LIVE
Loading latest headlines...

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

ফতোয়ার আলোকে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ এবং তার ব্যাখ্যা -ইসলামিক আলোচনা-১৩তম ও শেষ পর্ব

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


 মসজিদে যাওয়া সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ এবং তার ব্যাখ্যা

—————————————————————————

মহিলাদের মসজিদে কিংবাঈদগাহে যাওয়া সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সার কথা তিনটি হাদীসের মধ্যে এসে যায়। এজন্য আমরা পৃথক পৃথকভাবে সব হদীসগুলি উল্লেখ না করে সেই তিনটি হাদীস উল্লেখ করব এবং সাহাবায়ে কেরামসহ পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিসীন এবং হাদীস ব্যাখ্যাকারীগণ তার কি অর্থ বুঝেছেন সেটা আলোচনা করব।


খানে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, হাদীসের শব্দ বা তরজমা দেখে হাদীসের মতলব বুঝতে যাওয়া বা সেই অনুযায়ী ব্যাখ্যা দেয়া কিন্তু গোমরাহীর আলামত। একা একা পড়ে বা বাংলা অর্থ দেখে হাদীস বুঝতে গেলে পরস্খলনের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সম্ভাবনায় নয় বরং বাস্তব ঘটনাও ইতিহাসের পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। তাই কোন হাদীস সামনে এলে সাহাবায়ে কেরাম তার কি অর্থ বুঝেছেন, কিভাবে তার উপর আমল করেছেন এবং তৎপরবর্তী তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনগণ তার কি ব্যাখ্যা করেছেন সেটাও জানতে হবে। কেননা হাদীসের সর্বপ্রথম মুখাতাব বা লক্ষ্যবস্তু হলেন সাহাবায়ে কেরাম। তারা সরাসরি হুযুর (সাঃ)- এর যবান থেকে হাদীস শুনেছেন এবং তার মতলব বুঝে তার উপর আমল করেছেন। তার সাহাবাদের আমলকেও হাদীসের সাথে মেলাতে হবে হাদীসের সহীহ ব্যাখ্যা বুঝার জন্য।


সাহাবায়ে কেরাম রাসূলে কারীম (সাঃ)–এর জন্য উৎসর্গকৃত প্রাণ ছিলেন। রাসূল (সাঃ)-এর একটা ইশারায় তারা আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তেঅ তারা প্রস্তুত ছিলেন। তারাই ছিলেন সত্যিকারের আশেকে রাসূল। তারাই ছিলেন রাসূলের আদর্শের প্রকৃত পতাকাবাহী। তাদের থেকে সুন্নাত বিরোধী, রাসূলের আদর্শ বিরোধী কোন কাজ প্রকাশ পাবে সেটা কল্পনাও করা যায় না। তাই হাদীসের পাশাপাশি তাদের আমলও দলীল রূপে গণ্য হবে, যেহেতু তারা ছিলেন মি’আরে হক বা সত্যের মাপকাঠি। হাদীস তিনটি হলো-


(১) উম্মেআতিয়া (রাযিঃ) বলেন, আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে আমারা যেন ঋতুবতি পর্দানশীন মহিলাদেরকেও ঈদের ময়দানে নিয়ে যাই। যাতে করে তারা মুসলামানদের জামাআত এবং দুআর মধ্যে শরীক থাকতে পারে। তবে ঋতুবতি মহিলারা নামাযের জায়গা থেকে আলাদা থাকবে। জনৈকা সাহাবিয়া বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অনেকের তো চাদরও নেই। হুযুর (সাঃ) বললেন, তাকে যেন তার বান্ধবী স্বীয় চাদর দিয়ে সাহায্য করে।

(২) মহিলারা যদি মসজিদে যেতে চায় তাহলে তাদেরকে বাধা দিও না।

(৩) তোমাদের কারো স্ত্রী যদি মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় তাহলে সে যেন বাধা না দেয়। তবে তাদের জন্য ঘরই শ্রেষ্ঠ।


এই বিষয়বস্তুর আরো কিছুই হাদীস সিহাহ সিত্তাহসহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। এসব হাদীস দ্বারা বাহ্যিকভাবে বুঝে আসে যে, মহিলাদের মসজিদে এবং ঈদগাহে যাওয়া অপছন্দনীয় হওয়া সত্ত্বেও তারা যদি স্বামীর নিকট অনুমতি চায় তাহলে স্বামীর বাধা প্রদান না করা উচিত। কিন্তু আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, হাদীসে প্রকৃত ব্যাখ্যা বুঝতে হলে আমাদেরকে সাহাবায়ে কিরাম এবং মুহাদ্দিসীনদের ব্যাখ্যার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। তাই আসুন ব্যাখ্যার আলোকে আমরা এসব হাদীসের মর্ম উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি।


প্রথম হাদীসে মহিলাদেরকে ঈদগাহে হাজির হওয়ার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশটা কোন ধরণের সেটা আমাদেরকে দেখতে হবে। আরবী ভাষায় আমর অর্থাৎ অনুমতিসূচক শব্দ সাধারণতঃ তিন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। ওয়াজিব, মুস্তাহাব এবং মুবাহ। আলোচ্য হাদীসে আমর তথা আদেশটা যে ওয়াজিব হিসেবে ব্যবহার হয় নাই সেটা একেবারে স্পষ্ট। কেননা মহিলাদের উপর ঈদের নামায ওয়াজিব না। এবং হাদীসের এই স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও সেই যুগের যে সকল মহিলা সাহাবী ঈদের মাঠে আজীবন শরীক হয়েছে এমন কোন প্রমাণও পাওয়া যায় না। তাছাড়া আলোচ্য হাদীসে তো হায়েজা মহিলাদের কথা বলা হয়েছে যাদের জন্য নামাযই নেই।


এমনকি এই আদেশটা মুস্তাহাব পর্যায়েরও না। কেননা হুযুর (সাঃ) মহিলাদের জন্য নির্জন প্রকোষ্ঠের নামায মসজিদে নববীর নামাযের চেয়ে উত্তম বলে বর্ণনা করেছেন এবং সেই হাদীসে ঈদের নামাযের জন্য আলাদা কোন হুকুম নেই যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায তো ঘরে পড়া ভাল। তবে ঈদের নামায ঈদগাহে যেয়ে পড়তে হবে বা পড়বে। কেননা মসজিদ তো সাধারণতঃ বাড়ীর কাছেই হয়ে থাকে আর ঈদগাহ শহরের বাইরে হয়ে থাকে। তাহলে বাড়ীর কাছে মসজিদে যেয়ে যেখানে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে; সেখানে শহরের বাইরে ঈদগাহে যেয়ে ঈদের জামাআতে শরীক হওয়ার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে?


দ্বিতীয় কথা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আর জুমুআর নামায ফরজ আর ঈদের নামায ওয়াজিব। ফরজ নামাযের জন্য যেখানে ঘর থেকে বের হয়া আশা অনুত্তম সেখানে ওয়াজিব আদায়ের জন্য ঈদগাহে যাওয়া কি করে উত্তম হতে পারে? সুতরাং বুঝা গেল যে, আলোচ্য হাদীসে আমর তথা অনুমতিসূচক শব্দ ওয়াজিব বা মুস্তাহাব নয় বরং মুবাহ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সাময়িক উপকারের জন্য রাসূলে আকরাম (সাঃ) মহিলাদেরকে ঈদগাহে যেতে বলেছিলেন। এর দ্বারা ওয়াজিব হওয়া বুঝে আসে না। (ফাতাওয়া রহীমিয়াঃ ৫/৩১)



বিশিষ্ট ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইমাম তাহাবী (রহঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহিলাদের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ছিল যাতে করে মুসলমানদের সংখ্যা বেশী দেখা যায় এবং দুশমনরা এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়। কিন্তু আজ যেহেতু সেই পরিস্থিতি আর নেই তাই ঐ হুকুম ও মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে।


ফতোয়ার আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমন

—————————————————————

বুখারী শরীফের বিখ্যাতব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) বলেন, বর্তমানে ফতওয়া এই কথার উপরে যে, মহিলাদের জন্য যে কোন নামাযে যাওয়া নিষেধ। চাই তা দিনে হোক আর রাতে হোক। উক্ত মহিলা চাই যুবতী হোক আর বৃদ্ধা হোক। এমনকি তাদের জন্য ওয়াজ মাহফিলে যাওয়াও নিষেধ। বিশেষ করে ঐ সকল জাহেলদের ও্যাজ্ব যারা দেখতে উলামার মত কিন্তু উদ্দেশ্য তাদের দুনিয়া কামানো আর প্রবৃত্তির পুজা করা।


ফতোয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছে,মহিলাদের জন্য জামাআতে হাজির হওয়া নিষেধ। চাই তা জুমা হোক বা ঈদ হোক। এমনকি ওয়াজের মাহফিলে পর্যন্ত। দিনে হোক বা রাতে হোক, বৃদ্ধা হোক বা যুবতী হোক সকলের জন্য এই হুকুম প্রজোয্য। ফেৎনা ছড়িয়ে পড়ার কারণে বর্তমানে এটাই ফতোয়া। (১-৫৬৬)


ফতোয়ায়ে আলমগিরীতে বলা হয়েছে- ফেৎনা ফাসাদ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করার কারণে মহিলাদের যে কোন নামাযে অংশগ্রহণ করা মাকরুহ। (১/৮৫)


শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) বলেন, এই যুগে মহিলাদের জন্য মসজিদে জামাআতে হাজির হওয়া মাকরুহ। কেননা ফেৎনারআশংকা রয়েছে। হুযুরে পাক (সাঃ) এর যুগে দ্বীনী হুকুম আহকাম শেখার জন্য তাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু এখন আর সেই প্রয়োজন বাকি নেই। দ্বীনের হুকুম আহকাম সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। পর্দার মধ্যে থেকেও মহিলারা তা জানতে পারে। সুতরাং তাদের জন্য বাড়ীতে পর্দার মধ্যে থাকাই শ্রেয়।


উল্লেখ্য যে, মসজিদে না যাওয়ার এই হুকুম হারাম শরীফ, মসজিদে নববী, মসজিদে আকসাসহ সকল মসজিদের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রজোয্য। সর্বত্রই মহিলারা স্বীয় ঘরে নামায পড়বে। এমনকি যেসব মহিলারা হজ্ব বা উমরা করতে যান তারাও সেখানে বাইতুল্লাহ শরীফ বা মসজিদে নববীতে নামায না পড়ে স্বীয় রুমে নামায পড়বেন। (আহসানুল ফাতাওয়া)


কেননা রাসূলে কারীম (সাঃ) মসজিদে নববীর তুলনায় নির্জন প্রকোষ্ঠে নামায পড়াকে মহিলাদের জন্য উত্তম বলেছেন। এই হাদীস যেহেতু মদীনায় থাকাকালীন সময়ে ইরশাদ করেছিলেন তাই এতে মসজিদে নববী কথা উল্লেখ রয়েছে। মক্কা শরীফে অবস্থান করার সময় যদি বলতেন তাহলে সেখানে অবশ্যই বলতেন যে, মসজিদে হারামে নামায পড়ার চেয়ে স্বীয় বাড়ীতে পড়া মহিলাদের জন্য উত্তম। এখানে বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার যে, মসজিদে হারামে এক রাকাআতে এক লাখের সাওয়াব এবং মসজিদে নববীতে এক রাকাআতে এক হাজার রাকাআতের সাওয়াব শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য।


হিলারা স্বীয় ঘরে নামায পড়লে ঐ সাওয়াব পেয়ে যাবেন। সুতরাং মা-বোনেরা সাবধান। অতিরিক্ত সাওয়াবের আশায় কুরআন হাদীসের বিরোধিতা করে ধ্বংস ডেকে আনবেন না।

জঅধিকাংশ মহিলারাই বেপর্দা চলেছে। বাড়ীতে গায়েরে মাহরাম এবং দেওর-ভাসুরের সাথে পর্দা করছে না, যা কিনা ফরজ। অথচ তারাই আবার অধিক সাওয়াবের আশায় সোৎসাহে মসজিদে, ঈদগাহে উপস্থিত হচ্ছে। যা কিনা মুস্তাহাবও নয়। তাহলে এটা গোড়া কেটে আগায় পানি দেয়ার মত নয় কি? এই স্ববিরোধিতার কী অর্থ? ফরজ জিনিস বাদ দিয়ে মুবাহ জিনিসের প্রতি এত আগ্রহ কেন? সাহাবায়ে কেরাম যারা বেশী থেকে বেশী সাওয়াব অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতা করতেন তারাও হুযুর (সাঃ) এর কথা মেনে নিয়ে মসজিদে নববীতে তার পিছনে নামায পড়া বাদ দিয়ে নিজেদের বাড়ীতে নামায পড়েছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের মা-বোনদের তাদেরকে টেক্কা দিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে যাওয়ার প্রবণতাটা সত্যিই দুঃখজনক।


