LIVE
Loading latest headlines...

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১

নারীদের মসজিদে গমন সম্পর্কে চার মাযহাবের ইমামগণের মতামত-ইসলামিক আলোচনা-৬ষ্ঠ পর্ব

সোমবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 

মহিলাদের মসজিদে গমন সম্পর্কে চার মাযহাবের ইমামগণের মতামত


ক. ফিকহে হানাফী

হানাফী ইমামগণের মতে যুবতীদের মসজিদের জামাতে শরীক হওয়া মাকরূহ। বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রা. ফযর , মাগরিব ও ইশার নামাযে মসজিদে গমন করার অবকাশ দিয়েছেন।

ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ র.-এর মতে বৃদ্ধা মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেই মসজিদের জামাতে শরীক হতে পারবে।

উল্লেখ্য, হানাফী মাযহাবের ইমামগণ উপরোক্ত ফয়সালা ফেতনার আশঙ্কা থাকা বা না থাকার ভিত্তিতে প্রদান করেছেন।

পরবর্তী যুগে দিনে কিংবা রাতে যুবতী কিংবা বৃদ্ধা সব মহিলা জন্য ফেতনার আশঙ্কা বিদ্ধমান থাকায় সকল নামাযে মসজিদের জামাতে শরীক হওয়া নিষেধ করে ফাতওয়া জারি করেছেন।


* আল্লামা কাসানী র. বলেন-

وَلَا يُبَاحُ لِلشَّوَابِّ مِنْهُنَّ الْخُرُوجُ إلَى الْجَمَاعَاتِ، بِدَلِيلِ مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – أَنَّهُ نَهَى الشَّوَابَّ عَنْ الْخُرُوجِ؛ وَلِأَنَّ خُرُوجَهُنَّ إلَى ا;’لْجَمَاعَةِ سَبَبُ الْفِتْنَةِ، وَالْفِتْنَةُ حَرَامٌ، وَمَا أَدَّى إلَى الْحَرَامِ فَهُوَ حَرَامٌ.

যুবতীদের জন্য জামাতে বা মসজিদে আগমন বৈধ নয়। যার প্রমাণ হযরত ওমর রা. যুবতীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন। কেননা যুবতীদের উপস্থিত হওয়াটা ফেতনার কারণ। আর ফেতনা সৃষ্টি করা হারাম এবং যে কাজের মাধ্যমে ফেতনার সৃষ্টি হয় তাও হারাম।


* ইনায়াহ শরহে হিদায়াহ গ্রন্থে উল্লেখ আছে-

وَلَقَدْ نَهَى عُمَرُ النِّسَاءَ عَنْ الْخُرُوجِ إلَى الْمَسَاجِدِ فَشَكَوْنَ إلَى عَائِشَةَ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا – فَقَالَتْ: لَوْ عَلِمَ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مَا عَلِمَ عُمَرُ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – مَا أَذِنَ لَكُنَّ فِي الْخُرُوجِ، فَاحْتَجَّ بِهِ عُلَمَاؤُنَا وَمَنَعُوا الشَّوَابَّ عَنْ الْخُرُوجِ مُطْلَقًا.

হযরত উমর রা. তার খিলাফতকালে নারীদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করেন। তখন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট উমর রা.-এর এ সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। জবাবে হযরত আয়েশা রা. বলেন, তোমাদের চালচলন সম্পর্কে হযরত উমর রা. যা জানেন তা যদি রাসূল স. অবগত হতেন তাহলে রাসূল স. তোমাদের কখনো মসজিদে গমনের অনুমতি দিতেন না।

আল্লামা আইনি র. বলেন, আমাদের উলামায়ে কিরাম এ হাদীসকে দলীলস্বরূপ গ্রহণ করে যুবতীদের জন্য মসজিদে আসা একেবারে নিষেধ করে দিয়েছেন। [আল ইনায়াহ : ১/৩৭৬]

.

* হিদায়াহ গ্রন্থে রয়েছে-

ويكره لهن حضور الجماعات ” يعني الشواب منهن لما فيه من خوف الفتنة ” ولا بأس للعجوز أن تخرج في الفجر والمغرب والعشاء ” وهذا عند أبي حنيفة رحمه الله ” وقالا يخرجن في الصلوات كلها ” لأنه لا فتنة لقلة الرغبة إليها فلا يكره كما في العيد

সারমর্ম- যুবতীদের জন্যে মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ একেবারে মাকরূহ । বৃদ্ধাদের জন্য ফযর মাগরিব ,এশাতে জায়েয। যোহর আসরে না জায়েয। এটা ইমাম আবু হানীফার নিকট। আর অপর দুইজন ইমামের দৃষ্টিতে বৃদ্ধাদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কম থাকায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মসজিদে গমন বৈধ। [হিদায়া : ১২৬/১]


* আউযাজুল মাসালিক গ্রন্থে আছে,

افتي المشائخ المتأخرون بمنعها أي العجوز من حضور الصلوات كلها والشابات ولابعد في اختلاف الاحكام باعتبار اختلاف احوال الناس فأفتو بمنع العجائز مطلقا كما منعت الشواب بجامع شيوع الفساد. (اوجزالمسالك: ৪/১৫৪)

পরবর্তী মাশায়িখগণ বৃদ্ধাদেরকেও সকল নামাযে অংশগ্রহণ থেকে নিষেধ করেছেন যেমনিভাবে যুবতীদের নিষেধ করা হয়েছিলো। (কেননা) মানুষের অবস্থার পরিবর্তন আসাটা নতুন কিছু নয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ফেতনার দিকে লক্ষ করে যুবতীদর ন্রায় বৃদ্দাদে;র কেও মসজিদে আসতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। [১৫৪/৪]


* ফাতওয়ায়ে আলমগীরী তে আছে-

وَالْفَتْوَى الْيَوْمُ عَلَى الْكَرَاهَةِ فِي كُلِّ الصَّلَوَاتِ لِظُهُورِ الْفَسَادِ. كَذَا فِي الْكَافِي وَهُوَ الْمُخْتَارُ. كَذَا فِي التَّبْيِينِ.

বর্তমান যামানায় ফাতওয়া নারীদের যেকোন নামাযের জন্য মসিজদে আগমন মাকরূহ। কারণ বর্তমানে ব্যপক হারে ফেতনা ছড়িয়ে পড়েছে, [দ; ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ৮৯/১]


খ. মালেকী মাযহাবের মত

—————————————-

মালেকী মাযহাবের ইমাগণনের মতে সকল মহিলার জন্য মসিজদে গমনের অনুমতি নেই। কারো কারো ক্ষেত্রে বিশেষশর্ত স্বাপেক্ষ অনুমতি থাকলেও না যাওয়া উত্তম।

আশ শারহুল কাবীর গ্রন্তে উদ্ধৃত আছে-

وَ جَازَ خُرُوجُ مُتَجَالَّةٍ لَا أَرَبَ لِلرِّجَالِ فِيهَا غَالِبًا (لِعِيدٍ وَاسْتِسْقَاءٍ) وَالْفَرْضُ أَوْلَى (وَ) جَازَ خُرُوجُ (شَابَّةٍ لِمَسْجِدٍ) لِصَلَاةِ الْجَمَاعَةِ وَلِجِنَازَةِ أَهْلِهَا وَقَرَابَتِهَا بِشَرْطِ عَدَمِ الطِّيبِ وَالزِّينَةِ وَأَنْ لَا تَكُونَ مَخْشِيَّةَ الْفِتْنَةِ…..الخ

قال الدسوقي: قوله جاز خروج متجالة أي جوازا مرجوعا أنه خلاف الاولي وقوله شابّة أي غير فارهة في الشباب والنجابة، أما الفارهة فلا تصلح اصلا.

এমন বয়োবৃদ্ধ মহিলা যাদের প্রতি সাধারণত পুরূষের আগ্রহ থাকেনা; তাদের জন্য ঈদ ও ইস্তিসকার উদ্দেশ্যে মসজিদে বের হওয়া এ শর্তে বৈধ যে তারা সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। সাজসজ্জা পরিহার করবে। ফিতনায় পতিত হওয়ার আশংকা মুক্ত হতে হবে ইত্যাদি ।


ইমাম দুসুকী র. বলেন, বয়োবৃদ্ধেেদর বের হওয়া জায়েয এর অর্থ হচ্ছে, অনুত্তম। যুবতী যে শর্ত সাপেক্ষে বের হওয়া জায়েয বলা হয়েছে সেটা যারা সুন্দর আকর্ষণীয় নয় তাদের ক্ষেত্রে । আর যারা সুন্দর আকর্ষণীয় তারা নামাযের জন্য মোটেই বের হওয়ার অনুমতি নেই। [আউজাযুল মাসালিক : ১৫৪/৪]


গ. শাফেয়ী মাযহাবের মতামত

——————————————–

শাফেয়ী মাযহাবের ইমামদের মতে যুবতীদের জন্য মসজিদে গমন মাকরূহ। অন্যদের জন্য অনুত্তম, ঘরে পড়াই শ্রেয়।

শাফেয়ী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল মাজমু’-তে রয়েছে-

قَالَ أَصْحَابُنَا إنْ كَانَتْ شَابَّةً أَوْ كَبِيرَةً تُشْتَهَى كُرِهَ لَهَا وَكُرِهَ لِزَوْجِهَا وَوَلِيّهَا تَمْكِينُهَا مِنْهُ وَإِنْ كَانَتْ عَجُوزًا لَا تُشْتَهَى لَمْ يُكْرَهْ وَقَدْ جَاءَتْ أَحَادِيثُ صَحِيحَةٌ تَقْتَضِي هَذَا التَّفْصِيلَ

অর্থাৎ শাফেয়ী ইমামগণ বলেন, মহিলা যদি যুবতী কিংবা এমন বয়স্কা হয় যে, পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে; তাহলে তাদের জন্য মসজিদে গমন মাকরূহ। আর যে বৃদ্ধা পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না তার জন্য মসজিদে গমন মাকরূহ নয়। এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস এসেছে যেগুলো যুবতী ও ব্দ্ধৃার হুকুমের মাঝে তারতম্যের দাবী রাখে। [আল মাজমূ ১৭১/৪]


ঘ. হাম্বলী মাযহাবের মতামত

——————————————-

হাম্বলী মাযহাবেও যুবতী সুন্দরী রমনীদের ক্ষেত্রে মসজিদে গমন মাকরূহ। অন্যান্যদের জন্য মসজিদ গমন মাকরূহ না হলেও অনুত্তম বরং ঘরে পড়াই উত্তম।


আউযাজুল মাসালিক গ্রন্থে নাইলুল মাআরিব কিতাবের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে-

ويكره لحسناء حضورها مع الرجال، ويباح لغيرها حضور الجماعة.

