LIVE
Loading latest headlines...

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে আখেরাত বিশ্বাসের ফলাফল

শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে

 




عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا لِي وَلِلدُّنْيَا؟ وَمَا أَنَا وَالدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ، ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا-


হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘দুনিয়ায় আমার কি? আমি ও দুনিয়া তো একজন পথিকের মত। যে একটি গাছের ছায়া তলে বসে আছে। ছায়া চলে যাবে এবং তাকে ছেড়ে যাবে’।[1] এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, দুনিয়া ও আখেরাতের তুলনা সেতুর এ প্রান্ত ও অন্য প্রান্তের ন্যায়। দুনিয়াতে মানুষ প্রতি পদে পদে সেতু পার হয়ে চলেছে। যখন যেখানেই তার মৃত্যু হবে, তখন সেখানেই সে তার জীবন সেতুর শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাবে। আর কবর হ’ল আখেরাতের প্রথম মনযিল। এখানে মুক্তি পেলে সে ক্বিয়ামতের চূড়ান্ত বিচারে মুক্তি পাবে। অতএব বুদ্ধিমান মানুষের কর্তব্য অপর প্রান্তে তথা মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছানোর আগেই যথাযথ পাথেয় সঞ্চয় করা। যার মাধ্যমে সে জান্নাতের চিরস্থায়ী ফলাফল পেয়ে ধন্য হবে।


আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘পুরুষ হৌক নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)।


সমাজ জীবনে সৎকর্মশীল মানুষের সংখ্যা কম হ’লেও অপ্রাপ্য নয়। বরং বলা চলে যে, কম সংখ্যক এই লোকগুলির জন্যই সমাজ এখনো টিকে আছে। তবে সৎকর্মশীল মানুষের মধ্যে সুখী জীবনের অধিকারী হয় কেবল তারাই যারা আখেরাতে হিসাব দানের বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়। যা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বলতেকি যেকোন পরিস্থিতিতে মানুষকে সৎকর্মশীলতার উপর দৃঢ় রাখে তার আখেরাত বিশ্বাস। এটা না থাকলে ঝুঁকির মুখে পদস্খলন ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। নিম্নে আমরা আখেরাত বিশ্বাসের বাস্তব ফলাফল সমূহ উল্লেখ করব।-


১. মানুষ শরী‘আতের ফায়ছালা হাসিমুখে গ্রহণ করে :



মা‘এয আসলামী, গামেদী মহিলা প্রমুখ স্বেচ্ছায় এসে মৃত্যুদন্ডের মত কঠিন শাস্তি চেয়ে নিয়েছেন কেবল আখেরাতে মুক্তি লাভের আশায়।[2] আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)। এখানে ফায়ছালা মেনে নেওয়ার জন্য আখেরাত বিশ্বাসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা আখেরাতের স্বার্থেই মানুষ দুনিয়াবী স্বার্থ ত্যাগ করে।


২. এটি না থাকলে মানুষ সত্য বিমুখ হয় :


সত্যচ্যুত মানুষ পথভ্রষ্ট হয় ও তওবা না করলে জাহান্নামী হয়। আল্লাহ বলেন,إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُمْ مُنْكِرَةٌ وَهُمْ مُسْتَكْبِرُونَ ‘তোমাদের উপাস্য মাত্র একজন। অতঃপর যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর হয় সত্যবিমুখ এবং তারা হয় অহংকারী’ (নাহল ১৬/২২)।


খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননরত ক্ষুধাতাড়িত ছাহাবীদের উৎসাহ দিয়ে পেটে পাথর বাঁধা রাসূল উৎসাহ দেন নিম্নোক্ত কবিতা গেয়ে -اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ ‘হে আল্লাহ! কোন আরাম নেই আখেরাতের আরাম ছাড়া’। ‘অতএব তুমি ক্ষমা কর আনছার ও মুহাজিরদেরকে’ (বুখারী হা/৪০৯৮)। এখানে তিনি কোন দুনিয়াবী লাভের কথা বলেননি। স্রেফ আখেরাতের কথা বলেছেন। যাতে তারা সত্যবিমুখ না হয়ে যায়।


৩. নেকীর কাজে একাগ্রতা সৃষ্টি হয় :



দুনিয়াতে বড় কোন সাফল্যের মূলে থাকে সাধনা ও একাগ্রতা। আর সেটি সবচেয়ে যোরদার করে আখেরাতে সাফল্য লাভের আকাংখা। আল্লাহ বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকে না’ (শূরা ৪২/২০)।


হযরত আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ هَمَّهُ جَعَلَ اللهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ، وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ وَمَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ جَعَلَ اللهُ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَفَرَّقَ عَلَيْهِ شَمْلَهُ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا مَا قُدِّرَ لَهُ ‘আখেরাত যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে, আল্লাহ তার অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেন। তার বিক্ষিপ্ত বিষয়গুলিকে সমাধান করে দেন। আর দুনিয়া তার কাছে তুচ্ছ হয়। পক্ষান্তরে দুনিয়া যার একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে, আল্লাহ তার অভাবসমূহ সামনে এনে দেন। আর তার সমস্যাগুলিকে বিক্ষিপ্ত করে দেন। অথচ তার নিকট কিছুই আসে না অতটুকু ব্যতীত যতটুকু তার তাক্বদীরে নির্ধারিত আছে’ (তিরমিযী হা/২৪৬৫)।


৪. সৎকর্মে দৃঢ়তা সৃষ্টি করে :


বদরের যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) কম্যান্ড দেন,قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ ‘তোমরা দাঁড়িয়ে যাও জান্নাতের পানে। যার প্রশস্ততা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল ব্যাপী বিস্তৃত’। এ নির্দেশ শুনে ছাহাবী ওমায়ের ইবনুল হুমাম আনছারী বলে ওঠেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের প্রশস্ততা কি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল ব্যাপী? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, ছাড়! ছাড়! (বাখ, বাখ)! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি এরূপ বললে কেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার আশায়। তিনি বলেন, فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا ‘নিশ্চয়ই তুমি তার অধিবাসী’। তখন ওমায়ের স্বীয় কোষ থেকে কতগুলি খেজুর বের করলেন ও তা খেতে থাকলেন। কিছু পরে বললেন, لَئِنْ أَنَا حَيِيْتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِي إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيلَةٌ، ‘আমি যদি এই খেজুরগুলো খাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তবে অবশ্যই সেটি হবে দীর্ঘ হায়াত’। অতঃপর তিনি বাকী খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন ও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন’।[3]


৫. বিপদে ধৈর্য ধারণের শক্তি বৃদ্ধি পায় :


আল্লাহ বলেন,قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘বল, হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। (মনে রেখ,) যারা এ দুনিয়ায় সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আর আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলগণ তাদের পুরস্কার পাবে অপরিমিতভাবে’ (যুমার ৩৯/১০)। মক্কায় নির্যাতিত অবস্থায় ইয়াসির পরিবারকে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, صَبْرًا يَا آلَ يَاسِرٍ، فَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْجَنَّةُ ‘ধৈর্য ধর হে ইয়াসির পরিবার! নিশ্চয়ই তোমাদের ঠিকানা হ’ল জান্নাত’ (হাকেম হা/৫৬৪৬)। ইমাম আওযাঈ (৮৮-১৫৭ হি.) বলেন, তাদের আমল ওযন করা হবে না ও পরিমাপ করা হবে না’। আল্লাহ বলেন, وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَّحَرِيرًا ‘দুনিয়াতে ধৈর্যধারণের পুরস্কার স্বরূপ সেদিন তিনি তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোষাক দান করবেন’ (দাহর ৭৬/১২)। তিনি আরও বলেন,كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে হ’ল সফলকাম। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,سَتَجِدُونَ أُثْرَةً شَدِيدَةً فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوُا اللهَ وَرَسُولَهُ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فَإِنِّى عَلَى الْحَوْضِ ‘তোমরা আমার পরে অত্যাচারী শাসকদের পাবে। তখন তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। যতক্ষণ না তোমরা আমাকে হাউয কাওছারের নিকটে সাক্ষাত পাও’ (বুখারী হা/৪৩৩১)।