ফতোয়ারবিখ্যাত কিতাব বাদায়িউস সানায়িতে মহিলাদের জুমুআ এবং ঈদের জামাআতে শরীক হওয়া সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে তা প্রণিধান যোগ্য। জুমুআর জামাআতে শরীক হওয়া সম্বন্ধে বলা হচ্ছেঃ আর মহিলারা জুমুআয় শরীক হবে না। কেননা তারা পারিবারিক কাজে মশগুল থাকে, তাছাড়া পুরুষদের সমাবেশে মহিলাদের বের হওয়াও নিষেধ। তাদের এই বের হওয়াটা ফেৎনার কারণ হয় তাই এই হুকুম। একারণেরই তাদের জুমুআআর পাঁচ ওয়াক্তের জামাআতে হাজির হওয়া মাফ। হযরত জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উপর এবং কিয়ামতের দিনের উপর ঈমান রাখে তার জন্য জুমুআ ওয়াজিব কিন্তু মুসাফির,গোলাম,বাচ্চা এবং মহিলা ও অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত। (১/২৫৮)।

এই হাদীসে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, মহিলাদের জন্য জুমুআর নামায নেই।

ঈদের জামাআতে শরীক হওয়া সম্বন্ধে বলা হয়েছেঃএ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, যুবতী মহিলাদের জুমুআর নামাযে, ঈদের নামাযে এবং অন্য যে কোন নামাযের জামাআতে হাজির হওয়ার অনুমতি নেই। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ


তোমরা স্বীয় ঘরে অবস্থান কর

এখানে অবস্থান করার হুকুম দিয়ে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তাদের বাইরে বের হওয়াটা নিঃসন্দেহে ফেৎনার কারণ। আর ফেৎনা হলো হারাম, যে জিনিস হারাম পর্যন্ত টেনে যায় সেটাও হারাম। তবে অতি বৃদ্ধা মহিলারা ফজর, মাগরিব আর ঈশার জামাআতে হাজির হতে পারে। যোহর, আসরে নয়। কেননা এই দুই সময় হচ্ছে শয়তান-বদমায়েশদের বাইরে ঘোরাঘুরি করার সময়। এতদসত্ত্বেও এতে কারো দ্বিমত নেই যে, তবুও নামাযের জন্য বের না হওয়াটাই উত্তম।কেননা নবীয়ে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের নামায স্বীয় বাড়ীতে তাদের মসজিদে পড়ার চেয়ে উত্তম। আর ঘরের নামায বাড়ীর নামাযের চেয়ে উত্তম। আর তাদের গোপনে নামায সাধারণ ঘরে নামাযের চাইতে উত্তম। (১/২৭৫)

উল্লেখ্য যে, আলোচ্য কিতাবের লেখক আল্লামা আলাউদ্দীন কাসানী (রহঃ) আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। ৫৮৭ হিজরীতে তার ওফাত হয়। তিনি ছিলেন সে যুগের বিরাট বড় আলেম। তার ইলমের এতোই সুখ্যাতি ছিল যে, তিনি মালিকুল উলামা অর্থাৎ উলামায়ে কেরামের বাদশাহ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। এতক্ষণ যাবৎ হাদীসের আলোকে তার ফতোয়া আপনারা শুনলেন। তারা আমাদের চাইতে হাদীস-কুরআন অনেক বেশী বুঝতেন। তাদের তাকওয়া পরহেযগারীও ধারণার অতীত। কাজেই হাদীস-কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে।


সমালোচনার জবাবঃ

—————————

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর যুগে মহিলারা সীমিত সংখ্যায় যাও বা মসজিদে যেতেন সাহাবাদের যুগে তাও বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে হযরত উমর ফারুক (রাযিঃ)-এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেন এবং উপস্থিত সকল সাহাবায়ে কেরাম তা নির্দিতায় মেনে নেন। কেউ কেউ এ ব্যাপারে হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-এর কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি হযরত উমর ফারুক (রাযিঃ) এর সমর্থন করে বলেন,


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যদি বর্তমানের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তাহলে তাদেরকে অবশ্যই মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন।


আবু দাউদ শরীফঃ১/৮৪

বর্তমানে আমাদের সমাজের কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি যারা মহিলাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুবই উৎসাহী। যেসব মহিলা পর্দা করেনা তাদেরকে তারা পর্দার জন্য বলেন না। কিন্তু যারা পর্দা করে তাদেরকে পর্দা থেকে বের করে পুরুষদের মাহফিলে নিয়ে যেতে যার পর নাই তৎপর। তারা এসব মহান সাহাবীদের সমালোচনা করে বলে থাকেন যে, রাসূলে আকরাম (সাঃ) যখন মহিলাদের মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করতে নিষেধ করেছেন এবং কারো কাছে অনুমতি চাইলে তাকে অনিমতি দিতে বলেছেন। এখন সাহাবাদের এই ভিন্ন মত পোষণ করা গ্রহণীয় নয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে যে সুন্নাতটি চালু ছিল তার বিপরীতে কোন আলেম-উলামার কথা, কোন ফিকাহ বা ফতোয়ার কিতাবের ফতোয়া গ্রহণ করার অর্থ হবে রাসূলের আদর্শকে বাদ দিয়ে তাদেরকে বড় মনে করা। তাই আমরা এসব ফতোয়া মানি না।


আসুন এবার আমরা বিরুদ্ধবাদীদের এসব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করি। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এসব ভাইয়েরা সুন্নাতকে মহব্বত করেন বলেই এই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তারা চান না যে রাসূলের সরাসরি হাদীস বা সুন্নাত বাদ দিয়ে অন্য কারো কথা মানা হোক। আর এটা কোন মুমিন মুসলিম চাইতেও পারে না।


কিন্তু কথা হলো এই প্রশ্ন উত্থাপন করার আগে আমাদেরকে সুন্নাতের সংজ্ঞা এবং সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা সম্পর্কে জানতে হবে।


স্মরণ রাখা দরকার যে, রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কওল ফেয়েল ও তাকবীর দ্বারা প্রমাণিত বিষয়সমূহ যেমনভাবে সুন্নত এবং অনুসরণযোগ্য তেমনিভাবে রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পরে খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল দ্বারা যেটা প্রমাণিত সেটাও সুন্নাত বলে গণ্য এবং তার অনুসরণ করা ওয়াজিব। কেননা রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর একটা সহীহ হাদীস বা আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুস্নাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীসের কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে,


আমার পর যারা জীবিত থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে এমতাবস্থায় তোমাদের জন্য জরুরী হলো তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং আমার পর খুলাফায়ে রাশেদীন যেসব সুন্নাত জারী করবে সেগুলিকে দৃঢভাবে আঁকড়ে ধরবে যেমন নাকি দাঁত দ্বারা কোন জিনিস মজবুতভাবে ধরা হয়।

— আবু দাউদ শরীফঃ২/৬৩৫


তিরমিযী শরীফে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে

হযরত হুযাইফা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, জানিনা আমি কতদিন তোমাদের মধ্যে থাকব। আমার পরে তোমরা আবু বকর এবং উমরের তরীকা অনুসরণ করবে।

— তিরমিযী ২/৩৬২

এখানে খুব ভাল্ভাবে লক্ষ্য করুন। প্রথম হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুলাফায়ে রাশেদীনের অনুসরণ করাকে নিজেরকরা বলে ঘোষণা করেছেন। আর দ্বিতীয় হাদীসে বিশেশভাবে হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাযিঃ) এবং হযরত উমর ফারুক (রাযিঃ)-এর অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন।


অনুরূপভাবে শীর্ষ স্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম, ফুকাহা এবং তাবেঈনরাও যদি কোন বিষয়ের উপর ইজমা করেন তাহলে সেটাও সুন্নাত বলে বিবেচিত হবে। নাজাতের জন্য সেটার উপর আমল করাও জরুরী। হাদীস শরীফে মুক্তি প্রাপ্ত জামাআতের পরিচয় দিতে যেয়ে বলা হয়েছে, আমি এবং আমার সাহাবারা যে তরীকার উপর আছি সেটার অনুসরণ করলেই মুক্তি পাওয়া যাবে। [4]


তাছাড়া সাহাবা এবং তাবেঈন্দের যুগকে খাইরুল কুরুন তথা শ্রেষ্ঠ যুগ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব হাদীস দ্বারা বুঝে আসে যে, হুযুর (সাঃ)-এর তালীম হোক বা খুলাফায়ে রাশেদীনের জারীকৃত বিধান হোক কিংবা শীর্ষ স্থানীয় সাহাবা তাবেঈনদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হোক সবগুলির উপর আমল করাই সুন্নাত। এখন আপনিই দেখুন সাহাবায়ে কেরামের যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার কি হুকুম ছিল।


এখানে খুব ভাল ভাবে মনে রাখা দরকার যে, সাহাবায়ে কেরাম হুযুর (সাঃ)-এর সর্ব প্রথম ছাত্র ছিলেন। তাদের সামনেই ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। হুযুর (সাঃ)-এর পবিত্র মুখ থেকে তারাই সর্ব প্রথম সরাসরি হাদীস শুনেছেন। তারাই ছিলেন সেসব হাদীসের সর্ব প্রথম লক্ষ্য বস্তু। তারা হুযুর (সাঃ)-এর যিন্দেগী অতি নিকট থেকে দেখেছেন। তার প্রতিটি সুন্নাতকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করেছেন। যে কোন হাদীসের মর্ম ও ব্যাখ্যা সাহাবায়ে কেরামই সবচেয়ে বেশী জানতেন, কারণ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সমস্ত উম্মত থেকে সর্বদিক দিয়ে যাচাই বাছাই করে নির্বাচিত করেছিলেন। দ্বীনের প্রতিটি বিষয় সম্বন্ধে তারা রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর নিকট থেকে বাস্তব প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর সর্ব প্রথম তারাই জান-মাল ও সময়ের কুরবানী দিয়ে দ্বীনের হেফাযত করেছিলেন।


সুতরাং তাদের সম্পর্কে এটা ধারণা করাও মস্ত বড় পাপ যে, তারা নিজেদের মনগড়া উক্তির মাধ্যমে রাসূলী সুন্নাতকে বদলে ফেলেছিলেন বা তারা রাসূলের আদর্শ বিরোধী কাজ করেছেন।(নাউযুবিল্লাহ) আজ যারা হযরত উমর (রাযিঃ) এবং হযরত আয়েশা (রাযিঃ)-এর সমালোচনা করে বড় রাসূল প্রেমিক সাজতে চান তারা এদিকটা একটু খেয়াল রাখবেন আশা করি। আল্লাহ না করুন সাহাবাদের সম্পর্কে আমরা যদি এমন ধারণা পোষণ করতে শুরু করি তাহলে সেটা কিন্তু তাদের উপর অপবাদ দেয়া হবে আর এই অপবাদের কারণে তাদের কোন কথা আর গ্রহণযোগ্য থাকবে না। এমতাবস্থায় পুরা দ্বীনের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে যাবে। তাই কথা বলার সময় খুব সাবধানে কথা বলা উচিত।


সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে নিয়ে আজ চৌদ্দশত বৎসর পর্যন্ত লাখো কোটি উলামায়ে কেরাম এসব হাদীসের যে মতলব বুঝে এসেছেন এবং ফতোয়া দিয়ে এসেছেন আজ এই কিল্লতে ইলমীর যুগে এরকম স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সেই সব হাদীসের উল্টা মতলব বুঝা এবং তা প্রচার করা আর যারা মানে না তাদেরকে গালমন্দ করা কত বড় ফেৎনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা কি আপনারা কখনও চিন্তা করে দেখেছেন? অধিকাংশ মা-বোনেরা আজ পরিপূর্ণভাবে পর্দা প্রথা পালন করছে না। খাছ পর্দা তো অনেক দ্বীনদার ব্যক্তিবর্গের বাড়ীতেও নেই, সেক্ষেত্রে এসব সংশোধনের চেষ্টা না করে মহিলাদের মসজিদে আর ঈদগাহে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনারা এত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কেন?


