LIVE
Loading latest headlines...

শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১

বোবা ধরা কি? ইসলামে এরর প্রতিকার কি?

শনিবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 



‘বোবা ধরা’ সারা বিশ্বের সকল সমাজে প্রচলিত অতি প্রাচীন এবং অতি প্রাকৃতিক ঘটনা। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় “স্লিপিং প্যারালাইসিস” (Sleeping Paralysis) বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। ঘুমের সময় কিংবা স্বপ্ন দেখার সময় অবচেতন মনে অনেকের একটি ঘটনা ঘটে থাকে। যাকে স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা বলা হয়। এই সময় শরীরের পেশী সম্পূর্ণ দুর্বল হয়ে যায়। ফলে মানুষ ঘুমের মধ্যে বা প্রায় জাগ্রত অবস্থায় সম্পূর্ণ অসাড় হয়ে পড়ে। এতে সে মানসিকভাবে জাগ্রত থাকে ঠিকই কিন্তু শারীরিকভাবে হয়ে পড়ে অসাড়।

এই সময় শরীরে কতগুলো পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন-হার্টবিট কমে যাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, গলায় বা বুকে চাপ অনুভূত হওয়া, নানা রকম দুঃস্বপ্ন কিংবা শত্রুর উপস্থিতি অনুভূত হওয়া ইত্যাদি। এছাড়া ভয় এবং অসহায় বোধ করতে থাকে মানুষ। ঘুমিয়ে গেলে মস্তিষ্ক থেকে পেশীতে সংকেত যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাই পেশীসমূহ হয়ে যায় অসাড়।

তাই স্লিপ প্যারালাইসিস এর সময় যা করা উচিত-চোখ বারবার নাড়াচাড়ার চেষ্টা করা, এতে স্লিপ প্যারালাইসিস থেমে যায় অল্প সময়ের মধ্যে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে চেষ্টা করা। শরীরের কিছু অংশ যেমন-জিহ্বা, পায়ের আঙুল নাড়ানোর চেষ্টা করা। এতে সম্পূর্ণ জেগে উঠা সম্ভব হবে।

স্লিপ প্যারালাইসিস সাধারণত কিছু কারণে হয়ে থাকে।

যেমন-নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস না থাকলে স্লিপ প্যারালাইসিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অনিদ্রা পরিহার করা উচিত। ঘুমের সময় চিত কিংবা উপুড় হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে শোওয়া উত্তম।

ঘুমের কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পূর্বে খাবার গ্রহণ করা উচিত। মানসিক চাপ স্লিপ প্যারালাইসিসের কারণ হতে পারে। তাই দুশ্চিন্তা পরিহার করুন। ঘুমের ওষুধ পরিহার করা ভালো। ঘুমের ওষুধ স্লিপ প্যারালাইসিসের কারণ হতে পারে। যদি ৬ মাসের অধিক সময় সপ্তাহে একবার স্লিপ প্যারালাইসিস হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ইসলামের চোখে বোবায় ধরলে করণীয়:

বোবায় ধরলে যা যা করা উচিত, তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে,

১) দরূদ শরীফ পড়তে থাকা।

২) আল্লাহর কালাম অর্থাৎ কুরআনুল কারীমের যে কোন সূরা থেকে আয়াতে পাক পাঠ করতে থাকা। সূরা বাকারা, ইখলাস অথবা ইয়াসীনের আয়াতসমূহ পাঠ করা যেতে পারে।

৩) আয়াতুল কুরসী পাঠ করতে থাকা। এটি অত্যন্ত কার্যকরী।

৪) হুযুরে পাক (সঃ) অথবা কোন নবী বা ওলীর উছিলায় ঐ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

এছাড়াও যাদের পক্ষে সম্ভব হয়, নিজে কোন বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়ে তাঁর থেকে এতদভিন্ন কোন নির্দিষ্ট আয়াতে পাক বা দোয়া জেনে নিতে পারেন

বোবায় ধরা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি চাইলে করণীয়

১) ঘুমানোর আগে অযু করে শোয়া।

২) পুরোপুরি উপুড় হয়ে না শোয়া।

৩) ডান কাত হয়ে শোয়া।

৪) কারও উপুড় হয়ে শোয়ার অভ্যাস সহজে না গেলে, কাঁথা, চাদর বা কম্বল দ্বারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে তারপর উপুড় হয়ে শোয়া। তবে ৩ নং আমলটিই অধিকতর শ্রেয় এবং সুন্নত সম্মত।

৫) ঘুমের দোয়াসমূহ পড়ে তারপর ঘুমানো। কি দোয়া পড়ছেন, তার অর্থ জানা থাকলে ভাল। ঘুমের একটি সহজ এবং অধিক পঠিতব্য দোয়া হচ্ছে,

“আল্লাহুম্মা বি-ইস্‌মিকা আমূওতু ওয়া আহ্‌ইয়া।”

অর্থঃ হে আল্লাহ ! তোমারই নামে মৃত্যুবরণ করি, আবার তোমারই নামে জীবন ধারন করি।

৬) দুঃস্বপ্ন দেখে আকস্মাৎ জেগে উঠলে বাম দিকে ফিরে তিনবার “আউযুবিল্লাহি মিনাশ্‌ শাইত্বনির্‌ রাজীম” বলে তিন বার থুথু দেয়া। থুথু দিলে পাশেরজায়গা ভিজে যাবার আশংকা থাকলে থুথুর মত করে ফুঁ দেয়া।

৭) শোবার সময় দশ বার করে “লা- হাওলা ওয়ালা- কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্‌” পাঠ করা।

৮) দুঃস্বপ্ন বা বোবায় ধরার কাহিনী কোনটাই কাউকে না বলা। আর প্রকাশ করলে এমন কারও কাছেই তা করা উচিত যিনি এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেন এবং প্রতিকার বাতলে দিতে পারেন



শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১

ইয়াজিদ ইবনে মোয়াবিয়া সম্পর্কে মহানবী (ﷺ) এর ভবিষ্যত বাণীঃ

শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


হযরত আবূ উবাইদা ইবনুল জাররাহ (رضي الله عنه) উনার থেকেবর্ণিত তিনি বলেন, হুযূর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, “দ্বীনইসলাম, ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফত সত্য ও ন্যায়ের উপর অবিচল থাকবে। সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি তা বিনষ্ট করে দিবে, ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে, সে হচ্ছেবনী উমাইয়ার এক নিকৃষ্ট ব্যক্তি। তার নাম হচ্ছে ইয়াযীদ । 

তথ্যসুত্র:➡

(মুসনাদে আবূ ইয়ালা, বাইহাক্কী, আবূ নাঈম, আল ফিতান লিনাঈম ইবনে হাম্মাদ, তারীখে দিমাশক্ব আল কাবীর, তারীখুল খুলাফা লিস সুয়ূতী ১৬৬ নং পৃষ্ঠা, খছাইছুল কুবরালিস সুয়ূতী ২য় জিলদ ২৩৬ পৃষ্ঠা, আস সওয়াইকুল মুহরিক্বাহ ২য় জিলদ ৬৩৩ পৃষ্ঠা, দায়লামী শরীফ ৫ম জিলদ ৯২ পৃষ্ঠা হাদীছ শরীফ নং ৭৫৬৬, সুবুলুল হুদাওয়ার রশাদ ১০ম জিলদ ৮৯ পৃষ্ঠা ইত্যাদি)

হযরত আবূ উবাইদা ইবনুল জাররাহ (رضي الله عنه) উনার থেকেবর্ণিত তিনি বলেন, হুযূর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, “দ্বীনইসলাম, ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফত সত্য ও ন্যায়ের উপর অবিচল থাকবে। সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি তা বিনষ্ট করে দিবে, ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে, সে হচ্ছেবনী উমাইয়ার এক নিকৃষ্ট ব্যক্তি। তার নাম হচ্ছে ইয়াযীদ । 

তথ্যসুত্র:➡

(মুসনাদে আবূ ইয়ালা, বাইহাক্কী, আবূ নাঈম, আল ফিতান লিনাঈম ইবনে হাম্মাদ, তারীখে দিমাশক্ব আল কাবীর, তারীখুল খুলাফা লিস সুয়ূতী ১৬৬ নং পৃষ্ঠা, খছাইছুল কুবরালিস সুয়ূতী ২য় জিলদ ২৩৬ পৃষ্ঠা, আস সওয়াইকুল মুহরিক্বাহ ২য় জিলদ ৬৩৩ পৃষ্ঠা, দায়লামী শরীফ ৫ম জিলদ ৯২ পৃষ্ঠা হাদীছ শরীফ নং ৭৫৬৬, সুবুলুল হুদাওয়ার রশাদ ১০ম জিলদ ৮৯ পৃষ্ঠা ইত্যাদি)

# তৃতীয় শতাব্দীর এক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম আবু ইয়া’আল(রঃ) তাঁর মুসনাদ(ভলি. ২, পেজ ৭১) সহীহ চেইনে উল্লেখ করেনঃ

হযরত আবু উবায়দাহ বিন জারাহ(رضي الله عنه) থেকে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – “মুসলিম উম্মাহ এর যাবতীয় কাজ কারবারে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হবে যখন বনি উম্যায়াহ গোত্রের এক জন এসে দ্বীনের মধ্যে ফাটল ধরাবে। তার নাম হবে ইয়াজিদ”

হাদীসটির বর্ণনাকারীর সকলেই সৎ এবং নির্ভরযোগ্য।

# আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বিন হাজর হায়তামী(রঃ) তাঁর আস-সাবাক আল-মুহরিকা গ্রন্থের ১৩২ পৃঃ একই হাদীস উল্লেখ করেছেন।

হযরত আবু দারদা(رضي الله عنه) বলেছেন, “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – আমার সুন্নাহকে পরিবর্তনকারী প্রথম ব্যক্তি হবে বনি উম্যায়াহ গোত্রের ইয়াজিদ”।

# হাফিজ ইবন কাথীর(রঃ) একই হাদীস উল্লেখ করেছেন তাঁর সুবিখ্যাত আল-বিদ্যায়াহ আন-নিহ্যায়াহ গ্রন্থের ভলি. ৬, পেজ ২৫৬ তে হযরত আবুযার ঘিফারী(رضي الله عنه) থেকে। এই বর্ণনায় ‘যার নাম ইয়াজিদ হবে’ এই কথাটি অনুপস্থিত।

# হাদীসটি এই গ্রন্থেও বর্ণীত আছে

মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা- ভলি. ৮, পেজ ৩৪১, হাদীস নং ১৪৫; দালাইল উন নবুয়্যাত লিল বায়হাকী আবওয়াব ঘাজওয়া তাবুক- হাদীস নং ২৮০২; মাতালিব আল-আলিয়্যাহ- হাদীস নং ৪৫৮৪।

# আমর বিন ইয়াহিয়া সায়ে’দ বিন আমর বিন সায়ে’দ তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা(رضي الله عنه) এর সাথে মসজিদে নববীতে বসেছিলাম এবং মারওয়ান আমাদের সাথে ছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা(رضي الله عنه) বলেছিলেনঃ “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, কুরাইশ বংশের কিছু যুবকদের দ্বারা আমার উম্মত ধ্বংস প্রাপ্ত হবে”। মারওয়ান বলেন, আল্লাহ এই ধরণের যুবকদের অভিশাপ দেন। হযরত আবু হুরায়রা(رضي الله عنه) বলেন, আমি বলতে পারি অমুক, অমুকের পুত্র অমুক, তমুকের পুত্র তমুক যদি আমি চাই। হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া বলেন, আমি আমার দাদার সাথে বনী মারওয়ানে গিয়েছিলাম যখন তারা সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং এক জন যুবককে দেখতে পেলাম। আমার দাদা বললেন তারাও তাদের একজন হবে। আমরা বললাম তা আপনি ভাল বলতে পারবেন।

[সহীহ বুখারী ভলি. ২, কিতাবুল ফিতনা]

# হযরত আবু হুরায়রা(رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তা’আলার সাহায্য প্রার্থনা কর ৭০ দশক হতে এবং এক যুবকের রাজত্বকাল হতে।

[মুসনাদ ইমাম আহমদ, হাদীস নং ৩৮০০]

# সহীহ বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারী এবং ফাতহুল বারীর লেখক হাফিজ আহমদ বিন হাজর আসকলানী(রঃ) মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা সূত্রে বর্ণনা করে লিখেন, মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বার হাদীসে বলা আছে, হযরত আবু হুরায়রা(رضي الله عنه) বাজারে যাওয়ার সময় প্রার্থনা করত ‘ও আল্লাহ, আমাকে ৬০ A.H. এবং যুবকের রাজত্বকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখ না’

হাফিজ ইবন হাজর আসকলানী(রঃ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এই হাদীসে ৬০A.H. এ এক জন শাসকের কথা বলা হয়েছে। হাদীস অনুসারে তাই ঘটে। ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যা এই বছরেই শাসনে বসেন ৬৪A.H. পর্যন্ত এবং এই সময়ে মারা যান।

# সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারী ইমাম বদরুদ্দীন আইনি(রঃ) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘প্রথম বালক যে শাসন করবে’ এই কথা দ্বারা ইয়াজিদকে বুঝানো হয়েছে।

[উমদাত উল কাদরী ভলি. ১৬, পেজ ৩৩৩]



বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১

মহানবী (সাঃ)র জীবনী পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন ৮০ বছর বয়সী এক নারী

বুধবার, নভেম্বর ১৭, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


মহানবী (সা.)’র জীবনী পড়ে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন বুলগেরিয়ান নারী স্পাস্কা ইভানোভা। মহানবীর জীবনী পড়ে তিনি অভিভূত হয়ে ৮০ বছর বয়সে গ্রহণ করলেন ইসলাম ধর্ম।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) তুরস্ক ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘদিন পড়াশোনার পর বুলগেরিয়ার পর্যটক স্পাস্কা ইভানোভা ইসলাম গ্রহণ করেন। এর আগে মহানবী (সা.)’র জীবনী পড়ে তিনি খুবই প্রভাবিত হন। ইসলাম গ্রহণের পর নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ফাতেমা।
এক বিবৃতিতে তিনি জানান, কয়েকবছর যাবত ইসলাম ধর্ম বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা পাঠ করছিলেন তিনি। এ সময় তিনি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনী গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঠ করেন। যা তার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করে। যার ফলে তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন


বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১

মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ০৪, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে
মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য



কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্র :

কুরআন ও সুন্নাহর নানা স্থানে মুনাফিকদের প্রসঙ্গ এসেছে। সেখানে মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্র বা দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা হয়েছে এবং মুমিনদের সে সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি মুনাফিকদের নিয়ে আল্লাহ তা‘আলা স্বতন্ত্র একটি সূরাই (সূরা মুনাফিকূন) নাযিল করেছেন। নিম্নে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হ’ল।

১. ব্যাধিগ্রস্ত মন : আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-فِيْ قُلُوْبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللهُ مَرَضاً وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ بِمَا كَانُوْا يَكْذِبُوْنَ ‘এদের (মুনাফিকদের) মনের মধ্যে রয়েছে মারাত্মক ব্যাধি। অতঃপর (প্রতারণার কারণে) আল্লাহ তা‘আলা এদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মিথ্যাবাদিতার কারণে তাদের জন্য রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি’ (বাক্বারাহ ২/১০)।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, ‘দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর খেয়াল-খুশির ব্যাধিগুলো তাদের মনে জেঁকে বসায় তা নষ্ট হয়ে গেছে। আর ভাল ইচ্ছেগুলোর উপর মন্দ ইচ্ছেগুলো জয়যুক্ত হওয়ায় তাদের মন-মানসিকতা কলুষিত হয়ে গেছে। আর তাদের এহেন নষ্ট অবস্থা তাদেরকে ধ্বংসের কিনারে নিক্ষেপ করেছে। ফলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও এখন তাদের অন্তরের ব্যাধির চিকিৎসা করতে সক্ষম হচ্ছেন না। সেজন্যই আল্লাহ বলেছেন, তাদের মন ব্যাধিগ্রস্ত। ফলে আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন’।[1]২. খেয়াল-খুশির প্রলোভন :

আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهِ مَرَضٌ ‘আল্লাহকে ভয় করলে তোমরা অন্য পুরুষের সাথে কথা বলার সময় নম্র আওয়াযে কথা বলো না। এমন করলে যাদের মনে ব্যাধি আছে তারা তোমাদের প্রতি প্রলুব্ধ হবে’ (আহযাব ৩৩/৩২)। যাদের ঈমান দুর্বল তারা নারীদের (কোমল কথা শ্রবণ করে) প্রতি প্রলুব্ধ ও আকৃষ্ট হয়। তাদের ঈমানী দুর্বলতা ইসলামের প্রতি সন্দেহবশতঃ হ’লে তো তারা মুনাফিক। আর এজন্যই মুনাফিকরা আল্লাহর বিধি-বিধানকে লঘু মনে করে। আবার অশ্লীল কাজের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানোর জন্যও তাদের ঈমান দুর্বল হ’তে পারে।[2]

