LIVE
Loading latest headlines...

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সহিহ বুখারীর দারস-বিষয়ঃ কিতাবুল ঈমান ২য় পর্ব

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

 আজকের আলোচক 

শাইখ মতিউর রহমান মাদানী

সহিহ বুখারীর দারস-বিষয়ঃ কিতাবুল ঈমান ২য় পর্ব 




আমার মন কাদেঁর, আমার প্রাণ কাদেঁরে - ইসলামিক সঙ্গীত

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

 দলগত ইসলামিক সঙ্গীত  

কোথায় গেলে পাবো-

আমার প্রিয় নবীকে--



বইঃ তাফসীরে উসমানী

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে


লেখকঃ

তাফসীরে উসমানী

শাব্বির আহমদ উসমানি
জন্মের তারিখ এবং স্থান: ১১ অক্টোবর, ১৮৮৭, বিজনোর
মরার তারিখ এবং স্থান: ১৩৬৯ হিঃ, বাহাওয়ালপুর রাজ্য
শিক্ষা: দারুল উলুম দেওবন্দ
তাফসীরে উসমানী

শাব্বির আহমদ উসমানি ভারতের একজন মুসলিম পন্ডিত ছিলেন। ১৯৪০ এর দশকে তিনি পাকিস্তান সৃষ্টিতে সমর্থন জানান। তিনি একজন লেখক ধর্মতাত্ত্বিক, বক্তা, রাজনীতিবিদ এবং তাফসির ও হাদিসের পন্ডিত ছিলেন। সেসাথে তিনি শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসানের ছাত্র ও খলিফা ছিলেন।




মার্কিন নারী আমিনা এসলিমি খৃষ্টধর্ম প্রাচারে গিয়ে নিজেই ইসলাম গ্রহণ করেন

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

 

আমিনা এসলিমি’ নামের একজন মার্কিন নও-মুসলিম মহিলার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা অনেকেরই জানা। তবে তার আত্মকথা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। এখানে সেই কাহিনী তুলে ধরা হল। পবিত্রতা ও শান্তিপিয়াসী মানুষ ধর্মমুখী হচ্ছেন। ধর্ম মানুষের প্রকৃতিগত বিষয়। তাই তা ইতিহাস ও ভৌগলিক সীমারেখার গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং ধর্ম নানা জাতি, গোত্র ও শ্রেণীর মধ্যে গড়ে তুলে ঐক্য ও সম্পর্ক। তাই যারা নিজের সত্যপিয়াসী প্রকৃতির দিকে ফিরে যেতে চান, ধর্ম তাদেরকে ফিরিয়ে দেয় পবিত্রতা ও শান্তি আর এমনই পবিত্রতা ও শান্তি পাচ্ছেন সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ ঐশী ধর্ম ইসলামের মধ্যে আমিনা এসলিমির মত সত্যপ্রিয় পশ্চিমা নাগরিকরা। পেশায় সাংবাদিক মিসেস আমিনা এসলিম ছিলেন একজন গোঁড়া খৃস্টান ও খৃস্ট ধর্মের প্রচারক। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি প্রচার করতেন খৃস্ট ধর্ম। তিনি মনে করতেন, ইসলাম একটি কৃত্রিম ধর্ম এবং মুসলমানেরা হল অনুন্নত ও পশ্চাদপদ একটি জাতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারের একটি ভুল তার জীবনের মোড় পুরোপুরি বদলে দেয়। বর্তমানে তিনি বিশ্ব মুসলিম নারী রক্ষার কাজে মশগুল ।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর মার্কিন নওমুসলিম আমিনা এসলিমি এখন সম্পূর্ন ভিন্ন ধরণের মানুষ। এক সময়ের খৃস্ট ধর্ম প্রচারক এই নারী আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বহু মানুষের মনে জ্বালাতে পেরেছেন ইসলামের প্রোজ্জ্বল ও প্রদীপ্ত আলোর শিখা। তিনি বলেছেন ইসলাম আমার হৃদয়ের স্বপন্দন ও আমার শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত রক্তধারা এবং আমার সমস্ত প্রেরণার উৎস হ’ল এই ইসলাম। এ ধর্মের সুবাদে আমার জীবন হয়েছে অপরূপ সুন্দর ও অর্থপূর্ণ। ইসলাম ছাড়া আমি কিছুই নই। মার্কিন নও-মুসলিম আমিনা এসলিমি কম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নতুন টার্মের ক্লাশে ভর্তি হওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে একটি ভুল বিষয়ের ক্লাশে ভর্তি হন। কিন্তু এই সময় সফরে থাকায় তিনি তার এই ভুল বুঝতে পারেননি। পরে যখন এই বিষয় সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন জানতে পারেন যে, এই বিষয়ের ক্লাশে যোগ দেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আর ওই ক্লাশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই আরব মুসলমান। যদিও মিসেস এসলিমি আরব মুসলমানদের ঘৃণা করতেন, কিন্তু বৃত্তির অর্থ বাঁচানোর জন্য তাদের সহপাঠী হওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না তার। এ অবস্থায় তার মন খুব বিষন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু তার স্বামী যখন বললেন, হয়তো স্রষ্টা এটাই চেয়েছিলেন এবং তিনি হয়তো তোমাকে আরব মুসলমানদের মধ্যে খৃস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য মনোনীত করেছেন; তখন খৃস্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়েই মিসেস এসলিমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ক্লাশে গেলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ হলেই নানা অজুহাতে তাদের কাছে খৃস্ট ধর্মের দাওয়াত দিতেন মিসেস এসলিমি। তারা যেন নিজেদের মুক্তি নিশ্চিত করেন। কারণ, ঈসা মাসীহ মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যই নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। অবশ্য তারাও অর্থাৎ আরব মুসলিম শিক্ষার্থীরাও বেশ ভদ্রতা ও সম্মান দেখিয়ে মিসেস এসলিমির কথা শুনতেন। কিন্তু তাদের মধ্যে এইসব কথার কোন প্রভাব পড়ত না। এ অবস্থায় মিসেস এসলিমি ভিন্ন পথ ধরতে বাধ্য হন। তিনি এ পুস্তক দিয়েই তাদের কাছে এ ধর্মের ভুল চিন্তা-বিশ্বাস প্রমাণ করব। এই উদ্দেশ্যে আমার বন্ধুদের বললাম, তারা যেন আমার জন্য পবিত্র কুরআনের একটি কপিসহ কিছু ইসলামী বই-পুস্তক নিয়ে আসেন, যাতে এটা দেখানো যায় যে, ইসলাম ধর্ম একটি মিথ্যা ধর্ম এবং তাদের নবীও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ নয়। এভাবে মার্কিন সাংবাদিক মিসেস এসলিমি বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া পবিত্র কুরআন পড়া শুরু করেন। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে পাওয়া দুটি ইসলামী বইও পড়েন তিনি। এ সময় তিনি ইসলামী বই-পুস্তক পড়ায় এত গভীরভাবে নিমজ্জিত হন যে, দেড় বছরের মধ্যে তিনি পনেরটি ইসলামী বই পড়েন এবং পবিত্র কুরআন দুইবার পড়া শেষ করেন। চিন্তাশীল হয়ে উঠা মিসেস এসলিমি বদলে যেতে থাকেন। মদ্যপান ও শূকরের মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন তিনি। সব-সময়ই পড়াশুনায় মশগুল থাকতেন এবং নারীপুরুষের অবাধ-মেলামেশার সুযোগ থাকত এমন সব পার্টি বা উৎসব অনুষ্ঠান বর্জনের চেষ্টা করতেন। সে সময়কার অবস্থা সম্পর্কে মিসেস এসলিমি বলেছেন- কখনও ভাবিনি যে, ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে গেলে বিশেষ ঘটনা ঘটবে এমনকি আমার প্রাত্যহিক জীবন-ধারাও বদলে যাবে। সে সময়ও এটা কল্পনাও করতে পারিনি যে, খুব শিগগিরই আমি আমার হৃদয়ের প্রশান্তির পাখাগুলো ও ঘুমিয়ে থাকা ঈমান নিয়ে ইসলামী বিশ্বের সৌভাগ্যের আকাশে উডডয়ন করব ।

এর পরের ঘটনা বলতে গিয়ে মিসেস এসলিমি বলেছেন, আমার আচরণে কিছু পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও নিজেকে তখনও মনে করতাম। একদিন একদল মুসলমানের সঙ্গে সংলাপের সময় আমি যতই তাদের প্রশ্ন করছিলাম, তারা অত্যন্ত দৃঢ়তা ও দক্ষতার সঙ্গে সে সবের জবাব দিচ্ছিলেন। পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আমার অদ্ভুত সব মন্তব্য ও বক্তব্যের জন্য তারা আমাকে একটুও পরিহাস করেন নি। এমনকি ইসলাম সম্পর্কে আমার তীব্র আক্রমনাত্মক বক্তব্য শুনেও তারা মোটেও দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হননি। তারা বলতেন, জ্ঞান মুসলমানের হারানো সম্পদ। আর প্রশ্ন হ’ল জ্ঞান অর্জ
র একটি পথ। তারা যখন চলে গেলেন মনে হ’ল আমার ভিতরে যেন কিছু একটা ঘটে গেছে। এরপর থেকে মুসলমানদের সঙ্গে মিসেস এসলিমির যোগাযোগ বাড়তে থাকে। আমি যখনই নতুন কিছু প্রশ্ন করতাম তখনই তারা আমার কাছে আরও কিছু নতুন প্রসঙ্গ তুলে ধরতেন। এ অবস্থায় একদিন একজন মুসলিম আলেমের সামনে

সাক্ষ্য দিলাম- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল। মুসলমান হওয়ার পর হিজাব বা পর্দা বেছে নেন মিসেস এসলিমি। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ও সন্তানের মালিকানারাও প্রশ্ন চলে আসে। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বিচারক তাকে তার দুই সন্তান ও ইসলামের মধ্যে একটি বেছে নিতে বললে মহাদ্বিধা-দ্বন্দের পড়েন মিসেস এসলিমি। একজন মমতাময়ী মায়ের জন্য সন্তানের দাবী ত্যাগ করা তো দূরের কথা, তাদের কাছ থেকে একদিনের জন্যও দূরে থাকাও বিশেষ কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামের প্রতি ও মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মার্কিন নও-মুসলিম মিসেস এসলিমি। দুই বছর ধরে ইসলাম সম্পর্কে তার গবেষণা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতাই তাকে শক্তি যুগিয়েছে। তার মনে পড়ে কুরআনে উল্লিখিত হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম ) এর সন্তান কুরবানী দেয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালনের ঘটনা। মনে পড়ে কুরআনের এই আয়াত- যে ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারে, যে । আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করেছে? বস্তুতঃ তার ঠিকানা হল দোযখ আর তা কতইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল। মার্কিন নওমুসলিম মিসেস এসলিমি মুসলমান হওয়ার পর আমেরিকায় ইসলাম প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। কয়েক বছরের প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের জন্য আরবী ভাষায় ঈদের শুভেচ্ছার সরকারী স্ট্যাম্প প্রকাশ করতে মার্কিন সরকারকে সম্মত করেন।

মিসেস আমিনা এসলিমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ও শহরে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার অনুভূতি তুলে ধরে বক্তব্য বা ভাষণ দিয়েছেন। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এইসব ভাষণ শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এইসব প্রচেষ্টার অন্যতম সুফল হিসেবে একদিন তার দাদী ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর তার বাবা, মা, বোনও মুসলমান হন। এর কিছুকাল পর তার সাবেক স্বামীও জানান যে, তিনি তার তাদের মেয়েরা মায়ের ধর্মই অনুসরণ করুক। তিনি মেয়েদেরকে কেড়ে নেয়ার জন্য তার কাছে ক্ষমাও চান। আর এসলিমিও তাকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অপরাধে একদিন যারা তাকে ত্যাগ করেছিল, তারা সবাই তাদের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় এবং সত্যকে স্বীকার করে নেয়। প্রাণপ্রিয় সন্তানদের ফিরে পাওয়াকে এসলিমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য আরও একটি বড় বিজয় বলে মনে করেন। এভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে ঈমানের মহা সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। তিনি জানেন কারা সত্যের ও আল্লাহর প্রেমিক।

– সাদিয়া আহমদ আনিকা



প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য যা জানা একান্ত কর্তব্য

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে


মুল: আশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান আত্‌তামীমী (রাহ:) 
গ্রন্থনা: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন ইবরাহীম আল কারআওয়ী। 
ভাষান্তর : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া মজুমদার

ভূমিকা
সর্বপ্রথম আমি আল্লাহর প্রশংসা আদায় করছি, যিনি আমাকে সঠিক পথ দিয়েছেন, সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পেশ করছি, যার অনুসরনের মধ্যেই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। আল্লাহ তা‘আলার খাস রহমাত যে তিনি তাঁর এ বান্দাকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা করার তৌফিক দিয়েছেন তার জন্য বলি আলহামদুলিল্লাহ্। দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের তাওফীক হওয়া যেমনি সৌভাগ্যের ব্যাপার তেমনি তা দায়িত্বও বটে। আমার জাতি যারা বাংলা ভাষাভাষি তারাই আমার গুরুত্বের বেশী হকদার। তাদের হিদায়াতের জন্য কিছু করা উচিত। পৃথিবীর এক বৃহত্তম জনগোষ্ঠী এ ভাষায় কথা বলে। তাদের সংখ্যা একশত নব্বই মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। তাদের মধ্যে রয়েছে সঠিক আক্কীদা চর্চার অভাব। তাই এ বইটি তাদের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। যা আয়তনে ছোট হলেও আক্কীদার মৌলিক বিষয়সমুহে সমৃদ্ধ।

হিজরী ১৪১৪ সালেই প্রথম এর অনুবাদ করি, এবং নিজস্ব প্রচেষ্টায় আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজানের লাইব্রেরী থেকে ছাপানো এবং বিনামুল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করি।

ইতিমধ্যে এর সমস্ত কপি নিঃশেষ হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মত ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, এবং উদ্যোগ গ্রহণ করি। পূর্বের সংস্করণের চেয়ে বর্ধিতভাবে বর্তমান সংস্করণে এর মধ্যকার আয়াত সমুহকে সুরার দিকে নির্দেশ করি, আর হাদীসসমুহকে যে সমস্ত মুল গ্রন্থ থেকে তা নেওয়া হয়েছে তার দিকে নির্দিষ্ট করি। আর কিছু বানানগত ভুল - ত্রুটি শুদ্ধ করি। আল্লাহ তা‘আলা আমার এ প্রচেষ্টা কবুল করুন, এবং হাশরের মাঠে আমার জন্য নাজাতের ওসীলা বানান। আমীন ॥
-আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তিনটি মূলনীতি
যা জানা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর একান্ত কর্তব্য

মুলনীতিগুলো হলো :

১। রব বা পালন কর্তা সম্পর্কে জানা।
২। দ্বীন সম্পর্কে জানা।
৩। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা।

রব কে জানার পদ্ধতি :
যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার রব বা পালনকর্তা কে?

তখন উত্তরে বলবে আমার রব হলেন আল্লাহ, যিনি আমাকে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে তার অনুগ্রহে লালন করছেন, তিনিই আমার একমাত্র উপাস্য,তিনি ব্যতিত আমার অপর কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই।

দ্বীন জানার পদ্ধতি:
যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার দ্বীন কি?
উত্তরে বল : আমার দ্বীন হলো ইসলাম, যার মানে - আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে সম্পূর্নভাবে তাঁর কাছে আত্নসমর্পণ করা, তাঁর নির্দেশ অনুসরণের মাধ্যমে স্বীকার করা, এবং আল্লাহর ইবাদতে অন্য কিছুর অংশীদারীত্ব করা থেকে মুক্ত থাকা এবং যারা তা করে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানার পদ্ধতি:
যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয় তোমার নবী কে?
উত্তরে বল, তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, যার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং দাদার নাম আবদুল মোত্তালি, প্রপিতামহের নাম হাশিম। আর হাশিম কোরাইশ গোত্রের, কোরাইশগন আরব, যারা ইব্রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম এর পুত্র ইসমাঈলের বংশধর।
দ্বীন এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি
দ্বীন এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি দুটি বিষয়ের উপর :
এক : আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের নির্দেশ দেয়া, এ ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করা, যারা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, এবং যারা তা ত্যাগ করে তাদেরকে কাফির মনে করা।
দুই :
আল্লাহর ইবাদাতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে সাবধান করা, এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা, এবং যারা তাঁর সাথে শির্ক করে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা এবং যারা শির্ক করবে তাদেরকে কাফির মনে করা।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কালেমা তাইয়্যেবা) মেনে চলার শর্তাবলী

এক : কালেমা তাইয়্যেবার অর্থ জানা।
অর্থাৎ এ কালেমার দুটো অংশ রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে জানা।
সে দুটো অংশ হলো:
1. কোন হক্ক মা’বুদ নেই
2. আল্লাহ ছাড়া (অর্থাৎ তিনিই শুধু মা’বুদ)

দুই : কালেমা তাইয়্যেবার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
অর্থাৎ সর্ব প্রকার সন্দেহ ও সংশয়মুক্ত পরিপূর্ণ বিশ্বাস থাকা ।
তিন : কালেমার উপর এমন একাগ্রতা ও নিষ্ঠা রাখা, যা সর্বপ্রকার শিরকের পরিপন্থী।
চার : কালেমাকে মনে প্রাণে সত্য বলে জানা, যাতে কোন প্রকার মিথ্যা বা কপটতা না থাকে।
পাঁচ : এ কালেমার প্রতি ভালবাসা পোষণ এবং কালেমার অর্থকে মনে প্রাণে মেনে নেয়া ও তাতে খুশী হওয়া।
ছয় : এই কালেমার অর্পিত দায়িত্ব সমূহ মেনে নেয়া অর্থাৎ এই কালেমা কর্তৃক আরোপিত ওয়াজিব কাজসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই সন্তুষ্টির নিমিত্তে সমাধান করা।
সাত : মনে-প্রাণে এই কালেমাকে গ্রহণ করা যাতে কখনো বিরোধিতা করা না হয়।
কালেমা তাইয়্যেবার যে সমস্ত শর্ত বর্ণিত হলো, তার সমর্থনে কোরআন ও হাদীস থেকে দলিল প্রমাণাদি:

প্রথম শর্ত: কালেমার অর্থ জানা। এর দলিল : আল্লাহর বাণী:
﴿فَاعْلَمْ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ﴾
‘জেনে রাখুন নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মা‘বুদ নেই।” [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯] আল্লাহ আরো বলেন:
﴿وَلا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾
“তবে যারা হক্ক (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) এর সাক্ষ্য দিবে এমনভাবে যে, তারা তা জেনে শুনেই দিচ্ছে অর্থাৎ তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।” [সূরা আয যুখরুফ: ৮৬]

এখানে জেনে শুনে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ হলো তারা মুখে যা উচ্চারণ করছে তাদের অন্তর তা সম্যকভাবে জানে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা যায় যে সে জানে আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক উপাস্য নেই সে জান্নাতে যাবে।” [মুসলিম(১/৫৫) হাদীস নং (২৬)]

দ্বিতীয় শর্ত : কালেমার উপর বিশ্বাসী হওয়া। এর প্রমাণাদি:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “নিশ্চয়ই মুমীন ওরাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে , অত:পর এতে কোন সন্দেহ-সংশয়ে পড়েনি এবং তাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী।” [সুরা আল হুজরাতঃ (১৫)]

এ আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান যথাযথভাবে হওয়ার জন্য সন্দেহ সংশয়মুক্ত হওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে, অর্থাৎ তারা সন্দেহ করেনি, কিন্তু যে সন্দেহ করবে সে মুনাফিক, ভন্ড (কপট বিশ্বাসী)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক মা’বুদ বা উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল। যে বান্দা এ দুটো বিষয়ে সন্দেহ - সংশয় মুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসলিম (১/৫৬), হাদীস নং (২৭০)]

