LIVE
Loading latest headlines...

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বুধবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিতর নামায আদায়ের পদ্ধতিঃ একটি প্রশ্নের উত্তর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ইবনে আক্তার ধানমণ্ডি, ঢাকা প্রশ্ন : আরামবাগ এলাকার এক মসজিদের খতীবকে অনেকবার এ কথা বলতে শুনেছি যে, বিতর নামাযের একাধিক পদ্ধতি হাদীসের কিতাবে রয়েছে, তবে হানাফীরা যেভাবে বিতর পড়ে, অর্থাৎ দুই বৈঠক ও এক সালামে তিন রাকাত-এই পদ্ধতি হাদীস শরীফে নেই। তার বক্তব্য হল, বিতর যদি তিন রাকাতই পড়তে হয় তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে বসা যাবে না। অন্যথায় তা মাগরিবের নামাযের সাদৃশ্য হয়ে যাবে। আর হাদীস শরীফে বিতরকে মাগরিবের সাদৃশ্য বানাতে নিষেধ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দুই বৈঠক ও এক সালামে কি বিতর পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়? যদি না থাকে তাহলে আমরা কোন ভিত্তিতে এভাবে বিতর নামায আদায় করছি?
উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া সালামুন আলা ইবাদিহিল্লা লাযিনাস তাফা, আম্মা বাদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। যে সব রেওয়ায়াতে পাঁচ, সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে, তাতেও বিতর তিন রাকাতই। বর্ণনাকারী আগে-পরের রাকাত মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। হাদীসের রেওয়ায়াতসমূহে ব্যাপকভাবে বিতর ও তাহাজ্জুদের সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে। এটি একটি উপস্থাপনাগত বিষয়।
নবীজী বিতর তিন রাকাত পড়তেন। এটিই তাঁর অনুসৃত পন্থা। নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত।
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।-সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩
সা‘দ ইবনে হিশাম রাহ. বলেন, হযরত আয়েশা রা. তাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; হাদীস ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৪, হাদীস ৬৯১২; সুনানে দারাকুতনী ২/৩২, হাদীস ১৫৬৫; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১
এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রাহ.ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তার আরবী পাঠ এই- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسلم في الركعتين الأوليين من الوتر অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। ইমাম হাকেম (রহ.) তা বর্ণনা করার পর বলেন- هذا حديث صحيح على شرط الشيخين অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’-এ হাকেম রাহ.-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০
এই হাদীস দ্বারা একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে। যদি দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করার নিয়ম না থাকত তাহলে সালাম করার বা না করার প্রসঙ্গতই আসত না। কেননা সালাম তো ফেরানো হয়ে থাকে।
ইমাম ইবনে হাযম যাহেরী রাহ. ‘মুহাল্লা’ কিতাবে বিতরের বিভিন্ন পদ্ধতির মাঝে আলোচিত পদ্ধতিটিও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিতর তিন রাকাত পড়া হবে। দ্বিতীয় রাকাতে বসবে এবং (তাশাহহুদ পড়ে) সালাম ফেরানো ছাড়াই দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাত পড়ে বসবে, তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফেরাবে, যেভাবে মাগরিবের নামায পড়া হয়। এটিই ইমান আবু হানীফা রাহ.-এর মত। এর দলিল হচ্ছে, সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস, যাতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -মুহাল্লা ইবনে হাযম ২/৮৯
সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর রেওয়ায়াতটি আরও একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার আরবী পাঠ নিম্নরূপ- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। হাকেম রাহ. এই রেওয়ায়াতের পর লেখেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ তা গ্রহণ করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮১

(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন- قلت لعائشة : بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالت: كان يوتر بأربع وثلاث, وست وثلاث, وثمان وثلاث, وعشر وثلاث, ولم يكن يوتر بأنقص من سبع, ولا بأكثر من ثلاث عشرة. অর্থাৎ আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯
চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামায কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো দশ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হত।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ফাতহুল বারী ৩/২৬ باب كيف صلاة الليل, كتاب التهجد)- এ লেখেন- هذا أصح ما وقفت عليه من ذلك, وبه يجمع بين ما اختلف عن عائشة في ذلك. والله أعلم আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব।

