LIVE
Loading latest headlines...

শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

নারী সাহাবি উম্মে সুলাইমের অনন্য জীবন-আখ্যান*_

শনিবার, মে ১৮, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে


রুমাইছা বিনতে মিলহান আল-আনসারিয়্যা (রা.)। তার উপনাম উম্মে সুলাইম।

এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ। অনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের আধার ছিলেন তিনি।
ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী সাহাবিদের অন্যতম। রাসুল (সা.) জান্নাতে তার উপস্থিতির শব্দ শুনেছেন।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করি। হঠাৎ কারো নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পাই।

ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বললেন, রুমাইছা বিনতে মিলহান, আনাস ইবনে মালিকের মা। *(মুসলিম, হাদিস: ২৪৫৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১১৯৫৫; তাবাকাতে ইবনে সাদ: ৮/৪২৯)*

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম জান্নাতে প্রবেশ করেছি। হঠাৎ দেখি আমার সামনে আবু তলহার স্ত্রী রুমাইছা। *(বুখারি, হাদিস: ৩৬৭৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫০০২; ইবনে হিববান, হাদিস: ৭০৮৪; সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৮১২৪)*

বৈবাহিক ও দাম্পত্য-জীবন
মালেক ইবনে নজরের সঙ্গে তার বিবাহ হয়েছিল। সেই ঘরেই আনাস (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণ করায় ক্ষোভে স্বামী মালেক ইবনে নজর দেশত্যাগ করে সিরিয়ায় চলে যান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। 
পরবর্তীতে তিনি সাহাবি আবু তালহা (রা.) এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
উম্মে সুলাইমের দ্বিতীয় বিবাহ সম্পর্কে আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হযরত আবু তালহা উম্মে সুলাইমকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। উত্তরে উম্মে সুলাইম (রা.) বলেন, আপনি কি জানেন, আপনি যে উপাস্যের পূজা করেন, তা জমি থেকে সৃষ্ট?
 তিনি বললেন, হ্যাঁ। উম্মে সুলাইম (রা.) বলেন, গাছ-গাছালির পূজা করতে আপনার লজ্জা করে না? আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আপনি যদি আমার ধর্মের অনুসরণ করেন, তবেই আমি আপনাকে বিবাহ করবো। আপনার ইসলাম গ্রহণ করাটাই আমার জন্য মোহর হবে। আমি এছাড়া আর কোনো মোহর চাই না। তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমি ভেবে দেখি। তারপর তিনি ফিরে এসে বললেন, আমিও আপনার ধর্মের অনুসারী। কালিমা পড়ে তিনি মুসলমান হয়ে গেলেন এবং উম্মে সুলাইমকে বিবাহ করেন। *(সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ১০৪১৭)*




যে ১৫ আমলে অবিরত রিজিক বাড়ে

শনিবার, মে ১৮, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে



মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি অনেক দয়াশীল। তিনি মানুষের প্রতি দয়া করে কিছু আমলের বরকতে রিজিক বাড়িয়ে দেন। সমাজে অবহেলার কারণে অনেক মানুষ সাধারণত এসব কাজ থেকে বিরত থাকে। কুরআন-সুন্নাহর ঘোষণায় রিজিক বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি আমল আছে। সেগুলো কী...?

বরকত মানুষের জন্য জরুরি বিষয়। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন, সে হিসেবে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতেও বরকত নেই। আবার অনেকে কঠোর পরিশ্রম করেন কিন্তু প্রাপ্তি সেভাবে আসে না। কাজে কোনো বরকত নেই।

পক্ষান্তরে এমন অনেক লোক আছেন, যারা কম হায়াত পেয়েছেন কিন্তু ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, আমল-ইবাদতে বরকত লাভ করেছেন। অনেক অল্প পূজিতে ব্যবসা এবং অল্প বেতনে চাকরি করার পরও তার রিজিকের অভাব নেই। পরিবারে অফুরন্ত বরকত।

সুতরাং সব কাজে বরকত অনেক জরুরি বিষয়। আর বান্দার রিজিক বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়গুলো হলো-

