LIVE
Loading latest headlines...

রবিবার, ২৫ জুলাই, ২০২১

নুরনবী (ﷺ) এর ছায়াবিহীন কায়া (ইমামগনের আকিদা থেকে) :

রবিবার, জুলাই ২৫, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে



হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকের ছায়া মুবারক ছিলো না।

(১) এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাকীম তিরমীযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেন — ان رسول الله صلي الله عليه و سلم لم يكن يري له ظل في شمس ولاقمر

অর্থ: নিশ্চয়ই সূর্য ও চাঁদের আলোতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক দেখা যেত না।”

দলীল-
√ নাওয়াদেরুল উছুল।


® তাবেয়ী হযরত যাক্ওয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
انًّ رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولا قمر

অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছায়া না সূযালোকে দেখো যেতো না চন্দ্রালোকে।

দলিল -
★ তিরমিযী ফি নাওয়াদিরিল উসূল, যুরকানী আলাল মাওয়অহিব,খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৪০


(২) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, ফক্বীউল মিল্লাত, আল্লামা হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আরেকটি সনদে হাদীস শরীফ বর্ননা করেন – وفي حديث ابن عباس قال لم يكن لرسول الله صلي الله عليه و سلم ظل ولم يقع مع الشمس قط الا غلب ضوءه ضوء الشمس ولم يقع مع سراج قط الا غلب ضوءه ضوء السراج

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না, এবং সূর্যের আলোতেও কখনো উনার ছায়া পড়তো না। আরো বর্নিত আছে, উনার নূর সূর্যের আলোকে অতিক্রম করে যেত। আর বাতির আলোতেও কখনো উনার ছায়া মুবারক পড়তো না। কেননা, উনার আলো বাতির আলোকেও ছাড়িয়ে যেত।”

দলীল-
√ জামউল ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল ২১৭ পৃষ্ঠা।

(৩) প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, হাফিজে হাদীস, রঈসুল মুহাদ্দিসিন, হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – اخرج الحكيم الترمذي عن ذكوان في نوادر الا صول ان رسول صلي الله عليه و سلم لم يكن يراي له ظل في شمس ولا قمر

অর্থ: হযরত হাকীম তিরমীযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ” নাওয়াদিরুল উছুল” নামক কিতাবে জাকওয়ান থেকে বর্ননা করেন, নিশ্চয়ই সূর্য ও চাঁদের আলোতেও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক দেখা যেত না।”

দলীল-
√ খাছায়েছুল কুবরা ১ম খন্ড ১২২ পৃষ্ঠা ।

® ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব ‘খাসায়েসে কোবরায়’ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছায়া ছিল না এই বিষয়ে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এবং এই যাক্ওয়ানের হাদীস বর্ণনা করতঃ বলেন,
قال ابن سبع من خصائصه صلى الله عليه وسلم انّ ظله كان لا يقع على الارض وانه كان نورا فكان اذا مضى فى الشمس او القمر لاينظر له ظل

অনুবাদঃ ইবনে সাবা বলেছেন, এটা হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্গত যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছায়া যমীনে পড়তো না এবং তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর। তিনি যখন সূযালোক কিংবা চন্দ্রালোকে চলতেন, তাঁর ছায়া দেখা যেতো না।

দলিল -
★ যুরকানী আলাল মাওয়াহিব,খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২০২,খাসায়েসে কোবরা খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৬৮

(৪) বিখ্যাত আলেমে দ্বীন, শায়খুল উলামা, মুহাদ্দিস , আল্লামা ইব্রাহিম বেজরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন — وفي حديث ابن عباس قال لم يكن لرسول الله صلي الله عليه و سلم ظل ولم يقع مع الشمس قط الا غلب ضوءه ضوء الشمس ولم يقع مع سراج قط الا غلب ضوءه ضوء السراج

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না, এবং সূর্যের আলোতেও কখনো উনার ছায়া পড়তো না। আরো বর্নিত আছে, উনার নূর সূর্যের আলোকে অতিক্রম করে যেত। আর বাতির আলোতেও কখনো উনার ছায়া মুবারক পড়তো না। কেননা, উনার আলো বাতির আলোকেও ছাড়িয়ে যেত।”

দলীল-
√ আল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া আলা শামায়েলে মুহম্মদীয়া ১০৫ পৃষ্ঠা।

(৫) বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ফক্বীহ, আল্লামা হযরত ইউছুফ নবেহানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে লিখেন – وكان اذا مشي في قمر او شمس لا يظهر له ظل

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সূর্য ও চন্দ্রের আলোতে হাঠতেন তখন উনার ছায়া মুবারক পড়তো না।”

দলীল-
√ জাওয়াহিরুল বিহার ১ম খন্ড ৪৫৩ পৃষ্ঠা।

(৬) বাহরুল উলুম, শায়খুল মাশায়েখ, আল্লামা ইবনে সাবা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – ان ظله كان لا يقع علي الارض كان نورا فكان اذامشي في الشمس اوالقمر لا ينظر له ظل

অর্থ: নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক যমীনে পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন, নূর। অতঃপর তিনি যখন সূর্য ও চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন তখন উনার ছায়া মুবারক দৃষ্টিগোচর হতোনা।

দলীল-
√ শেফাউছ ছুদুর।


(৭) আল্লামা সুলায়মান জামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, – لم يكن له صلي الله عليه و سلم ظل يظهر في شمس ولا قمر

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলনা। এমনকি চাঁদ এবং সূর্যের আলোতেও উনার ছায়া মুবারক প্রকাশ হতো না।”

দলীল-
√ ফতুহাতে আহমদিয়া শরহে হামজিয়া।


(৮) ইমামুল মুফাসসিরিন ওয়াল মুহাদ্দিসিন, হাফিজে হাদীস, আল্লামা ইবনে জাওজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেন –
وفي حديث ابن عباس قال لم يكن لرسول الله صلي الله عليه و سلم ظل ولم يقع مع الشمس قط الا غلب ضوءه ضوء الشمس ولم يقع مع سراج قط الا غلب ضوءه ضوء السراج

