LIVE
Loading latest headlines...

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২

মিথ্যা বলা মহাপাপ ? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো!

রবিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২২ 1
বার দেখা হয়েছে
মিথ্যা বলা মহাপাপ ?


প্রশ্নঃ

মাননীয় মুফতী সাহেব

আমরা জানি যে মিথ্যা বলা মহাপাপ৷ কিন্তু জনৈক আলেম বলেছেনঃ তিন স্থানে মিথ্যা বলা পাপ নয় বরং উত্তম৷ তার কথা সঠিক কিনা? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো!


📖 উত্তরঃ

بسم الله الرحمن الرحيم


হা, উক্ত আলেমের কথা সঠিক৷ যেমন হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لاَ يَحِلُّ الْكَذِبُ إِلاَّ فِي ثَلاَثٍ يُحَدِّثُ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ لِيُرْضِيَهَا وَالْكَذِبُ فِي الْحَرْبِ وَالْكَذِبُ لِيُصْلِحَ بَيْنَ النَّاسِ ‏”‏


আসমা বিনতু ইয়াযীদ রাযিঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়।

(এক) স্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলা৷

(দুই) যুদ্ধের সময় মিথ্যা বলা৷

(তিন) লোকদের পরস্পরের মাঝে সংশোধন করার জন্য মিথ্যা বলা।

সনদ সহীহ৷ (সুনানে তিরমিযী ১৯৩৯ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ৪৯২১ হাদীস৷)


এক) স্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বলার অর্থ হলো- তাকে গুরুত্ব দেয়া, আপন করে নেয়া, অন্তরে যতটুকু ভালোবাসা আছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা, এর মাধ্যমে স্থায়ী সম্পর্কের প্রচেষ্টা করা এবং তার চরিত্র সংশোধনের চেষ্টা করা।


দুই) যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অর্থ হলো- নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করা, সঙ্গীদের মনোবল বাড়াতে উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলা এবং এর মাধ্যমে শত্রুকে ধাঁধায় ফেলে দেয়া। এ কারণেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যুদ্ধ ধোঁকার নাম।’


তিন) পরস্পরের মধ্যে সংশোধনের জন্য মিথ্যা বলার অর্থ হলো- দু ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসার জন্য মিথ্যা বলার বিষয়টি একজনের পক্ষ থেকে আরেকজনের কাছে কল্যাণ ও সৌন্দর্য হিসেবেই পৌঁছে৷ তাই মধ্যস্থতাকারী শুধু মীমাংসার জন্য প্রয়োজনে মিথ্যা বলতে পারে৷ (শারহুস সুন্নাহ ১৩/১১৯ পৃষ্ঠা৷)


উক্ত তিন জায়গা ব্যতীত অন্য কোন জায়গায় মিথ্যা বলা জায়েয নাই বরং হারাম৷ (ফতোয়ায়ে শামী ৬/৪২৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ২/৬৩১ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ৪/৩৪৬ পৃষ্ঠা৷)


উল্লেখ্য, উপরোক্ত তিন জায়গাতেও এমন কোন মিথ্যা বলা জায়েয হবে না, যা ফেতনার আশংকা সৃষ্টি করে। যেমন, কোন কাজ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করার পর কাজটি করা সত্ত্বেও ‘করে নি’ বলে দেয়া, যা স্পষ্টই মিথ্যা ও ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত, এমন করা যাবে না। শুধুমাত্র আমরা যে ক্যাটাগরিগুলো বর্ণনা করলাম, সেভাবেই যদি কেউ অসত্য কথা বলে তাহলে জায়েয হবে ইনশাআল্লাহ।


والله اعلم بالصواب


উত্তর লিখনেঃ

মুফতী তাহমীদ শামী

আত তাহমীদ ইসলামীক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ৷

তারিখ- ১৮/৯/২০২২ ঈসায়ী৷



বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২

সালাত ঈমানের শামিল

বুধবার, অক্টোবর ১৯, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)
হাদিস নম্বরঃ ৪০

 
২/৩০ সালাত ঈমানের শামিল। 

وَقَوْلُ اللهِ تَعَالَى )وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ( يَعْنِي صَلاَتَكُمْ عِنْدَ الْبَيْتِ

আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ এরূপ নন যে তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করবেন- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩)। অর্থাৎ বায়তুল্লাহর নিকট (বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে) আদায়কৃত তোমাদের সালাতকে তিনি নষ্ট করবেন না।

৪০. বারাআ (ইবনু ‘আযিব) (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা্য় হিজরত করে সর্বপ্রথম আনসারদের মধ্যে তাঁর নানাদের গোত্র [আবূ ইসহাক (রহ.) বলেন] বা মামাদের গোত্রে এসে ওঠেন। তিনি ষোল-সতের মাস বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন। কিন্তু তাঁর পছন্দ ছিল যে, তাঁর কিবলা বাইতুল্লাহর দিকে হোক। আর তিনি (বাইতুল্লাহর দিকে) প্রথম যে সালাত আদায় করেন, তা ছিল আসরের সালাত এবং তাঁর সঙ্গে একদল লোক সে সালাত আদায় করেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা সালাত আদায় করেছিলেন তাঁদের একজন লোক বের হয়ে এক মসজিদে মুসল্লীদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা তখন রুকূ‘ অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ ‘‘আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে বলছি যে, এইমাত্র আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মক্কার দিকে ফিরে সালাত আদায় করে এসেছি। তখন তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন সে অবস্থায়ই বাইতুল্লাহর দিকে ঘুরে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল মাকদিস-এর দিকে সালাত আদায় করতেন তখন ইয়াহুদীদের ও আহলি-কিতাবদের নিকট এটা খুব ভাল লাগত; কিন্তু তিনি যখন বাযতুল্লাহর দিকে তাঁর মুখ ফিরালেন তখন তারা এটা খুব অপছন্দ করল। যুহায়র (রহ.) বলেন, আবূ ইসহাক (রহ.) বারাআ (রাযি.) থেকে আমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে এ কথাও রয়েছে যে, কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে বেশ কিছু লোক মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং শাহাদাত বরণ করেছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে আমরা কী বলব, সেটা আমাদের জানা ছিল না। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ (وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ)  ‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সালাতকে বিনষ্ট করবেন না’’। (৩৯৯, ৪৪৭৬, ৪৪৯২, ৭২৫২; মুসলিম ৫/২ হাঃ ৫২৫, আহমাদ ১৮৫৬৪, ১৮৭৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

দৃষ্টি সংযত রাখার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা

শুক্রবার, অক্টোবর ১৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

দৃষ্টি সংযত রাখার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা

ভাষান্তর: হামিদা মুবাশ্বেরা | সম্পাদনা: আব্‌দ আল-আহাদ

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন: “(হে নবী) আপনি  মু’মিন পুরুষদের বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের  লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ্‌  সম্যক অবহিত।” [সূরা আন-নূর; ২৪:৩০]


অতএব, আল্লাহ্‌ পবিত্রতা ও আত্মিক উন্নয়নকে দৃষ্টি সংযত রাখার এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করার প্রতিদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ নিষিদ্ধ বস্তু থেকে নিজের দৃষ্টি সংযত করার ফলে তিনটি উপকার হয় যেগুলো ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত মূল্যবান।


প্রথমত: ঈমানের মধুরতা আস্বাদন করা

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ভয়ে দৃষ্টি সংযত রাখে, তার কাছে ঈমানের সুমিষ্ট মাধুর্য এবং তা থেকে পাওয়া আনন্দ, নিষিদ্ধ বস্তু দেখে পাওয়া আনন্দের চেয়ে অনেক বেশি মনোহর। বস্তুত, “কেউ যদি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কোনোকিছু পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্‌ আরও উত্তম কিছুর দ্বারা সেটির প্রতিস্থাপন করেন।”


প্রবৃত্তি হলো নিষিদ্ধকাজে প্রলুব্ধকারী এবং সুন্দর অবয়ব দেখতে ভালোবাসে। আর চোখ হলো হৃদয়ের দিশারী। হৃদয় তার দিশারীকে কোথায় কি আছে, তা খুঁজে দেখার দায়িত্ব দিয়ে বলে, ‘যাও! দেখো, কোথায় কী আছে।’ চোখ যখন সুন্দর কোনো দৃশ্যের খবর দেয়, হৃদয়ে তখন তা পাওয়ার জন্য ভালোবাসার শিহরণ এবং আকাঙ্ক্ষা জাগে। হৃদয় এবং চোখের এই অভ্যন্তরীণ দোলাচল উভয়কেই অনবরত ক্লান্ত করে থাকে। যেমনটি বলা হয়েছে :


চোখকে যেদিন দিশারী বানিয়ে করালে সন্ধান

তোমার চোখের লক্ষ্যবস্তু তোমায় করল হয়রান,

এমন কিছু দেখেলে যাতে ছিল না নিয়ন্ত্রণ,

আংশিকও নয়, নয় পুরোপুরিও;

বরং তোমার জন্য উত্তম ছিল ধৈর্যধারণ।


কাজেই দৃষ্টিকে যখন কোনোকিছু দেখা এবং নিরীক্ষণ করা থেকে সংযত রাখা হয়, হৃদয়ও তখন নিরর্থক অনুসন্ধান আর কামনার মতো ক্লান্তিকর কাজ থেকে বিশ্রাম পায়।


যে ব্যক্তি নিজের দৃষ্টিকে অবাধে বিচরণের সুযোগ দেবেন, তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে অবিরাম ক্ষতি এবং নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার মাঝে আবিষ্কার করবেন। কারণ দৃষ্টিপাত থেকেই ভালোবাসার (মুহাব্বাহ্‌) জন্ম হয়, যার সূচনা হয় চোখ যা দেখেছে তার প্রতি মোহাবিষ্ট ও নির্ভরশীল হয়ে পড়ার মাধ্যমে। এই ভালোবাসা ক্রমেই আকুল আকাঙ্ক্ষায় (সাবাবাহ্‌) পরিণত হয়, যার দ্বারা হৃদয় তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অসংশোধনীয় মাত্রায় মোহাবিষ্ট এবং নির্ভরশীল হয়ে যায়। এর মাত্রা বেড়ে ‘আসক্তি’র (গারামাহ্‌) রূপ নেয়। এই আসক্তি এমন এক শক্তি যা আসক্ত ব্যক্তির পেছনে তেমনিভাবে লেগে থাকে, যেভাবে কোনো পাওয়াদার ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণীর পেছনে লেগে থাকে। এই আসক্তি আরও বাড়তে থাকে এবং ‘প্রেমাসক্তি’র (ইশ্‌ক) রূপ নেয় যা সকল প্রকার সীমা ছাড়িয়ে যায়। সবশেষে এর মাত্রা বেড়ে ‘প্রেমোন্মাদনা’র (শাগাফা) জন্ম হয় যা হৃদয়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশকেও বেষ্টন করে ফেলে। এই প্রেমোন্মাদনা ক্রমেই ‘আনুগত্যের ভালোবাসা’য় (তাতাইয়্যুমা) রূপ নেয়। তাতাইয়্যুমা’র অর্থই হলো ইবাদত। যখন বলা হয়, ‘তাইয়্যামা আল্লাহ্‌’, তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, ‘সে আল্লাহ্‌র ইবাদত করেছে।’


এভাবেই হৃদয় এমন কিছুর উপাসনা করা শুরু করে, যার উপাসনা করা সমীচীন নয়। আর এসব কিছুর পেছনে একমাত্র কারণ একটি নিষিদ্ধ দৃষ্টিপাত। যে হৃদয় পূর্বে ছিল মনিব, তা এখন শিকলাবদ্ধ; যা ছিল মুক্ত ও স্বাধীন, তা এখন কারারুদ্ধ। এই হৃদয় চোখের দ্বারা নির্যাতিত এবং চোখের আছে অভিযোগ করলে, চোখ এখন বলে : ‘আমি তোমার দিশারী এবং আজ্ঞাবাহক। প্রথমে তুমিই আমাকে পাঠিয়েছিলে।’ এখানে যাকিছু বলা হলো, তার সবই এমন সব হৃদয়ের জন্যই সত্য, যেসব হৃদয় আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসা ও একনিষ্ঠতাকে পরিত্যাগ করেছে। কারণ ভালোবাসার জন্য হৃদয়ের এমনকিছু চায়, যার প্রতি হৃদয় নিজেকে নিবেদিত রাখতে পারে। সে কারণেই, হৃদয় যখন শুধুমাত্র আল্লাহ্‌কে ভালোবাসে না এবং শুধু তাঁকেই উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে না, তখন নিশ্চিতভাবে সে অন্যকিছুর উপাসনায় লিপ্ত থাকে। আল্লাহ্‌ ইউসুফ (আ) সম্পর্কে বলেন: “এভাবেই যাতে আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দুর করে দেই। নিশ্চয়ই সে আমার নিষ্ঠাবান বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা ইউসূফ; ১২:২৪]


