LIVE
Loading latest headlines...

রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কিত আকিদাঃ খাতেমুন নাবিয়্যিন

☛১. হযরত আবূ হুরাইরাহ্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন, আঁমি এবং আঁমার পূর্ববর্তী নবীগণের অবস্থা এমন,এক ব্যক্তি যেন একটি গৃহ নির্মাণ করল; তাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক পাশে একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নবী (ﷺ) বলেন, আঁমিই সে ইট। আর আঁমিই সর্বশেষ নবী।

তথ্যসূত্রঃ

১. মুসলিম ৪৩/৭ হাঃ ২২৮৬

২. আহমাদ ৭৪৯০

৩. সহীহ বুখারী (মূল)-৩৫৩৫ আধুনিক প্রকাশনী: ৩২৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশন:৩২৮০

☛২. হযরত কাব আহবার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যখন সৃষ্টি জগত সৃজন করার ইচ্ছা করলেন তখন মাটিকে সস্প্রসারিত করলেন,আকাশকে উঁচু করলেন এবং আঁপন নূর হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহন করলেন। তারপর উক্ত নূরকে নির্দেশ দিলেন‘ তুঁমি মুহাম্মাদ হয়ে যাও।’অতএব সে নূর স্তম্ভের ন্যায় উপরের দিকে উঠতে থাকল এবং মহত্বের পর্দা পর্যন্ত পৈাছে সিজদায় পরে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ তখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে ইরশাদ হল,এজন্যই তোঁমাকে সৃষ্টি করেছি আর তোঁমার নাম মুহাম্মাদ রেখেছি। তোঁমার হতেই সৃষ্টি কাজ শুরু করব এবং তোঁমাতেই রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করব ।

[সিরাতুল হালাভিয়া ১ম খন্ড,পৃঃ ৫০]

☛৩. হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে।

عن العرباض بن ساريه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاءلها منه قصور الشام- رواه فى شرح السنة ورواه احمد عن ابى امامة من قوله ساخبركم الى اخره- (دلائل النبوة ومعرفة احوال صاحب الشريفة للبيهقى ص ۲/۱۳٠ (مشكوة شريف ص ۵۱۳)

হযরত ইরবাদ্ধ ইবনে সারিয়া(رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন: “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তায়ালার নিকট নবীগনের (আঃ) পরিসমাপ্তিকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ এবং তখন হযরত আদম (আঃ) মাটির সাথে মিশ্রীত ছিলেন।আঁমি শ্রীঘ্রই তোমাদেরকে আঁমার প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেবো।আর তা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এঁর দোয়া এবং হযরত ঈসা (আঃ) এঁর সুসংবাদ এবং আঁমার মহিয়সী আম্মাজানের অবলোকন যা তিঁনি আঁমাকে প্রসবকালীন দেখেছেন এবং এমন একটি নূর বের হল যা দ্বারা সিরিয়ার বা শ্যাম প্রাসাদ সমূহ আলোকিত হয়ে গেল।

তথ্যসূত্রঃ

১.মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা,হাদিস নং ৫৭৫৯

২.ইবনে হিশাম: আস-সিরাতুন নববীয়্যাহ(বৈরুত: দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাসিল’আরবী,৩য় সং,১৪২১ হিঃ,১ম খণ্ড, ১৯৪-১৯৫ পৃঃ

৩.ঈমাম আহমদ ঈবনে হাম্বল(رحمة الله): আল মুসনাদ ৫ম খণ্ড, ২৬২ পৃঃ 

৪.মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ, ১০ম খণ্ড, ২৯ পৃঃ

৫. ডঃ আলী মুহাম্মদ সাল্লাবী: আস- সিরাতুন নববীয়্যাহ,(কায়রুঃ দারুল ফজর লিত-তুরাস,১ম সং,১৪২৪ হিঃ/২০০৩ খৃ:) ১ম খণ্ড, ৫৯ পৃঃ

৬. বায়হাকি: দালায়েলুন নবুয়ত :১/৮৩

৭. তাফসীরে ইবনে কাসীর :৪/৩৬০

৮. হাকেম : মুসতাদরিক: ৩/৬১৬

৯. নূর তত্ব, ৬৯ পৃঃ

☛৪. হযরত আবু হুরায়রা(رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করেন:

كنت اول النبيين في الخلق واخرهم في البعث

‘আঁমি হলাম সৃষ্টিতে নবীদের প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে নবীদের শেষ।’

তথ্যসূত্রঃ

(ক.) ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস: ৩/২৮২

(খ.) ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫

(গ.) ইবনু কাছীর,তাফসীরে ইবনে কাছির: ৩/৪৭০

(ঘ.) ইমাম ইবনে আদি,তারীখুল কামেল: ৩/৩৭৩

☛৫. হাদিস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে:

عن حضرت ابي هريرت رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه و سلم كنت اول النبين في الخلق واخرهم في البعث.

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত, হুজুর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আঁমি সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আঁমি প্রেরিত হয়েছি ( যমীনে প্রকাশ পেয়েছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।”

তথ্যসূত্রঃ

১. তাফসীরে বাগবী ৫/২০২

২. দূররে মানছুর ৫/১৮৪

৩. শেফা শরীফ ১/৪৬৬

৪. মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬

৫. কানযুল উম্মাল, ৩১৯১৬

৬. ইমাম দায়লামী,আল-ফিরদাউস: ৩/২৮২

৭. ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫

৮.ইবনু কাছীর,তাফসীরে ইবনে কাছির: ৩/৪৭০

৯.ইমাম ইবনে আদি,তারীখুল কামেল: ৩/৩৭৩

১০. তাফসীরে রুহুল মায়ানী ২১/১৫৪

১১. জাওয়াহিরুল বিহার ৪/২৩৪ ১২. সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১

☛৬. হযরত ইরবায বিন সারিয়্যা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, তিঁনি বলেছেন “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম তখন, যখন আদম (আঃ) মাটিতে মিশ্রিত ছিলেন। অপর সহিহ বর্ননায় আছে, যখন আদম (আঃ) রুহ ও দেহের মধ্যে ছিলেন।”

তথ্যসূত্রঃ

(ক.) সহীহ ইবনে হিব্বান,হাদীস নং-৬৪০৪

(খ.) মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৬৩

(গ.) মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪১৯৯

(ঘ.) মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৪৫৫

(ঙ.) শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২২২

(চ.)মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং-৫৭৫৯

(ছ.)আল মু’জামুল কাবীর,হাদীস নং-৬৩১

☛৭. এ প্রসংগে আরো এরশাদ হয়েছে :

ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺟﻌﻔﺮ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﻨﺎﻥ ﺍﻟﻌﻮﻓﻲ، ﺣﺪّﺛﻨﺎ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺑﻦ ﻃﻬﻤﺎﻥ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻣﻴﺴﺮﺓ، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻋﻦ ﻣﻴﺴﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻣﺘﻰ ﻛﻨﺖ ﻧﺒﻴﺎً؟ ﻗﺎﻝ : « ﻟَﻤَّﺎ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻷﺭْﺽَ ﻭَﺍﺳْﺘَﻮَﻯ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻓَﺴَﻮَّﺍﻫﻦَّ ﺳَﺒْﻊَ । ﺳَﻤَﻮﺍﺕٍ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻌَﺮْﺵَ ﻛَﺘَﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺳَﺎﻕِ ﺍﻟﻌَﺮْﺵِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﺍِ ﺧَﺎﺗَﻢُ ﺍﻷﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﺍﻟَّﺘﻲ ﺃﺳْﻜَﻨَﻬَﺎ ﺁﺩَﻡَ ﻭَﺣَﻮَّﺍﺀَ ﻓَﻜَﺘَﺐَ ﺍﺳْﻤِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻷﺑْﻮَﺍﺏِ ﻭَﺍﻷﻭْﺭَﺍﻕِ ﻭَﺍﻟﻘِﺒَﺎﺏِ ﻭَﺍﻟﺨِﻴَﺎﻡِ ﻭَﺁﺩَﻡُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺮُّﻭﺡِ ﻭﺍﻟﺠَﺴَﺪ.

হযরত মায়সারাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন -আমি রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম হে রাসূল (ﷺ)

আঁপনি কখন থেকে নবী ছিলেন?

নবীজি বললেন আল্লাহ তা’আলা যখন জমিন সৃষ্টি করলেন অতঃপর আসমানের দিকে মনোনিবেশ করলেন অতঃপর আসমানকে সাতটি স্তরে তৈরি করলেন অতঃপর আরশ তৈরি করলেন এবং আরশের খুটিতে লিখে দিলেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সর্বশেষ নবী।অতঃপর আল্লাহ জান্নাত সৃষ্টি করলেন যেখানে হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) বাস করেছিল। আর আমার নাম জান্নাতের দরজা সমূহে,লিখে দেওয়া হয়েছিল। তখনো আদম রুহ ও শরীরে আলাদা ছিলো এবং (অামি তখনো নবী ছিলাম)।

[ইবনে জাওযি (رحمة الله) আল ওয়াফা ফি আহওয়ালিল মোস্তফা : পৃঃ ২৬]

☛ইমাম মুহাম্মদ ইউসুফ আল সালেহী (رحمة الله) বলেন-

ﻭﺭﻭﻯ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﻮﺯﻱ ﺑﺴﻨﺪ ﺟﻴﺪ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ

ইবনে জাওযি (رحمة الله) অত্র হাদিস বর্ণনা করেছেন, এটির সনদ শক্তিশালী এবং এতে কোন ত্রুটি নেই।

[সুবুলুল হাদি ওয়ার রাশাদ, ১/৮৬]

☛৮. হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ” لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ خَبَرَ آدَمُ بَنِيهِ فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ قَالَ : فَرَأَى نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ ، فَقَالَ : يَا رَبِّ مَنْ هَذَا ؟ قَالَ : هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ هُوَ الأَوَّلُ ، وَهُوَ الآخِرُ ، وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ.

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক (ﷺ) তিনি ইরশাদ করেন, যখন মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন উঁনার সন্তানদের দেখানো হলো। তখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার সন্তানদের পারষ্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে থাকেন। অবশেষে তিঁনি এক চমকপ্রদ নূর মুবারক দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, হে আঁমার রব! এই নূর মুবারক কার? মহান আল্লাহ ইরশাদ মুবারক করলেন, তিনি আঁপনার আওলাদ হবেন। অর্থাৎ শেষে আগমন করবেন। উনার নাম আসমানে আহমদ (ﷺ)। তিঁনি সৃষ্টিতে প্রথম, তিঁনি প্রেরনে শেষ, তিঁনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী।

তথ্যসূত্রঃ

১. দালায়েলুন নবুওয়াত ৫/৪৮৩ ২. খাসায়েসুল কোবরা ১/৭০

৩. সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১ ৪. শরহে মাওয়াহেব ১/৪৩

☛৯. হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত।

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك.

রাসূল (দরুদ) ইরশাদ করেছেন, হযরত আদম (আঃ) থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিঁনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।] তখন তিঁনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন,হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর ওসীলায় আঁমি তোঁমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন ওহী নাজীল হয়- মুহাম্মদ (ﷺ) কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাঁকে কখনো দেখ নি)? তখন তিনি বলেন-যখন আঁপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন,আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই।যার নাম আঁপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।তখন ওহী নাজীল হল-তিঁনি সর্বশেষ নবী।তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে।যদি তিনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।”

তথ্যসূত্রঃ

১.দালায়েলুন নাবায়িয়্যাহ, ৫/৪৮৯ পৃ:

২. মুসতাদরাকে হাকেম : ২/৪৮৬ পৃ: হা : ৪২২৮

৩. ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) আল মাদখাল : ১/১৫৪

৪.তাবরানী :আল মুজামুল আওসাত : ৬/৩১৩,হাদিস নং-৬৫০২

৫. তাবরানী : আল মুজামুস সগীর : ২/১৮২ : হাদীস নং-৯৯২,

৬. তাবরানী : মুজমায়ে কবীর’

৭. ইমাম দায়লামী :আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৫/২২৭

৮. কাশফুল খাফা : ১/৪৬ ও ২/২১৪

৯. আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,

১০. আল্লামা সুবকী (رحمة الله) শিফাউস সিকাম

১১.ইবনে আসাকিরঃ নিজ ‘তারিখে দিমাশক’: ৭/৪৩৭পৃ:

১২. ইবনুল জাওজী : আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মোস্তফা : ৩৩

১৩. ইবনুল জাওজী : বয়ানুল মিলাদুন্নবী (দরুদ ) : ১৫৮

১৪.আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/১৮ পৃ:

১৫. ইবনে হাজর হায়সামী : মাযমাউজ যাওয়ায়েদ : ৮/২৫৩

১৬. শিহাবউদ্দীন খাফাজী : ‘নাসীম আর-রিয়াদ’

১৭.খাসায়েসুল কুবরা :১/১২;হা:১২

১৮.আদ দুররে মানসুর : ১/১৪২

১৯. মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ : ১/ ৮২ ও ২/৫২৫

২০. শরহে মাওয়াহিব : ১/১৭২

২১.সীরাতে হালাবিয়্যাহ : ১/৩৫৫

২২. মুহাদ্দিসে শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী : তফসীরে আজিযী,১/১৮৩

২৩. ইমাম নাবহানী :শাওয়াহিদুল হক : ১৩৭

২৪. আনোয়ার-ই-মোহাম্মাদীয়া, ৯-১০

২৫. জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪

২৬. ইমাম নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন :৩১ পৃ: ও ৭৯৫ পৃ: (মাকতুবাত এ তাওফিক হিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর)

২৭. আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩৭

২৮. আশরাফ আলী থানবী : নুশরত্বীব :২৮

২৯. ফাযায়েলে আমাল, ৪৯৭,উর্দু এডিশন

হাদিসের মান পর্যালোচনা

১. ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ। আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫

২. ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।শিফাউস সিকাম,পৃ:১২০

৩. ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ। দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২

