঋণ গ্রহণের বিধান : ইসলামে ঋণ আদান-প্রদান করা বৈধ। যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। কেননা রাসূল (ছাঃ) ঋণ গ্রহণ করেছিলেন,[3] ঋণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন[4] এবং তার উম্মতকে ঋণ মুক্তির দো‘আ শিখিয়েছেন[5]। এমনকি রাসূল (ছাঃ) অমুসলিমের কাছ থেকেও ঋণ গ্রহণ করেছেন। সুতরাং ইসলাম মুসলমানদেরকে বিপদে-আপদে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে অপরের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সঠিক সময়ে তা পরিশোধ করার প্রতি কঠোর নির্দেশও দিয়েছে।

ঋণ দান ব্যবসা নয়, সহযোগিতা : ইসলামে ঋণের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ও তাদের প্রতি দয়া করা। কিন্তু এই সহযোগিতার আড়ালে ব্যবসায়িক বা অন্য কোন সুবিধা অর্জন উদ্দেশ্য নয়। একজন মুমিনের জীবনে ঋণ দানের উদ্দেশ্য আর্থিক প্রবৃদ্ধি নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। সেকারণ ঋণ গ্রহীতা ঋণ ফেরত দেয়ার সময় যা নিয়েছে তা কিংবা তার অনুরূপ ফেরত দিতে আদিষ্ট, এর অতিরিক্ত নয়। ঋণ দাতা এর অতিরিক্ত নিলে তা সূদ হিসাবে গণ্য হবে। আমরা সমাজিক জীবনে ঋণের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সূদের সাথে জড়িয়ে পড়ি। যেমন- চাকরী বা অন্য কোন সহযোগিতার উদ্দেশ্যে কাউকে ঋণ দেওয়া অথবা কোন হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বা দোকান-ঘর ভাড়া পাওয়ার জন্য ঋণ প্রদান প্রভৃতি সহযোগিতা সূদের পর্যায়ভুক্ত। অনুরূপভাবে জমি বন্ধক প্রথাও একপ্রকার সূদ। কারণ এভাবে জমি নিলে চাষের খরচ ব্যতীত বাকী শস্য জমির মালিককে ফেরত দিতে হবে। কেননা এটা একটা কর্য। আর কর্যের লাভ ভোগ করা যায় না। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যে ঋণের বিনিময় লাভ করা হয়, তা সূদ।[6]

আজকাল বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিওগুলো গ্রামে-গঞ্জে, নগর-বন্দরে সহযোগিতার নামে সূদী ঋণের কারবারী করছে এবং সূদী লেনদেনের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর গযবের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কেউ আবার সূদে ঋণ দানকে ব্যবসা হিসাবে গ্রহণ করেছে, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। ঋণ কখনো ব্যবসা হ’তে পারে না। কারণ যে ঋণের মাধ্যমে ব্যবসা করা হয়, তা মূলত সূদী ব্যবসা।

ঋণ গ্রহণে সতর্কতা : জান্নাত পিয়াসী মুমিন বান্দাকে ঋণের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা যরূরী। ছাওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ مَاتَ وَهُوَ بَرِيءٌ مِنْ ثَلَاثٍ: الكِبْرِ، وَالغُلُولِ، وَالدَّيْنِ دَخَلَ الجَنَّةَ، ‘যে ব্যক্তির মৃত্যু হবে অহংকার, খিয়ানত এবং ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে, সে জানণাতে প্রবেশ করবে’।[7] অর্থাৎ ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত ব্যক্তির সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টনের পূর্বে মৃতের ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে জোর তাকীদ দিয়েছেন।[8] কারণ আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিও তার ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।[9] যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে তার ঋণ পরিশোধ করা হয়। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا يَسُرُّنِي أَنْ لاَ يَمُرَّ عَلَيَّ ثَلاَثٌ، وَعِنْدِي مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا شَيْءٌ أُرْصِدُهُ لِدَيْنٍ، ‘আমার কাছে যদি ওহোদ পাহাড়ের সমান সোনা থাকত, তাহ’লে আমার পসন্দ নয় যে, তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমার কাছে তার কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকুক। তবে সেই পরিমাণ ব্যতীত, যা আমি ঋণ পরিশোধ করার জন্য রেখে দেই’।[10]

