“এটা ঐ কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। আল্লাহভীরুদের জন্য পথনির্দেশ”।(পবিত্র কুরআন, সূরা বাক্বারাহ, ২:২)
লক্ষ্যকরুন কুরআনকে মহান আল্লাহ্ কিভাবে উপস্থাপন করছে। কুরআন কি? সহজে উত্তর –পথনির্দেশ। a guidance. এটি পথ নির্দেশক বই। কুরআনকে যখন মহান আল্লাহ্ পথনির্দেশ বলে তখন আমাদের কি বুঝতে হবে? অর্থাৎ জীবনের চলার পথের নির্দেশ, কোন দিকে যাবো, কি করবো ইত্যাদির নির্দেশ। কুরআনে আছে আমার জন্য জরুরী কিছু আদেশ আর আছে নিষেধ। কোনো বাদশাহ যদি তার রাজ্যে ফরমান জারি করে তাহলে সে একটি ফরমান সমষ্টি পাঠ করার জন্য আদেশ দেয় যাতে করে প্রজারা সতর্ক-সাবধান হয়ে যায়। পবিত্র কুরআন হচ্ছে ঠিক ঐ রকম একটি ফরমান সমষ্টি যা সারা দুনিয়ার বাদশাহ সাত আসমানের ওপর থেকে মানব জাতির কাছে পাঠিয়েছেন। কুরআন হচ্ছে মানুষের জন্য instruction manual, ঠিক যেমন কোনো ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস কিনলে তার সাথে একটি বই(User Guide) থাকে, যেখানে নির্দেশনা থাকে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। কুরআন হচ্ছে পথনির্দেশ, মহান আল্লাহ বারংবার সেটা বলেছেন –
“হে মানবজাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এসেছে নির্দেশনা, এবং তোমাদের হৃদয়ে যা আছে তার নিরামায়ক, -বিশ্বাসীদের জন্য পথনির্দেশ ও দয়া” (পবিত্র কুরআন, সূরা ইউনুস, ১০:৫৭)
এমন নির্দেশনা যা অন্তরের অশান্তি দূর করে, অন্তরের ব্যাধির প্রতিকার, অন্তরে শান্তি প্রদান করে এবং এটা মহান আল্লাহর দয়া। এরকম একটা বিশেষ গ্রন্থ দিয়ে মহান আল্লাহ্ আমাদের উপর দয়া করেছেন। এখন আমরা যদি এই পথনির্দেশ না বুঝি, উপলব্ধি অনুধাবন না করি তাহলে তো ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার আশা করা যায় না। মহান আল্লাহ্ কুরআনকে পথনির্দেশের বই, উপদেশের বই বলেছেন। এজন্যেই এই পথনির্দেশ উপলব্ধি, অনুধাবন প্রত্যেক মানুষের অপরিহার্য যদি তারা জীবন ও চিন্তায় স্রষ্টার আনুগত্য করতে চায়।পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনকারী হতে চায়।
স্রষ্টার আনুগত্যে মজা পেতে হলে, প্রশান্তি পেতে চাইলে স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক গড়তে হবে। মালিকের সাথে বান্দার একটা Close Relation হতে হবে। কুরআন এই কাজটাই করে। কুরআন পড়লে স্রষ্টার সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মালিকের সাথে বান্দার সম্পর্ক গাঢ় থেকে গাঢ় হতে থাকে। কুরআন উপলব্ধি ছাড়া একদম খাঁটি আল্লাহভীরু মুসলিম হওয়া খুবই কঠিন।
মহান আল্লাহ্ বলেন -
“এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।”(পবিত্র কুরআন, সূরা ছোয়াদ, ৩৮:২৯)
কুরআন বলছে মানুষ কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষনা করবে, অনুধাবন করবে, উপদেশ গ্রহন করবে। আমাদের সমাজে কুরআন কারীমের ব্যাপারে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়। একদলের মতে কুরআন পড়লে যেহেতু প্রতি হরফে ১০ নেকি হয় তাই কুরআন শুধু তিলাওয়াত করাই উত্তম কাজ। আরেকদলের মতে কুরআন না বুঝে পড়লে কোনো লাভ নেই। প্রকৃতপক্ষে দুটোই প্রয়োজন। কুরআন কারীম বিশুদ্ধ তিলাওয়াত এবং এর অর্থ বুঝে পড়া, হৃদয়ঙ্গম করা এবং সে অনুযায়ী মেনে চলা এসবই অপরিহার্য। কুরআনের সাথে কিরুপ ব্যবহার করতে হবে সেটা কুরআনই খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে।