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না, এবং সূর্যের আলোতেও কখনো উনার ছায়া পড়তো না। আরো বর্নিত আছে, উনার নূর সূর্যের আলোকে অতিক্রম করে যেত। আর বাতির আলোতেও কখনো উনার ছায়া মুবারক পড়তো না। কেননা, উনার আলো বাতির আলোকেও ছাড়িয়ে যেত।”

দলীল-
১। কিতাবুল ওয়াফা
২। জুরকানি আলাল মাওয়াহিব,খন্ড৪ পৃষ্ঠা-২২০,শরহে শামায়িল লিল্ মুনাদী,খন্ড ১ পৃষ্ঠা-৪৭

(৯) হাফিজে হাদীস, মুহাদ্দিস , আল্লামা সাইয়্যিদ যুরকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –

لم يكن له صلي عليه و سلم ظل في شمس و لاقمر لانه كان نورا

অর্থ: চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। কেননা তিনি ছিলেন নূর।

দলীল-
★ জুরকানী খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২২০

(১০) বিখ্যাত আলেম, হযরত আল্লামা হুসাইন দিয়ার বাকরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –

لم يقع ظله صلي الله عليه و سلم علي الارض ولايري له ظل في شمس ولا قمر

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক জমিনে পড়তো না। এবং চাঁদ এবং সূর্যের আলোতেও উনার ছায়া মুবারক দেখা যেত না।”

দলীল-
√ খামীছ ফি আহওলে আনফুসে নাফীস

(১১) ইমামুল আল্লাম, জালালু মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –

لم يقع ظله علي الارض ولايري له ظل في شمس ولا قمر قال ابن سبع لانه كان نورا قال رزين لغلبة انواره

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক মাটিতে পড়ে নাই। চাঁদ এবং সূর্যের আলোতে উনার ছায়া মুবারক দেখা যেত না। আল্লামা ইবনে সাবা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু সম্পূর্ণ নূর ছিলেন, সেহেতু উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। হযরত ইমান রজীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অবশ্যই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে যেত।”

দলীল-
√ আনমুযাজুল লবীব ফী খাছায়েছিল হাবীব- দ্বিতীয় বাব- চতুর্থ অধ্যায় ।

(১২) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, শায়খুল উলামা, শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –

ونبود مر أنحضرت را صلي الله عليه و سلم سايه نه در افتاب ونه قمر

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক চাঁদ ও সূর্যের আলোতে দেখা যেত না।”

দলীল-
√ মাদারেজুন নবুওয়াত- ১ম খন্ড- ১ম অধ্যায় ।

(১৩) ইমামুল জলীল, মুহাদ্দিসুশ শহীর, আল্লামা ইমাম কাজী আয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – وما ذكر من انه لا ظل تشخصه في شمس ولاقمر لانه كان نورا

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরের দেহ মুবারকের ছায়া মুবারক সূর্য ও চাঁদের আলোতেও পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন সম্পূর্ন নূর।”

দলীল-
√ শিফা শরীফ।

® ইমাম কাযী আয়ায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وما ذكر من انه كان لا ظل لشخصه فى شمس ولا قمر لانه كان نورا وان الذباب كان لايقع على جسده ولا ثيابه

অনুবাদঃ তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর । তাঁর শরীর ও পোষাকে মাছি বসত না।

দলিল -
★ শিফা শরীফ ,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-২৪২

(১৪) ইমামুল আইম্মা, হাফিজে হাদীস, আহমদ বিন মুহম্মদ খতীব কুস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – رسول الله صلي الله عليه و سلم كي ليءے سايه نه تها دهوپ مين نه چاندني مين

অর্থ: চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না।”

দলীল-
√ মাওয়াহেবু লাদুন্নিয়া ১ম খন্ড

(১৫) তাজুল মুফাসসীরিন, ফক্বীহুল আছর, আল্লামা শাহ আব্দুল আযীজ মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – سايه ايشان بر زمين نمي افتاد

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক মাটিতে পড়তো না।”

দলীল-
√ তাফসীরে আযীযি-৩০ পারা- সূরা আদ দ্বুহা উনার তাফসীর।

(১৬) ইমামুল জলীল, সাইয়্যিদুল মুফাসসীরিন, আল্লামা মাহমূদ নাসাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – قال عشمان رضي الله غنه ان الله ما اوقع ظلك علي الارض لءلا يضع انسن ان قدمه علي ذالك الظل

অর্থ: আমীরুল মু’মিনিন, হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আপনার ছায়া মুবারক মাটিতে পড়তে দেন নাই। যাতে মানুষ আপনার ঐ ছায়া মুবারকে পা রাখতে না পারে।”

দলীল-
√ তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল-সূরা নূরের তাফসীর ( তাফসীরে মাদারিক,পৃষ্ঠা-৩২১)

(১৭) ইমামুল আইম্মা, কাইয়ুমে আউয়াল, মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – اورا صلي الله عليه و سلم سايه نبود در عالم شهادت سايه هر شخص ازشخص لطيف تراست چون لطيف تري ازوي صلي الله عليه و سلم در عالم نباشد او را سايه چه صورت وارد

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। প্রত্যেক লোকের ছায়া তার দেহ থেকে সুক্ষ্ম। যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাইতে আর কোন কিছু সুক্ষ্ম নয়, তখন উনার ছায়া মুবারক কি আকার ধারন করতে পারে ?”