ঋণের কারণে মানুষ সামাজে লাঞ্ছিত হয়। তাই প্রয়োজন ছাড়া ঋণ গ্রহণ থেকে সতর্ক থাকা উচিত। অপরদিকে পরিশোধ না করার উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করা আত্মসাতের শামিল, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

ঋণ দানের ফযীলত :

পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে ঋণ বলতে ‘কর্যে হাসানাহ’ বুঝানো হয়েছে। আর কর্যে হাসানাহ প্রদানে রয়েছে অশেষ ফযীলত।

(ক) ঋণ দান ছাদক্বাহর ন্যায় ফযীলতপূর্ণ : কাউকে নেকীর আশায় বা সহযোগিতার জন্য কর্যে হাসানা প্রদান করা আল্লাহর পথে দান-ছাদাক্বাহ করার সমতুল্য। এমনকি ঋণ দানকে দান-ছাদাক্বার চেয়েও বেশী মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে। আবূ উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,دخل رجل الجنة، فرأى مكتوباً على بابها: الصدقةُ بعشرِ أمثالها، والقرضُ بثمانية عشر ‘এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে তার দরজায় একটি লেখা দেখতে পেল যে, ছাদাক্বার নেকী দশ গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং ঋণ দানের নেকী আঠারো গুণ বৃদ্ধি করা হয়’।[11]

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ قَرْضٍ صَدَقَةٌ ‘প্রত্যেক ঋণই ছাদক্বাহ’।[12] অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُقْرِضُ مُسْلِمًا قَرْضًا مَرَّتَيْنِ إِلَّا كَانَ كَصَدَقَتِهَا مَرَّةً ‘কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিমকে দুইবার ঋণ দিলে সে একবার ছাদক্বাহ করার নেকী পাবে’।[13]

(খ) দাস মুক্তির নেকী : কর্যে হাসানা বা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দাস মুক্ত করে দেওয়ার নেকী লাভ করা যায়। বারা ইবনু আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,مَنْ مَنَحَ مَنِيحَةَ لَبَنٍ أَوْ وَرِقٍ أَوْ هَدَى زُقَاقًا كَانَ لَهُ مِثْلَ عِتْقِ رَقَبَةٍ ‘যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অধবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথহারা লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করার সমপরিমান ছওয়াব’।[14]

(গ) ফেরেশতাদের দো‘আ লাভের সৌভাগ্য : যারা আল্লাহর কোন বান্দাকে সহযোগিতার জন্য ঋণ দেয়, আকাশের ফেরেশতা তার জন্য বরকতের দো‘আ করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ  اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا ‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন’।[15] সুতরাং ঋণ দান এমন একটি ছাদাক্বাহ, যার মাধ্যমে ফেরেশতাদের দো‘আ লাভে ধন্য হওয়া যায়। আল্লাহর নিষ্পাপ ফেরেশতাদের দো‘আ লাভ করা কতইনা সৌভাগ্যের ব্যাপার!

(ঘ) বিপদ থেকে মুক্তি ও আল্লাহর সাহায্য লাভ : যখন কোন মুমিন বান্দা নিঃস্বার্থভাবে কারো দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন আল্লাহ এত খুশি হন যে, তিনি স্বয়ং সেই বান্দার সাহায্যকারী হয়ে যান এবং তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুনিয়ার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তার আখেরাতের বিপদসমূহের মধ্য হ’তে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব (সাহায্যের মাধ্যমে) সহজ করে দিবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে সহজতা দান করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর বান্দাদেরকে সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।[16] আর নিঃসন্দেহে ঋণ একটি সহযোগিতা, যার মাধ্যমে ঋণগ্রহীতার বিপদাপদে তার পাশে দাঁড়ানো হয়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কর্যে হাসানা বা নিঃস্বার্থ ঋণ প্রদানের মাধ্যমে উক্ত ফযীলতগুলো হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!