মহান আল্লাহ্ বলেন -
“তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?”(পবিত্র কুরআন, সূরা মুহাম্মাদ, ৪৭:২৪)
লক্ষ্য করুন, এ আয়াতে মহান আল্লাহ্ কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষনা করার কথা বললেন এবং যারা চিন্তা গবেষনা করে না তাদের তিরষ্কার করলেন।
মহান আল্লাহ্ বলেন -
“এ (কুরআন) মানুষের জন্য জ্ঞানের আলো, আর নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথের দিশারী এবং রহমত স্বরুপ।”(পবিত্র কুরআন, সূরা জাসিয়া, ৪৫:২০)
কুরআন বলছে, এটি আমার জন্য পথের দিশারী অর্থাত এই গাইডবুক অনুযায়ী আমাকে চলতে হবে। কোনো রাজা যখন তার রাজ্যে ফরমান জারি করে আর সেই ফরমান যদি কোনো প্রজা না জানে না বোঝে তাহলে তার কি অবস্থা হয়? আদেশ-নিষেধ না জানার কারনে সে রাজ্যে যে কর্মকান্ড করে তার জন্য তার ফাসি পর্যন্ত হয়ে যায়। সত্যি বলতে কুরআন না বোঝার ফলে একজন মুসলিমের অবস্থা ঐ বিপথগামী প্রজার মত হতে পারে।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলোভী(রহ:) যতার্থই বলেছেন, তিনি কুরআন কারীমকে পত্রগ্রন্থ বলেছেন। এটি একটি বার্তা, সংবাদনামা। যেমন কুরআন বলছে –
“এটা(কুরআন) মানুষের একটি বার্তা; যাতে এটা দ্বারা তারা ভীত হয় এবং যাতে জেনে নেয় যে, উপাস্য তিনিই-একক; এবং যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।”(পবিত্র কুরআন, সূরা ইব্রাহীম, ১৪:৫২)
দেখুন, মানুষ যাতে কুরআন উপলব্ধি করে সে জন্য মহান আল্লাহ্ কুরআনকে কত রকমভাবে উপস্থাপন করছেন। কোনো ব্যক্তির কাছে যদি তার অফিসের বস এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি তার বাসার ঠিকানায় আসে তাহলে সেই ব্যক্তি কি এই চিঠিটি অবহেলা করে ফেলে রাখবে নাকি এটি পড়ে বোঝার জন্য উদ্বিগ্ন থাকবে? অবশ্যই সে তা বোঝার জন্য এবং সেই চিঠিতে কোনো আদেষ-নিষেধ থাকলে তা পালনের জন্য সচেষ্ট হবে যদি সে চাকরীতে বহাল থাকতে চায়। কুরআন হচ্ছে ঠিক এই চিঠিটির মত যা মানব জাতির কাছে সারা দুনিয়ার বাদশাহ পাঠিয়েছে। এজন্যই মহান আল্লাহ্ বললেন এটি মানুষের জন্য একটি বার্তা যাতে তারা সতর্ক হয়(১৪:৫২)। এরপরই মহান আল্লাহ বললেন যে, কুরআন দিয়ে জেনে নিতে যে সৃষ্টিকর্তা, উপাস্য তিনিই এবং তিনি এক - ”যাতে জেনে নেয় যে, উপাস্য তিনিই-একক”(১৪:৫২)
অর্থাত কুরআনই হলো স্রষ্টার অস্তিত্বের এক উজ্জ্বল প্রমান, অকাট্য প্রমান। স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমানের জন্য মহান আল্লাহ্ কুরআন রিসার্চ করতে বললেন, কুরআন দিযে জানতে বললেন। এরপর মহান আল্লাহ বললেন - “যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।”(১৪:৫২), অর্থাত কুরআন বুঝতেতো হবেই উপরন্তু চিন্তা-ভাবনা, গবেষনা করতে হবে। আসলে ইসলাম চিন্তাশীলদের ধর্ম, ইসলাম চিন্তা-ভাবনা, গবেষনা করতে বলে, বুঝে শুনেই ঈমান আনতে বলে।