আযীযের স্ত্রী একজন বিবাহতা নারী হওয়া সত্ত্বেও তার হৃদয়ে প্রেমাসক্তি প্রবেশ করেছিল। কারণ সে ছিল মুশরিকা। অন্যদিকে, ইউসুফ (আ) যুবক, অবিবাহিত এবং চাকর হওয়া সত্ত্বেও সেই অপকর্ম থেকে তাঁকে রক্ষা করা হয়েছিল। কারণ তিনি ছিলেন আল্লাহ্‌র একনিষ্ঠ গোলাম।


দ্বিতীয়ত : আলোকিত হৃদয়, স্বচ্ছ উপলব্ধিবোধ এবং তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি

ইবনু সুজা‘আ আল-কিরমানি বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিজের বাহ্যিক অবয়বকে সুন্নাহ্‌র আদলে এবং অভ্যন্তরীণ সত্ত্বাকে সর্বদা আল্লাহ্‌র চিন্তা-গবেষণা এবং তাঁর সচেতনতার আলোকে গড়ে তোলে, নিজের আত্মাকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা থেকে এবং নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখে, সর্বদা হালাল রুজি ভক্ষণ করে, সেইব্যক্তির উপলব্ধি এবং অন্তর্দৃষ্টি কখনোই ভুল হবে না।”


আল্লাহ্‌ লূতের (আ) সম্প্রদায়কে কীভাবে শাস্তি দিয়েছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে বলেছেন: “নিশ্চয়ই এতে ‘মুতাওয়াস্‌সিমীন’দের (স্বচ্ছ উপলব্ধিবোধ এবং তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন) জন্য রয়েছে নিদর্শনমালা।” [সূরা আল হিজ্‌র; ১৫:৭৫]


মুতাওয়াস্‌সিমীন হলেন তারাই যারা স্বচ্ছ উপলব্ধিবোধ এবং তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন। তারা হারাম বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না এবং অশ্লীল কর্ম সম্পাদন করা থেকে বিরত থাকেন। দৃষ্টি সংযত করা সম্পর্কিত আয়াতের পরবর্তী আয়াতেই আল্লাহ্‌ বলেছেন: “আল্লাহ্‌ আসমানসমুহ ও যমীনের নূর।…” [সূরা আন-নূর; ২৪:৩৫]


এর কারণ হলো, কর্ম যেমন, কর্মের প্রতিদানও তেমন হয়। অতএব, যে কেউ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখবে, আল্লাহ্‌, আযযা ওয়া জাল্লা, সেইব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ বস্তুকে অনুরূপ অথচ তার চেয়ে অধিক উত্তম বস্তু দ্বারা প্রতিস্থাপন করবেন। তাই বান্দা যেহেতু তার চোখের আলোকে নিষিদ্ধ বস্তুর উপর পড়তে দেয়নি, আল্লাহ্‌ সেই বান্দার দৃষ্টি এবং অন্তরের আলোকে অনুগ্রহ দান করেন। ফলে ব্যক্তি সেইসব বিষয় বুঝতে এবং উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন, দৃষ্টি সংযত না করলে যেগুলো বুঝা এবং উপলব্ধি করা তার জন্য সম্ভব হতো না।


ব্যক্তি নিজের মধ্যে এই বিষয়টি আক্ষরিক অর্থেই উপলব্ধি করতে পারেন। কারণ হৃদয় একটা আয়নার মতো এবং পাশবিক প্রবৃত্তিগুলো সেই আয়নার উপর মরিচার মতো। এই আয়না যখন সচ্ছ এবং পরিষ্কার থাকে, তখন তাতে বাস্তবতার (হাকাইক) আক্ষরিক প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু যদি তাতে মরিচা পড়ে থাকে, তাহলে তাতে সুষম প্রতিফলন তৈরি হয় না। ফলে হৃদয়ে অনুমান এবং সন্দেহ নির্ভর জ্ঞান ও অভিব্যক্তির উন্মেষ ঘটবে।


তৃতীয়ত : হৃদয় হবে শক্তিশালী, দৃঢ় এবং সাহসী

দৃষ্টির আলোর জন্য আল্লাহ্‌ যেভাবে চোখকে সুস্পষ্ট প্রমাণের সহায়ক শক্তি দিয়েছেন, হৃদয়ের দৃঢ়তার জন্যও তিনি হৃদয়কে সহায়ক শক্তি দান করবেন। এভাবে হৃদয়ে দুধরণের উপাদনের সমন্বয় ঘটবে। ফলে হৃদয় থেকে শয়তান বিতাড়িত হবে। হাদীসে উল্লেখ আছে, “কেউ যদি নিজের পাশবিক প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে, ভয়ে শয়তান তার ছায়া থেকেও পালিয়ে বেড়ায়।”


একারণেই যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে নিজের মাঝে গ্লানিময় আত্মাকে খুঁজে পায় — যে আত্মা দুর্বল, শক্তিহীন, ঘৃণার যোগ্য। বস্তুত, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌কে মান্য করেন, আল্লাহ্‌ তার জন্য উচ্চমর্যাদা নির্ধারণ করেন। আর তাঁকে অমান্যকারীর জন্য আল্লাহ্‌ লাঞ্ছনা নির্ধারণ করেন: “আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত  হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি মু’মিন হয়ে থাকো।” [সূরা আল–ইমরান; ৩:১৩৯]


“কেউ যদি সম্মান চায় (তবে তা যেন আল্লাহ্‌র কাছেই চায়), কেননা সকল সম্মান আল্লাহ্‌রই।” [সূরা ফাতির; ৩৫:১০]


অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র (আয্‌যা ওয়া জাল্লা) চেয়ে অবাধ্যতা এবং পাপকর্মকেই বেশি প্রাধান্য দেবে, আল্লাহ্‌ সেই বিরুদ্ধাচরণকারীকে লাঞ্ছিত করবেন। সালাফদের অনেকেই বলেছেন, “সম্মানের খোঁজে মানুষ রাজাদের দ্বারে যায়। অথচ আল্লাহ্‌র আনুগত্য ছাড়া কোনো সম্মান নেই।” কারণ যারা আল্লাহ্‌র আনুগত্য করে, তারা আল্লাহ্‌কে নিজেদের বন্ধু এবং রক্ষাকারী হিসেবে গ্রহণ করে। আর যারা আল্লাহ্‌কে তাদের রব এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ্‌ কখনোই তাদেরকে অসম্মানিত করেন না। একটি দো‘আ কুনূতে এ কথাগুলোই বলা হয়েছে: “যাকে আপনি বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন, সে অপমানিত হয় না আর যাকে আপনি শত্রু হিসেবে গ্রহণ করেন, সে সম্মানিত হয় না।”


(সূত্র : শায়েখ ইবনুল কায়্যিম, আল-মুন্‌তাকা মিন ইক্‌হাসাতুল লুফ্‌হান ফী মাসায়্যিদ আশ-শায়তান, পৃষ্ঠা ১০২-১০৫। পরিমার্জন : আলি হাসান।)



মুহাম্মাদ (সাঃ)-ই একমাত্র শাফা‘আঁতকারী

শুক্রবার, অক্টোবর ১৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

মুহাম্মাদ (সাঃ)-ই একমাত্র শাফা‘আঁতকারী

হযরত আনাস (রা:) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনগণকে (হাশরের ময়দানে স্ব স্ব অপরাধের কারণে) বন্দী রাখা হবে। তাতে তারা অত্যন্ত চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়বে এবং বলবে, ‘যদি আমরা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট কারো মাধ্যমে সুপারিশ কামনা করি, যিনি আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে স্বস্তি দিবেন ।’সেই লক্ষ্যে তারা আদম (আঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, ‘আপনি মানবজাতির পিতা আদম, আপনাকে আল্লাহ্‌ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, জান্নাতে বসবাস করিয়েছেন, ফেরেশতা মন্ডলীকে দিয়ে আপনাকে সিজদা করিয়েছিলেন এবং তিনিই যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে এই কষ্টদায়ক স্থান হ’তে মুক্ত করে প্রশান্তি দান করেন ।’তখন  আদম  (আঃ)  বলবেন,  ‘আমি  তোমাদের  এই  কাজের মোটেই উপযুক্ত নই’।


নবী করীম (সাঃ) বলেন, তখন তিনি গাছ হ’তে ফল খাওয়ার অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা হ’তে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছিল। [আদম (আঃ) বলবেন] ‘বরং  তোমরা  মানবজাতির  জন্য  আল্লাহ্‌  তা‘আলার  প্রেরিত  সর্বপ্রথম নবী নূহ (আঃ)-এর নিকট যাও’। তারা নূহ (আঃ)-এর কাছে গেলে  তিনি  তাদেরকে  বলবেন,  ‘আমি  তোমাদের  এ  কাজের  জন্য একেবারেই যোগ্য নই ।’ সাথে সাথে তিনি তাঁর ঐ অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা অজ্ঞতাবশত: নিজের (অবাধ্য) ছেলেকে পানিতে  না ডুবানোর জন্য আল্লাহ্‌ কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। (তিনি বলবেন) ‘বরং তোমরা আল্লাহ্‌ খলীল হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকটে যাও’।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, এবার তারা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকটে যাবে। তখন তিনি বলবেন , ‘আমি তোমাদের এ কাজের জন্য কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না ।’ সাথে সাথে তাঁর তিনটি মিথ্যা উক্তির কথা স্মরণ করবেন এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা মূসা (আঃ)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ্‌র এমন এক  বান্দা,  যাকে  আল্লাহ্‌  তাওরাত  দান  করেছেন,  তার  সাথে বাক্যালাপ করেছেন এবং গোপন কথাবার্তার মাধ্যমে তাঁকে নৈকট্য দান করেছেন’।


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তখন তারা সকলে হযরত মূসা (আঃ) এর নিকটে আসলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের জন্য সুপারিশের ক্ষেত্রে অপারগ।’তখন তিনি সেই প্রাণনাশের অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা তাঁর হাতে সংঘটিত হয়েছিল এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর মনোনীত রাসূল, তাঁর কালেমা ও রূহ হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে যাও।’নবী করীম (সাঃ) বলেন, তখন তারা সবাই হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই।বরং তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছে যাও।তিনি আল্লাহ্‌ তা‘আলার এমন এক  বান্দা,  যার  আগের  ও  পরের  সমস্ত  গোনাহ  আল্লাহ্‌  ক্ষমা  করে দিয়েছেন।


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তারা আমার কাছে আসবে।আমি তখন আমার রবের কাছে তাঁর দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা  করব।অতঃপর আমাকে তাঁর নিকট যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব।আল্লাহ্‌  আমাকে যতক্ষণ চাইবেন সিজদা অবস্থায় রাখবেন’।অতঃপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।আর যা বলার বল, তোমর কথা শুনা হবে। শাফা‘আত কর, কবুল করা হবে।তুমি চাও, তোমাকে দেওয়া হবে ।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি শাফা‘আত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।তখন আমি আল্লাহ্‌র দরবার হতে উঠে আসব এবং ঐ নির্ধারিত সীমার লোকদেরকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।তারপর আমি পুনরায় ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের দরবারে হাযির হওয়ার জন্য আল্লাহ্‌ কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব।আমাকে অনুমতি  দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব এবং আল্লাহ্‌ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদা অবস্থায় থাকতে দিবেন ।’ তারপর আল্লাহ্‌ বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। আর যা বলার বল, তোমার কথা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে। তুমি প্রার্থনা কর, যা প্রার্থনা করবে তা দেওয়া হবে’।


