আজকের আলোচক
শাইখ মতিউর রহমান মাদানী
সহিহ বুখারীর দারস-বিষয়ঃ কিতাবুল ঈমান ২য় পর্ব
আজকের আলোচক
শাইখ মতিউর রহমান মাদানী
সহিহ বুখারীর দারস-বিষয়ঃ কিতাবুল ঈমান ২য় পর্ব
দলগত ইসলামিক সঙ্গীত
কোথায় গেলে পাবো-
আমার প্রিয় নবীকে--
লেখকঃ
![]() |
তাফসীরে উসমানী |
শাব্বির আহমদ উসমানি
জন্মের তারিখ এবং স্থান: ১১ অক্টোবর, ১৮৮৭, বিজনোর
মরার তারিখ এবং স্থান: ১৩৬৯ হিঃ, বাহাওয়ালপুর রাজ্য
শিক্ষা: দারুল উলুম দেওবন্দ
তাফসীরে উসমানী
শাব্বির আহমদ উসমানি ভারতের একজন মুসলিম পন্ডিত ছিলেন। ১৯৪০ এর দশকে তিনি পাকিস্তান সৃষ্টিতে সমর্থন জানান। তিনি একজন লেখক ধর্মতাত্ত্বিক, বক্তা, রাজনীতিবিদ এবং তাফসির ও হাদিসের পন্ডিত ছিলেন। সেসাথে তিনি শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসানের ছাত্র ও খলিফা ছিলেন।
আমিনা এসলিমি’ নামের একজন মার্কিন নও-মুসলিম মহিলার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা অনেকেরই জানা। তবে তার আত্মকথা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। এখানে সেই কাহিনী তুলে ধরা হল। পবিত্রতা ও শান্তিপিয়াসী মানুষ ধর্মমুখী হচ্ছেন। ধর্ম মানুষের প্রকৃতিগত বিষয়। তাই তা ইতিহাস ও ভৌগলিক সীমারেখার গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং ধর্ম নানা জাতি, গোত্র ও শ্রেণীর মধ্যে গড়ে তুলে ঐক্য ও সম্পর্ক। তাই যারা নিজের সত্যপিয়াসী প্রকৃতির দিকে ফিরে যেতে চান, ধর্ম তাদেরকে ফিরিয়ে দেয় পবিত্রতা ও শান্তি আর এমনই পবিত্রতা ও শান্তি পাচ্ছেন সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ ঐশী ধর্ম ইসলামের মধ্যে আমিনা এসলিমির মত সত্যপ্রিয় পশ্চিমা নাগরিকরা। পেশায় সাংবাদিক মিসেস আমিনা এসলিম ছিলেন একজন গোঁড়া খৃস্টান ও খৃস্ট ধর্মের প্রচারক। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি প্রচার করতেন খৃস্ট ধর্ম। তিনি মনে করতেন, ইসলাম একটি কৃত্রিম ধর্ম এবং মুসলমানেরা হল অনুন্নত ও পশ্চাদপদ একটি জাতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারের একটি ভুল তার জীবনের মোড় পুরোপুরি বদলে দেয়। বর্তমানে তিনি বিশ্ব মুসলিম নারী রক্ষার কাজে মশগুল ।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর মার্কিন নওমুসলিম আমিনা এসলিমি এখন সম্পূর্ন ভিন্ন ধরণের মানুষ। এক সময়ের খৃস্ট ধর্ম প্রচারক এই নারী আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বহু মানুষের মনে জ্বালাতে পেরেছেন ইসলামের প্রোজ্জ্বল ও প্রদীপ্ত আলোর শিখা। তিনি বলেছেন ইসলাম আমার হৃদয়ের স্বপন্দন ও আমার শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত রক্তধারা এবং আমার সমস্ত প্রেরণার উৎস হ’ল এই ইসলাম। এ ধর্মের সুবাদে আমার জীবন হয়েছে অপরূপ সুন্দর ও অর্থপূর্ণ। ইসলাম ছাড়া আমি কিছুই নই। মার্কিন নও-মুসলিম আমিনা এসলিমি কম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নতুন টার্মের ক্লাশে ভর্তি হওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে একটি ভুল বিষয়ের ক্লাশে ভর্তি হন। কিন্তু এই সময় সফরে থাকায় তিনি তার এই ভুল বুঝতে পারেননি। পরে যখন এই বিষয় সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন জানতে পারেন যে, এই বিষয়ের ক্লাশে যোগ দেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আর ওই ক্লাশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই আরব মুসলমান। যদিও মিসেস এসলিমি আরব মুসলমানদের ঘৃণা করতেন, কিন্তু বৃত্তির অর্থ বাঁচানোর জন্য তাদের সহপাঠী হওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না তার। এ অবস্থায় তার মন খুব বিষন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু তার স্বামী যখন বললেন, হয়তো স্রষ্টা এটাই চেয়েছিলেন এবং তিনি হয়তো তোমাকে আরব মুসলমানদের মধ্যে খৃস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য মনোনীত করেছেন; তখন খৃস্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়েই মিসেস এসলিমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ক্লাশে গেলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ হলেই নানা অজুহাতে তাদের কাছে খৃস্ট ধর্মের দাওয়াত দিতেন মিসেস এসলিমি। তারা যেন নিজেদের মুক্তি নিশ্চিত করেন। কারণ, ঈসা মাসীহ মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যই নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। অবশ্য তারাও অর্থাৎ আরব মুসলিম শিক্ষার্থীরাও বেশ ভদ্রতা ও সম্মান দেখিয়ে মিসেস এসলিমির কথা শুনতেন। কিন্তু তাদের মধ্যে এইসব কথার কোন প্রভাব পড়ত না। এ অবস্থায় মিসেস এসলিমি ভিন্ন পথ ধরতে বাধ্য হন। তিনি এ পুস্তক দিয়েই তাদের কাছে এ ধর্মের ভুল চিন্তা-বিশ্বাস প্রমাণ করব। এই উদ্দেশ্যে আমার বন্ধুদের বললাম, তারা যেন আমার জন্য পবিত্র কুরআনের একটি কপিসহ কিছু ইসলামী বই-পুস্তক নিয়ে আসেন, যাতে এটা দেখানো যায় যে, ইসলাম ধর্ম একটি মিথ্যা ধর্ম এবং তাদের নবীও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ নয়। এভাবে মার্কিন সাংবাদিক মিসেস এসলিমি বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া পবিত্র কুরআন পড়া শুরু করেন। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে পাওয়া দুটি ইসলামী বইও পড়েন তিনি। এ সময় তিনি ইসলামী বই-পুস্তক পড়ায় এত গভীরভাবে নিমজ্জিত হন যে, দেড় বছরের মধ্যে তিনি পনেরটি ইসলামী বই পড়েন এবং পবিত্র কুরআন দুইবার পড়া শেষ করেন। চিন্তাশীল হয়ে উঠা মিসেস এসলিমি বদলে যেতে থাকেন। মদ্যপান ও শূকরের মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন তিনি। সব-সময়ই পড়াশুনায় মশগুল থাকতেন এবং নারীপুরুষের অবাধ-মেলামেশার সুযোগ থাকত এমন সব পার্টি বা উৎসব অনুষ্ঠান বর্জনের চেষ্টা করতেন। সে সময়কার অবস্থা সম্পর্কে মিসেস এসলিমি বলেছেন- কখনও ভাবিনি যে, ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে গেলে বিশেষ ঘটনা ঘটবে এমনকি আমার প্রাত্যহিক জীবন-ধারাও বদলে যাবে। সে সময়ও এটা কল্পনাও করতে পারিনি যে, খুব শিগগিরই আমি আমার হৃদয়ের প্রশান্তির পাখাগুলো ও ঘুমিয়ে থাকা ঈমান নিয়ে ইসলামী বিশ্বের সৌভাগ্যের আকাশে উডডয়ন করব ।
এর পরের ঘটনা বলতে গিয়ে মিসেস এসলিমি বলেছেন, আমার আচরণে কিছু পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও নিজেকে তখনও মনে করতাম। একদিন একদল মুসলমানের সঙ্গে সংলাপের সময় আমি যতই তাদের প্রশ্ন করছিলাম, তারা অত্যন্ত দৃঢ়তা ও দক্ষতার সঙ্গে সে সবের জবাব দিচ্ছিলেন। পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আমার অদ্ভুত সব মন্তব্য ও বক্তব্যের জন্য তারা আমাকে একটুও পরিহাস করেন নি। এমনকি ইসলাম সম্পর্কে আমার তীব্র আক্রমনাত্মক বক্তব্য শুনেও তারা মোটেও দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হননি। তারা বলতেন, জ্ঞান মুসলমানের হারানো সম্পদ। আর প্রশ্ন হ’ল জ্ঞান অর্জ
র একটি পথ। তারা যখন চলে গেলেন মনে হ’ল আমার ভিতরে যেন কিছু একটা ঘটে গেছে। এরপর থেকে মুসলমানদের সঙ্গে মিসেস এসলিমির যোগাযোগ বাড়তে থাকে। আমি যখনই নতুন কিছু প্রশ্ন করতাম তখনই তারা আমার কাছে আরও কিছু নতুন প্রসঙ্গ তুলে ধরতেন। এ অবস্থায় একদিন একজন মুসলিম আলেমের সামনে
সাক্ষ্য দিলাম- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল। মুসলমান হওয়ার পর হিজাব বা পর্দা বেছে নেন মিসেস এসলিমি। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ও সন্তানের মালিকানারাও প্রশ্ন চলে আসে। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বিচারক তাকে তার দুই সন্তান ও ইসলামের মধ্যে একটি বেছে নিতে বললে মহাদ্বিধা-দ্বন্দের পড়েন মিসেস এসলিমি। একজন মমতাময়ী মায়ের জন্য সন্তানের দাবী ত্যাগ করা তো দূরের কথা, তাদের কাছ থেকে একদিনের জন্যও দূরে থাকাও বিশেষ কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামের প্রতি ও মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মার্কিন নও-মুসলিম মিসেস এসলিমি। দুই বছর ধরে ইসলাম সম্পর্কে তার গবেষণা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতাই তাকে শক্তি