৩. অহংকার প্রদর্শন :

মুনাফিকরা অহংকারী হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُوْلُ اللهِ لَوَّوْا رُؤُوْسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّوْنَ وَهُم مُّسْتَكْبِرُوْنَ ‘এদের (মুনাফিকদের) যখন বলা হয় তোমরা (আল্লাহর রাসূলের কাছে) এসো তাহ’লে আল্লাহর রাসূল তোমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন এরা অবজ্ঞাভরে মাথা ঘুরিয়ে নেয় এবং তুমি (এও) দেখতে পাবে, তারা অহংকারের সাথে তোমাকে এড়িয়ে চলে’ (মুনাফিকূন ৬৩/৫)।

মুনাফিকদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক। তাদেরকে যখন ডেকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর রাসূলের নিকট এসো। তিনি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন অহংকারবশতঃ তারা সে কথা মোটেও গ্রাহ্য করে না বরং সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে মাথা দুলিয়ে চলে যায়। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বলেছেন, অহংকার বশে ওদের তুমি মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতিফল কী দাঁড়াবে তা উল্লেখ করে বলেছেন,سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَسْتَغْفَرْتَ لَهُمْ أَمْ لَمْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ لَن يَغْفِرَ اللهُ لَهُمْ إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ ‘(আসলে) তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর কিংবা না কর উভয়ই তাদের জন্য সমান। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কখনই তাদের ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা কোন ফাসিক জাতিকে হেদায়াত দান করেন না’ (মুনাফিকূন ৬৩/০৬)।[3]

৪. আল্লাহর আয়াত সমূহের সাথে ঠাট্টা-তামাশা :

মুনাফিকরা আল্লাহর আয়াত তথা কথা ও বিধিবিধান নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে। তাদের এ আচরণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَحْذَرُ الْمُنَافِقُوْنَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُوْرَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوْا إِنَّ اللهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُوْنَ ‘মুনাফিকরা (সদাই) এ আশংকায় থাকে যে, তাদের বিপক্ষে এমন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় কি-না যাতে তাদের মনের কথা ফাঁস হয়ে পড়ে। তুমি বল, তোমরা ঠাট্টা-মশকরা করতে থাক। তোমরা যার ভয় করছ, আল্লাহ তা ঠিকই প্রকাশ করে দিবেন’ (তওবা ৯/৬৪)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগের মুনাফিকদের মনে সব সময় এই আশঙ্কা বিরাজ করত যে, কুরআনের কোন সূরা নাযিল হয়ে মুমিনদের নিকট তাদের মনের সকল দূরভিসন্ধি ও জারিজুরি ফাঁস করে দেয় কি-না? কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর এ আয়াত নাযিলের কারণ হ’ল, মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দোষারোপ করত এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানদের কাজের সমালোচনা করত। যখন তারা এসব করত তখন বলত, দেখ, আল্লাহ আবার আমাদের গোপন কথা তাঁর নবীর নিকট ফাঁস করে দেন কি-না? ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বললেন, ওদের তুমি ধমকের সুরে ও শাস্তির ভয় দেখিয়ে বল, ঠিক আছে তোমরা ঠাট্টা-মশকরা চালিয়ে যাও। তোমরা যার ভয় করছ, আল্লাহ তা ঠিকই প্রকাশ করে দিবেন।[4]

৫. মুমিনদের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা :

আল্লাহ বলেন, وَإِذَا لَقُواْ الَّذِيْنَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ، اللهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ- ‘তারা (মুনাফিকরা) যখন ঈমানদারদের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, আবার যখন তাদের দুষ্ট নেতাদের সঙ্গে একান্তে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো অবশ্যই তোমাদের সাথে আছি। (ঈমানের কথা বলে তাদের সাথে) আমরা কেবলই ঠাট্টা করি। (মূলতঃ) আল্লাহ তাদের সাথে ঠাট্টা করেন এবং সীমালংঘনজনিত কাজে যাতে তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় সেজন্য তাদের অবকাশ দিয়ে রাখেন’ (বাক্বারাহ ২/১৪-১৫)।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, মুনাফিকরা প্রত্যেকেই দ্বিমুখী আচরণকারী। এক মুখে তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়। অন্য মুখে ভোল পাল্টিয়ে তারা তাদের কাফির ভাইদের সাথে মিলিত হয়। তাদের জিহবাও দু’টো। এক জিহবা দিয়ে তারা মুসলমানদের সাথে উপর উপর কথা বলে, আর অন্য জিহবা তাদের গোপন অবস্থার ভাষ্যকার।কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামশা করা এবং তাদের তুচ্ছ ভাবা ওদের স্বভাব। এ কারণে তারা কুরআন-সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের যে বিদ্যা-বুদ্ধি আছে, তা কেবলই তাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকার বাড়িয়ে তোলে। বিনয়-নম্রতা কী তা তারা বোঝে না? ফলে অহংকার হেতু তারা অহি-র বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করে। ফলে প্রিয় পাঠক! আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, তারা অহি-র খোলামেলা সহজবোধ্য বিষয়ের সাথেও ঠাট্টা-তামাশা করতেই থাকে। তাইতো আল্লাহ তাদের সাথে ঠাট্টা করেন এবং সীমালংঘনজনিত কাজে যাতে তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় সেজন্য তাদের অবকাশ দেন।[5]

৬. মানুষকে আল্লাহর পথের পথিকদের জন্য ব্যয়ে বাধা দান:

তাদের এরূপ অভ্যাস সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন,

هُمُ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ لاَ تُنْفِقُوْا عَلَى مَنْ عِندَ رَسُوْلِ اللهِ حَتَّى يَنْفَضُّوْا وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ-

‘এই মুনাফিকরা তো সেসব লোক, যারা (আনছারদের) বলে, আল্লাহর রাসূলের (মুহাজির) সাথীদের জন্য তোমরা কোন রকম অর্থ ব্যয় করো না। (তাহ’লে আর্থিক সংকটের কারণে) তারা রাসূলের কাছ থেকে সরে পড়বে। অথচ আসমান ও যমীনের ধনভান্ডার সমূহ তো আল্লাহর। আসলে মুনাফিকরা কিছুই বুঝতে চায় না’ (মুনাফিকূন ৬৩/৭)।

যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি এক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। সে যুদ্ধে আমি আব্দুল্লাহ বিন উবাই (মুনাফিকদের নেতা)-কে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটস্থ মক্কার মুহাজিরদের জন্য তোমরা মদীনাবাসীরা কিছুই খরচ করো না। দেখবে, অর্থকষ্টে পড়ে তারা তাঁর নিকট থেকে সরে পড়বে। মদীনায় ফিরে যেতে পারলে অবশ্যই আমরা সম্মানী লোকেরা সেখানে অবস্থিত ছোট লোকদের (অর্থাৎ মুহাজিরদের) বের করে দেব। আমি এ কথা আমার চাচা অথবা ওমর (রাঃ)-কে বললাম। তিনি কথাটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জানালেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালে আমি তাঁকে সব বললাম। তিনি আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সাথীদের ডাকিয়ে আনলেন। তারা শপথ করে বলল, এমন কথা তারা বলেইনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন আমাকে মিথ্যুক এবং আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে সত্যবাদী ভাবলেন। ফলে আমি যার পর নেই ব্যথিত হ’লাম। মনোকষ্টে আমি ঘরে বসে থাকলাম। এ অবস্থা দেখে আমার চাচা আমাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাকে মিথ্যুক মনে করেছেন এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে কি তুমি মনে করলে? তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, إِذَا جَاءكَ الْمُنَافِقُونَ ‘যখন মুনাফিকরা তোমার নিকট আসে…। এ সূরা নাযিলের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট লোক পাঠান। তিনি সূরা পড়ে শুনান এবং বলেন, إِنَّ اللهَ قَدْ صَدَّقَكَ يَا زَيْدُ ‘হে যায়েদ! আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী আখ্যা দিয়েছেন’।[6]

৭. মুমিনদের মূর্খ আখ্যা দেওয়া :

আল্লাহ বলেন, وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَـكِنْ لاَّ يَعْلَمُوْنَ ‘যখন তাদের (মুনাফিকদের) বলা হয়, লোকেরা যেমন ঈমান এনেছে তোমরাও তেমন ঈমান আনো, তখন তারা বলে, ঐ নির্বোধরা যেমন ঈমান এনেছে আমাদেরও কি তেমন ঈমান আনতে হবে? সাবধান! ওরাই আসলে নির্বোধ। কিন্তু ওরা তা অনুধাবন করতে পারে না’ (বাক্বারাহ ২/১৩)।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘মুনাফিকরা কুরআন ও সুন্নাহর ধারক-বাহকদের প্রান্তিক ও ব্রাত্যজন হিসাবে মনে করে। তাদের ধারণায় এদের বোধ-বুদ্ধি খুবই অল্প। তাদের মতে কুরআন-হাদীছের বাণী বাহকরা সেই গাধাতুল্য যে তার পিঠে বইয়ের বোঝা বহন করে। গাধার চিন্তা থাকে কেবল বোঝা বহন করা। তাই বইয়ের বোঝা বইলেও তো আর গাধাটাকে শিক্ষিত বলা যায় না। অহি-র বেসাতিকারীর পণ্য (অর্থাৎ ইসলামী বিধানের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় জীবনপাতকারীর চেষ্টা) মুনাফিকদের দৃষ্টিতে মন্দা ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের কাছে এ পণ্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মনে করে ইসলামের অনুসারীরা নির্বোধ। ফলে তারা নিজেরা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন মুসলমানদের নষ্ট ও অপয়া হিসাবে তুলে ধরতে তৎপরতা দেখায়’।[7]

৮. কাফেরদের সাথে সম্প্রীতি রাখা :

মুনাফিকদের সখ্যতা ও সম্প্রীতি মুমিনদের সাথে নয় বরং কাফেরদের সাথে লক্ষ্য করা যায়। কাফেরদের সাথে তাদের এই দহরম মহরমের জন্য আল্লাহ বলেছেন,بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَاباً أَلِيْماً، الَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ أَيَبْتَغُوْنَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ العِزَّةَ لِلّهِ جَمِيْعاً- ‘হে নবী! তুমি মুনাফিকদের এই সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক ভয়াবহ আযাব রয়েছে, যারা (দুনিয়ার ফায়েদার জন্য) ঈমানদারদের বদলে কাফেরদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তারা কি এর দ্বারা এদের কাছ থেকে কোন সম্মান লাভের প্রত্যাশা করে? অথচ যাবতয়ি সম্মান আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট’ (নিসা ৪/১৩৮-৩৯)।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে রাসূল! যারা আমার সাথে কুফরী করে এবং আমার দ্বীনের মধ্যে বিরোধিতার পথ বের করে তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে মুমিনদের বাদ দিয়ে তারা মুনাফিক। এই মুনাফিকদের তুমি কঠিন শাস্তি লাভের সুসংবাদ দাও। তারা কি আমার প্রতি যারা ঈমান রাখে তাদের বাদ দিয়ে কাফেরদের বন্ধু ও সহযোগিতাকারী রূপে গ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের কাছে শক্তি ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে? কিন্তু সম্মান, শক্তি, সহযোগিতা সবই তো আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত। অতএব তারা কেন মুমিনদের বন্ধু ও সহযোগিতাকারী রূপে গ্রহণ করে না? তা করলে তারা আল্লাহর কাছে সম্মান, প্রতিরোধ ও সহযোগিতার আবেদন করতে পারত। যার কাছেই মূলতঃ সব শক্তি ও দাপট জমা রয়েছে। তিনি যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন। এভাবে ঐ মুনাফিকরাও তখন সম্মান ও শক্তির মালিক হ’ত।[8]

৯. মুমিনদের ব্যাপারে প্রতীক্ষা :

[মুনাফিকরা মুসলমানদের ভাল-মন্দের প্রতীক্ষা করে। ভাল কিছু হ’লে বলে, আমরা তো তোমাদেরই লোক। এ কাজে আমাদেরও অংশ আছে। আর খারাপ কিছু হ’লে কাফেরদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের সুবিধা আদায় করে।-অনুবাদক]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَلَّذِيْنَ يَتَرَبَّصُوْنَ بِكُمْ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِّنَ اللهِ قَالُواْ أَلَمْ نَكُنْ مَّعَكُمْ وَإِنْ كَانَ لِلْكَافِرِيْنَ نَصِيْبٌ قَالُواْ أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فَاللهُ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَنْ يَجْعَلَ اللهُ لِلْكَافِرِيْنَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ سَبِيْلاً ‘যারা (মুনাফিকরা) তোমাদের অকল্যাণের প্রতীক্ষায় থাকে। যদি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমাদের বিজয় আসে তখন এরা বলে, আমরা কি (এ যুদ্ধে) তোমাদের সাথে ছিলাম না? আর যদি কাফেরদের ভাগে বিজয়ের অংশ লেখা হয় তখন এরা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে (গোপনে) সহায়তা করিনি এবং তোমাদেরকে মুসলমানদের কাছ থেকে রক্ষা করিনি? এমতাবস্থায় কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়ছালা শুনিয়ে দেবেন এবং সেদিন আল্লাহ মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের কোন অজুহাত পেশ করার কোন পথই খোলা রাখবেন না’ (নিসা ৪/১৪১)। বস্ত্তত মুনাফিকরা মুমিনদের বেলায় অপেক্ষায় থাকে। যদি কোন যুদ্ধে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের শত্রুপক্ষের উপর বিজয় দান করেন এবং তাতে গণীমতের সম্পদ অর্জিত হয় তখন তারা মুমিনদের নিকট এসে বলে, আমরা কি তোমাদের সাথে থেকে তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিনি? তোমাদের সঙ্গে থেকে লড়াই করিনি? যেহেতু আমরা তোমাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি সেহেতু তোমরা গণীমতের একটা অংশ আমাদের দাও। আর যদি মুসলমানদের শত্রুপক্ষ কাফের বাহিনী মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে সক্ষম হয়, তখন মুনাফিকরা কাফেরদের নিকট গিয়ে বলে, আমরা কি তোমাদের বিজয়ের পথ করে দেইনি? সেজন্যই তো তোমরা মুমিনদের পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছ। আমরা তোমাদের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। ফলে তারা অপদস্থ হয়ে যুদ্ধ বিরতি দিয়েছিল, আর সেই ফাঁকে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছ। এখন এরূপ করলেও কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঠিকই মুমিন ও মুনাফিকদের মাঝে ঠিক ঠিক বিচার করবেন। চূড়ান্ত বিচারে তিনি মুমিনদের জান্নাতে দাখিল করবেন আর মুনাফিকদেরকে তাদের বন্ধু কাফেরদের সাথে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।[9]

১০. আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি এবং ইবাদতে অলসতা :

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের এ আচরণ সম্পর্কে বলেন, إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلاَةِ قَامُوْا كُسَالَى يُرَآؤُوْنَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ إِلاَّ قَلِيْلاً- ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। বস্ত্ততঃ এর মাধ্যমে তিনিই (আল্লাহই) তাদের ধোঁকায় ফেলে দেন। আর যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন অলস হয়ে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায়, বস্ত্ততঃ তারা আল্লাহকে খুবই কম স্মরণ করে’ (নিসা ৪/১৪২)।

মুনাফিকরা মুখে ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমে মুসলমানদের হাত থেকে নিজেদের জান-মাল হেফাযত করতে পারে; সরাসরি কাফির হ’লে যা তারা পারত না। আর এভাবে তারা আল্লাহকে ধোঁকা দিচ্ছে। কিন্তু এমনটি করতে গিয়ে তারা বরং আল্লাহর ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছে। কেননা আল্লাহ তাদের মনের খবর ও তাদের কুফরী আক্বীদা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। তারপরও তিনি তাদের মুখে ঈমান যাহির করার জন্য তাদের জান-মালের উপর হস্তক্ষেপ বন্ধ রেখেছেন দুনিয়াতে ছাড় দেওয়ার মানসে। অবশেষে আখিরাতে যখন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন কুফর গোপন রাখার কারণে তিনি তাদের ঠিকই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।আর ছালাতে যে তারা অলসতাভরে দাঁড়ায় তার অর্থ হ’ল, আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের উপর যেসব আমল ফরয করেছেন, মুনাফিকরা তার কোনটাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে করে না। কারণ তারা পরকাল, পাপ-পুণ্য, শাস্তি ও পুরস্কার কোনটাতেই বিশ্বাস করে না। তারা কেবল জান বাঁচানোর তাকীদে কিছু বাহ্যিক আমল করে। মুমিনরা যাতে তাদের হত্যা না করে, তাদের অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে না নেয় সেই ভয়ে তারা এসব আমল করে। তাই ছালাতের মত একটি দৃশ্যমান ফরযে যখন তারা দাঁড়ায়, তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। যাতে মুমিনরা ছালাত আদায়কারী হিসাবে তাদের দেখতে পেয়ে তাদেরকে নিজেদের লোক বলে মনে করে। অথচ তারা তাদের লোক নয়। কেননা তারা ছালাতকে তাদের উপর ফরয বা আবশ্যিক বিষয় ভাবে না। তাই তারা আলস্যভরে ছালাতে দাঁড়ায়।

