LIVE
Loading latest headlines...

মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯

সহিহ মুসলিম অধ্যায়ঃ ১ ঈমান (১ - ৪২১ টি হাদীস)

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
সহিহ মুসলিম অধ্যায়ঃ ১ ঈমান
১. অধ্যায়ঃ
ঈমান (১-৪২১ টি হাদীস)
ঈমান, ইসলামের পরিচয় এবং আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্য সাব্যস্ত করার প্রতি ঈমান ওয়াজিব হওয়া, ভাগ্যলিপির উপর অবিশ্বাসী লোকের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা ও তাঁর ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণের প্রমাণাদির বর্ণনা অত্র গ্রন্থের সংকলক ইমাম আবুল হুসায়ন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ) বলেন, আমরা এ কিতাব আল্লাহর সাহায্যে শুরু করছি এবং তাঁকেই যথেষ্ট মতে করছি। মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ ভিন্ন আমাদেরকে আর তাওফীকদাতা কেউ নেই।
ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়া‘মার থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বাসরার অধিবাসী মা‘বাদ জুহাইনাহ্‌ প্রথম ব্যক্তি যে তাকদীর অস্বীকার করে। আমি ও হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান উভয়ে হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। আমরা বললাম, যদি আমরা এ সফরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যে কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়ে যাই তাহলে ঐ সব লোক তাকদীর সম্বন্ধে যা কিছু বলে সে সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করব। সৌভাগ্যক্রমে আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর মাসজিদে ঢুকার পথে পেয়ে গেলাম। আমি ও আমার সাথী তাঁকে এমনভাবে ঘিরে নিলাম যে, আমাদের একজন তাঁর ডান এবং অপরজন তাঁর বামে থাকলাম। আমি মনে করলাম আমার সাথী আমাকেই কথা বলার সুযোগ দেবে। (কারণ আমি ছিলাম বাকপটু)। আমি বললাম : “হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমাদের এলাকায় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটেছে, তারা একদিকে কুরআন পাঠ করে অপরদিকে জ্ঞানের অন্বেষণও করে। ইয়াহ্‌ইয়া তাদের কিছু গুণাবলীর কথাও উল্লেখ করলেন। তাদের ধারণা (বক্তব্য) হচ্ছে, তাকদীর বলতে কিছু নেই এবং প্রত্যেক কাজ অকস্মাৎ সংঘটিত হয়।” ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ “যখন তুমি এদের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আর আমার সাথেও তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর নামে শপথ করে বললেন, এদের কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা দান-খয়রাত করে দেয় তবে আল্লাহ তাঁর এ দান গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাকদীরের উপর ঈমান না আনবে। অতঃপর তিনি বললেন, আমার পিতা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের সামনে আবির্ভূত হলো। তারপরনের কাপড়-চোপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুলগুলো ছিল মিশমিশে কালো। সফর করে আসার কোন চিহ্নও তাঁর মধ্যে দেখা যায়নি। আমাদের কেউই তাঁকে চিনেও না।

অবশেষে সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বসলো। সে তাঁর হাঁটুদ্বয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে দিলো এবং দুই হাতের তালু তাঁর (অথবা নিজের) উরুর উপর রাখলো এবং বললো, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল, সলাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হাজ্জ করবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। বর্ণনাকারী [‘উমার (রাঃ) ] বলেন, আমরা তাঁর কথা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলাম। কেননা সে (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করছে আর (বিজ্ঞের ন্যায়) সমর্থন করছে। এরপর সে বললো, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নাবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। এবার সে বললো, আমাকে ‘ইহসান’ সম্পর্কে বলুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘ইহসান’ এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে যেন তাঁকে দেখছো, যদি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করবে। এবার সে জিজ্ঞেস করলো, আমাকে কিয়ামাত সম্বন্ধে বলুন! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। অতঃপর সে বললো, তাহলে আমাকে এর কিছু নিদর্শন বলুন। তিনি বললেন, দাসী তাঁর মনিবকে প্রসব করবে [১৫] এবং (এককালের) নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, দরিদ্র, বকরীর রাখালদের বড় দালান-কোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় গর্ব-অহংকারে মত্ত দেখতে পাবে। [১৬] বর্ণনাকারী [‘উমার (রাঃ) ] বলেন, এরপর লোকটি চলে গেলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে ‘উমার! তুমি জান, এ প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত আছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তিনি জিবরীল। তোমাদের কাছে তিনি তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১ম খণ্ড, ১; বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ১ম খণ্ড, ১)[১৪] জ্ঞাতব্য : প্রথম প্রকাশে হাদীসের পরিভাষা-বিষয়ক নীতিমালা এখানে উল্লেখিত হয়েছিল। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে উক্ত বিষয়টি ‘সহীহ মুসলিম-এর হাদীস বর্ণনার কতিপয় পরিভাষা’ অনুচ্ছেদের পূর্বাংশে আলোচনা করা হয়েছে।[১৫] বাঁদী মনিবকে প্রসব করবে। এর অর্থ হলো মনিব তাঁর বাঁদীর সাথে যেরূপ ব্যবহার করে, সন্তানগণ তাদের মাতাদের সাথে সেরূপ ব্যবহার করবে, তারা মাতাঁর বাধ্য থাকবে না। সন্তান মাতাঁর অবাধ্য হবে, স্ত্রীর অনুগত হবে। আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শারী’আত মোতাবেক বিয়ে শাদী করবে না। বাদশাহ ও ধনী ব্যক্তিগণ দাসী ইচ্ছামত রাখবে। বাঁদী দাসী অধিক কেনাবেচা হবে। সে সময় দাসীকে বিয়ে করবে অথচ সেটা যে তাঁর মা জানতে পারবে না।
[১৬] তুচ্ছ লোক বড় হয়ে যাবে, দুনিয়ার অবস্থা ব্যবস্থা বদলে যাবে। বড় ছোট হয়ে যাবে, সম্মানী ব্যক্তি অপমানিত হবে। অসম্মানী ব্যক্তি মানের দাবী করবে। যারা এ কাজের উপযুক্ত নয়, তারা সে কাজের মালিক মুখতাঁর হয়ে বসবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস




অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হতে সাবধান উপদেশ হাদীস সমূহ । পর্ব-২

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

পরিচ্ছেদঃ
বিচ্ছেদ্য সাক্ষী হতে সাবধান
অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হতে সাবধান