(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এক রাতে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমূনা রা.-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন বর্ণনা করেছেন। তাঁর শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। আমি এখানে সুনানে নাসায়ী ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করছি- ‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শযা্য থেকে উঠলেন, এরপর মেসওয়াক করলেন, এরপর দুই রাকাত পড়লেন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর পুনরায় শয্যা ত্যাগ করলেন, মেসওয়াক করলেন, অযু করলেন এবং দুই রাকাত পড়লেন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এরপর দুই রাকাত পড়েন। حتى صلى ستا ثم أوتر بثلاث وصلى ركعتين -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯, হাদীস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদীস ৩২৭১; তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২

(৫) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর, যিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর বিশিষ্ট শাগরেদ, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث ويقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى, وفي الثانية قل يا أيها الكفرون, وفي الثالثة قل هو الله أحد. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন, প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। -সুনানে দারেমী ১/৩১১, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী ১/৬১, হাদীস ৪৬২; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯; হাদীস ১৭০২; তহাবী শরীফ ১/২০১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১২, হাদীস ৬৯৫১ ইমাম নববী রাহ. ‘আলখুলাসা’ কিতাবে উক্ত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। -নাসবুর রায়াহ, জামালুদ্দীন যাইলায়ী ২/১১৯ বিতরের তিন রাকাতে উপরোক্ত তিন সূরা, এক এক রাকাতে এক এক সূরা, পড়া সম্পর্কে একাধিক সাহাবী থেকে রেওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি রেওয়ায়াত প্রমাণ করে যে, বিতরের নামায তিন রাকাত। মোটকথা, বিতরের নামায তিন রাকাত হওয়ার বিষয়ে হাদীস ও সুন্নাহর বহু প্রমাণা রয়েছে এবং অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমলও তাই ছিল। এখানে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি- عن ثابت قال: قال أنس: يا أبا محمد خذ عني فإني أخذت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم, وأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الله, ولن تأخذ عن أحد أوثق مني, قال: ثم صلى بي العشاء, ثم صلى سب ركعات يسلم بين الركعتين, ثم أوتر بثلاث يسلم في آخرهن (الروياني وابن عساكر, ورجاله ثقات, كما في كنز العمال) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত বুনানী রাহ., বলেন, আমাকে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাহ. বলেছেন, হে আবু মুহাম্মাদ! (সাবেত রা.-এর কুনিয়াত-উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েন, তা এভাবে যে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং সবশেষে সালাম ফেরান। -মুসনাদে রুয়ানী, তারীখে ইবনে আসাকির; ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, এই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য (কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭, হাদীস ২১৯০২ ‘আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাত, কিসমুল আফআল)

জরুরি জ্ঞাতব্য

বিতর নামাযের ব্যাপারে আজকাল এক ব্যাপক অবহেলা এই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, একে এমন এক নামায মনে করা হয় যার আগে কোন নফল নামায নেই, যেমন মাগরিবের নামায; এর আগে নফল নামায মাসনূন নয়; অথচ বিতরের ব্যাপারে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। সবচেয়ে ভাল এই যে, যার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য জাগার নিশ্চয়তা রয়েছে, সে তাহাজ্জুদের পরে বিতর পড়বে। যদি বিতর রাতের শুরু ভাগে ইশার পর পড়া হয় তবুও উত্তম এই যে, দুই-চার রাকাত নফল নামায পড়ার পর বিতর আদায় করবে। মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে- لا توتروا بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب, ولكن أوتروا بخمس, أو بسبع, أو بتسع, أو بإحدى عشرة ركعة, أو أكثر من ذلك. তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতর পড়ো। -মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩০৪, হাদীস ১১৭৮; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১, ৩২

মোটকথা, বিতরের আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়-দুই, চার, ছয়, আট-যত রাকাত সম্ভব হয় পড়ে নাও। ৩ নং-এর অধীনে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর হাদীস উল্লিখিত হয়েছে, যাতে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন-বিভিন্ন সংখ্যায় রাতের নামায আদায় করতেন। উল্লিখিত হাদীসে ওই নির্দেশনাই এসেছে যে, শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়। তবে বিতর সর্বাবস্থায় তিন রাকাতই।