শেষ কথাঃ

—————

এতক্ষণ যাবৎ আমরা যে আলোচনা করলাম তার দ্বারা কয়েকটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেল, তা হচ্ছে-

(১) রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর এমন কোন হাদীস নেই যার মধ্যে স্পষ্টভাবে মহিলাদের নামায পড়ার জন্য মসজিদে বা ঈদগাহে যেতে বলা হয়েছে। মসজিদে যাওয়া সংক্রান্ত যেসব হাদীস পাওয়া যায় তাতে অত্যন্ত অপছন্দের সাথে শর্ত সাপেক্ষে এমনভাবে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে যাতে মহিলারা নিজেরাই মসজিদে যেতে অনুৎসাহিত হয়ে পড়ে।

(২) মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সুন্নাতের স্পষ্ট বিরোধিতা।

(৩) মহিলারা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদেরকে নিষেধ না করা সুন্নাতে রাসূল ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত এবং সাহাবায়ে কেরামের ইজমা একথা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ঐ সুন্নাত সাময়িক এবং শর্ত সাপেক্ষে ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের কারণে এবং শর্ত না পাওয়ার দরুণ এখন নিষেধ করাটাই সুন্নাত।


(৪) মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা না দেয়া বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুন্নাতে রাসূলের অনুসরণ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটা সুন্নাতে রাসূলের বিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়। পক্ষান্তরে মসজিদে যেতে নিষেধ করা আপাতঃ দৃষ্টিতে সুন্নাতে রাসূলের বিরোধিতা মনে হলেও বাস্তবে সেটাই সত্যিকারের সুন্নাতে রাসূলের অনুসরণ।


তথ্যসূত্রঃ

[1] মা’আরিফুল কুরআনঃ ৭-২০৮

[2] বুখারী শরীফঃ ১-১৫৯

[3] আইনী শরহে বুখারীঃ ৩/২৩১

[4] তিরমিযীঃ ২/১০২



কুরআন- হাদীসের আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমন ও জামাআতে নামায আদায়ের হুকুম- ইসলামিক আলোচনা-১২তম পর্ব

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 


মহিলাদের মসজিদে যাওয়া জায়েয – ভুল ফতোয়া

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

কুরআন- হাদীসের আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমন ও জামাআতে নামায আদায়ের হুকুমঃ

—————————————————————————————————————————

বর্তমান যুগে আমরা ফেৎনার মধ্যে বসবাস করছি। চারিদিকে শুধু ঈমান বিধংসী ষড়যন্ত্র। নেক সুরতে শয়তান আমাদেরকে ধোকা দিয়ে চলেছে। আমরা না বুঝে শয়তানের পাতা জালে আটকে যেয়ে ঈমান আমল সব বরবাদ করছি। যেটা সাওয়াবের কাজ না, সেটা নিজের পক্ষ থেকে সাওয়াবের কাজ বানিয়ে তার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছি।


এমনই একটা ফেৎনা হলো মহিলাদের নামাযের জন্য মসজিদে আর ঈদগাহে যাওয়া। তথাকথিত কিছু আহলে হাদীস, বিদয়াতী এবং নফসের পূজারী ব্যক্তিবর্গ মা-বোনদেরকে সাওয়াবের রঙ্গীন স্বপ্ন দেখিয়ে জুমুয়ার জামাআত, ঈদের জামাআতে শরীক হয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। মা-বোনরাও অধিক সাওয়াব অর্জনের আশায় গৃহকোণ ত্যাগ করে মসজিদে ঈদগাহে ছুটে যাচ্ছে। অথচ মহিলাদের উপর জুমুয়ার নামায বা ঈদের নামায কোনটিই ওয়াজিব না। তাহলে তারা কোন্‌ উদ্দেশ্যে এসব নামায আদায়ের জন্য মসজিদে ছুটে যাচ্ছেন? পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য মহিলাদের মসজিদে না যেয়ে ঘরে পড়ার মধ্যে বেশি সাওয়াব। সাওয়াবের যদি নিয়ত থাকত তাহলে তারা ঘরেই নামায আদায় করতেন। তাহলে কি উদ্দেশ্যে তাদেরকে ঘর থেকে বের করা হচ্ছে?


মহিলাদের জন্য নামায ঘরে পড়া উত্তম নাকি মসজিদে যেয়ে পড়া উত্তম। এ সম্পর্কে বিশদ জানার আগে জানতে হবে মহিলাদের উপর যে পর্দা করা ফরজ করা হয়েছে সে পর্দার হাকীকত কি? স্বরণ রাখা দরকার যে, কুরআনে পাকের ৭টি আয়াতে এবং নবিয়ে করিম (সাঃ) –এর অনেক সহীহ হাদীসে মহিলাদেরকে পর্দা পালন করার তাকীদ করা হয়েছে। সে সব আয়াত ও হাদীস পর্যালোচনা করলে বুঝে আসে যে, এখানে বিশেষভাবে খাছ পর্দার কথা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যতদূর সম্ভব মহিলাদের স্বীয় গৃহে অবস্থান, একান্ত অপারগতা ও ঠেকা ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। চাই সেটা নামাযের জন্য হোক বা দুনিয়াবী অন্য কোন কাজে হোক।


এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ উসুল মনে রাখা দরকার যে, ইসলাম যে সমস্ত কাজকে গোনাহে পতিত হওয়ার নিকটবর্তী কারণ বর্ণনা করে হারাম ঘোষণা করেছে সেটা চিরদিনই হারাম থাকবে। অবস্থার পরিবর্তনের কারণে তাতে কোন পরিবর্তন আসবে না। যেমন মহলাদের বেপর্দা থাকাকে গোনাহে পতিত হয়ার কারণ উল্লেখ করে পর্দা করা ফরজ এবং বেপর্দা থাকা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখন কোন মহিলা যদি কোন পীর সাহেবের সামনে এই বলে বেপর্দায় যায় যে, পীর সাহেব তো বুযুর্গ মানুষ, তার সামনে গেলে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে কি এই মহিলার বেপর্দায় যাওয়া জায়েয হবে? হবে না। কেননা এখানে বাস্তবে কেউ গোনাহে লিপ্ত হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় পর্দা করা ফরয।


পক্ষান্তরে যে সব জিনিসকে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার দুরবর্তী কারণ হিসেবে উল্লেখ করে হারাম বলা হয়েছে সেখানে ঐ কাজের দ্বারা যদি গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তা হারাম। আর যদি গোনাহে পতিত হওয়ার আশংকা না থাকে তাহলে তা হারাম নয়। অবস্থার পরিবর্তনের সাথে এ ধরণের জিনিসের হুকুম ও পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন মহিলাদের ঘরের বাইরে বের হওয়া বোরকা বা লম্বা চাদর পরিধান করে গোনাহে পতিত হওয়ার দুরবর্তী কারণ। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এর হুকুমও বদলাতে থাকবে। বোরকা পরিধান করে বা পর্দা সহকারে বাইরে বের হওয়া যদি কখনও ফেৎনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন বোরকা পরিধান করে বাইরে যাওয়াটাও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারটাও ঠিক এই মূলনীতির উপরে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। [1]


রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর যুগে কিছু সংখ্যক মহিলারা ওয়াক্তিয়া নামাযের জন্য মসজিদে হাজির হতেন। ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহেও যেতেন। কিন্তু সেদটা ছিল উত্তম যুগ। কোন ধরণের ফেৎনার আশংকা ছিল না। রাসূলে করিম (সাঃ) স্বশরীরে বিদ্যমান ছিলেন। ওহী অবতীর্ণ হচ্ছিল। নতুন নতুন আহকাম আসছিল। সকলেই নতুন মুসলমান ছিলেন। নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদির হুকুম আহকাম জানার প্রয়োজন ছিল। তার চেয়েও বড় পাওয়া ছিল রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর পিছনে নামায পড়ার সৌভাগ্য। হূযুর(সাঃ) স্বপ্নের তাবীর বলতেন, ইলমী আলোচনা করতেন। তাই মহিলাদেরও সে সব জায়গায় উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল। তবে পুরুষদের মত তাদের এই হাজির হওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল না। কেননা পুরুষের মত মহিলাদের জামাআতে নামায পড়া জরুরি না। জামাআতের সাথে নামায পড়লে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব। মসজিদে নববীতে নামায পড়লে প্রতি রাকাআতে এক হাজার রাকাআতের সাওয়াব।[2] এতদস্তত্বেও মহিলাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছিল বাড়ীতে নামায পড়ার জন্য।


রাসূলে আক্রাম(সাঃ) এর যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরামের যুগেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। হযরত উমর(রাযিঃ) তার খেলাফতের যুগে সাহাবায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকাহ(রাযিঃ) এই ঘোষণা সমর্থন করে বলেন, আজকের যুগে মহিলাদের যে অবস্থা এটা যদি রাসূরুল্লাহ(সাঃ) দেখতেন তাহলে তিনিও মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন।


এখানে স্বরণীয় যে,হযরত উমর(রাযিঃ) এবং হযরত আয়েশা(রাযিঃ)-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট সাহাবী দ্বারা রাসূলে কারীম(সাঃ)- এর বিরোধীতা করা বা তার হুকুমের খেলাফ করার কোন কল্পনাও করা যায় না। এতদস্বত্তেও তারা এই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এই জন্য যে, যে সব শর্তের সাথে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া জায়েয ছিল এখন সে সব শর্ত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মসজিদে যাওয়ার হুকুম আপনা আপনিই রহিত হয়ে গেছে। এখানে রাসূলে কারীম(সাঃ)-এর বিরোধীতা করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।


বস্তুত কোন যুগেই মহিলাদের মসজিদে যাওয়া পছন্দনীয় ছিল না। সব সময় তাদের বাড়ীতে থাকতে এবং গৃহকোণে নামায আদায় করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরজ। বিনা জরুরতে বাহিরে বের হলে পর্দার লংঘন হবে, ফেৎনা ছড়াবে, সে জন্য জামাআতের মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও তাদের জন্য মাফ করে দেয়া হয়েছে।


মহিলাদের নামায সংক্রান্ত অসংখ্য হাদীস রয়েছে যাতে তাদেরকে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে ঘরে নামায পড়তে বলা হয়েছে এবং মসজিদে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা প্রথমে সেসব হাদীসগুলি এখানে উল্লেখ করব। অতঃপর বিরুদ্ধ বাদীদের পেশকৃত হাদীস উল্লেখ করে তার বাস্তবতা পর্যালোচনার চেষ্টা করব।

মসজিদে না যাওয়া সম্পর্কিত হাদীসসমূহ

———————————————————

হাদিস ১

হযরত উম্মে হুমাইদ (রাযিঃ) একবার রাসূলে মাকবুল (সাঃ) –এর খিদমতে হাজির হয়ে আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথে নামায পড়ার আমার খুবই ইচ্ছে হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন আমি জানি, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে ভালবাস। কিন্তু মনে রেখ, বন্ধ ঘরে তোমার নামায পড়া খোলা ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর খোলা কামরার নামায বারান্দার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর বারান্দার নামায মহল্লার মসজিদে নামাযের চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদের নামায আমার মসজিদের (মসজিদে নববী) নামাযের চেয়ে উত্তম। এই এরশাদ শ্রবণের পর হযরত উম্মে হুমাইদ (রাযিঃ) স্বীয় ঘরের সবচেয়ে নির্জন কোণে বিশেষভাবে নামাযের জায়গা তৈরী করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই নামায পড়তে থাকেন।

— মুসনাদে আহমাদ, ছহীহ ইবনে খুযাইমা, ছহীহ ইবনে হিব্বান, সূত্র, তারগীবঃ ১-১৩৫


ইবনে খুযাইমা এই হাদীস বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, মহিলাদের স্বীয় ঘরে নামায পড়া মসজিদে নববীতে নামায পড়ার তুলনায় হাজার গুণে উত্তম। যদিও মসজিদে নববীতে নামায পড়া অন্য মসজিদে নামায পড়ার তুলনায় হাজার গুণে উত্তম। কিন্তু এই ফযীলত শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়।