আর এক বর্ণনায় এসেছে : “কোন ব্যক্তি এ দু'টো নিয়ে সন্দেহহীন অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হবে জান্নাতে যাওয়ার পথে তার কোন বাধা থাকবেনা।” [মুসলিম (১/৫৬), হাদীস নং (২৭০)]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে অপর এক হাদীসের বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছিলেনঃ “তুমি এ বাগানের পিছনে এমন যাকেই পাও, যে মনের পরিপূর্ণ বিশ্বাস এর সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক মা’বুদ নেই তাকেই জান্নাতের শুসংবাদ প্রদান করবে।” [মুসলিম (১/৫৯)]

তৃতীয় শর্ত : এ কালেমাকে ইখলাস বা নিষ্ঠা সহকারে স্বীকার করা।
এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:“তবে জেনে রাখ দ্বীন খালেছ সহকারে বা নিষ্ঠা সহকারে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই।” [সূরা আয্‌যুমারঃ ৩]

আল্লাহ আরো বলেন: “তাদেরকে এ নির্দেশই শুধূ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে আল্লাহর জন্যই খালেস করে সম্পূর্ণরুপে একনিষ্ঠ ও একমুখী হয়ে তারই ইবাদাত করবে।” [সূরা আল বাইয়েনাহঃ ৫]

হাদীস শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তিই বেশী সৌভাগ্যবান হবে যে অন্তর থেকে একনিষ্ঠভাবে বলেছে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার উপাস্য নেই।” [বুখারী , হাদীস নং ৯৯]

অপর এক সহীহ হাদীসে সাহাবী উৎবান বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ( لا إله إلا الله) বা আল্লাহ ছাড়া হক্ক কোন মা’বুদ নেই বলেছে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।” [মুসলিম ১/৪৫৬, হাদীস নং- ২৬৩, বুখারী, হাদীস নং ৪২৫]

ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত “দিন রাত্রির জিক্‌র” নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি মনের নিষ্ঠা সহকারে এবং মুখে সত্য জেনে নিম্নোক্ত কলেমা সমুহ বলবে আল্লাহ সেগুলির জন্য আকাশকে বিদীর্ণ করবেন যাতে তার দ্বারা জমীনের মাঝে কে এই কালেমাগুলি বলেছে তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আর যার দিকে আল্লাহর নজর পড়বে তার প্রার্থিত ও কাংখিত বস্তু তাকে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। সে কালেমাগুলি হলো:
)لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير(
অর্থাৎ : “শুধুমাত্র আল্লাহ ছাড়া হক্ক কোন মা’বুদ নেই, তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই, তার জন্যই সমস্ত রাজত্ব বা একচ্ছত্র মালিকানা, তার জন্যই সমস্ত প্রশংসা আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান”। [নাসায়ী , আমালুল ইয়াওমে ওয়াল্লাইলা, হাদীস নং- ২৮]

চতুর্থ শর্ত : কলেমাকে মনে প্রাণে সত্য বলে জানা। এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আলিফ-লাম-মীম, মানুষ কি ধারণা করেছে যে, ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে আর তাদের পরীক্ষা করা হবেনা? আমি তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি যাতে আল্লাহর সাথে যারা সত্য বলেছে তাদেরকে স্পষ্ট করে দেন এবং যারা মিথ্যা বলেছে তাদেরকেও স্পষ্ট করে দেন।” [সূরা আলআনকাবুতঃ ১-৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন : “মানুষের মাঝে কেউ কেউ বলে আমরা আল্লাহ এবং পরকালের উপর ঈমান এনেছি, অথচ তারা ঈমানদার নয়, তারা (তাদের ধারণামতে) আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করছে, অথচ (তারা জানেনা) তারা কেবল তাদের আত্মাকেই প্রতারিত করছে কিন্তু তারা তা বুঝতেই পারছেনা। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি, ফলে আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর মিথ্যা বলার কারণে তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।” [সূরা আল বাকারাঃ ৮-১০]

তেমনিভাবে হাদীস শরীফে মুআ’য বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে কোন লোক মন থেকে সত্য জেনে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত হক্ক কোন মা’বুদ নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।” [বুখারী , হাদীস নং- ১২৮, মুসলিমঃ ১/৬১]

পঞ্চম শর্ত : এ কালেমাকে মনে প্রাণে ভালবাসা।
এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “কোন কোন লোক আল্লাহ ছাড়া তার অনেক সমকক্ষ ও অংশীদার গ্রহণ করে তাদেরকে আল্লাহর মত ভালবাসে, আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে অত্যন্ত বেশী ভালবাসে” । [সূরা আল বাকারাঃ ১৬৫]

আল্লাহ আরো বলেন : “হে ঈমানদারগণ তোমাদের থেকে যদি কেহ তার দ্বীনকে পরিত্যাগ করে তবে আল্লাহ এমন এক গোষ্ঠীকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করে আনবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসেন, যারা মুমীনদের প্রতি নরম- দয়াপরবশ, কাফেরদের উপর কঠোরতা অবলম্বনকারী; তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করেনা।” [সূরা আল মায়েদাঃ ৫৪]

তেমনিভাবে হাদীস শরীফে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যার মধ্যে তিনটি বস্তুর সমাহার ঘটেছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে: (এক) তার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্বত বা ভালবাসা অন্য সবকিছু থেকে বেশী হবে। (দুই) কোন লোককে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসবে। (তিন) কুফরী থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দেয়ার পর সে কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করবে।” [বুখারী, হাদীস নং- ৪৩, মুসলিমঃ ১/৬৬]

ষষ্ট শর্ত: কালেমার হকসমুহ মনে প্রাণে মেনে নেয়া
এর দলীল: আল্লাহর বাণী: “আর তোমরা তোমাদের প্রভুর দিকে ফিরে যাও, এবং তাঁর কাছে আত্নসমর্পণ করো।” [সূরা আয্‌যুমারঃ ৫৪]

আল্লাহ আরো বলেন: “আর তারচেয়ে কার দ্বীন বেশী সুন্দর যে আল্লাহর জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছে, এমতাবস্থায় যে, সে মুহসীন”, [সূরা আন্‌নিসাঃ ১২৫] মুহসীন অর্থ : নেককার, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছে।

আরও বলেন: “আর যে নিজেকে শুধুমাত্র আল্লাহর দিকেই নিবদ্ধ করে আত্নসমর্পন করেছে আর সে মুহসীন”, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছে “সে মজবুত রশিকে আঁকড়ে ধরেছে” [ সূরা লুকমানঃ ২২] অর্থাৎ : لا إله إلا الله বা আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মাবুদ নেই এ কালেমাকেই সে গ্রহণ করেছে।

আরও বলেন: “তারা যা বলছে তা নয়, তোমার প্রভূর শপথ করে বলছি, তারা কক্ষনো ঈমানদার হবেনা যতক্ষণ আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার নিষ্পত্তিকারক (বিচারক) হিসাবে না মানবে, অত:পর আপনার বিচার- ফয়সালা গ্রহণ করে নিতে তাদের অন্তরে কোন প্রকার অভিযোগ থাকবেনা এবং তারা তা সম্পূর্ন কায়মনোবাক্যে নির্দ্বিধায় মেনে নিবে।” [সূরা আন্‌নিসাঃ ৬৫]

অনুরুপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মাঝে কেউই ঐ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন তার প্রবৃত্তি আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসারী হবে।” [হাদীস খানি খতিব বাগদাদী তার তারিখে বাগদাদের ৪/৩৬৯, এবং বাগাভী তার সারহুছছুন্নার ১০৪ নং এ বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ শুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে।] আর এটাই পূর্ণ আনুগত্য ও তার শেষ সীমা।
সপ্তম শর্ত: কালেমাকে গ্রহণ করা।

এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর এমনিভাবে যখনই আপনার পূর্বে আমি কোন জনপদে ভয় প্রদর্শনকারী (রাসূল বা নবী) প্রেরণ করেছি তখনি তাদের মধ্যকার আয়েসী বিত্তশালী লোকেরা বলেছে : আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে একটি ব্যবস্থায় পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করবো। (ভয় প্রদর্শনকারী) বলল: আমি যদি তোমাদের কাছে বাপ-দাদাদেরকে যার উপর পেয়েছ তার থেকে অধিক সঠিক বা বেশী হেদায়েত নিয়ে এসে থাকি তারপরও? (তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার অনুকরণ করবে?) তারা বলল: তোমরা যা নিয়ে এসেছ আমরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছি, ফলে আমি (আল্লাহ) তাদের থেকে (এ কুফরীর) প্রতিশোধ নেই, সুতরাং আপনি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণামফল কেমন হয়েছে দেখে নিন।” [সূরা আযযুখরুফঃ ২৩-২৫] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “নিশ্চয়ই তারা অযথা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতো যখন তাদেরকে বলা হত যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মা’বুদ নেই, এবং বলতো: আমরা কি পাগল কবির কথা শুনে আমাদের উপাস্য দেবতাগুলিকে ত্যাগ করবো?” [সূরা আস্‌সাফ্‌ফাতঃ ৩৫-৩৭]

অনুরুপভাবে হাদীসে শরীফে আবু মুসা আশআ’রী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান বিজ্ঞান ও হেদায়েত দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হচ্ছে এমন মুষলধারার বৃষ্টির মতো যা ভূমিতে এসে পড়েছে, ফলে এর কিছু অংশ এমন উর্বর পরিষ্কার ভূমিতে পড়েছে যে ভূমি পানি চুষে নিতে সক্ষম, ফলে তা পানি গ্রহণ করেছে, এবং তা দ্বারা ফসল ও তৃণলতার উৎপত্তি হয়েছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে গর্তওয়ালা ভূমিতে (যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম) সুতরাং তা পানি সংরক্ষন করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে আল্লাহ এর দ্বারা মানুষের উপকার করেছেন তারা তা পান করেছে, ভূমি সিক্ত করিয়েছে এবং ফসলাদি উৎপন্ন করতে পেরেছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে এমন অনুর্বর সমতল ভূমিতে যাতে পানি আটকে থাকেনা, ফলে তাতে পানি আটকা পড়েনি, ফসলও হয়নি। ঠিক এটাই হলো ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আল্লাহর দ্বীনকে বুঝতে পেরেছে এবং আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হতে পেরেছে, ফলে সে নিজে জেনেছে এবং অপরকে জানিয়েছে। (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর ভূমি)। এবং ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এই হিদায়েত এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়নি, ফলে আল্লাহ যে হিদায়েত নিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তা গ্রহণ করেনি। (তৃতীয় শ্রেনীর ভূমি) ।” [সহীহ বুখারী, ১/১৭৫ হাদীস নং ৭৯, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২২৮২]



বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বই: ছহীহ কিতাবুদ দো’আ

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

 

 বইটিতে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দো’আসমূহ সংকলিত হয়েছে। পাঠকের সুবিধার্থে ‘ছহীহ কিতাবুদ দো‘আ’ বইটি তিনটি পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। ১ম পর্বে পবিত্র কুরআনের দো‘আ সমূহ, ২য় পর্বে ছালাত সংগান্ত প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ এবং ৩য় পর্বে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ। বইটির ১ম পর্বে উৎস ও আমল সহ ৪৫টি কুরআনী দো‘আ স্থান পেয়েছে। এছাড়া ২য় পর্বে ৩০ টি ও ৩য় পর্বে ৬৭ টি মূল দো‘আসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আনুসঙ্গিক অনেক দো‘আর সমাবেশ ঘটেছে। সর্বসাধারণের সুবিধার্থে প্রতিটি দো‘আর বাংলা উচ্চারণ এবং অনুবাদ সহজ ভাষায় পেশ করা হয়েছে। হাদীছের নম্বরসমূহ ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ কর্তৃক প্রকাশিত ছহীহ বুখারী এবং এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ ‘মেশকাত শরীফ’ থেকে গৃহীত হয়েছে। বইটি লিখেছেন মুহাম্মাদ নুরূল ইসলাম।



যেমন কর্ম তেমন ফল

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

 

অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর। সেজন্যই সম্ভবত অ্যালেকজান্ডার পােপ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন
A little learning is a dangerous thing
Drink deep or taste not the Pierian spring.
কোনাে বিষয়ে ভাসা ভাসা জ্ঞান অর্জন করার চেয়ে সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝে নেয়াই কাম্য। নতুবা অসম্পূর্ণ জ্ঞানের ওপর আমল করতে গিয়ে অনর্থ সৃষ্টি হয়।

কিছু কিছু আধুনিক ছেলেমেয়েদের এক বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কুরআন, হাদীস, তাফসীর , ফিকহ কিছুই না পড়ে ইউটিউবে কখানা লেকচার দেখে মুই কি হনুরে’ মনে করা। ব্যাস, তাদের না যায় কিছু বলা আর না যায় কিছু বুঝানাে। ব্যাপারটা এতটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলেও হতাে। কিন্তু যখন ওরা এই অপর্যাপ্ত জ্ঞান অনুযায়ী নিজেরা চলে এবং অন্যদের লেকচার দেয় তখন আরও বড় বিপদ দেখা দেয়। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের কিছু বােনরা ধারণা পেয়ে বসেছে যে, শ্বশুরবাড়ির লােকজনের প্রতি তাদের কোনাে দায়দায়িত্ব নেই। সুতরাং তারা অপরপক্ষের সাথে সামান্য সদাচরণটুকুও বজায় রাখা নিষ্প্রয়ােজন মনে করে। স্বামী যেন তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ। সুতরাং স্বামীকে মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে সহযােগিতা করা তাে দূরে থাক; বরং সে নিজে কিছু করলেও বিরক্তি প্রকাশ করে।
নিতান্ত নিরুপায় হয়ে এই বিষয়ে আলােকপাত করতে হচ্ছে। যেহেতু আমাদের এই অবুঝ বােনগুলাের কারণে ইসলামের ব্যাপারে স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন লােকজনের মনে ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। তারা ইসলামকে কটাক্ষ করার সুযােগ পাচ্ছে। অথচ ইসলামের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে যথাসম্ভব মানবীয় দুর্বলতার ঊর্ধ্বে উত্তরণ করতে সহায়তা করা, যাতে সবার অধিকার সংরক্ষিত হয়।
আমরা কুরআন আদ্যোপান্ত পড়লে দেখতে পাই, এখানে এমন কোনাে বিষয় নেই যা আলােচনা করা হয়নি। ঈমান আকিদা থেকে বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমরনীতি, এমনকি পারস্পরিক আচরণগুলাে পর্যন্ত স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। পারস্পরিক আচরণের ক্ষেত্রে যে সম্পর্ক সবচেয়ে সহজ, স্বাভাবিক এবং আন্তরিক, সেই মা-বাবার সাথে সম্পর্কের নিয়ামাবলি পর্যন্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মা-বাবার সাথে কেমন আচরণ করা যাবে, কী করা যাবে না, তা স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে প্রত্যেক সন্তান তার মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ করবে, সাধ্যমতাে দেখাশােনা করবে, সকল আদেশ-নিষেধ মান্য করবে (সে সকল ক্ষেত্র ব্যতীত যা আল্লাহ তায়ালার আদেশের বিরুদ্ধে যায়) এবং কখনােই তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করবে না। এভাবেই ভাইবােন, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু, প্রতিবেশি এমনকি শত্রুর সাথে আচরণ কেমন হবে তা পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অথচ কুরআনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। শ্বশুরবাড়ির সাথে জামাতা বা বউয়ের আচরণ কেমন হবে। আমাদের কিছু কিছু বােন এখান থেকে ধরে নিয়েছে, শ্বশুরবাড়ির প্রতি আমাদের কোনাে দায়দায়িত্ব নেই। যিনি সবার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কুরআন নাযিল করেছেন, আমরা কীভাবে ধরে নিতে পারি তিনি এই বিষয়টি কোনাে কারণ ছাড়াই সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে গিয়েছেন? এর পেছনে গুঢ় কারণ রয়েছে এবং সেটা অবশ্যই অসাধারণ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ কোনাে ব্যক্তির ওপর তার সাধ্যাতীত বােঝা চাপান না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার ওপর বর্তায় যা সে করে। (আল বাকারা: ২৮৬)
এতটুকু স্পষ্ট হবার পর আমরা বুঝার চেষ্টা করে দেখতে পারি এই সম্পর্কটি ব্যাখ্যা না করার মাহাত্ম কী।

এখানে দুটো অংশ আছে। প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনাে কাজের ভার দেন না। মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পুত্র ও কন্যা উভয়ের জন্য ফরয। এটি বাদ দেয়ার কোনাে উপায় নেই। কারাে সাথে শেয়ার করার কোনাে উপায় নেই। পরিমাণ লাঘব করারও কোনাে উপায় নেই। একজন মানুষের সামর্থ্য সীমিত। তাই একটি গুঢ় দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিয়েছেন। একটি মেয়ে যখন মনে করে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুশি করা তার দায়িত্ব, তখন এই চিন্তা তার মনের ওপর জগদ্দল পাথরের মতাে চেপে বসে। কারণ কোনাে সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে গিয়ে সবার মন-মর্জি বুঝে, সবার সেবায় এমনভাবে নিয়ােজিত হয়ে যাওয়া , যাতে তারা সকলে সন্তুষ্ট হয়ে যায়। অথচ এটা স্বাভাবিক মানবীয় দুর্বলতা যে, মানুষ তার মা-বাবার কাছেও নিজের উত্তম প্রচেষ্টার স্বীকৃতি চায়। শ্বশুরবাড়ির লােকজন যদি মেয়েটির সেবা তাদের পাওনা মনে করে তবে তারা মেয়েটির প্রচেষ্টায় আহা! উহু! করে প্রশংসা করার মতাে কিছু দেখতে পায় না। সব ভালােরই আরও ভালাে সংস্করণ হতেই পারে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ অনুদার ও স্বার্থপর হয়ে পড়ে এবং মেয়েটির কৃত সবকিছুকে ফর গ্রান্টেড’ ধরে নেয়। যার ফলে মেয়েটি কী করতে পারল, তার চেয়েও তার আরও কী করা উচিত ছিল সেটাই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে মেয়েটি উত্তরােত্তর প্রচেষ্টার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে করতে একসময় মানসিক এবং শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সাধ্যাতীত পরিশ্রম তাকে করে তুলতে পারে ক্ষুব্ধ, হতাশ ও ভগ্নহৃদয়। ফলে তার আচরণ হয়ে যেতে পারে রুক্ষ ও অনিয়ন্ত্রিত।
সেজন্য আল্লাহ এটা কারাে ওপর দায়িত্ব হিসেবে চাপিয়ে দেননি। এখানেই আল্লাহর দূরদৃষ্টির কাছে আমাদের শির আপনা আপনিই নত হয়ে যায়।
এবার আসছে দ্বিতীয় অংশ, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার ওপর বর্তায় যা সে করে। আল্লাহ মা-বাবার বাইরেও যাদের সাথে আমরা অন্যান্যভাবে সম্পর্কিত; যেমন প্রতিবেশী, সহকর্মী, বন্ধুবর্গ, চেনা-অচেনা লােকজন; সবার প্রতি আমাদের মানবিক দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন যার জন্য আমরা জিজ্ঞাসিত হব। এই দায়িত্ব মা-বাবার প্রতি দায়িত্বের মতাে এতখানি কঠোর নয়। আবার দায়িত্বে অবহেলা করার মতাে শিথিলও নয়। এর ফলাফল আমরা আখেরাতেও পাব, দুনিয়াতে
পাব। আমাদের মনে রাখা প্রয়ােজন, দায়িত্ব ব্যতীত অধিকার জন্মায় না। যে ছেলেটির সাথে মেয়েটির বিয়ে হয় সেই ছেলেটি আরেকজনের দীর্ঘকালীন শ্রম এবং প্রচেষ্টার ফলাফল। সুতরাং ছেলেটির ওপর তার যতখানি অধিকার তা শাশুড়ির সাথে ভাগ করে নেয়া তার দায়িত্ব। শাশুড়িকেও বুঝতে হবে তাঁর ছেলের সংসারে আগত মেয়েটি তাঁর ভবিষ্যত বংশধরদের মা। তার সাথে সুসম্পর্কই নিশ্চিত করবে তাঁর আগামী দিনের প্রতিনিধিদের সুন্দর ভবিষ্যত। তাহলে বিয়ের পর বউ শাশুড়ি মিলে একজন পুরুষকে নিয়ে চর দখলের প্রতিযােগিতায় নামবেন না; বরং উভয়ে সচেষ্ট হবেন একটি নির্মল, সুন্দর, সৌহার্দ্যপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে, যেখানে হেসে-খেলে বেড়াবে আগামীর প্রতিনিধিরা। আমাদের মনে রাখা প্রয়ােজন, সে তাই-ই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই-ই তার ওপর বর্তায় যা সে করে। যৌবনে আমরা যদি স্বামীর দখলদারিত্বে মত্ত হই, বৃদ্ধবয়সে আমাদের সন্তানদের কাছে আমরা একই আচরণ ফিরে পাব।