১. নিয়মিত তাওবাহ-ইসতেগফার:
হরজত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যারা বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করে; তাদের সামনে যত সংকটই (অভাব) থাকুক না কেন, মহান আল্লাহ তাআলা তা সমাধান করে দেন।’ (মুসতাদরেকে হাকেম)

সুতরাং বেশি বেশি তাওবাহ-ইসেতগফার করা-

> أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

> أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

> رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'

অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'

> أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : 'আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'

অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'

২. আল্লাহর রাস্তায় দান বা ব্যয় করা

যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করে, আল্লাহ তাআলা তাদের বেশুমার রিজিক দান করেন মর্মে মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এভাবে ঘোষণা করেন-

قُلۡ اِنَّ رَبِّیۡ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَ یَقۡدِرُ لَهٗ ؕ وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ

‘(হে রাসুল! আপনি)বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকতা।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৯)

৩. তাকওয়ার ওপর অটল থাকা

আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাকে ভয় করলে তিনি বান্দার প্রতি বরকত বা কল্যাণ দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

> وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّهٗ مَخۡرَجًا  - وَّ یَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ ؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِکُلِّ شَیۡءٍ قَدۡرًا

‘আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)

> وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ وَلَـكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ

‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন (তাকে ভয়) করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৯৬)

সুতরাং শিরক, কুফর ও নেফাক থেকে নিজেদের ঈমানকে হেফাজত করতে হবে। সব হারাম থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহকে সব বিষয়ে বেশি বেশি ভয় করতে হবে। তবেই আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার জন্য আসমানি ও জমিনের সব রিজিকে বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন।

৪. আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ নেমে আসে। এটি অনেক পরীক্ষিত একটি আমল। আত্মীয়-স্বজন তথা মা-বাবা, ভাই-বোন তথা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। হাদিসে এসেছে-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, তার রিজিক বাড়াতে চায় বা প্রশস্ত করতে চায়; তার হায়াত বা আয়ুকে দীর্ঘ করতে সে যেন আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৫. বার বার ওমরাহ করা

যারা অভাব কমাতে চায়, গোনাহ কমাতে চায় তাদের জন্য বার বার ওমরাহ করা জরুরি। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওমরাহ করে; ওমরাহ তার গোনাহ, তার অভাব অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি)

৬. বিয়ে করা

রিজিক বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী আমল বিয়ে করা। যারা অবিবাহিত তারা নেক নিয়তে বিয়ে করলে মহান আল্লাহ তাদের অভাব দূর করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَأَنكِحُوا الْأَيَامَى مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِن يَكُونُوا فُقَرَاء يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩২)

৭. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা

অভাব থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে, রিজিকে বরকত পেতে চাইলে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়ার বিকল্প নেই। যে কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার কথা মহান আল্লাহ এভাবে বলেছেন-

وَ قَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ

‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির/মুমিনুন : আয়াত ৬০)

৮. অসহায়দের প্রতি সদয় আচরণ ও দান করা

দান ও সদাচরণে রিজিক বাড়ে। রিজিক বাড়াতে চাইলে অসহায়-অভাবিদের প্রতি সদয় আচরণ করা। অভাবিদের প্রতি দয়া করলে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-

অসাহয়ের প্রতি দান ও সদাচরণে এ তাগিদ দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘দান করার কিছু যদি না থাকে তবে একটি খেজুরের অংশ দিয়ে হলেও দান করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’

৯. ইবাদতের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখা

ইবাদত তথা নামাজে খুব বেশি মনোযোগী হওয়া। নিজে যেমন প্র্যত্যেক ওয়াক্তর নামাজ পড়তে হবে তেমনি পরিবারের লোকদের নামাজ পড়ানো ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। আর তাতে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেবেন বলে এভাবে ঘোষণা করেছেন-

وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى

‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমি আপনাকে রিজিক দেই এবং আল্লাহকে ভয় করার পরিণাম শুভ তথা কল্যাণকার।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১৩২)

