LIVE
Loading latest headlines...

রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২০

অন্যের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা

রবিবার, জানুয়ারী ১২, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সুন্দর নামসমূহের মধ্যে দুটো নাম হল- আর রহমান ও আর রহীম। এর অর্থ হল, পরম দয়াময় ও অতি দয়ালু।

‘আর রাহমান’ বা পরম দয়াময় বলতে ব্যাপক দয়া ও করুণাকে বুঝানো হয়। যে দয়া-করুণায় ইহজগতে কাফির, মুশরিক ও মুমিন সকলেই এবং পরজগতে কেবল মুমিনরা অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে ‘আর রহীম’ বলতে এমন দয়া ও করুণাকে বুঝায়, যা শুধু পরকালে মুমিনদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। অধিকাংশ আলেম-উলামার মত এটাই।

আমরা আল্লাহ তাআলার রহমত দ্বারা পরিবেষ্টিত। আল্লাহর অগণিত রহমত ও করুণা আমাদের গোটা অস্তিত্বকে ছেয়ে আছে। আর আল্লাহর এ রহমতকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই। সাথে সাথে আল্লাহর রহমত রুদ্ধ হয়ে গেলে তা বিমুক্ত করারও কেউ নেই। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সকল রহমত ও করুণার অধিপতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
مَا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা আটকে রাখার কেউ নেই। আর তিনি যা আটকে রাখেন, তারপর তা ছাড়াবার কেউ নেই। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আল ফাতির : ২)।

ইমাম শানকীতি রহ. বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ আয়াতে রহমত বলতে তার ব্যাপক ও বিশাল রহমত বুঝিয়েছেন, যা দুনিয়া ও আখিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করে আর দুনিয়ার সকল সৃষ্টিকে শামিল করে’। আর এ অবারিত রহমতের একটি নিদর্শন হল বৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা বলেন :
فَانْظُرْ إِلَى آَثَارِ رَحْمَةِ اللَّهِ كَيْفَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِها
‘অতএব তুমি আল্লাহর রহমতের চি‎হ্নসমূহের প্রতি দৃষ্টি দাও। কিভাবে তিনি যমীনের মৃত্যুর পর তা জীবিত করেন’। (সূরা আর রূম: ৫০)

এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা আল কুরআনের অসংখ্য স্থানে বৃষ্টিকে তাঁর রহমত বলে উল্লেখ করেছেন, যা মানুষ, পশু-পাখী, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সকলেরই সমানভাবে উপকার করে।

আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমতের ব্যাপকতা সম্পর্কে বলেন:
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ
‘আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে’ (সূরা আল আরাফ: ১৫৬)।

অতএব দুনিয়ার কোনো কিছুই আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে বঞ্চিত নয়। সব কিছু তাঁর রমহত-দয়া-করুণা-অনুগ্রহের সমুদ্রে ডুবে আছে।

কিন্তু আখিরাত বা পরকালে এমন হবে না। সেখানে শুধু আল্লাহভীরু-মুত্তাকীগণ রহমত লাভে সক্ষম হবে। এ কথাটাই তিনি উক্ত আয়াতে এভাবে বলেছেন:
فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ
‘সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে’।

উপস্থিত ঈমানদার ভাইয়েরা! আমরা পরম দয়াময় অতি দয়ালু আল্লাহর বান্দা। তিনি চান আমরা যেন একে অপরের প্রতি রহম করি। সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া-মায়া-করুণা-অনুকম্পা প্রদর্শন করি।

ইমাম আহমাদ ও তাবারানী রহ. বর্ণিত বিশুদ্ধ সনদে ও নির্ভরযোগ্য সুত্রে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা মিম্বরে দাঁড়ানো অবস্থায় বলেন :
اِرْحَمُوْا تُرْحَمُوْا وَاغْفِرُوا يُغْفَرُ لَكُمْ
‘তোমরা দয়া করো, দয়া পাবে। ক্ষমা করো, ক্ষমা পাবে’ (আহমদ)।