ঋণ দানের আদব :

কাউকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে ঋণ দান করা নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। আর ঋণ দানের ক্ষেত্র ইসলাম কতিপয় শিষ্টাচার ও নীতিমালা বর্ণনা করেছে। যেমন-

(ক) ঘুষ গ্রহণ না করা : ঋণ দানের ক্ষেত্রে বিনিময় গ্রহণ করা এবং এর মাধ্যমে কোন উপকার হাছিল করা হারাম। ইবনু কুদামা বলেন,

وَكُلُّ قَرْضٍ شَرَطَ فِيهِ أَنْ يَزِيدَهُ، فَهُوَ حَرَامٌ، بِغَيْرِ خِلَافٍ. قَالَ ابْنُ الْمُنْذِرِ: أَجْمَعُوا عَلَى أَنَّ الْمُسَلِّفَ إذَا شَرَطَ عَلَى الْمُسْتَسْلِفِ زِيَادَةً أَوْ هَدِيَّةً، فَأَسْلَفَ عَلَى ذَلِكَ، أَنَّ أَخْذَ الزِّيَادَةِ عَلَى ذَلِكَ رَبًّا. وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، وَابْنِ عَبَّاسٍ، وَابْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّهُمْ نَهَوْا عَنْ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً.

‘যে সকল ঋণে অতিরিক্ত কোন কিছু গ্রহণ করার শর্তারোপ করা হয়, তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। ইবনুল মুনযির বলেন, বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যদি ঋণ দাতা ঋণ গ্রহীতার উপর কোন অতিরিক্ত লাভ বা উপঢৌকনের শর্তারোপ করে এবং ঋণী ব্যক্তি যদি সেটা তাকে প্রদান করে, তাহ’লে সেই অতিরিক্ত কিছু সূদ হিসাবে গণ্য হবে। উবাই ইবনে কা‘ব, ইবনু আববাস ও ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী থেকে এমনটাই বর্ণিত হয়েছে যে, তারা ঋণে লাভ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন’।[17] আজকের বিশ্ব এই সূদী ঋণের জাতাকলে পিষ্ট হয়ে অশান্তির দাবানলে পরিণত হয়েছে। আমাদের সামাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সূদী ব্যাংকগুলো সহযোগিতার ফাঁকা বুলি কপচিয়ে মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। সূদী ঋণের আগ্রাসী ছোবলে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির মূল কারণ হ’ল এই সূদ ভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা। তাই দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি পেতে হ’লে সার্বিক জীবনে সূদমুক্ত অর্থ ব্যবস্থা চালু করা আবশ্যক। কারণ সূদী ঋণ দান সহযোগিতা নয়; বরং মহাপাপ।

(খ) উপঢৌকন গ্রহণ না করা : ঋণ দানের অন্যতম আদব হ’ল ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কোন উপঢৌকন গ্রহণ না করা। কারণ ঋণের বিনিময়ে হাদিয়া বা উপহার গ্রহণ করা হারাম। আবূ বুরদাহ ইবনে আবূ মূসা (রহঃ) বলেন, একবার আমি মদীনায় এসে আব্দুল্লাহ বিন সালামের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি আমাকে বললেন,

إِنَّك بِأَرْض فِيْهَا الرِّبَا فَاش إِذا كَانَ لَكَ عَلَى رَجُلٍ حَقٌّ فَأَهْدَى إِلَيْكَ حِمْلَ تَبْنٍ أَو حِملَ شعيرِ أَو حَبْلَ قَتٍّ فَلَا تَأْخُذْهُ فَإِنَّهُ رِبًا.

‘তুমি এমন এলাকায় বসবাস করছ, যেখানে সূদের প্রচলন অত্যধিক। অতএব কারো কাছে যদি তোমার কোন পাওনা থাকে, আর সে যদি তোমাকে হাদিয়া বা উপহার হিসাবে এক বোঝা খড় অথবা এক বোঝা যব অথবা এক আঁটি ঘাসও দেয়; তুমি তা গ্রহণ করবে না। কারণ এটা সূদ হিসাবে গণ্য হবে’।[18] এই আছারের মর্মার্থ অন্যান্য ছাহবীদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) বলেন,

وَقَدْ تَقَدَّمَ عَنْ غَيْرِ وَاحِدٍ مِنْ أَعْيَانِهِمْ كَأُبَيٍّ وَابْنِ مَسْعُودٍ وَعَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ وَابْنِ عُمَرَ وَابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُمْ نَهَوْا الْمُقْرِضَ عَنْ قَبُولِ هَدِيَّةِ الْمُقْتَرِضِ، وَجَعَلُوا قَبُولَهَا رِبًا.