হাদিস ২

হযরত উম্মে সালামা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে খোদা (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের বদ্ধ কামরার মধ্যে নামায পড়া খোলা কামরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর খোলা কামরার নামায বারান্দার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর ঘরের বারান্দার নামায মহল্লার মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম।

— তাবারানী শরীফ-সূত্র-কানযুল উম্মালঃ ৮-২৬৮


হাদিস ৩

হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) রাসূলে কারীম (সাঃ)- এর ইরশাদ নকল করেন যে, নারী জাতি গোপন থাকার জিনিস। তারা যখন বারী থেকে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মানুষের দৃষ্টিতে তুলে ধরে। পক্ষান্তরে মহিলারা স্বীয় বাড়ীর সবচেয়ে গোপন স্থানে আল্লাহ পাকের অধিক নৈকট্য লাভ করে থাকে।

— তাবারানী ফিল আওসাত-সূত্র-তারগীবঃ ১-১৩৬


হাদিস ৪

হযরত ইবনে সালামা (রাযিঃ) রাসূলে কারীম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ হলো তাদের বারীর গোপন কক্ষ।

— ছহীহ ইবনে খুযাইমা, মুসতাদরাকে হাকেম-সূত্র-তারগীব


হাদিস ৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের নামায তাদের ঘরে, বাড়ীর নামাযের চেয়ে উত্তম। আর ঘরের নির্জন কোণে নামায পড়া এটা ঘরে নামায পড়ার চেয়েও উত্তম।

— আবু দাউদ-ছহীহ ইবনে খুযাইমা-সূত্র তারগীবঃ ১-১৩৫


হাদিস ৬

রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মহিলারা গোপন থাকার বস্তু।যখন তারা বের হয় শয়তান তখন তাদের দিকে উকিঝুঁকি মারতে থাকে।

— জামে তিরমিযী, ছহীহ ইবনে খুযাইমা, ছহীহ ইবনে হিব্বান-তারগীবঃ১-২২৭


হাদিস ৭

হযরত আবুল আহওয়াস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাকের নিকট মহিলাদের ঐ নামায সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয় যা সে স্বীয় ঘরের সবচেয়ে নির্জন জায়গায় আদায় করে।

— ছহীহ ইবনে খুযাইমা, তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনযিরীঃ ১-১৩৬


হাদিস ৮

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) রাসূলে খোদা (সাঃ) এর ইরশাদ নকল করেন যে, তোমরা মহিলাদের মসজিদে আসতে বাধা দিওনা তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম।

— আবুদাউদতারগীব১-২২৬


হাদিস ৯

আবু আমর শায়বানী বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) কে দেখেছি তিনি জুমুআর দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন তোমরা বের হয়ে যাও। তোমাদের ঘরই তোমাদের জন্য উত্তম।

— তাবারানী-তারগীবঃ ১-১৩৬


হাদিস ১০

মহিলাদের জন্য জেহাদও নাই জুমুআও নাই এবং জানাযায় শরীক হওয়া নাই

— তাবারানী ফিছ ছগীর-কানযুল উম্মালঃ ৮-২৬৪


হাদিস ১১

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ مُوسَى بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ مُدْرِكٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ جَالِسٌ فِي الْمَسْجِدِ إِذْ دَخَلَتِ امْرَأَةٌ مِنْ مُزَيْنَةَ تَرْفُلُ فِي زِينَةٍ لَهَا فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ انْهَوْا نِسَاءَكُمْ عَنْ لُبْسِ الزِّينَةِ وَالتَّبَخْتُرِ فِي الْمَسْجِدِ فَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَمْ يُلْعَنُوا حَتَّى لَبِسَ نِسَاؤُهُمُ الزِّينَةَ وَتَبَخْتَرْنَ فِي الْمَسَاجِدِ ‏

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসা ছিলেন। ইতিমধ্যে মুযায়না গোত্রের এক নারী মোহনীয় সাজে সজ্জিত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের জৌলুসপূর্ণ ও চোখ ধাঁধানো পোশাক পরিহিত অবস্থায় মসজিদে আসতে নিষেধ করো। কেননা বনী ইসরাঈলের নারীরা জৌলুসপূর্ণ সাজে সজ্জিত হয়ে মসজিদে না আসা পর্যন্ত তাদের উপর অভিশাপ বর্ষিত হয়নি।

— ইবনে মাজাহ-হা/৪০০১


হাদিস ১২

রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে আসা থেকে বাধা দিওনা, কিন্তু তারা যেন সুগন্ধি ব্যবহার ছাড়া বের হয়।

— আবু দাউদঃ ১-৮৪, কানযুল উম্মালঃ ১৬-৪১৪


হাদিস ১৩

যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আস্তে চায় তখন যেন সুগন্ধির ধারে কাছেও না যায়।

— কানযুল উম্মালঃ ১৬-৪১৪


হাদিস ১৪

যখন কোন মহিলা সুগন্ধি লাগিয়ে বের হয় আর লোকেরা তার খুশবু পায় সেই মহিলা ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হয়।

— নাসাই-ইবনে খুযাইমা তারগীব তারহীব, আহকামুল কুরআন থানভীঃ ৩-৪৪৮


হাদিস ১৫

যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসতে চায় তখন সে যেন তার সুগন্ধি এমনভাবে ধুয়ে ফেলে যেমন (গুরুত্বের সাথে) সে ফরজ গোসল করে থাকে।

— কানযুল উম্মালঃ ১৬-৪১৪


এতক্ষণ যাবৎ আমরা যে সহীহ হাদীসগুলি উল্লেখ করলাম তার দ্বারা কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেলোঃ(ক) রাসূলে কারীম (সাঃ)- এর যুগে মহিলাদের জন্য জামাআতে শরীক হওয়া অত্যাবশ্যকীয় ছিল না। শুধুমাত্র অনুমতি ছিল। তবে সেটাও এমন অপছন্দের সাথে এবং শর্ত সাপেক্ষে যে তারা নিজেরাই মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ত।(খ) মহিলাদের মসজিদে যাওয়াটা ওয়াজিব, ফরয কিছুই ছিল না বরং মোবাহ ছিল। তাতে বাড়তি কোন সাওয়াব ছিল না।(গ) হযরত উম্মে হুমাইদ (রাযিঃ) হুযুরে পাক (সাঃ)-এর ইরশাদ উপর আমল করার জন্যই মসজিদ ছেড়ে সারা জীবন বাড়ীর নির্জন প্রকোষ্ঠে নামায আদায় করেছেন। এবং সে যুগের মহিলারা সাধারণভাবে এটাই করতেন।


আজ শত আফসুস ঐ সব নব্য পণ্ডিতদের উপর যারা মহিলাদেরকে মসজিদেযাওয়ারজন্য উৎসাহিত করে রাসূলে পাক (সাঃ)-এর ইচ্ছা এবং শিক্ষার বিরোধিতা করছে। আশ্চর্য্যের বিষয় হলো সেটাকে আবার সুন্নাত বলে চালিয়ে দিতে সচেষ্ট হচ্ছে। মহিলাদের জন্য মসজিদে যেয়ে নামায পপড়া যদি সুন্নাত হ্য় এবং তাতে সাওয়াবও বেশী হত তাহলে রাসূলে করিম (সাঃ) কেন বললেন যে, মসজিদে নামাযের চেয়ে ঘরের নামাযই উত্তম। তাহলে কি সুন্নাত তরক করার উপর সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে?


এখানে স্বরণ রাখা দরকার যে, রাসূলে মাকবুল (সাঃ)-এর যুগে মহিলাদের যে মসজিদে আসার অনুমতি ছিল সেটা কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে ছিল। যথা-

(ক) সেজে গুজে খুশবু লাগিয়ে আসতে পারবে না।

(খ) বাজনাদের অলংকার চুড়ি ইত্যাদি পরে আসতে পারবে না।

(গ) কাজকামের সাধারণ ময়লা কাপড় পড়ে আসতে হবে। যাতে কেউ আকৃষ্ট না হয়।

(ঘ) অংগভংগি এবং অহংকারী চালে চলতে পারবে না। সর্বোপরি তাদের এই বের হওয়া, ফেৎনার কারণ না হতে হবে।


উল্লেখ্য যে,রাসূলে আকরাম (সাঃ) – এর অফাতের কিছুদিন পর থেকেই যখন শর্তগুলি বিলুপ্ত হতে শুরু করল এবং মহিলাদের মধ্যে স্বাধীনচেতা ভাব দেখা দিল তখন মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার হুকুমও অটোমেটিকভাবে রহিত হয়ে গেল। হযরত উমর ফারুক (রাযিঃ) স্বিয় খেলাফতের যুগে যখন মহিলাদের এই অবস্থা দেখলেন এবং ফেৎনার আশংকাও দিন দিন বাড়তে লাগল তখন তিনি এবং বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম আদেশ জারি করলেন মহিলাদের মসজিদে না আসার। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন। কেননা তারা জানতেন যে, মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদেশের বিরোধিতা করা হয় নাই বরং তার ইচ্ছার উপরেই আমল করা হয়েছে।


ফতোয়ার বিখ্যাত গ্রন্থ বাদায়িউস সানায়িতে বলা হয়েছে,

যুবতী মহিলাদের মসজিদে যাওয়া মুবাহ নয় ঐ রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে যা হযরত উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি যুবতী মহিলাদেরকে বাইরে বের হতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কেননা মহিলাদের ঘর থেকে বের হওয়া ফেৎনা। আর ফেৎনা হারাম। সুতরাং যে জিনিস হারাম পর্যন্ত নিয়ে যায় সেটাও হারাম।

— বাদায়িউস সানায়ি ১/১৫৭


এই ফেৎনার কথা উপলব্ধি করেই হযরত আয়িশা (রাযিঃ) বলেছিলেন,

যদি রাসূলে খোদা (সাঃ) মহিলাদের এই (দুঃখজনক) অবস্থা দেখতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন। যেমন নাকি বনী ইসরাইলের মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল।


— বুখারী শরীফঃ ১-১২০

আল্লামা আইনী (রহঃ) বলেন, আর আজকের যুগ! খোদার পানাহ। আজকের যুগে মহিলারা যে বিদ’আত আর নিষিদ্ধ জিনিস অবলম্বন করছে, পোষাক পরিচ্ছদ আর রূপচর্চায় তারা যে নিত্যনতুন ফ্যাশন আবিষ্কার করছে, বিশেষ করে মিশরের মহিলারা। যদি হযরত আয়েশা (রাযিঃ) এই দৃশ্য দেখতেন তাহলে আরো কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন। এর পরে আল্লামা আইনী (রহঃ) বলেন, হযরত আয়েশা (রাযিঃ) উক্ত মন্তব্য তো রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর ইন্তেকালের কিছুদিন পরের মহিলাদের সম্বন্ধে। অথচ আজকের যুগের মহিলাদের উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সেকালে ছিল না। তাহলে এ অবস্থায় তিনি কি মন্তব্য করতেন? [3]


আল্লামা আইনী (রহঃ) হিজরী নবম শতাব্দীর মহিলাদের সম্বন্ধে এই কথা বর্ণনা করেছেন। তাহলে চিন্তা করুন আজ হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর এই সূচনা লগ্নে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা আর উলংগপনার দিকে ছুটে চলেছে, বেপর্দা আর বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন ছেলেদের পোষাক পরছে, বব কাটিং করছে, পেট পিঠ খুলে পার্কে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে, সমানাধিকার শ্লোগান কুদ্রতী ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে ঠিক সেই মুহূর্তে এই ফেৎনা ফাসাদের মধ্যে অবলা মা-বোনদেরকে সাওয়াবের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে মদজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার অপচেষ্টা ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ দলিল দেয়া হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগের মহিলাদের দ্বারা। তাহলে সেই যুগের মহিলাদের মত আপনি কি এই যুগের মহিলাদের জন্য এই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে, তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দৃষ্টি অবনত রেখে, খুশবু পাউডার না লাগিয়ে, সাধারণ পোষাক পরিধান করে, শয়তান বদমাশদের কুদৃষ্টি এড়িয়ে, পুরুষের জটলার মধ্যে না যেয়ে, সর্বোপরি কোন ফেৎনার কারণ না হয়ে মসজিদে বা ঈদগাহে আসবে? তাছারা এই যুগের পুরুষদের সম্বন্ধেও কি আপনি এই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে, তারাও পুরাপুরি পবিত্রতা বজায় রাখতে পারবে। ফেৎনার মধ্যে পতিত হবে না!!