দলীল-
√ মকতুবাত শরীফ-৩য় খন্ড- ১০০ নং মকতুব।

(১৮) বাহরুল উলুম, হযরত শায়েখ মুহম্মদ তাহের রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – من اسماءه صلي الله علي و سلم النو ر قبل من خصاءصه صلي الله عليه و سلم انه اذا مشي في ااشمس والقمر لا يظهر له ظل

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক সমূহ থেকে একটি নাম মুবারক হলো, নূর। বলা হয়, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বৈশিষ্ট্য সমূহ থেকে একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে, নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সূর্য ও চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার কোন ছায়া মুবারক প্রকাশ পেত না।”

দলীল-
√ মাজমাউল বিহার

(১৯) শায়খুল উলামা, হযরতুল আল্লামা, মুহম্মদ ইউসুফ শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন – الامام الحيم قال معناه لءلا يطأ عليه كافر فيكون مذلة له

অর্থ: ইমাম হযরত হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক না থাকার হিকমত এই যে, যাতে কোন বিধর্মী কাফেরেরা উনার ছায়া মুবারকের উপর পা রাখতে না পারে।”

দলীল-
√ সুবহুল হুদা ওয়ার রশীদ আল মারুফ বিহী ” সীরাতে শামী” ২য় খন্ড ১২৩ পৃষ্ঠা।

(২০) হাফিজে হাদীস,ওলীয়ে কামিল, হযরত ইবনে হাজর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন –

انه صلي الله عليه و سلم صار نورا انه كان اذا مشي في الشمس و لا يظهر له ظل

অর্থ: নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূর ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি যখন চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া মুবারক প্রকাশ পেতো না।”

দলীল-
√ আফদ্বালুল ক্বোরা।

তিনি উক্ত কিতাবে আরো বলেন,


ইমাম ইবনে হাজার মাক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ومما يؤيد انه صلى الله عليه وسلم ضاء نورا انه كان اذا مشى فى الشمس و القمر لا يظهر له ظل لانه لا يظهر الا الكثيف وهو صلى الله عليه وسلم قد خلصه الله من سائر الكثا فات الجسمانية وسيره نورا صرفا لا يظهر له ظل اصلا

অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নূর হওয়ার সমর্থন এ থেকে হয় যে, সূযালোকে কিংবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছাঁয়া হতো না। কারণ ছাঁয়া তো হয় জড় দেহের আর হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামককে আল্লাহ তা’আলা সকল শারীরিক জড়তা থেকে নিখুঁত করতঃ সম্পূর্ণ নূরে পরিপূর্ণ করেছিলেন। অতএব হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ‍ওয়াসাল্লাম-এর কোন ছাঁয়া ছিল না।

দলিল-
আফদ্বালুল ক্বোরা

 

(২১) আমজাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন –

بيشك حضور پرنور سر كار اقدس صلي الله عليه و سلم كي جسم اقدس كا سايه نهين پرتا تها جيسا كه حديث شريف ميت هي لم يكن له ظل لا في الشمس ولا في القمر يعني سورج اور چاندكي روشني مين حضور كا سايه نهين پرتا تها

অর্থ: নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শরীর মুবারক উনার ছায়া মুবারক (জমিনে) পড়তো না । যেমন, হাদীস শরীফে বর্নিত আছে, চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক পড়তো না।”

দলীল-
√ ফতোয়ায়ে ফয়জুর রসূল ২৭ পৃষ্ঠা।

(২২) বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফফাজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন –

من دلاءل نبوته صلي الله عليه و سلم ماذكر من انه لا ظل لشخصه لشخصه اي جسده الشريف اللطيف اذاكان في شممس او قمر لانه صلي الله عليه و سلم نور

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুওয়াত মুবারকের প্রমানের মধ্যে একটি প্রমান যে, উনার শরীর মুবারকের ছায়া মুবারক ছিলো না। যখন তিনি চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া মুবারক পড়তো না। কেননা তিনি (আপাদমস্তক) নূর।”

দলীল-
√ নাসীমুর রিয়াজ।

(২৩) ওলীউল কামিল, আল্লামা মুহম্মদ বিন ছিবান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – وانه لا فييء له

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ বৈশিষ্ট্য এই যে, উনার ছায়া মুবারক ছিলো না।”

দলীল-
√ ইসআফুর রাগেবীন।

(২৪) বিখ্যাত সুফী সাধক, আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – چو فناشي از فقر. پيرا يه او محمد. وار بے سايه بود

অর্থ: যে ব্যক্তি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাত মুবারকে ফানা হবে, সে ব্যক্তিও উনার মত ছায়াহীন হয়ে যাবে।

দলীল-
√ মসনবী শরীফ

(২৫) আল্লামা ইমাম রাগিব ইস্পাহানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন – ومن اسماءه صلي الله عليه و سلم النور قبل من خصاءصه صلي الله عليه و سلم انه اذا مشي في الشمس لاينظر له ظل

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উনাদের মধ্যে একটি নাম মুবারক হলো নূর। বলা হয়েছে, উনার বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য এই, উনি রোদে গেলে উনার ছায়া মুবারক দৃষ্টিগোচর হতো না।”

দলীল-
√ মুফরাদাত ৩১৭ পৃষ্ঠা ।

এছাড়া আরো হাজার হাজার কিতাব মুবারকে বর্নিত আছে যে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকের ছায়া মুবারক ছিলো না।

দলীল-
(২৬) নূরুল আবছার ফী মানাক্বেবে নাবিয়্যিল আতহার।

(২৭) শরহে মছনবী শরীফ।

(২৮) ফতহুল আজীজ।

(২৯) আনওয়ারে মুহম্মদীয়া

(৩০) মিনহাজে মুহম্মদীয়া

(৩১) মুতাউলিউল মুসাররাত

(৩২) সীরাতে হলবীয়া

(৩৩) আল ইকতেবাছ

(৩৪) কিতাবুল হামছীন ফি আহওয়ালিল নাফসিন নাফিস।
ইত্যাদি..

শুধুতাই নয় , এত বিপুল পরিমান বর্ননার কারনে ওহাবী দেওবন্দী দের প্রধান মুরুব্বী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী এই বর্ননাকে মুতাওয়াতির বর্ননা মেনে নিয়েছে। মৌলবী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী লিখেছে — بتواتر ثابت ثد كه انحضرت صلي الله عليه و سسلم سايه ند اثتند- وظاهر است كه بجز نور همه اجسام ظل مي دارند

অর্থ– একথা মুতাওয়াতির বর্ননা দ্বারা প্রমানিত যে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মোবারকের ছায়া ছিলো না। প্রকাশ থাকে যে নূরের দেহ ছাড়া সকল দেহের ছায়া থাকে।”

দলীল–
√ ইমদাদুস সুলুক ৮৬ পৃষ্ঠা |

এমনকি দেওবন্দী গুরু মৌলবী আশরাফ আলী থানবী বর্ননা করে — يه بات مثهور ھے كه ھمارے حضرت صلي عليه و سلم كے سایه نهيی تها ( اسلءے كه) همارے حضرت صلي الله عليه و سلم صرتاپا نور هي نور تہے

অর্থ — একথা প্রসিদ্ধ যে , হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মোবারকের ছায়া ছিলো না।কেননা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপাদমস্তক নূর তথা নূরে মুজাসসাম !”