যুগিয়েছে। তার মনে পড়ে কুরআনে উল্লিখিত হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম ) এর সন্তান কুরবানী দেয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালনের ঘটনা। মনে পড়ে কুরআনের এই আয়াত- যে ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারে, যে । আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করেছে? বস্তুতঃ তার ঠিকানা হল দোযখ আর তা কতইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল। মার্কিন নওমুসলিম মিসেস এসলিমি মুসলমান হওয়ার পর আমেরিকায় ইসলাম প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। কয়েক বছরের প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের জন্য আরবী ভাষায় ঈদের শুভেচ্ছার সরকারী স্ট্যাম্প প্রকাশ করতে মার্কিন সরকারকে সম্মত করেন।
মিসেস আমিনা এসলিমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ও শহরে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার অনুভূতি তুলে ধরে বক্তব্য বা ভাষণ দিয়েছেন। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এইসব ভাষণ শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এইসব প্রচেষ্টার অন্যতম সুফল হিসেবে একদিন তার দাদী ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর তার বাবা, মা, বোনও মুসলমান হন। এর কিছুকাল পর তার সাবেক স্বামীও জানান যে, তিনি তার তাদের মেয়েরা মায়ের ধর্মই অনুসরণ করুক। তিনি মেয়েদেরকে কেড়ে নেয়ার জন্য তার কাছে ক্ষমাও চান। আর এসলিমিও তাকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অপরাধে একদিন যারা তাকে ত্যাগ করেছিল, তারা সবাই তাদের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় এবং সত্যকে স্বীকার করে নেয়। প্রাণপ্রিয় সন্তানদের ফিরে পাওয়াকে এসলিমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য আরও একটি বড় বিজয় বলে মনে করেন। এভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে ঈমানের মহা সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। তিনি জানেন কারা সত্যের ও আল্লাহর প্রেমিক।
– সাদিয়া আহমদ আনিকা
ভূমিকা
সর্বপ্রথম আমি আল্লাহর প্রশংসা আদায় করছি, যিনি আমাকে সঠিক পথ দিয়েছেন, সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পেশ করছি, যার অনুসরনের মধ্যেই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। আল্লাহ তা‘আলার খাস রহমাত যে তিনি তাঁর এ বান্দাকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা করার তৌফিক দিয়েছেন তার জন্য বলি আলহামদুলিল্লাহ্। দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের তাওফীক হওয়া যেমনি সৌভাগ্যের ব্যাপার তেমনি তা দায়িত্বও বটে। আমার জাতি যারা বাংলা ভাষাভাষি তারাই আমার গুরুত্বের বেশী হকদার। তাদের হিদায়াতের জন্য কিছু করা উচিত। পৃথিবীর এক বৃহত্তম জনগোষ্ঠী এ ভাষায় কথা বলে। তাদের সংখ্যা একশত নব্বই মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। তাদের মধ্যে রয়েছে সঠিক আক্কীদা চর্চার অভাব। তাই এ বইটি তাদের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। যা আয়তনে ছোট হলেও আক্কীদার মৌলিক বিষয়সমুহে সমৃদ্ধ।
হিজরী ১৪১৪ সালেই প্রথম এর অনুবাদ করি, এবং নিজস্ব প্রচেষ্টায় আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজানের লাইব্রেরী থেকে ছাপানো এবং বিনামুল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করি।
ইতিমধ্যে এর সমস্ত কপি নিঃশেষ হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মত ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, এবং উদ্যোগ গ্রহণ করি। পূর্বের সংস্করণের চেয়ে বর্ধিতভাবে বর্তমান সংস্করণে এর মধ্যকার আয়াত সমুহকে সুরার দিকে নির্দেশ করি, আর হাদীসসমুহকে যে সমস্ত মুল গ্রন্থ থেকে তা নেওয়া হয়েছে তার দিকে নির্দিষ্ট করি। আর কিছু বানানগত ভুল - ত্রুটি শুদ্ধ করি। আল্লাহ তা‘আলা আমার এ প্রচেষ্টা কবুল করুন, এবং হাশরের মাঠে আমার জন্য নাজাতের ওসীলা বানান। আমীন ॥
-আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
তিনটি মূলনীতি
যা জানা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর একান্ত কর্তব্য
মুলনীতিগুলো হলো :
১। রব বা পালন কর্তা সম্পর্কে জানা।
২। দ্বীন সম্পর্কে জানা।
৩। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা।
রব কে জানার পদ্ধতি :
যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার রব বা পালনকর্তা কে?
তখন উত্তরে বলবে আমার রব হলেন আল্লাহ, যিনি আমাকে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে তার অনুগ্রহে লালন করছেন, তিনিই আমার একমাত্র উপাস্য,তিনি ব্যতিত আমার অপর কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই।
দ্বীন জানার পদ্ধতি:
যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার দ্বীন কি?
উত্তরে বল : আমার দ্বীন হলো ইসলাম, যার মানে - আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে সম্পূর্নভাবে তাঁর কাছে আত্নসমর্পণ করা, তাঁর নির্দেশ অনুসরণের মাধ্যমে স্বীকার করা, এবং আল্লাহর ইবাদতে অন্য কিছুর অংশীদারীত্ব করা থেকে মুক্ত থাকা এবং যারা তা করে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানার পদ্ধতি:
যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয় তোমার নবী কে?
উত্তরে বল, তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, যার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং দাদার নাম আবদুল মোত্তালি, প্রপিতামহের নাম হাশিম। আর হাশিম কোরাইশ গোত্রের, কোরাইশগন আরব, যারা ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম এর পুত্র ইসমাঈলের বংশধর।
দ্বীন এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি
দ্বীন এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি দুটি বিষয়ের উপর :
এক : আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের নির্দেশ দেয়া, এ ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করা, যারা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, এবং যারা তা ত্যাগ করে তাদেরকে কাফির মনে করা।
দুই : আল্লাহর ইবাদাতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে সাবধান করা, এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা, এবং যারা তাঁর সাথে শির্ক করে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা এবং যারা শির্ক করবে তাদেরকে কাফির মনে করা।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কালেমা তাইয়্যেবা) মেনে চলার শর্তাবলী
এক : কালেমা তাইয়্যেবার অর্থ জানা।
অর্থাৎ এ কালেমার দুটো অংশ রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে জানা।
সে দুটো অংশ হলো:
1. কোন হক্ক মা’বুদ নেই
2. আল্লাহ ছাড়া (অর্থাৎ তিনিই শুধু মা’বুদ)
দুই : কালেমা তাইয়্যেবার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
অর্থাৎ সর্ব প্রকার সন্দেহ ও সংশয়মুক্ত পরিপূর্ণ বিশ্বাস থাকা ।
তিন : কালেমার উপর এমন একাগ্রতা ও নিষ্ঠা রাখা, যা সর্বপ্রকার শিরকের পরিপন্থী।
চার : কালেমাকে মনে প্রাণে সত্য বলে জানা, যাতে কোন প্রকার মিথ্যা বা কপটতা না থাকে।
পাঁচ : এ কালেমার প্রতি ভালবাসা পোষণ এবং কালেমার অর্থকে মনে প্রাণে মেনে নেয়া ও তাতে খুশী হওয়া।
ছয় : এই কালেমার অর্পিত দায়িত্ব সমূহ মেনে নেয়া অর্থাৎ এই কালেমা কর্তৃক আরোপিত ওয়াজিব কাজসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই সন্তুষ্টির নিমিত্তে সমাধান করা।
সাত : মনে-প্রাণে এই কালেমাকে গ্রহণ করা যাতে কখনো বিরোধিতা করা না হয়।
কালেমা তাইয়্যেবার যে সমস্ত শর্ত বর্ণিত হলো, তার সমর্থনে কোরআন ও হাদীস থেকে দলিল প্রমাণাদি:
প্রথম শর্ত: কালেমার অর্থ জানা। এর দলিল : আল্লাহর বাণী:
﴿فَاعْلَمْ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ﴾
‘জেনে রাখুন নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মা‘বুদ নেই।” [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯] আল্লাহ আরো বলেন:
﴿وَلا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾
“তবে যারা হক্ক (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) এর সাক্ষ্য দিবে এমনভাবে যে, তারা তা জেনে শুনেই দিচ্ছে অর্থাৎ তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।” [সূরা আয যুখরুফ: ৮৬]
এখানে জেনে শুনে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ হলো তারা মুখে যা উচ্চারণ করছে তাদের অন্তর তা সম্যকভাবে জানে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা যায় যে সে জানে আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক উপাস্য নেই সে জান্নাতে যাবে।” [মুসলিম(১/৫৫) হাদীস নং (২৬)]
দ্বিতীয় শর্ত : কালেমার উপর বিশ্বাসী হওয়া। এর প্রমাণাদি:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “নিশ্চয়ই মুমীন ওরাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে , অত:পর এতে কোন সন্দেহ-সংশয়ে পড়েনি এবং তাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী।” [সুরা আল হুজরাতঃ (১৫)]
এ আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান যথাযথভাবে হওয়ার জন্য সন্দেহ সংশয়মুক্ত হওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে, অর্থাৎ তারা সন্দেহ করেনি, কিন্তু যে সন্দেহ করবে সে মুনাফিক, ভন্ড (কপট বিশ্বাসী)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক মা’বুদ বা উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল। যে বান্দা এ দুটো বিষয়ে সন্দেহ - সংশয় মুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসলিম (১/৫৬), হাদীস নং (২৭০)]
আর এক বর্ণনায় এসেছে : “কোন ব্যক্তি এ দু'টো নিয়ে সন্দেহহীন অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হবে জান্নাতে যাওয়ার পথে তার কোন বাধা থাকবেনা।” [মুসলিম (১/৫৬), হাদীস নং (২৭০)]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে অপর এক হাদীসের বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছিলেনঃ “তুমি এ বাগানের পিছনে এমন যাকেই পাও, যে মনের পরিপূর্ণ বিশ্বাস এর সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক মা’বুদ নেই তাকেই জান্নাতের শুসংবাদ প্রদান করবে।” [মুসলিম (১/৫৯)]
তৃতীয় শর্ত : এ কালেমাকে ইখলাস বা নিষ্ঠা সহকারে স্বীকার করা।
এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:“তবে জেনে রাখ দ্বীন খালেছ সহকারে বা নিষ্ঠা সহকারে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই।” [সূরা আয্যুমারঃ ৩]
আল্লাহ আরো বলেন: “তাদেরকে এ নির্দেশই শুধূ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে আল্লাহর জন্যই খালেস করে সম্পূর্ণরুপে একনিষ্ঠ ও একমুখী হয়ে তারই ইবাদাত করবে।” [সূরা আল বাইয়েনাহঃ ৫]
হাদীস শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তিই বেশী সৌভাগ্যবান হবে যে অন্তর থেকে একনিষ্ঠভাবে বলেছে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার উপাস্য নেই।” [বুখারী , হাদীস নং ৯৯]
অপর এক সহীহ হাদীসে সাহাবী উৎবান বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ( لا إله إلا الله) বা আল্লাহ ছাড়া হক্ক কোন মা’বুদ নেই বলেছে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।” [মুসলিম ১/৪৫৬, হাদীস নং- ২৬৩, বুখারী, হাদীস নং ৪২৫]
ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত “দিন রাত্রির জিক্র” নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি মনের নিষ্ঠা সহকারে এবং মুখে সত্য জেনে নিম্নোক্ত কলেমা সমুহ বলবে আল্লাহ সেগুলির জন্য আকাশকে বিদীর্ণ করবেন যাতে তার দ্বারা জমীনের মাঝে কে এই কালেমাগুলি বলেছে তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আর যার দিকে আল্লাহর নজর পড়বে তার প্রার্থিত ও কাংখিত বস্তু তাকে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। সে কালেমাগুলি হলো:
)لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير(