পবিত্র কুরআন যে দূত নিয়ে এসেছে তার ব্যাপারে কুরআন কি বলছে তা খুবই গুরুত্তের দাবি রাখে।কোনো খবর যদি একদম খাটি, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আসলেও খবরটি যিনি নিয়ে আসছেন অর্থাৎ খবরের মাধ্যমটি যদি খাটি, নির্ভরযোগ্য না হয় তাহলে কিন্তু কিছু গড়মিল হওয়া বা অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এই দিক থেকে পবিত্র কুরআন একদম সংশয়মুক্ত, অনন্য, এটি কুরআন কারীমের উল্লেখযোগ্য একটি বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন -
“নিশ্চয় কোরআন সম্মানিত রসূলের(বার্তা বাহকের) আনীত বাণী,
যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী,
সবার মান্যবর, সেখানকার বিশ্বাসভাজন।”
(পবিত্র কুরআন, সূরা আত-তাকভীর, ৮১:১৯,২০,২১)
কুরআন বলছে, এটি যে নিয়ে এসেছে অর্থাৎ জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম সে কোনো সাধারন বার্তাবাহক ফেরেশতা নয় । সে সম্মানিত, আল্লাহর কাছে সে মর্যাদাশালী, অনান্য ফেরেশতারা তাকে মান্য করে, সর্বপরি সে বিশস্ত, বিশ্বাসভাজন। সয়ং মহান আল্লাহই তাকে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। কুরআন কত গ্রেইট কিতাব –
“নিশ্চয় কোরআন সম্মানিত রসূলের(বার্তা বাহকের) আনীত বাণী,
যিনি শক্তিশালী,
আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী,
সবার মান্যবর,
“…সেখানকার বিশ্বাসভাজন।”
মহান আল্লাহ নিজেই তার বিশ্বস্ততার ঘোষনা দিলেন কত চমৎকারভাবে, গুরুত্বেরসাথে জোর দিয়ে। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন –
কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।
তাঁকে শিক্ষা দান করে মহা শক্তিশালী(ফেরেশতা),
মহা শক্তিধর, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।
(পবিত্র কুরআন, সূরা আন-নাজম, ৫৩: ৪-৬)
অর্থাৎ কুরআন যিনি নিয়ে এসেছে, যে মাধ্যমে এসেছে সেটা কোনো মানুষের মাধ্যমে নয়, এমন একজন নিয়ে এসেছে যে কিনা মানবীয় সকল দুর্বলতার ঊর্ধ্বে, এক শক্তিধর ফেরেশতা “..মহা শক্তিশালী(ফেরেশতা),”
মহান আল্লাহ বললেন, এক অতিব শক্তিশালী ফেরেশতা, সহজাত শক্তিসম্পন্ন ফেরেশতা।
কুরআন এমন একটি কিতাব যে কিনা নিজেই নিজের তাফসীর করে। বিখ্যাত আলেম শাহ ওয়ালিউল্লাহ(রহঃ) যথার্থই বলেছেন। তিনি বলেছেন – কুরআন এর তাফসীর যেহেতু কুরআন নিজেই করে সেই হিসাবে মহান আল্লাহই হচ্ছেন কুরআনের শ্রেষ্ঠ ও প্রথম মুফাস্সির।
পবিত্র কুরআনের সূরা শুয়ারার ১৯২-১৯৯ আয়াতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মহান আল্লাহ একদম পরিষ্কার, প্রানজল ভাষায়, সুস্পষ্টভাবে কুরআনের ব্যাপারে খুব চমৎকার তথ্য উপস্থাপন করেছে -
“এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ।
বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে।
আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন,
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
নিশ্চয় এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে।
তাদের জন্যে এটা কি নিদর্শন নয় যে, বনী-ইসরাঈলের আলেমগণ এটা অবগত আছে?