১০. যে কোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন খাবার খায় আর যদি বিসমিল্লাহ বলে; তবে শয়তান ওই খাবারে অংশ নিতে পারে না। যেটুতু খাবার আছে তা (পরিমাণে কম হলেও) তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

অনুরূপভাবে কেউ যদি ঘরে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে তখনও শয়তান তার সঙ্গে বাসায় ঢুকতে পারে না। এভাবে বান্দা যখন সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে, তখন শয়তান সব কাজ থেকে মাহরুম হয়। আর আল্লাহ তাআলা সব কাজেই বরকত দান করেন।

১১. কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো

কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো খুবই জরুরি। কুরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়া। যে যতবেশি কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াবে তার জন্য ততবেশি বরকত নেমে আসবে।

যে ঘরে কুরআন তেলাওয়াত হবে, কুরআনের চর্চা হবে, কুরআনের ওপর আমল করা হবে, সে ঘরেই নেমে আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও কল্যাণ। আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে বলেন-

> وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

‘এটি এমন একটি কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর; যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৫৫)

> وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُّصَدِّقُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلِتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالآخِرَةِ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَهُمْ عَلَى صَلاَتِهِمْ يُحَافِظُونَ

‘এ কুরআন এমন কিতাব, যা আমি নাজিল করেছি; বরকতময়, আগের গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার স্বীয় নামাজ সংরক্ষণ করে।’ (সুরা আনআম: আয়াত ৯২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এ কিতাব (কুরআন) দিয়ে বহু মানুষকে (বরকতের মাধ্যমে) ওপরে ওঠাবেন। আবার বহু মানুষকে নিচে নামাবেন।’(মুসলিম)

অর্থাৎ যা কুরআনুল কারিমে অনুসরণ করবেন, তাদের জন্য এ কিতাব হবে বরকতের কারণ। আর যারা এ থেকে দূরে সরে যাবে তা হবে তাদের জন্য অমঙ্গলজনক হওয়ার কারণ।

১২. সকালবেলা কাজ শুরু করা

দিনের শুরুতে কাজ শুরু করা। যদি কারো অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য একটু বেলা করে হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং নিজ ঘরের কাজ দিয়ে হলেও সকাল সকাল কাজ শুরু করা। কেননা সকালবেলার কাজে আল্লাহ তাআলা বরকত দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন-

اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا

হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে সকালবেলা বরকত দান করবেন।

অন্য বর্ণনায় এসেছে- তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য সকালবেলার সময়টাতে বরকত দেয়া হয়েছে।

সুতরাং কেউ যদি সকালের সময়টিতে ঘুমিয়ে থাকে তবে কিভাবে বরকত আসবে। এ কারণেই দিনের শুরুতে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ করা জরুরি।

১৩. আল্লাহর ওপর ভরসা করা

বরকত লাভের অন্যতম চাবি বা আমল হলো আল্লাহর ওপর ভরসা করা। মুমিন যত বেশি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে ততবেশি তাকে সাহায্য করবেন। পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতি আস্থা, নির্ভরতা বা ভরসা যতি বেশি কমবে, সে ততবেশি অপমাণিত ও লাঞ্ছিত হবে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘আল্লাহর প্রতি যেরকম ভরসা বা আস্থা রাখা দরকার, তোমরা যদি সেই মাপের আস্থা রাখতে পার, তাহলে আল্লাহ তাআলা পাখিকে যেভাবে রিজিক দেন তোমাদেরও সেভাবে রিজিক দেবেন।’

১৪. সালামের ব্যাপক প্রচলন করা

পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ সালামের ব্যাপক প্রচলন করা বরকত লাভের অন্যতম মাধ্যম। পরিপূণ সালাম হলো-

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَ رَحْمَةُ اللهِ وَ بَرَكَاتُهُ

উচ্চারণ : ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’

অর্থ : ‘আপনার উপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’

এ সালের পুরোটাই শান্তি, রহমত ও বরকতের দোয়া। যারা নিয়মিত বেশি বেশি সালামের ব্যাপক প্রচালন করার চেষ্টা করেন। ঠিক সালামের উত্তরদানকারী ব্যক্তিও ঠিক একই দোয়া করেন-