আল্লাহর বাণী- ‘তারা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে’ বাক্যটির উপর কেউ হয়ত প্রশ্ন করতে পারে যে, আল্লাহর যিকিরের ক্ষেত্রে ‘অল্প কিছু’ বলে কোন কথা আছে কি? তার উত্তরে বলা চলে, আয়াতের অর্থ আসলে তা নয়। এ কথার আসল অর্থ হচ্ছে- তারা আল্লাহকে লোক দেখানোর জন্য স্মরণ করে। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য নিহত হওয়া, বন্দী হওয়া এবং ধন-সম্পদ খোয়ানোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া। তাদের যিকির কোন বিশ্বাসীর যিকির নয়, যে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করে, একনিষ্ঠ মনে তার রুবূবিয়াতকে মেনে চলে। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা একে ‘অল্প’ বলেছেন। কেননা এই যিকিরের লক্ষ্য আল্লাহ তা‘আলা নন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছাও তাতে নেই, আল্লাহর নিকট প্রতিদান লাভের প্রত্যাশাও এখানে নেই। তাই আমলকারী যতই কষ্ট করুক এবং যত বেশী যিকির করুক তা মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ গণ্য হবে। যা দেখতে পানির মত, কিন্তু আসলে পানি নয়।[10]

১১. দোটানা ও দোদুল্যমান মনোভাব :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,مُذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذَلِكَ لاَ إِلَى هَـؤُلاء وَلاَ إِلَى هَـؤُلاَءِ- ‘এরা (কুফর ও ঈমানের) দোটানায় দোদুল্যমান, এরা না এদিকে না ওদিকে’ (নিসা ৪/১৪৩)।

এ আয়াতের মর্মার্থ হ’ল, মুনাফিকরা তাদের দ্বীন সম্পর্কে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তারা কোন বিশ্বাসেই স্থির হ’তে পারে না। না তারা মুমিনদের সাথে জাগ্রত জ্ঞানের উপর আছে, না কাফেরদের সাথে অজ্ঞতার উপর আছে। তারা বরং দুইয়ের মাঝে অস্থিরমতি হয়ে বিরাজ করছে। ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الشَّاةِ الْعَائِرَةِ بَيْنَ الْغَنَمَيْنِ تَعِيرُ إِلَى هَذِهِ مَرَّةً وَإِلَى هَذِهِ مَرَّةً. ‘মুনাফিকের উদাহরণ দু’টো পাঁঠার মাঝে অবস্থিত একটি গরম হওয়া বকরির মত, একবার সে এটার কাছে যায়, আরেকবার সে অন্যটার কাছে যায়’।[11] ইমাম নববী বলেছেন, اَلْعَائِرَةُ অর্থ হয়রান, দোদুল্যমান, যে বুঝে উঠতে পারছে না, দু’জনের কার কাছে সে যাবে। আর تَعِيْرُ শব্দের অর্থ, সে কার কাছে যাবে না যাবে তা নিয়ে দোটানায় পড়েছে।[12]

১২. মুমিনদের সাথে ধোঁকাবাজি :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَمَا يَخْدَعُوْنَ إِلاَّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ- ‘তারা (মুখে ঈমানের দাবীদার মুনাফিকরা) আল্লাহ ও ঈমানদারদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করতে চায়। বস্ত্ততঃ তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছে না’ (বাক্বারাহ ২/৯)।

মুনাফিকদের তাদের রব ও মুমিনদের সাথে ধোঁকাবাজি এই যে, তারা মুখে কালিমা উচ্চারণ এবং আল্লাহকে বিশ্বাসের কথা বলে। কিন্তু অন্তরে তারা আল্লাহর প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস লুকিয়ে রাখে। সরাসরি আললাহকে অস্বীকার করলে তার বিধান মৃত্যুদন্ড অথবা বন্দীত্ব। এই উভয় শাস্তি থেকে দুনিয়াতে নিজেদের বাঁচানোর জন্য তারা মুখে ঈমান যাহির করে এবং অন্তরে কুফর লুকিয়ে রেখে আল্লাহ ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের ধোঁকা দিতে চেষ্টা করে।[13]১৩. আল্লাহদ্রোহী শাসকদের নিকট মামলা-মোকদ্দমা পেশ করা :

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَّكْفُرُوْا بِهِ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيْداً- وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللهُ وَإِلَى الرَّسُوْلِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْداً-

‘তুমি কি তাদের দেখনি, যারা দাবী করে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তোমার আগে অবতীর্ণ হয়েছে, তারা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। কিন্তু তারা আল্লাহদ্রোহী শক্তির কাছ থেকে ফায়ছালা পেতে চায়। অথচ এদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা এসব আল্লাহদ্রোহীর হুকুম অমান্য করবে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। আর যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেছেন তোমরা তার দিকে এবং রাসূলের দিকে (ফিরে) এসো, তখন তুমি মুনাফিকদের দেখবে, তারা তোমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে’ (নিসা ৪/৬০-৬১)।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘যদি আপনি অহি-র সুস্পষ্ট বিধান মোতাবেক মুনাফিকদের মাঝে বিচার-ফায়ছালা করেন, তখন দেখবেন মুনাফিকরা তা থেকে পলায়ন করছে। আর আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী বিচারকার্যের দিকে ডাকলে তাদেরকে তা থেকে বিমুখ দেখতে পাবেন। আপনি যদি তাদের প্রকৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহ’লে দেখতে পাবেন, হেদায়াত থেকে তারা বহু দূরে অবস্থান করছে এবং অহি-র প্রতি তাদের মনে এতই বিদ্বেষ যে, তার দিকে ফিরে তাকাতেও তারা রাযী নয়।[14]

১৪. মুমিনদের মাঝে বিপর্যয় সৃষ্টি :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,لَوْ خَرَجُوْا فِيْكُم مَّا زَادُوْكُمْ إِلاَّ خَبَالاً وَلأَوْضَعُوْا خِلاَلَكُمْ يَبْغُوْنَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيْكُمْ سَمَّاعُوْنَ لَهُمْ وَاللهُ عَلِيْمٌ بِالظَّالِمِيْنَ ‘তারা তোমাদের সাথে বের হ’লে তোমাদের মধ্যে বিভ্রান্তিই শুধু বাড়িয়ে দিত এবং তোমাদের মাঝে ফিৎনা সৃষ্টির জন্য ছুটাছুটি করত। তাছাড়া তোমাদের মাঝেও তাদের কথা আগ্রহের সাথে শোনার মত লোক আছে। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (তওবা ৯/৪৭)।

মুনাফিকরা মূলতঃ কাপুরুষ। তাই তোমাদের মাঝে যাতে বিদ্বেষ ও ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য তারা পরনিন্দার মাধ্যমে যারপর নাই চেষ্টা করে। তাছাড়া তোমাদের মাঝেতো তাদের অনুগত কিছু লোক আছে। তাদের কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা ওদের ভাল লাগে। ওরা তাদের কল্যাণ কামনা করে; অথচ তাদের অবস্থা ওরা ভাল করে জানে না। এতে করে মুমিনদের মাঝে একটা খারাপ অবস্থা এবং মহা বিপর্যয় দেখা দেয়।[15]

১৫. মিথ্যা শপথ, ভয়-ভীতি, কাপুরুষতা ও অস্থিরতা :

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের উক্ত আচরণাদি সম্পর্কে বলেন,

وَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ إِنَّهُمْ لَمِنْكُمْ وَمَا هُم مِّنْكُمْ وَلَـكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُوْنَ- لَوْ يَجِدُوْنَ مَلْجَأً أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلاً لَّوَلَّوْا إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُوْنَ-‘এরা আল্লাহর নামে শপ থ করে যে, এরা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। অথচ এরা কখনই তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বস্ত্ততঃ এরা এমন লোক, যারা ভয় করে থাকে। এরা কোন আশ্রয়স্থল, কোন গুহা অথবা মাটির ভিতর ঢুকে পালাবার মত কোন সুড়ঙ্গ পেলে অবশ্যই তোমাদের ছেড়ে এসব জায়গার দিকে দ্রুত পালিয়ে যাবে’ (তওবা ৯/৫৬-৫৭)।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে মুনাফিকদের অস্থিরতা, ভয়-ভীতি, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলেন, ওরা জোরাল শপথ করে বলে যে, ওরা তোমাদের লোক, অথচ প্রকৃতপক্ষে ওরা তোমাদের লোক নয়। এই মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করতেই ওরা কসমের আশ্রয় নিয়েছে। ওরা তোমাদের প্রতি এতটাই বিদ্বেষপরায়ণ যে, যদি তোমাদের সংস্পর্শ থেকে বাঁচার জন্য কোন দুর্গ পেত, তবে তাকে আশ্রয়স্থল বানাত অথবা কোন গিরিগুহা পেলে তাতে ঢুকে পড়ত কিংবা মাটিতে কোন সুড়ঙ্গ পেলে তথায় পালিয়ে যেত। তোমাদের থেকে সরে পড়ার কাজটা তখন তারা খুব দ্রুতই করত। কারণ তারা তো মুমিনদের সাথে মিশে মনের ঘৃণা ও অসন্তোষ নিয়ে, ভালবাসার টানে নয়। তারা মন থেকে চায় যে, মুমিনদের সাথে যেন তাদের মিশতে না হয়। কিন্তু বাধ্য হয়ে মিশতে হচ্ছে বলে তারা সব সময় পেরেশানী, দুঃখ-বেদনা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিনাতিপাত করে।

অপরদিকে মুসলমানরা আল্লাহর রহমতে সব সময় উন্নতি, সম্মান ও বিজয়ের মধ্যে রয়েছে। ফলে যখনই কোন ক্ষেত্রে মুসলমানদের খুশির ঘটনা ঘটে তখনই তাদের মনোকষ্ট বেড়ে যায়। ফলে মুসলমানদের সংস্রবে যাতে থাকতে না হয় সেটাই তাদের কাম্য। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তারা কোন আশ্রয়স্থল কিংবা কোন গিরিগুহা কিংবা কোন সুড়ঙ্গ পেলে দৌড়ে গিয়ে তাতে আশ্রয় নিত।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ وَإِن يَقُوْلُوْا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ يَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ قَاتَلَهُمُ اللهُ أَنَّى يُؤْفَكُوْنَ-

‘তুমি যখন তাদের দেখবে তখন তাদের দেহকান্তি তোমাকে অভিভূত করবে এবং যদি তারা কথা বলে, তবে তুমি তাদের কথা সাগ্রহে শুনবেও। তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। তারা যেকোন শোরগোলকেই নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। এরাই হচ্ছে দুশমন। সুতরাং এদের থেকে হুঁশিয়ার থেকো। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। এরা বিভ্রান্ত হয়ে কোথায় ফিরে চলছে? (মুনাফিকূন ৬৩/৪)।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এই মুনাফিকরা সবচেয়ে সুন্দর দেহের অধিকারী, সবচেয়ে আকষর্ণীয় ভাষার অধিকারী, কথাবার্তায় অত্যন্ত সুমিষ্ট; কিন্তু তাদের মন সবচেয়ে বেশী নোংরা এবং অন্তর অত্যন্ত দুর্বল। এজন্য তাদের উদাহরণ দেয়ালে ঠেকানো সেই কাঠের মত, যার কোন সারবত্তা নেই। যেগুলো শিকড় থেকে উপড়ে ফেলানো। তারপর সেগুলোকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে; যাতে মাটিতে পড়ে থাকায় পথচারীরা পা মাড়িয়ে না যায়।[16]

১৬. তারা যা করেনি তা করার নামে প্রশংসা পিয়াসী :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَفْرَحُوْنَ بِمَا أَتَوْا وَّيُحِبُّوْنَ أَن يُحْمَدُوْا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوْا فَلاَ تَحْسَبَنَّهُمْ بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

‘যারা নিজেরা যা করে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্যও প্রশংসিত হ’তে ভালবাসে এমন লোকদের সম্পর্কে তুমি কখনো ভাববে না যে তারা আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। বরং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৮)।আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে মুনাফিকদের কিছু লোক ছিল, যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন যুদ্ধে বের হ’তেন তখন তাঁর সাথে অংশ না নিয়ে পিছনে থেকে যেত। তারা এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে না যাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করত। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় ফিরে আসতেন তখন তারা তাঁর সামনে নানা অজুহাত পেশ করত। তারা এসব অজুহাতের জন্য আল্লাহর নামে কসমও করত। সেই সঙ্গে তারা যে কাজ করেনি, সেই কাজ করেছে মর্মে তাদের প্রশংসা করা হ’লে তারা খুব খুশি হয় এবং এরূপ কাজ না করেও প্রশংসা পেতে তারা খুব আকাঙ্ক্ষী হয়। এতদপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন।[17]

১৭. তারা সৎকর্মকে দূষণীয় গণ্য করে :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنْهُم مَّن يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُواْ مِنْهَا رَضُواْ وَإِن لَّمْ يُعْطَوْاْ مِنهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ ‘এদের (মুনাফিকদের) মাঝে এমন লোকও আছে, যারা দানের ব্যাপারে তোমার উপর দোষারোপ করে। কিন্তু সেই দান সামগ্রী থেকে তাদের কিছু দেওয়া হ’লে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আর যদি তা থেকে তাদের দেওয়া না হয়, তখন তারা খুবই ক্ষুব্ধ হয়’ (তওবা ৯/৫৮)।

একদল মুনাফিক নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগে দান-ছাদাক্বা বণ্টন নিয়ে তাঁকে দোষারোপ করত। তারা সরাসরি দ্বীন ইসলাম অস্বীকার করত না। কেবল অস্বীকার করত তাদের দানের অংশ না পাওয়ার জন্য। এজন্যই যাকাতের অংশ পেলে তারা খুশি থাকত, না পেলে মনে মনে খুব অসন্তুষ্ট হ’ত। তারা যাকাত ও অন্যান্য দান বণ্টনকালে নবী করীম (ছাঃ)-কে এভাবে অন্যায় দোষারোপ করতো বলে আলোচ্য আয়াতে তাদের অভিযুক্ত ও ভৎর্সনা করা হয়েছে।[18]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

الَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لاَ يَجِدُوْنَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাদাক্বা করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে, আল্লাহ তাদেরকে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (তওবা ৯/৭৯)।

আবু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে যখন দান করার আদেশ দেওয়া হ’ল তখন আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও আমরা তা পালনে তৎপর হ’লাম। আবু আকীল অর্ধ ছা‘ (খেজুর কিংবা অন্য কিছু) নিয়ে এল। আরেকজন তার থেকে অনেক বেশী নিয়ে এল। তখন মুনাফিকরা বলতে লাগল, আল্লাহ তা‘আলা এই লোকের সামান্য দান গ্রহণের মুখাপেক্ষী নন। আর অন্যজন যে অনেক দান করল, সেও লোক দেখানোর জন্য। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন,

الَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لاَ يَجِدُوْنَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাদাক্বা করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে, আল্লাহ তাদেরকে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (তওবা ৯/৭৯)।[19]

কোন অবস্থাতেই এই মুনাফিকদের দোষারোপ ও নিন্দাবাদের হাত থেকে কেউ নিষ্কৃতি পাবে না। এমনকি তাদের নিন্দা থেকে দানকারীরাও মুক্ত নয়। যদি তারা কেউ অনেক মাল দান করে তাহ’লে ওরা বলে, এ লোক দেখাচ্ছে। আর যদি কেউ সামান্য সম্পদ দান করার জন্য হাযির করে, তাহ’লেও বলে, আল্লাহ তা‘আলার এতটুকু দান গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই।[20]

১৮. নিম্নতম অবস্থানে খুশী :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِذَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ أَنْ آمِنُوْا بِاللهِ وَجَاهِدُوْا مَعَ رَسُوْلِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُوْلُوْا الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوْا ذَرْنَا نَكُن مَّعَ الْقَاعِدِيْنَ ‘আর যখন এমন সূরা অবতীর্ণ হয়, যাতে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর উপরে ঈমান আন এবং তাঁর রাসূলের সাথে জিহাদ কর, তখন তাদের মধ্যে যাদের শক্তিসামর্থ্য আছে তারা তোমার নিকট অব্যাহতি চায় এবং বলে, আমাদেরকে ছাড় দিন। যারা বসে থাকে, আমরা তাদের সাথে থাকব’ (তওবা ৯/৮৬)।