‘উবাই বিন কা‘ব, ইবনে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম, ইবনে ওমর এবং ইবনু আববাস (রাঃ)-এর মত উল্লেখযোগ্য ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে এটা বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরা ঋণদাতাকে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে উপঢৌকন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তাঁরা এই উপহার গ্রহণকে সূদ হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন’।[19]

আল্লামা শাওক্বানী (রহঃ) বলেন, ‘যদি কর্যের কারণে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মাঝে হাদিয়া বা উপঢৌকন আদান-প্রদান হ’লে এটা সূদ বা ঘুষ হিসাবে গণ্য হবে। যা স্পষ্ট হারাম। তবে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মাঝে যদি আগে থেকেই হাদিয়া আদান-প্রদানের অভ্যাস থাকে তাহ’লে সেই উপহার প্রদান বা গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই’।[20] যেমন একবার ইবনে ওমর (রাঃ) উবাই ইবনে কা‘বকে দশ হাযার দিরহাম ঋণ দিলেন। অতঃপর উবাই বিন কা‘ব তাকে জমির কিছু ফল হাদিয়া দিলেন। কিন্তু ইবনু ওমর সেই ফল গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দিলেন। তখন উবাই (রাঃ) বললেন, মাদীনাবসীরা জানে যে আমি উৎকৃষ্ট ফল-মূল আবাদ করি। তাহ’লে আপনি এই ফল-মূল নিচ্ছেন না কেন? এরপর তিনি আবার অনুরোধ জানালে ইবনু ওমার সেই হাদিয়া গ্রহণ করলেন। ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন, ইবনু ওমর প্রথমে মনে করেছিলেন, ঋণদানের কারণেই হয়তো এই হাদিয়া তাকে দেওয়া হচ্ছে, সেকারণ তিনি প্রথমে তা গ্রহণ করেননি। কিন্তু যখন তিনি নিশ্চিত হ’লেন যে, এই হাদিয়া তার ঋণ দানের কারণে নয়, তখন সেটা গ্রহণ করলেন’।[21]

(গ) অক্ষম ঋণগ্রহীতার প্রতি কঠোর না হওয়া : ঋণী ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হ’লে তার উপর কঠোর হওয়া উচিৎ নয়। মা আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ طَلَبَ حَقًّا فَلْيَطْلُبْهُ فِي عَفَافٍ وَافٍ، أَوْ غَيْرِ وَافٍ، ‘কোন ব্যক্তি পাওনা আদায়ের তাগাদা দিলে, যেন বিনীতভাবেই তাগাদা দেয়। এতে তার ঋণ আদায় হোক বা না হোক’।[22] আল্লাহর রাসূলের এই হাদীছের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের মহানুভবতা ফুটে ওঠে। সুতরাং প্রকৃত অক্ষম ও দরিদ্র ঋণীদের প্রতি সদয় হওয়া উচিত।

অক্ষম ঋণগ্রহীতাকে ছাড় প্রদানের ফযীলত :

সমাজে যেমন কিছু লোক পাওয়া যায়, যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ঋণ শোধ করতে ঢিলেমি করে, তেমন সত্যিকারে এমন লোকও রয়েছে যারা নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। এ রকম ব্যক্তিকে ইসলাম অতিরিক্ত সময় দিতে উদ্বুদ্ধ করে। যারা অক্ষম ঋণগ্রহীতাকে অবকাশ দেয় বা তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের মহা পুরস্কার। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنْ كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ وَأَنْ تَصَدَّقُوْا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ، ‘আর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহ’লে তাকে সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহ’লে সেটা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, যদি তোমরা তা জানতে’ (বাক্বারাহ ২/২৮০)।

