LIVE
Loading latest headlines...

বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২

সফল জীবন (আলকামা)

বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

সফল জীবন (আলকামা)

তিনি রাসূলকে (সা) পাননি। পাননি প্রিয় নবীজীর সান্নিধ্য। কিন্তু তাতে কি! তার সেই অপূর্ণতা তিনি নিজের চেষ্টা, সাধনা, ত্যাগ আর রাসূলের (সা) প্রতি প্রতি ভালবাসায় পুশিয়ে নিয়েছিলেন নবীজীর প্রিয় সাহাবীদের মাধ্যমে।


এই আলোকিত মানুষটির নাম আলকামা।

আলকামা হযরত উমর, আলী, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদসহ অনেক সাহাবীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। তাদের জ্ঞান সমুদ্র থেকে কলস ভরে তুলে নিয়েছিলেন জীবন চলার পাথেয়। নিবারণ করেছিলেন তৃষ্ণা।

সত্যের পিপাসা তো এমনিই।

সেই পিপাসা একমাত্র জ্ঞারে সুপেয়, সুনির্মল স্বচ্ছ পানি ছাড়া আর কিছুতেই মেটে না।

আলকামার জ্ঞান তৃষ্ণা ছিল প্রচণ্ড।

ছিল সত্যের প্রতি আনুগত্য এবং অনুরাগ।

আর অঢেল ভালবাসা ছিল আল্লাহর রাসূলের (সা) প্রতি।

ফলে আর শঙ্কা কিসের?

কিসের অভবা?

না, কোনো শঙ্কা নয়। বরং গভীর নিষ্ঠা আর একাগ্রতায় তিনি আল্লাহর কুরআন, রাসূলের আদর্শ এবং তাঁর সার্বিক জ্ঞানে তিনি এতই সমৃদ্ধহয়েওঠেন যে তার অন্যতম শিক্ষক ইবন মাসউদ বলতে বাধ্য হন, ‘আমি যত কিছু পড়েছি ও জেনেছি, তা সবই আলকামা পড়েছে ও জেনেছে।’


আলকামার ছিল অসাধারণ স্মৃতি শক্তি।

অত্যন্ত প্রখর ছিল তার ধারণ-ক্ষমতা।

কোনো কিছু একবার মুখস্থ করলে তা আর ভুলতেন না। সেটা সমুদ্রিত গ্রন্থের মতই রয়ে যেত তার হৃদয়ে।

আলকামা এ প্রসঙ্গে নিজেই বলতেন,

‘যে জিনিস আমি আমার যৌবনে মুখস্থ করেছি তা এখনও আমার হৃদয়ে এমনভাবে গেঁথে আছে, যে তা যখন পাঠ করি, তখন মনে হয় বই দেখে পড়ছি।’

মহান আল্লাহ পাক যাকে জ্ঞানভান্ডার ও মেধা দান করেন, তিনি অবশ্যই ধন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ এক বিশাল নিয়ামত।

আলকামাও আল্লাহর এই বিশেষ নিয়ামত পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন।

সামান্য কিছু নয়, বরং পুরো হাদিসে হাফেজ ছিলেন। সেই সাথে আল কুরআন এবং আল ফিকাহর জ্ঞানেও ছিলেন সমৃদ্ধ।

আলকামা ছিলেন একজন বড় তাবেঈ। অসাধারণ ছিল তার জ্ঞানভান্ডার। ছিলেণ হাদিসে মুহাদ্দিস এবং হাফেজ।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এতবড় একজন হাদিসে হাফেজ ও মুহাদ্দিস নিজেকে কখনই বড় মনে করতেন না। এমনকি মুহাদ্দিস হিসাবে নিজেকে পরিচিত করতেও ছিলেন কুণ্ঠিত ও লজ্জিত।

একেই বলে প্রকৃত জ্ঞানী।

যে গাছে ফল যত বেশি, সেই গাছের ডালগুলি ততোই নুয়ে পড়ে। জ্ঞানীর ক্ষেত্রেও কথাটি সমান প্রযোজ্য।

কিন্তু আজকের চিত্র ভিন্ন। খালি কলস বাজে বেশি- এমন অবস্থা।

আলকামা ছিলেন যেমন জ্ঞানী, তেমনি সত্যনিষ্ঠ ও বিনীয়।

রাসূলের (সা) আদর্শে তিনি তার জীবনকে গড়ে তুলেছিলেন।

সাহাবীরা (রা) ছিলেন তার সামনে রাসূলের (সা) জীবন্ত প্রতিনিধি।

প্রকৃত অর্থে একজন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির মতই তিনি সাহাবীদের (রা) কাছ থেকে আহরণ করেছেন জ্ঞান ও আত্মার খোরাক।


কী চমৎকার এক নিদর্শন!