রাসূল (সাঃ) বলেন, তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা ও গুণকীর্তন বর্ণনা  করব, যা আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আমি শাফা‘আত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। তখন আমি আমার রবের দরবার হ’তে উঠে আসব এবং ঐ নির্দিষ্ট লোকগুলিকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।অতঃপর তৃতীয়বার ফিরে আসব এবং আমার প্রতিপালক আল্লাহ্‌র দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব।আমাকে তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই সিজদায় পড়ে যাব।আল্লাহ্‌ যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে সিজদা অবস্থায় য় রাখবেন ।’ তারপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ!  মাথা উঠাও।তুমি যা বলবে তা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে।প্রার্থনা কর, তা দেওয়া হবে।’রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমন হামদ ও ছানা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন।’ নবী করীম (সাঃ) বলেন, ‘তারপর আমি শাফা‘আত করব।এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিবেন। তখন আমি সেই দরবার থেকে বের হয়ে আসব এবং তাদেরকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব’।


অবশেষে  কুরআন  যাদেরকে  আটকিয়ে  রাখবে  (অর্থাৎ  যাদের  জন্য কুরআনের ঘোষণা  অনুযায়ী চিরস্থায়ী  ঠিকানা  জাহান্নামে নির্ধারিত  হয়ে গেছে) তারা ব্যতীত আর কেউ জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে না। বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আনাস (রা:) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরআনের এই আয়াতটি ‘আশা করা যায়, আপনার  প্রতিপালক  অচিরেই  আপনাকে  ‘মাকা‍‌মে মাহমূদে’ পৌঁছিয়ে  দেবেন’ [বনী ইসরাঈল ৭৯] তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, এটাই সেই ‘মাকামে মাহমূদ’ যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের নবীকে দেওয়া হয়েছে


[ছহীহ বুখারী হা/৭৪৪০ তাওহীদ’অধ্যায়, অনুচেছদ-২৪, মিশকাত হা/৫৫৭২ ‘কিয়ামতের অবস্থা ও সৃষ্টির সূচনা’অধ্যায়, ‘হাওযে কাওছার ও শাফা‘আত’অনুচেছদ]


শিক্ষা:

(১) সকল নবী-রাসলের উপর মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব।

(২) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শাফা‘আতে পরকালে কিছু জাহান্নামীকে আল্লাহ্‌ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর এমন একটি দো‘আ রয়েছে, যা (আল্লাহ্‌র্ নিকট) গৃহীত হয়, আর নবী সে দো‘আ করে থাকেন।আমার ইচ্ছা, আমি আমার সে দো‘আর অধিকার আখেরাতে আমার উম্মতের শাফা‘আতের জন্য মুলতবি রাখি’  (বুখারী হা/৬৩০৪, ‘দো‘আ সমূহ’অধ্যায়, অনুচেছদ-১)।

(৩) কোন পীর-ওলী পরকালে শাফা‘আতের অধিকার রাখবেন না।



বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২

তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তিত্ব যাকে সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করা উচিত -রাসূল (সাঃ) জীবনীর থেকে শিক্ষা - দ্বিতীয় পর্ব

বুধবার, অক্টোবর ০৫, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

রাসূল (সাঃ) জীবনীর থেকে শিক্ষা  - দ্বিতীয় পর্ব

রাসূল (সাঃ) জীবনীর থেকে শিক্ষা 

যদি আপনি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে রাসূল (সাঃ) কে অনুসরণ করুন যখন তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে শামদেশ ও হিজাযে বাণিজ্য করতেন এবং বাহরাইনে পণ্যসামগ্রী অর্জন করেছিলেন।

যদি আপনি একজন গরীব হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করুন কিভাবে তিনি আবু তালেব এর সংকীর্ণ গিরিপথে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন এবং নিঃস্ব অবস্থায় নিজের আবাস ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছিলেন।

যদি আপনি একজন বাদশাহ্ হয়ে থাকেন, তাহলে রাসূলুল্লাহর সুন্নাহ্(তাঁর যাবতীয় কর্ম এবং কথা) অনুসরণ করুন কিভাবে তিনি সমগ্র আরব জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং সকলের আনুগত্য লাভ করেছিলেন এমনকি অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বেরও।

যদি আপনি একজন দুর্বল মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে(সাঃ) উদাহরণ হিসেবে নিন কিভাবে শির্ক আচ্ছন্ন মক্কায় তিনি দোষাব্যস্ত হয়েছিলেন।

যদি আপনি একজন যুদ্ধবিজয়ী হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর(সাঃ) এর জীবনীর অধ্যায় অনুসরণ করতে পারেন কিভাবে তিনি বদর, হুনাইন এবং উহুদ এর যুদ্ধে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন।

যদি আপনি পরাজিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে উহুদ এর যুদ্ধ থেকে নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে পারেন কিভাবে তিনি(সাঃ) মৃত এবং আহত সাহাবীদের মধ্যে ছিলেন।

আপনি যদি একজন শিক্ষক হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে(সাঃ) আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করুন কিভাবে তিনি মসজিদে সাহাবাদের শিক্ষাদান করতেন।

আপনি যদি একজন ছাত্র অথবা উচ্চ শিক্ষালাভে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, তাহলে রাসূল (সাঃ)কে অনুসরণ করুন কিভাবে তিনি ফেরেশতা জিবরাঈল(আঃ) এর দুই বাহুর মাঝখানে বসে ওহী বুঝতেন এবং চর্চা করতেন।

আপনি যদি একজন এতিম হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জানা উচিত রাসূল(সাঃ) এর পিতা তাঁর জন্মের পূর্বে এবং মাতা শৈশবকালে ইন্তেকাল করেন।

শিশুদের জন্য তিনি সর্বোত্তম আদর্শ কারণ শৈশবে তিনি(সাঃ) তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন এবং বাল্যজীবনের প্রথম কিছুকাল তিনি ধাত্রীমাতা হালিমা আসা’দিয়ার কাছে পালিত হন।

আপনি যদি একজন তরুণ হয়ে থাকেন তাহলে মক্কার মেষপালক তথা রাসূল(সাঃ) এর জীবনী পড়ুন।

আপনি যদি একজন বণিক হিসেবে ব্যবসার পণ্য নিয়ে যাত্রা করেন, তাহলে কাফেলার নেতাকে অনুসরণ করুন কিভাবে তিনি বসরা গিয়েছিলেন।

আপনি যদি একজন বিচারক বা মূল্যায়নকারী হয়ে থাকেন, তাহলে রাসূল(সাঃ) এর বিচারের রায়ের প্রতি লক্ষ করুন যখন তিনি কাবা ঘরের সামনে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে যথাস্থানে বসানোর ঘটনা নিয়ে একে অপরকে মারতে উদ্যত আরব গোত্রের নেতাদের দেখেন এবং অবশেষে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি যখন মদীনায় ছিলেন তখন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সুষ্ঠু বিচার ও রায় প্রদান করতেন।

যদি আপনি একজন স্বামী হয়ে থাকেন, তাহলে খাদিজা(রাঃ) এবং আয়ে’শা(রাঃ) এর সৎ ও মহৎ স্বামী রাসূল(সাঃ) এর জীবনী পড়ুন।

এবং আপনি যদি একজন পিতা হয়ে থাকেন, তাহলে কিভাবে সন্তানদের সাথে ব্যবহার করতে হয় তা রাসূল(সাঃ) এর জীবনী থেকে শিক্ষালাভ করুন যেভাবে তিনি তার সন্তান-সন্ততির সাথে আচরণ করতেন।

আপনি যেই হোন না কেন, আপনার কাছে আছে রাসূল (সাঃ) এর জীবনী এবং তাঁর পথনির্দেশনা; যা আপনাকে আপনার প্রাত্যাহিক জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে মশালের আলোর মত পথ দেখিয়ে আলোর পথে নিয়ে যাবে আখিরাতের সাফল্যের দিকে।


চলবে…



রাসূল (সাঃ) জীবনীর থেকে শিক্ষা – প্রথম পর্ব

বুধবার, অক্টোবর ০৫, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

রাসূলুল্লাহ্ (সা:) হলেন ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

রাসূলুল্লাহ্ (সা:) হলেন ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। রাসুলুল্লাহ্ (সা:) কে না জেনে, তার পথনির্দেশনা, নিষেধাবলী এবং শিক্ষণ সম্পর্কে অবগত না হয়ে ইসলামকে জানার কোন পথই নেই। আল্লাহর রাসূল শান্তিচুক্তি করেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন, বসতি স্থাপন করেছেন এবং ভ্রমণ করেছেন, ক্রয়-বিক্রয় করেছেন, আদান-প্রদান করেছেন। তিনি কখনো একাকী বসবাস করেনি নি নচেৎ একাকী ভ্রমণও করেননি।


মুসলিম উম্মাহ্ আজ দুর্বলতার শিকার কারণ তারা রাসুলুল্লাহর আদর্শ এবং পথনির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেছেনঃ “(হে মুসলমানরা), তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনীতে অনুকরণযোগ্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, (আদর্শ রয়েছে) এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে যে আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী এবং যে পরকালের (মুক্তির) আশা করে, (সর্বোপরি) সে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।” [সূরা আহযাব:২১]


এমনো কিছু মুসলিম রয়েছে যারা সেমিনার কিংবা উৎসব উদযাপনের সময় রাসুলুল্লাহর জীবনী পড়ে অথচ তার দেয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করে না। আবার এমন অনেকেই রয়েছে যারা তাঁর জীবনী পড়ে হয় সওয়াবের আশায় নতুবা বিভিন্ন ঘটনাবলীর সাথে পরিচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে যেমন- যুদ্ধ, দিনক্ষণ ইত্যাদি


এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে।

প্রথমত: রাসুলুল্লাহ(সা:) এর আদেশ এবং পথনির্দেশনাবলীর মূলনীতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অভাব এবং তাঁর ভালোবাসা অর্জনে এটার আবশ্যকতা সম্বন্ধে জানার অভাব।


দ্বিতীয়ত: সীমাবদ্ধ পড়াশোনা এবং উপসংহার টানার দুর্বলতা হেতু রাসুলুল্লাহর জীবনীতে আলোচ্য পথনির্দেশনা হৃদয়ঙ্গম করতে তাদের ব্যর্থতা।


রাসুলুল্লাহ্ (সা:) এর জীবনালেখ্য থেকে শিক্ষা এবং সুফল লাভ করার তাৎপর্য:

রাসূল (সা:) এর জীবনী শিক্ষার উদেশ্যে এটা নয় যে তা পড়ার মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করা কিংবা তৎকালীন ঐতিহাসিক জ্ঞান আহরণ করা অথবা কোনো প্রসিদ্ধ বীরপুরুষের আত্নকথা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা যাবে। এই ধরনের ভাসাভাসা গবেষণা অমুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে। তাঁর জীবনী পড়ার জন্য একজন মুসলিমের নানমুখী উদ্দেশ্য থাকা উচিত তন্মধ্যে রয়েছে:


প্র্থমত: আল্লাহর রাসূলকে অনুসরণ করা উচিত কারণ তিনি সকল মুসলিমদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শস্বরূপ। তিনি সেই আইন প্রণয়নকারী যাঁকে আমাদের আনুগত্য করা উচিত কারণ আল্লাহ্ বলেছেন: “(হে মুসলমানরা), তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনীতে অনুকরণযোগ্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, (আদর্শ রয়েছে) এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে যে আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী এবং যে পরকালের (মুক্তির) আশা করে, (সর্বোপরি) সে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।” [সূরা আহযাব:২১]


আল্লাহ বলছেন: “যদি তোমরা তার কথামতো চলো তাহলে তোমরা সঠিক পথ পাবে।” [সূরা নূর:৫৪]


