LIVE
Loading latest headlines...

বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

প্রয়োজনীয় কিছু সুরা

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে

 



সূরা ফাতেহা বাংলা উচ্চারণ:

(১) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (২) আল হামদুলিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন (৩) আররাহমা-নির রাহীম।(৪) মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।(৫) ইয়্যা-কা না‘বুদুওয়া ইয়্যা-কা নাছতা‘ঈন।(৬) ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।(৭) সিরা-তাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম । গাইরিল মাগদূ বি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন।

অনুবাদ

১. শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। ২. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। ৩. যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। ৪. যিনি বিচার দিনের মালিক। ৫. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ৬. আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, ৭. সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ক্বুলহু আল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

অনুবাদ:

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক। মিন শাররি মাখালাক্ব। ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব। ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাসাতি ফিল্ উকাদ। ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।

অনুবাদ:

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে, অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সূরা নাসর বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু। ওয়ারা আইতান নাসা ইয়াদ খুলুনা ফি দিনিল্লাহি আফওয়াজা। ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াসতাগফিরহু। ইন্নাহুকানা তাওওয়াবা।

অনুবাদ :

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।

সূরা কাউসার বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ইন্না আতাইনা কাল কাওসার। ফাসাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ান হার। ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার।

অনুবাদ :

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানী করুন। যে আপনার শত্রু, সে-ই তো লেজকাটা, নির্বংশ।

সূরা কুরাইশ বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। লি-ঈলাফি কুরাইশিন। ঈলাফিহিম রিহলাতাশ শিতায়ি ওয়াস সাইফ। ফাল ইয়াবুদু রাব্বা হাযাল বাইত। আল্লাযি আত আমাহুম মিন জুয়েঁউ ওয়া আমানাহুম মিন খাউফ।

অনুবাদ:

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। কোরাইশের আসক্তির কারণে, আসক্তির কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সফরের। অতএব তারা যেন এবাদত করে এ ঘরের পালনকর্তার যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন।

সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস। মালিকিন্নাস। ইলাহিন্নাস। মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস। আল্লাযি ইউওয়াস ভিসু ফী সুদুরিন্নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।

অনুবাদ:

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার। মানুষের অধিপতির, মানুষের প্রভুর, তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

সূরা আসর বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ওয়াল আসরি। আন্নাল ইনসানা লাফী খুস্রিন। ইল্লাল্লাযীনা আমানু ওয়া আমিলুস সালিহাতি। ওয়া তাওয়াসাও বিল কাককি। ওয়া তাওয়াসাও বিল সাবর।

অনুবাদ:

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। কসম যুগের (সময়ের), নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।

সূরা লাহাব বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। তাব্বাৎ ইয়াদা আবি লাহাবেউ ওয়াতাব্বা মা আগনা আনহু মালুহু ওয়ামা কাছাব। ছাইয়াছলা নারান জাতা লাহাবিউ ওয়ামরা আতুহু হাম্মালাতাল হাতাব। ফী জীদিহা হাবলুম মিম মাছাদ।

অনুবাদ:

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে, কোনো কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে। সত্বরই সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও- যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে হবে এক খর্জুরের রশি ।

সূরা কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। কুল ইয়া আইউহাল কাফিরূন। লা আ’বুদু মাতাবুদুন। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ। ওয়া লা আনা আবিদুনা মা আবাদতুম। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মাআবুদ। লাকুম দীনুকুম ওয়ালীয়া দ্বীন।

অনুবাদ:

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। বলুন, হে কাফেরকূল, আমি এবাদত করি না, তোমরা যার এবাদত করো। এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি এবং আমি এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা কর। তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।



বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

মাত্র ৪০ দিনে নিজের জীবন পরিবর্তনের ২০টি চ্যালেঞ্জ

বুধবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে



মাত্র ৪০ দিনে নিজের জীবন পরিবর্তনের ২০টি চ্যালেঞ্জ-

১. ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ত করা।
২. ঘুম থেকে উঠার পর দোয়া পড়া, মেসওয়াক করা।
৩. ওযুর করার পড়ে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা।

৪. রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
৫.ফযরের আগে গোসল করা।
৬. আযান শোনা ও আযানের উত্তর দেওয়া।

৭.ফযরের সুন্নত ও ফরজ আদায় করা।
৮. সূর্যোদ্বয়ের আগে কোরআন তিলাওয়াত করা।
৯. সূর্যোদ্বয়ের পরে ইশরাকের নামাজ আদায় করা।

১০. প্রতিদিন ১২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করা।
১১. সালাতুল দোহা আদায় করা।
১২. সময়মতো ফযর, যোহর, আছর,
মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করা।

১৩. প্রতি ফরয নামাজের পর আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল পাঠ করা।
১৪.প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা রাখা।
১৫. প্রতিমাসে আইয়ামে বীজের রোজা রাখা।
১৬. প্রতি শুক্রবার সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।

১৭. প্রতিদিন সূরা ওয়াকিয়াহ ও সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা।
১৮. প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে সূরা মূলক ও
সূরা বাক্কারার শেষ ২ আয়াত তিলাওয়াত করা।
১৯.প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাওয়া। আর সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া।

২০. দিনে অন্তত ৭০ বার ইস্তেগফার করা।
আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন এবং সবাইকে
বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন। আ-মীন।


_*শুধুমাত্র বিশ্বাসী সেইসব ব্যক্তিবর্গের জন্যই এই পোস্ট যারা ভালোবেসে সুন্নাতকে নিজেদের জীবনে ধারণ করেন। এর বাইরে যারা এই পোস্ট পাঠ করবেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং শুভকামনা।*_