সুন্দরীদের জন্য পুরুষদের সাথে জামাতে অংশগ্রহণ মাকরূহ। অন্যান্যদের জন্য অবকাশ আছে। [আওজায : ১৫৪/৪]


চার মাযহাবের মতামতের সারকথা

——————————————————

ক্স যুবতী মহিলাদের জন্য মসজিদে গমন চারো মাযহাবের ইমামগণের মতে মাকরূহ। আর যারা একেবারে বয়োবৃদ্ধ তাদের ব্যাপারে সকল মাযহাবের বক্তব্য থেকে কিছু শর্তসাপেক্ষে মসজিদ গমনের অবকাশ বুঝা যায়। আর মাঝামাঝি যেসব মহিলা আছে তাদের ক্ষেত্রে কেউ কঠিন শর্তের সাথে অবকাশ দিয়েছেন আবার কেউ মসজিদ গমনের একেবারেই নিষেধ করেছেন।

ক্স ফুকাহায়ে কেরামের কারো মতেই সব শর্ত বিদ্যমান থাকাবস্থায়ও মহিলাদের মসজিদে যাওয়া ওয়াজিব বা সুন্নাত পর্যায়ের কোনো আমল নয় । আবার শর্ত লঙ্ঘন করে মসজিদে যাওয়া কারো মতেই বৈধ নয়।

ক্স মহিলাদের মসজিদে গমন শর্ত সাপেক্ষেও জরুরী, সুন্নাত বা উত্তম না হওয়ায় পরবর্তী হানাফী ইমামগণ বর্তমান যুগে মহিলাদের গাফলত, খামখেয়ালী এবং চতুর্মুখী ফেতনার কথা বিবেচনা করে জামাতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।


সারসংক্ষেপ

——————

রাসূল স.-এর হাদীস, সাহাবাদের আছার ও ফিকহের ইমামগণের বক্তব্য ও সিদ্ধান্তমূলক ফাতওয়ার আলোকে এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে বর্তমান যামানায় কোনো মহিলার জন্যই মসজিদের জামাতে হাযির হওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয নেই। কারণ যামানাটা ফেতনা ফাসাদের ।

বর্তমানে মহিলারা ঘর থেকে বের হওয়ার শরয়ী শর্তাবলী পালনে ব্যর্থ । মসজিদে না যাওয়াতে একটি উত্তম কাজও ছুটে যাচ্ছে না। বরং ঘরের নামাযে উত্তমের উপর আমল হচ্ছে।

রাসুলের যুগে যেসব কারণে মসজিদে যাওয়া হতো তা বর্তমানে অনুপস্থিত। সুতরাং উত্তম আমল বাদ দিয়ে প্রবল গুনাহের আশঙ্কার পথ অবলম্বন করা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। এরপরও যদি কেউ আজকের যমানায় বিচার বিশ্লেষণ না করে হাদেিসর মমৃ, লক্স্য উদ্দেশ্য এবং গভীরতার দিকে না তাকিয়ে মুসলিম রমনী দের গৃহের নিরাপদ প্রাচির ভেঙ্গে বের করে আনার অপচেষ্টায় লিফ্ত থাকে। সে হয়তো হাদীস কুরআনে র ব্যপারে অজ্ঞ বা বিধর্মীয় ষড়যন্ত্র কারীদের শিকার না হয় সে খলীফায়ে রাসুল হযরত উমর এবং হযরত আয়েশা সহ সকল সাহাবিদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী হওয়ার দাবীদার।



মসজিদে মহিলাদের নামাযের ব্যবস্থা সম্পর্কে শরঈ বিধান

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

আজ পৃথিবীতে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার ছড়াছড়ি। ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন কৌশলে মুসলমানদের ঈমান, আকীদা, কৃষ্টি-কাল্চার ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের একটি বড় ষড়যন্ত্র মুসলিম নারীদের ঘর থেকে বের করে ইসলামী চিন্তা-চেতনাকে সমূলে বিনাশ করা। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ইসলামও মুসলমানদের সুনাম ক্ষুণ্ন করা। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের এই যুগে বন্ধুবেশী বিশেষ একটি মহল সরলমনা মুসলিম নারীদের দ্বীনের দোহাই দিয়ে ঘর থেকে বের করার নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। তা হচ্ছে, সাওয়াবের লোভ এবং বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে নারীদের নামাযের জন্য মসজিদে এবং ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া। প্রতারিত হয়ে নারী রাও অধিক সাওয়াবের আশায় গৃহকোণ ত্যাগ করে মসজিদ ও ঈদগাহে ছুটে চলছে।


অথচ নারীদের ওপর ঈদ ও জুমু’আর নামায কোনোটাই ওয়াজিব নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্যও মহিলাদের মসজিদে না গিয়ে ঘরে পড়াতেই বেশি সাওয়াব বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত। তাদের জামাতে নামায আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া শরীয়ত অনুমোদিত নয়। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার জন্য কোরআন-হাদীসের আলোকে সামান্য আলোকপাত করা হলো।


নারীদের ঘর থেকে বের হওয়ার বিধান পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অসংখ্য হাদীসে মহিলাদের নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করার প্রতি অত্যাধিক তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেসব আয়াত ও হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করলে বুঝে আসে, যতদূর সম্ভব নারীদের স্বীয় গৃহে অবস্থান করা এবং একান্ত অপারগতা ব্যতীত ঘর থেকে বের না হওয়া জরুরি।


মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও হিকমত পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” (সূরা আহজাব, আয়াত ৩৩, ৩৪)


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন

“নারীগণ আপাদমস্তক ঢেকে রাখার বস্তু। যখনই সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তার প্রতি উঁকি ও কুদৃষ্টি দিতে থাকে।” (জামে তিরমিযী, হা. ১১৭৩)


অন্য বর্ণনায় রয়েছে, “নিঃসন্দেহে তখনই সে আল্লাহর পছন্দনীয় থাকে, যখন স্বীয় বাড়ির সবচেয়ে গোপন স্থানে অবস্থান করে।” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা. ১৬৮৬)

ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।


আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “নারীদের সৌন্দর্যের দিকে তাকানো ইবলিস শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর।” (মুস্তাদরাকে হাকেম , হা. ৭৮৭৫, হিলয়াতুল আওলিয়া ৬/১০১)

হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি সহীহ।

সবার জানা আছে যেকোনো তীর ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র, আর বিষাক্ত তীর আরো ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী। মানুশের ঈমান-আমল নষ্ট করার এবং তাদের পথভ্রষ্ট করার অসংখ্য হাতিয়ার শয়তানের রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ঙ্কর নারী। এ ব্যাপারে শয়তানের বক্তব্য চিন্তাশীল ব্যক্তিদের চিন্তাশক্তিকে আরো গতিশীল করবে।


বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছেঃ যখন আল্লাহ তা’আলা নারী জাতিকে সৃষ্টি করেন, তখন ইবলিস বলল, তুমি (হে নারী) একাই আমার বাহিনীর অর্ধেকের সমতুল্য। তুমি আমার রহস্য ভেদের স্থান। তুমি আমার সেই তীর, যা কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। (মাকাইদুশ শয়তান, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, পৃ : ৫৯)


উপর্যুক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে বোঝা গেল, নারীদের ঘরে অবস্থান করার মধ্যেই তাদের নিজেদের এবং অন্য সকলের মঙ্গল নিহিত। নারীদের নামায একজন ব্যক্তি নারী হোক, পুরুষ হোক ঈমান আনয়ন করার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে ইবাদতটি করতে হবে তা হলো নামায। নামায আদায় জামাতের সাথেও করা যায়, একাকীও করা যায়। নামায আদায়ের স্থান মসজিদও হতে পারে, আবার ঘর বা অন্য কোনো স্থানও হতে পারে। এসব বিষয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে বিধানগত দিক দিয়ে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। দুজনের বিধান এক ও অভিন্ন মনে করার অবকাশ নেই। কোরআন – হাদীস ও শরীয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ ও অপরিণামদর্শীরাই এসব বিষয়ে নারী-পুরুষকে এক কাতারে দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।


রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেখানে যথেষ্ট ছাড় দিয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করে নারীদের একাকী ঘরে নামায আদায়ের নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন, সেখানে কিছু অপরিণামদর্শী লোক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দেওয়া ছাড়কে উপেক্ষা করে কথিত দ্বীন ও সাওয়াবের নামে তাদের ঘর থেকে বের করে পুরুষের কাতারে দাঁড় করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের পক্ষে শরীয়তের মেজাজ বোঝা কঠিন ও অসম্ভব হওয়ারই কথা। দু’আ করি, আল্লাহ তা’আলা সকলকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুক। এখানে নারীদের নামায প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

.