যাদের জিহাদ করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ-বিত্ত আছে, তারপরও তারা জিহাদে অংশ না নিয়ে বাড়ি বসে থাকার অনুমতি চায়, আল্লাহ এই আয়াতে তাদের নিন্দা করেছেন। এরা নিজেদের জন্য লজ্জা-অপমানে সন্তুষ্ট। এরা মহিলাদের ন্যায় বাড়ি বসে থাকে সেনাবাহিনীর যুদ্ধে বেরিয়ে যাওয়ার পর। যুদ্ধ সংঘটিত হ’লে দেখা যায়, এদের মত কাপুরুষ আর দ্বিতীয় কেউ মানব সমাজে নেই। আর যখন শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করে, তখন লম্বা লম্বা কথা বলায় মানবসমাজে তাদের জুড়ি মেলে না। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেছেন,

أَشِحَّةً عَلَيْكُمْ فَإِذَا جَاءَ الْخَوْفُ رَأَيْتَهُمْ يَنْظُرُوْنَ إِلَيْكَ تَدُوْرُ أَعْيُنُهُمْ كَالَّذِي يُغْشَى عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ فَإِذَا ذَهَبَ الْخَوْفُ سَلَقُوْكُم بِأَلْسِنَةٍ حِدَادٍ

‘তারা তোমাদের প্রতি কুণ্ঠাবোধ করে। অতঃপর যখন তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তুমি তাদের দেখবে তারা মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চক্ষু উল্টিয়ে তোমার দিকে তাকায়। তারপর ভয় যখন দূরীভূত হয়ে যায়, তখন এরাই (গনীমতের) সম্পদের লালসায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরী শুরু করে দেয়’ (আহযাব ৩৩/১৯)। অর্থাৎ নিরাপদকালে তারা তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার ভাষায় লম্বা লম্বা কথা বলে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তারা হয়ে যায় সবচেয়ে বড় কাপুরুষ।[21]

১৯. অন্যায়ের আদেশ ও ন্যায়ের নিষেধ :

মুমিনরা যেখানে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করে থাকে, সেখানে মুনাফিকরা তার বিপরীতে মানুষকে অন্যায় কথা ও কাজের আদেশ দেয় এবং ন্যায় কথা ও কাজ করতে নিষেধ করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ আচরণ অবৈধ আখ্যায়িত করে বলেছেন,

الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ يَأْمُرُوْنَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ وَيَقْبِضُوْنَ أَيْدِيَهُمْ نَسُوْا اللهَ فَنَسِيَهُمْ إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ

‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ। এরা অন্যায়ের আদেশ দেয় এবং ন্যায়ের নিষেধ করে। আর তারা আল্লাহর পথে খরচ করা থেকে নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে। এরা (দুনিয়ায়) আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে গেছে তিনিও আখিরাতে তাদের ভুলে যাবেন। নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা পাপিষ্ঠ’ (তওবা ৯/৬৭)।

তাদের হাত গুটিয়ে রাখার অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ ও জনকল্যাণমূলক কাজে তারা অর্থ ব্যয় করে না। তারা আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার অর্থ তারা আল্লাহর যিকির করতে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহও তাদের ভুলে গেছেন অর্থ- তাদেরকে ভুলে যাওয়া লোক যেমন আচরণ তাদের সাথে করে, তিনিও তাদের সাথে সেরূপ আচরণ করবেন। যেমন তিনি অন্যত্র বলেছেন, وَقِيْلَ الْيَوْمَ نَنْسَاكُمْ كَمَا نَسِيْتُمْ لِقَاء يَوْمِكُمْ هَذَا ‘আর বলা হবে, তোমরা যেমন এই দিনের সাক্ষাৎ লাভের কথা ভুলে গিয়েছিলে, আজ আমিও তেমনি তোমাদের ভুলে গিয়েছি’ (জাছিয়া ৪৫/৩৪)। মুনাফিকরা পাপাচারী অর্থ তারা সত্যপথ থেকে বিচ্যুত; বাতিল পথের অন্তর্ভুক্ত।[22]

২০. জিহাদে বিরাগ ও তা থেকে পিছুটান :

মুনাফিকরা ইসলামের খাতিরে জিহাদে অংশগ্রহণে মোটেও আগ্রহ বোধ করে না; বরং জিহাদে অংশগ্রহণ না করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ আচরণ প্রসঙ্গে বলেন,

فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلاَفَ رَسُوْلِ اللهِ وَكَرِهُواْ أَن يُجَاهِدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَقَالُوْا لاَ تَنفِرُوْا فِي الْحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرّاً لَّوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ

‘যুদ্ধ থেকে পশ্চাদপসরণকারীরা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজেদের ঘরে বসে থাকতে পেরে খুব খুশি হয়েছে এবং নিজেদের জান-মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা অপসন্দ করে; আর তারা বলেছে, এই গরমে তোমরা বের হয়ো না। বল, জাহান্নামের আগুন এর চাইতেও অধিক উত্তপ্ত। যদি তারা এ কথা বুঝতে পারত’ (তওবা ৯/৮১)।

তাবুক যুদ্ধে কিছু মুনাফিক নানা বাহানা তুলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের সঙ্গে যুদ্ধে যায়নি। ছাহাবীগণের যুদ্ধে বেরিয়ে পড়ার পর তারা যে বাড়ী বসে থাকল সেজন্য তারা বরং খুব আনন্দিত। তারা নিজেদের জান-মাল ব্যয় করে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে একেবারেই অনাগ্রহী, অনিচ্ছুক। তাইতো তারা একে অপরকে বলে, এই গরমে যুদ্ধের জন্য বাইরে বের হয়ো না। তাবুক যুদ্ধ যে সময় হ’তে যাচ্ছিল, তখন ছিল প্রচন্ড গরম। তাইতো তারা বলেছিল, এই গরমে বাইরে বের হওয়ার দরকার নেই। তদুত্তরে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বললেন, তুমি ওদের বলে দাও, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতার জন্য যে জাহান্নামের আগুনের দিকে তোমরা ধাবিত হচ্ছ, তা তোমাদের পালিয়ে বাঁচা গরম থেকে বহু বহু গুণ বেশী গরম।[23]

২১. যুদ্ধ না করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং ভীতিকর গুজব ছড়ানো :

[ঈমানদাররা যাতে যুদ্ধের ময়দানে না যায়, আর গিয়ে থাকলে যাতে ময়দান ছেড়ে চলে আসে মুনাফিকরা সেজন্য তাদের অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের মাঝে এমন কথা ছড়ায় যাতে ভয়ে তাদের মন অস্থির হয়ে পড়ে।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِذْ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِم مَّرَضٌ مَّا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهُ إِلَّا غُرُوْراً- وَإِذْ قَالَت طَّائِفَةٌ مِّنْهُمْ يَا أَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوْا وَيَسْتَأْذِنُ فَرِيْقٌ مِّنْهُمُ النَّبِيَّ يَقُوْلُوْنَ إِنَّ بُيُوْتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍ إِنْ يُرِيْدُوْنَ إِلَّا فِرَاراً-

‘আর স্মরণ কর, যখন মুনাফিক এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি ছিল তারা বলতে লাগল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের সঙ্গে যে ওয়াদা করেছেন তা প্রতারণা বৈ কিছুই নয়। আর তাদের একটি দল বলেছিল, হে ইয়াছরিবের অধিবাসীরা! আজ (শত্রুবাহিনীর সামনে) তোমাদের দাঁড়াবার মত কোন জায়গা নেই। অতএব তোমরা ফিরে যাও। তাদের একাংশ তোমার কাছে এই বলে অনুমতিও চাইছিল যে, আমাদের বাড়ী-ঘরগুলো অরক্ষিত (তাই আমাদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিন)। অথচ তা অরক্ষিত ছিল না। এরা আসলে ময়দান থেকে পালাতে চেয়েছিল’ (আহযাব ৩৩/১২-১৩)।

২২. মুমিনদের সাথে থাকায় গড়িমসি :

যারা মুনাফিক তারা মুমিনদের সাথে জিহাদ কিংবা অনুরূপ কোন কাজে শরীক হ’তে গড়িমসি করে। মূলতঃ মুমিনদের উপর আপতিত বালা-মুছীবত থেকে বাঁচাই তাদের লক্ষ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنَّ مِنْكُمْ لَمَن لَّيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُم مُّصِيْبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُن مَّعَهُمْ شَهِيْداً ‘তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন লোক আছে, যে (যুদ্ধের ব্যাপারে) গড়িমসি করবে। তোমাদের উপর কোন বিপদ-মুছীবত চেপে বসলে সে বলবে, আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন। কেননা আমি সে সময় তাদের সাথে ছিলাম না’ (নিসা ৪/৭২)।

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্র বলতে গিয়ে মুমিনদের লক্ষ্য করে বলেছেন যে, হে মুমিনগণ! তোমাদের দল ও জাতিভুক্ত কিছু লোক, যারা তোমাদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে এবং যাহির করে যে, তারা তোমাদের দাওয়াত ও মিল্লাতের লোক, আসলে তারা মুনাফিক। তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদে অংশ নিতে তারা গড়িমসি করে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের সাথে যেতে বললে নানা অজুহাত ও টালবাহানা করে। তারপর যুদ্ধে যখন তোমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়- যেমন পরাজয় কিংবা নিহত ও আহত হওয়ার মত ঘটনা ঘটে তখন তারা বলে, বেশ হয়েছে, আল্লাহ আমাদের উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন। এজন্যেই তো তাদের সাথে যুদ্ধে আমরা ছিলাম না। থাকলে আমাদেরও আঘাত, যন্ত্রণা, খুন-খারাবী একটা কিছু ঘটে যেত। বিদ্বেষবশতঃ তোমাদের প্রতি তোমাদের সাথে যুদ্ধে অংশ না নেওয়ায় সে খুশি। কেননা আল্লাহর পথে যুদ্ধে মুমিনদের যে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে শিথিলতা দেখালে যে শাস্তির কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন, তার কোনটাই এই মুনাফিকরা বিশ্বাস করে না। ফলে তারা না পুণ্যের প্রত্যাশী, না শাস্তির ভয়ে ভীত।[24]

২৩. জিহাদে অংশ না নিতে অনুমতি প্রার্থনা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنْهُم مَّنْ يَقُوْلُ ائْذَن لِّيْ وَلاَ تَفْتِنِّيْ أَلاَ فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُواْ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ بِالْكَافِرِيْنَ ‘আর তাদের ভেতর এমন মানুষও আছে যারা বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে মুছীবতে ফেলবেন না। সাবধান! এরা তো মুছীবতে পড়েই আছে। আর জাহান্নাম তো কাফেরদের চারিদিকে ঘিরে রয়েছে’ (তওবা ৯/৪৯)।

আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতে তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে কিছু মুনাফিকের স্বভাব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, হে রাসূল! কিছু মুনাফিক তোমাকে বলে, আমাকে বাড়ি বসে থাকার অনুমতি দিন। তোমার সাথে যুদ্ধে গিয়ে রোমের সুন্দরী কিশোরীদের ফিৎনায় পড়ে যাই কি-না তাতেই এ অনুমতি চাচ্ছি। আল্লাহ বলেন, এ ধরনের কথা বলে তো ওরা ফিৎনায় পড়েই রয়েছে।[25]

২৪. জিহাদ থেকে পিছনে থাকার জন্য অজুহাত পেশ :

মুনাফিকরা কোন কারণ ছাড়াই যুদ্ধে অংশ নেয় না। এজন্য কৈফিয়তের সম্মুখীন হ’লে তাদের মিথ্যা অজুহাত পেশের অন্ত থাকে না। আল্লাহ তা‘আলা সে কথা তুলে ধরেছেন,

يَعْتَذِرُوْنَ إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ قُل لاَّ تَعْتَذِرُوْا لَن نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا اللهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ وَسَيَرَى اللهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُوْلُهُ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُوْنَ

‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তোমাদের কাছে ওযর পেশ করবে। বল, কোন ওযর-আপত্তি পেশ করো না। আমরা আর কখনো তোমাদের বিশ্বাস করব না। আল্লাহ তা‘আলা ইতিমধ্যেই তোমাদের সব কথা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অবশ্যই তোমাদের ক্রিয়াকলাপ দেখবেন। অতঃপর যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা তাঁর কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে এবং তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন দুনিয়ায় তোমরা কী কী কাজ করেছিলে’ (তওবা ৯/৯৪)।

মুনাফিকদের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলছেন যে, মুসলমানরা যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে মদীনায় ফিরে আসবে তখন এই মুনাফিকরা কেন যুদ্ধে যেতে পারেনি সে সম্পর্কে নানা কৈফিয়ত পেশ করবে। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা পূর্বেই বলে দিচ্ছেন, তুমি তাদের বলবে, তোমাদের আর এসব কৈফিয়ত, অজুহাত পেশ করার দরকার নেই। আমরা তোমাদের বিশ্বাস করি না। তোমাদের খবরাদি আল্লাহ তা‘আলা আগেই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের ক্রিয়াকলাপ অচিরেই মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। তারপর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে দৃশ্য-অদৃশ্যের পরিজ্ঞাত মহান আল্লাহর নিকট ফিরে যেতে হবে। সেখানে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ সকল কাজের খবর দিবেন এবং তদনুযায়ী প্রতিদান দেবেন।[26]

২৫. মানুষের দৃষ্টির আড়াল হওয়ার চেষ্টা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَسْتَخْفُوْنَ مِنَ النَّاسِ وَلاَ يَسْتَخْفُوْنَ مِنَ اللهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُوْنَ مَا لاَ يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطاً

‘এরা মানুষের কাছ থেকে নিজেদের কর্ম গোপন রাখতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে তারা কিছুই গোপন করতে পারবে না। তারা যখন রাতের অন্ধকারে এমন সব বিষয়ে সলাপরামর্শ করে যা তিনি পসন্দ করেন না, তখনও তিনি তাদের সাথেই থাকেন। এরা যা কিছু করে তা সম্পূর্ণই আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানের আওতাধীন’ (নিসা ৪/১০৮)।

এ আয়াতে মুনাফিকদের উক্ত আচরণের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাদের মন্দ কাজগুলো যাতে মানুষের দৃষ্টিতে ধরা না পড়ে, সেজন্য তারা তা লুকিয়ে করে। যার ফলে মানুষ তাদের প্রতিবাদ করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কাছে তো তারা তা খোলামেলাই করছে। কেননা তিনি তাদের সব গোপন কথা জানেন এবং তাদের মনের অবস্থাও তাঁর সুবিদিত। এজন্যই তিনি তাদের ধমক ও ভীতি প্রদর্শন স্বরূপ বলেছেন, রাতের অাঁধারে যখন তারা গোপনে সলাপরামর্শ করে যা আল্লাহর নিকট পসন্দনীয় নয় সে সময়েও আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন। তাদের সব কাজই আল্লাহর আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে।[27]

পরবর্তী অংশ পড়ুন: মুনাফিকী থেকে বাঁচার পথ

মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

[1]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৪৯।

[2]. ইবনু জারীর ত্বাবারী, জামিউল বায়ান ২০/২৫৮।

[3]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/৪৭৩।

[4]. জামিউল বায়ান ১৪/৩৩১।

[5]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫০।

[6]. বুখারী হা/৪৯০০; মুসলিম হা/২৭৭২।

[7]. ইবনুল কাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫০।

[8]. জামিউল বায়ান ৯/৩১৯।

[9]. প্রাগুক্ত ৯/৩২৪।

[10]. ইবনু জারীর ত্বাবারী, জামিউল বায়ান ৫/৩২৯।

[11]. মুসলিম হা/২৭৮৪।

[12]. নববী, মুসলিম শারহু ১৭/১২৮।

[13]. জামিউল বায়ান ১/২৭২।

[14]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫৩।

[15]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/১৬০।

[16]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫৪।

[17]. বুখারী হা/৪৫৬৭; মুসলিম হা/২৭৭৭।

[18]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ২/১৮২।

[19]. বুখারী হা/৪৬৬৮; মুসলিম হা/১০১৮।

[20]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/১৭৪।

[21]. ঐ ৪/১৯৬।

[22]. ঐ ৪/১৭৩।

[23]. ঐ ৪/১৮৯।

[24]. জামিউল বায়ান ৮/৫৩৮।

[25]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/১৬১।

[26]. ঐ, ৪/২০১।

[27]. ঐ, ২/৪০৭।

[28]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ২/১০৬।

[29]. ঐ, ৪/৮৩।

[30]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৪৯।

[31]. বুখারী হা/৩৪; মুসলিম হা/৫৮।

[32]. শরহুনববী মুসলিম ২/৪৬-৪৭।

[33]. মুসলিম হা/৬২২।

[34]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫৪।

[35]. মুসলিম হা/৬৫৪।

[36]. আওনুল মা‘বূদ ২/১৭৯।

[37]. তিরমিযী হা/২০২৭, হাকেম এটিকে ছহীহ বলেছেন।

[38]. তরীকুল হিজরাতাইন, পৃঃ ৬০৩।

[39]. শু‘আবুল ঈমান ১০/২২৩।

[40]. ইগাছাতুল লাহফান ১/২৫০।



ইসলামের প্রথম কিবলা,

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ০৪, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাহ্‌কে রাতের বেলাতে ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ করিয়েছিলেন, মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যাহার চতুর্দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল (সূরায়ে বনী ইসরাঈল ১)। রাসূলে পাক সা: মাসজিদুল আকসা থেকে পবিত্র মি’রাজ অর্থাৎ ঊর্র্ধ্বাকাশ করেন। ঐদিনই আক্বায়ে সরদারে দো জাহাঁ রাহমাতুল লিল্‌ আলামীন হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ সা: সকল ফিরিশতা এবং সকল আম্বিয়াদের এশার নামাজের ইমামতি করেন খাতিমুল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)। অতঃপর তিনি মাসজিদুল আকছা থেকে রফরফ নামক সওয়ারী দিয়ে তিনি সিদরাতুল মুনতাহাতে যান।সেখানে আল্লাহ্‌র নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ছোটাছুটি করেছিল। ফিরিশতা সমূহ স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিলেন। আল্লাহ্‌র রাসূল (সা:)কে ভ্রমণকারী পাল্কি রফরফ সবুজ রঙের গদি বিশিষ্ট ছিল। মূলত: মুসলিম উম্মাহের সর্বপ্রথম কিবলা ছিল মাসজিদুল আকসা বা বাইতুল মাক্বদিছ। এখানেই রাসূলে পাক (সা:) এর মি’রাজ বা ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণের সকল স্মৃতিচিহ্ন বিজড়িত রয়েছে। আল কুদ্‌স অর্থ পবিত্র। সিরিয়া থেকে হিজরত পবিত্র মক্কা নগরীতে মাসজিদুল হারাম নির্মাণ সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহিম (আ:) আর ফিলিস্তিন নগরীতে আল কুদ্‌স, বাইতুল মাক্বদিছ, আল আকসা নির্মাণ করেন সাইয়্যিদুনা হযরত দাউদ (আ:)।


বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১

সহিহ হাদিসের আলোকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ইলমে গায়েবঃ

বুধবার, অক্টোবর ২৭, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


সহিহ হাদিসের আলোকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ইলমে গায়েবঃ

ইমাম মুসলিম (রহঃ) হযরত ‘আমর ইবনে আখতাব (আবু যায়দ) আল–আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  আমাদের সাথে ফজরের নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, যতোক্ষণ না যোহরের নামাযের সময় হয়; তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন এবং নামায শেষে আবার তাতে উঠে আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন। ইতোমধ্যে আসরের নামাযের সময় হয় এবং তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি নামাযশেষে আবারও মিম্বরে আরোহণ করেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁর বয়ান রাখেন। পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত যা যা ঘটবে, তার সবই তিনি আমাদের বলেন। আমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি–ই সবচেয়ে জ্ঞানী যিনি এর অধিকাংশ মনে রাখতে পেরেছিলেন।” [সহীহ মুসলিম: ৪১/৬৯১৩, মুসনাদে ইমাম আহমদ]

ইলমে গায়েবের পক্ষে সহীহ হাদিস

“রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  হয়রত আলী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) কে বলেন, রাওযা খাখ নামক স্থানে পৌঁছালে একজন স্ত্রীলোককে দেখতে পারবে। তার কাছে মুশরিকদের নিকট লেখা একটি গোপন পত্র আছে। পত্রটি নিয়ে আসো। আলী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)  বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বর্নিত জায়গায় পৌঁছালে উটের উপর আরোহীত একজন নারীকে দেখতে পাই। আমরা তার কাছে গিয়ে সেই গোপন পত্রটি আমাদের কাছে অর্পণ করতে বলি। সে বলল, আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা উটকে বসিয়ে তল্লাসী নিলাম। কিন্তু কোন পত্র পেলাম না। তখন আমরা বললাম, রাসূলুল্লাহ মিথ্যা কথা বলেন নি। তোমাকে পত্র বের করতেই হবে। নতুবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করে ছাড়ব। যখন সে আমাদের কঠোর মনোভাব লক্ষ্য করলো তখন সে তার কোমরে পরিধেয় বস্ত্রের গিঁটে কাপড়ের পুটলির মধ্য থেকে পত্রখানা বের করে দিল।” [সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, হাদিস নং ৩৬৯৪]

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর সব ইলমে গায়েব কি আল্লাহর ওহী? নীচের সহীহ হাদিসের ঘটনাবলী কোন ওহীর মাধ্যমে এসেছে?

“ওহে ওহুদ পাহাড়, সুদৃঢ় থাকো। তোমাতে একজন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), একজন সিদ্দিক ও দুইজন শহীদ ছাড়া আর কেউই চড়েনি!” উমর ও উসমান ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) শহীদ হন এবং আবু বকর ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেসালপ্রাপ্ত হন। [বুখারী ৩৪৩৪, তিরমিযী (সহীহ), আবু দাউদ, আন্ নাসায়ী ও ইমাম আহমদ।]

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেন, “আমি শপথ করে বলছি যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  ভালোবাসেন এমন কাউকে আগামীকাল আমি পতাকা প্রদান করবো (খায়বার যুদ্ধে), যার মাধ্যমে আল্লাহ বিজয় দান করবেন।” পরদিন সকালবেলা তিনি আলী ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) এর খোঁজ করেন। তিনি চোখের রোগে আক্রান্ত ছিলেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  থুথু মুবারক দিলে তাঁর চোখ ভাল হয়ে যায়। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  তাঁকে পতাকা হস্তান্তর করেন এবং আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে বিজয় মন্ঞ্জুর করেন।” (বুখারী ৩৪৩৭)

রাসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  সাহাবীদেরকে হাবশা (বর্তমানের ইথিওপিয়া)-এর বাদশা নাজাশী’র মৃত্যু সংবাদ সেই দিনই শুনালেন যেদিন তিনি মারা গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের (দীনী) ভাইয়ের জন্য মাগফেরাত কামনা কর। (বুখারী ৩৬০১)

“কাতার সোজা করে দাড়াও কারণ আমি পিছনেও দেখি।” (বুখারী ৬৮; মুসনাদ আহমাদ ৩/১৮২)

আবু মুসা আশয়ারী ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) বর্ননা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেন, “আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের সমস্ত ইলিম দান করা হয়েছে”। (কানযুল উম্মাল ৩১৯২৬; ত্ববরানী শরীফ; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা; আবু ইয়ালা!

আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আল্লাহর প্রিয় হাবীব (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার শুরু হতে শেষ পযর্ন্ত যা কিছু অতীতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সবকিছু জানেন।

হযরত আমর ইবনে আখতার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরে নামাজ পড়লেন । অতঃপর মিম্বরে আরোহন করলেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করলেন; এমনকি যোহরের নামাজের সময় হয়ে গেল; এক পর্যায়ে তিনি মিম্বর হতে নেমে এসে যোহরের নামাজ পড়ালেন । অতঃপর আবারো আরোহন করলেন মিম্বরে, আর বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন, এমনকি আসরের নামাজের সময় উপস্থিত হল । অতঃপর মিম্বর হতে নেমে আসরও পড়লেন, পুণরায় মিম্বরে আরোহন করে বক্তব্য দিতে দিতে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল সেদিন নবীজী আমাদের সামনে অতীতে যা কিছু ছিল এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সকল বিষয়ে আমাদেরকে সংবাদ জানিয়ে দিয়েছেন । আমাদের মধ্যে যাদের স্মরণশক্তি অধিক তারা সেসব (অদৃশ্য) সংবাদ বেশি মনে রাখতে পেরে।

[সূত্রঃ সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নম্বর–৬২৩০, কিতাবুল কদর; সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নম্বর–২৮৯১, কিতাবুল ফিতান; সহীহ তিরমিযী শরীফ, হাদীস নম্বর–২১৯১, কিতাবুল ফিতান]

আল্লাহ কুরআনে বলছেন নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইলমে গায়েব আছে। অথচ মিথ্যাবাদীরা পোস্ট দেয় নবীজি(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইলমে গায়েব নেই। আল্লাহর ও তাঁর রাসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তারা চরম মিথ্যাবাদিতার আহস্রয় নিচ্ছে। রাব্বুল আলামিন বলেন, “আপনি যা জানতেন না – তা (আল্লহ) আপনাকে শিখিয়েছেন। কেননা, আপনার প্রতি আল্লাহর অপরিসীম করুণা রয়েছে” (৪:১১৩)। “আর তিনি (নবী) গায়েবের ব্যাপারে কৃপণ নন” (সূরা তাকভীর: ২৪)। “তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত।” (৭২:২৬–২৭)।

তাছাড়া অসংখ্য হাদিসে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইলমে গায়েবের প্রমাণ বিদ্যমান। আল–বেদায়া ওয়ান–নেহেয়ায় অসংখ্য ভবিষ্যৎ বাণীগুলো পড়লেই প্রমাণ পাওয়া যায়।

ইলমে গায়েব সম্পর্কিত আকীদা তিন ধরনের রয়েছে এবং এদের পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে । (খালিসুল ইতেকাদ গ্রন্থের ৫ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত) ।

প্রথম প্রকারঃ–

১) মহান আল্লাহ তাআলা সত্ত্বাগত ভাবেই জ্ঞানী । তিনি অবগত না করালে কেউ একটি অক্ষরও জানতে পারে না ।

২) আল্লাহ তাআলা হুযুর আলঅইহিস সালাম ও অন্যান্য আম্বিয়া কেরাম(আলাইহিস সালাম) কে তাঁর আংশিক অদৃশ্য বিষয়াদি জ্ঞান দান করেছেন ।

৩) হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টিকূল থেকে বেশী । হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) ও খলীল (আলাইহিস সালাম) মৃত্যুর ফিরিশতা এবং শয়তানও সৃষ্টিকূলের অন্তর্ভূক্ত ।

এ তিনটি বিষয় ধর্মের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়াদির অন্তর্ভূক্ত বিধায় এগুলো অস্বীকার করা কুফর ।

দ্বিতীয় প্রকারঃ–

১) আম্বিয়া কিরাম (আলাইহিস সালাম)  এর মাধ্যমে আওলিয়া কিরাম (রহমতুল্লাহে আনহু) ও ইলমে গায়বের কিয়দংশ পেয়ে থাকেন ।

২) আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালাকে পঞ্চ গায়বের অনেক ক্ষেত্রে সুবিস্তৃত জ্ঞান দান করেছেন ।

যে এ দ্বিতীয় প্রকারের ইলমে গায়বকে অস্বীকার করবে সে পথভ্রষ্ট ও বদময হাবী বলে গণ্য হবে । কেননা এটা শত শত হাদীসকে অস্বীকার করার নামান্তর 

তৃতীয় প্রকারঃ–

১) কিয়ামত কখন হবে সে সম্পর্কেও হুযুর আলাইহিস সালাম জ্ঞান লাভ করেছিলেন ।

২) বিগত ও অনাগত ভবিষ্যতের সমস্ত ঘটনাবলী যা লওহ মাহফুজে সুরক্ষিত আছে সে সবের জ্ঞান বরং এর চেয়েও বেশী জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দান করা হয়েছে ।

৩) হুযুর আলাইহিস সালামকে রূহের হাকীকত বা নিগুঢ় তত্ত্ব এবং কুরআনেরসমস্ত অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধক বিষয়াদির জ্ঞান দান করা হয়েছে । –সুত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড–

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর ইলমে গায়েব নিয়ে কিছু বেয়াদব ঠাট্টা করে বলে এমন গায়েব তো আমরাও জানি। তাদের আমল বরবাদ হয়ে গেছে। দেখুন নিচের আয়াতটি:

আর তিনি আদমকে সমস্ত বস্তুর নাম শিখালেন। অতঃপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, আমাকে এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। তারা বলল, তুমি পবিত্র! তুমি আমাদেরকে যা শিখিয়েছ তা ব্যতীত আমরা কিছুই জানি না। নিশ্চয় তুমিই জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। তিনি বললেন, হে আদম, তাদেরকে এসবের নাম বলে দাও। তারপর তিনি তাঁদেরকে সে সবের নাম বলে দিলেন। তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের সকল অদৃশ্যের ব্যাপার অবগত রয়েছি? এবং তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা গোপন কর সবই জানি! এবং যখন আমি আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে অস্বীকৃতি জানালোএবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা ৩১–৩৪)

আদম (আলাইহিস সালাম) কে আল্লাহ সব শিখালেন। ফেরেস্তারা এ নিয়ে যুক্তিতর্ক না করলেও ইবলিশ তার শয়তানি বুদ্ধিতে করলো। আর বলল, সে তো মাটির তৈরি আর আমি আগুনের। অন্যের শিখানো জ্ঞানে আদম (আ) এর কৃতিত্ব কী? যেমন বর্তমানে শয়তানের শীষ্যরা বলে থাকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর এলমে গায়েবের ব্যাপারে। আল্লাহ তার ৯ লক্ষ বছরের সব আমল বরবাদ করে দিলেন।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইল্‌মে গাইব বা অদৃশ্য জ্ঞান

কোরআন শরীফের আলোকে :-

عالم الغيب فلا يظهرعلى غيبه احدا– الا من ارتضى من رسول فانه يسلك من بين يديه ومن خلفه رصدا–

১।

অর্থ : অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যে জ্ঞানের উপর কাউকে এ ক্ষমতাবান করেন না, কিন্তু তাঁর মনোনিত রসূলগণ ব্যতীত যেহেতু তাদের অগ্রে পশ্চাতে পাহারা নিয়োজিত করে দেন। (সূরা জীন, আয়াত নং ২৬–২৭)

وما هو على الغيب بضنين–

২।

 অর্থ : তিনি (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অদৃশ্য বিষয় বর্ণনা করার ব্যাপারে কৃপণ নন। (সূরা তাকভীর, আয়াত নং ২৪)

ماكان الله ليذر المؤمنين على ما انتم عليه حتى يميز الخبيث من الطيب وما كان الله ليطلعكم على الغيب ولكن الله يجتبى من رسله من يشاء فا منوا بالله ورسله وان تؤمنوا وتتقوا فلكم اجرعظيم–

৩।

অর্থ : আল্লাহ মুসলমানদের এ অবস্থায় ছাড়াবার নন যে অবস্থায় তোমরা রয়েছ যে পর্যন্ত না পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে। আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দিবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করেন তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাকে চান। সুতরাং ঈমান আনয়ন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর; এবং যদি তোমরা ঈমান আনয়ন কর এবং পরহেজগারী অবলম্বন করো তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান, পারা –৩, আয়াত নং ১৭৯,)।

ولو لا فضل الله عليك و رحمته لهمت طائفلة منهم ان يضلوك و ما يضلون الا انفسهم و ما يضرونك من شئ و انزل الله عليك الكتب و الحكمة وعلمك ما لم تكن تعلم و كان فضل الله عليك عظيما–

৪।

অর্থ : এবং হে মাহবুব! যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া আপনার উপর না থাকত তবে তাদের মধ্যকার কিছু লোক এটা চাচ্ছে যে, আপনাকে ধোকা দিবে, এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকেই পথভ্রষ্ট করেছে। এবং আপনার কোন কিছুই ক্ষতি করবে না আর আল্লাহ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবর্তীন করেছেন। এবং আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। (সূরা নিসা, আয়াত নং ১১৩, পারা–৫)।

্থ কামিল (এম.এ.) ফিকহ্‌ ফলপ্রার্থী, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা।

এ আয়াত প্রসঙ্গে তাফসীরে খাজীনে রয়েছে :

يعنى من احكام الشؤع وامور الدين وقيل علمك من علم الغيب مالم تكن تعلم وقيل معناه علمك من خفيات الامور واطلعك على ضمائر القلوب وعلمك من احوال المنافقين وكيدهم–

অর্থ : শরীয়তের বিধান ও ধর্মীয় বিষয়বলী। আর বলা হয়েছে–আপনার শিক্ষা দিয়েছেন ঐ ইলমে গাইয় যা আপনি জানতেন না। বলা হয়েছে এর অর্থ হলো এই যে, আপনাকে গোপন বিষয়াবলী, অন্তরসমূহের গোপন কথা, মুনাফিকদের অবস্থাদি ও তাদের ষড়যস্ত্রগুলোর জ্ঞান দান করা হয়েছে।

এ আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে তাফসীরে জালালাইন শরীরে রয়েছে : اى من الاحكام والغيب–

অর্থ : শরীয়তের বিধান ও ইলমে গাইব শিক্ষা দিয়েছেন।

وما كان الله ليطلعكم على الغيب ولكن يجتبى من رسله من يشاء–

৫।

 অর্থ : আর (হে সাধারণ মানুষ !) এটা আল্লাহর শান নয় যে, অদুশ্য জ্ঞান সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। তবে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। (তাঁকে অদুশ্য জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেন)। (সুরা আল ইমরান আয়াত নং ১৭৯)

এই আয়াত প্রসঙ্গে তাফসীরে বায়যাবীতে রয়েছে :

وما كان الله ليؤتى احدكم علم الغيب فيطلع على ما فى القلوب من كفر وايمان ولكن الله يجتبى لرسالته من بشاء فيوحى الله وبخبره ببعض المغيبات–