প্রতিবেশী

বুধবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে






“হে মুসলিম রমনীগণ! কোনো প্রতিবেশিনী যেন অপর প্রতিবেশিনীকে তুচ্ছজ্ঞান না করে, এমনকি বকরীর একটি ক্ষুর উপঢৌকন পাঠালেও নয়।” *(বুখারী, হাদিস নং- ২৪২৭)*

“হে আবূ যর! যখন তুমি তরকারি পাকাও, তখন তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশিকে পৌঁছাও।” *(মুসলিম, হাদিস নং- ৬৮৫৫)*

আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বললেন: আমার তো দুইজন প্রতিবেশী আছে, আমি তাদের কার কাছে উপঢৌকন পৌঁছাবো? 
তখন তিনি বললেন:
“উভয়ের মধ্যে যার ঘর তোমার বেশি কাছে হয়, তার কাছে পাঠাও।” *(বুখারী, হাদিস নং- ২১৪০)*

এক মহিলা খুব নামাজ পড়ে। রোজা রাখে। দান-সদকাও করে। কিন্তু কথা বলার সময় প্রতিবেশীকে খোঁচা মেরে কথা বলে। কষ্ট দেয়। এমন মহিলার ব্যাপারে আপনার কী অভিমত ইয়া রাসূলাল্লাহ?
- সে জাহান্নামি!
আরেক মহিলা কোনো মতো ফরজ ইবাদতগুলো করে। অল্পই দান-সদকার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু সে কাউকে খোঁচা মেরে কথা বলে না। এ মহিলার ব্যাপারে আপনার কী অভিমত ইয়া রাসূলাল্লাহ?
- সে জান্নাতি! *[আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী (১১৯); সহিহ ইবনে হিব্বান, (৫৭৬৪)*

অথচ আজকাল ঠেস দিয়ে কথা বলাটা একটা 'যোগ্যতা' জ্ঞান করা হয়। আমরা যতটা ভালো মুসলিম তার জীবন্ত সাক্ষী আমাদের স্বভাব-চরিত্র।


করজে হাসানা উত্তম ইবাদত

বুধবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে





আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে ঋণ দিলে তাকে ‘করজে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ বলে। উত্তম ঋণ মূলত সেই ঋণ, যা ঋণগ্রহীতাকে চাপে ফেলে না। অর্থাৎ এই ঋণের মূল পয়েন্টই হচ্ছে ঋণদাতা কোনোভাবেই ঋণগ্রহীতাকে ঋণ আদায় করার জন্য তাগাদা দেবে না। যেমনটি সুরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে— ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তার সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম। যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা বাকারা: ২৮০)


গ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের জন্য যত বেশি সময় দেওয়া হয়, ততই ঋণদাতার আমলনামায় সওয়াব যোগ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে পুরো ঋণ শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে—এমন ঋণগ্রস্তকে যে ঋণ পরিশোধ করার জন্য সময় দেয়, ওই ব্যক্তিকে এমন সওয়াব দেওয়া হবে, যেন সে প্রতিদিনই সমপরিমাণ টাকা সদকা করছে। আর ঋণ পরিশোধের সময় চলে যাওয়ার পরও যে ঋণগ্রস্তকে সময় বাড়িয়ে দেয়; তাতে অতিরিক্ত প্রতিটি দিনের জন্য তাকে এমন সাওয়াব দেওয়া হবে, যেন সে প্রতিদিন ধার দেয়া টাকার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা সদকা করছে।’ (মুসনাদে আহমদ)

কোরআন হাদিসে করজে হাসানার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সদকা বা দান ইসলামে সৎকর্ম হিসেবে বিবেচিত হলেও এর চেয়েও উত্তম হচ্ছে করজে হাসানা দেওয়া। আর এ কারণে খোদ সৃষ্টিকর্তাই করজে হাসানা চেয়েছেন তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে— ‘কে আছো, যে আল্লাহকে করজে হাসানা প্রদান করবে? তিনি তাহার জন্য ইহা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন’ (সুরা বাকারা: ২৪৫)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও ধৈর্যশীল।’ (সুরা তাগাবুন: ১৭)

আল্লাহ তাআলা করজে হাসানা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; তোমরা যদি সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও, আমার রাসুলদের ওপর ঈমান আনো ও সম্মান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ (করজে হাসানা) প্রদান করো, তাহলে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয়ই তোমাদের দাখিল করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এরপরও কেউ কুফরি করলে সে তার সরল পথ হারাবে। (সুরা মায়েদা: ১২)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে তার দরজায় একটি লেখা দেখতে পেল যে, সদকার নেকি ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং ঋণ দানের নেকি ১৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।’ (সিলসিলা সহিহাহ: ৩৪০৭)

দান বা খয়রাত ফেরত দিতে হয় না কিন্তু করজে হাসানা ফেরত দিতে হয়। এরপরেও প্রায় দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ার কারণ কী? মূলত আল্লাহপাক প্রতিটি মানুষকে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। এটি স্বাবলম্বী করারই নিদর্শন। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘কাউকে দুই দিনার ঋণ দেওয়া আমার কাছে এই দুই দিনার সদকা করার চেয়ে বেশি প্রিয়’ (ইবনে আবি শায়বা: ২২৬৮২)

যদিও অনন্যোপায় হলে তবেই ঋণ নেওয়া উচিত, এর আগে নয়। কেননা রাসুল (স.) ঋণ নেওয়া থেকে নিজেকে যতদূর সম্ভব বিরত রাখতেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুসলমানরা, তালির ওপর তালিযুক্ত ছিন্নবস্ত্র পরিধান করা, ঋণ গ্রহণ অপেক্ষা উত্তম, যদি তা শোধ করার শক্তি না থাকে। (মুসনাদ আহমদ)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, হে মুসলমানরা ঋণ গ্রহণ থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, ঋণ রাত্রীকালে মর্ম বেদনা ও দুঃশ্চিন্তা সৃষ্টি করে এবং দিনের বেলায় অপমান ও লাঞ্চনায় লিপ্ত করে। (বায়হাকি)