যদি আমি একে কোন ভিন্নভাষীর প্রতি অবতীর্ণ করতাম,
অতঃপর তিনি তা তাদের কাছে পাঠ করতেন, তবে তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করত না।”
(পবিত্র কুরআন, সুরা শুয়ারা , ২৬:১৯২-১৯৯)
যদি প্রশ্ন হয় কুরআন কি, কোথা থেকে এসেছে? কুরআন উত্তর দিয়েছে- “এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ ”
কে, কার মাধ্যমে, কোথায়, কার কাছে, কেন এসেছে, কোন ভাষায় এসেছে ? কুরআন উত্তর দিয়েছে –“বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে। আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন,সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।”
কুরআনের বাণীর উৎস, যার মাধ্যমে এসেছে, যার কাছে এসেছে, যেভাবে এসেছে সব বিষয়ে মহান আল্লাহ একদম খুলে খুলে বর্ণনা করেছে। কুরআন যে সব দিক থেকে ত্রুটি মুক্ত সেটা কুরআনের আয়াত ধরে গবেষণা করলে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায়। কুরআন বলছে - বিশ্বস্ত অর্থাৎ আমানতদার ফেরেশতা ওহী(বাণী) নিয়ে সরাসরি প্রফেট মুহাম্মাদ(সাঃ) এর অন্তকরন অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তায় পৌছে দিয়েছেন(কু,২৬:১৯৪), সম্মানিত ফেরেশতা কুরআন পাঠ করেছেন আর রাসূল(সাঃ) সেটা হৃদয়ঙ্গম করেছেন মহান আল্লাহর সাহায্যে।(কু,৭৫:১৬-১৯)।
পবিত্র কোরআনের ভাষা অরবী, কুরআন আরবি ভাষায় এসেছে, কুরআন নিজেই সেটার বর্ণনা দেয়। কেন আরবি ভাষায় কুরআন সেটাও বলে দেয়।
“আমি তো তোমার ভাষায় কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি তার দ্বারা সাবধানীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং বিতর্কপ্রিয় সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার।” (পবিত্র কুরআন, সূরা মারইয়াম, ১৯:৯৭)।
“এমনিভাবে আমি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি..” (পবিত্র কুরআন, সূরা ত্বোয়া-হা, ২০:১১৩)।
প্রফেট মুহাম্মাদ(সা:) যে ভাষা জানতেন, যে ভাষায় দ্বীন প্রচার করা সহজ সেই ভাষায় কুরআন অবতীর্ন করা হয়েছে যাতে আল্লাহভীরুদের সুসংবাদ ও সতর্ক করতে পারে। সূরা মারইয়াম এর শেষ অংশে খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়ের দিকে আলোকপাত করা হয়েছে – “এবং বিতর্কপ্রিয় সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার।”
মানুষ স্বভাবতই তর্ক প্রিয়। ধর্মীয় নানা বিষয়ে আমরা তর্ক বিতর্ক করে থাকি। মহান আল্লাহ তার রাসূলকে প্রত্যক্ষভাবে এবং আমাদেরকে পরোক্ষভাবে বললেনে পবিত্র কুরআন এর মাধ্যেমে বিতর্ককারীদেরকে সতর্ক করতে। কুরআনের নীতি হলো আপোষের নীতি।
কেন আরবি ভাষায় কুরআন ?
“আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়।” (পবিত্র কুরআন, সূরা হা-মীম সেজদাহ, ৪১:৪৪)
নিজ ভাষায় যে কোনো কিতাব বোঝা হচ্ছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মহান আল্লাহ যেই পরিবেশে কুরআন নাযিল করতে চাইলেন সেই পরিবেশের ভাষা আরবি এবং রাসূলের ভাষা আরবি। তারা যাতে কুরআন উপলব্ধি করতে পারে এ জন্য একই ভাষায় অবতীর্ন করলেন। এ আয়াত থেকে আরও বোঝা যায় মানুষ তার যার যার মাতৃভাষায় কুরআন অনুধাবন করতে চায় এবং মহান আল্লাহ সেই বিষইটির প্রতি লক্ষ্য রাখলেন। তাই যে, যে ভাষার মানুষ সে যদি অরবি বোঝার মত যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করতে নাও পারে তবে নিজ নিজ মাতৃভাষায় কোরআন অনুধাবন, উপলব্ধি করবে – “এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার।”
“এমনিভাবে আমি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্কবাণী ব্যক্ত করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগায়।” (পবিত্র কুরআন, সূরা ত্বোয়া-হা, ২০:১১৩)।
মহান আল্লাহ্ এখানে বললেন, কুরআন যদি কেউ অনুধাবন করে, উপলব্ধি করে তাহলে সে আল্লাহভীরু হবে এবং কুরআনের আয়াত তার অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগাবে।
কুরআন কি ও কেন ইত্যাদি বিষয়ে কুরআন কি বলে?? একটি আয়াতের বিশ্লেষন !
কুরআন কি? - ”এটা মানুষের জন্য একটি সংবাদনামা/ বার্তা/ মেসেজ ”
এই সংবাদনামা দিয়ে কি হবে? - “যাতে এটা দ্বারা তারা ভীত হয়, সতর্ক হয়”।
এরপরই মহান আল্লাহ বললেন যে, কুরআন দিয়ে জেনে নিতে যে সৃষ্টিকর্তা, উপাস্য তিনিই এবং তিনি এক। - ”যাতে জেনে নেয় যে, উপাস্য তিনিই-একক”
অর্থ্যাৎ কুরআনই হলো স্রষ্টার অস্তিত্বের এক উজ্জ্বল প্রমান, অকাট্য প্রমান। স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমানের জন্য মহান আল্লাহ্ কুরআন রিসার্চ করতে বললেন, কুরআন দিযে জানতে বললেন।
এরপর মহান আল্লাহ বললেন - “যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।”
অর্থ্যাত কুরআন বুঝতেতো হবেই উপরন্তু চিন্তা-ভাবনা, গবেষনা করতে হবে।
আসলে ইসলাম চিন্তাশীলদের ধর্ম, ইসলাম চিন্তা-ভাবনা, গবেষনা করতে বলে, বুঝে শুনেই ঈমান আনতে বলে।
তাহলে, কুরআন কি ও কেন এক নজরে উপলব্ধি করি -
”এটা মানুষের জন্য একটি সংবাদনামা/ বার্তা/ মেসেজ ”
“যাতে এটা দ্বারা তারা ভীত হয়, সতর্ক হয়”
”যাতে জেনে নেয় যে, উপাস্য তিনিই-একক”
“যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।”
সুবহানআল্লাহ্ !
এবার চলুন আয়াতটি (সূরা ইব্রাহীম, সূরা নং ১৪, আয়াত ৫২) আবারও হৃদয়ঙ্গম করি -
“এটা মানুষের একটি সংবাদনামা এবং যাতে এটা দ্বারা তারা ভীত হয় এবং যাতে জেনে নেয় যে, উপাস্য তিনিই-একক; এবং যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।”
(পবিত্র কুরআন, সূরা ইব্রাহীম, সূরা নং ১৪, আয়াত ৫২)
সুবহানআল্লাহ্ !