যারা রাসূলকে (সা) দেখেনি, তারা ইবন মাসউদকে দেখেই রাসূলের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা নিতে পারতো।

আবার যারা ইবন মাসউদকে দেখেনি, তারা আলকামাকে দেখে রাসূল (সা) ও ইবন মাসউদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক বেশি অবগত হতে পারতো। এটা নিশ্চয়ই কম কথা নয়।

আলকামার এই স্বভাব চরিত্র যেমন ছিল তার হৃদয়ে, তেমনি ছিল তার চাল-চলনে ও নৈমিত্তিক যাপিত জীবনে।

আলকামা আল কুরআনকে তার প্রতিটি কাজের বাহনে রূপ দিয়েছিলেন। ঠিক সেইভাবে রাসূলের (সা) আদর্শকেও জীবনের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতেন।

জ্ঞঅন চর্চার পাশাপাশি আলকামা ছিলেন জিহাদের ব্যাপারেও সমান সতর্ক। জিহাদের জন্য তিনি ছিলেন পিপাসায় কাতর।


তার ভেতরে ছিল এক সাহসের ফুলকি।

ছিল সমুদ্রে মত গর্জনমুখর।

সেই গর্জন কেবলি ফুঁসে উঠতো তার মধ্যে।

হিজরি বত্রিশ সন।

আমীর মুয়াবিয়ার  সময়কাল।

সামনে কনস্টান্টিনোপল অভিযান সম্পর্কে রাসূলের (সা) একটি ভবিষ্যৎ বাণী ছিল।

এই বাহিনীতে যোগ দিলেন আলকামা।

বাহিনীর সবাই বিজয়ের অংশীদার ও সাক্ষী হওয়ার জন্য শাহাদাতের প্রবল প্রেরণায় ছিলেন উজ্জীবিত।

আর আলকামা?

তিনি তো শহীদি জীবনকে কামনা করেন সর্বক্ষণ।


শুরু হলো জিহাদের যাত্রা। সে ছিল এক দুঃসাহসী অভিযান।

বাহিনীর সবাই প্রাণবন্ত।

একজন মুজাহিদ। নাম ‍মুদিদ। তিনি একটি কিল্লার ওপর আক্রমণের সময় মাথায় বাঁধার জন্য চেয়ে নিলেন আলকামার চাদরটি।

মুজাহিদটি শহীদ হলেন এক পর্যায়ে।

আলকামার চাদরটিও হয়ে উঠলো শহীদের রক্তে লালে লাল!


এই রক্তে রাঙা চাদরটিকে আলকামা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখতেন।

যেতেন জুমআর নামাজেও।

বলতেন, ‘আমি এই চাদরটি আমা কাঁধে এজন্য ঝুলিয়ে রাখি যে, এতে একজন শহীদের খুনের স্পর্শ আছে।’

আহ! কী মমতাভরা উচ্চারণ তার! এত বড় একজন জ্ঞানী তাবেঈ। কত তার মর্যাদা! অথচ তিনি খ্যাতি থেকে তিনি সর্বদা নিজেকে দূরে রাখতেন। গুটিয়ে রাখতেন নিজেকে। মনে-প্রাণে তিনি এটাকে ঘৃণা করতেন। এজন্য এড়িয়ে চলতেন সম্ভাব্য খ্যাতি ও প্রাচারণার পথগুলো।


হযরত আলকামা!

কী অসাধারণ ছিল তার শিক্ষা ও জ্ঞানের বহর!

কী অসাধারণ ছিল তার মানসিক ও নৈতিম শক্তি।

সন্দেহ নেই, এমন ব্যক্তিই তো আল্লাহর পছন্দ। পছন্দ রাসূলেরও (সা)। প্রকৃত অর্থে, আল্লাহ এবং রাসূলকে (সা) ভালবেসে সাহসের পর্বতে সুদৃঢ়ভাবে অবিচল থাকতে পারলেই কেবল অর্জন করা যায় হযরত আলকামা (রহ) মত সফল জীবন।



ঈমান

বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
ঈমান


ইবন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।

১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।

২. সালাত কায়িম করা।

৩. যাকাত আদায় করা।

৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং

৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা।


(সহীহ বুখারী , অধ্যায়ঃ ২, হাদিস নম্বরঃ ৮)


ঈমান



প্রকৃত সে-ই মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।

বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
সে-ই মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।


 আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে।


(সহীহ বুখারী , অধ্যায়ঃ ২, হাদিস নম্বরঃ ১০)।



আরবি: زكاة‎‎ zakāt, "যা পরিশুদ্ধ করে") হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি

বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

আরবি: زكاة‎‎ zakāt, "যা পরিশুদ্ধ করে") হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি

(আরবি: زكاة‎‎ zakāt, "যা পরিশুদ্ধ করে") হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমাতিক্রমকারী সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা (১/৪০) অংশ বছর শেষে বিতরণ করতে হয়।

 ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাতই শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। উল্লেখ্য, নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত কোনো ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয় এবং তখন তার উপর 'যাকাত' নামক ফরয বর্তায়; অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরয। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার।কুরআনে নামাজের পরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পূর্ন বিষয় হিসাবে উল্লেখ এই যাকাত।



যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ

বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০২২ 2
বার দেখা হয়েছে
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ


কোন ব্যক্তির ওপর ইবাদত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত থাকে। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্যও কিছু শর্ত আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু শর্ত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার যাকাত আর্থিক ইবাদত হওয়ায় সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু শর্তও আছে। শর্তগুলো হলো-

মুসলিম হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। যাকাত মুসলিমদের ওপর এক প্রকারের ইবাদত বিধায় তা অমুসলিমদের জন্য ফরজ হওয়ার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক।

বালিগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া : শাফি’ঈ, মালিকী ও হাম্বলী মাযহাব মতে, সম্পদশালী শিশুর ওপর যাকাত ফরজ হবে। তার সম্পদ হতে তার ওয়ালী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিভাবক যাকাত আদায় করবেন। হানাফী মাযহাব মতে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে শিশুর সম্পদে যাকাত নেই। শিশুর সম্পদে যাকাত ফরজ না হওয়ার পক্ষে তাদের দলিল হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন প্রকারের মানুষের ওপর হতে তাকলীফের কলম তুলে নেয়া হয়েছে- পাগল, যতক্ষণ না তার জ্ঞান ফিরে আসে; ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয় এবং শিশু যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়’  (জামে আত তিরমিযী)। তাছাড়া যাকাত এক প্রকারের ইবাদত বিধায় শিশুর ওপর তা ফরজ হবে না, যেমন সালাত ও রোযা শিশুর ওপর ফরজ হয় না (আল-কাসানী)। তবে অধিকাংশ আলেমদের মতে শিশুদের যাকাত পরিশোধ করাই অধিকতর দলিলসম্মত।

বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া : হানাফী মাযহাব মতে, যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার শর্ত রয়েছে। তাই পাগলের ওপর যাকাত ফরজ নয়। যুক্তি হিসেবে তাঁরা তিন প্রকারের ব্যক্তির ওপর তাখলীফের কলম তুলে নেয়ার হাদীসটি  উল্লেখ করেন। অন্যান্য মাযহাব মতে, পাগলের ওপর যাকাত ফরজ হবে, তার পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিভাবক যাকাত আদায় করবেন।

স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকের স্বাধীন হওয়া অন্যতম শর্ত। এ কারণে দাসের ওপর যাকাত ফরজ নয়। বস্তুতপক্ষে দাস কোনো সম্পদের মালিক নয়, তার সব সম্পদের মালিক তার মনিব। তাই তার ওপর যাকাত ফরজ হওয়ার কোন প্রশ্ন নেই।

নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা : যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা। শরীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদকে নিসাব বলে। যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়। এ সম্পদগুলো হলো নগদ বা ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত টাকা, স্বর্ণ, রৌপ্য, শস্য ও প্রাণী।

সম্পদের ওপর পূর্ণ মালিকানা : যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের ওপর মালিকানা ও পূর্ণাঙ্গ দখল থাকতে হবে এবং সম্পদ ব্যবহারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে, অন্যথায় যাকাত ফরজ হবে না। যেমন জনকল্যাণে ওয়াকফকৃত সম্পদে যাকাত নেই। তবে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য ওয়াকফ করা হলে তার যাকাত দিতে হবে।

যৌথ মালিকানাভুক্ত সম্পত্তির যাকাত : কোন সম্পদের দুই বা ততোধিক মালিক থাকলে প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশের যাকাত দেবেন। যদি প্রত্যেক মালিকের অংশ আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ না হয় তাহলে কাউকে যাকাত দিতে হবে না। যদি কারো অংশ নিসাব পরিমাণ হয় তবে তাকে যাকাত দিতে হবে।

হারাম সম্পদের যাকাত : চুরি, ডাকাত, সুদ, ঘুষ, ছিনতাই, রাহাজানি, অবৈধ ব্যবসা ইত্যাদি অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ হারাম বা অবৈধ সম্পদ বলে গণ্য। হারাম পন্থায় উপার্জনকারী ব্যক্তি ওই সম্পদের মালিক নয়। অতএব, তা খরচের অধিকারও তার নেই। যাকাত প্রদানও এক ধরনের খরচ।

সম্পদ বর্ধনযোগ্য হওয়া : যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রকে সহযোগিতা এবং তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা। কিন্তু নিশ্চয়ই আল্লাহ চান না যে, যাকাত আদায় করে ধনী ব্যক্তি দরিদ্র হয়ে যাক। সম্পদ যদি বর্ধনশীল না হয় এবং তা হতে বছরের পর বছর যাকাত আদায় করা হতে থাকে, তাহলে ধনী ব্যক্তি এক সময় দরিদ্র্য হয়ে যাবে। তাই যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া অপরিহার্য।

সম্পদ একবছর অধিকারে থাকা : কোন সম্পদ যদি এক বছরের কম সময়ে হাতে থাকে, তবে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না। এ শর্তটি নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য, চতুষ্পদ জন্তু ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একবছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কোন সম্পদে যাকাত নেই’। (সুনানে আবু দাউদ)

সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া: হানাফী মাযহাবের আলিমগণ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অতিরিক্ত একটি শর্তারোপ করেন, সেটি হলো যাকাতযোগ্য সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয় না। যে ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ নেই তাকে ধনী বলা যায় না। আর যাকাত ফরজ করা হয়েছে ধনীদের ওপর। রাসূলুল্লাহ (সা.) যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে মু’আয (রা.)কে বলেছিলেন, ‘এটি ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করতে হবে।’ (সহীহ আল বুখারী)

ঋণমুক্ত হওয়া : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির সম্পদের প্রথম হকদার হলো পাওনাদার। তাই প্রথমে ঋণ আদায় করতে হবে। অবশিষ্ট সম্পদ নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কারো ওপর ঋণ থাকলে সে যেন প্রথমে তা শোধ করে, তারপর বাকি সম্পদের যাকাত আদায় করবে।’ (মুয়াত্তা)

মৃত ব্যক্তির যাকাত : কোনো ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে কিন্তু তিনি তা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ হতে ওয়ারিশগণ বা সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক যাকাত আদায় করবেন।

বহির্বিশ্বে রক্ষিত সম্পদের যাকাত : কারো সম্পদ যদি বিদেশের ব্যাংকে থাকে কিংবা কেউ যদি বিদেশে ব্যবসা করেন এবং ওই সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়, তবে তাকে যাকাত আদায় করতে হবে। বিদেশে শরীয়াহ নির্ধারিত খাতে যাকাত বণ্টন করার সুযোগ থাকলে তিনি সেখানে বণ্টন করতে পারবেন, অন্যথায় নিজ দেশে যাকাত আদায় করবেন।

কয়েদি বা সাজাপ্রাপ্ত আসামীর যাকাত : কারাদণ্ড বা বন্দিদশা যাকাত রহিত করে না। কারাবন্দী সে হাজতি হোক বা সাজাপ্রাপ্ত হোক নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে যাকাত দিতে হবে। তার পক্ষ হতে তার পরিবারের সদস্য বা তার সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক যাকাত আদায় করবেন। যদি তা না হয় মুক্তিলাভের পর পূর্বের বছরগুলোর যাকাত তাকে হিসাব করে আদায় করতে হবে।

মুসাফিরের যাকাত : সফরের কারণেও যাকাতের বিধান রহিত হয় না। মুসাফির ব্যক্তি (সফরকারী ব্যক্তি) যদি নিজ দেশে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন তাহলে ওই সম্পদের যাকাত দিতে হবে। এটা সত্য যে, সম্পদশালী মুসাফিরও যদি বিদেশে বিপদগ্রস্ত হন তাহলে তিনি যাকাত গ্রহণ করতে পারেন। তাই বলে এ বিধানের বলে দেশে রক্ষিত সম্পদের ওপর যাকাতের আবশ্যকতা রহিত হয় না।

                                                                                



নিসাব (نصاب الزكوة)

বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 


নিসাব (نصاب الزكوة)আরবি শব্দ। ইসলামী শরিয়তের পারিভাষায় যাকাতের নিসাব হলো যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ। নিসাবের বিবরণ- যেই পরিমাণ সম্পদ হলে যাকাত ফরজ হবে তাকে নিসাব বলে।

০১. স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হল বিশ মিসকাল, আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হাদীস ৭০৭৭,৭১০৪)।

০২. রূপার ক্ষেত্রে নিসাব হল দুইশত দেরহাম। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৯) আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমান সোনা রূপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।

০৩. প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বানিজ্য দ্রব্যের মুল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নেসাব পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭)।

০৪. যদি সোনা- রূপা, টাকা-পয়সা, কিংবা বাণিজ্য দ্রব্য এগুলোর পৃথকভাবে নেসাব পরিমান না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমান রয়েছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১)।

০৫. নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্য পণ্যের যাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস, ৬/৩৯০)

০৬. কারো কাছে সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য দ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমান ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোন সুত্রে পাওয়া গেল। এ ক্ষেত্রে নতুন পাওয়া সম্পদ পুরাতন সম্পদের সাথে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবেনা । (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক হাদীস ৬৮৭২, ৭০৪০, ৭০৪৪)

০৭.  বছরের শুরু ও শেষে নেসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্যই বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় তাহলে ঐ সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে। এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে।



রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২

দোয়া আয়াতুল কুরসী

রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

দোয়া আয়াতুল কুরসী

দোয়া :اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-


উচ্চারণ : আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)


অর্থ : আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।



সূরা আত ত্বীন

রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে


সূরা আত ত্বীন
সূরা আত ত্বীন

وَ التِّیۡنِ وَ الزَّیۡتُوۡنِ ۙ﴿۱
শপথ ‘তীন ও ‘যায়তূন-এর,

وَ طُوۡرِ سِیۡنِیۡنَ ۙ﴿۲
শপথ ‘সিনাই পর্বতের

وَ ہٰذَا الۡبَلَدِ الۡاَمِیۡنِ ۙ﴿۳
এবং শপথ এই নিরাপদ নগরীর,

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫﴿۴
আমি তো সৃষ্টি করিয়াছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে,

ثُمَّ رَدَدۡنٰہُ اَسۡفَلَ سٰفِلِیۡنَ ۙ﴿۵
অতঃপর আমি উহাকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিণত করি-

اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَہُمۡ اَجۡرٌ غَیۡرُ مَمۡنُوۡنٍ ؕ﴿۶
কিন্তু তাহাদেরকে নয় যাহারা মু'মিন ও সৎকর্মপরায়ণ; ইহাদের জন্য তো আছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।

فَمَا یُکَذِّبُکَ بَعۡدُ بِالدِّیۡنِ ؕ﴿۷
সুতরাং ইহার পর কিসে তোমাকে কর্মফল সম্বন্ধে অবিশ্বাসী করে ?

اَلَیۡسَ اللّٰہُ بِاَحۡکَمِ الۡحٰکِمِیۡنَ ٪﴿۸
আল্লাহ্ কি বিচারকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক নন?



ইস্তেগফার

রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে


উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহা মিন কুল্লি যানবিও ওয়া আতুবু ইলাইহি, লা-হাওলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।

অর্থ : অর্থ : আমি আল্লাহর নিকট সব গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই। মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর সাহায্য ছাড়া নেক কাজ করা ও অন্যায় কাজ হতে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।



১ম রমজানের দোয়া

রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে

 

১ম রমজানের দোয়া

দোয়া :اَللّهُمَّ اجْعَلْ صِيامي فيهِ صِيامَ الصّائِمينَ وَ قِيامي فيِهِ قِيامَ القائِمينَ ، وَ نَبِّهْني فيهِ عَن نَوْمَةِ الغافِلينَ ، وَهَبْ لي جُرمي فيهِ يا اِلهَ العالمينَ ، وَاعْفُ عَنّي يا عافِياً عَنِ المُجرِمينَ

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার আজকের রোজাকে প্রকৃত রোজাদারদের রোজা হিসেবে গ্রহণ কর। আমার নামাজকে কবুল কর প্রকৃত নামাজীদের নামাজ হিসেবে। আমাকে জাগিয়ে তোলো গাফিলতির ঘুম থেকে। হে জগত সমূহের প্রতিপালক! এদিনে আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। ক্ষমা করে দাও আমার যাবতীয় অপরাধ। হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী।



রামাদানের পবিত্র রাত্রিতে নফল ইবাদত

রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
রামাদানের পবিত্র রাত্রিতে নফল ইবাদত


আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ২, হাদিস নম্বরঃ ৩৭)

লাইলাতুল ক্বাদরে রাত্রি যাপন

রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে
লাইলাতুল ক্বাদরে রাত্রি যাপন


আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত্রি জাগবে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী , অধ্যায়ঃ ২, হাদিস নম্বরঃ ৩৫)।


যাকাত বন্টনের নির্ধারিত সমূহ

রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 0
বার দেখা হয়েছে



প্রথম খাত : ফকির- ফকির হলো সেই ব্যক্তি যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। যে ব্যক্তি রিক্তহস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকির। যেসব স্বল্প সামর্থ্যের দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্ট করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারাই ফকির। কারো মতে যার কাছে একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকীর।

দ্বিতীয় খাত : মিসকীন - মিসকীন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই, যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যেসব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সওয়াল করতে বাধ্য হয়, নিজের পেটের আহারও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকীন । মিসকীন হলো যার কিছুই নেই, সুতরাং যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকির বা মিসকীন যাকেই জাকাত দেয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয়।

তৃতীয় খাত : আমেলীন- ইসলামি সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে যাকাত, উসর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান, সংরক্ষণ ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এদের পারিশ্রমিক যাকাতের খাত থেকেই আদায় করা যাবে। কোরআনে বর্ণিত আটটি খাতের মধ্যে এ একটি খাতই এমন, যেখানে সংগৃহীত যাকাতের অর্থ থেকেই পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো এতে ফকীর বা মিসকীন হওয়া শর্ত নয়। পক্ষান্তরে, অবশিষ্ট ৫টি খাতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ দূরীকরণে যাকাত আদায় শর্ত।

চতুর্থ খাত : মুমু'আল্লাফাতুল কুলুব (চিত্ত জয় করার জন্য)- নতুন মুসলিম যার ঈমান এখনো পরিপক্ক হয়নি অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক অমুসলিম। যাদের চিত্ত (দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করে) আকর্ষণ ও উৎসাহিত করণ আবশ্যকীয় মনে করে যাকাত দান করা হয়, যাতে তাদের ঈমান পরিপক্ক হয়। এ খাতের আওতায় দুঃস্থ নওমুসলিম ব্যক্তিদের যাকাত প্রদানের ব্যাপারে ফকিহরা অভিমত প্রদান করেছেন।