এরপরও করজে হাসানা আর্থিক ইবাদতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। কোরআনে কারিমে ব্যবহৃত করজে হাসানা (উত্তম ঋণ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ তাআলার রাস্তায় খরচ করা, অভাবী, এতিম ও বিধবাদের ব্যয়ভার বহন করা, ঋণী ব্যক্তিদের ঋণ পরিশোধে সাহায্য করা এবং নিজ সন্তানাদি ও পরিবারের ওপর খরচ করা। মোটকথা, মানবকল্যাণের যত দিক আছে সবগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে কোনো অভাবী ও চিন্তাগ্রস্থকে এই নিয়তে ঋণ দেওয়া যে, ওই ব্যক্তি যদি স্বীয় সামর্থ্য ও চিন্তার দরূণ ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তবে তার কাছে আর চাওয়া হবে না। এটাও করজে হাসানার অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামি আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় করজে হাসানার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই দানশীল নর-নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদের দেয়া হবে বহুগুণ। তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ: ১৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্য মুসলমানের বিপদে-আপদে উত্তম ঋণ দেওয়ার মানসিকতা দান করুন। ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের তাওফিক দান করুন। আমিন। (সূত্র- সংগৃহীত)
________ ______

( মৃত্যু...❌

মৃত্যু আসিতেছে...❌
যেকোনো সময়...❌
যেকোনো জায়গায়...❌
যেকোনো অবস্থায়...❌
আমাকে থামিয়ে দিবে...❌

অথবা
আমার প্রিয়জনকে আমার থেকে কেড়ে নিবে...❌

আমি কি তৈরি...❓

আসুন আল্লাহকে ভয় করি... মৃত্যুকে স্মরণ রেখে পথ চলি... সুন্নতি জীবন গড়ি...) 



গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়

বুধবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে




গোপন পাপ ধ্বংস ডেকে আনে। এর থেকে বাঁচার উপায় হলো-

১. আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কান্নাকাটি করে দোয়া করা। তিনি যেন তার অবাধ্যতা, নাফরমানি ও সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করেন।

২. নফস তথা আত্মার সঙ্গে লড়াই করা, মনের কুমন্ত্রণা দূর করা এবং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা।

৩. কিয়ামতের দিন গোপন গুনাহকারীদের আমলগুলো ধূলিকণার মতো উড়িয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করা।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি আমার উম্মতের কিছু মানুষ সম্পর্কে জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামার (বিখ্যাত পাহাড়) শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই।

তিনি বললেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, যারা একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত কর্মে (গোপন গুনাহ) লিপ্ত হবে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১৮)

৪. আল্লাহ তাআলার উপস্থিতির কথা চিন্তা করা।তিনি আমাকে সর্বদা দেখছেন এবং এ ব্যাপারে তাঁকে ভয় করা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘...নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১)

৫. গুনাহ করার সময় এ কথা চিন্তা করা, কেউ কি দেখলে আমি এমন গুনাহ করতে পারতাম? এভাবে নিজের ভেতরের লজ্জাবোধ জাগ্রত করা। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার পরিবারের কোনো প্রভাবশালী সদস্যকে যেমন লজ্জা পাও, আল্লাহকে (কমপক্ষে) তেমন লজ্জা করো। ’ (মুসনাদুল বাজ্জার : ৭/৮৯)

৬. এ চিন্তা করা, গুনাহরত অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে কিভাবে আমি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করব? মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে (কিয়ামতের দিন) ওই অবস্থায় ওঠানো হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।
’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২০৬)

৭. অবসরে জিকির ও ফিকিরে থাকার চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলি রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে আর বলে, হে আমাদের রব! আপনি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০-১৯১)।

মহান আল্লাহপাক আমাদের সকল গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন।
(সংগৃহীত)
_______ _______

( মৃত্যু...❌

মৃত্যু আসিতেছে...❌
যেকোনো সময়...❌
যেকোনো জায়গায়...❌
যেকোনো অবস্থায়...❌
আমাকে থামিয়ে দিবে...❌

অথবা
আমার প্রিয়জনকে আমার থেকে কেড়ে নিবে...❌ 

আমি কি তৈরি...❓ 

আসুন আল্লাহকে ভয় করি... মৃত্যুকে স্মরণ রেখে পথ চলি... সুন্নতি জীবন গড়ি...) 
-------------
{ প্রতিনিয়ত ঈমান আমল সংক্রান্ত দ্বীনি এরকম ভিন্ন ভিন্ন উপকারী পোস্ট পেতে আমাদের পেইজে  জয়েন থাকুন।


জুমআর দিনের অত্যন্ত দামী একটি সুন্নত আমল।

বুধবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে



১) “আল্ল-হুম্মা সল্লি 'আলা মুহাম্মাদ, ওয়া 'আলা আ~লি মুহাম্মাদ”

২) “আল্ল-হুম্মা সল্লি'আলা মুহাম্মাদ, আল্ল-হুম্মা বা-রিক 'আলা মুহাম্মাদ”

৩) “আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়াসাল্লিম 'আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ”

৪) “ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু 'আলা রসূলিল্লাহ”

৫) “সল্লল্ল-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম”