মহিলাদের মসজিদে গমনের শরিয়াতের বিধান-ইসলামিক আলোচনা-৫ম পর্ব

সোমবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 



মহিলাদের মসজিদে গমনের শরয়ী বিধান

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ ۖ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

বাংলা অনুবাদঃ তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।

(সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৩৩)


আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ উভয়ের উপর সমভাবে নামায ফরয করেছেন। তবে আদায়ের পদ্ধতি উভয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন রেখেছেন। পদ্ধতি ভিন্ন হলেও সাওয়াব প্রাপ্তির দিক থেকে বরাবর। পুরুষরা নামায পড়বে মসজিদে জামাতের সাথে, আর মহিলারা নামায পড়বে নিজ গৃহে একাকী।

এটাই শরীয়তের মূূল দাবী। যা রাসূল স.-এর যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান আমল। আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মত এটাই। ইদানিং মহিলাদের একটি অংশ মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে অধিক উৎসাহী। আর মহল বিশেষ মহিলাদের মসজিদে বৈধ মত ব্যক্ত করে মনগড়া দলীল পেশ করে বিভ্রাান্তি ছড়াচেছ। আর হাতিয়ার হিসেবে তারা রাসূল স. এর হাদিসের দোহাই দিচেছ। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা একান্ত জরুরী। প্রথমে আমরা রাসূল স. থেকে বর্ণিত হাদিস গুলোর ব্যপারে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

মহিলাদের মসজিদে গমনের শরয়ী বিধান

মহিলারা মসজিদে নামায পড়া বা না পড়া সম্পর্কে কয়েক ধরনের হাদীস পাওয়া যায়।

এক-

মসজিদে নাামায আদায় করার অনুমতি সংক্রান্ত হাদীস। যেগুলোতে কোনো শর্তারোপ করা হয়নি।

বুখারি শরিফে আছে-

১. আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের সূত্রে রাসূল স. ইরশাদ করেন –

اذا استاذنت امرأة احدكم الي المساجد فلا يمنعها . (رواه البخاري)

তোমাদের স্ত্রীগণ মসজিদে আসার অনুমতি চাইলে তাদের নিষেধ করো না। [বুখারী : ৫২৩৮]


২. মুসলিম শরিফে আছে রাসূল স. ইরশাদ করেন-

لا تمنعوا إماء الله مساجدالله. (رواه مسلم)

তোমরা আল্লাহর বান্দীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করো না। [মুসলিম : ৪৪২]


৩. অপর বর্ণনায় ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূল স. কে আমি বলতে শুনেছি,

اذا استأذنكم نساءكم الي المساجد فأذنوا لهن. (رواه مسلم)

যখন তোমাদের নিকট মহিলাগণ মসজিদে গমনের অনুমতি চাইবে তোমরা তাদের অনুমতি দিয়ে দিবে। [মুসলিম : ৪৪২]


পর্যলোচনা-

বর্ণিত হাদীসগুলোতে মহিলাদের সম্বোধন করে মসজিদে গমনের কোনো প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি।

এমনকি মসজিদে গমনের স্বাধীনতা ও দেয়া হয়নি। বরং পুরুষের অনুমতি ও সন্তুষ্টি সাপেক্ষে মসজিদ গমনের অনুমোদ দেয়া হয়েছে মাত্র।

‘তারা যারা যারা মসজিদ গমনের অনুমতি চায়’ এ বাক্য দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণ যে অধিকাংশ মহিলা মসজিদে যেতেন না; আবার কেউ যেতে চাইলেও স্বামীর অনুমতি নিতে সক্ষম না হওয়ায় যেতেন না। হ্যাঁ, স্বামীর অনুমতিতে মসজিদে গমনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

সুতরাং এসব হাদীসের আলোকে মহিলাদের মসজিদ গমন জায়েয বলা গেলেও সুন্নাত বলার কোনো অবকাশ নেই; বরং মসজিদে না যাওয়াই সুন্নাত ও উত্তম। এ কারণেই মসজিদে নববী ছাড়া অন্য কোনো মসজিদে মহিলা গমনের ইতিহাস পাওয়া যায় না।। কিন্তু তাদেরকে রাসূল স. মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামায আদায় করার প্রতি উৎসাহমূলক দিয়েছেন।


দুই-

দ্বিতীয় প্রকারের হাদীস। যেগুলোতে মহিলাদেরকে বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে মসজিদে গমনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদীস দেখুন।

প্রথম শর্ত- পূর্ণ পর্দা করা

১. আয়েশা রা.বর্ণনা করেন-

كن نساء المؤمنات يشهدن مع رسوالله صلي الله عليه و سلم صلاة الفجر متلفعات بمروطهن ثم ينقلبن الي بيوتهن حين يقضين الصلاة لا يعرفهن أحد من الغرس .

মুমিন নারীগণ মোটা চাদরে আবৃত হয়ে রাসূল স.-এর সাথে ফজরের জামাতে হাযির হতেন । বড় চাদরে তাদের মাথা পা পর্যন্ত ঢাকা থাকতো। নামায শেষে ঘরে ফেরার সময়েও ভোরের অন্ধকারের কারণে কেউ তাদের চিনতে পারতো না। [বুখারী : ৫৭৮]

বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসুলের যুগে যে সব মহিলা স্বামীর অনুমতিক্রমে নামাযে যেতেন তারা পর্দার সাথে যেতেন।

সুতরাং নামায আদায়ের জন্য মসজিদে গমন বৈধ হওয়ার জন্য ঢিলাঢালা বড় মাপের চাদর এবং বোরকা দ্বারা পূর্ণ শরীর আবৃত থাকা জরুরী।


দ্বিতীয় শর্ত- সুগন্ধি সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা।

২. হযরত যায়নাব রা. বর্ণনা করেন –

قال لنا رسول الله صلي الله عليه وسلم اذاشهدت احداكن المسجد فلا تمس طيبا. (مسلم)

রাসূল স. আমাদের সম্বোধন করে বলেন, তোমাদের কেও যদি মসজিদে গমন করে তাহলে সে যেনো সুগন্ধি ব্যবহার না করে। [মুসলিম : ৪৪৩]


৩. আবু হুরাইরা বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-

انما امرأة اصابت بخورا فلا تشهد معنا العشاء الاخرة. (مسلم)

যে মহিলা শরীরে বুখুর বা সুগন্ধি লাগিয়েছে সে যেনো আমার সাথে (মসজিদে) এশার নামাযে উপস্থিত না হয়। [মুসলিম : ৪৪৪]

এসব হাদীস দ্বারা আরেকটি শর্ত প্রমাণিত হলো যে, মহিলারা মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহার করে আসতে পারবেনা।


তৃতীয় শর্ত- সাজ সজ্জা ত্যাগ করা

৪. হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-

لا تمنعوا إماء الله مساجد الله ولكن ليخرجن وهن تفلات. (رواه أحمد في مسند و اسناده صحيح)

আল্লাহর বান্দীদের মসজিদ থেকে বারণ করো না। তবে তারা সাজসজ্জা পরিপূর্ণ পরিহার করে আসে। [মুসনাদে আহমদ : ৯৬৪৫, আবু দাউদ : ৫৬৫]


৫. হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন-

بينما رسول الله صلي الله عليه وسلم في المسجد. اذ دخلت امرأة من مزينة ترفل في زينة لها في المسجد وقال النبي صلي الله عليه وسلم يا ايها الناس انهوا نساءكم عن لبس الزينة والتبختر في المسجد فإن بني اسرائيل لم يلعنوا حتي ليس نساؤهم الزينة وتبخترون في المساجد. رواه ابن ماجه : الحديث:৪০০১

একদা রাসূল স. মসজিদে বসা ছিলেন। এ সময় মুযাইনা গোত্রের এক মহিলা ঝাকঝমকপূর্ণ পোষাকে সুগন্ধি ব্যবহার করত মসজিদে প্রবেশ করলো। এসব দেখে রাসূল স. ইরশাদ করলেন, হে মানুষ সকল, তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাজসজ্জা অবলম্বন করে দম্ভের সাথে মসজিদে আসা থেকে বারণ করো। (জেনে রাখ) বনী ইরাঈল তখনই অভিশপ্ত হয়েছে, যখন তাদের মহিলারা সেজেগুঁজে দম্ভের সাথে মসজিদে গমন শুরু করেছিলো। [ইবনে মাজাহ শরীফ : ৪০০১]

বুঝা গেলো, মহিলাদের আকর্ষণীয় পোশাকে সজ্জিত হয়ে , চাকচিক্য এমব্রয়ডারিকৃত বোরকা নিয়েও মসজিদে গমন বৈধ নয়।