উক্ত হাদীসের সাথে একথার কোন সম্পর্ক নেই যে, তিন রাকাত এক বৈঠকেই পড়তে হবে, তাহলেই শুধু তা মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বেঁচে যাবে। তাই তিন রাকাত পড়তে হলে তা এক বৈঠকেই পড়তে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বাঁচার পদ্ধতি হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, তিন রাকাত বিতরের আগে নফল পড়ে নাও। হাদীসের ব্যাখ্যা ছেড়ে নিজের পক্ষ থেকে বিতরের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা বিভ্রানি- ছাড়া আর কিছুই নয়।
শরীয়তে সকল নামাযের মূলকথা এই যে, প্রতি দুই রাকাতে বৈঠক হবে এবং তাশাহহুদ পড়া হবে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে সহীহ মুসলিম ১/১৯৪, হাদীস ৪৯৮-এ একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক ব্যাপক বাণী উদ্ধৃত রয়েছে। তাতে তিনি ইরশাদ করেন- وفي كل ركعتين التحية ‘প্রতি দুই রাকাতে তাশাহহুদ রয়েছে।’ একই হুকুম একাধিক সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত রয়েছে। শরীয়তের ব্যাপক শিক্ষা পরিহার করে কোন রেওয়ায়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে একথা বলা যে, তিন রাকাত বিতর পড়লে শুধু এক বৈঠকেই পড়া-এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد -এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা উম্মতকে উক্ত অনিষ্ট থেকে হেফাযত করুন। আমীন।

এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার উপরই লেখাটি সমাপ্ত করছি। তবে বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ তাই আগামী কোনো সংখ্যায় হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী (রহ.)এর একটি বিস্তারিত আলোচনা প্রকাশ করা হবে, যা তাঁর ‘ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম’ কিতাবে প্রকাশিত হয়েছে। هذا, وصلى الله تعالى وسلم على سيدنا ومولانا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين, وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.


নামাযের সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার পর ভুলক্রমে সহু সিজদা না দিলে সে নামাযের হুকুম কি

বুধবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তির নামাযে সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়েছে। তিনি শাইখ বিন বাযের ফতোয়ার আলোকে একীনের (নিশ্চিত জ্ঞানের) উপর নির্ভর করে অতিরিক্ত একটি সিজদা দিয়েছেন। সালাম ফেরানোর পর আর কোন সহু সিজদা দেননি। তিনি মনে করেছেন তাকে আর কোন সিজদা দিতে হবে না। তার নামায কি সহিহ হল?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।

এক:
যে ব্যক্তি নামাযের সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহে পড়েছেন; অর্থাৎ তিনি কি এক সিজদা দিয়েছেন; না দুই সিজদা দিয়েছেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান তাহলে তিনি একীনের (নিশ্চিত জ্ঞানের) উপর নির্ভর করবেন। একীন হচ্ছে- ছোট সংখ্যাটি হিসাব করা। তাই তিনি শুধু একটি সিজদা দিয়েছেন ধরে নিয়ে দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবেন। এরপর সালাম ফেরানোর আগে সহু সিজদা দিয়ে নেয়া উত্তম। এটি শাইখ বিন বায (রহঃ) এর অভিমত।

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: “আর যদি সন্দেহটি নামাযের মধ্যে হয় তাহলে সে ব্যক্তি একীনের উপর নির্ভর করবে এবং সিজদাটি আদায় করবে। যদি সন্দেহ হয় এক সিজদা দিয়েছে, নাকি দুই সিজদা দিয়েছে তাহলে সে ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবে। এটি প্রথম, কিংবা দ্বিতীয়, কিংবা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ যে রাকাতের ক্ষেত্রে হোক না কেন। এরপর সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা দিবে; যদি সালাম ফিরানোর পরেও দেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে আগে দেয়াই উত্তম”।[শাইখ বিন বাযের ফতোয়াসমগ্র (১১/৩০) থেকে সমাপ্ত]