⭕ কমপক্ষে ১ বার পড়ুন সকল দরুদ গুলি ইনশাআল্লাহ।

⭕ মহান আল্লাহ্ পাক বলেন আমি আল্লাহ্ নিজে ও আমার ফেরেস্তাগন দুরুদ পাঠ করি রাসূল (স.) ওপর সুবহানাল্লাহ্। 

নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবির প্রতি সালাত (দরূদ) পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত (দরূদ) পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’
(সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

⭕ তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়।
 (আবু দাউদ: ১০৪৭)


যে পাপে নিমজ্জিত বেশির ভাগ মানুষ

বুধবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে



গিবত সমাজের বহুল প্রচলিত পাপ। 
এই পাপ নীরব ঘাতকের মতো।
মনের অজান্তেই এটা ব্যক্তির ভালো কাজ বিনষ্ট করে দেয়।
এটি ব্যভিচার ও মরা মানুষের পচা গোশত খাওয়ার চেয়েও নিকৃষ্টতম কাজ।

সমাজের বেশির ভাগ মানুষ এই পাপে নিমজ্জিত।
গিবত শব্দের অর্থ পরনিন্দা করা, 
দোষচর্চা করা, 
কুৎসা রটনা, 
পেছনে সমালোচনা করা, 
কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা।
গিবতের পরিচয় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 
তোমরা কি জানো গিবত কী? সাহাবিরা বলেন, 
এ ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সর্বাধিক অবগত। 
তখন নবী (সা.) বলেন, (গিবত হচ্ছে) তোমার ভাইয়ের ব্যাপারে এমন কিছু বলা, 
যা সে অপছন্দ করে।
জিজ্ঞেস করা হলো,
‘আমি যা বলছি,
তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, 
তাহলে আপনার অভিমত কী?’
তিনি বলেন, 
তুমি তার (দোষ-ত্রুটি) সম্পর্কে যা বলছ, সেটা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলে তুমি তার গিবত করলে। 
আর যদি সেই (ত্রুটি) তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। *(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৪; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩৪)*

 _গিবতের মূল মাধ্যম চারটি :_ 

১. জিহ্বার গিবত : 
গিবতের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো জিহ্বা। আলাপচারিতা, কথাবার্তা ও বক্তৃতায় জবানের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি গিবত হয়।

২. অন্তরের গিবত : 
কুধারণা করা, হিংসা, অহংকার এবং কেউ গিবত করলে সেটা অন্তর দিয়ে মেনে নেওয়া বা তা সমর্থন করার মাধ্যমে অন্তরের গিবত হয়।

৩. ইশারা-ইঙ্গিতের গিবত : কখনো কখনো চোখ, হাত ও মাথার ইশারার মাধ্যমেও গিবত হয়ে থাকে।

৪. লেখার মাধ্যমে গিবত : মানুষের মনের ভাব ও মতামত প্রকাশের একটি বড় মাধ্যম হলো লেখা। তাই লেখার মাধ্যমেও গিবত হতে পারে। 
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ‘লেখার মাধ্যমেও গিবত হয়ে থাকে।
কেননা কলম দুই ভাষার একটি।’ *(ইহয়াউ উলুমিদ্দিন : ৩/১৪৫)*

 _গিবতের বিধান_ 
গীবত করার বিধান দুই ভাগে বিভক্ত। 
(১) গিবত করার বিধান। 
(২) গিবত শোনার বিধান।

১. গিবত করার বিধান : গিবত একটি জঘন্য পাপ। গিবতের মাধ্যমে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।

২. গিবত শোনার বিধান : গিবত করা যেমন মহাপাপ, তেমনি খুশি মনে পরনিন্দা শোনাও পাপ। 
মহান আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, 
‘তারা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন যেন তা উপেক্ষা করে।’ *(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫)*

ওলামায়ে কেরাম বলেন, গিবতকারী ও গিবত শ্রবণকারী উভয়ই সমান পাপী। *(মাওসুআতুল আখলাক : ২/৪০৭)*

 _গিবতের ভয়াবহতা_ 
 _গিবত করা কবিরা গুনাহ_ : 

অন্যান্য পাপের তুলনায় গিবতের প্রভাব ও পরিণাম বেশি ভয়ংকর।
 রাসুলুল্লাহ (সা.) গিবতের ভয়াবহতা বুঝাতে যে উপমা দিয়েছেন, অন্য কোনো মহাপাপের ব্যাপারে এত শক্তভাবে বলেননি।
 যেমন আয়েশা (রা.) বলেছেন, 
আমি একবার ছাফিয়া [রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী]-এর দিকে ইশারা করে বললাম, 
সে তো বেঁটে নারী। 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 
তুমি তো তার গিবত করে ফেললে। *(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২৫৭০৮)*

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, তুমি এমন একটি কথা বলেছ, যদি তা সমুদ্রে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তবে সমুদ্রের পানির রং পাল্টে যাবে। *(তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)*

 _মানুষের গোশত খাওয়ার চেয়েও নিকৃষ্ট পাপ_ 
মানুষের গোশত খাওয়া হারাম। 
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ গিবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
 ইরশাদ হয়েছে, 
‘আর তোমরা ছিদ্রান্বেষণ করো না এবং পরস্পরের পেছনে গিবত করো না। 
তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? 
আসলে তোমরা সেটি অপছন্দ করে থাক।’ *(সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)*

 _ব্যভিচার ও সুদের চেয়েও নিকৃষ্ট পাপ_ 

সমাজে প্রচলিত পাপগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় জঘন্য পাপ হলো ব্যভিচার ও সুদ। আর ব্যভিচার ও সুদের চেয়েও ক্ষতিকর ও নিকৃষ্ট পাপ হলো গিবত। বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, গিবতের ৭২টি দরজা আছে। তন্মধ্যে নিকটবর্তী দরজা হলো কোনো পুরুষ কর্তৃক তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। আর সবচেয়ে বড় সুদ হলো অন্য ভাইয়ের সম্মানহানি করা (অর্থাৎ গিবত করা)। *(সহিহুল জামে, হাদিস : ৩৫৩৭)*