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ يُدْنِى الْمُؤْمِنَ فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ، وَيَسْتُرُهُ فَيَقُوْلُ أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا فَيَقُوْلُ نَعَمْ أَىْ رَبِّ. حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوْبِهِ وَرَأَى فِى نَفْسِهِ أَنَّهُ هَلَكَ قَالَ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِى الدُّنْيَا، وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ. فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الْكَافِرُ وَالْمُنَافِقُوْنَ فَيَقُوْلُ الأَشْهَادُ هَؤُلاَءِ الَّذِيْنَ كَذَبُوْا عَلَى رَبِّهِمْ، أَلاَ لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِيْنَ.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘(ক্বিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে নিজের নিকটবর্তী করবেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা নিজ বাজু তার উপরে রেখে তাকে ঢেকে নিবেন। অতঃপর আল্লাহ্ সেই বান্দাকে বলবেন, আচ্ছা! বল দেখি, এই গোনাহটি তুমি করেছ কি? এই গোনাহটি সম্পর্কে তুমি অবগত আছ কি? সে বলবে হ্যাঁ, হে আমার রব! আমি অবগত আছি। শেষ পর্যন্ত এক একটি করে তার কৃত সমস্ত গোনাহের স্বীকৃতি আদায় করবেন। এদিকে সে বান্দা মনে মনে এই ধারণা করবে যে, সে এই সমস্ত অপরাধের কারণে নির্ঘাত ধ্বংস হবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, দুনিয়াতে আমি তোমার এই সমস্ত অপরাধ ঢেকে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিবো। অতঃপর তাকে নেকীর আমলনামা দেওয়া হবে। আর কাফের ও মুনাফিকদেরকে সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখে আনয়ন করা হবে এবং উচ্চস্বরে এই ঘোষণা দেওয়া হবে- এরা তারা, যারা স্বীয় পরওয়ারদিগারের বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করত। জেনে রাখ, এই সমস্ত যালিমদের উপর আজ আল্লাহর লা’নত’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৫১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩১৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَضَحِكَ فَقَالَ هَلْ تَدْرُوْنَ مِمَّ أَضْحَكُ. قَالَ قُلْنَا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ. قَالَ مِنْ مُخَاطَبَةِ الْعَبْدِ رَبَّهُ يَقُوْلُ يَا رَبِّ أَلَمْ تُجِرْنِىْ مِنَ الظُّلْمِ قَالَ يَقُوْلُ بَلَى. قَالَ فَيَقُوْلُ فَإِنِّىْ لاَ أُجِيْزُ عَلَى نَفْسِىْ إِلاَّ شَاهِدًا مِنِّىْ قَالَ فَيَقُوْلُ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ شَهِيْدًا وَبِالْكِرَامِ الْكَاتِبِيْنَ شُهُوْدًا قَالَ فَيُخْتَمُ عَلَى فِيْهِ فَيُقَالُ لأَرْكَانِهِ انْطِقِى. قَالَ فَتَنْطِقُ بِأَعْمَالِهِ قَالَ ثُمَّ يُخَلَّى بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَلاَمِ قَالَ فَيَقُوْلُ بُعْدًا لَكُنَّ وَسُحْقًا. فَعَنْكُنَّ كُنْتُ أُنَاضِلُ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম, হঠাৎ তিনি হাসলেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান আমি কেন হাসছি? আমরা বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, ক্বিয়ামতের দিন বান্দা যে তার রবের সাথে সরাসরি কথা বলবে, সেই কথাটি স্মরণ করে হাসছি। বান্দা বলবে, হে রব! তুমি কি আমাকে যুলম হতে নিরাপত্তা দান করনি? আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ, তখন বান্দা বলবে, আজ আমি আমার সম্পর্কে আপনজন ব্যতীত আমার বিরুদ্ধে অন্য কারও সাক্ষ্য গ্রহণ করব না। তখন আল্লাহ বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হিসাবে এবং কিরামান-কাতেবীনের সাক্ষ্যই তোমার জন্য যথেষ্ট। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তার মুখের উপর মোহর লাগিয়ে দিবেন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হবে, তোমরা কে কখন কি কি কাজ করেছো বল। তখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ তাদের কৃতকর্মসমূহ প্রকাশ করে দিবে। এরপর তার মুখকে স্বাভাবিক অবস্থায় খুলে দেওয়া হবে। তখন সে স্বীয় অঙ্গসমূহকে লক্ষ্য করে আক্ষেপের সাথে বলবে, হে দুর্ভাগা অঙ্গসমূহ! তোরা দূর হ! তোদের ধ্বংস হৌক! তোদের জন্যই তো আমি আমার রবের সাথে ঝগড়া করেছিলাম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৫৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ هَلْ تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ الشَّمْسِ فِى الظَّهِيْرَةِ لَيْسَتْ فِىْ سَحَابَةٍ. قَالُوْا لاَ. قَالَ فَهَلْ تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَيْسَ فِىْ سَحَابَةٍ. قَالُوْا لاَ. قَالَ فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لاَ تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ إِلاَّ كَمَا تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا قَالَ فَيَلْقَى الْعَبْدَ فَيَقُوْلُ أَىْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ فَيَقُوْلُ بَلَى. قَالَ فَيَقُوْلُ أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلاَقِىَّ فَيَقُوْلُ لاَ. فَيَقُوْلُ فَإِنِّىْ أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِى. ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِىَ فَيَقُوْلُ أَىْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ فَيَقُولُ بَلَى أَىْ رَبِّ.
فَيَقُوْلُ أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلاَقِىَّ فَيَقُوْلُ لاَ. فَيَقُوْلُ فَإِنِّى أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِىْ. ثُمَّ يَلْقَى الثَّالِثَ فَيَقُوْلُ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ فَيَقُولُ يَا رَبِّ آمَنْتُ بِكَ وَبِكِتَابِكَ وَبِرُسُلِكَ وَصَلَّيْتُ وَصُمْتُ وَتَصَدَّقْتُ. وَيُثْنِى بِخَيْرٍ مَا اسْتَطَاعَ فَيَقُولُ هَا هُنَا إِذًا قَالَ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ الآنَ نَبْعَثُ شَاهِدَنَا عَلَيْكَ. وَيَتَفَكَّرُ فِىْ نَفْسِهِ مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْهَدُ عَلَىَّ فَيُخْتَمُ عَلَى فِيْهِ وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ وَلَحْمِهِ وَعِظَامِهِ انْطِقِى فَتَنْطِقُ فَخِذُهُ وَلَحْمُهُ وَعِظَامُهُ بِعَمَلِهِ وَذَلِكَ لِيُعْذِرَ مِنْ نَفْسِهِ. وَذَلِكَ الْمُنَافِقُ وَذَلِكَ الَّذِىْ يَسْخَطُ اللهُ عَلَيْهِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, দ্বিপ্রহরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের মধ্যে পরস্পরে বাধা সৃষ্টি হয়? তারা বললেন, না। তিনি আরও বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার রাত্রে পূর্ণ চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন প্রকারের অসুবিধা হয়? তারা বললেন, না। অতঃপর তিনি বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এই দু’টির কোন একটিকে দেখতে তোমাদের যেই পরিমাণ অসুবিধা হয়, সেই দিন তোমাদের রবকে দেখতে সেই পরিমাণ অসুবিধাও হবে না। এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তখন আল্লাহ তা’আলা কোন এক বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে মর্যাদা দান করিনি? আমি কি তোমাকে সর্দারী দান করিনি? আমি কি তোমাকে বিবি দান করিনি? আমি কি তোমার জন্য ঘোড়া ও উটকে অনুগত করে দেয়নি? আমি কি তোমাকে এই সুযোগ দেয়নি যে, তুমি নিজ সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিবে এবং তাদের নিকট হতে এক-চতুর্থাংশ মাল ভোগ করবে? জবাবে বান্দা বলবে, হ্যাঁ, (হে আমার প্রতিপালক!)। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে বললেন, আচ্ছা বল দেখি, তোমার কি এই ধারণা ছিল যে, তুমি আমার সাক্ষাৎ লাভ করবে? বান্দা বলবে, না। এইবার আল্লাহ বলবেন, (দুনিয়াতে) তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে আজ আমিও (আখেরাতে) অনুরূপভাবে তোমাকে ভুলে থাকব। (অর্থাৎ তোমাকে আযাবে লিপ্ত রাখব)। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন, সেও অনুরূপ বলবে। তারপর তৃতীয় এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাকেও অনুরূপ কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার প্রতি, তোমার কিতাবের প্রতি এবং তোমার সমস্ত নবীগণের প্রতি ঈমান এনেছি, ছালাত আদায় করেছি, ছিয়াম পালন করেছি এবং দান-ছাদাক্বা করেছি। মোটকথা, সে সাধ্য পরিমাণ নিজের নেক কার্যসমূহের একটি তালিকা আল্লাহর সম্মুখে তুলে ধরব। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আচ্ছা! তুমি তো তোমার কথা বললে, এখন এখানেই দাঁড়াও, এক্ষুণি তোমার ব্যাপারে সাক্ষী উপস্থিত করছি। এই কথা শুনে বান্দা মনে মনে চিন্তা করবে, এমন কে আছে যে, এখানে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে?
অতঃপর তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেওয়া হবে এবং তার রানকে বলা হবে, তুমি বল, তখন তার রান, হাড়, মাংস প্রভৃতি এক একটি করে বলে ফেলবে, এরা যা যা করেছিল। তার মুখে মোহর লাগিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে এই জন্য সাক্ষী গ্রহণ করা হবে, যেন সেই বান্দা কোন ওযর-আপত্তি পেশ করতে না পারে। বস্তুতঃ যেই বান্দার কথা আলোচনা করা হয়েছে, সে হ’ল মুনাফিক এবং এই কারণেই আল্লাহ তার প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হবেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৫৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২১)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১০
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلاً مِّنْ أُمَّتِىْ عَلَى رُءُوْسِ الْخَلاَئِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَّتِسْعِيْنَ سِجِلاًّ كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا أَظَلَمَكَ كَتَبَتِى الْحَافِظُوْنَ فَيَقُوْلُ لاَ يَا رَبِّ فَيَقُوْلُ أَفَلَكَ عُذْرٌ فَيَقُوْلُ لاَ يَا رَبِّ فَيَقُوْلُ بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً فَإِنَّهُ لاَ ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتُخْرَجُ بِطَاقَةٌ فِيْهَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ فَيَقُوْلُ احْضُرْ وَزْنَكَ فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلاَّتِ فَقَالَ إِنَّكَ لاَ تُظْلَمُ قَالَ فَتُوْضَعُ السِّجِلاَّتُ فِىْ كِفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِىْ كِفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلاَّتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ فَلاَ يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللهِ شَىْءٌ-
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন এমন এক ব্যক্তিকে জনসম্মুখে উপস্থিত করা হবে, যার আমলনামা খোলা হবে নিরানব্বই ভলিয়মে এবং প্রতি ভলিয়ম বিস্তীর্ণ হবে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি এর কোন একটিকে অস্বীকার করতে পারবে? অথবা আমার লিখক ফেরেশতাগণ কি তোমার প্রতি যুলুম করেছে? সে বলবে, না। হে আমার রব্ব! আল্লাহ তা’আলা জিজ্ঞেস করবেন, তবে কি তোমার পক্ষ হতে কোন ওযর পেশ করার আছে? সে বলবে, না; হে আমার রব! তখন আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ, তোমার একটি নেকী আমার নিকট রক্ষিত আছে। তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ, আজ তোমার প্রতি কোন যুলুম বা অবিচার করা হবে না। এরপর এক টুকরা কাগজ বের করা হবে, যাতে লিখা আছে, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ [অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ, (মা‘বূদ) নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল]। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার আমলের ওযন দেখার জন্য উপস্থিত হও। তখন সে বলবে, হে আমার রব! ঐ সমস্ত বিরাট বিরাট দফতরের মুকাবিলায় এই এক টুকরা কাগজের মূল্যই বা কি আছে? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার উপর কোন অবিচার করা হবে না। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অতঃপর ঐ সমস্ত দফতরগুলি এক পাল্লায় এবং এই কাগজের টুকরাখানি আরেক পাল্লায় থাকবে। কাগজের টুকরা যে পাল্লায় থাকবে তা ভারী হয়ে নীচের দিকে ঝুঁকে থাকবে। মোটকথা, আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন জিনিস ওযনই হতে পারবে না’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫৫৫৯; বাংলা মিশকাত হা/৫৩২৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১১
عَنْ عَدِىِّ بْنِ حَاتِمٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَا مِنْكُمْ أَحَدٌ إِلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ، لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.
আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মধ্যে কোন দোভাষী এবং এমন কোন পর্দা থাকবে না, যা তাকে আড়াল করে রাখবে। সে তার ডানে তাকাবে, তখনও পূর্বে প্রেরিত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আবার বামে তাকাবে, তখনও পূর্ব প্রেরিত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আর সম্মুখের দিকে তাকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। যা একেবারে চেহারার সম্মুখে অবস্থিত। সুতরাং খেজুর ছালের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হতে বাঁচতে চেষ্টা কর’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৫০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩১৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১২
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تُكَلِّمَ السِّبَاعُ الإِنْسَ وَحَتَّى تُكَلِّمَ الرَّجُلَ عَذَبَةُ سَوْطِهِ وَشِرَاكُ نَعْلِهِ وَتُخْبِرَهُ فَخِذُهُ بِمَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ مِنْ بَعْدِهِ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! সেই সময় পর্যন্ত ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যে পর্যন্ত না হিংস্র পশু মানুষের সাথে কথা বলবে এবং যে পর্যন্ত না কারও চাবুক তার সাথে কথা বলবে, তার জুতার ফিতা তার সাথে কথা বলবে। আর তার উরু তাকে জানিয়ে দিবে যে, তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী কি করেছে’ (তিরমিযী, বাংলা মিশকাত হা/৫২২৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৩
عَنْ بَهز بْنِ حَكِيْمٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: إِنَّكُمْ تُدْعَوْن مُفَدَّمة أَفْوَاهُكُمْ بالفِدَام، فَأَوَّلُ مَا يُسْأَلُ عَنْ أَحَدِكُمْ فَخِذُهُ وَكَتِفُهُ.
বাহয ইবনু হাকিম তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ
বাহয ইবনু হাকিম তার পিতার মধ্যস্থতায় বর্ণনা করেন, তার দাদা বলেন, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে মুখ বন্ধ করে ডাকা হবে। সেদিন তোমাদের মুখ বন্ধ থাকবে। সর্বপ্রথম তোমাদের উরু এবং কাধকে জিজ্ঞেস করা হবে’ (নাসাঈ, ইবনু কাছীর হা/৫৬৬৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৪
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ أَوَّلَ عَظْمٍ مِنَ الْإِنْسَانِ يَتَكَلَّمُ يَوْمَ يُختَم عَلَى الْأَفْوَاهِ، فَخذُه مِنَ الرِّجل الْيُسْرَى.
উকবা ইবনু আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষের যখন মুখ বন্ধ থাকবে, তখন তার বাম উরুর হাড় সর্বপ্রথম কথা বলবে’ (ইবনু কাছীর ৫৬৭১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস




উপদেশ হাদীস সমূহ । পর্ব-১

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

উপদেশ   
১উপদেশ   
পরিচ্ছেদঃ
উপদেশ গ্রহণের গুরুত্ব


عَنْ تَمِيْمِ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الدِّيْنُ النَّصِيحَةُ ثَلَاثًا. قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ.
তামীম আদ-দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘দ্বীন হচ্ছে উপদেশ’। অর্থাৎ যথাযথভাবে কল্যাণ কামনা করা। কথাটি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বললেন। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম নেতাদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানের জন্য (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ.
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে বায়’আত বা শপথ করেছি ছালাত প্রতিষ্ঠা করার, যাকাত প্রদান করার এবং সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার (বুখারী হা/৫৭, ৫২৪; মুসলিম হা/৫৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثاً وَيَسْخَطُ لَكُمْ ثَلاَثاً يَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوْهُ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئاً وَأَنْ تَعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعاً وَلاَ تَفَرَّقُوْا وَأَنْ تُنَاصِحُوْا مَنْ وَلاَّهُ اللهُ أَمْرَكُمْ وَيَسْخَطُ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةُ الْمَالِ وَكَثْرَةُ السُّؤَالِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। (১) যখন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করো না। (২) আল্লাহর বিধানকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর আর বিচ্ছিন্ন হও না এবং (৩) আল্লাহ যাকে তোমাদের কাজের নেতা হিসাবে নির্বাচন করেন, তার জন্য তোমরা পরস্পরে কল্যাণ কামনা কর। এ তিনটি কাজে আল্লাহ তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। আর তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন- (১) অপ্রয়োজনীয় কথা বললে (২) সম্পদ নষ্ট করলে এবং (৩) অনর্থক বেশী প্রশ্ন করলে’ (আহমাদ হা/৮৭৮৫; ইবনু হিব্বান হা/৩৩৮৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ
মানার উদ্দেশ্যে উপদেশ শুনতে হবে


عَنْ إبْنِ عَبَّاسٍ قَالَ إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ الْقَيْسِ لَمَّا أَتَوُا النَّبِىَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنِ الْقَوْمُ أَوْ مَنِ الْوَفْدُ قَالُوا رَبِيعَةُ. قَالَ مَرْحَبًا بِالْقَوْمِ أَوْ بِالْوَفْدِ غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ نَدَامَى. فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيَكَ إِلاَّ فِى شَهْرِ الْحَرَامِ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الْحَىُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ، نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلْ بِهِ الْجَنَّةَ. وَسَأَلُوهُ عَنِ الأَشْرِبَةِ. فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ، وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، أَمَرَهُمْ بِالإِيمَانِ بِاللهِ وَحْدَهُ. قَالَ أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللهِ وَحْدَهُ. قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامُ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ الْمَغْنَمِ الْخُمُسَ. وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ عَنِ الْحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالْمُزَفَّتِ. وَرُبَّمَا قَالَ الْمُقَيَّرِ. وَقَالَ احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ.

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আব্দুল ক্বায়েম গোত্রের প্রতিনিধিদল যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দরবারে এসে পৌঁছালো, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন গোত্র অথবা কোন্ প্রতিনিধিদল (রাবী সন্দেহ)? তারা বলল, রবী’আহ গোত্র। তিনি বললেন, তোমাদের গোত্রকে অথবা তোমাদের প্রতিনিধিদলকে মুবারকবাদ যা অপমানহীন ও অনুতাপবিহীন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ‘হরম’-এর (যুদ্ধ নিষিদ্ধ) মাসগুলি ব্যতীত আমরা আপনার নিকটে আসতে পারিনা। কেননা আমাদের ও আপনার মাঝে কাফের ‘মুযার’ গোত্রটি অন্তরায় হয়ে আছে। অতএব আপনি আমাদেরকে এমন পরিষ্কার চূড়ান্ত কিছু বিষয় নির্দেশ করুন, যা আমরা আমাদের বাকী লোকদের গিয়ে বলতে পারি ও যার দ্বারা আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাবী বলেন, তারা তাঁকে পানপাত্র সমূহের ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করল। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দিলেন ও চারটি বিষয়ে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন কেবলমাত্র এক আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জানো কেবলমাত্র আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপনের অর্থ কী? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। অতঃপর ছালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও রামাযানের ছিয়াম পালন করা। এতদ্ব্যতীত জিহাদলব্ধ গণীমতের মাল থেকে এক পঞ্চমাংশ তোমরা নেতার নিকটে জমা দিবে।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে চারটি পাত্র সম্পর্কে নিষেধ করলেন, যা হ’ল : 
(১) ‘হান্তাম’ অর্থাৎ শরাব তৈরীর কলসী যার গর্দান সবুজ ও লাল রংয়ের 
(২) ‘দুব্বা’ অর্থাৎ লাউ বা চাল কুমড়ার শুকনা খোল দ্বারা প্রস্তুত মদ্যভাণ্ড 
(৩) ‘লাক্বীব’ অর্থাৎ গাছের গুঁড়িতে গর্ত করে সেখানে শরাব বানানোর পাত্র বিশেষ 
(৪) ‘মোযাফফাত’ অর্থাৎ আলকাতরা’ বা অনুরূপ গাঢ় তৈলজাতীয় বস্তু দ্বারা মোড়ানো মদ্যপাত্র বিশেষ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তোমরা এগুলি বিষয় স্মরণ রাখবে ও তোমাদের বাকী লোকদের জানিয়ে দিবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৭; বাংলা মিশকাত হা/১৬)। 
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছাহাবীগণ শরী’আত শোনার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসতেন এবং সে অনুপাতে আমল করে জান্নাত পাওয়ার আকাংখা পোষণ করতেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ بَايِعُونِى عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكُوا بِاللهِ شَيْئًا، وَلاَ تَسْرِقُوا، وَلاَ تَزْنُوا، وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلاَدَكُمْ، وَلاَ تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ، وَلاَ تَعْصُوا فِى مَعْرُوفٍ، فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللهِ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ فِى الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللهُ، فَهُوَ إِلَى اللهِ إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ، وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ. فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِكَ.
ওবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা একদল ছাহাবী দ্বারা আবেষ্টিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তোমরা আমার নিকটে বায়’আত কর এ বিষয়ে যে,
 (১) তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না 
(২) চুরি করবে না। 
(৩) যেনা করবে না 
(৪) তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না 
(৫) কারু প্রতি অপবাদ দিবে না 
(৬) মা’রূফ তথা শরী’আত সংগত বিষয়ে অবাধ্যতা করবে না। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এসব অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকটে রয়েছে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এসবের কোন একটি করবে, তার জন্য যদি দুনিয়াতে (আইন সঙ্গতভাবে) শাস্তি হয়, তবে সেটা তার জন্য কাফফারা হবে (এজন্য আখেরাতে পুনরায় শাস্তি হবে না)। আর যে ব্যক্তি উক্ত পাপসমূহের কোন একটি করেছে, অথচ আল্লাহ তা ঢেকে দিয়েছেন (বা দুনিয়ায় কোন শাস্তি হয়নি), তাহলে সে বিষয়টি আল্লাহর উপরে নির্ভর করে। তিনি ইচ্ছা করলে উক্ত অপরাধ মাফ করতে পারেন, শাস্তিও দিতে পারেন। রাবী বলেন, আমরা এসকল কথার উপরে তাঁর নিকটে বায়’আত করলাম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮)। 
অত্র হাদীছে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে কথাগুলি বলতেন সে কথাগুলি মেনে চলার জন্য ছাহাবীদের নিকট থেকে ওয়াদা বা অঙ্গীকার নিতেন। কোন কোন ছাহাবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মুখ থেকে কিছু শুনে বলতেন, وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَا أَزِيْدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ. ‘আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যা শুনলাম তার কম-বেশী করব না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪)।
ছাহাবীগণ জান্নাতে প্রবেশের এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের আমল শুনতে চাইতেন (তিরমিযী, মিশকাত হা/২৯, হাদীছ ছহীহ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّبُوْنَ يَأتُوْنَكُمْ مِنَ الأحَادِيْثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أنْتُمْ وَلاَ أبَائُكُمْ فَإيَّاكُمْ وَ إيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّوْنَكُمْ وَلاَ يُفْتِنُوْنَكُمْ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘শেষ যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব অলীক কথা-বার্তা উপস্থিত করবে, যা না তোমরা শুনেছ না তোমাদের বাপ-দাদা শুনেছে। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে বেঁচে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে বাঁচাও। অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বিরত থাক। যাতে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদের বিপথগামী করতে না পারে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস



সহীহ জিকির ও গলত জিকির | পর্ব ২

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
সহীহ জিকির ও গলত জিকির


জিকরে খফীর ন্যায় জিকরে জলী বা জেহেরী জিকিরের পক্ষে পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসের অকাট্য দলীল পূর্বের পোস্টে বর্ণনা করা হয়েছে। এবার জেহেরী জিকিরে আওয়াজ উঁচু করার মাত্রা বা পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে।
জেহেরী জিকিরে আওয়াজের মাত্রা :
পূর্বে উল্লেখকৃত পবিত্র কুরআনের সূরাহ আ‘রাফের ২০৫ নং আয়াতে জিকিরের ধরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে–
وَاذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّخِیۡفَۃً وَّدُوۡنَ الۡجَہۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ
“এবং স্বীয় পালনকর্তার জিকির করুন চুপে চুপে বিনম্রভাবে ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এবং খুব জোরের চেয়ে কম আওয়াজে।”(সূরাহ আ‘রাফ, আয়াত নং ২০৫)

এ আয়াতে বর্ণিত জিকিরের ধরনের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা‘আলিমুত তানযীলে আল্লামা বাগাভী (রহ.) বলেন, বিশিষ্ট তাফসীরবিদ হযরত মুজাহিদ (রহ.) ও হযরত ইবনে ‍জুরাইজ (রহ.) বলেন–“আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন যে, একাগ্রতার সাথে অন্তর দিয়ে তাঁর জিকির করবে এবং তাঁকে খুব জোরে আওয়াজ করে ও চিৎকার করে ডাকবে না।”
(তাফসীরে মা‘আলিমুত তানযীল, সূরাহ আ‘রাফ, ২০৫ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)

উক্ত আয়াতে জেহেরী জিকিরের ক্ষেত্রে “খুব জোরের চেয়ে কম আওয়াজে” মাত্রার ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন–اَلْجَهْر (আল-জাহর) অর্থ খুব জোরে বলা। আয়াতটিতে دُوۡنَ الْجَهْرِ (দূনাল জাহর) বলে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ১৫ নং খণ্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা)

জেহেরী জিকিরের সেই মাত্রাকে বিশ্লেষণ করে তাফসীরে ইবনে কাছীরে বলা হয়েছে–এতে বুঝানো হয়েছে যে, এমনভাবে জোরে চিল্লিয়ে বলবে না যেমন দূরের কাউকে ডাকা হয়, আবার এমন আস্তে বলবে না যে, পাশের লোকেরা শুনতে না পায়। বরং এতদুভয়ের মাঝামাঝি স্বাভাবিক আওয়াজে বলবে।
(দ্রষ্টব্য : তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৩য় খণ্ড, ৫৩৯ পৃষ্ঠা)

এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন–এটা পবিত্র কুরআনের সূরাহ ইসরা’র ১১০ নং আয়াতের নির্দেশনার অনুরূপ। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন–
وَلَا تَجۡہَرۡ بِصَلَاتِکَ وَلَا تُخَافِتۡ بِہَا وَابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا
“আপনি আপনার নামাযে (ক্বিরাআত) খুব উচ্চ স্বরে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন।” (সূরাহ ইসরা’, আয়াত নং ১১০)
তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন–
نَزَلَتْ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُخْتَفٍ بِمَكَّةَ ، كَانَ إِذَا صَلَّى بِأَصْحَابِهِ رَفَعَ صَوْتَهُ بِالقُرْآنِ ، فَإِذَا سَمِعَهُ المُشْرِكُونَ سَبُّوا القُرْآنَ وَمَنْ أَنْزَلَهُ وَمَنْ جَاءَ بِهِ ، فَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى لِنَبِيِّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : { وَلَا تَجْهَرْ بِصَلاَتِكَ } أَيْ بِقِرَاءَتِكَ ، فَيَسْمَعَ المُشْرِكُونَ فَيَسُبُّوا القُرْآنَ { وَلَا تُخَافِتْ بِهَا } عَنْ أَصْحَابِكَ فَلاَ تُسْمِعْهُمْ ، { وَابْتَغِ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا }
“এ আয়াত সেসময় নাযিল হয়েছে যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কায় সংগোপনে রয়েছেন। (অর্থাৎ এ আয়াত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কী জীবনে ইসলামের প্রাথমিক যুগে নাযিল হয়েছে।) সে সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সাহাবীগণকে নিয়ে নামায পড়তেন, কুরআন পাঠে আওয়াজকে উচ্চ করতেন। তখন সেই আওয়াজ মুশরিকরা শুনে তারা কুরআনকে এবং কুরআন যিনি নাযিল করেছেন (মহান আল্লাহ) এবং যিনি কুরআন নিয়ে এসেছেন (মুহাম্মদ সা.)কে গালমন্দ করলো। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন। এতে তিনি স্বীয় নবী (সা.)কে বলেন–আপনি কুরআন মাজীদ এত উচ্চস্বরে পাঠ করবেন না যে, আওয়াজ বাহিরে গিয়ে কাফির-মুশরিকরা শুনে গালমন্দ করার প্রয়াস পায়। আবার এত নিম্নস্বরে পড়বেন না যে, পাশের সাহাবীগণ শুনতে না পান। বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৬৬)

অপর ‍রিওয়ায়াতে হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন–সে সময় জোরে কুরআন পাঠ শুনে মুশরিকরা (গালি দিয়ে) রাসূূলুল্লাহ (সা.)কে বললো, আপনি জোরে পড়বেন না। কারণ, এতে আপনি আমাদের মা‘বূদগণকে কষ্ট দেন। তাই আমরা আপনার মা‘বূদকে গালি দেই।
(দ্রষ্টব্য : ইরশাদুস সারী শরহে বুখারী, ৭ম খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)

এতে বুঝা গেলো- “খুব জোরের চেয়ে কম আওয়াজে পড়া”-এর নির্দেশনা ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কায় বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেয়া হয়েছিলো। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় হিজরত করলেন এবং মুসলমানগণের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি পেলো, তখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়।

এ জন্য মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের (রা.) আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চস্বরে জিকির করার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন, সহীহ বুখারীতে রয়েছে–
عن ابْن عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَنَّ رَفْعَ الصَّوْتِ بِالذِّكْرِ حِينَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنَ المَكْتُوبَةِ كَانَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ كُنْتُ أَعْلَمُ إِذَا انْصَرَفُوا بِذَلِكَ إِذَا سَمِعْتُهُ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, জিকিরে আওয়াজকে উচ্চ করা যখন মানুষেরা ফরজ নামায থেকে ফিরেন তা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যমানায় বিদ্যমান ছিলো। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “আমি বুঝতে পারতাম যে সময় তারা উচ্চস্বরে যিকিরের দ্বারা ফিরতেন যখন আমি তা শুনতাম।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪১)

তেমনি সহীহ বুখারীতে আরো বর্ণিত হয়েছে–
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ وَأَبُو هُرَيْرَةَ يَخْرُجَانِ إِلَى السُّوقِ فِي أَيَّامِ الْعَشْرِ يُكَبِّرَانِ، وَيُكَبِّرُ النَّاسُ بِتَكْبِيرِهِمَا
“হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ও হযরত আবু হুরাইরা (রা.) যিলহজ্বের দশকে বাজারে যেতেন তাকবীর বলতে বলতে এবং তাদের তাকবীর শুনে মানুষেরা তাকবীর বলতেন।” (হযরত আফফান (রহ.)-এর রিওয়ায়াতে রয়েছে : তাঁরা তখন তাকবীর বলে মানুষদেরকে তাদের সাথে তাকবীর বলানোর জন্যই বাজারে যেতেন।)
(দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, ৪৫৮ পৃষ্ঠা)

অনুুরূপভাবে সহীহ বুখারীর শিরোনাম-বিবরণে তা‘লীকরূপে বর্ণনা করা হয়েছে–
وَكَانَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُكَبِّرُ فِي قُبَّتِهِ بِمِنًى فَيَسْمَعُهُ أَهْلُ الْمَسْجِدِ فَيُكَبِّرُونَ وَيُكَبِّرُ أَهْلُ الْأَسْوَاقِ حَتَّى تَرْتَجَّ مِنًى تَكْبِيرًا
“হযরত উমর (রা.) মিনায় স্বীয় হুজরায় তাকবীর বলতেন। সেই তাকবীর মসজিদের মুসল্লীগণ শুনতেন, তখন তাঁরা তাকবীর বলতেন। এবং বাজারের লোকজন (তাদের তাকবীর শুনে) তাকবীর বলতেন। তা এ পর্যন্ত হতো যে, মিনা তাকবীর ধ্বনিতে কেঁপে উঠতো।”
(দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা)

অপরদিকে পবিত্র কুরআনে জিকির সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত রয়েছে–যেগুলোতে শর্তবিহীনভাবে জিকির করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাই বর্ণনার ব্যাপকতার দ্বারা সেগুলো সিররী জিকির ও জেহেরী জিকির উভয় প্রকার জিকিরকেই শামিল করে।
যেমন, সূরাহ আহযাবের ৪১ ও ৪২ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন–
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰہَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا وَّسَبِّحُوۡہُ بُکۡرَۃً وَّاَصِیۡلًا
“হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করো এবং সকালে ও বিকালে তাঁর তাসবীহ পড়ো।”
তেমনিভাবে সূরাহ আনফালের ৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন–
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمۡ فِئَۃً فَاثۡبُتُوۡا وَاذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে মুখোমুখি হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কর। এতে আশা করা যায়, তোমরা কৃতকার্য হবে।”

অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ সূরাহ জুমু‘আর ১০ নং আয়াতে ইরশাদ করেন–
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَاذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
“অতঃপর যখন নামায সম্পন্ন হয়, তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর। আর অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কর। এতে তোমরা সফলকাম হবে।”

এভাবে বহু আয়াত রয়েছে–যেগুলোতে জোরে বা আস্তে কিংবা মনে মনে ইত্যাদি কোন ধরনের শর্ত ছাড়া জিকির করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুতরাং জিকির সশব্দে বা নিঃশব্দে যে কোনভাবে আদায় করলেই সেসব আয়াতের ‍উপর আমল হয়ে যাবে।

তবে জেহেরী জিকির করার ক্ষেত্রে নিজের প্রতি খিয়াল রেখে কষ্টদায়কভাবে খুব জোরে বা চিৎকার করে জিকির করা পরিহার করার জন্য হাদীস শরীফে বিশেষ নিদের্শনা এসেছে। এ সম্পর্কে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে–
عَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه قَالَ : كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ ، فَكُنَّا إِذَا عَلَوْنَا كَبَّرْنَا (وَفِيْ رِوَايَةِ مُسْلِمِ : فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ) ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ ، فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا ، وَلَكِنْ تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا –
হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন–“আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। সে সময় যখন আমরা কোন উঁচু স্থানে উঠতাম, তাকবীর বলতাম। (সহীহ মুসলিমের রিওয়ায়াতে রয়েছে : সে সময় লোকেরা উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকেন।) তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন–“হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের উপর নম্রতা করো। কেননা, তোমরা কোন বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছো না। বরং তোমরা ডাকছো সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টাকে।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৪৭/ অনুরূপ : সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০০২)

এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেলো–জেহেরী জিকির করা সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর আমলের মধ্যে ছিলো। আর এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে জেহেরী জিকির করতে নিষেধ করেননি, বরং উম্মতের প্রতি দরদী হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) হিতাকাংখামূলকভাবে বলেছেন, খুব জোরে জিকির করে যেন নিজের জানকে কষ্ট না দেয়া হয়, বরং জেহেরী জিকির যেন নম্রতার সাথে বা সহনীয়ভাবে করা হয়।

এ সম্পর্কে ফাতহুল মুলহিমে নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে–

كانت السنة رفع الصوت بالتكبير والتهليل كلما علا مرتفعا وكلما هبط واديا لكن بعض الصحابة بالغوا في رفع الصوت ظنوه كلما رفعوا أصواتهم زاد ثوابهم فقال لهم صلى الله عليه وسلم ارفقوا بأنفسكم واخفضوا أصواتكم فإن رفع الصوت إنما يفعله الإنسان لبعد من يخاطبه أو لصممه ليسمعه وأنتم تدعون الله تعالى وليس هو بأصم ولا غائب ولا بعيد بل هو سميع قريب وهو معكم
“জিকিরের সুন্নাহ পদ্ধতি হলো–যতবার কোন উঁচু স্থানে উঠবে এবং নীচু স্থানে নামবে, যথাক্রমে উচ্চস্বরে “আল্লাহু আকবার” ও “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে। কিন্তু কিছু সাহাবী (রা.) উচ্চস্বর করতে গিয়ে খুব বেশী করে ফেলেছেন। তারা ভেবেছিলেন, যত স্বর বৃদ্ধি করবেন, ততবেশী নেকী হবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের জানের প্রতি নম্রতা করো এবং তোমাদের আওয়াজকে খাটো করো। কেননা, খুব উচ্চস্বর মানুষ করে থাকে যাকে বলছে সে দূরে থাকলে কিংবা বধির হলে তাকে শোনানোর জন্য। আর তোমরা তো আল্লাহকে ডাকছো। তিনি তো বধিরও নন, অনুপস্থিতও নন এবং দূরেও নন। বরং তিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটের সত্তা। তিনি তোমদের সাথে আছেন।”
(ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, ১০ম খণ্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা)



বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান ১০ কারণ

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
ফাতেমা ভিখু-শাহ; অনুবাদ: মুহাম্মদ আল-বাহলুল
বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান ১০ কারণ
মানুষের অন্যান্য সম্পর্কের মতই বৈবাহিক সম্পর্কও এমন একটি সম্পর্ক, যা শতভাগ নিখুঁত হওয়া সম্ভব নয়। এমনকি তীব্র ভালোবাসাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য সম্পর্কেও এটি আশা করা যায়না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সফল ও গভীর বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় অঙ্গীকার এবং পারস্পারিক প্রত্যাশাকে প্রতিনিয়ত নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা।পাশাপাশি পারস্পারিক যোগাযোগের বিষয়টিও পরস্পরের খেয়াল রাখা  জরুরী। বলা সহজ হলেও বাস্তবে এই কাজ খুবই কঠিন।বিভিন্ন ম্যারেজ থেরাপিস্ট এবং মুসলিম কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে আমি জানতে চেয়েছিলাম, বিবাহ-বিচ্ছেদের পেছনে তারা প্রধান প্রধান কি কারণ লক্ষ্য করেছেন। অবশ্যই বিভিন্ন জটিল সমস্যা তথা নৈতিক  পতন ও মাদকাসক্তির মত সমস্যাগুলো বিবাহ বিচ্ছেদের পেছনে দায়ী, কিন্তু এমন কিছু নগন্য সমস্যাও বিবাহ বিচ্ছেদের শীর্ষ কারণ হিসেবে রয়েছে, যা আশ্চর্যজনক। এখানে এরূপ দশটি কারণ উল্লেখ করা হল।

১. পরিবর্তনের চেষ্টা
অধিকাংশ দম্পতি একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হয় যে, একজন অপরজনের বিভিন্ন বিষয় অপছন্দ করে। এই অপছন্দ থেকে একজন অপরজনকে এমন অবস্থায় পরিবর্তন করতে চায়, যা সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। পারস্পরিক এই পীড়াপীড়ির ফলে একজন আরেকজনের উপর বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে উঠে।আপনি চাইলেই আপনার সঙ্গীকে জোর করে রাতারাতি পরিবর্তন করে আপনার কাঙ্ক্ষিত নতুন মানুষে পরিণত করতে পারেন না। আপনি বরং আপনার নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন এবং আপনার সঙ্গীর ছোট ছোট কাজকে নিজের পছন্দমত ধীরে ধীরে সহমর্মিতার সাথে পরিবর্তন করতে পারেন।
বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান ১০ কারণ

২. কথাবার্তা বনাম যোগাযোগ
বর্তমানে বৈবাহিক সম্পর্কসমূহকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা অপর একটি বিষয় হচ্ছে দম্পতিদের এই ভুল ধারনা যে, পরস্পরের মধ্যে কথার আদান-প্রদানই যোগাযোগ। এরফলে তারা যখনই পরস্পর কথার আদান প্রদান করে, তখনই মনে করে তাদের মধ্যে যথার্থ যোগাযোগ হচ্ছে।অভিযোগ বা সমালোচনায় কথার আদান-প্রদান করার মাধ্যমেই দম্পতির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়না। অভিযোগ বা সমালোচনার পরিবর্তে ইতিবাচকতার সাথে আপনার অনুভূতিকে প্রকাশের কায়দা রপ্ত করুন। আপনার বৈবাহিক সম্পর্কের দৃঢ়তাকে তা বরং রক্ষা করবে।যথার্থ যোগাযোগ শুধু নিজের মনোভাবকে সঙ্গীর কাছে প্রকাশ করা নয় বরং যথার্থ যোগাযোগের অর্থ হল নিজের সঙ্গীর মনোভাব সম্পর্কেও জ্ঞাত হওয়া এবং তার অনুধাবনকে অনুভব করতে পারা। যদি আমরা আমাদের বলার সাথে সাথে সমানভাবে শোনার অভ্যাস করতে পারি, আমাদের বৈবাহিক সম্পর্কগুলো অনেকাংশেই ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

৩. সময় ব্যবস্থাপনা
আধুনিক জীবনযাত্রা বিভিন্ন দিক থেকেই অনেক চাপের সমন্বয়। এতসব চাপ সামাল দিতে গিয়ে অনেক দম্পতিই হয়তো তাদের নিজেদের মধ্যে সময় দিতে ব্যর্থ হয়।
প্রতিদিন পাঁচ মিনিট হলেও নিজেদের মধ্যে একান্তে কিছু সময় কাটানো প্রতিটি দম্পতির জন্য প্রয়োজন। বৈবাহিক সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে এটি আবশ্যিক একটি উপকরণ। নিজেদের সম্পর্ককে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মূল্যয়ন করা প্রয়োজন যে, তার কি উন্নতি না অবনতি ঘটেছে অথবা তা একই অবস্থানে রয়েছে। নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ককে প্রতিদিন মূল্যয়নের জন্য তাই সকল দম্পতিরই পরস্পর নির্দিষ্ট একান্ত সময়ের প্রয়োজন। পরস্পরের একান্ত সময় কাটানোর মাধ্যমে দম্পতিসমূহের মধ্যে সম্পর্কের দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠিত হয়।

৪. ঘনিষ্ঠতা
বিশিষ্ট গ্রন্থকার ও থেরাপিস্ট নাদিরাহ আনগেইল মনে করেন, ‘ঘনিষ্ঠতা’র অভাবে মূলত মুসলিমদের মধ্যকার বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনাগুলো বেশী ঘটে। তিনি বলেন, “সহবাস ঘনিষ্ঠতার একটি ছোট অংশ মাত্র।” এটি মূলত দম্পতিসমূহের মধ্যকার গভীরতর সম্পর্ক। আধ্যাত্মিক, মানসিক, শারীরিক, আবেগগত ইত্যাদি সকল দিক থেকেই পরস্পরের মধ্যে সংযোগ থাকাই মূলত দম্পতিসমূহের মধ্যে পারস্পারিক ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করে। এই ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে অধিকাংশ দম্পতিকে প্রচন্ড পরিশ্রম করতে হয়।দম্পতিসমূহের জন্য ঘনিষ্ঠতা অর্জন কোন লক্ষ্য নয়, বরং এটি তাদের একত্রে জীবনের দীর্ঘসময় চলার জন্য একটি আবশ্যিক উপাদান।

৫. পরস্পরের প্রতি লক্ষ্য রাখা
সন্তান হওয়ার পর দম্পতিসমূহের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়, পরস্পরের প্রতি মনোযোগ ও লক্ষ্য রাখার প্রবণতার কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। ফলে অনেক সময় হয়তো নিজেদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। সন্তান জন্মের পরও সন্তানের পাশাপাশি পারস্পরিক মনোযোগ প্রদান বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া অনেকসময় দেখা যায়, নিজেদের মধ্যে সময় কাটানোর সময় সঙ্গীর প্রতি মনোযোগের পরিবর্তে আমরা বরং আমাদের স্মার্টফেনের স্ক্রিনে নতুন নোটিফিকেশন জানতে অধিক মনোযোগ দেই। সম্পর্কের দৃঢ়তাকে  ধ্বংস করতে এবং এর পরিণতিতে বৈবাহিক সম্পর্ককে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এধরনের ছোট ছোট অভ্যাসই যথেষ্ট।

৬. টাকা, টাকা, টাকা
জীবনে চলার জন্য অর্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের পেছনে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি কারন হিসেবে রয়েছে। বৈবাহিক সম্পর্কের অবিশ্বস্ততায় বরং সেই সম্পর্ক টিকতে পারে, কিন্তু বিশ্বজুড়ে বৈবাহিক সম্পর্কসমূহকে নস্যাৎ করার জন্য অর্থ একটি বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। নাদিরাহ বলেন, মুসলিম পরিবারগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। সামর্থ্যহীন পুরুষ ও নারীর সংসার বরং অধিক টিকে থাকে কিন্তু সংসারে স্বামী স্ত্রী যখন দুইজনই আয় করেন, তখন তাদের মধ্যে এক অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে বেশি আয় করেন। এই প্রতিযোগিতা থেকে পারস্পারিক রেষারেষি এবং শেষে বিবাহ-বিচ্ছেদের দিকে দাম্পত্য সম্পর্ক ধাবিত হয়।

৭. ক্ষমাহীনতা

পারস্পারিক ভালোবাসার সহজ সম্পর্কে ক্ষমাশীলতার অবস্থান হয় সহজ। ভুলের জন্য পাছে মর্যাদা কমে যায় এই আশংকায় সঙ্গীর কাছে ক্ষমা না চাওয়া এবং ছোট ছোট অপরাধেও সঙ্গীকে ক্ষমা করতে না পারার ফলে বরং দাম্পত্য সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আধুনিক এই সময়ে ক্ষমাহীনতার এই অভ্যাস দম্পতিসমূহের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের একটি বড় কারণ।

৮. প্রশংসার অভাব
যখন পারস্পারিক প্রশংসার হার কমে যায়, তখন পরস্পরের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পায়। প্রশংসার অভাব বৈবাহিক সম্পর্কে মধ্যে পারস্পারিক অবিশ্বাসের সৃষ্টি করে। কিন্তু যখন দুইজন মানুষ তাদের পারস্পারিক কাজের ১০০% মূল্যয়ন করবে এবং উত্তম কাজের জন্য সঙ্গীর প্রশংসা করবে, তখন তাদের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা খুব কমই থাকবে এবং তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

৯. আবেগগত সম্পর্ক
দক্ষিন আফ্রিকার দম্পতিসমূহের পরামর্শদানকারী সংস্থা ইসলামিক কেয়ার লাইন জানিয়েছে, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রসরতার ফলে ভার্চুয়াল জগতে বিভিন্ন প্রকার ভার্চুয়াল সম্পর্কে মানুষ জড়িয়ে পড়ছে। এসকল সম্পর্কে অনেকসময় মানুষ তার সঙ্গীর থেকে অধিক ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। এরফলে দম্পতিসমূহের পারস্পারিক সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যেতে পারে, যদি ব্যক্তি তার অনুভূতির কথা তার শুভাকাঙ্ক্ষী কারো কাছে শেয়ার করতে পারে এবং তার কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে নিজেকে অনাকাঙ্ক্ষিত আবেগ থেকে মুক্ত করতে পারে।

১০. ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
ইসলামিক কেয়ার লাইনের সাথে কাজ করা একজন সমাজকর্মী আনিসা মুসা জানান, বিবাহিত দম্পতির মধ্যে পারস্পারিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফলেও তাদের সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে ধাবিত হয়। একজন অপরজনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চাওয়া এবং সঙ্গীকে নিজের মত করে চালাতে চাওয়ার ফলে দম্পতিসমূহের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
যদি নিজেদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্কের তুলনায় নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার গুরুত্ব অধিক হয়, তবে দম্পতির মধ্যকার সম্পর্ক আর স্থায়ী হয়না এবং কারো মত যদিও প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে আর ভালোবাসা থাকেনা।

উপরিউক্ত সমস্যাসমূহ যে সকলের ক্ষেত্রেই একইভাবে কাজ করে তা নয়, বরং এগুলো বিবাহবিচ্ছেদের কয়েকটি প্রধান সমস্যা হিসেবে সাধারনভাবে দেখা যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ককে গভীর ও ভালোবাসা পূর্ণ দৃঢ় সম্পর্কে পরিণত করতে আমরা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সতর্ক হতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর জীবনে নিজেদের সঙ্গীর সাথে সুন্দর সময় কাটানোর মাধ্যমে পরকালীন জীবনেও সাফল্য অর্জন করতে পারি।