‘আপনার ওপরও শান্তি, রহমত ও বরকত নাজিল হোক।’

সুতরাং জীবনে বরকত লাভে সহজ ও প্রচলিত এ আমলগুলোর প্রতি একটু খেয়াল রাখলেই বা যত্নবান হলেই জীবনে নেমে আসবে অবিরত রহমত, বরকত।

১৫. আল্লাহর জন্য হিজরত করা

আল্লাহ তাআলা অনেক নেয়ামত দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রেখেছেন, তা অনুসন্ধানে হিজরত বা দেশে-বিদেশ ভ্রমণ করা। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াব্যাপী ভ্রমণ তথা রিজিকের তালাশ করা।

উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারলে মহান আল্লাহ বান্দার সব অভাব দূর করে দেবেন। রিজিকে বরকত দেবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহজ এ আমলগুলোর মাধ্যমে রিজিকে বেশি বেশি বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত আমলগুলো নিয়মিত পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

_*আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক*_
 _শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা"_ 
*তিরমিযীঃ২৬৭৪*


সূরা আল-বাকারার ফজিলত

শনিবার, মে ১৮, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে



শয়তান প্রবেশ করতে পারে না যে ঘরে সূরা আল-বাকারাহ পাঠ করা হয়।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন,
“যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা আল-বাকারার শেষ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করে সে তার পক্ষে যথেষ্ট হবে।” (বুখারী)

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার দুই হাজার বছর পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখেছিলেন এবং সূরা আল-বাকারার সাথে সমাপ্ত করার জন্য তিনি এর থেকে দুটি আয়াত নাযিল করেছিলেন।
যদি কোন বাড়িতে সূরা আল-বাকারা তেলাওয়াত করা হয় তবে কোনও শয়তান এর কাছে আসতে পারবে না।” (তিরমিযী)

সূরা আল-বাকারাহ পাঠকারীর জাদুবিদ্যা ও খারাপ কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারে না।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের ঘরকে কবরে পরিণত করো না। নিশ্চয় শয়তান যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সেখানে প্রবেশ করে না” । (তিরমিযী)

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কেয়ামতের দিন এটি তেলাওয়াতকারীদের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আসবে।
দুটি উজ্জ্বল,সূরা আল বাকারা এবং সূরা আল ইমরান তেলাওয়াত কর, কারণ কিয়ামতের দিন তারা দুটি মেঘ বা দুটি ছায়া,
বা পাখির দুটি ঝাঁক হয়ে আসবে যারা তাদের আবৃত্তি করবে তাদের জন্য অনুরোধ করবে। সূরা বাকারার তিলাওয়াত কর,
এ থেকে শরণাপন্ন হওয়া আশীর্বাদ এবং তা ত্যাগ করা দুঃখের কারণ এবং যাদুকররা এর মোকাবিলা করতে পারে না।” (মুসলিম)

(সূরা বাকারার সুফল)
২৮6 টি আয়াত রয়েছে এবং হ্যাঁ এটি কোরআনের দীর্ঘতম সূরা এবং এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বলেছেন:
“সূরা বাকারাহ শিখুন, কারণ এটি শেখার মধ্যে দোয়া রয়েছে, এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুঃখ রয়েছে, এবং যাদুকররা এটিকে মুখস্ত করতে পারে না”।
এবং সূরা আল বাকারা কিয়ামতের দিন প্রদীপের অন্যতম আলো হবে
তবে, আপনি যখন এটি শিখেন, পড়েন বা হাফাজ করেন তখন উপকারিতা রয়েছে .. এবং ….
সুবিধাগুলি হ’ল:

১- শাইতান যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত হয় সে ঘরে প্রবেশ করবে না ..
মুসনাদে আহমাদ,

সহীহ মুসলিম আত-তিরমিযী ও আন-নাসা -এ বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রাহ হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।