৪. ইমাম কাস্তলানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ ১/১৬৫

৫. ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯

৬. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।আল খাসায়েসুল কুবরাঃ১/৮

৭. সালাফীদের গুরু ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদিসটি দলিল হিসাবে তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।”যদি মুহাম্মাদ (ﷺ) না হতেন, তবে আঁমি তোঁমাকে সৃষ্টি করতাম না’-এ হাদিসটি উল্লেখ করে বলেছেন,এ হাদিসটি পূর্বের কথাকে শক্তিশালী করেছে।

[মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯]

৮.বাতিলদের জবাবে ইমাম ইবনু কাসীর পরিস্কার বলেছেন, এই হাদিসটি বানোয়াট নয়।এটা দ্বারা নির্দ্বিধায় দলীল প্রদান করা যাবে।তিনি আরও বলেছেন, হাদিসের বর্ণনাকারী আব্দুর রাহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম মিথ্যাবাদী নন। এবং এ হাদীসটি ও জাল নয়।বরং হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। এমন হাদিস দ্বারা দলিল প্রদান করা যাবে নিঃসন্দেহে।

[আস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ- ১/১৯৫]

৯. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী কারী বলেন,এ কথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।

[আল আসরারুল মারফুআহ,১/২৯৫, মাওয়ারিদুর রাবী ফি মওলদুন্নবী; ১/১৮]

১০. দেওবন্দের অন্যতম আলেম আশ্রাফ আলী থানভীও উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।

[নশরুত্তীব; পৃষ্ঠা ২৭।]

১১. ইমাম ইবনূ হাযার হাইসামী (رحمة الله) স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব ‘শারহে শামায়েল’ এ ইমাম হাকিমের রায় “হাদিসটি সহিহ্” হওয়াকে গ্রহণ কররেছেন।

[ইমাম ইবনূ হাযার হাইসামী (رحمة الله) ‘শারহে শামায়েল’; ১/১১৫]

১২. শায়খ ইউসূফ নাবাহানী (رحمة الله) উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।

[ইমাম ইউসূফ নাবাহানী : যাওয়াহিরুল বিহার; ২/১১৪।]

❏ তিনি তার অন্যান্য গ্রন্থেও অনুরুপ রায় গ্রহণ করেছেন:

(ক.) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন, পৃষ্ঠা ৭৯৫।

(খ.) আনওয়ারে মোহাম্মাদিয়া,পৃ: ৯-১০

(গ.) শাওয়াহিদুল হক্ব,পৃষ্ঠা ১৩৭।

(ঘ.) আফদ্বালুস সালাত,পৃষ্ঠা ১১৭।

১৩. রিযাল শাস্ত্রবিদদের অন্যতম আল্লামা আযলূনী (رحمة الله) স্বীয় ‘কাশফুল খাফা’ এর দুই স্থানে উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।

[কাশফুল খাফা; ১/৪৬, ২/২১৪]

১৪. আল্লামা ইসমাইল হাক্বী (رحمة الله) উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।

[তাফসিরে রুহুল বয়ান,পৃষ্ঠা ২/৩৭০]

❏ আজকে আলোচিত হাদিসখানাতে যে বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় তাহল:

১. যদি মুহাম্মাদ (ﷺ) না হতেন,তবে আল্লাহ পাক কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না।

২. “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এই কালেমা আমাদের বানানো কালেমা নয়।যা স্বয়ং আরশে লেখা রয়েছে।

৩. রাসূল (ﷺ) ই- সর্বশেষ নবী।

৪. যারা বলে আল্লাহর নামের সাথে রাসূলের নাম থাকলে শিরক বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ থাকবে উপরে লেখা আর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ থাকবে নিচে লেখা সেই সকল মুনাফিক,মালাউন,আহলে বায়াতের দুশমনদের আপত্তির মোক্ষম জবাব।

৫. রাসূল (ﷺ) এঁর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব মহান আল্লাহর নিকট আর কেউ নেই।যার কারনে আল্লাহ পাক স্বয়ং স্বীয় নামের সাথে তাঁর প্রিয় হাবীবের নাম রেখেছেন।কাজেই এটা বলা যাবে না যে, আল্লাহর নামের সাথে রাসূলের নাম থাকলে শিরক বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ থাকবে উপরে লেখা আর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ থাকবে নিচে লেখা।

☛১০. হাদিস শরীফ বর্নিত হয়েছে

হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে। তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) বলেছেন,৬টি বিষয় দ্বারা আঁমাকে সকল নবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে।

১.আঁমাকে অল্প ভাষায় অধিক ভাব প্রকাশের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

২. আঁমাকে সাহায্য করা হয়েছে শত্রুদের অন্তরে ভীতি সৃষ্টি করার মাধ্যমে

৩. আঁমার জন্য গণীমত হালাল করা হয়েছে। [উল্লেখ্য, গণীমত পূর্ববর্তী উম্মতের জন্য হালাল ছিলনা]।

 ৪. পুরো পৃথিবীকে আঁমার জন্য পবিত্র ও মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। [যা অন্য উম্মতের জন্য ছিলনা]

 ৫. আঁমাকে পুরো সৃষ্টির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। [আগের সকল নবীকে নির্দিষ্ট গোত্রের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল এবং তাদের রিসালাত ছিল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য]

 ৬.আঁমার দ্বারা নবুয়্যতের ধারাবাহিকতাকে সমাপ্ত করা হয়েছে।

[মুসলিম,মিশকাত হা/৫৭৪৮ ‘নবীগণের সরদারের ফযীলত’ অধ্যায়।]

❏ আবার তাফসীরে ইবনে কাসীরেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ইমাম মুসলিম(رحمة الله)বলেন,ইহইয়া ইবনে আইয়ু্,কুতায়বাহ ও আলী ইবনে হুজর…….হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,রসুলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেছেন,

“সকল নবীদের উপর আঁমাকে ছয়টি কারণে বিশেষত্ব প্রদান করা হয়েছে।আঁমাকে পরিপূর্ণ কথা প্রদান করা হয়েছে।বিরুদ্ধবাদীদের অন্তরে আমার ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে আঁমাকে সাহায্য করা হয়েছে।আঁমার জন্য গণীমত হালাল করা হয়েছে।আঁমার জন্য জমিনকে পবিত্র এবং নামাজের স্থান স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।আঁমি সমগ্র জাহানে আল্লাহ ব্যতীত সবার রাসূল হয়েছি আর আঁমার মাধ্যমেই নবী আসা বন্ধ হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ

১. তাফসীরে ইবনে কাসীর,৯ম খন্ড,১১৪-১১৫ পৃঃ,ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত।

২. খতমে নবুওত কৃতঃ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(رحمة الله), ৭৪ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।

❏ ইমাম তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ ইসমাইল ইবনে জাফর(رحمة الله) সূত্রে ইহা বর্ণনা করেছেন।ইমাম তিরমিযী বলেন,হাদিসটি হাসান, সহীহ।

[ইবনে কাসীর,৯ম খন্ড,১১৫পৃঃ, ইঃফাঃ]