এখন দেখুন, একটি মেয়ে যদি মনে করে শ্বশ্রবাড়ির লােকজনের জন্য কিছু করা তার দায়িত্ব নয়; কিন্তু সে তাদের সাথে হেসে কথা বলা থেকে শুরু করে তাদের জন্য যা কিছু করবে সবকিছুর জন্য তার আখেরাতের খাতায় জমা হতে থাকবে ভুরি ভুরি বােনাস পয়েন্টস, তখন ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে? তখন তাকে কারাে বাধ্য করতে হবে না; বরং সে খুশি হয়ে সবার জন্য ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ হবে। তার চাপ বােধ হবে না। যেহেতু সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যতটুকু করতে পারবে তার বাইরে তাকে কোনােকিছু করতে বাধ্য করা হবে। এমনকি শ্বশুরবাড়ির কেউ তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট না করলেও তাকে সবার সাথে সদ্ব্যবহার করা থেকে ঠেকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ সে জানে যার যার জবাবদিহিতা তার তার। ওদের মূল্যায়ন ব্যতিরেকে সে তার বােনাস পয়েন্টস পেয়ে যাবে। উপরন্তু স্বামী যদি স্ত্রীর আত্মীয়-পরিজনের সাথে সদ্ভাব। বজায় রাখে তাতে স্ত্রী যেমন আনন্দিত হয়, স্ত্রী স্বামীর পরিবার পরিজনের সাথে সদাচরণ করলে স্বামীও তেমনই সন্তুষ্ট হয়। শেষতক কেয়ামতের মাঠে স্বামী এবং স্ত্রীই তাে পরস্পর পরস্পরের প্রধান সাক্ষী, তাই একে অপরকে ক্ষেপিয়ে লাভ কী? স্বামী বা স্ত্রীর ওপর জবরদস্তি করে দুনিয়াতে হয়তাে সাময়িক জিত হয়, কিন্তু আখেরাত পুরােটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আনন্দের কথা হলাে, দুনিয়াতে কিছু ধৈর্য ও ত্যাগের বিনিময় যে শুধু পরকালে মিলবে তা কিন্তু নয়, এর আংশিক পুরস্কার আমরা জীবদ্দশাতেই পেয়ে যাব।

অপরদিকে শ্বশুরবাড়ির সবার কাছে যদি ব্যাপারটা পরিষ্কার থাকে যে, বউ মানবিক সম্পর্কের বাইরে তাদের কারাে জন্য কিছু করতে বাধ্য নয় তখন সে তাদের সাথে হেসে কথা বললেও তারা আনন্দিত হবেন। তার বাইরে আরও কিছু করলে তাে আল্লাদে আটখানা হয়ে যাবেন। ‘যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়।

মুসনাদে আহমদ, তিরমীযি এই কথা মাথায় রেখে তারা মেয়েটির সকল প্রচেষ্টাকেই স্বাগত জানাবেন, অ্যাপ্রিশিয়েট করবেন। তখন স্বাভাবিকভাবেই উভয়ের মাঝে সৃষ্টি হবে একটি সুমধুর সম্পর্ক। পুরুষদের বেলাতেও এটি সমভাবে প্রযােজ্য।
শ্বশুরবাড়ির প্রতি দায়িত্ব চাপিয়ে না দেয়ার পেছনে এটিই মূল রহস্য।
আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং পরকালে তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করা। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তা হলাে,

“তােমরা দৌড়ে এসাে তােমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা মহাকাশ এবং পৃথিবীর মতাে। তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্যে। যারা ব্যয় (দান) করে সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল-কোমল। আর আল্লাহ তাে কল্যাণকামীদেরই ভালােবাসেন। (আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৪)

জান্নাতের পথে ছুটে চলার সময় যদি কারাে সাথে ভুল বুঝাবুঝি হয়, তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ মনােভাব সৃষ্টি হয়, তবে এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন ভেবে তাদের মাফ করে দিলে নিজের চলার গতি বৃদ্ধি হয়। আমাদের দৃষ্টি যদি আমাদের লক্ষ্যের দিকে নিবদ্ধ থাকে, তাহলে আশেপাশে বিদ্যমান বাঁধাবিপত্তি চলার পথে সাময়িক বিঘ্ন সৃষ্টি করলেও আমাদের লক্ষ্যচ্যুত করতে পারবে না। একটি আয়াত আমাদের মাথায় স্পষ্ট হওয়া প্রয়ােজন, তা হলাে,

‘পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে সেগুলাে আমরা এর শােভা বানিয়ে দিয়েছি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য যে, আমলের দিক থেকে তাদের মধ্যে কে উত্তম? (আল কাহফ: ৭)

সুতরাং পৃথিবীস্থ কোনাে কিছুই আমাদের লক্ষ্যবস্তু হবার উপযুক্ত নয়। পৃথিবীতে আমাদের সাময়িক অবস্থান কেবল পরীক্ষার নিমিত্ত মাত্র। আল্লাহ তায়ালা দেখতে চান আমাদের মাঝে কে নিজের প্রভুকে ভালােবেসে তাঁর সন্তুষ্টিকে লক্ষ্য বানিয়ে এগিয়ে যায়। আর কে পথের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খেলনাসদৃশ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মূল লক্ষ্য ভুলে বসে থাকে। তবে যে লক্ষ্যের ওপর অটল থাকে, সে বিজয়ী হবেই। যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তার প্রতিযােগিতায় পুরস্কার পাবার কোনাে যৌক্তিকতা নেই বলাই বাহুল্য।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা বিবেচনা করি, তাহলে অনেক কিছুই বুঝা অনেক সহজ হয়ে যায়। জীবনের আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই তখন তুচ্ছ বা অপ্রয়ােজনীয় মনে হয়। অনেক ব্যর্থতা এবং না পাওয়ার বেদনা তখন হাসির উদ্রেক করে।

বিয়ে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি ইহকাল ও পরকালের জীবনকে সাজানাের জন্য দুজনের পার্টনারশিপ। এতে আনুষাঙ্গিক ব্যাপারগুলােকে প্রাধান্য দিয়ে এত দুঃখ, বেদনা ও দ্বন্দ্বের অবতারণা না করে নিজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবার মাঝেই সাফল্য নিহিত।

রেহনুমা বিনতে আনিস



ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

পটভূমি
বদর যুদ্ধে মুসলমানরা জয়লাভ করলো বটে, কিন্তু যুদ্ধের মাধ্যমে তারা যেনো ভীমরুলের চাকে ঢিল ছুঁড়লো। এই প্রথম যুদ্ধেই তারা দৃঢ়তার সঙ্গে কাফিরদের মুকাবেলা করেছিল এবং কাফিরদেরকেও শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়ে পিছু হটতে হয়েছিল। এ ঘটনা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সমগ্র আরব জনগোষ্ঠীকে প্রচণ্ড ভাবে উত্তেজিত করে দিলো। যারা এই নয়া আন্দোলনের দুশমন ছিল , তারা এ ঘটনার পর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। তদুপরি মক্কার যে সব কুরাইশ সর্দার এ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল, তাদের রক্তের বদলা নেবার জন্যে অসংখ্য চিত্ত অস্থির হয়ে উঠলো। আরবে যেকোন এক ব্যক্তির রক্তই পুরুষানুক্রমে যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়াতো। আর এখানে তো এমন অনেক ব্যক্তিই নিহত হয়েছিল ,যাদের রক্তমূল্য অসংখ্য যুদ্ধে ও আদায় হতে পারতো না। তাই চারদিকে ঝড়ের আলামত দেখা যেতে লাগলো। ইহুদীদের যে সব গোত্র ইতঃপূর্বে মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছিলো, তারা চুক্তির কোন মর্যাদা রক্ষা করলো না। এমন কি তারা খোদা,নবুয়্যাত আখিরাত এবং কিতাবের প্রতি ঈমান পোষণের দাবি করার ফলে যেখানে মুসলমানদের সাথে অধিকতর নৈকট্য থাকা উচিত ছিলো,সেখানে মুশরিক কুরাইশদের প্রতিই তাদের সমস্ত সহানুভূতি উপচে পড়তে লাগলো। তারা খোলাখুলিভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে কুরাইশদে কে উত্তেজিত করতে শুরু করলো।বিশেষত কাব বিন আশরাফ নামক বনী নাযির গোত্রের জনৈক্য সরদার এ ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ও অন্ধ শত্রুতায় লিপ্ত হলো। এ থেকে স্পষ্টত অনুমিত হলো যে, ইহুদীরা না পড়োশী হিসেবে কোন কর্তব্য পালন করবে আর না হযরত (সা:) এর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করবে।
এর ফলে মদিনার এই ক্ষুদ্র জনপদটি চারদিক দিয়েই বিপদ পরিবেষ্টিত হয়ে পড়লো। অভ্যন্তরীন দিক দিয়ে মুসলমানদের অবস্থা ছিল এমনিতেই দুর্বল ,তদুপরি যুদ্ধের ফলে তাদেরকে আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হলো।

মক্কার মুশরিকদের অন্তরে এমনিতেই মুসলমানদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল । তাদের বড়ো বড়ো সর্দারগণ প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে ইতোমধ্যে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিল। প্রত্যেক গোত্রের মনেই ক্রোধ ও উত্তেজনা কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছিল। এমনি অবস্থায় ইহুদীগণ কর্তৃক মক্কাবাসীকে যুদ্ধের জন্যে উদ্বুদ্ধ করারচেষ্টা আগুনে তেল ছিটানোর কাজ করলো। ফলে বদর যুদ্ধের পর একটি বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই মদিনায় এই মর্মে খবর পোঁছলো যে, মক্কার মুশরিকগণ এক বিরাট বাহিনী নিয়ে মদিনা আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কুরাইশদের অগ্রগতি
এই প্রেক্ষাপটে তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের প্রথম সপ্তাহে হযরত (সা:) কয়েকজন লোককে সঠিক খবর খবর সংগ্রহের জন্যে মদিনার বাইরে প্রেরণ করলেন। তারা ফিরে এসে খবর দিল যে, কুরাইশ বাহিনী মদিনার প্রায় কাছাকাছি এসে পড়েছে। এমনকি তাদের ঘোড়গুলো মদিনার একটি চারণ ভূমি পর্যন্ত সাফ করে ফেলেছে। এবার নবী করীস (সা:) সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। কুরাইশ বাহিনীর মুকাবেলা কি মদিনায় বসে করা হবে , না বাইরে গিয়ে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হবে ? কোন কোন সাহাবী এই অভিমত ব্যক্ত করলেন যে, মুকাবেলা মদিনায় বসেই করতে হবে। কিন্তু বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ পান নি অথচ শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেলিত এমন কতিপয় যুবক দৃঢ়তার সাথে বললেনঃ ‘না, বাইরের ময়দানে গিয়েই তাদের মুকাবেলা করতে হবে। ’ অবশেষে তাদের এই দৃঢ়তা দেখে নবী করীম (সা:) মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

মুনাফিকদের ধোকাবাজি
কুরাইশগণ মদিনার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে তাদের ছাউনি ফেললো। তার একদিন পর হযরত (সা:) জুম’আর নামাজ বাদ এক হাজার সাহাবী নিয়ে মদিনা থেকে রওয়ানা করলেন। এদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক আবদুল্লাহ বিন উবাইও ছিল। এ লোকটি দৃশ্যত মুসলমান হলেও কার্যত ছিল মুনাফিক ।এর প্রভাবাধীন আরো বহু মুনাফিক মুসলমানদের সঙ্গে যাত্রা করেছিল। কিছুদূর গিয়ে আবদুল্লাহ বিন উবাই তিন’শ লোক নিয়ে হঠাৎ ‘যুদ্ধ হবে না’ বলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। এখন শুধু সাত শ সাহাবী বাকী রইলেন। এমনি নাজুক অবস্থায় মুনাফিকদের এই আচরণ ছিল গুরুতর মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের শামিল । কিন্তু যে সব মুসলমানের হৃদয় আল্লাহর প্রতি ‌ঈমান, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস এবং সত্যের পথে শহীদ হবার আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ ছিল, এ ঘটনায় তাদের ওপর কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়ারই সৃষ্টি হলো না। তাই তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে সামনে অগ্রসর হলেন।

যুব সমাজের উদ্দীপনা 

এ সময় হযরত (সা:) তার সঙ্গী- সাথীদের অবস্থা একবার যাচাই করে নিলেন এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণদের ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। এদের মধ্যে রাফে ’ ও সামারাহ নামক দুটি কিশোর বালকও ছিল। কিশোরদের কে যখন সেনাবাহিনী থেকে আলাদা করে দেয়া হচ্ছিল , তখন রাফে তার পায়ের অগ্রভাগের ওপর ভর করে দাঁড়ালো। যেনো লম্বায় তাকে কিছু উঁচু দেখায় , এবং তাকে সঙ্গে নেয়া হয়। তার এই কৌশল ফলপ্রসূও প্রমাণিত হলো। কিন্তু সামারাহ সেনাবাহিনীতে থাকবার অনুমতি না পেয়ে বললোঃ ‘রাফেকে যখন রেখে দেয়া হয়েছে , তখন আমাকেও থাকবার অনুমতি দেয়া উচিত । কারণ আমি তাকে কুস্তি প্রতিযোগিতায়া পরাজিত করতে পারি । ’ তার এ দাবির যথার্থতা প্রমাণের জন্যে উভয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হলো। অবশেষে সে রাফেকে পরাজিত করলো এবং তাকেও সেনাবাহিনীতে নিয়ে নেয়া হলো। এ একটি সামান্য ঘটনামাত্র । কিন্তু এতেই আন্দাজ করা চলে যে, মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহর পথে জিহাদ করার কতখানি অদম্য আগ্রহ ছিল।

সৈন্যদের প্রশিক্ষণ
ওহুদ পাহাড় মদীনা থেকে প্রায় চার মাইল দূরে অবস্খিত। হযরত (স) এমনভাবে তার সৈন্যদের মোতায়েন করলেন যে, পাহাড় পিছন দিকে থাকলো আর কুরাইশ সৈন্যরা রইলো সামনের দিকে। পিছন দিকে পাহাড়ের মাঝ বরাবর একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিলো এবং সে দিক থেকেও হামলার কিছুটা আশাংকা ছিলো। হযরত (স) সেখানে আবদুল্লাহ বিন জুবাইরকে পঞ্চাশ জন তীরন্দাজসহ মোতায়েন করলেন। তাকে এই র্মমে নির্দেশ দিলেন যে, এই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে কাঊকে আসতে দেয়া যাবে না এবং তুমিও এখান থেকে কোন অবস্থায় নড়বে না। এমন কি যদি দেখো যে, পাখিরা আমাদের গোশ্‌ত ছিঁড়ে নিয়ে খাচ্ছে, তবুও তুমি নিজের স্থান ত্যাগ করবে না

কুরাইদের সাজ-সজ্জা
এবার কুরাইশরা অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ সাজ-সজ্জা করে এসেছিলো। প্রায় তিন হাজার সৈন্য ও প্রচুর সামান্তপত্র তাদের সঙ্গে ছিলো। তখনকার দিনে যে যুদ্ধে মেয়েরা যোগ দান করতো, তাতে আরবরা জীবনপণ করে লড়াই করতো। তারা মনে করতো, যুদ্ধে যদি পরাজয় হয় তো মেয়েদের বেইজ্জত হবে। এ যুদ্ধেও কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে অনেক মহিলা এসেছিল। এদের মধ্যে আপন পুত্র ও প্রিয়জন মারা গেছে, এমন অনেকেই ছিলো। এতে কেউ কেউ প্রিয়জনদের হত্যাকারীদের রক্তপান করে তবেই নিঃশ্বাস ফেলবে-এমন প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত করেছিলো।

যুদ্ধের সূচনা
কুরাইশরা তাদের সৈন্যদেরকে খুব ভালোমতো প্রশিক্ষণ দিয়েছিলো। যুদ্ধের সূচনা-পর্বে কুরাইশ মহিলারা দফ বাজিয়ে আবেগ ও উদ্দীপনাময় কবিতা আবৃতি করতে লাগলো। তারা যোদ্ধদেরকে বদর যুদ্ধে নিহতদের রক্তের বদলা নেবার জন্যে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় উৎসাহ যোগালো। এরপর শুরু হলো যুদ্ধ। প্রথম পর্যায়ে মুসলমানদের দিকেই পাল্লা ভারী রইলো এবং কুরাইশ পক্ষের বহু সৈন্য নিহত হলো।তাদের সৈন্য দের মধ্যে হতাশা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিল । এদিকে সুড়ঙ্গ পথের প্রহরায় নিযুক্ত সৈন্যরা যখন দেখলো যে, মুসলমানরা মাল সংগ্রহে লিপ্ত হয়েছে এবং দুশমনরাও ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে.তখন তারাও গনীমতের মাল সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তাদের নেতা হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইর বারবার তাদেরকে বিরত রাখতে চাইলেনএবং হযরত (সা:) এর কথাও স্মরণ করিয়ে দিলেন।কিন্তু কতিপয় লোক ছাড়া কেউ তার কথা শুনলো না।

পশ্চাদিক থেকে কুরাইশদের হামলা
খালিদ বিন অলীদ তখন কাফির সৈন্যদের একজন অধিনায়ক। সে এই সুবর্ণ সুযোগ কে পুরোপুরি কাজে লাগানো এবং পাহাড়ের পেছন দিক দিয়ে ঘুরে গিয়ে সুড়ঙ্গ -পথে মুসলমানদের ওপর হামলা করলো।হযরত আবদুল্লাহ এবং তার ক’জন সঙ্গী শেষ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ পথের প্রহরায় ছিলেন,তাদের অধিকাংশই এই হামলার মুকাবেলা করলেন।কিন্তু কাফের দের এই প্রচণ্ড হামলাকে তারা প্রতিহত করতে পারলেন না। তারা শহীদ হয়ে গেলেন। অতঃপর দুশমনরা একে একে মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ওদিকে যে সব পলায়নপর কাফির দূর থেকে এই দৃশ্য দেখছিল , তারাও আবার ফিরে এলো।এবার দুদিক দিয়ে মুসলমানদের ওপর হামলা শুরু হলো।এই অভাবিত পরিস্থিতিতে মুসলমানদের মধ্যে এমন আতঙ্কের সঞ্চার হলো যে, যুদ্ধের মোড়ই সম্পূর্ণ ঘুরে গেলো। মুসলমানেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক পালাতে লাগলো। এমনকি আতঙ্কের মধ্যেই গুজব ছড়িয়ে পড়লো যে, নবী করীম(সা:) শহীদ হয়ে গেছেন। এই খবরে সাহাবীদের মধ্যে বাকী উদ্যমটুকুও নষ্ট হয়ে গেলো এবং অনেকে সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেললো।

আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয়
এ সময় দশ-বারো জন সাহাবী নবী করীম(সা:) কে ঘিরে রেখেছিলেন। তিনি অবশ্য আহত হয়েছিলেন। সাহাবীরা তাকে একটি পাহাড়ের ওপর নিয়ে এলেন। অতঃপর অন্য মুসলমানরা ও জানতে পারলেন যে, নবী করীম (সা:) সুস্থ ও নিরাপদ আছেন।তাই তারা আবার দলে দলে তার কাছে একত্রিত হতে লাগলেন। কিন্তু এ সময় কি কারণে যেন কাফিরদের মনোযোগ হঠাৎ অন্যদিকে নিবদ্ধ হলো এবং নিজেদের বিজয়কে পূর্ণ পরিণতি পর্যন্ত না পৌঁছিয়েই তারা ময়দান ছেড়ে চলে গেল।
তারা যখন কিছু্‌টা দূরে চলে গেল, তখন তাদের সম্ভিত ফিরে এলো। তারা পরস্পরকে বললোঃ এ আমরা কি ভুল করলাম ! মুসলমানদের সম্পূর্ণ খতম করে দেবার দুর্লভ সুযোগটিকে নষ্ট করে এমনিই চলে এলাম! এরপর তারা এক জায়গায় থেকে পরস্পর বলাবলি করলোঃ এবার তাহলে মদিনার ওপর আর একবার হামলা করা উচিত । কিন্তু শেষ পর্যন- আর তাদের সাহস হলো না। তারা মক্কায় ফিরে গেলো।

এদিকে নবী করীম (সা:) চিন্তিত ছিলেন যে,শত্রুরা না জানি আবার ফিরে এসে আবার হামলা করে বসে । তাই তিনি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মুসলমানদের কে দুশমনদের পশ্চাদ্ধাবন করার নির্দেশ দিলেন। এটা ছিল অত্যন্ত নাজুক সময় । কিন্তু যারা সাচ্চা মুমিন ছিল , তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে পুনরায় জান কুরবান করার জন্যে তৈরি হয়ে গেল । নবী করীম(সা:) হামরা-উল-আসাদ নামক স্থান পর্যন্ত দুশমনদের পশ্চাদ্ধাবন করলেন। এ জায়গাটি মদিনা থেকে ৮ মাইল দূরে অবস্থিত । এখানে পৌঁছে জানা গেল যে, কুরাইশরা মক্কায় ফিরে গেছে। তাই তিনিও মুসলমানদের নিয়ে মদিনায় ফিরে এলেন।
এ যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবী শহীদ হলেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন আনসার । তাই মদিনায় ঘরে ঘরে শোকের বন্যা নেমে এলো। এ সময় হযরত (সা:) মুসলমানদের শোক প্রকাশের নিয়মাবলী সম্পর্কে অবহিত করলেন।তিনি বললেনঃ ‘মাতম করা এবং ছাতি পিটিয়ে কান্না-কাটি করা মুসলমানদের পক্ষে মর্যাদা হানিকর । ’

বিপর্যয়ের কারণ এবং মুসলমানদের প্রশিক্ষণ
ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের যে বিপর্যয় ঘটে , তার পেছনে মুনাফিকদের চালবাজি ও কলা কৌশলের প্রভাব ছিল সন্দেহ নেই; কিন্তু সেই সঙ্গে মুসলমানদের নিজস্ব দুর্বলতাও কম দায়ী ছিল না । অবশ্য ইসলামী আন্দোলন যে ধরণের মেজাজ তৈরি করে এবং তার কর্মীদের যে রুপ প্রশিক্ষণ দিতে ইচ্ছুক , তার জন্যে তখনও পুরোপুরি সুযোগ পাওয়া যায় নি। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করার এ ছিল দ্বিতীয় সুযোগ মাত্র । তাই এ ক্ষেত্রে স্বভাবতই কিছু কিছু দুর্বলতা প্রকাশ পেলো। যেমনঃ সম্পদের মোহে কর্তব্য অবহেলা করা , নেতার হুকুম অমান্য করা ,দুশমনকে পুরোপুরি খতম করার আগে গনীমতের মালের দিকে মনোযোগ দেয়া ইত্যাদি। এ কারণেই যুদ্ধ শেষ হবার পর আল্লাহ তাআলা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি অত্যন্ত বিস্তৃত ভাবে পর্যালোচনা করলেন। এ পর্যালোচনা ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানদের মধ্যে যা কিছু দোষ-ত্রুটি বাকী ছিল , তার প্রতিটি দিককেই তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরলেন এবং সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলীও প্রদান করলেন।সূরা আল ইমরানের শেষাংশে এই নির্দেশাবলীর কথা বিবৃত হয়েছে। এখানে তার কতিপয় অংশ উদ্ধৃত করা যাচ্ছে। এ থেকে ইসলামী আন্দোলনে যুদ্ধের স্থান কোথায় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধ সংক্রান্ত ঘটনাবলীর ওপর কিভাবে আলোকপাত করতে হয়, তা আর একবার উপলব্ধি করা যাবে।

খোদা-নির্ভরতা
মুসলমানরা যখন যুদ্ধের জন্যে যাত্রা করেছিল ,তখন তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজারের মতো। পক্ষান্তরে দুশমনদের সংখ্যা ছিল তিন হাজার। এরপরও কিছুদূর গিয়ে তিন শ’ মুনাফিক আলাদা হয়ে গেল। এবার বাকী থাকলো শুধু সাত শ’ মুসলমান। তদুপরি যুদ্ধের সামান্তপত্র ছিল কম এবং এক তৃতীয়াংশ সৈন্যও গেল বিচ্ছিন্ন হয়ে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে কিছু লোকের মনোবল ভেঙ্গে পড়তে লাগলো । এ সময় শুধু আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার সাহায্যের ওপর ভরসাই মুসলমানদেরকে দুশমনদের মুকাবেলায় এগিয়ে নিয়ে চললো। এ উপলক্ষে হযরত (সা:) মুসলমানদের কে যে সান্ত্বনা প্রদান করেন, আল্লাহ তা নিম্নোক্ত ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ “স্মরণ করো, যখ,তোমাদের মধ্যকার দুটি দল নির্বুদ্ধিতা প্রদর্শনের জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যের জন্যে বর্তমান ছিলেন। আর মুমিনদের তো আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত । এর আগে বদরের যুদ্ধে আল্লাহ তোমাদের শোকরী থেকে তোমাদের বেঁচে থাকা উচিত। আশা করা যায়, এবার তোমরা কৃতজ্ঞ হবে। স্মরণ করো, যখন তুমি (হে নবী) মুমিনদের কে বলেছিলঃ তোমাদের জন্যে এটা কি যথেষ্ট নয় যে, আল্লাহ তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমরা যাতে খুশি হও এবং তোমাদের হৃদয় নিশ্চিন্ত হয়, সে জন্যেই আল্লাহ তোমাদের কাছে একথা প্রকাশ করলেন। বিজয় বা সাহায্য যা কিছুই হোক , আল্লাহর কাছ থেকেই আসে । তিনি অত্যন্ত শক্তিমান, বিচক্ষণ । (আলে ইমরান আয়াতঃ১২২-১২৬)

এখানে মুসলমানদের কে শেষ বারের মতো বুঝিয়ে দেয়া হলো যে, প্রকৃতপক্ষে বস্তগত শক্তির ওপর ভরসা করা মুসলমানদের কাজ নয়। তাদের শক্তির আসল উৎস হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার সাহায্যের ওপর ভরসা।

ধন-সম্পদের মোহ
ওহুদে মুসলমানদের বিপর্যয়ের আর একটি বড় কারণ হলো এই যে, মুসলমানরা যুদ্ধের ঠিক মাঝখানেই সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল এবং দুশমনকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আগেই সম্পদের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল । এমনকি , যারা সুড়ঙ্গ-পথের প্রহরায় নিযুক্ত ছিল,তাদের মধ্যে পযর্ন্ত দুর্বলতা প্রকাশ পেল। এভাবে যুদ্ধের মোড় সম্পূর্ণ ঘুরে গেল। তাই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের হৃদয় থেকে ধনের মোহ দূরীভূত করার জন্যে আ সময়ই মোহ সৃষ্টির একটি বড় কারণকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। অর্থাৎ এ সময় সূদকে হারাম ঘোষণা করা হলো। যারা সূদী কারবার করে , তাদের হৃদয়ে ধনের মোহ এমনি বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, তা আর কোন মহৎ কাজের উপযোগী থাকে না।সূদের ফলেই এক শ্রেণীর মনে লালসা, কার্পণ্য , আত্মকেন্দ্রিকতা এবং ধনের মোহ সৃষ্টি হয়। আর এক শ্রেণীর মধ্যে জাগ্রত হয় হিংসা দ্বেষ ও ক্রোধ-বিক্ষোভ

সাফল্যের চাবিকাঠি
যদি মনোবলকে সমুন্নত রাখার জন্যে কোন ক্রিয়াশীল শক্তি বর্তমান না থাকে , তাহলে পরাজয়ের পর তা হ্রাস পেতে থাকবেই । ওহুদে মুসলমানদের যে পরাজয় ঘটেছিল , তাতে কিছু লোকের মনোবল ভেঙ্গে পড়ার আশংকা ছিল। কিন্তু এ সময় মুসলমানদের কে এই বলে আশ্বাস দেয়া হলো যে, “ তোমাদের না নিরুৎসাহ হওয়া উচিত আর না দুঃখ প্রকাশ করা উচিত । তোমাদেরই হবে, যদি তোমরা খাঁটি মুমিন হও, ঈমানের ওপর অবিচল থাকো এবং তার দাবি সমূহ পূর্ণ করতে থাকো। তোমাদের কাজ শুধু এটুকুই ; এরপর তোমাদের সমুন্নত করা এবং দুঃখ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব আল্লাহর । এরপর রইলো তোমাদের এই সাময়িক দুঃখ- ক্লেশ ও পরাজয়ের প্রশ্ন। এটা শুধু তোমাদেরই ব্যাপার নয়, তোমাদের বিরুদ্ধ দলের ওপরও এরকম দুঃখ-মুসিবত এসে থাকে । তারা যখন মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়েও নিরুৎসাহিত হয়না, তখন তোমরা কেন সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে চিন্তা-ভাবনা করো ?তোমরা তো জান্নাতের প্রত্যাশী । তোমরা কি মনে করো, এমনিই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে ? অথচ তোমাদের ভেতর কে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করেছে আর কে তার জন্যে প্রতিকূল অবস্থায়ও ধৈর্য অবলম্বন করতে ইচ্ছুক, আল্লাহ তা এখন পর্যন্ত যাচাই-ই করেননি।(আল -ইমরানঃআয়াত১৩৯-১৪২)

ইসলামী আন্দোলনের প্রাণবস্ত
পৃথিবীর যেকোন আন্দোলনেই তার প্রাণবস্ত কিংবা চালিকা-শক্তিরুপে একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব বর্তমান থাকে। কিন্তু আদর্শবাদী আন্দোলনের উন্নতি বা স্থায়িত্ব কোন ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং যে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে এ আন্দোলন উত্থিত হয়, তার দৃঢ়তা ও সত্যতার ওপরই এর সবকিছু নির্ভর করে। ইসলামী আন্দোলনের জন্যে নবীদের ব্যক্তিত্ব কতোখানি গুরুত্বপূর্ণ , তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও এটি একটি আদর্শবাদী আন্দোলন এবং এর উন্নতি ও স্থায়িত্ব সম্পূর্ণত ইসলামের উপস্থাপিত নীতিমালার ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে মুসলমানদের এ কথা জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন হলো যে, নবীর মহান ব্যক্তিত্ব তাদের ভেতর বর্তমান থাকলেই কেবল তারা আল্লাহর দ্বীনের ঝাণ্ডা সমুন্নত করবে এবং নবীর প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হলে অমনি তারা এ পথ ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন পথ অবলম্বন করবে, এরুপ ধারণা যেনো তাদের মনের কোণেও ঠাঁই পায়। ইতঃপূর্বে ওহুদের ময়দানে যখন এই মর্মে গুজব প্রচারিত হলো যে, হযরত (সা:) শহীদ হয়ে গেছেন, তখন কিছু মুসলমানের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিল। তারা ভেবেছিল : হযরতের ছায়াই যখন চলে গেল, তখন আর যুদ্ধ করে কি হবে! এই ভুল ধারণা দূর করার জন্যেই এই সময় মুসলমানদের বুঝিয়ে দেয়া হলোঃ “দেখো,মুহাম্মদ (সা:) একজন রাসূল বৈ কিছুই নন। তার আগেও অনেক রাসূল চলে গেছেন। এখন তিনি যদি মরে যান কিংবা নিহত হন, তাহলে তোমরা কি পশ্চাদপসরণ করবে ? মনে রেখো, যে ব্যক্তি পশ্চাদপসরণ করবে সে আল্লাহর কোনই ক্ষতি করবে না । পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দাহ হিসেবে জীবন যাপন করবে, তাকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।”(আল ইমরানঃআয়াত১৪৪)

আরো বলা হলোঃ ‘তোমরা যে দ্বীনকে বুঝে-শুনে গ্রহণ করেছো, তার ওপর অবিচল থাকার এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্যে তোমাদের মধ্যে হামেশা নবীর উপস্থিত মাত্র ।এর ওপর অবিচল থাকলে তোমরা নিজেরাই সুফল পাবে। এ দ্বীনের আসল শক্তি হচ্ছে এর উপস্থাপিত সত্যতা। এর সমুন্নতি না তোমাদের শক্তি -সামর্থের ওপর আর না কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল।’

দুর্বলতার উৎস-১
মানুষের সমস্ত দুর্বলতার উৎস হচ্ছে মৃত্যু-ভয়।তাই এ সময় মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো যে, তোমাদের মৃত্যু-ভয়ে পলায়ন করা নিতান্তই অর্থহীন। কারণ মৃত্যুর জন্যে নির্ধারিত সময় না আসা পর্যন্ত কোন প্রাণীরই মৃত্যু হতে পারে না। অন্য কথায় , আল্লাহর নির্ধারিত সময়ের আগে না কেউ মরতে পারে আর না তারপর এক মুহূর্তও কেউ বেঁচে থাকতে পারে। অতএব, তোমাদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচবার চিন্তা করার প্রয়োজন নেই ; বরং জীবনের যেটুকু অবকাশ পাওয়া গেছে, তা কি দুনিয়াদারিতে ব্যয়িত হচ্ছে না আখিরাতের কাজে ,তা-ই শুধু চিন্তা করা উচিত। কারণ যে ব্যক্তি শুধু দুনিয়াদারির জন্যে তার শ্রম-মেহনত নিয়োজিত করে, তার যা কিছু প্রাপ্য তা দুনিয়ায়ই পেয়ে থাকে।আর যে ব্যক্তি আখিরাতের কল্যাণের জন্যে কাজ করে ,আল্লাহ তাকে আখিরাতেই প্রতিফল দান করবেন।কাজেই যারা আল্লাহর দ্বীন কবুল করার ,এর ওপর কায়েম থাকার এবং একে হারাম করবার চেষ্টা-সাধনার সুযোগ পেয়েছে, তাদের পক্ষে এই মহা মূল্যবান নিয়ামতটিরই কদর করা এবং এর জন্যেই নিজেদের সবকিছু নিয়োজিত করা উচিত । এর ফলাফল অবশ্যই তাদের পক্ষে কল্যাণপ্রদ হবে; আখিরাতের স্থায়ী সাফল্য তারা অর্জন করবে। আর এই নিয়ামতের যারা শোকর আদায় করবে, আল্লাহ তাদেরকে সর্বোত্তম নিয়ামত দ্বারা কৃতার্থ করবেন। তারা আপন মালিকের কাছ থেকে সর্বোত্তম পুরস্কারে ভূষিত হবে।




বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা

বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০ 0
বার দেখা হয়েছে

  

০১.    অর্থ কী?
‘অর্থ’ শব্দের একটি অর্থ উদ্দেশ্যে বা তাৎপর্য হলেও এখানে অর্থ মানে- ধন দৌলত, পয়সা কড়ি, বিত্ত সম্পত্তি, বিষয় ঐশ্বর্য, সংগতি, পূঁজি। জীবিকা, জীবনোপকরণ, সহায় সম্বল, অবলম্বন।
ইংরেজি ভাষায় অর্থকে বলা হয় wealth, money.
আরবি ভাষায় অর্থ সম্পদ, জীবিকা, জীবন-সামগ্রী ইত্যাদি বুঝানোর জন্যে ব্যবহার হয়- مَالٌ (মাল) বহুবচনে  اَمْوَالٌ। এছাড়া مَتَاعٌ (মাতা’) رِزْقٌ (রিয্ক) শব্দগুলোও ব্যবহার করা হয়। কুরআনে অর্থ সম্পদ ও জীবিকা বুঝানোর জন্যে উক্ত শব্দগুলো ছাড়াও রূপক অর্থে فَضْلُ الله (আল্লাহ্র অনুগ্রহ) এবং نِعْمَةُ اللهِ (আল্লাহ্র দান) শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।
মূলত জীবন ধারণ ও জীবন যাপনের জন্যে মানুষের যেসব উপায় উপকরণ এবং সহায় সম্বল প্রয়োজন হয় সেগুলোকে বা সেগুলোর বিকল্পকেই অর্থ সম্পদ বা জীবিকা বলা হয়।

০২.    অর্থনীতি কী?
অর্থনীতির সংজ্ঞা নির্ণয় করা কঠিন। অর্থনীতি যেহেতু একটি সামাজিক বিজ্ঞান, তাই সমাজ বিশ্লেষণের বিভিন্ন দৃষ্টিভংগিতে সমাজ বিজ্ঞানীগণ অর্থনীতির সংজ্ঞা নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন। সমাজ কাঠামোর একটি ধারা হলো অর্থনৈতিক ধারা। এ ধারার যারা বিশেষজ্ঞ পন্ডিত, তাদের মধ্যে এ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith ), অধ্যাপক মর্শাল (Prof. Marshall), অধ্যাপক এল. রবিন্স (Prof. L. Robbins), জন স্টুয়ার্ট মিল, কেয়ার্নক্রস, অধ্যাপক ক্যানান, স্যামুয়েলসন প্রমূখ অর্থনীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
এ্যাডাম স্মিথের মতে: “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা জাতিসমূহের সম্পদের প্রকৃতি ও কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে।”
অধ্যাপক মর্শালের মতে : “অর্থনীতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্যাবলি আলোচনা করে।”
অধ্যাপক ক্যানান বলেন: “অর্থনীতি হলো মানুষের বস্তুগত কল্যাণের কারণ অনুসন্ধানকারী বিষয়।”
কোয়র্নক্রস বলেন: “মানুষের কার্যক্রমের যে অংশ অর্থের সাথে জড়িত, তার আলোচনাই অর্থনীতির বিষয়বস্তু।”
মূলত: অর্থ সংগ্রহ, অর্জন, আহরণ, বৃদ্ধি, বন্টন, ভোগ, ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে চর্চা, শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা এবং এ সবের নিয়মনীতির শাস্ত্রকেই অর্থ শাস্ত্র, অর্থ বিদ্যা, অর্থবিজ্ঞান, অর্থতত্ত্ব বা অর্থনীতি (economics) বলা হয়।
অর্থনীতিবিদগণ অর্থনীতিকে ইতিবাচক এবং নীতিবাচক-এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদগণ বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
ইতিবাচক পন্থীরা বলতে চান : যা আছে, যা হচ্ছে, এবং যা ঘটছে, তার সমাধান নির্দেশনাই অর্থনীতির কাজ।
নীতিবাচক পন্থীরা বলতে চান: কী হওয়া উচিত, আর কী হওয়া উচিত নয় এবং কী করা উচিত, আর কী করা উচিত নয়, সেই নির্দেশনা প্রদানই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়।