“আপনার ঘরগুলিকে কবরে পরিণত করবেন না। নিশ্চয় শয়তান সেই ঘরে প্রবেশ করবে না যেখানে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়”।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা
“শয়তান যে বাড়ি থেকে সূরা আল-বাকারা শোনা যায় সেখান থেকে পালিয়ে যায়”
২- যারা সূরা বাকারার দশটি আয়াত তেলাওয়াত করে, শয়তান তার বা তার পরিবারের নিকটবর্তী হয় না, বা তাকে অপছন্দিত কোন কিছুতেই তাকে স্পর্শ করা যায় না … দশটি আয়াতটি হ’ল:
1. প্রথম থেকে চারটি = 4
2. একটি আয়াত 255 (আয়াত আল-কুরসি) = 1
৩. দুটি পদ (256-257) = 2 4. শেষ তিনটি আয়াত=3=10
৩- শয়তান তিন রাত / দিন ঘরে প্রবেশ করবে না।
সালাহ ইবনে সা’দ হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“প্রত্যেক কিছুর উঁচু উঁকি আছে এবং আল-বাকারা হ’ল কোরআনের উঁচু উঁকি। যে ব্যক্তি তার ঘরে রাতে আল-বাকারার তিলাওয়াত করবে, তখন শয়তান তিন রাত্রি সেই বাড়িতে প্রবেশ করবে না।
তার বাড়িতে, শয়তান তিন দিনের জন্য সেই বাড়িতে প্রবেশ করবে না ”

৪- ফেরেশতারা আপনাকে সূরা বাকারার তেলাওয়াত শুনে নিকটে আসবে।
আল বুখারী রেকর্ড করেছেন যে উসাইদ বিন হুদায়ের বলেছেন,
যে তিনি একবার সুরা বাকারা পাঠ করছিলেন যখন তার ঘোড়া তার পাশে বাঁধা ছিল। ঘোড়া কিছু আওয়াজ করতে লাগলো।
তিনি যখন তেলাওয়াত করা বন্ধ করলেন, ঘোড়া চলাচল বন্ধ করে দিল। তিনি যখন পড়া চালিয়ে যান,
ঘোড়াটি আবার চলতে শুরু করে। তারপরে যখন সে থামল, ঘোড়া থামল। তিনি যখন আবার এটি আবৃত্তি করেন, তখন ঘোড়াটি আবার সরে যায়।

এদিকে তার ছেলে ইয়াহিয়া ঘোড়ার কাছাকাছি ছিল। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে ঘোড়াটি তার উপরে উঠে পড়বে।

তিনি যখন আকাশের দিকে তাকালেন এবং আলোকিত মেঘ দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাঁর পুত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।
পরের দিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন এবং যা ঘটেছে তা জানিয়েছিলেন।

তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি জানো যে এটি কি ছিল?”

এবং তিনি “না” বলেছিলেন
তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তারা ফেরেশতারা ছিল, তারা তোমার কণ্ঠ শুনে (সুরা বাকারা পাঠ করল)

কাছে এসেছিল এবং আপনি যদি পড়তে থাকতেন, সকাল হলে লোকেরা ফেরেশতাদের দেখতে সক্ষম হত, এবং ফেরেশতারা তাদের চোখ থেকে আড়াল হবে না “।


স্বামীর প্রতি স্ত্রীর করণীয়

শনিবার, মে ১৮, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে

_ড. মুহাম্মদ বেলায়েত হুসাইন_


HW


পরিবার হলো সমাজ-সংগঠনের একক। অর্থাৎ এই পরিবারের সমষ্টিই সমাজ। ফলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তির মূল উৎসভূমিই হলো পরিবার। একটি পরিবারের স্তম্ভ¢ হলো দুটি৷ নারী-পুরুষ তথা স্বামী ও স্ত্রী৷ এই পারিবারিক শৃঙ্খলা, শান্তি ও ভালবাসা টিকিয়ে রাখতে স্বামী ও স্ত্রীর রয়েছে অনেক দায়িত্ব।

আজকের প্রবন্ধে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব সম্পর্কিত ইসলামে যে নির্দেশনা রয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ্।