‘আত্বা বিন আবী রাবাহ বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে একজন জানণাতী মহিলাকে দেখাব না? আমি বললাম, অবশ্যই। তখন তিনি বললেন, এই কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাটি, সে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসেছিল। অতঃপর বলেছিল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন! তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পার, তাতে তোমার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর তুমি চাইলে আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে পারি, যেন তিনি তোমাকে অরোগ্য দান করেন। মহিলাটি বলল, আমি ধৈর্য ধারণ করব। তবে ঐ অবস্থায় যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়, সেজন্য আপনি দো‘আ করুন! তখন রাসূল (ছাঃ) তার জন্য দো‘আ করলেন’।[4]


৬. সর্বাবস্থায় আল্লাহভীতি অর্জন :


আখেরাত বিশ্বাস মানুষকে সর্বাবস্থায় আল্লাহভীরু বানায় এবং সে প্রবৃত্তির তাড়না থেকে সংযত থাকে। আল্লাহ বলেন, وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى، فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى، ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার প্রভুর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করেছে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামী হ’তে বিরত রেখেছে, জান্নাত তার ঠিকানা হবে’ (নাযে‘আত ৭৯/৪০-৪১)। পাহাড়ের গুহায় আটকে পড়া বনু ইস্রাঈলের তিন যুবকের একজন তার প্রেমিকার সাথে অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মেয়েটির কথায় আল্লাহ থেকে ভীত হয় এবং বিরত হয়। গুহায় ঐ বিপদের সময় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে সে বলে,اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّى فَعَلْتُ ذَلِكَ مِنْ خَشْيَتِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا ‘হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে আমি কেবল তোমার ভয়ে সেদিন উক্ত অন্যায় কাজ থেকে বিরত হয়ে ছিলাম, তাহ’লে তুমি আমাদেরকে এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি দাও’। তখন আল্লাহর হুকুমে পাথর সরে যায় এবং গুহা মুখ খুলে যায়। অতঃপর তারা তিনজন বেরিয়ে আসে (বুখারী ফাৎহুল বারী হা/৩৪৬৫)।


ওমর (রাঃ) যখন আততায়ী কর্তৃক যখমী হন এবং জীবন সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়েন, তখন তিনি বলেন,لَوْ أَنَّ لِى طِلاَعَ الأَرْضِ ذَهَبًا لاَفْتَدَيْتُ بِهِ مِنْ عَذَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ قَبْلَ أَنْ أَرَاهُ ‘যদি পৃথিবী ভরা স্বর্ণ আমার থাকত এবং তা দিয়ে আখেরাতে আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যেত, তাহ’লে আমি সেটাই করতাম, উক্ত শাস্তি দেখার পূর্বে’ (বুখারী হা/৩৬৯২)। ইবনুল জাওযী বলেন, ওমরের মত মানুষের আল্লাহভীতি আর তোমাদের মত মানুষের নিশ্চিন্ততা দেখে আমি বিস্মিত হই![5] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً- ‘যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি, তাহ’লে তোমরা কাঁদতে বেশী, হাসতে কম’।[6]


খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয (৯৯-১০১ হিঃ) একদিন কাঁদতে থাকেন। তখন স্ত্রী ফাতেমা ও পরিবারের সবাই কাঁদতে শুরু করে। এক সময় স্ত্রী তাঁকে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন আমি ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর বিচার দেখছি। তিনি একদলকে জান্নাতে পাঠাচ্ছেন ও এক দলকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছেন। হায়! যদি আমি সেদিন জাহান্নামীদের দলভুক্ত হয়ে যাই! বলেই তিনি চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান’।[7] আল্লাহ বলেন,وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ- ‘আর যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি উদ্যান’ (রহমান ৫৫/৪৬)।


৭. অল্পে তুষ্ট থাকার গুণ অর্জিত হয় :


একদিন ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গেলেন। সে সময় তাঁর মাথার নীচে ছিল একটা খেজুর পাতা ভরা চামড়ার বালিশ। আর পিঠে ও পার্শ্বদেশে ছিল চাটাইয়ের দাগ। এটা দেখে ওমর কেঁদে উঠলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? ওমর বললেন,إِنَّ كِسْرَى وَقَيْصَرَ فِيمَا هُمَا فِيهِ وَأَنْتَ رَسُولُ اللهِ ‘পারস্য সম্রাট কিসরা ও রোম সম্রাট ক্বায়ছার কি অবস্থায় আছে, আর আপনি কি অবস্থায় আছেন। অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল! জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ لَهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الآخِرَةُ- ‘তুমি কি চাওনা যে, তাদের জন্য হৌক দুনিয়া ও তোমার জন্য হৌক আখেরাত!’[8]


৮. অধিক পাওয়ার আকাংখা দমিত হয় :


একদিন রাসূল (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমরের কাঁধে হাত রেখে বলেন,كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ- وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ : إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ- ‘তুমি দুনিয়াতে বসবাস কর একজন আগন্তকের মত অথবা একজন পথিকের মত’। ইবনু ওমর বলতেন, রাত হ’লে তুমি সকালের আশা করো না এবং সকাল হ’লে তুমি রাতের আশা করো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তুমি তোমার সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার আগে তুমি তোমার জীবনকে কাজে লাগাও’।[9]


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَوَاللهِ لاَ الْفَقْرُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا، وَتُهْلِكُكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ- ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের দরিদ্রতাকে ভয় পাই না। বরং আমি ভয় পাই তোমাদের উপর দুনিয়ার প্রশস্ততাকে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে প্রশস্ত হয়েছিল। ফলে তোমরা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে, যেমন তারা লিপ্ত হয়েছিল। আর তা তোমাদেরকে ধ্বংস করবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করেছিল’।[10]


তিনি বলেন,مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلاَ فِى غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِيْنِهِ- ‘দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে (রাখাল অনুপস্থিত থাকা অবস্থায়) ছাগপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া অত বেশী ধ্বংসকর নয়, যত না বেশী ধ্বংসকর মাল ও মর্যাদার লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য’।[11]



আবু আব্দুর রহমান আস-সালামী বলেন, আলী (রাঃ) একবার কূফায় দেওয়া এক ভাষণে বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ طُولُ الْأَمَلِ، وَاتِّبَاعُ الْهَوَى، فَأَمَّا طُولُ الْأَمَلِ فَيُنْسِي الْآخِرَةَ، وَأَمَّا اتِّبَاعُ الْهَوَى فَيُضِلُّ عَنِ الْحَقِّ، أَلاَ إِنَّ الدُّنْيَا قَدْ وَلَّتْ مُدْبِرَةً وَالْآخِرَةُ مُقْبِلَةٌ، وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ وَلاَ تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا، فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلاَ حِسَابٌ وَغَدًا حِسَابٌ وَلاَ عَمَلٌ- ‘হে জনগণ! আমি তোমাদের দু’টি জিনিসকে সবচেয়ে বেশী ভয় পাই, অধিক পাওয়ার আকাংখা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ। অধিক পাওয়ার আকাংখা তোমাদেরকে আখেরাত ভুলিয়ে দিবে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ তোমাদেরকে সত্য গ্রহণের পথ রুদ্ধ করে দিবে। সাবধান! দুনিয়া পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে এবং আখেরাত এগিয়ে আসছে। আর প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে একদল মানুষ। অতএব তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার গোলাম হয়ো না। কেননা আজকের দিনটি কর্মের দিন, যেখান ফলাফল নেই। আর কালকের দিনটি ফলাফলের দিন, যেখানে কর্ম নেই’ (বায়হাক্বী শো‘আব হা/১০৬১৪)। অতএব তোমরা সম্মুখে আগত চিরস্থায়ী ঠিকানার জন্য কাজ কর এবং যা ফিরে যাচ্ছে, সেদিকে তাকিয়ো না। ঈসা (আঃ) বলেন,