সহীহ জিকির ও গলত জিকির | পর্ব ১

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
সহীহ জিকির ও গলত জিকির

লাফালাফি করে বা বাঁশে উঠে কিংবা খুব জোরে চিল্লিয়ে অথবা নেচে নেচে জিকির করা সহীহ পদ্ধতি নয়। সেটা গলত, নাজায়িয ও বিদ‘আতী তরীকা। তবে যদি কেউ নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে মাজযূব হালতে জোরে জোরে জিকির করেন কিংবা দৌড়াদৌড়ি বা লাফালাফি করেন, সেটা মা‘জুরী হালত, তার কথা ভিন্ন। অপরদিকে মাইকে প্রবল সাউন্ডে জিকির করা কিংবা সম্মিলিতভাবে সুর করে তালে তাল মিলিয়ে সজোরে জিকির করাও সুন্নাতের খিলাফ ও গলত পদ্ধতি।

খফী জিকির ও জেহের জিকিরের পক্ষাবলম্বনে মতভেদ পূর্ব থেকেই চলে আসছে। আকাবিরদের মধ্যে জিকরে সিররী ও জিকরে জেহরী উভয়রকমই আমল পাওয়া যায়।
জিকরে সিররী বা জিকরে খফী সর্বোত্তম। ইনফিরাদীভাবে নিবিষ্ট মনে কায়মনোবাক্যে একাগ্রচিত্তে জিকির করাই বাঞ্ছনীয়। তা সিররী হওয়া অধিক উত্তম। তবে বিশেষ কোন মাসলাহাতে হালকা আওয়াজে নিজে শোনার মতো করে অথবা আশপাশের কারো ইবাদত, ঘুম ইত্যাদিতে বিঘ্নতা না হওয়ার শর্তে সাধারণভাবে শব্দ করে জিকির করা জায়িয হবে।

আমাদের দেশে হক্কানী উলামায়ে কিরাম অনেকে যেমন, হাটহাজারীর আল্লামা আহমদ শফী (দা. বা.) অনেক স্থানে মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য মাহফিলে জেহেরভাবে জিকির করিয়েছেন। তিনি ঢাকা ফরিদাবাদ মাদরাসায়ও বাই‘আত করানোর পর এভাবে জিকির করিয়েছেন। তেমনি মিরপুর পল্লবীর এক মসজিদেও এভাবে জিকির করিয়েছেন। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

চরমোনাই ও উজানীর জিকিরের মধ্যে অবশ্য আপত্তির বিষয় জেহের নিয়ে নয়, বরং সকলে একত্রে তাল মিলিয়ে জিকির করতে গিয়ে শব্দের অশুদ্ধ উচ্চারণ করা হয়। যেমন, সুবহানাল্লাহ’র জিকির করতে গিয়ে “হা”-এর পর যে মাদ রয়েছে সেটা উচ্চারণ করেন না এবং আল-হামদুলিল্লাহ-এর মধ্যে “আল্লাহ” শব্দটির শেষে মাদ্দে আরিজী ও “হা”-এর উচ্চারণ যথার্থভাবে হয় না। আবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র উচ্চারণে “লা” শব্দটিকে যথেষ্টভাবে টেনে এবং শেষের “আল্লাহ” শব্দের উচ্চারণ যথাযথভাবে আদায় হয় না ইত্যাদি। এ বিষয়টি নিয়ে আগেও বলেছি। এটা অবশ্যই সংশোধন করা জরুরী। আবার সেখানে অনেকের অস্বাভাবিকভাবে খুব জোরে চিল্লানো ও ব্যাপকভাবে লাফালাফি করা কিংবা সম্মিলিত জিকিরে সুরের তালে তাল মেলানোর ব্যাপারটি নিয়েও আপত্তি হতে পারে। তাই সেসব নিয়েও ভাবা উচিত বলে মনে করি।

নিঃশব্দে জিকির নিয়ে যেমন দলীল রয়েছে, তেমনি সশব্দে বা জেহরী জিকিরের পক্ষেও দলীল রয়েছে। জেহরী জিকিরের অকাট্য পর্যাপ্ত দলীলের কারণে তার গুরুত্ব অনুধাবন করে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.) এ বিষয়ে একটি দালীলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার নাম হচ্ছে–نتيجة الفكر في الجهر بالذكر (নাতীজাতুল ফিকরি ফিল জাহরি বিজ্ জিকরি)। সেখানে তিনি জিকরে জেহেরের পক্ষে ২৫টি দলীল বর্ণনা করেছেন এবং এ নিয়ে আরোপিত বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান দিয়েছেন। ইন্টারনেটে উক্ত বইয়ের পিডিএফ কপি নিম্নোক্ত লিঙ্কে পাবেন– 
https://www.nafahat-tarik.com/2016/01/sufism_23.html
তেমনি এ বিষয় নিয়ে আরো অনেক মুহাক্কিক আলেম বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ দিয়ে স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লামা আবদুল হাই লাখনবী (রহ.)। তার রচিত সেই পুস্তকের নাম হচ্ছে–سباحة الفكر في الجهر بالذكر (সাবাহাতুল ফিকরি ফিল জাহরি বিজ্ জিকরি)। উক্ত কিতাবকে তাহকীক-বিশ্লেষণ দ্বারা বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে আরব কান্ট্রিতে প্রকাশ করেছেন শাইখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ,)। নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে উক্ত কিতাব সংগ্রহ করতে পারেন– https://www.alsufi.net/…/2094-%D8%B3%D8%A8%D8%A7%D8%AD%D8%A…

জিকরে খফীর ন্যায় জিকরে জলী বা জেহেরী জিকিরের পক্ষে পবিত্র কুরআনে ও অসংখ্য হাদীসে অকাট্য দলীল-প্রমাণাদি রয়েছে। নিম্নে সেসব দলীল পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হচ্ছে–
 
পবিত্র কুরআনে জেহেরী জিকিরের দলীল :
পবিত্র কুরআনের সূরাহ আ‘রাফের ২০৫ নং আয়াতে সশব্দে জিকির ও নিঃশব্দে জিকির উভয় প্রকার জিকিরের নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–
وَاذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّخِیۡفَۃً وَّدُوۡنَ الۡجَہۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَالۡاٰصَالِ وَلَا تَکُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِیۡنَ
“এবং স্বীয় পালনকর্তার জিকির করুন চুপে চুপে (নিঃশব্দে) বিনম্রভাবে ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এবং খুব জোরের চেয়ে কম আওয়াজে (সশব্দে) সকালে (সূর্যোদয়ের পূর্বে) ও বিকালে (সূর্যাস্তের পূর্বে)। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।”
(সূরাহ আ‘রাফ, আয়াত নং ২০৫)

উক্ত আয়াতের দু’টি অংশে দু’প্রকার জিকিরের কথা বলা হয়েছে : وَاذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ অংশে সিররী জিকির এবং وَّدُوۡنَ الۡجَہۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ অংশে জেহেরী জিকিরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর تَضَرُّعًا وَّخِیۡفَۃً শব্দদ্বয় দ্বারা সেই উভয় প্রকার জিকিরই বিনম্র হয়ে ও আল্লাহভীতির সাথে করার জন্য বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তাফসীরে বাগাভীতে বলা হয়েছে–এ আয়াতে প্রত্যহ সকালে ও বিকালে তথা ফজরের নামাযে ও আসরের নামাযে মহান আল্লাহর জিকির করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং উক্ত জিকিরের পন্থা বর্ণনা করা হয়েছে। এ মর্মে এখানে জিকিরের দু’টি পন্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে : ১. وَاذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ দ্বারা নিঃশব্দে বা মনে মনে জিকির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২. وَّدُوۡنَ الۡجَہۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ দ্বারা সশব্দে অল্প আওয়াজে জিকির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে–যা আশপাশের মানুষেরা শুনতে পারে।
(তাফসীরে বাগাভী, সূরাহ আ‘রাফ, ২০৫ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)

অপরদিকে তাফসীরে কুরতুবীতে রয়েছে–হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা মতে এখানে ফজর ও আসরের নামাযে কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এ আয়াতে ফজরের নামাযে কুরআন তিলাওয়াত জেহেরী বা সশব্দে করতে এবং আসরের নামাযে কুরআন তিলাওয়াত সেররী বা নিঃশব্দে করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : তাফসীরে কুরতুবী, ২য় খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা)

তেমনি তাফসীরে ইবনে কাছীরে আল্লামা ইবনে কাছীর (রহ.) বলেন–এ আয়াতটি মি‘রাজে পাঁচওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়ার পূর্বে নাযিল হয়েছে। তখন এ দু’টি নামায পড়া হতো। তাই এখানে উক্ত নামাযদ্বয়ের ব্যাপারে বলা হয়েছে।
(দ্রষ্টব্য : তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৩য় খণ্ড, ৬২৬ পৃষ্ঠা)

আরেক ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) মাজমূউল ফাতাওয়ায় বর্ণনা করেছেন–হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, এ আয়াত দু‘আর ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহর নিকট বিনম্র হয়ে ভয়ের সাথে চুপে চুপে অথবা অল্প আওয়াজে দু‘আ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তাফসীরে ওয়াসীতে আল্লামা তানতাভী (রহ.) বর্ণনা করেন–এ আয়াতে কুরআন তিলাওয়াত, দু‘আ, জিকির-তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল প্রভৃতির পন্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে।(তাফসীরে ওয়াসী, উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)

তেমনিভাবে কোনরূপ শর্তবিহীনভাবে জিকিরের নির্দেশনা দিয়ে পবিত্র কুরআনে সূরাহ আহযাবের ৪১ ও ৪২ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন–
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰہَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا وَّسَبِّحُوۡہُ بُکۡرَۃً وَّاَصِیۡلًا
“হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করো এবং সকালে ও বিকালে তাঁর তাসবীহ পড়ো।”
(সূরাহ আহযাব, আয়াত নং ৪১ ও ৪২) এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে খুব বেশী পরিমাণে জিকির করতে বলেছেন।
আল্লামা সা‘দী (রহ.) স্বীয় তাফসীরে বলেন–এখানে অধিক পরিমাণে জিকির করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো–আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ জিকির), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ জিকির), তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির), তাকবীর (আল্লাহু আকবার জিকির) প্রভৃতি সদা-সর্বদা পাঠ করবে। বিশেষ করে সকাল-বিকালের সুন্নাত ওজীফা, পাঁচওয়াক্ত নামাযের পরের জিকির-দু‘আ এবং বিভিন্ন সময় ও প্রেক্ষাপটে মাসনূন দু‘আ-কালাম প্রভৃতি যথারীতি আদায় করবে।
তবে এ আয়াতে জিকির-তাসবীহকে কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতির সাথে খাস করা হয়নি। তাই সেসব জিকির-আজকার নিঃশব্দেও করা যাবে এবং সশব্দে করাও যাবে আয়াতের নির্দেশের ব্যাপকতা হিসেবে। এভাবে পবিত্র কুরআনে আরো বহু আয়াত রয়েছে–যেগুলোতে শর্তহীনভাবে জিকির করার নির্দেশনা রয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে কোন বিশেষ শর্ত না থাকার কারণে সিররী জিকির ও জেহেরী জিকির উভয় প্রকার জিকিরেরই অবকাশ রয়েছে।

সুতরাং এ আয়াতসমূহ দ্বারা মহান আল্লাহর তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ইত্যাদি জিকির করার আদব ও পদ্ধতি স্পষ্ট হয়ে যায়। এতে জিকরে খফী ও জিকরে জলী উভয় প্রকার জিকিরের বৈধতা পাওয়া যাচ্ছে। আর এ বিষয়টিও স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে–জিকরে জলী জোরে চিৎকার করার চেয়ে কম আওয়াজে করা বাঞ্ছনীয়।

তেমনি হাদীস শরীফে জিকরে খফীর পাশাপাশি জিকরে জলী বা জেহেরী জিকিরের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর একটি হাদীসে রয়েছে–
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي ، وَأَنَا مَعَهُ حِينَ يَذْكُرُنِي ، إِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ، ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي ، وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَإٍ ، ذَكَرْتُهُ فِي مَلَإٍ هُمْ خَيْرٌ مِنْهُمْ
“হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা (হাদীসে কুদসীতে) ইরশাদ করেন, “আমি আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণার নিকটে থাকি। আর আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমার জিকির করে। যদি সে আমায় চুপে চুপে জিকির করে, আমি তাকে চুপে চুপে স্মরণ করি। আর যদি সে আমায় কোন জমায়েতের মধ্যে জিকির করে, তখন আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জমায়েতের মধ্যে স্মরণ করি।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪০৫/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭৫)  এ হাদীসে জমায়েতে জিকির করাকে চুপে চুপে বা নিঃশব্দে জিকিরের বিপরীত পন্থারূপে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হবে–জমায়েতের মধ্যে সশব্দে জিকির করা।
এ প্রসঙ্গে তাজুল মুহাাক্কিকীন আল্লামা ইবনুল জাযরী (রহ.) “মিফতাহুল হিসনিল হাসীন” গ্রন্থে বলেন–
فيه دليل على جواز الجهر بالذكر، خلافا لمن منعه
“এ হাদীসে জেহেরী জিকির জায়িয হওয়ার পক্ষে দলীল রয়েছে। আর এ হাদীস তাদের বিরুদ্ধে যায় যারা জেহেরী জিকিরকে নিষেধ করেন।”(মিফতাহুল হিসনিল হাসীন, ১৩৭ পৃষ্ঠা)

অনুরূপভাবে এ হাদীসের ব্যাপারে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ,) স্বীয় “নাতীজাতুল ফিকরি ফিল জাহরি বিজ্ জিকরি” গ্রন্থে বলেন–
والذكر في الملأ لا يكون إلا عن جهر
“মজমার মধ্যে জিকির জেহের (সশব্দে উচ্চারণ) ছাড়া হতেই পারে না।”
(নাতীজাতুল ফিকরি ফিল জাহরি বিজ্ জিকরি, ২৪ পৃষ্ঠা)