১).শরী’আতসম্মত প্রত্যেক কাজে স্বামীর আনুগত্য করা।

২).অবাধ্য না হওয়া: শরী’আত বিরোধী আদেশ ব্যতিত স্বামীর অবাধ্য না হওয়া। স্বামীর শরী’আত বিরোধী কোনো কাজের আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য জায়িজ নয়। তা অমান্য করাই ঈমানদার স্ত্রীর কর্তব্য। কাজেই গুনাহ এবং শরী’আত বিরোধী কোন কাজে স্বামী আদেশ করলে তার নিকটে এব্যাপারে অপারগতা তুলে ধরা এবং তাকে নরম ভাষায় বোঝানো।

৩). শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে উত্তম আচরন করা।

৪). আদব রক্ষা করে চলা।

৫). কৃতজ্ঞ হওয়া: জগত সংসারে এমন অনেক নারী রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই পরশ্রীকাতর হয়ে থাকেন। প্রতিবেশীদের ঘরে এটা আছে, সেটা আছে আমাদের কেন নেই-আমাদের অবশ্যই সেটা থাকতে হবে। স্বামীর আয় রোজগারের কথা না ভেবেই এরকম চিন্তা করেন। স্বামী যদি তাঁর আর্থিক সমস্যার কথা জানান, তাহলে উল্টো বলে বসেন-অন্যদের থাকলে তোমার কেন নেই, তুমি একটা বুদ্ধু, হাবা ইত্যাদি। তখন যদি স্ত্রী বলে ফেলে আহা! আমার বিয়েটা যদি অমুকের সাথে হতো, তাহলে কতোই না ভালো হত! কিংবা কী চেয়েছিলাম, আর কী পেলাম! ইত্যাদি। এতে করে স্বামী পুরুষটি ভীষণভাবে মর্মাহত হন, হতাশায় ভোগেন। সব সময় তার মনে স্ত্রীর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয়টি কাজ করে। স্ত্রীর কাছে নিজেকে নতজানু মনে হতে হতে সকল আগ্রহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন-যার পরিণতি খুবই অপ্রত্যাশিত।

৬). পরস্পরের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা: আমাদের প্রতিবেশী বা নিকটজনদের অনেকেই আছে যারা হিংসুক, পরশ্রীকাতর ও প্রতিহিংসা পরায়ণ। যদি কোন পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর সম্পর্ক থাকে, তাদের তা সহ্য হয় না, এই পরশ্রীকাতর মানুষ গুলির আর ঘুম হয়না তারা উঠে পড়ে লাগে তাদের সম্পর্কের মাঝে অবনতি ঘটানোর জন্য।

যর্থাথই বলেছেন একজন দার্শনিক ‘হিংসুক এ চিন্তাতেই শুকিয়ে যায় যে তার প্রতিবেশী কেন এতো সুখে থাকে।’

মনে রাখতে হবে, এসব ক্ষেত্রে নিন্দুকেরা এমন সব গুজব ছড়ায়, যা থেকে রেহাই পেতে হলে প্রয়োজন ঠান্ডা মাথায় সংবেদনশীল মন নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মাঝে বিষয়টি আলোচনা করা। সত্য না জেনেই কোন রকম সিদ্ধান্ত নেয়া, বাড়াবাড়ি করা মারাত্মক ভুল।

৭). সর্বদা স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করা।

৮). স্বামীকে অসন্তুষ্ট না রাখা।

৯). স্বামীর সাথে অসংযত আচরণ না করা।

১০). স্বামীকে কষ্ট না দেওয়া।

১১). ধৈর্য, দৃঢ়তা ও বিচক্ষনাতার সাথে সাথে সব প্রতিকূল অবস্থার মুকাবিলা করা।

১২). দুঃখ-কষ্ট ও মুসীবতের সময় হা-হুতাশ না করা, ধৈর্যধারণ করা।

১৩). স্বামী অফিস, ব্যবসা বা বাইরে থেকে বাসায় ফেরার পর স্ত্রীদের উচিত এমন আচরণ করা, যাতে বোঝা যায় যে, তার আগমনে স্ত্রী ভীষণ খুশী ও আনন্দিত হয়েছে।