مَنْ ذَا الَّذِي يَبْنِي عَلَى مَوْجِ الْبَحْرِ دَارًا


تِلْكُمُ الدُّنْيَا فَلاَ تَتَّخِذُوهَا قَرَارًا


‘কোন্ ব্যক্তি আছে যে সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর বাড়ী তৈরী করবে?’ ওগুলি তো দুনিয়া। অতএব তাকে তোমরা স্থায়ী নিবাস হিসাবে গ্রহণ করো না’।[12]


ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলতেন,مَا مِنْكُمْ إِلَّا ضَيْفٌ وَعَارِيَةٌ، وَالضَّيْفُ مُرْتَحِلٌ، وَالْعَارِيَةُ مُؤَدَّاةٌ إِلَى أَهْلِهَا- ‘তোমরা সবাই মেহমান। আর তোমাদের সম্পদগুলি সব ধারের বস্ত্ত। মেহমান চলে যাবে, আর সম্পদ সব তার মালিকের কাছে ফিরে যাবে’।[13]



খালীদ আল-‘আছরী বলেন, আমরা সবাই মৃত্যুতে বিশ্বাস রাখি। অথচ তার জন্য কোন প্রস্ত্ততি নেই না। আমরা প্রত্যেকে জান্নাতে বিশ্বাস রাখি। অথচ তার জন্য কোন আমল করি না। আমরা প্রত্যেকে জাহান্নামে বিশ্বাস করি। অথচ তা থেকে বাঁচার জন্য ভীত হই না। তাহলে তোমরা কিসের জন্য অপেক্ষা করছ? মৃত্যুর জন্য? মনে রেখ এটাই তোমাদের জন্য আখেরাতের প্রথম মনযিল। সেখানে তোমাদের ভাল হ’তে পারে, মন্দও হ’তে পারে। অতএব হে আখেরাতের পথিকগণ! তোমরা এগিয়ে চলো তোমাদের প্রতিপালকের দিকে সুন্দরভাবে (ছিফাতুছ ছাফওয়া ৩/২৩১)।


৯. আখেরাত বিশ্বাস মযলূমের জন্য সান্ত্বনার স্থল :


হে যালেম! তুমি ভেবো না যে, আল্লাহ তোমার যুলুম দেখেননি। তুমি ভেবো না যে, আল্লাহ তোমার থেকে উদাসীন! তোমার সামনে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে। ঐ শোন তোমার প্রতিপালকের গুরু গম্ভীর সতর্কবাণী,وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ، مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ- ‘তুমি অবশ্যই একথা ভেবো না যে, যালেমরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন। তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষুসমূহ বিস্ফারিত হবে। যেদিন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ভীত-বিহবল চিত্তে তারা দৌড়াতে থাকবে। নিজেদের দিকে দৃষ্টি ফেরাবার সময় তাদের হবে না। যেদিন কঠিন ভয়ে তারা শূন্যহৃদয় হয়ে যাবে’ (ইব্রাহীম ১৪/৪২-৪৩)। তিনি বলেন,الْيَوْمَ تُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ ‘আজ প্রত্যেককে তার কর্মফল দেওয়া হবে। আজ কোন যুলুম নেই। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী’ (গাফের/মুমিন ৪০/১৭)।


হযরত জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সমুদ্রের মুহাজিরগণ (হাবশায় হিজরতকারী প্রথম দল) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলে তিনি বলেন, তোমরা হাবশায় যেসব অনিষ্টকারী বিষয় সমূহ দেখেছ তা কি আমার নিকট ব্যক্ত করবে না? তাদের মধ্য থেকে এক যুবক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! একদিন আমরা বসা ছিলাম। এমন সময় আমাদের সামনে দিয়ে সেখানকার এক বৃদ্ধা মহিলা মাথায় পানি ভর্তি কলস সহ যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় তাদের এক যুবক তার কাঁধে হাত দিয়ে তাকে ধাক্কা দিল। ফলে সে উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে গেল এবং কলসটি ভেঙ্গে গেল। তখন বৃদ্ধা উঠে দাঁড়িয়ে যুবকের দিকে তাকিলে বলল, হে প্রতারক! তুমি অচিরেই জানতে পারবে যখন আল্লাহ বিচারের আসনে বসবেন। আগে-পিছের সকল মানুষকে সমবেত করবেন এবং হাত-পাগুলো তাদের কৃতকর্মের বর্ণনা দিবে, তখন তুমিও জানতে পারবে সেদিন তোমার ও আমার অবস্থা কি হবে’। জাবের (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঐ বৃদ্ধা সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। আল্লাহ সেই উম্মতকে কিভাবে পাপ থেকে পবিত্র করবেন, যাদের সবলদের নিকট থেকে দুর্বলদের অধিকার আদায় করে দেওয়া হয় না’।[14]


১০. ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে :


মাক্কী জীবনের অধিকাংশ সূরা নাযিল হয়েছে আখেরাত বিশ্বাসের উপর। যার ফলে আখেরাত পিয়াসী একদল ঈমানদার মানুষ তৈরী হয়। আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী, ইবনু মাস‘ঊদ, বেলাল, খাববাব, আম্মার, মুছ‘আব প্রমুখ জান্নাতপাগল নিখাদ মানুষগুলির হাতেই পুরা আরব জাহানে আমূল পরিবর্তন আসে। যা সর্বাত্মক সমাজ বিপ্লবের সূচনা করে। যার ঢেউ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ইসলাম বিশ্বধর্মে পরিণত হয়। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামতের আগে সারা বিশ্ব ইসলামের করতলগত হবে। যা সম্ভব হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে কেবল আখেরাতে মুক্তি ও জান্নাত লাভের উদগ্র বাসনার কারণে। যখন যে সমাজে সত্যিকারের আখেরাত পিয়াসী একদল মুমিন তৈরী হয়, তখন সেই সমাজে আমূল পরিবর্তন আসে এবং সমাজ বিপ্লব সাধিত হয়।


আল্লাহ বলেন,وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ ‘আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)।



বস্ত্ততঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর ৭ দিন মতান্তরে ২১ দিন পূর্বে এটাই ছিল পবিত্র  কুরআনের সর্বশেষ আয়াত। অতএব হে মানুষ শেষ বিচারের দিনকে ভয় কর। সেদিন তোমার সকল কর্মের কড়ায়-গন্ডায় হিসাব দিতে হবে। যেদিন তোমার ঈমান ও আমল ছাড়া কোন কিছুই কাজে আসবে না।


কবি আবুল ‘আতাহিয়াহ (১৩০-২১৩ হি.) বলেন,


إِنَّ يَومَ الحِسابِ يَومٌ عَسيرُ + لَيسَ لِلظالِمينَ فيهِ نَصيرُ


فَاِتَّخِذْ عُدَّةً لِمُطَّلَعِ القَبرِ + وَهَولِ الصِراطِ يا مَنصورُ


‘নিশ্চয়ই শেষ বিচারের দিন বড়ই কঠিন দিন, সেদিন


যালেমদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না’। ‘অতএব


হে বিজয়ী! তুমি কবরে যাওয়ার পূর্বে এবং পুলছিরাতের ভয়াবহ


দৃশ্য আসার পূর্বে পাথেয় সঞ্চয় কর’।


হে আল্লাহ! তুমি আমাদের আখেরাত বিশ্বাসকে দৃঢ় কর এবং তার জন্য আমাদেরকে দ্রুত পাথেয় সঞ্চয়ের তাওফীক দাও- আমীন!


