LIVE
Loading latest headlines...

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১

নারীদের মসজিদে আসার ব্যাপারে সাহাবিদের নিষেধাজ্ঞা - ইসলামিক আলোচনা-২য় পর্ব


 নারীদের মসজিদে গমন প্রসঙ্গে কিছু কথা

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায়—

এক. পুরুষদের দায়িত্ব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়া, আর মহিলাদের দায়িত্ব হলো ঘরে নামাজ পড়া।


দুই. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মহিলাদের জন্য জামাতে শরিক হওয়া ওয়াজিব, সুন্নাত বা অত্যাবশ্যকীয় ছিল না; বরং শুধু অনুমতি ছিল। তবে সেটিও এমন, অপছন্দের সঙ্গে ও শর্তসাপেক্ষ ছিল।


তিন. হজরত উম্মে হুমাইদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথার ওপর আমল করার জন্যই মসজিদ ছেড়ে সারা জীবন বাড়ির নির্জন কক্ষে নামাজ আদায় করেছেন। সে যুগের নারীরা সাধারণত এটাই করতেন।


চার. সে যুগের পরিবেশ ভালো ছিল, এ জন্যই কেবল মহিলাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নচেৎ রাসুল (সা.)-ই কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করতেন।


কঠোর শর্ত সাপেক্ষে নারীদের মসজিদে আসার অনুমতি

——————————————————————————

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মহিলাদের যে মসজিদে আসার অনুমতি ছিল, তা-ও অনেক শর্তসাপেক্ষ ছিল।

যথা—

(ক)সম্পূর্ণ আবৃত ও পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে।

(খ) সেজেগুজে খুশবু লাগিয়ে বের না হওয়া।

(গ) বাজনাদার অলংকার, চুড়ি ইত্যাদি পরে আসতে পারবে না।

(ঘ) অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না।

(ঙ) পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলবে।

(চ) অপ্রয়োজনে কোনো বেগানা পুরুষের সঙ্গে

কথা বলবে না। সর্বোপরি তাদের এই বের হওয়া ফিতনার কারণ হবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬৫, আহকামুল কোরআন, থানভি : ৩/৪৭১, বাজলুল মাজহুদ : ৪/১৬১)

কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায়ের কিছুদিন পর থেকেই।যখন এই শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে শুরু করে, তখন রাসুল (সা.)-এর প্রাণ প্রিয় সাহাবিরা তা উপলব্ধি করতে পেরে নারীদের মসজিদে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।


নারীদের মসজিদে আসার ব্যাপারে সাহাবিদের নিষেধাজ্ঞা

——————————————————————————

সাহাবায়ে কেরাম থেকে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ বিরোধী কোনো কাজ প্রকাশ পাবে—সেটা কল্পনাও করা যায় না। তাই হাদিস শরিফের পাশাপাশি সাহাবিদের আমলও দলিলরূপে গণ্য। কেননা তাঁরা ছিলেন সত্যের মাপকাঠি।


রাসুল (সা.) সুস্পষ্ট বলেছেন, ‘তোমরা আমার পরে খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, যেমন মাড়ির দাঁত দিয়ে কোনো জিনিস মজবুত ভাবে ধরা হয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)


হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নিজ খেলাফত আমলে যখন মহিলাদের পরিবর্তিত অবস্থা দেখেন এবং ফিতনার। আশঙ্কাও দিন দিন বাড়তে থাকে, তখন উম্মুল মুমিনিন

আয়েশা (রা.), ইবনে মাসউদ ও ইবনুজ জুবায়ের (রা.)সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন। অন্য সাহাবায়ে কেরামও এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন। কেননা তাঁরা জানতেন যে

মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশের বিরোধিতা করা হয়নি; বরং তাঁর ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো হুকুমের বিরোধিতা করার কল্পনাও করা যায় না। তা সত্ত্বেও তাঁরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এ জন্যই যে যেসব শর্তের সঙ্গে নারীদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি ছিল,।এখন সেসব শর্ত হারিয়ে যাচ্ছে।


নারীদের মসজিদে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞায় সাহাবিদের।যেসব উক্তি বর্ণিত হয়েছে, এর আংশিক নিম্নে উল্লেখ করা হলো—


এক. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নারীরা যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা যদি রাসুল (সা.) জানতেন, তবে বনি ইসরাইলের নারীদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি তাদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৬৯)


বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘আয়েশা (রা.)-এর এই মন্তব্য তো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্পর্কে। অথচ আজকের যুগের নারীদের উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সে যুগে ছিল না। তাহলে এ অবস্থা দেখে তিনি কী মন্তব্য করতেন?’ (উমদাতুল কারি : ৬/১৫৮)


এখন আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি যে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) নিজ যুগ তথা হিজরি নবম শতাব্দীর নারীদের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরি পঞ্চদশ শতাব্দীতে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা আর

উলঙ্গপনার দিকে ছুটে চলেছে, বেপর্দা আর

বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের পোশাক পরছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তাঘাটে বেড়াচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে অবলা মা-বোনদের সওয়াবের স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার অপচেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। অথচ এর জন্য দলিল দেওয়া হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগের নারীদের দ্বারা। এ

যুগের নারীরা কি সে যুগের নারীদের মতো?

কস্মিনকালেও নয়। তা সত্ত্বেও সে যুগেই নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে এ যুগের নারীদের মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে নামাজের জন্য উৎসাহ দেওয়া যায়?


দুই. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, ‘ওমর (রা.)-এর এক স্ত্রী (আতেকা বিনতে জায়েদ) ফজর ও।এশার নামাজে জামাতের জন্য মসজিদে যেতেন। তাঁকে

বলা হলো, ‘আপনি কেন নামাজের জন্য বের হন? অথচ আপনি জানেন যে হজরত ওমর (রা.) তা অপছন্দ করতেন ও আত্মমর্যাদাবোধের পরিপন্থী মনে করেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘তাহলে ওমর কেন আমাকে সরাসরি নিষেধ করেন না?’ তখন বলা হলো যে রাসুল (সা.)-এর বাণী রয়েছে— তোমরা আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ কোরো না—এ কথার কারণে তিনি সরাসরি নিষেধও করছেন না। ’ ’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯০০)


অন্য বর্ণনায় রয়েছে, স্ত্রী আতেকা বিবাহের সময় ওমর (রা.)-কে মসজিদে নববীতে গিয়ে নামাজের অনুমতি দেওয়ার শর্ত করেছিলেন, এ জন্য ওমর (রা.) অপছন্দ সত্যেও স্ত্রীকে নিষেধ করতে পারছিলেন না। (আল

ইসাবাহ : ৮/২২৮)


তিন. আবু আমর শায়বানি (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (আল মু’জামুল কাবির, হাদিস : ৯৪৭৫)

আল্লামা হাইসামি (রহ.) বলেন, এ হাদিসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য (সেকা)। (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ২/৩৫)


চার. হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) তাঁর পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে যেতে দিতেন না। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৫৮৪৬ (হাদিসটি সহিহ)]


পাঁচ. হজরত ইবনে ওমর (রা.) তাঁর স্ত্রীদের ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৫৮৪৫ (হাদিসটি সহিহ)]


কোন মন্তব্য নেই:

ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png