নারীদের মসজিদে নামাজ ( বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল ও মন্তব্য ) ইসলামিক আলোচনা- ১১তম পর্ব

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে
বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল ও মন্তব্য


————————————————————–

আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনুল খত্তাব রা.

حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: كَانَتِ امْرَأَةٌ لِعُمَرَ تَشْهَدُ صَلاَةَ الصُّبْحِ وَالعِشَاءِ فِي الجَمَاعَةِ فِي المَسْجِدِ، فَقِيلَ لَهَا: لِمَ تَخْرُجِينَ وَقَدْ تَعْلَمِينَ أَنَّ عُمَرَ يَكْرَهُ ذَلِكَ وَيَغَارُ؟ قَالَتْ: وَمَا يَمْنَعُهُ أَنْ يَنْهَانِي؟ قَالَ: يَمْنَعُهُ قَوْلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ» (رَوَاه الْبُخَارِىُّ فِىْ بَاب هَلْ عَلَى مَنْ لَمْ يَشْهَدِ الجُمُعَةَ غُسْلٌ مِنَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ وَغَيْرِهِمْ؟)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে বর্ণিত: হযরত উমার রা.-এর এক স্ত্রী ছিলেন। (তাঁর নাম ছিলো আতিকা) তিনি ফজর এবং ইশার নামাযে মসজিদের জামাআতে হাজির হতেন। তাঁকে বলা হলো-আপনি কেন মসজিদে যান? অথচ আপনি জানেন যে, হযরত উমার এটা অপছন্দ করতেন এবং আত্মমর্যাদাহানিকর মনে করতেন। তিনিবললেন: আমাকে নিষেধ করে দিতে তাঁকে (উমারকে) কিসে বারণ করেছিলো? হযরত ইবনে উমার বললেন: “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণী তাঁকে বাধা দিয়েছিলো। (বুখারী: ৮৫৪)


হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। এ হাদীসটি ইমাম বুখারীর উসতাদ ইবনে আবী শাইবাও তাঁর মুসান্নাফ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। (ইবনে আবীশাইবা: ৭৬৯০)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত উমার রা. তাঁর স্ত্রীর মসজিদে যাওয়া অপছন্দ করতেন। যদিও রসূলুল্লাহ স.-এর বাণীর কারণে তিনি স্ত্রীকে বাধা দিতে পারেননি। “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মর্মার্থ যারা তাঁর সংশ্রবে থেকে বুঝেছেন তাঁরা মহিলাদের মসজিদে গমন অপছন্দ করতেন।আর সেই বাণী থেকেই আজ আমরা অনুমতি খুঁজে পাচ্ছি। বিষয়টা কি আমরা ভুল বুঝছি না হযরত উমার রা. ভুল বুঝেছিলেন?


হযরত ইবনে মাসউদ রা.

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أنا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أنا مَعْمَرٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ، أَنَّهُ: رَأَى ابْنَ مَسْعُودٍ، يُخْرِجُ النِّسَاءَ مِنَ الْمَسْجِدِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَقُولُ: «اخْرُجْنَ إِلَى بُيُوتِكُنَّ خَيْرٌ لَكُنَّ») خُطْبَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَمِنْ كَلَامِهِ:بَابٌ-۱۱)

হযরত আবু আমর শাইবানী বলেন: আমি হযরত ইবনে মাসউদ রা. কে দেখেছি জুমআর দিনে মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছেন এবং বলছেন: তোমরা ঘরে ফিরে যাও, এটাইতোমাদের জন্য কল্যাণকর। (তবারানী কাবীর: ৯৪৭৫)

হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। ইসহাক বিন ইবরাহীম দাবারী ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ইসহাক বিন ইবরাহীমের বর্ণনাকে আল্লামা উকাইলী রহ. সহীহ বলেছেন। আল্লামা আবু আওয়ানা তাঁর সহীহ কিতাবে ইসহাকের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। ইমাম দারাকুতনী তাঁকে সত্যনিষ্ঠ বলেছেন। (লিসানুল মীযান: ৯৯৫)


আল্লামা হাইসামী বলেন:

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ

“হাদীসটি ইমাম তবারানী তাঁর মু’জামে কাবীরে বর্ণনা করেছেন এবং বর্ণনাকারী গণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২১১৯)

সারসংক্ষেপ : হযরত ইবনে মাসউদ রা. মৃত্যুবরণ করেন ৩২ হিজরীতে, হযরত উসমান রা.-এর খিলাফাত আমলে। তাহলে হযরত ইবনে মাসউদ রা.-এর এ কাজটি ঘটেছে খুলাফায়ে রাশেদার যুগে এবং সাহাবায়েকিরামের ব্যাপক উপস্থিতিতে জুমআর মসজিদে। “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মর্মার্থ আজ আমরা যেভাবে বুঝার চেষ্টা করছি সাহাবায়ে কিরাম যদি সেভাবে বুঝতেন তাহলে খুলাফায়ে রাশেদার যুগে সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপক উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে জুমআর মসজিদে হযরত ইবনে মাসউদ রা. কোনক্রমেই এমন করতে পারতেন না। বরং সাহাবায়ে কিরামের পক্ষ থেকে কোন বাঁধা বা প্রতিবাদ সৃষ্টি না হওয়া এরই প্রমাণ বহন করে যে, সাহাবায়ে কিরাম মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া বা তাদেরকে মসজিদে না আনার বিষয়ে হযরত ইবনে মাসউদ রা.-এর সঙ্গে একমত ছিলেন। আর এটাই নারীদের মসজিদে না যাওয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের ঐকমত্য বা ইজমা।


হযরত ইবনে আব্বাস রা.

حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ثنا إِسْرَائِيلُ، عَنْ عَبْدِ الْأَعْلَى، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتْهُ عَنِ الصَّلَاةِ فِي الْمَسْجِدِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَقَالَ: «صَلَاتُكِ فِي مَخْدَعِكِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِكِ فِي بَيْتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِكَ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكَ» (مصنف ابن ابى شيبة: مَنْ كَرِهَ ذَلِكَ: يعنى لِلنِّسَاءِ فِي الْخُرُوجِ إِلَى الْمَسْجِدِ)

হযরত সাঈদ বিন যুবাইর বলেন: কোন এক মহিলা হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে জুমআর দিনে মসজিদে গিয়ে নামায আদায়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো। জবাবে হযরত ইবনে আব্বাস রা. বললেন: তোমার ঘরের নির্জন স্থানের নামায তোমার খাছ কামরার নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার খাছ কামরার নামায তোমর ঘরের নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার ঘরের নামায তোমার কওমের মসজিদের নামায অপেক্ষা উত্তম। (ইবনে আবী শাইবা: ৭৬৯৭)


হাদীসটির স্তর: হাসান, মাওকুফ। আব্দুল আলা ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর আব্দুল আলা সত্যনিষ্ঠ তবে সন্দেহে পড়েন। (তাকরীব: ৪১৫২)

ইমাম তিরমিজী তাঁর বর্ণনাকে হাসান বলেছেন। (তিরমিজী: ১৩২৮)

হাকেম আবু আব্দুল্লাহ এবং ইমাম জাহাবী তাঁর বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন (মুসতাদরাক: ৩৪৮৭)

সারসংক্ষেপ : হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর ফতওয়া থেকেও পরিস্কার হয়ে গেলো যে, উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবায়ে কিরামের মন্তব্য এবং আমল দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায়ের চেয়ে মহিলাদের উত্তম নামাযের উত্তম স্থান হলো নিজ গৃহের নির্জন কামরা।


নমুনা স্বরূপ কয়েক জন সাহাবায়ে কিরামের মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা হলো। এ ছাড়াও অনেক সাহাবা থেকে অনুরূপ মতামত বর্ণিত রয়েছে। উল্লিখিত হাদীসের প্রত্যেকটির মধ্যেই মহিলাদেরকে মসজিদে গিয়েজামাআতে নামায আদায় করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সাথে সাথে তাদের ঘরে আদায়কৃত নামাযকে মসজিদে গিয়ে জামাআতে আদায়কৃত নামায অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। এমনকি মসজিদে নববীতে রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে আদায়কৃত নামাযের চেয়েও নিজ গৃহের অন্দরমহলে আদায়কৃত নামাযকে বেশী উত্তম বলা হয়েছে।


অতএব, মহিলারা যদি নামায আদায়ের মাধ্যমে অধিক সওয়াব অর্জন করার আশা করে তাহলে তাদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে পুরুষের জামাআতে শরীক না হয়ে আপন ঘরের অভ্যন্তরে একাকী নামায আদায়করা।


এর বিপরীতে যেহেতু বেশ কিছু সহীহ হাদীসে মহিলাদেরকে  মসজিদে যেতে বাঁধা না দেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং  রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে মসজিদে নববীতে ব্যাপকহারে মহিলাদের জামাআতে অংশগ্রহণের অগণিত প্রমাণও রয়েছে, সেহেতু উক্ত  হাদীসগুলোতে নির্দেশিত আমলের বিষয়টি কেমন হবে তা নিয়ে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতেই পারে। এবিষয়টির সুরাহা করতে গেলে আমাদেরকে  তিনটি দিক লক্ষ্য করতে হবে।


প্রথম লক্ষণীয় বিষয় হলো:

রসূলুল্লাহ স. বহু হাদীসে  স্বামীদেরকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে যেতে বাঁধা দিও না অথবা বলেছেন যে, স্ত্রীগণ তোমাদের নিকটে অনুমতি চাইলে তাদেরকে অনুমতি দিও। কিন্তু মহিলাদেরকে সম্বোধন করে কোথাও বলেছেন যে, তোমরা মসজিদে যাও বা  স্বামীদের থেকে যাওয়ার অনুমতি চাও এমনটি দৃষ্টিগোচর হয়নি। এমনকি উম্মে হুমাইদ রা. রসূলুল্লাহ স.-এর নিকটে খাছ পরামর্শ নিতে আসলে রসূলুল্লাহ স. কিন্তু তাকে অনুমতি দেননি; বরং তাকে ঘরমুখী করার চেষ্টা করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ: ২৭০৯০)


যদি মহিলাদের মসজিদে উপস্থিতিই রসূলুল্লাহ স.-এর লক্ষ্য হতো তাহলে তাদেরকে নির্দেশ দিলেই যথেষ্ট হয়ে যেতো। এমনকি রসূলুল্লাহ স.-এর নির্দেশ পেলে স্বামীদের অনুমতি গ্রহণেরও প্রশ্ন থাকত না। এ সব কিছু গভীরভাবে পর্যক্ষেণ করলে বুঝা যায় যে, “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এই বাণীর মর্মার্থ আজ আমরা যেভাবে বুঝার চেষ্টা করছি রসূলুল্লাহ স.-এর উদ্দেশ্য তা ছিলো না।


দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয় হলো:

“আল্লাহর বান্দীদেরকে  মসজিদে যেতে বাঁধা দিও না” অথবা “স্ত্রীগণ তোমাদের নিকটে অনুমতি চাইলে তাদেরকে অনুমতি দিও” রসূলুল্লাহ স.-এর এ নির্দেশের ভাষা যদিও ব্যাপক, কোন স্থান বা কালের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়; কিন্তু প্রকৃত অর্থে এটা মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর বৈশিষ্ট।  হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে তবারানী কাবীর: ৯৩৬০ এবং  সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী: ৫৩৬৪ নম্বরে একটি মাওকুফ হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে,  মহিলাদের জন্য ঘরের নির্জন কামরার নামাযই সর্বোত্তম। তবে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর নামায এর থেকে ব্যতিক্রম।


তৃতীয় লক্ষণীয় বিষয় হলো:

রসূলুল্লাহ স.-এর জীবদ্দশায় নিম্ন বর্ণিত কারণে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো যা পরবর্তীতে আর থাকেনি। এ কারণে রসূলুল্লাহ স.-এর ওয়াফাতের পরে  সাহাবায়ে কিরাম মহিলাদের মসজিদে যাওয়া অপছন্দ করতেন।


প্রথম কারণ :