সকল মানুষের প্রতি, সকল প্রাণীর প্রতি দয়া মায়া ও রহম করার জন্য ইসলামের নবী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সৃষ্টির প্রতি রহম বা দয়া করলে স্রষ্টার দয়া-করুণা-রহম লাভ করা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
الرَّاحِمُوْنَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ تَبَارَكَ وَتَعَالَىْ : اِرْحَمُوْا مَنْ فِيْ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِيْ السَّمَاءِ
রহমকারীদের প্রতি মহান দয়াময় আল্লাহ রহম ও দয়া করেন। দুনিয়াতে যারা আছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো,তাহলে আসমানে যিনি আছেন,তিনি তোমাদের রহম করবেন’ (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী ও হাকেম)।

জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত,সহীহ মুসলিমে এসেছে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ لَا يَرْحَمِ النَّاسَ لَا يَرْحَمْهُ اللهُ عَزَّ وَجلَّ
‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি রহম করে না আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রহম করেন না’ (মুসলিম)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম আকৃতিতে। তিনি তাকে অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে :
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম গঠনে’ (সূরা আত তীন:৪)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا

‘আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিযক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের ওপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি’ (সূরা আল ইসরা:৭০)।

মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে আর যা কিছু আছে সবই মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا
‘তিনিই পৃথিবীতে যা আছে সব তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।(সূরা আল বাকারা: ২৯)

কাজেই গোটা পৃথিবীটাই তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য রহমত-দয়া-করুণা ও অনুগ্রহ হিসেবে।

এমনকি দিন রাতের আবর্তনও মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি রহমত। তিনি বলেন :
وَمِنْ رَحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘আর তাঁর রহমতে তিনি তোমাদের জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা বিশ্রাম নিতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তোমরা শোকর আদায় করতে পার’ (সূরা আল কাসাস: ৭৩)।

এভাবে তিনি মানুষের প্রতি রহম করেছেন আর তার রাসূলকে তিনি মানুষের প্রতি দয়া করতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে বলেন :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ
‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)।

শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথাই নয়। আল্লাহ তাআলা রাসূলের সাহাবীদেরও প্রশংসা করেছেন পরস্পরে রহম বা দয়া চর্চাকারী বলে। ইরশাদ হয়েছে :
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর কিন্তু পরস্পরের প্রতি সদয়’ (সূরা আল ফাতহ : ২৯)।

সম্মানিত ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসূলের মাধ্যমে আমাদের জন্য যে ইসলাম পাঠিয়েছেন তার পুরোটাই হলো বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও অনুগ্রহ। তিনি বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
‘আর আমি তো তোমাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি’ (সূরা আল আম্বিয়া: ১০৭)।

প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শুধু মুসলমানদের জন্য রহমতস্বরূপ ছিলেন তা নয় রবং তিনি বিশ্ববাসীর সকলের জন্যই রহমত। সকলের জন্য সুসংবাদ বহন করে এনেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
‘আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না’ (সূরা সাবা: ২৮)।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বলেছেন,তাকে সমগ্র মানুষের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। সহীহ বুখারীতে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে :
وَكَانَ النَّبِىُّ يُبْعَثُ إِلَىَ قَوْمِهِ خَاصَّةً، وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً
‘অন্যান্য নবীদের একটি নির্দিষ্ট জাতির কাছে প্রেরণ করা হত কিন্তু আমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য পাঠানো হয়েছে’ (বুখারী)।

সহীহ মুসলিমে আবূ মূসা আল আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِيْ رَجُلٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُوْدِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ لَا يُؤْمِنُ بِيْ إِلَّا دَخَلَ النَّارَ
‘যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম, এ মানব জাতির যে কেউ ইহূদী হোক বা খ্রিস্টান, আমার আগমনের কথা শুনবে কিন্তু আমার প্রতি ঈমান আনবে না সে অবশ্যই জাহান্নামে যাবে’ (মুসলিম)।