(ক) দানের ছওয়াব অর্জন : ঋণদাতা যদি অক্ষম ঋণীকে দেনা পরিশোধে ছাড় দেন, তাহ’লে তিনি এর মাধ্যমে আল্লাহর পথে দান-ছাদাক্বাহ করার নেকী অর্জন করেন। বুরাইদা আল-আসলামী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا كَانَ لَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ، وَمَنْ أَنْظَرَهُ بَعْدَ حِلِّهِ كَانَ لَهُ مِثْلُهُ، فِي كُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ. ‘যে ব্যক্তি (ঋণগ্রস্ত) অভাবী ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে, সে দান-খয়রাত করার ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও সময় বাড়িয়ে দিবে, সেও প্রতিদিন দান-খয়রাত করার নেকী লাভ করবে’।[23]

(খ) আল্লাহর রাসূলের দো‘আ লাভ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই পাওনাদার ব্যক্তির জন্য রহমতের দো‘আ করেছেন, যে অভাবী কর্যগ্রহীতার প্রতি সহনশীল হয়। জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন,رَحِمَ اللهُ عَبْدًا سَمْحًا إِذَا بَاعَ، سَمْحًا إِذَا اشْتَرَى، سَمْحًا إِذَا اقْتَضَى، ‘আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়’।[24] ঋণীর প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শনের মাধ্যমে যদি রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ লাভ করা যায়, তাহ’লে এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হ’তে পারে!

(গ) আরশের নিচে ছায়া লাভের সৌভাগ্য : যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অক্ষম ঋণী লোকের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করে অথবা তার ঋণ মাফ করে দেয়, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا، أَوْ وَضَعَ لَهُ، أَظَلَّهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ ‘যে ব্যক্তি কোন অভাবী ঋণগ্রস্তকে সুযোগ প্রদান করে অথবা ঋণ মাফ করে দেয়, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় প্রদান করবেন। যেদিন তার আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না’।[25]

(ঘ) আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ : ক্বিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ করার অন্যতম উপায় হ’ল অভাবী ও দরিদ্র ঋণগ্রস্তদের ঋণ মাফ করে দেওয়া। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

حُوسِبَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مِنَ الْخَيْرِ شَيْءٌ، إِلَّا أَنَّهُ كَانَ يُخَالِطُ النَّاسَ، وَكَانَ مُوسِرًا، فَكَانَ يَأْمُرُ غِلْمَانَهُ أَنْ يَتَجَاوَزُوا عَنِ الْمُعْسِرِ. قَالَ: قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: نَحْنُ أَحَقُّ بِذَلِكَ مِنْهُ، تَجَاوَزُوا عَنْهُ.

‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক লোকের হিসাব গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তার মধ্যে কোন প্রকার সৎ আমল পাওয়া যায়নি। কিন্তু সে মানুষের সাথে লেন-দেন করত এবং সে ছিল সচ্ছল। তাই দরিদ্র লোকদের মাফ করে দেওয়ার জন্য সে তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ (ফেরেশতাদেরকে) বললেন, ‘এ ব্যাপারে (অর্থাৎ তাকে ক্ষমা করার ব্যাপারে) আমি তার চেয়ে অধিক যোগ্য। একে ক্ষমা করে দাও’।[26] অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেন,مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُنْجِيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ، أَوْ يَضَعْ عَنْهُ ‘যে ব্যক্তি এটা চায় যে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিক, সে যেন অক্ষম ঋণগ্রস্ত লোকের সহজ ব্যবস্থা করে কিংবা ঋণ মওকূফ করে দেয়’।[27]

 (চলবে)

– আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

[1]. হাশিয়া ইবনিল আবিদীন ৪/১৭১; গৃহীত: আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ ৩৩/১১১।

[2]. মুসনাদে আহমাদ হা/১০৫৭৮, ৭৯৮৮, সনদ হাসান।

[3]. বুখারী হা/২৩০৬,২৩৯৪; মিশকাত হা/২৯০৬, ২৯২৬।

[4]. বুখারী হা/৬৩৬৯।

[5]. তিরমিযী হা/৩৫৬৩; মিশকাত হা/২৪৪৯; সনদ হাসান।

[6]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১০৭১৫; ইরওয়া হা/১৩৯৭, সনদ ছহীহ।