আল্লাহ্ আরো বলেন: “যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে(যেন) আল্লাহরই আনুগত্য করে।’’ [সূরা নিসা:৮০]


আল্লাহ্ আরো বলেন: “(হে নবী) তুমি বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার কথা মেনে চলো, (আমাকে ভালোবাসলে), আল্লাহ্ও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহবলী মাফ করে দিবেন;আল্লাহ্ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ [সূরা আলে ইমরান:৩১]


তিনি(রাসুলুল্লাহ) ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি এবং আদর্শস্বরূপ যাকে অনুসরণ করা ব্যতীত আমাদের আল্লাহকে আনুগত্য কিংবা ইবাদাত করার কোনো উপায় নেই। ইসলামিক মনীষীরা তাঁর জীবনী থেকে দাওয়াত দেওয়ার কৌশল এবং ধাপসমূহ আহরণ করেছেন। আল্লাহর কথাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ(সা:) কি অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং কিভাবে শত বাধা-বিপত্তির মোকাবেলা করেছেন সেটাও তারা জেনেছেন।


তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষকরা শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন।

তাঁর জীবনী থেকে শাসকবৃন্দ সুশৃঙ্খল নেতৃত্বদানের পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারেন।

তাঁর জীবনী থেকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্য এবং নিয়মতান্ত্রিক নীতিমালা আয়ত্ত করতে পারেন।

যারা দু:খ কষ্টে জর্জরিত, তারা ধৈর্য্য এবং সহিষ্ণুতার সর্বোচ্চ মাত্রা শিক্ষালাভ করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর উপর তাদের বিশ্বাস ও আস্থা আরো দৃঢ়তা লাভ করে যাতে করে তাদের সংকল্প ইস্পাতকঠিন হয়ে ওঠে এটা জেনে যে পরিশেষে ফলাফল তাদের অনুকূলেই যাবে।

তাঁর জীবনী থেকে ইসলামিক চিন্তাবিদরা আরো ভালোভাবে আল্লাহর কালাম এবং বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের সম্পর্ক বোঝার দক্ষতা লাভ করতে পারেন তন্মধ্যে রয়েছে: বাতিলকৃত বা স্থগিতকরণ সম্পর্কীয় আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার কারণ এবং আরো অনেক গভীরতর জ্ঞান।

সমগ্র জাতি তাঁর জীবনী থেকে নৈতিকতা, সামাজিক রীতিনীতি, আদবকায়দা এবং প্রশংসনীয় উৎকর্ষতা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।

ইবনে কাছীর বলেছেন: “ বিশেষ যত্ন এবং মনযোগের সহিত রাসুলু্ল্লাহ্ (সা:) এর জীবনী পড়া উচিত কারণ ওমর আল-ওয়াকেদী থেকে বর্ণিত আব্দুল্লাহ্ ইবন ওমার ইবনে আলী বলেছেন তাঁর পিতা আলী ইবন আল-হুসাইনকে বলতে শুনেছেন: “আমরা রাসুলুল্লাহর বিজয় সম্পর্কে জানতাম কারণ আমরা পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ জানি।”


আল-ওয়াকেদী বলেছেন: “আমি মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে তাঁর চাচা আল-যুহরি বলছেন বিজয়ের ঘটনাবলীর সাথে দুনিয়ার জীবন এবং আখিরাতের নিবিড় সম্পর্ক লুকিয়ে আছে।’’


ইসমাঈল ইবন মুহাম্মদ ইবন সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস বলেছেন: “আমার পিতা আমাদরকে রাসুলুল্লাহর বিজয়সমূহের কাহিনী শিক্ষা দিতেন এবং পুনরাবৃত্তি করে আমাদের বলতেন এগুলো তোমাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবময় কর্ম; সুতরাং এগুলোকে বৃথা হতে দিয়ো না।’’


ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনেক রাজা-বাদশাহ্, নেতা, কবি এবং দার্শনিকদের জীবনী রয়েছে কিন্তু তাদের কোনোটাই রাসুল (সা:) এর জীবনীর মত অনুকরণীয় আদর্শরূপে অনুসরণ করা হয়নি। কালের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে তাদের কৃতিত্ব শুধু রয়ে গেছে কয়েকটি নাম।


ইতিহাসের খাতায় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবনী নিছক উপহাস হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নমরূদ যে ইব্রাহিম (আ:) কে বলেছিল: “আমি জীবন এবং মৃত্যু দান করি।’’ কুরআনে বর্ণিত ফেরাউন বলত “আমিই হচ্ছি তোমাদের সবচেয়ে বড় রব।” [সূরা নাযিয়াত:২৪] এবং তার পরিণতি কি হয়েছিল? সে আরো বলত: “হে আমার পারিষদরা, আমি তো জানি না আমি ছাড়া তোমাদের আরও কোনো মাবূদ আছে।” [সূরা কাছাছ:৩৮]


তাদের সময়কার বাঘা ব্যক্তিত্ব আজ সকলের পরিহাসের পাত্র: তরুণ-বৃদ্ধ, জ্ঞানী-মূর্খ সবার কাছে। যদিও তারা তাদের সময়কার জনগণকে ধোঁকা দিতে সফল হয়েছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের ধোঁকাবাজি আজ পরিষ্কার এবং তারা উপহাসের পাত্ররূপে পরিগণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা:) এর জীবনী মানুষদের শিরক আর ইবাদাতের দূষণীয়তা থেকে বের করে আল্লাহর একত্ববাদ এবং বিশ্বাসের আলোতে আসার পথ বাতলে দিয়েছে। আল্লাহ্ বলছেন: “হে নবী আমি তোমাকে (হেদায়াতের) সাক্ষী (বানিয়ে) পাঠিয়েছি, তোমাকে বানিয়েছি (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নামের) সতর্ককারী, আল্লাহ্ তাআলার অনুমতিক্রমে তুমি হচ্ছো আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও (হেদায়াতের) এক সুস্পষ্ট প্রদীপ।” [সূরা আহযাব:৪৫-৪৬]


দ্বিতীয়ত: আমরা রাসুলুল্লাহ (সা:) এর জীবনী পড়ি যাতে করে তাঁর সততা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হয়। তাঁর মো’জেযাসমূহ এবং নবুওয়্যাতের নিদর্শনাবলী আমাদের ঈমান এবং তাঁর সততার উপর আস্থা স্থাপনে নিশ্চিতভাবে সহায়তা করে। তাঁর জীবনী এবং মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি কেবলমাত্র তাঁর চূড়ান্ত উৎকর্ষ, মহত্ব এবং সততার প্রমাণ বহন করে।


তৃতীয়ত: আমরা তাঁর জীবনী পড়ি যাতে করে আমাদের হৃদয়ের গভীরে তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর হয় কেননা তাঁর জীবনী মহৎ আচরণ, সহৃদয় ব্যবহার, মানবজাতির কল্যাণ এবং সঠিক পথ প্রদর্শনে তাঁর যত্নবান উদ্যোগ, মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা,দু:খ-কষ্ট থেকে সুখ-শান্তির দিকে টেনে আনা যাতে করে কোনো দু:খ-কষ্টই যেন তাঁর জাতির উপর পতিত না হয় সে জন্য তাঁর শারীরিক এবং আর্থিক ত্যাগ-তিতিক্ষা ইত্যাদির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বহন করে।



রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হযরত সাদ নবীর একজন সাহাবীর ঘটনা শুনলে চোখের পানি এসে যাবে

রবিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ 2
বার দেখা হয়েছে



হযরত সাদ নবীর একজন সাহাবীর ঘটনা শুনলে চোখের পানি এসে যাবে----

সাহাবী দের ঘটনা শুনলে সত্যি চোখে পানি এসে যায়….।

হযরত সাদ সালামি আল্লাহর নবীর একজন সাহাবী ছিলেন । তিনি অত্যন্ত গরীব সাহাবী ছিলেন।

গায়ের রং ছিল খুবই কালো এবং মুখের মধ্যে ছিল বসন্তের দাগ। একদিন সাদ (রা: ) রাসূলে পাকের দরবারে বসে কাঁদতে ছিলেন।


হুজুর ( সা: ) তাকে কান্না করার কারন জিজ্ঞেস করলেন?

জবাবে সাদ (রা: ) বলতে শুরু করলেন,

ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি আপনার হাতে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছি ৮ মাস হল। এই ৮ মাস আমি মদিনার অলিতে গলিতে কত জায়গায় ঘুরলাম বিয়ের জন্য কিন্ত আমি দেখতে অসুন্দর বলে কেউ আমাকে মেয়ে দেয়না।


আমি আপনার সকল সুন্নাত পালন করতে পারলেও আপনার একটি সুন্নাত বিয়ে যা আমি পালন করতে পারিনি । তাই আমি ভয়ে কান্না করছি যদি এই সুন্নাত না মানার জন্য আল্লাহ্ আমাকে জান্নাত হতে বঞ্চিত করেন।


রাসুল (স: ) সাদকে বললেন এই মদিনার সবচেয়ে ধনী লোক আমর ইবনে ওহাবের মেয়ে মদিনার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের সাথে আমি রাসূল তোমার বিয়ে দিয়ে দিলাম।

এখন তুমি আমর ইবনে ওহাবের বাড়িতে যাও এবং তাকে গিয়ে বল আমি তার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি ।

সাদ (রা: ) আমর ইবনে ওহাবের বাড়িতে গেলেন এবং আমর ইবনে ওহাবকে সব কিছু খুলে বললেন । সাদ (রা: ) এর কথা শুনে আমর ইবনে ওহাব খুব রাগন্নিত হয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ করে বাড়ি হতে বের করে দিলেন।


এদিকে আমর ইবনে ওহাবের মেয়ে ঘরের ভেতর থেকে সব শুনতে পেলেন । যখন আমর ইবনে ওহাব ঘরে ঢুকলেন তার মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো বাবা তোমাকে এত বড় সাহস কে দিল যে রাসূলের কথা অমান্য করলেন?


আল্লাহর রাসূল আমার জন্য যে ছেলেকে পছন্দ করেছেন আমিও তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম। মেয়ের কথা শুনে আমর ইবনে ওহাব দৌড়ে রাসূলের দরবারে গেলেন এবং রাসূলের কাছে মাফ চাইলেন।


প্রিয় নবীজী সা. তাকে মাফ করে দিলেন। আর সাদ (রা: ) এর বিয়ের জন্য ৬০০ দিরহাম মোহরানা ধার্য করলেন এবং বললেন এখন তুমি তোমার স্ত্রীর কাছে যাও। কিন্ত সাদ (রা: ) এত গরীব ছিলেন তার পক্ষে ৬০০ দিরহাম জোগাড় করা সম্ভব ছিল না | তাই অন্যান্য সাহাবীরা মিলে সাদ (রা: ) কে সাহায্য করলেন যাতে উনি উনার স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেও নতুন বৌয়ের জন্য কিছু সদাই করতে পারেন।


ওদিকে সাদ (রা: ) বাজারে চলে গেলেন কেনাকাটা করার জন্য। যখন নতুন বৌয়ের জন্য কেনাকাটা করতে দোকানে ঢুকলেন হঠাৎ শুনতে পেলেন মদিনার বাজারে কে যেন জিহাদের ডাক দিচ্ছে ? জিহাদের ডাক শুনে সাদ (রা: ) ভাবলেন আমি সাদ ফুলের বিছানা বাসর ঘরে নতুন স্ত্রীর কাছে যাবো না আমি রাসূলের মহব্বতে জিহাদে যাবো । তাই তিনি বিয়ের টাকা খরচ করে যুদ্ধের সরঞ্জাম ক্রয় করে জিহাদে চলে গেলেন।


এদিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সাদ (রা: ) একের পর এক

কাফিরকে হত্যা করে জাহান্নামে পাঠাতে লাগলেন। যুদ্ধ করতে করতে এরকম হঠাৎ সাদ (রা: ) শাহাদাতের পেয়ালায় শরবত পান করে শহীদ হয়ে গেলেন। এদিকে যুদ্ধ শেষ হল। দূর হতে দেখা যায় কার যেন লাশ পড়ে আছে ? রাসুল (স: ) ও সাহাবীরা কাছে গিয়ে দেখলেন এ যে সাদের লাশ।