"আলিফ, লা-ম, রা; এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াত সমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত(মজবুত, সুবিন্যস্ত) অতঃপর সবিস্তারে বর্ণিত(ব্যাখ্যাকৃত) এক মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ হতে।"( কুরআন কারীম, সূরা হূদ, আয়াত ১)।
পবিত্র কুরআন, নিজেই নিজের পরিচয় দিচ্ছে কত চমৎকারভাবে দেখুন। মহান আল্লাহ্ বলছেন, আয়াত সমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত, মজবুত, সুবিন্যস্ত অর্থাৎ তার মধ্যে অস্পষ্টতা. জটিলতা নেই। তা পরিবর্তন বা এডিট করার কোনো সুযোগ নেই। এরপর বলা হচ্ছে আয়াতগুলোর বিশদভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, এখানে আরবি শব্দ ‘ফুস্সিলাত’ মানে হলো -explained in detail. কুরআনের তাফসির প্রথমত কুরআন নিজেই। একটি আয়াতের ব্যাখ্যা আমরা অন্য আয়াতে পায়, একটি আয়াতের বক্তব্য অন্য আয়াতে নতুনত্ব ও বিশদভাবে পাই। এটা কুরআনের একটা অপূর্ব সৌন্দর্য্য। কুরআন বলছে, কুরআনের বাণী খুব পরিষ্কার, এর বক্তব্য সহজবোধ্য। এরপর আল্লাহ্ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তিনি মহাজ্ঞানী, সব বিষয়ে জানেন আর এটি তার কাছ থেকেই নাযিলকৃত। সুবহানআল্লাহ্ !
রমযান মাসের এত মর্যাদা কেন? কুরআন বলছে - ‘‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন”
কুরআন কি?
এরপরেই ‘কুরআন’ কি সেটা মহান আল্লাহ বলে দিচ্ছেন এভাবে - "যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।" সুবহানআল্লাহ্ !
কুরআনকে যখন আল্লাহ হেদায়েত ও পথনির্দেশ বলে তখন বুঝতে হবে এই বইতে আমার জন্য আছে জীবনে চলার পথের গুরুতর উপদেশ।
এরপর আল্লাহ কি বললেন? বললেন - “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে।” সুবহানআল্লাহ্ !
লক্ষ্য করুন রোযার কথা বলার আগে মহান আল্লাহ্ কুরআনের ব্যাপারে খুব সুস্পষ্ট বক্তব্য দিলেন। অর্থ্যাৎ রমযান এর কথা মাথায় আসলেই আপনাকে কুরআন নিয়ে ভাবতে হবে।
কুরআন কারীমের কারনে রমযান মাসের মর্যাদা আর এ জন্যই সিয়াম সাধনা। উদ্দেশ্য পরহেযগার হওয়া, আল্লাহমুখী হওয়া, বেঁচে থাকা।
অর্থ্যাৎ আপনপার সিয়াম(রোযা) হবে কুরআনময়, কুরআন জানা এবং মানার এক ব্যাপক সাধনা চলবে এ মাসে যা বাকি মাস গুলোতে প্রভাব বিস্তার করবে।
এবার চলুন আয়াতটি হৃদয়ঙ্গম করি।
পবিত্র কুরআন, অধ্যায় ২, সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ
বলছেন -
‘‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে। কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা ভ্রমেণে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ, তাই চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না। তাই তোমরা রোজা রাখবে অর্থাৎ রোজার সংখ্যা পূরণ করবে এবং নিজেদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা গাইবে ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।"
"যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।''
(পবিত্র কুরআন, অধ্যায় ৩, সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৪)
পবিত্র কুরআনে বর্নিত জান্নাতে যাওয়ার গুনগুলো অর্জন করতে মনে হয় অমরা ব্যর্থ হচ্ছি !
কুরআন হচ্ছে এই পৃথীবির ভিতর সবচেয়ে পজেটিভ বই যা মানব জাতির শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে।
কুরআনকে কুরআনের মত করে বুঝতে বোধ হয় আমরা ব্যর্থ হচ্ছি !
অনেকে মনে করে কুরআন শুধু আলেম, মাওলানাদের বোঝার জন্য অথচ কুরআন পড়লে দেখা যায় অসংখ্য আয়াতে বলা হচ্ছে এটাকে সহজ করা হয়েছে বোঝার জন্য এবং বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, সাধারন সবাইকে আহবান করছে এটা থেকে জ্ঞান অর্জন করার জন্য।
যেমন সূরা ক্বামারের ১৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে -
”আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে, স্মরণে রাখার জন্য। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?”