চতুর্থ শর্ত- মসজিদে ও পথে নারী পুরুষের সংমিশ্রণ না ঘটা

৬. হযরত আবু উসাইদ আনসারী রা. বর্ণনা করেন –

أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ وَهُوَ خَارِجٌ مِنَ الْمَسْجِدِ فَاخْتَلَطَ الرِّجَالُ مَعَ النِّسَاءِ فِى الطَّرِيقِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لِلنِّسَاءِ ্র اسْتَأْخِرْنَ فَإِنَّهُ لَيْسَ لَكُنَّ أَنْ تَحْقُقْنَ الطَّرِيقَ عَلَيْكُنَّ بِحَافَاتِ الطَّرِيقِ গ্ধ. فَكَانَتِ الْمَرْأَةُ تَلْتَصِقُ بِالْجِدَارِ حَتَّى إِنَّ ثَوْبَهَا لَيَتَعَلَّقُ بِالْجِدَارِ مِنْ لُصُوقِهَا بِهِ.(ابوداود. الحديث : ৫১৭২)

তিনি বলেন, আমি রাসূল স.কে বলতে শুনেছি ‘মহিলাগণ! তোমরা পেছনে সরে যাও। রাস্তার মধ্যভাগে তোমাদের চলা ঠিক নয়। তোমরা রাস্তার কিনারায় চলবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ আদেশের পর মহিলারা রাস্তার কিনারা দিয়ে এমনভাবে চলতেন যে, রাস্তার পাশে নির্মিত ঘরের দেয়ালে তাদের কাপড় আটকে যাওয়ার উপক্রম হতো। [আবু দাউদ : ৫২৭২]


৭. হযরত উম্মে সালমা রা. বর্ণনা করেন –

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا سلم قام النساء حين يقضى تسليمه ويمكث هو فيمقامه يسيرا قبل ان يقوم. (رواه بخاري : ৮৭০)

রাসূল স. যখন নামায শেষে সালাম ফেরাতেন তখন কোনো প্রকার বিলম্ব না করে মহিলাগণ কাতার থেকে উঠে চলে যেতেন। আর রাসূল স. আপন স্থানে কিছুক্ষণ বসে থাকতেন। (যাতে মহিলাদের সাথে পুরুষের কোনো রকম সংমিশ্রণ না হয়) [বুখারী : হা.৮৭০]

এসব হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, রাসূল স. চলাচলের পথে পুরুষ-নারীর সংমিশ্রণ না হওয়ার শর্তে মহিলাদের মসজিদে গমনের অনুমতি দিয়েছেন ।

উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে যা বুঝা গেল

নামায ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মসজিদে নববীতে এক রাকাত নামায অন্য সকল মসজিদের নামাযের চেয়ে এক হাজার গুণ (এক বর্ণনায়) বা পঞ্চাশ হাজার গুণ। (পর বর্ণনা মতে) বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়। নবীজী সা.-এর সাথে তারই ইমামতিতে আদায়কৃত একটি নামায জীবনের জন্য সর্বাধিক সৌভাগ্যের ব্যাপার; এবং অনেক বড় পুঁজি। তবে বিপরীতে গোটা পৃথিবীর ধন সম্পদেরও কোনো মূল্য নেই। তার ইমামতিতে অনুষ্ঠিত নামাযে মুক্তাদিগণ ছিলেন, উম্মতের সবচেয়ে পবিত্র জামাত। যাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মতের জন্য মহান আদর্শ। সে সময়টা ছিলো নতুন নতুন ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময়। আল্লাহর নাযিলকৃত বিধিনিষেধ শুনার জন্য নারী পুরুষ সকলেই থাকতো উদগ্রীব; উৎসুক। দরবারে নববী ছিলো প্রতিনিয়ত লোকে লোকারণ্য। এবং প্রতিটি মানুষের অন্তর ছিলো পবিত্র; পরিচ্ছন্ন নবীপ্রেমে ভরপুর।

এহেন পাক পবিত্র নিষ্কুুলুষ ও নিরাপদ সমাজে রাসূল স. মুসলিম রমনীদের মদীনার মসজিদে নববীতে স্বয়ং তার পিছনে; উম্মতের সর্বোত্তম জামাতের সাথে নামাযের মতো সর্বোত্তম ইবাদাতের জন্য মসজিদে গমন করার জন্য উপরোক্ত শর্তারোপ করেছেন। শর্তগুলো হচ্ছে,

১. মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও ঘরে নামায আদায় করা সর্বোত্তম।

২. স্বামীর অনুমতি নিতে হবে ।

৩. রাতের অন্ধকারে আসবে যাতে কারো দৃষ্টিগোচর না হয়।

৪. মাথা থেকে পা পর্যন্ত পূর্ণ শরীর সাদাকালো বোরকা দ্বারা আবৃত থাকতে হবে।

৫. সুগন্ধি ব্যবহার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।

৬. সাদামাটা কাপড় পড়ে আসবে । পুরুষ থেকে নিরাপদ দূরুত্তে অবস্থান করবে। যাতে মসজিদ বা পথে পুরুষের সাথে সংমিশ্রণ না হয়।

এসব শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করে কেউ মসজিদে আসতে চাইলে রাসূল স. তাকে বারণ করতে পুরুষদের নিষেধ করেছেন। তথাপি রাসূল স. তার নিজের সন্তুষ্টির কথা এভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, মহিলাদের জন্য মসজিদ অপেক্ষা তাদের বসবাসের ঘরে অন্ধকার স্থান অধিক উত্তম।


তিন-

কিছু হাদীসে এসেছে , সব শর্ত মেনে মসজিদে গমন থেকেও ঘরে নামায আদায় সর্বোত্তম ও রাসূল স.-এর সন্তুষ্টি।


১০. ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-

্র لاَ تَمْنَعُوا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ গ্ধ.(رواه ابو داود باسناد صحيح : ৫৬৭)

তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের মসজিদে যেতে বাঁধা দিবে না। তবে (মনে রাখবে) তাদের জন্য তাদের ঘরই নামাযের উত্তম স্থান। [আবু দাউদ : ৫৬৭]


১১. হযরত ইবনে মাসউদ রা.-এর সুত্রে বর্ণিত –

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ ্র صَلاَةُ الْمَرْأَةِ فِى بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِى حُجْرَتِهَا وَصَلاَتُهَا فِى مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِى بَيْتِهَا গ্ধ.(رواه ابو داود : ৫৭০)

রাসূল স. বলেন, মহিলাদের ঘরের অভ্যন্তরে আদায়কৃত নামায ঘরের আঙ্গিনায় আদায়কৃত নামাযের তুলনায় উত্তম। ঘরের ভেতরের ছোট কামরায় আদায়কৃত নামায ঘরের অভ্যন্তরে আদায়কৃত নামাযের তুলনায় উত্তম। [আবু দাউদ : ৫৭০]


১২. হযরত উম্মে সালমা রা. থেকে বর্ণিত –

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ خَيْرُ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ بُيُوتِهِنَّ. (مسند احمد : ২৬৫৪২)

রাসূল সা. ইরশাদ করেন-

মহিলাদের উত্তম মসজিদ তাদের ঘরের অন্দরমহল। [মুসনাদে আহমদ : ২৬৫৪২]


১৩. হযরত উম্মে হুমায়দ রা.থেকে বর্ণিত –

عَنْ أُمِّ حُمَيْدٍ امْرَأَةِ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ أَنَّهَا جَاءَتْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُحِبُّ الصَّلَاةَ مَعَكَ قَالَ قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلَاةَ مَعِي وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي دَارِكِ وَصَلَاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ وَصَلَاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِي قَالَ فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ. (رواه احمد ورجاله رجال الصحيح وقال الشيخ حمزة أحمد الزين اسناده صحيح : ২৭০৯০)

তিনি রাসূল স.-এর দরবারে হাযির হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সা.! আপনার পিছনে নামায আদায় করা আমার প্রবল ইচ্ছা। রাসূল স. বললেন, আমি জানি আমার পিছনে নামায আদায় করতে তুমি বড়ই আগ্রহী। অথচ তোমার জন্য তোমার ঘরের ছোট কামরায় নামায বড় কামরার নামাযের চেয়ে উত্তম। বড় কামরার নামায ঘরের আঙ্গিনার নামাযের চেয়ে উত্তম। ঘরের আঙ্গিনার নামায মহল্লা মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম। মহল্লা মসজিদের নামায আমার মসজিদের নামায অপেক্ষা উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন, (রাসুলের এমন ভাব বুঝে) উম্মে হুমায়েদ ঘরের অভ্যন্তরে নামাযের স্থান বানাতে নির্দেশ দেন। সে মতে ভেতরের এক অন্ধকার কোঠায় নামাযের স্থান বানানো হলো এবং তিনি জীবনভর সে স্থানে নামায আদায় করতে থাকেন। আর এ অবস্থায় তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেলেন। [মুসনাদে আহমাদ : ২৭০৯০]


১৪. হযরত উম্মে সালমা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

عن أم سلمة زوج النبي صلى الله عليه و سلم قالت قال رسول الله صلى الله عليه و سلم صلاة المرأة في بيتها خير من صلاتها في حجرتها وصلاتها في حجرتها خير من صلاتها في دارها وصلاتها في دارها خير من صلاتها خارج. (رواه الطبراني في الاوسط ورجاله رجال الصحيح : ৯১০১)