– প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব


[1]. তিরমিযী হা/২৩৭৭; ইবনু মাজাহ হা/৪১০৯; মিশকাত হা/৫১৮৮।[2]. মুসলিম হা/১৬৯৫; মিশকাত হা/৩৫৬২ ‘দন্ডবিধিসমূহ’ অধ্যায়; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৭৯৮-৯৯ পৃ.।

[3]. মুসলিম হা/১৯০১ (১৪৫); মিশকাত হা/৩৮১০, রাবী আনাস (রাঃ)।

[4]. বুখারী হা/৫৬৫২; মুসলিম হা/২৫৭৬; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫০৫।

[5]. আবু নু‘আইম ইছফাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৫/৩১৪।

[6]. বুখারী হা/৬৬৩৭; মিশকাত হা/৫৩৩৯, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[7]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ১/৩৬৮।

[8]. বুখারী হা/৪৯১৩; মুসলিম হা/১৪৭৯; মিশকাত হা/৫২৪০।

[9]. বুখারী হা/৬৪১৬; মিশকাত হা/১৬০৪, রাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)।

[10]. বুখারী হা/৬৪২৫; মুসলিম হা/২৯৬১; মিশকাত হা/৫১৬৩, রাবী আমর বিন ‘আওফ (রাঃ)।

[11]. তিরমিযী হা/২৩৭৬; মিশকাত হা/৫১৮১, সনদ ছহীহ।

[12]. ইবনু আবীদ্দুনিয়া, আয-যুহ্দ ক্রমিক ৩৪৭, পৃ. ১৫৯।

[13].ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮৫৩৩; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬৯৯।

[14]. ইবনু মাজাহ হা/৪০১০; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫০৫৮।



মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

"চাইতে হবে আল্লাহর কাছেই"

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪ 1
বার দেখা হয়েছে




- মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

 

আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার দিক হচ্ছে সে কোনো না কোনোভাবে নিয়ম ভঙ্গের ফাঁদে পড়ে। যে ফাঁদ শয়তানের প্ররোচনা, কুপ্রবৃত্তির টান কিংবা মানবীয় দুর্বলতার কারণেই ঘটে থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য যে বিধিবিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, ফাঁদে পড়ে মানুষ প্রতিদিন কোনো না কোনো বিধান লঙ্ঘন করে ছোট কিংবা বড় পাপ করতে থাকে। এসব পাপ জমা হতে হতে পাপের ভারে মানুষের হৃদয় হয় কলুষিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এক সময় মহান আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহের পথ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। মানুষ দূরে সরে গেলেও আল্লাহ যেহেতু ভালোবেসে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাই তিনি তার বান্দাহর প্রতি ক্ষমার হাত বাড়িয়ে দেন। বান্দাহ যদি তাওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে কায়মনোবাক্যে ঐকান্তিকতা ও একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর কাছে পাপ মোচনের ক্ষমা চায় তাহলে সে আল্লাহর ক্ষমা লাভে সক্ষম হয়।


বান্দাহর ধর্মই হচ্ছে আল্লাহর কাছে চাওয়া বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। রাসূল সা. দিনে ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতেন, তাওবা করতেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূল সা. বলেন, আল্লাহর কসম আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। (বুখারি)। আগার আল-মুযানি রা. থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, হে মানুষেরা তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর নিশ্চয়ই আমি একদিনের মধ্যে একশ’ বার আল্লাহর নিকট তাওবা করি বা ইস্তেগফার করি। (মুসলিম)। যিনি আল্লাহর প্রকৃত বান্দাহ, যিনি মুমিন মুসলমান তিনি সব বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছেই চাইবেন এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু দোয়া বা আল্লাহর কাছে চাওয়ার ক্ষেত্রে কখনো কখনো ব্যতিক্রম দেখা যায়। বান্দাহ খুব বড় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে আল্লাহর কাছে চায় ছোটখাটো বিষয়ে চায় না। এমনকি অনেকের নিকট এই ধারণাও অনুপস্থিত যে ছোটখাটো বিষয়েও আল্লাহর কাছেই চাইতে হয়। ছোট বড়, গুরুত্ব কম হোক বা বেশি সব কিছুই চাইতে হবে আল্লাহর কাছেই। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রা. বলেন, তোমার যা কিছু প্রয়োজন তা আল্লাহর কাছে চাও। যদিও তা একটি জুতার ফিতাও হয়ে থাকে। কারণ আল্লাহ যদি তোমার জন্য এটি সহজ না করেন তাহলে এটি পাওয়া তোমার জন্য সম্ভব হবে না (তিরমিজি)। হযরত আনাস রা. বর্ণিত অপর হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা তোমাদের সকল প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চাইবে, এমনকি যদি জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায় তাহলে তাও তাঁর কাছেই চাইবে। এমনকি লবণও তার কাছেই চাইবে। (তিরমিজি)


সকল প্রয়োজন পূরণে চাইতে হবে আল্লাহর নিকটে, রিজিকের জন্যও চাইতে হবে আল্লাহর নিকট। ছোট প্রয়োজন বড় প্রয়োজন কম গুরুত্বপূর্ণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ সবই চাইতে হবে অসীম ক্ষমতাবান আল্লাহর কাছে। কারণ ছোট হোক কিংবা বড় সকল চাওয়া পাওয়া পূরণের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই। বান্দাহর জন্য যা বরাদ্দ তা আল্লাহই করে থাকেন। দুনিয়ার কারো কাছে চেয়ে সেই বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব নয়। আল্লাহ যদি কিছুই বরাদ্দ না রাখেন তাহলে দুনিয়ার কারো কাছে শতবার চাইলেও সামান্য দানা পরিমাণ বরাদ্দও কেউ দিতে পারবে না। তাই সব বিষয়ে চাইতে হবে আল্লাহরই কাছে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, যখন তুমি প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে এবং যখন তুমি সাহায্য চাইবে তখন তুমি আল্লাহরই সাহায্য চাইবে। আর জেনে রাখো, যদি সকল সৃষ্টি একত্রিত হয় তোমার কল্যাণ করতে তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তার অতিরিক্ত কোনো কল্যাণ তারা তোমার জন্য করতে পারবে না। এবং যদি সকল সৃষ্টি তোমার ক্ষতি করতে একত্রিত হয় তবে আল্লাহ তোমার বিরুদ্ধে যা লিপিবদ্ধ করেছেন তার অতিরিক্ত কোন ক্ষতি তারা তোমার করতে পারবে না। (তিরমিজি)


কল্যাণ এবং অকল্যাণ সব কিছুরই মালিক আল্লাহ। সুতরাং কল্যাণ কামনা করে যেমন আল্লাহর কাছে চাইতে হবে তেমনি অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্যও চাইতে হবে আল্লাহর নিকট। মুমিন বান্দাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো, বিপদ আপদ মুসিবতে মুমিন যেমন আল্লাহর কাছে চাইবে তেমনি কল্যাণ ও নিয়ামাতের মধ্যে থাকলেও আল্লাহর কাছে কল্যাণের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধির জন্য চাইবে। কেউ কেউ এমন আছেন বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে চায় নিয়ামাতের মধ্যে বা ভালো অবস্থায় থাকলে চাওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। এমন আচরণ মুমিনের কাম্য নয়। ভালো অবস্থা বা নিয়ামাতের মধ্যে থেকেও কেন আল্লাহর কাছে চাইতে হবে এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে সে কঠিন বিপদ ও যন্ত্রণা দুর্দশার সময় আল্লাহ তার প্রার্থনায় সাড়া দিবেন, সে যেন সুখ শান্তি ও সচ্ছলতার সময়ও বেশি বেশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। (তিরমিজি)


কিন্তু মানুষের সহজাত একটি প্রবৃত্তি হলো, মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়লে আল্লাহকে ডাকে সচ্ছলতায় ভুলে যায়। মানুষ বিপদে পতিত হলে আল্লাহকে ব্যাপকভাবে স্মরণ করে বারবার একনিষ্ঠভাবে দোয়া করে। সুন্দর ভাবে তাওবা করার নিয়ম জানতে হবে। আবার যখন বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত হয়ে যায় যখন সে কল্যাণের মধ্যে ফিরে আসে তখন সে বেমালুম আল্লাহকে ভুলে যায়।