১৪). স্বামী বিদেশ কিংবা বাইরে থেকে আসলে, স্ত্রী সব কাজ ফেলে সামনে এসে প্রথমেই হাসিমুখে তার কুশল জিজ্ঞাসা করবে। টাকা-পয়সা বা আমার জন্য কি কি এনেছেন, বাক্স বা থলের মধ্যে কি আছে? এই ধরনের কথাবার্তা বলবে না। কোনরূপ নাখোশী বা বিরক্ত ভাব প্রকাশ করবে না।

১৫). স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য ঘরের ভিতরে সাজগোজ করা।

১৬). স্বামীর ভালোলাগা মন্দলাগার দিকে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখা।

১৭). আল্লাহর দীন পালনের জন্য ইবাদত বন্দেগীর পথে একে অপরকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা।

১৮).প্রয়োজনাতিরিক্ত ভরণ-পোষণ দাবি না করা।

১৯). স্বামী যদি স্ত্রী অপেক্ষা অস্বচ্ছল হয় তাহলে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে সাহায্য সহযোগীতা করা।

২০). আল্লাহর রাজিখুশির জন্য ঘর-গৃহস্থালীর কাজকর্ম ও সন্তান প্রতিপালনে স্বামীকে যথাসাধ্য সাহায্য করা। রসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘর-গৃহস্থালীর যাবতীয় দায়িত্ব অন্যের উপর ছেড়ে না দিয়ে হযরত খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহা নিজই সম্পন্ন করতেন।

২১). স্বামীর আত্মমর্যাদাবোধের প্রতি খেয়াল রাখা।

২২).শরী’আত অনুমদন করে না এমন বিষয়ে পরপুরুষের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখা।

২৩).স্বামীর আমানত হিসেবে নিজের ইজ্জত-আব্রু হেফাযত করা। কোনো ধরনের খেয়ানত না করা।

২৪).স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে ঢোকার অনুমিত না দেওয়া।

২৫). স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া: স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক। যদি কোন সময় কোন কারণে অকারণে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ সংঘটিত হয় তাহলে স্ত্রী ধৈর্যের সাথে ঝগড়া বিবাদ এড়িয়ে চলবে এবং সুযোগ সাপেক্ষ স্বামীকে বুঝাবে। এমতাবস্থায় রাগবশত স্বামীর গৃহ ত্যাগ করবে না।

২৬).স্বামীর সম্পদ হেফাযত করা। অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে কাউকে কোনো কিছু না দেওয়া।

২৭).স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে অতিরিক্ত নফল ইবাদতে মশগুল না থাকা। যেমন অতিরিক্ত নফল নামাজ, রোযা না রাখা।

২৮).স্বামী মেলামেশার জন্য আহবান করলে শরী’আতসম্মত কোনো ওযর না থাকলে আপত্তি না করা।

২৯).স্বামী দরিদ্র কিংবা অসুন্দর হওয়ার কারণে তাকে তুচ্ছ না করা।

৩০).স্বামীকে কোনো গুনাহের কাজ করতে দেখলে আদবের সাথে তাকে বিরত রাখা।

৩১).স্বামীর নাম ধরে না ডাকা।

৩২).কারো কাছে স্বামীর বদনাম, দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা।

৩৩).শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনেকে সম্মানের পাত্র মনে করা। তাদেরকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা। তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা। ঝগড়া-বিবাদ কিংবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া।

৩৪).স্বামীর মৃত্যুর পরও স্ত্রীর তাঁর স্বামীর প্রতি কর্তব্য রয়েছে। ইয়াতীম সন্তানদের লালন পালন ও তাদের মানুষ করা। স্বামীর ধন-সম্পদ রক্ষা করা। স্বামীর সুনাম রক্ষা করা, স্বামীর আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা। স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজ সমাধান করা। যদি স্বামীর কোন ঋণ থাকে, তা পরিশোধ করে দেওয়া এবং সর্বদা স্বামীর মাগফিরাতের জন্য আল্লাহ্র নিকট দু’আ করা।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা স্বামীর যথার্থ কল্যাণ কামনার মাধ্যমে আমাদের তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করার তৌফিক দান করুন, ..............অমিন।


ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png