রাসূল স. ইরশাদ করেন ‘মহিলাদের জন্য নিজের ছোট কামরার নামায বড় কামরার নামাযের চেয়ে উত্তম। বড় কামরার নামায ঘরের আঙ্গিনার নামায থেকে উত্তম। বাড়ির নামায বাড়ির বাইরের নামায থেকে উত্তম। [আল মুজামুল আওসাত : ৯১০১]


১৫. হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-

عن عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم “صلاة المرأة في بيتها خير من صلاتها في حجرتها وصلاتها في حجرتها خير من صلاتها في دارها وصلاتها في دارها خير من صلاتها فيما وراء ذلك” .(التمهيد لابن عبد البر : ৪০১/২৩)

মহিলাদের ছোট কামরার নামায বড় কামরার নামাযের চেয়ে উত্তম। বড় কামরায় নামায ঘরে আঙ্গিনার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর ঘরের আঙ্গিনার নামায অন্যান্য জায়গায় নামাযের তুলনায় উত্তম। [আত তামহীদ : খ.২৩ পৃ.৪০১]


১৬. হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত-

عن ابن عمر عن النبي صلي الله عليه وسلم قال : صلاة المرأة وحدها تفضل على صلاتها في الجمع بخمس وعشرين درجة.(الجامع الصغير :২২৩/৪)

রাসূল স. ইরশাদ করেন, ‘মহিলাদের একাকী নামায জামাতের সাথে আদায়কৃত নামাযের থেকে পঁিচশগুণ বেশী ফযিলতপূর্ণ। [জামেউস সগীর : খ.৪ পৃ.২২৩]


১৭. হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত-

عن عبد الله بن مسعود عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : إن أحب صلاة تصليها المرأة إلى الله في أشد مكان في بيتها ظلمة. (رواه ابن خزيمة في صحيحه : ১৬৯১)

রাসূল স. বলেন, আল্লাহর নিকট মহিলাদের ঐ নামায সবচেয়ে প্রিয় যা ঘরের বেশী অন্ধকারময় কামরায় আদায় করা হয়। [সহীহ ইবনে খুযায়মা : ১৬৯১]


৮. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত-

وعن عبد الله بن مسعود قال : إنما النساء عورة وإن المرأة لتخرج من بيتها وما بها من بأس فيستشرفها الشيطان فيقول : إنك لا تمرين بأحد إلا أعجبتيه وإن المرأة لتلبس ثيابها فيقال : أين تريدين ؟ فتقول : أعود مريضا أو أشهد جنازة أو أصلي في مسجد وما عبدت امرأة ربها مثل أن تعبده في بيته

তিনি বলেন, মহিলারা আপাদমস্তক পর্দায় থাকার বস্তু। নি:সন্দেহে মহিলারা নির্দোষ অবস্থায় ঘর থেকে বের হয়। অতঃপর শয়তান তার প্রতি কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, তুমি যার সামনে দিয়েই অতিক্রম করবে তার কাছেই পছন্দনীয় হবে। মহিলারা যখন কাপড় পরিধান করে তখন পরিবারের লোকজন জিজ্ঞেস করে, কোথায় যেতে চাচ্ছ ? তখন সে বলে, কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাচ্ছি। অথবা মাইয়্যেতের জানাযা পড়তে যাচ্ছি। অথবা মসজিদে নামায পড়তে যাচ্ছি।

বস্তুত: মহিলাদের অন্দর মহলে ইবাদতের চাইতে কোন ইবাদাতই উত্তম নয়। আল্লামা তবরানী রহ. হাদীসটিকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী দ্বারা বর্ণনা করেছেন। (আল-মু‘জামুল কাবীর: খ: ৪ পৃ: ৫৮৭ হাদীস নং ৯৩৬৭)


১৯. ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল-

وعنه أيضا أنه كان يحلف فيبلغ في اليمين : ما من مصلى للمرأة خير من بيتها إلا في حج أو عمرة إلا امرأة قد يئست من البعولة وهي في منقليها . قلت : ما منقليها ؟ قال : امرأة عجوز قد تقارب خطوها (رواه الطبراني في الكبير ورجاله موثقون)

তিনি কসম কাটতেন এবং দৃঢ়ভাবে কসম কাটতেন যে, মহিলাদের জন্য তার অন্দর মহল থেকে উত্তম নামাযের কোন স্থান নেই। তবে দুই ধরণের মহিলা ব্যতীত।


ক. হজ এবং ওমরায় গমনকারিনী।

খ. ঐ মহিলা যে তার স্বামী থেকে নিরাশ হয়ে গেছে এবং নিজের মুনকালীন এ আছে। বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, মুনকালীন-এ থাকার অর্থ কী? তিনি বললেন, এমন বৃদ্ধা হয়ে যাওয়া যে, অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে কাছে কাছে পা পড়ে। আল্লামা তবারানী আল-মু’জামূল কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর প্রত্যেকটি বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। (আল-মু’জামূল কাবীর: ৪/৫৮৬,হাদীস নং ৯৩৬১-৯৩৬২)


২০. হযরত ইবনে মাসউদ র. এর ফাতওয়া-

عن ابن مسعود قال ما صلت المرأة في مكان خير لها من بيتها إلا أن يكون المسجد الحرام أو مسجد النبي صلى الله عليه و سلم إلا امرأة تخرج في منقليها يعني خفيها. (رواه الطبراني في الكبير ورجاله رجال الصحيح : ৯৪৭২)

তিনি বলেন, মহিলাদের নামায আদায়ের জন্য তাদের ঘরের অভ্যন্তরীণ অংশ থেকে উত্তম কোনো স্থান নেই। তবে (হজ্ব ওমরার সময়) মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর কথা ভিন্ন। হ্যাঁ, যে বয়োবৃদ্ধ মহিলার কদম ছোট হয়ে গেছে তার যাওয়ার অবকাশ আছে। (আল মুজামুল কবীর : ৯৪৭২)


২১. হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর ‘ফাতওয়া’

عن عبد الله بن عباس أن امرأة سألته عن الصلاة في المسجد يوم الجمعة فقال صلاتك في مخدعك أفضل من صلاتك في بيتك وصلاتك في بيتك أفضل من صلاتك في حجرتك وصلاتك في حجرتك أفضل من صلاتك في مسجد قومك .(رواه ابن ابي شيب: ৭৬৯৭)

এক মহিলা ইবনে আব্বাসকে জুমার দিন মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমাদের শোয়ার ঘরে নামায আদায় করা ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ঘরে নামায পড়া আঙ্গিনার নামায থেকে । মহল্লার মসজিদে নামায আদায় করার চেয়ে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৭৬৯৭]


বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত হাদীসগুলোর সাথে এক, দুই-তে উদ্ধৃত হাদসিগুলোর সংঘর্ষ আছে বলে মনে হতে পারে। মূলত এ দুই ধরনের হাদীসের মাঝে কোনো সংঘর্ষ নেই।

কারণ তিন-এ বর্ণিত হাদীস দ্বারা মসজিদে না যাওয়াই উত্তম বুঝানো হয়েছে। আর এক,দুই-তে উদ্ধৃত হাদীসসমূহ দ্বারা কঠিন শর্তসাপেক্ষে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

মোট কথা, মহিলারা নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া অনুত্তম ; ঘরে পড়া উত্তম। এ দুয়ের মাঝে সংঘর্ষ নেই। যদি কিছূু হাদীসে মসজিদে গমনকে ওয়াজিব বা সুন্নাত বলা হতো আর কিছু হাদীসে ঘরের নামায আদায় জরুরী; মসজিদে যাওয়াকে গুনাহ বলা হতো তাহলে সংঘর্ষ হতো।


কটি প্রশ্ন: ঘরে নামায আদায় করা উত্তম জেনেও কিছু মহিলা কেন মসজিদে যেতেন?

জবাব:- রাসূলের পছন্দনীয় নয় জেনেও তখনকার মহিলারা নিন্মোক্ত কারণে মসজিদে যেতেন।

ক্স অনেক সময় মানুষ নিজস্ব আবেগ অনুভূতির তাড়নায় উত্তম কাজ ছেড়ে অনুত্তম বা জায়েযের উপর আমল করে। এটা মানবীয় প্রবণতা ও ব্যক্তিগত রুচি।

ক্স রাসূলের প্রতি গভীর ভালবাসা এবং তার পেছনে নামায আদায়ের প্রবল আবেগ।

ক্স মাসআলা মাসাইল জানা

ক্স শরীয়তের নতুন নতুন বিধি-নিষেধ সম্পর্কে অবগত হওয়া।

ক্স কিছু সময় রাসূল স.-এর সান্নিধ্যে কাটাতে পারা।

ক্স সমাজটিও পবিত্র সাহাবাদের সমাজ হওয়ায় যাবতীয় শর্ত পালন করা সম্ভব হওয়া।

ক্স ফিতনা ফাসাদের আশঙ্কা কম থাকা।

এসব কারণে তারা এ বৈধ আমলটি পালন করতে সক্ষম ছিলেন।

বর্তমান যুগে এসব কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। যার বিবরণ একটু পরেই পেশ করবো। [ইনামুল বারী : খ.৩ পৃ.৫৫৩]


চার-

আরেক প্রকারের হাদীস হচ্ছে মহিলাদের মসজিদ গমন নিষিদ্ধ বিষয়ক। হাদীসগ্রন্থে অনেক হাদীস পাওয়া যায় যা দ্বারা মহিলাদের মসজিদে গমন নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়।