 _গিবতকারী কবরে শাস্তি পাবে_ 
মৃত্যুর পর থেকেই গিবতকারীর পরকালীন শাস্তি শুরু হয়ে যায়। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) একদা দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন।
 এ সময় তিনি বলেন, 
এদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না। আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত। *(বুখারি, হাদিস : ২১৮)*

অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তাদের একজন মানুষের গিবত করত। আর অপরজন পেশাবের (ছিটার) ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। *(আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৭৩৫)*

 _কিয়ামতের দিন অন্যের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে চাপে_ 
কিয়ামতের দিন গিবতের বদলা নেওয়া হবে। যার গিবত করা হয়েছে তার পাপের বোঝা গিবতকারীর কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কি বলতে পার, 
নিঃস্ব কে? 
সাহাবিরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে যার টাকা-কড়ি ও আসবাবপত্র নেই, সেই তো নিঃস্ব।’ তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই প্রকৃত নিঃস্ব, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও জাকাতের আমল নিয়ে উপস্থিত হবে; অথচ সে এই অবস্থায় আসবে যে, একে গালি দিয়েছে, একে অপবাদ দিয়েছে, এর সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, একে হত্যা করেছে ও একে মেরেছে। এরপর একে তার নেক আমল থেকে দেওয়া হবে, ওকে নেক আমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর তার কাছে (পাওনাদারের) প্রাপ্য তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না গেলে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। *(মুসলিম, হাদিস : ৬৪৭৩)*

 _জান্নাতে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত_ 

গিবতকারী মুসলিম যদি গিবত থেকে তাওবা না করে মারা যায়, তবে সে প্রথম সুযোগে জান্নাতে যেতে পারবে না;
 বরং তাকে গিবতের শাস্তি পাওয়ার জন্য প্রথমে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে, মহান আল্লাহ তাকে জাহান্নামের সেতুর ওপর আটক করবেন, যতক্ষণ না তার কৃতকর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। *(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৮৩)*

 _এই মহাপাপ থেকে আমরা সকলেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে গীবত থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।আমিন_ ।


রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

নারী সাহাবী উম্মে সুলাইমের অনন্য জীবন আখ্যান-2*

রবিবার, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে

_*_ 

আনাস (রা.)-এর যখন দশ বছর বয়স, তখন তার মা উম্মে সুলাইম তাকে নিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে আগমন করে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার ছেলে আনাস, আজ থেকে সে আপনার খেদমত করবে। তখন থেকেই আনাস (রা.) নিয়মিত রাসুল (সা.)-এর খেদমত করেছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমার আম্মাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। তিনি আমাকে উত্তমভাবে লালন-পালন করেছেন। ’
যুদ্ধাহতদের সেবা-শুশ্রুষায় উম্মে সুলাইম
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) উম্মে সুলাইম ও কিছু আনসারি নারীকে যুদ্ধে নিয়ে যেতেন। যাতে তারা যুদ্ধাহতদের সেবা-শুশ্রুষার পাশাপাশি পানি পান করাতে পারে।

হুনাইনের যুদ্ধে উম্মে সুলাইম খঞ্জর হাতে রণাঙ্গনের দিকে এগিয়ে যান। আবু তালহা (রা.) বলে ওঠেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এই যে উম্মে সুলাইম, তার হাতে খঞ্জর!’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘কোনো মুশরিক আমার নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করলে আমি এটা দিয়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলব। ’
হাদিস, ইতিহাস ও জীবনীগ্রন্থগুলোতে তার বীরত্ব, সাহসিকতা, ধার্মিকতা, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার বহু ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি কষ্ট-দুঃখের সময় ধৈর্য্যশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, ইতিহাসের পাতায় তার নজির খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন।

তার ধৈর্য্যশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার কথা...
ইমাম বুখারি (রহ.) তার বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ সহিহ বুখারিতে তার এই ঘটনার শিরোনাম করেছেন এভাবে, ‘মুসিবতের সময় যিনি তার দুঃখ-ব্যথা প্রকাশ করেন না। ’ তার সেই ঘটনার বিবরণ এরকম—

আবু তালহার সঙ্গে উম্মে সুলাইমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের খুব সুন্দর ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। তার নাম রাখা হয় উমাইর। তার ছোট একটি পাখিও ছিল, যার সঙ্গে সে খেলা করতো। রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে উমাইরের সঙ্গে কৌতুক করতেন। তাকে বলতেন, ‘হে উমাইর! তোমার হয়েছে তোমার বুলবুলির!’