আর কোন কোন আলেমের মতে, নামাযের কোন রুকন আদায়ে সন্দেহ হওয়া নামাযের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার মত। যদি সন্দেহকারীর কাছে কোন একটি সম্ভাবনাকে অগ্রগণ্য মনে না হয় তাহলে সে ব্যক্তি একীনের উপর নির্ভর করবে; একীন হচ্ছে ছোট সংখ্যাটি হিসাব করা। এ অবস্থায় সে ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা আদায় করবে।
আর যদি তার কাছে কোন একটি সম্ভাবনাকে অগ্রগণ্য মনে হয় তাহলে সে ব্যক্তি তার কাছে যে সম্ভাবনাটি অগ্রগণ্য মনে হয় সেটার উপর নির্ভর করে নামায চালিয়ে যাবে এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা দিবে।

মুরদাওয়ি (রহঃ) বলেন:
“গ্রন্থকারের বক্তব্য: কারো কোন একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হওয়া সে রুকন আদৌ পালন না করার মত এটাই মাযহাবের অভিমত। মাযহাবের অধিকাংশ আলেম এ মতটি গ্রহণ করেছেন। তাদের অনেকে এ মতটিকে অকাট্য বলেছেন। কারো কারো মতে, এ মাসয়ালাটি কোন একটি রাকাত ছেড়ে দেয়ার মাসায়ালার সাথে কিয়াসযোগ্য। তাই সে ব্যক্তি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আমল করবে।”[আল-ইনসাফ (২/১৫০) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“যদি কারো কোন একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হয় সেটা কোন রুকন ছেড়ে দেয়ার মতই”। অর্থাৎ সে ব্যক্তি যদি সন্দেহ করে যে, সে কি রুকনটি আদায় করেছে নাকি আদায় করেনি তার হুকুম হবে যে ব্যক্তি আদৌ রুকনটি আদায় করেনি সে ব্যক্তির হুকুমের মত। এর উদাহরণ হচ্ছে- কোন মুসল্লি দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর পর তার সন্দেহ হল সে কি সিজদা দুইটা দিয়েছে নাকি একটা দিয়েছে...? কোন কিছু আদায় না-করার সন্দেহ ঐ কাজটি আদৌ না-করার মত। কারণ কোন কিছু না-করা নিয়ে যখন সন্দেহ হয় তখন সে জিনিসের মূল অবস্থা হচ্ছে— না-করা। কিন্তু তার যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সে রুকনটি আদায় করেছে তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী সে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে নীতিগতভাবে সে রুকনটি আদায় করেছে ধরা হবে এবং তাকে এ রুকনটি পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, যদি কেউ নামাযের সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে তাহলে সে ব্যক্তি তার প্রবল ধারণার উপর নির্ভর করবে। তবে সালাম ফিরানোর পর তাকে সহু সিজদা দিতে হবে।[আল-শারহুল মুমতি (৩/৩৮৪) থেকে সমাপ্ত]

দুই:
আলেমগণ উল্লেখ করেছেন, ভুলক্রমে যে ব্যক্তির সহু সিজদা ছুটে গেছে যদি খুব বেশি বিলম্ব না হয় তাহলে সে তখনি সেটা কাযা করে নিবে। আর যদি দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয় তাহলে মুসল্লির উপর থেকে সহু সিজদা আদায় করার দায়িত্ব বাদ যাবে এবং তার নামায সহিহ হবে।

আল-বুহুতি (রহঃ) বলেন:
“কেউ যদি সালামের আগে আদায় করা মুস্তাহাব এমন কোন সহু সিজদা দিতে ভুলে যায়; সে সহু সিজদাটি যদি ওয়াজিব হয় তাহলে সে ব্যক্তি ওয়াজিব হিসেবে এটাকে কাযা করে নিবে। আর যদি অন্য কোন নামায শুরু করে দেয় তাহলে ঐ নামাযের সালাম ফিরানোর পর সহু সিজদা কাযা করবে; যদি এর মধ্যে বেশি বিলম্ব না হয়; ওজু না ভাঙ্গে এবং মসজিদ থেকে বের না হয়। যেহেতু সিজদাটি আদায় করার সময় এখনো আছে। আর যদি প্রথা অনুযায়ী খুব দেরী হয়ে যায়, কিংবা ওজু ছুটে যায় কিংবা মসজিদ থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে সহু সিজদা আর কাযা করা যাবে না। যেহেতু এটি আদায় করার সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে তার নামায শুদ্ধ হবে। যেমন অন্য যে কোন ওয়াজিব ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলেও নামায শুদ্ধ হয়।”[মুনতাহাল ইরাদাত (১/২৩৫) থেকে সমাপ্ত]