দলীল–
√ শুকরুন নি’মাহ ৩৯ পৃষ্ঠা ।



শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১

সূরা ফাতিহার পরিচিতি ও পরিসংখ্যান

শনিবার, জুলাই ১৭, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে



পরিচিতিঃ

মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের প্রথম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৭ এবং রুকুসংখ্যা ১। ফাতিহা শব্দটি আরবি "ফাতহুন" শব্দজাত

যার অর্থ "উন্মুক্তকরণ"। এটি আল্লাহ্ এর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিদান স্বরূপ। সূরা ফাতিহা অন্যান্য সূরার ন্যায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু হয়েছে। আল ফাতিহা সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় মক্কী সূরা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ।

সূরা আল ফাতিহা-

শ্রেণীঃ-মক্কী সূরা।

নামের অর্থঃ-শুরু।

অন্য নামঃ-ফাতিহাতুল কিতাব, উম্মুল কিতাব, সূরাতুল-হামদ, সূরাতুস-সালাত, আস্‌-সাব্‌'য়ুল মাসানী।

অবতীর্ণ হওয়ার সময়ঃ-নবী মুহাম্মদ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুয়াতপ্রাপ্তির শুরুর দিকে।

পরিসংখ্যান-

সূরার ক্রমঃ-১।

আয়াতের সংখ্যাঃ-৭।

পারার ক্রমঃ-১।

রুকুর সংখ্যাঃ-১।

সিজদাহ্‌র সংখ্যাঃ-নেই।

শব্দের সংখ্যাঃ-২৯।

বিশেষ বিষয় সম্পর্কে আয়াতের সংখ্যাঃ-আল্লাহ্‌র প্রশংসা, প্রার্থনা।

নামকরণঃ-

এ সূরার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এর এই নামকরণ করা হয়েছে। যার সাহায্যে কোন বিষয়, গ্রন্থ বা জিনিসের উদ্বোধন করা হয় তাকে 'ফাতিহা' বলা হয়। অন্য কথায় বলা যায়, এ শব্দটি ভূমিকা এবং বক্তব্য শুরু করার অর্থ প্রকাশ করে।

সম্মানিত তাফসীরকারকগণ আলোচ্য সূরাটির প্রায় ৪২টি নাম দিয়েছেন। যে নাম গুলো তাফসীর ইবনু কাসীর, ইবনু জারীর, রুহুল মায়ানী, তাফসীর কবীর, তাফসীর খাযিন, তাফসীরে ফাতহুল কাবির, তাফসীরে কুরতুবীসহ নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-

(১) سورة مفتاح القرآن কুরআনের কুঞ্জিকা,

(২) سورة أم القرآن কুরআনের মা বা আসল, 

(৩) سورة الدعاء  দোয়ার সূরা, 

(৪) سورة الشفاء রোগ মুক্তির সূরা, 

(৫) سورة الحمد প্রশংসার সূরা, 

(৬) أساس القرآن কুরআনের ভিত্তি, 

(৭) سورة الرحمة রাহমাতের সূরা, 

(৮) سورة البركة বারকাতের সূরা, 

(৯) سورة النعمة নিয়ামাতের সূরা, 

(১০) سورة العبادة ‘ইবাদাতের সূরা, 

(১১) سورة الهداية হিদায়াত প্রাপ্তির সূরা, 

(১২) سورة الإسةقامة দৃঢ়তার সূরা, 

(১৩) سورة الإسةعانة সাহায্য প্রার্থনার সূরা, 

(১৪) سورة الكافية অত্যধিক ও বিপুলতা দানকারী সূরা, 

(১৫) سورة الوافية পূর্ণত্ব প্রাপ্ত সূরা, 

(১৬) سورة الكنـز খণির সূরা (জ্ঞানের খনি, রাহমাত, বারাকাত, নি‘আমাত ও যাবতীয় সাফল্যের খণি বলে এ সূরাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে), 

(১৭) سورة الشكر শুকর করার সূরা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সূরা (১৮) سورة الصبر সবরের উৎসাহ দানকারী সূরা, (১৯) سورة التكرار বার বার পঠিতব্য সূরা, 

(২০) سورة التعلق مع الله আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপনের সূরা, 

(২১) سورة الصراط المستقيم সরল সঠিক পথ লাভের সূরা, 

(২২) سورة الربوبية প্রভুত্ব সনাক্ত করণের সূরা, 

(২৩) سورة الوحدانية আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের প্রতি স্বীকৃতি প্রকাশের সূরা, 