আল্লাহ তাআলা তার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করার মাধ্যমে আমাদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন। তিনি দীনকে অনুসরণ করা আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন, কঠিন করেননি। এটাও আমাদের প্রতি তার একটি বিশাল রহমত। তিনি বলেছেন :
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
‘দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি’ (সূরা আল হজ : ৭৮)।

এভাবেই তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি রহম, করম, দয়া, মায়া, অনুগ্রহ করেছেন। তাই আমাদেরও উচিত এই রহমতের গুণে নিজদেরকে গুণান্বিত করে তোলা। সহীহ বুখারীতে আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
يَسِّرُوْا وَلَا تُعَسِّرُوْا، وَبَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوا
‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। তোমরা সুসংবাদ দাও, ঘৃণা সৃষ্টি করো না’ (বুখারী)।

এক গ্রাম্য বেদুইন যখন মসজিদে পেশাব করেছিল, তখন তাকে ক্ষমা করে দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :
إِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِيْنَ
‘সহজ ও দয়া-অনুগ্রহ করার জন্যই তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে’।

সুপ্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলার রহমত, দয়া-অনুগ্রহ হল ব্যাপক ও বিস্তৃত। সকল মানুষই তাঁর দয়া- অনুগ্রহ ভোগ করে। ঈমানদারগণ দুনিয়ায়ও তার রহমত প্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং আখেরাতেও প্রাপ্ত হবে আর কাফিররা শুধু দুনিয়াতে তার রহমত ও অনুগ্রহের ভাগী হয়। আখেরাতে তারা কোনো রহমত প্রাপ্ত হবে না। এ কথাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ

‘আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে’ (সূরা আল আরাফ: ১৫৬)। এ আয়াতে, ‘লিখে দেব’ বলতে আখিরাত বা পরকালকে বুঝানো হয়েছে।

সম্মানিত উপস্থিতি! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেমন তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়াময়, পরম দয়ালু, তেমনি তাঁর রাসূলকে মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র করে পাঠিয়েছেন। নিজদের তিনি বলেন :
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়, তা তার জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা আত-তাওবা: ১২৮)

তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার এ বাণীর বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাই বহুভাবে তাঁর সীরাত বা জীবন চরিতে। তিনি যখন তায়েফবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দানের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন, তখন তায়েফের লোকেরা তাঁকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করেছিল। অতঃপর পাহাড়ের দায়িত্বশীল ফেরেশ্তারা এসে তাদের শাস্তি দিতে অনুমতি চাইলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের প্রতি দয়া পরবশ হলেন। তিনি তাদেরকে শাস্তি দিতে অনুমতি দিলেন না। এমনিভাবে তিনি বহু শত্রুর প্রতি দয়া করে তাদের শাস্তি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। মানব ইতিহাসে এমন অন্য কাউকে দেখা যাবে না যিনি শত্রুর প্রতি এমন দয়া ও রহমতের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনেই নয়, তাঁর সাহাবীদের জীবন-চরিতও ছিল রহম ও দয়া-মায়ায় ভরপুর।

হযরম উমর ও এক বৃদ্ধার ঘটনা:
উমর রাযি. মদীনার এক অন্ধ বৃদ্ধার ঘরে যেতেন। তার সেবা করতেন। তার পায়খানা-পেশাব পরিস্কার করতেন। একদিন তিনি দেখেন, আগে এসে এ কাজটি কে যেন সম্পন্ন করে গেছে। খবর নিয়ে দেখেন, আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. এসেছিলেন। তিনি তার আগে এসে বৃদ্ধার ঘর-বিছানা পরিস্কার করে গেছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে তাঁর প্রিয় নবীর অনুকরণে মানুষের প্রতি রহম, দয়া, মায়া-মমতা ও করুণা করার তাওফীক দান করুন।
সহীহ মুসলিমে এসেছে আবূ হুরাইরা রাযি. থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ، مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
‘ভালোবাসা, দয়া, সহানুভূতির দিক দিয়ে মুমিনদের দৃষ্টান্ত হল একটি দেহের ন্যায়। দেহের একাংশ আক্রান্ত হলে সমগ্র দেহ জ্বরগ্রস্থ ও নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে’ (মুসলিম)।

এমনিভাবে একজন মুসলিম যখন বিশ্বের যে কোনো স্থানে আক্রান্ত হয়, বিপদে পড়ে, তখন অন্য সকল মুসলিমের কর্তব্য হল, তার প্রতি রহম ও ইহসান করা। তার ব্যথায় ব্যথিত হওয়া। তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আজ আমাদের মধ্যে এ গুণটি একেবারে অনুপস্থিত। বরং এর উল্টো বিষয় আমরা লালন করে থাকি। বিশ্বের কোনো স্থানে কাফির-মুশরিক কর্তৃক মুসলিমরা জুলুমের শিকার হলে আমরা জালেমের পক্ষ অবলম্বন করি।

আল্লাহ আমাদের হিদায়েত দান করুন। সকল মুসলমানকে তাদের মধ্যে পারস্পারিক রহম, মায়া-মমতা, করুণা ও ইহসান করার তাওফীক দান করুন।

সম্মানিত উপস্থিতি! ইসলাম শুধু মানুষের প্রতি দয়া ও ইহসানের আদেশ করে ক্ষান্ত হয়নি মানুষ ছাড়া অন্যান্য পশু-পাখির প্রতিও রহম ও দয়া প্রদর্শন করতে ইসালাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে।

সহীহ মুসলিমে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
إِنَّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوَا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيْحَتَهُ
‘প্রতিটি বস্তুর প্রতি দয়া-মায়া, ইহসান করা আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। তাই তোমরা যখন কোনো পশু হত্যা করবে তখন মায়া-মমতার সাথে সুন্দরভাবে হত্যা করবে। যখন জবেহ করবে তখন সুন্দরভাবে জবেহ করবে। অস্ত্র ধারাল করে নেবে আর জবেহ করা পশুটির যেন আরাম হয়, সে দিকে লক্ষ রাখবে’ (মুসলিম)।

এ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশু হত্যা বা জবেহ করার সময়ও তাদের প্রতি দয়া ও মমতা দেখাতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা যেন কষ্ট না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

সহীহ বুখারীতে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
دَخَلَتْ امْرَأَةٌ النَّارَ فِيْ هِرَّةٍ حَبَسَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ، فَلَا هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلَا هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ
‘একটি মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছে। সে তাকে আটকে রেখেছিল ফলে সে মারা যায়। সে তাকে খাবারও দেয়নি, আবার ছেড়েও দেয়নি যাতে সে জমিনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচতে পারে’ (বুখারী)।

এ মহিলা বিড়ালটির প্রতি দয়া-মায়া ও রহম করেনি। এ কারণে তাকে জাহান্নামে যেতে হয়েছে। সহীহ বুখারীতে আরো এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এক ব্যক্তি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে।

পশুদের প্রতি দয়া-মায়া প্রদর্শন এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশুদের মধ্যে লড়াই বাধানো নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে :
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ التَّحْرِيْشِ بَيْنَ الْبَهَائِمِ
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীব-জন্তুর মধ্যে লড়াই বাধাতে নিষেধ করেছেন’ (আবু দাউদ )।

 মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে রাসূল (সা.)-এর আদর্শ গ্রহণ করে জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন



প্রতিবেশীর অধিকার

রবিবার, জানুয়ারী ১২, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

মানুষ সামাজিক জীবন। সমাজ জীবনে প্রত্যেক মানুষই তার পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্প্রীতি ও সদ্ভাব বজায় রাখা ও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা আবশ্যক। প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের চেয়েও অধিক কাজে আসে। আত্মীয়-স্বজন সাধারণত কাছে থাকে না,প্রতিবেশীরাই বিপদাপদে,দুঃখ-দুর্দশায় প্রথমে এগিয়ে আসে। বিপদের সময় এ প্রতিবেশীরাই খোঁজ-খবর নেয় এবং সেবাযত্ন করে থাকে। সামাজিক সকল কাজে আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে প্রতিবেশীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
কুরআন কারিমে সব ধরনের প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন‘নিকট প্রতিবেশী,দূর প্রতিবেশী এবং সঙ্গী-সাথীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। (সুরা নিসা : আয়অত ৩৬)
তাই প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া একজন মুসলমানের ঈমানের পরিপন্থী কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে,সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।(মিশকাত)

প্রতিবেশীর অধিকার
প্রতিবেশীর অধিকারের প্রসঙ্গে এক সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন,এ প্রতিবেশীর ওপর অপর প্রতিবেশীর কি অধিকার রয়েছে?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নের উত্তরে বললেন-

১. যদি এক প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর নিকট ধার (কর্জ) চায়,তাহলে তাকে কর্জ দেয়া;
২. যদি একে অপরকে দাওয়াত করে,তবে তা গ্রহণ করা;
৩. প্রতিবেশীর কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা করা;
৪. যদি কখনো একে অপরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে,তবে সাহায্য করা;
৫. প্রতিবেশীর বিপদের সময় দুঃখে সমবেদনা প্রকাশ করা;
৬. প্রতিবেশীর আনন্দের সময় তাকে মোবারকবাদ জানানো;
৭. প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে জানাযায় অংশগ্রহণ করা;
৮. প্রতিবেশীর অনুপস্থিতিতে তার বাড়ি-ঘর পরিবার-পরিজনের হিফাজত করা। প্রতিবেশীর অনুমতি ব্যতিত উঁচু বাড়ি নির্মাণ না করা।
সুতারাং
এক প্রতিবেশী প্রতি অন্য প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ে পরস্পর আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকা মুমিনের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ে কুরআন-সুন্নাহর নীতি অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।