যে ব্যক্তি এ মাসয়ালার বিধান জানে না এমন ব্যক্তি ও জেনে ভুলকারী উভয়ের জন্য হুকুম অভিন্ন।
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র খণ্ড-২ (৬/১০) তে এসেছে-
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সহু সিজদা ছেড়ে দেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে এবং তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে। আর যদি ভুলক্রমে কিংবা অজ্ঞতাবশত ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে না। তার নামায সহিহ।[সমাপ্ত]

শাইখ বিন বায (রহঃ) প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,
যদি কেউ নামাযের রাকাতে বেশি করে কিংবা কম করে এবং সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায কি বাতিল হয়ে যাবে?

তিনি জবাবে বলেন:
এক্ষেত্রে বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যদি সে ব্যক্তি সহু সিজদা দেয়ার হুকুম জানার পরও নামাযের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি অজ্ঞতাবশত কিংবা ভুলক্রমে সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে...।[নুরুন আলাদ-দারব ফতোয়াসমগ্র থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]



দোয়ায়ে কুনুত বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ আলোচনা

বুধবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

প্রশ্ন
প্রশ্ন: বিভিন্ন দোয়া মুখস্থ করতে আমার খুব কষ্ট হয়; যেমন বিতিরের নামাযের দোয়ায়ে কুনুত। এ কারণে আমি এ দোয়ার জায়গায় একটি সূরা পড়তাম। যখন আমি জানতে পারলাম যে, এ দোয়া পড়া ফরজ; তখন দোয়াটি মুখস্থ করার চেষ্টা করতে থাকি। আমি নামাযের মধ্যে একটি বই থেকে দেখে দেখে দোয়াটি পড়ি। বইটিকে আমার পাশে একটি টেবিলের উপরে রাখি। আমি কিবলামুখী থেকেই বই থেকে দোয়াটি পড়ি। আমার এ আমলটি কি জায়েয?


উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
১. বিতিরের নামাযে কোন একটি কাগজ কিংবা পুস্তিকা থেকে দেখে দেখে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে কোন অসুবিধা নেই; যাতে করে আপনি দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন। মুখস্থ হয়ে গেলে আর বই দেখা লাগবে না; আপনি মুখস্থ থেকে দোয়া করতে পারবেন; যেমন যে ব্যক্তির কুরআনের বেশি কিছু মুখস্থ নেই নফল নামাযে তার জন্য কুরআন শরিফ দেখে পড়া জায়েয আছে।

শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: তারাবীর নামাযে কুরআন শরীফ দেখে পড়ার হুকুম কি? এবং এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলিল কি?

উত্তরে তিনি বলেন: রমযানে কিয়ামুল লাইলের নামাযে কুরআন শরিফ দেখে পড়তে কোন বাধা নেই। কারণ এতে করে মুসল্লিদেরকে সম্পূর্ণ কুরআন শরিফ শুনানো যেতে পারে। এবং যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে নামাযে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান সাব্যস্ত হয়েছে; যা মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) দেখে পড়া ও মুখস্থ থেকে পড়া উভয়টিকে অন্তর্ভূক্ত করে। আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি তাঁর আযাদকৃত দাস যাকওয়ানকে কিয়ামে রমযানে তাঁর ইমামতি করার নির্দেশ দিতেন এবং সে মুসহাফ দেখে দেখে কুরআন পড়ত।[ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে এ উক্তিটি নিশ্চয়তাজ্ঞাপক ভাষায় সংকলন করেছেন]

[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৫)]

২. বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোন দোয়াও করতে পারেন এবং হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে এমন কিছু আয়াত পড়েন সেটাও জায়েয আছে। ইমাম নববী বলেন: জেনে রাখুন, অগ্রগণ্য মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যাবে। তবে, হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম।[ইমাম নববীর ‘আল-আযকার, পৃষ্ঠা-৫০]