অর্থ : (হে সাধারণ মানুষ) এটা আল্লাহর কাজ নয় যে, তোমাদের মধ্যে কাউকে ইলমে গায়েব দান করবেন এবং অন্তরের কুফুর ও ঈমান সম্পর্কে অবহিত করবেন। তবে এ মহামর্যাদা ও রিসালাতের জন্য আল্লাহ যাকে মনোনিত করেন। অতঃএব তাঁর প্রতি ওহী পাঠান এবং কতেক অদৃশ্যের সংবাদ তাকে প্রদান করেন।

এই আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে তাফসীরে খাজীনে এসেছে :

ولكن الله يصطفى ويختار من رسله فيطلعه على مايشاء من غيبه–

অর্থ : কিন্তু আল্লাহ রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনিত ও নির্বাচিত করেন। অতঃপর তাঁর অদৃশ্যে জ্ঞান থেকে যতটুকু ইচ্ছা তাঁকে দান করেন।

এই আয়াত সম্পর্কে তাফসীরে জালালাইন শরীফে রয়েছে :

ولكن الله يجتنبى ويختار من رسله فيطلعه على مايشاء من غيبه كما اطلع النبى صلى الله عليه و سلم على حبل المنافقين–

অর্থ : কিন্তু আল্লাহ রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনিত ও নির্বাচিত তাঁকে গাইব সম্পর্কে অবহিত করেন। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

ربهم يحشوما من دا بة فى الارض و لاطائر يطير بجناحيه الاامم امثالكم ما فرطنا فى الكتب من شئ ثم الى رون–

৬।

 অর্থ : এবং নেই কোন ভূ–পৃষ্ঠে বিচরণকারী এবং নেই কোন পাখি, যা আপন ডানার সাহায্যে ওড়ে, কিন্তু সবই তোমাদের মতো উম্মত আমি এ কিতাবের মধ্যে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ত্রুটি করিনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে উঠানো হবে।

(সূরা আনআম, আয়াত নং ৩৮, পারা ৬)

وما كان هذا القران ان يفترى من دون الله ولكن تصديق الذى بين يديه و تفصيل الكتب لاريب فيه من رب العلمين–

৭।

 অর্থ : এবং এ কোরআনের ক্ষেত্রে একথা শোভা পায়না যে, সেটাকে কেউ নিজ পক্ষ থেকে রচনা করেনেবে, আল্লাহ ব্যতিত, হ্যাঁ সেটা পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যায়ন এবং লওহ মাহফুজ এর মধ্যে যা কিছু লেখা আছে সব কিছুরই বিশদ ব্যাখ্যা, সেটাতে কোন সন্দেহ নেই যে, (সেটা) প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। (সূরা য়ূনুস, আয়াত নং ৩৭, পারা ১০)

و يوم نبعث فى كل امة شهيداعليهم من انفسهم وجئنابك شهيدا على هولاء ونزلنا عليك الكتب تبيانا لكل شئ وهدى و رحمة وبشرى للمسلمين–

৮।

অর্থ : এবং যে দিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের এর মধ্যে একজন সাক্ষী তাদের মধ্য থেকে উঠাবো যে, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। এবং হে মাহবুব! আপনাকে তাদের সবার উপর সাক্ষী বানিয়ে উপস্থিত করবো এবং আমি আপনার উপর এ কোরআন অবর্তীন করেছি, যা প্রত্যেকে বস্তুর সুস্ষ্ট বিবরণ, পথ নির্দেশনা, দয়া ও সুসংবাদ মুসলমানদের জন্য। (সূরা নাহ্‌ল, আয়াত নং ৮৯)

الرحمن– علم القران–

অর্থ: পরম দয়ালু! আপন মাহবুবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা আর রহমান, আয়াত নং ১–২)

হাদীস শরীফের আলোকে :-

عن عمررضى الله عنه يقول قام فينا النبى صلى الله عليه و سلم مقاما فاخبرنا عن بدء الخلق حتى دخل اهل الجنة منازهم واهل النار منازهم حفظ ذلك من حفظه و نسيه من نسيه-(رواه البخارى)-

৯।

অর্থ : হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাঁড়িয়া ছিলেন তিনি (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কে কে জান্নাতে যাবে, তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। এবং কে কে জাহান্নামে যাবে তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। তাদের মধ্যে যারা স্মরণ রাখার স্মরণ রেখেছে যারা ভুলার ভুল গেছে। (বুখারী শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫০৬)

وعن ابى هريرة رضى الله تعلى عنه قال ابو القاسم صلى الله عليه و سلم والذى نفسى بيده لوتعلمون ما اعلم لبكيتم كثيرا ولضحكتم قليلا-(رواه البخارى)

১০।

 অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হইতে বর্ণিত,তিনি বলেন, আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার প্রাণ যাঁহার হাতে তাঁহার শপথ (করে বলিতেছি যে) আমি যাহা জানি তাহা যদি তোমরা জানিতে তাহা হইলে কাঁদিতে বেশী আর হাসিতে খুব কম। (বুখারী শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৪৫৬)

وعن انس رضى الله تعلى عنه: قال نعى النبى صلى الله عليه و سلم زيدا وجعفرا وابن روحة للناس قبل ان ياتيهم خبرهم فقال اخذ الراية زيد فاصيب ثم اخذ جعفر فاصيب ثم اخذ ابن رواحة فاصيب وعيناه تذر فان حتى اخذ الراية سيف من سيوف الله يعنى خالد بن الوليد عليه فتح الله عليهم -(رواه البخارى)

১১।

অর্থ : হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, যায়েদ ইবনে হারেসা, জাফর ইবনে আবু তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার মৃত্যু সংবাদ যুদ্ধের ময়দান থেকে আসার পূর্বেই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন রণক্ষেত্রের বিবরণ। তিনি এভাবে দিয়েছেন, যায়েদ পতাকা হাতে নিয়েছে, সেও শহীদ হয়েছে। অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা পতাকা ধরেছে, সেও শহীদ হয়েছে। (বর্ণনাকারী বলেন) এই সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর তরবারি সমূহের এক তরবারি (অর্থাৎ খালিদ ইবনে ওয়ালীদ) ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের উপর মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেছেন। (বুখারী শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং ৫৩৩, ১৫ লাইন পরে)

وعن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه: ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال: ان رجلا يأتيكم من اليمن يقال له اويس لايدع باليمن غير ام له قد كان به بياض فدعا الله فاذهبه الاموضع الدنيا راو الدهم فمن لقيه منكم فليستغفر لكم و فى رواية قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم: يقول ان خير التابعين رجل يقال له اويس وله والدة وكان به بياض فمروه فليستغفرلكم– (رواه مسلم)

১২।

অর্থ : হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামান দেশ থেকে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। তাঁর নাম হবে “ওয়াইস”।

একজন মাতা ছাড়া ইয়ামান দেশে তাঁর আর কোন নিকটতম আত্নীয়–স্বজন থাকবে না। তাঁর দেহে ছিল শ্বেত–ব্যাধি। এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। ফলে এক দিরহাম অথবা এক দীনার পরিমান জায়গা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা তাঁর সেই রোগটি দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যে কেউ তাঁর সাক্ষাত পাবে, সে যেন নিজের মাগফিরাতের জন্য তাঁর কাছে দোয়া প্রার্থনা করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে হযরত ওমর (রা) বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তাবেয়ীদের মধ্যে সর্বোত্তম এক ব্যক্তি তাঁর নাম ওয়াইসা, তাঁর শুধু একজন মা রয়েছে, এবং তাঁর শরীরে শ্বেত দাগ থাকবে। সুতরাং তোমরা নিজেদের মাগফিরাতের দোয়ার জন্য তাঁর কাছে অনুরোধ করবে। (মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৮১, ২৫ লাইন পরে)।

عن جابر بن سمرة قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول: لا يزال الاسلام عزيزا الى اثنى عشر خليفة كلهم من قريش وفى رواية لا يزال امر الناس ما ضياما ولهم اثنا عشر رجلا كلهم من قريش وفى رواية لايزال الدين قائما حتى تقوم الساعة او يكون عليكم اثنا عشر خليقة كلهم من قريش-(متفق عليه)

১৩।

অর্থ : হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, বারজন খলিফা অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ইসলাম শক্তিশালী থাকবে। তাঁরা সকলেই হবেন কোরাইশ বংশোদ্ভুত। অপর এক রেওয়ায়াতে আছে, মানুষের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সঠিকভাবে চলতে থাকবে বারজন খলীফা হওয়া পর্যন্ত। তারা সকলেই হবেন কোরাইশ বংশের। অপর আর এক রেওয়ায়াতে আছে {রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন} বারজন খলিফা অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ইসলাম শক্তিশালী থাকবে। তাঁরা সকলেই হবেন কোরাইশ বংশোদ্ভুত। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৫০, ২১ লাইন পরে)।

عن ابن عمر قال قال النبى صلى الله عليه و سلم اللهم بارك لنا فى شامنا اللهم بارك لنا فى يمننا قالوا يارسول الله و فى نجدنا قال اللهم بارك لنا فى شامنا اللهم بارك لنا فى يمننا قالوا يا رسول الله وفى نجدنا فاظنه قال فى الثالثة هناك الزلازل والفتن بها يطلع قرن الشيطان-(رواه البخارى)

১৪।

অর্থ : হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হে আল্লাহ! আমাদের এবং আমাদের শাম দেশের উপর বরকত দান করুন। হে আল্লাহ ! আমাদের জন্যে আমাদের ইয়ামেন দেশে বরকত দান করুন ! তখন সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নজদবাসীর জন্যেও দোয়া করুন। তিনি আবারোও বললেন, হে আল্লাহ ! আমাদের জন্যে আমাদের শাম দেশের বরকত দান করুন। হে আল্লাহ আমাদের জন্যে আমাদের ইয়ামেনে দেশে বরকত দান করুন। এবারও সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের নজদ বাসীদের জন্যও দোয়া করুন। বর্ণনাকারী বললেন আমার ধারনা, তিনি তৃতীয়বার বললেন, সেখানে তো ভূকম্পন এবং ফেতনা রয়েছে এবং সেখানে শয়তানের শিং উদিত হবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৮২, ৯ লাইন পরে)

و عن زينب امراة عبد الله قالت خطبنا رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال يا معشر النساء تصدقن و لو من حليكن فانكن اكثر اهل يوم القيمة-(رواه الترمذى)

১৫।

অর্থ : হযরত যয়নব আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর স্ত্রী বলেন, একদিন রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উপদেশ দিলেন এবং বললেন, হে নারী সমাজ! তোমরা সদকা কর যাকাত দাও যদিও তোমাদের গহনা–অলংকার হয়। কেননা কিয়ামতের দিন তোমরাদের মধ্যে জাহান্নামের অধিক অধিবাসী হবে। (তিরমিজি শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ১৫৯, ২৫লাইন পরে)।

وعن جابر رضى الله عنه مع رسول الله صلى الله عليه و سلم الى سعد بن معاذ حين توفى فلما صلى عليه رسول الله صلى الله عليه و سلم وضع فى قبره وسوى عليه سبح رسول الله صلى الله عليه و سلم فسبحنا طويلا ثم كبر فكبر نا فقبل يا رسول الله لم سبحت ثم كبرت قال لقد تضايق على هذا العبد الصالح قبره حتى فرجه الله عنه-(رواه احمد)

১৬।

অর্থ : হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, হযরত সা’দ ইবনে মুয়াজ যখন ইন্তেকাল করেন, আমরা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার জানাযায় হাজির হলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক জানাযা পড়ার পর তাকে যখন কবরে রাখা হল ও মাটি সমান করে দেওয়া হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দীর্ঘ সময় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করলেন, আমরাও তাঁর সাথে দীর্ঘ তাসবীহ পাঠ করলাম। অতপর তিনি তাকবীর বললেন। আমরা তাকবীর বললাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কেন আপনি এমন তাসবীহ ও তাকবীর বললেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ নেক ব্যক্তির পক্ষে তার কবর অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এতে আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন। (মুসনাদে আহমদ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ২৬, ১২ লাইন পরে)।

وعن عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ان الله لا يقببض العلم انتزاعا ينتزعه من العباد و لكن يقبض العلم يقبض العلماء حتى ذا لم يبق علما اتخذ الناس روساجها لا فسئلوا افافتوا بغير علم فضلوا واضلوا-(متفق عليه)

১৭।

অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় (শেষ যুগে) আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের (অন্তর থেকে) টেনে বের করার মাধ্যমে ইসলাম উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই তিনি ইলম উঠিয়ে নেবেন। এমনকি যখন (দুনিয়াতে) কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন মানুষ মূর্খ লোকদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তাদের নিকট মাসায়ালা জিজ্ঞাসা করা হবে আর তারা না জেনেই ফতোয়া দেবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৩৩, ৮ লাইন পরে)।

وعن جابر بن سمرة رضى الله عنه قال سنمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول لتققحن عصابة من المسلمين كنزال كسرى الى فى الابيض-(رواه مسلم)

১৮।

অর্থ : হযরত জাবের ইবনে সামুর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মুসলমানদের একদল নিশ্চয় ” কিসরার “(পারস্যের) সম্রাট বংশের গুপ্ত সম্পদ জয় করবে। যা একটি শ্বেত প্রাসাদে রাক্ষিত রয়েছে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৪৬৬, ৭ লাইন পরে)।

وعن انس رضى الله عنه قال كنا مع عمر بين مكة والمدينة فتراينا الهلال وكنت رجلا حديد البصرقر اتية و ليس احد نرعم انه راه غيرى فجعلت اقول لعمر اما تراه فجعل لايراه قال يقول عمر ساراه وانا مشتلق على فراشى ثم انشا يجد ثنا عن اهل بدر قال ان رسول الله صلى الله عليه و سلم كان برينا مصارع اهل بدر مس يقول هذا مصرع فلان غدا ان شاء الله وهذا امصرع فلان غدا ان شاء الله قال عمر والذى بعثه بالحق مااحطؤا الحدود التى حدها رسول الله صلى الله عليه و سلم قال فجعلوا فى بئر بعضهم على بعض فا نطلق رسول الله صلى الله عليه و سلم حتى انتهى اليهم فقال يافلان بن فلان و يافلان بن فلان هل وجدتم ماوعدكم الله و رسول حقا فقال عمر يا رسول الله كيف تكلم اجساد الاارواح فيها فقال ماانتم باسمع لما اقول منهم غير انهم لايتطيعون ان يردوا على سيئا-(رواه المسلم)

১৯।

অর্থ : হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন, একবার আমরা মক্কা এবং মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর সঙ্গে ছিলাম, তখন আমরা নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করি। আমি ছিলাম তীক্ষ্ন দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি। সুতরাং আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আর আমি ছাড়া সেখানে অন্য কেউই চাঁদ দেখতে পেয়েছে বলে দাবি করেনি। আমি হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু কে বললাম, আপনি কি চাঁদ দেখেছেন না? কিন্তু তিনি তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তার পর ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বললেন, অচিরেই আমি আমার বিছানায় শুয়েশুয়ে তা দেখব। (হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন) অতপর ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে লাগলেন এবং বললেন, যুদ্ধের একদিন আগে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কে ঐ সব স্থানে গুলো দেখিয়ে দিলেন,যেই যেই স্থানে কাফেরদে লাশ পরে থাকবে। ইন্‌শাআল্লাহ আগামীকাল এই স্থানে অমুকের লাশ পরবে। এই বলে তিনি এক একটি করে নিহতের স্থান সমূহ দেখালেন। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন,সৈই মহান সত্তার কসম,যিনি তাকে সত্যে সহকারে প্রেরণ করেছেন, যে সকল স্থান রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিদ্দিষ্ট করেছিলেন, উক্ত স্থান থেকে একটু খানি এদিক ওদিক সরে পরেনি। (বর্ণনাকারী বলেন) অতপর তাদের কে একটি (অনাবাদ) কূপের মধ্যে একটির ওপর একটি কে নিক্ষপ করা হল। এরপর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কূপের কাছে এসে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তোমরা কি তা ঠিক ঠিক পেয়েছ? তবে আমার আল্লাহ আমাকে যা ওয়াদা দিয়েছেন, আমি অবশ্য তা ঠিক ঠিক ভাবে পেয়েছি। তখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কিরূপে এখন দেহসমূহের কথা বললেন, যাদের মধ্যে কোন প্রাণ নেই? তিনি বললেন আমি তোমাদের কে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে অধিক শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন জওয়াব দিতে ষক্ষম নয়। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৪৩, ১৪ লাইন পরে)।

وعن جابر رضى الله عنه قال رايت النبى صلى الله عليه و سلم يرمى على راحلته يوم النحر و يقول لتاخذ وامنا سككم فانى لاادرى بعلى لا احج بعد حجتى هذه-(رواه المسلم)