আবু তালহা (রা.) তাকে অত্যধিক ভালবাসতেন। একদিন উমাইর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবু তালহা (রা.) এ নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি অস্থির হয়ে পড়লেন। তার অভ্যাস ছিল, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতেন। এক বিকেলে তিনি ঘর থেকে বের হলেন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থতার কারণে তার ছেলের মৃত্যু হয়। এ দিকে উম্মে সুলাইম (রা.) মৃত্যুর পর ছেলেকে গোসল করান। কাফন পরিয়ে তার গায়ে সুগন্ধি মাখেন। কাপড়-চোপড় দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিয়ে ঘরের এক কোণে সুন্দরভাবে শুইয়ে রাখেন। এরপর আনাস (রা.)-কে পাঠিয়ে আবু তালহা (রা.)-কে ডেকে পাঠান। তবে তাকে বলে দিলেন, আবু তালহাকে যেন ছেলের মৃত্যুসংবাদ না জানায়।

আবু তালহা (রা.) সেদিন রোজা রেখেছিলেন। উম্মে সুলাইম (রা.) তার জন্য খাবার তৈরি করেন। তিনি ঘরে ফিরেই সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করেন। উম্মে সুলাইম বললেন, সে এখন আগের চেয়ে শান্ত। ক্লান্ত-শ্রান্ত স্বামীকে পুত্রের মৃত্যুসংবাদ তৎক্ষণাৎ জানালেন না। ঘরের লোকদেরও নিষেধ করে রেখেছিলেন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ যেন এ সংবাদ তাকে না জানায়।  

আবু তালহা (রা.) তার কথা শুনে ভেবেছিলেন, ছেলে সুস্থ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। তাই তিনিও নিশ্চিন্ত মনে রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিলেন। ভোররাতে গোসলও করলেন।

আবু তালহা (রা.) ঘর থেকে বের হওয়ার আগে উম্মে সুলাইম (রা.) তাকে বললেন, ‘বলুন কেউ যদি কারো কাছে কোনো কিছু আমানত রাখে, অতঃপর তার কাছে তা ফেরত চায়; তবে তার কি অধিকার আছে—তা ফেরত না দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখার?
 আবু তালহা (রা.) বললেন, না তার এ অধিকার নেই। উম্মে সুলাইম (রা.) এবার শান্ত কণ্ঠে বললেন, আপনার পুত্রের ব্যাপারে সবর করুন। আল্লাহ তাআলা তাকে আমাদের কাছে আমানত রেখেছিলেন। এখন তিনি ফিরিয়ে নিয়েছেন।

আবু তালহা (রা.) এতে রাগান্বিত হলেন। রাতের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে স্ত্রীর নামে অভিযোগ করেন। রাসুল (সা.) তাদের ঘটনা শুনে বিমুগ্ধ হয়ে দুআ করলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের এ রাতে বরকত দান করুন। ’ তারপর আল্লাহ তাআলা তাদের আবদুল্লাহ নামে আরেকটি পুত্র সন্তান দান করেন। সেই আবদুল্লাহ ইবনে আবু তালহাকে পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা সাত পুত্র দান করেন, যাদের প্রত্যেকেই কোরআনের আলেম হয়েছেন। *(বুখারি, হাদিস: ১৩০১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১২০৮; ফাতহুল বারি: ৩/২০১; তবাকাতে ইবনে সাদ ৮/৪৩১-৪৩২)*


(চলবে ইনশাআল্লাহ)


শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

হুবাব ইবনুল মুনজির (রা)

শুক্রবার, ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩ 0
বার দেখা হয়েছে
হুবাব ইবনুল মুনজির (রা)


নাম হুবাব, ডাকনাম আবু ’উমার বা আবু ’আমর। পিতা মুনজির এবং মাতা শামূস বিনতু হাক্ক। মদীনার খাযরাজ গোত্রের সন্তান। আকাবার অন্যতম নাকীব এবং বিরে মা’উনার অনতম শহীদ আল-মুনজির ইবন ’আমর আস-সা’য়িদীর (রা) মামা। হানবীর মদীনায় হিজরাতের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে বদর থেকে নিয়ে সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধে খাযরাজ গোত্রর ঝান্ডা তাঁরই হাতে ছিল। ইবন সা’দ বলেন: ‘তিনি যে বদর যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে প্রায় ইজমা হয়ে গেছে। তবে মুহাম্মদ ইবন ইসহাক তাঁকে বদরীদর মধ্যে গণ্য করেননি। আমাদের মতে এটা তাঁর ভুল। কারণ, বদরে হুবারের কর্মকান্ড অতি প্রসিদ্ধ।’

বদরের কাছাকাছি পৌঁছে রাসূল (সা) শিবির স্থাপনের জন্য অবতরণ করলেন। হুবাব আরজ করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! এখানে শিবির স্থাপনের সিদ্ধান্ত কি আল্লাহর পক্ষ থেকে, না আপনার নিজের? রাসূল(সা) বললেন: আমার নিজের। হুবার বললেন: তাহলে এখানে নয়। আমাদেরকে শত্রুপক্ষের কাছাকাছি সর্বশেষ পানির কাছে নিয়ে চলুন। সেখানে আমরা একটি পানির হাউজ তৈরী করবো, পাত্র দিয়ে উঠিয়ে সেই পানি পান করবো, আর শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবো। এছাড়া অন্যসব কূপের পানি আমরা ঘোলা করে ফেলবো। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হুবাব বললেন: আমরা হচ্ছি যোদ্ধা সম্প্রদায়। আমার মত হচ্ছে, একটি মাত্র কূয়ো ছাড়া বাকি সবগুলি কূয়োর পানি ঘোলা করে ফেলা। যাতে কোন অবস্থানে আমাদের পানি কষ্ট না হয়। পক্ষান্তরে শত্রুরা পানির জন্য দিশেহারা হয়ে পড়ে।

হুবারের পরামর্শ দানের পর জিবরীল (আ) এসে রাসূলকে (সা) জানান যে, হুবারের মতটিই সঠিক। অত:পর রাসূল (সা) হুবাবকে ডেকে বলেন, তোমার মতটিই সঠিক। একথা বলে তিনি গোটা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে বদরের কূয়োর ধারে অবতরণ করেন।