৩. প্রশ্নকারী ভাই যা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি দোয়ায়ে কুনুতের পরিবর্তে কুরআন পড়তেন নিঃসন্দেহে এটা করা ঠিক হয়নি। কারণ কুনুতের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দোয়া করা। তাই যেসব আয়াতে দোয়া আছে সেসব আয়াত পড়া ও সেগুলো দিয়ে কুনুত করা জায়েয হবে। যেমন ধরুন আল্লাহ তাআলার বাণী:

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ [آل عمران: 8]

(অনুবাদ:হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।)[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮]

৪. প্রশ্নকারী ভাই উল্লেখ করেছেন যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ফরয; এ কথা সহিহ নয়। বরং দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। তাই মুসল্লি যদি দোয়ায়ে কুনুত নাও পড়েন নামায সহিহ হবে।

শাইখ বিন বায (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমযান মাসে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার হুকুম কি? দোয়ায়ে কুনুত বাদ দেয়া কি জায়েয?

জবাবে তিনি বলেন: বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। যদি কখনও কখনও বাদ দেয় এতে কোন অসুবিধা নেই।
তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে; এ আমল কি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে?

উত্তরে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি পালন করা সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন বিন আলী (রাঃ) কে বিতিরের নামাযের ‘দোয়ায়ে কুনুত’ শিখাতেন। তিনি দোয়ায়ে কুনুত কখনও কখনও বাদ দেয়া কিংবা নিয়মিত পড়া কোন নির্দেশ দেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, উভয়টি করা জায়েয। উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে নববীতে সাহাবীদের ইমামতি করতেন তখন তিনি কোন কোন রাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়তেন না; সম্ভবত তিনি এটা এ জন্য করতেন যাতে করে মানুষ জানতে পারে যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়।
আল্লাহই তাওফিকদাতা।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৯)]




দোয়া মাসুরা বাংলা অনুবাদ ও অর্থ সহ আলোচনা

বুধবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুল্মান কাসীরাওঁ ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা; ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গফুরুর রাহীম।

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমি আমার নিজ আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি, গুনাহ মাফকারী একমাত্র তুমিই; অতএব তুমি আপনা হইতে আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা কর এবং আমার প্রতি দয়া কর। তুমি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল দয়ালু।




অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা

বুধবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

জিজ্ঞাসা–: আসসালামুআলাইকুম হযরত,কেমন আছেন? আপনার বয়ান খুব মিস করি….একটা প্রশ্ন ছিল জানিনা কিভাবে নিবেন….এটাও জানিনা আল্লাহ মাফ করবেন কিনা। জানি আল্লাহ রহমানুর রহিম। তারপরেও কেন জানি নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি মুনাফিক….আমি মিথ্যা বলি, আমি গুনাহ করি, গীবতও হয়ে যায়। এমনিতেই আমি অশ্লীল গালি বলি, ফজরের নামাজ পড়তে পারিনা, মসজিদে সব সময় নামাজ পড়তে যেতে মন চায়না বাসায় পড়ি, আবার কখনো আল্লাহর ভয়ে এতটাই চোখ দিয়া পানি পড়ে মনে হয় দুনিয়ার সবচাইতে বড় অপরাধী আমি……এখন আমার করনীয় কি আমি বুঝতিছিনা…মনের মধ্যে সবসময় অশান্তি লেগেই আছে, আবার কোরআন পড়লে, নিয়মিত নামাজ পড়লে একটু শান্তি লাগে আবার কয়েকদিন পর আবার আগের মত হয়ে যাই…হযরত,খুব অশান্তিতে আছি…জানিনা আমার কি করনীয় একটু বলবেন, রসূল সাঃ ত নেই যে তাকে বললে তিনি হয়ত সোনার মানুষ বানাইয়া দিতেন, একটা উপায় করে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন , এখন আপনারা রসূল সাঃ ওয়ারিশ, এমন কিছু উপায় বলে দিন যেন আমি আল্লাহর হয়ে যাই, চাইলেও যেন পাপ করতে না পারি….দয়া করে বলবেন আর একটু দোয়া করবেন।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
মুহতারাম, মূলত আপনি অলসতা উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতার রোগে আক্রান্ত। এটি এমন রোগ যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য থেকে পিছিয়ে দেয়। এজন্য আমরা আপনাকে কিছু পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি, মেনে চলবেন এবং এই রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট হবেন।