(২৪) سورة الاجةناب الغضب والضلالة আল্লাহর গযব ও গোমরাহি হতে আত্মরক্ষা করার সূরা, 

(২৫) سورة الصلاة সলাতে একান্তই পঠিতব্য সূরা।



শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১

হাদিস মানবো না সুন্নাহ মানবো

শুক্রবার, জুলাই ০৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


“সকল সুন্নাতই হাদীস, কিন্তু সব হাদীস সুন্নাত নয়।”
[আর] “সকল হাদীস সমুহের মধ্য থেকে শুধু সুন্নাতেরই অনুসরন করতে হবে।”
আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে বলে দিয়েছেন-
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ
অর্থাৎ তোমরা যদি না জেনে থাক তবে আহলে যিকিরদেরকে জিজ্ঞাসা কর। [কোরআন শরীফ; সুরা নাহল আয়াত-৪৩।]
মুফাসসিরীনে কেরাম বলেন উক্ত আয়াতে আহলে যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হল উলামায়ে কেরাম। আর উক্ত হুকুম হল সাধারন মানুষের জন্য। অর্থাৎ সাধারন মানুষ কোন বিষয় না জেনে থাকলে তার দায়িত্ব হল ওলামায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করে তদ্বানুযায়ী আমল করা। তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা বলেননি যে, তোমরা না জেনে থাকলে কুরআন ও হাদীস গবেষণা করে তদ্বানুযায়ী আমল করবে।
[অথচ] আমাদের মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তি এমন আছেন যারা নিজেরাই কুরআন-হাদীস গবেষণা করে আমল করতে চান। যদিও তিনি আলেম নন।
এমন অ-আলেম ব্যক্তিরা দলিল হিসাবে পেশ করেন –وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ
অর্থ- আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য তবে আছে কি কোন উপদেশ গ্রহনকারী? [ক্বুরআ’ন শরীফ; সূরা কমার আয়াত -১৭।]তারা বলে, কুরআন তো খুবই সহজ। যা আল্লাহ তা’আলা নিজেই বলে দিয়েছেন। কাজেই তা গবেষণা করে তদ্বানুযায়ী আমল করাতে অসুবিধা কোথায়? – [অথচ] আয়াতের অর্থ থেকে যে কেউ অতি সহজেই বুঝতে পারবে যে, কুরআনকে সহজ করা হয়েছে উপদেশ গ্রহণের জন্য; হুকুম আহকামের উপর আমল করার জন্যে সকলের জন্যে সহজ নয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে পূর্ববর্তী উম্মতের যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তাদেরকে যে নছীহত করেছেন, আল্লাহ তা’আলার হুকুম পালনার্থে তাদেরকে যে নেয়মত দান করেছেন এবং হুকুম না মানার কারনে যে আযাব দিয়েছেন তা যে কেউ খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারবে।
অপর দিকে কুরআন থেকে মাসআলা নিঃসরণ অত্যন্ত কঠিন কাজ। তা কেবল মুজতাহিদের পক্ষেই সম্ভব। নিন্মের আয়াতটিতে এদিকেই ইশারা করা হয়েছে-إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلاً ثَقِيلاً
অর্থাৎঃ অচিরেই আমি আপনার উপর কিছু ভারী কথা অবতীর্ণ করব। [কুরআন শরীফ; সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত-৫।]

অনুরূপভাবে হাদীস থেকে হুকুম আহকাম বের করা (Extracting)-ও অত্যন্ত কঠিন কাজ। সাধারন মানুষের জন্যে তা একেবারেই অসম্ভব।
⬅ কেন?
⬅ মুহাদ্দিছীনদের দায়িত্ব শুধু মাত্র হাদীস জমা করে দেওয়া। তারা আমলযোগ্য হাদীস ও আমলবিহীন হাদীসের মেধ্য কোন পার্থক্য করেন না । তাই হাদীসের কিতাবসমূহে সর্ব প্রকার হাদীস বিদ্যমান থাকে।যেমনঃ-
(১) রহিত হাদীস সমূহ।
(২) মারজুহ তথা অনাগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হাদীস ।
(৩) নির্দিষ্ট স্থানের জন্য খাছ হাদীস।
(৪) নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য খাছ হাদীস।
(৫) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাছ হাদীস ।
(৬) মওজু তথা জাল হাদীস।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হাদীস থাকে। উপরে উল্লেখিত ১ম, ২য় ও ৬ষ্ট প্রকার কোন অবস্থাতেই আমলযোগ্য নয়। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম প্রকার ক্ষেত্রবিশেষে আমলযোগ্য হতে পারে। সর্বাবস্থায় নয়।  :—বিষয়টিকে ভালোভাবে স্পষ্ট করার জন্য প্রতিটি প্রকারের একটি করে উদহারন নিম্নে দেওয়া হল।যথাঃ-(১) রহিত হাদীসঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا شَرِبَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْسِلْهُ سَبْعًا
অর্থাৎঃ হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কুকুর তোমাদের কারো পাত্রে পানি পান করে, সে যেন উক্ত পাত্র সাত বার ধুয়ে নেয়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী শরীফ হাদীস নং-১৭২।]
(২) মারজূহ হাদীসঃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْمَاءِ وَمَا يَنُوبُهُ مِنَ الدَّوَابِّ وَالسِّبَاعِ فَقَالَ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا كَانَ الْمَاءُ قُلَّتَيْنِ لَمْ يَحْمِلِ الْخَبَث
অর্থাৎঃ হযরত ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঐ পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যা মরুভূমিতে নিচু জায়গায় জমে থাকে এবং যেখানে চতুস্পদ জন্তু ও হিংস্র প্রাণী আসা যাওয়া করে। তিনি বললেন, পানি যখন দুই মটকা পরিমান হয় তখন তা আর নাপাক হয় না।
[গ্রন্থ সূত্রঃ আবূ দাউদ শরীফ হাদীস নং-৬৩।]
(৩) নির্দিষ্ট স্থানের জন্য খাছ হাদীসঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَتَوَضَّأُ مِنْ بِئْرِ بُضَاعَةَ وَهِيَ بِئْرٌ يُطْرَحُ فِيهَا لُحُومُ الْكِلَابِ وَالْحِيَضُ وَالنَّتَنُ فَقَالَ الْمَاءُ طَهُورٌ لَا يُنَجِّسُهُ شَيْءٌ
অর্থাৎঃ আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আমরা কি বুজাআহ নামক কুয়া থেকে উযূ করব? আর তা এমন একটি কুয়া যেখানে মহিলাদের হায়েযের নেকড়া, মৃত কুকুরসমূহ এবং নাপাক বস্তুসমূহ ফেলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পানি পবিত্র। তাকে কোন বস্তু নাপাক করতে পারে না।[গ্রন্থ সূত্রঃ নাসাই শরীফ হাদীস নং-৩২৬।]
(৪) নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য খাছঃ
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا كان أحدكم في المسجد فوجد ريحا بين أليتيه فلا يخرج حتى يسمع صوتا أو يجد ريحا
অর্থাৎঃ হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে থাকে আর সে তার পায়ু পথে বায়ু অনুভব করে, সে ততক্ষণ পর্যন্ত (উযূর নিয়তে) বাহির হবে না যতক্ষণ না সে শব্দ শুনে বা গন্ধ পায়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ তিরমিজী শরীফ হাদীস নং-৭৫।]
হাদীস থেকে বুঝা যায়। কারো বায়ু নির্গমন হওয়া সত্তেও যদি সে শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পায় তাহলে তার উযূ ভঙ্গ হবে না। হাদীসটি সম্পূর্ন সহীহ।


