পিয়াজ ও রসুন হালাল এবং অনেক উপকারী খাদ্যবস্ত্ত হওয়া সত্ত্বেও এর তীব্র গন্ধ অন্যের জন্য কষ্টকর হওয়ায় রাসূল (ছাঃ) কাঁচা পিয়াজ ও রসুন খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এই নিষেধাজ্ঞা কেবল মসজিদে জামা‘আতের সাথে সম্পৃক্ত। অবশ্য রান্না করা পিয়াজ ও রসুন খেতে কোন বাধা নেই। কাঁচা পিয়াজ-রসুন মাকরূহ হওয়ার মূল কারণটি হ’ল এর তীব্র গন্ধ। খাওয়ার পরে মিসওয়াক বা পেস্ট-ব্রাশের মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করলে ও গন্ধ দূর হ’লে আর সমস্যা থাকে না। একইভাবে অপরিষ্কার ও কটু গন্ধযুক্ত পোষাক পরে বা বিড়ি-সিগারেট খাওয়া মুখে মসজিদে বা মানুষের মধ্যে বসা অপসন্দনীয় কাজ। উল্লেখ্য, অনেকের মুখ থেকে সর্বদা দুর্গন্ধ বের হয়। যা তিনি বুঝতে পারেন না। অথচ পাশের লোক বিব্রত বোধ করে। এটি একটি রোগ। যা চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত নিরাময় করা আবশ্যক।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তোমরা খেতেই চাও, তবে রান্নার মাধ্যমে এ দু’টিকে মেরে ফেল (অর্থাৎ পাকিয়ে গন্ধমুক্ত করে ফেল)’ (আবুদাঊদ হা/৩৮২৭; মিশকাত হা/৭৩৬)।
সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ১১৩৯ , সহিহ হাদিসঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিঁয়াজ ও গোরসুন খেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু কোন এক সময় প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে তা খেলে তিনি বললেনঃ কেউ এসব দুর্গন্ধযুক্ত গাছ (উদ্ভিদ) খেলে সে যেন আমার মাসজিদের নিকটে না আসে। কেননা মানুষ যেসব জিনিসে কষ্ট পায় মালাকগণও (ফেরেশ্তামণ্ডলী) সেসব জিনিসে কষ্ট পায়।
সহিহ বুখারি , হাদিসঃ ৮৫৬ , সহিহ হাদিসঃ ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে রসুন খাওয়া সম্পর্কে কী বলতে শুনেছেন? তখন আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ জাতীয় গাছ হতে খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের নিকট না আসে এবং আমাদের সাথে সালাত আদায় না করে।
সুনানে ইবনে মাজাহ , হাদিসঃ ১০১৪ , সহিহ হাদিসঃ উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) জুমুআহর খুতবাহ দিতে দাঁড়ান অথবা তিনি জুমুআহর দিন খুতবাহ দেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাকো, আমার দৃষ্টিতে তা নিকৃষ্টঃ এই রসুন ও এই পিয়াজ। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে দেখতাম, যার মুখ থেকে এর দুর্গন্ধ পাওয়া যেতো, তার হাত ধরে তাকে আল-বাকী নামক স্থানের দিকে বের করে দেয়া হতো। অতএব যে ব্যক্তি তা খেতেই চায়, সে যেন তা রান্না করে খায়।
সহিহ মুসলিম , হাদিসঃ ১১৪০ , সহিহ হাদিসঃ জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবুত্ ত্বহির-এর বর্ণনায় (আরবি) এবং হারমালাহ্-এর বর্ণনায় (আরবি) উল্লেখিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রসুন ও পিঁয়াজ খায় তার উচিত আমাদের থেকে দূরে থাকা অথবা আমাদের মসজিদ থেকে সরে থাকা কিংবা বাড়ীতে বসে থাকা। কোন এক সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে শাক-সব্জি ভর্তি একটি ডেকচি আনা হলে তিনি তাতে খাবার গন্ধ দেখে তাতে কি আছে জানার জন্য জিজ্ঞেস করলেন। তাতে কি ধরনের সব্জি আছে তাকে তা জানানো হলে তিনি তখন তার কোন তার সহাবীর কাছে তা নিয়ে যেতে বললেন। এ কথা জেনে সহাবীও তা খাওয়া পছন্দ করলেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি খেতে পার। কারণ আমি যার (মালায়িকাহ্) সাথে কথা বলি তোমাকে তো তার সাথে কথা বলতে হয় না।
উপরের সকল বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান থেকে আমরা জানতে পারলামঃ