এক. প্রথমেই আপনাকে উক্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। আপনি বলবেন, আমি যা চাই, তাই করতে পারব। শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানী দা. বা. বলেন, سستی کاعلاج چستی অলসতার চিকিৎসা হিম্মত। সুতরাং প্রথমেই আপনাকে কষ্ট ও মেহনত করার জন্য হিম্মত করতে হবে, এই রোগ থেকে উত্তরণের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। হিম্মত বাড়ানোর জন্ জিজ্ঞাসা পড়ুন এবং সে অনুযায়ী আমল করুন।
সিমাক আলহানাফি রহ. বলেন, سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَكْرَهُ أَنْ يَقُولَ : إنِّي كَسْلاَنُ ‘আমি ইবনু আব্বাস রাযি. সম্পর্কে শুনেছি, তিনি কাউকে ‘আমি অলস’ একথা বলতে পসন্দ করতেন না। (মুসান্নাফ ইবনি আবী শাইবা ৯/৬৭)

দুই.  হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন, ويتولد من طول الأمل الكسل عن الطاعة والتسويف بالتوبة দীর্ঘ আশা ইবাদতে অলসতা তৈরি ও তাওবার ক্ষেত্রে গড়িমসি তৈরি করে। (ফাতহুল বারী ১১/২৩৭)। আপনি হয়ত জীবন সম্পর্কে অতিরিক্ত আশা করে বসে আছেন যে, হায়াত অনেক পাবেন আর শেষ জীবনে তাওবা করে নিবেন! ব্যাস, হয়ে যাবে! এটা মূলত আশা নয়, বরং ধোঁকা। সুতরাং এজাতীয় ‘অন্যায়-আশা’, যা আপনাকে আমল ও তাওবা থেকে বিমুখ করে দিচ্ছে, তা এখনই বর্জন করুন। রাসূলুল্লাহ্‌ বলেছেন,
بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سَبْعًا هَلْ تَنْتَظِرُونَ إِلَّا فَقْرًا مُنْسِيًا أَوْ غِنًى مُطْغِيًا أَوْ مَرَضًا مُفْسِدًا أَوْ هَرَمًا مُفَنِّدًا أَوْ مَوْتًا مُجْهِزًا أَوْ الدَّجَّالَ فَشَرُّ غَائِبٍ يُنْتَظَرُ أَوْ السَّاعَةَ فَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ
সাতটি বিষয়ের পূর্বে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদেরকে সবকিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদেরকে দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদেরকে অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্যে অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত কিনা সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত? (তিরমিযি ২৩০৬ যুহদ অধ্যায়)

তিন. নেক আমল কিংবা তাওবা করার চিন্তা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা করে ফেলুন। আজকের নেক আমল এবং আজকের তাওবা আজকেই করতে হবে। আগামীকালের অপেক্ষায় রেখে দেয়া যাবে না কিছুতেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰی مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَ
তোমরা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ১৩৩)

চার. অনেক ক্ষেত্রে অলসতার অন্যতম কারণ থাকে উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব। নিজেকে জাগাতে আপনি আল্লাহওয়ালাদের জীবনী, তাঁদের সফলতার গল্প, তাঁদের বাণী পড়ুন, জানুন । অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো। বিখ্যাত বুজুর্গ বিশির হাফী রহ. বলতেন,
حسبك أَن أقواما موتى تحيى القلوب بذكرهم ، وأن أقواما أحياء تقسو القلوب برؤيتهم
তোমার জন্য এটা জানা যথেষ্ট যে, কিছু মৃত মনীষী এমন আছেন যে, তাঁদের আলোচনা করলেও অন্তর জীবিত হয় এবং কিছু জীবিত মানুষ এমন আছে যে, তাদেরকে দেখলেও অন্তর শক্ত হয়ে যায়। (তারিখু দামিশক ১০/২১৪)