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বান্দাহর এমন অকৃতজ্ঞ আচরণের সমালোচনা করে জাহান্নামি হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষকে যখন দুঃখ দুর্দশা স্পর্শ করে তখন সে তার প্রভুকে ডাকে একনিষ্ঠ মনোভাব নিয়ে। অতঃপর যখন তিনি তার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তখন সে ভুলে যায় যেমন সে তাঁকে একনিষ্ঠভাবে ডেকেছিল। সে আল্লাহর শরিক দাঁড় করায় যে সে তাকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। বলো : কুফরি নিয়ে জীবনটাকে কয়টা দিন ভোগ করো। জেনে রাখো তুমি জাহান্নামি। (সূরা যুমার : ৮)। আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চেয়ে উদ্ধারের পর এমন আচরণ বান্দাহকে জাহান্নামে নিপতিত করে, এমন আচরণ কখনো কাম্য নয়। এ প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- মাঝ নদীতে থাকা কোন নৌযান যদি ঝড়-তুফানের কবলে পড়ে তখন উদ্ধার পাওয়ার জন্য যাত্রীরা সবাই আল্লাহর নাম জপতে থাকে, ঝড়ের কবল থেকে বাঁচার জন্য একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকে। কিন্তু ঠিক যখন ঝড় থেমে যায় কিংবা নিরাপদে কূলে ভিড়ে তখন তারা আল্লাহর কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে সব বাহবা জানায় নাবিককে। এক ধরনের আল্লাহর সাথে শরিক করার নামান্তর। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কুরআনে বলেন, তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে তারা আল্লাহকে ডাকে, তারপর যখন তিনি তাদেরকে নাজাত দিয়ে কূলে নিয়ে আসেন তখন তারা শিরক করতে থাকে। (সূরা আনকাবুত : ৬৫)


মহান আল্লাহ বান্দাহর ডাকে সাড়া দেন বলেই বান্দাহকে তার বরের নিকটই চাইতে হবে। কিছু বান্দাহ এমন আছেন যারা নিজের জন্য নিজে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার চাইতে অন্য কোনো নেক আমলদার বুজুর্গকে দিয়ে দোয়া করানোকেই বেশি ফলদায়ক মনে করেন। তারা মনে করেন নিজের জন্য নিজে আল্লাহর কাছে দোয়া করার চাইতে বুজুর্গকে দিয়ে দোয়া করালে কবুল হবে বেশি। আবার সমাজে কিছু মানুষ মাজারে গিয়ে মৃত মানুষের কাছে চাওয়ার মতো গোমরাহিতেও লিপ্ত আছেন। তারা জানেন না যে মৃত ব্যক্তির কিছুই করার ক্ষমতা নাই। নেককার, বুজুর্গ, আলেম, ওস্তাদ, মুজাহিদ, মুসাফির, অসুস্থ ব্যক্তি এবং পিতা-মাতার কাছে দোয়া চাওয়া জায়েজ। কারো কারো ক্ষেত্রে তাদের নিকট গিয়ে দোয়া চাওয়ার হাদিসও রয়েছে। তবে নিজের জন্য নিজেই একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়াকে সর্বোত্তম বলা হয়েছে। কারণ বান্দাহ যখন আল্লাহর কাছে কিছু চেয়ে দোয়া করবেন তখন তার চাহিদার কথা আকুতি মিনতি করে যথার্থভাবে তিনিই নিজেই সবচেয়ে বেশি ভালো বলতে পারবেন।


হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সা.কে প্রশ্ন করলাম, “হে আল্লাহর রাসূল, সর্বোত্তম দোয়া কী?” তিনি উত্তরে বললেন, “মানুষ নিজের জন্য নিজে দোয়া করা।” (মাজমাউয যাওয়াইদ)। যেহেতু সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া অবশ্যই কবুল হয় তাই তাদের কাছে দোয়া চাওয়া এবং দোয়া পাওয়ার উপযুক্ত আচরণ করা উচিত। তাছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির কাছেও দোয়া চাইতে আল্লাহর রাসূল ইরশাদ করেছেন। মজলুম মুসাফির এবং পিতা-মাতার দোয়া কবুল হওয়া সংক্রান্ত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. বলেন, তিনটি দোয়া এমন যেগুলো অবশ্যই কবুল করা হয়। এতে কোনো সন্দেহ নাই, মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের উপর তার পিতা-মাতার দোয়া। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। অসুস্থ ব্যক্তির নিকট দোয়া চাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, যদি তুমি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাও তখন তাকে বলো তোমার জন্য দোয়া করতে, কারণ অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া ফেরেস্তাদের দোয়ার মতো কার্যকর হয় বা কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ)। হজ ও ওমরাহ পালনকারীর নিকট দোয়া চাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে হযরত ওমর রা. বলেন, তোমরা হজ পালনকারী, ওমরাহ পালনকারী এবং যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সাথে সাক্ষাৎ করবে (দোয়া চাইবে), যেন তারা পূত-পবিত্রতা হারানোর আগেই তোমার জন্য দোয়া করে। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা)।

মুমিন মুসলমান যিনি তিনি শুধু নিজের জন্যই দোয়া করবেন না বরং নিজের পাশাপাশি অপরের জন্যও দেয়া করবেন। নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন পরিবার পরিজনের জন্য দোয়া করবেন। পাশাপাশি অপর মুসলিম ভাইবোন এবং বিশে^র নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্যও দোয়া করবেন। এ ব্যাপারে কুরআনে অনেক দোয়া উল্লেখ রয়েছে। কুরআনে একটি দোয়া এভাবে উল্লেখ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রভু আপনি আমাদের ক্ষমা করুন এবং ঈমানের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভাইদের ক্ষমা করুন। আর আপনি আমাদের অন্তরে মুমিনগণের বিরুদ্ধে কোন হিংসা বিদ্বেষ বা অমঙ্গলের ইচ্ছা রাখবেন না। হে আমাদের প্রভু, নিশ্চয় আপনি মহা করুণাময় ও পরম দয়ালু।’ (সূরা হাশর : ১০)


মুমিন তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্যও দোয়া করবে। নিজের কল্যাণ কামনা করে যেমন দোয়া করবে তেমনি অপর মুমিন ভাইয়ের জন্যও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করবে। নিজে যেমন অকল্যাণ থেকে পানাহ চাইবে তেমনি অপর মুমিন ভাইয়ের অকল্যাণ থেকে মুক্তি কামনা করবে। অপরের জন্য দোয়া করলে পক্ষান্তরের সেই দোয়া নিজের জন্যও করা হয়। কারণ মুমিন তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে উক্ত দোয়া কবুল করে দোয়াকারীকেও আল্লাহ উক্ত নিয়ামাত দান করেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, “কোনো মুসলিম যখন তার কোন অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করে তখন আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন। তার মাথার কাছে একজন ফিরিস্তা নিয়োজিত থাকেন, যখনই সে মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য কোনো কল্যাণ চায় তখনই ফিরিস্তা বলেন; আমিন এবং আপনার জন্যও অনুরূপ (অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকেও প্রার্থিত বিষয়ের অনুরূপ দান করুন)। (মুসলিম)


আল্লাহর কাছে চাওয়ার মাধ্যমে মূলত আল্লাহকে পাওয়া হয়। আল্লাহর কাছে চাওয়া বা দোয়া করার মাধ্যমে মহান রবের নৈকট্য অর্জনের পথ প্রসারিত হয়। কারণ দোয়া একটি ইবাদাত এবং অপরিসীম সাওয়াবের কাজ। আল্লাহর কাছে দোয়া করা বা চাওয়ারও অনেক মর্যাদা বা তাৎপর্য রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কিছুই নেই। (তিরমিজি) দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দাহর সম্পর্কের একটি সেতুবন্ধ তৈরি হয়। এ বন্ধনকে সুদূঢ় ও মজবুত করার মাধ্যম বারবার আল্লাহকে ডাকা। আর আল্লাহ তার বান্দাহর খুব নিকটেই থাকেন। আল্লাহও কামনা করেন তার বান্দাহ তার কাছেই বারবার চাইবে। এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে জানতে চান ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাদের প্রভু কি আমাদের কাছে না দূরে? যদি কাছে হন তবে আমরা তাঁর সাথে মুনাজাত করবো বা চুপে চুপে কথা বলব। আর যদি তিনি দূরে হন তাহলে আমরা জোরে জোরে তাকে ডাকবো জবাবে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমের সূরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াত নাযিল করেন এবং যখন আমার বান্দাগণ আপনাকে আমার বিষয়ে প্রশ্ন করে তখন তাদের জানিয়ে দিন আমি তাদের নিকটবর্তী। (ইবনে কাসির)