মাথার লোহার টুপি ভেঙ্গে মগজ বের হয়ে গেছে আর জিহ্বা বের হয়ে আছে। সাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে রাসূল (স: ) কেঁদে দিলেন আবার পরক্ষণেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং আবার আকাশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। একজন যুবক সাহাবী আবু লুবাবা রাসূলকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন।


রাসুল (স: ) বললেন আমার সাদ ফুলের বিছানা বাসর ঘরে যায়নি, আমার মহব্বতে শহীদ হয়ে গেল তাই স্নেহের কারণে আমার চোখ হতে পানি ঝড়ে পড়ল। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলাম কারণ আল্লাহ আমার সাদকে খুব সুন্দর একটা মাকাম দান করেছেন আর চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ হল আমার সাদ শহীদ হয়েছে তাই আকাশের সব দরজা খুলে গিয়েছে।


বেহেস্ত হতে অসংখ্য হুর দৌড়ে আসতেছে যে কার আগে কে সাদকে কোলে নিবে ? দৌড় দেওয়ার কারণে হুরদের সামনের পর্দা সরে যাচ্ছিলো যা দেখে আমি রাসূল লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলাম।


আল্লাহ যেন আমাদের সকলের ওনার মত। ঈমান নিয়া পরকালে যাবার। তৌফিক দান করে সকলে বলি আমিন।



কারবালার প্রান্তরে

রবিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

book-of karbalar-prantore

by
Muhammad-shafi-ukarvi

 



কুরআনের অভিধান

রবিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

কুরআনের বাংলা অভিধান





প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে

রবিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে


জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? কবির এই কবিতার যথার্থতা ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে৷ আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷” ( সূরা আম্বিয়াঃ ৩৫ ) 


আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ বদলা দেওয়া হবে। তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।(সুরা আল ইমরান: ১৮৫)। 


দুনিয়াতে যেই আসে সেই চলে যাবে। এখানে আসার অর্থই তাকে যেতে হবে। আর আসার পর থেকেই যাওয়ার সময় এগুচ্ছে। একজন লোক আসার পর থেকে আমরা দেখছি সে বড় হচ্ছে। কিন্তু আসলে তার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। যাওয়ার দিকে সে অগ্রসর হচ্ছে। ইসলামী দর্শন এবং ভাবধারায় মৃত্যু একটি নিশ্চিত এবং অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার। এর দ্বারা শুধুমাত্র জীবনের পরিসমাপ্তি বুঝায় না বরং এর দ্বারা বুঝায় আত্মার অবস্থার পরিবর্তন। ইসলামী বিশ্বাস মতে সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) এই জগত এবং জীবন সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে। 


মৃত্যুর দ্বারা মানুষের জাগতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

মানুষ জানে যে তাকে একদিন মরতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে মানবজাতিকে তার মৃত্যুর কথা অবহিত করেছেন। নবী-রাসুলরা তাঁদের উম্মতদের পার্থিব জীবনের পর আরেকটি জীবনের কথা বর্ণনা করেছেন। মানুষের মৃত্যুর কথা অবহিত করার কারণ হলো, যাতে তারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। মৃত্যুর পর যদি আর কোনো জীবন না থাকত, তাহলে মৃত্যু নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ থাকত না। 


মৃত্যু যদি জীবনাবসানের নাম হতো, তবে পৃথিবীতে যার যার ইচ্ছামতো চলার সুযোগ থাকত। কিন্তু মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে যে মৃত্যু মানে এক জীবন থেকে আরেক জীবনে প্রত্যাবর্তন। একটি জীবন শেষ করে আরেকটি নতুন জীবনের সূচনা করা। দুনিয়ার জীবন অস্থায়ী, আর পরকালের জীবন স্থায়ী। দুনিয়ার সুখ-শান্তি আখিরাতের সুখ-শান্তির তুলনায় তুচ্ছ ও অতি নগণ্য। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কখন, কার কোন জায়গায় মৃত্যু হবে, তা গোপন করেছেন। 


হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মানুষের চোখের দুই ভ্রুর মাঝখানে মৃত্যুর তারিখ লেখা আছে। কিন্তু মানুষ তা দেখতে পায় না। মানুষ থেকে মৃত্যুর তারিখ অজ্ঞাত রাখার কারণ হলো, যদি মানুষ মৃত্যুর নির্দিষ্ট তারিখ জানত, তাহলে এ পৃথিবী অচল হয়ে যেত। মানুষ ঘর-সংসার করত না। মৃত্যুর সময় অজ্ঞাত হওয়ার কারণে মানুষ মনে করে সে দীর্ঘজীবী হবে, এমনকি মৃত্যুর কথাও ভুলে যায়। মানুষ তার মৃত্যুর কথা জানলেও জানেনা তার মৃত্যুর তারিখ ও সময়। মানুষ একেক জন একেক সময় মৃত্যুবরণ করে। তবে তার মৃত্যুর সময় ও তারিখ নির্দিষ্ট। মায়ের জরায়ুতেই তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করিনি, কিন্তু তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল। কোনো সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে যায় না এবং দেরিও করে না।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৪৫)


দূনিয়াতে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হচ্ছে মানুষের মৃত্যু। কারো আপন জনের মৃত্যুতে স্বজনের বিয়োগ ব্যাথাই নয় বরং মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিও প্রচণ্ড শারীরিক কষ্টের সম্মুখীন হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মৃত্যুকালীন সময়ের এ কষ্টের বিবরণ তাঁর উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন। আবার মৃত্যুর এ ভয়াবহতা থেকে মুক্তি লাভের সুস্পষ্ট আমলও শিখিয়ে গেছেন।


তাম্বীহুল গাফেলিনে মৃত্যুকালীন কষ্টের ওপর একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে যে, হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার হজরত কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন, আমাকে মৃত্যুর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন। তখন হজরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘মৃত্যু হলো কাঁটাদার গাছের মতো। কাঁটাযুক্ত সে গাছটি যখন মানুষের পেটে ঢোকানোর পর তার প্রতিটি কাঁটা শিরায় শিরায় লেগে যায়। তখন একজন শক্তিশালী মানুষ যদি গাছিটি ধরে জোরে টেনে বের করার চেষ্টা করে। ওই মুহূর্তে শিরায় শিরায় বিদ্ধ হওয়া কাঁটার আঘাতের কষ্ট মানুষটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে। অনুরূপভাবে মানুষের মৃত্যুকালীন সময়ে মৃত্যুপথযাত্রীর কাছেও মনে হয় যেন, তার শরীরের গোশতগুলো যেন একটি কাঁটার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে। সে মৃত্যুযন্ত্রণা মানুষ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে থাকে। এ হলো মৃত্যুকালীন সময়ে মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার নমুনা। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে সেভাবে ভয় কর; যেভাবে ভয় করা উচিত। এবং অবশ্যই (সবধান!) মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০২)


ছোট্ট একটি শব্দ মৃত্যু! এক শব্দে শেষ হয়ে যায় একটি অধ্যায়। মৃত্যু এমনই এক শব্দ, যা আমাদের নিয়ে যায় অজানা কোন রাজ্যে, যার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু যখন মৃত্যুর ডাক এসে যায়, প্রিয়তমা স্ত্রী, আদরের সন্তান, বাবা-মা কেউ তাদের বন্ধন দিয়ে ধরে রাখতে পারে না। আমরা প্রতি মুহূর্তে এই মৃত্যুকে নিজের সাথে বয়ে বেড়াই। কেউ জানি না এক মিনিট পরে এই পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকবো কিনা। 


মৃত্যু সংক্রান্ত ইসলামী ব্যাখ্যা এতটাই ব্যাপক যেন এটা একটা ছবির মতই পরিষ্কার। মৃত্যু নিয়ে অনেক বছর ধরেই গবেষকরা গবেষণা করে যাচ্ছেন। কেউ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন মৃত্যুর কারণ। কেউ খুঁজছেন মৃত্যু আসন্ন হলে ওই ব্যক্তি কী কী অনুভব করে। কেউ জানার চেষ্টা করছেন মৃত ব্যক্তির অনুভূতি আছে কিনা। মৃত্যু আসন্ন হলে শেষবারের মতো আরেকটু বাঁচার আকুতি জাগে কিনা। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর জানার বাইরেই রয়ে গেছে। তবে ইসলাম মৃত্যুকালীন, মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে বেশ স্পষ্ট করেই বর্ণনা করেছে। 


হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যখন মানুষের অন্তিমকাল উপস্থিত হয় এবং রূহ বের হবার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন চারজন ফেরেশতা তার কাছে উপস্থিত হয়। মৃত্যুর ফেরেশতা (মালাক উল মউত, যাকে আজরাইল ও বলা হয়) মৃত ব্যক্তির রুহ তথা আত্মা শরীর থেকে বের করে নিয়ে যান, এবং তার সাথে থাকেন আরও অন্যান্য ফেরশতারা। মৃত ব্যক্তির জাগতিক জীবনাচারের উপর ভিত্তি করে তার মৃত্যুর আয়োজন ঠিক করা হয়। 


মৃত্যুর পূর্বে ৪ জন ফেরেস্তা তার কাছে উপস্থিত হয়ে যেভাবে জানিয়ে দেয় মৃত্যুর আগাম সংবাদঃ

সর্বপ্রথম এক ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে বলবেন,আসসালামু আলাইকুম” হে অমুক! আমি তোমার খাদ্য সংস্থানের কাজে নিযুক্ত ছিলাম কিন্তু এখন পৃথিবীর পূর্ব থেক পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অন্বেষণ করেও তোমার জন্য এক দানা খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলাম না। সুতরাং বুঝলাম তোমার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে হয়ত এখনই তোমাকে মরণ সুধা পান করতে হবে। পৃথিবীতে তুমি আর বেশীক্ষণ থাকবে না।


অত:পর দ্বিতীয় ফেরেশতা এসে সালাম করে বলবেন হে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার পানীয় সরবরাহের জন্য নিযুক্ত ছিলাম, কিন্তু এখন তোমার জন্য পৃথিবীর সর্বত্র অন্বেষণ করেও এক ফোঁটা পানি সংগ্রহ করতে পারলাম না। সুতরাং আমি বিদায় হলাম।


অত:পর তৃতীয় ফেরেশতা এসে সালাম করে বলবেন হে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার পদযুগলের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিলাম, কিন্তু পৃথিবীর সর্বত্র ঘুরেও তোমার জন্য একটি মাত্র পদক্ষেপের স্থান পেলাম না। সুতরাং আমি বিদায় নিচ্ছি।


চতুর্থ ফেরেশতা এসে সালাম করে বলবেন হে আল্লাহ বান্দা!আমি তোমার শ্বাস-প্রস্বাস চালু রাখার কাজে নিযুক্ত ছিলাম। কিন্তু আজ পৃথিবীর এমন কোন জায়গা খুঁজে পেলাম না যেখানে গিয়ে তুমি মাত্র এক পলকের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে পার। সুতরাং আমি বিদায় নিচ্ছি।

অতঃপর কেরামান কাতেবীন ফেরশতাদ্বয় এসে সালাম করে বলবেন, হে আল্লাহর বান্দা! আমরা তোমার পাপ-পূণ্য লেখার কাজে নিযুক্ত ছিলাম। কিন্তু এখন দুনিয়ার সব জায়গা সন্ধান করেও আর কোন পাপ-পূণ্য খুঁজে পেলাম না। সুতরাং আমরা বিদায় নিচ্ছি।এই বলে তারা এক টুকরা কালো লিপি বের করে বলবেন হে আল্লাহর বান্দা!এর দিকে লক্ষ্য কর। সে দিকে লক্ষ্য করা মাত্র তার সর্বাঙ্গে ঘর্মস্রোত প্রবাহিত হবে এবং কেউ যেন ঐ লিপি পড়তে না পারে এজন্য সে ডানে বামে বার বার দেখতে থাকবে। অত:পর কেরাম কাতেবীন প্রস্থান করবেন। তখনই মালাকুল মউত তার ডান পাশে রহমতের ফেরেশতা এবং বাম পাশে আযাবের ফেরেশতা নিয়ে আগমন করবেন। তাদের মধ্যে কেউ আত্মাকে খুব জোরে টানাটানি করবেন, আবার কেউ অতি শান্তির সাথে আত্মা বের করে আনবেন। কন্ঠ পর্যন্ত আত্মা পৌঁছলে স্বয়ং যমদূত তা কবজ করবেন।