২০।

অর্থ : হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখেছি কোরবানী দিন তিনি আরোহণে থেকে কাকর মারছেন এবং বললেন তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ্জ্বের আহকাম শিখে নাও। আমি জানি না সম্ভবত আমার এ হজ্জ্বের পর আর আমি হজ্জ্ব করতে পারব না। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ২৩০, ২৩ লাইন পরে)।

عن حذيفة رضى الله عنه قال قما فينا رسول الله صلى الله عليه و سلم مقاما ماترك شيئا يكون فى مقامه ذلك الى قياما السعة الا حدث به حفظه من حفظه من نسيه من نسيه قد علمه اصحابى هؤلاء وانه ليكون منه الشء قد نسيته فاراه فاذكره كما يذكر الرجل اذا

وعن ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه قال قام فينا رسول الله صلى الله عليه و سلم خطيبا بعد العصر فلم يدع شيئا يكون الى قيما الساعة الاذكره حفظه من حفظه و نسيه من نسيه وكان فيما قال ان الدنيا حلوة خضرة وان الله مستخلفكم فيها فناظر كيف تعملون الا فاتقوا الدنيا والتقوا النساء وذكر ان لكل غادر لواء يوم القيمة بقدر غدرية فى الدنيا ولاغدر اكبر من غدر امير العامة يغرز لواءه عند استه قال ولايمنعن احدا منكم هيبة الناس ان يقول بخق اذا علمه وفى رواية ان راى منكرا ان يغيره فبكم ابو سعيد وقال قد رايناه فمنعتنا هيبة الناس ان نتكلم فيه ثم قال الا ان بنى ادم خلفوا على طبقات شتى فمنهم من يولد مؤمنا ويحيى مؤمنا ويموت مؤمنا ومنهم من يولد كافرا ويحيى كافرا ويموت كافرا و منهم من يولدمومنا ويحيى مومنا ويموت كافرا منهم من يولد كافرا ويحيى كافرا ويموت مومنا قال وذكر الغضب فمنهم من يكون سريع الغضب سريع الفىء فا احدهما بالاخرى ومنهم من يكون بطى الغضب بطى الفىء فا احدهما بالاخرى وخياركم من يكون بطى الضغب سريع الفىء وشراركم من يكون سريع الغضب بطى الفىء قال اتقوا الغضب فانه جمرة على قلت ابن ادم الاترون الى انتفاخ اوداجه و حمرة عينيه فمن احس بشئ من ذلك فليضطجع وليتلبد بالارض قال وذكر الدين فقال منكم من يكون حسن القضاء واذا كان له افحش فى الطلب فا احدهما بالاخرى ومنهممن يكون

سيئ القضاء وان كان له اجمل فى الطلب فا احدهما بالاخرى و خياركم من اذا كان عليه الدين احسن القضاء و ان كان له اجمل قى الطلب وشراركم من اذا كان عليه الدين اساء القضاء وان كان له افحش فى الطلب حتى اذا كانت الشمس على رؤس النخل ةاطراف الحيطان فقال اما انه لم يبق من الدينا فيما مضى منها الا كما بقى من يومكم هذا فيما مضى منه-(رواه الترمذى)

২১।

অর্থ : হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসরের পর আমাদের মাঝে খুতবার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যাহা কিছু সংঘটিত হইবে উহার সব কিছু আলোচনা করিলেন। সেই কথাগুলি যে স্মরণ রাখিতে বলিয়াছে সে স্মরণ রাখিয়াছে; আর যে ভুলিবার সে ভুলিয়া গিয়াছে। উক্ত ভাষণে তিনি যাহা বলিয়াছেন; তন্মধ্যে (এই কথাও ছিল) দুনিয়া মিষ্টি ও সুস্বাদু। আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে তোমাদিগকে তাঁহার প্রতিনিধি নিযুক্ত করিয়া তাকাইয়া আছেন, তোমরা কি কাজ করিতেছে। সাবধান ! দুনিয়া হইতে বাঁচিয়া থাক এবং বাঁচিয়ে থাক নারী সম্প্রদায় হইতে। তিনি আরও বলিয়াছেন : প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতের দিন দুনিয়াতে অঙ্গীকার ভঙ্গ পরিমাণ একটা পতাকা হইবে। রাষ্ট্র পরিচালকের অঙ্গীকার ভঙ্গই হইবে সর্বাপেক্ষা বড়। তাহার পতাকা তাহার পশ্চাদ্দেশের নিকটই পোঁতা হইবে। তিনি আরও বলিয়াছেন : তোমাদের কেহ যেন মানুষের ভয়ে উহা ন্যায় ও সত্য কথা বলা হইতে বিরত না থাকে, যখন সে উহাকে সত্য বলিয়া জানে। অপর এক বর্ণনায় আছে; যদি তোমাদের কেহ কোন মন্দ কাজ দেখে, সে যেন কাহারও ভয়ে উহা পরিবর্তন করিতে বিরত না থাকে। এতদ্‌শ্রবণে বর্ণনাকারী হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কাঁদিয়া ফেলিলেন এব্‌ং বলিলেন, নিশ্চয় আমরা অন্যায় হইতে দেখিয়াছি, কিন্তু মানুষের ভয়ে সেই সম্পর্কে মুখ খুলিয়া নিষেধ করিতে পারি নাই। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন : স্মরণ রাখিও ! আদম সন্তানকে বিভিন্ন শ্রেণীতে সৃষ্টি করা হইয়াছে। তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমন আছে, যে মুমিন হিসাবে জন্মলাভ করে, মুমিন হিসাবে জীবন কাটায় এবং মুমিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আবার তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমনও আছে, যে কাফের হিসাবে পয়দা হয়। কাফের অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আবার কেহ কেহ এমনও আছে, যে মুমিন হিসাবে জন্মগ্রহণ করে, মুমিন অবস্থায় জীবন যাপন করে এবং মৃত্যুবরণ করে কাফের অবস্থায়। পক্ষান্তরে তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমনও আছে, যে পয়দা হয় কাফের হিসাবে, জীবন কাটায় কাফের অবস্থায়, কিন্তু মৃত্যুবরণ করে মুমিন অবস্থা। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রোধ সম্পর্কে আলোচনা করিলেন : (ইহারও প্রকারভেদ রহিয়াছে) তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমন আছে যে, সে শীঘ্র রাগ হয় আবার শীঘ্র ঠান্ডা হইয়া যায়। ফলে একটি অপরটির সম্পূরক। আবার কেহ কেহ এমন আছে, যে দেরীতে রাগ হয় এবং ঠান্ডাও হয়। ইহাও একটি অপরটির ক্ষতিপূরক। তবে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে রাগ দেরীতে করে এবং শীঘ্রই উহা প্রশমিত হইয়া যায়। আর সেই ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা মন্দ, যে তাড়াতাড়ি ক্রোধান্বিত হয় এবং উহা প্রশমিত হয় দেরীতে। তারপর তিনি বলিলেন : তোমরা ক্রোধ হইতে বাঁচিয়া চল। কেননা, উহা হইল আদম সন্তানের অন্তরে একটি জলন্ত আঙ্গার। তোমরা কি দেখ না; তাহার রগ–শিরা–উপশিরাসমূহ ফুলিয়া উঠে এবং চক্ষুদ্বয় লাল হইয়া যায়? সুতরাং তোমাদের কেহ যখন ক্রোধ উপলদ্ধি করে তখন সে যেন শুইয়া পড়ে এবং যমীনের সহিত মিশিয়া থাকে। হযরত আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি ‘ঋণ’ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন : তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ এমন আছে, যে উত্তম ব্যবহারে ঋণ পরিশোধ করে। আর যখন তাহার পাওনা উসুল করিতে যায় তখন অশ্লীল ব্যবহার করে। ফলে ইহার একটি অপরটির সম্পূরক। আবার কেহ এমন আছে, যে ঋণ পরিশোধকালে মন্দ আচরণ করে এবং কাহারও নিকট পাওনা হইলে উসুল করার সময় সুন্দর ব্যবহার উসুল করে। ইহাতেও একটি অপরটির সম্পূরক। তবে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে ঋণ আচারণ প্রদর্শন করে এবং কাহারও নিকট হইতে পাওনা উসূলের সময়ও দুর্ববহার করে। হযরত আবূ সাঈদ রাঃ বলেন, (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্তৃতা চলিতেছিল) এতক্ষণে সূর্য খেজুর গাছের মাথায় এবং দেওয়ালের কিনারয় পৌঁছিল। এই সময় তিনি বলিলেন : জানিয়া রাখ ! আজিকার পূর্ণ একটি দিনের যে ক্ষুদ্র সময়টুকু এখনও বাকী আছে, অনুরূপভাবে এই দুনিয়ারও অতীতের তুলনায় এতটুকু পরিমাণই অবশিষ্ট আছে। (তিরমিজি)

তাবলীগ জামায়াতে বড় কিতাব ফাজায়েলে আ’মাল এর মধ্যে আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইলমে গাইব জানেন :-

ইমাম মুহাম্মদ বিন মকিক মুদখাল কিতাবে এবং ইমাম আহমাদ কুস্তালানী মাওয়াহাব লুদুনিয়া কিতাবে লিখিয়াছেন এবং অন্যান্য ইমামগণ লিখিয়াছেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হায়াত এবং মৃত্যুর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। অর্থাৎ তিনি দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় যেভাবে উমামতকে চিনতেন, উম্মতের অবস্থা জানতেন, উম্মতের নিয়্যত ইচ্ছা এবং মনের কল্পনা জানতেন এখনও সেইভাবে জানেন। এই সকল তাঁহার নিকট ও গোপন নহে। (ফাজায়েলে আমল ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৬১)।

উক্ত কিতাবের ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৬১ এ উল্লেখ আছে যে, “আল্লামা ছাখাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু আবু বকর বিন মুহাম্মদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন আবু বকর বিন মুহাম্মদ বলিয়াছেন আমি আবু বকর বিন মুজাহিদের নিকট উপস্থিত ছিলাম ঐ সময় হযরত শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু আসিলেন। শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু কে দেখিয়া আবু বকর বিন মুজাহিদ শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর সাথে কোলা কোলি করিয়া তাঁহার কপালে চুমু দিলেন। আবু বকর বিন মুহাম্মদ বলেন আমি এই ঘটনা দেখিয়া আবু বকর বিন মুজাহেদকে বলিলাম হুযুর আপনি শিবলীর সাথে এই ব্যবহার করিলেন, অথচ আপনি এবং বাগদাদের সকল আলেমগণ মনে করেন শিবলী একজন পাগল। আবু বকর মুজাহিদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলিলেন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি যে কাজ করিতে দেখিয়াছি আমি সেই কাজ করিয়াছি। অতপর তিনি স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করিলেন, আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে স্বপনে দেখিয়াছি শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তাঁহার দরবারে উপস্থিত হইয়াছে। আর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়াইয়া শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু সাথে কোলা কোলি করিলেন এবং তাঁহার কপালে চুম্মুন দিলেন। আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করিলাম রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন যে, শিবলী প্রতি নামাযের পর সূরা তাওবার শেষ আয়াত পড়িয়া সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া মুহাম্মদ তিন বার পড়িতেন তাঁর এই আমল ৮০ বছর যাবত চলিতেছে সুবহানাল্লাহ। বুঝা গেল রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিবলীর আমল দেখিতেন এবং কত বৎসর আমল করিতেছে তাও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন।


কতেকগুলো যুক্তিসঙ্গত তথ্যাবলী থেকেও পূর্বাপর যাবতীয় مَاكَانَ وَمَايَكوْن বিষয়ের জ্ঞানের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়। সে সমস্ত দলীল প্রমাণ নিম্নে দেয়া গেল।

(১) হুযুর সায়্যিদুল আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হলেন খোদার রাজত্বের উযীরে আযম তথা খলীফায়ে আযম। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে আল্লাহর খলীফা মনোনীত করা হয়েছিল। তাহলে নিঃসন্দেহ হুযুর আলাইহিস সালাম সেই রাজত্বের খলীফায়ে আযম এবং পৃথিবীতে বিশ্বনিয়ন্তার প্রতিনিধি। রাজ্যে নিযুক্ত শাসকের দুটো গুণ থাকা আবশ্যক, এক, জ্ঞান, দুই, ইখতিয়ার বা কাজ করার স্বাধীনতা।

এ পার্থিব রাজত্বের শাসকগণ যতবড় পদমর্যাদার অধিকার হন সে অনুপাতে তাদের জ্ঞান কর্মক্ষমতাও বেশী থাকে। কালেকটর বা জিলা প্রশাসকের সম্পূর্ণ জিলা সম্পর্কে জ্ঞান ও সমগ্র জিলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা  থাকা প্রয়োজন। ভাইসরয় বা গভর্নরের সমগ্র দেশের জ্ঞান ও অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা জরুরী। কেননা এ দুটি গুণ ব্যতীত তিনি শাসন করতে পারেন না, রাজকীয় ফরমানও প্রজাদের মধ্যে জারী করতে পারবেন না।

অনুরূপ নবীগণের মধ্যে যার যতবড় পদমর্যাদা রয়েছে তার সে অনুপাতে জ্ঞান ও ক্ষমতা রয়েছে। মহাপ্রভু আল্লাহ আদম (আলাইহিস সালাম) এর খেলাফত প্রমাণ করেছেন তার জ্ঞানেরই ফলশ্রুতি রূপে। অর্থাৎ আদম (আলাইহিস সালাম) কে এত ব্যাপক জ্ঞান দান করেছেন যা আল্লাহর প্রতিনিদিত্বের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। আর ফিরিশতাগণের দ্বারা সিজদা করানো তার বিশেষ ক্ষমতার প্রমাণবহ। ফিরিশতাগণও তার কাছে মাথা নত করেছেন। অতএব নবী করীম (আলাইহিস সালাম) যেহেতু সমগ্র সৃষ্টি জগতের নবী এবং আসমান যমীনের সমস্ত লোক তার উম্মত সেহেতু তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) অন্যান্য সমস্ত নবীগণের তুলনায় বেশী জ্ঞান ও ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন ছিল। এ জন্যই তার থেকে অনেকে মুজিযা প্রকাশ পেয়েছে।

যেমন তিনি আঙ্গুলের ইঙ্গিতেই চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন। ডুবন্ত সূর্যকে ফিরিয়ে এনেছেন, মেঘকে নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে পানি বর্ষণ করেছে, আবার সেই মেঘ খন্ডকে হুকুম করার সাথে সাথে বর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। এগুলো হলো তার খোদা প্রদত্ত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

(২) মৌলভী কাসেম নানাতুবী সাহেব তাহযিরুন নাস কিতাবে লিখেছেন নবীগণ জ্ঞানের দিক দিয়ে উম্মত থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকেন, আর বাহ্যিকভাবে আমলের দিক দিয়ে অনেক সময় উম্মত নবীকেও অতিক্রম করে যায়, এতে বোঝা গেল যে আমলের ক্ষেত্রে উম্মত নবীকে অতিক্রম করতে পারে কিন্তু জ্ঞানের দিক থেকে নবীর জ্ঞান অপেক্ষাকৃত বেশ হওয়া প্রয়োজন। হুযুর আলাইহিস সালামের উম্মতের মধ্যে ফিরিশতাও অন্তর্ভুক্ত।

কুরআনেই বলা হয়েছেঃ لِيكوْنَ لِلْعلَمِيْنَ نَذِيْرًا (যাতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সমস্ত জগৎবাসীদের জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী হন) তাহলে নিঃসন্দেহেহুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান ফিরিশতাগনের তুলনায় বেশী হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় কোন গুণের দিক দিয়ে হুযুর আলাইহিস সালাম উম্মত থেকে শ্রেষ্ঠ হবেন? লওহে মাহফুজের দায়িত্বে নিযুক্ত ফিরিশতাগণেরতো যা কিছু হয়েছে ও হবে مَاكَانَ وَمَايَكُوْن সে সব কিছুর জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালামের আরও অধিক জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

(৩) কয়েক বছর উপযুক্ত শিক্ষকের সান্নিধ্যে থাকলে মানুষ জ্ঞানী হয়ে যায়। হুযুর আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণের আগে কোটি কোটি বছর আল্লাহর মহা দরবারে অবস্থান করেছেন। এমতাবস্থায় হুযুর পূর্ণ আলেম হবেন না কেন?