পাঁচ. যাঁরা আপনার চাইতে বেশি উদ্যমী এবং আমলে অগ্রসর তাঁদেরকে দেখুন। বিশেষত আল্লাহওয়ালাদের চেহারা দেখুন, তাঁদের মজলিসে বসুন, তাঁদের কথা শুনুন এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা সঞ্চয় করুন।  আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা তাওবা ১১৯)
জাফর ইবন সুলাইমান রহ. বলেন,
كنت إذا وجدت من قلبي قسوة غدوت فنظرت إلى وجه محمد بن واسع –وهو تلميذ الإمام الحسن البصري وكان من كبار العباد والصالحين
আমি যখন আমার অন্তরে আল্লাহবিমুখতা অনুভব করতাম তখন মুহাম্মদ ইবন ওয়াসি রহ.-এর চেহারা দেখতাম, যিনি ছিলেন হাসান বসরি রহ.-এর শাগরিদ এবং অনেক বড় আবিদ ও নেককার । (নুযহাতুল ফুযালা ৬৩৮)

ছয়. যখন অলসতা ভর করে ঠিক তখন নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন। এটা আপনাকে আমল করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এভাবে ভাবুন যে, অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা এগুলো তো শয়তানের সৃষ্ট, ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। সুতরাং আমি কেন শয়তানের শিকারে পরিণত হয়ে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হব। তারপর তাআউয (আউযুবিল্লাহ…) ও ইস্তেগফার পড়ে আমলের প্রতি ব্রতী হোন। রাসূলুল্লাহ্‌ বলেছেন,
الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ ، وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ، وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلَا تَعْجَزْ
আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে অধিক উত্তম ও প্রিয়। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না।(মুসলিম ৪৮২২)

সাত. বর্তমানে আমাদের অবসর সময়গুলোর সঙ্গী হয়ে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন। এসবের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। বিশেষত এগুলো যেন আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে না পারে, সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। দেখবেন, আমলে মন বসবে এবং অলসতাও হার মানবে। রাসূলুল্লাহ্‌ বলেছেন, مِنْ حُسْنِ إسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষণ হল যে, তার জন্য জরুরী নয় এমন কাজ সে ত্যাগ করে। (তিরমিযী ২২৩৯)

আট. যত কষ্টই হোক, ফজরের নামাযের প্রতি যত্নবান হোন। কেননা অলসতার কারণে ফজরের নামায না পড়তে পারলে এটাই হবে সারাদিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অন্যান্য অলসতার সূচনা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ বলেন,
يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَاسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ: عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللَّهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারী ১১৪২)

নয়. ফজরের পরে ঘুম বর্জন করুন। কেননা এটাও অলসতা ও উদ্যমহীনতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সুতরাং এই সময়ে না ঘুমিয়ে নামায আদায় করে তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার ও তেলাওয়াত শুরু করে দিন। এমনটি করতে পারলে রাসূলুল্লাহ্‌ এর দোয়া পাবেন এবং আপনার সারদিনের কাজে অলসতা কেটে যাবে। রাসূলুল্লাহ্‌ -এর দোয়াটি দেখুন, তিনি বলেন, اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’ (তিরমিযি ১২১২)

দশ. অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য হাদিসে যে সব দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে, সেগুলো পড়ুন। যেমন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ ، وَالبُخْلِ وَالجُبْنِ ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী ২৮৯৩)
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ- اَللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا – اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! আপনি আমার মনে তাকওয়ার অনুভূতি দান করুন, আমার মনকে পবিত্র করুন।  আপনিই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী। আপনিই তো হৃদয়ের মালিক, অভিভাবক ও বন্ধু। হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন ইলম থেকে যে ইলম কোনো উপকার দেয় না, এমন হৃদয় থেকে যে হৃদয় বিনম্র হয় না, এমন আত্মা থেকে যে আত্মা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে যে দোয়া কবূল হয় না। (মুসলিম ২৭২২)
প্রিয় ভাই, আপনি এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করে অলসতা দূর করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন এর অর্থ হচ্ছে আপনি আগের চেয়েও আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। আপনি লক্ষ্য অর্জন করছেন। ধাপে ধাপে আপনার জীবন উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আপনার জীবনে অলসতার কোনো স্থান নেই।
সফলতা কেবল মুমিনের জন্যই। নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিকদাতা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী


ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png