০৩.    অর্থনীতির ইসলামি সংজ্ঞা
ইসলাম অর্থনীতির আলাদা অস্বাভাবিক কোনো সংজ্ঞা প্রদান করেনা। ইসলাম বলে: সম্পদের মূল মালিক মহান আল্লাহ, মানুষ সম্পদের আমানতদার এবং অর্থ মানব জীবনের অখন্ড ও অবিভাজ্য বিষয় সমূহের একটি মাত্র। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে : “আল্লাহ নির্দেশিত জীবন দর্শনের ভিত্তিতে মানুষের জীবিকা আহরণ, আহরিত সম্পদের ন্যায্য বন্টন এবং সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যয় ও ভোগ ব্যবহারের নির্দেশনাই অর্থনীতি।” আমাদের মতে এটাই অর্থনীতির সঠিক সংজ্ঞা হওয়া উচিত। ইসলামি অর্থনীতি একই সাথে ইতিবাচক এবং নীতিবাচক। ইসলামি অর্থনীতিতে উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধান নির্দেশনা প্রদান করা হয় আদর্শ ও ন্যায় নীতির ভিত্তিতে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. এম. নেজাতুল্লাহ সিদ্দীকির মতে : Islamic economics is the Muslim thinkers’ response to the economic challenges of their times. In this endeavour they are aided by the Quran and the Sunnah as well as by reason and experience. (Lectures on Islamic Economic Thoughts, IRTI, Islamic Development Bank, Jeddah, 1992, P 69)

০৪.    ইসলামি অর্থব্যবস্থার ভিত্তি
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থার মতোই অর্থব্যবস্থাও তিনটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হলো :
১.    দর্শনগত ভিত্তির উপর পরিচালিত হওয়া।
২.    মাকাসিদে শরিয়া (শরিয়ার উদ্দেশ্য সমূহ) অর্জনের জন্যে তৎপর থাকা।
৩.    হিকমা বা কর্মকৌশল ও প্রজ্ঞার প্রয়োগ।
১. দর্শনগত ভিত্তির অর্থ: দর্শনগত ভিত্তি বলতে বুঝায় বিশ্বাস ও আদর্শের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া দৃষ্টিভংগি ও ধ্যান ধারণা। ইসলামি জীবন ব্যবস্থার দর্শনগত ভিত্তি তিনটি। সেগুলো হলো :
১.    তাওহীদ (আল্লাহ্র একত্ব এবং এক আল্লাহ্র দাসত্ব ও আনুগত্য)।
২.    খিলাফত (প্রতিনিধিত্ব অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহ্র প্রতিনিধি)।
৩.    আদল (ন্যায়, নায্য ও সুষমনীতি; Justice)।
এই তিনটি মূলনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এক আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসই মানব জীবনে শক্তি ও প্রেরণার মূল উৎস। তাঁকে মহাবিশ্বের স্রষ্টা, মালিক ও পরিচালক মেনে নিয়ে তাঁর আনুগত্য ও দাসত্বের জীবন যাপন করাই মানব জীবন সাফল্যের একমাত্র করিডোর। এই পৃথিবী এবং মানুষ তাঁর সৃষ্টির একটি অংশ মাত্র। তিনি কোনো কিছুই অর্থহীন সৃষ্টি করেননি। মানুষের ইহকালীন কর্মতৎপরতাকে তিনি পরকালীন সাফল্যের ভিত্তি বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং মানুষকে সাফল্যের জন্যে অবশ্যি তাঁর প্রদত্ত বিধানমতো চলতে হবে এবং শুধুমাত্র তাঁরই কাছে চাইতে হবে।
ইসলামে খিলাফতের ধারণাও বিশ্বজনীন। মানুষ পৃথিবীর মূল কর্তা নয়। পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। পৃথিবীর সম্পদ ও কর্তৃত্ব মানুষের কাছে আল্লাহর আমানত। সব মানুষ এক আদমের সন্তান। সুতরাং ক্ষমতা ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের দায়িত্ব হলো সকল মানুষের কল্যাণে নিজেদের ক্ষমতা ও সম্পদকে নিবেদিত করা। খিলাফতের মূল স্পীরিট হলো :
১.    বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব বোধ : সব মানুষ একই সূত্রে গাঁথা। সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি। সবাই এক আদমের সন্তান।
২.    মানবতার প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ।
৩.    ক্ষমতা ও ধনসম্পদ তার কাছে আল্লাহ্র গচ্ছিত আমানত। এগুলোকে মানব কল্যাণে নিয়োজিত করাই তার মূল দায়িত্ব।
৪.    বিনয় ও আনুগত্য। যেহেতু মানুষ পৃথিবীতে কোনো কিছুরই মালিক নয়, আমানতদার, তাই মূল মালিকের প্রতি আনুগত্য এবং বিনয়ী জীবন যাপন করাই তার কর্তব্য।
আদল কথাটিও ব্যাপক অর্থবোধক। এর ইংরেজি অনুবাদ Justice. বাংলায় ন্যায়, নায্য ও সুষমনীতি ও আচরণ বলা যায়। এর তাৎপর্য হলো, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের শক্তি, ক্ষমতা ও সম্পদ মানব কল্যাণে নিয়োজিত করবে। সে তার অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে ন্যায়, ইনসাফ, সুবিচার ও কল্যাণ কামনা দ্বারা তাড়িত হবে।
অর্থনীতিসহ ইসলামের সকল কাজে এই তিনটি বিশ্বাস ও চিন্তাগত ভাবধারা মানবদেহের অভ্যন্তরে শোনিত ধারার মতো প্রবহমান থাকতে হবে।
২. মাকাসিদে শরিয়া (objectives of shariah) : মাকাসিদ শব্দটি বহুবচন। এর একবচন মাকসাদ। মাকসাদ মানে- উদ্দেশ্য (objective)। ইসলামের ভিত্তিতে জীবন যাপনের জন্যে আল্লাহ তায়ালা যে নিয়ম কানুন ও বিধি বিধান প্রদান করেছেন, তা-ই একমাত্র মানব কল্যাণের শরিয়া। মানুষের ইহ জাগতিক এবং পারলৌকিক সার্বিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যেই মহান আল্লাহ শরিয়া প্রদান করেছেন। ইসলামি শরিয়ার মূল উৎস (source) হলো আল কুরআন ও সুন্নতে রসূল সা.।
কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে মাকাসিদে শরিয়া বা ইসলামি শরিয়ার উদ্দেশ্য সমূহ নিম্নরূপ :
১.    ঈমান ও তাওহীদ : অর্থাৎ মুমিনদের ঈমান ও আকিদা-বিশ্বাসের সংরক্ষণ।
২.    আদল : ন্যায় বিচার ও সুষমনীতি নিশ্চিত করণ।
৩.    ইহসান ও ফালাহে ’আম : মানবতার কল্যাণ ও সাফল্য।
৪.    হায়াতে তাইয়্যেবা : সুন্দর ও স্বচ্ছন্দ জীবন যাপন।
৫.    মানবতার কল্যাণ, সাফল্য এবং সুন্দর-স্বচ্ছন্দ জীবন যাপনের জন্যে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানের প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
৬.    জীবনের নিরাপত্তা।
৭.    মানব বংশ সংরক্ষণ।
৮.    সম্পদের নিরাপত্তা।
৯.    মর্যাদা তথা মান সম্মান ও ইয্যতের নিরাপত্তা।
১০.    মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ও বিকাশের সুবিধা নিশ্চিত করণ।
১১.    চিন্তা, চলাফেরা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করণ।
১২.    সামগ্রিক মানবাধিকার সংরক্ষণ।
৩. হিকমা (কর্মকৌশল ও প্রজ্ঞা) : শরিয়ার উদ্দেশ্য সমূহ অর্জনের জন্যে হিকমা প্রয়োগ অপরিহার্য। হিকমা মানে- যথার্থ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও কর্মকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালানো। মূলত টিকে থাকা, উন্নয়ন, সাফল্য অর্জনের কৌশল ও সঠিক পদক্ষেপকে হিকমা বলা হয়। কুরআন বলছে, রসূল সা. তাঁর সাথিদের মানবিক ও নৈতিক সত্তার উন্নয়ন এবং কিতাব শিক্ষা দেয়ার সাথে সাথে হিকমাও শিক্ষা দিতেন :
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ 
অর্থ: অবশ্যি আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বিরাট অনুগ্রহ করেছেন তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন রসূল পাঠিয়ে, যিনি তাদের প্রতি আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করেন, তাদের তাযকিয়া (মানবিক ও নৈতিক গুণাবলীর উন্নয়ন সাধন) করেন, তাদের আল কিতাব (কুরআন) এবং হিকমা শিক্ষা দান করেন। (সূরা ৩ আলে ইমরান : আয়াত ১৬৪)
মূলত ইসলামের দৃষ্টিতে মানব সমাজের গোটা অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সংরক্ষণের ভিত্তি হলো এই তিনটি। সুতরাং ইসলামি অর্থনীতির মূল ভিত্তিও এই তিনটি।

০৫.    ইসলামি অর্থব্যবস্থার মূলনীতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ
ইসলামি অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহই এর মূলনীতি। সেগুলো হলো:
০১.    অর্থ সম্পদের মূল মালিক ও যোগানদাতা এই পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের স্রষ্টা, মালিক ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ।
০২.    মানুষ সম্পদের মূল মালিক নয়, আমানতদার এবং ব্যবহারকারী বা ভোক্তা মাত্র। সুতরাং সে সম্পদের উৎপাদন, উপার্জন এবং ভোগ ব্যবহার করবে সম্পদের মূল মালিক আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা মাফিক।
০৩.    মানুষের আর্থ সামাজিক বিষয়াদি তার বিশ্বাস, আদর্শ ও মূল্যবোধের সাথে একীভূত ও অবিভাজ্য। সুতরাং তার আর্থ সামাজিক বিষয়াদির উন্নয়ন ও ইতিবাচক নির্দেশনার ভিত্তি হবে নীতিবাচক তথা তার বিশ্বাস, আদর্শ এবং শরিয়া তথা কুরআন, সুন্নাহ, যুক্তি, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা।
০৪.    ইসলামি অর্থনীতির অন্যতম মূল নীতি হলো, জাতি ধর্ম, ভাষা বর্ণ এবং কুল গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণ সাধন বা মানব কল্যাণ।
০৫.    ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো আদল তথা ইনসাফ, সুবিচার ও ভারসম্যপূর্ণতা (Justice and balance)।
০৬.    ইসলামি অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংঘাত নয়, বরং পারস্পারিক সহমর্মিতা, সহানুভূতি, সহযোগিতা ও কল্যাণকামিতা (ইহ্সান)।
০৭.    ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় যুল্ম ও নিবর্তনমূলক সকল পন্থা ও প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ।
০৮.    ইসলামি অর্থব্যবস্থা উৎপাদন, উপার্জন ও উন্নয়নমুখী।
০৯.    ইসলামি অর্থব্যবস্থায় অর্থ সম্পদের কৃপণতা, অলস পূঞ্জীভূত করণ এবং অনুৎপাদনশীল সঞ্চয় নিষিদ্ধ।
১০.    ইসলামি অর্থনীতিতে সম্পদের অপব্যবহার, অপব্যয় এবং অপচয় নিষিদ্ধ।
১১.    ইসলামি অর্থনীতি ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়।
১২.    ব্যক্তির সম্পদে সমাজের অধিকারের স্বীকৃতি।
১৩.    ইসলামি অর্থব্যবস্থা মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের নির্দেশনা সম্বলিত সার্বজনীন জনহিতৈষী ব্যবস্থা।
১৪.    অর্থ হবে ধ্বংস ও অকল্যাণ থেকে মানুষ ও মানবতার মুক্তির হাতিয়ার।
১৫.    ব্যক্তি মালিকানার অধিকার। পুরুষ নারী প্রত্যেকেই বৈধ পন্থায় অর্জিত নিজ সম্পদের স্বত্বাধিকারী সে নিজে। বৈধ অন্থায় স্বাধীনভাবে এর বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও ব্যয় ব্যহারের অধিকার তার জন্যে সংরক্ষিত।
১৬.    যাকাত : অভাবী ও বিপদগ্রস্তদের অধিকার হিসেবে ধনীদের নগদ ও বিনিয়োগকৃত অর্থ, ফল ফসল এবং গবাদি পশুসহ সর্বপ্রকার বর্ধনশীল সম্পদের যাকাত প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
১৭.    সুদ ও সুদী কারাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১৮.    উত্তরাধিকার বিধান : শরিয়া নির্ধারিত নিকট আত্মীয়দের মধ্যে উত্তরাধিকার বন্টন বাধ্যতা মূলক।
১৯.    ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো, মাকাসিদে শরিয়া বা ইসলামি শরিয়ার উদ্দেশ্য সমূহ বাস্তবায়ন।
২০.    ইসলামি অর্থব্যবস্থার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, বিশ্বাসী হিসেবে দুনিয়ায় সুন্দর, স্বচ্ছন্দ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ জীবন যাপনের মাধ্যমে আখিরাতের সাফল্য অর্জন।
ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য নীতিমালা সংক্রান্ত ধারণা বিষয়ে আল কুরআনের কয়েকটি আয়াত এখানে উল্লেখ করা হলো :
لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ 
অর্থ: মহাবিশ্ব এবং পৃথিবীর ভান্ডারের চাবিকাঠির মালিকানা ও কর্তৃত্ব আল্লাহ্র। তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তার জীবিকায় (অর্থ সম্পদে) প্রশস্ততা দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা সীমিত দিয়ে থাকেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞানী। (সূরা ৪২ আশ শূরা : আয়াত ১২)
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا 
অর্থ: আল্লাহ সেই মহানুভব সত্ত্বা যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ২৯)
وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِي الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ 
অর্থ: (হে মানুষ!) আমরা পৃথিবীতে তোমাদের কর্তৃত্ব দান করেছি এবং সেখানেই রেখে দিয়েছি তোমাদের জীবনের উপকরণ (অর্থাৎ পৃথিবীর বুকেই তোমরা জীবিকা সন্ধান সংগ্রহ করো)। (সূরা ৭ আল আ’রাফ : আয়াত ১০)
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوا ۖ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ ۚ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِن فَضْلِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا 
অর্থ: আল্লাহ যেসব জিনিস দিয়ে তোমাদের একজনকে আরেকজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, সেটার জন্যে তোমরা লালসা করোনা। পুরুষ যা উপার্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ (অর্থ সম্পদ, সহায় সম্বল) প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী। (সূরা ৪ আন্নিসা : আয়াত ৩২)
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
অর্থ: এবং তাদের (বিত্তবানদের) অর্থ সম্পদে অধিকার রয়েছে সাহায্যপ্রার্থী এবং বঞ্চিতদের। (সূরা ৫১ আয্ যারিয়াত : আয়াত ২৯)
مَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ مِنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ 
অর্থ: আল্লাহ জনপদবাসীদের থেকে তাঁর রসূলকে যা  (যে সম্পদ) দিয়েছেন- তা আল্লাহর, আল্লাহর রসূলের, রসূলের স্বজনদের, এতিমদের, অভাবীদের এবং পথচারীদের জন্যে। এর উদ্দেশ্য হলো, অর্থ সম্পদ যেনো কেবল তোমাদের মধ্যকার বিত্তবানদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়। (সূরা ৫৯ আল হাশর: আয়াতাংশ ৭)
إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ 
অর্থ: তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যে লেনদেনের (ঋণ দেয়া নেয়ার) ফায়সালা করবে, তখন তা লিখিতভাবে করবে। (সূরা ২ আল বাকারা ; আয়াত ২৮২)
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ 
অর্থ: তিনিই মহান আল্লাহ, যিনি পৃথিবীতে তোমাদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন এবং তোমাদের একজনকে আরেকজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হলো, তিনি তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করবেন। (সূরা ৬ আল আন’আম : আয়াত ১৬৫)
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ 
অর্থ: ওদের জিজ্ঞেস করো, কে হারাম করলো আল্লাহ্র সেই সব সৌন্দর্যকে, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্যে উৎপন্ন করেছেন এবং উত্তম জীবনোপকরণ সমূহকে? (সূরা ৭ আ’রাফ : আয়াত ৩২)
إِن تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ ۖ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّئَاتِكُمْ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ 
অর্থ: তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তাও ভালো। আর যদি গোপনে দরিদ্রদের দাও, তবে তা অধিকতর ভালো। এমনটি করলে তোমাদের বহু পাপ মুছে দেয়া হবে। তোমরা যাই করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। (সূরা ২ বাকারা : ২৭১)
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ 
অর্থ: এই সাদাকা (যাকাত) নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো ফকিরদের জন্যে, মিসকিনদের জন্যে, সাদাকা আদায়-বন্টন বিভাগের কর্মচারীদের জন্যে, তাদের জন্যে (ইসলামের পক্ষে) যাদের মন আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য হবে, দাস মুক্তির জন্যে, ঋণে নিমজ্জিতদের সাহায্যের জন্যে, আল্লাহর পথে এবং পথিকদের সাহায্যের জন্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত একটি ফরয। (সূরা ৯ তাওবা : ৬০)
وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا  إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ 
অর্থ: আত্মীয় স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দাও এবং অভাবী ও পথিকদের দাও তাদের প্রাপ্য। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই অপব্যয় করোনা। কারণ অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ২৬-২৭)
يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ 
অর্থ: হে আদম সন্তান! সালাত আদায়কালে তোমাদের উত্তম পবিত্র পোশাক পরে সৌন্দর্য গ্রহণ করো। আর আহার করো, পান করো, কিন্তু অপচয় করোনা। আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা ৭ আল আ’রাফ: আয়াত ৩১)
وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا 
অর্থ: তুমি (কার্পণ্য করে) নিজের হাতকে গলায় বেঁধে রেখোনা, আবার (উজাড় করে খরচ করে ফেলার জন্যে) তা সম্পূর্ণ প্রসারিত করেও দিওনা। এমনটি করলে তিরস্কৃত হবে এবং খালি হাতে বসে পড়বে। (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ২৯)
وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَ‌ٰلِكَ قَوَامًا 
অর্থ: (আল্লাহ্র প্রিয় লোকদের বৈশিষ্ট্য হলো:) তারা ব্যয় করার ক্ষেত্রে অপচয়-অপব্যয় করেনা, আবার কার্পণ্যও করেনা; বরং উভয় চরম পন্থার মাঝখানে তারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। (সূরা ২৫ আল ফুরকান : আয়াত ৬৭)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ
অর্থ: হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং উত্তম পবিত্র। তোমরা তাই খাও- ভোগ করো। তবে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা। (সূরা ০২ : ১৬৮)

০৬.    ইসলামি অর্থনীতির উদ্দেশ্য ও চূড়ান্ত লক্ষ্য
ইসলামি অর্থনীতি মানব কল্যাণের অন্যতম উপাদান। সমাজ থেকে অকল্যাণের পথ বন্ধ করে কল্যাণের স্রোতধারা বইয়ে দেয়াই ইসলামি অর্থনীতির কাজ। নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যাবলি হাসিলের প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুটি এবং আখিরাতের সাফল্য অর্জনই ইসলামি অর্থনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য :
১.    ফালাহ: ব্যাক্তির সাফল্য ও কল্যাণ সাধন,
২.    ইহ্সান: মানবতার কল্যাণ সাধন,
৩.    আদল: সমাজে অর্থ সম্পদের ন্যায্য ও সুষম প্রবাহ সৃষ্টি,
৪.    সমাজে ন্যায়নীতির প্রচলন,
৫.    দেশ ও সমাজকে ফিতনা ফাসাদ তথা ধ্বংসকর কর্মকান্ড থেকে রক্ষা করা।
এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের নিমোক্ত আয়াতগুলো অকাট্য দলিল :
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا ۖ وَأَحْسِن كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ 
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে যে অর্থ সম্পদ দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস (জান্নাত) অনুসন্ধান করো এবং পার্থিব জীবনে তোমার বৈধ (ভোগের) অংশও ভুলে থেকোনা। (মানুষের) কল্যাণ করো, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর (অর্থ সম্পদ দ্বারা) দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করোনা। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। (সূরা ২৮ আল কাসাস : আয়াত ৭৭)
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ 
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন আদল ও ইহসান করার এবং নিকটাত্মীয়দের দান করার। আর তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা, অসৎকর্ম এবং সীমালংঘন থেকে। তিনি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। (সূরা ১৬ আন্ নহল : আয়াত ৯০)
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: সালাত সমাপ্ত হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং (কাজ ও শ্রম দানের মাধ্যমে) আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা, অর্থ-সম্পদ) সন্ধান (সংগ্রহ) করো, আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো। আশা করা যায় তোমারা ফালাহ (কল্যাণ) লাভ করবে। (সূরা ৬২ আল জুমুয়া : আয়াত ১০)
وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: তোমারা আল্লাহর পথে ব্যয় করো, আল্লাহর পথে খরচ না করে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করোনা। মানুষের প্রতি ইহসান করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের (কল্যাণকারীদের) ভালোবাসেন। (সূরা ২ বাকারা : আয়াত ১৯৫)

০৭.    ইসলামে অর্থ উপার্জনের তাকিদ
প্রধানত তিনটি সূত্রে মানুষ অর্থ সম্পদ অর্জন করে। সেগুলো হলো :
১.    উত্তরাধিকার সূত্রে
২.    ব্যবসা বাণিজ্য, চাকুরি বাকুরি তথা কাজ করে উপার্জনের মাধ্যমে,
৩.    দান লাভের মাধ্যমে।
যারা শুধু প্রথমটির উপর নির্ভর করে, সেই সাথে দ্বিতীয় মাধ্যমটি গ্রহণ করেনা, তারা কর্মবিমূখ-অলস। ইসলামে এ ধরণের লোকেরা নিন্দনীয়। এরা ক্রমান্বয়ে তৃতীয় মাধ্যমটি অবলম্বনের দিকে অগ্রসর হয়।
সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা ব্যবসা না করে, বা কাজ না করে, বা শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন না করে শুধু দান লাভ বা ভিক্ষাবৃত্তির উপর নির্ভর করে, ইসলামের দৃষ্টিতে তারা খুবই নিন্দা ও তিরস্কারযোগ্য।
ইসলামে প্রশংসনীয় লোক হলো তারা, যারা দ্বিতীয় মাধ্যমটি গ্রহণ করে। অর্থাৎ যারা ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরি বাকুরির মাধ্যমে কিংবা শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে।
অর্থ উপার্জনে আত্মনিয়োগ করা মুমিনদের জন্যে অত্যাবশ্যক। এর নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَ‌ٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ  فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ 
অর্থ: হে মুমিনরা! জুমাবারে যখন  সালাতের দিকে ডাকা (আযান দেয়া) হয়, তখন তোমরা বিজনেস রেখে দ্রুত আল্লাহ্র যিক্র (সালাত)-এর দিকে আসো। এতেই রয়েছে তোমাদের জন্যে কল্যাণ যদি তোমরা জ্ঞান খাটাও। অতপর সালাত শেষ হবার সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ো জমিনে (তোমাদের পেশায়) এবং সন্ধান করো আল্লাহ্র অনুগ্রহ (জীবিকা), আর বেশি বেশি আলোচনা করো আল্লাহ্র কথা। এভাবেই অর্জন করবে তোমরা ফালাহ (কল্যাণ ও সাফল্য)। (সূরা ৬২ জুমুয়া : আয়াত ৯-১০)
নিদ্রা এবং রাত দিন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন :
وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا  وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا  وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
অর্থ : আমি তোমাদের নিদ্রাকে বানিয়ে দিয়েছি বিশ্রাম ও প্রশান্তি লাভের উপায়। রাতকে বানিয়ে দিয়েছি আবরণ। আর দিনকে বানিয়ে দিয়েছি জীবিকা উপার্জনের উপযুক্ত সময়। (সূরা ৭৮ জুমুয়া : আয়াত ৯-১১)
এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
مَا اَكَلَ اَحَدٌ طَعَامًا خَيْرًا مِنْ انْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلٌ يَدَيْهِ 
অর্থ: “নিজের উপার্জনের চাইতে উত্তম জীবিকা কেউ কখনো ভোগ করেনি।” (সহীহ বুখারি)
اِنَّ اَطْيَبَ مَا اَكَلْتُمْ مِنْ كَسْبَِكُمْ وَاِنَّ اَوْلاَدِكُمْ مِنْ كَسَبِكُمْ 
অর্থ: “তোমাদের সর্বোত্তম জীবিকা নিজের উপার্জন। আর তোমাদের সন্তানের উপার্জনও তোমাদের উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।” (তিরমিযি, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ)
অর্থ উপার্জন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, রসূলুল্লাহর সা. এ হাদিসটি তার নির্দেশক :
طَلَبُ كَسَبِ الْحَلاَلِ فَرِيْضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيْضَةٌ 
অর্থ: “অন্যান্য ফরযের মতোই হালাল উপার্জনও একটি ফরয।” হাদিসটি বায়হাকি তাঁর শোয়াবুল ঈমানে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা বর্ণনা করেছেন।
মুসনাদে আহমদে রাফে বিন খাদিজ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞাসা করা হলো : কোন্ ধরণের উপার্জন সর্বোত্তম? তিনি বললেন : “ব্যক্তির সশ্রমে হালাল ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন।”

০৮.    হালাল ও বৈধ উপার্জনকারীর পরকালীন সাফল্য

হালাল উপার্জন একটি ইবাদত। কারণ হালাল উপার্জনকারী আল্লাহ্র হুকুম পালন করে। আল্লাহ যা কিছু হারাম করেছেন এবং যা কিছু নিষেধ করেছেন, সে সেগুলো পরিত্যাগ করে। যেসব মুমিন ব্যক্তি হালাল ও বৈধ পন্থায় জীবিকা তথা অর্থ সম্পদ উপার্জন করে, পরকালে আল্লাহ তায়ালা তাদের মর্যাদা দান করবেন। জাবির রা. বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحًا اِذَا بَاعَ وَاِذَا شْتَرٰى وَاِذَا قْتَضٰى 
অর্থ: আল্লাহ তায়ালা ঐ উপার্জনকারীর প্রতি রহম করেন, যে বেচা কেনা এবং পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়। (সহীহ বুখারি : ব্যবসা বাণিজ্য অধ্যায়)
আলী রা. বর্ণনা করেন, আমি রসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি : “যেদিন আল্লাহ্র আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবেনা, সেদিন সেই ছায়ায় ঐ ব্যক্তিকে স্থান দেয়া হবে, যে আল্লাহ্র অনুগ্রহ (জীবিকার) সন্ধানে বের হয় এবং তা সংগ্রহ করে পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে আসে।” (মুসনাদে যায়েদ ইবনে আলী, Economic Teaching of Prophet Muhammad 3:3)
আবু সায়ীদ খুদরি রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
اَلتَّاجِرُ الصَّدُوْقُ الْاَمِيْنُ مَعَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ 
অর্থ: সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী (পরকালে) নবী, সিদ্দিক এবং শহীদগণের সংগি হবে।” (তিরমিযি, দারেমি, দারু কুতনি, ইবনে মাজাহ। মিশকাত শরীফ হাদিস নম্বর : ২৬৭৪)

০৯.    হারাম ও অবৈধ উপার্জনের ভয়াবহ পরিণতি
কুরআন মজিদে অবৈধ উপার্জনকারীদের ভয়াবহ পরকালীন শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে। রসূলুল্লাহ সা.-এর হাদিসেও অবৈধ উপার্জনের চরম নিন্দা করা হয়েছে। এখানে আমরা দুটি হাদিস উল্লেখ করছি। আবু বকর রা. বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِىَ بِالْحَرَامِ 
অর্থ: যে শরীর (যে ব্যক্তি) হারাম (উপার্জন ভোগ) দ্বারা লালিত ও বিকশিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। (বায়হাকি, মিশকাত হাদিস নম্বর ২৬৬৭)
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
اِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَّ يَقْبَلُ اِلاَّ طَيِّبًا وَاِنَّ اللهَ اَمَرَ الْمُؤمِنِيْنَ بِمَا اَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ  فَقَالَ يٰاَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَعْمَلُوْا صَالِحًا وَّقَالَ يٰاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَكُمْ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلُ يُطِيْلُ السَّفَرَ اَشْعَثَ اَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ اِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَ مَطْعَمُه حَرَامٌ وَّمَشْرَبُه حَرَامٌ وَّمَلْبَسُه حَرَامٌ وَّغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَاَنّٰى يُسْتَجَابَ لِذَالِكَ 
অর্থ: আল্লাহ উত্তম-পবিত্র। তিনি উত্তম এবং পবিত্র (পন্থা ও বস্তু) ছাড়া গ্রহণ করেন না। তিনি মুমিনদের সেই নির্দেশই দিয়েছেন, যে নির্দেশ দিয়েছেন রসূলগণকে। তিনি তাদের বলেছেন : ‘হে রসূলরা! তোমরা উত্তম ও পবিত্র জীবিকা আহার করো, ভোগ করো এবং আমলে সালেহ করো।’ তিনি আরো বলেছেন : ‘হে মুমিনরা! আমার প্রদত্ত উত্তম ও পবিত্র জীবিকা ভোগ-আহার করো।’ অতপর রসূলুল্লাহ সা. বললেন : দেখো, এক ব্যক্তি দূর দুরান্ত সফর করে আসে। তার চুল এলোমেলো, দেহ ধূলোমলিন। সে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করে : ‘হে প্রভু, হে প্রভু!’ অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম (অর্থাৎ হারাম উপার্জনের), হারাম উপার্জনই সে ভোগ করে। কী করে কবুল হবে তার দোয়া? (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হাদিস নম্বর ২৬৪০)

১০.    হালাল ও বৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উপায় সমূহ
হালাল এবং বৈধভাবে অর্থ উপার্জন ও ভোগ ব্যবহারের নির্দেশই ইসলামে দেয়া হয়েছে। ইসলাম নোংরা উপার্জন ও জীবিকাকে নিষিদ্ধ করে এবং উত্তম ও সুন্দর উপার্জন ও জীবিকাকে প্রশংসা করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ  وَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي أَنتُم بِهِ مُؤْمِنُونَ 
অর্থ: হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ যেসব ভালো জিনিস তোমাদের জন্যে হালাল করেছেন তোমরা সেগুলো নিষিদ্ধ করে নিওনা এবং সীমালংঘন করোনা। আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ তোমাদের যেসব হালাল ও ভালো জীবিকা-জীবনোপকরণ দিয়েছেন সেগুলো ভোগ আহার করো এবং সেই আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর প্রতি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছো।  (সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৮৭-৮৮)
মূলত নিষিদ্ধ উৎসসমূহ ছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে উপার্জনের বাকি সব উৎসই হালাল বা বৈধ। আয় উপার্জনের নিম্নোক্ত উৎসসমূহ হালাল এবং বৈধ :
০১.    ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে উপার্জন। বৈধ পন্থায় ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে উপার্জনকে ইসলাম সর্বাধিক উৎসাহিত করেছে। ব্যবসা করা যায় :
ক. একক ব্যবসা,
খ. পূজি বিনিয়োগের মাধ্যমে শরিকানা ব্যবসা,
গ. পূজি ও শ্রম বিনিয়োগের মাধ্যমে যৌথ বা শরিকানা ব্যবসা।
০২.    কৃষি কাজের মাধ্যমে উপার্জন। যেমন :
ক. নিজের জমিতে ফল ফসল ও অন্যান্য দ্রব্য উৎপাদন ও উপার্জন,
খ. পরের জমিতে বর্গা চাষের মাধ্যমে উৎপাদন ও উপার্জন,
গ. পরের জমি ভাড়া  (ইজারা) নিয়ে উৎপাদন।
০৩.    পশু পাখি ও মৎস পালনের মাধ্যমে উপার্জন (জলে স্থলে খামার পদ্ধতি)।
০৪.    শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধমে উপার্জন।
০৫.    পেশা গ্রহণের মাধ্যমে উপার্জন। শিক্ষকতা, ডাক্তারি, ওকালতি, ইত্যাদি।
০৬.    সরকারি বেসরকারি চাকুরি গ্রহণের মাধ্যমে উপার্জন।
০৭.    সেবা প্রদানের (সাভির্স চার্জ গ্রহণের) মাধ্যমে উপার্জন।
০৮.    মানসিক এবং শারীরিক শ্রমদানের মাধ্যমে উপার্জন।
০৯.    দালালি (সহযোগিতা) করার মাধ্যমে উপার্জন।
১০.    দান লাভের মাধ্যমে অর্জন।
১১.    হাদিয়া, তোহফা ও অসিয়তের মাধ্যমে লাভ।
১২.    উত্তরাধিকার লাভ।
১৩.    অধিকার হিসাবে অভিভাবক থেকে লাভ।
১৪.    সরকারি সাহায্য লাভ।
১৫.    অন্যান্য।

১১.    নারীর অর্থ উপার্জন ও সম্পদের মালিকানা অর্জন
এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে নারীর অর্থোপার্জন এবং খরচের বিষয়টিও আলোচনা করা জরুরি মনে করছি। কারণ, এ নিয়ে অকারণে সৃষ্টি করা হয়েছে অনেক কল্পকাহিনী।
ইসলাম পুরুষের মতো নারীর অর্জিত সম্পদের মালিকানা নারীকেই দিয়েছে (সূরা আন্নিসা : আয়াত৩২)। পুরুষের মতোই শরিয়া অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় নারীর অর্জিত ও উপার্জিত নিজের অর্থ সম্পদের বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও ব্যয় ব্যবহারের অধিকার তার নিজের জন্যে সংরক্ষিত। তবে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপনে এবং পরিবার পরিচালনায় অর্থ ব্যয়ের দায়িত্ব পুরুষের । এ ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ছাড়া নারীর অর্থ ব্যয় হয়না। নারীর আয়ের উৎস অধিক, ব্যয়ের বাধ্যতামূলক খাত একেবারেই সীমিত। তার ব্যয়ের খাত স্বাধীন সেচ্ছোমূলক। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর আয় ও অর্জনের উৎস সমূহ নিম্নরূপ:
০১.    লালন পালন ও পড়া লেখার অর্থ পাবেন পিতার নিকট থেকে।
০২.    বিবাহের অর্থ প্রদান করবেন পিতা এবং স্বামী।
০৩.    বিবাহে স্বামীর নিকট থেকে মোহরানা লাভ।
০৪.    ঘর বাড়ি নির্মাণ খরচ বা বাসা ভাড়া পাবেন স্বামীর নিকট থেকে।
০৫.    খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার অর্থ পাবেন স্বামীর নিকট থেকে।
০৬.    সন্তান লালন পালন এবং তাদের শিক্ষা চিকিৎসা সহ যাবতীয় খরচের অর্থ নেবেন স্বামী থেকে।
০৭.    পিতা মাতা এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অর্থ সম্পদ লাভ করবেন।
০৮.    স্বামী এবং সন্তানের মৃতুতেও উত্তরাধিকার সূত্রে অর্থ সম্পদ লাভ করবেন।
০৯.    স্বামী, সন্তান, পিতা, মাতা, ভাইবোন এবং অন্যান্য আত্মীয়দের পক্ষ থেকে দান, উপহার এবং হাদিয়া তোহফা লাভ।
১০.    স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতিক্রমে (যদি বর্তমান থাকে) বৈধ প্রক্রিয়ায় চাকুরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সুযোগ।
১১.    বৈধ প্রক্রিয়ায় ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সুযোগ।
১২.    শিক্ষকতা, চিকিৎসা ও অন্যান্য স্বাধীন পেশার মাধ্যমে উপার্জনের সুযোগ।
১৩.    হস্তশিল্পসহ ঘরে প্রস্তুতযোগ্য সামগ্রী তৈরির মাধ্যমে উপার্জনের সুযোগ।
১৪.    বিবাহ বিচ্ছেদ কালে তালাক দাতা স্বামীর নিকট থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর  অর্থ  লাভ।
১৫.    তালাক দাতা স্বামীর শিশু সন্তানকে দুধপান করালে বা লালন পালন করলে সে জন্যে অর্থ লাভ।

১২.    নারীদের  খরচের খাত
০১.    পড়া লেখার খরচ : প্রদান করনে পিতা, মাতা, স্বামী,ভ্রাতা। নিজের খরচ নেই, থাকলেও ঐচ্ছিক।
০২.    বিবাহ খরচ : প্রদান করেন পিতা, মাতা, ভ্রাতা, বর। নিজের খরচ ঐচ্ছিক।
০৩.    সন্তান লালন পালন খরচ: এ ক্ষেত্রে মায়ের খরচ ঐচ্ছিক, পিতার খরচ বাধ্যতামূলক।
০৪.    বাসস্থানের খরচ : বহন করেন পিতা, স্বামী, সন্তান। নিজের খরচ ঐচ্ছিক এবং কদাচিৎ।
০৫.    অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা খরচ : বহন করেন পিতা, স্বামী, সন্তান। নিজের খরচ ঐচ্ছিক/ কদাচিৎ।
০৬.    দান সদকা।
০৭.    হাদিয়া, তোহফা, উপহার।
০৮.    যাকাত।
০৯.    কর, খাজনা।
১০.    কাফফারা, ফিদিয়া, মান্নত।
নারীদের অর্থব্যয়ের খাত দশটি। এর মধ্যে ৭টি ঐচ্ছিক এবং তিনটি ক্ষেত্র বিশেষে এবং ঘটনাক্রমে বাধ্যতামূলক।

১৩.    অর্থ উপার্জনের হারাম ও নিষিদ্ধ উপায় সমূহ
ব্যক্তি ও সমাজ তথা মানুষের জন্যে যা কিছু ক্ষতিকর, অকল্যাণকর, তা সবই হারাম, নিষিদ্ধ এবং অবৈধ। ইসলামের এ নীতি অর্থনৈতিক বিষয়াদিসহ মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইসলামের অর্থনীতি সমন্বিতভাবে ইতিবাচক ও নীতিবাচক । ইসলামের এই নীতিবাদিতা শরিয়ার বিধান এবং শাশ্বত আদর্শিক নীতিবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সে হিসেবে ইসলামে নিুোক্ত উপায় ও পন্থা প্রক্রিয়ায় আয় উপার্জন হারাম, নিষিদ্ধ ও অবৈধ :
১.    রিবা (সুদ) : এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন :
وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَوا 
অর্থ: আল্লাহ হালাল করেছেন ব্যবসা বাণিজ্য এবং হারাম করেছেন রিবা (সূদ)। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ২৭৫)
২.    রিশওয়াত : অর্থাৎ ঘুষ ও উৎকোচের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ।
৩.    গরর : অর্থাৎ প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ, তা যে প্রকারেরই হোক।
৪.    ডাকাতি, লুন্ঠন, ছিনতাই ও অপহরণের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ।
৫.    দখল, জবর দখলের উপার্জন নিষিদ্ধ।
৬.    নিজের খুশিমতো দাম বা বিনিময় দিয়ে স্বত্তাধিকারীর অনিচ্ছা সত্তেও নিয়ে নেয়া নিষিদ্ধ।
এই কয়টি বিষয় সম্পর্কে কুরআন মজিদে বলা হয়েছে :
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ 
অর্থ: তোমরা নিজেদের মধ্যে অবৈধ পন্থায় একে অপরের অর্থ সম্পদ খেয়োনা এবং সেগুলো শাসকদের সামনেও এমন কোনো উদ্দেশ্যে উত্থাপন করোনা, যাতে করে তোমরা জেনে বুঝে পরের সম্পদের কিছু অংশ খাওয়ার সুযোগ পাও। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ১৮৮)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ 
অর্থ: হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের অর্থ সম্পদ বাতিল অন্যায় অবৈধ উপায়ে খেয়োনা। তবে পারস্পারিক ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যবসা করলে ভিন্ন কথা। (সূরা ৪ আন্ নিসা : আয়াত ১৮৮) এ প্রসঙ্গে আরো দ্রষ্টব্য সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৩৩।
৭.    আমানতের খেয়ানত ও আত্মস্যাতের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য (আল কুরআন ২ : ২৮৩; ৩ : ১৬১)
৮.    জুয়া, বাজি এবং এমন সব উপায় প্রক্রিয়া অবলম্বন করে উপার্জন করা, যার মাধ্যমে ঘটনাচক্রে একজনের অর্থসম্পদ আরেকজনের কাছে চলে যায়। এগুলো হারজিতের ধ্বংসকর খেলা। এতে এক পক্ষ কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই আরেক পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তার অর্থ লুটে নেয়। এ প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৯০।
৯.    হারাম বস্তুর উৎপাদন, ক্রয় বিক্রয় ও ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : যেমন, ক. মদ ও মাদকদ্রব্য, খ. মৃত প্রাণী, গ. শুয়োর, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির ব্যবসা। দ্রষ্টব্য সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৩,৯০ এবং হাদিস দ্রষ্টব্য।
১০.    লটারি, ভাগ্য গণনা ও জ্যোতিষ ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৯০।
১১.    অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতি প্রচার ও প্রসারকারী কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জন: দ্রষ্টব্য আল কুরআন, সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ১৯।
১২.    ইহ্তিকার : ইহ্তিকারের মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ। ইহ্তিকার হলো দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মওজুদ করে রাখা। বাজারে এর বিভিন্ন ধরণের নাম রয়েছে। রসূল সা. এ ধরণের কারবার নিষিদ্ধ করেছেন। তাছাড়া এটা সূরা নিসার ২৯ আয়াতে বর্ণিত বাতিল পন্থায় উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।
১৩.    রাষ্ট্র ও ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে অর্থোপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য সূরা ২: আয়াত ১৮৮।
১৪.    চুরির মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ : দ্রষ্টব্য আল কুরআন সূরা ৫ : আয়াত ৩৮।
১৫.    দেহ ব্যবসা ও বেশ্যাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ। দ্রষ্টব্য আল কুরআন, সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ২,৩৩।
১৬.    মাপে ও ওজনে কমবেশি করার মাধমে উপার্জন নিষিদ্ধ। অর্থাৎ মেপে বা ওজন করে নেয়ার সময় বেশি নেয়া এবং দেয়ার সময় কম দেয়া। কুরআন মাজিদে এ ধরনের লোকদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দ্রষ্টব্য: সূরা ৮৩ মুতাফ্ফিফিন : আয়াত-১-১০।
১৭.    চোরাই মাল ক্রয় বিক্রয় এবং চোরালানী নিষিদ্ধ।
১৮.    অর্থ সম্পদ ও জমি জমা অনুৎপাদনশীল ফেলে রাখা নিষিদ্ধ।
১৯.    আসলের সাথে নকল ও ভেজাল মিশিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ।
২০.    আসলের স্যাম্পল দেখিয়ে নকল সরবরাহ করা নিষিদ্ধ।
২১.    আসলের মোড়কে ভেজাল ও নকল মাল বিক্রি করা নিষিদ্ধ।
২২.    ফটকাবাজারি ও মুনাফাখোরী নিষিদ্ধ।
হাদিস থেকে এগুলোর নিষেধাজ্ঞা জানা যায়।
২৩.    এতিমের অর্থ সম্পদ ও সহায় সম্পত্তি ভোগ দখল করা নিষিদ্ধ : আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘যারা অন্যায় ভাবে এতিমদের অর্থ সম্পদ ও সহায় সম্পত্তি ভোগ দখল করে, তারা মূলত আগুন দিয়ে নিজেদের উদর ভর্তি করে। অচিরেই তাদের পোড়ানো হবে জ্বলন্ত আগুনে।’ (সূরা ৪ আন্নিসা : আয়াত ১০)
২৪.     বোনদের বা অন্য কারো উত্তরাধিকার বন্টন করে না দিয়ে নিজের সম্পদের সাথে একাকার করে রেখে ভোগ করা : যারা উওরাধিকার বন্টন করেন না, সূরা আন নিসার ১৪ আয়াতে তাদের অপমানজনক অনন্ত আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
২৫.    ধনীদের যাকাত খাওয়া করা নিষিদ্ধ : ধনীদের যাকাত প্রদান করা ফরয। যাকাত পাওয়া অভাবীদের অধিকার। যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ থেকে যাকাত বের করে দেয়না, সে নিজ অর্থ সম্পদের সাথে অভাবীদের যাকাত বা অর্থ সম্পদ একাকার করে ভোগ করে। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা অনুযায়ী এ সম্পদ দ্বারা তার জন্যে আগুনের বেড়ি তৈরি হচ্ছে। (দ্রষ্টব্য সূরা ৩ আলে ইমরান : আয়াত ১৮০)।
২৬.    দোকানি বা কারো নিকট থেকে কিছু ক্রয় করে দাম না দেয়া। ফলে ক্রয় করা বস্তু তার অবৈধ উপার্জন- যা তার জন্যে সম্পূর্ণ হারাম। এটা যুলুমের উপার্জন। অপরের অধিকার হরণ। (সূরা আন্নিসা : আয়াত ২৯)
২৭.    অন্যায্য বন্টন: উত্তরাধিকার বন্টন হোক, যৌথ কারবারের লাভালাভ বন্টন হোক, যৌথ ক্রয়ের মাল-সম্পদ বন্টন হোক, অথবা অন্য যে কোনো ধরণের বন্টনের ক্ষেত্রে নিজের ভাগে বেশি নেয়া, বেছে বেছে ভালোটা নেয়া, কিংবা নিজে সুবিধাজনকটা নিয়ে নেয়া অবৈধ। এটা যুলুমের মাধ্যমে উপার্জন। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। (দ্রষ্টব্য : সূরা নিসা, আয়াত ১০ ও ৩০)।
২৮.    ধার, করজ, ঋণ বা লোন নিয়ে পরিশোধ না করা। মানুষ সাধারণত ক. উন্নয়ন কাজের জন্যে, খ. ব্যবসায়ে বিনিয়োগের জন্যে, কিংবা গ. অভাবের তাড়নায় মৌলিক প্রয়োজন পূরণের জন্যে ঋণ করে থাকে।
ঋণ গ্রহণ করা হয়ে থাকে সাধারণত সরকারি তহবিল, সরকারি ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক, সংস্থা এবং সামর্থবান ব্যক্তিদের নিকট থেকে।
কোনো চরম অভাবী বা দেউলিয়াকে ব্যক্তি তার ঋণ মাফ করে দিতে পারে। কিন্তু যারা ঋণ গ্রহণ করে চরম অভাবী বা দেওলিয়া না হয়েও ঋণ পরিশোধ করেনা, কিংবা সময়মতো করেনা, ইসলামের দৃষ্টিতে তারা চরম শাস্তি ভোগ করবে। কারণ তারা অন্যায়ভাবে অন্যদের অর্থসম্পদ গ্রাস করেছে।
২৯.    হারানো বা পড়ে থাকা অর্থ সামগ্রী নিয়ে নেয়া; এ ধরণের কিছু পাওয়া গেলে তা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ উক্ত অর্থ সামগ্রীর স্বত্বাধিকারীকে খুঁজে বের করার জন্যে প্রচার বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করবে। শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া না গেলে এই অর্থ সামগ্রী জনকল্যাণ মূলক তহবিলে জমা হবে।
৩০.    সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্রাস ও আতংক সৃষ্টি করে এবং দাপট দেখিয়ে অর্থ আদায় করা নিষিদ্ধ। যেমন : চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাট ইত্যাদি। কুরআন এবং হাদিসে এ ধরণের কাজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য আল কুরআন, সূরা ২ : আয়াত ১৮৮; সূরা ৪ : আয়াত ২৯)
৩১.    যাদুমন্ত্র বা যাদু টোনার মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ। এটা মানুষের জন্যে ধ্বংসকর বিধায় কুরআন ও হাদিসে এটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৩২.    মূর্তি, প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্য নির্মাণ, উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রসূলুল্লাহ সা. এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
৩৩.    এ ছাড়াও ব্যক্তি, মানবতা ও ঈমান আকিদার জন্যে ক্ষতিকর সবই নিষিদ্ধ।

১৪.    অর্থ সম্পদ ব্যয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা যা নিষিদ্ধ
মানুষ যেসব অর্থ অর্জন এবং উপার্জন করে, তা সাধারণত নিম্নরূপ খাতসমূহে ব্যয়-ব্যবহার করে থাকে :
১.    নিজের ও পরিবার পরিজনের জন্যে ব্যয় করে।
২.    উৎপাদন ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করে।
৩.    যাকাত প্রদান করে।
৪.    ট্যাক্স, খাজনা ও বিভিন্ন প্রকার কর প্রদান করে।
৫.    বিভিন্ন প্রকার দায়িত্ব কর্তব্য (Obligations) ও অধিকার (Rights) আদায়ে প্রদান করে।
৬.    দান করে।
৭.    সঞ্চিত ও পূঞ্জিভূত করে।
৮.    অপচয় ও অপব্যয় (overuse & misuse) করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থ ব্যয় একদিকে যেমন বিরাট নেকি ও পুণ্যের কাজ। অপরদিকে তা বিরাট পাপও অকল্যাণের হাতিয়ার। ইসলাম সব ধরণের কল্যাণের ব্যয়কে উৎসাহিত করে। কিন্তু সব ধরনের অকল্যাণকর কাজে ব্যয় করাকে নিষিদ্ধ ও অবৈধ ঘোষণা করে। ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্মোক্ত খাত ও প্রক্রিয়ায় ব্যয় বিনিয়োগ করা অবৈধ ও নিষিদ্ধ :
০১.    সুদী কারবারে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। (আল কুরআন ২ : ২৭৫)
০২.    জুয়া খেলায় বিনিয়োগে নিষিদ্ধ। (আল কুরআন ৫ : ৯০)
০৩.    ভাগ্য গণনায় ব্যয় নিষিদ্ধ। (আল কুরআন ৫ : ৯০)
০৪.    ব্যভিচারের কাজে ব্যয় নিষিদ্ধ। (আল কুরআন ২৪ : ২,৩৩)
০৫.    সর্বপ্রকার অশ্লীলতা প্রসারকারী কাজ কারবারে ব্যয় বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। (আল কুরআন ২৪ : ১৯)
০৬.    সর্বপ্রকার ধোকা প্রতারণার কাজে ব্যয় বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। (হাদিস : যে প্রতারণা করে, সে আমার লোক নয়)।
০৭.    ঘুষ প্রদান নিষিদ্ধ। (আল কুরআন ২ :১৮৮)
০৮.    মূর্তি, প্রতিকৃতি ও ভাষ্কর্য তৈরি ও ক্রয়ে ব্যয় বিনিয়োগ নিষিদ্ধ।
০৯.    সর্বপ্রকার হারাম জিনিস ক্রয়ে ব্যয় করা নিষিদ্ধ। বিনিয়োগও নিষিদ্ধ।
১০.    ক্ষতিকর জ্ঞানার্জনে ও প্রশিক্ষণে ব্যয় করা নিষিদ্ধ।
১১.    ভেজাল ও নকল ব্যবসায় বিনিয়োগ নিষিদ্ধ।
১২.    অবৈধ উদ্দেশ্য হাসিলের নিয়্যতে ধার-করজ-ঋণ প্রদান নিষিদ্ধ।
১৩.    খোঁটা দেয়ার উদ্দেশ্যে বা জশ, খ্যাতি ও সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে দান করা নিষিদ্ধ।
১৪.    প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় বা দান না করে কৃপণতা করা নিষিদ্ধ।
১৫.    সর্বস্ব দান করে ফেলা বা ব্যয় করে ফেলা নিষিদ্ধ।
১৬.    অর্থ-সামগ্রী অপচয় (overuse) করা নিষিদ্ধ।
১৭.    অর্থ সম্পদ অপব্যয় (misuse) করা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ নিষ্প্রয়োজনীয় ও নিষিদ্ধ খাতে ব্যয় করা নিষিদ্ধ।
১৮.    কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অর্থ ব্যয় করা নিষিদ্ধ।
১৯.    ভালো কাজের বিরোধিতা বা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্যয় করা নিষিদ্ধ।
২০.    ইসলামের বিরোধিতা করা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কাজে ব্যয় করা নিষিদ্ধ।
২১.    যে কোনো ক্ষতিকর, অকল্যাণকর এবং সামাজিক ও সামষ্টিক অনিষ্টকর কাজে ব্যয় করা নিষিদ্ধ।

১৫.    যেসব খাতে ব্যয় করা বাধ্যতামূলক
ইসলামের দৃষ্টিতে অর্জিত অর্থ সম্পদ বিনিয়োগ ব্যতিত যাবতীয় ব্যয়ের খাত সমূহ দুই ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলো :
০১.    বাধ্যতামূলক,
০২.    স্বেচ্ছামূলক।
ইসলামে নিম্নোক্ত খাতসমূহে ব্যয় করা বাধ্যতামূলক এবং আবশ্যক :
১.    হুকুক : অর্থাৎ রক্ত সম্পর্কের কারণে যারা অধিকার লাভ করেছে তাদের জন্যে ব্যয় করা। যেমন : সন্তান, পিতামাতা।
২.    নাফকা : এর অর্থ বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা অধিকার লাভ করে তাদের জন্যে ব্যয় করা। যেমন: স্ত্রীদের জন্যে। এমনকি স্ত্রীকে তালাক দিলেও ইদ্দত পালন কালে, গর্ভে সন্তান থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং সন্তানকে দুধ পান করালে দুধ পান শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকে নাফকা দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে সূরা আন নিসার ৩৪ এবং সূরা আত তালাকের ৬-৭ আয়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
৩.    বিবাহের মোহর: বিয়ের সময় একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে যে অর্থ প্রদান করেন তার নাম মোহর। মোহর প্রদান করা বাধ্যতামূলক, এ প্রসঙ্গে সূরা আন নিসার ৪ এবং ২০ আয়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
৪.    যাকাত এবং উশর : মূলত উশর যাকাতেরই একটি অংগ। উশর হলো ফল ফসলের যাকাত। বছর শেষে হিসাব নিকাশ করে উদ্ধৃত্ত (balance) অর্থ সম্পদ থেকে শরিয়া নির্ধারিত হারে এবং খাতে একটি অংশ পরিশোধ করাকে যাকাত বলা হয়। সালাত আদায় করার মতোই যাকাত আদায় করা ফরয। কুরআন মজিদে বলা হয়েছে : ‘তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত পরিশোধ করো।’ (সূরা আল বাকারা : আয়াত ৪৩,৮৩,১০)
৫.    কাফ্ফারা : কেউ কোনো পাপ বা অপরাধ করে ফেললে তা থেকে নিষ্কৃতি পওয়ার জন্যে যে নেক কাজ করতে হয়, তাকে কাফ্ফারা বলা হয়। কুরআন মজিদে তিনটি পাপের ক্ষেত্রে কাফ্ফারার মাধ্যমে নিষ্কৃতি লাভের বিধান দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো : ১. ইচ্ছাকৃতভাবে রমযান মাসের ফরয রোযা ভঙ্গ করলে। ২. যিহার করলে। অর্থাৎ নিজের স্ত্রীকে বা স্ত্রীর কোনো অঙ্গকে নিজের মা বা বোনের কোনো অঙ্গের মতো বলে তুলনা করলে। সূরা মুজাদালার ২-৪ আয়াতে এ সংক্রান্ত বিধান দেয়া হয়েছে। ৩. অংগিকার ভংগ করলে। সূরা আল মায়িদার ৮৯ আয়াতে -এ সংক্রান্ত বিধান দেয়া হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে কাফ্ফারা হিসেবে রোযা রাখা কিংবা অভাবীদের খাওয়ানো, অথবা মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তিদানের কথা বলা হয়েছে।
৬.    ফিদিয়া : বার্ধক্যজনিত কারণে এবং এমন রোগের কারণে- যে রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়না রমযান মাসের ফরয রোযা রাখতে না পারলে তার বিনিময়ে কুরআন নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় ও পরিমাণে দান করাকে ফিদিয়া বলা হয়।
৭.    নযর : নযরকে আমাদের দেশে মান্নত বলা হয়। এর অর্থ- উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে কোনো ত্যাগ স্বীকার বা দান করার স্বগত অংগীকার করা। উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে প্রতিশ্রুত ত্যাগ স্বীকার করা বা দান করা বাধ্যতামূলক। যারা জান্নাতে যাবে, সূরা আদ্দাহরের ৭ আয়াতে তাদের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা নযর (মান্নত) পূর্ণ করে।
৮.    সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা : ঈদুল ফিতরের পূর্বে সামর্থবান ব্যক্তিগণ কর্তৃক অভাবী ব্যক্তিগণকে ঈদ আনন্দে শরিক করার জন্যে সুন্নাহ নির্ধারিত হারে সাহয্য প্রদানকে সাদাকাতুল ফিতর বলা হয়। রসূল সা. এই সাহায্য প্রদানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
৯.    কুরবানির গোশত বিতরণ: যারা তামাত্তু হজ্জ করেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক কুরবানি করতে হয়। তাছাড়া সকল সামর্থবান মুসলিমকেই কুরবানি করতে তাকিদ করা হয়েছে। কুরবানির গোশতের একটি অংশ অভাবীদের দান করতে বলা হয়েছে।

১৬.    ব্যয়ের কল্যাণময় স্বেচ্ছামূলক খাতসমূহ
কুরআন এবং হাদিসে মুমিনদেরকে ব্যাপকভাবে স্বেচ্ছামূলক দান করতে উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত করা হয়েছে। এসব দানের প্রক্রিয়া ও খাত নিম্নরূপ :
১.    সাধারণ দান : এটাকে সাধারণত, দান, খয়রাত (কল্যাণের কাজ), সদকা ইত্যাদি বলা হয়। অভাবী এবং বিপদগ্রস্তদের সব সময় সর্বাবস্থায় এ দান করা যায়। এ দানের একটি বড় খাত হলো আল্লাহর পথে দান করা। এ দানের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত করা হয়েছে। কুরআন ও সুন্নায় আহবান জানানো হয়েছে দান করতে :
ক.    দরিদ্র অভাবী আত্মীয় স্বজনকে।
খ.    অভাবী প্রতিবেশীদেরকে।
গ.    ফকির তথা নিঃস্ব সাহায্যপ্রার্থীদেরকে।
ঘ.    সাধারণ অভাবী লোকদেরকে।
ঙ.    অভিভাবকহীন বিধবাদেরকে।
চ.    নিঃস্ব এতিমদেরকে।
ছ.    মযলুমদেরকে।
জ.    বিপদগ্রস্তদের সাহায্যার্থে।
ঝ.    নিগৃহীত, ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদকৃত এবং মুহাজিরদের সাহায্যার্থে।
ঞ.    নিঃস্ব পথিকদেরকে।
ট.    ঋণগ্রস্ত দেউলিয়াদেরকে।
ঠ.    পরের দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তির কাজে।
ড.    জনকল্যাণের কাজে (অর্থাৎ শিক্ষা, চিকিৎসা, জনপথ তৈরি, সুস্থ পরিবেশ তৈরি, পানি সরবরাহসহ যাবতীয় মানব কল্যাণের কাজে ব্যয় করা)।
ঢ.    মসজিদ নির্মাণের কাজে।
ণ.    আল্লাহর পথে (অর্থাৎ ইসলাম প্রচার প্রসারের কাজে। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্র, হামলা ইত্যাদি প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার কাজে)। কুরআন মজিদে এ খাতটিকে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এসব কাজে ব্যয় করাকে কুরআন মজিদে এবং হাদিসে মুমিনদের জন্যে প্রভুত নেকি, সওয়াব, মর্যাদা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের উপায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২.    উপহার বা হাদিয়া হিসেবে দান।
৩.    অসিয়তের মাধ্যমে দান : কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করে (আদেশ / উপদেশ দিয়ে) দান করে যেতে পারেন।
৪.    ওয়াক্ফ : কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার উৎপাদনশীল কোনো অর্থ সম্পত্তি জনকল্যাণের কাজে দান করে যাওয়াকে ওয়াক্ফ বলা হয়। ওয়াক্ফ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করতে হবে সরকার কিংবা জনস্বার্থে প্রতিষ্ঠিত কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে।
৫.    হেবা : হেবা হলো কোনো ব্যক্তিকে স্থায়ী ও নি:স্বার্থভাবে নিজের কোনো সম্পদ দিয়ে দেয়া।
৬.    ফল বা উৎপাদন ভোগের সুবিধা প্রদান : এটা হলো নির্দিষ্ট মওসূম বা সময়ের জন্যে নিজের কোনো বাগান বা গাছের ফল কিংবা গাভীর দুগ্ধ কাউকেও ভোগ করার সুবিধা দান করা।
৭.    আকস্মিক সংকট উত্তরণে সাহায্য করা : এটা হলো হঠাৎ কেউ কোনো সংকটে, সমস্যায় বা বিপদে পড়লে তাকে আর্থিক সাহায্য করা।
দান করার অসীম কল্যাণ সম্পর্কে কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে অবহিত করেছেন। এর জন্যে তিনি উপদেশ দিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের কয়েকটি আয়াত এখানে উল্লেখ করা হলো :
وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ ۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ 
অর্থ: দান করো। এতেই রয়েছে তোমাদের নিজেদের জন্যে কল্যাণ। যারা মনের সংকীর্ণতা (কৃপণতা) থেকে মুক্ত হয়, তারাই ফালাহ (সফলতা) অর্জনকারী। (সূরা ৬৪ আত্ তাগাবুন : আয়াত ১৬)
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ 
অর্থ: তোমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণ লাভ করবেনা, যতোক্ষণনা তোমাদের পছন্দের জিনিস দান করো। (সূরা ৩ আলে ইমরান : আয়াত ৯২)
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ 
অর্থ: যারা নিজেদের অর্থ সম্পদ আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে, তাদের (দানের) উপমা একটি শস্যবীজ, যা উৎপাদন করে সাতটি শীষ এবং প্রত্যেক শীষে শতদানা। (এভাবেই) যাকে ইচ্ছা আল্লাহ বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। তিনি মহা প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞানী। (সূরা ২ বাকারা : আয়াত ২৬১)
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَـٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ 
অর্থ: পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোতে প্রকৃত পক্ষে পুণ্য নেই। প্রকৃত পুণ্যের কাজ হলো, মানুষ ঈমান আনবে আল্লাহ্র প্রতি, পরকালের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আল কিতাবের প্রতি, নবীদের প্রতি; আর আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ সম্পদ দান করবে আত্মীয় স্বজনকে, এতিমদেরকে, অভাবীদেরকে, পথিকদেরকে, সাহায্যপ্রার্থীদেরকে এবং মানুষকে গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্ত করার কাজে; এছাড়া সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিয়ে দেবে। সূরা ২ : ১৭৭
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا  الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۗ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا  وَالَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ رِئَاءَ النَّاسِ 
অর্থ: তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করো, তাঁর সাথে কোনো কিছুকেই শরিক করোনা। আর ইহসান (দয়া ও সহানুভূতিমূলক আচরণ) করো পিতামাতার সাথে, আত্মীয় স্বজনের সাথে, এতিমদের সাথে, অভাবীদের সাথে, আত্মীয় প্রতিবেশীদের সাথে, অনাত্মীয় প্রতিবেশীদের সাথে, সাথি বন্ধুদের সাথে, পথিকদের সাথে এবং তোমাদের অধিনস্ত ভৃত্যদের সাথে। জেনে রাখো, আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারী লোকদের পছন্দ করেননা, যারা কার্পণ্য কঞ্জুসি করে, মানুষকে কৃপণতার শিক্ষা দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ (অর্থ সম্পদ) থেকে তাদের যা দান করেছেন তা গোপন করে রাখে। এ ধরণের অকৃতজ্ঞ লোকদের জন্যে আমরা অপমানকর আযাবের ব্যবস্থা করে রেখেছি। (আর ঐ সব লোকদেরও আল্লাহ পছন্দ করেন না) যারা কেবল লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নিজেদের অর্থ সম্পদ দান করে। (সূরা ৪ আন নিসা : আয়াত ৩৬-৩৮)
দান সম্পর্কে কুরআন মজিদে আরো বহু আয়াত রয়েছে। এ সম্পর্কে আছে রসূলুল্লাহ সা.-এর অনেক হাদিস। আগ্রহীগণ সেগুলো দেখে নেবেন।
সবশেষে আমরা ইসলামি অর্থনীতির কল্যাণধর্মীতা সম্পর্কে আধুনিক জগতের খ্যাতনামা ইসলামি চিন্তাবিদ ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ আবুল আ’লা মওদূদীর একটি দীর্ঘ বক্তব্যের অংশ বিশেষ উল্লেখ করতে চাই। তিনি লিখেছেন :
“ইসলাম শুধু এতোটুকুই চায়না যে, সমাজ জীবনে কেবল অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত এবং অবাধ থাকবে; বরঞ্চ সেইসাথে এটাও চায় যে, এ ময়দানে প্রতিযোগীগণ পরস্পরের প্রতি নিষ্ঠুর ও নির্দয় হবার পরিবর্তে সহমর্মী ও পিছে পড়ে থাকা মানুষের আশ্রয় প্রদানের মানসিকতা সৃষ্টি করতে চায়। অপরদিকে সমাজে এমন একটি শক্তিশালী সংস্থা গড়ে তুলতে চায়, যে সংস্থা অক্ষম ও অসহায় লোকদের সাহায্যের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। যেসব লোকের জীবিকা উপার্জনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা থাকবেনা, তারা এই সংস্থা থেকে নিজেদের অংশ পাবে; যারা দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে, এই সংস্থা তাদের উঠিয়ে এনে আবার চলার যোগ্য করে দেবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্যে যাদের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হবে, এই সংস্থা থেকে তারা সাহায্য সহযোগিতা লাভ করবে। এ উদ্দেশ্যে ইসলাম আইনগতভাবে দেশের গোটা সঞ্চিত সম্পদ থেকে বার্ষিক ২.৫% এবং গোটা বাণিজ্যিক পুঁজি থেকে বার্ষিক ২.৫% যাকাত সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছে। সমস্ত উশরি জমির উৎপন্ন ফসল থেকে ১০% কিংবা ৫% উশর এবং কোনো কোনো খনিজ সম্পদের উৎপাদন থেকে ২০% যাকাত উসুল করতে হবে। এছাড়া গৃহপালিত পশুর উপরও বার্ষিক যাকাত আদায় করতে বলেছে। এই গোটা সম্পদ ইসলাম গরীব, এতিম, বৃদ্ধ, অক্ষম, উপার্জনহীন, রোগী এবং সব ধরণের অভাবী ও দরিদ্রদের সাহাযার্থে ব্যবহার করতে বলেছে। এটা এমন একটা সামাজিক বীমা, যার বর্তমানে ইসলামি সমাজে কোনো ব্যক্তি জীবন যাপনের অপরিহার্য সামগ্রী থেকে কখনো বঞ্চিত থাকতে পারেনা। কোনো শ্রমজীবী মানুষকে অভূক্ত থাকার ভয়ে কারখানা মালিক বা জমিদারের যেকোনো অন্যায় শর্ত মেনে নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হতে হবেনা। আর উপার্জনের প্রতিযোগিতায় নামার জন্যে ন্যূনতম যে শক্তি সামর্থ্য থাকা অপরিহার্য, কোনো ব্যক্তির অবস্থাই তার চেয়ে নীচে নেমে যাবেনা।” (আবুল আ’লা মওদূদী : ইসলামী অর্থনীতি, বঙ্গানুবাদ ৪র্থ মুদ্রণ ২০০৯, শতাব্দী প্রকাশনী ঢাকা।)

১৭.    যারা ইসলামি অর্থনীতি চর্চা করতে চান তাদের জন্যে ক’টি পরামর্শ
যারা ইসলামের অর্থনীতি ও অর্থ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে ও চর্চা করতে আগ্রহী, এখানে তাদের জন্যে কয়েকটি পরামর্শ পেশ করা হলো :
১.    অর্থনীতিকে একক বা স্বতন্ত্র কোনো শাস্ত্র হিসেবে চিন্তা করবেন না। অর্থ এবং অর্থনীতিকে মানব জীবন ও জীবন-ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য ও অবিভাজ্য কাঠামোর একটি অংগ, অংশ এবং বিভাগ হিসেবে ভাবুন।
২.    আপনার দেহের একটি অংগকে যেমন অযথা অন্য অংগের উপর প্রধান্য দেয়া উচিত নয়, তেমনি অর্থ এবং অর্থনীতিকে আপনার জীবন ও জীবন ব্যবস্থার অন্যান্য বিভাগের উপর অযথা অগ্রাধিকার দিতে যাবেন না। সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভংগি ও নীতি অবলম্বন করুন।
৩.    ইসলামি অর্থনীতিকে ইসলামি জীবন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ ও বিভাগ হিসেবে গ্রহণ করুন।
৪.    ইসলামি অর্থব্যবস্থার নীতি কাঠামো বুঝার জন্যে এক বা একাধিক বার মনোযোগ সহকারে আল কুরআন পাঠ (অধ্যয়ন, স্টাডি) করুন। সাথে সাথে অর্থ সম্পদ ও জীবিকা সংক্রান্ত আয়াতগুলো নোট করুন। সেই সাথে :
ক.    অর্থ সম্পদকে কিভাবে ঈমান, জীবন ব্যবস্থা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও সাফল্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে, তা বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন এবং নোট করুন।
খ.    কি কি কারণ ও প্রক্রিয়ায় অর্থ সম্পদ মানব জীবনে ব্যর্থতা ও ধ্বংস ডেকে আনে সে বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন এবং নোট করুন।
গ.    অতপর আপনার মাথায় (মনের মনিকোঠায়) এবং খাতায় অংকিত ধারণাগুলোকে পয়েন্ট আকারে লিপিবদ্ধ করুন এবং চর্চা করুন।
৫.    বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের ‘অর্থ সম্পদ’ ও ‘ব্যবসা বাণিজ্য’ সংক্রান্ত অধ্যায়গুলো কুরআনের অনুরূপ পদ্ধতিতে অধ্যয়ন করুন।
৬.    কয়েকটি ফিকহ্ গ্রন্থ পড়ে নিন। যেমন :
ক.    হিদায়া।
খ.    ফিকহুস সুন্নাহ : সাইয়েদ সাবেক।
গ.    হালাল ও হারাম : ইউসুফ আল কারদাভি।
৭.    ইসলামি অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থা সংক্রান্ত বাংলা ভাষায় লিখিত কয়েকটি বই পড়ে নিন। যেমন :
০১.    ইসলামি অর্থনীতি : আবুল আ’লা মওদূদী
০২.    ইসলামি অর্থনীতি : মুহাম্মদ আবদুর রহিম
০৩.    ইসলামি অর্থনীতি : ড. হাসান জামান
০৪.    ইসলামের অর্থনৈতিক মতাদর্শ : ড. মুহাম্মদ ইউসুফুদ্দীন
০৫.    ইসলাম ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ : ড. এম. উমর চাপরা
০৬.    ইসলামী অর্থনীতি : নির্বাচিত প্রবন্ধ : শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
০৭.    ইসলামের যাকাত বিধান : ড. ইউসুফ আল কারদাভি
০৮.    অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধান : আবুল আ’লা মওদূদী
০৯.    আল কুরআনের অর্থনৈতিক নীতিমালা : আবুল আ’লা মওদূদী
১০.    ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক মতবাদ : আবুল আ’লা মওদূদী
১১.    সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং : আবুল আ’লা মওদূদী
৮.    আধুনিক কালে যারা ইসলামি অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে গবেষণা করেছেন, করছেন এবং ব্যাপক লেখালেখি করেছেন তাদের সম্পর্কে জানুন এবং তাদের গ্রন্থাবলী পড়–ন। তাদের কয়েকজন হলেন : মুহাম্মদ আনাস যারকা, আবুল আ’লা মওদূদী, ড. ইউসুফ আল কারদাভি, মুহাম্মদ বাকির সদর, প্রফেসর খুরশিদ আহমদ, ড. নেজাতুল্লাহ সিদ্দিকি, প্রফেসর মুনযের কাহ্ফ, ড. এম. উমর চাপরা, ফাহিম খান, মুনাওয়ার ইকবাল, আকরাম খান, ইউসুফ কামাল, মুস্তফা যারকা, আহমদ আল নাজ্জার, সাবাহ উদ্দিন সায়েম প্রমূখ।
আমাদের বাংলাদেশে যারা এ ক্ষেত্রে অগ্রণি ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন : প্রফেসর ড. এম.এ. মান্নান, প্রফেসর আবদুল হামিদ, প্রফেসর শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রফেসর মুহাম্মদ শরীফ হুসাইন, প্রফেসর ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক প্রমূখ।
৯.    ইসলামি অর্থব্যবস্থার নীতিমালার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন। এ সম্পর্কে বাংলা ভাষায় বেশ কিছু বই পুস্তক বাজারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ইসলামি ব্যাংকগুলোর নীতিমালা এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগ পদ্ধতি জেনে নিন। এ সম্পর্কে তাদের পুস্তিকা সমূহও পড়ুন।

সমাপ্ত
১৮. গ্রন্থসূত্র
০১.    আল কুরআন
০২.    সহীহ আল বুখারি
০৩.    সহীহ মুসলিম
০৪.    জামে তিরমিযি
০৫.    মিশকাতুল মাসাবিহ্
০৬.    সাইয়েদ সাবিক : ফিক্হুস্ সূন্নাহ্
০৭.    মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন : আল জামেউল আহকাম ফিক্হুস্ সুন্নাহ
০৮.    বুরহানুদ্দীন ফরগনানি : হিদায়া
০৯.    Muhammad Akram Khan : Economic Teaching of Prophet Mohammad
১০.    আবুল আ’লা মওদূদী : ইসলামী অর্থনীতি
১১.    আবুল আ’লা মওদূদী : সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং
১২.    আবুল আ’লা মওদূদী : ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক মতবাদ
১৩.    আবুল আ’লা মওদূদী : অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধান
১৪.    আবুল আ’লা মওদূদী : আল কুরআনের অর্থনৈতিক নীতিমালা
১৫.    Dr. M. Umer Chapra : Islam and the Economic Challenge
১৬.    ড. হাসান জামান: ইসলামী অর্থনীতি
১৭.    ড. ইউসুফ আল কারদাভি : হালাল ও হারাম
১৮.    ড. ইউসুফ আল কারদাভি : মুশকিলাতুল ফাকর ওয়া কাইফা আলাজাহাল ইসলাম
১৯.    ড. ইউসুফ আল কারদাভি : ইসলামের যাকাত বিধান
২০.    মুহাম্মদ আবদুর রহীম : ইসলামী অর্থনীতি
২১.    প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান : প্রিন্সিপলস অব ইকোনমিক্স
২২.    ড. মুহাম্মদ ইউসুফুদ্দীন : ইসলামের অর্থনৈতিক মতাদর্শ
২৩.    আবু উবায়েদ আল কাসিম বিন সাল্লাম : কিতাবুল আওয়াল
২৪.    শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান : ইসলামী অর্থনীতি : নির্বাচিত প্রবন্ধ
২৫.    শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান : সূদ একটি ভয়াবহ অভিশাপ : পরিত্রাণের উপায়
২৬.    এমরান এন. হুসাইন : ইসলামে রিবা নিষিদ্ধ কেন?
২৭.    মুহাম্মদ শরীফ হুসাইন : সুদ, সমাজ অর্থনীতি
২৮.    মুহাম্মদ বাকির সদর : ইসলামি ইকতিসাদিয়াত
২৯.    Ayatullah Sayyid Mahmud Taleghani : Society and Economics in Islam
___________________________________________________________________বই সম্পর্কিত তথ্যাবলী
বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটি
ISBN: 978-984-645-053-8

ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা আবদুস শহীদ নাসিম, © author প্রকাশক: বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটি। পরিবেশক : শতাব্দী প্রকাশনী ৪৯১/১ মগবাজার ওয়ারলেস রেলগেইট, ঢাকা-১২১৭, ফোন : ৮৩১১২৯২। ১ম প্রকাশ ১৮ ডিসেম্বর ২০০৯। কম্পোজ Saamra Computer. মুদ্রণে আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস, ৪২৩ বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।

Book Title : Islami Orthonitite Uparjon O Bayer Nitimala Author : Abdus Shaheed Naseem, Published by Bangladesh Quran Shikkha Society, Distributor: Shotabdi Prokashoni, 491/1 Moghbazar Wireless Railgate, Dhaka-1217, Bangladesh. Phone: 8311292. First Edition: December 2009.

দাম : ১৯ টাকা মাত্র।  Price TK. : 19.00 Only


বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত
নিম্নোক্ত বইগুলো পড়ুন :
    কুরআন বুঝার প্রথম পাঠ
    জানার জন্যে কুরআন মানার জন্যে কুরআন
    মানুষের চিরশত্রু শয়তান
    ঈমান ও আমলে সালেহ্
    ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা

সূচিপত্র______________________________________________
০১.        অর্থ কী?    ৫
০২.        অর্থনীতি কী?    ৫
০৩.        অর্থনীতির ইসলামি সংজ্ঞা    ৬
০৪.        ইসলামি অর্থব্যবস্থার ভিত্তি    ৬
০৫.        ইসলামি অর্থব্যবস্থার মূলনীতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ    ৯
০৬.        ইসলামি অর্থনীতির উদ্দেশ্য ও চূড়ান্ত লক্ষ্য    ১৩
০৭.        ইসলামে অর্থ উপার্জনের তাকিদ    ১৪
০৮.        হালাল ও বৈধ উপার্জনকারীর পরকালীন সাফল্য    ১৬
০৯.        হারাম ও অবৈধ উপার্জনের ভয়াবহ পরিণতি    ১৬
১০.        হালাল ও বৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উপায় সমূহ    ১৭
১১.        নারীর অর্থ উপার্জন ও সম্পদের মালিকানা অর্জন    ১৮
১২.        নারীদের  খরচের খাত    ১৯
১৩.        অর্থ উপার্জনের হারাম ও নিষিদ্ধ উপায় সমূহ    ২০
১৪.        অর্থ সম্পদ ব্যয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা যা নিষিদ্ধ    ২৩
১৫.        যেসব খাতে ব্যয় করা বাধ্যতামূলক    ২৫
১৬.        ব্যয়ের কল্যাণময় স্বেচ্ছামূলক খাতসমূহ     ২৬
১৭.        যারা ইসলামি অর্থনীতি চর্চা করতে চান তাদের জন্যে ক’টি পরামর্শ    ৩০
১৮.        গ্রন্থসূত্র    ৩২



ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png