সে সময়ে মহিলা সংক্রান্ত বিভিন্ন  শরঈ আহকাম নাযিল হচ্ছিলো যা বুঝার জন্য মহিলাদের উপস্থিতি  প্রয়োজন ছিলো। তারা মসজিদে উপস্থিত না হলে রসূলুল্লাহ স.-এর আমল সরাসরি দেখার সুযোগ পেত না। অথচ এর প্রকৃত পদ্ধতি নারী মহলে তুলে ধরতে আমলগুলো মহিলাদের সরাসরি দেখার প্রয়োজন ছিলো। কেননা, রসূলুল্লাহ স.-এর বাণী “আমাকে যেমন নামায পড়তে দেখ তোমরা তেমন নামায পড়” মৌলিকভাবে নারী-পুরুষ সবার জন্য তা প্রযোজ্য। (বুখারী: ৬০৪)


সুতরাং “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ  যেতে বাঁধা দিওনা” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মূল উদ্দেশ্য এমন কিছু হতে পারে যা স্পষ্ট করে উক্ত হাদীস সমূহে বর্ণনা করা হয়নি। কিন্তু এখন নবীও বেঁচে নেই আর নববী শিক্ষার কেন্দ্রও মসজিদ নয়; বরং যারা জামাআতে যায় তারা নামাযের জন্যই যায়।


দ্বিতীয় কারণ :

মুসলমানদের সংখ্যা তখন পর্যন্ত কম ছিলো যা বিজাতির ওপর প্রভাব বিস্তারের পর্যায়ের ছিলো না। অথচ কোন কাজে মানুষের ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ অন্যদেরকে এ দিকে আকৃষ্ট করে এবং অন্যদের অন্তরে এর প্রভাব সৃষ্টি করে। মহিলাদের জামাআতে অংশ গ্রহণ করে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য প্রকাশও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো।উল্লিখিত কারণের বড় প্রমাণ উম্মে আতিয়াহ রা.  থেকে বুখারী শরীফে বর্ণিত ৯২৮ নম্বর হাদীস। যে হাদীসে রসূলুল্লাহ স. হায়েযা মহিলাদেরকেও ঈদের জামাআতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।সাথে সাথে এর কারণও বর্ণনা করেছেন যে, তারা যেন মুসলমানদের দুআ ও কল্যাণে শরীক হয়। অর্থাৎ, ঈদের জামাআতে তাদের উপস্থিতি নামাযের জন্য নয়। সুতরাং “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মূল উদ্দেশ্য এমন কিছু হতে পারে যা স্পষ্ট করে উক্ত হাদীস সমূহে বর্ণনা করা হয়নি। রসূলুল্লাহ স. দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন ইসলামকে  শক্তিশালী এবং বিজয়ী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরে। আর এটাই ছিলো নবী পাঠনোর দ্বারা আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্য। (সূরা ছফ: ৯)


তৃতীয় কারণ :

রসূলুল্লাহ স.-এর সংশ্রবে তাদের  দ্বীনী জযবা বৃদ্ধি করা। নারী জাতি স্বভাবতই দ্বীনী  জযবা থেকে গাফেল। তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব কম থাকা সত্ত্বেও তারা অধিক সংখ্যায় জাহান্নামী হবে। (বুখারী: ২৯৮)


আর রসূলুল্লাহ স.-এর সংশ্রব ছিলো এমনই বরকতময়, সেখানে থেকে মনে হতো যেন জান্নাত-জাহান্নাম দেখছি। (মুসলিম শরীফ:بَابُ فَضْلِ دَوَامِ الذِّكْرِوَالْفِكْرِ)


মহিলাদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদেরকে দ্বীনের ওপর উঠানো কষ্টসাধ্য ছিলো। কিন্তু মসজিদে এলে একই সাথে সবাইকে পাওয়া যেতো, তাদেরকে প্রয়োজনীয় নছিহত করা যেতো।  এর একটি বড় প্রমাণ হলো: মহিলাদের দ্বীন শিক্ষার নিমিত্তে তাদের জন্য রসূলুল্লাহ স. একটি স্বতন্ত্র মজলিস কায়েম করেছিলেন। (বুখারী: ৬৮১২)


সুতরাং “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এই বাণীর মূল উদ্দেশ্য এমন কিছু হতে পারে যা স্পষ্ট করে উক্ত হাদীস সমূহে বর্ণনা করা হয়নি। কিন্তু এখন নবীও বেঁচে নেই আর নববী শিক্ষার কেন্দ্রও মসজিদ নয়; বরং যারা জামাআতে যায় তারা নামাযের জন্যই যায়।


পূর্বোক্ত কারণগুলোর পাশাপাশি  তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতি আর পরবর্তী পরিবেশ পরিবেশ-পরিস্থিতির বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন-


এক. রসূলুল্লাহ স.-এর যুগে নারী-পুরুষের ঈমানী চেতনা অত্যন্ত দৃঢ় ছিলো। সে যুগে মহিলাদের পর্দা ও সতীত্ব রক্ষার গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম।আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের চিন্তা তাঁদের  মজ্জাগত হয়ে গিয়েছিলো।সামাজিক অবস্থাও এমন ছিলো যে, অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছিলো খুবই জোরদার। কারও মধ্যে অন্যায়ের বাসনা সৃষ্টি হলেও সামাজিক প্রতিরোধের মুখে তা বাস্তবায়নের সাহস হতো না। অগত্যা গোপনে বা নির্জনে কারও দ্বারা কোন অন্যায় ঘটে গেলেও পরকালের শাস্তির ভয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর সামনে এসে নিজেকে অপরাধী সাব্যস্ত করে শাস্তি দাবি করতেন নিজেরাই। (বুখারী: ৫০১)

সামাজিক ও মানসিক এ অবস্থা আমাদের মাঝে বিদ্যমান আছে কি? হযরত আয়েশা রা.-এর মন্তব্য থেকেই বুঝা যায় যে, তাঁর জীবদ্দশাতেই সেই সোনালী  সমাজ বহুলাংশে বিদায় নিয়েছিলো। (বুখারী: ৮২৭)


তাহলে সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তনে কী করণীয় সে ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ তো আমাদের সামনে রয়েছেই।


দুই. নারীঘটিত যে কোন অঘটন প্রতিরোধে  রসূলুল্লাহ স. অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। যেমন, পুরুষদের সামনের কাতার আর নারীদের পেছনের কাতারকে উত্তম ঘোষণা দেয়া যেন নারী-পুরুষ একে অপর  থেকে বেশীদূরত্ব বজায় রাখতে উৎসাহী হয়। (মুসলিম: ৮৬৯)


রসূলুল্লাহ স. ও পুরুষ মুসল্লীরা সালাম ফিরিয়ে আপন জায়গায় বসে  থাকতেন, মহিলারা আগে বের হয়ে ঘরে পৌঁছে যেতেন। এরপর রসূলুল্লাহ স. ও পুরুষ মুসল্লীরা বের হতেন যেন মসজিদের দরজা বা রাস্তায় পরস্পরের সাথে সাক্ষাত বা বাক্যবিনিময় না ঘটে। (বুখারী: ৮২৪)


মসজিদে আসার ক্ষেত্রে খুশবুবিহীন সাধারণ কাপড়ে আসার প্রতি তাকীদ দেয়া যেন তার প্রতি পরপুরুষ আকৃষ্ট না হয়। (আবু দাউদ: ৫৬৫)


রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক মহিলাদের জন্য ভিন্ন দরজা নির্ধারণ করার বাসনা প্রকাশ এবং হযরত ইবনে উমার রা. কর্তৃক মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ না করা (আবু দাউদ: ৫৭১)


এ সব প্রতিরোধ ব্যবস্থার কিয়দাশংও এখন খুঁজে পাওয়া যাবে কি?

উপরোল্লিখিত কারণগুলোর প্রতি যদি আমরা একে  একে লক্ষ্য করি, তাহলে আমাদের সামনে  দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এ যুগে নারীদেরকে মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায়ের প্রতি উৎসাহ দান কোনক্রমেই দ্বীনের স্বার্থে হতে পারে না। নারী উন্নয়নের শ্লোগানে মুখরিত আমাদের সমাজে বেহায়াপনা মহামারীর রূপ ধারণ করেছে এবং মহিলাদেরকে পর্দার আড়ালে রাখতে চাইলে  তথাকথিত মানবাধিকারের পরিপন্থী হওয়ায় সুশীল সমাজের চক্ষুুশূল হতে হচ্ছে। এতসব প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও শুধু কয়েকটি হাদীসের শব্দ  দেখে যারা মহিলাদেরকে মসজিদমুখী করতে তৎপর আসলে তাদের  নিয়াত কী তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত আয়েশা রা.-এর মন্তব্য  থেকে তো এ ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর মৃত্যুর পরে সাহায়ে কিরামের যুগেই মহিলাদের অবস্থার যে পরিবর্তন হয়েছিলো তা যদি রসূলুল্লাহ স. নিজে দেখতেন, তাহলে মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন। সে যুগের মেয়েদের অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে আমাদের যুগের মেয়েদের অবস্থা দেখলে রসূলুল্লাহ স.-এর ফায়সালা কীহতো তা  বুঝতে কারও বাকী থাকার কথা নয়। বাড়তি সওয়াবের প্রতি আগ্রহী হয়ে কেউ মসজিদের জামাআতে যেতে চাইলে  তার উচিত পূর্ব বর্ণিত উম্মে হুমাইদের আমল অনুসরণ করে অন্দর মহলে নামায আদায় করা। কেননা, পুরুষের জন্য জামাআতে নামাযের যে পরিমাণ সওয়াবের অঙ্গীকার রয়েছে হযরত ইবনে উমার রা. থেকে  বর্ণিত হাদীসে নারীদের একাকী নামাযে সে পরিমাণ সওয়াবের অঙ্গীকার রয়েছে।


হাদীসটি নিম্নরূপ :

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ يُوسُفَ، ثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ سَلَّامٍ، ثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، أَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنِي أَبُو عَبْدِ السَّلَامِ، حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «صَلَاةُ الْمَرْأَةِ وَحْدَهَا تَفْضُلُ صَلَاتَهَا فِي الْجَمِيعِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ دَرَجَةً» ( رواه ابو نعيم فى تاريخ اصفهان فى ترجمة عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ سَلَّامٍ)

হযরত ইবনে উমার রা. বলেন: আমি রসূলুল্লাহ স. কে বলতে শুনেছি যে, মহিলাদের একাকী নামায তার জামাআতের নামাযের তুলনায় পঁচিশ গুণ বৃদ্ধি পায়। (তারীখে আসফাহান: আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন সাল্লামের জীবনী বর্ণনায়, রাবী নম্বর- ২৬৭)


হাদীসটির স্তর : হাসান। এ হাদীসের রাবীগণের মধ্যে  আহমাদ বিন ইবরাহীম, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ এবং আবু আব্দুস সালাম ব্যতীত  সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর আহমাদ বিন ইবরাহীম কে ইমাম জাহাবী রহ. الإِمَامُ، المُحَدِّثُ،  “ইমাম ও মুহাদ্দিস” বলে  পরিচয় দিয়েছেন।(সিয়ারু আলামিন নুবালা: তবকা- ২০, রাবী নম্বর- ১৮) 


আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদকে হাফেজ আবু নুআইম  শায়খ বলে প্রশংসা করেছেন। তবে এটাও বলেছেন যে, فِيهِ لِينٌ “তাঁর মধ্যে কিছু শিথিলতা আছে”। (তারীখে আসফাহান: রাবী নম্বর- ২৬৭)


আবু আব্দুস  সালামের ব্যাপারে হাফেজ ইবনে  হাজার রহ. বলেন:

وثقه ابن حبان و ابن شاهين

“ইবনে হিব্বান এবং ইবনে শাহীন তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন”। (তাহজীবুত তাহজীব: সালেহ বিন রুস্তুমের জীবনী আলোচনায়)


বাকিয়্যাহ বিন ওয়ালীদ মুসলিমের রাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ব্যাপারে তাদলীসের  অভিযোগ আছে। কিন্তু এ হাদীসে তিনি স্পষ্ট حَدَّثَنِي শব্দ ব্যবহার করেছেন। সুতরাং তাঁর তাদলীস এখানে ক্ষতিকর নয়। রাবীগণের কারও কারও মধ্যে যৎসামান্য দুর্বলতা থাকলেও হাদীসটির বিষয়বস্তু সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত। কারণ, এ হাদীসে মহিলাদের একাকী নামাযকে জামাআতের নামাযের তুলনায় পঁচিশ গুণ উত্তম বলা হয়েছে। আর একাধিক সহীহ হাদীসে মহিলাদের একাকী নামাযকে জামাআতের নামাযের তুলনায়  উত্তম বলা হয়েছে। সুতরাং এহাদীস দ্বারা সহীহ হাদীসে  বর্ণিত উত্তমতার সামান্য ব্যাখ্যা  হয়েছে মাত্র।