২২. বুখারী শরীফে আছে-

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت لو رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم ما أحدث النساء لمنعهن المسجد كما منعت نساء بني إسرائيل.فقلت لعمرة او منعهن؟ قالت نعم. (رواه البخاري في صحيحه : ৮৬৯)

হযরত আয়েশা রা. বলেন, মহিলারা যেরূপ (সাজসজ্জা) সহ কিছু বিষয় বর্তমানে উদ্ভাবন শুরু করেছে তা যদি রাসূল স. প্রত্যক্ষ করতেন; তাহলে অবশ্যই তাদের মসজিদে গমন করতে নিষেধ করতেন। যেমন বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছিলো। [বুখারী : ৮৬৯]


২৩. হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত-

عن عائشة قالت كان نساء بني إسرائيل يتخذن أرجلا من خشب يتشرفن للرجال في المساجد فحرم الله عليهن المساجد وسلطت عليهن الحيضة.(اخرجه عبد الرزاق في مصنفه : ৫১২৮)

বনী ইসরাঈলের মহিলারা উঁচু উঁচু কাঠের পা বানিয়ে নিতো। যাতে মসজিদে গিয়ে এগুলো ব্যবহার করে উঁিক মেরে পুরুষদের দেখতে পায়। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা অসুন্তুষ্ট হয়ে তাদের মসজিদে যাওয়া হারাম করে দিয়েছেন এবং তাদের উপর ঋতুস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। [মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক : ৫১২৮]


২৪. হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত-

عن ابن مسعود قال كان الرجال والنساء في بني إسرائيل يصلون جميعا فكانت المرأة إذا كان لها الخليل تلبس القالبين تطول بهما لخليلها فألقى الله عليهن الحيض فكان ابن مسعود يقول : أخروهن حيث أخرهن الله قلنا لأبي بكر : ما القالبين ؟ قال : رقيصتين من خشب.(اخرجه عبد الرزاق في مصنفه : ৫১২৯)

তিনি বলেন, বনী ইসরাঈলের পুরুষ-মহিলা একত্রে নামায আদায় করতো। মহিলাদের কোনো প্রিয় ব্যক্তি যদি জামাতে শরীক থাকতো। তাহলে তারা কাঠের তৈরী উঁচু উঁচু খড়ম পরে নিতো; যাতে লম্বা হয়ে তার প্রিয়জনকে দেখতে পায়। তাদের এ ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের কারণে শাস্তিস্বরূপ তাদের উপর ঋতুস্রাবের কষ্ট চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। (অর্থাৎ ঋতুস্রাবের সময় সীমা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে) এবং এ কারণে তাদের মসজিদে গমন হারাম করে দেয়া হয়েছে। ইবনে মাসউদ রা. তখন বললেন, ‘তোমরা মহিলাদের ঐ স্থান থেকে পেছনে রাখো যে স্থান থেকে আল্লাহ তায়ালা তাদের পেছনে রেখেছেন। [মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক : ৫১২৯]

অর্থাৎ যে জায়গা (মসজিদ) থেকে আল্লাহ তায়ালা তাদের পেছনে রেখেছেন । হে মুমিনগণ, তোমরাও আল্লাহর নির্দেশের অনুকরণে তাদেরকে সে জায়গা (মসজিদ) থেকে পেছনে রাখো।


২৫. আবু আমর শাইবানী র. বর্ণনা করেন-

أنه رأى ابن مسعود يخرج النساء من المسجد يوم الجمعة ويقول : اخرجن إلى بيوتكن خير لكن. (رواه الطبراني في الكبير : ৯৪৭৫)

তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে মাসউদ রা. কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছেন এবং বলছেন, তোমরা ঘরে চলে যাও ওটাই তোমাদের জন্য উত্তম। [মুজামুল কাবীর : ৯৪৭৫]


২৬. ইবনে উমর রা.-এর আমল-

وَكَانَ ابْن عمر، رَضِي الله تَعَالَى عَنْهُمَا، يقوم يحصب النِّسَاء يَوْم الْجُمُعَة يخرجهن من الْمَسْجِد.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. জুমার দিন দাঁিড়য়ে ছোট ছোট কঙ্কর নিক্ষেপ করে মহিলাদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। [উমদাতুল কারী : খ.৪ পৃ.৬৪৭]

এসব হাদীসসমূহ থেকে যা প্রমাণিত।উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. উম্মতে মুসলিমার করণীয় নির্ধারণ করে দিয়ে বলেছেন, মুসলিম রমনীদের চারিত্রক পবিত্রতা, উৎকষর্তা এবং ইজ্জত -সম্মান হেফাজতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার যেসব শর্তাবলী আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে সেগুলোর দিকে তারা ততোটা ভ্রুক্ষেপ করছেন না। মার্জিত ও উন্নত চরিত্রের যে অনুপম নমুনা তাদের মধ্যে রাসূল স.-এর যুগে বিদ্ধমান ছিলো তা এখন পূর্বের মতো উপস্থিত নেই।

অতএব এ ধরনের চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারণে এখন আর মসজিদে গমনের অনুমতি দেয়া যায় না। তাই তিনি এ ভাষায় মসজিদ গমনকে নারীর জন্য নিষেধ করলেন যে স্বয়ং রাসূল স. জীবিত যদি থাকতেন আর মহিলাদের এ পরিবর্তন লক্ষ করতেন তাহলে তিনিই তাদেরকে মসজিদ গমনের বৈধতার বিধান স্থগিত করে অবৈধ হওয়ার বিধান চালু করতেন। এবং মসজিদে যেতে বারণ করতেন। হযরত আয়েশা রা. তার এ সিদ্ধান্তের সমর্থনে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের যেসব কারণে মসজিদে যাওয়া হারাম করা হয়েছিলো তাও সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন।


উল্লেখ্য, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জানতেন যে, একসময় ফেতনার দ্বারা উম্মুক্ত হবেই । কিন্তু রাসুলের যুগে তার প্রেক্ষাপট তৈরী না হওয়ায় মসজিদে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা সুস্পষ্টভাবে অগ্রিম ঘোষণা দেননি। কিন্তু বনী ইসরাঈলের মহিলাদের মসজিদের যাওয়া হারাম করার বিষয়টি রাসূল স.ও উম্মতকে জানিয়ে দিয়ে এ দিকে ইশারা করেছেন যে, ফেতনার দ্বার উম্মুখ হলে –এ উম্মতের মহিলাদের ব্যাপারেও অনুরূপ বিধান আরোপ হবে।

হযরত আয়েশার সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়ে হযরত উমর রা. মহিলাদের মসজিদে গমন নিষিদ্ধ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ , ইবনে উমরসহ অনেক সাহাবী কঙ্কর নিক্ষেপ করেও এ বিধান বাস্তবায়ন করছেন।

হযরত উমর রা.-এর এ সিদ্ধান্তকে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম মেনে নিয়ে ইজমায়ে সাহাবা সংঘটিত হলো।

এসব কারণে চার মাযহাবের ইমামগণ কিছুটা ভিন্ন ভাষায় মহিলাদের এ ফিতনার যুগে মসজিদে গমন করাকে মাকরূহ বলে ফাতওয়া দিলেন।

সুতরাং মহিলাদের মসজিদে গমন বর্তমান যুগেও মাকরূহে তাহরীমা ।




মহিলারা সমবেত হয়ে জামাতের সাথে জুমার/ঈদের নামাজে উপস্থিতি - ইসলামিক আলোচনা-৪র্থ পর্ব

সোমবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 


জুমার/ঈদের নামাজে মেয়েদের উপস্থিতি জায়েজ নাই

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

মহিলাদের জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়া মাকরূহ। তবে যদি নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে।


নারীদের আসল স্থান হল তাদের বসবাসের ঘর। নারীদের মসজিদে এসে নামায পড়া রাসূল সাঃ পছন্দ করতেন না। তবে যেহেতু রাসূল সাঃ সবার নবী। আর রাসূল সাঃ এর কাছে ওহী নাজিল হতো। তাই নারীরা রাসূল সাঃ এর জমানায় ওহীর বানী শুনার জন্য মসজিদে আসতো। এটি ছিল শুধুই প্রয়োজনের তাগিতে।


যে প্রয়োজন রাসূল সাঃ ইন্তেকালের দ্বারা বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রয়োজনীয় দ্বীন শিখা প্রতিটি নর-নারীর জন্য আবশ্যক। রাসূল সাঃ ছিলেন সেই দ্বীনের বাহক। তাই রাসূল সাঃ এর সময়ে যেহেতু সময়ে সময়ে দ্বীনের বিধান অবতীর্ণ হতো, তাই পুরুষ সাহাবীদের সাথে মহিলা সাহাবীরাও রাসূল সাঃ এর দরবারে এসে সেই দ্বীন শিখতে চেষ্টা করতেন। সেখানে পুরুষ নারী এক সাথে হওয়ার কারনে কোন ফিতনার আশংকা ছিল না।


কিন্তু বর্তমানে সেই আশংকা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম নারীদের ঈদগাহে ও মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করেন। এটা না জায়েজ নয়, তবে মাকরূহ। সেই সাথে ইসলামের মূল স্পিরিটের বিপরীত পদ্ধতি। কারণ ইসলামের মূল থিউরী হল নারীরা থাকবে বাড়িকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে। রাস্তাঘাটে অবাধে বিচরণ এটা তাদের কাজ নয়। নিম্নের হাদীসগুলো দেখুন-

عن عبد الله بن سويد الأنصاري عن عمته امرأة أبي حميد الساعدي : أنها جاءت النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله صلى الله عليه و سلم إني أحب الصلاة معك فقال : قد علمت أنك تحبين الصلاة معي و صلاتك في بيتك خير من صلاتك في حجرتك و صلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك و صلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك و صلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في مسجدي فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها و أظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز و جل


আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী রাঃ তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল সাঃ এর কাছে এসে  বললেনহে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী সাঃ বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর।  অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে।  তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত।


সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯,

ইলাউস সুনান-৩/২৬।

এ হাদীস কি প্রমাণ করছে? মহিলারা মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামায পড়বে এ নির্দেশ কার? যদি রাসূল সাঃ নারীদের মসজিদে আসাকে অপছন্দ করে থাকেন, তাহলে সেখানে আমি কে যে, তাদের মসজিদে আসা/ঈদগাহে আসা পছন্দ করবো?