❏ আবার অন্য বর্ননায় রয়েছে।হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন “আঁমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দেয়া হয়েছে, যা আঁমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি।

১.আঁমাকে এক মাসের দূরত্বের রাস্তায় ভীতি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে।

২. আঁমার জন্য পৃথিবীকে মসজিদ ও পবিত্র করা হয়েছে, তাই আঁমার উম্মাতের কোন লোকের যেখানেই সালাতের সময় হবে সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে।

৩. আঁমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করা হয়েছে যা ইতিপূর্বে কারো জন্যই হালাল ছিল না।

৪. আঁমাকে শাফায়াতের অধিকার দেয়া হয়েছে।

৫. প্রত্যেক নবী প্রেরিত হতেন কেবলমাত্র তার সম্প্রদায়ের জন্য, কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানব জাতির জন্য।”

[বুখারী শরীফ,হাঃ ৩৩৫।আবার প্রমান সরূপ :সহিহ বুখারী/৪২৫ ইফা/আহমাদ ১৪২৬৮ ও দেখতে পারেন]

☛১১. হযরত ইবনে আলী ওমর আল-আদানী স্বীয় মুসনাদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁকে তাঁর সন্তানদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদার তারতম্যটুকুও দেখাতে লাগলেন। তিনি ( আদম আলাইহিস সালাম ) তাদের মধ্যে শেষপ্রান্তে একটা উজ্জ্বল নূর দেখাতে পেলেন। তখন তিনি বললেন,‘‘ হে রব! ইনি কে? ( যাকে সবার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত নূর হিসাবে দেখতে পাচ্ছি?) উত্তরে মহান রববুল আলামীন ইরশাদ করলেন,‘‘ ইনি হলেন তোমার পুত্র-সন্তান হযরত আহমদ মুজ্তবা (ﷺ)

তিঁনি প্রথম,তিঁনি শেষ,তিঁনি হবেন আঁমার দরবারে প্রথম সুপারিশকারী (ক্বিয়ামতের দিনে)।

তথ্যসূত্রঃ

১.আল -খাসাইসুল কুবরা ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯

২. কানজুল উম্মাল ৩২০৫৬ নং হাদীস খ ১১, পৃ ১৯৭

৩.বাইহাকী ৫ম খন্ড পৃ ৪৮৩

☛১২. হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।রাসূল (ﷺ) আলী (رضي الله عنه)কে লক্ষ্য করে বললে:

((أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي))

”মূসার(আলাইহিস সালাম) পক্ষ থেকে হারুণ(আলাইহিস সালাম)যে (দায়িত্ব,মর্যাদা) স্থানে ছিলেন আঁমার পক্ষ থেকে তুমি হলে সে স্থানে।তবে (পার্থক্য এই যে)আঁমার পরে কোন নবী নেই।“

তথ্যসূত্রঃ

১. সহীহ বুখারীঃ ২/৬৩৩

২. সহীহ মুসলিমঃ২/২৭৮

৩. সুনানে তিরমিযীঃ২/২১৩

☛১৩. যুবায়ের বিন মুতয়িম (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন,”আঁমার অনেক নাম রয়েছে।আঁমি মুহাম্মদ,আঁমি আহমদ,আঁমি মাহী,অর্থাৎ আঁমার কারণে কুফুরী মিঠিয়ে দেন,আঁমি হাশের,আঁমার কদমের উপর লোকদের হাশর হবে এবং আঁমি হলাম আকেব।আর আকেব হলো-যার পরে কোনো নবী নাই।

তথ্যসূত্রঃ

১. সহীহ বুখারীঃ১/৫০০

২. সহীহ মুসলিমঃ২/২৬১

৩. সুনানে তিরমিযীঃ২/১১১

❏ এছাড়াও এই হদিসখানা ইমাম আহমদ,ইমাম মালেক,আবু দাউদ,তায়লাসী,বায়হাকী,আবু নঈম বর্ণনা করেছেন।

☛১৪. হযরত ছাওবান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।রাসূল (ﷺ) বলেছেন,”আঁমার উম্মতের মধ্য থেকে ত্রিশজন এমন মিথ্যাবাদী আত্মপ্রকাশ করবে।তাদের প্রত্যেকে নবী বলে দাবী করবে।অথচ আঁমি খাতামুন্নাবিয়্যীন(শেষ নবী),আঁমার পরে কোন নবী নেই।“

তথ্যসূত্রঃ

১. সুনানে তিরমিযীঃ২/৪৫

২. মুসনাদে আহমদঃ৬/৩৭৩

৩. মিশকাত শরীফঃ৪৬৪-৪৬৫ পৃঃ

৪.আবু দাউদ শরীফ,কিতাবুল ফিতান

৫. খতমে নবুয়্যত কৃতঃ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(رحمة الله), ৮৪ পৃ: (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।

❏ ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

☛১৫. ইমাম আহমদ,বোখারী, মুসলিম এবং তিরমিযী হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে আর আহমদ এবং শায়খায়ন হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে,আহমদ ও মুসলিম হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে,আহমদ ও তিরমিযী ওবাই বিন কা’ব (رضي الله عنه)র সূত্রে বর্ণনা করেন।হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন, ”আঁমি এবং সমগ্র নবীদের দৃষ্টান্ত এমন যে যেমন একটি সুন্দর অট্টালিকা তৈরী করা হলো।আর তাতে একটি ইটের জায়গা খালি থাকে।প্রত্যক্ষদর্শীরা এর চারপাশে ঘুরাফেরা করছে এবং এর নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে থাকে।কিন্তু ঐ একটি ইটের জায়গা খালি থাকায় দেখতে দৃষ্টিকটু দেখায়।আঁমার দ্বারা এ অট্টালিকা পূর্ণ করা হয়েছে।আঁমার দ্বারা রাসূলগণের সমাপ্তি হয়েছে।আঁমি সকল নবীদের খাতেম অর্থাৎ সর্বশেষ নবী।“

১. সহীহ বোখারীঃ১/৫০১

২. সহীহ মুসলিমঃ২/২৪৮

৩. আহমাদ ৭৪৯০

৪.খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(رحمة الله), ৭৬পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।

☛১৬. ইমাম আহমদ (رحمة الله) বলেন, আফফান (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ ”রিসালত ও নবুয়ত শেষ হয়েছে,অতএব আঁমার পরে কোন রাসূলেরও আগমন ঘটবে না আর কোন নবী আসবেন না।রাবী বলেন,এই কথা শুনে সাহাবীগণ ব্যথিত হলেন,তখন তিঁনি (ﷺ) বললেন মুবাশশিরাত পরেও অবশিষ্ট থাকবে।সাহাবকেরাম (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করলেন,’মুবাশশিরাত’ কি? তিঁনি (ﷺ) বললেন,মুসলমানদের সত্য স্বপ্ন,ইহা নবুয়তের একটি অংশ”।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর,৯ম খন্ড,১১২-১১৩ পৃঃ,ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত]