সুদ একটি বিপদজনক ব্যবস্থা

রবিবার, জানুয়ারী ১২, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ঃ
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
“যারা সুদ খায়, তারা তার মতই দাঁড়িয়ে যাবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।” সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৭৫
আল্লাহ তাআলা ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। অবশ্য কোন ব্যবসা বৈধ নয় তা তাঁর রাসূলের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়েছেন। কিন্তু আল-কুরআন শুধু সুদের কথাই উল্লেখ করেছে। অন্যান্য অবৈধ কোন ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করেনি। এর কারণ হল ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেনের ক্ষেত্রে সুদই হল নিকৃষ্টতম হারাম। যত হারাম উপার্জন আছে তার মধ্যে সুদ হল সবচেয়ে বেশি হারাম।
সুদ কি পদ্ধতিতে হতে পারে সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, সেটা ঋণ পদ্ধতিতে হতে পারে। নগদ বিনিময়ে হতে পারে। আবার লেনদেনে যে কোন অতিরিক্ত মূল্যও হতে পারে, যেমন অবিকৃত স্বর্ণের বিনিময়ে সম-পরিমাণ স্বর্ণের অলংকার গ্রহণ।
মূসা আ. এর শরীয়তেও সুদ ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু অবাধ্য ইহুদি জাতির লোকেরা এ সুদকে বৈধ করে নিয়েছে। এ সুদের মাধ্যমে তারা এখন বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
ইসলাম এসে সাথে সাথেই সুদকে হারাম করেনি। তার নিয়মমাফিক সে ধীরে ধীরে সকল বিধি-বিধান চালু করেছে। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হয়েছে নবুয়তের অষ্টম বছরে। এর পূর্বে শুধু রাতে নামায পড়ার বিধান ছিল। পরে তা রহিত করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিধান দেয়া হল। এমনিভাবে মদ হারাম ঘোষিত হয়েছে হিজরতের তৃতীয় বছরে, অর্থাৎ নবুওয়াত প্রাপ্তির ষোলো বছর পরে। সুদও সে রকমই হিজরতের পরে নিষিদ্ধ হয়েছে। ইসলামের শুরুতে নয়।
ঋণের আদান-প্রদানে সুদ ঃ
মানবসমাজে যে সকল সুদ প্রচলিত আছে তার মধ্যে ঋণের মাধ্যমে সুদের লেনদেন সর্ব শীর্ষে। এর পদ্ধতি হল ঋণ দাতা এ শর্ত করে যে, ঋণের বিনিময়ে সে লাভবান হবে। সেটা ঋণের টাকার উপর টাকা বৃদ্ধি করে হতে পারে বা অন্য যে কোন সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে হতে পারে। উদাহরণ, কোন ব্যক্তি অন্য একজনকে দশ হাজার টাকা ঋণ দিল। এর বিনিময়ে ঋণ দাতা ঋণ গ্রহীতার বাড়িতে বসবাস করবে এবং ঋণের টাকা পরিপূর্ণভাবে ফেরত নেবে। ঋণ প্রদানের বিনিময়ে এ ধরনের যে কোন সুবিধা গ্রহণ সুদের মধ্যেই গণ্য। এটা ‘রেবা আল-কারজ’ বলে পরিচিত। এটা হল সর্ব নিকৃষ্ট সুদ। মুসলিম উম্মার সকল ইমাম এটা হারাম হওয়ার বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
ঋণ গ্রহীতা যে ঋণ নিয়েছেন তার বেশি আদায় করা যেমন সুদ, তেমনি তার কম দেয়াও সুদ। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ
“তোমরা যদি (সুদ থেকে) তাওবা কর, তাহলে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই প্রাপ্য। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের উপর জুলুম করা হবে না।” সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৭৯
তোমরা বেশি নিয়ে ঋণ গ্রহীতার উপর জুলুম করবে না। এমনিভাবে ঋণ গ্রহীতা কম দিয়ে তোমাদের প্রতি জুলুম করবে না।
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হল, ঋণের চেয়ে বেশি প্রদান যেমন জুলুম বা সুদ তেমনি কম প্রদান করাও সুদ।
যারা কিস্তিতে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে আর তাতে এ শর্ত থাকে যে, যদি কিস্তির টাকা তারিখ মত দেয়া না হয়, তাহলে এত টাকা বেশি আদায় করতে হবে। এ বেশি আদায়ও সুদ বলে গণ্য। এতে কারো দ্বিমত নেই।
কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করায় সুদ হয় না। যেমন কেউ এক লক্ষ টাকায় একটি গাড়ি ক্রয় করল। পরে অন্য এক লোকের কাছে তা কিস্তিতে বিক্রি করল। শর্ত দিল যে গাড়িটির মূল্য এক লক্ষ টাকা, তবে কিস্তিতে নিলে প্রতি মাসে এত টাকা বেশি পরিশোধ করতে হবে। টাকার অংক ও সময় যদি নির্ধারণ করে দেয় তাহলে তাতে সুদ হয় না। এতে যদি এক লক্ষ টাকার গাড়িটিতে দু লক্ষ টাকা দাম আদায় হয় তাতেও কোন অসুবিধা নেই।
এমন অনেককে দেখতে পাওয়া যায়, যারা কাউকে ঋণ দেন। এর বিনিময়ে তার বাড়িতে থাকেন অথবা কম মূল্যে ভাড়া থাকেন, কিংবা ঋণ আদায় না করা পর্যন্ত তার গাড়িটি বিনা ভাড়ায় ব্যবহার করে থাকেন। এটা সর্বসম্মতভাবেই সুদ।
সঠিক ঋণ পদ্ধতি ঃ
যদি ঋণ দিয়ে কোন রকম উপকৃত হওয়ার বা ঋণ গ্রহীতা থেকে কোন ধরনের সুবিধা গ্রহণের শর্ত বা নিয়ত না থাকে তাহলে এটা পরিশুদ্ধ ঋণ। যদি ঋণ গ্রহীতা, ঋণ দাতা তাকে উপকার করেছে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ঋণ পরিশোধের সময় কিছু বেশি দেয়, তাতে কোন অসুবিধা নেই। এ অতিরিক্ত সম্পদ সুদ বলে গণ্য হবে না।
কারণ কর্জ প্রদান একটি ভাল কাজ। কেউ ভাল কাজ করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা তাকে পুরস্কার দেয়া না জায়েয হতে পারে না।
বীমা বা ইনসিওরেন্স ঃ
বর্তমানে বীমা পলিসি বা ইনসিওরেন্স ব্যাপকভাবে সমাজে চালু আছে। এর পদ্ধতি হল, আপনি বীমা কোম্পানিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত অংকের টাকা জমা দেবেন। শর্ত থাকবে যে, যদি আপনি কোন দুর্ঘটনার পতিত হন, কিংবা আপনার গাড়িটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বীমা কোম্পানিটি টাকা খরচ করে আপনার ক্ষতি পুষিয়ে দেবে। তবে কথা হল, ভবিষ্যতে সে সত্যিই কোন দুর্ঘটনায় পতিত হবে কি না? হলে তাতে কত খরচ হবে ইত্যাদি বিষয় অজ্ঞাত থেকে যায়।
একজন মানুষ যখন অন্য একজন মানুষকে বৈধ পন্থায় যে সম্পদ প্রদান করে তা হতে পারে ঃ পণ্য কেনা-বেচার বিনিময়ে, কিংবা দান করার মাধ্যমে, বা সদকা করে, অথবা উপহার হিসাবে।
কিন্তু বীমার জন্য মানুষ যা প্রদান করে তা এর কোনটির মধ্যেই পড়ে না। কাজেই এটা এমন একটি ঋণ যার বিনিময়ে সুবিধা পাওয়ার নিয়ত করা হয়ে থাকে। শুধু নিয়ত নয়, বরং লিখিতভাবে শর্ত করা হয়। অতএব এটা ‘ঋণ আদান-প্রদানে সুদ’ বলেই গণ্য। আলী রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন ঃ
كل قرض جر منفعة فهو ربا
“যে সকল ঋণ দিয়ে সুবিধা পাওয়া যায় তার সকল কিছু সুদ বলে গণ্য।”
হাদীসটি ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। সনদ-সূত্রের দিক দিয়ে যদিও হাদীসটি দুর্বল কিন্তু সকল ইমামগণ এটা আমলের যোগ্য বলে মেনে নিয়েছেন।
সকল প্রকার সুদ থেকে মুসলিম ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অবশ্যই মুক্ত থাকতে হবে। সুদ কম হোক বা বেশি সর্বাবস্থায় তা হারাম।
মুসলিমদের কখনো অমুসলিমদের মত দুনিয়ার সাথে ভোগ-বিলাসের প্রতি আসক্তি প্রকাশ করা উচিত নয়। যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়া কিনে নিয়েছে মুসলিম সমাজ তাদের মত কখনো হতে পারে না। দুনিয়ার লোভ-লালসা, ভোগ-বিলাসের প্রতি সীমাহীন আসক্তি মানুষকে সুদি কারবার করতে উৎসাহ দেয়। অতএব সকলকেই সুদি কাজ-কারবার থেকে তাওবা করতে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ঃ
 وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّـهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّـهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ – أُولَـٰئِكَ جَزَاؤُهُم مَّغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚوَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ   
“আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!” সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ১৩৫-১৩৬


ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png