”And We have indeed made the Qur'an easy to understand and remember: then is there any that will receive admonition?”
তারপর সূরা ছোয়াদ এর ২৯ নং আয়াতে বলা হচ্ছে -
’’এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।’’
”(Here is) a Book which We have sent down unto thee, full of blessings, that they may mediate on its Signs, and that men of understanding may receive admonition.”
সূরা মুহাম্মদ এর ২৪ নং আয়াতে বলা হচ্ছে -
”তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?”
”Do they not then earnestly seek to understand the Qur'an, or are their hearts locked up by them?”
তাই কুরআন যে সত্যিকার অর্থে বুঝেছে, কুরআন এর জ্ঞান অর্জন করেছে সেই প্রকৃত ইসলাম চিনেছে।
আল-কুরআনের অর্থ সহজেই বোধগম্য হয় এবং শেখা যায়; কেননা তা বাক্যবিন্যাসের দিক থেকে সবচেয়ে সাবলীল ও সুন্দর, শৈল্পিকতায় সবচেয়ে নিপূণ ও শ্রেষ্ঠ, অর্থের দিক থেকে সবচেয়ে সত্যবাদী, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে সবচেয়ে স্পষ্ট।
যে বা যারাই কুরআনের জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয় আল্লাহ তাদের জন্য তা নিতান্তই সহজ করে দেন।
কুরআন সহজ করে দিয়েছেন এবং তা অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে মর্মে সূরা ছোয়াদ ও সূরা আল-কামারে মহান আল্লাহর ঘোষণা নিম্নে তুলে ধরা হলো :-
’’এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।’’(পবিত্র কুরআন, অধ্যায় ৩৮, সূরা ছোয়াদ ২৯)।
‘‘আর আমি নিশ্চয়ই কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?” (পবিত্র কুরআন, সূরা আল-কামার ১৭)।
এই একই আয়াত সূরা আল-কামারে মহান আল্লাহ মোট চারবার ঘোষণা দিয়েছেন। বিষটি কত গুরুত্বপূর্ন !
কুরআন সব সময় অকাট্য সত্য নিয়ে কথা বলে কখনও গল্পের ছলে, কখনও কবিতার ছলে। কুরআনে আছে উঁচুমানের সাহিত্য।
“সেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মত।
The Day that the sky will be like molten brass,”
“এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত,
And the mountains will be like wool,”
“বন্ধু বন্ধুর খবর নিবে না।
And no friend will ask after a friend,”
. . .
(কুরআন, অধ্যায় ৭০, সূরা আল মা’আরিজ, আয়াত ৮,৯,১০)
“আরবী ভাষায় এ কোরআন, যাতে কোন জটিলতা নেই, যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে।” (পবিত্র কুরআন, সূরা আল-যুমার-২৮)।
মহান আল্লাহ একদম পরিষ্কার বলে দিলেন যে পবিত্র কুরআনে কোনো জটিলতা নেই। কুরআনে বক্রতা, পেচানো কথা, অসঙ্গিতি, জটিলতা নেই। এখানে আরবি শব্দ عِوَجٍ (ইওয়াজিন) মানে হলো জটিলতা, বক্রতা।
অসঙ্গিতি, জটিলতা নেই তার মানে কুরআনকে সহজ ও সরল করা হয়েছে যাতে করে এটা সবার কাছে বোধগম্য হয়।
একই কথা পুনরায় মহান আল্লাহ বললেন আরও চমৎকারভাবে -
“সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা (عِوَجَا, ইওয়াজা) রাখেননি।”
(পবিত্র কুরআন, সূরা কাহাফ, ১৯:১)।