আল্লাহ যখন বান্দাহর নিকটবর্তী তখন বান্দাহর উচিত বেশি বেশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দোয়া করেই আমরা হা-হুতাশ করি। ত্বরিত ফল পাওয়ার প্রত্যাশা করি। ফল না পেলে হতাশ হয়ে যাই। দু’চার বার দোয়া করার পর ফলাফল না পেলে দোয়া করাই ছেড়ে দেই। অথচ কোন মুসলিমকে আল্লাহ খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। দোয়া কখনো নিষ্ফল হয় না, শূন্য হাতে বান্দাহকে ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ নিজেই লজ্জা পান। হযরত সালমান ফার্সি রা. হতে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, যখন কোন মানুষ তার দিকে দু’খানা হাত ওঠায় তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। (তিরমিজি)

আল্লাহর কাছে বান্দাহ যদি পাপ বা ক্ষতিকারক কিছু না চায় তাহলে সেই চাওয়া আল্লাহ কবুল করেন। হযরত উবাদাহ ইবনু সামিত রা. বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন জমিনের বুকে যে কোন মুসলিম আল্লাহর কাছে কোন দোয়া করলে- যে দোয়ায় কোন পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কিছু না চায়- তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করবেনই। হয় তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দিবেন অথবা তদনুযায়ী তার কোনো বিপদ কাটিয়ে দিবেন। (তিরমিজি)। দোয়া করেই ত্বরিত ফল চাইতে গিয়ে যদি হতাশা প্রকাশ কিংবা হা-হুতাশ করতে থাকি তবে তা হবে হিতে বিপরীত বা ক্ষতিকারক। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, বান্দাহ যতক্ষণ পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কোন কিছু প্রার্থনা না করে ততক্ষণ তার দোয়া কবুল করা হয়, যদি না সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ ব্যস্ততা কিরূপ? তিনি বললেন: দোয়াকারী বলতে থাকে- দোয়াতো করলাম, দোয়া তো করলাম, মনে হয় আমার দোয়া কবুল হলো না। এভাবে সে হতাশ হয়ে পড়ে তখন দোয়া করা ছেড়ে দেয় (মুসলিম)

দোয়ার ব্যাপারে এটি নিশ্চিত যে বান্দাহ আল্লাহর কাছে চাইলে দোয়া করলে মুমিন মুসলমানের দোয়া আল্লাহ ব্যর্থ করে দেন না। হয় তিনি তা বান্দাহকে সাথে সাথে দিবেন নতুবা পরকালের জন্য তা জমা রাখবেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন- যে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে মুখ তুলে কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে তা দেবেনই। হয় তাকে তা সাথে সাথে দিবেন অথবা (আখিরাতের জন্য) তা জমা করে রাখবেন। (মুসনাদ আহমদ)


অপর একটি হাদিসে এসেছে দোয়া করলে তিন বিষয়ের অন্তত একটি আল্লাহ বান্দাহকে প্রদান করবেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন- যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোন বিষয় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন, হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন, অথবা তার প্রার্থনাকে (প্রার্থনার সাওয়াব) আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন, অথবা দোয়ার সমপরিমাণ তার অন্য কোন বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিগণ বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করব। তিনি উত্তরে বললেন: আল্লাহ তায়ালা আরো বেশি বেশি দোয়া কবুল করবেন। (তিরমিজি)

দোয়া কবুলের জন্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট না করা, আল্লাহর সাথে শিরক না করার নির্দেশনা রাসূল সা. দিয়েছেন। তার পাশাপাশি হারাম থেকেও বেঁচে থাকার কথা রাসূল সা. বলেছেন। রাসূল সা. এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত অবিন্যস্ত ও ধুলোয় মলিন। সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে (দোয়া করে) হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমন অবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি)। ব্যক্তিগত জীবনে হালাল জীবন জীবিকা ছাড়া দোয়া কবুল করা হবে না আর সামষ্টিক জীবনে মানুষ যদি আমর বিন মারুফ নাহি আনিল মুনকার তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান না করে তাহলে এমন সময় আসবে তখন বান্দাদের ডাকে আল্লাহ সাড়া দেবেন না। রাসূল সা. বলেছেন, শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা অচিরেই এর ফলে আল্লাহ তোমাদের ওপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমার কাছে দোয়া করবে কিন্তু তোমাদের দোয়ায় সাড়া দেয়া হবে না। (তিরমিজি)


দোয়া কবুলের জন্য অন্তরের গভীর থেকে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে, মনের আকুতি মিশিয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, হে মানুষেরা তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবে, কারণ কোনো বান্দাহ অমনোযোগী অন্তরে দোয়া করলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন না। (সহিহ তারগিব)। একনিষ্ঠভাবে সচেতনভাবে কল্যাণ কামনায় দোয়া চাইতে হবে। ক্ষতিকর বিষয়ে দোয়া চাইলে তা হবে হিতে বিপরীত। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন তোমাদের কেউ যখন কোন কিছু কামনা করবে তখন সে কি চাচ্ছে তা যেন ভালো করে দেখে; কারণ তার কোনো বাসনা বা প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যাচ্ছে তা সে জানে না। (মাজমাউয যাওয়াইদ)। উম্মে সালামাহ রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন- তোমরা নিজেদের উপর কখনো ভালো ছাড়া খারাপ দোয়া করবে না। কারণ ফিরিস্তাগণ তোমাদের দোয়ার সাথে আমিন, আমিন বলেন। (মুসলিম)। অনেক সময় আমরা দুঃখ কষ্ট যাতনায় কিংবা অন্য কোনো কারণে অতিষ্ঠ হয়ে সন্তান-সন্ততি এমনকি নিজের মাল-সম্পদেরও ক্ষতি কামনা করি। এ প্রসঙ্গে জাবির রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা কখনো নিজেদের বা তোমাদের সন্তানদের বা তোমাদের মান সম্মানের অমঙ্গল বা ক্ষতি চেয়ে বদ দোয়া করবে না। কারণ হয়তো এমন হতে পারে, যে সময় তোমরা বদ দোয়া করলে সে সময়টি এমন সময় যখন আল্লাহ বান্দাহর সকল প্রার্থনা কবুল করেন এবং যে যা চায় তাকে তা প্রদান করেন। এভাবে তখন তোমাদের বদ দোয়াও তিনি কবুল করে নিবেন। (মুসলিম)


বান্দাদের মধ্যে এমনও ব্যতিক্রম কেউ কেউ আছেন আল্লাহর কাছে দোয়াই চান না। কেউ আছেন অন্যায় জুলুমের শিকার হলে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বিপদ আপদ মুসিবতে পতিত হলে আল্লাহর কাছে দোয়া করা প্রয়োজন মনে করেন না। তারা ধারণা করেন আল্লাহ তো তার সবকিছুই দেখছেন, শুনছেন, তিনিই নিশ্চয়ই পানাহ দিবেন কিংবা উদ্ধার করবেন দোয়া চাওয়ার প্রয়োজন কী। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, সবচেয়ে অক্ষম সে ব্যক্তি যে দোয়া করতেও অক্ষম। (জামিউস সাজির)। আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত অপর হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত হন। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)


আসুন আমরা অসীম দয়ার সাগর আল্লাহর নিকটই একনিষ্ঠভাবে আমাদের সব চাওয়া বেশি বেশি করে পেশ করি। পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনা করি। প্রয়োজন পূরণে প্রার্থনা করি। বিপদ আপদ মুসিবত থেকে উদ্ধারের জন্য নিবেদন করি। সুস্থতা কামনায় মোনাজাত করি। স্ত্রী-সন্তান পিতা-মাতা পরিবার পরিজন, জীবিত মৃত মুমিন মুসলমানদের জন্য দোয়া করি। সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য দোয়া চাই। দোয়া, মুনাজাতে আকুতি মিনতি ও ক্রন্দনের মাধ্যমে হৃদয়কে পবিত্র করি। দূরে সরে যাওয়া সত্তাটাকে আল্লাহর আরো বেশি নৈকট্য, সন্তুষ্টি এবং রহম লাভের উপযুক্ত করি। আল্লাহুম্মা আমিন।


লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট



সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাহাবির বিয়ের মোহরানা "কোরআন তোমার মুখস্থ "

সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে

 


হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.)-এর বরাতে একটি হাদিসের বর্ণনা আছে।


এক নারী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার জীবন আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি।’


নবী (সা.) তাঁর দিকে তাকিয়ে সতর্ক দৃষ্টিতে তাঁর আপাদমস্তক দেখলেন। তারপর মাথা নিচু করে রইলেন। ওই নারী যখন দেখলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো ফয়সালা দিচ্ছেন না, তখন তিনি বসে পড়লেন।


সাহাবিদের মধ্য থেকে একজন দাঁড়িয়ে তখন বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এই নারীকে বিয়ে দিয়ে দিন।’


রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কাছে কী আছে?’