১/ নবীজি মুহাম্মদ (সা) পেঁয়াজ রসূন খেতে এই কারনে নিষেধ করেছেন যে পেঁয়াজ ও রসূন কাঁচা খেলে মুখ থেকে বাজে গন্ধ বের হয় ।
২/ নবীজি মুহাম্মদ (সা) সাহাবীদেরকে পেঁয়াজ রসূন খেতে বলেছেন ।
৩/ পেঁয়াজ রসূন খেলে মুখ না পরিস্কার করে মসজিদে এবং মানুষের কাছে আসা ভাল না এতে মুখের গন্ধে মানুষ ইতস্ত বোধ করবে ।
৪/ পেঁয়াজ ও রসূন রান্না করে খাওয়া উচিৎ যেন খাদ্য থেকে গন্ধ না আসে ।
৫/ নবীজি মুহাম্মদ (সা) কখনো বলেননি যে পেঁয়াজ রসূন খেও না বরং গন্ধ আসার কারনে দূরে যেয়ে খেতে বলেছেন ।
৬/ধর্মের অন্ধ বিশ্বাসীরা যে দাবি করেছে "ইসলামে পেঁয়াজ রসূন খাওয়া নিষেধ" এই কথা নিঃসন্দেহে ভুল ।
৭/ পেঁয়াজ রসূন খাদ্যের ব্যাপারে ইসলামে আইন হল ঐচ্ছিক আইন অথবা অপশনাল আইন অর্থাৎ কেউ চাইলে পেঁয়াজ রসূন খেতে পারে আবার নাও পারে তবে শর্ত হল যদি খায় তাহলে খাওয়ার পরে মুখ পরিস্কার করবে যেন মুখ থেকে বাজে গন্ধ না আসে , মুখে গন্ধ নিয়ে মসজিদে যাওয়া ভাল নয় এতে অন্য মানুষদের কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক ।
৮/ মানুষের কষ্ট হবে তাই মুখে গন্ধ নিয়ে অন্য মানুষের সাথে কথা না বলাই ইসলামের শিক্ষা পক্ষান্তরে নাস্তিক ধর্ম যেহেতু ইসলামের বিপরীত তাই ইসলামের বিরোধিতা করতে হলে সকল সহিহ নাস্তিকদের মুখ পরিস্কার করতে পারবে না অর্থাৎ মুখে গন্ধ নিয়েই মানুষের সাথে কথা বলতে হবে । তানা হলে ইসলামের বিরোধিতা সঠিক ভাবে করবেন কিভাবে ?
৯/ সুতরাং পেঁয়াজ রসূন খাওয়া ইসলামে নিষেধ না বরং পেঁয়াজ রসূন খেতে হলে ইসলাম কিছু শর্ত দিয়ে দেয় সেগুলা মানলেই খাওয়া যাবে । নবীজি মুহাম্মদ (সা) পেঁয়াজ ও রসূনের গন্ধ লাইক করতেন না তাই তিনি খেতেন না কিন্তু কেউ খেলে তিনি নিষেধও করতেন না । এটাই ইসলামের সিস্টেম ।
স্বাস্থ্যরক্ষায় রসুন খাওয়ার চল বহু দিনের। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতকে চিন ও ভারতে রক্ত পাতলা রাখার জন্য এর প্রচলন ছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিসও একে ব্যবহার করেছিলেন সারভাইকাল ক্যানসারের চিকিৎসায়। লুই পাস্তুর এর অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণের খবর জানান। সময়ের সঙ্গে আরও উপকারের কথা জানা গিয়েছে।
আধুনিক বিজ্ঞানীরা জানালেন হৃদরোগ প্রতিরোধে এর ভূমিকার কথা। ইউনিভার্সিটি অফ কানেটিকাটের স্কুল অফ মেডিসিন–এর কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ টিমের বিজ্ঞানীদের দাবি, কাঁচা রসুন খেলে হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে। রক্তচাপ বশে রাখতেও তার ভূমিকা আছে।
• নিয়মিত রসুন খেলে মোট কোলেস্টেরল ও খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের প্রায় ১০–১৫ শতাংশ কমে যায়। তবে উপকারি কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়াতে ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে এর কোনও ভূমিকা নেই।
• বিপাকীয় ক্রিয়া ও পরিবেশ দূষণের ফলে শরীরে যে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি হয় তা হার্ট তথা সমস্ত শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রসুনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সেই ক্ষতি খুব ভাল ভাবে ঠেকাতে পারে। কোভিডেও উপকার হয় তাতে।
• হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত হৃদরোগী নিয়মিত রসুন খান, তাঁরা অনেক বেশি সক্রিয় থাকেন। তবে এ বিষয়ে অনেক গবেষণার প্রয়োজন।
• আয়ুর্বেদ বলছে, সবচেয়ে ভাল ফল পেতে গেলে সাপ্লিমেন্ট না খেয়ে খেতে হবে কাঁচা রসুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন