LIVE
Loading latest headlines...

রবিবার, ২ জুন, ২০২৪

পথ চলার আদব ও সুন্নত সমূহ পর্ব-০৪

রবিবার, জুন ০২, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে
চলার আদব ও সুন্নত সমূহ



পঞ্চম হক : পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেওয়া_ 

পথ চলতে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যায়, যারা পথ চেনে না। এমন পথিকদের পথ দেখিয়ে দেওয়া মহৎ নেক কাজ। এর গুরুত্ব কেবল পথহারা লোকেরাই উপলদ্ধি করতে পারে।  এটিকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকা বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেছেন

وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِي أَرْضِ الضَّلاَلِ لَكَ صَدَقَةٌ.

পথ না চেনা ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেয়া তোমার জন্য একটি সদাকা। *(জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৬)*

এলাকার বাইরে থেকে কোনো লোক কোনো এলাকায় এল। সে ঠিকানা বলতে পারে বা ব্যক্তির নাম বলতে পারে, কিন্তু তার বাড়ি চেনে না বা খুঁজে পাচ্ছে না। আমি এলাকার সব চিনি, শুধু একটু আন্তরিকতা থাকলেই তাকে পেরেশানী থেকে বাঁচাতে পারি।

হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত. তিনি হযরত আবু যর রা. থেকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। সে দীর্ঘ ঘটনার মাঝে রয়েছে যে, হযরত আবু যর রা. বলেন, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুরোপুরি খোঁজ-খবর নিতে আমি নিজেই মক্কা শহরে পৌঁছলাম। কিন্তু তাঁকে চিনলাম না। কাউকে যে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করব সে সাহসও হচ্ছিল না। ফলে আমি মসজিদে বসে রইলাম। হযরত আলী রা. আমাকে দেখে বুঝলেন আমি মুসাফির। সাথে করে বাসায় নিয়ে গেলেন। পানাহারের ব্যবস্থা করলেন। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। দ্বিতীয় দিনও তিনি আমাকে মসজিদে ঐরকম দেখতে পেলেন, ফলে আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন। আমি কাউকে কিছু না বলার শর্তে তা জানালাম। তিনি আমাকে বললেন

أَمَا إِنَّكَ قَدْ رَشَدْتَ، هَذَا وَجْهِي إِلَيْهِ فَاتَّبِعْنِي، ادْخُلْ حَيْثُ أَدْخُلُ.

আপনি সঠিকের সন্ধান পেয়েছেন। আমিও সেদিকেই যাচ্ছি। আপনি আমার সাথে চলুন। আমি যেখানে প্রবেশ করব আমার সাথে সাথে প্রবেশ করবেন।

অতপর হযরত আলী রা. আমাকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছে দিলেন। *(সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৫২৮)*

এ ছিল দুনিয়া ও আখেরাতের পথহারাকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় পথের সন্ধান দান।

এ আদবের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল, অন্ধ, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধিদের রাস্তা পারাপারে সাহযোগিতা করা।

 
 _ষষ্ঠ হক : মযলুম ও বিপদগ্রস্তের সাহায্য করা_ 

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। অনেকসময়ই রাস্তা-ঘাটে মানুষ যুলুমের শিকার হয়। বিপদের সম্মুখীন হয়। ফলে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। আমি অন্যের সাহায্যে এগিয়ে গেলে আল্লাহ আমার সাহায্য করবেন। আমি অপর ভাইকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলে আল্লাহ কিয়ামতের দিন আমাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

 الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يُسْلِمُهُ، مَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ فَإِنَّ اللَّهَ فِي حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ بِهَا كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

মুসলমানগণ পরস্পর ভাই ভাই। কেউ কারো প্রতি যুলুম করে না এবং শত্রুর কাছে হস্তান্তর করে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে কোনো মুসলমানের একটি কষ্ট লাঘব করবে আল্লাহ তার কেয়ামতের দিনের একটি কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটিও গোপন রাখবেন। *(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৯৩)*

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, একদা পথে এক ব্যক্তির খুবই তৃষ্ণা পেয়েছিল। সে একটি কূপ দেখতে পেয়ে তাতে নামল এবং পানি পান করে উঠে আসল। তখন দেখতে পেল, একটি কুকুর তৃষ্ণার জ্বালায় জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে এবং তৃষ্ণা মেটাতে কাদামাটি খাচ্ছে। তখন লোকটি মনে মনে বলল; আমার যেমন ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছিল, এ কুকুরেরও ঠিক তেমনি তৃষ্ণা পেয়েছে। সে কূপে নেমে চামড়ার মোজা ভরে পানি নিয়ে এল এবং কুকুরকে পান করাল। ফলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন

يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَإِنَّ لَنَا فِي البَهَائِمِ لَأَجْرًا؟ فَقَالَ: فِي كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ.

ইয়া রাসূলাল্লাহ! গবাদী পশুর ক্ষেত্রেও কি আমাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক প্রাণীতেই আজর-সওয়াব রয়েছে। *(সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৬৬)*

হযরত আবু মাসউদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি পথে বিপদে পড়েছি (অর্থাৎ আমার বাহন মারা গেছে), আমার জন্য একটি বাহনের ব্যবস্থা করে দিন।
 নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাকে দেওয়ার মত কোনো বাহন আমার কাছে নেই। তবে তুমি অমুকের কাছে যাও। আশা করি সে তোমাকে বাহনের ব্যবস্থা করে দিবে। অতপর সে ঐ ব্যক্তির কাছে গেল এবং সে বাহনের ব্যবস্থা করে দিল। পুনরায় সে (পথিক) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল এবং তা জানাল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি  (যে কোনো উপায়ে) কোনো সৎকর্মের পথ দেখাবে সে ঐ সৎকর্মকারীর সমান প্রতিদান পাবে। *(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১২৯)*

 _সপ্তম হক :- বোঝা বহনকারীকে সহযোগিতা করা_ 

রাস্তায় চলাচলকারীদের মধ্যে কেউ থাকে খালি হাতে, কারো সাথে থাকে ভারি বোঝা। ভারি বোঝা যদিও একা বহন করা যায়, কিন্তু উঠানো বা নামানোর সময় কারো না কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়েই। যে ব্যক্তি এ কাজে সাহায্য করে তার জন্য বোঝা বহনকারীর হৃদয় থেকে দুআ আসে, এটাই স্বাভাবিক। আর আমি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির নিয়তে কারো মাথা থেকে ভারি বোঝা নামিয়ে দিলাম তো হতে পারে এর অছিলায় আল্লাহ আমার গোনাহের বোঝা নামিয়ে দিবেন, মাফ করে দিবেন।

মাথায় করে ভারি বোঝা বহন করা কষ্টকর। এক্ষেত্রে যদি এমন হয়, আমার বাহনে আমি কারো ভারি বোঝা বহন করে দিলাম। সেটা উঠানো-নামানোর চেয়ে আরো বেশি ফযীলতের। তেমনি আমার বাহন আছে, আরেকজনের নেই। আমার বাহনে আরেকজনকে নিতে পারি। এক ভাইয়ের সাথে দেখা হল, আমি ও সে একই দিকে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে যদি আমার বাহনে তাকে উঠিয়ে নেইÑ এটা হবে অনেক বড় সওয়াবের কাজ।  হাদীস শরীফে এসেছে

وَتُعِينُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا، أَوْ تَرْفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ.

কোনো ব্যক্তিকে সাওয়ারীতে ওঠানো বা তার সামানা বহনে সহযোগিতা করাও একটি সদাকা। *(সহীহ বুখারী, হাদীস ২৯৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০০৯)*

চলবে ইনশা'আল্লাহ


ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png