সাহাবিটি উত্তর দিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে কিছুই নেই।’


রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কি না।’



সাহাবি চলে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি কিছুই পাইনি।’


রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, ‘আবার গিয়ে লোহার একটি আংটিও পাও কিনা দ্যাখো।’


সাহাবি আবারও ফিরে গেলেন। এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তা–ও পেলাম না। এই আমার বস্ত্র। শুধু এটাই আছে।’ তাঁর কাছে কোনো চাদরও ছিল না। লোকটি তার অর্ধেক নারীটিকে দিতে চাইলেন।


রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার বস্ত্র দিয়ে সে কী করবে? তুমি যদি এটি পরো, তাহলে তার কোনো কাজে আসবে না; আর যদি সে পরে, তাহলে তোমার কোনো কাজে আসবে না।’


সাহাবিটি বেশ কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকলেন। এর পর উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে উদ্যত হলেন। নবী (সা.) তখন তাঁকে ডেকে এনে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার কি কোরআন মুখস্থ আছে?’


তিনি বললেন, ‘অমুক অমুক সুরা আমার মুখস্থ।’


রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘এগুলো কি তোমার মুখস্থ।’


তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’


রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, ‘যে পরিমাণ কোরআন তোমার মুখস্থ আছে, তার বিনিময়ে তোমার কাছে এই নারীকে আমি বিয়ে দিলাম।’ (বুলুগুল মারাম, হাদিস: ৯৭৯)


বেশ বৈচিত্র্যময় সাহাবিদের যুগে বিয়ে ছিল



পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ কোরো না

সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে

 




আল্লাহ–তাআলা বলেছেন, তোমরা অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান কোরো না। (সুরা হুজরাত, আয়াত: ১২)


কোরআনে আছে, ‘যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ আর স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৫৮)


হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-র বরাতে একটি হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি জানিয়েছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাক। কারণ, মন্দ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। অন্যের গোপন দোষ খুঁজে বেড়িও না, অন্যের গোয়েন্দাগিরি করো না, একে অন্যের সঙ্গে (অসৎ কাজে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোরো না, পরস্পরকে হিংসা কোরো না, অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ কোরো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও—যেমনটা তিনি তোমাদের আদেশ দিয়েছেন।



এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। একজন আরেকজনকে অত্যাচার কোরো না, অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিও না এবং তাকে তুচ্ছ ভেবো না। এখানে আল্লাহভীতি রয়েছে (তিনি নিজের বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন।) কোনো মুসলমান ভাইকে তুচ্ছ ভাবা আরেকজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম আর সম্পদ আরেক মুসলমানের ওপর হারাম। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ আর আকার-আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।


আরেক বর্ণনায় আছে: তোমরা পরস্পরকে হিংসা কোরো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, অন্যের গোয়েন্দাগিরি কোরো না, অন্যের গোপন দোষ খুঁজে বেড়িও না, পরস্পরের পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।




অন্য আরেক বর্ণনায় আছে: তোমরা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ কোরো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, পরস্পর হিংসা কোরো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।


অন্য আরও একটি বর্ণনায় আছে: তোমরা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন কোরো না এবং অন্যের কেনাবেচার ওপর কেনাবেচা কোরো না।


 বুখারি, হাদিস: ৫,১৪৩



সুরা ইউসুফের সারকথা

সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে

 


সুরা ইউসুফ পবিত্র কোরআনের ১২তম সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ১১১। রুকু ১২টি। সুরা ইউসুফ পবিত্র নগরী মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরায় ধারাবাহিকভাবে হজরত ইউসুফ (আ.)–এর জীবনকথা বর্ণনা করা হয়েছে। তা থেকে আমরা আল্লাহর মহিমা সম্পর্কে জানতে পারি এবং আমাদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।


সুরা ইউসুফের মর্মবস্তু হলো ধৈর্যের সুফল। এ সুরায় মানবজাতির জন্য বিশেষ নির্দেশনা ও শিক্ষা নিহিত রয়েছে।



হজরত ইয়াকুব (আ.)–এর ১২ ছেলে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে হজরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন অতি রূপবান। তাঁর স্বভাবও ছিল অপূর্ব। ইউসুফ (আ.)–এর প্রতি হজরত ইয়াকুব (আ.)–এর ভালোবাসা ছিল প্রকাশ্য। এ কারণে ভাইয়েরা তাঁকে হিংসা করতেন। একবার খেলাধুলার কথা বলে ভাইয়েরা তাঁকে কুয়ায় ফেলে দেন। পরে কুয়ার পাশ দিয়ে একটি কাফেলা যাওয়ার সময় তারা পানি নেওয়ার জন্য তাতে বালতি ফেললে ভেতর থেকে ইউসুফ (আ.) বের হয়ে আসেন।



কাফেলার লোকেরা ইউসুফ (আ.)–কে বিক্রি করে দেন। মিসরের এক মন্ত্রী তাঁকে কিনে বাড়িতে নিয়ে যান। ইউসুফ (আ.) যৌবনে পদার্পণ করলে মন্ত্রীর স্ত্রী জোলেখা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন। ইউসুফ (আ.) তাঁর প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করেন। এ ঘটনার পরম্পরায় ইউসুফ (আ.)–কে জেলে বন্দী করা হয়।


জেলখানায় ইউসুফ (আ.) তাওহিদের দাওয়াত দেন। বন্দীরা তাঁকে সম্মান করত। সে সময় মিসরের বাদশাহ একবার স্বপ্ন দেখেন। বাদশাহর সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেন না। কিন্তু জেলবন্দী ইউসুফ (আ.) অর্থপূর্ণভাবে সে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেন। বাদশাহ এতে সন্তুষ্ট ও উপকৃত হন। ইউসুফ (আ.)–কে তিনি দেশের খাদ্যভান্ডার, ব্যবসা-বাণিজ্য তদারক করার জন্য উজির পদে নিয়োগ করেন।


কিছুদিন পর মিসর ও আশপাশে প্রবল দুর্ভিক্ষ হয়। ইউসুফ (আ.)–এর দুর্ভিক্ষপীড়িত ভাইয়েরা ত্রাণ নিতে মিসর আসেন। ভাইদের সঙ্গে কয়েকবার সাক্ষাতের পর ইউসুফ (আ.) নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁদের বলেন, ‘আমি তোমাদের ভাই ইউসুফ।’ এরপর তাঁরা মা–বাবাসহ মিসরে বসবাস করতে থাকেন।