আরেকটি হাদীস দেখি

عن أبي عمرو الشيباني أنه رأى بن مسعود يخرج النساء من المسجد ويقول أخرجن إلى بيوتكن خير لكن

হযরত আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম।


মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১,

মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯

সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১

আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫।


ভাল করে খেয়াল করুন। আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ অপছন্দ করেন, আমরাও তা অপছন্দ করি। যে বঞ্চনা রাসূল সাঃ এর প্রিয় সাহাবীর আমল। সেটি আমাদের গলার মালা। যদিও সেটি সাহাবা বিদ্বেষীদের অপছন্দ হয়ে থাকে।

عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ. قَالَ يَحْيَى فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَمُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ قَالَتْ نَعَمْ.

হযরত আমরাতা বিনতে আবদির রহমান বলেন-রাসূল সাঃ এর সহধর্মীনী হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন-যদি রাসূলুল্লাহ সাঃ মহিলাদের এখনকার অবস্থা জানতেন, তারা কি করে? তাহলে তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছে।


ইয়াহইয়া বলেন-আমি আমরাতাকে বললাম-বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে? তিনি বললেন-হ্যাঁ।


সহিহ মুসলিম -১/১৮৩, হাদীস নং-১০২৭

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৬৯

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৯৮২

মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৫৯

সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৫৪০

এবার ভেবে দেখুন-রাসূল সাঃ এর তিরোধানের পর মুসলিম নারীরা এমন কি পোশাক পড়তেন, যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা রাঃ একথা বলেছেন? আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা রাঃ কী বলতেন?


উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা পরিস্কার যে, মহিলাদের ঈদগাহে ও মসজিদে আসা মাকরূহ।


মহিলারা সমবেত হয়ে জামাতের সাথে মহিলা ইমাম বানিয়ে নামায পড়া প্রসঙ্গ

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

শুধু মহিলাদের জামাত মাকরুহে তাহরীমি। পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে যদি মহিলারা জামাতের সাথে মহিলা ইমামের পিছনে জানাযা নামায পড়ে তবে তা মাকরুহ ব্যতিতই আদায় হবে।

দলিল:

فى رد المحتار-( و ) يكرهتحريما ( جماعةالنساء ) ولوالتراويحفيغيرصلاةجنازة ( لأنهالمتشرعمكررة ) (رد المحتار-كتابالصلاة،بابالإمامة-2/305)


প্রামান্য গ্রন্থাবলী:

১. ফাতওয়ায়ে শামী-২/৩০৫

২.আন নাহরুল ফায়েক-১/২৪৪

৩. ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৮৫

৪. বাদায়েউস সানায়ে’-১/৩৮৮



নারীদের মসজিদে গমন নিয়ে ফিকাহবিদদের মতামত - ইসলামিক আলোচনা-৩য় পর্ব

সোমবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২১ 2
বার দেখা হয়েছে

 









নারীদের মসজিদে গমন প্রসঙ্গে কিছু কথা

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

নারীদের মসজিদে গমন নিয়ে ফিকাহবিদদের মতামত :

——————————————————————

প্রথমদিকের কিছু ওলামায়ে কেরাম বৃদ্ধাদের জন্য মাগরিব ও এশার সময় ফিতনামুক্ত হওয়ার কারণে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। পরবর্তী ফিকাহবিদরা ফিতনার ব্যাপকতার কারণে যুবতী ও বৃদ্ধা সবার জন্য সব নামাজে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। (শরহুস সগির : ১/৪৪৬, আল মাজমু : ৪/১৯৮, আল মুগনি : ২/১৯৩)


হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাদায়েউস সানায়ে’ তে বলা হয়েছে যে যুবতী নারীদের মসজিদে যাওয়া ফিতনা। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫৬)


আল্লামা ইবনে নুজাইম মিসরি ও আল্লামা হাসকাফি.(রহ.) বলেন, বর্তমান যুগে ফিতনার ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় ফতোয়া হলো, সব নারীর জন্যই সব নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করা মাকরুহে তাহরিমি।

(আল বাহরুর রায়েক : ১/৬২৭-৬২৮, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৩৮০)


নারীদের মসজিদে যাওয়া সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যা

———————————————————————————

এক. হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ কোরো না। (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৪৪২; আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬৬)


উল্লিখিত হাদিসের ব্যাখ্যা হলো, ইসলামের প্রথম যুগে নারীরা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের নিষেধ করা হতো না। ওই নির্দেশ সাময়িক ও শর্তসাপেক্ষ ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের কারণে ও শর্ত না পাওয়ার কারণে এখন নিষেধ করাটাই সুন্নত। কারণ রাসুল (সা.)-এর যুগ ওহি নাজিলের যুগ ছিল। তাই নারীরা যাতে বিভিন্ন সময় অবতীর্ণ আয়াত ও শরিয়তের বিভিন্ন বিধান সরাসরি রাসুল (সা.) থেকে ভালোভাবে শিখে নিতে পারেন, সে জন্য নারীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়নি। কিন্তু পরে এই প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম নিষেধ করে দেন।


আল্লামা ইবনে হাজর (রহ.) বলেন, এ হাদিসে যদিও স্বামীকে নিষেধ করতে বারণ করা হয়েছে, এ বারণ কঠোর নিষেধ নয়, বরং তা হলো সাধারণ নিষেধ। এ জন্যই স্বামী অনুমতি দিলেও ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান ফিতনার আশঙ্কায়

নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ করতে পারবেন।

(মিরকাতুল মাফাতিহ : ৩/৮৩৬)


দুই. নারীদের মসজিদে যাওয়া সম্পর্কে দ্বিতীয় হাদিস হলো, উম্মে আতিয়া (রা.) বলেন, আমাদের আদেশ করা হয়েছে যে আমরা যেন ঋতুবতী পর্দানশিন নারীদেরও ঈদের ময়দানে নিয়ে যাই। যাতে তাঁরা মুসলমানদের জামাত ও দোয়ায় শরিক থাকতে পারেন। তবে ঋতুবতী

নারীরা নামাজের জায়গা থেকে আলাদা থাকবে। জনৈকা সাহাবিয়া বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনেকের তো চাদরও নেই। রাসুল (সা.) বললেন, তাকে যেন তার বান্ধবী নিজ চাদর দিয়ে সাহায্য করে। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৯৭৪)


ব্যাখ্যা : এখানেও আগের উত্তরটি প্রযোজ্য। আর তা হলো, নারীরা যাতে ঈদের দিনের যাবতীয় শরয়ি বিধান সরাসরি রাসুল (সা.) থেকে ও রাসুলের ঈদের খুতবায় যাবতীয় ওয়াজ-নসিহত ও মাসয়ালা-মাসায়েল ভালোভাবে শিখে নিতে পারে, সে জন্য রাসুল (সা.)-এর যুগে ঈদগাহে আসার অনুমতি ছিল। কিন্তু পরে এই প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম নিষেধ করে দেন।


ইমাম তাহাবি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

ইসলামের প্রাথমিক যুগে নারীদের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ছিল, যাতে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য দেখে ইসলামের

দুশমনদের যেন চক্ষুশূল হয়। কিন্তু আজ যেহেতু সেই পরিস্থিতি নেই এবং সংখ্যাধিক্য দেখানোর জন্য পুরুষরাই যথেষ্ট, তাই ওই বিধানও প্রযোজ্য হবে না।

(ফাতহুল বারি : ২/৪৭০)


আল্লামা ইবনুল হাজ মালেকি (রহ.) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, বিধানটি রাসুল (সা.)-এর যুগের বৈশিষ্ট্য। পরবর্তী যুগের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। (আল মাদখাল : ২/২৮৮)


দুটি সন্দেহ ও তার নিরসন :

সন্দেহ এক. কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, যদি বর্তমান যুগে নারীদের মসজিদে যাওয়া ফিতনার আশঙ্কায় নিষেধ হয়, তাহলে রাসুল (সা.) স্পষ্ট এ কথা বলে যাননি কেন যে আমার যুগের পর নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ?