তাফসীরে রুহুল বয়ানে– لَقَدْ جَاءَكُمْالخ বলা হয়েছে যে একদা হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম হুযুরের সমীপে আরয করলেন একটি নক্ষত্র সত্তর হাজার বছর পর পর উদিত হয়। আমি এটিকে বাহাত্তর হাজার বার আলোক উদ্ভাসিত দেখেছি। তখন হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমানঃ আমিই ছিলাম সেই নক্ষত্র। হিসেব করে দেখুন কত কোটি বছর মহান আল্লাহর দরবারে অবস্থান করেছিলেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

(৪) ছাত্র বা শিষ্যের জ্ঞানের মধ্যে অপূর্ণতা থাকলে তা কেবল চারটি কারণেই হতে পারে–

এক, শাগরিদ অনুপযুক্ত ছিল; উস্তাদ থেকে পূর্ণ ফয়েয লাভ করতে পারেননি।

দুই, উস্তাদ কামিল ছিলেন না; যার ফলে পরিপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারেননি।

তিন, উস্তাদ হয়ত কৃপণ ছিলেন, পরিপূর্ণ জ্ঞান সেই শাগরিদকে দান করেননি কিংবা তার থেকে বেশী প্রিয় অন্য শাগরিদ ছিল যাকেই সব কিছু শিখায়েছেন।

চার, যে কিতাবটি পড়ানো হয়েছিল, সেটি পূর্ণাঙ্গ ছিল না। এ চারটি কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণ থাকতেই পারে না।

এখানে শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ আর ছাত্র হলেন মাহবুব আলাইহিস সালাম এবং যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হলো কুরআন ও স্বীয় বিশেয় জ্ঞান সমূহ। এখন বলুন মহাপ্রভু আল্লাহ কি কামিল শিক্ষক নন? বা রসুল আলাইহিস সালাম কি উপযুক্ত শাগরিদ নন? বা রসুল আলাইহিস সালামের চেয়ে ও বেশী প্রিয় আর কেউ আছেন অথবা কুরআন কি পূর্ণ কিতাব নয়?

যখন এগুলোর মধ্যে কোন কারণই বিদ্যমান নেই অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পরিপুর্ণ জ্ঞান প্রদানকারী, মাহবুব আলাইহিস সালামও পরিপূর্ণ গ্রহণকারী এবং কুরআনহলো একটি পরিপূর্ণ কিতাব যেখানে উক্ত হয়েছেঃ اَلرَّحْمنُ عَلَّمَ الْقُرْانَ (দয়াময় আল্লাহকুরআন শিখিয়েছেন) আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হলেন আল্লাহর দরবারে বেশী মকবুল বান্দা তখন তার জ্ঞান কেন অপূর্ণ হবে?

(৫) আল্লাহতাআলা প্রত্যেক কথা কেন লাওহে মাহফুজে লিখলেন? লিখার প্রয়োজন হয় স্মরন রাখার জন্য, যাতে  ভুলবার উপক্রম না হয় বা অন্যদেরকে জানানো জন্য।

আল্লাহ তাআলা ভুলক্রুটি থেকে পূতঃপবিত্র। কাজেই তিনি অন্যদের জন্য লিখেছেন। অন্যদের মধ্য হুজুর আলাইহিস সালাম হলেন সর্বাধিক প্রিয়। সুতরাং সেই লেখাটা হুজুর (আলাইহিস সালামের) উদ্দেশ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

(৬) অদৃশ্য বিষয় সমূহের মধ্যে সর্বাধিক অদৃশ্য হলো আল্লাহর সত্ত্বা। হযরত মুসা (আঃ) যখন আল্লাহকে স্ব–চক্ষে কামনা করেছিলেন, তখন বলা হয়েছিলঃ لَنْ تَرَانِىْ (তুমি আমাকে দেখতে পাবেনা) আর যখন মাহবুব আলাইহিস সালাম মিরাজের সময় স্বীয় পবিত্র চর্মচক্ষু মুবারক দ্বারা আল্লাহকে দেখলেন তখন সৃষ্টি জগৎ কি তাঁর দৃষ্টির আড়ালে গোপন থেকে যেতে পারে।

খোদাই যখন আপনার দৃষ্টি থেকে গোপন রইল না তখন কিইবা আছে যা অদৃশ্য থাকতে পারে? আপনার প্রতি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের) কোটি কোটি দরুদ।

তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর দর্শন লাভের বর্ণনা আমার রচিত শানে হাবিবুর রহমানে দেখুন।

মিরকাত শরহে মিশকাতের الايمان بالقدر অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদের শেষে উল্লেখিত আছেঃ

كَمَا اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وْسَلَّمَ رَ اهُ فِى الدُّنْيَالِاِنْقِلَابِه نُوْرًا

(হুযুর আলাইহিস সালাম ইহ জগতেই আল্লাহকে দেখেছিলেন, কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজেই নুরে পরিণত হয়েছিলেন।)

(৭) শয়তান হলো দুনিয়াবাসীদের পথভ্রষ্টকারী আর নবী আলাইহিস সালাম হলেন সৎপথের দিশারী। শয়তান হলো মহামারীর মত আর নবী আলাইহিস সালাম হলেন সর্বরোগের সর্ববিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরূপ। আল্লাহ তাআলা  শয়তানকে পথভ্রষ্ট করার সহায়ক এত ব্যাপক ও সুদূর প্রসার জ্ঞান দান করেছেন যে, পৃথিবীর কেউ তার দৃষ্টির অগোচরে থাকে না।

তার কাছে এ খবরও আছে যে কাকে পথভ্রষ্ট করা যাবে, আর কাকে করা যাবে না; এবং যে পথভ্রষ্ট হওয়ার আছে, তাকে কিভাবে পথভ্রষ্ট করতে হবে? অনুরূপভাবে সে প্রত্যেক ধর্মের প্রতিটি মাসআলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, যার ফলে সে প্রতিটি সৎকাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে ও প্রতিটি নীতি বিগর্হিত কাজ করানোর মদদ যোগায়। সে আল্লাহর কাছে দম্ভোক্তি করে বলেছিলঃ

لَاُغْوِ يَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ اِلَّاعِبَادِكَ مِنْهُمُ الْمُخْلِصِيْنَ

(আমি তোমার বিশুদ্ধ চিত্ত বিশিষ্ট নেককার বান্দাগণ ছাড়া বাকী সবাইকে পথভ্রষ্ট করেই ছাড়বো।) পথভ্রষ্টকারীকে যখন এতটুকু জ্ঞান দান করা হলো, তখন সর্ববিশেষজ্ঞ ডাক্তার সদৃশ্য হুযুর আলাইহিস সালামের সঠিক পথের দিশা প্রদানের জন্য এর চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন, যাতে তিনি প্রত্যেক ব্যাক্তির রোগ নির্ণয় ও আরোগ্য লাভের যোগ্যতার পরিমাপ করে চিকিৎসা করতে পারেন।

অন্যথায় সঠিক পথ নির্ধারণের কাজ পরিপূর্ণ হবে না। এবং মহাপ্রভু আল্লাহর সম্পর্কে এ আপত্তি উত্থাপন করা হবে যে, তিনি পথভ্রষ্টকারীকে শক্তিশালী করেছেন আর পথ প্রদর্শনকারীকে দুর্বল রেখেছেন। সেজন্য পথভ্রষ্টতা পরিপূর্ণতা লাভ করল আর হেদায়েত অপরিপূর্ণ রয়ে গেল।

(৮) মহান প্রভু হুযুর আলাইহিস সালামকে নবী বলে সম্বোধন করেছেন। যেমন يَااَيُّهَاالنَّبِىُّ নবী শব্দের অর্থ হলো খবর দাতা। যদি খবর বলতে শুধু দ্বীনের খবরই লক্ষ্যার্থ হয় তাহলে বলতে হয় প্রত্যেক মৌলভীই নবী; আর যদি পার্থিব ঘটনাবলীর খবর ধরে নেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেকটি সংবাদপত্র, রেডিও, টি ভি ও তারবার্তা প্রেরণকারী সবাই নবী রূপে পরিগণিত হবে।

সুতরাং বোঝা গেল যে নবী শব্দের মধ্যে অদৃশ্য বিষয়াদীর খবরাখবরই গুরুত্বপুর্ণ। অর্থাৎ নবী হলেন ফিরিশতাগণ ও আরশ সম্পর্কে খবরদাতা যেখানে তারবার্তা ও সংবাদপত্র সমূহ কোন কাজেই আসবে না। সেখানে একমাত্র নবীর জ্ঞানই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে বোঝা গেল যে ইলমে গায়ব নবী শব্দের অন্তর্ভুক্ত বা অঙ্গীভূত।

এ পর্যন্ত হুযুর আলাইহিস সালামের ইলমে গায়ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল। এখন এও জানা দরকার যে হুযুর আলাইহিস সালামের মাধ্যমে আওলিয়া কিরামও ইলমে গায়ব লাভ করে থাকেন। তবে তাদের জ্ঞান নবী (সাল্লাল্লাহু আলেইহে ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় ও উহা নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোঁটার সমতুল্য।

মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ মিরকাতে শাইখ আবু আবদুল্লাহ; সিরাজী কর্তৃক সংকলিত কিতাবে আকায়িদ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেঃ–

اَلْعَبْدُ يَنْقُلُ فِى الْاَحْوَالِ حَتَّى يُصِيْرَ اِلَى نَعْتِ الرُّوْحَانِيَّةِ

(বান্দার আধ্যাত্মির পরিবর্তন হতে থাকে শেষ পর্যন্ত যখন রুহানীয়তের গুণ প্রাপ্ত হয় তখনিই গায়ব সম্পর্কে অবগত হয়।)

মেরকাতের আর এক জায়গায় উক্ত কিতাবে আকায়িদ গ্রন্থের বরাত দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছেঃ–

يَطَّلِعُ الْعَبْدُ عَلَى حَقَائِقِ الْاَشْيَاءِ وَيَتَجَلَّى لَهُ الْغَيْبُ وَغَيْبُ الْغَيْبِ

কামিল বান্দা যাবতীয় বস্তুর নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্য সম্পর্কে অবিহিত হন এবং তার কাছে অদৃশ্যের বিষয়ও প্রকাশিত হয়ে যায়।)

মিরকাতের দ্বিতীয় খণ্ডের ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় الَصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَفَضْلِهَا শীর্ষক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছেঃ–

(পূত পবিত্র আত্মা যখন সীমাবদ্ধ শারীরিক গণ্ডির বাহিরে আসে তখন আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে সু–উচ্চ স্তরে উপনীত হয় এবং তাদের সামনে কোনরূপ আবরণ অবশিষ্ট থাকে না। তখন সমস্ত বস্তুকে নিজের সামনে উপস্থিত ও স্থুল বস্তু সদৃশ দেখতে পায়। এধরনের অনূভুতি আপনা আপনিই কিংবা ফিরিশতার ইলহাম দ্বারা অর্জিত হয়।)

শাহ আবদুল আযীয সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাফসীরে আযীযীতে সূরা জ্বিনের তাফসীরে ফরমানঃ–

(লওহে মাহফুজ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং উহার লিপিদর্শন করা সম্পর্কে কোন কোন ওলী থেকে ও মুতওয়াতির পর্যায়ে বর্ণনা পাওয়া যায়।

ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত কিতাবুল এলামে এবং আল্লামা শামী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত সুল্লুল হুসসামে উল্লেখ করেছেনঃ–

اَلْخَوَاصُّ يَجُوْزُ اَنْ يَّعْلَمَ لْغَيْبَ فِى قَضْيَةٍ اَوْ قَضَاءٍ كَمَا وَقَعَ لِكَثِيْرٍ مِّنْهُمْ وَاشْتَهَرَ

(এটা বৈধ্য যে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ (আওলিয়া কিরাম) কোন ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গায়বী ইলম অর্জন করেন যেমন অনেক আওলিয়া কিরাম থেকে এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে এবং তা সাধারণ্যে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

শাহ ওলিউল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) আলতাফুল কুদস নামক কিতাবে লিখেছেনঃ–

(আরিফের আত্মা একেবারে তার দৈহিক আকৃতির রুপ পরিগ্রহ করে থাকে এবং তার সত্ত্বা রূহের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। তখন তিনি হুযুরী জ্ঞানের সাহায্যে সমগ্র জগত দেখতে পান।)

আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত শরেহে মওয়াহেব গ্রন্থের সপ্তম খণ্ডের ২২৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ–

(লাতায়েফুল মেনন কিতাবে উল্লেখিত আছে যে কোন কামিল বান্দা কর্তৃক আল্লাহ তাআলার অদৃশ্য বিষয় সমূহ থেকে কোন অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান লাভ আশ্চর্যের বিষয় নয়। এটা সেই হাদীছেই ব্যক্ত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে মুমিনের জ্ঞানকে ভয় কর কেননা তিনি আল্লাহর নূরে দেখেন। এটাই অপর এক হাদীছেরও অর্থ জ্ঞাপন করে যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেন আমি তার চোখ হয়ে যাই যদ্বারা তিনি দেখেন। সুতরাং তার দেখা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অসাধারণ শক্তির বলেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই তার গায়ব সম্পর্কে অবগত হওয়াটা বিস্ময়কর কোন ব্যাপার নয়।)


আল্লামা ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত اليواقيت والجواهر নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ–لِلْمُجْتَهِدِيْنَ الْقَدمُ فِى عُلُوْمِ الْغَيْبِ

(গায়বী ইলম সমূহের ক্ষেত্রে মুজতাহিদগণেরও দৃপ্ত পদচারণা রয়েছে।)

হুযুর গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ফরমানঃ–

نَظَرْتُ اِلَى بِلَادِ اللهِ جَمْعًا–كَخَرْدَلَةٍ عَلَى حُكْمِ اتِّصَالِىْ

(আমি আল্লাহ তাআলার সমস্ত শহরগুলোকে এভাবে দেখেছি যেমন কয়েকটি তৈলবীজ পরস্পর সন্নিবেশিত হয়ে আছে।)

শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত ‍যুবদাতুল আসরার গ্রন্থে হযরত গাউছে পাকের (রহমতুল্লাহে আলাইহে) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য উক্তির বর্ণনা দিয়েছেনঃ–

(গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ফরমানঃ হে সাহসীভক্তগণ হে আমার সন্তানগণ এসো আমার এ অকুল সমুদ্র থেকে কিছু আহরণ কর। খোদার কসম নেককার ও বদকার লোকদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হয় আর আমরা চোখের কোনা লওহে মাহফুজের দিকে নিবদ্ধ থাকে। আমি আল্লাহ তাআলার অপার জ্ঞান সমুদ্রে ডুব দিয়ে থাকি।)

আল্লামা জামী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত نفحات الانس কিতাবে হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (কুঃসিঃ) এর একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। উক্তিটি হলোঃ–

(হযরত আযীযান (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন যে একদল আওলিয়া কিরামের সামনে পৃথিবীটা দস্তরখানার মত আর আমি মনে করি আঙ্গুলের নখের মত। কোন বস্তুই তাদের দৃষ্টি বহির্ভূত নয়।)

ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) كبريت احمر গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ–

(আমি আমার শাইখ সৈয়দ আলী হাওয়াছ (রাদিআল্লাহু আনহু) কে বলতে শুনেছি আমার মতে ওই পর্যন্ত কোন ব্যক্তি কামিল হিসেবে গণ্য হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজ মূরীদের পিতার ঔরসে থাকাকালীন গতিবিধি সংক্রান্ত ক্রিয়া প্রক্রিয়া এমনকি মীছাকের দিন থেকে তার বেহেশত কিংবা দোযখ প্রবেশ করা অবধি তার যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।)

শাহ ওলিউল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) فيوض الحرمين নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ–

ثُمَّ اِنَّهُ يَنْجَذِبُ اِلَى خَيْرِ الْحَقِّ فَيُصِيْرُ عَبْدَ اللهِ فَيَتَجَلَّى لَهُ كُلُّ شَئٍّ

অতঃপর সেই আরিফ ব্যক্তি হক তাআলার সুমহান দরবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আত্মবিলীন হয়ে যান এরপর তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। তখন তার কাছে প্রত্যেক কিছুই উন্মুক্ত ও প্রতিভাত হয়ে যায়।)

মিশকাত শরীফের প্রথম খণ্ডে কিতাবুত দাওয়াতের ذكر الله والتقرب শীর্ষক অধ্যায়ে বুখারী শরীফের সুত্রে হযরত আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ–

فَاذَا اَحْبَبْتُه‘ فَكُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِىْ يُبْصِرُبِهِ وَيَدَهُ الَّتِىْ يَبْطِش بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِىْ يَمْشِىْ بِهَا

(আল্লাহ তাআলা ফরমান, সেই প্রিয় বান্দাকে যখন আমি ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যদ্বারা তিনি শুনেন, চোখ হয়ে যাই, যদ্বারা তিনি দেখেন, হাত হয়ে যাই, যদ্বারা কোন কিছু ধরেন এবং  পা হয়ে যাই যদ্বারা তিনি চলাফেরা করেন।)

একথা স্মরণ রাখা দরকার যে হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) ও হযরত ইলিয়াস (আলাইহিস সালাম) এখনও পৃথিবীপৃষ্ঠে জীবিত আছেন। তারা এখন উম্মতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর ওলী হিসেবে গণ্য। হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) যখন পৃথিবীতে (পুনরায়) তশরীফ আনবেন, তখন তিনিও এ উম্মতের ওলী হিসেবে আসবেন। তাদের (হযরত খিযির, ইলিয়াস ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) ব্যাপক জ্ঞান সম্পর্কে আমি ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। তাদের জ্ঞানও এখন হুযুর আলাইহিস সালামের উম্মতে ওলীগণেই জ্ঞান হিসেবে পরিগণিত। –সূত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড–




ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png