(৫) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাছঃ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِقَتْلِ الْكِلاَبِ
অর্থাৎঃ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরকে হত্যা কারার জন্য আদেশ দিয়েছেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৩৯৮৮।]
(৬) জাল হাদীসঃ
عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من كثرت صلاته بالليل حسن وجهه بالنهار
অর্থাৎঃ হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার রাতে (তাহাজ্জুদ) নামাজ বেশি হয় দিনে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৩৩৩।]
❇ ❇ পর্যালোচনাঃ
উপরে উল্লেখিত হাদীসসমূহের মধ্যে :—
⬅ ১ম হাদীসটি তিনবার ধোয়ার হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে।
⬅ ২য় হাদীসের বিপরিতে রয়েছে স্থির পানিতে পেষাব করার নিষেধাজ্ঞার হাদীস। যা দ্বারা উল্লেখিত হাদীসটি মারজূহ হয়েছে।
⬅ ৩য় হাদীসের হুকুমটি বুজাআহ নামক কুপের সাথে খাছ।
⬅ ৪র্থ হাদীসটি ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য খাছ যে ওয়াসওয়াসার রোগে আক্রান্ত।
⬅ ৫ম হাদীসটি ইসলামের প্রথম যুগের জন্য খাছ। যা পরবর্তীতে রহিত হয়ে গিয়েছে।
একারনেই উলামায়ে কেরাম সাধারন মানুষের জন্য কোন আলেমের নেগরানী ও পরামর্শ ব্যতীত হাদীস অধ্যায়ন করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এটা তাদেরকে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বিখ্যাত তা‘বে তাবেঈন লাইস বিন সা‘দ বলেছেন-
الحديث مضلة الا للعلماء.
অর্থাৎঃ উলামা ব্যতীত অন্যদের জন্য হাদীস গোমরাহীর করণ।
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ বলেছেন-
الحديث مضلة الا للفقهاء.
অর্থঃ ফুকাহা ব্যতীত অন্যদের জন্য হাদীস পথ ভ্রষ্টতার কারন।
[অথচ] আমাদের মধ্য থেকে কিছু ইংরেজি শিক্ষিত আছেন তারা নিজেরাই হাদীস অধ্যয়ন করে তদানুযায়ী আমল করতে চেষ্টা করেন। তারা নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে দাবী করেন।
পূর্বের আলোচনার দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা যে সমুদ্রতুল্য হাদীস ভান্ডারের প্রতিটি হাদীসই উম্মতের জন্য অনুসরনীয় নয়।
যেমন- হাদীস রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১১টি বিবাহ্ করেছেন। একই সাথে তার নয়টি স্ত্রী ছিলেন। এবং তিনি মহর ছাড়া বিবাহ করেছেন। তাহলে কি এগুলো উম্মতের জন্য হালাল হয়ে যাবে? (নাউজুবিল্লাহ!)
বিখ্যাত তাবেঈ ইব্রাহীম নাখঈ বলেছেন-
اني لاسمع الحديث فانظرالي ما يؤخذ به فاخذ به و ادع سائره.
অর্থাৎঃ আমি হাদীস শোনার পর তার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করি। এরপর যেটা গ্রহন করার তা গ্রহন করি। আর অন্যান্য সমস্ত হাদীস ছেড়ে দেই।
ইবনে আবী লাইলা বলেন-
لا يفقه الرجل في الحديث حتي ياخذ منه و يدع.
অর্থাৎঃ কোন ব্যক্তি ততক্ষন পর্যন্ত হাদীসে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ না সে কিছু হাদীস গ্রহন করে আর কিছু হাদীস ছেড়ে দেয়।
বিখ্যাত ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব বলেন-
لولا ان الله انقذني بمالك و الليث لضللت.فقيل له كيف ذلك؟ قال:اكثرت من الحديث فحيرني فكنت اعرض ذلك علي مالك و الليث فيقولان لي :خذ هذا و دع هذا.
অর্থাৎঃ যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে ইমাম মালেক ও লাইস বিন সা‘দ দ্বারা হেফাযত না করতেন, আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। অতপর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল তা কিভাবে? তিনি বললেন আমি হাদীস নিয়ে বেশি চর্চা শুরু করেছিলাম ফলে তা আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল। অতপর আমি তা মালেক(রহ) ও লাইস (রহ) এর নিকট পেশ করতাম। তারা বলতেন এটা গ্রহন কর আর এটা ত্যাগ কর।
[গ্রন্থ সূত্রঃ আছারুল হাদীসিশ শরীফ পৃঃ ৮১, ৮২।]
তারা এত বড় ব্যক্তি হয়েও যখন এমন কথা বলেছেন, তাহলে সাধারন মানুষের বিষয়টি কেমন হতে পারে।
এই ইবনে ওহাব (রহ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি এক লক্ষ বিশ হাজার হাদীস সংকলন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি অতিরিক্ত হাদীস চর্চা করার কারনে গোমরাহ হতে গিয়েছিলাম।
এখন প্রশ্ন হল, আমরা হাদীসের উপর কিভাবে আমল করব?
⬅ এর উত্তর হল হাদীস সমূহের মধ্য থেকে যেগুলো উম্মতের জন্য অনুসরনীয় আমরা সেগুলোর উপর আমল করব। আর সেটাকেই সুন্নাত বলে।
হাদীসের বিশল ভান্ডার থেকে সুন্নাত বের করা এটা ফুকাহাদের দায়িত্ব। এটা সাধারন মানুষের জন্য সম্ভব নয়।
⬅ কেন?
⬅ হাদীসের অর্থ ফুকাহয়ে কেরাম গভীরভাবে বুঝতে পারেন।
ইমাম তিরমিজী (রহ) তিরমিজী শরীফে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি বর্ননা করে বলেন-
و كذلك قال الفقهاء و هم اعلم بمعاني الحديث.
অর্থাৎঃ ফুকাহায়ে কেরাম এমনই বলেছেন। আর হাদীসের অর্থ সম্পর্কে তারাই বেশি জানেন।
ইমাম আবু হানিফা তাবেয়ী (রহ) এঁর উস্তাদ হযরত আ‘মাশ (রহ) যিনি অনেক বড় মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি একদা হযরত আবু হানিফা (রহ) কে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করলেন। ঈমাম আবু হানিফা (রহ) মাসআলাটির জবাব দিয়ে দেন। অতপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথা থেকে জবাবটি দিলে? ইমাম সাহেব বললেন, আপনি আমাকে অমুক অমুক থেকে যে হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন সেগুলো থেকে আমি উত্তর দিয়েছি। অতপর আ‘মাশ (রহ) বলেন-
يا معشر الفقهاء! انتم الاطباء و نحن الصيادلة.
অর্থঃ হে ফকীহদের দল, তোমরাই হলে ডাক্তার আর আমরা হলাম ফার্মাসিষ্ট।
অর্থাৎ ফার্মাসিষ্ট (Pharmacist) যেমন তার কাছে অনেক ঔষধ থাকা সত্তেও সে জানে না কোন রোগের জন্য কোন ঔষধ (Medicine)। অনুরূপভাবে মুহাদ্দিসীনে কেরামও তাদের নিকট অনেক হাদীস থাকা সত্ত্বেও তারা তা থেকে মাসআলা বের করতে পারেন না।
– এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল, হযরত আ‘মাশ (রহ) এত বড় মুহাদ্দিস হওয়া সত্ত্বেও তিনি মওজুদ হাদীস (Collected Hadiths) থেকে মাসআলা ইস্তেমবাত (Extract) করতে পরেননি। তাহলে একজন সাধারন ইংরেজি শিক্ষিত লোকের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হতে পারে?
⬅ তাহলে দেখা গেল, “সকল সুন্নাতই হাদীস, কিন্তু সব হাদীস সুন্নাত নয়।”
আর আমাদেরকে হাদীস সমুহের মধ্য থেকে শুধু সুন্নাতের অনুসরন করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমূহে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তিনি কোন হাদীসে এটা বলেননি যে, তোমরা আমার হাদীসের অনুসরন করবে।
⬅ [বরং] যেখানেই অনুসরনের কথা বলা হয়েছে সেখানে সুন্নাতে অনুসরনের কথা বলা হয়েছে।