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত  হয় যে, পুরুষরা জামাআতে যে ছওয়াব পায় নারীগণ সে সওয়াব পেতে  চাইলে তার মাধ্যম হলো একাকী নামায আদায় করা। কারণ, পুরুষের জামাআতের সওয়াব আল্লাহ  তাআলা মহিলাদের একাকী নামাযে রেখেছেন।


মহিলাদের জামাআতে নামায আদায়ের দলীল হিসেবে অনেকে হজ্জ-উমরা বা  বাইতুল্লাহর নামাযের উদাহরণ পেশ করে বলেন যে, সেখানে যখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের উলামায়ে কিরাম এবং মহামনীষীদের সামনে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে নির্বিঘ্নে নামায আদায় করছে; তখন আমাদের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মহিলারা কেন পারবে না? এ উক্তির জবাবে নিম্নে দুটি হাদীস পেশ করা হচ্ছে যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হজ্জ-উমারা এবং মসজিদে হারাম বা মসজিদে নববীর বিষয়টি অন্যান্য মসজিদ থেকে ভিন্ন।

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بن عَبْدِ الْعَزِيزِ، حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بن الْمِنْهَالِ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بن سَلَمَةَ عَنْ سَلَمَةَ بن كُهَيْلٍ عَنْ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ:مَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ فِي مَكَانٍ خَيْرٌ لَهَا مِنْ بَيْتِهَا إِلا أَنْ يَكُونَ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ أَوْ مَسْجِدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلا امْرَأَةً تَخْرُجُ فِي مَنْقَلَيْهَا”يَعْنِي خُفَّيْهَا.) المعجم الكبير للطبرانى: خُطْبَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَمِنْ كَلَامِهِ :بَابٌ-۱۱ والبيهقى فى بَابُ خَيْرِ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ بُيُوتِهِنَّ)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন: মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর পরে মহিলাদের নামাযের সর্বোত্তম জায়গা হলো তার নিজ গৃহ। তবে (বৃদ্ধা মহিলা) নিকটবর্তী কোন স্থানে সাধারণ কাপড়ে নামাযের জন্য যেতে পারে। (তবারানী কাবীর: ৯৪৭২, সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী: ৫৩৬৪)


হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। আলী বিন আব্দুল আযীয ব্যতীত  এই হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর আলী বিন আব্দুল আযীয আল বাগাবী অত্যন্ত প্রসিদ্ধ হাফেজে হাদীস। (সিয়ারু আলামিননুবালা: তবকা- ১৫, রাবী নম্বর- ১৬৪)


আল্লামা হাইসামী বলেন: হাদীসটি ইমাম তবারানী তাঁর মু’জামে কাবীরে  বর্ণনা করেছেন এবং এর রাবীগণ সবাই-ই সহীহ হাদীসের  রাবী। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২১১৩)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বের যে কোন মসজিদের চেয়ে মহিলাদের নিজ গৃহের নির্জন কামরার  নামায উত্তম। তবে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর নামায এ নিয়মের বাইরে। ওই দুই মসজিদের তুলনায় নির্জন কামরার নামায বেশী উত্তম নয়।

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بن إِبْرَاهِيمَ الدَّبَرِيُّ، عَنْ عَبْدِ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَبَّ هَذِهِ الدَّارِ يَحْلِفُ فَيَبْلُغُ بِالْيَمِينِ”مَا مِنْ مُصَلَّى الْمَرْأَةِ خَيْرٌ لَهَا مِنْ بَيْتِهَا إِلا فِي حَجٍّ أَوْ عَمْرَةٍ إِلا امْرَأَةً يَئِسَتْ مِنَ الْبُعُولَةِ فَهِيَ فِي مَنْقَلَيْهَا”، قُلْتُ: مَا مَنْقَلَيْهَا؟ قَالَ:”امْرَأَةٌ عَجُوزٌ قَدْ تَقَارَبَ خَطْوُهَا”..) المعجم الكبير للطبرانى: خُطْبَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَمِنْ كَلَامِهِ :بَابٌ-۱۱)

হযরত আবু আমর শাইবানী বলেন: আমি এই ঘরের মালিক (আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.)-এর নিকটে শুনেছি, তিনি মজবুত শপথ করে বলেন: হজ্ব বা উমরা ব্যতীত মহিলাদের  নামাযের সর্বোত্তম স্থান হলো তার নিজ গৃহ। তবে স্বামী গ্রহণের ভাবনা থেকে নিরাশ (অতিবৃদ্ধা) মহিলা সাধারণ কাপড়ে যেতে পারে। আবু আমর বলেন: আমি জিজ্ঞেস করলাম: مَنْقَلَيْهَا শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য কী? তিনি বললেন: বয়োবৃদ্ধা মহিলা, যার চলার কদম ছোট হয়ে  গেছে। (তবারানী কাবীর: ৯৩৬১)


হাদীসটির স্তর : ইসহাক বিন ইবরাহীম দাবারী ব্যতীত  এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ইসহাক বিন ইবরাহীমের বর্ণনাকে আল্লামা উকাইলী সহীহ বলেছেন। আল্লামা আবু আওয়ানা তাঁর সহীহ কিতাবে ইসহাকের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। ইমাম দারাকুতনী তাঁকে সত্যনিষ্ঠ বলেছেন। (লিসানুল মীযান: ৯৯৫)


আল্লামা হাইসামী বলেন: হাদীসটি ইমাম তবারানী তাঁর মু’জামে কাবীরে বর্ণনা করেছেন  এবং এর রাবীগণ সবাই-ই সহীহ হাদীসের রাবী। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২১১৪)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বের যে কোন মসজিদের চেয়ে মহিলাদের নিজ গৃহের নির্জন কামরার  নামায উত্তম। তবে হজ্ব এবং উমরার সময়ে মক্কা-মদীনার নামায এ নিয়মের বাইরে। ওই দুই সময় ব্যতীত সব সময়ে মহিলাদের জন্য নির্জন কামরার নামায বেশী উত্তম হবে।


এ সহীহ হাদীস দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হজ্ব-উমরার সময় বা অন্য সময়ে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে মহিলাদের জামাআতের নামায উত্তম হলেও সে হুকুম উক্ত বিষয়ের সাথেই সম্পর্কিত; তার ওপর তুলনা করে অন্য কোথাও এ হুকুম জারী করা যাবে না।




ঈদ বা জুম্মা অথবা অন্য যেকোন সময় মসজিদে নারীদের অংশগ্রহণ -ইসলামিক আলোচনা- ১০ম পর্ব

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 

ঈদ বা জুম্মা অথবা অন্য যেকোন সময় মহিলাদের মসজিদে যাওয়া যাবে না

ঈদের নামাযে নারীদের অংশগ্রহণ :

————————————————

জুমু’আ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ন্যায় ঈদের নামাযের জন্যও নারীদের ঘর থেকে বের করে আনার অপতৎপরতা চোখে পড়ার মতো।

এ ব্যাপারে সাহাবা, তাবেঈগণের অবস্থান নিম্নে তুলে ধরা হলো।

১.

হযরত ইবনে উমর (রা.) তাঁর স্ত্রীগণকে ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৫)


সনদের বিচারে হাদীসটি হাসান।

২.

হযরত ইবরাহীম নাখঈ (রহ.) দুই ঈদে নারীদের বের হওয়াকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৪)


সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি সহীহ।

৩.

আব্দুর রহমান ইবনে কাসেম (রহ.) বলেন, ইমাম কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ (রহ.) নারীদের ব্যাপারে অনেক কঠোর ছিলেন, নারীদেরকে কখনো ঈদুল ফিতর ও আজহার সময় বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৭)


৪.

হজরত হিশাম ইবনে ওরওয়া (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা ওরওয়া ইবনে যুবায়ের পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাযে যেতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হা. ৫৭৯৬)

সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি সহীহ।


৫.

হজরত নাফে (রহ.) তাঁর ঘরের নারীদেরকে ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক হা. ৫৭২৪)


সূত্রের বিচারে হাদীসটি সহীহ।

দুটি সন্দেহ ও তার নিরসন :

——————————————–

সন্দেহ : ১

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, যদি বর্তমান যুগে নারীদের মসজিদে যাওয়া ফেতনার আশঙ্কায় নিষেধই হয় তাহলে রাসূল (সা.) স্পষ্ট এ কথা বলে যাননি কেন যে আমার যুগের পর নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ?


নিরসন :

এর নিরসন হলো, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শরীয়তের অসংখ্য বিধানাবলির ক্ষেত্রেই এরূপ করে গিয়েছেন যে তা স্পষ্ট করে বলে যাননি। তিনি জানতেন ও বুঝতেন যে প্রিয় সাহাবীগণ তাঁর সকল কথার মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝেই পরবর্তীতে আমল করবেন। তাই সব কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর পরে আবুবকর (রা.)-কে খলিফা বানানোর কথা স্পষ্ট বলে যাননি।


কেননা তিনি বুঝেছেন যে তাঁর সাহাবীগণ বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিতে তাঁর উদ্দেশ্য বুঝে নিয়েছেন, এখন আর তাঁদের তা স্পষ্ট বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের আলোচিত বিষয়টিও তদ্রƒপ। নারীদের ফেতনা ও নারীদের পর্দাসংক্রান্ত শত শত হাদীস থাকা সত্ত্বেও সাহাবীগণ এ বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর ইচ্ছা বুঝবেন না, তা অসম্ভব।


সন্দেহ : ২

অনেক ভাই বলে থাকেন যে মক্কা-মদীনার হারামাইন শরীফে নারীগণ মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

নিরসন :

আসলে হারামাইনে কিছু জরুরতের ভিত্তিতে নারীগণের জামাতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা হলো, নারীগণ যেহেতু মক্কার মসজিদে হারামে তাওয়াফের জন্য আসতে হয় এবং মদীনার মসজিদে নববীতে জিয়ারতের জন্য এসে থাকেন। এমতাবস্থায় নামাযের আযান হয়ে গেলে বের না হয়ে মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। উলামায়ে কেরাম এ ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন। তবে শুধুমাত্র জামাতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে নারীগণ হারামাইনে যাওয়ারও অনুমতি নেই। বর্তমানে না জেনে অনেক নারী শুধু নামাযের জন্যই হারামাইনে উপস্থিত হয়ে থাকেন, তা ঠিক নয়। (দেখুন : ই’লাউস সুনান ৪/২৩১)


তাঁরা নিজেদের হোটেলে নামায আদায় করলে মসজিদে হারামে নামায পড়ার চেয়ে বেশি সাওয়াব পাবে। যা হাদীসে ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।


ঈদ বা জুম্মা অথবা অন্য যেকোন সময় মহিলাদের মসজিদে যাওয়া যাবে না

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

মহিলাদের জন্য ঘরে একাকী নামায পড়াই উত্তম

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَحْدَثَالنِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ‏ قُلْتُ لِعَمْرَةَ أَوَ مُنِعْنَ قَالَتْ نَعَمْ‏.‏(رَوَاه الْبُخَارِىُّ فِىْ بَابِ خُرُوجِ النِّسَاءِ إِلَى المَسَاجِدِ بِاللَّيْلِ وَالغَلَسِ)

হযরত আয়েশা রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. যদি জানতেন যে, মহিলারা কী অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তাহলে বনী ইসরাইলের মহিলাদের মতো তাদেরকেও (মসজিদে আসতে) নিষেধ করে দিতেন।রাবী বলেন: আমি হযরত আমরাহ রহ.কে জিজ্ঞেস করলাম: তাদেরকে (বনী ইসরাইলের মহিলাদেরকে) কি নিষেধ করা হয়েছিলো? তিনি বললেন: হ্যা। (বুখারী: ৮২৭)


হাদীসটির স্তর: সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম এবংআবু দাউদ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৮৭৪৩)