মহান আল্লাহ নিজের প্রশংসার সাথে সাথে বললেন যে তিনি বান্দার উপর এমন এক কিতাব পাঠিয়েছে যাতে কোন জটিলতা নেই, সুতরাং আলহামদুলিল্লাহ্। কোরআনের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাখাল বালক থেকে শুরু করে রাষ্ট্র প্রধানের কাছে তার বক্তব্য ফুটিয়ে তোলা। যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে(৩৯:২৮)।
অসঙ্গিতি, জটিলতা, বৈপরিত্য নেই তার মানে কুরআনকে সহজ ও সরল করা হয়েছে সেটাও মহান আল্লাহ্ বলে দিলেন চমৎকারভাবে –
“নিশ্চয় আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?” (পবিত্র কুরআন, সূরা আল ক্বামার, ৫৪:১৭)।
“We have indeed made the Quran esay to understand”
কুরআনের অর্থ উপলব্ধি করা, এ থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহন করা, মুখস্ত করা মহান আল্লাহ্ প্রত্যেকের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। কুরআন কারীম ভাষাশৈলির দিক দিয়ে অতি উচ্চতরের কিতাব হওয়া সত্ত্বেও কোনো মানুষ বিনয় ও আন্তরিকতা সহকারে একটু মনোনিবেশ করলেই সহজেই কুরআন বুঝে নিতে পারবে এবং তাকে পড়তে হবে উপদেশ গ্রহনের দৃষ্টিতে। এ কথাটাই কুরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহ্ বোঝাতে চেয়েছেন। কুরআন এর মর্মবাণী অন্তরে প্রবেশ করলে তা মানুষে পাপাচরনের আকাংখা মুছে দেয়।
এখন, আল্লাহ্ বলছেন কুরআনে জটিলতা নেই , এটি বোঝার জন্য সহজ করা হয়েছে তারপরও কেন এটাকে কেউ কেউ কঠিন বলছে, বোঝা যাবে না বলছে?
আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, আমরাই এটিকে জটিল করেছি কখনও স্বার্থের কারনে কখনো বা না বুঝে। যারা এটাকে জটিল, কঠিন বলছে তাদের কথা কুরআনের বক্তব্যের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। কুরআনের ব্যাপারে কুরআন নিজেই যে মন্তব্য করেছে সেটার সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বয়ান গ্রহনযোগ্য নয়।
আমাদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে কোরআন আমাদের ডাকছে, আহবান জানাচ্ছে – “..উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?”(৫৪:১৭)
একই সূরার মধ্যে একই কথা ৪ বার বলা হয়েছে (সূরা আল ক্বামার,১৭,২২,৩২, ও ৪০ নং আয়াতে)।
বলা প্রয়োজন যে, যে ব্যক্তি কোরআনে জটিলতা খুজে পায়, অসঙ্গতি খুজে পায় বা বিভ্রান্ত হয় তার আসলে অন্তরে রোগ রয়েছে, দৃষ্টিভঙ্গিতে সমস্যা রয়েছে, বুঝতে সমস্যা রয়েছে, এটা তার সমস্যা কোরআনের নয়। সে আগে মাইন্ড সেট করে যে কোরআনে জটিলতা আছে তারপর পড়তে শুরু করে অথবা ভুল ধরার জন্য পড়ে অথবা জগড়া করার জন্য কোরআন পড়ে।
মহান আল্লাহু বলেন-
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও করুনা, সীমালংঘনকারীদের (গোনাহগারদের) তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।” (পবিত্র কুরআন, ১৭:৮২)।
দেখুন, কোরআনকে আল্লাহ অন্তরের রোগের আরোগ্য এবং তার রহমত বললেন আর সাথে সাথে এটাও বলে দিলেন এক শ্রেনীর লোকদের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করবে তারা হচ্ছে সীমালংঘনকারী, অন্যায়কারী। সে আগে থেকেই বিভ্রান্ত, সে আগে থেকেই তার মনে নেগেটিভ ধারনা তৈরি করে রেখেছে, একটা সিদ্ধান্ত নয়ে রেখেছে এটাতে(কুরআনে) সমস্যা আছে !! তারপর পড়া শুরু করেছে। এজন্য আল্লাহ্ বললেন এদের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন