LIVE
Loading latest headlines...

শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

সিয়াম কী? সিয়াম রাখার ফজীলত কী?

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

সিয়াম এর সংজ্ঞা : সিয়ামুন’ শব্দটি ‘সাওমুন’-এর বহুবচন। এটি একটি আরবি শব্দ এবং ইসলামের ধর্মীয় পরিভাষাগুলোর অন্যতম। যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। আর পারিভাষিক অর্থে সাওম বা সিয়াম বলতে কোনো মুমিন ব্যক্তি মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনের নিয়তে তাঁরই নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য-পানীয় ও যৌনতা থেকে বিরত থাকাকে বোঝায়। সাওমকে আমরা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ রোজা বলে জানি।

সিয়াম রাখার  ফজিলতসমূহ : এক. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের সাথে সিয়ামের সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন। এমনিভাবে তিনি সকল ইবাদত-বন্দেগি থেকে সিয়ামকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। যেমন তিনি এক হাদিসে কুদসিতে বলেন :— كل عمل ابن آدم لـه إلا الصيام، فإنه لي وأنا أجزى به. رواه مسلم মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম) এ হাদিস দ্বারা আমরা অনুধাবন করতে পারি নেক আমলের মাঝে সিয়াম পালনের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কত বেশি।
 তাই সাহাবি আবু হুরায়রা রা. যখন বলেছিলেন - يا رسول الله مرني بعمل، قال عليك بالصوم فإنه لا عدل لـه. رواه النسائي হে রাসূলুল্লাহ ! আমাকে অতি উত্তম কোন নেক আমলের নির্দেশ দিন।
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তুমি সিয়াম পালন করবে। মনে রেখ এর সমমর্যাদার কোন আমল নেই। (নাসায়ি) সিয়ামের এত মর্যাদার কারণ কী তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভাল জানেন। তবে, আমরা যা দেখি তা হল, সিয়াম এমন একটি আমল যাতে লোক দেখানো ভাব থাকে না। বান্দা ও আল্লাহ তাআলার মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়। সালাত হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি কে করল তা দেখা যায়। পরিত্যাগ করলেও বুঝা যায়। কিন্তু সিয়াম পালনে লোক দেখানো বা শোনানোর ভাবনা থাকে না। ফলে সিয়ামের মধ্যে এখলাস বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা নির্ভেজাল ও বেশি থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন :— يدع شهوته وطعامه من أجلي সিয়াম পালনকারী আমার জন্যই পানাহার ও যৌনতা পরিহার করে। তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছুর আশা করে না। দুই. সিয়াম আদায়কারী বিনা হিসাবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি ও সৎ কর্মের প্রতিদান বিনা হিসাবে দেয়া হয় না। বরং প্রত্যেকটি নেক আমলের পরিবর্তে আমলকারীকে দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত প্রতিদান দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :— كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالـها إلى سبع مئة ضعف. قال الله عز وجل: ( إلا الصوم فإنه لي وأنا أجزى به . . . মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-কিন্তু সিয়ামের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধু আমার জন্য আমিই তার প্রতিদান দেব। বর্ণনায় : মুসলিম সারা জাহানের সর্বশক্তিমান প্রতিপালক আল্লাহ নিজেই যখন এর পুরস্কার দেবেন তখন কি পরিমাণে দেবেন ? ইমাম আওজায়ী র. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ যে সিয়াম আদায় কারীকে প্রতিদান দেবেন তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না। তিন. সিয়াম ঢাল ও কুপ্রবৃত্তি থেকে সুরক্ষা: সিয়াম পালনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কু-প্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন :— يا معشر الشباب! من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر، وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء. متفق عليه হে যুবকেরা ! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষা দেয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার রক্ষা কবচ। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম এমনিভাবে সিয়াম সকল অশ্লীলতা ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখে। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :— والصيام جنة، فإذا كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث يومئذ ولا يصخب، فإن سابه أحد أو قاتله فليقل إني امرأ صائم. رواه مسلم সিয়াম হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম পালনকারী। বর্ণনায় : মুসলিম সিয়াম পালনকারী যেমনি নিজের অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তেমনি সকল অশ্লীল আচরণ, ঝগড়া-বিবাদ, অনর্থক কথা ও কাজ থেকে নিজের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হেফাজত করবে। চার. সিয়াম জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল।
যেমন হাদিসে এসেছে - الصيام جنة، وحصن حصين من النار. رواه أحمد সিয়াম হল ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ। বর্ণনায় : আহমদ। বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে - من صام يوما في سبيل الله باعد الله وجهه عن النار سبعين خريفا. رواه مسلم যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (সত্তুর বছরের) দুরত্বে সরিয়ে দেবেন। বর্ণনায়: মুসলিম উলামায়ে কেরাম বলেছেন, আল্লাহর পথে সিয়াম পালনের অর্থ হল : শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিয়াম পালন করা। এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা বহু সিয়াম পালনকারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

যেমন হাদিসে এসেছে - إن لله تعالى عند كل فطر عتقاء من النار، وذلك كل ليلة. رواه أحمد ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এটা রমজানের প্রতি রাতে। বর্ণনায় : আহমদ পাঁচ. সিয়াম হল জান্নাত লাভের পথ।

হাদিসে এসেছে - عن أبي هريرة رضي الله عنه أنه قال: يا رسول الله مرني بأمر ينفعني الله به، قال: عليك بالصوم فإنه لا مثل له. رواه النسائي 
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন : তুমি সিয়াম পালন করবে। কেননা, এর সমকক্ষ কোন কাজ নেই। বর্ণনায় : নাসায়ি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য সিয়ামের সাথে কোন আমলের তুলনা হয় না। সিয়াম পালনকারীদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহের আরেকটি দৃষ্টান্ত হল তিনি সিয়াম পালনকারীদের জন্য জান্নাতে একটি দরজা নির্দিষ্ট করে দেন। যে দরজা দিয়ে সিয়াম পালনকারীরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করবে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :— إن في الجنة بابا يقال له الريان، يدخل منه الصائمون يوم القيامة لا يدخل منه أحد غيرهم، يقال: أين الصائمون ؟ فيقومون لا يدخل منه أحد غيرهم، فإذا دخلوا أغلق، فلم يدخل منه أحد. متفق عليه জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রইয়ান। কেয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায় ? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম ছয়. সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম। 

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :— والذي نفس محمد بيده لخلوف فم الصائم أطيب عند الله من ريح المسك. رواه الشيخان যার হাতে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন সে সত্তার শপথ, সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে মেশকের ঘ্রাণ হতেও প্রিয়। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম। মুখের গন্ধ বলতে পেট খালি থাকার কারণে যে গন্ধ আসে সেটাকে বুঝায়। দাঁত অপরিষ্কার থাকার কারণে যে গন্ধ সেটা নয়। সাত. সিয়াম ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের মাধ্যম।

যেমন হাদিসে এসেছে - للصائم فرحتان: فرحة عند فطره، وفرحة عند لقاء ربه. متفق عليه সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ : একটি হল ইফতারের সময় অন্যটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম ইফতারের সময় আনন্দ হল এ কারণে যে সিয়াম পূর্ণ করতে পারল ও খাবার-দাবারের অনুমতি পাওয়া গেল। এটা বাস্তব সম্মত আনন্দের বিষয় যা আমাদের সকলের বুঝে আসে ও অনুভব করি। অপরদিকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের যে আনন্দ তা অনুভব করতে আমরা এখন না পারলেও কেয়ামতের দিন পারা যাবে। যখন সকল মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহমুখী থাকবে। আট. সিয়াম কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। 
হাদিসে এসেছে - عن عبد الله بن عمرو أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: (الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام أي رب: منعته الطعام والشهوات بالنهار، فشفعني فيه. ويقول القرآن : منعته النوم بالليل، فشفعني فيه. قال: فيشفعان. رواه أحمد আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সিয়াম ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক ! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কোরআন বলবে হে প্রতিপালক ! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। বর্ণনায় : আহমদ নয়. সিয়াম হল গুনাহ মাফ ও গুনাহের কাফফারা। সিয়াম হল অনেকগুলো নেক আমলের সমষ্টি। আর নেক আমল পাপকে মুছে দেয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :— إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ (سورة هود:114) সৎকর্ম অবশ্যই পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। সূরা হুদ : ১১৪ বহু হাদিস রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, নেক আমলকে বিভিন্ন ছোট খাট পাপ সমূহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ নেক আমলের কারণে গুনাহ সমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। 
যেমন হাদিসে এসেছে - فتنة الرجل في أهله وماله وجاره تكفرها الصلاة والصيام والصدقة. رواه البخاري ومسلم মানুষ যখন পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী ও ধন-সম্পদের কারণে গুনাহ করে ফেলে তখন সালাত, সিয়াম, সদকা সে গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম আর রমজান তো গুনাহ মাফ ও মিটিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি সুযোগ দিয়েছে। 
হাদিসে এসেছে - من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر لـه ما تقدم من ذنبه. رواه الشيخان যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম ইহতিসাবের অর্থ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পাওয়া যাবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার সাথে সন্তুষ্টচিত্তে আদায় করা।
 হাদিসে আরো এসেছে - الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر. رواه مسلم পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এর মধ্যবর্তী সময় ও এক জুমআ থেকে অপর জুমআও এক রমজান থেকে অপর রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে সকল পাপ হয়ে যায় তার কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হিসেবে সালাতকে গ্রহণ করা হয়, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। সিয়াম ছোট পাপগুলোকে মিটিয়ে দেয় আর তাওবা করলে কবিরা গুনাহ মাফ করা হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন :— إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا( النساء :31) তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের লঘুতর পাপগুলো ক্ষমা করে দেব। এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব।

 সূরা নিসা : ৩১ এ আয়াত ও হাদিস দুটো দ্বারা প্রমাণিত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ক্ষমার ওয়াদা করা হয়েছে তা তিনটি শর্ত সাপেক্ষে।

প্রথম : রমজানের সিয়াম পালন করতে হবে ঈমানের সাথে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এবং সিয়াম যে একটি ফরজ ইবাদত এর প্রতি বিশ্বাস। সিয়াম পালনকারীকে আল্লাহ যে সকল পুরস্কার দেবেন তার প্রতি বিশ্বাস রাখা। 

দ্বিতীয় : সিয়াম পালন করতে হবে ইহতিসাবের সাথে। ইহতিসাব অর্থ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব ও পুরস্কারের আশা করা, তাকে সন্তুষ্ট করতেই সিয়াম পালন করা আর সিয়ামকে বোঝা মনে না করা।

তৃতীয় : কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। কবিরা গুনাহ ঐ সকল পাপকে বলা হয় যেগুলোর ব্যাপারে ইহকালীন শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে, পরকালে শাস্তির ঘোষণা রয়েছে, অথবা আল্লাহর ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে লানত (অভিসম্পাত) বা ক্রোধের ঘোষণা রয়েছে। যেমন, শিরক করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা, ব্যভিচার করা, জাদু-টোনা, অন্যায় হত্যা, মাতা-পিতার সাথে দুর্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা মামলা, মাদক সেবন, ধোঁকাবাজি, মিথ্যা শপথ, অপবাদ দেয়া, গিবত বা পরদোষচর্চা, চোগলখোরি, সত্য গোপন করা -ইত্যাদি। 

কোন ধরনের সিয়াম এ সকল ফজিলত অর্জন করতে পারে :— যে সকল ফজিলত ও সওয়াবের কথা এতক্ষণ আলোচনা করা হল তা শুধু ঐ ব্যক্তি লাভ করবে যে নিম্নোক্ত শর্তাবলি পালন করে সিয়াম আদায় করবে। 

(১) সিয়াম একমাত্র আল্লাহর জন্য আদায় করতে হবে। মানুষকে দেখানো বা শোনানো অথবা মানুষের প্রশংসা অর্জন কিংবা স্বাস্থ্যের উন্নতির নিয়তে সিয়াম আদায় করবে না। 

(২) সিয়াম আদায়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূলের সুন্নত অনুসরণ করতে হবে। সেহরি, ইফতার, তারাবীহসহ সকল বিষয় রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী আদায় করতে হবে।

(৩) শুধু খাওয়া-দাওয়া ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকলে যথেষ্ট হবে না। মিথ্যা, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি, ঝগড়া-বিবাদ সহ সকল প্রকার অবৈধ কাজ হতে বিরত থাকতে হবে। মুখ যেমন খাবার থেকে বিরত থাকে, তেমনিভাবে চোখ বিরত থাকবে অন্যায় দৃষ্টি থেকে, কান বিরত থাকবে অনর্থক কথা ও গান-বাজনা শোনা থেকে, বা বিরত থাকব অন্যায়-অসৎ পথে চলা থেকে। সিয়াম পালনে মহান উদ্দেশ্য এটাই যে, সিয়াম পালনকারী শরিয়তের দৃষ্টিতে সকল প্রকার অন্যায় ও গর্হিত আচার-আচরণ থেকে নিজেকে হেফাজত করবে। অতএব সিয়াম হল সকল ভাল বিষয় অর্জন ও অন্যায়-গর্হিত কাজ ও কথা বর্জন অনুশীলনের একটি শিক্ষালয়। 

তাইতো দেখা যায় রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :— من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل فليس لله حاجة أن يدع طعامه وشرابه. رواه البخاري যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।

 বর্ণনায় : বোখারি তিনি আরো বলেছেন :— رب صائم حظه من صيامه الجوع والعطش، ورب قائم حظه من قيامه السهر. رواه أحمد অনেক সিয়াম পালনকারী আছে যারা তাদের সিয়াম থেকে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা অর্জন করে। আবার অনেক সালাত আদায়কারী আছে যারা তাদের সালাত থেকে শুধু রাত-জাগা লাভ করে থাকে। (এ ছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রতিদান লাভ করে না) বর্ণনায় : আহমদ



লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ

(আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই, মুহাম্মদ সা. তাঁর রাসুল)
এটা হলো কালিমায়ে তাইয়েবা (মহা পবিত্র বাক্য)। ইসলামে প্রবেশের একমাত্র দরজা। এর উপর স্থাপিত দ্বীন ও ঈমানের আকাশ-ছোঁয়া মিনার। আজন্ম কাফের-মুশরিকও যদি এ কালিমা গ্রহণ করে এবং বিশ্বাসের সঙ্গে পাঠ করে তাহলে মুহূর্তের মধ্যে সে মুমিন ও মুসলমানরূপে আত্মপ্রকাশ করে; দুনিয়া ও আখেরাতের চির মুক্তি ও নাজাতের অধিকারী হতে পারে। তবে শর্ত হলো এ কালিমার মাধ্যমে মহান আল্লাহর তাওহীদ এবং প্রিয় নবীর রেসালাতের যে স্বীকৃতি সে দান করলো তাকে তা বুঝতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে এবং মনে প্রাণে মেনে নিতে হবে। কিন্তু সে যদি তাওহীদ ও রেসালাতের মর্ম মোটেই বুঝতে না পারে, শুধু মুখে উচ্চারণ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলার নিকট সে মুসলমানরূপে গণ্য হতে পারবে না। এ-জন্য কালিমায়ে তাইয়েবার অর্থ ও মর্ম শিখে নেওয়া জরুরি।


কালিমার প্রথম অংশ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
এর মাঝে আল্লাহ তাআলার তাওহীদের স্বীকারোক্তি নিহিত। এই স্বীকারোক্তির মর্ম ও মতলব হলো, মহান আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত এমন কিছু নেই, যা ইবাদত ও উপাসনার উপযুক্ত হতে পারে। বরং ইবাদত-বন্দেগী কেবলি আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য। তিনিই ¯্রষ্টা, তিনিই কর্তা, রিযিকদাতা, পালনকর্তা। শুধু তিনিই জীবনদাতা, কেবল তিনিই মৃত্যুদাতা, রোগদাতা-আরোগ্যদাতা। উপকার-অপকার, স্বচ্ছলতা-দরিদ্রতা মোটকথা, জগতের সকল ভাঙ্গাগড়ার একমাত্র মালিক তিনি। আসমান জমিনের সবকিছু মানুষ হোক, ফেরেশতা হোক অন্য আর যাইহোক সবই তাঁর সৃষ্টি, তাঁর হুকুমের গোলাম। কোনো সমকক্ষ নেই তাঁর। তাঁর রাজত্বে কারো কোন অংশ নেই। কারো কোনো শক্তি নেই তাঁর কাজে ব্যাঘাত ঘটাবার। সুতরাং তিনিই, শুধুই তিনি ইবাদতের উপযুুক্ত। সুখে-দুঃখে হৃদয় কেবলি তাঁর দিতে ছুটে যাবে। বিপদে-আপদে, জীবনের সকল প্রয়োজনে মানুষ তাঁরই দরবারে হাত ওঠাবে, অশ্রু ঝরাবে এবং ফরিয়াদ জানাবে। তিনি প্রকৃত বাদশাহ। দুনিয়ার সমস্ত হাকিমের চেয়ে বড় তিনি। মহীয়ান তিনি। গরীয়ান তিনি। সুতরাং তাঁরই হুকুম মান্য করা উচিৎ। পরম আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু তাঁর হুকুম মোতাবেক জীবন যাপন করা উচিত। তাঁর হুকুম লংঘন করে কখনো কারো কথায় কর্ণপাতই করা উচিৎ নয়। সে যেই হোক; দেশের সরকার, বংশের সরদার, আপন পিতা, অন্তরঙ্গ বন্ধু এমনকি নিজের দিলের চাহিদা কিংবা অন্তরের প্রত্যাশা হলেও না।


আমরা আল্লাহ তাআলাকেই ইবাদতের উপযুুক্ত বলে জেনেছি, মেনে নিয়েছি এবং তাঁর গোলামি এখতিয়ার করে নিয়েছি। এবার আমাদেরকে আমেিদর বিশ্বাসের অনুরূপ কাজ করে দেখাতে হবে। দুনিয়াদারেরা যেন বুঝতে পারে, আমরা এক আল্লাহর গোলাম। আমরা কেবল আল্লাহর হুকুম মতো চলি। আল্লাহর জন্য বাঁচতে চাই, আল্লাহর জন্যই মরতে প্রস্তুত থাকি।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এটা আমাদের স্বীকৃতি ও ঘোষণা।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এটা আমাদের বিশ্বাস ও চেতনা।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এটাই আমাদের কাজ ও প্রেরণা।

হে প্রিয় ভাই!
ঈমানী প্রাসাদের প্রথম ইট হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এটাই ছিলো উম্মতের প্রতি সকল নবী-রাসুলের প্রথম সবক। দ্বীনের সকল বিষয়ের মাঝে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর মর্যাদা সর্বাধিক। নবীজী ইরশাদ করেন,
الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ: أَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ
ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে। তার মাঝে সর্বোত্তম শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর প্রবক্তা হওয়া। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৭৬


এ জন্য সমস্ত যিকিরের মাঝে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। এক হাদীসে এসেছে,

أَفْضَلُ الذِّكْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
যিকির সমূহের মাঝে শ্রেষ্ঠ যিকির হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৮০০

অপর একটি হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে বলেন,
يَا مُوسَى لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَالْأَرَضِينَ السَّبْعِ فِي كِفَّةٍ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فِي كِفَّةٍ، مَالَتْ بِهِمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ. أَخْرَجَه النَّسَائِيُّ بِسَنَدٍ صَحِيحٍ كما قال ابن حجر في فتح الباري.
হে মুসা! সাত তবক আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে, সবি যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, আর অন্য পাল্লায় শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ রাখা হয়, তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লাই ভারী হয়ে যাবে। সুনানে কুবরা নাসাঈ, হাদীস নং ১০৬০২

কালিমায়ে তাইয়েবার এই অংশটুকুর এত ওজন ও ফজিলত এজন্য যে, এর ভেতর আল্লাহ তাআলার তাওহীদ ও একত্ববাদের স্বীকৃতি রয়েছে। তাঁর ইবাদত করা এবং তাঁর হুকুম মতো চলার অঙ্গীকার নিহিত আছে। এটাই ঈমানের রূহ এবং প্রাণস্পন্দন। নবীজী উম্মতকে বারবার এই কালিমা পাঠ করে ঈমান তাজা করার জন্য নসীহত করেছেন

جَدِّدُوا إِيمَانَكُمْ. قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيْفَ نُجَدِّدُ إِيمَانَنَا؟ قَالَ: أَكْثِرُوا مِنْ قَوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ. قال الهيثمي إِسْنَادُهُ جَيِّدٌ.
হে লোকসকল! তোমরা সব সময় তোমাদের ঈমানকে তরতাজা রাখার চেষ্টা করো। কতক সাহাবী আরজ করলেন, ঈমান তাজা রাখার উপায় কী? নবীজী ইরশাদ করলেন, বেশী বেশী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর যিকির করো। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮৭১০


এই কালিমার যিকির দ্বারা ঈমান তাজা হওয়ার কারণ হলো এতে আল্লাহ তাআলার বন্দেগীর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়। সর্বাবস্থায় তাঁর প্রতি নিবিষ্ট এবং তাঁর মুহাব্বত ও ভালোবাসায় নিমগ্ন থাকার প্রেরণা সৃষ্টি হয়। সুতরাং যত গভীর ধ্যান ও পরম উপলব্ধির সঙ্গে আমরা বেশী বেশী এই কালিমার যিকির করবো, নিশ্চিতভাবে আমাদের ঈমান সে পরিমাণ তাজা হতে থাকবে, ঈমানের মজবুতি ততই বাড়তে থাকবে ইনশাআল্লাহ। এভাবে এক সময় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’এর যিকিরই আমাদের সর্বক্ষণের আমল হয়ে যাবে এবং এর দাবী অনুযায়ী জীবন যাপন আমাদের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হবে।

সুতরাং, হে মুসলমান ভাই! আসুন আমরা খাঁটি দিলে ধ্যানের সঙ্গে বেশী বেশী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ যিকির করি, যাতে আমরা ঈমান তাজা রাখতে পারি। আমাদের জীবনকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর ছাঁচে ঢেলে সাজাতে পারি।


কালিমার দ্বিতীয় অংশ: মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ

কালিমার এই অংশে মুহাম্মদ সাল্লালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নবী হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে নবীজীকে পৃথিবীবাসীর হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করা এবং কোরআন আল্লাহ তাআলার বাণী হওয়া, ফেরেশতার বিদ্যমানতা, কেয়ামত সংঘটিত হওয়া, মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হওয়া, নেককারের জন্য জান্নাত এবং বদকারের জন্য জাহান্নামের ফয়সালা হওয়া ইত্যাদি যত সংবাদ নবীজী দান করেছেন, সবই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস করা। নবীজী আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অকাট্য ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভের পর উম্মতকে তা জানিয়েছেন। এর মাঝে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। এমনিভাবে নবীজী অন্যান্য যে সকল হেদায়েত দান করেছেন, যে সমস্ত হুকুম-আহকাম ও বিধানাবলী বর্ণনা করেছেন, সেগুলো মূলত আল্লাহরই আহকাম ও হেদায়েত। আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে নবীজীর অন্তরে সেগুলো ঢেলে দিয়েছেন।

এই আলোচনা থেকে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, কাউকে আল্লাহর নবী ও রাসুল হিসেবে মেনে নেওয়ার অর্থ তাঁর প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। কারণ আল্লাহ তাআলা যে বিধানাবলীর উপর মানব ম-লীকে চালাতে চান, সে বিধানগুলিই নবীর মাধ্যমে বান্দাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ
আমি কেবল এজন্য নবী প্রেরণ করেছি যে, আমার হুকুমে নবীর আনুগত্য করা হবে, তার আদেশ-নিষেধগুলো মান্য করা হবে। সূরা ৪, আয়াত ৬৪

মোটকথা নবীর উপর ঈমান আনার উদ্দেশ্য নবীর কথা সত্য বলে বিশ্বাস করা, তার বাতানো হেদায়েত ও শিক্ষাকে আল্লাহ তাআলার হেদায়েত ও শিক্ষা বলে মনে করা এবং তাঁর শেখানো তরিকার উপর চলার সিদ্ধান্ত নেওয়া। সুতরাং যে ব্যক্তি মুখে কালিমা পড়ে নিয়েছে, কিন্তু নবীজীর আনীত সকল বিষয়কে সত্য মনে করে না, নবীজীর তরিকার বিপরীত সকল মত ও পথকে অকার্যকর জ্ঞান করে না, নবীজীর দেয়া শরীয়ত মোতাবেক জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেয় না, আসলে সে মুসলমানই নয়। সম্ভবত সে মুসলমান হওয়ার অর্থই বুঝেনি।

আমরা যখন কালিমা পড়ে নবীজী সাল্রাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার সত্য নবী বলে স্বীকার করলাম, তখন তাঁর হুকুম মতো চলা, তাঁর দেয়া শরীয়ত অনুযায়ী আমল করা এবং তাঁর সকল কথা মান্য করা আমাদের উপর অপরিহার্য।

কালেমায়ে তাইয়েবা: একটি শপথ একটি অঙ্গীকার

কালিমার উভয় অংশের ব্যাখ্যা থেকে আপনি অনুভব করতে পেরেছেন যে, কালিমা যেন এক মহিমাময় শপথবাক্য। যার সার কথা হলো, আমি কেবল আল্লাহ তাআলাকে ইবাদতের উপযুক্ত মনে করি, দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় তার কুদরতের কব্জায় রয়েছে বলে বিশ্বাস করি। সুতরাং আমি তাঁরই বন্দেগী ও গোলামি করি। তাঁকে ভালোবাসি, তাঁর হুকুম মতো জীবন পরিচালনা করি এবং আমি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সত্য নবী বলে স্বীকার করি। জীবনের সকল বিষয়ে আমি তাঁর আনুগত্য করি, তাঁর আনীত হেদায়েতের অনুসরণ করি।

এ-ভাবে শপথ নেওয়াকেই বলে ঈমান আনা, তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া। সুতরাং এই একরারনামা স্মরণ রাখা এবং এর দাবী অনুসারে জীবন গড়া প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। তাহলে সে জান্নাতের হকদার হতে পারবে, আল্লাহ তাআলার নিকট সাচ্চা মুমিনের মর্যাদা লাভ করবে।

যে ব্যক্তি খাঁটি দিলে কালিমার দুই অংশ তথা তাওহীদ ও রেসালাত স্বীকার করবে এবং কাজেকর্মে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে, এমন খোশনসীব বান্দার জন্য বড় সুসংবাদ! নবীজী ইরশাদ করেন,

مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ
যে ব্যক্তি খাঁটি মনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর স্বাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭


আমার দ্বীনি ভাই বোন!
আসুন, এই কালিমার হাকীকত ও মাহাত্য অন্তরে নিয়ে আমরা তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দিই। এই কালিমার দাবী অনুসারে আপন আপন জিন্দেগী পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই। অন্যথায় আমাদের এই সাক্ষ্য ধোকা ও প্রতারণা বলে সাব্যস্ত হবে। আমাদের ঈমান ও ইসলাম শংকার ভিতর পড়ে যাবে। অথচ এই কালিমা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির মূলমন্ত্র। ঈমান ও ইসলামের প্রথম বুনিয়াদ। সুতরাং পরম ভক্তি ও সুগভীর বিশ্বাসের সঙ্গে বলি,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ- এটা আমার স্বীকারোক্তি, এটা আমার ঘোষণা ।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ- এ বিশ্বাস আমার, এই চিন্তা-চেতনা আমার।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এটাই দাওয়াত আমার, জীবনসূত্র আমার। এরই প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় জীবন আমার, মৃত্যু আমার।


দুআর ফযিলত ও উপকারিতা

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে

দুআতে রয়েছে প্রভূত ফযীলত, মহা পুরুস্কার, শুভ পরিণতি ও অনেক উপকার। নিম্নে তারই কিছু উল্লেখ করা হল।

(ক) দুআ ইবাদত,
দুআকারী ব্যক্তি দুআর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং পুরুস্কার প্রাপ্ত হয়: আল্লাহ বলেন: “তাদের পার্শ্ব শয্যা হতে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় কর। কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান লুকায়িত আছে।” [সাজদা: ১৬-১৭]

(খ) দুআতে রয়েছে দুআকারী ব্যক্তির আবেদনের সাড়া: মহান আল্লাহ বলেন: “তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব।” [আল-মুমিন: ৬০]
মহান আল্লাহ আরো বলেন: “আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত: আমি রয়েছি সন্নিকটে।” [১৮৬ আল বাকারা]

(গ) দুআতে রয়েছে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য ও হীনতা-দীনতার প্রকাশ: মহান আল্লাহ বলেন: “তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” [আরাফ :৫৫,৫৬]
(ঘ) দুআ ইহকাল ও পরকালে দুআকারী ব্যক্তি থেকে অনিষ্ট রোধ করে ও পাপ মোচন করে।
দুআ কবুলের শর্তাবলী

মুমিনের প্রত্যাশা মহান আল্লাহ যেন তার দুআ কবুল করেন। এবং তার মনের আশা পূরণ করেন। কিন্তু দুআ কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল।

(১) ইখলাছ: এটি আমাল কবুল হওয়ার মূল শর্ত। মহান আল্লাহ বলেন: “তিনি চিরঞ্জিব, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব, তাকে ডাক খাটি ইবাদতের মাধ্যমে।” [আল-মুমিন:৬৬] সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহর জন্য ইবাদতকে নিরঙ্কুশ করার নাম ইখলাস। সুতরাং, ইবাদত ও দুআ মহান আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুকে উদ্দেশ্যে করা যাবে না। এর বিপরীত কর্মপন্থা যে অবলম্বন করল, সে অবশ্যই শিরক করল। মহান আল্লাহ বলেন: “যে আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার স্বপক্ষে কোন দলীল তার কাছে নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।” [আল মুমিন: ১১৭]

(২) দুআকারী ব্যক্তির সম্পদ হালাল হওয়া: কেননা, হারাম সম্পদ হচ্ছে দুআ কবুলের পথে অন্তরায় ও বাধা। ইমাম মুসলিম রহ. তার সহীহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : “হে মানুষ সকল ! নিশ্চয় আল্লাহ পুত:পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কবুল করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ রাসূলদের যে আদেশ দিয়েছেন তা মুমিনদের জন্যও আদেশরূপে বিবেচ্য।” [মুসলিম: ১৬৮৬]

আল্লাহ বলেন: “হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকাজ কর ; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।” [আল- মুমিনূন-৫১]

এবং আল্লাহ আরো বলেন: “হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার হিসেবে ব্যবহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।” [আল-বাকারা: ১৭৩]

“অতঃপর উস্কখুস্ক ধূলোময় অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, যে স্বীয় হস্তদ্বয় আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, হে প্রভু! হে প্রভু ! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দুআ কিভাবে কবুল হবে?” [মুসলিম: ১৬৮৬]


(৩) দুআয় সীমালঙ্ঘন না করা: দুআর সময় বান্দা বৈধ সীমারেখায় বিচরণ করবে, পাপের কাজ সিদ্ধ করা বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, অথবা সামান্য ভুলের শাস্তি স্বরূপ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির ধ্বংসের জন্য দুআ করবে না। মহান আল্লাহ বলেন: “তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।“[আরাফ: ৫৫]
দুআ কবুলের অন্তরায়সমূহ

উপরের আলোচনায় আমরা দুআ কবুলের শর্ত সম্পর্কে জানতে পেরেছি, নীচে দুআ কবুলের অন্তরায় সমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ কর হল।
  •     দুআতে এখলাস না থাকা।
  •     আল্লাহর সাথে শিরক করা।
  •     অবৈধ কারবার করা, ভেজাল দেয়া
  •    সুদ খাওয়া।
  •     অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা।
  •     ঘুষ দেওয়া/নেওয়া
  •     দুআতে সীমালঙ্ঘন করা।
  •    অবৈধ বা বিদ্‌য়ী দুআ করা যথা-মৃত বা কবরস্থ ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করে দুআ করা।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয় স্বতন্ত্র ভাবে দুআ কবুলের অন্তরায়। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের উপর অবশ্য কর্তব্য হল, সে যেন দুআ কবুলের যে কোন অন্তরায় থেকে নিজেকে দূরে রাখে।
দুআর আদবসমূহ

১. বিনয়-বিনম্রতা ও একাতগ্রতা সাথে দুআ করা।

২. সংকল্প ও আকুতির সাথে দুআ করা, দুআ কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “যখন তোমরা দুআ করবে, তখন প্রার্থিত বিষয়টি লাভের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে, এবং বলবে না- হে আল্লাহ ! যদি তুমি চাও আমাকে প্রদান কর, কেননা, আল্লাহকে বাধ্যকারী কেউ নাই।” [বুখারী-৫৮৬৩]

৩. দুআকারী যেন উত্তম সময় ও স্থান বেছে নেয়, যেমন: আরাফা দিবস, রমযান মাস. জুমার দিন, কদরের রাত, প্রত্যেক রাতের শেষাংশ, সালাতে সাজদারত অবস্থা, আযান ইকামতের মাধ্যবর্তী সময়, সফরকালীন সময়, সিয়ামের সময় অসহায়ত্বের সময়, হজ্বের সময়, বিশেষভাবে তাওয়াফ সায়ীর সময় এবং জামরাতে পাথর নিক্ষেপের পর। এছাড়া, বিশেষ বিশেষ সময় ও স্থান সমুহে।

৪. পবিত্র অবস্থায় কেবলামূখী হয়ে হাত তুলে দুআ করা। দুআর শুরু এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর সালাত ও সালাম পেশ করা।



বিস্ময়কর তথ্য মহাকাশ নিয়ে পবিত্র কোরআনে

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
পবিত্র কোরআন মানুষকে আল্লাহ’র নিজের সৃষ্টি ও আশপাশের সৃষ্টিজগতের প্রতি অনুসন্ধিত্সু দৃষ্টিদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর পবিত্র কোরআন এ জন্য অদ্বিতীয় নির্ভরযোগ্য উৎস। চলুন দেখি মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মহাকাশবিষয়ক কী কী বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে।
১. মহাকাশ কক্ষপথবিশিষ্ট
পবিত্র কোরআনের ভাষায় এর আলোচনা এসেছে সুরা জারিয়াতের ৭ নম্বর আয়াতে ‘জাতুল হুবুক’ তথা রাস্তা বা পথবিশিষ্ট শব্দে। মহাকাশের ছোট-বড় গ্রহ-উপগ্রহগুলো প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণমান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্য তার নির্ধারিত পথে ছুটে চলে। চাঁদেরও রয়েছে নির্ধারিত কক্ষপথ।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৩৮, ৩৯)
২. মহাকাশ তারকাবেষ্টিত
মহাকাশবেষ্টিত তারকাগুলো প্রধানত দুই ধরনের। রাতের ঝলমলে আকাশে আমরা যেগুলো মিটমিট করে জ্বলতে দেখি কোরআনের ভাষায় এগুলো ‘কাউকাব’ তথা স্টার শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া মহাকাশে একধরনের বৃহৎ আকৃতির তারকা রয়েছে, যেগুলো স্বয়ং বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ ও তারকার সমষ্টি। কোরআনের ভাষায় এগুলো ‘বুরুজ’ তথা গ্যালাক্সি শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম প্রকারের বিবরণে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমি দুনিয়ার আকাশ অসংখ্য তারকারাজির দ্বারা সুসজ্জিত করেছি। (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ৬) দ্বিতীয় প্রকার প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি স্থাপন করেছেন যাতে সূর্য ও আলোকোজ্জ্বল চন্দ্রও স্থাপন করেছি। (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬১)
৩. বহুরূপী মহাকাশ
আকাশের রং কী? নীল আকাশ বলে মানুষের মুখে পরিচিত হলেও বাস্তবে আকাশের সুনির্দিষ্ট কোনো রং নেই। বায়ুমণ্ডলের ক্ষুদ্র অণুগুলো দৃষ্টিসীমার প্রান্তে নীল হয়ে দেখা দেয়। অবস্থাভেদে আকাশ বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। আবার রংধনুর মেলায় একই সঙ্গে সাত রঙেও সেজে ওঠে। আকাশের এই বহুরূপী সজ্জার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে। ‘কসম ওই আকাশের, যা বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। (সুরা : তারিক, আয়াত : ১১)
৪. মহাকাশ সপ্তস্তরে বিন্যস্ত
সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান মহাকাশের সাতটি স্তর আবিষ্কার করেছে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে এ রকম—১. ট্রাপোস্ফিয়ার। ২. স্ট্রাটোস্ফিয়ার। ৩. ওজনোস্ফিয়ার। ৪. মেসোস্ফিয়ার। ৫. থার্মোস্ফিয়ার। ৬. আয়নোস্ফিয়ার। ৭. এক্সোস্ফিয়ার। অথচ পবিত্র কোরআনে এক হাজার ৫০০ বছর আগেই একাধিক আয়াতে এ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সুরা মুমিনুনের ১৮ নম্বর আয়াতে ‘সাবআ তরাইক’ শব্দে, সুরা মুলকের তিন নম্বর আয়াতে ‘তিবাকা’ শব্দে এবং সুরা নাবার ১২ নম্বর আয়াতে ‘সিদাদা’ শব্দে মহাকাশের সপ্তস্তরের বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে।
৫. ক্রমবিস্তৃত মহাকাশ
সাম্প্রতিক সময়ে সর্ববৃহৎ মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে যে ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে এবং মহাকাশের পরিধি ক্রমেই বিস্তৃতি লাভ করছে। চাঞ্চল্যকর এ তথ্যে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিল। কিন্তু আজ থেকে এক হাজার ৫০০ বছর আগে মরুভূমির বালুতে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন থেকে এ তথ্য সরবরাহ করেছিলেন মুহাম্মাদে আরাবি (সা.)। মহান আল্লাহ বলছেন, আমি নিজ হাতে আসমান সৃষ্টি করেছি এবং আমিই এর বিস্তৃতি ঘটাই। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৪৭)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না আমি ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমশ সংকুচিত করে আনছি, এর পরও কি তারাই বিজয়ী!’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪)
৬. খুঁটিহীন আসমান
যেখানে শূন্যের ওপর এক টুকরা টিস্যু পেপারের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। সেখানে এত বিশাল মহাকাশ মহাশূন্যের মাঝে কিভাবে ভাসমান থাকতে পারে? জবাব আল্লাহ তাআলা নিজেই দিচ্ছেন, ‘তার নিদর্শনাবলি থেকে এটাও একটি যে আসমান-জমিন কেবলমাত্র তাঁর আদেশের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। (সুরা : রোম, আয়াত : ২৫)। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত আসমান আমি খুঁটিবিহীন ভাসমান অবস্থায় সৃষ্টি করেছি, যা তোমরা দেখছ।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১০)
৭. মহাকাশ দরজাবিশিষ্ট
পবিত্র কোরআনের বেশ কিছু আয়াত পাশাপাশি রাখলে বিষয়টি সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হবে। সুরা আম্বিয়ার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, আমি সুদৃঢ় ছাদরূপে আসমান সৃষ্টি করেছি। আর আকাশের এপার-ওপার সংযোগের জন্য রয়েছে দরজা। কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা অহংকারবশত আমার নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে তাদের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হবে না। আবার এসব দরজায় রয়েছে শক্ত পাহারার ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহ, যিনি মাত্র দুই দিনে মহাকাশে সপ্তস্তর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছেন। প্রতিটি স্তরের কার্যক্রম বিন্যস্ত করেছেন। এবং পৃথিবীর আকাশ অসংখ্য আলোকবাতি দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন এবং সুদৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।’ (সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ১২)
৮. ধোঁয়াশাঘেরা মহাকাশ
প্রথমবারের মতো আমেরিকান মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য সরবরাহ করেছিল যে মহাশূন্য খুব গভীর ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। খুব সকালে সূর্যের রশ্মি ও রাতে তারার আলোতে যে বিচ্ছুরণ সৃষ্টি হয় তা মূলত এই ধোঁয়াশার কারণেই হয়। যেমন—কুয়াশাঘেরা পরিবেশে বাতির আলো ভিন্ন ধরনের রশ্মি বিচ্ছুরণ সৃষ্টি করে। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠ নির্মাণের কাজ সমাধার পর তিনি আকাশ নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করলেন আর তখন তা ছিল ধোঁয়াশাঘেরা।’ (সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ১১)
৯. মহাকাশের বাসিন্দা
ভূপৃষ্ঠের এই ক্ষুদ্র পরিধিতে কয়টা জীব-জানোয়ারই বা বসবাস করে। অথচ এই বিশাল আকাশজুড়ে আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টি জীব রয়েছে। যারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহকে সিজদা করে এবং তাঁর গুণগানে মগ্ন। যাদের সংখ্যা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি আসমানের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম তা শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ৮)
১০. সব শেষে মহাকাশ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন যে একমাত্র তাঁর পবিত্র সত্তা ছাড়া মহাবিশ্বের সব কিছুই ধ্বংসশীল। বিন্দু থেকে শুরু হওয়া এই বৃহৎ বিস্তৃত মহাবিশ্ব আবার শুরুতে ফিরে আসবে। আর সাত আসমান বইপত্র গোটানোর মতো গুটিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন আমি আকাশমণ্ডলী গুটিয়ে নেব যেমন লিখিত কাগজপত্র গুটিয়ে রাখা হয়।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৪) লেখাটি খুলনার ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসার শিক্ষক ‘মুফতি সাআদ আহমাদ’ এর লেখা।


গুনাহ থেকে তাওবা করা

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
পাঠ সংক্ষেপ
কাপড়ের ওপর যদি একের পর এক ময়লা জমতে থাকে আর তা ধোয়া না হয় তাহলে কী অবস্থা হবে আপনারাই বলুন! অন্তরের অবস্থা ঠিক একই রকম। যদি গুনাহ জমতে থাকে আর তাওবা করা না হয়, ইস্তিগফার করা না হয়, তাহলে না-ধোয়া কাপড়ের মতোই তা ময়লায় ভারাক্রান্ত ও আচ্ছাদিত হয়ে যাবে।

প্রথম খুৎবা

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الْمَلِكِ الْوَهَّابِ الرَّحِيْمِ التَّوَّابِ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ بِلَا شَكٍّ وَلَا ارْتِيَابٍ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الْمَآبِ وَسَلَّمَ تَسْلِيْماً كَثِيْراً، أَمَّا بَعْدُ:

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! এ পৃথিবীতে মানুষের দায়িত্ব হলো আল্লাহর ইবাদত করা। মানুষকে এ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই কেউ যদি কোনো ভালো কাজ করে তবে সে তা নিজের উপকারের জন্যই করে। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আদায়ের অংশ হিসেবেই করে। পক্ষান্তরে কেউ যদি গুনাহের কাজ করে তবে সে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বে অবহেলার কারণেই করে। তার নিজের ক্ষতি হিসেবেই তা করে। মানুষের গুনাহ যতোই বাড়ুক তা আল্লাহর শানে আদৌ কোনো ক্ষতির কারণ হতে পারে না। অনুরূপভাবে নেক আমলও আল্লাহর কোনো উপকারে আসে না।

প্রিয় ভাইয়েরা! গুনাহ হলো ঘৃণ্য আবর্জনা যা সর্বাবস্থায় বর্জন করা আবশ্যক। গুনাহের এ আবর্জনা আমরা যদিও চোখে দেখি না, তার গন্ধ অনুভব করি না কিন্তু মানুষের অন্তরে এর প্রভাব লক্ষণীয়। মানুষ পাপের পর পাপ করতে থাকে এবং এক সময় তার অন্তর ঢেকে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন :

{كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَّا كَانُواْ يَكْسِبُونَ}

‘ কখনো নয়, বরং তারা যা অর্জন করত তাই তাদের অন্তরসমূহকে ঢেকে দিয়েছে’ (সূরা আল-মুতাফফিফীন:১৪)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

(إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ، صُقِلَ قَلْبُهُ، فَإِنْ زَادَ زَادَتْ، فَذَلِكَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَهُ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ)

‘ মুমিন বান্দা যখন কোনো গুনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। আর যদি সে তাওবা করে নেয়, বিরত হয়ে যায়, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তবে তার অন্তর মসৃণ হয়ে যায়। আর যদি সে আরো করে তবে দাগ আরো বেড়ে যায়, এটাই হলো অন্তর আচ্ছাদিত হয়ে যাওয়া যার উল্লেখ আল্লাহ তাঁর কিতাবে করেছেন’ (ইবনে মাজাহ, হাসান)।



এসব গুনাহ, যারপর বান্দা তাওবা করে না, ইস্তিগফার করে না, বান্দার অন্তরে স্তুপীকৃত হতে থাকে এমনকি এক পর্যায়ে কঠিন আবরণের রূপ পরিগ্রহ করে, যা অন্তরকে একেবারে ঢেকে ফেলে।

প্রিয় ভাইয়েরা! কাপড়ের ওপর যদি একের পর এক ময়লা জমতে থাকে আর তা ধোয়া না হয় তাহলে কী অবস্থা হবে আপনারাই বলুন! অন্তরের অবস্থা ঠিক একই রকম। যদি গুনাহ জমতে থাকে আর তাওবা করা না হয়, ইস্তিগফার করা না হয়, তাহলে না-ধোয়া কাপড়ের মতোই তা ময়লায় ভারাক্রান্ত ও আচ্ছাদিত হয়ে যাবে।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমরা তো রাতদিন পাপ করেই যাচ্ছি। পাপ করার পর হয়তো অনেক দিন গুজরে যায়, অথচ তাওবা করা হয় না, ইস্তিগফারের জন্য আল্লাহর কাছে হাত দরায করা হয় না। গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। নিশ্চয় পবিত্রতা ও প্রকৃত পরিচ্ছন্নতা হলো অন্তরের পবিত্রতা, অনন্তরের পরিচ্ছন্নতা। কাপড়ের পরিচ্ছন্নতা দিয়ে কী হবে, যদি পাপের বোঝায় ভারাক্রান্ত থাকে হৃদয় পাপের ময়লায় আচ্ছাদিত থাকে অন্তরাত্মা?



এমন তো অনেকেই আছে যাদের কাপড় অনেক পরিষ্কার কিন্তু তাদের অন্তর আবর্জনায় পরিপূর্ণ। পাপের আধিক্যে দুর্গন্ধময়। তাদের অন্তর গুনাহের ময়লায় মলিন। তারা একের পর এক পাপ করে চলে, অন্যায় করে চলে কিন্তু তাওবা থেকে গাফেল থাকে, ইস্তিগফার থেকে গাফেল থাকে। মানুষ যদি তার প্রকৃত চেহারা উম্মোচিত করে, তাহলে তার নিজের কাছে ও মানুষের কাছে তার কি আদৌ কোনো মূল্য থাকবে? আর কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তাআলার কাছে তার কোনো মূল্য থাকার প্রশ্নই ওঠে না।


প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! সকল মানুষই পাপ করে, গুনাহ করে। তবে পার্থক্য হলো কেউ কেউ পাপ করার সাথে সাথে তাওবা করে নেয়। নিজের অন্তরকে পবিত্র করে নেয়। লজ্জিত হয়ে, অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চায়। পক্ষান্তনে অনেকেই এমন আছে যাদের অন্তরে পাপ স্তুপীকৃত হতে থাকে অথচ সে তাওবা করে নিজকে পবিত্র করে না। আল্লাহর কাছে ঐকান্তিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিজের অন্তরকে মসৃণ করে না।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চাওয়ার দরজা সদা উন্মুক্ত। ইস্তিগফারের দরজা সদা উন্মুক্ত, যাতে আমরা তাওবা করে অন্তরের আবর্জনা থেকে নিজদেরকে পবিত্র করে নিতে পারি। আল্লাহ তো আমাদেরকে তাওবা করতে আহ্বান করছেন। কৃত গুনাহের ব্যাপারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলছেন, যাতে আমাদের অন্তর ভারমুক্ত হয়। গুনাহের বোঝা মুক্ত হয়। অন্তরের প্রশান্তি ফিরে আসে। হৃদয়ের শান্তভাব ফিরে আসে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :


{قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ .}

‘ বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আয-যুমার:৫৩)।



প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে দু’টি নাম


الْغَفُوْرُ التَّوَّابُ

পরম ক্ষমশীল, তাওবা কবুলকারী। মহামহিম আল্লাহ তাআলার এ মহান নাম দু’টি তাঁর ক্ষমা ও তাওবা কবুল করার অর্থ জ্ঞাপক। পবিত্র মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদেও ত্র“টি-বিচ্যুতি মাফ করে দেন। মূসা আলাইহিস সালাম অনিচ্ছাকৃতভাবে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে তাওবা করেছিলেন আল্লাহ তাআলা তাঁর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন :

{قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَغَفَرَ لَهُ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ}

‘ সে বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফ্সের প্রতি যুলম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন’। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-কাসাস:১৬)।



আদম আলাইহিস সালামের তাওবা কবুল সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন :

{ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدَى وَعَصَى آَدَمُ رَبَّهُ فَغَوَى}

‘এবং আদম তার রবের হুকুম অমান্য করল ফলে সে বিভ্রান্ত হল। এরপর তার রব তাকে মনোনীত করলেন, অতঃপর তার তাওবা কবুল করলেন এবং তাকে পথনির্দেশ করলেন’ (সূরা তাহা:১২১-১২২)।

আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবা কবুল করেন এবং গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

{وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ}

‘আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কর, তিনি তা জানেন’ (সূরা আশ-শূরা:২৫)।

তাওবা বান্দাকে পরিচ্ছন্ন করে সফলতার পথে নিয়ে যায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:

{وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ}

‘হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সূরা আন-নূর:৩১)।

 এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحاً عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَار.}

‘ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’ (সূরা আত-তাহরীম:৮)।

যারা তাওবাকারী, পবিত্রতা অর্জনকারী আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পছন্দ করেন। ইরশাদ হয়েছে:

{إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ}

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকেও ভালবাসেন’ (সূরা আল বাকারা:২২২)।

আম্মার বিন ইয়াসির রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে মানব জাতি! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, আমি প্রতি দিন একশতবার তাওবা করি’ (মুসলিম)।

আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু. কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আমি তার কাছে দৈনিক সত্তরবারের বেশি তাওবা করি’ (বুখারী)।

আনাস রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবার কারণে খুব খুশি হন। যখন বান্দা তার কাছে তাওবা করে তখন বান্দা যে অবস্থায় থাকুক না কেন আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন।

(ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আদম সন্তান একটি স্বর্ণের উপত্যকার মালিক হলে, আরো দু’টি স্বর্ণের উপত্যকার মালিক হওয়ার আশা পোষণ করবে, তবুও তার মুখ পূর্ণ হবে না একমাত্র মাটি ছাড়া। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক তাওবাকারীকে ক্ষমা করে দেন’ (বুখারী)।


আর তাওবা কেবল আল্লাহ তাআলাই কবুল করতে পারেন, অন্য কারো তাওবা কবুল অথবা গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন :

{أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ}

‘ তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং সাদকা গ্রহণ করেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু’ (সূরা আত-তাওবা:১০৪)।

হাদীসে এসেছে। আবূ মূসা আল আশআরী রযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

(إِنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا)

‘আল্লাহ তাআলা রাতের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন যাতে দিনের বেলার গুনাহগাররা তাওবা করতে পারে এবং দিনের বেলা তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতের গুনাহগারর তাওবা করতে পারে। সূর্য পশ্চিম আকাশ থেকে উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এরূপ করবেন’ (মুসলিম)।

আল্লাহ তাআলার ‘আল গাফুর’ ও ‘আত-তাওয়াব’ নামের প্রতি ঈমান আনয়নের চাহিদাই হলো আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া, আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি প্রকাশ করা, তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও তাওবা করা এবং তার রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।

তাওবা দ্রুত করা আবশ্যক, বিলম্ব করা কোনক্রমেই সমীচীন নয়। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম) তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ দ্রুততার সাথে পালন করা উচিত। কারণ, বান্দা জানে না দেরি করলে তার তাওবা করার সুযোগ হবে কি না। যেহেতু যেকোনো সময় তার মৃত্যু এসে যেতে পারে, তাই তাওবার সুযোগ নাও হতে পারে। অন্যায় কাজ বারবার করার মাধ্যমে অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং আল্লাহ থেকে দূরত্বের সৃষ্টি হয়, ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। কারণ, ঈমান আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং অবাধ্যতার মাধ্যমে হ্রাস পায়। বারবার অপরাধ করার দ্বারা অপরাধ করার মানসিকতা তৈরি হয়। কেউ যদি কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে ফেলে, তবে তা থেকে ফিরে আসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তার ওপর শয়তান বিজয়ী হয়ে যায় এবং বড়-বড় অপরাধ করার প্রেরণা দেয়। এ জন্য উলামায়ে কিরাম বলেন, সকল ধরনের অপরাধ কুফরী বৃদ্ধি করে। মানুষ ধাপে ধাপে এক অপরাধ থেকে আরেক অপরাধে পা রাখে। এক পর্যায়ে দীন থেকে সে সম্পূর্ণভাবে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে খাঁটিভাবে তাওবা করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে :

{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحاً}

‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা’ (সূরা আত-তাহরীম:৮)।

হাফেয ইবনে কাছীর রহ. তাওবায়ে নাসুহা তথা খাঁটি তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, ‘সত্য ও দৃঢ় তাওবা, যা মানুষের পাপসমূহ মুছে দেয়, এবং বিক্ষিপ্ত অবস্থাকে একত্রিত করে ঠিক করে দেয়। আর সে যেসব নিচু কাজ করত তা থেকে ফিরিয়ে আনে’।

উমর রাযি. বলেন, ‘যে তাওবার ফলে মানুষ গুনাহের দিকে আর ফিরে যায় না’। সংক্ষেপে বলা যায় তাওবায়ে নাসূহা হলো, যে তাওবায় নিম্নবর্ণিত পাঁচটি গুণ পাওয়া যায় :

এক. একনিষ্ঠতার সাথে তাওবা করা। তাওবায় আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও তাঁর মাহাত্ম্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তাঁর কাছে কল্যাণের আশা করা এবং তাঁর শাস্তি থেকে ভয় পাওয়া ইত্যাদির উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরী। এ ছাড়া তাওবা দ্বারা পার্থিব কোন বস্তু কামনা না করা অথবা সৃষ্টজীবের কাছে কিছু প্রার্থনা না করা। যদি এরূপ করা হয় তবে সে ব্যক্তির তাওবা কবুল হবে না, বরং ধরা হবে যে, সে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তাওবা করেছে। সে আল্লাহর কাছে ঐকান্তিকভাবে তাওবা করেনি বরং সে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যেকে কেন্দ্র করে তাওবা করেছে।

দুই. কৃত গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া ও হীনতা প্রকাশ করা এবং এ মনোভাব প্রকাশ করা যে, এ তাওবা কবুল না হলে পুরো জীবনটাই বৃথা যাবে। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা গুনাহের জন্য যে শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা স্মরণ করা এবং সে ব্যাপারে আতঙ্কিত হওয়া।

তৃতীয়. অতি দ্রুত গুনাহের কাজ ত্যাগ করা। কেননা বিলম্ব হলে অপরাধে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়। যদি কোন ফরয বা ওয়াজিব ছেড়ে দিয়ে থাকে, তবে অবশ্যই তা সম্পাদন করে নিবে। যেমন যাকাত, হজ ইত্যাদি। কোনো গুনাহে নিমজ্জিত থাকাবস্থায় তাওবা করে কোনো লাভ নেই। যেমন কেউ সুদ খাওয়া থেকে তাওবা করল কিন্তু সর্বদা সুদের কাজ-কর্মে জড়িত রইল এ ধরনের তাওবা দ্বারা কোন লাভ হবে না বরং তার তাওবা হবে হাসি-তামাশা ও বিদ্রুপের নামান্তর। এর দ্বারা সে আল্লাহ ও তাঁর আয়াতসমূহের সাথে তাচ্ছিল্যপুর্ণ আচরণ করল, যা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেবে। কিংবা কেউ তাওবা করল যে, কখনো সে জামাতের সাথে নামায ত্যাগ করবে না, তার পরেও সে জামাত ত্যাগ করতে থাকলো, এমতাবস্থায় তার এ তাওবায় আদৌ কোনো ফল হবে না।

যদি কেউ মানুষের কোন হক নষ্ট করে থাকে, তবে সে হক আদায় করার পরই তাকে তাওবা করতে হবে, অন্যথায় তার তাওবা সঠিক বলে গণ্য হবে না। যদি কোনো ব্যক্তি অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে হস্তগত করে অথবা তার কাছে থাকা অন্যের সম্পদ অস্বীকার করে, তবে উক্ত ব্যক্তির সম্পদ ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তাওবা শুদ্ধ হয়েছে বলে গণ্য হবে না। যদি উক্ত সম্পদের মালিক মারা গিয়ে থাকে, তবে তার উত্তরাধিকারীদের কাছে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। কোনো উত্তরাধিকারী জীবিত না থাকলে বাইতুল মালে তা জমা করতে হবে। আর যদি কোনো উপায় খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে ওই ব্যক্তির নামে তা সদকা করে দিতে হবে। যদি কোনো মুসলমানের গীবত করে অপরাধ করে থাকে, তবে তার গীবত ত্যাগ করে তারপর তাওবা করা জরুরী।

চার. কৃত অপরাধে পুনরায় ফিরে না যাওয়ার সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি কেউ বলে, আমি তাওবা করেছি এবং সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আর কখনো ওই অপরাধ করব না, কিন্তু সে বারবার একই অপরাধ করতে থাকে, তবে তার তাওবা কবুলযোগ্য হবে না। কারণ, তার এ তাওবা হচ্ছে সাময়িক তাওবা, যার দ্বারা দীন বা দুনিয়ার কোনো উপকারের সম্ভাবনা নেই।

পাঁচ. তাওবা কবুলের সময় শেষ হওয়ার আগেই তাওবা করা। তাওবা কবুলের সময় শেষ হয় দু’ভাবে: সবার জন্য এক সাথে। নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির জন্য এককভাবে।

ক) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় হলে সবার ক্ষেত্রে তাওবার সময় শেষ হয়ে যাবে। তখন আর কারো তাওবা কাজে আসবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন :

{يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لا يَنْفَعُ نَفْساً إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْراً}

‘ যেদিন তোমার রবের নিদর্শনসমূহের কিছু প্রকাশ পাবে, সেদিন কোন ব্যক্তিরই তার ঈমান উপকারে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনেনি, কিংবা সে তার ঈমানে কোন কল্যাণ অর্জন করেনি’ (সূরা আল আনআম:১৫৮)।


নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পশ্চিম দিকে সূর্য উদয় হওয়ার আগে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন’ (মুসলিম)।

খ) মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে আর তাওবা কবুলের সুযোগ থাকে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:

{وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآن}

‘ আর তাওবা নাই তাদের, যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন সে বলে, আমি এখন তাওবা করলাম’ (সূরা আন-নিসা:১৮)।

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তাওবা কবুল করে থাকেন যতক্ষণ না রুহ বের হয়ে যাওয়ার গরগর শব্দ শুরু হয়’ (তিরমিযী)।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওবা করার সময় উযু করে দু’রাকাত নামায পড়ার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘কোনো ব্যক্তি যদি গুনাহ করার পর উত্তমরূপে উযু করে, অতঃপর দু’রাকাত নামায পড়ে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মাফ করে দিবেন’ (আহমদ)। এ হাদীসের সত্যতার পক্ষে আরেকটি হাদীস রয়েছে। আর তা হলো- উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমাদের মধ্যে যদি কেউ উত্তমরূপে উযু করে, এবং বলে :

(أَشْهَدُ أنَّ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ)

তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেন’ (মুসলিম)।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাওবা করার তাওফীক দান করুন।

بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ, أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .


দ্বিতীয় খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى المَبْعُوْثِ رَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ، نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ الصَّادِقِ الْأَمِينِ، وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ، وَالتَّابِعِيْنَ وَتَابِعِيْهِمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ:

তাওবার ফলাফল
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! তাওবা মানুষকে পরিশুদ্ধ করে শাশ্বত সৌভাগ্য এবং দুনিয়া ও আখেরাতে হায়াতে তাইয়েবার অধিকারী বানায়। ইরশাদ হয়েছে :

{مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ}

‘ যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব’ (সূরা আন-নাহল:৯৭)।

পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতে নেক আমলের কথা বলা হয়েছে। আর নেক আমল হলো যার মধ্যে নিম্নলিখিত তিনটি শর্ত পাওয়া যায় :

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ মুতাবিক হওয়া। ইরশাদ হয়েছে :
{وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ}

‘ রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর’ (সূরা আল হাশর:৭)।

দুই. একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠ হয়ে আমল করা। ইরশাদ হয়েছে :
{وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ}

‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে’ (সূরা আল বাইয়িনাহ:৫)



তিন. সঠিক আকীদা পোষণ করে আমল করা। ইরশাদ হয়েছে :
{مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ}

‘ যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব’ (সূরা আন-নাহল:৯৬)।

উক্ত আয়াতে নেক আমল করার সাথে সাথে মুমিন হওয়ার শর্ত করা হয়েছে। আর মুমিন হলো সে, যার আকীদাগত সঠিক ভিত্তি রয়েছে।

তাওবার একটি সুফল হলো : নিরাপত্তা ও হিদায়াত লাভ। ইরশাদ হয়েছে :
{الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ}

‘ যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত’ (সূরা আল আনআম:৮২)।

পাপকর্ম পূন্যে রূপান্তরিত হওয়া তাওবার আরেকটি সুফল: ইরশাদ হয়েছে :
{إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا}

‘ আর যে তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে’ (সূরা আল ফুরকান: ৭০)।

আল্লাহর রেযামন্দী অর্জনে ধন্য হওয়াও তাওবার একটি সুফল: ইরশাদ হয়েছে :

{وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ}
‘ আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না’ (সূরা আলে ইমরান:১৩৫)।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! সঠিকভাবে তাওবা করতে পারলে আল্লাহ তাআলা বান্দার সকল পাপ মোচন করে দেন। কেননা তিনি গাফূর ও গাফ্ফার তিনি রহমান ও রাহীম। ইরশাদ হয়েছে :

{قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ}
‘ বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আয-যুমার:৫৩)।



এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কবীরা গুনাহে অপরাধী ব্যক্তি- মুসলমান, কাফির নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
{وَمَنْ يَعْمَلْ سُوءاً أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُوراً رَحِيماً}

‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আন-নিসা:১১০)।

অতএব, আমার ভাইয়েরা! আমরা যারা গুনাহে লিপ্ত, চলুন অতি দ্রুত তাওবা করে নিই। আল্লাহর কাছে সকল অন্যায় অপরাধের জন্য ক্ষমা চাই। নিশ্চয় তিনি অতি দয়ালু পরম ক্ষমাশীল।
اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطِّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

হে আল্লাহ, আমাদেরকে আপনি তাওবায়ে নাসূহার তাওফীক দান করুন। আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমাদেরকে আপনি পূত-পবিত্র করুন। আমাদের গুনাহগুলোকে আপনি ছাওয়াবে রূপান্তরিত করুন। আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : (إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.



কুসুফ ও খুসুফের নামাজ

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
কুসুফ (সূর্যগ্রহন)

কুসুফ হলো সূর্যের আলো সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।
খুসুফ (চন্দ্রগ্রহন)

খুসুফ চাঁদের আলো সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।
 
কুসুফ ও খুসুফের হিকমত
এ দুটি আল্লাহ তাআলার নিদর্শন, যার দ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ভয় দেখান, যাতে তারা পুনরায় তাঁর কাছে ফিরে যায়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «নিশ্চয় সূর্য ও চাঁদ কারও মৃত্যু অথবা জীবিত থাকার কারণে আলোহীন হয় না। এ দুটো বরং আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন, যার দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদেরকে ভয় দেখান। অতঃপর যখন এ দুটোয় গ্রহণ লাগে তোমরা তখন নামাজের দিকে দ্রুত আগাও।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
 
কুসুফ ও খুসুফের নামাজ
কুসুফ ও খুসুফের নামাজের হুকুম সুন্নতে মুয়াক্কাদা। «হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«নিশ্চয় চাঁদ ও সূর্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারও মৃত্যু বা জীবনের কারণে এ দুটোয় গ্রহন লাগে না। অতএব তোমরা যখন তা দেখবে আল্লাহকে ডাকো, তাকবীর দাও, নামাজ পড়ো ও সদকা করো।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
 
কুসুফ ও খুসুফের নামাজের সময়
-কুসুফ ও খুসুফ শুরু হওয়া থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত
- মুসল্লী তার নামাজ পূর্ণ করে নেবে যদিও কুসুফ ও খুসুফ অতিক্রান্ত হয়ে যায়। আর যদি নামাজ পড়ে শেষ করা হয়, কিন্তু কুসুফ ও খুসুফ বলবৎ থাকে তাহলে আবার নামাজ আদায়ের প্রয়োজন নেই। বরং দুআ ও ইস্তিগফারে লিপ্ত থাকলেই চলবে।
 
কুসুফ ও খুসুফের নামাজের আদায় পদ্ধতি
আয়েশা রাযি. বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে একবার সূর্য গ্রহণ লাগল। তখন তিনি লোকজন নিয়ে নামাজ পড়লেন। তিনি দীর্ঘ কিয়াম করলেন। এরপর তিনি রুকু করলেন ও রুকুতে দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন। এটা রুকুর পূর্বের কিয়ামের অতিরিক্ত। তারপর আবার রুকু করলেন এবং রুকুতে দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। এটা প্রথম রুকুর অতিরিক্ত। তারপর তিনি সিজদা করলেন এবং সিজদায় দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তিনি দ্বিতীয় রাকাতেও প্রথম রাকাতের মতোই করলেন। অতঃপর গ্রহণ কেটে যাওয়ার পর তিনি নামাজ বন্ধ করলেন। এরপর তিনি মানুষের সামনে বক্তৃতা করলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাবলী বর্ণনা করে বললেন নিশ্চয় সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের দু»টি নিদর্শন।কারো মৃত্যু বা জীবনের কারণে এদের গ্রহণ লাগে না। সুতরাং তোমরা যখন তা দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দেবে, নামাজ পড়বে এবং সদকা করবে।)(বর্ণনায় বুখারী)

অতএব যদি চাঁদ অথবা সূর্য গ্রহণ লাগে, তা হলে «আস্সালাতু জামেয়া অর্থাৎ একত্রে নামাজ আদায় হবে বলে নামাজের জন্য ডাক দিতে হবে।

মানুষ যখন জমায়েত হবে তখন ইমাম তাদের নিয়ে দীর্ঘ দু রাকাত নামাজ পড়বে। প্রকাশ্য আওয়াজে কিরাত পড়বে। প্রথম রাকাতে পড়বে সূরা ফাতিহা এবং অপর একটি দীর্ঘ সূরা। এরপর রুকু দেবে ও দীর্ঘ সময় রুকুতে থাকবে। এরপর سمع الله لمن حمده، ربنا ولك الحمد বলে মাথা উঠাবে। এরপর সূরা ফাতিফা পড়ে অপর একটি দীর্ঘ সূরা তার সঙ্গে মিলাবে, যা হবে প্রথমটির চেয়ে ছোট। এরপর রুকু দেবে এবং রুকুতে গিয়ে দীর্ঘ সময় থাকবে, তবে প্রথমটির চেয়ে একটু কম সময় থাকবে। এরপর দীর্ঘ দুই সিজদা করবে। এ দুই সিজদার মাঝখানে বসবে। তবে বৈঠক দীর্ঘ করবে না। এরপর দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাত, কিয়াম ও রুকু সিজদায়, প্রথম রাকাতের মতোই আদায় করবে। তবে সবকিছুই পরিমাণে প্রথম রাকাতের চেয়ে কম হবে। এরপর বসবে ও তাশাহ্হুদ পড়বে ও সালাম ফিরাবে।

আহলে ইলমের কেউ কেউ প্রতি রাকাআতে এক রুকু করার কথা বলেছেন।
কুসুফ ও খুসুফের নামাজের সুন্নতসমূহ

১. কুসুফের নামাজ জামাতের সাথে পড়া হবে। কিন্তু যদি কেউ একাকী পড়তে চায় তবে তাও শুদ্ধ হবে।

২. এ নামাজদ্বয় মসজিদে আদায় করতে হবে। আর নারীরাও এতে অংশ নিতে পারবে।

৩. কিয়াম, রুকু ও সিজদা সবকিছুই দীর্ঘায়িত করে নামাজ পড়বে। তবে যদি গ্রহণ চলে যায় তা হলে দ্রুত শেষ করে দেবে।

৪. নামাজের পর ওয়াজ-নসীহত করবে। আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতার কথা মানুষকে স্মরণ করাবে। কুসুফের হিকমত বর্ণনা করবে। ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি মানুষদেরকে উৎসাহ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকার আহবান জানাবে।

5. বেশি বেশি দুআ, মিনতি, ইস্তিগফার ও দান-খয়রাত ও অন্যান্য ভালো কাজ করবে, যাতে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর থেকে বালা-মুসিবত উঠিয়ে নেন।

6. কুসুফের ক্ষেত্রে দুআ করার সময় হাত উঠানো বৈধ। আবদুর রহমান ইবনে সামুরা রাযি. বর্ণনা করে বলেন, «অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম। আর তিনি ছিলেন নামাজে দাঁড়িয়ে দু হাত উত্তোলন করে দুআ রত।»
দিকনির্দেশনা

১. কুসুফ ও খুসুফ অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যদি এ ব্যাপারে জানা না যায়, তবে আর নামাজ আদায়ের প্রয়োজন নেই।

২. আধুনিক বিজ্ঞান যদিও কুসুফ ও খুসুফ সংঘটিত হওয়ার কারণ আবিষ্কার করতে পেরেছে। তবে এর অর্থ এটা নয় যে কুসুফ ও খুসুফ আল্লাহর নিদর্শন নয় যা দিয়ে তিনি বান্দাদেরকে ভয় দেখান। অতএব সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণকালে মুসলমানের উচিত ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর দরবারে কাকুতি মিনতিতে ব্যস্ত হওয়া। টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহণ প্রক্রিয়া দেখার জন্য মেতে উঠা সমীচীন নয়।

৩. যে ব্যক্তি কুসুফের নামাজের প্রথম রাকাতের প্রথম রুকু ধরতে পারল সে রাকাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় রুকুতে ইমামকে পেল সে রাকাত পায়নি বলে ধরা হবে। এমতাবস্থায় ইমামে সালামের পর প্রথম রাকাত নিয়ম অনুযায়ী কাযা করে নিতে হবে।

৪. নিষিদ্ধ সময়েও কুসুফের নামাজ আদায় করা শুদ্ধ হবে।

৫. অন্য কারও খবরের ওপর ভিত্তি করে কুসুফ ও খুসুফের নামাজে রত হওয়া শরীয়তসিদ্ধ নয়। বরং নিজেদেরকে স্বচক্ষে তা দেখে নিতে হবে।


রিজিক বাড়ানোর আমল ও দোয়া , যে চৌদ্দটি আমলে রিজিক বাড়ে

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
                                    
মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু,  এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন: “তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১৫]
আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম আমল: তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা। আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩]
অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় আমল: তাওবা ও ইস্তেগফার করা। অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন: “আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।” [সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২]
হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।” [আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১] [1]
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।” [বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]
তৃতীয় আমল: আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।” [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]
চতৃর্থ আমল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে।” [তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)]
পঞ্চম আমল: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।” [সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯]
ষষ্ঠ আমল: বারবার হজ-উমরা করা। হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।” [তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১]
সপ্তম আমল: দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা। মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।” [বুখারী : ২৮৯৬]
অষ্টম আমল: ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া। আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।” [তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭]
নবম আমল: আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০০]
আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।
দশম আমল: আল্লাহর পথে জিহাদ। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।” [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]
একাদশ আমল: আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ০৭]
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।
দ্বাদশ আমল: বিয়ে করা। আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’
ত্রয়োদশ আমল: অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা। রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।” [সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০]
এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়।  যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে: “হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।”
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন।” [তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮]
চতুর্দশ আমল: গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া। গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়। তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।” [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭]
আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন।” [মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২]
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন।
আমীন!!

[1]. (শায়খ উসাইমীন বলেন, সনদগত দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল কিন্তু এর মর্ম ও বক্তব্য সহীহ বা সঠিক। কুরআনের আয়াত ও হাদীসে এই বক্তব্যের সমর্থন বিদ্যমান। এই হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বিন বায বলেন, সর্বোপরি হাদীসটি তারগীব ও তারহীব তথা মানুষকে আখিরাতের আগ্রহ বা ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। [ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারবি (হাদীসের ব্যাখ্যা ও তার হুকুম।]     
ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার
Print Friendly, PDF & Email
            


শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯

সহিহ হাদিসের কুদসি সমগ্র ( ১ - ১৬৩ টি হাদীস)

শুক্রবার, নভেম্বর ২৯, ২০১৯ 0
বার দেখা হয়েছে
১ সহিহ হাদিসের কুদসি সমগ্র     ১ - ১৬৩
 সহিহ হাদিসের কুদসি সমগ্র
১. অধ্যায়ঃ
পাপ-পুণ্য লিখার নিয়ম ও আল্লাহর অনুগ্রহ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ: إِذَا أَرَادَ عَبْدِي أَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً فَلَا تَكْتُبُوهَا عَلَيْهِ حَتَّى يَعْمَلَهَا، فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا بِمِثْلِهَا، وَإِنْ تَرَكَهَا مِنْ أَجْلِي، فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَعْمَلَ حَسَنَةً فَلَمْ يَعْمَلْهَا، فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً، فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَةِ ضِعْفٍ». (بخاري ومسلم) حديث صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ [১]। আর যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”। [বুখারি ও মুসলিম][১] এ থেকে প্রমাণ হয় যে, পাপ ত্যাগ করাও নেকি, যদি তা আল্লাহর জন্য হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

عَنْ أَبُي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: إِذَا تَحَدَّثَ عَبْدِي بِأَنْ يَعْمَلَ حَسَنَةً فَأَنَا أَكْتُبُهَا لَهُ حَسَنَةً مَا لَمْ يَعْمَلْ، فَإِذَا عَمِلَهَا فَأَنَا أَكْتُبُهَا بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَإِذَا تَحَدَّثَ بِأَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً فَأَنَا أَغْفِرُهَا لَهُ مَا لَمْ يَعْمَلْهَا، فَإِذَا عَمِلَهَا فَأَنَا أَكْتُبُهَا لَهُ بِمِثْلِهَا», وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «قَالَتْ الْمَلَائِكَةُ: رَبِّ هذَا عَبْدُكَ يُرِيدُ أَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً -وَهُوَ أَبْصَرُ بِهِ- فَقَالَ: ارْقُبُوهُ فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ بِمِثْلِهَا، وَإِنْ تَرَكَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً، إِنَّمَا تَرَكَهَا مِنْ جَرَّايَ». ( مسلم ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা যখন নেকি করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য একটি নেকি লিখি যতক্ষণ সে না করে, যখন সে করে আমি তার দশগুণ লিখি। আর যখন সে পাপ করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য তা ক্ষমা করি যতক্ষণ সে না করে, অতঃপর যখন সে তা করে তখন আমি তার সমান লিখি”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “ফেরেশতারা বলেঃ হে আমার রব আপনার এ বান্দা পাপ করার ইচ্ছা করে, -যদিও আল্লাহ তাকে বেশী জানেন- তিনি বলেনঃ তাকে পর্যবেক্ষণ কর যদি সে করে তার জন্য সমান পাপ লিখ, যদি সে ত্যাগ করে তার জন্য তা নেকি লিখ, কারণ আমার জন্যই সে তা ত্যাগ করেছে [2]। [মুসলিম]

[2] এ মর্যাদা শুধু আল্লাহর ভয়ে পাপ ত্যাগকারীর জন্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২. অধ্যায়ঃ
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের ‎অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে ‎বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন”

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ -رضي الله عنهما- قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: ﴿ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ ﴾، قَالَ: دَخَلَ قُلُوبَهُمْ مِنْهَا شَيْءٌ لَمْ يَدْخُلْ قُلُوبَهُمْ مِنْ شَيْءٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «قُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَسَلَّمْنَا» قَالَ: فَأَلْقَى اللَّهُ الْإِيمَانَ فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: ﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾ «قَالَ: قَدْ فَعَلْتُ» ﴿رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ ﴾ «قَالَ: قَدْ فَعَلْتُ» ﴿ وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا ﴾ [البقرة: ٢٨٦]]. «قَالَ: قَدْ فَعَلْتُ» ( مسلم ) صحيح

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যখন
وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ
“আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের ‎অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে ‎বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন” (সূরা বাকারাঃ ২৮৬)‎- এ আয়াত নাযিল হলো, ইব্‌ন আব্বাস বলেন, তখন তাদের (সাহাবিদের) অন্তরে কিছু প্রবেশ করল যা পূর্বে তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা বলঃ শুনেছি, আনুগত্য করেছি ও মেনে নিয়েছি”। তিনি বলেনঃ ফলে আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন এবং তিনি নাযিল করলেনঃ

لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ

“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে ‎‎দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার ‎জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার ‎উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা ‎যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে ‎আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”।

وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ

“হে ‎আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে ‎‎দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ‎চাপিয়ে দিয়েছেন”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”।

وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا

“আর আপনি আমাদেরকে ‎‎ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। ‎আপনি আমাদের অভিভাবক”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”। [সূরা বাকারাঃ (২৮৬)][মুসলিম]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ﴿لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤﴾ [البقرة: ٢٨٤] قَالَ: فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ بَرَكُوا عَلَى الرُّكَبِ فَقَالُوا: أَيْ رَسُولَ اللَّهِ؟ كُلِّفْنَا مِنْ الْأَعْمَالِ مَا نُطِيقُ الصَّلَاةَ وَالصِّيَامَ وَالْجِهَادَ وَالصَّدَقَةَ وَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيْكَ هَذِهِ الْآيَةُ وَلَا نُطِيقُهَا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « أَتُرِيدُونَ أَنْ تَقُولُوا كَمَا قَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ: سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا؟ بَلْ قُولُوا: (سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ) قَالُوا: سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ، فَلَمَّا اقْتَرَأَهَا الْقَوْمُ ذَلَّتْ بِهَا أَلْسِنَتُهُمْ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ فِي إِثْرِهَا: ﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ ﴾ [البقرة: ٢٨٥] فَلَمَّا فَعَلُوا ذَلِكَ نَسَخَهَا اللَّهُ تَعَالَى، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾ «قَالَ: نَعَمْ» ﴿ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ ﴾ «قَالَ: نَعَمْ» ﴿ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ ﴾
«قَالَ: نَعَمْ» ﴿ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ﴾ «قَال: نَعَمْ » ( مسلم ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিল হলঃ
لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤ ﴾ [البقرة: ٢٨٤]

“আল্লাহর জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং ‎যা রয়েছে যমীনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ ‎কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা ‎‎গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের ‎হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা ‎করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর ‎আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান” (সূরা বাকারাঃ ২৮৪)‎ তিনি বলেনঃ এ আয়াত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের ওপর কঠিন ঠেকল, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল, অতঃপর হাঁটু গেড়ে বসল। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল? আমাদেরকে কতক আমলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যা আমরা সাধ্য রাখিঃ সালাত, সিয়াম, জিহাদ ও সদকা; কিন্তু আপনার ওপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে অথচ আমরা তার সাধ্য রাখি না! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তোমরা কি সেরূপ বলতে চাও তোমাদের পূর্বে কিতাবওয়ালা দুটি দল [ইয়াহূদী ও নাসারারা] যেরূপ বলেছেঃ শুনলাম ও প্রত্যাখ্যান করলাম? বরং তোমরা বলঃ “আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের ‎রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর ‎আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল”। ‎তারা বললঃ আমরা শুনলাম, মেনে নিলাম, হে আমাদের রব আপনার ক্ষমা চাই, আপনার নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। যখন সকলে তা পড়ল, তাদের জবান দ্বিধাহীন তা উচ্চারণ করল। আল্লাহ তা‘আলা তার পশ্চাতে নাযিল করলেনঃ

ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥﴾ [البقرة: ٢٨٥]

“রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে ‎নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর ‎মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর ‎উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর ‎রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের ‎কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা ‎বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে ‎আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা ‎করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল” (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) যখন তারা এর ওপর আমল করল, আল্লাহ তা রহিত করলেন, অতঃপর নাযিল করলেনঃ

لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ

“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যরে বাইরে ‎‎দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার ‎জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার ‎উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা ‎যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে ‎আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ

“হে ‎আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে ‎‎দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ‎চাপিয়ে দিয়েছেন”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ
“হে আমাদের রব, আপনি ‎আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার ‎সামর্থ্য আমাদের নেই”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ

“আর আপনি ‎আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ‎‎ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। ‎আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি ‎কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে ‎সাহায্য করুন”।‎ তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। [মুসলিম]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩. অধ্যায়ঃ
যার নিয়ত নষ্ট তার জন্য জাহান্নাম
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ: قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ: جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ، وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ، قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ: عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ: هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّار، وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ: هُوَ جَوَادٌ: فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» . ( مسلم والنسائي ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “নিশ্চয় সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সালা করা হবে, সে ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে, অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর) নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আপনার জন্য জিহাদ করে এমনকি শহীদ হয়েছি। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি এ জন্য জিহাদ করেছ যেন বলা হয়ঃ বীর, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যে ইলম শিখেছে, শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে, তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আমি ইলম শিখেছি, শিক্ষা দিয়েছি ও আপনার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি ইলম শিক্ষা করেছ যেন বলা হয়ঃ আলেম, কুরআন তিলাওয়াত করেছ যেন বলা হয়ঃ সে কারী, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সচ্ছলতা দিয়েছেন ও সকল প্রকার সম্পদ দান করেছেন, তাকে আনা হবে। তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ এমন খাত নেই যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন আমি তাতে আপনার জন্য খরচ করি নাই। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি করেছ যেন বলা হয়ঃ সে দানশীল, অতএব বলা হয়েছে, অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। [মুসলিম ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪. অধ্যায়ঃ
শির্কের ভয়াবহতা
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنْ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَه ». ( مسلم ) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ শরীকদের মধ্যে অংশীদারির অংশ (শির্ক) থেকে আমিই অধিক অমুখাপেক্ষী, যে কেউ এমন আমল করল যাতে আমার সাথে অপরকে শরিক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি”। [১] [মুসলিম]

[১] এ থেকে প্রমাণ হয় দেখানো ব্যক্তির আমল বিনষ্ট, তাতে কোন সওয়াব নেই।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ», قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ: «الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ - إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ-: اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً » . ( أحمد ) صحيح

মাহমুদ ইব্‌ন লাবিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শির্কে আসগর (ছোট শির্ক)। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল শির্কে আসগর কি? তিনি বললেনঃ “রিয়া (লোক দেখানো আমল), আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদেরকে (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেয়া হবেঃ তোমরা তাদের কাছে যাও যাদেরকে তোমরা দুনিয়াতে দেখাতে, দেখ তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কিনা”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ، فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لَا تَعْصِنِي؟ فَيَقُولُ أَبُوهُ: فَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيكَ. فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ: يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِي أَنْ لَا تُخْزِيَنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَد؟ِ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: إِنِّي حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ: يَا إِبْرَاهِيمُ مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُلْتَطِخٍ فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ » . ( خ ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন ইবরাহিম তার পিতা আযরের সাথে দেখা করবে, তার চেহারার ওপর থাকবে বিষণ্ণতা ও ধুলো-বালি (অবসাদ)। ইবরাহিম তাকে বলবেঃ আমি কি তোমাকে বলিনি আমার অবাধ্য হয়ো না? অতঃপর তার পিতা তাকে বলবেঃ আজ তোমার অবাধ্য হব না। অতঃপর ইবরাহিম বলবেঃ হে আমার রব, আপনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন যেদিন উঠানো হবে আমাকে অসম্মান করবেন না, আমার পতিত পিতার অপমানের চেয়ে বড় অপমান কি! অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ নিশ্চয় আমি কাফেরদের ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। অতঃপর বলা হবেঃ হে ইবরাহিম তোমার পায়ের নিচে কি? সে দেখবে তার পিতা আচমকা রক্ত-ময়লায় নিমজ্জিত হায়েনায় পরিণত হয়েছে, তখন তার পা পাকড়াও করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। [বুখারি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫. অধ্যায়ঃ
দুনিয়া ভর স্বর্ণ দ্বারা কাফেরের মুক্তি কামনা
عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ: لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ أَكُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ فَيَقُول:ُ نَعَمْ. فَيَقُولُ: أَرَدْتُ مِنْكَ أَهْوَنَ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ: أَنْ لَا تُشْرِكَ بِي شَيْئًا فَأَبَيْتَ إِلَّا أَنْ تُشْرِكَ بِي » . ( خ, م ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের সবচেয়ে হালকা আযাবের ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন বলবেনঃ তোমার জন্য যদি দুনিয়াতে যা রয়েছে সব হয় তুমি কি তা মুক্তিপণ হিসেবে দিবে? সে বলবেঃ হ্যাঁ, তিনি বলবেনঃ আমি তোমার কাছে এরচেয়ে কম চেয়েছিলাম যখন তুমি আদমের ঔরসে ছিলেঃ আমার সাথে কোন বস্তুকে অংশীদার করবে না, কিন্তু তুমি আমার সাথে অংশীদার না করে ক্ষান্ত হওনি”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬. অধ্যায়ঃ
অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি পেয়েছি বলা কুফরি
১০

عن زيد بن خالد الجهني -رضي الله عنه- أنه قال: صلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة الصبح بالحديبية -على إثر سماء كانت من الليلة- فلما انصرف أقبل على الناس فقال: « هل تَدْرُون ماذا قال ربكم؟» قالوا: الله ورسوله أعلم، قال: «أصبح من عبادي مؤمن بي وكافرٌ، فأمَّا من قال: مُطرْنا بفَضْل الله ورحْمتِهِ، فذلك مؤمنٌ بي وكافرٌ بالكواكب وأما من قال: بنوء كذا وكذا، فذلك كافرٌ بي ومؤمنٌ بالكواكب » . (خ، م, د, ن) صحيح

যায়েদ ইব্‌ন খালেদ আল-জুহানি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে হুদায়বিয়ায় ফজর সালাত আদায় করলেন রাতের বৃষ্টি শেষে, যখন সালাত শেষ করলেন লোকদের দিকে ফিরলেন এবং বললেনঃ “তোমরা কি জান তোমাদের রব কি বলেছেন?” তারা বললঃ আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন। তিনি বলেছেনঃ “আমার কতক বান্দা ভোর করেছে আমার ওপর ঈমান অবস্থায়, আর কতক বান্দা ভোর করেছে আমার সাথে কুফরি অবস্থায়। অতএব যে বলেছেঃ আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার ওপর বিশ্বাসী ও নক্ষত্রের (প্রভাব) অস্বীকারকারী। আর যে বলেছেঃ অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে, সে আমাকে অস্বীকারকারী ও নক্ষত্রে বিশ্বাসী”। [বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসায়ি]

অর্থাৎ সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১১
عن أبي هريرة -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: « ألمَ تَرَوْا إلى ما قال ربُّكم؟ قال: ما أنعَمْتُ على عبادي من نعمةٍ إلا أصْبَح فريقٌ منهم بها كافرين يقولون: الكواكبُ وبالكواكبِ » . ( م, ن ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা কি লক্ষ্য কর না তোমাদের রব কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ আমি আমার বান্দাদের যখনই কোন নিয়ামত দেই, তখনই এ ব্যাপারে তাদের একটি দল অকৃতজ্ঞ (কাফের) হয়েছে। তারা বলেঃ নক্ষত্রই এবং নক্ষত্রের কারণে (তারা তা প্রাপ্ত হয়েছে)”। [মুসলিম ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭. অধ্যায়ঃ
তাওহীদের ফযিলত
১২
عن أبي ذر -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « يقول الله عز وجل: من جاء بالحسنَةَ فَلَهُ عَشْرُ أمثالها وأزِيدُ، ومن جاء بالسَّيِّئة فَجَزاؤه سيئة مثْلها أو أغْفِرُ، ومن تقرَّب مني شبرًا تقربت منه ذراعًا, ومن تقرَّب مني ذراعًا تقربت منه باعًا، ومن أتاني يمشي أتيته هرولة، ومن لقيني بقراب الأرض خَطيئَة لا يُشْرِكُ بي شيئًا لقيته بمثلها مغفرة ». ( م, حم, جه ) صحيح

আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ যে একটি নেকি নিয়ে আসবে তার জন্য তার দশগুণ এবং আমি আরও বেশি বৃদ্ধি করব। যে একটি পাপ নিয়ে আসবে তার বিনিময় সমান একটি পাপ অথবা আমি ক্ষমা করব। যে এক বিঘত আমার নিকটবর্তী হবে আমি একহাত তার নিকটবর্তী হব। যে এক হাত আমার নিকটবর্তী হবে আমি তার এক বাহু নিকটবর্তী হব। যে আমার নিকট হেঁটে আসবে আমি তার নিকট দ্রুত যাব। যে দুনিয়া ভর্তি পাপসহ আমার সাথে সাক্ষাত করে, আমার সাথে কাউকে শরিক না করে, আমি তার সাথে অনুরূপ ক্ষমাসহ সাক্ষাত করব”। [মুসলিম, আহমদ ও ইব্‌ন মাজাহ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৩
عن أبي سعيد الخدري -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «ما مجادلُة أحدِكم في الحقِّ يكون له في الدُّنيا بأشدِّ مجادلةَ من المؤمنين لربهم في إخوانهم الذين أدْخِلُوا النار، قال: يقولون: ربنا إخوانُنا كانوا يُصلُّون معنا ويَصُومون معنا ويحجُّون معنا فأدْخَلْتَهُمُ النار. قال: فيقول: اذهبوا فأخرجوا من عرفْتُم منهم. قال: فيأتونهم فيعرفونهم بصورهم فمنهم من أخَذَته النَّارُ إلى أنصاف ساقَيْه، ومنهم من أخَذَتْهُ إلى كَعْبَيْه فيخرجونهم فيقولون: ربَّنا قد أخْرجَنْا من أمرتنا، قال: ويقول: أخْرِجوا من كان في قلبه وزْنُ دينارٍ من الإيمان، ثم قال: من كَاَنَ في قلبه وزنُ نصف دينار، حتى يقول: من كان في قلبه وزن ذرةٍ » . ( ن, جه ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “দাবি নিয়ে দুনিয়াতে তোমাদের যেমন ঝগড়া হয়, তা মুমিনগণ কর্তৃক তাদের ভাইদের সম্পর্কে যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে, তাদের রবের সাথে ঝগড়ার চেয়ে অধিক কঠিন নয়। তিনি বলেনঃ তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত ও আমাদের সাথে হজ করত, কিন্তু আপনি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলবেনঃ যাও তাদের থেকে যাকে তোমরা চিনো তাকে বের কর। তিনি বলেনঃ তাদের নিকট তারা আসবে, তাদের চেহারা দেখে তাদেরকে তারা চিনবে, তাদের কাউকে আগুন পায়ের গোছার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। কাউকে পায়ের টাকনু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে, তাদেরকে তারা বের করবে অতঃপর বলবেঃ হে আমাদের রব, যাদের সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা বের করেছি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলবেনঃ বের কর যার অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। অতঃপর বলবেনঃ যার অন্তরে অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। এক সময় বলবেনঃ যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান রয়েছে”। [নাসায়ি ও ইব্‌ন মাজাহ]

অথাৎ দুনিয়াতে আমরা নিজেদের দাবি নিয়ে যে পরিমাণ ঝগড়া ও তর্কে লিপ্ত হই, আখেরাতে মুমিনগণ আল্লাহর সাথে তার চেয়ে অধিক ঝগড়া ও তর্কে লিপ্ত হবে তাদের ভাইদের মুক্ত করানোর জন্য, যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮. অধ্যায়ঃ
আহলে তাওহীদকে জাহান্নাম থেকে বের করা
১৪
عن أبي سعيد الخدري -رضي الله عنه- عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: « يدخل أهل الجنة الجنةَ وأهْلُ النَّارِ النارَ، ثم يقول الله تعالى: أَخرجوا من كان في قلبه مثقال حبة من خردل من إيمان، فيخرجون منها قد اسودوا فيلقون في نهر الحياَ -أو الحياة- فينبُتُون كما تنبت الحبةُ في جانب السيَّل، ألم تر أنها تخرج صفراءَ مُلتوية؟ » . ( خ, م ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জান্নাতিরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ বের কর যার অন্তরে সর্ষে পরিমাণ ঈমান রয়েছে, ফলে তারা সেখান থেকে বের হবে এমতাবস্থায় যে কালো হয়ে গেছে, অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টির নহর অথবা সঞ্জীবনী নহরে নিক্ষেপ করা হবে, ফলে তারা নতুন জীবন লাভ করবে যেমন নালার কিনারায় ঘাস জন্মায়। তুমি দেখনি তা হলুদ আঁকাবাঁকা গজায়?”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯. অধ্যায়ঃ
বেতাকার হাদিস ও লাইলাহা ইল্লাল্লাহুর ফযিলত
১৫

عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ -رضي الله عنهما- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلاً مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلاًّ، كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الْحَافِظُونَ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ. فَيَقُولُ: أَفَلَكَ عُذْرٌ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً فَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتَخْرُجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، فَيَقُولُ: احْضُرْ وَزْنَكَ. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ؟ فَقَالَ: إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ، قَالَ: فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ، وَالْبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ فَطَاشَتْ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتْ الْبِطَاقَةُ، فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ » . ( ت, حم, جه ) صحيح

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সবার সামনে নাজাত দিবেন, তার সামনে নিরানব্বইটি দফতর খোলা হবে, প্রত্যেক দফতর চোখের দৃষ্টি পরিমাণ লম্বা। অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি এর কিছু অস্বীকার কর? আমার সংরক্ষণকারী লেখকরা তোমার ওপর যুলম করেছে? সে বলবেঃ না, হে আমার রব। তিনি বলবেনঃ তোমার কোন অজুহাত আছে? সে বলবেঃ না, হে আমার রব। তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় আমার নিকট তোমার একটি নেকি রয়েছে, আজ তোমার ওপর কোন যুলম নেই, অতঃপর একটি বেতাকা/কার্ড বের হবে, যাতে রয়েছেঃ

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.

তিনি বলবেনঃ তোমার (কাজের) ওজন প্রত্যক্ষ কর। সে বলবেঃ হে আমার রব এতগুলো দফতরের সাথে একটি কার্ড কি (কাজে আসবে)? তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় তোমার ওপর যুলম করা হবে না। তিনি বলেনঃ অতঃপর সবগুলো দফতর এক পাল্লায় ও কার্ডটি অপর পাল্লায় রাখা হবে, ফলে দফতরগুলো ওপরে উঠে যাবে ও কার্ডটি ভারী হবে। আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন জিনিস ভারী হবে না”। [তিরমিযি, আহমদ ও ইব্‌ন মাজাহ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১০. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততা
১৬
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: « سَبَقَتْ رَحْمَتِي غَضَبِي ». ( م ) صحيح.

আবু হুরায়রা (রাঃ ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আমার রহমত আমার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১১. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশকারীদের প্রতি হুশিয়ারি
১৭
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «كَانَ رَجُلَانِ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ مُتَوَاخِيَيْنِ، فَكَانَ أَحَدُهُمَا يُذْنِبُ وَالْآخَرُ مُجْتَهِدٌ فِي الْعِبَادَةِ، فَكَانَ لَا يَزَالُ الْمُجْتَهِدُ يَرَى الْآخَرَ عَلَى الذَّنْبِ فَيَقُولُ أَقْصِرْ فَوَجَدَهُ يَوْمًا عَلَى ذَنْبٍ، فَقَالَ لَهُ: أَقْصِرْ. فَقَالَ: خَلِّنِي وَرَبِّي أَبُعِثْتَ عَلَيَّ رَقِيبًا؟ فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ أَوْ لَا يُدْخِلُكَ اللَّهُ الْجَنَّةَ، فَقَبَضَ أَرْوَاحَهُمَا فَاجْتَمَعَا، عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَقَالَ لِهَذَا الْمُجْتَهِدِ: أَكُنْتَ بِي عَالِمًا؟ أَوْ كُنْتَ عَلَى مَا فِي يَدِي قَادِرًا، وَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِي، وَقَالَ لِلْآخَرِ: اذْهَبُوا بِهِ إِلَى النَّارِ؟ ». ( د ) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “বনি ইসরাইলে দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজন পাপ করত, দ্বিতীয়জন খুব ইবাদত গুজার ছিল। ইবাদত গুজার তার বন্ধুকে সর্বদা পাপে লিপ্ত দেখত, তাই সে বলত বিরত হও, একদিন সে তাকে কোন পাপে লিপ্ত দেখে বলেঃ বিরত হও। সে বললঃ আমাকে ও আমার রবকে থাকতে দাও, তোমাকে কি আমার ওপর পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে? ফলে সে বললঃ আল্লাহর কসম আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর তাদের উভয়ের রূহ কবজ করা হল এবং তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে একত্র হল। তিনি ইবাদত গুজারকে বলেনঃ তুমি কি আমার ব্যাপারে অবগত ছিলে? অথবা আমার হাতে যা রয়েছে তার ওপর তুমি ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে তিনি বলেনঃ যাও আমার রহমতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির জন্য বলেনঃ তাকে নিয়ে জাহান্নামে যাও [আবু দাউদ]

এর অর্থ এই নয় যে, কেউ অন্যায় ও গুনাহ করবে আর অন্য কেউ তার প্রতিবাদ করবে না। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ হচ্ছে তিন প্রকারের, হাতে, মুখে বা অন্তরের ঘৃণা। তাকে হাত দিয়ে বাধা, মুখ দিয়ে নিষেধ আর সক্ষম না হলেও অন্তরে তার কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা করাই হচ্ছে প্রতিবাদে ভাষা। কিন্তু তার বাইরে প্রতিবাদের সীমা ছড়িয়ে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না, বলাই অগ্রহণযোগ্য কাজ। যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১৮
عَنْ جُنْدَبٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَ: «أَنَّ رَجُلاً قَالَ وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لِفُلَانٍ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ: مَنْ ذَا الَّذِي يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَنْ لَا أَغْفِرَ لِفُلَانٍ، فَإِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لِفُلَانٍ وَأَحْبَطْتُ عَمَلَك» أَوْ كَمَا قَالَ. (م) صحيح

জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জনৈক ব্যক্তি বলেছে আল্লাহর কসম আল্লাহ অমুককে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ কে সে আমার ওপর কর্তৃত্ব করে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম আর তোমার আমল বিনষ্ট করলাম [১]”। অথবা যেরূপ তিনি বলেছেন। [মুসলিম]

[১] আল্লাহ তার আমল নষ্ট করে দেয়ার কারণ হচ্ছে, সে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করেছে। আল্লাহকে তাঁর সঠিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করেনি। মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে যখন খারাপ ধারণা করে, তখন সে নিরাশ হয় বা অপরকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে দেয়, এটি কুফরির পর্যায়ে। তাই তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৯
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ إِنْسَانًا ثُمَّ خَرَجَ يَسْأَلُ فَأَتَى رَاهِبًا فَسَأَلَهُ فَقَالَ لَهُ: هَلْ مِنْ تَوْبَةٍ؟ قَالَ: لَا فَقَتَلَهُ، فَجَعَلَ يَسْأَلُ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: ائْتِ قَرْيَةَ كَذَا وَكَذَا فَأَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَنَاءَ بِصَدْرِهِ نَحْوَهَا، فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلَائِكَةُ الْعَذَابِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي وَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وَقَالَ: قِيسُوا مَا بَيْنَهُمَا، فَوُجِدَ إِلَى هَذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ" . (خ, م ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বনি ইসরাইলে এক লোক ছিল যে নিরানব্বই জন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, অতঃপর জানার জন্য বের হল, এক সংসারবিরাগীর নিকট আসল, তাকে জিজ্ঞাসা করল ও তাকে বললঃ কোন তওবা আছে কি? সে বললঃ না, ফলে তাকেও হত্যা করল। অতঃপর সে লোকদের জিজ্ঞেস করতে থাকল, তখন এক ব্যক্তি তাকে বললঃ তুমি অমুক অমুক গ্রামে আস, (রাস্তায়) তাকে মৃত্যু পেয়ে বসল, সে বক্ষ দ্বারা ঐ গ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করল। তার ব্যাপারে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাগণ তর্কে লিপ্ত হল। আল্লাহ তা‘আলা এ জনপদকে নির্দেশ করলেন যে, নিকটবর্তী হও, আর এ জনপদকে নির্দেশ করলেন যে, দূরবর্তী হও। অতঃপর আল্লাহ বললেনঃ উভয় জনপদের দূরত্ব পরিমাপ কর। দেখা গেল এ জনপদের দিকে সে এক বিঘত বেশী অগ্রসর, তাই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১২. অধ্যায়ঃ
মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে বলা নিষেধ
২০
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا سَمِعْتُمْ رَجُلاً يَقُولُ: هَلَكَ النَّاسُ، فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ، يَقُولُ اللَّهُ: إِنَّهُ هُوَ هَالِكٌ». (حم) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন তোমরা কোন ব্যক্তিকে বলতে শোনঃ মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে, তাহলে সেই অধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১৩. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর ভয়ের ফযিলত
২১
عَنْ حُذَيْفَةَ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كَانَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ يُسِيءُ الظَّنَّ بِعَمَلِهِ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِذَا أَنَا مُتُّ فَخُذُونِي فَذَرُّونِي فِي الْبَحْرِ فِي يَوْمٍ صَائِفٍ فَفَعَلُوا بِهِ فَجَمَعَهُ اللَّهُ ثُمَّ قَالَ: مَا حَمَلَكَ عَلَى الَّذِي صَنَعْتَ؟ قَالَ مَا حَمَلَنِي إِلَّا مَخَافَتُكَ فَغَفَرَ لَهُ » . (خ, ن ) صحيح

হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বে এক ব্যক্তি ছিল, সে তার নিজের (যে সকল খারাপ কাজ করেছে সে সকল) আমলের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করত (যে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে), তাই সে তার পরিবারকে বললঃ আমি যখন মারা যাব আমাকে গ্রহণ করবে, (এবং আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে নিবে) অতঃপর প্রবল ঝড়ের দিন আমাকে সমুদ্রে ছিটিয়ে দিবে, তারা তার সাথে অনুরূপ করল। আল্লাহ তাকে (মৃত্যুর পর) একত্র করলেন, অতঃপর বললেনঃ কিসে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে যা তুমি করেছে? সে বললঃ তোমার ভয় ব্যতীত কোন বস্তু আমাকে উদ্বুদ্ধ করে নি, ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন”। [বুখারি ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২২
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : « أَنَّهُ ذَكَرَ رَجُلاً فِيمَنْ سَلَفَ -أَوْ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ- قَالَ كَلِمَةً يَعْنِي أَعْطَاهُ اللَّهُ مَالاً وَوَلَدًا فَلَمَّا حَضَرَتْ الْوَفَاةُ قَالَ لِبَنِيهِ: أَيَّ أَبٍ كُنْتُ لَكُمْ؟ قَالُوا: خَيْرَ أَبٍ. قَالَ: فَإِنَّهُ لَمْ يَبْتَئِرْ -أَوْ لَمْ يَبْتَئِزْ- عِنْدَ اللَّهِ خَيْرًا، وَإِنْ يَقْدِرْ اللَّهُ عَلَيْهِ يُعَذِّبْهُ، فَانْظُرُوا إِذَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِي حَتَّى إِذَا صِرْتُ فَحْمًا فَاسْحَقُونِي -أَوْ قَالَ:فاسهكوني- فَإِذَا كَانَ يَوْمُ رِيحٍ عَاصِفٍ فَأَذْرُونِي فِيهَا» فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « فَأَخَذَ مَوَاثِيقَهُمْ عَلَى ذَلِكَ وَرَبِّي فَفَعَلُوا ثُمَّ أَذْرَوْهُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ فَقَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: كُنْ. فَإِذَا هُوَ رَجُلٌ قَائِمٌ. قَالَ اللَّهُ: أَيْ عَبْدِي مَا حَمَلَكَ عَلَى أَنْ فَعَلْتَ مَا فَعَلْتَ؟ قَالَ: مَخَافَتُكَ -أَوْ فَرَقٌ مِنْكَ- قَالَ: فَمَا تَلَافَاهُ أَنْ رَحِمَهُ عِنْدَهَا » وَقَالَ مَرَّةً أُخْرَى: « فَمَا تَلَافَاهُ غَيْرُهَا » .( خ, م ) صحيح

আবু সায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেনঃ “তিনি পূর্বের জনৈক ব্যক্তির উল্লেখ করলেন- অথবা তোমাদের পূর্বের- তিনি একটি বাক্য বললেন অর্থাৎ আল্লাহ তাকে সম্পদ ও সন্তান দান করেছেন, যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল সে তার সন্তানদের বললঃ আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বললঃ উত্তম পিতা। সে বললঃ সে তো আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ জমা করেনি, আল্লাহ যদি তাকে পান [১] অবশ্যই শাস্তি দিবেন। তোমরা এক কাজ কর, আমি যখন মারা যাব আমাকে জ্বালাও, যখন আমি কয়লায় পরিণত হব আমাকে পিষ অথবা বলেছেন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেল, অতঃপর যখন প্রচণ্ড ঝড়ের দিন হবে আমাকে তাতে ছিটিয়ে দাও”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে এ জন্য তাদের থেকে ওয়াদা নিলো, আমার রবের কসম, তারা তাই করল, অতঃপর প্রচণ্ড ঝড়ের দিন ছিটিয়ে দিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ ‘কুন’ (হও), ফলে সে দণ্ডায়মান ব্যক্তিতে পরিণত হল। আল্লাহ বললেনঃ হে আমার বান্দা কিসে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, যে তুমি করেছ যা করার? সে বললঃ তোমার ভয়- অথবা তোমার থেকে পলায়নের জন্য- তিনি বললেনঃ আল্লাহর দয়া ব্যতীত তার অন্য কিছু তাকে উদ্ধার করে নি। আরেকবার বলেনঃ রহম ব্যতীত অন্য কিছু তার নসিব হয়নি”। [বুখারি ও মুসলিম]

[১] আল্লাহ তাকে তাকে পাবে না, এটা তার বিশ্বাস থাকলে তার ঈমান থাকার কথা নয়, আর ঈমান না থাকলে জান্নাত পাওয়া যাবে না। সুতরাং এখানে এটাই মানতে হবে যে, লোকটি তার অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহ সম্পর্কে এ ধারণা করে থাকতে পারে। তাই তার অজ্ঞতার কারণে আল্লাহ তাকে এর জন্য পাকড়াও না করে আল্লাহকে ভয় করার কারণে তাকে ক্ষমা করে দেন। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « قَالَ رَجُلٌ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ: فَإِذَا مَاتَ فَحَرِّقُوهُ وَاذْرُوا نِصْفَهُ فِي الْبَرِّ وَنِصْفَهُ فِي الْبَحْرِ، فَوَاللَّهِ لَئِنْ قَدَرَ اللَّهُ عَلَيْهِ لَيُعَذِّبَنَّهُ عَذَابًا لَا يُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِنْ الْعَالَمِينَ، فَأَمَرَ اللَّهُ الْبَحْرَ فَجَمَعَ مَا فِيهِ وَأَمَرَ الْبَرَّ فَجَمَعَ مَا فِيهِ، ثُمَّ قَال:َ لِمَ فَعَلْتَ؟ قَالَ: مِنْ خَشْيَتِكَ وَأَنْتَ أَعْلَمُ، فَغَفَرَ لَهُ » . ( خ, م, ن ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জনৈক ব্যক্তি যে কখনো ভাল কাজ করেনি বলেছেঃ যখন সে মারা যায়, তাকে জ্বালাও, অতঃপর তার অর্ধেক স্থলে ও অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দাও, আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহ তার নাগাল পান তাহলে তিনি এমন শাস্তি দিবেন, যা জগতের কাউকে দিবেন না। অতঃপর আল্লাহ সমুদ্রকে নির্দেশ করলেন, ফলে সে তার মধ্যে যা ছিল জমা করল, এবং স্থলকে নির্দেশ করলেন ফলে সে তার মধ্যে যা ছিল জমা করল। অতঃপর বললেনঃ তুমি কেন করেছ? সে বললঃ তোমার ভয়ে, তুমিই ভাল জান। ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন”। [বুখারি, মুসলিম ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৪. অধ্যায়ঃ
যিকিরের ফযিলত ও নেক আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা
২৪

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي، وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَإٍ ذَكَرْتُهُ فِي مَلَإٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ بِشِبْرٍ تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا، وَإِنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً » . (خ, م, ت, جه ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি।[১] আমি তার সাথে থাকি [2] যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে মজলিসে স্মরণ করে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার নিকট এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার নিকট একহাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার নিকট একহাত অগ্রসর হয় আমি তার নিকট একবাহু অগ্রসর হই। যদি সে আমার নিকট আসে হেঁটে আমি তার নিকট যাই দ্রুত”। [বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি ও ইব্‌ন মাজাহ]

[১] ইমাম আহমদের এক বর্ণনায় রয়েছেঃ “যদি সে আমার সম্পর্কে ভাল ধারণা করে তার জন্যই ভাল, যদি সে আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করে তার জন্যই খারাপ।

[2] সাথে থাকার অর্থ, তার অবস্থা জানা ও তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৫
عَنْ أبي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ قَالَ: إِذَا تَلَقَّانِي عَبْدِي بِشِبْرٍ تَلَقَّيْتُهُ بِذِرَاعٍ، وَإِذَا تَلَقَّانِي بِذِرَاعٍ تَلَقَّيْتُهُ بِبَاعٍ، وَإِذَا تَلَقَّانِي بِبَاعٍ أَتَيْتُهُ بِأَسْرَعَ» . (م) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমার বান্দা যখন এক বিঘত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি তার সাথে সাক্ষাত করি একহাত এগিয়ে। যখন সে একহাত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি একবাহু এগিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করি। যখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করে একবাহু এগিয়ে আমি তার নিকট আসি আরও দ্রুত পদক্ষেপে”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৬
عَنْ شُرَيْحٍ قَال: سَمِعْتُ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ قُمْ إِلَيَّ أَمْشِ إِلَيْكَ وَامْشِ إِلَيَّ أُهَرْوِلْ إِلَيْكَ» . (حم) صحيح

শুরাইহ্‌ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছিঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে বনি আদম, তুমি আমার দিকে দাঁড়াও আমি তোমার দিকে চলব, তুমি আমার দিকে চল আমি তোমার দিকে দ্রুত পদক্ষেপে যাব”। [আহমদ]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৭
عن معقل بن يسار -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "يقولُ ربُّكم تبارك وتعالى: يا ابنَ آدم تَفَرَّغْ لعبادتي أملأ قلبَك غنًى، وأملأ يديك رزقًا، يا ابن آدم لا تباعد مني فأمْلأ قَلبَك فقرًا، وأملأ يديك شُغْلاً». (ك) صحيح لغيره

মা‘কাল ইব্‌ন ইয়াসার থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের রব বলেনঃ হে বনি আদম, তুমি আমার ইবাদতের জন্য মনোনিবেশ করো, আমি তোমার অন্তরকে সচ্ছলতায় ভরে দেব, তোমার হাত রিজিক দ্বারা পূর্ণ করে দেব। হে বনি আদম, তুমি আমার থেকে দূরে যেয়ো না, ফলে আমি তোমার অন্তর অভাবে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দু’ হাতকে কর্মব্যস্ত করে দেব”। [হাকেম]

হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

১৫. অধ্যায়ঃ
যিকির ও নেককারদের সঙ্গের ফযিলত
২৮
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطُّرُقِ يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَنَادَوْا: هَلُمُّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ » قَالَ: « فَيَحُفُّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا قَالَ: فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ عز وجل -وَهُوَ أَعْلَمُ مِنْهُمْ- مَا يَقُولُ عِبَادِي؟ قَالُوا: يَقُولُونَ: يُسَبِّحُونَكَ وَيُكَبِّرُونَكَ وَيَحْمَدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ قَالَ: فَيَقُولُ: هَلْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ مَا رَأَوْكَ قَالَ: فَيَقُولُ: وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً، وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيدًا، وَتَحْمِيدًا وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيحًا، قَالَ: يَقُولُ: فَمَا يَسْأَلُونِي؟ قَالَ يَسْأَلُونَكَ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصًا، وَأَشَدَّ لَهَا طَلَبًا، وَأَعْظَمَ فِيهَا رَغْبَةً، قَالَ: فَمِمَّ يَتَعَوَّذُونَ؟ قَالَ: يَقُولُونَ: مِنْ النَّارِ، قَالَ: يَقُولُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْهَا، كَانُوا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَارًا وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً، قَالَ: فَيَقُولُ: فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ، قَالَ: يَقُولُ مَلَكٌ مِنْ الْمَلَائِكَةِ: فِيهِمْ فُلَانٌ لَيْسَ مِنْهُمْ إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ، قَالَ: هُمْ الْجُلَسَاءُ لَا يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ ». (خ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছে তারা যিকিরকারীদের তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। যখন কোন কওমকে আল্লাহর যিকিরে মশগুল দেখে তারা একে অপরকে আহ্বান করেঃ তোমাদের লক্ষ্যের দিকে আস”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তাদেরকে তারা নিজেদের ডানা দ্বারা দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত ঢেকে নেয়। তিনি বলেনঃ অতঃপর তাদের রব তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, -অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জানেন- আমার বান্দাগণ কি বলে? ফেরেশতারা বলেঃ তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার বড়ত্ব ঘোষণা করছে, আপনার প্রশংসা করছে ও আপনার মর্যাদা ঘোষণা করছে। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ তারা কি আমাকে দেখেছে? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ না, আল্লাহর কসম, তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ যদি তারা আমাকে দেখত কেমন হত? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ যদি তারা আপনাকে দেখত তাহলে আরও কঠিন ইবাদত করত, অধিক মর্যাদা ও প্রশংসার ঘোষণা করত, অধিক তসবিহ পাঠ করত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ তারা আমার নিকট কি চায়? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়? তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ তারা কি জান্নাত দেখেছে? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ না, হে রব, তারা জান্নাত দেখে নি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ যদি তারা জান্নাত দেখত কেমন হত? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তার জন্য তারা আরো অধিক আগ্রহী হত, অধিক তলবকারী হত ও তার অধিক আশা পোষণ করত। তিনি বলেনঃ তারা কার থেকে পানাহ চায়? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ না, আল্লাহর কসম, হে রব তারা জাহান্নাম দেখেনি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ যদি তারা জাহান্নাম দেখত কেমন হত? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে তার থেকে অধিক পলায়ন করত, তাকে অধিক ভয় করত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের সাক্ষী রাখছি আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি বলেনঃ তাদের এক ফেরেশতা বলেঃ তাদের মধ্যে অমুক রয়েছে যে তাদের দলের নয়, সে অন্য কাজে এসেছে। তিনি বলেনঃ তারা এমন জমাত যাদের কারণে তাদের সাথীরা মাহরুম হয় না”। [বুখারি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৯
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ: أَنَا مَعَ عَبْدِي إِذَا هُوَ ذَكَرَنِي وَتَحَرَّكَتْ شَفَتَاهُ". (حم, جه) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি আমার বান্দার সাথেই আছি যখন সে আমাকে স্মরণ করে ও তার দুই ঠোট নড়ে”। [আহমদ, ইব্‌ন মাজাহ]

এখানে সাথে থাকার অর্থ, তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থাকা ও তাকে সহায্য-সহযোগিতা করা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

    সরাসরি

৩০
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ -رضى الله عنهما- أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا قَالَ الْعَبْدُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ، وَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ، قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَا شَرِيكَ لَهُ قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَلَا شَرِيكَ لِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا لِيَ الْمُلْكُ وَلِيَ الْحَمْدُ، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، قَال: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِي» . (جه, ت, عبد, حب) صححه الشيخ الألباني

আবু হুরায়রা ও আবু সায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছেন, তিনি বলেছেনঃ “বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমিই মহান। বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, একলা আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই। বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَا شَرِيكَ لَهُ তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমার কোন শরীক নেই। বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, রাজত্ব আমার, আমার জন্যই প্রশংসা। বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমার তৌফিক ব্যতীত পাপ থেকে বিরত থাকা ও ইবাদত করার ক্ষমতা নেই”। [ইব্‌ন মাজাহ, তিরমিযি, ইব্‌ন হুমাইদ ও ইব্‌ন হিব্বান]
শায়খ আলবানি হাদীসটি সহিহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৬. অধ্যায়ঃ
তওবা ও ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা
৩১

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِنَّ عَبْدًا أَصَابَ ذَنْبًا -وَرُبَّمَا قَالَ: أَذْنَبَ ذَنْبًا- فَقَال: رَبِّ أَذْنَبْتُ -وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَبْتُ فَاغْفِرْ لِي- فَقَالَ رَبُّهُ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي، ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ أَصَابَ ذَنْبًا -أَوْ أَذْنَبَ ذَنْبًا- فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ -أَوْ أَصَبْتُ- آخَرَ فَاغْفِرْهُ. فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي. ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا -وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَابَ ذَنْبًا- قَالَ: قَالَ: رَبِّ أَصَبْتُ -أَوْ قَالَ: أَذْنَبْتُ- آخَرَ فَاغْفِرْهُ لِي. فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي ثَلَاثًا فَلْيَعْمَلْ مَا شَاءَ » . ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ “কোন বান্দা পাপে লিপ্ত হল, অথবা বলেছেনঃ কোন পাপ করল। অতঃপর বলেঃ হে আমার রব আমি পাপ করেছি, অথবা বলেঃ পাপে লিপ্ত হয়েছি আমাকে ক্ষমা করুন। তার রব বলেনঃ আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যে পরিমাণ চান সে বিরত থাকে। অতঃপর পাপে লিপ্ত হয় অথবা পাপ সংগঠিত করে, অতঃপর বলেঃ হে আমার রব, আমি দ্বিতীয় পাপ করেছি অথবা দ্বিতীয় পাপে লিপ্ত হয়েছি, আপনি তা ক্ষমা করুন। আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যে পরিমাণ চান সে বিরত থাকে। অতঃপর কোন পাপ করে অথবা বলেছেনঃ পাপে লিপ্ত হয়। তিনি বলেনঃ সে বলেঃ হে আমার রব আমি পাপ করেছি অথবা পাপে লিপ্ত হয়েছি আবারও, আপনি আমার জন্য তা ক্ষমা করুন। আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমি আমার বান্দাকে তিনবারই ক্ষমা করে দিলাম, সে যা চায় আমল করুক”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩২
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ إِبْلِيسَ قَالَ لِرَبِّهِ: بِعِزَّتِكَ وَجَلَالِكَ لَا أَبْرَحُ أُغْوِي بَنِي آدَمَ مَا دَامَتْ الْأَرْوَاحُ فِيهِمْ، فَقَالَ اللَّهُ: فَبِعِزَّتِي وَجَلَالِي لَا أَبْرَحُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِي » ( حم ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “ইবলিস তার রবকে বলেছেঃ আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি বনি আদমকে ভ্রষ্ট করতেই থাকব যতক্ষণ তাদের মধ্যে রূহ থাকে। আল্লাহ বলেনঃ আমার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব যতক্ষণ তারা আমার নিকট ইস্তেগফার করে”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৩
عَنْ عَلِيِّ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: شَهِدْتُ عَلِيًّا -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- وَأُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الرِّكَابِ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ، فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى ظَهْرِهَا، قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ، ثُمَّ قَالَ: ﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣﴾ ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ -ثُمَّ ضَحِكَ- فَقِيلَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ؟ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَعَلَ كَمَا فَعَلْتُ ثُمَّ ضَحِكَ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ؟ قَالَ: «إِنَّ رَبَّكَ يَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهِ إِذَا قَالَ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرِي». ( د, ت, حم ) صحيح

আলি ইব্‌ন রাবিয়াহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আলিকে দেখেছিঃ “একটি চতুষ্পদ জন্তু আনা হল যেন সে তাতে আরোহণ করে, তিনি যখন তার ওপর নিজ পা রাখলেন বললেনঃ بِسْمِ اللَّهِ যখন তার পিঠে স্থির বসলেন বললেনঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ، অতঃপর বললেনঃ﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣﴾
“পবিত্র-মহান সেই সত্তা যিনি এগুলোকে ‎আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর ‎আমরা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ‎ছিলাম না”‎ (সূরা যুখরুফঃ১৩) অতঃপরঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ তিনবার, اللَّهُ أَكْبَرُ তিনবার বললেন, অতঃপর বললেনঃ
سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
(“আপনি কতই-না পবিত্র, নিশ্চয় আমি আমার নিজের নফসের উপর যুলুম করেছি, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আপনি ব্যতীত কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না”)
অতঃপর হাসলেন, বলা হলঃ হে আমিরুল মুমেনিন কি জন্য হাসলেন? তিনি বললেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি, তিনি করেছেন যেরূপ আমি করেছি, অতঃপর তিনি হেসেছেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল কি জন্য হাসলেন? তিনি বললেনঃ “তোমার রব তার বান্দাকে দেখে আশ্চর্য হন, যখন সে বলে আমার পাপ ক্ষমা করুন, সে জানে আমি ব্যতীত কেউ পাপ ক্ষমা করবে না”। [আবু দাউদ, তিরমিযি ও আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৭. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর সাক্ষাত যে পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাত পছন্দ করেন
৩৪
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: قَالَ اللَّهُ: « إِذَا أَحَبَّ عَبْدِي لِقَائِي أَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ، وَإِذَا كَرِهَ لِقَائِي كَرِهْتُ لِقَاءَهُ » . ( خ ) صحيح البخاري

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আমার বান্দা যখন আমার সাক্ষাত পছন্দ করে আমি তার সাক্ষাত পছন্দ করি। যখন সে আমার সাক্ষাত অপছন্দ করে আমি তার সাক্ষাত অপছন্দ করি”। [বুখারি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৮. অধ্যায়ঃ
বান্দার জন্য আল্লাহর মহব্বতের নিদর্শন
৩৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَن النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ عَبْدًا نَادَى جِبْرِيلَ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبَّهُ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، فَيُنَادِي جِبْرِيلُ فِي أَهْلِ السَّمَاءِ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِيِ الْأَرْضِ » . ( خ ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মহব্বত করেন জিবরিলকে ডেকে বলেনঃ আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব তুমি তাকে মহব্বত কর ফলে জিবরিল তাকে মহব্বত করেন। অতঃপর জিবরিল আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করেনঃ আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব তোমরা তাকে মহব্বত কর ফলে আসমানবাসীরা তাকে মহব্বত করে, অতঃপর জমিনে তার জনপ্রিয়তা রাখা হয়”। [বুখারি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبَّهُ ». قَالَ: «فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، ثُمَّ يُنَادِي فِي السَّمَاءِ فَيَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ » قَالَ: « ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الْأَرْضِ، وَإِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَيَقُولُ: إِنِّي أُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضْهُ » قَالَ: «فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضُوهُ » قَالَ: فَيُبْغِضُونَهُ ثُمَّ تُوضَعُ لَهُ الْبَغْضَاءُ فِي الْأَرْضِ » . ( م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মহব্বত করেন জিবরিলকে ডাকেন, অতঃপর বলেনঃ আমি অমুককে মহব্বত করি অতএব তুমি তাকে মহব্বত কর। তিনি বলেনঃ “ফলে জিবরিল তাকে মহব্বত করে, অতঃপর সে আসমানে ঘোষণা করেঃ আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব তোমরা তাকে মহব্বত কর, ফলে আসমানবাসী তাকে মহব্বত করে”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর জমিনে তার জন্য গ্রহণযোগ্যতা রাখা হয়। পক্ষান্তরে যখন তিনি কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন জিবরিলকে ডাকেন অতঃপর বলেনঃ আমি অমুককে অপছন্দ করি অতএব তুমি তাকে অপছন্দ কর”। তিনি বলেনঃ “ফলে জিবরিল তাকে অপছন্দ করে, অতঃপর সে আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা দেয়, আল্লাহ অমুককে অপছন্দ করে অতএব তোমরা তাকে অপছন্দ কর”। তিনি বলেনঃ ফলে তারা তাকে অপছন্দ করে, অতঃপর জমিনে তার জন্য নিন্দা রাখা হয়”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৯. অধ্যায়ঃ
মুসলিমদেরকে মহব্বত ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
৩৭
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلَانًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ. أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ؟ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي قَالَ: يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلَانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ، أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي؟ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلَانٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي ». ( م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমাকে দেখনি, সে বলবেঃ হে আল্লাহ আপনাকে কিভাবে দেখব, অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ তুমি জান না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল তুমি তাকে দেখনি, তুমি জান না যদি তাকে দেখতে আমাকে তার নিকট পেতে? হে বনি আদম আমি তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিলাম তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি, সে বলবেঃ হে আমার রব, আমি কিভাবে আপনাকে খাদ্য দিব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ তুমি জান না আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল তুমি তাকে খাদ্য দাওনি, তুমি জান না যদি তাকে খাদ্য দিতে তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে। হে বনি আদম, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে পানি দাওনি, সে বলবেঃ হে আমার রব কিভাবে আমি আপনাকে পানি দেব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল তুমি তাকে পানি দাওনি, মনে রেখ যদি তাকে পানি দিতে তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২০. অধ্যায়ঃ
প্রতিবেশীদের সাক্ষী ও তাদের প্রশংসার ফযিলত
৩৮
عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَشْهَدُ لَهُ أَرْبَعَةٌ أَهْلُ أَبْيَاتٍ مِنْ جِيرَانِهِ الْأَدْنَيْنَ إِلَّا قَالَ: قَدْ قَبِلْتُ فِيهِ عِلْمَكُمْ فِيهِ وَغَفَرْتُ لَهُ مَا لَا تَعْلَمُونَ » ( حم ) حسن لغيره

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখনই কোন মুসলিম মারা যায় অতঃপর তার প্রতিবেশীর নিকটতম চার ঘর তার জন্য সাক্ষ্য দেয়, তার সম্পর্কেই আল্লাহ বলেনঃ তার সম্পর্কে তোমাদের জানা আমি কবুল করলাম, আর যা তোমরা জান না আমি ক্ষমা করে দিলাম”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি

২১. অধ্যায়ঃ
দুনিয়া-আখিরাতে মুমিনের দোষ আল্লাহর গোপন করা
৩৯
عَنْ صَفْوَانَ بْنِ مُحْرِزٍ الْمَازِنِيِّ، قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا أَمْشِي مَعَ ابْنِ عُمَرَ ( آخِذٌ بِيَدِهِ إِذْ عَرَضَ رَجُلٌ فَقَالَ: كَيْفَ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي النَّجْوَى؟ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ يُدْنِي الْمُؤْمِنَ فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ وَيَسْتُرُهُ، فَيَقُولُ: أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ أَيْ رَبِّ حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوبِهِ وَرَأَى فِي نَفْسِهِ أَنَّهُ هَلَكَ قَالَ: سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ، فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الْكَافِرُ وَالْمُنَافِقُونَ فَيَقُولُ الْأَشْهَادُ: هَؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ». ( خ, م ) صحيح

সাফওয়ান ইব্‌ন মুহরিয আল-মাযেনি (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা আমি ইব্‌ন ওমরের সাথে তার হাত ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এলো। অতঃপর সে বললঃ ‘নাজওয়া’ (গোপন কথা) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে কি বলতে শুনেছেন? তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের নিকটবর্তী হবেন অতঃপর তার ওপর পর্দা ফেলে তাকে ঢেকে নিবেন এবং বলবেনঃ মনে পড়ে অমুক পাপ, মনে পড়ে অমুক পাপ? সে বলবেঃ হ্যাঁ, হে আমার রব, অবশেষে সে যখন তার সকল পাপ স্বীকার করবে এবং নিজেকে মনে করবে যে, সে ধ্বংস হয়ে গেছে, আল্লাহ বলবেনঃ তোমার ওপর দুনিয়াতে এসব গোপন রেখেছি আজ আমি তা তোমার জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি। অতঃপর তাকে তার নেক আমলের দফতর দেয়া হবে, পক্ষান্তরে কাফের ও মুনাফিক সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবেঃ এরা তাদের রবের ওপর মিথ্যারোপ করেছিল, জেনে রেখ জালেমদের ওপর আল্লাহর লা‘নত”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২২. অধ্যায়ঃ
মুমিনের ফযিলত
৪০
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ: إِنَّ عَبْدِي الْمُؤْمِنَ عِنْدِي بِمَنْزِلَةِ كُلِّ خَيْرٍ يَحْمَدُنِي وَأَنَا أَنْزِعُ نَفْسَهُ مِنْ بَيْنِ جَنْبَيْهِ» . ( حم ) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার মুমিন বান্দা আমার নিকট এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত, যেখানে সে সকল কল্যাণের হকদার, সে আমার প্রশংসা করে এমতাবস্থায় আমি তার দু’পাশ থেকে তার রূহ কব্জা করি”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

২৩. অধ্যায়ঃ
গরিবকে সুযোগ দেয়া ও ক্ষমা করার ফযিলত
৪১
عَنْ حُذَيْفَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «تَلَقَّتْ الْمَلَائِكَةُ رُوحَ رَجُلٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَقَالُوا: أَعَمِلْتَ مِنْ الْخَيْرِ شَيْئًا؟ قَالَ: لَا، قَالُوا: تَذَكَّرْ. قَالَ: كُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَآمُرُ فِتْيَانِي أَنْ يُنْظِرُوا الْمُعْسِرَ وَيَتَجَوَّزُوا عَنْ الْمُوسِرِ قَالَ: قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلّ: تَجَوَّزُوا عَنْهُ». ( خ,م ) صحيح

হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বেকার জনৈক ব্যক্তির রূহের সাথে ফেরেশতারা সাক্ষাত করে বলেঃ তুমি কি কোন কল্যাণ করেছ? সে বলেঃ না, তারা বলেনঃ স্মরণ কর। সে বলেঃ আমি মানুষদের ঋণ দিতাম, অতঃপর আমার যুবকদের বলতাম তারা যেন গরিবকে সুযোগ দেয় ও ধনীর বিলম্বিতা ক্ষমা করে”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪২
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «حُوسِبَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مِنْ الْخَيْرِ شَيْءٌ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ يُخَالِطُ النَّاسَ، وَكَانَ مُوسِرًا فَكَانَ يَأْمُرُ غِلْمَانَهُ أَنْ يَتَجَاوَزُوا عَنْ الْمُعْسِرِ» قَالَ: «قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: نَحْنُ أَحَقُّ بِذَلِكَ مِنْهُ تَجَاوَزُوا عَنْهُ». ( م ) صحيح

আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বের জনৈক ব্যক্তিকে জেরা করা হয়েছে, কিন্তু তার কোন কল্যাণ পাওয়া যায়নি, সে ছিল ধনী, মানুষের সাথে লেনদেন করত, আর তার লোকদের বলত, যেন গরিবকে ক্ষমা করে”। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ তার চেয়ে আমি ক্ষমা করার অধিক হকদার, তাকে ক্ষমা কর”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-: عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ رَجُلاً لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ، وَكَانَ يُدَايِنُ النَّاسَ فَيَقُولُ لِرَسُولِه: خُذْ مَا تَيَسَّرَ وَاتْرُكْ مَا عَسُرَ وَتَجَاوَزْ، لَعَلَّ اللَّهَ تَعَالَى أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا، فَلَمَّا هَلَكَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ: هَلْ عَمِلْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ قَالَ: لَا إِلَّا أَنَّهُ كَانَ لِي غُلَامٌ وَكُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَإِذَا بَعَثْتُهُ لِيَتَقَاضَى قُلْتُ لَهُ: خُذْ مَا تَيَسَّرَ وَاتْرُكْ مَا عَسُرَ وَتَجَاوَزْ لَعَلَّ اللَّهَ يَتَجَاوَزُ عَنَّا، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: قَدْ تَجَاوَزْتُ عَنْكَ». ( ن ) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জনৈক ব্যক্তি কোনো কল্যাণ করেনি, সে মানুষকে ঋণ দিত, অতঃপর তার দূতকে বলতঃ যা সহজ গ্রহণ কর, যা কষ্টের তা ত্যাগ কর ও ছাড় দাও। হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। যখন সে মারা গেল, আল্লাহ তাকে বললেনঃ তুমি কোন কল্যাণ করেছ? সে বলেঃ না, তবে আমার এক কর্মচারী ছিল, আমি মানুষকে ঋণ দিতাম, যখন আমি তাকে উসুল করার জন্য প্রেরণ করেছি তাকে বলেছিঃ যা সহজ হয় গ্রহণ কর, যা কষ্টকর ত্যাগ কর ও ক্ষমা কর, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম”। [নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

২৪. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর অলিদের সাথে দুশমনি করার পাপ
৪৪
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْب،ِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْه،ِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِه،ِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّه،ُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ». ( خ ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ যে আমার অলির সাথে দুশমনি করবে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করেছি। আমার বান্দার ওপর আমি যা ফরয করেছি আমার নিকট তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন বস্তু দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করেনি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে অবশেষে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি আমি তার কানে পরিণত যা দ্বারা সে শ্রবণ করে। তার চোখে পরিণত হই যা দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে, তার পায়ে পরিণত হই যা দ্বারা সে হাঁটে [১]। যদি সে আমার নিকট চায় আমি তাকে অবশ্যই দিব, যদি সে আমার নিকট পানাহ চায় আমি তাকে অবশ্যই পানাহ দিব। আমার করণীয় কোন কাজে আমি দ্বিধা করি না যেমন দ্বিধা করি মুমিনের নফসের সময়, সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আমি তার কষ্টকে অপছন্দ করি”। [বুখারি]

[১] এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দার শরীরের অঙ্গ পরিণত হয়ে যায়, বরং এর অর্থ এই যে, সে তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির বাইরে সে লোক আর চলতে পারে না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিই তার সন্তুষ্টিতে পরিণত হয়ে যায়। এর প্রমাণ হাদীসের বাকী অংশে। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৫. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর জন্য মহব্বতের ফযিলত
৪৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي، الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي».( م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেনঃ আমার বড়ত্বের জন্য মহব্বতকারীরা কোথায়, আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করব, যখন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া নেই”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪৬
عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيِّ عَنْ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَحْكِي عَنْ رَبِّهِ يَقُولُ: «الْمُتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ» قَالَ: فَخَرَجْتُ حَتَّى لَقِيتُ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ فَذَكَرْتُ لَهُ حَدِيثَ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَحْكِي عَنْ رَبِّهِ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ: «حَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ، وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَبَاذِلِينَ فِيّ،َ وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ، وَالْمُتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ». (حم ) صحيح بمجموع طرقه

আবু মুসলিম খাওলানি রাহিমাহুল্লাহ, মু‘আয ইব্‌ন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে শুনেছিঃ “আল্লাহর নিমিত্তে মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ায় নুরের মিম্বারে অবস্থান করবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না”। তিনি বলেনঃ (মু‘আযের কাছ থেকে) বের হয়ে উবাদাহ ইব্‌ন সামেতের সাথে দেখা করি, আমি তাকে মু‘আয ইব্‌ন জাবালের হাদিস বলিঃ তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে শুনেছিঃ “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে খরচকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে সাক্ষাতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আল্লাহর জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ার নিচে নূরের মিম্বারে অবস্থান করবে, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না”। [আহমদ] এ হাদীসটি সব ক’টি সনদের বিবেচনায় সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪৭
عن معاذ بن جبل -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: « قال الله عز وجل: المتحابون في جلالي لهم منابر من نور يغبطهم النبيون والشهداء». (ت) حسن

মুয়ায ইব্‌ন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য নূরের মিম্বার রয়েছে, যাদের সাথে ঈর্ষা করবে নবী ও শহীদগণ”। [তিরমিযি]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

২৬. অধ্যায়ঃ
জান্নাত কষ্ট ও জাহান্নাম প্রবৃত্তি দ্বারা আবৃত
৪৮
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّةَ قَالَ لِجِبْرِيلَ: اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا. فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا، ثُمَّ حَفَّهَا بِالْمَكَارِهِ ثُمَّ قَالَ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ، فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَدْخُلَهَا أَحَدٌ، قَال:َ فَلَمَّا خَلَقَ اللَّهُ النَّارَ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ فَيَدْخُلُهَا، فَحَفَّهَا بِالشَّهَوَاتِ ثُمَّ قَالَ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا». ( د, ت, ن, حم ) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন জিবরিলকে বলেছেনঃ যাও তা দেখ। সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বললঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে প্রবেশ ব্যতীত থাকবে না। অতঃপর তা কষ্ট দ্বারা ঢেকে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বললঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে কেউ প্রবেশ করবে না। তিনি বলেনঃ আল্লাহ যখন জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন বলেছেন, হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বললঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম, তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে কখনো প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি তা প্রবৃত্তি দ্বারা ঢেকে দিলেন অতঃপর বললেনঃ হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বললঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে প্রবেশ ব্যতীত কেউ বাকি থাকবে না”। [আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি ও আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

২৭. অধ্যায়ঃ
নেক বান্দাদের জন্য তৈরি কিছু নিয়ামতের বর্ণনা
৪৯
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم «قَالَ اللَّهُ تَبَارَك وتعَالى: أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ». ( خ، م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য তৈরি করেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার কল্পনা হয়নি”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৮. অধ্যায়ঃ
জান্নাতবাসীদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি
৫০

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ لِأَهْلِ الْجَنَّةِ: يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ، فَيَقُولُونَ: لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِي يَدَيْك،َ فَيَقُولُ: هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لَا نَرْضَى يَا رَبِّ، وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ أَلَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُونَ: يَا رَبِّ وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي فَلَا أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا». ( خ, م ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতিদের বলবেনঃ হে জান্নাতিগণ, তারা বলবেঃ সদা উপস্থিত হে আমাদের রব, আপনার সন্তুষ্টিবিধানে আমি সদা সচেষ্ট, সকল কল্যাণ আপনার হাতে। তিনি বলবেনঃ তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন যা আপনার মখলুকের কাউকে দেননি! তিনি বলবেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম দিব না? তারা বলবেঃ হে রব এর চেয়ে উত্তম কোন বস্তু? তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করছি এরপর কখনো তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হব না”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫১
عن جابر -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «إذا دَخَلَ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّة قال الله جَلَّ وعَلَا: أَتَشْتَهُوْنَ شَيئًا؟ قالوا: رَبَّناَ وَمَا فْوقَ ما أَعْطيتَنْا؟ فيقول: بل رِضَايَ أَكْبَر». ( حب ) إسناده صحيح

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ তোমরা কিছু চাও? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আপনি আমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম কি? তিনি বলবেনঃ বরং আমার সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়”। [ইব্‌ন হিব্বান]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৯. অধ্যায়ঃ
জান্নাতিদের তাদের প্রার্থিত বস্তু প্রদান করা
৫২

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَوْمًا يُحَدِّثُ -وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ-: «أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اسْتَأْذَنَ رَبَّهُ فِي الزَّرْع.ِ فَقَالَ لَهُ: أَوَلَسْتَ فِيمَا شِئْتَ؟ قَالَ: بَلَى وَلَكِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَزْرَعَ، فَأَسْرَعَ وَبَذَرَ فَتَبَادَرَ الطَّرْفَ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَاؤُهُ وَاسْتِحْصَادُهُ وَتَكْوِيرُهُ أَمْثَالَ الْجِبَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: دُونَكَ يَا ابْنَ آدَمَ فَإِنَّهُ لَا يُشْبِعُكَ شَيْءٌ». فَقَالَ الْأَعْرَابِيُّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَا تَجِدُ هَذَا إِلَّا قُرَشِيًّا أَوْ أَنْصَارِيًّا فَإِنَّهُمْ أَصْحَابُ زَرْعٍ، فَأَمَّا نَحْنُ فَلَسْنَا بِأَصْحَابِ زَرْعٍ. فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . (خ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা কথা বলছিলেন, -তার নিকট গ্রামের এক ব্যক্তি ছিলঃ “জান্নাতিদের জনৈক ব্যক্তি তার রবের নিকট কৃষির জন্য অনুমতি চেয়েছে। আল্লাহ তাকে বললেনঃ তুমি কি তাতে নেই যা চেয়েছ? সে বললঃ অবশ্যই, তবে আমি কৃষি করতে চাই। সে দ্রুত চাষ করল, বীজ বপন করল, চোখের পলকে তার চারা গজাল, কাণ্ড সোজা হল, ফসল কাঁটার সময় হল এবং তার স্তূপ হল পাহাড়ের ন্যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি এসব গ্রহণ কর, কারণ কোন জিনিস তোমাকে তৃপ্ত করবে না। গ্রামের লোকটি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল এ ব্যক্তি কুরাইশি বা আনসারি ব্যতীত কেউ নয়, কারণ তারা কৃষি করে, কিন্তু আমরা কৃষক নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন”। [বুখারি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩০. অধ্যায়ঃ
জান্নাতের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী
৫৩
عَنْ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- رْفَعُهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً؟ قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ فَيُقَالُ لَهُ: ادْخُلْ الْجَنَّةَ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ؟ فَيُقَالُ لَهُ: أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا؟ فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ فَقَالَ فِي الْخَامِسَة:ِ رَضِيتُ رَبِّ، قَالَ: رَبِّ فَأَعْلَاهُمْ مَنْزِلَةً؟ قَالَ: أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِي وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَر» قَالَ: وَمِصْدَاقُهُ فِي كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ ١٧﴾ . (م) صحيح

মুগিরা ইব্‌ন শু‘বা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মুগিরা ইব্‌ন শু‘বা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মরফূ [১] হিসেবে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “মুসা আলাইহিস সালাম তার রবকে জিজ্ঞাসা করেন জান্নাতিদের নিম্ন স্তর কি? তিনি বলেনঃ সে ব্যক্তি যে জান্নাতিদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে, তাকে বলা হবেঃ জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবেঃ হে আমার রব কিভাবে, অথচ লোকেরা তাদের স্থানে পৌঁছে গেছে, তাদের হক তারা গ্রহণ করেছে? তাকে বলা হবেঃ তুমি কি সন্তুষ্ট যে তোমার জন্য দুনিয়ার বাদশাহদের রাজত্বের ন্যায় রাজত্ব হোক? সে বলবেঃ হে আমার রব, আমি সন্তুষ্ট। তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য তা, এবং তার সমান, তার সমান ও তার সমান, পঞ্চম বারে বললঃ হে আমার রব আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আমার রব, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী? তিনি বললেনঃ তাদেরকে আমি চেয়েছি, আমি নিজ হাতে তাদের সম্মান রোপণ করেছি ও তার ওপর মোহর এঁটে দিয়েছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং মানুষের অন্তরে কল্পনা হয়নি। তিনি বলেনঃ কুরআনে তার নমুনা হচ্ছেঃ
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ ١٧ ﴾ [السجدة ঃ ١٧]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য ‎‎চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে”। (সূরা আলিফ লাম মিম সাজদাহঃ ১৭) [মুসলিম]

[১] কেউ এ হাদিসকে মওকুফ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩১. অধ্যায়ঃ
জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি
৫৪
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنِّي لَأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا وَآخِرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولاً الْجَنَّةَ: رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنْ النَّارِ حَبْوًا فَيَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَهُ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ فَيَأْتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَهُ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ قَالَ: فَيَأْتِيهَا فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشَرَةَ أَمْثَالِهَا -أَوْ إِنَّ لَكَ عَشَرَةَ أَمْثَالِ الدُّنْيَا- قَالَ: فَيَقُولُ: أَتَسْخَرُ بِي أَوْ أَتَضْحَكُ بِي وَأَنْتَ الْمَلِكُ؟» ،قال: لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، قَالَ: فَكَانَ يُقَالُ: ذَاكَ أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً. ( خ, م ) صحيح

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকেঃ জনৈক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব আমি তা পূর্ণ পেয়েছি, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি বলেনঃ সে জান্নাতে আসবে তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব, আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রয়েছে, -অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার দশগুণ জান্নাত রয়েছে,- তিনি বলেনঃ সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি বাদশাহ?” তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি হাসতে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেনঃ তখন বলা হতঃ এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫৫
عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عليه وسلم قَالَ: «آخِرُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ رَجُلٌ فَهْوَ يَمْشِي مَرَّةً، وَيَكْبُو مَرَّةً، وَتَسْفَعُهُ النَّارُ مَرَّةً، فَإِذَا مَا جَاوَزَهَا الْتَفَتَ إِلَيْهَا، فَقَالَ: تَبَارَكَ الَّذِي نَجَّانِي مِنْكِ لَقَدْ أَعْطَانِي اللَّهُ شَيْئًا مَا أَعْطَاهُ أَحَدًا مِنْ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ. فَتُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ فَلِأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا وَأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ لَعَلِّي إِنَّ أَعْطَيْتُكَهَا سَأَلْتَنِي غَيْرَهَا فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ وَيُعَاهِدُهُ أَنْ لَا يَسْأَلَهُ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذِرُهُ؛ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْه،ِ فَيُدْنِيهِ مِنْهَا فَيَسْتَظِلُّ بِظِلِّهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَائِهَا، ثُمَّ تُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ هِيَ أَحْسَنُ مِنْ الْأُولَى فَيَقُول:ُ أَيْ رَبِّ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ لِأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا وَأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا، فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ أَلَمْ تُعَاهِدْنِي أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَهَا؟ فَيَقُولُ: لَعَلِّي إِنْ أَدْنَيْتُكَ مِنْهَا تَسْأَلُنِي غَيْرَهَا فَيُعَاهِدُهُ أَنْ لَا يَسْأَلَهُ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذِرُه؛ُ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْهِ، فَيُدْنِيهِ مِنْهَا فَيَسْتَظِلُّ بِظِلِّهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَائِهَا ثُمَّ تُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ عِنْدَ بَابِ الْجَنَّةِ هِيَ أَحْسَنُ مِنْ الْأُولَيَيْنِ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ؟ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ لِأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا وَأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا، فَيَقُول:ُ يَا ابْنَ آدَمَ أَلَمْ تُعَاهِدْنِي أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَهَا؟ قَالَ بَلَى يَا رَبِّ هَذِهِ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذِرُهُ؛ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْهَا فَيُدْنِيهِ مِنْهَا، فَإِذَا أَدْنَاهُ مِنْهَا فَيَسْمَعُ أَصْوَاتَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْخِلْنِيهَا، فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ مَا يَصْرِينِي مِنْك؟َ أَيُرْضِيكَ أَنْ أُعْطِيَكَ الدُّنْيَا وَمِثْلَهَا مَعَهَا؟ قَالَ يَا رَبِّ أَتَسْتَهْزِئُ مِنِّي وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟» فضَحِكَ ابْنُ مَسْعُودٍ فَقَالَ: أَلَا تَسْأَلُونِي مِمَّ أَضْحَكُ؟ فَقَالُوا: مِمَّ تَضْحَكُ؟ قَالَ: هَكَذَا ضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , فَقَالُوا: مِمَّ تَضْحَكُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «مِنْ ضِحْكِ رَبِّ الْعَالَمِينَ حِينَ قَالَ: أَتَسْتَهْزِئُ مِنِّي وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ فَيَقُولُ: إِنِّي لَا أَسْتَهْزِئُ مِنْكَ وَلَكِنِّي عَلَى مَا أَشَاءُ قَادِرٌ». (م) صحيح

ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি, যে একবার চলবে একবার হোঁচট খাবে, একবার আগুন তাকে ঝলসে দিবে, যখন সে তা অতিক্রম করবে তার দিকে ফিরে তাকাবে, অতঃপর বলবেঃ বরকতময় সে সত্তা যিনি আমাকে তোমার থেকে নাজাত দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে এমন বস্তু দান করেছেন যা পূর্বাপর কাউকে দান করেন নি। অতঃপর তার জন্য একটি গাছ জাহির করা হবে, সে বলবেঃ হে আমার রব আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন, যেন তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি ও তার পানি পান করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে আদম সন্তান যদি আমি তোমাকে এটা দান করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু তলব করবে। সে বলবেঃ না, হে আমার রব, তাকে ওয়াদা দিবে যে এ ছাড়া কিছু তলব করবে না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য সম্ভব হবে না। তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, ফলে সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার জন্য অপর গাছ জাহির করা হবে, যা পূর্বের তুলনায় অধিক সুন্দর। সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে এর নিকটবর্তী করুন, যেন তার পানি পান করতে পারি ও তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি, এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? তিনি বলবেনঃ আমি যদি তোমাকে এর নিকটবর্তী করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু চাইবে, ফলে সে তাকে ওয়াদা দিবে যে, অন্য কিছু চাইবে না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার সামনে জাহির করা হবে একটি গাছ জান্নাতের দরজার মুখে, যা পূর্বের দু’টি গাছ থেকে অধিক সুন্দর। সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন আমি তার ছায়া গ্রহণ করব ও তার পানি পান করব, এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? সে বলবেঃ অবশ্যই হে আমার রব, এটাই আর কিছু চাইব না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তিনি তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, যখন তার নিকটবর্তী করা হবে সে জান্নাতিদের আওয়াজ শুনবে, সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে তাতে প্রবেশ করান, তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম, কিসে তোমার থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দিবে? তুমি কি সন্তুষ্ট যে আমি তোমাকে দুনিয়া ও তার সাথে তার সমান দান করি? সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি দু’জাহানের রব? ইব্‌ন মাসউদ হেসে দিলেন, তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ না আমি কেন হাসছি? তারা বললঃ কেন হাসছেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ হেসেছেন। তারা (সাহাবিরা) বললঃ হে আল্লাহর রাসূল কেন হাসছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহর হাসি থেকে যখন সে বললঃ আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি দু’ জাহানের রব? তিনি বললেনঃ আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, তবে আমি যা চাই করতে পারি”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫৬
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، أَنَّ النَّاسَ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «هَلْ تُضَارُّونَ فِي الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ؟» قَالُوا: لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ، يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ: مَنْ كَانَ يَعْبُدُ شَيْئًا فَلْيَتْبَعْهُ، فَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الشَّمْسَ الشَّمْسَ، وَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الْقَمَرَ الْقَمَر،َ وَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الطَّوَاغِيتَ الطَّوَاغِيتَ، وَتَبْقَى هَذِهِ الْأُمَّةُ فِيهَا شَافِعُوهَا -أَوْ مُنَافِقُوهَا شَكَّ إِبْرَاهِيمُ - فَيَأْتِيهِمْ اللَّهُ فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ فَيَقُولُونَ: هَذَا مَكَانُنَا حَتَّى يَأْتِيَنَا رَبُّنَا فَإِذَا جَاءَنَا رَبُّنَا عَرَفْنَاهُ، فَيَأْتِيهِمْ اللَّهُ فِي صُورَتِهِ الَّتِي يَعْرِفُونَ فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ فَيَقُولُونَ: أَنْتَ رَبُّنَا فَيَتْبَعُونَهُ، وَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ، فَأَكُونُ أَنَا وَأُمَّتِي أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُهَا, وَلَا يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ إِلَّا الرُّسُلُ، وَدَعْوَى الرُّسُلِ يَوْمَئِذٍ: اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ وَفِي جَهَنَّمَ كَلَالِيبُ مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَان،ِ هَلْ رَأَيْتُمْ السَّعْدَان؟» قَالُوا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ, قَال:َ « فَإِنَّهَا مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ غَيْرَ أَنَّهُ لَا يَعْلَمُ مَا قَدْرُ عِظَمِهَا إِلَّا اللَّهُ، تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ؛ فَمِنْهُمْ الْمُوبَقُ بَقِيَ بِعَمَلِهِ، وَمِنْهُمْ الْمُخَرْدَلُ أَوْ الْمُجَازَى أَوْ نَحْوُه،ُ ثُمَّ يَتَجَلَّى حَتَّى إِذَا فَرَغَ اللَّهُ مِنْ الْقَضَاءِ بَيْنَ الْعِبَادِ، وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ بِرَحْمَتِهِ مَنْ أَرَادَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ أَمَرَ الْمَلَائِكَةَ أَنْ يُخْرِجُوا مِنْ النَّارِ مَنْ كَانَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا مِمَّنْ أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَرْحَمَهُ مِمَّنْ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَيَعْرِفُونَهُمْ فِي النَّارِ بِأَثَرِ السُّجُودِ، تَأْكُلُ النَّارُ ابْنَ آدَمَ إِلَّا أَثَرَ السُّجُودِ، حَرَّمَ اللَّهُ عَلَى النَّارِ أَنْ تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُود،ِ فَيَخْرُجُونَ مِنْ النَّارِ قَدْ امْتُحِشُوا فَيُصَبُّ عَلَيْهِمْ مَاءُ الْحَيَاةِ، فَيَنْبُتُونَ تَحْتَهُ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ، ثُمَّ يَفْرُغُ اللَّهُ مِنْ الْقَضَاءِ بَيْنَ الْعِبَادِ، وَيَبْقَى رَجُلٌ مِنْهُمْ مُقْبِلٌ بِوَجْهِهِ عَلَى النَّارِ هُوَ آخِرُ أَهْلِ النَّارِ دُخُولاً الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ اصْرِفْ وَجْهِي عَنْ النَّارِ فَإِنَّهُ قَدْ قَشَبَنِي رِيحُهَا وَأَحْرَقَنِي ذَكَاؤُهَا, فَيَدْعُو اللَّهَ بِمَا شَاءَ أَنْ يَدْعُوَهُ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ أَعْطَيْتُكَ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَنِي غَيْرَهُ فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهُ، وَيُعْطِي رَبَّهُ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ مَا شَاءَ فَيَصْرِفُ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنْ النَّارِ، فَإِذَا أَقْبَلَ عَلَى الْجَنَّةِ وَرَآهَا سَكَتَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَيْ رَبِّ قَدِّمْنِي إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ. فَيَقُولُ اللَّهُ لَه:ُ أَلَسْتَ قَدْ أَعْطَيْتَ عُهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَ الَّذِي أُعْطِيتَ أَبَدًا، وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ وَيَدْعُو اللَّهَ حَتَّى يَقُولَ: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ أُعْطِيتَ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَ غَيْرَهُ فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهُ، وَيُعْطِي مَا شَاءَ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ فَيُقَدِّمُهُ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ، فَإِذَا قَامَ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ انْفَهَقَتْ لَهُ الْجَنَّةُ فَرَأَى مَا فِيهَا مِنْ الْحَبْرَةِ وَالسُّرُورِ فَيَسْكُتُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْخِلْنِي الْجَنَّةَ فَيَقُولُ اللَّهُ: أَلَسْتَ قَدْ أَعْطَيْتَ عُهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ أَنْ لَا تَسْأَلَ غَيْرَ مَا أُعْطِيتَ، فَيَقُولُ: وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ لَا أَكُونَنَّ أَشْقَى خَلْقِكَ فَلَا يَزَالُ يَدْعُو حَتَّى يَضْحَكَ اللَّهُ مِنْهُ، فَإِذَا ضَحِكَ مِنْهُ قَالَ لَهُ: ادْخُلْ الْجَنَّةَ، فَإِذَا دَخَلَهَا قَالَ اللَّهُ لَهُ: تَمَنَّهْ، فَسَأَلَ رَبَّهُ وَتَمَنَّى حَتَّى إِنَّ اللَّهَ لَيُذَكِّرُهُ يَقُولُ: كَذَا وَكَذَا حَتَّى انْقَطَعَتْ بِهِ الْأَمَانِيُّ قَالَ اللَّهُ: ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ». قَالَ عَطَاءُ بْنُ يَزِيدَ: وَأَبُو سَعِيدٍ لْخُدْريُّ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ، لَا يَرُدُّ عَلَيْهِ مِنْ حَدِيثِهِ شَيْئًا, حَتَّى إِذَا حَدَّثَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: «ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ». قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ: وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ مَعَهُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ قَالَ أَبُو هُرَيْرَة:َ مَا حَفِظْتُ إِلَّا قَوْلَهُ: ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ: أَشْهَدُ أَنِّي حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَوْلَهُ: «ذَلِكَ لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ». قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: فَذَلِكَ الرَّجُلُ آخِرُ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولاً الْجَنَّةَ. ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
লোকেরা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “চৌদ্দ তারিখের রাতে চাঁদ দেখায় তোমরা কি সন্দেহ (বা মতবিরোধ) কর?” তারা বললঃ না, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “তোমরা আল্লাহকে সেভাবে (স্পষ্ট) দেখবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সকল মানুষকে জমা করে বলবেনঃ যে যে বস্তুর ইবাদত করত সে যেন তার পিছু নেয়, ফলে যে সূর্যের ইবাদত করত সে সূর্যের অনুগামী হবে। যে চাঁদের ইবাদত করত সে চাঁদের অনুগামী হবে। যে তাগুতের ইবাদত করত সে তাগুতের অনুগামী হবে। শুধু এ উম্মত অবশিষ্ট থাকবে, তাতে থাকবে তার সুপারিশকারীগণ –অথবা তার মুনাফিকরা, বর্ণনাকারী ইবরাহিম সন্দেহ পোষণ করেছেন [১], অতঃপর তাদের নিকট আল্লাহ এসে বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা বলবেঃ আমরা এখানে অবস্থান করছি যতক্ষণ না আমাদের রব আমাদের নিকট আসেন, যখন আমাদের রব আসবেন আমরা তাকে চিনব, ফলে আল্লাহ সে রূপে তাদের নিকট আসবেন যে রূপে তারা তাকে চিনে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা বলবেঃ আপনি আমাদের রব, অতঃপর তারা তার অনুগামী হবে। আর জাহান্নামের পৃষ্ঠদেশে পুলসিরাত কায়েম করা হবে, আমি এবং আমার উম্মত সর্বপ্রথম তা অতিক্রম করব। সে দিন রাসূলগণ ব্যতীত কেউ কথা বলবে না। সে দিন রাসূলগণের বাণী হবেঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম। জাহান্নামে রয়েছে সা‘দানের [2] কাঁটার ন্যায় হুক, তোমরা সা‘দান দেখেছ?” তারা বললঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ “তা সা‘দানের কাঁটার ন্যায়, তবে তার বিশালত্বের পরিমাণ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। সে মানুষদেরকে তাদের আমল অনুযায়ী ছো মেরে নিয়ে নিবে। তাদের কেউ ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ আমলের কারণে (জাহান্নামের শুরুতে) রয়ে গেছে, তাদের কেউ টুকরো হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত অথবা সাজা প্রাপ্ত অথবা তার অনুরূপ। অতঃপর তিনি জাহির হবেন, অবশেষে যখন বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হবেন ও জাহান্নামীদের থেকে নিজ রহমতে যাকে ইচ্ছা বের করার ইচ্ছা করবেন ফেরেশতাদের নির্দেশ দিবেন যে, জাহান্নাম থেকে বের কর আল্লাহর সাথে যে কোন বস্তু শরীক করত না, যাদের ওপর আল্লাহ রহম করার ইচ্ছা করেছেন এবং যারা সাক্ষী দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক ইলাহ নেই। তারা জাহান্নামে তাদেরকে সেজদার আলামত দ্বারা চিনবে। আগুন বনি আদমকে সেজদার জায়গা ব্যতীত খেয়ে ফেলবে। সেজদার জায়গা ভক্ষণ করা জাহান্নামের ওপর আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। তারা জাহান্নাম থেকে বের হবে এমতাবস্থায় যে পুড়ে গেছে, তাদের ওপর সঞ্জীবনী পানি ঢালা হবে, ফলে তারা গজিয়ে উঠবে যেমন গজিয়ে উঠে প্রবাহিত পানির সাথে আসা উর্বর মাটিতে শস্যের চারা। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হবেন। অবশেষে শুধু এক ব্যক্তি জাহান্নামের ওপর তার চেহারা দিয়ে অগ্রসর হয়ে থাকবে, সেই জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জাহান্নামী। সে বলবেঃ হে আমার রব, আমার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিন, কারণ সে আমার চেহারা বিষাক্ত করে দিয়েছে, তার লেলিহান আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। অতঃপর সে আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে, আল্লাহ যেভাবে তার দো‘আ করা পছন্দ করেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ এমন হবে না তো যদি তোমাকে তা দান করি তুমি আমার নিকট অন্য কিছু চাইবে? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম, এ ছাড়া আপনার নিকট কিছু চাইব না। সে তার রবকে যা ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার দিবে, ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ করবে ও তা দেখবে, চুপ থাকবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান। অতঃপর বলবেঃ হে আমার রব আমাকে জান্নাতের দরজার পর্যন্ত অগ্রসর করুন। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি কি আমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকার দাওনি যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তা ছাড়া অন্য কিছু আমার নিকট কখনো চাইবে না? হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবেঃ হে আমার রব, এবং আল্লাহকে ডাকবে, অবশেষে আল্লাহ বলবেনঃ এমন হবে না তো যদি তা দেই অপর বস্তু তুমি চাইবে? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম তা ছাড়া কিছু চাইব না, এবং যত ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার প্রদান করবে, ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার নিকট দাঁড়াবে তার জন্য জান্নাত উন্মুক্ত হবে, সে তার নিয়ামত ও আনন্দ দেখবে, অতঃপর চুপ থাকবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান, অতঃপর বলবেঃ হে আমার রব আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি ওয়াদা ও অঙ্গিকার দাওনি আমি যা দিয়েছি তা ছাড়া কিছু চাইবে না? তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবেঃ হে আমার রব আমি তোমার হতভাগা মখলুক হতে চাই না, সে ডাকতে থাকবে অবশেষে তার কারণে আল্লাহ হাসবেন। যখন হাসবেন তাকে বলবেনঃ জান্নাতে প্রবেশ কর, যখন সে তাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ তাকে বলবেনঃ চাও, সে তার নিকট চাইবে ও প্রার্থনা করবে, এমনকি আল্লাহও তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেনঃ এটা, ওটা অবশেষে যখন তার আশা শেষ হয়ে যাবে আল্লাহ বলবেনঃ এগুলো তোমার জন্য এবং এর অনুরূপও তার সাথে”। আতা ইব্‌ন ইয়াযিদ বলেনঃ আবু সায়িদ খুদরি আবু হুরায়রার সাথেই ছিল, আবু হুরায়রার হাদিসের কোন অংশ তিনি প্রত্যাখ্যান করেননি, অবশেষে যখন আবু হুরায়রা বললেন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “এগুলো তোমার জন্য এবং এর সমান এর সাথে”। আবু সায়িদ খুদরি বললেনঃ “এবং তার সাথে তার দশগুণ হে আবু হুরায়রা। আবু হুরায়রা বললেনঃ আমার শুধু মনে আছেঃ “এগুলো এবং এর সাথে তার অনুরূপ”। আবু সায়িদ বললেনঃ আমি সাক্ষী দিচ্ছে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তার বাণীঃ “এগুলো তোমার জন্য এবং তার সমান দশগুণ” খুব ভাল করে স্মরণ রেখেছি। আবু হুরায়রা বললেনঃ এ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি”। [বুখারি ও মুসলিম]

[১] অর্থাৎ এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘সুপারিশকারীগণ’ –অথবা ‘মুনাফিকরা’ এ দু’য়ের কোন শব্দটি ব্যবহার করেছেন, এ ব্যাপারে হাদীসের এক বর্ণনাকারী সন্দেহ করেছেন। মূল হাদীসে নয়। [সম্পাদক]

[2] “সা‘দান” শব্দের অর্থ কাঁটা বা বড় কাঁটাদার গাছ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫৭
عَنْ أَبِي ذَرٍّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنِّي لَأَعْرِفُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْ النَّارِ وَآخِرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولاً الْجَنَّةَ، يُؤْتَى بِرَجُلٍ فَيَقُولُ: سَلُوا عَنْ صِغَارِ ذُنُوبِهِ وَاخْبَئُوا كِبَارَهَا فَيُقَالُ لَهُ: عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا، عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فِي يَوْمِ كَذَا وَكَذَا، قَالَ فَيُقَالُ لَه:ُ فَإِنَّ لَكَ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ حَسَنَةً قَالَ: فَيَقُولُ: يَا رَبِّ لَقَدْ عَمِلْتُ أَشْيَاءَ مَا أَرَاهَا هَا هُنَا». قَالَ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ. ( ت, م ) صَحِيحٌ

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্ত সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে। এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ তার ছোট পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর, বড় পাপগুলো গোপন রাখ, অতঃপর তাকে বলা হবেঃ তুমি অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ, অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ। তিনি বলেনঃ অতঃপর তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্য প্রত্যেক পাপের পরিবর্তে একটি করে নেকি। তিনি বলেনঃ অতঃপর সে বলবেঃ হে আমার রব আমি অনেক কিছু করেছি এখানে তা দেখছি না”। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি হাসতে, এমনকি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। [মুসলিম ও তিরমিযি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩২. অধ্যায়ঃ
শহীদদের ফযিলত
৫৮

عَنْ مَسْرُوقٍ قَال:َ سَأَلْنَا عَبْدَ اللَّهِ (هو ابن مسعود -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-) عَنْ هَذِهِ الْآيَة:ِ ﴿وَلَاتَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾ قَالَ: أَمَا إِنَّا قَدْ سَأَلْنَا عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «أَرْوَاحُهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيلُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَسْرَحُ مِنْ الْجَنَّةِ حَيْثُ شَاءَتْ ثُمَّ تَأْوِي إِلَى تِلْكَ الْقَنَادِيلِ فَاطَّلَعَ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ اطِّلَاعَةً فَقَالَ: هَلْ تَشْتَهُونَ شَيْئًا؟ قَالُوا: أَيَّ شَيْءٍ نَشْتَهِي؟ وَنَحْنُ نَسْرَحُ مِنْ الْجَنَّةِ حَيْثُ شِئْنَا، فَفَعَلَ ذَلِكَ بِهِمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا رَأَوْا أَنَّهُمْ لَنْ يُتْرَكُوا مِنْ أَنْ يُسْأَلُوا قَالُوا: يَا رَبِّ نُرِيدُ أَنْ تَرُدَّ أَرْوَاحَنَا فِي أَجْسَادِنَا حَتَّى نُقْتَلَ فِي سَبِيلِكَ مَرَّةً أُخْرَى، فَلَمَّا رَأَى أَنْ لَيْسَ لَهُمْ حَاجَةٌ تُرِكُوا». ( م, ن, جه) صحيح

মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন আমরা আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিঃ
﴿وَلَاتَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, ‎তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা ‎তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযক ‎‎দেয়া হয়”। [১] তিনি বলেনঃ জেনে রেখ, আমরাও এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তাদের রূহসমূহ সবুজ পাখির পেটে, যার জন্য রয়েছে আরশের সাথে ঝুলন্ত প্রদীপ, সে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করে, অতঃপর উক্ত প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। একদা তাদের দিকে তাদের রব দৃষ্টি দেন অতঃপর বলেনঃ তোমরা কিছু চাও? তারা বলবেঃ আমরা কি চাইব, অথচ আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করি? এভাবে তাদেরকে তিনবার জিজ্ঞাসা করবেন, যখন তারা দেখবে যে কোন কিছু চাওয়া ব্যতীত তাদেরকে নিস্তার দেয়া হবে না, তারা বলবেঃ হে রব আমরা চাই আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায় শহীদ হতে পারি। যখন তিনি দেখবেন যে তাদের কোন চাহিদা নেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে”। [মুসলিম, নাসায়ি ও ইব্‌ন মাজাহ]

[১] সূরা আলে ইমরানঃ (১৬৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫৯
عن شقيق أن ابن مسعود -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- حدثه: «أن الثمانية عشر الذين قتلوا من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم يَوم بدرٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي الْجَنَّةِ فِي طَيْرٍ خُضْرٍ تَسْرَحُ فِي الْجَنَّةِ، قَالَ: فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ طَلَعَ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ إطِّلاعَةً، فَقَالَ: يَا عِبَادِي، مَاذَا تَشْتَهُونَ؟ قَالُوا: يَا رَبَّنَا، مَا فَوْقَ هَذَا شَيْءٌ، قَالَ: فَيَقُولُ: عِبَادِي، مَاذَا تَشْتَهُونَ؟ فَيَقُولُونَ فِي الرَّابِعَةِ: تَرُدُّ أَرْوَاحَنَا فِي أَجْسَادِنَا فَنُقْتَلُ كَمَا قُتِلْنَا " (حب ) والصحيح (طب) و(الهيثمي) موقوف صحيح

শাকিক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইব্‌ন মাসউদ তাকে বলেছেনঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঠারো জন সাহাবি যারা বদরের দিন শহীদ হয়েছিল, আল্লাহ তাদের রুহগুলো জান্নাতে সবুজ পাখির পেটে রেখেছেন যে জান্নাতে বিচরণ করে। তিনি বলেনঃ তারা এভাবেই ছিল, এক সময় তোমার রব তাদের দিকে দৃষ্টি দেন, অতঃপর বলেনঃ “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা বললঃ হে আমাদের রব এর ওপরে কি আছে? তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা চতুর্থবার বলবেঃ আপনি আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন আমরা শহীদ হতে পারি যেমন শহীদ হয়েছি”। [ইব্‌ন হিব্বান] হাদীসটি মওকুফ ও সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ মাওকুফ

৬০
عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «يُؤْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ كَيْفَ وَجَدْتَ مَنْزِلَكَ؟ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ خَيْرَ مَنْزِلٍ, فَيَقُولُ: سَلْ وَتَمَنَّ، فَيَقُولُ: أَسْأَلُكَ أَنْ تَرُدَّنِي إِلَى الدُّنْيَا فَأُقْتَلَ فِي سَبِيلِكِ عَشْرَ مَرَّات،ٍ لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ». ( ن, حم, ك ) صحيح

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জান্নাতি এক ব্যক্তিকে আনা হবে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম তোমার স্থান কি রকম পেয়েছ? সে বলবেঃ হে আমার রব সবচেয়ে উত্তম। তিনি বলবেনঃ চাও, আশা কর। সে বলবেঃ তোমার নিকট প্রার্থনা করছি তুমি আমাকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দাও, যেন তোমার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হতে পারি, যেহেতু সে শাহাদাতের মর্যাদা প্রত্যক্ষ করবে”। [নাসায়ি, আহমদ ও হাকেম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদ
৬১
عَنْ أبي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «انْتَدَبَ اللَّهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ -لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا إِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي- أَنْ أُرْجِعَهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، وَلَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي مَا قَعَدْتُ خَلْفَ سَرِيَّةٍ وَلَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ, ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ». ( خ, م, ن, جه ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তার দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেন, যে তার রাস্তায় বের হয়, -যাকে আমার প্রতি ঈমান ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত কোন জিনিস বের করেনি-, আমি তাকে অতিসত্বর তার পাওনা সওয়াব অথবা গনিমত দেব অথবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হত, তাহলে আমি কোন যুদ্ধ থেকে পিছপা হতাম না। আমি চাই আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর আমি শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর আমি শহীদ হব”। [বুখারি, মুসলিম, নাসায়ি ও ইব্‌ন মাজাহ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬২
عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يُؤْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَل:َّ يَا ابْنَ آدَمَ كَيْفَ وَجَدْتَ مَنْزِلَكَ؟ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ خَيْرَ مَنْزِلٍ فَيَقُولُ: سَلْ وَتَمَنَّهْ، فَيَقُولُ: مَا أَسْأَلُ وَأَتَمَنَّى إِلَّا أَنْ تَرُدَّنِي إِلَى الدُّنْيَا فَأُقْتَلَ فِي سَبِيلِكَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ». ( حم ) صحيح

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন জান্নাতি এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ হে বনি আদম তোমার স্থান কেমন পেয়েছ? সে বলবেঃ সবচেয়ে উত্তম, অতঃপর তিনি বলবেনঃ চাও, আশা কর। সে বলবেঃ এ ছাড়া আমি কি চাইব ও কি আশা করব যে, আপনি আমাকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দিন, অতঃপর আপনার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হই, যেহেতু সে শাহাদাতের ফজিলত প্রত্যক্ষ করবে”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬৩
عَنْ ابْنِ عُمَرَ -رضي الله عنهما- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا يَحْكِي عَنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: «أَيُّمَا عَبْدٍ مِنْ عِبَادِي خَرَجَ مُجَاهِدًا فِي سَبِيلِي؛ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي ضَمِنْتُ لَهُ أَنْ أُرْجِعَهُ بِمَا أَصَابَ مِنْ أَجْرٍ وَغَنِيمَةٍ وَإِنْ قَبَضْتُهُ أَنْ أَغْفِرَ لَهُ وَأَرْحَمَهُ وَأُدْخِلَهُ الْجَنَّة». ( حم, ن ) صحيح لغيره

ইব্‌ন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার রব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “আমার যে কোন বান্দা আমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে আমার রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়, আমি তার জন্য জিম্মাদার যে আমি তাকে তার পাওয়া সওয়াব ও গনিমত পৌঁছে দেব, যদি তাকে মৃত্যু দেই তাহলে তাকে ক্ষমা করব, তাকে রহম করব ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব”। [আহমদ ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

৩৩. অধ্যায়ঃ
আয়াতের শানে নুযূল
৬৪

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ -رضي الله عنهما- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «لَمَّا أُصِيبَ إِخْوَانُكُمْ بِأُحُدٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ تَرِدُ أَنْهَارَ الْجَنَّةِ، تَأْكُلُ مِنْ ثِمَارِهَا، وَتَأْوِي إِلَى قَنَادِيلَ مِنْ ذَهَبٍ مُعَلَّقَةٍ فِي ظِلِّ الْعَرْش،ِ فَلَمَّا وَجَدُوا طِيبَ مَأْكَلِهِمْ وَمَشْرَبِهِمْ وَمَقِيلِهِم،ْ قَالُوا: مَنْ يُبَلِّغُ إِخْوَانَنَا عَنَّا أَنَّا أَحْيَاءٌ فِي الْجَنَّةِ نُرْزَقُ لِئَلَّا يَزْهَدُوا فِي الْجِهَادِ وَلَا يَنْكُلُوا عِنْدَ الْحَرْبِ؟ فَقَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ: أَنَا أُبَلِّغُهُمْ عَنْكُمْ». قَالَ: فَأَنْزَلَ اللَّهُ : ﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ. ( د, حم ) حسن

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের ভাইয়েরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন, আল্লাহ তাদের রুহগুলো সবুজ পাখির পেটে রাখেন, তারা জান্নাতের নহরসমূহ বিচরণ করে, তার ফল ভক্ষণ করে এবং আরশের ছায়ার নিচে ঝুলন্ত স্বর্ণের প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। যখন তারা নিজেদের সুস্বাদু খাদ্য-পানীয় এবং সুন্দর বিছানা গ্রহণ করল, বললঃ আমাদের হয়ে আমাদের ভাইদেরকে কে পৌঁছাবে যে, আমরা জান্নাতে জীবিত, আমাদেরকে রিযক দেয়া হয়, যেন তারা জিহাদ থেকে পিছপা না হয় এবং যুদ্ধের সময় ভীরুতা প্রদর্শন না করে? আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ আমি তোমাদের হয়ে তাদেরকে পৌঁছে দেব”। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ.
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, ‎তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না সূরা (আলে ইমরানঃ১৬৯)। আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [আবু দাউদ ও আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩৪. অধ্যায়ঃ
আয়াতের আরেকটি শানে নুযূল
৬৫
جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ -رضي الله عنهما- يَقُولُ: لَقِيَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لِي: «يَا جَابِرُ مَا لِي أَرَاكَ مُنْكَسِرًا؟» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ اسْتُشْهِدَ أَبِي قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ وَتَرَكَ عِيَالاً وَدَيْنًا, قَالَ: «أَفَلَا أُبَشِّرُكَ بِمَا لَقِيَ اللَّهُ بِهِ أَبَاكَ؟» قَالَ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: «مَا كَلَّمَ اللَّهُ أَحَدًا قَطُّ إِلَّا مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ، وَأَحْيَا أَبَاكَ فَكَلَّمَهُ كِفَاحًا فَقَالَ: يَا عَبْدِي تَمَنَّ عَلَيَّ أُعْطِكَ قَالَ: يَا رَبِّ تُحْيِينِي فَأُقْتَلَ فِيكَ ثَانِيَةً. قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: إِنَّهُ قَدْ سَبَقَ مِنِّي (أَنَّهُمْ إِلَيْهَا لَا يُرْجَعُونَ( قَالَ: وَأُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: ﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾». ( ت, جه ) صحيح لشواهده

জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে দেখা করে আমাকে বলেনঃ “হে জাবের কেন তোমাকে বিষণ্ণ দেখছি? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল আমার পিতা উহুদের দিন শাহাদাত বরণ করেন, তিনি অনেক সন্তান ও ঋণ রেখে গেছেন। তিনি বললেনঃ “আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিব না তোমার পিতার সাথে আল্লাহ কি নিয়ে সাক্ষাত করেছেন?” জাবের বলেন, আমি বললামঃ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ পর্দার আড়াল ব্যতীত কারো সাথে কখনো কথা বলেননি, কিন্তু তোমার পিতাকে জীবিত করে তার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ হে আমার বান্দা আমার নিকট চাও আমি তোমাকে দিব। জবাবে তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেনঃ হে আমার রব আমাকে জীবিত করুন, আমি দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায় শহীদ হব। আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ আমার সিদ্ধান্ত পূর্বে চূড়ান্ত হয়ে গেছে যে, মৃতদের দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করা হবে না। তিনি বলেনঃ এবং এ আয়াত নাযিল করা হলঃ

﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ ١٦٩﴾ [ال عمرانঃ ١٦٩]

“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, ‎তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না”। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৬৯) [তিরমিযি ও ইব্‌ন মাজাহ] হাদীসটি অন্যান্য শাহেদ তথা সমার্থের বর্ণনার কারণে সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৫. অধ্যায়ঃ
মুমূর্ষু হালত, রুহ বের হওয়া ও জীবন সায়ান্নে মুসলিম-কাফিরের অবস্থার বর্ণনাসহ মহান হাদিস
৬৬
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي جِنَازَةِ رَجُلٍ مِنْ الْأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ صلى الله عليه وسلم وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ وَكَأَنَّ عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرَ وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ فِي الْأَرْضِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنْ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنْ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مَلَائِكَةٌ مِنْ السَّمَاءِ بِيضُ الْوُجُوهِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ الشَّمْسُ، مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ, ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ عَلَيْهِ السَّلَام حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ اللَّهِ وَرِضْوَانٍ» قَالَ: «فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فِي السِّقَاء،ِ فَيَأْخُذُهَا فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ» قَالَ: «فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ -يَعْنِي بِهَا عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلَائِكَة-ِ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذَا الرُّوحُ الطَّيِّبُ فَيَقُولُونَ: فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتَّى يَنْتَهُوا بِهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَسْتَفْتِحُونَ لَهُ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ، وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ، فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ، وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ، وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى» قَالَ: «فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاء:ِ أَنْ صَدَقَ عَبْدِي، فَافْرِشُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا، وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ، قَالَ: وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ حَسَنُ الثِّيَابِ طَيِّبُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ لَهُ: مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالْخَيْرِ؟ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ فَيَقُولُ: رَبِّ أَقِمْ السَّاعَةَ حَتَّى أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي وَمَالِي» قَالَ: «وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنْ الدُّنْيَا، وَإِقْبَالٍ مِنْ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مِنْ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ مَعَهُمْ الْمُسُوحُ، فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُول:ُ أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ اخْرُجِي إِلَى سَخَطٍ مِنْ اللَّهِ وَغَضَبٍ، قَالَ فَتَفَرَّقُ فِي جَسَدِهِ فَيَنْتَزِعُهَا كَمَا يُنْتَزَعُ السَّفُّودُ مِنْ الصُّوفِ الْمَبْلُولِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ، فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذَا الرُّوحُ الْخَبِيثُ: فَيَقُولُونَ: فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانَ يُسَمَّى بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ، فَلَا يُفْتَحُ لَهُ» ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ﴾ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى فَتُطْرَحُ رُوحُهُ طَرْحًا» ثُمَّ قَرَأَ: ﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ﴾ فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي. فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي. فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي. فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنْ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ، فَافْرِشُوا لَهُ مِنْ النَّار،ِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ قَبِيحُ الثِّيَابِ مُنْتِنُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُوءُكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ: مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ فَيَقُول:ُ رَبِّ لَا تُقِمْ السَّاعَةَ». ( حم, د ) صحيح

বারা ইব্‌ন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক আনসারির জানাজায় বের হলাম, আমরা তার কবরে পৌঁছলাম, তখনো কবর খোঁড়া হয়নি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসলেন আমরা তার চারপাশে বসলাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে, তার হাতে একটি লাকড়ি ছিল তিনি মাটি খুড়তে ছিলেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও, দুইবার অথবা তিনবার (বললেন)”। অতঃপর বললেনঃ “নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া প্রস্থান ও আখেরাতে পা রাখার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয় তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন, যেন তাদের চেহারা সূর্য। তাদের সাথে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে, অবশেষে তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায়। অতঃপর মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম এসে তার মাথার নিকট বসেন, তিনি বলেনঃ হে পবিত্র রুহ তুমি আল্লাহর মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির প্রতি বের হও”। তিনি বললেনঃ “ফলে রুহ বের হয় যেমন মটকা/কলসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি তা গ্রহণ করেন, যখন গ্রহণ করেন চোখের পলক পরিমাণ তিনি নিজ হাতে না রেখে তৎক্ষণাৎ তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন ও সুগন্ধির মধ্যে রাখেন, তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘ্রাণ বের হয় যা দুনিয়াতে পাওয়া যায়”। তিনি বললেনঃ “অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে ওঠে, তারা যখনই অতিক্রম করে তাকে সহ ফেরেশতাদের কোন দলের কাছ দিয়ে তখনই তারা বলে, এ পবিত্র রুহ কে? তারা বলেঃ অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে সুন্দর নামে ডাকে যে নামে দুনিয়াতে তাকে ডাকা হত, তাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে, তার জন্য তারা আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করেন, তাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, তাকে প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তীরা পরবর্তী আসমানে অভ্যর্থনা জানিয়ে পৌঁছে দেয়, এভাবে তাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে দাও, কারণ আমি তা (মাটি) থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানে তাদেরকে ফেরৎ দেব এবং সেখান থেকেই তাদেরকে পুনরায় উঠাব”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, এরপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসাবে অতঃপর বলবেঃ তোমার রব কে? সে বলবেঃ আল্লাহ। অতঃপর তারা বলবেঃ তোমার দ্বীন কি? সে বলবেঃ আমার দ্বীন ইসলাম। অতঃপর বলবেঃ এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবেঃ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। অতঃপর তারা বলবেঃ কিভাবে জানলে? সে বলবেঃ আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য জ্ঞান করেছি। অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে ঘোষণা দিবেঃ আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তিনি বলেনঃ ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেনঃ তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবেঃ সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে তার, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। সে তাকে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার নেক আমল। সে বলবেঃ হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি”। তিনি বলেনঃ “আর কাফের বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান ও আখেরাতে যাত্রার সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করে, তাদের সাথে থাকে ‘মুসুহ’ (মোটা-পুরু কাপড়), অতঃপর তারা তার নিকট বসে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত, অতঃপর মালাকুল মউত আসেন ও তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর বলেনঃ হে খবিস নফস, আল্লাহর গোস্বা ও গজবের জন্য বের হও। তিনি বলেনঃ ফলে সে তার শরীরে ছড়িয়ে যায়, অতঃপর সে তাকে টেনে বের করে যেমন ভেজা উল থেকে (লোহার) সিক বের করা হয় [১], অতঃপর সে তা গ্রহণ করে, আর যখন সে তা গ্রহণ করে চোখের পলকের মুহূর্ত হাতে না রেখে ফেরেশতারা তা ঐ ‘মোটা-পুরু কাপড়ে রাখে, তার থেকে মৃত দেহের যত কঠিন দুর্গন্ধ দুনিয়াতে হতে পারে সে রকমের দুর্গন্ধ বের হয়। অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে উঠে, তাকেসহ তারা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে, এ খবিস রুহ কে? তারা বলেঃ অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম ধরে যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়াতে ডাকা হত, এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হয়, তার জন্য দরজা খুলতে বলা হয়, কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না”। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিলাওয়াত করেনঃ

﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠﴾ [الاعرافঃ ٤٠]

“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না ‎এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না ‎উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে” (সূরা আরাফঃ ৪০) ‎অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ তার আমলনামা জমিনে সর্বনিম্নে সিজ্জিনে লিখ, অতঃপর তার রুহ সজোরে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেনঃ

﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ ٣١﴾ [الحج ঃ ٣١]

“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন ‎আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ ‎‎মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোন ‎জায়গায় নিক্ষেপ করল” (সূরা হজঃ ৩১) ‎তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসে ও তাকে বসায়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার রব কে? সে বলেঃ হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলেঃ তোমার দ্বীন কি? সে বলেঃ হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলেঃ এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলেঃ হা হা আমি জানি না, অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, সে মিথ্যা বলেছে, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার দরজা জাহান্নামের দিকে খুলে দাও, ফলে তার নিকট তার তাপ ও বিষ আসবে এবং তার ওপর তার কবর সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাঁজরের হাড় একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে। অতঃপর তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক ও দুর্গন্ধসহ এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবেঃ তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, এ হচ্ছে তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত। সে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার খবিস আমল। সে বলবেঃ হে রব কিয়ামত কায়েম কর না”। [আহমদ ও আবু দাউদ]

[১] কারণ ভেজা উল সাধারণতঃ লোহার সাথে লেগে থাকে। তখন তা ছাড়িয়ে নেয়া কষ্টকর হয়। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬. অধ্যায়ঃ
জান্নাত ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৬৭

عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ-رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ: « أَلَا إِنَّ رَبِّي أَمَرَنِي أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ مِمَّا عَلَّمَنِي يَوْمِي هَذَا: كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلَالٌ، وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمْ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا، وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ إِلَّا بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، وَقَالَ: إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ، وَأَنْزَلْتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ، وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أُحَرِّقَ قُرَيْشًا, فَقُلْتُ: رَبِّ إِذًا يَثْلَغُوا رَأْسِي فَيَدَعُوهُ خُبْزَةً، قَالَ: اسْتَخْرِجْهُمْ كَمَا اسْتَخْرَجُوكَ، وَاغْزُهُمْ نُغْزِكَ وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقَ عَلَيْكَ، وَابْعَثْ جَيْشًا نَبْعَثْ خَمْسَةً مِثْلَهُ، وَقَاتِلْ بِمَنْ أَطَاعَكَ مَنْ عَصَاكَ، قَالَ: وَأَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ، وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبَى وَمُسْلِمٍ، وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ. قَالَ: وَأَهْلُ النَّارِ خَمْسَةٌ: الضَّعِيفُ الَّذِي لَا زَبْرَ لَهُ الَّذِينَ هُمْ فِيكُمْ تَبَعًا لَا يَبْتَغُونَ أَهْلاً وَلَا مَالاً، وَالْخَائِنُ الَّذِي لَا يَخْفَى لَهُ طَمَعٌ وَإِنْ دَقَّ إِلَّا خَانَهُ، وَرَجُلٌ لَا يُصْبِحُ وَلَا يُمْسِي إِلَّا وَهُوَ يُخَادِعُكَ عَنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ وَذَكَرَ الْبُخْلَ أَوْ الْكَذِبَ وَالشِّنْظِيرُ الْفَحَّاشُ » . ( م ) صحيح

ইয়াদ ইব্‌ন হিমার আল-মুজাশি থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা তার খুতবায় বলেছেনঃ “জেন রেখ আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না, যা তিনি আজকের এ দিনে আমাকে শিক্ষা দিয়েছেনঃ আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা হালাল। নিশ্চয় আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি শির্ক মুক্ত-একনিষ্ঠ, অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত করেছে। তাদের ওপর সে হারাম করেছে যা আমি তাদের জন্য হালাল করেছি। সে তাদেরকে নির্দেশ করেছে যেন আমার সাথে শরীক করে, যার সপক্ষে কোন দলিল নাযিল করা হয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ জমিনে বাসকারীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন অতঃপর তাদের আরব অনারব সবাইর প্রতি তাঁর ক্রোধ আসে, অবশিষ্ট কতক কিতাবি [১] ব্যতীত। তিনি আরও বলেনঃ তোমাকে প্রেরণ করেছি তোমাকে পরীক্ষা করব ও তোমার দ্বারা তাদের পরীক্ষা করব এ জন্য। আমি তোমার ওপর এক কিতাব নাযিল করেছি, যা পানি ধুয়ে ফেলবে না, ঘুমন্ত ও জাগ্রত সর্বাবস্থায় তুমি তা তিলাওয়াত করবে। আর নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি কুরাইশদের জ্বালিয়ে দেই। আমি বললামঃ হে আমার রব তাহলে তো তারা আমার মাথা থেঁতলে দিবে, অতঃপর রুটি বানিয়ে ছাড়বে। তিনি বললেনঃ তাদেরকে বের কর যেমন তারা তোমাকে বের করেছে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করব, খরচ কর নিশ্চয় আমরা তোমার ওপর খরচ করব। তুমি বাহিনী প্রেরণ কর, আমি তার সমান পাঁচগুণ প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করেছে তাদের নিয়ে যুদ্ধ কর তাদের সাথে যারা তোমার অবাধ্য হয়েছে। তিনি বলেনঃ জান্নাতিরা তিন প্রকারঃ (ক). ন্যায়পরায়ণ, সদকাকারী ও তাওফিকপ্রাপ্ত বাদশাহ। (খ). সকল আত্মীয় ও মুসলিমের জন্য দয়াশীল ও নরম হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি। (গ). অধিক সন্তান-সন্তুতিসম্পন্ন সৎ ও পবিত্র ব্যক্তি। তিনি বলেনঃ জাহান্নামীরা পাঁচ প্রকারঃ (ক). দুর্বল, যার বিচারিক বিবেক নেই, যারা তোমাদের মধ্যে অনুসারী, যারা সন্তান ও সম্পদ আশা করে না। (খ). খিয়ানতকারী, যার খিয়ানত গোপন থাকে না, সামান্য বস্তু হলে তাতেও সে খিয়ানত করে। (গ). এমন ব্যক্তি যে সকাল-সন্ধ্যা তোমার পরিবার ও সম্পদে ধোকা প্রদানে লিপ্ত। (ঘ). তিনি কৃপণতা অথবা মিথ্যার উল্লেখ করেছেন। (ঙ). দুরাচারী অশ্লীল ব্যক্তি”। [মুসলিম]

[১] যারা বিকৃতি করা ব্যতীত তাদের সঠিক দ্বীনে বহাল ছিল। এ সময়টা হচ্ছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রেরণ করার পূর্বে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬৮
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «تَحَاجَّتْ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتْ النَّارُ: أُوثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِينَ وَالْمُتَجَبِّرِينَ، وَقَالَتْ الْجَنَّةُ: مَا لِي لَا يَدْخُلُنِي إِلَّا ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ، قَالَ اللَّهُ -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- لِلْجَنَّةِ: أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي، وَقَالَ لِلنَّارِ: إِنَّمَا أَنْتِ عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا مِلْؤُهَا، فَأَمَّا النَّارُ فَلَا تَمْتَلِئُ حَتَّى يَضَعَ رِجْلَهُ فَتَقُولُ: قَطْ قَطْ قَطْ فَهُنَالِكَ تَمْتَلِئُ وَيُزْوَى بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ وَلَا يَظْلِمُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- مِنْ خَلْقِهِ أَحَدًا، وَأَمَّا الْجَنَّةُ فَإِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يُنْشِئُ لَهَا خَلْقًا ». ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জান্নাত ও জাহান্নাম তর্ক করেছে, অতঃপর জাহান্নাম বললঃ আমাকে অহংকারী ও দাম্ভিক দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জান্নাত বললঃ আমার কি দোষ, আমার এখানে দুর্বল ও পতিত ব্যতীত কেউ প্রবেশ করবে না! আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে বলেনঃ তুমি আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা আমি রহম করব। জাহান্নামকে বলেনঃ তুমি আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা আমার বান্দাদের থেকে আমি শাস্তি দিব। তোমাদের দু’টির প্রতিটিই পূর্ণ হতে হবে (অর্থাৎ উভয়কে পূর্ণ করা হবে)। জাহান্নাম পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না তাতে আল্লাহর পা রাখা হয়, তখন সে বলবেঃ কত্ কত্ কত্, তখনি জাহান্নাম পূর্ণ হবে এবং তার এক অংশ অপর অংশে ঢুকে যাবে, আল্লাহ তার কোন মখলুককে যুলম করবেন না। আর জান্নাতের জন্য আল্লাহ নতুন মখলুক সৃষ্টি করবেন”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৭. অধ্যায়ঃ
দুনিয়ার সুখ ও দুঃখ আখেরাতে মূল্যহীন
৬৯
عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ كَانَ بَلَاءً فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فَيَقُولُ: اصْبُغُوهُ صَبْغَةً فِي الْجَنَّةِ فَيَصْبُغُونَهُ فِيهَا صَبْغَةً، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ أَوْ شَيْئًا تَكْرَهُهُ؟ فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَكْرَهُهُ قَطُّ، ثُمَّ يُؤْتَى بِأَنْعَمِ النَّاسِ كَانَ فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَيَقُولُ: اصْبُغُوهُ فِيهَا صَبْغَةً، فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ قُرَّةَ عَيْنٍ قَطُّ، فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ مَا رَأَيْتُ خَيْرًا قَطُّ وَلَا قُرَّةَ عَيْنٍ قَطُّ» . ( حم, م, جه ) صحيح

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী কষ্টভোগকারী জান্নাতিকে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ জান্নাতে তাকে ভালভাবে ঢোকাও, ফলে তাকে তারা ভালভাবে জান্নাতে ঢুকাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম, তুমি কখনো কষ্ট অথবা তোমার অপছন্দ কিছু দেখেছ? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো আমার অপছন্দ বস্তু দেখিনি। অতঃপর দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী সুখভোগকারী জাহান্নামীকে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ তাকে ভালভাবে জাহান্নামে ডুবাও, অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম, তুমি কখনো কল্যাণ ও আরামদায়ক বস্তু দেখেছ? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো কল্যাণ ও আরামদায়ক বস্তু দেখেনি”। [মুসলিম, আহমদ ও ইব্‌ন মাজাহ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৮. অধ্যায়ঃ
কিয়ামতের দৃশ্য
৭০
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: يَا آدَمُ، فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِي يَدَيْكَ، فَيَقُولُ: أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ. قَالَ: وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟ قَالَ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ فَعِنْدَهُ يَشِيبُ الصَّغِيرُ، (وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ( , قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَيُّنَا ذَلِكَ الْوَاحِدُ؟ قَالَ: «أَبْشِرُوا؛ فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلاً، وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفًا، ثُمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ»، فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّةِ»، فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ», فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «مَا أَنْتُمْ فِي النَّاسِ إِلَّا كَالشَّعَرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَبْيَضَ أَوْ كَشَعَرَةٍ بَيْضَاءَ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَسْوَدَ » . (خ, م, ن ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে আদম, সে বলবেঃ সদা উপস্থিত এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা, কল্যাণ কেবল তোমার হাতেই। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল বের কর। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল কোনটি? তিনি বলবেনঃ প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই জন, তখনি ছোটরা বার্ধক্যে উপনীত হবে। সকল গর্ভবতী তার গর্ভ পাত করবে, তুমি দেখবে মানুষরা মাতাল, অথচ তাদের সাথে মাতলামি নেই, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল আমাদের থেকে সে একজন কে? তিনি বললেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের থেকে একজন ও ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি বলেনঃ যার হাতে আমার নফস তার কসম করে বলছিঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতিদের এক চতুর্থাংশ হবে”। আমরা তাকবীর বলে উঠলাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের এক তৃতীয়াংশ হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “মানুষের ভিতরে তোমরা সাদা ষাঁড়ের গায়ে একটি কালো চুলের ন্যায়, অথবা কালো ষাঁড়ের গায়ের একটি সাদা চুলের ন্যায়”। [বুখারি, মুসলিম ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৯. অধ্যায়ঃ
মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিয়ামতের দিন তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে
৭১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ فِي الظَّهِيرَةِ لَيْسَتْ فِي سَحَابَةٍ؟ قَالُوا: لَا. قَالَ: فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَيْسَ فِي سَحَابَةٍ؟ قَالُوا: لَا. قَالَ: « فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ إِلَّا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا، قَالَ: فَيَلْقَى الْعَبْدَ، فَيَقُولُ: أَيْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالْإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ، فَيَقُولُ: بَلَى. قَالَ: فَيَقُولُ: أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلَاقِيَّ؟ فَيَقُولُ: لَا. فَيَقُولُ: فَإِنِّي أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي، ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِيَ، فَيَقُولُ: أَيْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالْإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ، فَيَقُولُ: بَلَى أَيْ رَبِّ، فَيَقُولُ: أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلَاقِيَّ؟ فَيَقُولُ: لَا. فَيَقُولُ: فَإِنِّي أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي، ثُمَّ يَلْقَى الثَّالِثَ، فَيَقُولُ: لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ آمَنْتُ بِكَ وَبِكِتَابِكَ وَبِرُسُلِكَ وَصَلَّيْتُ وَصُمْتُ وَتَصَدَّقْتُ وَيُثْنِي بِخَيْرٍ مَا اسْتَطَاعَ، فَيَقُولُ: هَاهُنَا إِذًا، قَالَ: ثُمَّ يُقَالُ لَهُ: الْآنَ نَبْعَثُ شَاهِدَنَا عَلَيْكَ، وَيَتَفَكَّرُ فِي نَفْسِهِ: مَنْ ذَا الَّذِي يَشْهَدُ عَلَيَّ، فَيُخْتَمُ عَلَى فِيهِ، وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ وَلَحْمِهِ وَعِظَامِهِ: انْطِقِي فَتَنْطِقُ فَخِذُهُ وَلَحْمُهُ وَعِظَامُهُ بِعَمَلِهِ وَذَلِكَ لِيُعْذِرَ مِنْ نَفْسِهِ وَذَلِكَ الْمُنَافِقُ وَذَلِكَ الَّذِي يَسْخَطُ اللَّهُ عَلَيْهِ » . (م،د) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বললেনঃ “তোমরা কি ভর দুপুরে মেঘ মুক্ত আকাশে সূর্য দেখায় সন্দেহ কর? তারা বললঃ না। তিনি বললেনঃ তোমরা কি চৌদ্দ তারিখের রাতে মেঘহীন আকাশে চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর? তারা বললঃ না। তিনি বললেনঃ তার সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার নফস, তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে না, যেমন তোমরা সন্দেহ কর না সূর্য-চাঁদ কোনো একটি দেখার ক্ষেত্রে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বান্দার সাথে সাক্ষাত করবেন অতঃপর বলবেনঃ হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে নেতৃত্ব দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি কি তোমাকে সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবেঃ অবশ্যই। তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবেঃ না। অতঃপর তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করবেন এবং বলবেনঃ হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে নেতৃত্ব দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি কি তোমাকে সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবেঃ অবশ্যই হে আমার রব। তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবেঃ না। অতঃপর তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করবেন, তাকেও অনুরূপ বলবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব আমি তোমার ওপর, তোমার কিতাব ও রাসূলদের ওপর ঈমান এনেছি, সালাত আদায় করেছি, সিয়াম পালন করেছি, সদকা করেছি, সে ইচ্ছামত গুণাগুণ বর্ণনা করবে। তিনি বলবেনঃ তাহলে অপেক্ষা কর, তিনি বলেনঃ অতঃপর তাকে বলা হবেঃ এখন আমি তোমার বিপক্ষে আমার সাক্ষী উপস্থিত করছি। সে অন্তরে চিন্তা করবে আমার বিপক্ষে কে সাক্ষী দিবে, তখন তার মুখে কুলুপ এঁটে দেয়া হবে, এবং তার রান, গোস্ত ও হাড্ডিকে বলা হবেঃ কথা বল, ফলে তার রান, গোস্ত ও হাড্ডি তার আমলের বর্ণনা দিবে। আর এটা এ জন্যে যে, যেন সে লোক আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করতে না পারে, সে হচ্ছে মুনাফিক, তার ওপরই আল্লাহর অসন্তুষ্টি আরোপ হবে”। [মুসলিম ও আবু দাউদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭২
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَال:َ كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَضَحِكَ فَقَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مِمَّ أَضْحَكُ؟» قَالَ: قُلْنَا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: «مِنْ مُخَاطَبَةِ الْعَبْدِ رَبَّهُ يَقُولُ: يَا رَبِّ أَلَمْ تُجِرْنِي مِنْ الظُّلْمِ؟» قَالَ: «يَقُولُ: بَلَى» قَالَ: «فَيَقُولُ: فَإِنِّي لَا أُجِيزُ عَلَى نَفْسِي إِلَّا شَاهِدًا مِنِّي» قَالَ: «فَيَقُولُ: كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ شَهِيدًا وَبِالْكِرَامِ الْكَاتِبِينَ شُهُودًا» قَالَ: «فَيُخْتَمُ عَلَى فِيهِ فَيُقَالُ لِأَرْكَانِهِ انْطِقِي» قَالَ: «فَتَنْطِقُ بِأَعْمَالِهِ» قَالَ: «ثُمَّ يُخَلَّى بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَلَام» قَالَ: «فَيَقُولُ: بُعْدًا لَكُنَّ وَسُحْقًا فَعَنْكُنَّ كُنْتُ أُنَاضِلُ» . ( م, ن ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “আমরা একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের নিকট ছিলাম, তিনি হঠাৎ হাসলেন। তিনি বললেনঃ “তোমরা জান কেন হেসেছি?”, তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ “(আমি হেসেছি) বান্দার তার রবকে পাল্টা প্রশ্ন করা থেকে। সে বলবেঃ হে আমার রব, আপনি কি আমাকে যুলম থেকে নাজাত দেননি?” তিনি বলেনঃ “আল্লাহ বলবেনঃ অবশ্যই”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর সে বলবেঃ আমার বিপক্ষে আমার অংশ ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী মানি না”। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ্ বলবেনঃ সাক্ষী হিসেবে আজ তোমার জন্য তুমিই যথেষ্ট, আর দর্শক হিসেবে কিরামুন কাতেবিন যথেষ্ট”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তার মুখে মোহর এঁটে দেয়া হবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হবে, বল”। তিনি বলেনঃ “ফলে অঙ্গসমূহ তার আমলের বর্ণনা দিবে”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর সে বলবেঃ তোমরা দূর হও, নিপাত যাও তোমরা, তোমাদের পক্ষেই তো আমি সংগ্রাম করতাম”। [মুসলিম ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪০. অধ্যায়ঃ
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
৭৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «يَقْبِضُ اللَّهُ الْأَرْضَ وَيَطْوِي السَّمَوَاتِ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ مُلُوكُ الْأَرْضِ» . ( خ, م, جه ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা‘আলা জমিন তাঁর হাতের মুঠোয় গ্রহণ করবেন, আর আসমান তার ডান হাতে মুড়িয়ে নিবেন, অতঃপর বলবেনঃ আমিই বাদশাহ, দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়?”। [বুখারি, মুসলিম ও ইব্‌ন মাজাহ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭৪
عَنْ ابْنِ عُمَرَ -رضي الله عنهما- عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْأَرْضَ، وَتَكُونُ السَّمَوَاتُ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ». ( خ ) صحيح

ইব্‌ন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ জমিন হাতের মুঠোয় গ্রহণ করবেন, আর আসমান তার ডান হাতে থাকবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমিই বাদশাহ”। [বুখারি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৭৫
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ مِقْسَمٍ أَنَّهُ نَظَرَ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَر -رضي الله عنهما- كَيْفَ يَحْكِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَأْخُذُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- سَمَاوَاتِهِ وَأَرَضِيهِ بِيَدَيْهِ فَيَقُولُ: أَنَا اللَّهُ (وَيَقْبِضُ أَصَابِعَهُ وَيَبْسُطُهَا) أَنَا الْمَلِكُ» حَتَّى نَظَرْتُ إِلَى الْمِنْبَرِ يَتَحَرَّكُ مِنْ أَسْفَلِ شَيْءٍ مِنْهُ حَتَّى إِنِّي لَأَقُولُ أَسَاقِطٌ هُوَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . ( م, جه, ن ) صحيح

উবাইদুল্লাহ ইব্‌ন মিকসাম থেকে বর্ণিতঃ
সে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমরকে লক্ষ্য করেছে কিভাবে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বর্ণনা দেন, তিনি (নবী-সা.) বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন তার দু’হাতে পাকড়াও করবেন, অতঃপর বলবেনঃ আমি আল্লাহ, (তিনি হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ ও প্রসারিত করছিলেন), আমিই বাদশাহ”। আমি মিম্বারের দিকে দেখলাম একেবারে নিচ থেকে নড়ছে, এমনকি মনে হচ্ছিল মিম্বার কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে পড়ে যাবে”। মুসলিম, ইব্‌ন মাজাহ ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪১. অধ্যায়ঃ
কতক জাহান্নামীর জাহান্নাম থেকে বের হওয়া
৭৬

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يَخْرُجُ مِنْ النَّارِ أَرْبَعَةٌ يُعْرَضُونَ عَلَى اللَّهِ -عَزَّ وَجَلَّ- فَيَأْمُرُ بِهِمْ إِلَى النَّارِ، فَيَلْتَفِتُ أَحَدُهُمْ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ قَدْ كُنْتُ أَرْجُو إِنْ أَخْرَجْتَنِي مِنْهَا أَنْ لَا تُعِيدَنِي فِيهَا فَيَقُولُ: فَلَا نُعِيدُكَ فِيهَا ». ( حم ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জাহান্নাম থেকে চারজন বের হবে, তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের নির্দেশ দিবেন, ফলে তাদের একজন পিছন ফিরে তাকাবে এবং বলবেঃ হে আমার রব, আমি আশা করেছিলাম যদি সেখান থেকে আমাকে বের করেন, সেখানে আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না, ফলে তিনি বলবেনঃ আমি তোমাকে সেখানে ফিরিয়ে দিব না”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪২. অধ্যায়ঃ
কিয়ামতের দিন নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ
৭৭
عَنْ أَبَي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -يَعْنِي الْعَبْدَ- مِنْ النَّعِيمِ أَنْ يُقَالَ لَهُ: أَلَمْ نُصِحَّ لَكَ جِسْمَكَ، وَنُرْوِيَكَ مِنْ الْمَاءِ الْبَارِدِ » . ( ت ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, -অর্থাৎ বান্দাকে- তা হচ্ছে নিয়ামত, তাকে বলা হবে যেঃ আমি কি তোমার শরীর সুস্থ করিনি, আমি কি তোমাকে ঠাণ্ডা পানি পান করাই নি”। [তিরমিযি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪৩. অধ্যায়ঃ
পরকালের আমলে অলসতাকারীর জন্য হুশিয়ারি
৭৮
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَعَنْ أَبِي سَعِيد -رضي الله عنهما- قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «يُؤْتَى بِالْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: أَلَمْ أَجْعَلْ لَكَ سَمْعًا وَبَصَرًا وَمَالاً وَوَلَدًا، وَسَخَّرْتُ لَكَ الْأَنْعَامَ وَالْحَرْثَ، وَتَرَكْتُكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ، فَكُنْتَ تَظُنُّ أَنَّكَ مُلَاقِي يَوْمَكَ هَذَا؟» قَالَ: «فَيَقُولُ لَا. فَيَقُولُ لَهُ: الْيَوْمَ أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي». ( ت ) حسن

আবু হুরায়রা ও আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তারা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন বান্দাকে উপস্থিত করা হবে, অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আমি কি তোমাকে কান, চোখ, সম্পদ ও সন্তান দেই নি? এবং তোমার জন্য চতুষ্পদ জন্তু ও কৃষি অনুগত করে দিয়েছি। আর তোমাকে দিয়েছি নেতৃত্ব দেয়া ও ভোগ করার সুযোগ, (এত কিছুর পর) তুমি কি চিন্তা করেছ তোমার এ দিনে আমার সাথে সাক্ষাত করবে?” রাসূল বলেনঃ “সে বলবেঃ না, অতঃপর তিনি তাকে বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে ছেড়ে যাব, যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে”। [তিরমিযি]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৪৪. অধ্যায়ঃ
আখেরাতে মুমিনগণ রবের দর্শন লাভ করবে
৭৯
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَال: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «هَلْ تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ إِذَا كَانَتْ صَحْوًا؟» قُلْنَا: لَا. قَالَ: «فَإِنَّكُمْ لَا تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ يَوْمَئِذٍ إِلَّا كَمَا تُضَارُونَ فِي رُؤْيَتِهِمَا» ثُمَّ قَالَ: «يُنَادِي مُنَادٍ: لِيَذْهَبْ كُلُّ قَوْمٍ إِلَى مَا كَانُوا يَعْبُدُونَ؛ فَيَذْهَبُ أَصْحَابُ الصَّلِيبِ مَعَ صَلِيبِهِمْ، وَأَصْحَابُ الْأَوْثَانِ مَعَ أَوْثَانِهِمْ، وَأَصْحَابُ كُلِّ آلِهَةٍ مَعَ آلِهَتِهِم،ْ حَتَّى يَبْقَى مَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ مِنْ بَرٍّ أَوْ فَاجِرٍ وَغُبَّرَاتٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، ثُمَّ يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ تُعْرَضُ كَأَنَّهَا سَرَابٌ فَيُقَالُ لِلْيَهُودِ: مَا كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ؟ قَالُوا: كُنَّا نَعْبُدُ عُزَيْرًا ابْنَ اللَّهِ فَيُقَال:ُ كَذَبْتُمْ لَمْ يَكُنْ لِلَّهِ صَاحِبَةٌ وَلَا وَلَدٌ فَمَا تُرِيدُونَ؟ قَالُوا: نُرِيدُ أَنْ تَسْقِيَنَا فَيُقَالُ: اشْرَبُوا فَيَتَسَاقَطُونَ فِي جَهَنَّمَ، ثُمَّ يُقَالُ: لِلنَّصَارَى مَا كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ؟ فَيَقُولُونَ: كُنَّا نَعْبُدُ الْمَسِيحَ ابْنَ اللَّهِ فَيُقَالُ: كَذَبْتُمْ لَمْ يَكُنْ لِلَّهِ صَاحِبَةٌ وَلَا وَلَدٌ فَمَا تُرِيدُونَ؟ فَيَقُولُونَ: نُرِيدُ أَنْ تَسْقِيَنَا فَيُقَالُ: اشْرَبُوا، فَيَتَسَاقَطُونَ فِي جَهَنَّمَ حَتَّى يَبْقَى مَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ مِنْ بَرٍّ أَوْ فَاجِرٍ فَيُقَالُ لَهُمْ: مَا يَحْبِسُكُمْ وَقَدْ ذَهَبَ النَّاسُ فَيَقُولُونَ: فَارَقْنَاهُمْ وَنَحْنُ أَحْوَجُ مِنَّا إِلَيْهِ الْيَوْمَ، وَإِنَّا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي: لِيَلْحَقْ كُلُّ قَوْمٍ بِمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ، وَإِنَّمَا نَنْتَظِرُ رَبَّنَا قَالَ: فَيَأْتِيهِمْ الْجَبَّارُ فِي صُورَةٍ غَيْرِ صُورَتِهِ الَّتِي رَأَوْهُ فِيهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ، فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ، فَيَقُولُون:َ أَنْتَ رَبُّنَا فَلَا يُكَلِّمُهُ إِلَّا الْأَنْبِيَاءُ، فَيَقُولُ: هَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ آيَةٌ تَعْرِفُونَهُ؟ فَيَقُولُونَ: السَّاقُ فَيَكْشِفُ عَنْ سَاقِهِ فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِن،ٍ وَيَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ لِلَّهِ رِيَاءً وَسُمْعَةً فَيَذْهَبُ كَيْمَا يَسْجُدَ فَيَعُودُ ظهْرُهُ طبَقًا واحِدًا ثُمَّ يُؤْتَى بِالْجَسْرِ فَيُجْعَلُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ» قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْجَسْرُ؟ قَالَ: «مَدْحَضَةٌ مَزِلَّةٌ عَلَيْهِ خَطَاطِيفُ وَكَلَالِيبُ وَحَسَكَةٌ مُفَلْطَحَةٌ لَهَا شَوْكَةٌ عُقَيْفَاءُ تَكُونُ بِنَجْدٍ يُقَالُ لَهَا: السَّعْدَانُ، الْمُؤْمِنُ عَلَيْهَا كَالطَّرْفِ وَكَالْبَرْقِ وَكَالرِّيحِ وَكَأَجَاوِيدِ الْخَيْلِ وَالرِّكَابِ فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ، وَنَاجٍ مَخْدُوشٌ، وَمَكْدُوسٌ فِي نَارِ جَهَنَّمَ، حَتَّى يَمُرَّ آخِرُهُمْ يُسْحَبُ سَحْبًا فَمَا أَنْتُمْ بِأَشَدَّ لِي مُنَاشَدَةً فِي الْحَقِّ- قَدْ تَبَيَّنَ لَكُمْ- مِنْ الْمُؤْمِنِ يَوْمَئِذٍ لِلْجَبَّارِ، وَإِذَا رَأَوْا أَنَّهُمْ قَدْ نَجَوْا فِي إِخْوَانِهِمْ، يَقُولُون:َ رَبَّنَا إِخْوَانُنَا كَانُوا يُصَلُّونَ مَعَنَا وَيَصُومُونَ مَعَنَا، وَيَعْمَلُونَ مَعَنَا، فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: اذْهَبُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ دِينَارٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجُوهُ، وَيُحَرِّمُ اللَّهُ صُوَرَهُمْ عَلَى النَّار،ِ فَيَأْتُونَهُمْ وَبَعْضُهُمْ قَدْ غَابَ فِي النَّارِ إِلَى قَدَمِهِ، وَإِلَى أَنْصَافِ سَاقَيْهِ، فَيُخْرِجُونَ مَنْ عَرَفُوا ثُمَّ يَعُودُونَ فَيَقُولُ اذْهَبُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ نِصْفِ دِينَارٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ مَنْ عَرَفُوا ثُمَّ يَعُودُونَ، فَيَقُولُ: اذْهَبُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ مَنْ عَرَفُوا» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: فَإِنْ لَمْ تُصَدِّقُونِي فَاقْرَءُوا: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا﴾ فَيَشْفَعُ النَّبِيُّونَ وَالْمَلَائِكَةُ وَالْمُؤْمِنُونَ فَيَقُولُ الْجَبَّارُ: بَقِيَتْ شَفَاعَتِي فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنْ النَّارِ فَيُخْرِجُ أَقْوَامًا قَدْ امْتُحِشُوا فَيُلْقَوْنَ فِي نَهَرٍ بِأَفْوَاهِ الْجَنَّةِ، يُقَالُ لَهُ: مَاءُ الْحَيَاةِ؛ فَيَنْبُتُونَ فِي حَافَتَيْهِ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ قَدْ رَأَيْتُمُوهَا إِلَى جَانِبِ الصَّخْرَةِ وَإِلَى جَانِبِ الشَّجَرَةِ، فَمَا كَانَ إِلَى الشَّمْسِ مِنْهَا كَانَ أَخْضَرَ، وَمَا كَانَ مِنْهَا إِلَى الظِّلِّ كَانَ أَبْيَضَ، فَيَخْرُجُونَ كَأَنَّهُمْ اللُّؤْلُؤُ فَيُجْعَلُ فِي رِقَابِهِمْ الْخَوَاتِيمُ فَيَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ فَيَقُولُ أَهْلُ الْجَنَّةِ: هَؤُلَاءِ عُتَقَاءُ الرَّحْمَنِ أَدْخَلَهُمْ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ عَمَلٍ عَمِلُوهُ وَلَا خَيْرٍ قَدَّمُوهُ، فَيُقَالُ لَهُمْ: لَكُمْ مَا رَأَيْتُمْ وَمِثْلَهُ مَعَهُ». ( خ, م ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বলেনঃ “তোমরা কি সূর্য ও চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর যখন আসমান পরিষ্কার থাকে?”, আমরা বললামঃ না, তিনি বললেনঃ “নিশ্চয় সেদিন তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে না, যেমন চাঁদ-সূর্য উভয়কে দেখায় সন্দেহ কর না”। অতঃপর বললেনঃ “একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেঃ প্রত্যেক সম্প্রদায় যেন তার নিকট যায়, যার তারা ইবাদত করত, ক্রুসের অনুসারীরা তাদের ক্রুসের সাথে যাবে; মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তির সাথে যাবে; এবং প্রত্যেক মাবুদের ইবাদতকারীরা তাদের মাবুদের সাথে যাবে। অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার অথবা বদকার লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে এবং কতক কিতাবি, অতঃপর জাহান্নাম হাজির করা হবে যেন তা মরীচিকা। অতঃপর ইহুদিদের বলা হবেঃ তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবেঃ আমরা আল্লাহর ছেলে উযাইর এর ইবাদত করতাম, অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করান, বলা হবেঃ তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে। অতঃপর খৃস্টানদের বলা হবেঃ তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবেঃ আমরা আল্লাহর ছেলে ঈসার ইবাদত করতাম, বলা হবেঃ তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ আমরা চাই আমাদের পানি পান করান। বলা হবেঃ পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে, অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার ও বদকার অবশিষ্ট থাকবে, তাদেরকে বলা হবেঃ কে তোমাদেরকে আটকে রেখেছে অথচ লোকেরা চলে গেছে? তারা বলবেঃ আমরা তাদেরকে (দুনিয়াতে) ত্যাগ করেছি, আজ আমরা তার (আমাদের রবের) বেশী মুখাপেক্ষী, আমরা এক ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কওম যেন তার সাথেই মিলিত হয়, যার তারা ইবাদত করত, তাই আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট আসবেন ভিন্ন সুরুতে, যে সুরুতে প্রথমবার তারা তাকে দেখেনি। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব। তারা বলবেঃ আপনি আমাদের রব, নবীগণ ব্যতীত তার সাথে কেউ কথা বলবে না। তিনি বলবেনঃ তোমাদের ও তার মাঝে কোন নিদর্শন আছে যা তোমরা চিন? তারা বলবেঃ পায়ের গোছা, ফলে তিনি তার গোছা উন্মুক্ত করবেন, প্রত্যেক মুমিন তাকে সেজদা করবে, তবে যে লোকদেখানো কিংবা লোকদের শোনানোর জন্য সেজদা করত সে অবশিষ্ট থাকবে। সে সেজদা করতে চাইবে কিন্তু তার পিঠ উল্টো সোজা খাড়া হয়ে যাবে। অতঃপর পুল আনা হবে এবং তা জাহান্নামের ওপর রাখা হবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল পুল কি? তিনি বললেনঃ পদস্খলনের স্থান, তার ওপর রয়েছে ছো মারা হুক, পেরেক, বিশাল বড়শি যার রয়েছে বড় কাঁটা যেরূপ নজদ এলাকায় হয়, যা সা‘দান বলা হয়। তার ওপর দিয়ে মুমিনগণ চোখের পলক, বিদ্যুৎ, বাতাস, শক্তিশালী ঘোড়া ও পায়দল চলার ন্যায় পার হবে, কেউ নিরাপদে নাজাত পাবে, কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে নাজাত পাবে এবং কেউ জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে, অবশেষে যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি অতিক্রম করবে তখন তাকে টেনে হিছড়ে পার করা হবে। আর কোন সত্য বিষয়ে তোমরা আমার নিকট এতটা পীড়াপীড়ি কর না, -তোমাদের নিকট যা স্পষ্ট হয়েছে- মুমিনগণ সেদিন আল্লাহর নিকট যতটা পীড়াপীড়ি করবে, যখন দেখবে যে তাদের ভাইদের মধ্যে শুধু তারাই নাজাত পেয়েছে, তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত এবং আমাদের সাথে আমল করত। আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ যাও যার অন্তরে তোমরা দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর। আল্লাহ তাদের আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। তারা তাদের নিকট আসবে, তাদের কেউ পা পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেছে, কেউ গোছার অর্ধেক পর্যন্ত, তারা যাদেরকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেনঃ যাও, যার অন্তরে তোমরা অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, তারা যাকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেনঃ যাও যার অন্তরে তোমরা অণু পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, ফলে তারা যাকে চিনবে বের করবে”। আবু সায়িদ বলেনঃ যদি তোমরা আমাকে সত্য জ্ঞান না কর, তাহলে পড়ঃ
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا ٤٠ ﴾ [النساء ঃ ٤٠]
“নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না। ‎আর যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ ‎করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান ‎প্রদান করেন” (সূরা নিসাঃ ৪০) অতঃপর নবী, ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। আল্লাহ বলবেনঃ আমার সুপারিশ বাকি রয়েছে, অতঃপর জাহান্নাম থেকে এক মুষ্টি গ্রহণ করবেন, ফলে এমন লোক বের করবেন যারা জ্বলে গিয়েছে, তাদেরকে জান্নাতের দরজার নিকট অবস্থিত নহরে নিক্ষেপ করা হবে, যাকে বলা হয় সঞ্জীবনী পানি, ফলে তার দু’পাশে গজিয়ে উঠবে যেমন প্রবাহিত পানির উর্বর মাটিতে শস্য গজিয়ে উঠে, যা তোমরা দেখেছ পাথর ও গাছের পাশে, তার থেকে যা সূর্যের দিকে তা সবুজ এবং যা ছায়ার আড়ালে তা সাদা, অতঃপর তারা মুক্তোর ন্যায় বের হবে। অতঃপর তাদের গর্দানে সীলমোহর দয়া হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, জান্নাতিরা বলবেঃ তারা হচ্ছে রহমানের নাজাতপ্রাপ্ত, তাদেরকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন কোন আমলের বিনিময়ে নয়, যা তারা করেছে, বা কোন কল্যাণের বিনিময়ে নয় যা তারা অগ্রে প্রেরণ করেছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ তোমাদের জন্য তোমরা যা দেখেছ তা এবং তার সাথে তার অনুরূপ”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮০
عَنْ أبي الزُّبَيْرِ أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ -رضي الله عنه- يُسْأَلُ عَنْ الْوُرُودِ فَقَالَ: «نَجِيءُ نَحْنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَنْ كَذَا وَكَذَا انْظُرْ أَيْ ذَلِكَ فَوْقَ النَّاسِ، قَالَ: فَتُدْعَى الْأُمَمُ بِأَوْثَانِهَا وَمَا كَانَتْ تَعْبُدُ، الْأَوَّلُ فَالْأَوَّلُ ثُمَّ يَأْتِينَا رَبُّنَا بَعْدَ ذَلِكَ فَيَقُولُ: مَنْ تَنْظُرُونَ؟ فَيَقُولُونَ: نَنْظُرُ رَبَّنَا فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ فَيَقُولُونَ: حَتَّى نَنْظُرَ إِلَيْكَ فَيَتَجَلَّى لَهُمْ يَضْحَكُ». قَال:َ «فَيَنْطَلِقُ بِهِمْ وَيَتَّبِعُونَهُ، وَيُعْطَى كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ -مُنَافِقٍ أَوْ مُؤْمِنٍ- نُورًا ثُمَّ يَتَّبِعُونَهُ، وَعَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ كَلَالِيبُ وَحَسَكٌ تَأْخُذُ مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ يُطْفَأُ نُورُ الْمُنَافِقِينَ، ثُمَّ يَنْجُو الْمُؤْمِنُونَ فَتَنْجُو أَوَّلُ زُمْرَةٍ وُجُوهُهُمْ كَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْر،ِ سَبْعُونَ أَلْفًا لَا يُحَاسَبُونَ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ كَأَضْوَإِ نَجْمٍ فِي السَّمَاءِ، ثُمَّ كَذَلِكَ ثُمَّ تَحِلُّ الشَّفَاعَةُ، وَيَشْفَعُونَ حَتَّى يَخْرُجَ مِنْ النَّارِ مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِنْ الْخَيْرِ مَا يَزِنُ شَعِيرَةً، فَيُجْعَلُونَ بِفِنَاءِ الْجَنَّةِ، وَيَجْعَلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ يَرُشُّونَ عَلَيْهِمْ الْمَاءَ حَتَّى يَنْبُتُوا نَبَاتَ الشَّيْءِ فِي السَّيْلِ وَيَذْهَبُ حُرَاقُهُ ثُمَّ يَسْأَلُ حَتَّى تُجْعَلَ لَهُ الدُّنْيَا وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهَا مَعَهَا» . ( م, حم ) موقوف صحيح

আবু যুবায়ের থেকে বর্ণিতঃ
তিনি জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ)কে শুনেছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ‘ওরুদ’ (বা জাহান্নামে নামা) সম্পর্কে, তিনি বলেনঃ আমরা কিয়ামতের দিন অমুক অমুক স্থান থেকে হাজির হব, দেখ অর্থাৎ মানুষের ওপরে, তিনি বলেনঃ লোকদেরকে তাদের মূর্তিসহ ডাকা হবে এবং তারা যার ইবাদত করত। প্রথম অতঃপর প্রথম ধারাবাহিকভাবে, অতঃপর আমাদের রব আসবেন এবং বলবেনঃ তোমরা কার অপেক্ষা করছ? তারা বলবেনঃ আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি, তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা বলবেঃ যতক্ষণ না আমরা আপনাকে দেখব, ফলে তিনি তাদের সামনে জাহির হবেন সহাস্যে”। রাসূল বলেনঃ “অতঃপর তিনি তাদের নিয়ে চলবেন, তারাও তার অনুসরণ করবে। তাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে নূর দেয়া হবে, কি মুনাফিক কি মুমিন, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করবে, জাহান্নামের পুলে থাকবে হুক ও বড়শিসমূহ, সেগুলো পাকড়াও করবে আল্লাহ যাকে চাইবেন তাকে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের নূর নিভিয়ে দিবেন, মুমিনগণ নাজাত পাবে, প্রথম দলটি নাজাত পাবে তাদের চেহারা হবে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়, শত্তুর হাজার এমন হবে যাদের কোন হিসাব নেয়া হবে না। অতঃপর তাদের পরবর্তীরা হবে আসমানের সবচেয়ে উজ্জল তারকার ন্যায়, অতঃপর অনুরূপ, অতঃপর সুপারিশ আরম্ভ হবে এবং তারা সুপারিশ করবে, অবশেষে যে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বলেছে এবং যার অন্তরে গমের ওজন পরিমাণ কল্যাণ ছিল সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। তাদেরকে জান্নাতের বারান্দায় রাখা হবে, জান্নাতিরা তাদের ওপর পানি ঢালতে থাকবে, অবশেষে তারা পানি প্রবাহের স্থানে শস্য গজানোর ন্যায় বেড়ে উঠবে, তাদের পোড়াদাগ চলে যাবে, অতঃপর প্রার্থনা করা হবে, এমনকি তাকে দুনিয়া ও দুনিয়ার সমান দশগুণ দেয়া হবে”। [মুসলিম ও আহমদ] হাদীসটি মওকুফ ও সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ মাওকুফ

৪৫. অধ্যায়ঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর আল্লাহর নিয়ামত
৮১
عن ابن عباس -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « سألتُ ربي مسألةً وددت أني لم أسأله، قلت: يا رب كانت قبلي رسلٌ منهم من سخرت لهم الرياح، ومنهم من كان يُحي الموتى. قال: ألم أجدك يتيمًا فأويتك؟ ألم أجدك ضالاً فهديتُك؟ ألم أجدك عائلاً فأغنيتُك؟ ألم أشرح لك صدرك؟ ووضعت عنك وزرك؟ قال: قلت: بلى يا رب » . ( طب ) حسن

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি আমার রবকে একটি বিষয় জিজ্ঞাসা করেছি, আফসোস আমি যদি তা জিজ্ঞাসা না করতাম। আমি বলেছিঃ হে আমার রব আমার পূর্বে অনেক রাসূল ছিল, তাদের কারো জন্য বাতাস অনুগত করে দেয়া হয়েছে, তাদের কেউ মৃতদের জীবিত করত। আল্লাহ্‌ বলেনঃ আমি কি তোমাকে ইয়াতিম পাই নি অতঃপর আশ্রয় দিয়েছি? আমি কি তোমাকে পথভোলা পাই নি অতঃপর পথ দেখিয়েছি? আমি কি তোমাকে অভাবী পাই নি অতঃপর তোমাকে সচ্ছল করেছি? আমি কি তোমার বক্ষ উন্মুক্ত করি নি? আমি কি তোমার থেকে বোঝা দূর করি নি? রাসূল বলেনঃ আমি বলেছিঃ অবশ্যই হে আমার রব”। [তাবরানি]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৪৬. অধ্যায়ঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউজ
৮২

عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِي الْحَوْضَ، حَتَّى عَرَفْتُهُمْ اخْتُلِجُوا دُونِي فَأَقُولُ: أَصْحَابِي, فَيَقُولُ: لَا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ » . ( خ, م ) صحيح

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “অবশ্যই আমার কতক লোক হাউজে আমার নিকট হাজির হবে, অবশেষে যখন আমি তাদেরকে চিনব আমার পিছন থেকে তাদেরকে ছো মেরে নেয়া হবে, আমি বলবঃ আমার লোক। আমাকে (আল্লাহ্) বলবেনঃ আপনি জানেন না আপনার পর তারা কি আবিষ্কার করেছে”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮৩
عَنْ عَائِشَةَ -رضى الله عنها- قالت: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ وَهُوَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَصْحَابِهِ: « إِنِّي عَلَى الْحَوْضِ أَنْتَظِرُ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ مِنْكُمْ فَوَاللَّهِ لَيُقْتَطَعَنَّ دُونِي رِجَالٌ فَلَأَقُولَنَّ: أَيْ رَبِّ مِنِّي وَمِنْ أُمَّتِي. فَيَقُولُ: إِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا عَمِلُوا بَعْدَكَ مَا زَالُوا يَرْجِعُونَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ » . ( م ) صحيح

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি তার সাথীদের মাঝে ছিলেনঃ “আমি হাউজের ওপর থাকব, অপেক্ষা করব তার জন্য যে তোমাদের থেকে আমার কাছে আসবে। আল্লাহর শপথ আমার থেকে কতক লোক বিচ্ছিন্ন করা হবে, আমি বলবঃ হে আমার রব (তারা) আমার ও আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত, তিনি বলবেনঃ তুমি জান না তোমার পর তারা কি করেছে, তারা তাদের পশ্চাতেই ধাবিত ছিল”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪৭. অধ্যায়ঃ
হাউজে কাউসার
৮৪
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: بَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ بَيْنَ أَظْهُرِنَا إِذْ أَغْفَى إِغْفَاءَةً ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ مُتَبَسِّمًا، فَقُلْنَا: مَا أَضْحَكَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟! قَالَ: « أُنْزِلَتْ عَلَيَّ آنِفًا سُورَةٌ فَقَرَأَ: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ﴿إِنَّآ أَعۡطَيۡنَٰكَ ٱلۡكَوۡثَرَ ١ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلۡأَبۡتَرُ ٣﴾ ثُمَّ قَالَ: أَتَدْرُونَ مَا الْكَوْثَرُ؟» فَقُلْنَا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: «فَإِنَّهُ نَهْرٌ وَعَدَنِيهِ رَبِّي -عَزَّ وَجَلَّ- عَلَيْهِ خَيْرٌ كَثِيرٌ هُوَ حَوْضٌ تَرِدُ عَلَيْهِ أُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ آنِيَتُهُ عَدَدُ النُّجُومِ فَيُخْتَلَجُ الْعَبْدُ مِنْهُمْ فَأَقُولُ: رَبِّ إِنَّهُ مِنْ أُمَّتِي فَيَقُولُ: مَا تَدْرِي مَا أَحْدَثَتْ بَعْدَكَ » . ( م, د ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে ছিলেন, হঠাৎ তিনি তন্দ্রা গেলেন, অতঃপর হাসতে হাসতে মাথা তুললেন। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে?! তিনি বললেনঃ “এ মুহূর্তে আমার ওপর একটি সূরা নাযিল করা হয়েছে, অতঃপর তিনি পড়লেনঃ
﴿إِنَّآ أَعۡطَيۡنَٰكَ ٱلۡكَوۡثَرَ ١ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلۡأَبۡتَرُ ٣﴾ [الكوثرঃ ١، ٤]
“নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান ‎করেছি। অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই সালাত ‎পড় এবং নহর কর। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই ‎নির্বংশ” (সূরা কাউসারঃ ১-৩) অতঃপর তিনি বললেনঃ “তোমরা জান কাউসার কি?” আমরা বললামঃ আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ “এটা একটা নহর, এর ওয়াদা আল্লাহ আমার নিকট করেছেন, তাতে রয়েছে প্রচুর কল্যাণ। এটা এক হাউজ তাতে আমার উম্মত গমন করবে, তার পাত্রগুলো নক্ষত্রের সংখ্যার ন্যায়, তাদের থেকে এক বান্দাকে ছো মেরে নেয়া হবে, আমি বলবঃ হে আমার রব, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত, তিনি বলবেনঃ তুমি জান না তোমার পর তারা কি আবিষ্কার করেছে”। [মুসলিম ও আবু দাউদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৮. অধ্যায়ঃ
সুপারিশের হাদিস
৮৫
عَنْ مَعْبَدُ بْنُ هِلَالٍ الْعَنَزِيُّ قَالَ: اجْتَمَعْنَا -نَاسٌ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ- فَذَهَبْنَا إِلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ-رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، وَذَهَبْنَا مَعَنَا بِثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ إِلَيْهِ يَسْأَلُهُ لَنَا عَنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ، فَإِذَا هُوَ فِي قَصْرِهِ فَوَافَقْنَاهُ يُصَلِّي الضُّحَى فَاسْتَأْذَنَّا فَأَذِنَ لَنَا وَهُوَ قَاعِدٌ عَلَى فِرَاشِهِ، فَقُلْنَا لِثَابِتٍ: لَا تَسْأَلْهُ عَنْ شَيْءٍ أَوَّلَ مِنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ فَقَالَ: يَا أَبَا حَمْزَةَ هَؤُلَاءِ إِخْوَانُكَ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ جَاءُوكَ يَسْأَلُونَكَ عَنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ فَقَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ مَاجَ النَّاسُ بَعْضُهُمْ فِي بَعْضٍ فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ: اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِإِبْرَاهِيمَ فَإِنَّهُ خَلِيلُ الرَّحْمَنِ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُوسَى فَإِنَّهُ كَلِيمُ اللَّهِ، فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِعِيسَى فَإِنَّهُ رُوحُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ، فَيَأْتُونَ عِيسَى فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم ، فَيَأْتُونِي فَأَقُولُ: أَنَا لَهَا فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فَيُؤْذَنُ لِي وَيُلْهِمُنِي مَحَامِدَ أَحْمَدُهُ بِهَا لَا تَحْضُرُنِي الْآنَ، فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ وَأَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا فَيَقُولُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي فَيَقُولُ: انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ شَعِيرَةٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ، ثُمَّ أَعُودُ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي فَيَقُولُ: انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ أَوْ خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَخْرِجْهُ فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ ثُمَّ أَعُودُ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا, فَيَقُولُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي فَيَقُولُ: انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى أَدْنَى مِثْقَالِ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَخْرِجْهُ مِنْ النَّارِ فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ » . فَلَمَّا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ أَنَسٍ قُلْتُ لِبَعْضِ أَصْحَابِنَا: لَوْ مَرَرْنَا بِالْحَسَنِ وَهُوَ مُتَوَارٍ فِي مَنْزِلِ أَبِي خَلِيفَةَ فَحَدَّثْنَاهُ بِمَا حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ فَأَتَيْنَاهُ فَسَلَّمْنَا عَلَيْهِ فَأَذِنَ لَنَا فَقُلْنَا لَهُ: يَا أَبَا سَعِيدٍ جِئْنَاكَ مِنْ عِنْدِ أَخِيكَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فَلَمْ نَرَ مِثْلَ مَا حَدَّثَنَا فِي الشَّفَاعَةِ, فَقَالَ: هِيهْ, فَحَدَّثْنَاهُ بِالْحَدِيثِ فَانْتَهَى إِلَى هَذَا الْمَوْضِع,ِ فَقَالَ: هِيهْ, فَقُلْنَا: لَمْ يَزِدْ لَنَا عَلَى هَذَا فَقَالَ: لَقَدْ حَدَّثَنِي وَهُوَ جَمِيعٌ مُنْذُ عِشْرِينَ سَنَةً فَلَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَمْ كَرِهَ أَنْ تَتَّكِلُوا, قُلْنَا: يَا أَبَا سَعِيدٍ فَحَدِّثْنَا, فَضَحِكَ، وَقَالَ: خُلِقَ الْإِنْسَانُ عَجُولاً، مَا ذَكَرْتُهُ إِلَّا وَأَنَا أُرِيدُ أَنْ أُحَدِّثَكُمْ، حَدَّثَنِي كَمَا حَدَّثَكُمْ بِهِ قَالَ: « ثُمَّ أَعُودُ الرَّابِعَةَ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ، وَسَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ ائْذَنْ لِي فِيمَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَيَقُولُ: وَعِزَّتِي وَجَلَالِي وَكِبْرِيَائِي وَعَظَمَتِي لَأُخْرِجَنَّ مِنْهَا مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ » . ( خ, م ) صحيح

মা‘বাদ ইব্‌ন হিলাল আনাজি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা বসরার কতক লোক একসাথে আনাস ইব্‌ন মালেকের নিকট গেলাম। আমরা আমাদের সাথে সাবেত আল-বুনানিকে নিয়ে গেলাম, যেন সে আমাদের পক্ষে তাকে সুপারিশের হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তিনি বাড়িতেই ছিলেন, আমরা তাকে দোহা (চাশতে)র সালাত আদায় করতে পেলাম। আমরা অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন, তিনি বিছানায় উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা সাবেতকে বললামঃ সুপারিশের হাদিসের পূর্বে কোন বিষয় সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন না, তিনি বললেনঃ হে আবু হামযাহ, তারা আপনার ভাই বসরার অধিবাসী, তারা আপনার নিকট এসেছে সুপারিশের হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য। অতঃপর তিনি বললেনঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেনঃ “যখন কিয়ামতের দিন হবে মানুষ ভীড়ে ঠাসাঠাসি করবে, অতঃপর তারা আদম আলাইহিস সালামের নিকট আসবে ও বলবেঃ আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন, তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, তবে তোমরা ইবরাহিমের নিকট যাও, কারণ তিনি রহমানের খলিল। তারা ইবরাহিমের নিকট আসবে, তিনি বলবেনঃ আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা মুসার নিকট যাও, কারণ তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী। তারা মুসার নিকট আসবে, তিনি বলবেনঃ আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা ঈসার নিকট যাও, কারণ তিনি আল্লাহর (পক্ষ থেকে বিশেষ) রূহ ও তার বাণী। তারা ঈসার নিকট আসবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাও, অতঃপর তারা আমার নিকট আসবে, আমি বলবঃ আমি এ জন্য, আমি আমার রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব, আমাকে অনুমতি দেয়া হবে, তিনি আমাকে প্রশংসার বাক্য শিক্ষা দিবেন যা দ্বারা আমি তার প্রশংসা করব, যা এখন আমার স্মরণ নেই। আমি তার প্রশংসা করব ও সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, তিনি বলবেনঃ হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, তুমি বল তোমার কথা শোনা হবে, তুমি চাও তোমাকে দেয়া হবে, তুমি সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি বলবেনঃ যাও, সেখান থেকে বের কর যার অন্তরে গমের ওজন বরাবর ঈমান রয়েছে, আমি যাব ও অনুরূপ করব। অতঃপর ফিরে আসব ও সে প্রশংসার বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব, অতঃপর তার সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, অতঃপর বলা হবেঃ হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, বল তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে দেয়া হবে, সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি বলবেনঃ যাও, সেখান থেকে বের কর যার অন্তরে অণু অথবা সরিষা পরিমান ঈমান রয়েছে, আমি যাব ও অনুরূপ করব। অতঃপর ফিরে এসে সে বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব অতঃপর সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, বলা হবেঃ হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, বল তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে দেয়া হবে, সুপারিশ কর কবুল করা হবে, অতঃপর আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি বলবেনঃ যাও, বের কর যার অন্তরে সরিষার অণু অণু অণু পরিমাণ ঈমান রয়েছে, অতএব আমি তাকে জাহান্নাম থেকে বের করব, আমি যাব ও অনুরূপ করব”। আমরা যখন আনাসের কাছ থেকে প্রস্থান করলাম, আমি আমাদের কতক সাথীকে বললামঃ আমরা যদি হাসান বসরি হয়ে যাই, তার নিকট আনাসের হাদিস বর্ণনা করি! তখন তিনি আবু খলিফার ঘরে আত্মগোপন করে ছিলেন, আমরা তার নিকট আসলাম, তাকে সালাম করলাম, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন, আমরা তাকে বললামঃ হে আবু সায়িদ, আমরা আপনার নিকট আপনার ভাই আনাস ইব্‌ন মালেকের কাছ থেকে এসেছি, তিনি আমাদেরকে সুপারিশ সম্পর্কে যা শুনিয়েছেন তা কখনো শুনেনি। তিনি বললেনঃ বল, আমরা তাকে হাদিস বললাম, এখানে এসে শেষ করলাম। তিনি বললেনঃ বল, আমরা বললাম এরচেয়ে বেশী বলেন নি। তিনি বললেনঃ তিনি আমাকে বলেছেন পূর্ণ বিশ বছর পূর্বে, জানি না তিনি ভুলে গেছেন বা তোমাদের (পক্ষ থেকে কম আমলের উপর) নির্ভর করে থাকাকে অপছন্দ করেছেন। আমরা বললামঃ হে আবু সায়িদ আপনি আমাদেরকে বলুন, তিনি হাসলেন ও বললেনঃ মানুষকে তড়িৎ প্রবণ করে সৃষ্টি করা হয়েছে, আমি তো তোমাদেরকে বলার জন্যই বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন যেমন তোমাদেরকে তা বলেছেন। তিনি বলেনঃ “অতঃপর আমি চতুর্থবার ফিরব এবং সে বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব, অতঃপর তার সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, বলা হবেঃ হে মুহাম্মদ, মাথা উঠাও, বল শোনা হবে, চাও দেয়া হবে, সুপারিশ কর কবুল করা হবে। আমি বলবঃ হে আমার রব, যারা বলেছে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ তাদের ব্যাপারে আমাকে অনুমতি দিন। তিনি বলবেনঃ আমার ইজ্জত, বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও সম্মানের কসম, অবশ্যই আমি তাকে বের করব, لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ যে বলেছে”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪৯. অধ্যায়ঃ
উম্মতে মুহাম্মাদির ফযিলত
৮৬
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « يُدْعَى نُوحٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَبِّ, فَيَقُولُ: هَلْ بَلَّغْتَ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ، فَيُقَالُ لِأُمَّتِهِ: هَلْ بَلَّغَكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: مَا أَتَانَا مِنْ نَذِيرٍ، فَيَقُولُ: مَنْ يَشْهَدُ لَكَ؟ فَيَقُولُ: مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ, فَتَشْهَدُونَ أَنَّهُ قَدْ بَلَّغَ -وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا- فَذَلِكَ قَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ: ﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيۡكُمۡ شَهِيدٗاۗ﴾ (وَالْوَسَطُ الْعَدْلُ ». ( خ, ت, جه ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন নুহ আলাইহিস সালামকে ডাকা হবে, তিনি বলবেনঃ সদা উপস্থিত, আপনার সন্তুষ্টি বিধানে আমি সদা তৎপর হে আমার রব, তিনি বলবেনঃ তুমি পৌঁছিয়েছ? তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ, তার উম্মতকে বলা হবেঃ সে তোমাদের পৌঁছিয়েছে? তারা বলবেঃ আমাদের নিকট কোন সতর্ককারী আসে নি। তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য কে সাক্ষী দিবে? তিনি বলবেনঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত, অতঃপর তারা সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় তিনি পৌঁছিয়েছেন, আর রাসূল হবেন তোমাদের সাক্ষী। এ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
﴿ وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيۡكُمۡ شَهِيدٗاۗ ١٤٣ ﴾ [البقرةঃ ١٤٣] ( وَالْوَسَطُ الْعَدْلُ ».
“আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী ‎উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের উপর ‎সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের ‎উপর” (সূরা বাকারাঃ ১৪৩) ওয়াসাত অর্থ ইনসাফপূর্ণ পথ বা মধ্যমপন্থার অনুসারী”। [বুখারি, তিরমিযি ও ইব্‌ন মাজাহ] হাদীসটি সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮৭
عَنْ أَبِي مُوسَى -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ دَفَعَ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- إِلَى كُلِّ مُسْلِمٍ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا فَيَقُولُ: هَذَا فِكَاكُكَ مِنْ النَّارِ». ( م, حم ) صحيح

আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন কিয়ামতের দিন হবে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলিমের নিকট একজন ইহুদি অথবা খৃস্টান দিবেন, অতঃপর বলবেনঃ এ হচ্ছে তোমার জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়” [১]। [মুসলিম ও আহমদ]

[১] কারণ প্রতিটি মানুষের জন্য জাহান্নামে একটি স্থান রয়েছে। যখন মুসলিম জাহান্নামে গেল না, আর খৃষ্টান ও ইয়াহূদী জাহান্নামে গেল, তখন সে যেন মুসলিমের স্থান দখল করে নিল। আর মুসলিম যেন কাফেরকে তার স্থলাভিষিক্ত করল। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮৮
عن أبي موسى -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « تُحْشَرُ هذه الأمةُ على ثلاثةِ أصنافٍ: (صنف) يدخُلون الجنة بغير حسابٍ (وصنفٍ) يُحاسبون حسابًا يسيرًا ثم يَدْخلون الجنة، (وصنف) يجيئون على ظهورهم أمثالُ الجبالِ الراسياتِ ذُنوبًا فيسألُ الله عنهم وهو أعلم بهم فيقول: ما هؤلاء؟ فيقولون: هؤلاء عبيدٌ من عبادِك، فيقول: حُطُّوها عنهم واجعلوها على اليهودِ والنَّصارى وأدْخِلوهم برحمتي الجنَّة » . ( ك ) حسن

আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “এ উম্মতকে তিন ভাগে উপস্থিত করা হবেঃ প্রথম ভাগ বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দ্বিতীয় ভাগ থেকে সামান্য হিসেব নেয়া হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তৃতীয় ভাগ নিজেদের পিঠের ওপর বড় পাহাড়ের ন্যায় পাপসহ উপস্থিত হবে, অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক জানেনঃ এরা কারা? তারা বলবেঃ এরা আপনার কতক বান্দা। তিনি বলবেনঃ এসব তাদের থেকে হটাও, এগুলো ইহুদি ও খৃস্টানদের ওপর রাখ এবং তাদেরকে আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও”।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৮৯
عن أبي أمامة -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إذا كان يومُ القيامة قامت ثُلة من النَّاس يسدون الأفق نورهم كالشمس، فيقال: النبيُّ الأمي فيتحسس لها كلُّ نَبيٍّ فيُقَالُ: محمد وأمته، ثم تقوم ثُلَّةٌ أخرى يَسدُّ ما بين الأفق نُورهم كالقمر ليلة البدر، فيقال: النبي الأمي، فيتحسس لها كل شيءٍ، فيقال: محمدٌ وأمته، ثم تقوم ثُلةٌ أخرى يسد ما بين الأفق نورهم مثل كوكب في السماء، فيقال: النبي الأمي، فيتحسس لها كل شيءٍ، فيقال: محمدٌ وأمته، ثم يحثي حثيتين فيقول: هذا لك يا محمد وهذا مني لك يا محمد, ثم يوضع الميزانُ ويؤُخذ في الحساب » . ( طب ) حسن

আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন কিয়ামতের দিন হবে একদল মানুষ দাঁড়াবে, তাদের নূর সূর্যের ন্যায় দিগন্ত ঢেকে ফেলবে, অতঃপর বলা হবেঃ উম্মী নবী, প্রত্যেক নবী এ জন্য প্রস্তুত হবেন। অতঃপর বলা হবেঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর একদল দাঁড়াবে তাদের নূর চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায় দিগন্তের মধ্যবর্তী সব ঢেকে ফেলবে, বলা হবেঃ উম্মী নবী, প্রত্যেকেই এ জন্য প্রস্তুত হবেন, অতঃপর বলা হবেঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর একদল দাঁড়াবে তাদের নূর আসমানের তারকার ন্যায় দিগন্তের মধ্যবর্তী সব ঢেকে ফেলবে, বলা হবেঃ উম্মী নবী, প্রত্যেকেই এ জন্য প্রস্তুত হবেন, অতঃপর বলা হবেঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর দু’ মুষ্টি উঠাবেন ও বলবেনঃ এটা তোমার জন্য হে মুহাম্মদ ও এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য হে মুহাম্মদ। অতঃপর মীযান কায়েম করা হবে এবং হিসাব আরম্ভ হবে”। [তাবরানি]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৯০
عن أنس بن مالك -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «أتاني جبريلُ بمثل هذه المرآة البيضاء فيها نُكْتة سوداء، قلت: يا جبريلُ ما هذه؟ قال: هذا الجُمُعة جعلها الله عيدًا لك ولأمتك فأنتم قبل اليهود والنصارى، فيها ساعةٌ لا يوافقها عبدٌ يسأل الله فيها خيرًا إلا أعطاهُ إياه، قال: قلت: ما هذه النُكْتةُ السوداء؟ قال: هذا يوم القيامة تَقُوم في يوم الجمعة، ونحن ندعوه عندنا (المزيد) قال: قلت: ما يومُ المزيد؟ قال: إنَّ الله جعل في الجنة واديًا أفيح، وجعل فيه كُثْبانًا من المسك الأبيض، فإذا كان يومُ الجمعة ينزلُ الله فيه فوضعت فيه منابر من ذهب للأنبياء وكراسي من درٍّ للشهداءٍ، وينزلن الحورُ العينُ من الغُرف فحمدوا الله ومَجَّدوه، قال: ثم يقول الله: اكسوا عبادي فيكسون، ويقول: أطعموا عبادي فيطعمون، ويقول: اسقوا عبادي فيسقون، ويقول: طيِّبوا عبادي فيطيبون، ثم يقول: ماذا تُريدون؟ فيقولون: ربنا رضوانك، قال: يقول: رضيت عنكم ثم يأمرهم فينطلقون وتصعدُ الحورُ العين الغرفَ، وهي من زمردةٍ خضراء ومن ياقوتةٍ حمراء » . ( يع ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “সাদা এ আয়নার ন্যায় অনুরূপ আয়না নিয়ে জিবরিল আমার নিকট এসেছে তাতে কালো একটি ফোঁটা। আমি বললামঃ হে জিবরিল এটা কি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে জুমা, আল্লাহ যা তোমার ও তোমার উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন, তোমরাই ইহুদি ও খৃস্টানদের পূর্বে, (অর্থাৎ তাদের সাপ্তাহিক ঈদের পূর্বদিন তোমাদের ঈদের দিন) তাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ প্রার্থনা করবে না, যা তিনি তাকে দিবেন না। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ এ কালো ফোঁটা কি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে কিয়ামত জুমার দিন কায়েম হবে, আমরা একে মাযিদ বলি। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়াওমুল মাযিদ কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ জান্নাতে প্রশস্ত ময়দান তৈরি করেছেন, সেখানে তিনি সাদা মিশকের স্তূপ রেখেছেন, যখন জুমার দিন হয় আল্লাহ সেখানে অবতরণ করবেন, সেখানে নবীদের জন্য স্বর্ণের মিম্বার রাখা হয়, আর শহীদদের জন্য মুক্তোর চেয়ার এবং (জান্নাতের) প্রাসাদসমূহ থেকে ‘হূরুল ঈন’ বা ডাগর নয়না হূর অবতরণ করে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ-গান করবে। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ আমার বান্দাদের কাপড় পরিধান করাও, তাদের কাপড় পরিধান করানো হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের খাদ্য দাও, তাদের খাদ্য দেয়া হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের পান করাও, তাদের পান করানো হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের সুগন্ধি দাও, তাদের সুগন্ধি দেয়া হবে। অতঃপর বলবেনঃ তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব তোমার সন্তুষ্টি। তিনি বলেনঃ তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছি, অতঃপর তাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা যাবে ও ‘হূরল ঈন’ প্রাসাদসমূহে প্রবেশ করবে যা সবুজ মণি-মুক্তা ও লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি”। [আবু ইয়ালা]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯১
عَنْ ابْنِ عُمَرَ -رضي الله عنهما- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَنْ سَلَفَ مِنْ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ, أُوتِيَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ التَّوْرَاةَ فَعَمِلُوا بِهَا حَتَّى انْتَصَفَ النَّهَارُ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا، ثُمَّ أُوتِيَ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ الْإِنْجِيلَ فَعَمِلُوا بِهِ حَتَّى صُلِّيَتْ الْعَصْرُ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا، ثُمَّ أُوتِيتُمْ الْقُرْآنَ فَعَمِلْتُمْ بِهِ حَتَّى غَرَبَتْ الشَّمْسُ فَأُعْطِيتُمْ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ، فَقَالَ: أَهْلُ الْكِتَابِ هَؤُلَاءِ أَقَلُّ مِنَّا عَمَلاً وَأَكْثَرُ أَجْرًا، قَالَ اللَّهُ: هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ حَقِّكُمْ شَيْئًا؟ قَالُوا: لَا، قَالَ: فَهُوَ فَضْلِي أُوتِيهِ مَنْ أَشَاءُ » . ( خ ) صحيح

ইব্‌ন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বের উম্মতের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হচ্ছে আসর সালাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আহলে তাওরাতকে তাওরাত প্রদান করা হয়েছে, তারা তার ওপর দিনের অর্ধেক আমল করে অতঃপর অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, তাই তাদেরকে এক কিরাত [১] এক কিরাত দেয়া হয়েছে। অতঃপর আহলে ইঞ্জিলকে ইঞ্জিল দেয়া হয়েছে, তারা তার ওপর আমল করেছে আসর সালাত পর্যন্ত, অতঃপর তারা অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, তাই তাদেরকে এক কিরাত এক কিরাত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তোমাদেরকে কুরআন দেয়া হয়েছে, তোমরা তার ওপর আমল করেছ সূর্যাস্ত পর্যন্ত, তাতেই তোমাদেরকে দুই কিরাত দুই কিরাত প্রদান করা হয়েছে। কিতাবিরা বললঃ তারা আমাদের তুলনায় আমলে কম, কিন্তু সওয়াবে অধিক। আল্লাহ বললেনঃ আমি কি তোমাদের হক থেকে সামান্য বঞ্চিত করেছি? তারা বললঃ না, তিনি বললেনঃ এটা আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে চাই দান করি”। [বুখারি]

[১] দীনার মুদ্রা মানের ক্ষুদ্র অংশকে কিরাত বলা হয়। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯২
عَنْ ثَوْبَانَ-رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ اللَّهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا، وَإِنَّ أُمَّتِي سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِيَ لِي مِنْهَا، وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ، وَإِنِّي سَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ، وَإِنَّ رَبِّي قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ، وَإِنِّي أَعْطَيْتُكَ لِأُمَّتِكَ أَنْ لَا أُهْلِكَهُمْ بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا أُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ يَسْتَبِيحُ بَيْضَتَهُمْ وَلَوْ اجْتَمَعَ عَلَيْهِمْ مَنْ بِأَقْطَارِهَا -أَوْ قَالَ: مَنْ بَيْنَ أَقْطَارِهَا- حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا وَيَسْبِي بَعْضُهُمْ بَعْضًا ». (م) صحيح

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য জমিন ঘুচিয়ে দিলেন ফলে আমি তার পূর্ব-পশ্চিম দেখেছি, নিশ্চয় আমার উম্মতের রাজত্ব পৌঁছবে যতটুকু আমার সামনে পেশ করা হয়েছে। আমাকে লাল ও সাদা দু’টি ভাণ্ডার [১] প্রদান করা হয়েছে, আমি আমার রবের নিকট আমার উম্মতের জন্য প্রার্থনা করেছি যেন, তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে ধ্বংস করা না হয়, যেন তাদের ওপর তাদের ব্যতীত কোন দুশমন চাপিয়ে দেয়া না হয়, যে তাদের সমূলে ধ্বংস করবে। আমার রব আমাকে বলেছেনঃ হে মুহাম্মদ আমি যখন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, তা প্রত্যাখ্যান করা হয় না, আমি তোমার উম্মতের জন্য তোমাকে প্রদান করলাম যে, তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দ্বারা ধ্বংস করব না। তাদের ওপর তাদের ব্যতীত কোন দুশমন চাপিয়ে দেব না যারা তাদের সমূলে ধ্বংস করবে, যদিও দুনিয়ার প্রান্ত থেকে এসে একত্র হয়, অথবা বলেছেনঃ দিগন্তের মধ্য থেকে এসে, তবে তারা একে অপরকে ধ্বংস করবে, একে অপরকে বন্দি করবে”। [মুসলিম]

[১] অর্থাৎ স্বর্ণ ও রৌপ্য। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৩
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ -رضي الله عنهما- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم تَلَا قَوْلَ اللَّهِ -عَزَّ وَجَلَّ- فِي إِبْرَاهِيمَ: ﴿رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضۡلَلۡنَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُۥ مِنِّيۖ﴾ الْآيَةَ، وَقَالَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام: ﴿إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨﴾، فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: «اللَّهُمَّ أُمَّتِي أُمَّتِي» وَبَكَى، فَقَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: «يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّدٍ -وَرَبُّكَ أَعْلَمُ- فَسَلْهُ مَا يُبْكِيكَ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام فَسَأَلَهُ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمَا قَالَ: وَهُوَ أَعْلَمُ, فَقَالَ اللَّهُ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّدٍ فَقُلْ: إِنَّا سَنُرْضِيكَ فِي أُمَّتِكَ وَلَا نَسُوءُكَ» . (م) صحيح

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহর এ বাণী তিলাওয়াত করেনঃ
﴿رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضۡلَلۡنَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُۥ مِنِّيۖ ٣٦﴾ [ابراهيمঃ ٣٦]
“হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে ‎পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ ‎করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত” (সূরা ইবরাহিমঃ৩৬) ‎ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেনঃ
﴿ إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨ ﴾ [المائ‍دةঃ ١١٨]
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন ‎তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে ‎যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি ‎পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” (সূরা মায়েদাঃ১১৮) অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ আমর উম্মত, আমার উম্মত” এবং ক্রন্দন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “হে জিবরিল মুহাম্মদের নিকট যাও, -নিশ্চয় তোমার রব অধিক জ্ঞাত,- তাকে জিজ্ঞাসা কর কি জন্য কাঁদ? জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তিনিই ভাল জানেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে জিবরিল মুহাম্মদের নিকট যাও, তাকে বলঃ নিশ্চয় আমি তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করব, তোমাকে অসন্তুষ্ট করব না”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৪
عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : ... فذكر حديث المعراج وفيه: « ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَيَّ خَمْسُونَ صَلَاةً فَأَقْبَلْتُ حَتَّى جِئْتُ مُوسَى، فَقَالَ: مَا صَنَعْتَ، قُلْتُ: فُرِضَتْ عَلَيَّ خَمْسُونَ صَلَاةً، قَالَ: أَنَا أَعْلَمُ بِالنَّاسِ مِنْكَ عَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ، وَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ، فَرَجَعْتُ فَسَأَلْتُهُ فَجَعَلَهَا أَرْبَعِينَ ثُمَّ مِثْلَهُ، ثُمَّ ثَلَاثِينَ ثُمَّ مِثْلَهُ فَجَعَلَ عِشْرِينَ، ثُمَّ مِثْلَهُ فَجَعَلَ عَشْرًا، فَأَتَيْتُ مُوسَى فَقَالَ: مِثْلَهُ فَجَعَلَهَا خَمْسًا، فَأَتَيْتُ مُوسَى فَقَالَ: مَا صَنَعْتَ؟ قُلْتُ: جَعَلَهَا خَمْسًا، فَقَالَ: مِثْلَهُ قُلْتُ سَلَّمْتُ بِخَيْرٍ فَنُودِيَ: إِنِّي قَدْ أَمْضَيْتُ فَرِيضَتِي وَخَفَّفْتُ عَنْ عِبَادِي وَأَجْزِي الْحَسَنَةَ عَشْرًا» . ( خ, م ) صحيح

মালিক ইব্‌ন সা‘সা‘ থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ... এখানে তিনি মেরাজের হাদিস বর্ণনা করেন, তাতে রয়েছে, “অতঃপর আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়, অতঃপর আমি এগিয়ে মুসা পর্যন্ত আসি, তিনি বলেনঃ কি করেছ? আমি বললামঃ আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বলেনঃ মানুষ সম্পর্কে তোমার চেয়ে আমি বেশী জানি, আমি বনি ইসরাইলকে কঠিনভাবে পরীক্ষা করেছি, তোমার উম্মত পারবে না, ফিরে যাও তোমার রবকে বল। আমি ফিরে যাই, অতঃপর তাকে বলি, তিনি তা চল্লিশ ওয়াক্ত করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে ত্রিশ করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে বিশ করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে দশ করে দেন, অতঃপর মুসার নিকট আসি, তিনি অনুরূপ বলেন, ফলে তা পাঁচ করে দেয়া হয়। অতঃপর মুসার নিকট আসি, তিনি বলেনঃ কি করেছ? আমি বললামঃ পাঁচ ওয়াক্ত করে দিয়েছেন, তিনি অনুরূপ বলেন। আমি বললামঃ আমি সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করেছি। অতঃপর ঘোষণা দেয়া হয়ঃ নিশ্চয় আমি আমার ফরয বাস্তবায়ন করেছি, আমার বান্দাদের থেকে হালকা করেছি, আমি এক নেকির প্রতিদান দিব দশ”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৫
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: " عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ بِالْمَوْسِمِ، فَرَأَيْتُ أُمَّتِي، فَأَعْجَبَتْنِي كَثْرَتُهُمْ، وَهَيْئَتُهُمْ، قَدْ مَلَئُوا السَّهْلَ وَالْجَبَلَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَرَضِيتَ؟ قُلْتُ: نَعَمْ أَيْ رَبِّ، قَالَ: وَمَعَ هَؤُلاءِ سَبْعُونَ أَلْفًا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ، الَّذِينَ لا يَسْتَرْقُونَ، وَلا يَكْتَوُونَ، وَلا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ "، فَقَالَ عُكَّاشَةُ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، قَالَ: " اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ مِنْهُمْ "، ثُمَّ قَالَ رَجُلٌ آخَرُ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، قَالَ: " سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ " ( حم, حب ) صحيح

ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “(হজের [১]) মৌসুমে সকল উম্মত আমার সামনে পেশ করা হয়েছে, ফলে আমি আমার উম্মত দেখেছি, তাদের আধিক্য ও হালত আমাকে খুশি করেছে, তারা সমতল ও পাহাড় সর্বত্র পূর্ণ ছিল। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ তুমি কি সন্তুষ্ট হয়েছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ, হে রব। তিনি বললেনঃ তাদের সাথে শত্তুর হাজার বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে, যারা ঝাঁড়-ফুঁক চায় না, জ্বলন্ত লোহার সেক দেয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করে না এবং অশুভ লক্ষণ নেয় না, বরং তারা তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে। উক্কাশা বলেনঃ দো‘আ করেন যেন আল্লাহ আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন”। অতঃপর অপর ব্যক্তি বলেঃ আমার জন্য দো‘আ করুন যেন আল্লাহ আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন, তিনি বলেনঃ “উক্কাশা তোমাকে অতিক্রম করে গেছে”। [আহমদ, ইব্‌ন হিব্বান]

[১] ইমাম বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে তা স্পষ্ট করা হয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৬
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ -رضي الله عنهما- قَالَ: « قَالَتْ قُرَيْشٌ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : ادْعُ لَنَا رَبَّكَ أَنْ يَجْعَلَ لَنَا الصَّفَا ذَهَبًا وَنُؤْمِنُ بِكَ، قَالَ: وَتَفْعَلُونَ؟ قَالُوا نَعَمْ. قَالَ: فَدَعَا فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ رَبَّكَ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ، وَيَقُولُ: إِنْ شِئْتَ أَصْبَحَ لَهُمْ الصَّفَا ذَهَبًا، فَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ مِنْهُمْ عَذَّبْتُهُ عَذَابًا لَا أُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِنْ الْعَالَمِينَ، وَإِنْ شِئْتَ فَتَحْتُ لَهُمْ بَابَ التَّوْبَةِ وَالرَّحْمَةِ، قَالَ: بَلْ بَابُ التَّوْبَةِ وَالرَّحْمَةِ » . ( حم ) صحيح

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “কুরাইশরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বললঃ তুমি তোমার রবের নিকট দো‘আ কর যেন ‘সাফা’কে আমাদের জন্য স্বর্ণ বানিয়ে দেন, তাহলে আমরা তোমার ওপর ঈমান আনব। তিনি বললেনঃ তোমরা তাই করবে? তারা বললঃ হ্যাঁ। ইব্‌ন আব্বাস বলেনঃ অতঃপর তিনি দো‘আ করেন, ফলে তার নিকট জিবরিল আগমন করেন ও বলেনঃ তোমার রব তোমাকে সালাম করেছেন, তিনি বলছেনঃ যদি তুমি চাও তাহলে ‘সাফা’কে তাদের জন্য স্বর্ণ বানিয়ে দিব, অতঃপর যে কুফরি করবে, তাকে আমি এমন আযাব দিব যা দুনিয়ার কাউকে দিব না। যদি চাও আমি তাদের জন্য তওবা ও রহমতের দরজা খুলে দিব। তিনি বলেনঃ বরং তওবা ও রহমতের দরজা”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৭
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: فَقَدَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةً أَصْحَابُهُ، وَكَانُوا إِذَا نَزَلُوا أَنْزَلُوهُ أَوْسَطَهُمْ فَفَزِعُوا، وَظَنُّوا أَنَّ اللَّهَ -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- اخْتَارَ لَهُ أَصْحَابًا غَيْرَهُمْ، فَإِذَا هُمْ بِخَيَالِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَكَبَّرُوا حِينَ رَأَوْهُ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَشْفَقْنَا أَنْ يَكُونَ اللَّهُ -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- اخْتَارَ لَكَ أَصْحَابًا غَيْرَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «لَا، بَلْ أَنْتُمْ أَصْحَابِي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى أَيْقَظَنِي فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي لَمْ أَبْعَثْ نَبِيًّا وَلَا رَسُولاً إِلَّا وَقَدْ سَأَلَنِي مَسْأَلَةً أَعْطَيْتُهَا إِيَّاهُ فَاسْأَلْ يَا مُحَمَّدُ تُعْطَ. فَقُلْتُ: مَسْأَلَتِي شَفَاعَةٌ لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ» فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَمَا الشَّفَاعَةُ؟ قَالَ: «أَقُولُ: يَا رَبِّ شَفَاعَتِي الَّتِي اخْتَبَأْتُ عِنْدَكَ فَيَقُولُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: نَعَمْ فَيُخْرِجُ رَبِّي -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- بَقِيَّةَ أُمَّتِي مِنْ النَّارِ فَيَنْبِذُهُمْ فِي الْجَنَّةِ» (حم) حسن

উবাদাহ ইব্‌ন সামেত থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “কোন এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের সাথীগণ তাকে হারিয়ে ফেলেন, সাধারণত তারা কোথাও অবতরণ করলে তাকে তাদের মাঝে রাখতেন, তাই তারা চিন্তিত হল, তারা ধারণা করল আল্লাহ তার জন্য না তাদের ব্যতীত অন্য সম্প্রদায় মনোনীত করলেন! এভাবেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নিয়ে চিন্তা করতে লাগল, হঠাৎ তাকে দেখে তাকবীর বলে উঠল, তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে, আল্লাহ না আপনার জন্য আমাদের ব্যতীত অন্যদের মনোনীত করেন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, বরং তোমরা আমার দুনিয়া ও আখেরাতের সাথী। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জাগ্রত করে বলেনঃ হে মুহাম্মদ, আমি এমন কোন নবী ও রাসূল প্রেরণ করি নি যে আমার নিকট একটি বস্তু প্রার্থনা করেছে আমি তাকে দেই নি। হে মুহাম্মদ, তুমি চাও, দেয়া হবে। আমি বললামঃ আমার চাওয়া হচ্ছে কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের জন্য সুপারিশ করা”। আবু বকর বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল সুপারিশ কি? তিনি বললেনঃ “আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার সুপারিশ চাই যা আপনার নিকট আমি গোপনে জমা রেখেছি। আল্লাহ বলবেনঃ হ্যাঁ। অতঃপর আমার রব জাহান্নাম থেকে আমার অবশিষ্ট উম্মত বের করবেন, অতঃপর তাদেরকে জান্নাতে নিক্ষেপ করবেন”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৫০. অধ্যায়ঃ
বদরি সাহাবিদের ফযিলত
৯৮
عَنْ عَلِيٍّ ( قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا مَرْثَدٍ الْغَنَوِيَّ وَالزُّبَيْرَ بْنَ الْعَوَّامِ وَكُلُّنَا فَارِسٌ، قَالَ: « انْطَلِقُوا حَتَّى تَأْتُوا رَوْضَةَ خَاخٍ فَإِنَّ بِهَا امْرَأَةً مِنْ الْمُشْرِكِينَ مَعَهَا صَحِيفَةٌ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِي بَلْتَعَةَ إِلَى الْمُشْرِكِينَ » فَأَدْرَكْنَاهَا تَسِيرُ عَلَى بَعِيرٍ لَهَا؛ حَيْثُ قَالَ لنا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْنَا: الْكِتَابُ، فَقَالَتْ: مَا معنا كِتَابٌ، فَأَنَخْنَاهَا فَالْتَمَسْنَا فَلَمْ نَرَ كِتَابًا، فَقُلْنَا: مَا كَذَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، لَتُخْرِجِنَّ الْكِتَابَ أَوْ لَنُجَرِّدَنَّكِ فَلَمَّا رَأَتْ الْجِدَّ أَهْوَتْ إِلَى حُجْزَتِهَا -وَهِيَ مُحْتَجِزَةٌ بِكِسَاءٍ- فَأَخْرَجَتْهُ فَانْطَلَقْنَا بِهَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ خَانَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ فَدَعْنِي فَلِأَضْرِبَ عُنُقَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ؟» قَالَ حَاطِبٌ: وَاللَّهِ مَا بِي أَنْ لَا أَكُونَ مُؤْمِنًا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم ، أَرَدْتُ أَنْ يَكُونَ لِي عِنْدَ الْقَوْمِ يَدٌ يَدْفَعُ اللَّهُ بِهَا عَنْ أَهْلِي وَمَالِي، وَلَيْسَ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِكَ إِلَّا لَهُ هُنَاكَ مِنْ عَشِيرَتِهِ مَنْ يَدْفَعُ اللَّهُ بِهِ عَنْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : « صَدَقَ وَلَا تَقُولُوا لَهُ إِلَّا خَيْرًا » , فَقَالَ عُمَرُ: إِنَّهُ قَدْ خَانَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ فَدَعْنِي فَلِأَضْرِبَ عُنُقَهُ. فَقَالَ: «أَلَيْسَ مِنْ أَهْلِ بَدْرٍ، فَقَالَ: لَعَلَّ اللَّهَ اطَّلَعَ على أَهْلِ بَدْرٍ، فَقَالَ: اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ وَجَبَتْ لَكُمْ الْجَنَّةُ -أَوْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ-». فَدَمَعَتْ عَيْنَا عُمَرَ وَقَالَ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . ( خ, م, د ) صحيح

আলি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু মুরসিদ গনভি, যুবায়ের ও আমাকে প্রেরণ করেন, আমরা সবাই ছিলাম ঘোড় সওয়ার, তিনি বলেনঃ “তোমরা যাও, ‘রওদাতা খাখ’ এ পৌঁছ, সেখানে এক মুশরিক নারী রয়েছে, তার সাথে হাতেব ইব্‌ন আবি বালতা‘আর পক্ষ থেকে মুশরিকদের প্রতি লেখা চিঠি আছে”। আমরা তাকে সেখানেই পেলাম যার কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন, সে উঠে চড়ে যাচ্ছিল, আমরা বললামঃ চিঠি, সে বললঃ আমার সাথে চিঠি নেই। আমরা তাকে নামিয়ে তালাশ করলাম কিন্তু কোন চিঠি পেলাম না। আমরা বললামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিথ্যা বলেন নি, তুমি অবশ্যই চিঠি বের করবে অথবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করব, যখন সে পীড়াপীড়ি দেখল, তার কোমরের ফিতার দিকে নজর দিল, -চিঠিটি কাপড়ে মোড়ানো ছিল,- অতঃপর সে তা বের করল, আমরা চিঠি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ছুটলাম। অতঃপর ওমর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল সে আল্লাহ, রাসূল ও মুমিনদের সাথে খিয়ানত করেছে, আমাকে ছাড়ুন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হাতেবকে) বললেনঃ “যা করেছ কেন করেছ?” হাতেব বললঃ আল্লাহর কসম, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বেঈমান হওয়ার কোন কারণ নেই, আমি চেয়েছি তাদের নিকট আমার একটা হাত থাক, যার বিনিময়ে আল্লাহ আমার পরিবার ও সম্পদের সুরক্ষা দিবেন, আপনার সাথীদের এমন কেউ নেই যার বংশের কোন লোক সেখানে নেই, যার দ্বারা আল্লাহ তার পরিবার ও সম্পদ রক্ষা করেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সে সত্য বলেছে, তার ব্যাপারে ভালো ব্যতীত মন্দ বল না”। ওমর বললেনঃ সে আল্লাহ, রাসূল ও মুমিনদের খিয়ানত করেছে, আমাকে অনুমতি দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সে কি বদরি নয়? অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ বদরিদের ব্যাপারে অবগত হয়েছেন, অতঃপর বলেছেনঃ তোমরা যা ইচ্ছা কর, তোমাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব, অথবা তোমাদের আমি ক্ষমা করে দিয়েছি”। অতঃপর ওমরের দু’চোখ অশ্রু সিক্ত হয়ে গেল, তিনি বলেনঃ আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জানেন। [বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫১. অধ্যায়ঃ
সালাত ফরজ হওয়া ও মেরাজের হাদিস
৯৯
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ( أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ، قَالَ: فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ قَالَ فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِها الْأَنْبِيَاءُ، قَالَ: ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ خَرَجْتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ -عَلَيْهِ السَّلَام- بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ، وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ فَقَالَ جِبْرِيلُ: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ » ... فذكر الحديث وفيه: « فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- وَبَيْنَ مُوسَى -عَلَيْهِ السَّلَام- حَتَّى قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ صَلَاةٍ عَشْرٌ فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلَاةً، وَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا، وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ شَيْئًا فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ سَيِّئَةً وَاحِدَةً، قَالَ: فَنَزَلْتُ حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى مُوسَى صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : فَقُلْتُ قَدْ رَجَعْتُ إِلَى رَبِّي حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ مِنْهُ » . ( م, خ ) صحيح
وفي حديث أبي ذر ( عن النبي صلى الله عليه وسلم أن الله -عز وجل- قال: «هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُونَ لا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ » . ( خ, م ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা, গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে তার পা রাখে, তিনি বলেনঃ আমি তাতে সওয়ার হলাম, অবশেষে আমাকে বায়তুল মাকদিস নিয়ে আসা হল, তিনি বলেনঃ আমি তাকে সে খুঁটির সাথে বাঁধলাম যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেনঃ অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করি, তাতে দু’রাকাত সালাত আদায় করি, অতঃপর বের হই। অতঃপর জিবরিল আমার নিকট মদের ও দুধের পাত্র নিয়ে আসেন, আমি দুধের পাত্র গ্রহণ করি, জিবরিল আমাকে বলেনঃ তুমি ফিতরাত (স্বভাব) গ্রহণ করেছ, অতঃপর আমাদের নিয়ে আসমানে চড়েন ...”। তিনি হাদিস উল্লেখ করেন, তাতে রয়েছেঃ “আমি আমার রব ও মুসা আলাইহিস সালামের মাঝে যাওয়া-আসা করতে ছিলাম, অবশেষে তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মদ, প্রতি রাত-দিনে এ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, প্রত্যেক সালাতের জন্য দশ, এভাবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। যে নেক কাজ করার ইচ্ছা করল কিন্তু তা করেনি, আমি তার জন্য একটি নেকি লেখি, যদি সে তা করে তার জন্য দশটি লেখা হয়। যে পাপ করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করে নি, তার জন্য কিছু লেখা হয় না, যদি সে তা করে তবে তার জন্য একটি পাপ লেখা হয়। তিনি বলেনঃ অতঃপর আমি অবতরণ করে মুসা আলাইহিস সালামের নিকট পৌঁছলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম, তিনি আমাকে বললেনঃ তোমার রবের নিকট ফিরে যাও, তার নিকট হ্রাসের দরখাস্ত কর, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি বললাম আমি আমার রবের নিকট বারবার গিয়েছি এখন লজ্জা করছি”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদীসটি সহিহ।

আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “এ হচ্ছে পাঁচ, অথচ তা পঞ্চাশ [১], আমার নিকট কথার (সিদ্ধান্তের) কোন পরিবর্তন নেই”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদীসটি সহিহ। অর্থাৎ কর্মে পাঁচ কিন্তু সাওয়াবে পঞ্চাশ।

[১] কার্যত পাঁচ ওয়াক্ত, কিন্তু সওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তের।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫২. অধ্যায়ঃ
আরাফার দিনের ফযিলত ও হাজিদের নিয়ে আল্লাহর গর্ব করা
১০০
قَالَتْ عَائِشَةُ -رضى الله عنها- إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنْ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمْ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُولُ: مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ » .( م ) صحيح

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আরাফার দিন ব্যতীত কোন দিন নেই যেখানে আল্লাহ তা‘আলা অধিক বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন। তাতে তিনি নিকটবর্তী হন অতঃপর ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন ও বলেনঃ তারা কি চায়?” [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১০১
عن جابر ( قال: قال رَسُوْلُ الله صلى الله عليه وسلم : « ما مِنْ أيامٍ عِنْدَ الله أَفْضَل مِنْ عَشْرِ ذِي الحِجَة»، قَال: فَقَالَ رَجُلٌ: يا رَسُولُ الله هُنّ أَفْضَلُ أمْ عَدَدَهُنَّ جِهَادًا في سَبِيلِ الله؟ قال: «هُنَّ أَفْضَل مِنْ عَدَدُهْنَّ جِهادًا في سَبِيلِ الله، ومَاَ مِنْ يَوْم أفْضَلُ عِنْد الله مِنْ يَوم عَرَفةَ: يَنْزِلُ الله -تَبَارْكَ وتَعَالى- إلى السْمَاءِ الدُّنيا فَيُباهي بِأهْلِ الأرض أهَلْ السْمَاءِ، فيقول: انْظُروا إلى عِبَادِي جَاءوا شُعْثًا غُبْرًا حَاجِين جَاءْوا مِنْ كُلِ فجٍّ عَمِيقْ يَرجُونَ رَحْمَتي ولم يَروا عَذَابي، فَلَم يُرَ يومٌ أكثر عتيقًا مِنْ النَّار مِنْ يَوم عَرَفْة» . (حب) حسن لغيره

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যিলহজ মাসের দশ দিন থেকে উত্তম আল্লাহর নিকট কোন দিন নেই”। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল, এ দিনগুলোই উত্তম, না এ দিনগুলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদসহ উত্তম? তিনি বললেনঃ “জিহাদ ছাড়াই এগুলো উত্তম। আল্লাহর নিকট আরাফার দিন থেকে উত্তম কোন দিন নেই, আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন অতঃপর জমিনে বাসকারীদের নিয়ে আসমানে বাসকারীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেনঃ আমার বান্দাদের দেখ, তারা হজ্জের জন্য এলোমেলো চুল ও ধূলিময় অবস্থায় দূর-দিগন্ত থেকে এসেছে। তারা আমার রহমত আশা করে, অথচ তারা আমার আযাব দেখে নি। সুতরাং এমন কোনো দিন দেখা যায় না যাতে আরাফার দিনের তুলনায় জাহান্নাম থেকে অধিক মুক্তি পায়”। [ইব্‌ন হিব্বান]

হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি

১০২
عَنْ أبي هريرة ( أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إِنَّ اللَّهَ يُبَاهِي بِأَهْل عَرَفَاتْ مَلَائِكَة السْمَاءِ فَيَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي جَاَءُونِي شُعْثًا غُبْرًا» . ( حب ) صحيح لغيره

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আরাফার লোকদের নিয়ে আসমানের ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, তিনি বলেনঃ আমার বান্দাদের দেখ তারা এলোমেলো চুল ও ধূলিময় অবস্থায় আমার কাছে এসেছে”। [ইব্‌ন হিব্বান]

হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

৫৩. অধ্যায়ঃ
সিয়ামের ফযিলত
১০৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( أنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «قَاَلَ اللَّهُ: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلَّا الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ». (خ, م) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ সিয়াম ব্যতীত বনি আদমের প্রত্যেক আমলই তার জন্য, কারণ তা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫৪. অধ্যায়ঃ
সন্তান মারা যাওয়ার পর সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করার ফজিলত
১০৪

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلَّا الْجَنَّةُ». ( خ ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার মুমিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদান নেই যখন আমি দুনিয়া থেকে তার কলিজার টুকরা [১] গ্রহণ করি, আর সে তার জন্য সওয়াবের আশা করে ধৈর্য ধারণ করে”। [বুখারি]

[১] কলিজার টুকরোর মত সন্তানকে মৃত্যু দিয়ে গ্রহণ করি। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১০৫
عَنْ شُرَحْبِيلُ ابْنُ شُفْعَةَ عَنْ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم؛ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «يُقَالُ لِلْوِلْدَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: ادْخُلُوا الْجَنَّةَ» قَالَ: «فَيَقُولُونَ: يَا رَبِّ حَتَّى يَدْخُلَ آبَاؤُنَا وَأُمَّهَاتُنَا» قَالَ: «فَيَأْتُونَ» قَالَ: فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: «مَا لِي أَرَاهُمْ مُحْبَنْطِئِينَ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ» قَالَ: «فَيَقُولُونَ: يَا رَبِّ آبَاؤُنَا وَأُمَّهَاتُنَا» قَالَ: «فَيَقُولُ: ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ». ( حم) حسن

শুরাহবিল ইব্‌ন শুফ‘আহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের এক সাহাবি সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেনঃ “কিয়ামতের দিন বাচ্চাদের বলা হবে জান্নাতে প্রবেশ কর”। তিনি বলেনঃ “তারা বলবেঃ যতক্ষণ না আমাদের পিতা-মাতা প্রবেশ না করেন”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তারা আসবে”। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলবেনঃ “কি ব্যাপার তাদেরকে কেন নারাজ দেখছি, জান্নাতে প্রবেশ কর”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তারা বলবেঃ হে আমার রব, আমাদের পিতা-মাতা”! তিনি বলেনঃ “অতঃপর তিনি বলবেনঃ “তোমরা ও তোমাদের পিতা-মাতা জান্নাতে প্রবেশ কর”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১০৬
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ سُبْحَانَه وتعالى: ابْنَ آدَمَ إِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسَبْتَ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُولَى لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُونَ الْجَنَّةِ». (جه) حسن

আবু উমামা থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম, যদি তুমি ধৈর্যধারণ কর ও প্রথম দুঃখের সময় অধৈর্য না হয়ে তাতে সওয়াবের আশা কর, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট হব না”। [ইব্‌ন মাজাহ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১০৭
عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللَّهُ لِمَلَائِكَتِهِ: قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ, فَيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ؟ فَيَقُولُون:َ نَعَمْ, فَيَقُولُ: مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ، فَيَقُولُ اللَّهُ: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَسَمُّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ» . ( ت, حب ) حسنه الشيخ الألباني

আবু মুসা আশ‘আরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বান্দার যখন সন্তান মারা যায় আল্লাহ তার ফেরেশতাদের বলেনঃ তোমরা আমার বান্দার সন্তান কব্জা করেছ? তারা বলেঃ হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ তোমরা আমার বান্দার অন্তরের নির্যাস গ্রহণ করেছ? তারা বলেঃ হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলেঃ আপনার প্রশংসা করেছে ও ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন পড়েছে। (অর্থাৎ আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার কাছেই ফেরৎ যাব এটা বলেছে।) অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর, তার নাম রাখ বায়তুল হামদ”। [তিরমিযি ও ইব্‌ন হিব্বান] হাদীসটি শায়খ আলবানি হাসান বলেছেন।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৫৫. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা ও উৎসাহ প্রদানের ফযিলত
১০৮
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «قَالَ اللَّهُ: أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ». ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে বনি আদম, তুমি খরচ কর, আমি তোমার ওপর খরচ করব”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১০৯
عَنْ عَدِيَّ بْنَ حَاتِمٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، يَقُولُ: " كُنْتُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فقَاَلَ: «...ثُمَّ لَيَقِفَنَّ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيْ اللَّهِ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ حِجَابٌ وَلَا تَرْجُمَانٌ يُتَرْجِمُ لَهُ، ثُمَّ لَيَقُولَنَّ لَهُ: أَلَمْ أُوتِكَ مَالاً؟ فَلَيَقُولَنَّ: بَلَى، ثُمَّ لَيَقُولَنَّ: أَلَمْ أُرْسِلْ إِلَيْكَ رَسُولاً؟ فَلَيَقُولَنَّ: بَلَى، فَيَنْظُرُ عَنْ يَمِينِهِ فَلَا يَرَى إِلَّا النَّارَ، ثُمَّ يَنْظُرُ عَنْ شِمَالِهِ فَلَا يَرَى إِلَّا النَّارَ فَلْيَتَّقِيَنَّ أَحَدُكُمْ النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ» . ( خ ) صحيح

আদি ইব্‌ন হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম, তিনি বলেনঃ “... অতঃপর তোমাদের প্রত্যেকে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হবে, তার ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকবে না, দুভাষীও না যে তার জন্য অনুবাদ করবে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি কি তোমাকে সম্পদ দেই নাই? সে বলবেঃ অবশ্যই, অতঃপর বলবেনঃ আমি কি তোমার নিকট রাসূল প্রেরণ করিনি? সে বলবেঃ অবশ্যই, সে তার ডানে তাকাবে আগুন ব্যতীত কিছুই দেখবে না, অতঃপর তার বামে তাকাবে আগুন ব্যতীত কিছুই দেখবে না, অতএব তোমাদের প্রত্যেকের উচিত জাহান্নামের আগুন থেকে সুরক্ষা গ্রহণ করা, যদিও সেটা একটি খেজুরের অংশের বিনিময়ে হয়, যদি তার সামর্থ্য না থাকে তাহলে সুন্দর বাক্য দ্বারা”। [বুখারি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১১০
عَنْ أَبِي وَاقِدٍ اللَّيْثِيِّ قَالَ: كُنَّا نَأْتِي النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ فَيُحَدِّثُنَا، فَقَالَ لَنَا ذَاتَ يَوْمٍ: «إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- قَالَ: إِنَّا أَنْزَلْنَا الْمَالَ لِإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَلَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادٍ لَأَحَبَّ أَنْ يَكُونَ إِلَيْهِ ثَانٍ، وَلَوْ كَانَ لَهُ وَادِيَانِ لَأَحَبَّ أَنْ يَكُونَ إِلَيْهِمَا ثَالِثٌ، وَلَا يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ، ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ». ( حم ) حسن

আবু ওয়াকেদ লাইসি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের নিকট আসতাম, যখন তার ওপর কিছু নাযিল হত তিনি আমাদের বলতেন, একদা তিনি আমাদের বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমি সম্পদ নাযিল করেছি সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করার জন্য, যদি বনি আদম একটি উপত্যকার মালিক হয়, সে পছন্দ করবে তার জন্য দ্বিতীয়টি হোক। যদি তার দু’টি উপত্যকা হয়, সে চাইবে তার জন্য তৃতীয়টি হোক। মাটি ব্যতীত কোন বস্তু বনি আদমের উদর পূর্ণ করবে না, অতঃপর যে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১১১
عَنْ بُسْرِ بْنِ جَحَّاشٍ الْقُرَشِيِّ -رضي الله عنه- قَالَ: بَزَقَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي كَفِّهِ، ثُمَّ وَضَعَ أُصْبُعَهُ السَّبَّابَةَ وَقَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: أَنَّى تُعْجِزُنِي ابْنَ آدَمَ، وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِنْ مِثْلِ هَذِهِ فَإِذَا بَلَغَتْ نَفْسُكَ هَذِهِ (وَأَشَارَ إِلَى حَلْقِه)ِ قُلْتَ: أَتَصَدَّقُ: وَأَنَّى أَوَانُ الصَّدَقَةِ». ( جه, حم ) حسن

বুসর ইব্‌ন জাহাশ আল-কুরাশি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাতের তালুতে থু থু ফেললেন, অতঃপর তাতে শাহাদাত আঙ্গুল রাখলেন ও বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে বনি আদম তুমি আমাকে কিভাবে অক্ষম করবে, অথচ আমি তোমাকে এরূপ বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছি, যখন তোমার রূহ এখানে পৌঁছে, (গলার দিকে ইশারা করলেন), বলঃ আমি সদকা করবঃ আর কখন সদকা করার সময়”! [ইব্‌ন মাজাহ ও আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৫৬. অধ্যায়ঃ
রাতে ওযু করার ফযিলত
১১২
عَنْ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ-رضي الله عنه- يَقُولُ: لَا أَقُولُ الْيَوْمَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا لَمْ يَقُلْ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَنْ كَذبَ عَلَيَّ متعمدًا فَلْيَتَبَوَّأْ بَيْتًا مِنْ جَهَنَّمَ» وَسَمِعْته يَقُولُ: «يَقُومُ الرجل من أمتي مِنْ اللَّيْلِ فَيُعَالِجُ نَفْسَهُ إِلَى الطَّهُورِ وَعَلَيْهِ عُقَد فَإِذَا وَضَّأَ يَدَيْهِ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، وَإِذَا وَضَّأَ وَجْهَهُ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، وَإِذَا مَسَحَ رَأْسَهُ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، وَإِذَا وَضَّأَ رِجْلَيْهِ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَيَقُولُ الله -عَزَّ وَجَلَّ- لِلَّذِينَ وَرَاءَ الْحِجَابِ: انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي هَذَا يُعَالِجُ نَفْسَهُ يَسْألُني، مَا سَأَلَنِي عَبْدِي هَذَا فَهُوَ لَهُ» ( حب, حم ) صحيح

উকবা ইব্‌ন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আজ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বলব না যা তিনি বলেননি, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “যে আমার ওপর স্বেচ্ছায় মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে ঘর বানিয়ে নেয়”। তাকে আরো বলতে শুনেছিঃ “আমার উম্মতের কোন ব্যক্তি রাতে উঠে, অতঃপর নিজেকে পবিত্রতার জন্য প্রস্তুত করে, তার ওপর থাকে অনেক গিরা, যখন সে দু’হাত ধৌত করে একটি গিরা খুলে যায়, যখন সে চেহারা ধৌত করে একটি গিরা খুলে যায়, যখন সে তার মাথা মাসেহ করে একটি গিরা খুলে যায়, যখন সে তার পা ধৌত করে একটি গিরা খুলে যায়। আল্লাহ তা‘আলা পর্দার আড়ালে অবস্থানকারীদের বলেনঃ আমার বান্দাকে দেখ, সে আমার নিকট প্রার্থনারত হয়ে নিজ নফসকে কষ্ট দিচ্ছে, আমার এ বান্দা যা চাইবে তা তার জন্যই”। [ইব্‌ন হিব্বান ও আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫৭. অধ্যায়ঃ
শেষ রাতে দো‘আ ও সালাত আদায়ের ফযিলত
১১৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَنْزِلُ رَبُّنَا -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ». (خ, م, ت, جه, ن ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমাদের রব প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তিনি বলেনঃ কে আমাকে আহ্বান করবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব, কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে আমি তাকে প্রদান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব”। [বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি, ইব্‌ন মাজাহ ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৫৮. অধ্যায়ঃ
দুই ব্যক্তিকে দেখে আমাদের রব আশ্চর্য হন
১১৪
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «عَجِبَ رَبُّنَا -عَزَّ وَجَلَّ- مِنْ رَجُلَيْنِ, رَجُلٍ ثَارَ عَنْ وِطَائِهِ وَلِحَافِهِ مِنْ بَيْنِ أَهْلِهِ وَحَيِّهِ إِلَى صَلَاتِهِ فَيَقُولُ رَبُّنَا: أَيَا مَلَائِكَتِي انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي ثَارَ مِنْ فِرَاشِهِ وَوِطَائِهِ وَمِنْ بَيْنِ حَيِّهِ وَأَهْلِهِ إِلَى صَلَاتِهِ؛ رَغْبَةً فِيمَا عِنْدِي وَشَفَقَةً مِمَّا عِنْدِي، وَرَجُلٍ غَزَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ -عَزَّ وَجَلَّ- فَانْهَزَمُوا فَعَلِمَ مَا عَلَيْهِ مِنْ الْفِرَارِ وَمَا لَهُ فِي الرُّجُوع،ِ فَرَجَعَ حَتَّى أُهَرِيقَ دَمُهُ؛ رَغْبَةً فِيمَا عِنْدِي وَشَفَقَةً مِمَّا عِنْدِي, فَيَقُولُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- لِمَلَائِكَتِهِ: انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي رَجَعَ رَغْبَةً فِيمَا عِنْدِي وَرَهْبَةً مِمَّا عِنْدِي حَتَّى أُهَرِيقَ دَمُهُ» . ( حم, د ) حسن

ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমাদের রব দুই ব্যক্তিকে দেখে আশ্চর্য হনঃ এক ব্যক্তি যে তার বিছানা ও লেপ ছেড়ে পরিবার ও প্রিয়জনদের থেকে ওঠে সালাতে দাঁড়াল, আমাদের রব বলেনঃ হে আমাদের ফেরেশতারা, আমার বান্দাকে দেখ বিছানা ও লেপ ছেড়ে পরিবার ও প্রিয়জনদের থেকে তার সালাতের জন্য ওঠেছে, আমার নিকট যা রয়েছে তার আশা ও আমার শাস্তির ভয়ে। অপর ব্যক্তি যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করল, তবে তারা পরাস্ত হল, সে মনে করল পলায়নে কি শাস্তি ও ফিরে যাওয়ায় কি পুরষ্কার, অতঃপর সে ফিরে গেল অবশেষে তার রক্ত ঝরানো হল, আমার নিকট যা রয়েছে তার আশা ও আমার শাস্তির ভয়ে, আল্লাহ তার ফেরেশতাদের বলেনঃ আমার বান্দাকে দেখ, আমার নিকট যা রয়েছে তার আশা ও আমার শাস্তির ভয়ে ফিরে এসেছে, অবশেষে তার রক্ত প্রবাহিত করা হল”। [আহমদ ও আবু দাউদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৫৯. অধ্যায়ঃ
নফল সালাতের ফযিলত
১১৫

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ صَلَاتُهُ فَإِنْ كَانَ أَكْمَلَهَا وَإِلَّا قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: انْظُرُوا لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ؛ فَإِنْ وُجِدَ لَهُ تَطَوُّعٌ قَالَ: أَكْمِلُوا بِهِ الْفَرِيضَةَ». (ن) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বান্দাকে যে বিষয়ে সর্বপ্রথম জবাবদিহি করা হবে তার সালাত, যদি সে তা পূর্ণ করে থাকে, অন্যথায় আল্লাহ বলবেনঃ আমার বান্দার নফল দেখ, যদি তার নফল পাওয়া যায়, বলবেনঃ এর দ্বারা ফরয পূর্ণ কর”। [নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬০. অধ্যায়ঃ
মুয়াজ্জিনের ফযিলত
১১৬
عن عقبة بن عامر -رضي الله عنه- قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: « يعجب ربكم من راعي غنم في رأس شظية بجبل يؤذن بالصلاة ويصلي فيقول الله عز وجل: انظروا إلى عبدي هذا يؤذن ويقيم الصلاة يخاف مني قد غفرت لعبدي وأدخلته الجنة» . (د, ن ) صحيح

উকবা ইব্‌ন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “তোমাদের রব পাহাড়ের চুড়ায় বকরির রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন, যে সালাতের আযান দেয় ও সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার এ বান্দাকে দেখ আযান দেয় ও সালাত কায়েম করে, আমাকে ভয় করে, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম”। [আবু দাউদ ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬১. অধ্যায়ঃ
আসর ও ফজর সালাতের ফযিলত
১১৭

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَال: «يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ، وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ، ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ -وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ- كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي؟ فَيَقُولُونَ: تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ». ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “পালাবদল করে রাত ও দিনের ফেরেশতাগণ তোমাদের নিকট আগমন করে এবং তারা ফজর ও আসর সালাতে একত্র হয়। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারীগণ ওপরে ওঠে, আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি তাদের চেয়ে বেশী জানেন, আমার বান্দাদের কিভাবে রেখে এসেছে? তারা বলেঃ আমরা তাদেরকে সালাত পড়া অবস্থায় রেখে এসেছি, যখন গিয়েছি তারা সালাত আদায় করছিল”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬২. অধ্যায়ঃ
মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত মসজিদে থাকার ফযিলত
১১৮
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو -رضي الله عنهما- قَالَ: صَلَّيْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَغْرِبَ فَرَجَعَ مَنْ رَجَعَ وَعَقَّبَ مَنْ عَقَّبَ فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُسْرِعًا قَدْ حَفَزَهُ النَّفَسُ وَقَدْ حَسَرَ عَنْ رُكْبَتَيْهِ فَقَالَ: «أَبْشِرُوا هَذَا رَبُّكُمْ قَدْ فَتَحَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ السَّمَاءِ يُبَاهِي بِكُمْ الْمَلَائِكَةَ يَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي قَدْ قَضَوْا فَرِيضَةً وَهُمْ يَنْتَظِرُونَ أُخْرَى».
( جه, حم ) صحيح

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মাগরিব আদায় করলাম, অতঃপর যারা ফিরে যাবার ফিরে গেল এবং যারা থাকার থাকল, পরক্ষণেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুত ফিরে আসলেন, তার নিশ্বাস জোরে পড়ছিল, তার হাঁটুর কাপড় উঠে যাচ্ছিল, তিনি বললেনঃ “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের রব আসমানের একটি দরজা খুলে তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করছেন, তিনি বলছেনঃ আমার বান্দাদের দেখ, তারা এক ফরয শেষ করে অপর ফরযের অপেক্ষা করছে”। [ইব্‌ন মাজাহ ও আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬৩. অধ্যায়ঃ
দিনের শুরুতে সুরক্ষা গ্রহণ করা
১১৯
عَنْ نُعَيْمِ بْنِ هَمَّارٍ الْغَطَفَانِيِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ لَا تَعْجِزْ عَنْ أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ أَكْفِكَ آخِرَهُ». ( حم, د, حب ) صحيح

নু‘আইম ইব্‌ন হাম্মার আল-গাতফানি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে বনি আদম দিনের শুরুতে চার রাকাত সালাত আদায়ে অপারগ হয়ো না, আমি দিন শেষে তোমার জন্য যথেষ্ট হব”। [আহমদ, আবু দাউদ ও ইব্‌ন হিব্বান]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬৪. অধ্যায়ঃ
জান্নাতের খাজানা
১২০
عن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنّ َرَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: " أَلا أُعَلِّمُكَ، أَوْ قَالَ: أَلا أَدُلُّكَ عَلَى كَلِمَةٍ مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ ؟، تَقُولُ: لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ، فَيَقُولُ اللَّهُ –عز وجل- : أَسْلَمَ عَبْدِي وَاسْتَسْلَمَ ". ( ك ) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাকে শিক্ষা দিব না, অথবা বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে আরশের নিচে জান্নাতের গুপ্তধন একটি কালিমার কথা বলব না? তুমি বলঃ لاَ حَوْلَ ولَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ (অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকাজ করার শক্তি ও অসৎ কাজ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই) আল্লাহ বলবেনঃ আমার বান্দা মেনে নিলো ও আনুগত্য করল”। [হাকেম]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৬৫. অধ্যায়ঃ
সন্তানের পিতা-মাতার জন্য ইস্তেগফার করার ফযিলত
১২১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِي الْجَنَّةِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَنَّى لِي هَذِهِ؟ فَيَقُولُ: بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ». ( حم ) إسناده حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নেক বান্দার মর্তবা জান্নাতে বুলন্দ করবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব এটা আমার জন্য কিভাবে হল? তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য তোমার সন্তানের ইস্তেগফারের কারণে”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৬৬. অধ্যায়ঃ
বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খানায় অংশ গ্রহণ করে
১২২
عن ابن عباس -رضي الله عنهما- عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «قال إبليس: يا رب, ليس أحد من خلقك إلا جعلت له رزقًا ومعيشة فما رزقي؟ قال: ما لم يذكر اسم الله عليه». ( أبو نعيم ) إسناده صحيح

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ইবলিস বলেছেঃ হে আমার রব, আপনার কোন মখলুক নেই যার রিযক ও জীবিকা নির্বাহ আপনি নির্ধারিত করেন নি, কিন্তু আমার রিযক কি? তিনি বললেনঃ যেসব খাদ্যে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না”। [আবু নু‘আইম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৬৭. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর সর্বপ্রথম মখলুক
১২৩
عَنْ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ ( قال: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ لَهُ: اكْتُبْ، قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ؟ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ». ( د, حم ) صحيح لغيره

উবাদাহ ইব্‌ন সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন কলম [১], তিনি বলেনঃ লেখ। সে বললঃ হে আমার রব, কি লিখব? তিনি বলেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের তাকদির লিখ”। [আবু দাউদ ও আহমদ] হাদীসটি সহিহ লি গায়রিহি।

[১] সর্বপ্রথম সৃষ্টি কি? তা নির্ধারণে কয়েকটি মত রয়েছে। এ হাদীস থেকে বাহ্যতঃ বোঝা যায় যে, কলম-ই প্রথম সৃষ্টি। অন্য হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, আরশ প্রথম সৃষ্টি। আবার কোনো কোনো হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, পানিই প্রথম সৃষ্টি। অধিকাংশ সত্যনিষ্ঠ আলেম আরশকেই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে মনে করে থাকেন। তারা অন্যান্য সৃষ্টি যেমন কলম ও পানি সেগুলোকে প্রাথমিক সৃষ্ট বিষয় বলে সামঞ্জস্য বিধান করে থাকেন। তবে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

৬৮. অধ্যায়ঃ
লেখা ও সাক্ষী রাখার সূচনা
১২৪
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَنَفَخَ فِيهِ الرُّوحَ عَطَسَ فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ، فَحَمِدَ اللَّهَ بِإِذْنِ الله، فَقَالَ لَهُ رَبُّهُ: يَرْحَمُكَ ربك يَا آدَمُ، اذْهَبْ إِلَى أُولَئِكَ الْمَلَائِكَةِ إِلَى مَلَإٍ مِنْهُمْ جُلُوسٍ فسلم عليهم, فقال: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، فقَالُوا: وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ: هَذِهِ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ بَنِيكَ بَيْنَهُمْ، وقَالَ اللَّهُ -جلا وعلا- وَيَدَاهُ مَقْبُوضَتَانِ: اخْتَرْ أَيَّهُمَا شِئْتَ قَالَ: اخْتَرْتُ يَمِينَ رَبِّي وَكِلْتَا يَدَيْ رَبِّي يَمِينٌ مُبَارَكَةٌ ثُمَّ بَسَطَهَا فَإِذَا فِيهَا آدَمُ وَذُرِّيَّتُهُ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ: مَا هَؤُلَاءِ؟ فَقَالَ: هَؤُلَاءِ ذُرِّيَّتُكَ فَإِذَا كُلُّ إِنْسَانٍ مَكْتُوبٌ عُمْرُهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ فَإِذَا فِيهِمْ رَجُلٌ أَضْوَؤُهُمْ -أَوْ مِنْ أَضْوَئِهِمْ لَمْ يُكْتَبْ لَهُ إلَّا أَربَعُونَ سَنَةٍ- قَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ دَاوُدُ وقَدْ كَتَبْتُ لَهُ عُمْرَ أَرْبَعِينَ سَنَة،ً قَالَ: أي رَبِّ زِدْهُ فِي عُمْرِهِ, قَالَ: ذَاكَ الَّذِي كَتَبْتُ لَهُ، قَالَ: أَيْ رَبِّ فَإِنِّي قَدْ جَعَلْتُ لَهُ مِنْ عُمْرِي سِتِّينَ سَنَةً قَالَ: أَنْتَ وَذَاكَ، أُسْكِنَ الْجَنَّةَ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ أُهْبِطَ مِنْهَا فَكَانَ آدَمُ يَعُدُّ لِنَفْسِهِ، قَالَ: فَأَتَاهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُ آدَمُ: قَدْ عَجَّلْتَ، قَدْ كُتِبَ لِي أَلْفُ سَنَةٍ؟ قَالَ: بَلَى وَلَكِنَّكَ قد جَعَلْتَ لِابْنِكِ دَاوُدَ منها سِتِّينَ سَنَةً، فَجَحَدَ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ، وَنَسِيَ فَنَسِيَتْ ذُرِّيَّتُهُ، قَالَ: فَمِنْ يَوْمِئِذٍ أُمِرَ بِالْكِتَابِ وَالشُّهُودِ» . ( حب, ك, عا ) صحيح لغيره

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করেন ও তার মধ্যে রূহ সঞ্চার করেন তখন সে হাঁচি দেয়। অতঃপর বলেঃ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর নির্দেশে সে আল্লাহর প্রশংসা করল, তার রব তাকে বললেনঃ হে আদম তোমার রব তোমাকে রহম করুন, ঐ ফেরেশতাদের বসে থাকা দলটির কাছে যাও, তাদেরকে সালাম কর। তিনি বললেনঃ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ তারা বললঃ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ অতঃপর তিনি তার রবের নিকট ফিরে আসেন, তিনি বলেনঃ এ হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের পরস্পর অভিবাদন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তখন তার দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিলঃ দু’টো থেকে যেটা ইচ্ছা গ্রহণ কর, তিনি বললেনঃ আমি আমার রবের ডান গ্রহণ করলাম, আমার রবের উভয় হাতই ডান ও বরকতপূর্ণ, অতঃপর তিনি তা প্রসারিত করলেন, তাতে ছিল আদম ও তার সন্তান। তিনি বললেনঃ হে আমার রব, এরা কারা? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তোমার সন্তান, সেখানে প্রত্যেক মানুষের বয়স তার চোখের সামনে লিখা ছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল, অথবা তাদের থেকে একজন অতি উজ্জ্বল ছিল, যার জন্য শুধু চল্লিশ বছর লিখা ছিল, তিনি বললেনঃ হে আমার রব এ কে? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তোমার সন্তান দাউদ, তার জন্য আমি চল্লিশ বছর লিখেছি। তিনি বললেনঃ হে আমার রব তার বয়স বৃদ্ধি করুন, তিনি বললেনঃ এটাই আমি তার জন্য লিখেছি। তিনি বললেনঃ হে আমার রব, আমি তার জন্য আমার বয়স থেকে ষাট বছর দান করলাম, তিনি বললেনঃ এটা তোমার ও তার বিষয়। আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ছিল তিনি জান্নাতে অবস্থান করেন, অতঃপর সেখান থেকে অবতরণ করানো হয়, এরপর থেকে তিনি নিজের বয়স হিসেব করতেন। রাসূল বলেনঃ তার নিকট মালাকুল মউত আসল, আদম তাকে বলেনঃ দ্রুত চলে এসেছ, আমার জন্য এক হাজার বছর লিখা হয়েছে। তিনি বললেন, অবশ্যই; কিন্তু তোমার ছেলে দাউদের জন্য তার থেকে ষাট বছর দান করেছ। আদম তা অস্বীকার করল। সে অস্বীকার করেছে তাই তার সন্তানও অস্বীকার করে, তিনি ভুলে গেছেন তাই তার সন্তানও ভুলে যায়। তিনি বলেনঃ সে দিন থেকে লিখা ও সাক্ষী রাখার নির্দেশ দেয়া হয়”। ইব্‌ন হিব্বান, হাকেম ও আবু আসেম] হাদীসটি সহিহ লি গায়রিহি।

হাদিসের মানঃ সহিহ লিগাইরিহি

৬৯. অধ্যায়ঃ
নবী আদমকে আল্লাহ যা বললেনঃ
১২৫
عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «لمَّا نَفَخَ الله في آدَمْ الرُوْح فَبَلَغَ الرُوحُ رَأْسَهُ عَطَسَ فَقَاَلَ: الحمدُ لله رَبِّ العَالَمِيْن. فَقَاَلَ له تَبَاركْ وتعالى: يَرْحَمُكَ الله». ( حب ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন আদমের মধ্যে রূহ সঞ্চার করেন, অতঃপর রূহ যখন তার মাথায় পৌঁছে তিনি হাঁচি দেন, তারপর বলেনঃ الحمدُ لله رَبِّ العَالَمِيْن আল্লাহ তাকে বলেনঃ يَرْحَمُكَ الله [ইব্‌ন হিব্বান] হাদীসটি সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭০. অধ্যায়ঃ
মুসলিমদের সালাম
১২৬
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ طُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، فَلَمَّا خَلَقَهُ قَالَ: اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ النَّفَرِ مِنْ الْمَلَائِكَةِ جُلُوسٌ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ؛ فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ, فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ, فَقَالُوا: السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَزَادُوهُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ فَلَمْ يَزَلْ الْخَلْقُ يَنْقُصُ بَعْدُ حَتَّى الْآنَ» .
( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত, তিনি তাকে সৃষ্টি করে বলেনঃ যাও সেখানে বসে থাকা ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর, খেয়াল করে শোন তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়, কারণ তা-ই হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের অভিবাদন। তিনি বললেনঃ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ তারা বললঃ السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ তারা অতিরিক্ত বলল। সুতরাং যে কেউ জান্নাতে যাবে সে আদমের আকৃতিতে যাবে, আর তারপর থেকে মানুষ ছোট হওয়া আরম্ভ করছে, এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদীসটি সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭১. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনা
১২৭

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ- يَعْنِي: اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى-: «لَا يَنْبَغِي لِعَبْدٍ لِي (و قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى: لِعَبْدِي) أَنْ يَقُولَ: أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى عَلَيْهِ السَّلَام» . ( م, خ )صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমার কোন বান্দার জন্য (বর্ণনাকারী ইব্‌ন মুসান্না বলেছেনঃ আমার বান্দার জন্য) এমন বলা সমীচীন নয়ঃ আমি ইউনুস ইব্‌ন মাত্তা আলাইহিস সালাম থেকে উত্তম [১] ”। [বুখারি ও মুসলিম]

[১] অর্থাৎ ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনা শুনে হয়ত কেউ মনে করতে পারে যে, ইউনুস আলাইহিস সালাম ধৈর্য ধারণ করতে পারেন নি, আমি তার থেকে উত্তম। এ জাতীয় কোনো কথা বলে নিজেকে নিয়ে অহংকার যেন কেউ না করে। কারণ, নবীগণ অন্যান্য সকল মানুষ থেকে উত্তম। তাদের সাথে আর কারও তুলনা চলে না। আর তাদের মান-মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলার তো কোনো সুযোগই নেই। সুতরাং কেউ যেন এটা বলে না বসে যে, সে ইউনুস আলাইহিস সালাম থেকে ভালো। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭২. অধ্যায়ঃ
মুসা ও খিযির আলাইহিমাস সালামের ঘটনা
১২৮
عَنْ سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ قَالَ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ إِنَّ نَوْفًا الْبَكَالِيَّ يَزْعُمُ أَنَّ مُوسَى صَاحِبَ الْخَضِرِ لَيْسَ هُوَ مُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنَّمَا هُوَ مُوسَى آخَرُ، فَقَالَ: كَذَبَ عَدُوُّ اللَّهِ، حَدَّثَنَا أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : «أَنَّ مُوسَى قَامَ خَطِيبًا فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ فَسُئِلَ أَيُّ النَّاسِ أَعْلَمُ؟ فَقَالَ: أَنَا», فَعَتَبَ اللَّهُ عَلَيْهِ إِذْ لَمْ يَرُدَّ الْعِلْمَ إِلَيْهِ فَقَالَ لَهُ: «بَلَى لِي عَبْدٌ بِمَجْمَعِ الْبَحْرَيْنِ هُوَ أَعْلَمُ مِنْك,َ قَالَ: "أَيْ رَبِّ وَمَنْ لِي بِهِ؟ -وَرُبَّمَا قَالَ سُفْيَانُ: أَيْ رَبِّ وَكَيْفَ لِي بِه؟ِ- قَالَ: تَأْخُذُ حُوتًا فَتَجْعَلُهُ فِي مِكْتَلٍ حَيْثُمَا فَقَدْتَ الْحُوتَ فَهُوَ ثَمَّ» .. فذكر الحديث. ( خ, م ) صحيح

সায়িদ ইব্‌ন জুবায়ের থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)কে বললাম ‘নাউফ আল-বাকালি’র ধারণা ‘খিদির’ এর সাথী ‘মুসা’ বনি ইসরাইলের ‘মুসা’ নয়, তিনি অন্য ‘মুসা’। তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাই ইব্‌ন কা‘ব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমাদেরকে বর্ণনা করেনঃ “একদা মুসা আলাইহিস সালাম বনি ইসরাইলে খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়ালে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কে সবচেয়ে বেশী জানে? তিনি বললেনঃ আমি”। এ জন্য আল্লাহ তাকে তিরস্কার করলেন, কারণ তিনি বেশী জানার জ্ঞান আল্লাহর নিকট সোপর্দ করেন নি। তাকে তিনি বললেনঃ “দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে, সে তোমার চেয়ে অধিক জানে। তিনি বললেনঃ হে আমার রব, তার নিকট পৌঁছার জন্য আমার কে আছে? অথবা সুফিয়ান বলেছেনঃ হে আমার রব, আমি কিভাবে তার কাছে পৌঁছব? তিনি বললেনঃ একটি মাছ নাও, অতঃপর তা পাত্রে রাখ, যেখানে মাছটি হারাবে সেখানেই সে...” অতঃপর পূর্ণ হাদিস উল্লেখ করেন। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭৩. অধ্যায়ঃ
মালাকুল মউতের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা
১২৯
عَنْ أبي هُرَيْرَةَ ( أنْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاَل: «جَاءَ مَلَكُ الْمَوْتِ إِلَى مُوسَى -عَلَيْهِ السَّلَام- فَقَالَ لَهُ: أَجِبْ رَبَّكَ, قَالَ: فَلَطَمَ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَام عَيْنَ مَلَكِ الْمَوْتِ فَفَقَأَهَا, قَالَ: فَرَجَعَ الْمَلَكُ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى فَقَالَ: إِنَّكَ أَرْسَلْتَنِي إِلَى عَبْدٍ لَكَ لَا يُرِيدُ الْمَوْتَ وَقَدْ فَقَأَ عَيْنِي, قَالَ: فَرَدَّ اللَّهُ إِلَيْهِ عَيْنَهُ وَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى عَبْدِي فَقُلْ: الْحَيَاةَ تُرِيدُ؟ فَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ الْحَيَاةَ فَضَعْ يَدَكَ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ فَمَا تَوَارَتْ يَدُكَ مِنْ شَعْرَةٍ فَإِنَّكَ تَعِيشُ بِهَا سَنَةً قَالَ: ثُمَّ مَهْ؟ قَالَ: ثُمَّ تَمُوتُ قَالَ: فَالْآنَ مِنْ قَرِيبٍ رَبِّ أَمِتْنِي مِنْ الْأَرْضِ الْمُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ». قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «وَاللَّهِ لَوْ أَنِّي عِنْدَهُ لَأَرَيْتُكُمْ قَبْرَهُ إِلَى جَانِبِ الطَّرِيقِ عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ». ( م, خ ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “মালাকুল মউত মুসা আলাইহিস সালামের নিকট এসে তাকে বলেনঃ আপনার রবের ডাকে সাড়া দিন। তিনি বলেনঃ অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম মালাকুল মউতকে থাপ্পড় মেরে তার চোখ উপড়ে ফেলেন। তিনি বলেনঃ অতঃপর মালাকুল মউত আল্লাহর নিকট ফিরে গেল এবং বললঃ আপনি আমাকে আপনার এমন বান্দার নিকট প্রেরণ করেছেন যে মরতে চায় না, সে আমার চোখ উপড়ে ফেলেছে, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার চোখ তাকে ফিরিয়ে দেন, আর বলেনঃ আমার বান্দার নিকট ফিরে যাও এবং বলঃ আপনি হায়াত চান? যদি আপনি হায়াত চান তাহলে ষাঁড়ের পিঠে হাত রাখুন, আপনার হাত যে পরিমাণ চুল ঢেকে নিবে তার সমান বছর আপনি জীবিত থাকবেন। তিনি বলেনঃ অতঃপর? মালাকুল মউত বললঃ অতঃপর মৃত্যু বরণ করবেন। তিনি বলেনঃ তাহলে এখনি দ্রুত কর। হে আমার রব, পবিত্র ভূমির সন্নিকটে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বে আমাকে মৃত্যু দান কর”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আল্লাহর শপথ আমি যদি তার নিকট হতাম, তাহলে রাস্তার পাশে লাল বালুর স্তূপের নিকট তার কবর দেখিয়ে দিতাম”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭৪. অধ্যায়ঃ
আইয়ূব আলাইহিস সালামের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ
১৩০
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «بَيْنَمَا أَيُّوبُ يَغْتَسِلُ عُرْيَانًا خَرَّ عَلَيْهِ رِجْلُ جَرَادٍ مِنْ ذَهَبٍ فَجَعَلَ يَحْثِي فِي ثَوْبِهِ فَنَادَاهُ رَبُّهُ: يَا أَيُّوبُ أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَى؟ قَالَ: بَلَى يَا رَبِّ وَلَكِنْ لَا غِنَى لِي عَنْ بَرَكَتِكَ». ( خ, ن ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “একদা আইয়ূব উলঙ্গ গোসল করছিল, তার ওপর এক পাল স্বর্ণের টিড্ডি পড়ল, তিনি তা মুষ্টি মুষ্টি করে কাপড়ে তুলছিলেন। এমতাবস্থায় তার রব তাকে ডাক দিলেনঃ হে আইয়ূব, আমি কি তোমাকে অমুখাপেক্ষী করে দেই-নি যা দেখছ তা থেকে? তিনি বললেনঃ অবশ্যই হে আমার রব, তবে আপনার বরকত থেকে আমার অমুখাপেক্ষীতা নেই”। [বুখারি ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৫. অধ্যায়ঃ
জাহেলী যুগের প্রথার অনিষ্ট
১৩১
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ( قَالَ: انْتَسَبَ رَجُلَانِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَحَدُهُمَا: أَنَا فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ فَمَنْ أَنْتَ لَا أُمَّ لَكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «انْتَسَبَ رَجُلَانِ عَلَى عَهْدِ مُوسَى -عَلَيْهِ السَّلَام- فَقَالَ أَحَدُهُمَا: أَنَا فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ حَتَّى عَدَّ تِسْعَةً فَمَنْ أَنْتَ لَا أُمَّ لَكَ، قَالَ: أَنَا فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ ابْنُ الْإِسْلَامِ. قَالَ: فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى مُوسَى -عَلَيْهِ السَّلَام-: أَنَّ هَذَيْنِ الْمُنْتَسِبَيْنِ أَمَّا أَنْتَ أَيُّهَا الْمُنْتَمِي أَوْ الْمُنْتَسِبُ إِلَى تِسْعَةٍ فِي النَّارِ فَأَنْتَ عَاشِرُهُمْ، وَأَمَّا أَنْتَ يَا هَذَا الْمُنْتَسِبُ إِلَى اثْنَيْنِ فِي الْجَنَّةِ فَأَنْتَ ثَالِثُهُمَا فِي الْجَنَّةِ». ( حم, ن ) إسناده صحيح

উবাই ইব্‌ন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে দু’জন ব্যক্তি বংশের উল্লেখ করল, একজন বললঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক তুমি কে, তুমি মা হারা হও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুসা আলাইহিস সালামের যুগে দু’ ব্যক্তি বংশ পরিচয় উল্লেখ করেছিল, তাদের একজন বলেঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক এভাবে সে নয়জন গণনা করে, অতএব তুমি কে, তুমি মা হারা হও। সে বললঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক ইব্‌ন ইসলাম। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মুসা আলাইহিস সালামের নিকট ওহি প্রেরণ করলেন, এ দু’জন বংশ পরিচয় উল্লেখকারীঃ হে নয়জন উল্লেখকারী তুমি জাহান্নামে, তুমি তাদের দশম ব্যক্তি। হে দু’জন উল্লেখকারী তুমি জান্নাতে, তুমি তাদের তৃতীয়জন”। [আহমদ ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭৬. অধ্যায়ঃ
শয়তানের ওয়াসওয়াসা
১৩২
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ( عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا يَزَالُونَ يَقُولُونَ: مَا كَذَا؟ مَا كَذَا؟ حَتَّى يَقُولُوا: هَذَا اللَّهُ خَلَقَ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ؟» ( م ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তোমার উম্মত বলতে থাকবেঃ এটা কিভাবে? এটা কিভাবে? অবশেষে বলবেঃ আল্লাহ মখলুক সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?” [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭৭. অধ্যায়ঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদের ফযিলত
১৩৩
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ ( قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاتَّبَعْتُهُ حَتَّى دَخَلَ نَخْلاً فَسَجَدَ فَأَطَالَ السُّجُودَ حَتَّى خِفْتُ أَوْ خَشِيتُ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ قَدْ تَوَفَّاهُ أَوْ قَبَضَهُ، قَالَ: فَجِئْتُ أَنْظُرُ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «مَا لَكَ يَا عَبْدَ الرَّحْمنِ؟» قَالَ: فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: «إِنَّ جِبْرِيلَ -عَلَيْهِ السَّلَام- قَالَ لِي: أَلَا أُبَشِّرُكَ، إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ لَكَ: مَنْ صَلَّى عَلَيْكَ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ وَمَنْ سَلَّمَ عَلَيْكَ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ». ( حم, هق, يع ) حسن لغيره

আব্দুর রহমান ইব্‌ন আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, আমি তার অনুগামী হলাম, তিনি একটি খেজুর বাগানে ঢুকে সেজদা করলেন, সেজদা এত দীর্ঘ করলেন যে আমি আশঙ্কা করলাম আল্লাহ তাকে তো মৃত্যু দেন নি! তিনি বলেনঃ আমি দেখার জন্য আসলাম, অতঃপর তিনি মাথা তুললেন, তিনি বললেনঃ “হে আব্দুর রহমান কি হয়েছে তোমার?” তিনি বলেনঃ আমি তাকে তা শোনালাম, অতঃপর তিনি বললেনঃ “জিবরিল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দেব না, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বলেনঃ যে ব্যক্তি তোমার ওপর দরূদ পাঠ করবে আমি তার ওপর দরূদ পাঠ করব, যে তোমার ওপর সালাম পাঠ করবে আমি তার ওপর সালাম প্রেরণ করব”। [আহমদ, বায়হাকি ও আবু ইয়ালা]

হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি

৭৮. অধ্যায়ঃ
ভালোর নির্দেশ দেয়া ও খারাপ থেকে বিরত রাখা
১৩৪
عَنْ أبي سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ ( يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ لَيَسْأَلُ الْعَبْدَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَقُولَ: مَا مَنَعَكَ إِذْ رَأَيْتَ الْمُنْكَرَ أَنْ تُنْكِرَهُ؟ فَإِذَا لَقَّنَ اللَّهُ عَبْدًا حُجَّتَهُ قَالَ: يَا رَبِّ رَجَوْتُكَ وَفَرِقْتُ مِن النَّاسِ». ( جه, حب ) حسن

আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, এক পর্যায়ে বলবেনঃ তুমি যখন খারাপ কর্ম দেখেছ কেন বাঁধা দাওনি? আল্লাহ যখন বান্দাকে তার উত্তর শিক্ষা দিবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব, তোমার মাগফেরাত আশা করেছি ও মানুষকে ভয় করেছি”। [ইব্‌ন মাজাহ ও ইব্‌ন হিব্বান]
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৭৯. অধ্যায়ঃ
ফাতেহার ফযিলত
১৩৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( أن رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ, فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ: ﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: حَمِدَنِي عَبْدِي. وَإِذَا قَالَ: ﴿ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ﴾، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَثْنَى عَلَيَّ عَبْدِي. وَإِذَا قَالَ: ﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ﴾ قَالَ: مَجَّدَنِي عَبْدِي (وَقَالَ مَرَّةً: فَوَّضَ إِلَيَّ عَبْدِي) فَإِذَا قَالَ: ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ﴾ قَالَ: هَذَا بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ, فَإِذَا قَالَ: ﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾، قَالَ: هَذَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ». (م) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি, আমার বান্দার জন্য সে যা চাইবে। বান্দা যখন বলেঃ ﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব”।‎ আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। বান্দা যখন বলেঃ ﴿ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ﴾ “দয়াময়, পরম দয়ালু”। আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। বান্দা যখন বলেঃ ﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ﴾ “বিচার দিবসের মালিক”। আল্লাহ বলেনঃ ‎আমার বান্দা আমার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছে। (একবার বলেছেনঃ আমার বান্দা তাকে আমার ওপর ন্যাস্ত করেছে), বান্দা যখন বলেঃ ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ﴾ “আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই ‎নিকট আমরা সাহায্য চাই”। ‎আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দার জন্য যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলেঃ
﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ [الفاتحةঃ 1، 7]
“আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত ‎দিন তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। ‎যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর ‎‎(আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা ‎পথভ্রষ্টও নয়”।‎ আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার বান্দার জন্য, আমার বান্দার জন্য যা সে চাইবে”। [মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৮০. অধ্যায়ঃ
ঊর্ধ্বজগতে ফেরেশতাদের তর্ক
১৩৬
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ( قَالَ: احْتُبِسَ عَنَّا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ غَدَاةٍ عَنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ حَتَّى كِدْنَا نَتَرَاءَى عَيْنَ الشَّمْسِ، فَخَرَجَ سَرِيعًا فَثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَتَجَوَّزَ فِي صَلَاتِهِ فَلَمَّا سَلَّمَ دَعَا بِصَوْتِهِ فَقَالَ لَنَا: «عَلَى مَصَافِّكُمْ كَمَا أَنْتُمْ» ثُمَّ انْفَتَلَ إِلَيْنَا ثُمَّ قَالَ: «أَمَا إِنِّي سَأُحَدِّثُكُمْ مَا حَبَسَنِي عَنْكُمْ الْغَدَاةَ، إنِّي قُمْتُ مِنْ اللَّيْلِ فَتَوَضَّأْتُ وَصَلَّيْتُ مَا قُدِّرَ لِي فَنَعَسْتُ فِي صَلَاتِي حتى اسْتَثْقَلْتُ فَإِذَا أَنَا بِرَبِّي -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ, قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَبِّ. قَالَ: فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: لَا أَدْرِي رَبِّ-قَالَهَا ثَلَاثًا- قَالَ: فَرَأَيْتُهُ وَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَ أَنَامِلِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَتَجَلَّى لِي كُلُّ شَيْءٍ وَعَرَفْتُ. فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَبِّ، قَالَ: فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: فِي الْكَفَّارَاتِ، قَالَ: مَا هُنَّ؟ قُلْتُ: مَشْيُ الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ وَالْجُلُوسُ فِي الْمَسَاجِدِ بَعْدَ الصَّلَوَاتِ، وَإِسْبَاغُ الْوُضُوءِ فِي الْمَكْرُوهَاتِ، قَالَ: ثم فِيم؟َ قُلْتُ: إِطْعَامُ الطَّعَامِ، وَلِينُ الْكَلَامِ وَالصَّلَاةُ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ، قَالَ: سَلْ، قُلْتُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةَ قَوْمٍ فَتَوَفَّنِي غَيْرَ مَفْتُونٍ، أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ، وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُ إِلَى حُبِّكَ». قَالَ رَسُولُ اللَّه صلى الله عليه وسلم : ِ «إِنَّهَا حَقٌّ فَادْرُسُوهَا ثُمَّ تَعَلَّمُوهَا». ( ت ) صحيح

মুয়ায ইব্‌ন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা ফজর সালাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলম্ব করলেন, আমরা প্রায় সূর্যের অগ্রভাগ দেখার কাছাকাছি ছিলাম, অতঃপর তিনি দ্রুত বের হলেন, সালাতের ঘোষণা দেয়া হল, তিনি দ্রুত সালাত আদায় করলেন, যখন সালাম ফিরালেন উচ্চ স্বরে আমাদেরকে বললেনঃ “তোমরা তোমাদের কাতারে থাক যেরূপ আছ”। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ “আমি অবশ্যই তোমাদের বলব কি কারণে আজ আমার বিলম্ব হয়েছে। আমি রাতে উঠে ওযু করেছি অতঃপর যা তাওফিক হয়েছে সালাত আদায় করেছি, সালাতে আমার তন্দ্রা এসে যায় তাই আমার কষ্ট হচ্ছিল, হঠাৎ দেখি আমার রব আমার সামনে সর্বোত্তম আকৃতিতে। তিনি আমাকে বললেনঃ হে মুহাম্মদ, আমি বললামঃ লাব্বাইক আমার রব। তিনি বললেনঃ ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে? আমি বললামঃ হে আমার রব আমি জানি না, -তিনি তা তিনবার বললেন- রাসূল বলেনঃ আমি দেখলাম তিনি (আল্লাহ) নিজ হাতের তালু আমার ঘাড়ের ওপর রাখলেন, এমনকি আমি তার আঙ্গুলের শীতলতা আমার বুকের মধ্যে অনুভব করেছি, ফলে আমার সামনে প্রত্যেক বস্তু জাহির হল ও আমি চিনলাম। অতঃপর বললেনঃ হে মুহাম্মদ, আমি বললামঃ লাব্বাইক হে আমার রব। তিনি বললেনঃ ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে? আমি বললামঃ কাফফারা সম্পর্কে। তিনি বললেনঃ তা কি? আমি বললামঃ জামাতের জন্য হাঁটা, সালাতের পর মসজিদে বসে থাকা, কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযু করা। তিনি বলেনঃ অতঃপর কোন বিষয়ে? আমি বললামঃ পানাহার করানো, সুন্দর কথা বলা, মানুষের ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় রাতে সালাত আদায় করা। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তুমি চাও, আমি বললামঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةَ قَوْمٍ فَتَوَفَّنِي غَيْرَ مَفْتُونٍ، أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ، وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُ إِلَى حُبِّكَ
“হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণের কাজ করার তৌফিক চাই, খারাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার তৌফিক চাই, অভাবীদের জন্য ভালোবাসা, আর আপনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন ও আমার প্রতি রহম করেন। আর যখন আপনি কোন কাওমকে ফিতনা তথা পরীক্ষায় নিপতিত করতে চান, তখন আমাকে পরীক্ষায় নিপতিত না করে মৃত্যু দিন। আমি আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা, আপনাকে যে ভালোবাসে তার ভালবাসা এবং এমন আমলের ভালোবাসা চাই যা আমাকে আপনার ভালোবাসার নিকটে নিয়ে যাবে।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় এ বাক্যগুলো সত্য, তোমরা এগুলো শিখ ও শিক্ষা দাও”। [তিরমিযি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮১. অধ্যায়ঃ
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম
১৩৭
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْ خَلْقِهِ قَالَتْ الرَّحِمُ: هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنْ الْقَطِيعَةِ، قَالَ: نَعَمْ، أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ؟ قَالَتْ: بَلَى يَا رَبِّ قَالَ: فَهُوَ لَكِ » . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ ». ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা মখলুক সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর যখন তিনি তার সৃষ্টি সম্পন্ন করেন তখন ‘রাহেম’ [১] বলেঃ এ হচ্ছে তোমার নিকট বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় চাওয়ার স্থান, তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমাকে যে রক্ষা করবে আমি তাকে রক্ষা করব, তোমাকে যে ছিন্ন করবে আমি তাকে ছিন্ন করব? ‘রাহেম’ বললঃ অবশ্যই হে রব, তিনি বলেনঃ এটাই তোমার জন্য”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “যদি তোমরা চাও তাহলে তিলাওয়াত করঃ

﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ ﴾ [محمد ঃ ٢٢]

“সুতরাং অবাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে সম্ভবত তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।”?। [বুখারি ও মুসলিম]

[১] অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক। আত্মীয়তার সম্পর্ক কিভাবে কথা বলল সেটা আমরা জানি না, তবে রাসূল বলেছেন, তাই আমাদেরকে এর উপর ঈমান আনতে হবে। যে আল্লাহ আমাদেরকে কথা বলিয়েছেন, তিনি সব কিছুকেই কথা বলাতে পারেন। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮২. অধ্যায়ঃ
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর বাণীঃ
১৩৮
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( عَنْ النبي صلى الله عليه وسلم قَالَ: « قَالَ اللَّهُ: كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذلك, وَشَتَمَنِي وَلَمْ يَكُنْ له ذلك, فأَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّاي فَقَوْلُهُ: لَن يعِيدني كَمَا بَدَأُْني، وَلَيْسَ أول الْخَلْقِ بِأهون عَلَيَّ مِنْ إعادته، وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ: اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا, وَأَنَا الْأَحَدُ الصَّمَدُ لَمْ أَلِدْ وَلَمْ أُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لِي كُفُئًا أَحَدٌ». ( خ, ن ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ বনি আদম আমার উপর মিথ্যারোপ করেছে, অথচ এটা তার অধিকার ছিল না। সে আমাকে গালি দিয়েছে অথচ এটা তার অধিকার ছিল না। আমাকে তার মিথ্যারোপ করার অর্থ তার বলাঃ তিনি আমাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন না যেরূপ প্রথম সৃষ্টি করেছেন, অথচ প্রথমবার সৃষ্টি করা পুনরায় সৃষ্টি করা থেকে সহজ নয়। আমাকে তার গালি হচ্ছে তার কথাঃ আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, অথচ আমি এক ও অমুখাপেক্ষী, আমি জন্ম দেই-নি আমাকে জন্ম দেয়া হয় নি, আর আমার সমকক্ষ কেউ নয়”। [বুখারি ও নাসায়ি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮৩. অধ্যায়ঃ
যুগকে গালি দেয়া হারাম
১৩৯
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: « قال: اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ, أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ » .
( م, د, ن ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ বনি আদম আমাকে কষ্ট দেয়, সে যুগকে গালি দেয় অথচ আমিই যুগ [১], আমিই রাত ও দিন পরিবর্তন করি”। [মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসায়ি]

[১] হাদীসের পরবর্তী অংশই প্রমাণ করে যে, আল্লাহর নাম ‘দাহর’ বা যুগ নয়। কারণ, রাত-দিনের মূল কথা হচ্ছে, সময়। আর সময়ের পরিবর্তন আল্লাহ্ই করে থাকেন। সুতরাং কেউ যদি সময়কে গালি দেয়, সে প্রকারান্তরে আল্লাহ্‌কেই গালি দিল; কারণ, সময়ে যা কিছু ঘটে, তার সবই আল্লাহ্‌র অনুমতি বা নির্দেশে সংঘটিত হয়ে থাকে। সুতরাং হাদীসের পরবর্তী অংশ পূর্বাংশের তাফসীর। কেউ যেন সময়, যুগ বা কালকে গালি না দেয়। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮৪. অধ্যায়ঃ
অহংকার হারাম
১৪০
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ وَأَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنهما- قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « الْعِزُّ إِزَارُهُ وَالْكِبْرِيَاءُ رِدَاؤُهُ فَمَنْ يُنَازِعُنِي عَذَّبْتُهُ» . ( م, جه, د ) صحيح

আবু সায়িদ খুদরি ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তারা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ইজ্জত তার লুঙ্গি ও অহংকার তার চাদর, অতএব যে আমার সাথে টানাহেঁচড়া করবে আমি তাকে শাস্তি দিব”। [মুসলিম, ইব্‌ন মাজাহ ও আবু দাউদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮৫. অধ্যায়ঃ
যুলম হারাম
১৪১
عَنْ أَبِي ذَرٍّ ( عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا رَوَى عَنْ اللَّهِ -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- أَنَّهُ قَالَ: « يَا عِبَادِي! إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَمُوا، يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ، يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ عَارٍ إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ، يَا عِبَادِي! إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ، يَا عِبَادِي! إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي، وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنْفَعُونِي، يَا عِبَادِي! لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا، يَا عِبَادِي! لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا، يَا عِبَادِي! لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ، يَا عِبَادِي! إِنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ، ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا، فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدْ اللَّهَ، وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلَا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ » . ( م, ت, جه ) صحيح
قَالَ سَعِيدٌ: وكَانَ أَبُو إِدْرِيسَ الْخَوْلَانِيُّ إِذَا حَدَّثَ بِهَذَا الْحَدِيثِ جَثَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ.

আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “হে আমার বান্দাগণ! নিশ্চয় আমি আমার ওপর যুলম হারাম করেছি, আমি তোমাদের মাঝেও তা হারাম করেছি অতএব তোমরা যুলম কর না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই গোমরাহ তবে আমি যাকে হিদায়েত দেই, অতএব আমার কাছে হিদায়েত তলব কর আমি তোমাদেরকে হিদায়েত দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলে ক্ষুধার্ত তবে আমি যাকে খাদ্য দেই, অতএব আমার নিকট খাদ্য তলব কর আমি তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলে বিবস্ত্র তবে আমি যাকে বস্ত্র দান করি, অতএব আমার নিকট বস্ত্র তালাশ কর আমি তোমাদেরকে বস্ত্র দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাত ও দিনে ভুল কর, আমি তোমাদের সকল পাপ মোচন করি, অতএব আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার ক্ষতি পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না যে আমার ক্ষতি করবে। আর না তোমরা আমার উপকার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে যে আমার উপকার করবে। যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন সকলে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নেককার ব্যক্তির মত হয়ে যাও, তাও আমার রাজত্ব সামান্য বৃদ্ধি করবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন সকলে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লোকের মত হয়ে যাও, তাও আমার রাজত্ব সামান্য হ্রাস করবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন এক ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার নিকট প্রার্থনা করে, অতঃপর আমি প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বস্তু প্রদান করি, তাও আমার নিকট যা রয়েছে তা হ্রাস করতে পারবে না, তবে সুই যে পরিমাণ পানি হ্রাস করে যখন তা সমুদ্রে প্রবেশ করানো হয়। হে আমার বান্দাগণ! এ তো তোমাদের আমল যা আমি তোমাদের জন্য সংরক্ষণ করি, অতঃপর তোমাদের তা পূর্ণ করে দেব। অতএব যে ভাল কিছু পেল সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, যে অন্য কিছু পেল সে যেন নিজেকে ভিন্ন কাউকে দোষারোপ না করে”। [মুসলিম, তিরমিযি ও ইব্‌ন মাজাহ] হাদীসটি সহিহ।

আবু সায়িদ বলেনঃ আবু ইদরিস খাউলানি যখন এ হাদিস বলতেনঃ হাঁটু গেড়ে বসতেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৪২
عَنْ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ -رضي الله عنهما- قَالَ: بَلَغَنِي حَدِيثٌ عَنْ رَجُلٍ سَمِعَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاشْتَرَيْتُ بَعِيرًا ثُمَّ شَدَدْتُ عَلَيْهِ رَحْلِي, فَسِرْتُ إِلَيْهِ شَهْرًا حَتَّى قَدِمْتُ عَلَيْهِ الشَّامَ فَإِذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُنَيْسٍ.
فَقُلْتُ لِلْبَوَّابِ: قُلْ لَهُ: جَابِرٌ عَلَى الْبَابِ، فَقَالَ: ابْنُ عَبْدِ اللَّهِ؟ قُلْتُ: نَعَمْ. فَخَرَجَ يَطَأُ ثَوْبَهُ فَاعْتَنَقَنِي وَاعْتَنَقْتُهُ فَقُلْتُ: حَدِيثًا بَلَغَنِي عَنْكَ أَنَّكَ سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْقِصَاصِ فَخَشِيتُ أَنْ تَمُوتَ أَوْ أَمُوتَ قَبْلَ أَنْ أَسْمَعَهُ, قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -أَوْ قَالَ: الْعِبَادُ- عُرَاةً غُرْلاً بُهْمًا»، قَالَ: قُلْنَا: وَمَا بُهْمًا؟ قَالَ: «لَيْسَ مَعَهُمْ شَيْءٌ ثُمَّ يُنَادِيهِمْ بِصَوْتٍ يَسْمَعُهُ مِنْ قُرْبٍ: أَنَا الْمَلِكُ أَنَا الدَّيَّانُ, وَلَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ أَنْ يَدْخُلَ النَّارَ وَلَهُ عِنْدَ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَقٌّ حَتَّى أَقُصَّهُ مِنْهُ, وَلَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ أَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ، وَلِأَحَدٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ عِنْدَهُ حَقٌّ حَتَّى أَقُصَّهُ مِنْهُ حَتَّى اللَّطْمَةُ»، قَالَ: قُلْنَا: كَيْفَ وَإِنَّا إِنَّمَا نَأْتِي اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- عُرَاةً غُرْلاً بُهْمًا؟ قَالَ: «بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ » . ( حم, بخ, عا, ك ) حسن لغيره

জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার নিকট একটি হাদিসের সংবাদ পৌঁছেছে, যা কোন এক ব্যক্তির নিকট রয়েছে যে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে শুনেছে। অতঃপর আমি একটি উট খরিদ করি ও তাতে সফর করি, অতঃপর একমাস সফর করে শামে গিয়ে তার সাক্ষাত লাভ করি, দেখলাম তিনি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উনাইস।

আমি দারোয়ানকে বললামঃ তাকে বলঃ জাবের দরজায় অপেক্ষা করছে। তিনি বললেনঃ (জাবের) ইব্‌ন আব্দুল্লাহ? আমি বললামঃ হ্যাঁ, তিনি নিজ কাপড় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন, অতঃপর আমার সাথে আলিঙ্গন করলেন, আমিও তার সাথে আলিঙ্গন করলাম। আমি বললামঃ আপনার কাছ থেকে আমার নিকট কিসাস সম্পর্কে একটি হাদিস পৌঁছেছে যে, আপনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শ্রবণ করেছেন, আমি আশঙ্কা করছিলাম, হয় আপনি মারা যাবেন, অথবা আমিই মারা যাব তা শ্রবণ করার আগে। তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “কিয়ামতের দিন মানুষদের অথবা বলেছেনঃ বান্দাদের, হাজির করা হবে, (উরাত) উলঙ্গ, (গুরলান) খৎনা বিহীন, (বুহমান) খালি হাত অবস্থায়”। তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ বুহমান কি? তিনি বললেনঃ “তাদের সাথে কিছু থাকবে না। অতঃপর তিনি তাদেরকে নির্দিষ্ট আওয়াজ দ্বারা ডাক দিবেন যা নিকট থেকে শুনা যাবেঃ আমিই বাদশাহ, আমি প্রতিদান দানকারী, কোন জাহান্নামী যার কোন জান্নাতির নিকট হক রয়েছে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না আমি তার থেকে তাকে কিসাস পাইয়ে দিব। কোন জান্নাতি যার নিকট কোন জাহান্নামীর হক রয়েছে জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না আমি তার থেকে তাকে কিসাস পাইয়ে দিব, এমনকি চড় পর্যন্ত”। তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ কিভাবে তা সম্ভব হবে, আমরা তো তখন আল্লাহর নিকট উলঙ্গ, গুরলান বুহমান হাজির হব? তিনি বললেনঃ নেকি ও পাপের মাধ্যমে”। [আহমদ, বুখারি ফিল আদাবুল মুফরাদ, আবু আসেম, হাকেম]

[১] অর্থাৎ কিভাবে পরস্পরের হক আদান-প্রদান করব, আমাদের সাথে তো কিছুই থাকবে না? তার জবাবে বলা হয়েছে যে এ আদান-প্রদান ও কিসাস হবে সৎ কাজ ও অসৎ কাজের মাধ্যমে। সুতরাং কারও ভালো কাজ থাকলে, দুনিয়াতে কারও উপর যুলুম করে থাকলে সে ভালো কাজ তাকে দিয়ে দেওয়া হবে, আর না থাকলে তার উপর অপরের গোনাহ চাপিয়ে দেওয়া হবে। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি

৮৬. অধ্যায়ঃ
জীবের ছবি অঙ্কন করা হারাম ও চিত্রকরদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি
১৪৩

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوا حَبَّةً أَوْ شَعِيرَةً» . ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তার চেয়ে বড় জালেম কে যে আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করে, সে যেন একটি অণু অথবা শস্য দানা অথবা গমের দানা সৃষ্টি করে”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮৭. অধ্যায়ঃ
ঝগড়াকারীদের শাস্তি
১৪৪

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فِي كُلِّ اثْنَيْنِ وَخَمِيسٍ» . قَالَ مَعْمَرٌ: وَقَالَ غَيْرُ سُهَيْلٍ: «وَتُعْرَضُ الْأَعْمَالُ فِي كُلِّ اثْنَيْنِ وَخَمِيسٍ, فَيَغْفِرُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- لِكُلِّ عَبْدٍ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا إِلَّا الْمُتَشَاحِنَيْنِ يَقُولُ اللَّهُ لِلْمَلَائِكَةِ: ذَرُوهُمَا حَتَّى يَصْطَلِحَا». (أحمد) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজা খোলা হয়”। মা‘মার বলেনঃ সুহাইল ব্যতীত অন্যরা বলেছেনঃ “প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে না, তবে ঝগড়াকারী দুই ব্যক্তি ব্যতীত, আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের বলেনঃ এদেরকে অবকাশ দাও, যতক্ষণ না তারা মীমাংসা করে নেয়”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৮৮. অধ্যায়ঃ
জ্বর ও রোগ-ব্যাধি কাফফারা
১৪৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( عَنْ رَسُولُ اللَّه صلى الله عليه وسلم : أَنَّهُ عَادَ مَرِيضًا -وَمَعَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ- مِنْ وَعْكٍ كَانَ بِهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «أَبْشِرْ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ: نَارِي أُسَلِّطُهَا عَلَى عَبْدِي الْمُؤْمِنِ فِي الدُّنْيَا لِتَكُونَ حَظَّهُ مِنْ النَّارِ فِي الْآخِرَةِ». ( حم, جه, ت ) حسن

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বলেনঃ তিনি এক রোগীকে দেখতে যান, যে জ্বরের কারণে অসুস্থ ছিল, -আবু হুরায়রা ছিলেন তার সাথে- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর, আল্লাহ বলেনঃ আমার আগুন [১] দুনিয়াতে আমি আমার মুমিন বান্দার ওপর প্রবল করি, যেন তা আখেরাতের আগুনের বিনিময় হয়ে যায়”। [আহমদ, ইব্‌ন মাজাহ ও তিরমিযি]

[১] অর্থাৎ জ্বরটি হচ্ছে একটি আগুন, যার মাধ্যমে মুমিন বান্দার আখেরাতের গোনাহের বিনিময় হয়ে যায়। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৮৯. অধ্যায়ঃ
বান্দা অসুস্থ হলে তার জন্য সেরূপ আমল লেখা হয় যেরূপ সে সুস্থ অবস্থায় করত
১৪৬
عنْ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ ( أن رَسُولُ اللَّه صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَيْسَ مِنْ عَمَلِ يَوْمٍ إِلَّا وَهُوَ يُخْتَمُ عَلَيْهِ، فَإِذَا مَرِضَ الْمُؤْمِنُ قَالَتْ الْمَلَائِكَةُ: يَا رَبَّنَا عَبْدُكَ فُلَانٌ قَدْ حَبَسْتَهُ, فَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: اخْتِمُوا لَهُ عَلَى مِثْلِ عَمَلِهِ حَتَّى يَبْرَأَ أَوْ يَمُوتَ» . ( حم ) صحيح

উকবা ইব্‌ন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দিনের এমন আমল নেই যার ওপর মোহর এঁটে দেয়া হয় না, বান্দা যখন অসুস্থ হয় ফেরেশতারা বলেঃ হে আমাদের রব, আপনার অমুক বান্দাকে আপনি অসুস্থ করে দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তার জন্য তার অনুরূপ আমল লিখতে থাক, যতক্ষণ না সে ভাল হয় অথবা মারা যায়”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৪৭
عَنْ أَبِي الْأَشْعَثِ الصَّنْعَانِيِّ أَنَّهُ رَاحَ إِلَى مَسْجِدِ دِمَشْقَ وَهَجَّرَ بِالرَّوَاحِ فَلَقِيَ شَدَّادَ بْنَ أَوْسٍ وَالصُّنَابِحِيُّ مَعَهُ, فَقُلْتُ: أَيْنَ تُرِيدَانِ -يَرْحَمُكُمَا اللَّهُ- قَالَا: نُرِيدُ هَاهُنَا إِلَى أَخٍ لَنَا مَرِيضٍ نَعُودُهُ, فَانْطَلَقْتُ مَعَهُمَا حَتَّى دَخَلَا عَلَى ذَلِكَ الرَّجُلِ، فَقَالَا لَهُ: كَيْفَ أَصْبَحْتَ قَالَ: أَصْبَحْتُ بِنِعْمَةٍ، فَقَالَ لَهُ شَدَّادٌ: أَبْشِرْ بِكَفَّارَاتِ السَّيِّئَاتِ وَحَطِّ الْخَطَايَا فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ: إِنِّي إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنًا فَحَمِدَنِي عَلَى مَا ابْتَلَيْتُهُ؛ فَإِنَّهُ يَقُومُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ مِنْ الْخَطَايَا, وَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: أَنَا قَيَّدْتُ عَبْدِي وَابْتَلَيْتُهُ وَأَجْرُوا لَهُ كَمَا كُنْتُمْ تُجْرُونَ لَهُ وَهُوَ صَحِيحٌ» . ( حم ) حسن لغيره

আবুল আশআস সান‘আনি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি দামেস্কের মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ‘রাওয়াহ’ নামক স্থানে দুপুরে অবস্থান করেন, সেখানে তিনি সাদ্দাদ ইব্‌ন আউসের সাথে সাক্ষাত করেন, (তার সাথী) ‘সুনাবিহি’ তার সাথেই ছিল। আমি বললামঃ কোথায় যাচ্ছেন, আল্লাহ আপনাদের ওপর রহম করুন, তারা বললঃ এখানে আমাদের এক অসুস্থ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা করছি, আমরা তাকে দেখতে যাব। আমি তাদের সাথে চললাম, অবশেষে তারা ঐ ব্যক্তির নিকট গেল। তারা তাকে বললঃ কিরূপ সকাল করলেন? সে বললঃ আল্লাহর নিয়ামতসহ। সাদ্দাদ তাকে বললঃ গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আমি যখন আমার কোন মুমিন বান্দাকে পরীক্ষা করি, অতঃপর সে আমার মুসিবতের ওপর আমার প্রশংসা করে, নিশ্চয় সে ঐ বিছানা থেকে উঠে সে দিনের মত যে দিন তার মা তাকে বেগুনা জন্ম দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি আমার বান্দাকে আটকে রেখেছি, আমি তাকে মুসিবত দিয়েছি, অতএব তোমরা তার জন্য সওয়াব লিখতে থাক, যেমন তার সওয়াব লিখতে তার সুস্থ অবস্থায়”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি

৯০. অধ্যায়ঃ
চোখের দৃষ্টি হারানোর পর ধৈর্যধারণকারী ও সওয়াবের আশা পোষণকারীর জন্য জান্নাত
১৪৮

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ( قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ قَالَ: إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الْجَنَّةَ». يُرِيدُ عَيْنَيْهِ. ( خ ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার বান্দাকে যখন তার দু’টি প্রিয় বস্তু [১] দ্বারা পরীক্ষা করি, অতঃপর সে ধৈর্যধারণ করে, আমি তার বিনিময়ে তাকে জান্নাত দান করি”। [বুখারি]

[১] এখানে দু’টি প্রিয় বস্তু বলে দু’চোখ বোঝানো হয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৪৯
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( رفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ عَزّ وَجَلّ: مَنْ أَذْهَبْتُ حَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ وَاحْتَسَبَ لَمْ أَرْضَ لَهُ بِثَوَابٍ دُونَ الْجَنَّةِ». (ت ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি যার দু’টি প্রিয় বস্তু নিয়ে নেই, অতঃপর সে ধৈর্যধারণ করে ও সওয়াবের আশা করে, আমি তার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট হই না”। [তিরমিযি]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৫০
عن ابن عباس -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «يقول الله تبارك وتعالى: إذا أخذت كريمتي عبدي فصبر واحتسب لم أرض له ثوابًا دون الجنة». (حب) صحيح

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি যখন আমার বান্দার প্রিয় দু’টি বস্তু গ্রহণ করি, অতঃপর সে সবর করে ও ধৈর্যধারণ করে, আমি তার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন সওয়াবে সন্তুষ্ট হব না”। [ইব্‌ন হিব্বান]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯১. অধ্যায়ঃ
অভাবের ফযিলত
১৫১
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ الْفُقَرَاءُ وَالْمُهَاجِرُونَ الَّذِينَ تُسَدُّ بِهِمْ الثُّغُورُ وَيُتَّقَى بِهِمْ الْمَكَارِهُ، وَيَمُوتُ أَحَدُهُمْ وَحَاجَتُهُ فِي صَدْرِهِ لَا يَسْتَطِيعُ لَهَا قَضَاءً, فَيَقُولُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ مَلَائِكَتِهِ: ائْتُوهُمْ فَحَيُّوهُم،ْ فَتَقُولُ الْمَلَائِكَةُ: نَحْنُ سُكَّانُ سَمَائِكَ وَخِيرَتُكَ مِنْ خَلْقِكَ أَفَتَأْمُرُنَا أَنْ نَأْتِيَ هَؤُلَاءِ فَنُسَلِّمَ عَلَيْهِمْ؟!! قَالَ: إِنَّهُمْ كَانُوا عِبَادًا يَعْبُدُونِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا، وَتُسَدُّ بِهِمْ الثُّغُور،ُ وَيُتَّقَى بِهِمْ الْمَكَارِهُ، وَيَمُوتُ أَحَدُهُمْ وَحَاجَتُهُ فِي صَدْرِهِ لَا يَسْتَطِيعُ لَهَا قَضَاءً، قَالَ: فَتَأْتِيهِمُ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ ذَلِكَ فَيَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ». ( حم ) صحيح لغيره

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা কি জান আল্লাহর মখলুকের মধ্যে কে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে? তারা বললঃ আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর মখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে অভাবী ও মুহাজির, যাদের দ্বারা সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পূর্ণ করা হয় ও যাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাদের কেউ মারা যায় কিন্তু তার ইচ্ছা তার অন্তরেই থাকে পূর্ণ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা তার ফেরেশতাদের থেকে যাকে ইচ্ছা বলবেনঃ তাদের কাছে যাও, তাদেরকে সালাম কর, অতঃপর ফেরেশতারা বলেঃ আমরা আপনার আসমানের অধিবাসী, আপনার সর্বোত্তম মখলুক, আপনি আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের কাছ যাব এবং তাদেরকে সালাম করব?! তিনি বলেনঃ তারা এমন বান্দা যারা আমার ইবাদত করত আমার সাথে কাউকে শরীক করত না। তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রাখা হত, তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত, তাদের কেউ মারা যেত কিন্তু তার প্রয়োজন তার অন্তরেই থাকত সে তা পূর্ণ করতে পারত না। তিনি বলেনঃ অতঃপর তখন তাদের নিকট ফেরেশতাগণ আসেন, প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করেনঃ তোমাদের ওপর সালাম, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছে, আখেরাতের প্রতিদান খুবই সুন্দর!”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ হাসান লিগাইরিহি

৯২. অধ্যায়ঃ
আত্মহত্যা থেকে হুশিয়ারি
১৫২
عَنْ جُنْدَبُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ( قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ بِهِ جُرْحٌ فَجَزِعَ فَأَخَذَ سِكِّينًا فَحَزَّ بِهَا يَدَهُ فَمَا رَقَأَ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: بَادَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ».
( خ, م ) صحيح

জুনদুব ইব্‌ন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যার হাতে ছিল জখম, সে অস্থির হয়ে ছুরি নেয় ও তা দ্বারা হাত কেটে ফেলে, অতঃপর রক্ত বন্ধ হয়নি ফলে সে মারা যায়”। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার বান্দা তার নিজের ব্যাপারে জলদি করেছে, আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম”। [বুখারি ও মুসলিম]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৩. অধ্যায়ঃ
অন্যায়ভাবে হত্যাকারীর পাপ
১৫৩
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ( عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَجِيءُ الرَّجُلُ آخِذًا بِيَدِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ هَذَا قَتَلَنِي. فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: لِمَ قَتَلْتَهُ؟ فَيَقُولُ: قَتَلْتُهُ لِتَكُونَ الْعِزَّةُ لَكَ. فَيَقُولُ: فَإِنَّهَا لِي، وَيَجِيءُ الرَّجُلُ آخِذًا بِيَدِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ: إِنَّ هَذَا قَتَلَنِي. فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: لِمَ قَتَلْتَهُ؟ فَيَقُولُ: لِتَكُونَ الْعِزَّةُ لِفُلَانٍ فَيَقُولُ: إِنَّهَا لَيْسَتْ لِفُلَانٍ فَيَبُوءُ بِإِثْمِهِ» . ( ن ) صحيح لما بعده

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত হবে এবং বলবেঃ হে আমার রবঃ এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ বললেনঃ কেন তাকে হত্যা করেছ? সে বলবেঃ আমি তাকে এ জন্য হত্যা করেছি যেন আপনার সম্মান বুলন্দ হয়। তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ তা আমার জন্য। অপর ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত হবে এবং বলবেঃ এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাকে বলবেন কেন হত্যা করেছ? সে বলবেঃ যেন অমুকের সম্মান বুলন্দ হয়। তিনি বলবেনঃ তার জন্য সম্মান নয়, ফলে সে তার পাপ বহন করবে”। [নাসায়ি] পরবর্তী হাদিসের বিবেচনায় সহিহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৫৪
عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الجوني قَالَ: قُلْتُ لِجُنْدُبٍ: إِنِّي بَايَعْتُ هَؤُلَاءِ -يَعْنِي ابْنَ الزُّبَيْرِ- وَإِنَّهُمْ يُرِيدُونَ أَنْ أَخْرُجَ مَعَهُمْ إِلَى الشَّامِ فَقَالَ: أَمْسِكْ. فَقُلْت:ُ إِنَّهُمْ يَأْبَوْنَ عَلَي، فَقَالَ: افْتَدِ بِمَالِكَ. قَالَ: قُلْتُ: إِنَّهُمْ يَأْبَوْنَ إِلَّا أَنْ أُقَاَتِلْ مَعَهُمْ بِالسَّيْفِ، فَقَالَ جُنْدُبٌ: حَدَّثَنِي فُلَانٌ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَجِيءُ الْمَقْتُولُ بِقَاتِلِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ سَلْ هَذَا فِيمَ قَتَلَنِي» قَالَ شُعْبَةُ: فَأَحْسِبُهُ قَالَ: «فَيَقُولُ: عَلَامَ قَتَلْتَهُ؟ فَيَقُولُ: قَتَلْتُهُ عَلَى مُلْكِ فُلَان». قَالَ: فَقَالَ جُنْدُبٌ: فَاتَّقِهَا. ( حم ) صحيح

ইমরান আল-জাওনি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি জুনদুবকে বললামঃ আমি তাদের নিকট বায়‘আত হয়েছি, অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জুবায়ের এর হাতে, তারা চায় আমি তাদের সাথে শামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই, তিনি বললেনঃ বিরত থাক। আমি বললামঃ তারা আমাকে পীড়াপীড়ি করে। তিনি বললেনঃ তোমার সম্পদ দিয়ে বিরত থাক। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ আমি তাদের সাথে তলোয়ার দ্বারা যুদ্ধ করব এ ছাড়া কিছুতেই তারা রাজি হয় না। অতঃপর জুনদুব বললেনঃ অমুকে আমার নিকট বলেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীকে নিয়ে উপস্থিত হবে, অতঃপর সে বলবেঃ তাকে জিজ্ঞাসা কর কেন আমাকে হত্যা করেছে”। শু‘বা বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি বলেছেনঃ “সে বলবেঃ কিসের ওপর আমাকে হত্যা করেছে? সে বলবেঃ অমুকের নেতৃত্বে আমি তাকে হত্যা করেছি”। তিনি বলেনঃ অতঃপর জুনদুব বললঃ সুতরাং তুমি বিরত থাক। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৪. অধ্যায়ঃ
পিপড়া হত্যার নিষেধাজ্ঞা
১৫৫
عَنْ أَبي هُرَيْرَةَ ( قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «قَرَصَتْ نَمْلَةٌ نَبِيًّا مِنْ الْأَنْبِيَاءِ فَأَمَرَ بِقَرْيَةِ النَّمْلِ فَأُحْرِقَتْ فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ أَحْرَقْتَ أُمَّةً مِنَ الأُمَمِ تُسَبِّحُ الله». ( خ, م, د, ن, جه ) صحيح
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “একটি পিপড়া কোন এক নবীকে কামড় দেয়, তিনি পিপড়ার গ্রামের নির্দেশ দিলেন ফলে তা জ্বালিয়ে দেয়া হল, আল্লাহ তাকে ওহি করলেনঃ একটি পিপড়া তোমাকে কামড় দিয়েছে, আর তুমি একটি জাতি জ্বালিয়ে দিলে যারা আল্লাহর প্রশংসা করত”! [বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ি ও ইব্‌ন মাজাহ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৫. অধ্যায়ঃ
তাকদির অধ্যায়
১৫৬
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ -رضي الله عنهما- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « أَخَذَ اللَّهُ الْمِيثَاقَ مِنْ ظَهْرِ آدَمَ بِنَعْمَانَ -يَعْنِي عَرَفَةَ- فَأَخْرَجَ مِنْ صُلْبِهِ كُلَّ ذُرِّيَّةٍ ذَرَأَهَا فَنَثَرَهُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ كَالذَّرِّ ثُمَّ كَلَّمَهُمْ قِبَلاً قَالَ: ﴿ وَإِذۡ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِيٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَأَشۡهَدَهُمۡ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ أَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡۖ قَالُواْ بَلَىٰ شَهِدۡنَآۚ أَن تَقُولُواْ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَٰذَا غَٰفِلِينَ ١٧٢ ﴾ [الاعراف: ١٧١] . ( حم ) صحيح

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা না‘মান নামক স্থানে (অর্থাৎ আরাফায়) আদমের পিঠে থাকাবস্থায় অঙ্গিকার গ্রহণ করেছেন, তিনি তার পিঠ থেকে প্রত্যেক সন্তান বের করেন যা সে জন্ম দিবে, অতঃপর তাদেরকে সামনে অণুর ন্যায় রাখেন, অতঃপর তাদের মুখোমুখি হয়ে কথা বলেনঃ তিনি বলেনঃ
﴿ وَإِذۡ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِيٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَأَشۡهَدَهُمۡ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ أَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡۖ قَالُواْ بَلَىٰ شَهِدۡنَآۚ أَن تَقُولُواْ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَٰذَا غَٰفِلِينَ ١٧٢ ﴾ [الاعرافঃ ١٧١]
“আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বনী-আদমের ‎পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন ‎এবং তাদেরকে তাদের নিজদের উপর সাক্ষী ‎করলেন যে, ‘আমি কি তোমাদের রব নই’? ‎তারা বলল, ‘হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম।’ যাতে ‎কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, ‎নিশ্চয় আমরা এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম” (সূরা আরাফঃ১৭১) [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৫৭
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ قَتَادَةَ السُّلَمِيِّ -رضي الله عنه- أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- خَلَقَ آدَمَ ثُمَّ أَخَذَ الْخَلْقَ مِنْ ظَهْرِهِ وَقَالَ: هَؤُلَاءِ فِي الْجَنَّةِ وَلَا أُبَالِي، وَهَؤُلَاءِ فِي النَّارِ وَلَا أُبَالِي » . فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَعَلَى مَاذَا نَعْمَلُ؟ قَالَ: « عَلَى مَوَاقِعِ الْقَدَرِ » . (حم) حسن

আব্দুর রহমান ইব্‌ন কাতাদা আসসুলামি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার পিঠ থেকে মখলুক বের করেন ও বলেনঃ এরা জান্নাতি আমি কোন পরোয়া করি না, এরা জাহান্নামী আমি কোন পরোয়া করি না। তিনি বলেন এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল তাহলে কিসের ওপর আমল করব”? তিনি বললেনঃ “তাকদিরে নির্ধারিত স্থানে” [১]। [আহমদ]

[১] অর্থাৎ আমল করার বিষয়টিও তাকদীরে লেখা আছে। যদি ভালো আমল করার সৌভাগ্য হয়, তবে সেটাও তার তাকদীরে লেখা আছে। সুতরাং তাকদীরে কী আছে তা খুজে বের করার চেষ্টায় আমল করা পরিত্যাগ করা যাবে না, বরং সর্বদা ভালো আমল করার প্রচেষ্টায় লেগে থাকতে হবে, আর তখনই তার জন্য সে ভালো আমলটি করা সহজ করে দেয়া হবে। একজন মুমিন এ কাজটিই করে এবং করা উচিত। মুমিন কখনো তাকদীরের দোহাই দিয়ে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকে না। যারা কাফের ও বদকার তারাই শুধু তাকদীরের দোহাই দিয়ে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকে এবং বলে যদি আল্লাহ চাইত তবে আমি অবশ্যই নেক আমল করতে সমর্থ হতাম। বস্তুতঃ এ ধরনের কথা বলে নেক আমল থেকে বিরত থাকা আরবের মুশরিকদের কাজ। মোটকথাঃ মুমিনের দায়িত্ব হচ্ছে, নেক আমলের জন্য সদা সচেষ্ট থাকা। যাতে করে তার তাকদীরের লেখা অনুসারে সে ভালো কাজ করতে পারে। আর আল্লাহও তার জন্য তা সহজ করে দেন। এটাই বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত হয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

১৫৮
عَنْ أَبِي نَضْرَةَ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يُقَالُ لَهُ: أَبُو عَبْدِ اللَّهِ دَخَلَ عَلَيْهِ أَصْحَابُهُ يَعُودُونَهُ وَهُوَ يَبْكِي فَقَالُوا لَهُ: مَا يُبْكِيكَ أَلَمْ يَقُلْ لَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « خُذْ مِنْ شَارِبِكَ ثُمَّ أَقِرَّهُ حَتَّى تَلْقَانِي » , قَالَ: بَلَى وَلَكِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- قَبَضَ بِيَمِينِهِ قَبْضَةً وَأُخْرَى بِالْيَدِ الْأُخْرَى وَقَالَ: هَذِهِ لِهَذِهِ, وَهَذِهِ لِهَذِهِ، وَلَا أُبَالِي». فَلَا أَدْرِي فِي أَيِّ الْقَبْضَتَيْنِ أَنَا. ( حم ) صحيح

আবু নাদরাহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবি যাকে আবু আব্দুল্লাহ বলা হয়, তাকে দেখার জন্য তার সাথীবৃন্দ আসেন, তিনি কাঁদতে ছিলেন, তারা বললঃ আপনি কি জন্য কাঁদছেন, আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেননিঃ “তুমি তোমার মোচ ছাট, অতঃপর তার ওপর স্থির থাক, যতক্ষণ না আমার সাথে সাক্ষাত কর”। তিনি বলেনঃ অবশ্যই, কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা তার ডান হাতে এক মুষ্টি ও অপর হাতে অপর মুষ্টি গ্রহণ করেন, অতঃপর বলেনঃ এরা হচ্ছে এর জন্য এবং এরা হচ্ছে এর জন্য, আমি কোন পরোয়া করি না”। আমি জানি না আমি কোন মুষ্টির অন্তর্ভুক্ত। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৫৯
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ حِينَ خَلَقَهُ، فَضَرَبَ كَتِفَهُ الْيُمْنَى، فَأَخْرَجَ ذُرِّيَّةً بَيْضَاءَ كَأَنَّهُمْ الذَّرُّ، وَضَرَبَ كَتِفَهُ الْيُسْرَى، فَأَخْرَجَ ذُرِّيَّةً سَوْدَاءَ. كَأَنَّهُمْ الْحُمَمُ، فَقَالَ لِلَّذِي فِي يَمِينِهِ: إِلَى الْجَنَّةِ وَلَا أُبَالِي، وَقَالَ لِلَّذِي فِي كَفِّهِ الْيُسْرَى: إِلَى النَّارِ وَلَا أُبَالِي ». ( حم ) صحيح

আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করেন যখন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তার ডান কাঁধে হাত মারেন ও ধবধবে সাদা এক প্রজন্ম বের করেন যেন তারা পতঙ্গ, অতঃপর বাম কাঁধে হাত মারেন ও কালো এক প্রজন্ম বের করেন যেন তারা জ্বলন্ত ছাই। অতঃপর ডান হাতের তালুর দিকে লক্ষ্য করে বলেনঃ এগুলো জান্নাতের জন্য আমি কোন পরোয়া করি না, বাম হাতের তালুর দিকে লক্ষ্য করে বলেনঃ এগুলো জাহান্নামের জন্য আমি কোন পরোয়া করি না”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৬. অধ্যায়ঃ
মান্নত অধ্যায়
১৬০

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَا يَأْتِ ابْنَ آدَمَ النَّذْرُ بِشَيْءٍ لَمْ يَكُنْ قَدْ قَدَّرْتُهُ, وَلَكِنْ يُلْقِيهِ الْقَدَرُ وَقَدْ قَدَّرْتُهُ لَهُ أَسْتَخْرِجُ بِهِ مِنْ الْبَخِيلِ » . ( خ, م ) صحيح

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বনি আদমের নিকট মান্নত কোন জিনিস নিয়ে আসে না যা আমি তার জন্য নির্ধারণ করি নি, কিন্তু তাকদির তাকে পেয়ে বসে [১], আমি তার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছি এর দ্বারা কৃপণ থেকে সম্পদ বের করব”। [বুখারি ও মুসলিম]

[১] অর্থাৎ কখনও কখনও মানুষ মান্নত দ্বারা কোন জিনিস পায়, এটা আসলে মান্নতের মাধ্যমে পাওয়া নয়; বরং এটাই আমি তার তাকদীরে লিখেছি। কিন্তু সে যেহেতু আল্লাহর জন্য কিছু দিতে চায় না, কৃপণতা করে, তখন সে মনে মান্নতের মাধ্যমে পাওয়া যাবে, আর এভাবে মান্নত করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে কিছু জিনিস তার থেকে বের করে আনেন। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৭. অধ্যায়ঃ
কিয়ামতের বড় আলামত
১৬১
عَنْ أَبِي ذَرٍّ -رضي الله عنه- قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَلَى حِمَارٍ وَعَلَيْهِ بَرْذَعَةٌ أَوْ قَطِيفَةٌ قَالَ: فَذَاكَ عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ, فَقَالَ لِي: «يَا أَبَا ذَرٍّ هَلْ تَدْرِي أَيْنَ تَغِيبُ هَذِهِ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَامِئَةٍ تَنْطَلِقُ حَتَّى تَخِرَّ لِرَبِّهَا -عَزَّ وَجَلَّ- سَاجِدَةً تَحْتَ الْعَرْشِ فَإِذَا حَانَ خُرُوجُهَا أَذِنَ اللَّهُ لَهَا فَتَخْرُجُ فَتَطْلُعُ، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يُطْلِعَهَا مِنْ حَيْثُ تَغْرُبُ حَبَسَهَا فَتَقُولُ: يَا رَبِّ إِنَّ مَسِيرِي بَعِيدٌ، فَيَقُولُ لَهَا: اطْلُعِي مِنْ حَيْثُ غِبْتِ فَذَلِكَ حِينَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا ». ( حم ) صحيح

আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি একটি গাধার ওপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের সাথে ছিলাম। তখন তার উপর একটি পাড়যুক্ত চাদর ছিল। তিনি বলেনঃ এটা ছিল সূর্যাস্তের সময়, তিনি আমাকে বলেনঃ “হে আবু যর তুমি জান এটা কোথায় অস্ত যায়?” তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বলেনঃ সূর্যাস্ত যায় একটি কর্দমাক্ত ঝর্ণায় [১], সে চলতে থাকে অবশেষে আরশের নিচে তার রবের জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, যখন বের হওয়ার সময় আল্লাহ তাকে অনুমতি দেন, ফলে সে বের হয় ও উদিত হয়। তিনি যখন তাকে যেখানে অস্ত গিয়েছে সেখান থেকে উদিত করার ইচ্ছা করবেন আটকে দিবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব আমার পথ তো দীর্ঘ, আল্লাহ বলবেনঃ যেখান থেকে ডুবেছে সেখান থেকেই উদিত হও, এটাই সে সময় যখন ব্যক্তিকে তার ঈমান উপকার করবে না” [2]। [আহমদ]

[১] এর অর্থ, মানুষের দৃষ্টিতে যখন কোন সূর্য অস্ত যায়, আর সে যখন সাগরের পারে থাকে, তখন দেখতে পায় যেন সূর্য কর্দমাক্ত ঝর্ণায় ডুবে গেল। এর পরবর্তী অংশই প্রমাণ করে যে, সূর্য তারপরও চলতে থাকে। [সম্পাদক]

[2] অর্থাৎ এর পর আর কারও ঈমান গ্রহণ করা হবে না। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৮. অধ্যায়ঃ
দাজ্জালের ফিতনা
১৬২
عَنْ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ ( قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الدَّجَّالَ ذَاتَ غَدَاةٍ فَخَفَّضَ فِيهِ وَرَفَّعَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ فَقَالَ: « غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُنِي عَلَيْكُمْ، إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ، وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ, وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ, إِنَّهُ شَابٌّ قَطَطٌ عَيْنُهُ طَافِئَةٌ كَأَنِّي أُشَبِّهُهُ بِعَبْدِ الْعُزَّى بْنِ قَطَنٍ فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ، إِنَّهُ خَارِجٌ خَلَّةً بَيْنَ الشَّاْمِ وَالْعِرَاقِ، فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالاً يَا عِبَادَ اللَّهِ فَاثْبُتُوا»، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا لَبْثُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَوْمٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ». قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلَاةُ يَوْمٍ؟ قَالَ: «لَا، اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ»، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا إِسْرَاعُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: «كَالْغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ، فَيَأْتِي عَلَى الْقَوْمِ فَيَدْعُوهُمْ فَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَجِيبُونَ لَهُ، فَيَأْمُرُ السَّمَاءَ فَتُمْطِرُ وَالْأَرْضَ فَتُنْبِتُ فَتَرُوحُ عَلَيْهِمْ سَارِحَتُهُمْ أَطْوَلَ مَا كَانَتْ ذُرًا، وَأَسْبَغَهُ ضُرُوعًا، وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ، ثُمَّ يَأْتِي الْقَوْمَ فَيَدْعُوهُمْ فَيَرُدُّونَ عَلَيْهِ قَوْلَهُ فَيَنْصَرِفُ عَنْهُمْ فَيُصْبِحُونَ مُمْحِلِينَ لَيْسَ بِأَيْدِيهِمْ شَيْءٌ مِنْ أَمْوَالِهِم,ْ وَيَمُرُّ بِالْخَرِبَةِ فَيَقُولُ لَهَا: أَخْرِجِي كُنُوزَكِ فَتَتْبَعُهُ كُنُوزُهَا كَيَعَاسِيبِ النَّحْلِ ثُمَّ يَدْعُو رَجُلاً مُمْتَلِئًا شَبَابًا فَيَضْرِبُهُ بِالسَّيْفِ فَيَقْطَعُهُ جَزْلَتَيْنِ رَمْيَةَ الْغَرَضِ ثُمَّ يَدْعُوهُ فَيُقْبِلُ وَيَتَهَلَّلُ وَجْهُهُ يَضْحَكُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ فَيَنْزِلُ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ بَيْنَ مَهْرُودَتَيْنِ وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أجْنِحَةِ مَلَكَينِ، إِذَ طَأْطأَ رَأْسَهُ قَطَرَ، وَإِذَا رَفَعَهُ تَحَدَّرَ مِنْهُ جُمَانٌ كَاللُّؤْلُؤِ فَلَا يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إِلَّا مَاتَ وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرْفُهُ، فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ فَيَقْتُلُهُ، ثُمَّ يَأْتِي عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ قَوْمٌ قَدْ عَصَمَهُمْ اللَّهُ مِنْهُ فَيَمْسَحُ عَنْ وُجُوهِهِمْ وَيُحَدِّثُهُمْ بِدَرَجَاتِهِمْ فِي الْجَنَّةِ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى إِنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي لَا يَدَانِ لِأَحَدٍ بِقِتَالِهِمْ فَحَرِّزْ عِبَادِي إِلَى الطُّورِ، وَيَبْعَثُ اللَّهُ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ فَيَمُرُّ أَوَائِلُهُمْ عَلَى بُحَيْرَةِ طَبَرِيَّةَ فَيَشْرَبُونَ مَا فِيهَا، وَيَمُرُّ آخِرُهُمْ فَيَقُولُونَ: لَقَدْ كَانَ بِهَذِهِ مَرَّةً مَاءٌ، وَيُحْصَرُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ حَتَّى يَكُونَ رَأْسُ الثَّوْرِ لِأَحَدِهِمْ خَيْرًا مِنْ مِائَةِ دِينَارٍ لِأَحَدِكُمْ الْيَوْمَ، فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ فَيُرْسِلُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ النَّغَفَ فِي رِقَابِهِمْ فَيُصْبِحُونَ فَرْسَى كَمَوْتِ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ يَهْبِطُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى الْأَرْضِ فَلَا يَجِدُونَ فِي الْأَرْضِ مَوْضِعَ شِبْرٍ إِلَّا مَلَأَهُ زَهَمُهُمْ وَنَتْنُهُمْ, فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللَّهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى اللَّهِ فَيُرْسِلُ اللَّهُ طَيْرًا كَأَعْنَاقِ الْبُخْتِ فَتَحْمِلُهُمْ فَتَطْرَحُهُمْ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ مَطَرًا لَا يَكُنُّ مِنْهُ بَيْتُ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ فَيَغْسِلُ الْأَرْضَ حَتَّى يَتْرُكَهَا كَالزَّلَفَةِ، ثُمَّ يُقَالُ لِلْأَرْضِ: أَنْبِتِي ثَمَرَتَكِ وَرُدِّي بَرَكَتَكِ فَيَوْمَئِذٍ تَأْكُلُ الْعِصَابَةُ مِنْ الرُّمَّانَةِ، وَيَسْتَظِلُّونَ بِقِحْفِهَا وَيُبَارَكُ فِي الرِّسْلِ حَتَّى أَنَّ اللِّقْحَةَ مِنْ الْإِبِلِ لَتَكْفِي الْفِئَامَ مِنْ النَّاسِ، وَاللِّقْحَةَ مِنْ الْبَقَرِ لَتَكْفِي الْقَبِيلَةَ مِنْ النَّاسِ، وَاللِّقْحَةَ مِنْ الْغَنَمِ لَتَكْفِي الْفَخِذَ مِنْ النَّاسِ، فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ رِيحًا طَيِّبَةً فَتَأْخُذُهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ فَتَقْبِضُ رُوحَ كُلِّ مُؤْمِنٍ وَكُلِّ مُسْلِمٍ، وَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ يَتَهَارَجُونَ فِيهَا تَهَارُجَ الْحُمُرِ فَعَلَيْهِمْ تَقُومُ السَّاعَةُ » . ( م ) صحيح

নাওয়াস ইব্‌ন সাম‘আন থেকে বর্ণিতঃ
কোন এক সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের উল্লেখ করলেন, তাতে তিনি আওয়াজ নিচু ও উঁচু করছিলেন, এমনকি আমরা তাকে (দাজ্জালকে) প্রতিবেশীর খেজুর বাগানে ধারণা করেছিলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ “আমি তোমাদের ওপর দাজ্জাল ব্যতীত অন্য কিছুর আশঙ্কা করছি, যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে থাকি, তাহলে আমিই তাকে মোকাবিলা করব তোমাদের পরিবর্তে। যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে না থাকি, তাহলে প্রত্যেকে তার নিজের জিম্মাদার, আর আমার অবর্তমানে আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের জিম্মাদার। দাজ্জাল কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট যুবক, তার চোখ ওপরে উঠানো, আমি তার উদাহরণ পেশ করছি আব্দুল উজ্জা ইব্‌ন কুতনকে। তোমাদের থেকে যে তাকে পাবে সে যেন তার ওপর সূরা কাহাফের প্রথম আয়াতগুলো পড়ে, নিশ্চয় সে বের হবে শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে, সে ডানে ও বামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা দৃঢ় থাক”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, যমীনে তার অবস্থান কি পরিমাণ হবে? তিনি বললেনঃ “চল্লিশ দিন, একদিন এক বছর সমান, অতঃপর একদিন এক মাসের সমান, অতঃপর একদিন এক জুমার সমান, অতঃপর তার অন্যান্য দিনগুলো তোমাদের দিনের ন্যায়”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, যে দিনটি এক বছরের ন্যায় সেখানে কি একদিনের সালাত যথেষ্ট? তিনি বললেনঃ “না, তোমরা তার পরিমাণ করবে”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল যমীনে তার গতি কিরূপ হবে? তিনি বললেনঃ “মেঘের মত, যাকে বাতাস হাঁকিয়ে নিয়ে যায়, সে এক কওমের নিকট আসবে তাদেরকে আহ্বান করবে, ফলে তারা তার ওপর ঈমান আনবে ও তার ডাকে সাড়া দিবে, অতঃপর সে আসমানকে নির্দেশ করবে আসমান বৃষ্টিপাত করবে, যমীনকে নির্দেশ করবে যমীন শস্য জন্মাবে, এবং তাদের জন্তুগুলো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে উঁচু চুটি, দুধে পরিপূর্ণ ও দীর্ঘ দেহ নিয়ে। অতঃপর এক কওমের নিকট আসবে তাদেরকে দাওয়াত দিবে, কিন্তু তারা তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করবে, সে তাদের থেকে চলে যাবে ফলে তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হবে তাদের হাতে তাদের সম্পদের কিছুই থাকবে না। সে ধ্বংস স্তূপের পাশ দিয়ে যাবে অতঃপর তাকে বলবেঃ তোমার সম্পদ তুমি বের কর, ফলে তার সম্পদ তার অনুগামী হবে মক্ষী রাণীর ন্যায়, অতঃপর সে পূর্ণ এক যুবককে ডাকবে ও তলোয়ারের আঘাতে দু’টুকরো করে ঢিলার দূরত্ব পরিমাণ দুই ধারে নিক্ষেপ করবে, অতঃপর তাকে ডাকবে সে এগিয়ে আসবে ও হাসিতে তার চেহারা উজ্জ্বল থাকবে। দাজ্জাল এরূপ করতে থাকবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ মাসিহ ইব্‌ন মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন, তিনি দামেস্কের পূর্ব দিকে সাদা মিনারের কাছে অবতরণ করবেন দু’টি কাপড় পরিহিত অবস্থায় ফেরেশতাদের ডানার ওপর তার দু’হাত রেখে। যখন তিনি মাথা নিচু করবেন (বৃষ্টির ন্যায়) পানি টপকাবে, যখন তিনি মাথা উঁচু করবেন মুক্তোর ন্যায় শ্বেত পাথর পড়বে, (অর্থাৎ পরিষ্কার পানি)। কোন কাফের এর পক্ষে সম্ভব হবে না তার শ্বাসের গন্ধ পাবে আর বেচে থাকবে, তার শ্বাস সেখানে যাবে যেখানে তার দৃষ্টি পৌঁছবে। তিনি তাকে সন্ধান করবেন অবশেষে ‘লুদ্দ’ নামক দরজার নিকট তাকে পাবেন, অতঃপর তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম এক কওমের নিকট আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ দাজ্জাল থেকে নিরাপদ রেখেছেন, তিনি তাদের চেহারায় হাত ভুলিয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তাদের মর্তবা সম্পর্কে তাদেরকে বলবেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তার নিকট ওহি করবেন, আমি আমার এমন বান্দাদের বের করেছি যাদের সাথে যুদ্ধ করার সাধ্য কারো নেই, অতএব তুমি আমার বান্দাদের নিয়ে তুরে আশ্রয় গ্রহণ কর, আল্লাহ ইয়াজুজ ও মাজুজকে প্রেরণ করবেন, তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে ছুটে আসবে। তাদের প্রথমাংশ পানিতে পূর্ণ নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, তারা তার পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষাংশ অতিক্রম করবে ও বলবেঃ এখানে কখনো পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ তুরে আটকা পড়বেন, অবশেষে গরুর একটি মাথা তাদের নিকট বর্তমানে তোমাদের একশো দিনার থেকে উত্তম হবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট মনোনিবেশ করবেন, ফলে আল্লাহ তাদের (ইয়াজুজ-মাজুজের) গ্রীবায় গুটির রোগ সৃষ্টি করবেন, ফলে তারা সবাই এক ব্যক্তির মৃতের ন্যায় মৃত পড়ে থাকবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ যমীনে অবতরণ করবেন, তারা যমীনে এক বিঘত জায়গা পাবে না যেখানে তাদের মৃত দেহ ও লাশ নাই। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন, ফলে তিনি উটের গর্দানের ন্যায় পাখি প্রেরণ করবেন, তারা এদেরকে বহন করে আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা নিক্ষেপ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, কাঁচা-পাকা কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবে না যেখানে সে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করবে না, যমীন ধৌত করে অবশেষে আয়নার মত করে দিবে। অতঃপর যমীনকে বলা হবেঃ তোমার ফল তুমি জন্মাও, তোমার বরকত তুমি ফেরৎ দাও, ফলে সেদিন এক দল লোক একটি আনার ভক্ষণ করবে এবং তার ছিলকা দ্বারা ছায়া গ্রহণ করবে, দুধে বরকত দেয়া হবে ফলে এক উটের দুধ কয়েক গ্রুপ মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। এক গরুর দুগ্ধ এক গ্রামের জন্য যথেষ্ট হবে। এক বকরির দুগ্ধ এক পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। তারা এভাবেই জীবন যাপন করবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ পবিত্র বাতাস প্রবাহিত করবেন, যা তাদের বগলের নিচ স্পর্শ করবে, ফলে সে প্রত্যেক মুমিন ও মুসলিমের রূহ কব্জা করবে, তখন কেবল সবচেয়ে খারাপ লোকগুলো অবশিষ্ট থাকবে, তারা গাধার ন্যায় (সবার সামনে) যৌনাচারে লিপ্ত হবে, অতঃপর তাদের ওপরই কিয়ামত কায়েম হবে”। [মুসলিম]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৯৯. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর প্রশংসামূলক কতক বাক্যের ফযিলত
১৬৩
عَنْ أَنَسٍ-رضي الله عنه- قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الصَّلَاةَ قَالَ: أَيُّكُمْ الْقَائِلُ كَذَا وَكَذَا، قَالَ: فَأَرَمَّ الْقَوْمُ. قَالَ فَأَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّار، فَقَالَ رَجُلٌ: أَنَا قُلْتُهَا وَمَا أَرَدْتُ بِهَا إِلَّا الْخَيْرَ، قَالَ: فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : « لَقَدْ ابْتَدَرَهَا اثْنَا عَشَرَ مَلَكًا فَمَا دَرَوْا كَيْفَ يَكْتُبُونَهَا حَتَّى سَأَلُوا رَبَّهُمْ -عَزَّ وَجَل-، فَقَالَ: اكْتُبُوهَا كَمَا قَالَ عَبْدِي». (حم) صحيح

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের নিকট সালাত অবস্থায় হাজির হয়ে বললঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে অমুক বাক্য পাঠকারী? সকলে চুপ রইল। তিনি বলেনঃ তিনি তিনবার তা বললেন, অতঃপর এক ব্যক্তি বললঃ আমি তা বলেছি, আমি ভাল ব্যতীত অন্য কিছু উদ্দেশ্য করিনি। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “বারোজন ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করার জন্য দ্রুত ছুটে এসেছে, তারা বুঝতে পারছিল না কিভাবে তা লিখবে, অবশেষে তাদের রবের নিকট জিজ্ঞাসা করে, অতঃপর তিনি বলেনঃ আমার বান্দা যেরূপ বলেছে সেরূপ লিখ”। [আহমদ]

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস




ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png