অর্থাৎ : “শুধুমাত্র আল্লাহ ছাড়া হক্ক কোন মা’বুদ নেই, তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই, তার জন্যই সমস্ত রাজত্ব বা একচ্ছত্র মালিকানা, তার জন্যই সমস্ত প্রশংসা আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান”। [নাসায়ী , আমালুল ইয়াওমে ওয়াল্লাইলা, হাদীস নং- ২৮]
চতুর্থ শর্ত : কলেমাকে মনে প্রাণে সত্য বলে জানা। এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আলিফ-লাম-মীম, মানুষ কি ধারণা করেছে যে, ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে আর তাদের পরীক্ষা করা হবেনা? আমি তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি যাতে আল্লাহর সাথে যারা সত্য বলেছে তাদেরকে স্পষ্ট করে দেন এবং যারা মিথ্যা বলেছে তাদেরকেও স্পষ্ট করে দেন।” [সূরা আলআনকাবুতঃ ১-৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন : “মানুষের মাঝে কেউ কেউ বলে আমরা আল্লাহ এবং পরকালের উপর ঈমান এনেছি, অথচ তারা ঈমানদার নয়, তারা (তাদের ধারণামতে) আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করছে, অথচ (তারা জানেনা) তারা কেবল তাদের আত্মাকেই প্রতারিত করছে কিন্তু তারা তা বুঝতেই পারছেনা। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি, ফলে আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর মিথ্যা বলার কারণে তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।” [সূরা আল বাকারাঃ ৮-১০]
তেমনিভাবে হাদীস শরীফে মুআ’য বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে কোন লোক মন থেকে সত্য জেনে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত হক্ক কোন মা’বুদ নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।” [বুখারী , হাদীস নং- ১২৮, মুসলিমঃ ১/৬১]
পঞ্চম শর্ত : এ কালেমাকে মনে প্রাণে ভালবাসা।
এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “কোন কোন লোক আল্লাহ ছাড়া তার অনেক সমকক্ষ ও অংশীদার গ্রহণ করে তাদেরকে আল্লাহর মত ভালবাসে, আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে অত্যন্ত বেশী ভালবাসে” । [সূরা আল বাকারাঃ ১৬৫]
আল্লাহ আরো বলেন : “হে ঈমানদারগণ তোমাদের থেকে যদি কেহ তার দ্বীনকে পরিত্যাগ করে তবে আল্লাহ এমন এক গোষ্ঠীকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করে আনবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসেন, যারা মুমীনদের প্রতি নরম- দয়াপরবশ, কাফেরদের উপর কঠোরতা অবলম্বনকারী; তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করেনা।” [সূরা আল মায়েদাঃ ৫৪]
তেমনিভাবে হাদীস শরীফে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যার মধ্যে তিনটি বস্তুর সমাহার ঘটেছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে: (এক) তার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্বত বা ভালবাসা অন্য সবকিছু থেকে বেশী হবে। (দুই) কোন লোককে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসবে। (তিন) কুফরী থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দেয়ার পর সে কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করবে।” [বুখারী, হাদীস নং- ৪৩, মুসলিমঃ ১/৬৬]
ষষ্ট শর্ত: কালেমার হকসমুহ মনে প্রাণে মেনে নেয়া
এর দলীল: আল্লাহর বাণী: “আর তোমরা তোমাদের প্রভুর দিকে ফিরে যাও, এবং তাঁর কাছে আত্নসমর্পণ করো।” [সূরা আয্যুমারঃ ৫৪]
আল্লাহ আরো বলেন: “আর তারচেয়ে কার দ্বীন বেশী সুন্দর যে আল্লাহর জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছে, এমতাবস্থায় যে, সে মুহসীন”, [সূরা আন্নিসাঃ ১২৫] মুহসীন অর্থ : নেককার, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছে।
আরও বলেন: “আর যে নিজেকে শুধুমাত্র আল্লাহর দিকেই নিবদ্ধ করে আত্নসমর্পন করেছে আর সে মুহসীন”, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছে “সে মজবুত রশিকে আঁকড়ে ধরেছে” [ সূরা লুকমানঃ ২২] অর্থাৎ : لا إله إلا الله বা আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মাবুদ নেই এ কালেমাকেই সে গ্রহণ করেছে।