নিরসন : রাসুল (সা.) শরিয়তের অসংখ্য বিধানাবলির ক্ষেত্রেই এরূপ করে গিয়েছেন যে তা স্পষ্ট করে বলে যাননি। তিনি জানতেন ও বুঝতেন যে প্রিয় সাহাবি তাঁর সব কথার মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝেই পরবর্তী সময়ে আমল করবেন। তাই সব কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।

যেমন—রাসুল (সা.)-এর পর আবু বকর (রা.)- কে খলিফা বানানোর কথা স্পষ্ট বলে যাননি। কেননা তিনি জানতেন যে তাঁর সাহাবিরা বিভিন্ন আকার- ইঙ্গিতে তাঁর উদ্দেশ্য বুঝে নিয়েছেন। এখন আর তাদের তা স্পষ্ট করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের আলোচিত বিষয়টিও তদ্রূপ। নারীদের ফিতনা ও নারীদের পর্দা-সংক্রান্ত শত শত হাদিস থাকা সত্ত্বেও সাহাবিরা এ বিষয়ে রাসুল (সা.)-এর ইচ্ছা বুঝবেন না, তা অসম্ভব।


সন্দেহ দুই. অনেক ভাই বলে থাকেন যে মক্কা-মদিনার হারামাইন শরিফে নারীরা মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন।


নিরসন : আসলে হারামাইনে কিছু বিশেষ প্রয়োজনের কারণে নারীদের জামাতে অংশ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তা হলো, নারীদের যেহেতু মক্কার মসজিদে হারামে তাওয়াফের জন্য আসতে হয় এবং মদিনার

মসজিদে নববিতে জিয়ারতের জন্য তাঁরা এসে থাকেন। এ অবস্থায় নামাজের আজান হয়ে গেলে আর বের না হয়ে তাঁরা মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ওলামায়ে কেরাম এর অনুমতি দিয়েছেন। তবে শুধু কেবল

জামাতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে নারীদের হারামাইনে যাওয়ার অনুমতি নেই। বর্তমানে না জেনে অনেক মহিলা শুধু নামাজের জন্যই হারামাইনে উপস্থিত হয়ে থাকেন, তা ঠিক নয়। (ইলাউস সুনান : ৪/২৩১)


উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, বর্তমানে নারীদের মসজিদে আসার স্লোগান এটি মূলত নামাযীদের মনে খারাবী সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। যা ইহুদী খৃষ্টানদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীল নকশা। মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য যে নোংরামীর গায়ে লেবেল লাগানো হয়েছে দ্বীন আর বঞ্চিত হবার।মুখরোচক স্লোগান।




নারীদের মসজিদে আসার ব্যাপারে সাহাবিদের নিষেধাজ্ঞা - ইসলামিক আলোচনা-২য় পর্ব

সোমবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


 নারীদের মসজিদে গমন প্রসঙ্গে কিছু কথা

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায়—

এক. পুরুষদের দায়িত্ব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়া, আর মহিলাদের দায়িত্ব হলো ঘরে নামাজ পড়া।


দুই. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মহিলাদের জন্য জামাতে শরিক হওয়া ওয়াজিব, সুন্নাত বা অত্যাবশ্যকীয় ছিল না; বরং শুধু অনুমতি ছিল। তবে সেটিও এমন, অপছন্দের সঙ্গে ও শর্তসাপেক্ষ ছিল।


তিন. হজরত উম্মে হুমাইদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথার ওপর আমল করার জন্যই মসজিদ ছেড়ে সারা জীবন বাড়ির নির্জন কক্ষে নামাজ আদায় করেছেন। সে যুগের নারীরা সাধারণত এটাই করতেন।


চার. সে যুগের পরিবেশ ভালো ছিল, এ জন্যই কেবল মহিলাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নচেৎ রাসুল (সা.)-ই কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করতেন।


কঠোর শর্ত সাপেক্ষে নারীদের মসজিদে আসার অনুমতি

——————————————————————————

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মহিলাদের যে মসজিদে আসার অনুমতি ছিল, তা-ও অনেক শর্তসাপেক্ষ ছিল।

যথা—

(ক)সম্পূর্ণ আবৃত ও পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে।

(খ) সেজেগুজে খুশবু লাগিয়ে বের না হওয়া।

(গ) বাজনাদার অলংকার, চুড়ি ইত্যাদি পরে আসতে পারবে না।

(ঘ) অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না।

(ঙ) পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলবে।

(চ) অপ্রয়োজনে কোনো বেগানা পুরুষের সঙ্গে

কথা বলবে না। সর্বোপরি তাদের এই বের হওয়া ফিতনার কারণ হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬৫, আহকামুল কোরআন, থানভি : ৩/৪৭১, বাজলুল মাজহুদ : ৪/১৬১)

কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায়ের কিছুদিন পর থেকেই।যখন এই শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে শুরু করে, তখন রাসুল (সা.)-এর প্রাণ প্রিয় সাহাবিরা তা উপলব্ধি করতে পেরে নারীদের মসজিদে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।


নারীদের মসজিদে আসার ব্যাপারে সাহাবিদের নিষেধাজ্ঞা

——————————————————————————

সাহাবায়ে কেরাম থেকে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ বিরোধী কোনো কাজ প্রকাশ পাবে—সেটা কল্পনাও করা যায় না। তাই হাদিস শরিফের পাশাপাশি সাহাবিদের আমলও দলিলরূপে গণ্য। কেননা তাঁরা ছিলেন সত্যের মাপকাঠি।


রাসুল (সা.) সুস্পষ্ট বলেছেন, ‘তোমরা আমার পরে খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, যেমন মাড়ির দাঁত দিয়ে কোনো জিনিস মজবুত ভাবে ধরা হয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)


হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নিজ খেলাফত আমলে যখন মহিলাদের পরিবর্তিত অবস্থা দেখেন এবং ফিতনার। আশঙ্কাও দিন দিন বাড়তে থাকে, তখন উম্মুল মুমিনিন

আয়েশা (রা.), ইবনে মাসউদ ও ইবনুজ জুবায়ের (রা.)সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন। অন্য সাহাবায়ে কেরামও এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন। কেননা তাঁরা জানতেন যে

মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশের বিরোধিতা করা হয়নি; বরং তাঁর ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো হুকুমের বিরোধিতা করার কল্পনাও করা যায় না। তা সত্ত্বেও তাঁরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এ জন্যই যে যেসব শর্তের সঙ্গে নারীদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি ছিল,।এখন সেসব শর্ত হারিয়ে যাচ্ছে।


নারীদের মসজিদে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞায় সাহাবিদের।যেসব উক্তি বর্ণিত হয়েছে, এর আংশিক নিম্নে উল্লেখ করা হলো—


এক. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নারীরা যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা যদি রাসুল (সা.) জানতেন, তবে বনি ইসরাইলের নারীদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি তাদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৬৯)


বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘আয়েশা (রা.)-এর এই মন্তব্য তো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্পর্কে। অথচ আজকের যুগের নারীদের উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সে যুগে ছিল না। তাহলে এ অবস্থা দেখে তিনি কী মন্তব্য করতেন?’ (উমদাতুল কারি : ৬/১৫৮)


এখন আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি যে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) নিজ যুগ তথা হিজরি নবম শতাব্দীর নারীদের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরি পঞ্চদশ শতাব্দীতে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা আর

উলঙ্গপনার দিকে ছুটে চলেছে, বেপর্দা আর

বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের পোশাক পরছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তাঘাটে বেড়াচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে অবলা মা-বোনদের সওয়াবের স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার অপচেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। অথচ এর জন্য দলিল দেওয়া হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগের নারীদের দ্বারা। এ

যুগের নারীরা কি সে যুগের নারীদের মতো?

কস্মিনকালেও নয়। তা সত্ত্বেও সে যুগেই নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে এ যুগের নারীদের মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে নামাজের জন্য উৎসাহ দেওয়া যায়?


দুই. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, ‘ওমর (রা.)-এর এক স্ত্রী (আতেকা বিনতে জায়েদ) ফজর ও।এশার নামাজে জামাতের জন্য মসজিদে যেতেন। তাঁকে

বলা হলো, ‘আপনি কেন নামাজের জন্য বের হন? অথচ আপনি জানেন যে হজরত ওমর (রা.) তা অপছন্দ করতেন ও আত্মমর্যাদাবোধের পরিপন্থী মনে করেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘তাহলে ওমর কেন আমাকে সরাসরি নিষেধ করেন না?’ তখন বলা হলো যে রাসুল (সা.)-এর বাণী রয়েছে— তোমরা আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ কোরো না—এ কথার কারণে তিনি সরাসরি নিষেধও করছেন না। ’ ’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯০০)


অন্য বর্ণনায় রয়েছে, স্ত্রী আতেকা বিবাহের সময় ওমর (রা.)-কে মসজিদে নববীতে গিয়ে নামাজের অনুমতি দেওয়ার শর্ত করেছিলেন, এ জন্য ওমর (রা.) অপছন্দ সত্যেও স্ত্রীকে নিষেধ করতে পারছিলেন না। (আল

ইসাবাহ : ৮/২২৮)


তিন. আবু আমর শায়বানি (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (আল মু’জামুল কাবির, হাদিস : ৯৪৭৫)

আল্লামা হাইসামি (রহ.) বলেন, এ হাদিসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য (সেকা)। (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ২/৩৫)


চার. হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) তাঁর পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে যেতে দিতেন না। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৫৮৪৬ (হাদিসটি সহিহ)]


পাঁচ. হজরত ইবনে ওমর (রা.) তাঁর স্ত্রীদের ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৫৮৪৫ (হাদিসটি সহিহ)]




ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png