এই বদর যুদ্ধে রাসূল (সা) তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন, এ কারণে তিনি ‘জু’আর-রায়’ বা সিদ্ধান্ত দানকারী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। ইমাম সা’য়ালাবী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন: ‘বদরে তিনি ছিলেন পরার্মদাতা। রাসূল (সা) পরামর্শ গ্রহণ করেন। জিবরীল (আ) এসে বলেন: হুবাব যে মত পেশ করেছে তাই সঠিক। জাহিলী ’আমলেও তিনি অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত ও মতামত প্রদান করেছেন।’

মক্কায় যারা রাসূলুল্লাহকে (সা) সবচেয়ে বেশী উৎপীড়িত করেছিল নরাধম আবু কায়স ইবন আল-ফাকিহ তাদের অন্যতম। বদরে সে নিহত হয়। একটি বর্ণনা মতে হযরত হুবাবই তাকে হত্যা করেন। এ যুদ্ধে তিনি হযরত বিলালের (রা) উৎপীড়ক উমাইয়্যা ইবন খালাফের একটি উরু তরবারির আঘাতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। তাছাড়া ’আম্মার ইবন ইযাসির ও তিনি একযোগে উমাইয়্যার ছেলে আলীকেও হত্যা করেন। এ যুদ্ধে তিনি খালিদ ইবন আল-আ’লামকে বন্দী করেন।


উহুদ যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনী এমন তোড়জোড় সহকারে মদীনার দিকি আসে যে, গোটা মদীনায় একটা শোরগোল পড়ে যায়। কুরাইশ বাহিনী মদীনার অনতিদূরে জুল হুলায়ফায় পৌঁছালে রাসূল (সা) দু’জন গুপ্তচর পাঠালেন এবং তাদের পিছনে হুবাবকেও পাঠালেন। তিনি শত্রু বাহিনীর মধ্যে ঘুরে ঘুরে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন এবং শত্রু বাহিনীর সংখ্যা সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা রাসূলুল্লাহকে (সা) দান করেন। এ যুদ্ধেও খাযরাজ গোত্রের ঝান্ডা ছিল তাঁর হাতে। অনেকের ধারণা, ঝান্ডা বাহক তিনি নন, বরং সা’দ ইবন ’উবাদা।

এই উহুদ যুদ্ধে যখন মুসলমানদের বিপর্যয় দেখা দেয় এবং মুসলিম বাহিনী হযরত রাসূলে কারীম (সা) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তখন যে ১৫ জন মুজাহিদ জীবন বাজি রেখে রাসূলুল্লাহকে (সা) ঘিরে রাখেন তাঁদের একজন ছিলেন এই হুবাব। এ যুদ্ধে তিনি মৃত্যুর জন্য বাই’য়াত করেছিলেন।

হযরত রাসূলে কারীম (সা) মদীনার ইহুদী গোত্র বনু কুরায়জা ও বনু নাদীরের বিষয়ে সাহাবীদের নিকট পরামর্শ চাইলে হুবার বলেন: আমরা তাদের বাড়ী ঘর ঘেরাও করে তাদের যাবতীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলবো। রাসূল (সা) তাঁর মতই গ্রহণ করেন।

খাইবার যুদ্ধে খাযরাজ বাহিনীর একাংশের এবং হুনাইন যুদ্ধে গোটা খাযরাজ বাহিনীর ঝান্ডা বাহক ছিলেন তিনি। একটি বর্ণনা মতে তাবুক যুদ্ধের সময়ও রাসূল (সা) খাযরাজ বাহিনীর ঝান্ডা তাঁর হাতে তুলে দেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) ইনতিকালের পর মদীনার আউস ও খাযরাজ সহ গোটা আনসার সম্প্রদায়ের লোকেরা মসজিদে নববীর অনতিদূরে সাকীফা বনী সা’য়িদা নামক স্থানে সমবেত হয়ে পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা শুরু করে। আনসার নেতা সা’দ ইবন ’উবাদার একটি ভাষণের পর তাঁরা প্রায় তাঁকেই খলীফা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। এদিকে আনসারদের এ সমাবেশের খবর আবু বকরের (সা) কানে গেল। তিনি ’উমারকে (রা) সাথে নিয়ে সেখানে ছুটে গেলেন। সেখানে খলীফা মুহাজির না আনসারদের মধ্য থেকে হবে, এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল বাক-বিতন্ডা হয়। এই বিতর্কে হযরত হুবাব ছিলেন হযরত আবু বকরের (রা) সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন এবং দু’ পর্যায়ে দু’টি জ্বালামীয় ভাষণ দেন। হযরত আবু বকরের (রা) ভাষণ শেষ হলে হুবার উঠে দাঁড়ান এবং আনসারের সম্বোধন করে বলতে শুরু করেন:

‘ওহে আনসার সম্প্রদায়! তোমাদের এ অধিকার তোমরা হাত ছাড়া করো না। জনগণ তোমাদেরই সাথে আছে। তোমাদের চরিত্রের ওপর আঘাত হানতে কেউ দু:সাহসী হবে না। তোমাদের মতামত ছাড়া কেউ কোন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সক্ষম হবে না। তোমরা হচ্ছো সম্মানী ধনবান, সংখ্যাগুরু, অভিজ্ঞ, সাহসী ও বুদ্ধিমান। তোমরা কি সিদ্ধান্ত নেবে তা দেখার জন্য মানুষ তাকিয়ে আছে। তোমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করোনা। বিভেদ সৃষ্টি করলে তোমাদের অধিকার হাতছাড়া হয়ে যাবে। তোমাদের প্রতিপক্ষ মুহাজিররা তোমাদের দাবী যদি না-ই মানে তাহলে আমাদের মধ্যে থেকে একজন এবং তাদের মধ্য থেকে একজন মোট দু’জন আমীর হবেন।’