[7]. তিরমিযী হা/১৫৭২; ইবনু মাজাহ হা/২৪১২; ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৮৯২; মিশকাত হা/২৯২১, সনদ ছহীহ।

[8]. আহমাদ হা/১৭২২৭; মিশকাত হা/২৯২৮, সনদ ছহীহ।

[9]. আহমাদ হা/২২৪৯৩; মুস্তাদরাক হাকেম হা/২২১২; ছহীহুত তারগীব হা/১৮০৪; মিশকাত হা/২৯২৯, সনদ ছহীহ।

[10]. বুখারী হা/২৩৮৯; মুসলিম হা/৯৯১।

[11]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪০৭; ছহীহুত তারগীব হা/৯০০, সনদ হাসান।

[12]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩২৮৫; তাবারাণী, আওসাত্ব হা/৩৪৯৮, হাদীছ হাসান।

[13]. ইবনু মাজাহ হা/২৪৩০; ইরওয়াউল গালীল হা/২৪৩০।

[14]. তিরমিযী হা/১৯৫৭; আহমাদ হা/১৮৫১৬; মিশকাত হা/১৯১৭, সনদ ছহীহ।

[15]. বুখারী হা/১৪৪২; মুসলিম হা/১০১০।

[16]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪।

[17]. ইবনু ক্বুদামাহ, আল-মুগনী ৪/২৪০।

[18]. বুখারী হা/৩৮১৪; মিশকাত হা/২৮৩৩।

[19]. ই’লামুল মুওয়াক্কে’ঈন ৩/১৩৭।

[20]. নায়লুল আওত্বার ৫/২৫৭।

[21]. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ ৩৩/১৩১-১৩২।

[22]. ইবনু মাজাহ হা/২৪২১; ইবনু হিববান হা/৫০৮০; সনদ ছহীহ।

[23]. ইবনু মাজাহ হা/২৪১৮, সনদ ছহীহ।

[24]. ইবনু মাজাহ হা/২২০৩, সনদ ছহীহ।

[25]. তিরমিযী হা/১৩০৬; সুনানে দারেমী হা/২৬৩০; আহমাদ হা/৪৭১১ সনদ ছহীহ।

[26]. মুসলিম হা/১৫৬১; তিরমিযী হা/১৩০৭।

[27]. মুসলিম হা/১৫৬৩; মিশকাত হা/২৯০২



করোনাভাইরাসঃ কিছু ভ্রান্ত ধারনা ও বাস্তবতা

মঙ্গলবার, মার্চ ৩১, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার কারনে এখানকার মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্য যেকোন দেশের চেয়ে বেশি। চলুন জেনে নিই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কিছু প্রচলিত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও এর বিপরীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রকৃত বাস্তবতা।

করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচলিত কিছু গুজব ও প্রকৃত বাস্তবতা
১. গুজবঃ গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করোনাভাইরাস ছড়ায় না।

বাস্তবতাঃ এখন পর্যন্ত এই ধারনার স্বপক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাস যেকোন এলাকায় ছড়াতে পারে। যেসব এলাকার আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র, সেসব এলাকায়ও।
 
২. গুজবঃ ঠান্ডা আবহাওয়া ও তুষারপাতে করোনাভাইরাস মারা যায়।
বাস্তবতাঃ ঠান্ডা আবহাওয়া নতুন করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে বা অন্য কোন রোগ সারিয়ে দিতে পারে, এমনটি বিশ্বাস করার কোন কারন নেই। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাহ্যিক তাপমাত্রা বা আবহাওয়ার কোন প্রভাব এর উপর পড়ে না।
 
৩. গুজবঃ গরম পানিতে গোসল করলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে।
বাস্তবতাঃ গরম পানিতে গোসল করলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে না। কারন, গোসলের সময় পানির তাপমাত্রা যাই হোক না কেন আপনার দেহের স্বাভাবিক তাপমতারা ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসই থাকবে। বরং, খুব বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে, শরীর পুড়েও যেতে পারে।

৪. গুজবঃ মশার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়।
বাস্তবতাঃ এখন পর্যন্ত এই ধারনার পক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।