 নিম্নে নমুনা স্বরূপ কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল-
1)عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَجْرَ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ لَهَا الْأَعْيُنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ قُلْنَا أَوْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا قَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
অর্থাৎঃ হযরত ইরবাজ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,………………রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোদেরকে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে এবং (আমীরের কথা) শুনতে ও মানতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে একজন হাবশী গোলাম হয়। তোমাদের মধ্য থেকে আমার পরে যে বেচে থাকবে সে অচিরেই বিভিন্ন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তাই তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাত ধর। তা মজবূতভাবে আঁকড়ে ধর। এবং তোমরা (দ্বীনের মধ্যে) নতুন জিনিস থেকে বেঁচে থাক। (দ্বীনের মধ্যে) প্রতিটি নতুন জিনিসই বেদআত। আর প্রতিটি বেদআতই ভ্রষ্টতা।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৭১৪৭।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি, যে, তোমরা আমার হাদীস ও হিদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের হাদীস ধর।
(2) قال أنس بن مالك قال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم يا بني إن قدرت أن تصبح وتمسي وليس في قلبك غش لأحد فافعل ثم قال لي يا بني وذلك من سنتي ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة.
অর্থাৎঃ হযরত আনাস বিন মালেক (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, যে, হে প্রিয় বৎস! যদি তুমি এভাবে সকাল ও সন্ধ্যা করতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো জন্য কোন হিংসা নেই, তাহলে তা কর। অতপর তিনি আমাকে বললেন হে প্রিয় বৎস! তা আমার সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। আর যে আমার সুন্নাতকে মহব্বত করল সে আমাকে মহব্বত করল। আর যে আমাকে মহব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।
[গ্রন্থ সূত্রঃ তিরমিজী শরীফ হাদীস নং ২৬৮৩।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি, যে,  যে আমার হাদীসকে মহব্বত করল সে আমাকে মহব্বত করল……।
3)عَنْ مَالِك أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ.
অর্থাৎঃ হযরত মালেক (রহ) থেকে বর্ণিত,তার নিকট পৌছেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের মধ্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষন পর্যন্ত তা ধরে রাখবে পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহ তাআলার কিতাব ও তার নবীর সুন্নাত।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুআত্তা মালেক হাদীস নং ৬৮৫।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি যে, তিনি “নবীর হাদীস” রেখে যাচ্ছেন। বরং বলেছেন “নবীর সুন্নাত”।
4)عن أبي سعيد الخدري قال Y قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أكل طيبا وعمل في سنة وأمن الناس بوائقه دخل الجنة .
অর্থাৎঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল খাবে এবং সুন্নাতের উপর আমল করবে আর মানুষ যার ক্ষতি থেকে নিরাপদে থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
[গ্রন্থ সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ হাদীস নং ২৫২০।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি, যে, হাদীসের উপর আমল করবে; বরং তিনি বলেছেন সুন্নাতের উপর আমল করবে।