হযরত হুবারের (রা) এই দুই আমীরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হযরত ’উমার (রা) বলে ওঠেন: ‘দূর! এক শিং এর ওপর দু’জনের অবস্থান অসম্ভব।’ ’উমারের (রা) বক্তব্য শেষ হলে তিনি আবার বলতে শরু করেন: তোমরা নিজেদের আধিকার শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। এ ব্যাক্তির কথায় কান দিওনা। তাঁর কথা শুনলে তোমাদের এই ক্ষমতার অধিকার হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমি আমার সম্প্রদায়ের আস্থাাভাজন ব্যক্তি এবং মানুষ আমার সিন্ধান্ত দ্বারা উপকৃত হয়। আল্লাহার কসম!  তোমরা চাইলে এ খিলাফতকে আমরা পাঁচ বছরের একটি উটের বাচ্চায় রুপান্তরিত করে ছাড়বো। তারপর তিনি মুহাজিরদের লক্ষ্য করে বলেনঃ ব্যাপারটি আপসাদের হাতে ছেড়ে দিতে আমরা কার্পণ্য করতাম না। যদি না আমাদের আশস্কা হাতো, যে সম্প্রদায়ের লোকদের পিতা ও ভ্রাতাদের আমরা হত্যা করেছি তারাই এটা হস্তগত করে নেই। তখন  তোমরা মরণই শ্রেয়ঃ অর্থ্যৎ ‘উমার (রা) আশ্বাস দিলেন এমনটি কক্ষনো হবেনা। আমাদের যাঁরা প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাঁদেরই একজনের হাত আমরা বাই‘য়াত করবো। যিনি তোমাদের ওপর কোনরকম অন্যায় অবিচার করবেন না’।

এত কিছু সত্ত্বেও তিনি উপস্থিত জনতাকে হযরত আবু বকরের (রা) হাতে বাই‘য়াত (আনুগত্যের শপথ) থেকে বিÍত রাখেতে পারলেন না। আনসারদের মধ্যে সর্ব প্রথম হযরত বাশীর ইবন সা‘দ (রা) আবু বকরের (রা) হাতে বাই‘য়াত করেন। তখন বাশীরকে লক্ষ্য করে হুবাব বলেন: তুমি নিজ সম্প্রদায়েরা বিরুদ্ধাচারণ করলে? তোমরা চাচাতো ভাইয়ের ইমারাত বা নেতৃত্বকে ঈর্ষা করলে? বাশীর জাবাব দিলেনঃ ‘তা নয়; বরং একটি সম্প্রদায়কে আল্লাহ যে অধিকার দিয়েছেন তা নিয়ে বিবাদ করা আমি পছন্দ করিনি’।

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমারের (রা) খিলাফতকালে তিনি ইনতিকাল কনে। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পঞ্চাস বছরের মত। বদর যুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ বছর। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আবুত তুফাইল ‘আমের ইবন ওয়াসিল তাঁর ছাত্র। তিনি হুবাবের সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

কবিত্ব ছিল তৎকালীন আরবদের স্বাভাজাত গুণ। হযরত হুবাবের মদ্যেও এ গুণটি ছিল। তিনি কবিতা রচনা করেছেন। ইতিহাসের কোন কোন গন্থে তাঁর নাম কিছু পংক্তি হয়েছে। তাঁর কয়েকটি পংক্তির আনুবাদ নিম্নরুপ:

১.আল্লাহ তোমাদের দুজনের পিতামাতার ভলো করুন! তোমরা কি জাননা যে, মানুষ দু রকমের অন্ধ ও চক্ষুস্মান?

২.আমরা এবং মুহাম্মদের দুশমনরা –সকলেই সিংহ-পুরুষ। যাদের হুংকার সারা বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

৩.তাবে পার্থক্য এই যে, আমরা তাঁকে সাহায্য করেছি এবং আশ্রয় দিয়েছি। আমরা ছাড়া তাঁর আর কোন সাহায্যকারী নেই।


তিনি একজন তুখোড় বক্তা ছিলেন। তাঁর ভাষা ছিল বিশুদ্ধ ও অলস্কারপূর্ণ। সাকীফা বনী সা‘য়িদায় তিনি যে দুটি ভাষণ দিয়েছিলেন তা পাঠ করলে তাঁর বাগ্নিতা ও আলস্কারিতা সস্পর্কে ধরনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আনসাররা যে ভিলাঠতের ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম, যে কথাটি তিনি একটি অলঙ্কার মন্ডিত বাক্যে ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! তোমর যদি চাও তাহলে অবশ্যাই আমরা এ খিলাফতকে উপের সাথে তুলনা করেছেন। অর্থ্যৎ ইচ্ছা করলে আমরা যুদ্ধকে শক্তিশালী করতে পারি। তেমনিভাবে তিনি আনসারদের মধ্যে স্বীয় মর্যাদা ও স্থান বর্ণনা করেন এভাবে: আমি আনসারদের চর্মরোগ্রস্থ উটের শরীর চুলকাবার খুঁটি এবং তাদরে দীর্ঘ ও ফলবান বৃক্ষের ঠেস দাসেনর খুঁঠি বা প্রাচীর।


আরবে চর্মরোগগ্রস্ত উটের জন্য একটি খুটি বা কাঠ গেঁড়ে দেওয়া হতো যাতে সে গা চলকাতে পারে এবং এর মধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তেমনিভাবে যে খেজুর গাছটি লম্বা বা ফলবান হওয়ার কারণে  উপড়ে পড়ার আশঙ্কা হতো, তাতে ঠেস দিয়ে একটি খুঁটি পুতে দেওয়া হতো অথবা একটি প্রচীর খাড়া করে দেওয়া হতো। হযরত হুবার নিজেরকে সেই খুঁটি ও প্রাচীরের সাথে তুলনা করেছেন।



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png