৫. গুজবঃ হাত শুকানোর যন্ত্র করোনাভাইরাসকে মারতে কার্যকর।
বাস্তবতাঃ না, হাত শুকানোর যন্ত্র করোনাভাইরাসকে মারতে কার্যকর নয়।
 
৬. গুজবঃ ইউভি ল্যাম্প নতুন করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে।
বাস্তবতাঃ না। বরং এটা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কারন, ইউভি ল্যাম্প থেকে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয়।
৭. গুজবঃ নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তকরনে থার্মাল স্ক্যানার কাজে আসে।
বাস্তবতাঃ আংশিক সত্য। নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে জ্বর এসেছে, শুধু এমন লোকজনকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রেই থার্মাল স্ক্যানার কাজে আসে। কিন্তু আক্রান্ত হলেও জ্বর আসেনি, থার্মাল স্ক্যানার এমন কাউকে শনাক্ত করতে পারেনা।
৮. গুজবঃ সারাদেহে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন স্প্রে করলে নতুন করোনাভাইরাস মারা যায়।
বাস্তবতাঃ না, মারা যায় না। যেসব ভাইরাস ইতোমধ্যেই আপনার শরীরে প্রবেশ করেছে, সেগুলোকে মারার সক্ষমতা অ্যালকোহল বা ক্লোরিনের নেই। চোখমুখ বা কাপড়ে এসব স্প্রে করাটা বরং ক্ষতিকর হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ রোধে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ভূমিকা রাখে ঠিকই, তবে সেটা যথাযথ নির্দেশিনা মেনে ব্যবহার করতে হবে।

৯. গুজবঃ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাঁচায়।
বাস্তবতাঃ এটি সঠিক নয়। নিউমোনিয়া বা অন্য কোন রোগের ভ্যাকসিন নতুন করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচাবে না। এই ভাইরাসটা এতটাই নতুন এবং আলাদা যে, এর জন্য নতুন ভ্যাকসিন প্রয়োজন। গবেষকরা নতুন এই ভাইরাসের জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ব্যাপারে তাদের সাহায্য করছেন।

১০. গুজবঃ নাকে নিয়মিত স্যালাইন লাগালে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাঁচা যাবে।
বাস্তবতাঃ এখন পর্যন্ত এই ধারনার পক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।

১১. গুজবঃ রসুন খেলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে।
বাস্তবতাঃ রসুন স্বাস্থ্যকর খাবার। এর কিছু এন্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও আছে। কিন্তু বর্তমান প্রাদুর্ভাব থেকে এমন কোন প্রমান পাওয়া যায়নি যে, রসুন খেলে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো যাবে।

১২. গুজবঃ নতুন করোনাভাইরাসে শুধু বয়স্ক মানুষেরাই আক্রান্ত হবে।
বাস্তবতাঃ যেকোন বয়সের মানুষ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ আছে, এমন বয়স্ক মানুষদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এবং এরা সংক্রমিত হলে তীব্র অসুস্থতায় পড়তে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হচ্ছে, সব বয়সের মানুষের উচিৎ নিজেদেরকে এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখা। যেমন, নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত ভদ্রতা চর্চার ব্যপারে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

১৩. গুজবঃ অ্যান্টিবায়োটিক খেলে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে এবং সংক্রমিত হলেও রোগ ভাল হয়ে যাবে।
বাস্তবতাঃ এটা সঠিক নয়। অ্যান্টিবায়োটিক এই নতুন ভাইরাসের ক্ষেত্রে কার্যকরি নয়। এগুলো শুধু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর।

১৪. গুজবঃ নতুন করোনাভাইরাস ঠেকানোর পদ্ধতি বা এর চিকিৎসা এসে গেছে।
বাস্তবতাঃ এটাও সঠিক নয়। নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বা চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোন ঔষধ তৈরি হয়নি।

নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের যথাযথ যত্নের প্রয়োজন। অসুস্থ মানুষদের প্রয়োজন সর্বোচ্চ সহায়তামূলক সেবা। কিছু সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পরীক্ষাধীন আছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ভেতর দিয়ে যাদের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার অংশীদারদের সাথে গবেষনা ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে।



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png