আরও বলেন: “তারা যা বলছে তা নয়, তোমার প্রভূর শপথ করে বলছি, তারা কক্ষনো ঈমানদার হবেনা যতক্ষণ আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার নিষ্পত্তিকারক (বিচারক) হিসাবে না মানবে, অত:পর আপনার বিচার- ফয়সালা গ্রহণ করে নিতে তাদের অন্তরে কোন প্রকার অভিযোগ থাকবেনা এবং তারা তা সম্পূর্ন কায়মনোবাক্যে নির্দ্বিধায় মেনে নিবে।” [সূরা আন্নিসাঃ ৬৫]
অনুরুপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মাঝে কেউই ঐ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন তার প্রবৃত্তি আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসারী হবে।” [হাদীস খানি খতিব বাগদাদী তার তারিখে বাগদাদের ৪/৩৬৯, এবং বাগাভী তার সারহুছছুন্নার ১০৪ নং এ বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ শুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে।] আর এটাই পূর্ণ আনুগত্য ও তার শেষ সীমা।
সপ্তম শর্ত: কালেমাকে গ্রহণ করা।
এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর এমনিভাবে যখনই আপনার পূর্বে আমি কোন জনপদে ভয় প্রদর্শনকারী (রাসূল বা নবী) প্রেরণ করেছি তখনি তাদের মধ্যকার আয়েসী বিত্তশালী লোকেরা বলেছে : আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে একটি ব্যবস্থায় পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করবো। (ভয় প্রদর্শনকারী) বলল: আমি যদি তোমাদের কাছে বাপ-দাদাদেরকে যার উপর পেয়েছ তার থেকে অধিক সঠিক বা বেশী হেদায়েত নিয়ে এসে থাকি তারপরও? (তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার অনুকরণ করবে?) তারা বলল: তোমরা যা নিয়ে এসেছ আমরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছি, ফলে আমি (আল্লাহ) তাদের থেকে (এ কুফরীর) প্রতিশোধ নেই, সুতরাং আপনি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণামফল কেমন হয়েছে দেখে নিন।” [সূরা আযযুখরুফঃ ২৩-২৫] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “নিশ্চয়ই তারা অযথা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতো যখন তাদেরকে বলা হত যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মা’বুদ নেই, এবং বলতো: আমরা কি পাগল কবির কথা শুনে আমাদের উপাস্য দেবতাগুলিকে ত্যাগ করবো?” [সূরা আস্সাফ্ফাতঃ ৩৫-৩৭]
অনুরুপভাবে হাদীসে শরীফে আবু মুসা আশআ’রী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান বিজ্ঞান ও হেদায়েত দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হচ্ছে এমন মুষলধারার বৃষ্টির মতো যা ভূমিতে এসে পড়েছে, ফলে এর কিছু অংশ এমন উর্বর পরিষ্কার ভূমিতে পড়েছে যে ভূমি পানি চুষে নিতে সক্ষম, ফলে তা পানি গ্রহণ করেছে, এবং তা দ্বারা ফসল ও তৃণলতার উৎপত্তি হয়েছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে গর্তওয়ালা ভূমিতে (যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম) সুতরাং তা পানি সংরক্ষন করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে আল্লাহ এর দ্বারা মানুষের উপকার করেছেন তারা তা পান করেছে, ভূমি সিক্ত করিয়েছে এবং ফসলাদি উৎপন্ন করতে পেরেছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে এমন অনুর্বর সমতল ভূমিতে যাতে পানি আটকে থাকেনা, ফলে তাতে পানি আটকা পড়েনি, ফসলও হয়নি। ঠিক এটাই হলো ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আল্লাহর দ্বীনকে বুঝতে পেরেছে এবং আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হতে পেরেছে, ফলে সে নিজে জেনেছে এবং অপরকে জানিয়েছে। (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর ভূমি)। এবং ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এই হিদায়েত এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়নি, ফলে আল্লাহ যে হিদায়েত নিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তা গ্রহণ করেনি। (তৃতীয় শ্রেনীর ভূমি) ।” [সহীহ বুখারী, ১/১৭৫ হাদীস নং ৭৯, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২২৮২]