☛১৭. ইমাম আহমদ(رحمة الله) বলেন, ইউনূস ইবনে মুহাম্মদ(رحمة الله)…….আবু তুফাইল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ”আঁমার পরে মুবাশশিরাত ব্যতীত কোন নবুয়তের কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।জিজ্ঞেস করা হল,মুবাশশিরাত কি ইয়া রাসুলুল্লাহ!তিঁনি (ﷺ) বললেন,উত্তম স্বপ্ন বা তিনি (ﷺ) বললেন,নেক স্বপ্ন।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর,৯ম খন্ড,১১৪ পৃঃ, ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত।]

☛১৮. ইমাম আহমদ ‘মুসনাদ’,ইমাম মুসলিম ‘সহীহ’ এবং তাবরানী ‘মুজামে কবীরে, হযরত আবু মূসা আশয়ারী (رضي الله عنه)র সূত্রে বর্ণনা করেন,রসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন,

“আমি মুহাম্মদ,আহমদ এবং সব নবীদের পর আগমনকারী, মাখলুকসমূহকে হাশর প্রদানকারী এবং রহমতের নবী।“

[খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(رحمة الله), ৫৩ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।]

☛১৯.আহমদ, তিরমিযী, হাকেম বিশুদ্ধ সনদে, রুয়ানী, তাবরানী এবং আবু ইয়ালা হযরত ওকবা বিন আমের এবং তাবরাণী, ইবনে আসাকির আর খতীব ‘কিতাব রুয়াতে মালেকে’ হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর থেকে,তাবারাণী হযরত আসমা বিন মালেক এবং হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,

রসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,”আঁমার পরে যদি কেউ নবী হতো তাহলে ওমর ফারুকই নবী হতো।

তথ্যসূত্রঃ

১. সুনান তিরমিযী হাদিস নং-৩৬১৯

২. খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(رحمة الله),৮১ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।

☛২০. হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ

كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمْ الْأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ.

“বনী ইসরাইলকে পরিচালনা করতেন তাদের নবীগণ।এক নবী ইন্তেকাল করলে আরেক নবী তাঁর স্থানে এসে দায়িত্ব পালন করতেন। তবে আঁমার পরে কোন নবী আসবে না; আসবে খলীফাগণ।”

[সহীহ বুখারী,কিতাবুল মানাক্বি]

☛২১. আল্লামা ইবনে কাসীর (رحمة الله) তার “তাফসীরে ইবনে কাসীর” এর মধ্যে

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا.

এই আয়াতের ব্যখ্যার শেষে বলেন, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে আল্লাহর বান্দাগণের প্রতি প্রেরণ করা এবং সাথে সাথে তাকে সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করে ইহা তাহাদের (বান্দাদের) জন্য আল্লাহর বিরাট অনুগ্রহ।আল্লাহ তা’আলা তাঁর নাযিলকৃত আল কিতাবের মাধ্যমে এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর মুতাওয়াতির হাদিসের মাধ্যমে এই সংবাদ দিয়েছেন যে,হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর পরে আর কোন নবী নাই।এটা দ্বারা তাদের বুঝা উচিৎ যে,তাঁর পরে যে কেউ নবুয়তের দাবী করবে সে একজন মিথ্যাবাদী,প্রতারক ও ধোকাবাজ।সে যদি নানা প্রকার তিলসমতির প্রকাশ ঘটায় তবুও গোমরাহী ব্যতীত অন্য কোন নামে তা অভিহিত হবে না।যেমন পূর্বে ইয়েমেন এর আসওয়াদ আনাসী ও ইয়ামাহ এবং মূসায়লামাহ এর হাতে এইরুপ তিলসমতির প্রকাশ ঘটেছিল।কিন্তু তা যে সম্পূর্ণ গোমরাহী ছিল, জ্ঞানীজনের বুঝতে বাকী ছিল না।আর যারা নবুয়তের দাবীদার ছিল তারাও জ্ঞানীজনের নিকট মিথ্যাবাদী ও গোমরাহী ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই।কিয়ামত পর্যন্ত যারাই এরুপ দাবী করবে তারাও মিথ্যাবাদী ও গোমরাহ।এমনকি খাতেমুল কাযযাবীন ও সর্বশেষ মিথ্যাবাদী ও মহা প্রতারক মসীহ দজ্জাল এর প্রকাশ ঘটবে।তবে এই সকল প্রতারক ও মিথ্যাবাদীদের কিছু আলামত এমন হবে, যার মাধ্যমে কোন আলেম ও মু’মিনের বুঝতে বাকী থাকবে না যে,তারা মিথ্যাবাদী।তারা না সৎকাজের নির্দেশ করবে আর না অসৎ কাজ থেকে বাঁধা দিবে।যদি কখনও এমন হয় তবে তা হবে আকস্মিক,না হয় কোন বিশেষ উদ্দ্যশ্যকে সামনে রেখে।বস্তুত তারা তাদের কথাবার্তা ও কর্মকান্ডে চরম প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করবে।যেমনঃ ইরশাদ হয়েছেঃ

“শয়তান যে কার নিকটবর্তী হয়,আমি কি তা তোমাদের জানাব?সে প্রত্যেক মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট অবতীর্ণ হয়।“ কিন্তু আম্বিয়াকেরামের অবস্থা এটার সম্পূর্ণ বিপরীত।তাঁরা স্বীয় কার্যকলাপে নেকী,সততা,হিদায়েত, ইস্তিকামাত ও আদল-ইনসাফের সর্বশেষ স্থরে আসীন হয়ে থাকেন।সৎকাজে আদেশ করতেন ও অসৎ কাজ থেকে তাঁরা বিরত রাখতেন এবং সাথে সাথে তাদের পক্ষ থেকে নানা প্রকার মুজিযা ও অলৌকিক ঘটনাও সংঘটিত হত।এবং তাঁরা সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণও পেশ করতেন।চিরকাল তাদের প্রতি বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত সাথী হয়ে থাকুক অশেষ শান্তি।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর,৯ম খন্ড, ১১৬-১১৭ পৃঃ,ইঃফাঃ থেকে প্রকাশিত]

☛২২. কুরআন ও সুন্নাহের পর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা বা মতৈক্য হলো তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।সমাজ নির্ভরযোগ্য বর্ণনা হতে জানা যায়। রাসূল (ﷺ) এঁর ইন্তিকালের অব্যাহিতর পরই যে সমস্ত লোক নবুওয়াতের দাবী করেছিল এবং যারা তাদের নবুওয়্যাত স্বীকার করে নেয়, তাদের সবার বিরুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করেছিলেন। এ সম্পর্কে মুসাইলামা কায়সারের ব্যাপারটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য,যে রাসূল (ﷺ) এঁর ইন্তেকালের পূর্বেই রাসূলের নবুওয়্যাতকে স্বীকার করা সত্বেও শুধুমাত্র তাঁর নবুওয়্যাতে অংশীদার হওয়ার দাবী করে চিঠি লেখেঃ

“আল্লাহর রাসূল মুয়ালামার তরফ হতে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের নিকট।আঁপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আঁপনি জেনে রাখুন,আমাকে আঁপনার সাথে নবুওয়্যাতের কাজে শরীক করা হয়েছে।

[তাবারী,২য় খন্ড,২৯৯ পৃ:]

❏ লক্ষ্য করুন: হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে স্পষ্টভাবে নবী বলে স্বীকার করে নেয়ার পরও তাকে ইসলাম বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে। সাহাবা (رضي الله عنه) গণ তাকে মুসলমান বলে স্বীকার করেননি এবং সাহাবা (رضي الله عنه) গণ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এ যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)।এ দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে,হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) শেষ নবী যে ব্যাপারে সাহাবাগণের ইজমা হয়ে গিয়েছে।

☛২৩. ইমাম ইবনে হাজর মক্কী শাফেয়ী ‘খয়রাতুল হিসান ফী মানাকিবে আল-ইমামিল আজম আবী হানিফা আননুমান’ গ্রন্থে বলেন-“ইমাম আযম (رضي الله عنه)র যুগে একজন নবুয়্যত দাবীদার বললো,আমাকে সুযোগ দিন যেন আমি কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। ইমাম হুম্মাম বলেন, যে ব্যক্তি তার থেকে নিদর্শন চাইবে,সেও কাফের হয়ে যাবে।কেননা,সে ঐ নিদর্শন চাওয়ার কারণে সৈয়দে আলম (ﷺ) (অকাট্য বাণী দ্বীনেন অপরিহার্য বিষয়েই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।হুজর (ﷺ) বলেছেন,আঁমার পরে কোনো নবী নাই।”

[খতমে নবুওত কৃতঃআলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ফাজেলে ব্রেরলবী(رحمة الله), ১৪০ পৃঃ (বাংলা),জাগরণ প্রকাশনী চট্রগ্রাম।]

পূর্বেউল্লেখিত তাফসীরগ্রন্থ,হাদিস সমূহ ও ইমাম গণের ফতোয়া দ্বারা প্রমানিত হয় যে,

১. রাসূলে পাক (ﷺ) শেষ নবী।

২. ইমামুল আম্বিয়া,রাসূলে পাক (ﷺ) এঁর পর আর কোন নবী আসবেন না।

৩. রাসূলে পাক (ﷺ) আকেব যাঁর পরে কোন নবী নেই।

৪. রাসূল (ﷺ) এঁর পরে যারা নবুয়ত দাবী করবে তারা মিথ্যাবাদী,গোমরাহ ও নি:সন্দেহে কাফের।

❏ নবুওয়াতের মোহর ❏ 

জু‘আইদ (رحمة الله) বলেন,আমি সাইব ইবনু ইয়াযীদকে বলতে শুনেছি যে, আমার খালা আমাকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এঁর নিকট নিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগিনা রোগাক্রান্ত। তখন নাবী (ﷺ) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বরকতের দু‘আ করলেন। তিঁনি ওযু করলেন, তাঁর ওযুর বাকী পানি আমি পান করলাম। অতঃপর আমি তাঁর পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম তাঁর স্কন্ধের মাঝে ‘‘মোহরে নাবুওয়্যাত’’ দেখলাম যা কবুতরের ডিমের মত অথবা বাসর ঘরের পর্দার বুতামের মত।

[সহীহ বুখারীঃ ৩৫৪১]

পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে

☛মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

অর্থাৎ “মুহাম্মদ (ﷺ) তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন,হ্যাঁ আল্লাহর রাসুল এবং সমস্ত নবীদের মধ্যে সর্বশেষ।আর আল্লাহ সবকিছু জানেন।

[সূরা আহযাব,আয়াত নং-৪০]

শানে নযূল

❏ মুহাম্মদ (ﷺ) তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন।এই আয়াত অবতীর্ণ হবার পর “যায়েদ ইবনে মুহাম্মদ ” বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।যদিও রসুলুল্লাহ (ﷺ) তাহাকে পোষ্যপুত্র করেছিলেন।বস্তুত রসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর কোন ঔরসজাত পুত্র যৌবনে পদার্পণ করে নি।হযরত খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এঁর গর্ভে তাঁহার তিন পুত্র কাসেম,তায়্যিব ও তাহের (رضي الله عنه) জন্ম গ্রহণ করেন;কিন্তু সকলেই শৈশবকালে ওফাত লাভ করেন।হযরত মাবিয়া কিবতিয়্যাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ইব্রাহীম (رضي الله عنه)। তাঁহার ওফাতও শৈশবকালেই ঘটে।হযরত খাদীজা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এঁর গর্ভে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর চার কন্যা জন্মগ্রহণ করেন।হযরত যয়নব,উম্মে কূলসুম,হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)।রাসুলুল্লাহ (ﷺ) জীবদ্দশায়ই তাঁর তিন কন্যা ওফাত শরীফ বরণ করেন এবং হযরত ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল (ﷺ) ইন্তেকাল তথা দুনিয়ার হায়াতে জিন্দেগী থেকে পর্দা নেওয়ার ছয়মাস পর ওফাত শরীফ লাভ করেন।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর,৯ম খন্ড, ১১১-১১২ পৃঃ, কৃতঃ হাফিজ আবুদ ফিদা ওয়ার ইমামুদ্দীন ইবনে কাসীর, ই:ফা:কর্তৃক প্রকাশিত।]

❏ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন ❏ 

🌴খাতামান নাবিয়্যিন অর্থ বা মুরাদ হচ্ছে হাবীবে খোদা (ﷺ)হলেন, সর্বশেষ নবী কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবেন না,আসতে পারে না।

১. রঈসুল মুফাসসিরীন সাহাবী ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا.

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “মুহাম্মদ (ﷺ)তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন।অর্থাৎ,যায়েদের (رضي الله عنه) পিতা নন,তিনি বরং আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী, তাঁরই মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর পূর্ব থেকে আগমনকারী নবীদের আগমন সমাপ্ত করেছেন।সুতারাং তাঁর পর অন্য কোন নবী আগমন করবেন না।আল্লাহ তা’আলা সকল বিষয়ে, তোমাদের কথা ও কর্ম সব বিষয়ে অবগত।“

[তাফসীরে ইবনে আব্বাস,কৃতঃ ফিরোযাবাদী,৩য় খন্ডঃ ৬৮ পৃঃ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।]

২. উক্ত আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় ইমামুল মুফাসসিরীন আল্লামা আবু জাফর তাবারী (رحمة الله) তাঁর “তাফসীর ইবনে জারীর তাবারী” গ্রন্থে উল্লেখ করেন- “হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন,বরং তিঁনি আল্লাহর রাসূল এবং তিঁনি খাতামুন নাবিয়্যিন (অর্থাৎ সর্বশেষ নবী)।

ইমাম আবু জাফর তাবারী (رحمة الله) আরও বলেন, “তিঁনি আল্লাহর রসূল এবং খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবী যিঁনি নবুয়তের ক্রমধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং এঁর উপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন।সুতারাং রাসুল (ﷺ) এঁর পর কিয়ামত পর্যন্ত এ ধারা আর কারো জন্য খোলা হবে না।“

[তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী, কৃত,ইমাম আবু জাফর তাবারী (ওফাত ৩০৩ হিজরী): ৬ষ্ঠ খন্ডঃ ১৮৩ পৃঃ,আর রিসালাহ কর্তৃক লেবানন থেকে প্রকাশিত।]

৩. বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর কারক আল্লামা ইমাম ইবনে কাসীর (رحمة الله) বলেন, “অত্র আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তাঁর মুহাম্মাদ (ﷺ) পরে কোন নবী নাই। নবী যখন আসবেন না রাসুল আসার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা।এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর,৩য় খন্ড, ৪৯৩ পৃষ্টা, মিসরিয় ছাপা]

❏ আবার, তাফসীরে ইবনে কাসীর এর ৯ম খন্ড, ১১২ পৃঃ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যা প্রকাশিত হয়েছে তাতেও বলা হয়েছে:

হাফিজ আবুদ ফিদা ইমামুদ্দীন ইবনে কাসীর (رحمة الله) তার তাফসীরে বলেছেন “আলোচ্য আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে,হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর পরে আর কোন নবীর আবির্ভাব ঘটবে না।আর যখন কোন নবীর আগমন ঘটবে না,সে ক্ষেত্রে কোন রাসূলেরও আগমন ঘটবে না, তা বলাই বাহুল্য।কারণ রিসালতের মাকাম নবুয়তের মাকাম অপেক্ষা খাস।কারণ সকল রাসূল নবী হয়ে থাকেন,কিন্তু সকল নবী রাসূল হয় না।”

৪. আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দীন সৈয়ুতী(رحمة الله) যিনি হিজরী ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন,তাঁর তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে দুররে মনসুর” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,আবদ ইবনে হুমাইদ (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন- “হযরত হাসান (رضي الله عنه) হতে খাতামুন নাবিয়্যিন এঁর ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে, তিঁনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা নবীদের সিলসিলা মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন,তিঁনি সমস্ত নবী ও রাসূলগণের শেষে অর্থাৎ তিঁনি সর্বশেষ নবী এবং সর্বশেষ রাসূল।

[তাফসীরে দুররে মনসুর,কৃতঃ ইমাম জালাল উদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله),৬ষ্ঠ খন্ড, ৬১৭ পৃঃ]

৫. সুবিখ্যাত “তাফসীরে খাজিন” এ বলা হয়েছে “খাতিমুন নাবিয়্যিন” এর অর্থ হল,আল্লাহ তা’আলা রাসূল পাক (ﷺ) এঁর মাধ্যমে নবুয়তের ধারা শেষ করে দিয়েছেন।“

[তাফসীরে খাজিন,কৃতঃ ইমাম খাজিন(ওফাত ৭৪১ হিজরী),৫ম খন্ডঃ ২১৮ পৃ:]

৬. আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে মাযহারী” তে উল্লেখ করেছেন,

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا.

এখানে “খাতাম” অর্থ সমাপ্ত।আর “খাতিম” অর্থ সমাপ্তকারী।‘খাতামান নাবিয়্যিন’ অর্থ সর্বশেষ নবী।হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন, আলোচ্য বাক্যের মমার্থ হচ্ছে নবুয়তের প্রবাহমানতা যদি আঁমি (আল্লাহ) মুহাম্মদ (ﷺ) পর্যন্ত সম্প্ত না করতাম,তবে তাকে (রসুলে পাক) করতাম কোন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পিতা,যে নবী হতো তাঁর ওফাতের পর।আতার বর্ণনায় এসেছে,হযরত ইবনে আব্বাস(رضي الله عنه) বলেছেন,আল্লাহ পাক যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, মুহাম্মদ (ﷺ) ই শেষ নবী,সেহেতু তিঁনি তাঁর (রসুলে পাকের) কোন পুত্রকে প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় পৌঁছাননি।ইবনে মাজাহ এর বর্ণনায় এসেছে,হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন,রসুলে পাক (ﷺ) তাঁর পুত্র হযরত ইব্রাহীম (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেছেন,সে বেঁচে থাকলে নবী হতো।

[তাফসীরে মাযহারী,৯ম খন্ড,৫১০ পৃ: হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া, ভূঁইগড়,নারায়ণগঞ্জ,বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।]

❏ আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে মাযহারীতে একটি প্রশ্ন করেছেন এবং উত্তরও দিয়েছেন।তিনি লিখেন,একটি প্রশ্ন: রসুলে পাক (ﷺ) সর্বশেষ নবী।কিন্তু একথাও তো ঠিক যে,হযরত ঈসা (আ:) পুনরাবির্ভূত হবেন।তাহলে রসুলে পাক (ﷺ) আর সর্বশেষ নবী থাকলেন কী করে?

❏ জবাবঃ হযরত ঈসা (আঃ) এঁর পুনরাবির্ভাব ঘটবে ঠিকই।কিন্তু তা নবী হিসেবে নয়,বরং শেষ রাসুল মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমদ মোজতবা (ﷺ) এঁর উম্মত হিসেবে এবং তিঁনি জীবন-যাপন করবেন রাসূল (ﷺ) এঁর শরীয়ত অনুসারে।সুতারাং রাসূল (ﷺ) এঁর সর্বশেষ নবী হওয়ার ক্ষেত্রে তিঁনি অন্তরায় নন।

এরপর বলা হয়েছে, وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। একথার অর্থ সকল কিছুই আল্লাহর জ্ঞান আয়ত্ত বলেই তিঁনি ভালোভাবে জানেন কাকে করতে হবে শেষ নবী।কার মাধ্যমে সমাপ্ত করতে হবে নবুয়তের ধারা।

[তাফসীরে মাযহারী,৯ম খন্ড,৫১১পৃঃ, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া,ভূঁইগড়,নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।]

৭. আল্লামা মূল্লা জিউন (رحمة الله) কর্তৃক প্রণীত তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,“খাতামুন নাবিয়্যিন” এর অর্থ রসূলে পাক (ﷺ) এঁর পরে কোন নবীর আবির্ভাব হবে না।যদিও ঈসা (আলাইহিস সালাম) হুজুর (ﷺ) এঁর পরে এ ধরাতে অবতরণ করবেন,নবী হিসেবে নন বরং তাঁর খলিফা হিসেবে অবতরণ করবেন এবং মুহাম্মদী শরীয়ত মোতাবেক আমল করবেন।ইতিপূর্বে যদিও তিঁনি নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

[তাফসীরাতে আহমদীয়া কৃতঃ মোল্লা জিউন (رحمة الله): ৬২৩ পৃ:]

৮. সদররুল আফাযিল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী (رحمة الله) তাঁর স্বীয় তাফসীর “তাফসীরে খাযাইনুল ইরফান” কিতাবে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ

“সুতারাং হযরত যায়েদেরও তিনি বাস্তবে পিতা নন।তাহলে তাঁর বিবাহকৃত স্ত্রী তাঁর (ﷺ) জন্য হালাল হতো না কাসেম,তৈয়ব,তাহের, ইব্রাহীম হুজুর পাক (ﷺ) এঁর সন্তান ছিলেন; কিন্তু তাঁরা ঐ বয়স পর্যন্ত পৌঁছেন নি যে,তাঁদেরকে ‘পুরুষ’ বলা যেতো! তাঁরা শিশু অবস্থায়ই ওফাত পান।

وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ

এবং সমস্ত রসুল হিতাকাঙ্খী ও স্নেহশীল।তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য হবার কারণে আঁপন উম্মতের পিতা হিসেবে আখ্যায়িত হন; বরং তাঁদের প্রতি কর্তব্য প্রকৃত পিতার প্রতি কর্তব্য অপেক্ষা বহুগুণ বেশী।কিন্তু এতদসত্ত্বেও উম্মত প্রকৃত সন্তান হয়ে যায় না এবং প্রকৃত সন্তানদের বিধান-উত্তারাধিকার ইত্যাদি তার জন্য প্রযোজ্য হয় না।

وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ অর্থাৎ সর্বশেষ নবী।অর্থাৎ নবুয়তের ধারা তাঁর উপরই সমাপ্ত হয়েছে।তাঁর নবুয়তের পর কেউ নবুয়ত পেতে পারে না।এমনকি, যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন,তখন যদিও তিঁনি নবুয়ত পূর্বে পেয়েছিলেন,কিন্তু অবতরণের পর তিঁনি শরীয়তে মুহাম্মদী (ﷺ) অনুসারে কাজ করবেন এবং এ শরীয়ত অনুযায়ী নির্দেশ দেবেন ও তাঁরই ক্বিবলা অর্থাৎ কা’বা মু’আযযমার দিকে মুখ করে নামাজ পড়বেন।হুজুর (ﷺ) সর্বশেষ নবী হওয়া নিশ্চিত ও অকাট্য।

❏ কোরআনের আয়াতও এ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে আর ‘সিহাহ সিত্তাহ’ এর বহু সংখ্যক হাদিস,যেগুলো ‘মুতাওয়াতির’-এর পর্যায়ে পৌঁছে, যা দ্বারা প্রমাণিত যে,হুজুর (ﷺ) শেষ নবী।তাঁর পরে কেউ নবী হবে না।যে কেউ হুজুর (ﷺ) এঁর নবুয়তের পর অন্য কারো পক্ষে নবুয়্যত পাওয়া সম্ভব বলে জানে, সে ‘খতমে নবুওত ‘ কে অস্বীকার করে এবং কাফির ও ইসলাম বহির্ভূত।

[খাযাইনুল ইরফানঃ ৭৬৪ পৃঃ (এক খন্ডে) বাংলায় প্রকাশিত “গুলশান-ই-হাবীব ইসলামী কমপ্লেক্স,চট্রগ্রাম থেকে।]

৯. বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির এ কোরআন হাকীমুল উম্মত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) তার স্বীয় তাফসীর “তাফসীরে নুরুল ইরফান” কিতাবে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,“এ আয়াতে কাফিরদের ওই আপত্তির জবাব বা খন্ডন করা হয়েছে, যাতে তারা বলেছিলো,”হুজুর (ﷺ) আপন পুত্র যায়দের স্ত্রীকে বিবাহ করে বসেছেন।“কেননা,আরববাসীগণ পালিতপুত্রকেও নিজ পুত্র বলে বসতো।আর তার স্ত্রীকে বিয়ে করাও হারাম বলে বিশ্বাস করতো।

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ

এ থেকে বুঝা গেলো যে,না বালেগ শিশুকে রিজাল বলা যেতে পারে না।কেননা, হুজুরের (ﷺ) কয়েকজন সাহেবজাদাও ছিলেন,যাঁরা শৈশবেই ওফাত পেয়ছেন।হুজুর (ﷺ) তাঁদের পিতা,কিন্তু তাঁরা রিজাল নন।একথাও বুঝা গেলো যে,রাসুল (ﷺ) হলেন সমস্ত উম্মতের ‘পিতা’ ভাই নন। এ কারণে,’রেসালত’-এর কথা ‘পিতা’ শব্দের সাথে উল্লেখ করেছেন।অর্থাৎ তিনি সমস্ত উম্মতের রুহানী পিতা।কেননা لَكِن শব্দটি পূর্বেকার(নেতিবাচক)-কে ভঙ্গ করা এবং পরবর্তী বিষয়কে বহাল ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।সুতারাং অর্থ এই দাঁড়ালো –‘তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন,কিন্তু হ্যাঁ,আল্লাহর রসূল অর্থাৎ তোমাদের আত্মিক পিতা।আর ‘পিতা’ও এমনই যে,এখন কেউই তিঁনি ব্যতীত এমন পিতা হতে পারবে না।কেননা,তিনি সর্বশেষ রসূল।

وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمً

সুতারাং তাঁর সমস্ত বিধান জ্ঞান ও প্রজ্ঞাপূর্ণই।পালিত পুত্রের স্ত্রী হারাম হওয়া তোমাদের অভিমত।আর সে হালাল হওয়া মহান রবের হুকুম বা বিধান।সুতারাং নিশ্চয় মহান রবের হুকুমই সঠিক।

অনুরুপভাবে,আল্লাহ তা’আলা হুজুর (ﷺ) কে সর্বশেষ নবী বানানোর ভিত্তি তাঁর (আল্লাহ) জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপরই প্রতিষ্ঠিত।

এ আয়াত থেকে বুঝা গেলো যে,হযুর (ﷺ) এঁর পর কোন নবী হতে পারে না।সুতারাং এখন যে কেউ কোন নবীর আগমন কিংবা তা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে,সে মুরতাদ্দ।যেমনঃ لا إلها إلا اللهথেকে বুঝা গেলো যে,আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য থাকতে পারে না,তেমনিভাবে, لا ناباي بعدي আঁমার পরে কোন নবী নেই থেকে বুঝা গেল যে,হুজুর (ﷺ) এঁর পর কোন নবী হতে পারে না।এ দু’টি এক পর্যায়ের অসম্ভব বিষয়।অনুরুপভাবে হুযুর (ﷺ) এঁর যুগে কোন নবী ছিল না,না হতে পারতো।কেননা, “খাতামুন্নাবিয়ীন” হলেন তিঁনিই,যিনি সমস্ত নবীর পরে আসেন।“

[তাফসীরে নুরুল ইরফানঃ২য় খন্ডঃ ১১৩০ পৃঃ, ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত।]

পূর্বেউল্লেখিত কুরআন শরীফের আয়াতে কারীমা ও তাফসীর দ্বারা প্রমানিত হয় যে,

১. রাসূলে পাক (ﷺ) শেষ নবী।

২. ইমামুল আম্বিয়া,রাসূলে পাক (ﷺ) এঁর পর আর কোন নবী আসবেন না।

৩. রাসূলে পাক (ﷺ) আকেব যাঁর পরে কোন নবী নেই।

৪. রাসূল (ﷺ) এঁর পরে যারা নবুয়ত দাবী করবে তারা মিথ্যাবাদী,গোমরাহ ও নি:সন্দেহে কাফের।

কোন মন্তব্য নেই:

ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png