পঞ্চম খাত : ক্রীতদাস/বন্দী মুক্তি- এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী/বন্দী মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যায়ভাবে কোনো নিঃস্ব ও অসহায় ব্যক্তি বন্দী হলে তাকেও মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। বর্তমান সময়ে ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্ত  হওয়ায় এই খাতটি আর বিবেচ্য নয়। 

ষষ্ঠ খাত : ঋণগ্রস্থ- এ ধরনের ব্যক্তিকে তার ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে- সেই ঋণগ্রস্থের কাছে ঋণ পরিশোধ পরিমাণ সম্পদ না থাকা। আবার কোনো ইমাম এ শর্তারোপও করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোনো অবৈধ কাজের জন্য- যেমন মদ কিংবা নাজায়েয প্রথা অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যয় না করে।

সপ্তম খাত : আল্লাহর পথে-  সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং নিঃস্ব ও অসহায় গরীব দ্বীনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে যাকাত প্রদান করা যাবে। এ ছাড়াও ইসলামের মাহাত্ম ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে যারা জীবিকা অর্জনের  এবং যে আলিমগণ দ্বীনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না। তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া যাবে।

অষ্টম খাত : অসহায় মুসাফির- যে সমস্ত মুসাফির অর্থ কষ্টে নিপতিত তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পুরণ হওয়ার মতো এবং বাড়ী ফিরে আসতে পারে এমন পরিমাণ অর্থ যাকাত থেকে প্রদান করা যায়।

এক নজরে জাকাত আদায় না করার পরিণতি :

০১. যাকাত না দেয়া প্রতিটি সম্পদের একটি আকৃতি হবে। যা আগুনে উত্তপ্ত করে ব্যক্তির শরীরে দাগিয়ে দেয়া হবে।

০২. কোনো কোনো সম্পদ বিষাক্ত সাপে পরিণত হবে এবং যাকাত আদায়কারীকে দংশন করতে থাকবে।

০৩. প্রাণী জাতীয় সম্পদসমূহ কোনটা শিং দিয়ে আঘাত করবে আবার কোনটা দাঁত দিয়ে কামড় দেবে।

যাকাত আদায়ের বিবিধ উপকারিতা ও শিক্ষা :

০১. গরীবের প্রযোজন পূর্ণ হয়।

০২. অভিশপ্ত পুঁজিতন্ত্রের মূলোৎপাটন হয়।

০৩. সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসিকতাকে শেষ করে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।

০৪. মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

০৫. দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

০৬. চুরি-ডাকাতি-চিনতাইসহ সবরকম অভাবজনিত অপরাধ মূলোৎটাটিত হয়।

০৭. গরীব-ধনীর মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়।

০৮. সম্পদের বরকত ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যাকাতের সম্পদ কমে না। (সহিহ মুসলিম- হা : ৬৭৫৭, মা :, শা :, হা: ৬৯/২৫৮৮, জামি আত তিরমিযী-হা : ২০২৯, সহিহ)।

অথাৎ- হয়তো দৃশ্যত: সম্পদের পরিমাণ কমবে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই স্বল্প সম্পদের মাঝেই বেশি সম্পদের কার্যকারী ক্ষমতা দিয়ে দেবেন।

০৯. সম্পদের পরিধি বৃদ্ধি পায়। কেননা সম্পদ যখন যাকাতের মাধ্যমে অভাবীদের মাঝে বন্টিত হয়, তখন এর উপকারিতার পরিধি বিস্তত হয়। আর যখন তা ধনীর পকেটে কুক্ষিগত থাকে, তখন এর উপকারিতার পরিধিও সংকীর্ণ হয়।

১০. যাকাত প্রদানকারী দান ও দয়ার গুণে গুণান্বিত হয়।

১১. অন্তরে অভাবীর প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হয়।

১২. কৃপণতার ন্যায় অসৎ গুণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‘তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করো; যেন তুমি সেগুলোকে এর মাধ্যমে পবিত্র ও বরকতময় করতে পার।’ (সূরা : আত তাওবাহ, আয়াত : ১০৩)


ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png