5)قَالَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَحْدَثَ قَوْمٌ بِدْعَةً إِلَّا رُفِعَ مِثْلُهَا مِنْ السُّنَّةِ فَتَمَسُّكٌ بِسُنَّةٍ خَيْرٌ مِنْ إِحْدَاثِ بِدْعَةٍ.
অর্থাৎঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখনই কোন জাতি কোন বিদআত চালু করে তখন তাদের থেকে সমপরিমান সুন্নাত উঠিয়ে নেওয়া হয়। তাই একটি সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা একটি বেদআত চালু করা থেকে (অনেক) উত্তম।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ১৬৯৭০।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি, যে, সমপরিমাণ হাদীস উঠিয়ে নেয়া হয়; বরং তিনি বলেছেন সুন্নাত উঠিয়ে নেয়া হয়।আবার তিনি এটিও বলেন নি, যে,  একটি হাদীসকে আঁকড়ে ধরা একটি বেদআত চালু করা থেকে (অনেক) উত্তম।
6)قَالَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من أحيا سنة من سنتي قد أميتت بعدي فإن له من الأجر مثل من عمل بها من غير أن ينقص من أجورهم شيئا.
অর্থাৎঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতসমূহের মধ্য থেকে এমন সুন্নাতকে জিন্দ করবে যা আমার পরবর্তীতে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে উক্ত সুন্নাতের উপর যাহারা আমল করিবে তাদের সকলের সমপরিমান ছাওয়াব পাবে। অথচ আমল কারীদের ছাওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।
[গ্রন্থ সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ হাদীস নং ২৬৭৭।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি, যে, যে ব্যক্তি আমার হাদীস সমূহের মধ্য থেকে এমন হাদীসকে জিন্দ করবে যা আমার পরবর্তীতে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল….।
7)عَنْ أَنَسٍ أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- سَأَلُوا أَزْوَاجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- عَنْ عَمَلِهِ فِى السِّرِّ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ آكُلُ اللَّحْمَ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ أَنَامُ عَلَى فِرَاشٍ. فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ. فَقَالَ « مَا بَالُ أَقْوَامٍ قَالُوا كَذَا وَكَذَا لَكِنِّى أُصَلِّى وَأَنَامُ وَأَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى.
অর্থাৎঃ হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর একদল সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর বিবিদেরকে তাঁর গোপনে আমলের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলেন। অতপর কেউ বললেন, আমি মহিলাদেরকে বিবাহ্ করব না। কেউ বললেন আমি আর গোশত খাব না। কেউ বললেন আমি আর বিছানায় ঘুমাব না। অতপর তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করলেন এবং ছানা পাঠ করলেন। আর বললেন মানুষের কি হল তারা এমন এমন বলে। অথচ আমি নামাজ পড়ি এবং ঘুমাই। রোযা রাখি এবং ছেড়ে দেই। আর আমি মহিলাদেরকে বিবাহ্ করি। যে আমার সুন্নাত থেকে বিমূখ হবে সে আমার দলভূক্ত নয়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৩৪৬৯।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি, যে, যে আমার হাদীস থেকে বিমূখ হবে…..।
8)عن عبد الله بن عمرو قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إن لكل عمل شرة وإن لكل شرة فترة فمن كانت شرته إلى سنتي فقد أفلح ومن كانت شرته إلى غيرذلك فقد أهلك.
অর্থাৎঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি আমলের একটি উত্থান আছে। আর প্রতিটি উত্থানের বিরতি আছে। সুতরাং যার উত্থান আমার সুন্নাতের দিকে হবে সে সফলকাম। আর যার উত্থান আমার সুন্নাত ব্যতীত অন্য দিকে হবে সে ধবংস হবে।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ ইবনে হিব্বান,হাদীস নং ১১।]
■ লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি, যে,  যার উত্থান (আমল) আমার হাদীস ব্যতীত অন্য দিকে হবে সে ধবংস হবে।

উপরে নমুনা সরূপ কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল মাত্র। প্রতিটি হাদীসে সুন্নাতের অনুসরনের কথা বলা হয়েছে। কোথাও হাদীসের অনুসরনের কথা বলা হয়নি। [এজন্যই] হকের উপর প্রতিষ্ঠিত জামাআতকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামআহ বলে। আহলুল হাদীস নয়।
আহলুল হাদীস পরিচয়দান একটি গলদ ব্যবহার।
মোটকথা আমরা সর্বপ্রকার হাদীসের উপর আমলের জন্য আদিষ্ট নই।
[বরং] হাদীসের মধ্য থেকে যা আমাদের জন্য অনুসরনীয় (আর সেটাকেই সুন্নাত বলে) আমরা তার উপরে আমল করার জন্য আদিষ্ট।
আর হাদীস থেকে সুন্নাত বের করা তার দায়িত্ব নয় যে কুরআন পর্যন্ত ছহীহ করে পড়তে পারে না, হাদীসতো অনেক দুরের কথা। বরং তা এমন বিজ্ঞ আলেমের দায়িত্ব যিনি কুরআন ও হাদীসে গভীর পান্ডিত্য রাখেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ্ (বাস্তবসম্মত) বুঝ দান করুন। আমিন।
 
 
 
 
 


রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১

হাদিস গ্রন্থ সহীহ আত তিরমিযী, ১ম খেকে ৬ষ্ঠ খণ্ডের pdf বই ডাউনলোড করুন।

রবিবার, জুলাই ০৪, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 


ইমাম হাফিয মুহাম্মাদ বিন ঈসা সাওরাহ আত তিরমিযী রহঃ কর্তৃক সংগ্রহীত হাদিস গ্রন্থ সহীহ আত তিরমিযী, ১ম খেকে ৬ষ্ঠ খণ্ডের pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।


  • হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ


হাদিস গ্রন্থ সহীহ মুসলিম -১ম খেকে ৮ম খণ্ডের pdf বই ডাউনলোড

রবিবার, জুলাই ০৪, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


 ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ রহঃ কর্তৃক সংগ্রহীত হাদিস গ্রন্থ সহীহ মুসলিম, ১ম খেকে ৮ম খণ্ডের pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।



  • ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ




সহি হাদিস গ্রন্থ বুখারী শরীফ-Bangla ১ম থেকে ১০ম খন্ডের pdf বই ডাউনলোড

রবিবার, জুলাই ০৪, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 



ইমাম মুহাম্মদ ইসমাইল বুখারী রহ. কর্তৃক সংগৃহীত সহি হাদিস গ্রন্থ বুখারী শরীফ, ১ম থেকে ১০ম খন্ডের pdf বই ডাউনলোড করতে, নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
  • ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত

  • তাওহীদ পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ




ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png