সুতরাং এ হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে জেহেরী জিকিরের বৈধতা প্রমাণিত হচ্ছে। যা দিবালেকের ন্যায় স্পষ্ট।
তেমনিভাবে প্রসিদ্ধ হাদীসের কিতাব মুস্তাদরাকে হাকীম-এর মধ্যে জেহেরী জিকিরের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে فضيلة رفع الصوت بالذكر (উঁচু আওয়াজে জিকির করার ফজীলত) নামে আলাদা শিরোনাম দিয়ে বিশেষ পরিচ্ছেদ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে জেহেরী জিকিরের ফজীলত বর্ণনা করে নিম্নোক্ত হাদীস উদ্ধৃত করা হয়েছে–
عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه أَنَّ رَجُلًا كَانَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالذِّكْرِ، فَقَالَ رَجُلٌ: لَوْ أَنَّ هَذَا خَفَضَ مِنْ صَوْتِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَإِنَّهُ أَوَّاهٌ» . قَالَ: فَمَاتَ فَرَأَى رَجُلٌ نَارًا فِي قَبْرِهِ، فَأَتَاهُ فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ وَهُوَ يَقُولُ: «هَلُمُّوا إِلَى صَاحِبَكُمْ» . فَإِذَا هُوَ الرَّجُلُ الَّذِي كَانَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالذِّكْرِ
হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক সাহাবী (রা.) (তাঁর নাম আবদুল্লাহ যুল বিজাদাইন আল-মুযানী) উচ্চস্বরে জিকির করতেন। তখন অন্য একজন বললেন, যদি এই লোক নীচু আওয়াজে জিকির করতেন (ভাল হতো)! তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে তো ‘আওয়্যাহ্’ (নিবেদিত জিকিরকারী)। হযরত জাবির (রা.) বলেন, এরপর সেই ব্যক্তি মারা গেলেন। তখন এক লোক তার কবরে আলো দেখতে পেলেন। তা দেখে তিনি সেখানে গেলেন। অকস্মাৎ তিনি দেখেন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরের মধ্যে রয়েছেন এবং তিনি বলতেছেন, তোমাদের সাথীকে দাও। তখন দেখা গেলো যে, তিনি সেই ব্যক্তি যিনি উঁচু আওয়াজে জিকির করতেন। (তাঁর দাফনের জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরে নেমেছেন!)
(মুস্তাদরাকে হাকিম, ১ম খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৩৬১/ অনুরূপ : সুনানে বাইহাকী–শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৫৭৮ প্রভৃতি)

অপরদিকে বিভিন্ন সময়কালীন জিকির উঁচু আওয়াজে করার জন্য শরীয়তে বিশেষভাবে নির্দেশনা এসেছে। যেমন, পাঁচওয়াক্ত নামাযের পর, ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাওয়া-আসার পথে, তাকবীরে তাশরীক পাঠে, হজ্বের তালবিয়া পাঠে প্রভৃতি। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

অনুরূপভাবে অনেক লোক একত্রিত হয়ে বা জিকিরের মজমা কায়িম করে জিকির করারও বিশেষ ফজীলত সম্পর্কে বহু হাদীস রয়েছে। আর সেই জিকির যে জেহেরীই হবে–তা বলাই বাহুল্য। এ ব্যাপারে পরবর্তী পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।



লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলী


প্রথম শর্ত: الشرط الأول : (العلم ) ইলম বা জ্ঞান:
এ কালেমার না বাচক এবং হ্যাঁ বাচক দুটি অংশের অর্থ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা প্র্রয়োজন। অর্থ এবং উদ্দেশ্য না বুঝে শুধু মাত্র মুখে এ কালেমা উচ্চারণ করার মধ্যে কোন লাভ নেই। কেননা সে ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি এ কালেমার মর্মের উপর ঈমাান আনতে পারবে না। আর তখন এ ব্যক্তির উদাহরণ হবে ঐ লোকের মত যে লোক এমন এক অপরিচিত ভাষায় কথা বলা শুরু করল যে ভাষা সম্পর্কে তার সামান্যতম জ্ঞান নেই।
এই কালেমার অর্থ, আবেদন ও দাবী সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন করা, অজ্ঞতা পরিহার করা: বান্দাকে অবশ্যই জানতে হবে, لا إله إلا الله এই কালিমার দাবি হচ্ছে- সত্যিকারার্থে আল্লাহ ছাড়া কেউ এবাদতের উপযুক্ত নয়। এরশাদ হচ্ছে
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِك

‘জেনে রাখুন, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমা প্র্রার্থনা করুন আপনার ত্রুটির জন্যে।’ (সূরা: মুহাম্মদ: ১৯)
রসূল সা. বলেছেন-
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ رواه مسلم

‘যে ব্যক্তি لا إله إلا الله এর তাৎপর্য ও অর্থ জানাবস্থায় মারা গেল, সে জান্নাতে প্র্রবেশ করবে।’

২. الشرط الثاني ( اليقين ) কালিমা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা: – এই কালেমার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, সংশয়-সন্দেহ পরিত্যাগ করা।
لا إله إلا الله এর অর্থ ও তাৎপর্যকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার মানে, এর ব্যাপারে কোনো ধরনের সংশয়, সন্দেহ বা কিংকর্তব্য বিমূঢ়তার বিন্ধুমাত্র শংমিশ্রন থাকতে পারবে না। এরশাদ হচ্ছে-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ

‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্র্রতি ঈমাান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর রাস্তায় ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সূরা আল হুযুরাত: ১৫)
রাসূল (সা.) এরশাদ করেন –
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ ، لا يُلْقَى بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلا دَخَلَ الْجَنَّةَ . أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ

‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূূল।’ সংশয়হীনভাবে এ কালেমা পাঠকারী যদি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তবে জান্নাতের মধ্যে এবং তার মধ্যে কোনো প্র্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

৩. الشرط الثالث (القبول ) এই কালেমার আবেদন ও দাবী স্বতঃস্ফুর্ত গ্রহণ করা প্র্রত্যাখ্যান না করা: অন্তর ও অঙ্গ- প্রতঙ্গের মাধ্যমে এই কালেমার আবেদন সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি এই কালেমার আবেদনকে প্র্রত্যাখ্যান করবে, আন্তরিকভাবে মেনে না নিবে, সে কাফের। সাধারণত প্র্রত্যাখ্যান করা হয়ে থাকে অহংকার, বিরোধিতা, হিংসা, বাপ-দাদার অন্ধানুকরণ ইত্যাদি কারণে। যেমন পবিত্র কুরআনের ভাষায় অহংকার বশত لا إله إلا الله এর অর্থ ও তাৎপর্যকে প্র্রত্যাখ্যানকারী কাফেরদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-
إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ ﴿৩৫﴾ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوا آَلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ ﴿ سورة الصافات:৩৫-৩৬﴾

‘‘তাদের যখন বলা হত আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করব?’ (সূরা সাফফাত: ৩৫-৩৬)
অতীত উম্মাতের ভিতর যারা এই কালেমার আহ্বান প্র্রত্যাখ্যান করেছে, আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তাদের থেকে নেয়া প্রতিশোধ চিত্র পবিত্র কুরআনে তুলে ধরা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-
وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آَبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آَثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ ﴿২৩﴾ قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ بِأَهْدَى مِمَّا وَجَدْتُمْ عَلَيْهِ آَبَاءَكُمْ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ ﴿২৪﴾ فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ ﴿২৫﴾ (سورة الزخرف :২৩ (

‘এমনি ভাবে আপনার পুর্বেআমি যখন কোন জনপদে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখন তাদেরই বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে চলি। সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে, তারা বলত তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না। ফলে আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। অতঃপর দেখুন, মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে।’ (সূরা আয যুখরুফ: ২৩-২৫)

৪- الشرط الرابع ( الإخلاص) এই কালেমার প্রতি পূর্ণ ইখলাস প্রদর্শন করা: লৌকিকতা, সুখ্যাতি ও অংশীদারিত্ব পরিহার করা। সমস্ত ইবাদাতে একমাত্র আল্লাহর প্রতিনিবিষ্ট চিত্তে মনোনিবেশন করা। ছোট বড় সমস্ত শিরক হতে নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখা। এরশাদ হচ্ছে-

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ.

‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্টভাবে আল্লাহ তাআলার এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সূরা আল বায়্যিনাহ-৫)
রসূল সা. বলেছেন-
عن عِتْبَانَ بْن مَالِكٍ الْأَنْصارِيَّ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : (إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ روى البخاري

আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির উপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য لا إله إلا الله বলেছে।’ বুখারী।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَنْ لَا يَسْأَلُنِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلَ مِنْكَ ، لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ ، أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِه * رواه البخارىِ    “

‘আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন আমি বলেছি, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশের মাধ্যমে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন: হে আবু হুরায়রা! আমি নিশ্চিতভাবে ধারণা করেছিলাম যে, এ ব্যাপারে তোমার আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না। যেহেতু হাদীসের প্রতি তোমার অধিক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। শুন! কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত বা সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তি বেশি লাভবান হবে যে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে নিবিষ্ট চিত্তে لا إله إلا الله বলেছে।

৫. الشرط الخامس ( الانقياد ) এই কালেমার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করা, পরিত্যক্ত করে না রাখা: বাহ্যিক অঙ্গ- প্রতঙ্গ, আভ্যন্তরীণ মননশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই কালিমার অর্থ, আবেদন ও তাৎপর্যকে সম্পূর্ণরূপে মেনে নেয়া। যার সত্যতা প্রমাণিত হবে, আল্লাহ তাআলার আদেশ বাস্তবায়ন, তার পছন্দনীয় বস্তুগুলো গ্রহণ, অপছন্দনীয় বস্তু গুলো বর্জন এবং তার গোস্বা ও রাগান্বিত বিষয়-বস্তু গুলো পরিহার করার মাধ্যমে। এরশাদ হচ্ছে-
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى وَإِلَى اللَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ  وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهُ.

‘যে ব্যক্তি সৎকর্ম পরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করে, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত হাতল। যাবতীয় কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। যে ব্যক্তি কুফরী করে, তার কুফরী যেন আপনাকে ক্লিষ্ট না করে। (সূরা লুকমান: ২২-২৩)

وَأَنِيبُوا إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ* الزمر

ফিরে এসো তোমারে রবের দিকে এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও, তোমাদের ওপর আযাব আসার পুর্বেই। তখন কোন দিক থেকেই আর সাহায্য পাওয়া যাবে না। (সূরা যুমার: ৫৪)

قُلْ إِنَّمَا يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ* سورة الأنبياء

এদেরকে বলো,“আমার কাছে যে অহী আসে তা হচ্ছে এই যে, কেবলমাত্র এক ইলাহই তোমাদের ইলাহ, তারপর কি তোমরা আনুগত্যের শির নত করছো ?”

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿৬৫﴾. (سورة النساء৬৫(

‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো ঈমাানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়, তৎপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণনা করে।’ (সূরা নিসা: ৬৪)

রাসূল সা. বলেছেন-
عن أبي محمد عبد الله بن عمرو بن العاص – رضي الله عنهما – قال :قال رسول الله لَا يُؤْمِن أَحَدكُمْ حَتَّى يَكُون هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْت بِهِ

‘ তোমাদের কেউ মুমিন বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার আনীত বিধানের প্রতি তার প্রবৃত্তি আনুগত্য প্রকাশ না করবে।’

৬- والسادس (الصدق ) এই কালেমার ব্যাপারে নিরেট সততা প্রর্দশন করা, মিথ্যা ও কপটতা পরিহার করা: বান্দার অন্তরে সুপ্ত অভিব্যক্তির সাথে মুখের উচ্চারণের এতটুকু সমন্বয় থাকতে হবে, যার দ্বারা তার অবস্থা মুনাফিক তথা কপটদের অবস্থা হতে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায়- যারা মিথ্যা ও ধোকার আশ্রায় নিয়ে মুখে এমন সব কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে বিদ্যমান থাকে না।

وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ * الزمر

আর যে ব্যক্তি সত্য নিয়ে এসেছে এবং যারা তাকে সত্য বলে মনে নিয়েছে তারাই আযাব থেকে রক্ষা পাবে।
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার আদালতে যে মোকাদ্দমা দায়ের হবে তাতে কোন লোকেরা শাস্তি লাভ করবে তা তোমরা আজই শুনে নাও। তাতে নিশ্চিতভাবে সে লোকেরাই শাস্তি পাবে যারা এ মিথ্যা আকীদা গড়ে নিয়েছিলো যে, আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী, ইখতিয়ার এবং অধিকারে অন্য কিছু সত্তাও শরীক আছে। তাদের আরো বড় অপরাধ ছিল এই যে, তাদের সামনে সত্য পেশ করা হয়েছে কিন্তু তারা তা মানেনি। বরং যিনি সত্য পেশ করেছেন উল্টো তাকেই মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছে। পক্ষান্তরে যিনি সত্য এনেছেন আর যারা তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে আল্লাহর আদালতে তাদের শাস্তি পাওয়ার কোন প্রশ্ন ওঠে না। রাসূল সা. বলেছেন:
عن معاذ بن جبل رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم: مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صَادِقًا مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ * رواه أحمد

‘ যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে لاإله إلا الله অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এর সাক্ষ্য প্রদান করবে তার উপর আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। (মুসনাদে আহমদ) মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন-
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آَمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ ﴿৮﴾ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ – فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ. (سورة البقرة:

‘আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতিঈমাান এনেছি অথচ তারা আদৌ ঈমাানদার নয়। তারা আল্লাহ এবং ঈমাানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এর দ্বারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।’ (সূরা আল বাক্বারা: ৮-১০)

৭. والسابع (المحبة) এই কালেমার প্রতি খাঁটি মহাব্বত প্রদর্শন করা, বিদ্বেষ পোষণ না করা: এই কালিমা ও তার আবেদনের প্রতি অগাধ ভালবাসা ও মহাব্বত রাখা। অর্থাৎ এই কালেমা অনুযায়ী আমল পছন্দ করা, যারা এর উপর আমল করে এবং এর প্রতি আহ্বান করে তাদের মহাব্বত করা। যারা এই কালেমাকে অপছন্দ করে এর সাথে প্রতারণা বা মিথ্যারোপ করে, এর থেকে পৃষ্ঠ প্রর্দশন করে ও এর প্রচার প্রসারকে বাধা গ্রস্ত করে, তাদেরকে অপছন্দ ও প্রতিহত করা। এই কালেমার প্রতি মহাব্বতের প্রমাণ দেয়ার জন্য আরো প্রয়োজন- আল্লাহ তাআলার আদেশকৃত ও পছন্দনীয় জিনিসগুলো বাস্তবায়ন করা, যদিও তা প্রবৃত্তির বিপরীত হয়। অপর পক্ষে আল্লাহ তাআলার নিষেধকৃত ও অপছন্দনীয় জিনিসগুলোর প্রতিবিদ্বেষ পোষণ করা, তা হতে দূরে থাকা, যদিও তার প্রতি অন্তর ধাবিত হয়। আল্লাহর বান্দাদের সাথে সর্ম্পক স্থাপন করা। আল্লাহর শত্রুদের সাথে সর্ম্পকচ্ছেদ করা। রাসূলের অনুকরণ করা। তার দিক নির্দেশনার অনুসরণ করা। তার আনীত বিধানকে কবুল করা। এ ছাড়া মহাব্বত শুধু একটি দাবী যার কোন বাস্তবতা নেই। এরশাদ হচ্ছে-
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ* سورة البقرة .