পবিত্র কোরআনের ১২ নম্বর সুরা হলো সুরা ইউসুফ। সুরা ইউসুফে ইউসুফ (আ.)–এর কাহিনিকে ১২ ভাগে বিভক্ত করা যায়। ১. হজরত ইউসুফ (আ.) স্বপ্ন দেখলেন। ২. ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করলেন। ৩. মন্ত্রীর স্ত্রী জোলেখা ইউসুফ (আ.)–এর সঙ্গে তাঁর বাসনা পূরণ করতে চাইলেন। ৪. জোলেখার সহচরীরা ইউসুফ (আ.)–এর রূপে বিবশ হয়ে আপেলের বদলে নিজেদের আঙুল কেটে ফেললেন। ৫. ইউসুফ (আ.)–কে জেলে পাঠানো হলো। ৬. মিসরের বাদশাহ রহস্যময় একটি স্বপ্ন দেখলেন। ৭. ইউসুফ (আ.) বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন। ৮. ইউসুফ (আ.)–কে জেল থেকে বের করা হলো। ৯. জোলেখার সহচরীরা নিজেদের দোষ স্বীকার করলেন। ১০. জোলেখা নিজের দোষ স্বীকার করলেন। ১১. ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলেন। ১২. বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যার মর্ম বোঝা গেল। এখানে আরেকটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়: ১ নম্বরের (ইউসুফ (আ.) স্বপ্ন দেখলেন) সঙ্গে ১২ নম্বরের (বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যার মর্ম বোঝা গেল) মিল পাওয়া যায়। ২ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করলেন) সঙ্গে ১১ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলেন) মিল পাওয়া যায়। ৩ নম্বরের (মন্ত্রীর স্ত্রী জোলেখা ইউসুফ (আ.)–এর সঙ্গে তাঁর বাসনা পূরণ করতে চাইলেন) সঙ্গে ১০ নম্বরের (জোলেখা নিজের দোষ স্বীকার করলেন) মিল পাওয়া যায়। ৪ নম্বরের (জোলেখার সহচরীরা ইউসুফ (আ.)–এর রূপে বিবশ হয়ে আপেলের বদলে নিজেদের আঙুল কেটে ফেললেন) সঙ্গে ৯ নম্বরের (জোলেখার সহচরীরা নিজেদের দোষ স্বীকার করলেন) মিল পাওয়া যায়। ৫ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–কে জেলে পাঠানো হলো) সঙ্গে ৮ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–কে জেল থেকে বের করা হলো) মিল পাওয়া যায়। ৬ নম্বরের (মিসরের বাদশাহ রহস্যময় একটি স্বপ্ন দেখলেন) সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ৭ নম্বরের (ইউসুফ (আ.) বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন)।



বেশ বৈচিত্র্যময় সাহাবিদের যুগে বিয়ে ছিল

সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪ 0
বার দেখা হয়েছে

 



সাহাবিদের যুগে বিয়ে ছিল বেশ বৈচিত্র্যময়। বিয়ের আয়োজন ছিল সাদামাটা, প্রস্তুতি ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার। সকালবেলা একজন সাহাবি ছিলেন অবিবাহিত। কবে বিয়ে করবেন, কাকে বিয়ে করবেন, সেটা সকালেও জানা ছিল না। সন্ধ্যায় তিনি সংসার শুরু করতেন! বিয়ের কারণে পাড়াপড়শির নির্ঘুম বিরক্তি সাহাবিদের যুগে ছিল না।


বিয়ের প্রথম ধাপ হচ্ছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া। পুরুষ সাহাবিরা নিজেদের বিয়ের প্রস্তাব সরাসরি পাত্রীপক্ষের কাছে নিয়ে যেতেন। আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। তিনি প্রথমে সংকোচ বোধ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে অভয় দেন। এরপর নবী–কন্যা ফাতেমাকে (রা.) বিয়ে করেন আলী (রা.)।



সম্ভ্রান্ত নারীরাও কারও মাধ্যমে নিজেদের বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারতেন। খাদিজা (রা.) তাঁর বান্ধবী নাফিসা (রা.)-র মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। এমনকি কয়েকজন নারী সাহাবিও সরাসরি এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এমন একজন প্রস্তাবকারী ছিলেন খাওলা বিনতে হাকিম (রা.)। তাঁর স্বামী উসমান ইবনে মাজউন (রা.) ইন্তেকালের পর তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বিয়ে করেননি।


একজন নারীর রাসুল (সা.)–কে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনা চৌদ্দ শ বছর পর বিস্ময়কর মনে হতে পারে, কিন্তু সাহাবিদের সময় এটা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সাহাবিরা যখন তাঁদের সন্তানদের কাছে ঘটনাটি বলেন, তাঁরা অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেন, সেই নারী কীভাবে রাসুল (সা.)–কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন!



বিয়ের মোহরানা ছিল একেক জনের একেক রকম। যাঁর যাঁর সামর্থ্য ও পাত্রীর সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী মোহরানা নির্ধারিত হতো। এক সাহাবির মোহরানা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাঁর মুখস্থ কোরআনকে মোহরানা হিসেবে ধার্য করা হয়, যা তিনি স্ত্রীকে শেখাবেন।


সাহাবিদের যুগে পাত্রীরাও চাইলে মোহরানার প্রস্তাব দিতে পারতেন। রুমাইসা বিনতে মিলহান (রা.) আবু তালহা (রা.)-কে বিয়ে করার সময় নিজের মোহরানা নির্ধারণ করেন স্বামীর ইসলাম গ্রহণ। তিনি শর্ত জুড়ে দেন, তাঁকে বিয়ে করতে চাইলে আবু তালহাকে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। আবু তালহা কয়েক মিনিট চিন্তা করে বিয়েতে রাজি হন।


আলী ও ফাতেমা (রা.)-র বিয়ের মোহরানা ছিল ৪৬০ দিরহাম। সাহাবিদের যুগের ৪৬০ দিরহাম বর্তমান সময়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।


সে যুগে মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হতো না। বিয়েতে মেয়ের মতামতকে অসম্ভব গুরুত্ব দেওয়া হতো। এমনকি বিয়ের পরও যদি পাত্রী জানাতেন যে সে বিয়েতে অসম্মত ছিলেন, তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সে বিয়ে বাতিল করে দিতেন।


নারীরা নিজেদের বিয়ে নিয়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারতেন। কোনো কারণে পাত্র পছন্দ না হলে ‘না’ করে দিতে পারতেন। পাত্র ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক মর্যাদার অধিকারী হলেও নারীদের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হতো।


ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি, খলিফাতুল মুসলিমিন। তিনি আবু বকর (রা.)-র মেয়ে উম্মে কুলসুম (রাহি.)-কে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ওমরের (রা.) মেজাজের কারণে সে নারী বিয়েতে রাজি না হয়ে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ওমর ইবনুল খাত্তাব পরে অন্য এক উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন আলীর (রা.) মেয়ে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (রাহি.)।


সাহাবিদের বিয়েতে প্রথমদিকে মোহরানা অনেক কম ছিল। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) খলিফা হওয়ার পর মুসলমানদের অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। তখন বিয়েতে মোহরানার পরিমাণ বেড়ে যায়। খলিফা মোহরানা কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করতে চেয়েছিলেন। তাতে এক নারী আপত্তি জানান। তিনি কোরআনের একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এটা তিনি করতে পারেন না। খলিফা সেই নারীর আপত্তি আমলে নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ মোহরানা নির্ধারণ করা থেকে বিরত থাকেন।


তিনি উম্মে কুলসুম বিনতে আলীকে বিয়ে করার সময় মোহরানা হিসেবে ৪০ হাজার দিরহাম দেন। সাহাবিদের যুগে ১২ দিরহাম দিয়ে একটি ভেড়া কেনা যেত।


সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম ধনী সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) স্ত্রীকে মোহরানা বাবদ ৩০ হাজার দিরহাম দিয়েছিলেন।



সাবিত ইবনে কায়স (রা.) তাঁর স্ত্রীকে মোহরানা হিসেবে একটি বাগান দেন, যা সেই যুগ হিসেবে মোটা অঙ্কের মোহরানা।


সাহাবিদের যুগে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ছিল সীমিত। এ কারণে বিয়ে ছিল সহজ। বিয়েতে সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে, না দিলে কে কী মনে করবেন—এমন মনোভাব তখন ছিল না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সাহাবিদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। তাই বলে রাসুলুল্লাহকে (সা.) প্রত্যেক সাহাবিই বাধ্যতামূলকভাবে বিয়েতে দাওয়াত দিতেন না। কখনো কখনো এমনও হতো, কোনো সাহাবির বিয়ের কয়েক দিন পর রাসুলুল্লাহ (সা.) সে খবর পেতেন। এমনটা হয়েছিল আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) এবং জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ (রা.)-র সঙ্গে।


রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও মোটেই এ প্রত্যাশা করতেন না যে প্রত্যেক সাহাবিই তাঁকে বিয়ের দাওয়াত দেবেন বা তাঁকে জানিয়ে বিয়ে করবেন। এ যুগে যেসব সামাজিক বাধ্যবাধকতার মধ্য দিয়ে আমরা বিয়ের আয়োজন করি, সে সময় মোটেও সেসব ছিল না।


আরিফুল ইসলাম: লেখক



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png