মৃত্যুর পর পুনরুত্থানঃ

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেঃঃ ‘যারা মুক্তমন নিয়ে শোনে, তারাই সত্যের ডাকে সাড়া দেয়। মহাবিচার দিবসে আল্লাহ মৃতদের পুনর্জীবিত করবেন। তারপর তারা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।’ (সূরা আনজাম, আয়াত ৩৬)। অপর এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ ‘তিনিই নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণের উন্মেষ ঘটান আবার প্রাণকে করেন নিষ্প্রাণ। ধূসর জমিনকে তিনিই সজীব করে তোলেন। এমনিভাবে তোমাদেরও মৃত অবস্থা থেকে পুনরুত্থিত করা হবে।’ (সূরা রুম, আয়াত ১৯)


মৃত্যুর পর শরীরের অনেকগুলি পরিবর্তন ঘটে যা থেকে মৃত্যুর সময় ও কারণ নির্ণয় করা যায়। মৃত্যুর আলামত হলো, নাক একদিকে সামান্য বাঁকা হয়ে যাওয়া। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুতবেগে প্রবাহিত হওয়া ও ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া। পা ঢিলা হয়ে যাওয়া এবং দাঁড়াতে না পারা। কানপট্টি ভেঙে যাওয়া। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/১৮৯, আহকামে মায়্যিত : ২২৬) 


মারা যাবার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়, যাকে বলে Algor mortis। এটাকে মৃত্যুর দ্বিতীয় ধাপও বলা হয়। মারা যাবার পাঁচ থেকে দশ ঘণ্টা পরে কঙ্কালের পেশীগুলো শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলে Rigor mortis, এবং এটি তিন-চার দিন পরে শেষ হয়ে যায়। রেখে দেওয়া দেহের নীচের অংশে যে লাল-নীল রঙ দেখা যায়, তাকে বলে Livor mortis; রক্ত জমা হবার কারণে এমন হয়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়, তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন সময়ে মারা যায়। সোমাটিক মৃত্যুর ৫ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলির মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হৃৎপিণ্ডের কোষগুলি ১৫ মিনিট এবং বৃক্কের কোষগুলি প্রায় ৩০ মিনিট বেঁচে থাকতে পারে।


উপসংহারঃ আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেহেতু তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন, সেহেতু তার উচিত হবে মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুত থাকা। আর মুমিন যেহেতু বিশ্বাস করে তার মৃত্যুর পরে আরেকটি জীবন আছে, সেহেতু তার কর্তব্য হলো পারলৌকিক জীবনের সুখের জন্য কাজ করা। তাদের ভাবা দরকার, আমাদের আগে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের অনেকের কবরও খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের অবস্থাও অনুরূপ হবে যে পরবর্তী সম্প্রদায় আমাদের কবরও খুঁজে পাবে না। তাই মুমিনদের উচিত, সর্বপ্রকার গর্ব-অহংকার, অন্যায়-অবিচার, পাপাচার ইত্যাদি অপকর্ম বর্জন করে স্বীয় প্রভুর নির্দেশমতো পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জীবন লাভ করা এবং আখিরাতের সুখ-শান্তি কামনা করা। সময় বয়ে যাচ্ছে, জন্মের সাথে সাথে জীবন নামক সূর্য ক্রমে অস্তমিত হওয়ার দিক ধাবিত হচ্ছে। আর ভোগ-বিলাস, আনন্দ-আহ্লাদে সময়ক্ষেপণ নয়। এখন থেকেই আখেরাতের প্রস্তুতিতে পাথেয় সংগ্রহে নিজেকে সমর্পণ করে আল্লাহপাক ও রাসুলের (সা.) সন্তুষ্টি, নৈকট্য অর্জনে সময় কাটিয়ে দিই এবং আল্লাহর নির্দেশমতে, কম হাসি এবং বেশি বেশি কাঁদি। 

আমাদের মন-প্রাণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর সমর্পণ করি। মৃত্যুর ভয় নয়, সময় থাকতে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আল্লাহপাক ও রাসুলের (সাঃ) এর পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে কায়মনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলে সালেহ সৎকর্ম করি এবং পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামের আলোকে জীবন পরিচালনা করি। এতে আমরা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করে আখেরাতে নাজাত লাভে সমর্থ হব। আল্লাহ তাআলা আমাদের পরকালের সুখ-শান্তির জন্য বেশি বেশি করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্রঃ মাসিক আল কা্উসার




আপনজন মারা গেলে যেসব কাজ করা নিষিদ্ধ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)


জীবন যার আছে, তাকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। এটাই চিরন্তন সত্য। জন্মেছে কিন্তু আর মরবে না এমনটি চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে মৃত্যুর বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছেন এভাবে-

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ


‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)

মৃত্যুর পর আপনজন কান্নাকাটি ও বিলাপ করে থাকে। কিন্তু আপনজন মৃত্যুবরণ করার পর তার ছেলে-সন্তানসহ নিকট আত্মীয়দের জন্য এমন কিছু কাজ-কর্ম হারাম বা নিষিদ্ধ। যা সাধারণত তারা করে থাকে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কিছু বিষয় হারাম করেছেন। যে কাজগুলো মানুষ করে থাকে, যখন তাদের আপনজনদের কেউ মারা যায়। তাহলো-


১. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ বা সুর করে কাঁদা। নবিজি বলেছেন, মানুষের মাঝে দুটি বিষয় রয়েছে যাতে তারা কুফরি করে- ক. বংশের খোঁটা দেয়া, খ. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা। এগুলো নিষেধ।


২. গালে বা শরীরে আঘাত করা।


৩. জামা- কাপড় ছেঁড়া। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায় বা জামার গলা বা পকেট ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়াতের মতো আচরণ করে, সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।


৪. কারো মৃত্যুতে চুল কামিয়ে ফেলা বা মাথা মুণ্ডন করা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর ভয়ে উচ্চ আওয়াজকারীনী নারী থেকে এবং মাথামুণ্ডনকারীনী নারী থেকে এবং অধিক কঠিনতা অবলম্বনকারীনী নারী থেকে পবিত্র ছিলেন।


৫. কারো মৃত্যুতে কবিতা বা কাসিদা প্রকাশ করা।


৬. দিনের কিছু সময় মৃত ব্যক্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জন্য কবিতা আবৃত্তি করা।


৭. মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ তার পক্ষ থেকে প্রচার করা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শোকসংবাদ ঘোষণায় নিষেধ করেছেন।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আপনজনের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সুত্র : অনলাইন নিউজ




বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ওসীয়্যতের নির্দেশ

বুধবার, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৪৫১


মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৪৫১

حَدَّثَنِي مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَيْءٌ يُوصَى فِيهِ يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلَّا وَوَصِيَّتُهُ عِنْدَهُ مَكْتُوبَةٌ.

قَالَ مَالِك الْأَمْرُ الْمُجْتَمَعُ عَلَيْهِ عِنْدَنَا أَنَّ الْمُوصِيَ إِذَا أَوْصَى فِي صِحَّتِهِ أَوْ مَرَضِهِ بِوَصِيَّةٍ فِيهَا عَتَاقَةُ رَقِيْقٍ مِنْ رَقِيقِهِ أَوْ غَيْرُ ذَلِكَ فَإِنَّهُ يُغَيِّرُ مِنْ ذَلِكَ مَا بَدَا لَهُ وَيَصْنَعُ مِنْ ذَلِكَ مَا شَاءَ حَتَّى يَمُوْتَ.

وَإِنْ أَحَبَّ أَنْ يَطْرَحَ تِلْكَ الْوَصِيَّةَ وَيُبْدِلَهَا فَعَلَ إِلَّا أَنْ يُدَبِّرَ مَمْلُوكًا فَإِنْ دَبَّرَ فَلَا سَبِيلَ إِلَى تَغْيِيرِ مَا دَبَّرَ وَذَلِكَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَيْءٌ يُوصَى فِيهِ يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلَّا وَوَصِيَّتُهُ عِنْدَهُ مَكْتُوبَةٌ قَالَ مَالِك فَلَوْ كَانَ الْمُوصِي لَا يَقْدِرُ عَلَى تَغْيِيرِ وَصِيَّتِهِ وَلَا مَا ذُكِرَ فِيهَا مِنْ الْعَتَاقَةِ كَانَ كُلُّ مُوصٍ قَدْ حَبَسَ مَالَهُ الَّذِي أَوْصَى فِيهِ مِنْ الْعَتَاقَةِ وَغَيْرِهَا وَقَدْ يُوصِي الرَّجُلُ فِي صِحَّتِهِ وَعِنْدَ سَفَرِهِ قَالَ مَالِك فَالْأَمْرُ عِنْدَنَا الَّذِي لَا اخْتِلَافَ فِيهِ أَنَّهُ يُغَيِّرُ مِنْ ذَلِكَ مَا شَاءَ غَيْرَ التَّدْبِيْرِ.

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমানের নিকট কিছু সম্পদ থাকলে যার সম্বন্ধে ওসীয়্যত করা তার কর্তব্য, তবে সেই ক্ষেত্রে ওসীয়্যতের বিষয় না লিখে তার জন্য দুই রাত্রিও অতিবাহিত করা উচিত নায় (কেননা মৃত্যু আসার আশংকা রয়েছে)। (বুখারী ২৭৩৮, মুসলিম ১৬২৭)
মালিক (র) বলেন ইহা আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিষয় যে, যদি কোন মুসলমান সুস্থ অথবা অসুস্থ অবস্থায় কোন ওসীয়্যত করে যায় যেমন গোলাম আযাদ করা কিংবা অন্যান্য বিষয়, তবে সে মারা যাওয়ার পূর্বে তার মধ্যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে এবং ওসীয়্যতকে স্থগিতও করতে পারবে। অন্য কোন ওসীয়্যতও করতে পারবে। কিন্তু কোন গোলামকে যদি মুদাব্বার করে থাকে তবে তাতে আর কোন পরিবর্তন করতে পারবে না, কেননা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমানের এমন কিছু থাকলে যা ওসীয়্যত করা কর্তব্য, তবে ওসীয়্যত করা ব্যতীত দুই রাত অতিবাহিত করা তার উচিত নয়।
মালিক (র) বলেন যদি ওসীয়্যতকারীর নিজ ওসীয়্যতে পরিবর্তন করার ক্ষমতা না থাকত তবে তার ইখতিয়ার হতে বের হয়ে আটক থাকত। যেমন গোলাম আযাদের কথা অথচ মানুষ কোন সময় ভ্রমণে যাওয়ার সময় ওসীয়্যত করে আবার সুস্থ থাকাকালীন ওসীয়্যত করে।
মালিক (র) বলেন আমাদের নিকট প্রত্যেক ওসীয়্যতই বদলানো যায় কিন্তু গোলামকে মুদাব্বার করা হলে তা পরিবর্তনের ইখতিয়ার নাই।

মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৪৫১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


মানুষের অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধ সাক্ষ্য দিবে

বুধবার, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২ 1
বার দেখা হয়েছে
মানুষের অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধ সাক্ষ্য দিবে


মানুষের অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধ সাক্ষ্য দিবে
আল্লাহ তাআলার বাণী-
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (24)
যেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের পা তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে।– সূরা নূর ২৪

وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ (21)
জাহান্নামীরা উহাদের ত্বককে জিজ্ঞাসা করবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেছ কেন? তারা উত্তরে বলবে, আল্লাহ- যিনি আমাদেরকে বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি সমস্ত কিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন প্রথমবার এবং তারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। – সূরা হামিম সাজদা ২১

الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (65)
আজ আমি তাদের মুখে মোহর করে দিবে, তাদের হাত কথা বলবে আমার সাথে আর তাদের পা সাক্ষ্য দিবে তাদের কৃতকর্মের।– সূরা ইয়াসীন ৬৫

আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট ছিলাম। এ সময় তিনি হেসে বললেন, তোমরা কি জান, আমি কেন হাসছি? আমরা বললাম, এ সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ  বান্দা তার প্রতিপালকের সাথে যে কথা বলবে, এ জন্য হাসছি।

তখন বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি কি আশ্রয় দাওনি আমাকে যুলম হতে? রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলবেন, হাঁ আমি কারো প্রতি যূলূম করি না। অতঃপর বান্দা বলবে, আমি আমার ব্যাপারে নিজের সাক্ষ্য ব্যতীত অন্য কারো সাক্ষী হওয়াকে জায়িয মনে করি না । তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হওয়ার জন্য যথেষ্ট এবং সম্মানিত লিপিকার বৃন্দও।
 অতঃপর বান্দার মূখের উপর মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে হুকুম করা হবে যে, তোমরা বল। তারা তার আমল সম্পর্কে বলবে। এরপর বান্দাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন বান্দা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে লক্ষ্য করে বলবে, অভিশাপ তোমাদের প্রতি, তোমরা দূর হয়ে যাও। আমি তো তোমাদের জন্যই ঝগড়া করছিলাম।- রিওয়ায়াত ২৬৬


ওসীয়্যত প্রসঙ্গে

বুধবার, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে


حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، ح وَحَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، ح وَحَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ أَصَابَ عُمَرُ أَرْضًا بِخَيْبَرَ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَصَبْتُ أَرْضًا لَمْ أُصِبْ مَالاً قَطُّ أَنْفَسَ عِنْدِي مِنْهُ فَكَيْفَ تَأْمُرُنِي بِهِ قَالَ ‏ "‏ إِنْ شِئْتَ حَبَّسْتَ أَصْلَهَا وَتَصَدَّقْتَ بِهَا ‏"‏ ‏.‏ فَتَصَدَّقَ بِهَا عُمَرُ أَنَّهُ لاَ يُبَاعُ أَصْلُهَا وَلاَ يُوهَبُ وَلاَ يُورَثُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْقُرْبَى وَالرِّقَابِ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ - وَزَادَ عَنْ بِشْرٍ - وَالضَّيْفِ - ثُمَّ اتَّفَقُوا - لاَ جُنَاحَ عَلَى مَنْ وَلِيَهَا أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا بِالْمَعْرُوفِ وَيُطْعِمَ صَدِيقًا غَيْرَ مُتَمَوِّلٍ فِيهِ ‏.‏ زَادَ عَنْ بِشْرٍ قَالَ وَقَالَ مُحَمَّدٌ غَيْرَ مُتَأَثِّلٍ مَالاً ‏.‏

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) খায়বারে একখন্ড জমি পান। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, আমি খায়বারে একখন্ড জমি পেয়েছি যা অপেক্ষা উত্তম সম্পদ ইতিপূর্বে আমি পাইনি। আপনি আমাকে এর কি নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ তুমি চাইলে আসল জমি রেখে দিয়ে এর থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ (ফসল) সদাক্বাহ করে দাও। তখন থেকে ‘উমার (রাঃ) সিদ্ধান্ত নেন যে, আসল জমি বিক্রয় করা যাবে না, হেবা করা যাবে না এবং তাতে কোনরূপ উত্তরাধিকার স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি তা দান করে দিলেন ফকীর, আত্নীয়স্বজন, দাস মুক্তকরণে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। বর্ণনাকারী মুসাদ্দাদ (রহঃ) বিশর সূত্রে মেহমানের কথাও উল্লেখ করেন। পরে তারা একমত হয়ে বর্ণনা করেনঃ যিনি এ সম্পত্তির মোতাওয়াল্লী হবেন তিনি ন্যায়সঙ্গতভাবে তা থেকে ভোগ করতে পারবেন এবং বন্ধুদেরও আপ্যায়ন করতে পারবেন। কিন্তু নিজের জন্য সঞ্চয় করতে পারবেন না।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৮৭৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস



আমলনামা লিখার জন্য ফেরেশতা নির্ধারিত

বুধবার, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
আমলনামা লিখার জন্য ফেরেশতা নির্ধারিত


আমলনামা সবার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে

আল্লাহ তাআলার বাণী
وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا (13) اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا (14)
আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবালগ্ন করেছি। আর কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। (আর বলা হবে) পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।– সূরা ইসরা ১৩-১৪

আমলনামা লিখার জন্য ফেরেশতা নির্ধারিত
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ (10) كِرَامًا كَاتِبِينَ (11) يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ (12)
অবশ্যই তোমাদের উপর তত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে তোমরা যা কর।– সূরা ইনফিতার-১০-১১

প্রত্যেকটি বিষয়ই লিখা হয়
عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ (17) مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ (18)
ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।– সূরা ক্বাফ:১৭-১৮
আমলনামায় ছোট বড় সব কৃতকর্ম লিখা থাকবে
مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا
(তারা বলবে, হায়!) এ কেমন কিতাব (আমলনামা)। এ যে ছোট কড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি- সবই এতে রয়েছে।– সূরা আল কাহফ ৪৯

আমলনামায় ডান হাতে আসলে হিসাব সহজ হবেআর না হয় কঠিন হবে
) فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ (7) فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا (8) وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا (9) وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ (10) فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا (11)
আর যাকে তার আমলনামা তার সোজা হাতে দেওয়া হবে তার হিসাব-নিকাশ সহজেই নেয়া হবে। আর সে তার স্বজনদের নিকট প্রফুল্লচিত্তে ফিরে যাবে। আর যাকে তার আমলনামা পিছন দিক হতে দেয়া হবে, সে (নিজেই) তার নিজের ধ্বংস চাইবে এবং জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে।– সূরা ইনশিকাক ৭-১২


আখিরাতের প্রতি ইমান

বুধবার, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
আখিরাতের প্রতি ইমান


আখিরাতের প্রতি ইমান
শায়খ হালিমী (রহ) বলেন- আখিরাতের দিনের প্রতি ইমান আনার অর্থ হলো এই কথার সত্যায়ন করা যে, এই দুনিয়ার দিনের শেষ ও চূড়ান্ত সীমা রয়েছে। অর্থাৎ এই দুনিয়া একদিন টুকরো টুকরো হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
আখিরাতের উপর ইমান আনার ব্যাপারে শরহে সদর বা প্রশান্ত চিত্ত হওয়ার জন্য যে বিষয়টি প্রযোজ্য, তা হলো আল্লাহর ভয় বিদ্যমান থাকা। আর এর আলামত হলো দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা কম থাকা। দুনিয়ার কষ্ট ও মুসিবতে হতাশ না হওয়া এবং র্ধৈয ধরা। খাহিশাত বা আসক্তির চাহিদার ব্যাপারে র্ধৈয ধারণ করা। আর আল্লাহ তাআলার নিকট যে প্রতিদান ও সওয়াব রয়েছে তার প্রতি ইয়াকীন রাখা।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آَمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ
আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ইমানদার নয়।– সূরা বাকারা ৮

আমরা বর্ণনা করেছি হযরত উমর (রা) সূত্রে নবী (সা) থেকে। যখন তাকে ইমানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন,
أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ
তুমি ইমান আনবে আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলগেণের প্রতি, আখিরাত বা শেষ দিবসের প্রতি এবং তাকদীর বা ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি।
 
নবী (সা) ইরশাদ করেন-
بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ
আমার প্রেরণ এবং কিয়ামত- এই দুটি আঙ্গুলের মত নিকটর্বতী।
এই হাদীসের অর্থ হলো- আমি শেষ নবী। আমার পর আর কোন নবী আসবে না। তবে কিয়ামত বা পরকাল আসবে। যা আমার পরে খুবই নিকটর্বতী।


সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মৃত্যুর পর পূণরুত্থানের প্রতি ইমান

সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
মৃত্যুর পর পূণরুত্থানের প্রতি ইমান


মৃত্যুর পর পূণরুত্থানের প্রতি ইমান
আল্লাহ তাআলা যে পর্যন্ত চাইবেন মানুষ হাশরের ময়দানে দাড়িয়ে থাকবেন। যখন সেই সময় আসবে, যখন আল্লাহ তাদের থেকে হিসাব নেওয়ার ইচ্ছা করবেন, তখন আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিবেন আর সমস্ত আমলনামা নিয়ে আসা হবে, যা কিরামান কাতিবীন ফেরেশতাদ্বয় লোকদের কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করেছিল।

আর তা মানুষদেরকে এভাবে দেয়া হবে যে, কারো আমলনামা সোজা হাতে, কারো আমলনামা উল্টা হাতে আবার করো আমলনামা তার পিছন দিক হতে দেয়া হবে। যাদের আমলনামা সোজা হাতে দেয়া হবে তারা হবে সৌভাগ্যবান। আর যাদের আমলনামা বিপরীত দিক হতে দেয়া হবে তারা হবে হতভাগ্য।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
ألا يظن أولئك أنهم مبعوثون ليوم عظيم يوم يقوم الناس لرب العالمين
তারা কি চিন্তা করে না যে, উহারা পুণরুত্থিত হবে, মহাদিবসে? যেদিন সমস্ত মানুষ দণ্ডায়মান হবে তার প্রতিপালকের সম্মুখে।– সূরা তাতফীফ ৪-৬

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
يقوم الناس يوم القيامة لرب العالمين حتى يغيب أحدهم في رشحه إلى أنصاف أذنيه
কিয়ামতের দিন মানুষ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দন্ডায়মান হবে। এমনকি তারা তাদের কানের লতি পর্যন্ত ঘাম দ্বারা ডুবে যাবে।-রিওয়ায়ায়াত ২৫৭

হযরত মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি-
تدني الشمس يوم القيامة من الخلق حتى تكون منهم كمقدار ميل
কিয়ামতের দিন মানুষকে সূর্যের নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। এমনকি তা মানুষের এক মাইলের নিকটবর্তী হয়ে যাবে।

বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবনে আমির (রহ) বলেন-  আল্লাহর শপথ! আমি জানি না, (ميل) মাইল দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে, জমীনের দূরত্ব নাকি না (ميل নামক) ঐ শলাকা যা চোখে সুরমা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
মানুষ তাদের আমল অনুসারে ঘামের মাঝে ডুবে থাকেবে। তাদের কারো ঘাম পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত হবে, কেউ হাটু পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকবে, কেউ কোমর পর্যন্ত আর কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে।  
বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা) নিজ মুখের প্রতি ইঙ্গিত করলেন।–রিওয়ায়াত ২৫৮
চলেবে..


বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সিহাহ সিত্তাহ এর পরিচয়

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

সিহাহ সিত্তাহ এর পরিচয়

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা, কাজ, বাণী ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলে। রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় হাদিস সংকলন করা নিষিদ্ধ ছিল। তাই রাসূল (সাঃ) এর শেষ জীবন ও পরবর্তী সময়ে হাদিস সংকলন শুরু হয়। আর সেই সংকলনের বিশুদ্ধতম ৬ টি হাদিস গ্রন্থই হলো সিহাহ সিত্তাহ।

সিহাহ সিত্তাহ এর পরিচয়

সহিহ আরবি শব্দ। যার বহুবচন হলো সিহাহ। সিহাহ অর্থ হলো বিশুদ্ধ, নির্ভুল। আর সিত্তা অর্থ হলো ছয়। অর্থাৎ, শব্দ দুটির অর্থ হলো বিশুদ্ধ ছয়খানা অর্থাৎ, হাদিসের ছয়টি বিশুদ্ধ গ্রন্থ।

হাদীসের প্রধান ৬ টি গ্রন্থকে একত্রে সিহাহ সিত্তাহ বলা হয়। এটি দ্বারা “নির্ভুল ৬” বুঝানো হয়।

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, “হিজরী ৩য় শতাব্দীতে হাদিস গ্রন্থের যে ৬ টি বিশুদ্ধ গ্রন্থ সংকলন করা হয় তাই সিহাহ সিত্তাহ।

জমহুর মুহাদ্দিসিন-ই-কিরামের মতে, “হাদিস শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম ৬ টি সংকলনকে একত্রে সিহাহ সিত্তাহ বলে।”

মুহাদ্দিসগণ বলেন, “হাদিস শাস্ত্রে যে ৬ খানি সংকলনের বিশুদ্ধতা ও প্রমাণের ব্যাপারে সর্বজন বিদিত ও স্বীকৃত তাই সিহাহ সিত্তাহ।”

এ গ্রন্থগুলো নবী (সাঃ) এর মৃত্যুর ২০০ বছর পর ৬ জন সংগ্রহকারীর দ্বারা সংগৃহীত হয়েছে।


সিহাহ সিত্তাহ গ্রন্থ ও এর সংকলক

সিহাহ সিত্তাহ গ্রন্থ ৬ টি। এগুলো হলো –

গ্রন্থের নাম সংকলকের নাম হাদিসের সংখ্যা

সহিহুল বুখারি -আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল বুখারী-৭২৭৫ টি

সহীহ মুসলিম -আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম-৯২০০ টি

জামিউত তিরমিজী- আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিজী -৩৬০৮ টি

সুনানে আল নাসাঈ -আবু আব্দুর রহমান আহমদ ইবনে আলী ইবনে শোয়াইব -৫৭৫৮ টি

সুনানে আবু দাউদ  -আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আস আম- ৫১৮৪ টি

সুনানে ইবনে মাজাহ -আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযিদ ইবনে মাজাহ- ৪৩৪১ টি


সহিহ হাদীস সমগ্র সিহাহ সিত্তাহ গ্রন্থ ৬ টি এখানে ক্লিক করুন



সন্তানাদি ও আবাসস্থল নিরাপদের জন্য দো‘আ:

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

সন্তানাদি ও আবাসস্থল নিরাপদের জন্য দো‘আ:


উচ্চারণ: রাববিজ‘আল হা-যা বালাদান্ আ-মিনাওঁ ওয়ারঝুক্ব আহলাহূ মিনাছ্ছামারা-তি মান আ-মানা মিনহুম বিল্লা-হি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খিরি।

অর্থ: “পরওয়ারদেগার! এ স্থানকে তুমি শান্তির স্থান কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও ক্বিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস করে তাদেরকে ফলমূল দ্বারা রিযিক দান কর।” [বাক্বারাহ: ১২৬]

উৎস: ইবরাহীম (আঃ) যখন আল্লাহ্র নির্দেশে তাঁর শিশুসন্তান ইসমাঈলকে ও তাঁর স্ত্রী হাযেরাকে জনমানবশূন্য প্রান্তর বর্তমান কা‘বা ঘর ও যমযম কূপের সন্নিকটে রেখে আসেন, তখন উক্ত দো‘আ করেন। যাতে করে এই জনমানবহীন মরুপ্রান্তর নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য একটি শান্তির শহরে পরিণত হয়, যাতে এখানে বসবাস করা আতংকজনক না হয় এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সহজলভ্য হয়। শহরটি যেন হত্যা, লুণ্ঠন, কাফেরদের অধিকার স্থাপন, বিপদাপদ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ হয়। ইবরাহীম (আঃ)-এর দো‘আর ফলেই আল্লাহ তা‘আলা মক্কাকে সম্মানিত ও নিরাপদ রেখেছেন, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে দিয়েছেন। 


উৎস: ছহীহ কিতাবুদ দো‘আ, মোঃ নূরুল ইসলাম

*  ইবনু কাছীর, তাফসীর আল-কুরআনুল আযীম, পৃঃ ২২৬; বুখারী হা/৩১২২।



বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২

স্বামী-স্ত্রীর অধিকার

বুধবার, আগস্ট ৩১, ২০২২ 2
বার দেখা হয়েছে

 

স্বামী-স্ত্রীর অধিকার

লেখক: আখতারুজ্জামান মোহাম্মাদ সুলাইমান

বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তাআলা এর চির স্থায়িত্ব পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। এরশাদ হচ্ছে: ‘তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে ? অথচ তোমরা পরস্পর শয়ন সঙ্গী হয়েছ এবং তোমাদের নিকট সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।’ [নিসা : ২১]

এ চুক্তিপত্র ও মোহরানার কারণে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কতক দায়দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা বাস্তবায়নের ফলে দাম্পত্য জীবন সুখী ও স্থায়ী হবে—সন্দেহ নেই। সে সব অধিকারের প্রায় সবগুলোই সংক্ষেপ আকারে বর্ণিত হয়েছে কোরআনের আয়াতে: ‘যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ [বাকারা : ২২৭]

আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের।এখানে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে বিরাজমান কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার স্তর ও মানের ভিত্তিতে উল্লেখ করছি।


প্রথমত, যে সব অধিকারের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সমান:

১. দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সততা, বিশ্বস্ততা ও সদ্ভাব প্রদর্শন করা

যাদের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব, অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক, অধিক মেলামেশা, সবচেয়ে বেশি আদান-প্রদান তারাই স্বামী এবং স্ত্রী। এ সম্পর্কের চিরস্থায়ী রূপ দিতে হলে ভাল চরিত্র, পরস্পর সম্মান, নম্র-ভাব, হাসি-কৌতুক এবং অহরহ ঘটে যাওয়া ভুলচুক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা অবশ্যম্ভাবী। এবং এমন সব কাজ, কথা ও ব্যবহার পরিত্যাগ করা, যা উভয়ের সম্পর্কে চির ধরে কিংবা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন: ‘তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর।’ [নিসা : ১৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল।’ [ইবনে মাজাহ : ১৯৬৭]

পরস্পর সদ্ভাবে জীবন যাপন একটি ব্যাপক শব্দ। এর মাঝে সমস্ত অধিকার বিদ্যমান।


 ২ পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করা

এর জন্য আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রস্তুতি ও সকল উপকরণ গ্রহণ করা। যেমন সাজগোজ, সুগন্ধি ব্যবহার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ দুর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পরিহার ইত্যাদি। স্বামী স্ত্রী প্রত্যেকের এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা। অধিকন্তু এগুলো সদ্ভাবে জীবন যাপনেরও অংশ।ইবনে আব্বাস রা. বলেনঃ ‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’

তবে পরস্পর এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উভয়কেই হারাম সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।


৩ বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা

সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।‘ [মুসলিম : ২৫৯৭]


 ৪ পরস্পর শুভ কামনা করা, সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া

আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অপর থেকে উপদেশ পাওয়ার অধিক হকদার।দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা উভয়েরই কর্তব্য।আর এর অন্তরভূক্ত হচ্ছে, পরস্পর নিজ আত্মীয়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা ।

সন্তানদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যাপারে উভয়েই সমান, একে অপরের সহযোগী। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কর।’ [মায়েদা : ২]


 দ্বিতীয়ত, স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য:

সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গিনী স্ত্রীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।


১. স্বামীর আনুগত্য

স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। তবে যে কোন আনুগত্যই নয়, বরং যেসব ক্ষেত্রে আনুগত্যের নিম্ন বর্ণিত তিন শর্ত বিদ্যমান থাকবে।

(ক) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়।

(খ) স্ত্রীর সাধ্য ও সামর্থ্যরে উপযোগী বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্বারোপ করেন না।

(গ) যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা।

আনুগত্য আবশ্যক করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।’ [বাকারা : ২২৭]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।’ [নিসা : ৩৪]

উপরন্তু এ আনুগত্যের দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়িত্ব পায়, পরিবার চলে সঠিক পথে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন— ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে,নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।‘ [আহমাদ : ১৫৭৩]

স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করা। স্ত্রীর মননশীলতা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে সত্য-কল্যাণ ও উত্তম চরিত্রের উপদেশ প্রদান করা কিংবা হিতাহিত বিবেচনায় বারণ করা।উপদেশ প্রদান ও বারণ করার ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ ও উন্নত মননশীলতার পরিচয় দেয়া । এতে সানন্দ চিত্তে ও স্বাগ্রহে স্ত্রীর আনগত্য পেয়ে যাবে।

২. স্বামী-আলয়ে অবস্থান

নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত ও অনুমতি ছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া অনুচিত।মহান আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নারীদের ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীদের সম্বোধন করে বলেন—সকল নারীই এর অন্তর্ভুক্তঃ  ‘তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না।’ [আহযাব : ৩৩]

স্ত্রীর উপকার নিহিত এবং যেখানে তারও কোন ক্ষতি নেই, এ ধরনের কাজে স্বামীর বাধা সৃষ্টি না করা। যেমন পর্দার সাথে, সুগন্ধি ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে বারণ না করা। ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আল্লাহর বান্দিদেরকে তোমরা আল্লাহর ঘরে যেতে বাধা দিয়ো না।‘ [বুখারী: ৮৪৯ ]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা: এর স্ত্রী যয়নব সাকাফী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলতেন:  ‘তোমাদের কেউ মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে করলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।‘ [মুসলিম : ৬৭৪]


 ৩. নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা

স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ  ‘স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’ [বুখারী: ২৫৪৬]


৪. নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা

পূর্বের কোন এক আলোচনায় আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদিস এ মর্মে উল্লেখ করেছি যে, নিজেকে কখনো পরীক্ষা কিংবা ফেতনার সম্মুখীন না করা।


 ৫. স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া

হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমন ভাই-বেরাদার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’ [মুসলিম : ২১৩৭]

স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ, রোজা নফল—আনুগত্য ফরজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।‘ [বুখারী : ৪৭৬৯]

 তৃতীয়ত: 

স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।

 ১. দেন মোহর

নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।’ [নিসা : ৪]

২. ভরন পোষণ

সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে।অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।‘ [তালাক : ৭]

৩. স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা

স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।’ [বুখারী, মুসলিম, রিয়াদুস সলিহীন :: বই ১ :: হাদিস ২৭৩]


৪. স্ত্রীর ব্যাপারে আত্মমর্যাদাশীল হওয়া

হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেনঃ ‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চে’ বেশি ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে আসিনি।’ [বুখারী:৪৭০৬]

নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ  ‘তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ। আমি তার চে’ বেশি আত্মসম্মানবোধ করি,আবার আল্লাহ আমারচে’ বেশি অহমিকা সম্পন্ন।’ [মুসলিম : ২৭৫৫]

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে এসেছেঃ ‘দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ [দারামি : ৩৩৯৭]

মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এবং অধীনস্থগণ।

পরিশেষে নির্ঘাত বাস্তবতার কথা স্বীকার করে বলতে হয়, কোন পরিবার সমস্যাহীন কিংবা মতবিরোধ মুক্ত নয়। এটাই মানুষের প্রকৃতি ও মজ্জাগত স্বভাব। এর বিপরীতে কেউ স্বীয় পরিবারকে নিষ্কণ্টক অথবা ঝামেলা মুক্ত কিংবা ফ্রেশ মনে করলে, ভুল করবে। কারণ, এ ধরাতে সর্বোত্তম পরিবার কিংবা সুখী ফ্যামিলির একমাত্র উদাহরণ আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিবার ও ফ্যামিলি। সেখানেও আমরা মানবিক দোষ-ত্রুটির চিত্র দেখতে পাই, অন্য পরিবারের পবিত্রতা কোথায় ?

জ্ঞানী-গুণীজনের স্বভাব ভেবে-চিন্তে কাজ করা, ত্বরা প্রবণতা পরিহার করা, ক্রোধ ও প্রবৃত্তিকে সংযমশীলতার সাথে মোকাবিলা করা।কারণ, তারা জানে যে কোন মুহূর্তে ক্রোধ ও শয়তানের প্ররোচনায় আত্মমর্যাদার ছদ্মাবরণে মারাত্মক ও কঠিন গুনাহ হয়ে যেতে পারে।যার পরিণতি অনুসূচনা বৈকি? আবার এমনও নয় যে, আল্লাহ তাআলা সমস্ত কল্যাণ ও সুপথ বান্দার নখদর্পে করে দিয়েছেন। তবে অবশ্যই তাকে মেধা, কৌশল ও বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে।


সমাপ্ত



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png