‘আর কোন লোক এমন রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং এদের প্রতি এমন ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতিভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশি।’ (সূরা আল বাক্বারা: ১৬৫) অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ তাদের অন্তরে ও হৃদয়ে স্থায়ীরূপ নিয়েছে। তাদের অন্তর ও হৃদয় এ কালেমা পরিপূর্ণ করে দিয়েছে, বিধায় অন্য কোনো জিনিসের জন্য তাদের অন্তর উন্মুক্ত হয় না। তাদের অন্তরে যত মহাব্বত-বিদ্বেষ দেখা যায় সব এই কালেমার অনুকরণে উৎসারিত হয়।

عن أنس رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :: ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَمَنْ أَحَبَّ عَبْدًا لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ* (متفق عليه .

তিনটি গুণ যার মাঝে থাকবে সে ঈমানের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে : (১) আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূূল অন্য সবকিছু থেকে তার কাছে অধিক প্রিয় হওয়া (২) একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে মহাব্বত করা এবং (৩) ঈমান আনার পর কুফরে ফিরে যাওয়াটা আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দের। আল্লাহ তায়ালা বলে =

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾

হে ঈমাানদারগণ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি দ্বীন থেকে ফিরে যায়, (তাহলে ফিরে যাক), আল্লাহ এমনিতে আরো বহু লোক সৃষ্টি করে দেবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেনা। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে চান তাকে দান করেন। আল্লাহ ব্যাপক উপায় উপকরণের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন। (সূরা মায়েদা: ৫৪)



আলকোরআনে ‘দাওয়াতের গুরুত্ব’ সম্পর্কে আলোচনা

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
আলকোরআনে ‘দাওয়াতের গুরুত্ব’

قُلْ هذِهِ سَبِيلِي أَدْعُوا إِلَى اللَّهِ عَلى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحانَ اللَّهِ وَما أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ .
’বলুন! ইহাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ মহা পবিত্র আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (ইউসুফ ১২/১০৮)
ادْعُ إِلى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ.
‘আপনি আপনার প্রতিপালকের দিকে হেকমত ও উপদেশ দ্বারা আহবান করুন এবং তাদের সাথে উত্তম পন্থায় তর্ক করুন। তাঁর পথ থেকে কে পথভ্রষ্ট হয় সে ব্যাপারে আপনার প্রতিপালক অধিক জ্ঞাত এবং কে হেদায়াতপ্রাপ্ত তাও তিনি সবিশেষ অবহিত’ (নাহল ১৬/১২৫)
৩- وَلا يَصُدُّنَّكَ عَنْ آياتِ اللَّهِ بَعْدَ إِذْ أُنْزِلَتْ إِلَيْكَ وَادْعُ إِلى رَبِّكَ وَلا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ .
‘আপনার নিকট আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন আপনাকে সেগুলো থেকে বিমুখ না করে। আপনি প্রতিপালকের দিকে আহবান করুন এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না’  (ক্বাছাছ ২৮/৮৭)
৪- يا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْناكَ شاهِداً وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً – وَداعِياً إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِراجاً مُنِيراً
‘হে নবী! আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে’। ‘আল্লাহর অনুমতিতে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে’ (আহযাব ৩৩/৪৫-৪৬)
৫- وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صالِحاً وَقالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
‘ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম কথা কার, যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত’ (ফুছছিলাত ৪১/৩৩)
6- فَلِذلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَما أُمِرْتَ وَلا تَتَّبِعْ أَهْواءَهُمْ وَقُلْ آمَنْتُ بِما أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتابٍ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ اللَّهُ رَبُّنا وَرَبُّكُمْ لَنا أَعْمالُنا وَلَكُمْ أَعْمالُكُمْ لا حُجَّةَ بَيْنَنا وَبَيْنَكُمُ اللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنا وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ
‘অতএব আপনি তার দিকে আহবান করুন ও তাতেই দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকুন যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন এবং তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করবেন না। বল, আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে বিশ্বাস করি এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে। আল্লাহই আমাদের প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের ও তোমাদের কর্ম তোমাদের। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ নেই। আল্লাহই আমাদেরকে একত্রিত করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে’ (শূরা ৪২/১৫)
7-  يا قَوْمَنا أَجِيبُوا داعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ يَغْفِرْ لَكُمْ مِنْ ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِنْ عَذابٍ أَلِيمٍ.
‘হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন এবং মর্মন্তুদ শাস্তি হ’তে রক্ষা করবেন’  (আহক্বাফ ৪৬/৩১)
8- يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذا دَعاكُمْ لِما يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ.
‘হে ঈমানদারগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দিবে। জেনে রাখ যে, আল্লাহ সম্মুখ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে’ (আনফাল ৮/২৪)



ভয় ও আশা

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
পাঠ সংক্ষেপ
অন্তরের আমলসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াওয়ের ভয় ও মাগফিরাতের আশা করা। এ ভয় ও আশা এমন এক আমল, যা অন্যান্য নেক-আমালের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষকে আখিরাতের প্রতি আগ্রহী করে তুলে। পাপাচার ও গুনাহ থেকে মানুষকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।

প্রথম খুৎবা
الْحَمْدُ لِلَّهِ غَافِرِ الذَّنْبِ قَابِلِ التَّوْبِ شَدِيْدِ الْعِقَابِ، ذِيْ الطَّوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ إِلَيْهِ الْمَصِيْرُ، أَحْمَدُهُ وَأَشْكُرُهُ أَنْزَلَ الْكِتَابَ نُوْراً مُبِيْناً، يَهْدِي بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلامِ، وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَىَ النُّوْرِ بِإِذْنِهِ، وَيَهْدِيْهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطاً مُسْتَقِيْماً، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسْولُهُ صَلَّىَ الهُّ وَسَلَّمَ وَبَارَكَ عَلَيْهِ، وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ:

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! অন্তরের আমলই সবচে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। অন্তরের আমলের ছাওয়াবও সর্বোচ্চ ও সুদূরপ্রসারী। আবার এ ক্ষেত্রে ত্রুটি হলে তার শাস্তিও অধিকতর মর্মন্তুদ কঠোর। পক্ষান্তরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল অন্তরের আমলের অনুসারী ও তার উপর নির্ভরশীল। এ জন্যই বলা হয়, অন্তর হলো সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রাজা আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হলো তার প্রজা। রাজা যেমন তার প্রজাদেরকে পরিচালনা করেন, মানুষের অন্তরও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পরিচালনা করে। প্রজারা যেমনি রাজার হুকুম তামিল করে তেমনি অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অন্তরের হুকুম তামিল করে। তাই মানুষের অন্তর যতক্ষণ পর্যন্ত বিশুদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার ঈমানও বিশুদ্ধ হতে পারে না। আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
(لَا يَسْتَقِيمُ إِيمَانُ عَبْدٍ حَتَّى يَسْتَقِيمَ قَلْبُهُ)

মানুষের ঈমান যথার্থ হবে না যতক্ষণ না তার অন্তর যথার্থ হয় (আহমদ, সহীহ)।

অন্তর যথার্থ হওয়ার অর্থ অন্তরে আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত থাকা। অন্তরে আল্লাহর আযমত- মহব্বত, বড়ত্ব, ভয় ও আশা প্রতিষ্ঠিত থাকা। অন্তর দিয়ে আল্লাহর আনুগত্যকে পছন্দ করা এবং অবাধ্য হওয়াকে ঘৃণা করা। আবূ হুরাইয়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
(ِإنَّ اللَّهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ، وَأَمْوَالِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ، وَأَعْمَالِكُمْ)

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আকার-আকৃতি ও সম্পদের প্রতি নজর দেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল(মুসলিম)।

হাসান আল-বসরী রহ. এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বলেন :
دَاوِ قَلْبِكَ، فَإِنَّ حَاجَةَ اللهِ إِلَى الْعِبَادِ صَلَاحُ قُلُوْبِهِمْ

Cতুমি তোমার অন্তরের চিকিৎসা করো কেননা আল্লাহর প্রয়োজন তো কেবল তাঁর বান্দাদের অন্তরের বিশুদ্ধতা।

মুহতারাম শ্রোতামণ্ডলী! অন্তরের আমলসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো আল্লাহ তাআলার পাকড়াওয়ের ভয় ও মাগফিরাতের আশা করা। এ ভয় ও আশা এমন এক আমল, যা অন্যান্য নেক-আমালের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষকে আখিরাতের প্রতি আগ্রহী করে তুলে। পাপাচার ও গুনাহ থেকে মানুষকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। এ এমন এক আমল, যা মানুষকে দুনিয়ার প্রতি নিস্পৃহ করে তুলে। উদভ্রান্ত পশুপ্রবৃত্তির মুখে লাগাম এঁটে দেয়।

আল্লাহর ভয় অন্তরের চালকতুল্য, যা মানুষকে সকল ভালো কাজের দিকে ধাবিত করে। সকল অকল্যাণ ও বদ-আমল থেকে বিরত রাখে। আর আশা হচ্ছে সম্মুখবর্তী পরিচালক যা বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত নিয়ে যায়। আশা বড় বড় নেক-আমল করার হিম্মত ও সাহস বাড়িয়ে দেয়। বদ-আমল থেকে মানুষকে সরিয়ে আনে।

আল্লাহর ভয় মানবপ্রবৃত্তিকে কামনা-বাসনার ফাঁদ থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখে। প্রবৃত্তির বিপথগামিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রবৃত্তিকে এমন পথে পরিচালিত করে যাতে রয়েছে মানবকুলের কল্যাণ ও সাফল্য। আল্লাহর ভয় তাওহীদের একটি শাখা। তাই ভয় একমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে অন্য কাউকে করা যাবে না। কেননা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করলে তা হবে শিরকের শামিল।

একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার নির্দেশ

প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুআলানে শুধুমাত্র তাঁকেই ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য কাউকে ভয় করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّمَا ذَلِكُمْ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِي إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ}

সে তো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও (সূরা আলে ইমরান:১৭৫)।

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেন :
{فَلا تَخْشَوْا النَّاسَ وَاخْشَوْنِي وَلا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلاً}

অতঃপর মানুষকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় কর। আর আমার আয়াতসমূহ স্বল্পমূল্যে বিক্রি করো না (সূরা আল মায়েদা)।

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে :
{وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ}

আর কেবল আমাকেই ভয় কর (সূরা আল বাকারা:৪০)।

হাদীসে এসেছে, আনাস রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বক্তৃতা করলেন। অতঃপর বললেন :
(لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا، قَالَ: فَغَطَّى أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللُه عَلِيْهِ وَسَلَّمْ وُجُوهَهُمْ لَهُمْ خَنِينٌ)

আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। তখন সাহাবীগণ তাঁদের চেহারা ঢেকে ফেললেন এ অবস্থায় যে তাঁরা ছিলেন কান্নারত (বুখারী ও মুসলিম)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে জাহান্নামীদের কষ্ট-আযাব স্বচক্ষে দেখেছেন। উপরন্তু আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে তাঁকে পরকালীন জীবনের খুঁটিনাঁটি সবিস্তারে জানিয়েছেন। পরকালীন জীবন ও পাপীদের জন্য সেখানে যে কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে জানতেন অন্যান্য মানুষ যদি সেভাবে জানতো তবে মানুষের আমোদ-আহলাদ, হাসি-তামাশা সব থেমে যেত। বরং সবাই উদ্বেগে, উৎকণ্ঠায়, ভয়ে, শঙ্কায় কেঁদে কেঁদে অধিক সময় পার করত।

আল্লাহর ভয় একটি মৌলিক বিষয়। আল্লাহর ভয় থেকে যাদের হৃদয় শূন্য তারা দুনিয়াতেও বিপথগামী, পরকালেও তারা বঞ্চিত হবে জান্নাতের অবর্ণনীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য থেকে। তাই আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করার অন্য কোনো বিকল্প নেই। আর এর জন্য প্রয়োজন যথার্থ জ্ঞানার্জন। কেননা আল কুরআন অনুযায়ী জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ}

বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লহকে ভয় করে (সূরা আল ফাতির : ২৮)।

যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। কেননা আল্লাহকে ভয়কারী কখনো আল্লাহর নাফরমানী করতে পারে না পাপাচার করতে পারে না। পাপের দিকে পা বাড়ালেই আল্লাহর ভয় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহকে ভয়কারীর জীবন হয় পূন্যময় জীবন। আর যারা এভাবে জীবনযাপন করে পরপারে যাবে তাদের জন্য তো জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত। ইরশাদ হয়েছে :
{وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ. فَبِأَيِّ آلاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ. ذَوَاتا أَفْنَانٍ}

আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে, তার জন্য থাকবে দুটি জান্নাত। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নিআমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? উভয়ই বহু ফলদার শাখাবিশিষ্ট (সূরা আর রাহমান:৪৬-৪৮)।

যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে সে নিজের খেয়াল-খুশিমতো চলতে পারে না বরং নিজের খেয়াল-খুশিকে আল্লাহর রেযামন্দীর অনুগামী করে দেয়। আর আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের খেয়াল-খুশিকে বিসর্জনের প্রতিদান তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু হতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে :
{وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنْ الْهَوَى فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى}

আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল (সূরা আন-নাযিআত:৪০-৪১)।

দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর ভয়ে শঙ্কিত জীবনযাপনের পর সৎকর্মশীল মুমিনরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, পৃথিবীতে পরিবার-পরিজনবেষ্টিত থাকা অবস্থায় তারা যে আল্লাহকে ভয় করত, সে বিষয়টি পরস্পরে আলোচনার সময় উল্লেখ করবে। ইরশাদ হয়েছে :
{وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوهُ إِنَّهُ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيمُ}

আর তারা একে অপরের মুখোমুখী হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, তারা বলবে, পূর্বে আমরা আমাদের পরিবারের মধ্যে শঙ্কিত ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় পূর্বে আমরা তাঁকে ডাকতাম নিশ্চয় তিনি ইহসানকারী, পরম দয়ালু (সূরা আত-তূর:২৫-২৮)।

সালাফে সালেহীনদের জীবন ছিল আল্লাহর ভয়পূর্ণ জীবন। তাঁদের হৃদয়রাজ্যে ছিল আল্লাহর ভয়ের শাসন। তাঁরা ছিলেন নেককার ও আল্লাহর রহমত-প্রত্যাশী বান্দা। এ কারণেই তাঁদের পার্থিব জীবনটাও ছিল উত্তম জীবন। আর পরকাল তো তাদের চির সুখের ঠিকানা। উমর রাযি. রাতের বেলায় ঘুরে বেড়াতেন সাধারণ মানুষের অবস্থা জানার জন্য। একদিন তিনি এক ব্যক্তিকে সূরায়ে তূর পড়তে শুনে তাঁর বাহন থেকে নেমে গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি দীর্ঘ একমাস অসুস্থাবস্থায় ছিলেন। উমর রাযি. এর কি রোগ হয়েছে তা কেউ জানতে পারেনি। সুফিয়ান আছ-ছাওরী রহ. আল্লাহর ভয়ে একবার রীতিমতো অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। সালাফে সালেহীনের জীবনে এ জাতীয় বহু উদাহরণ রয়েছে, যা এই ছোট্ট পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়।

আবূ হাফস রহ. বলেন: ভয় হচ্ছে আল্লাহর চাবুক। যারা আল্লাহর দরজা থেকে দূরে তিনি তাদেরকে এই চাবুক দ্বারা সোজা করেন। তিনি আরো বলেন: ভয় হলো অন্তরের চেরাগ। আবূ সুলায়মান রহ. বলেন : ভয় যদি কারো হৃদয় ছেড়ে চলে যায়, তবে সে ধ্বংস হয়ে যায়।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

দ্বিতীয় খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالمَيْنَ، أَحْمَدُهُ سُبْحَانَهُ وَأَشْكُرُهُ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ صَلَّى اللهُ وَسّلَّمَ وَبَارَكَ عَلِيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأصْحَابِهِ وَالتَّابِعَيْنَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ إَلَى يَوْمِ الدِّيْنِ،أَمَّا بَعْدُ:

পিয় ভাইয়েরা! প্রশংসিত ভয় তো হলো তাই, যা মানুষকে সৎকাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। সৎকাজের প্রেরণা যোগায়। হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে। তবে ভয় যদি প্রশংসনীয় পর্যায় অতিক্রম করে অতিমাত্রায় প্রচণ্ডতা ধারণ করে তবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কবীরা গুনাহ।

ইবনে রজব রহ. বলেন, যতটুকু ভয় থাকা ওয়াজিব বা আবশ্যক তা হলো, এমন ভয় যা মানুষকে ফরয ও আবশ্যক বিষয়গুলো যথার্থরূপে আদায় করা এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকার প্রতি উৎসাহিত করে। ভয় যদি এর থেকে অতিরিক্ত আকারে থাকে, যা মানুষকে নফল ও ঐচ্ছিক আমলগুলো বাস্তবায়ন এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মাকরূহ ও যা করা জায়েয এমন জিনিসের সংস্পর্শ থেকে ব্যক্তিকে বিরত রাখে, তবে তা এক প্রশংসনীয় গুণ। কিন্তু যদি ভয়ের মাত্রা এর থেকেও বেড়ে যায়, যেমন ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে কেউ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লো, অথবা ভয়ে-শঙ্কায় মারাই গেল অথবা সারাক্ষণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিনাতিপাত করতে লাগলো। এমনকি ভয় তাকে শ্রম থেকে বিমুখ করে দিল, তাহলে এমন ভয় অপ্রশংসনীয় ভয় বলে গণ্য হবে।

তাই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার ক্ষেত্রেও আমাদেরকে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। এমন ভয় না করা, যা বান্দাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে দেয়। অথবা আমলের ক্ষেত্রে শ্রম ব্যয়ের মানসিকতায় ব্যত্যয় ঘটিয়ে একেবারে কর্মবিমুখ করে দেয়।

সুপ্রিয় মুসল্লীবৃন্দ! একজন মুমিন দুই ধরনের ভয়ের মাঝে জীবনযাপন করে। এক. এমন বিষয়ের ভয় যা বিগত হয়েছে, বান্দা জানে না সে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কী ফয়সালা করে রেখেছেন। দুই. এমন বিষয়ের ভয় যা এখনো সংঘটিত হয়নি। বান্দা জানে না, আল্লাহ তার ভাগ্যে এ ব্যাপারে কী লিখে রেখেছেন।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! এবার আসুন আশা নিয়ে আলোচনা করি। আশা হলো নেক-আমলের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাওয়াব প্রাপ্তির আশা রাখা। ছাওয়াব প্রাপ্তির আশা রাখার শর্ত হলো, প্রথমে নেক-আমল সম্পাদন করা। হারাম থেকে বিরত থাকা ও তাওবা করা। এর বিপরীতে যদি কেউ আবশ্যককর্ম ছেড়ে দিয়ে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে শুরু করে এবং আল্লাহর উপর অযাচিতভাবে আশা করে বসে থাকে, তবে তার অর্থ হবে আল্লাহর পাকড়াও ও কৌশল সম্পর্কে নিরাপত্তা অনুভব করা, যা কোনো ক্রমেই আশার মধ্যে পড়ে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
{فَلا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ}

তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকে নিরাপদ হয়ে গিয়েছে? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত কওম ছাড়া আল্লাহর কৌশল থেকে আর কেউ (নিজদেরকে) নিরাপদ মনে করে না (সূরা আল-আরাফ:৯৯)।

আগে নেক-আমল করতে হবে তারপর আশায় বুক বেঁধে রাখতে হবে। নেক-আমল না করেই রঙ্গীন আশায় বিভোর হয়ে থাকা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ}

নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লহ যে রিয্ক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না (সূরা ফাতির:২৯)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَةَ اللَّهِ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ}

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও যারা হিজরত করেছে এবং আল্লহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, তারা আল্লহর রহমতের আশা করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা আল বাকারা:২১৮)।

আশা-প্রত্যাশা একটি ইবাদত, যা নিবেদিত হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। মুক্তি ও কল্যাণের আশা একমাত্র আল্লাহর সাথেই নির্দিষ্ট করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রতি আশা-প্রত্যাশার অর্থ হবে আল্লাহর সাথে শরীক করা। ইরশাদ হয়েছে :
{فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا}

সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে (সূরা আল কাহ্ফ:১১০)।

আশা-প্রত্যাশা আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের একটি মাধ্যম। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন
(أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي)

আমি- আমার ব্যাপারে আমার বান্দার ধারণার কাছে। আর আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে (বুখারী ও মুসলিম)।

তাই নেক-আমল পেশ করার পর আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা রাখা অতি জরুরী বিষয়। তাই আমল কবুল হচ্ছে না, অথবা আল্লাহ কোনো ছাওয়াব দেবেন না এ জাতীয় ধারণা পোষণ করা কখনো উচিত নয়।

সুপ্রিয় হাযেরীন! অন্তরে আল্লাহর ভয় ও আশা উভয়টাই সমানভাবে রাখতে হবে। আর বান্দার পূর্ণাঙ্গ অবস্থা তো হলো ভয় ও আশা উভয়টা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় হৃদয়ে ধারণ করে আল্লাহকে মহব্বত করা। নবী-রাসূল ও প্রকৃত মুমিনদের অবস্থা এরূপই ছিল। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন :
{إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ}

তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী (সূরা আল আম্বিয়া:৯০)।

তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন :
{تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنْ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ}

তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে (সূরা আস-সাজদা:১৬)।

একজন মুসলমান যখন আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতা, তাঁর মহানুভবতা, মাগফিরাত, তাঁর জান্নাতের বিশালতা, অফুরন্ত ছাওয়াব ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে, তখন তার হৃদয় প্রশস্ত হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে যে অফুরন্ত খায়ের-বরকত রয়েছে, যে ছাওয়াবনিয়ামত রয়েছে সে ব্যাপারে আশা-প্রত্যাশায় তার বুক ভরে যায়। অপর পক্ষে যখন সে আল্লাহর কঠোর শাস্তি ও পাকড়াও, সীমাহীন আযাব, কঠিন হিসাব-নিকাশ, কিয়ামতের ভয়াবহতা, আগুনের বীভৎসতা, জাহান্নামের আযাবের নানা আকার-প্রকৃতি ইত্যাদির জ্ঞান লাভ করে তখন সে ভয়ে কম্পিত হয়ে পড়ে। তার হৃদয় তখন শঙ্কিত হয়ে যায়। তাই আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
(لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤْمِنُ مَا عِنْدَ اللَّهِ مِنَ الْعُقُوبَةِ مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ، وَلَوْ يَعْلَمُ الْكَافِرُ مَا عِنْدَ اللَّهِ مِنَ الرَّحْمَةِ مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ أَحَدٌ )

মুমিন যদি আল্লাহর কাছে কী আযাব রয়েছে তা জানত তাহলে কেউ তার জান্নাতের প্রত্যাশা করত না। আর কাফির যদি জানত আল্লাহর কাছে কী রহমত রয়েছে তবে তার জান্নাত থেকে কেউ নিরাশ হত না (মুসলিম)।

আল্লাহ তাআলাও বহু জায়গায় তাঁর আযাব ও মাগফিরাত পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে :
{وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِلنَّاسِ عَلَى ظُلْمِهِمْ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ}

আর নিশ্চয় তোমার রব মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল তাদের জুলম সত্ত্বেও এবং নিশ্চয় তোমার রব কঠিন আযাবদাতা (সূরা আর রাদ:৬)।

ইমাম গাযালী রহ. মাকহূল আদ-দিমাশকী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, যে কেবল ভীতি নিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করে সে হারূরী ফেরকাভুক্ত। আর যে কেবল আশা নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করে সে মুরজিআ ফেরকাভুক্ত। আর যে কেবল মহব্বত নিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করে সে যিন্দীক। আর যে ভয়, আশা ও মহব্বত নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করে সে একত্ববাদী সুন্নী (এহয়ায়ে উলূমুদ্দীন)।

ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহ. মাদারিজুস সালেকীন গ্রন্থে বলেন, অন্তর আল্লাহ তাআলার পানে চলার ক্ষেত্রে একটি পাখির তুল্য। মহব্বত হলো এ পাখির মাথা। আর ভয় ও আশা হলো এ পাখির দুই ডানা। যদি মাথা ও দুই ডানা ঠিক থাকে তাহলে সে ভালোভাবে উড়তে পারে। যদি পাখিটির মাথা কেটে ফেলা হয়, তাহলে সে মারা যায়। যদি দুই ডানা কেটে ফেলা হয়, তবে সে প্রত্যেক শিকারীর সহজ লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়। তবে সালাফ তথা আমাদের নেককার পূর্বপুরুষগণ ভয়ের ডানাকে আশার ডানার চেয়ে বেশি শক্তিমান করতে পছন্দ করতেন। আর যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময় হত তখন আশার ডানাকে ভয়ের ডানার চেয়ে অধিক শক্তিশালী করতেন। মহব্বত হলো বাহন আশা হলো সম্মুখবর্তী পরিচালক, ভয় হলো পশ্চাৎবর্তী চালক। আর আল্লাহ তাঁর ফযল ও করমে বান্দাকে পৌঁছিয়ে দেয়ার মালিক।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমরা যদি আমল না করে কেবল আশায় বুক বেঁধে বসে থাকি, তবে তা হবে নিজেদের সাথেই প্রতারণা করা এবং দম্ভগর্বের প্রকাশ। আর আল্লাহ তাআলা এরূপ করতে আমাদেরকে নিষেধ করে দিয়ে বলেন :
{يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ}
হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে আর বড় প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে (সূরা আল ফাতির:৫)।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله ِ: (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png