সারসংক্ষেপ : হযরত আয়েশা রাঃ এর সময়েই যদি মহিলাদের অবস্থা এমন পর্যায়ের হয়ে থাকে যা তিনি লক্ষ্য করে বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ স. বেঁচে থাকলে তাদেরকে মসজিদে আসতে দিতেন না। তাহলে আমাদের এই যুগে রসূলুল্লাহ স. বেঁচে থাকলে মহিলাদের জামাআতে শরীক হওয়ার অনুমতি মিলতো কি? যারা সামাজিক অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তারা কোনক্রমে হ্যাঁ বলতে পারবেন না। তবে যারা সামাজিক পরিস্থিতির কোন বিবেচনা না করে হাদীসের শব্দ থেকে দলীল গ্রহণে তৎপর, তারা হয়তো এ হাদীস থেকেও অনুমতি খুঁজে পাবেন।


حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا الْعَوَّامُ بْنُ حَوْشَبٍ، حَدَّثَنِي حَبِيبُ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏”‏ لاَ تَمْنَعُوا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‏”(رَوَاه ابُوْ داود فى بَابِ مَا جَاءَ فِي خُرُوجِ النِّسَاءِ إِلَى الْمَسْجِدِ )‏

হযরত ইবনে উমার রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে মসজিদ সমূহে যাতায়াতে বাঁধা দিওনা। তবে ঘরই তাদের জন্য সর্বোত্তম নামাযের স্থান। (আবু দাউদ: ৫৬৭)


হাদীসটির স্তর: সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন:

أخرجه أَبُو دَاوُد وَصَححهُ بن خُزَيْمَةَ

“হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন আর ইবনে খুযাইমা এটাকে সহীহ বলেছেন”। (ফাতহুল বারী: অন্ধকার এবং রাতে মহিলাদের মসজিদে গমন অধ্যায়)


ইমাম নববী রহ. হাদীসটিকে বুখারীর শর্তে সহীহ বলেছেন। (খুলাছাতুল আহকাম: ২৩৫১)


মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন: حديث صحيح “হাদীসটি সহীহ”। (মুসনাদে আহমাদ: ৫৪৬৮ নম্বর হাদীসের আলোচনায়)


শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ আবু দাউদ: ৫৬৭)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের নামাযের উত্তম স্থান হলো তাদের ঘর। এ ইরশাদের দ্বারা রসূলুল্লাহ স. মহিলাদের মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন। এতদ্সত্ত্বেও যদি কোন মহিলা মসজিদে যেতে চায় তাহলে স্বামীদেরকে বলা হয়েছে যে, তোমরাতাদেরকে বাঁধা দিও না। কিন্তু তাদেরকে মসজিদে পাঠানো, নিয়ে যাওয়া বা মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায়ের জন্য মসজিদে কোন ব্যবস্থা করার মতো কোন উৎসাহ বা ইঙ্গিত এ হাদীসে নেই।


حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُثَنَّى، أَنَّ عَمْرَو بْنَ عَاصِمٍ، حَدَّثَهُمْ قَالَ: حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُوَرِّقٍ، عَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «صَلَاةُ الْمَرْأَةِ فِي بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي حُجْرَتِهَا، وَصَلَاتُهَا فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي بَيْتِهَا»( رَوَاه ابُوْ داود فى بَاب التَّشْدِيدِ فِي ذَلِكَ-يَعْنِىْ فِي خُرُوجِ النِّسَاءِ إِلَى الْمَسْجِدِ)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: নারীর জন্য খাছ কামরায় নামায পড়া হুজরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর ঘরের নির্জন স্থানে নামায পড়া খাছ কামরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। (আবু দাউদ: ৫৭০, মুসতাদরাকে হাকেম: ৭৫৭, সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী: ৫৩৬১)


হাদীসটির স্তর: সহীহ। হাকেম বলেন: এ হাদীসটি বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।


ইমাম জাহাবীও হাদীসটিকে বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন। ইমাম নববী রহ. হাদীসটিকে মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন। (খুলাছাতুল আহকাম: ২৩৪৭)


শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ আবু দাউদ: ৫৭০)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীসে ঘরের নির্জন স্থানকে মহিলাদের সর্বোত্তম নামাযের স্থান বলা হয়েছে। এ ইরশাদের দ্বারা রসূলুল্লাহ স. মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন।

حَدَّثَنَا هَارُونُ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ قَالَ حَدَّثَنِي دَاوُدُ بْنُ قَيْسٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سُوَيْدٍ الْأَنْصَارِيِّ عَنْ عَمَّتِهِ أُمِّ حُمَيْدٍ امْرَأَةِ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ أَنَّهَا جَاءَتْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُحِبُّ الصَّلَاةَ مَعَكَ قَالَ قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلَاةَ مَعِي وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي دَارِكِ وَصَلَاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ وَصَلَاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِي قَالَ فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ (حَدِيثُ أُمِّ حُمَيْدٍ)

আবু হুমাইদ আসসাইদী রা.-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ থেকে বর্ণিত, তিনি একবার রসূলুল্লাহ স.-এর নিকটে এসে বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি আপনার সাথে (জামাআতে) নামায পড়তে ভালোবাসি। রসূলুল্লাহ স. বললেন: আমি জানি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে ভালোবাস। তবে খাছ কামরায় নামায পড়া তোমার হুজরায় নামায থেকে উত্তম। আর তোমার হুজরায় নামায পড়া বাড়ীতে নামায পড়া থেকে উত্তম। আর তোমার বাড়ীতে নামায পড়া তোমার গোত্রের মসজিদে নামায পড়া থেকে উত্তম। আর তোমার গোত্রের মসজিদে নামায পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামায পড়া থেকে উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর তাঁর নির্দেশে তাঁর জন্য ঘরের একেবারে ভেতরে এবং অন্ধকারে একটি নামাযের জায়গা তৈরি করা হলো। আর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই নামায পড়তেন। (মুসনাদে আহমাদ: ২৭০৯০)


হাদীসটির স্তর: সহীহ লিগইরিহী। শায়খ শুআইব আরনাউত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন: ইমাম আহমাদ রহ. তাঁর মুসনাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ বিন সুআইদ ব্যতীত এ হাদীসের সব বর্ণনাকারী বুখারী-মুসলিমের। আর আব্দুল্লাহকে ইবনে হিব্বান ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” বলেছেন।(মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২১০৬)


হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন:

إِسْنَادُ أَحْمَدَ حَسَنٌ وَلَهُ شَاهِدٌ مِنْ حَدِيث بن مَسْعُودٍ عِنْدَ أَبِي دَاوُدَ

মুসনাদে আহমাদের সনদটি হাসান হলেও হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আবু দাউদ শরীফের হাদীস এ হাদীসকে সমর্থন করে”।(ফাতহুল বারী: অন্ধকার এবং রাতে মহিলাদের মসজিদে গমন অধ্যায়)

সারসংক্ষেপ : এ হাদীসে মূলতঃ মহিলাদের নামাযের উত্তম স্থান নির্ধারণের বিষয়ে একটি নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে। আর ওই নীতিমালায় উত্তম হওয়ার মানদ- বা মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে নির্জনতাকে। অর্থাৎ, নির্জনতা যত বেশী হবে মহিলাদের নামাযের জন্য সে স্থানটি ততো বেশী উত্তম হবে। এমনকি নির্জনতার বিবেচনায় মসজিদে নববীতে রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে নামায আদায়ের চেয়েও রসূলুল্লাহ স. অনেক গুণে উত্তম স্থান বললেন ঘরের খাছ কামরাকে। বিবেচক ব্যক্তিগণ অবশ্যই বিবেচনা করবেন যে, মসজিদে নববীতে একটি নামায মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদের হাজার নামাজের চেয়ে উত্তম। (বুখারী: ১১১৭)

আর রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে আদায়কৃত নামায দুনিয়ার যে কোন ইমামের পিছে আদায়কৃত নামাযের চেয়ে কতগুণ উত্তম আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এতদসত্ত্বেও রসূলুল্লাহ স. হযরত উম্মে হুমাইদ রা.কে বললেন যে, এই মসজিদে আমার পেছনে আদায়কৃত নামাযের বহুগুণে উত্তম তোমার নিজ ঘরের খাছ কামরার নামায। তাহলে বর্তমান বিশ্বের যে কোন মসজিদে যে কোন ইমামের পেছনে আদায়কৃত নামাযের চেয়ে নিজ ঘরের খাছ কামরার আদায়কৃত নামায কত উত্তম হবে তা ভাষায় প্রকাশের নয়। এ ফযীলাত ছেড়ে দিয়ে নারীদের মসজিদ মুখী হওয়া কোনক্রমেই সওয়াবের উদ্দেশ্যে হতে পারে না; বরং উদ্দেশ্য ভিন্ন কিছু যা নামাযের দোহাই দিয়ে চরিতার্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ হাদীস দ্বারা হযরত ইবনে খুযাইমা রহ. তাঁর সহীহ ইবনে খুযায়মায় শিরোনাম দাঁড় করে বলেন,

أَنَّ قَوْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ الْمَسَاجِدِ، أَرَادَ بِهِ صَلَاةَ الرِّجَالِ دُونَ صَلَاةِ النِّسَاءِ

নবী কারীম স.-এর বাণী: ‘আমার মসজিদে এক রাকাত নামায (মসজিদে হারাম ব্যতীত) অন্য যে কোন মসজিদে হাজার রাকাত নামায অপেক্ষা উত্তম’ দ্বারা উদ্দেশ্য পুরুষের নামায; নারীদের নামায নয়।

মহিলাদের জন্য ঘরের নির্জন কামরার নামায মসজিদের জামাআতের নামাযের চেয়ে উত্তম হওয়ার ব্যাপারে আরও অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে। নমুনা হিসেবে এখানে কয়েকটি হাদীস পেশ করা হলো। এব্যাপারে ইসলামের প্রকৃত অবস্থান জানতে সাহাবায়ে কিরামের আমলও অনেক সহায়ক হবে। তাই এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সাহাবায়ে কিরামের মন্তব্য বা আমল নিম্নে পেশ করছি।




নারীদের মসজিদে নামাজ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইচ্ছার প্রতিফলন -ইসলামিক আলোচনা- ৯ম পর্ব

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইচ্ছার প্রতিফলন 


 নারীদের মসজিদে নামাজ 

————————————

হাদীসের সঠিক মর্ম বোঝার জন্য সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম-এর আমলকেও সামনে রাখতে হবে। বস্তুত সাহাবায়ে কেরাম থেকে রাসূল (সা.)-এর আদর্শবিরোধী কোনো কাজ প্রকাশ পাবে সেটা কল্পনাও করা যায় না।


তাই হাদীস শরীফের পাশাপাশি সাহাবীগণের আমলও দলিলরূপে গণ্য। কারণ তাঁরা ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহচর। তাঁরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মেজাজ বুঝতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথা ও কাজের মর্ম অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা উপলব্ধি করতে পারতেন। তাই তো অনেক চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন বাস্তবায়ন সাহাবীগণের যুগে ঘটবে বলে সহীহ হাদীসে রাসূল (সা.) সুস্পষ্ট বলে গিয়েছেন, “তোমরা আমার পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে যেমন মাড়ির দাঁত দিয়ে কোনো জিনিস মজবুতভাবে ধরা হয়।” (সুনানে আবী দাউদ, হা. ৪৬০৭)


অপর হাদীসে হযরত হুযাইফা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন “জানি না আমি কত দিন তোমাদের মধ্যে থাকব। আমার পরে তোমরা আবুবকর ও উমরের অনুসরণ করবে।” (তিরমিযী, হা. ৩৬৬৩, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা. ৪৪৫১, ৪৪৫৫)

ইমাম হাকেম (রহ.) হাদীসটি সহীহ বলেছেন

হাফেয যাহাবী (রহ.)ও হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-৩/৭৯, ৮০)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) স্বীয় খিলাফত আমলে যখন নারীদের বিগড়ে যাওয়ার অবস্থা উপলব্ধি করলেন এবং ফেতনার আশঙ্কাও দিন দিন বাড়তে লাগল তখন তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা ছিদ্দীকা, ইবনে মাসউদ ও ইবনুয যুবায়ের (রা.)সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন।


অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন। কেননা তাঁরা জানতেন যে নারীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশের বিরোধিতা করা হয়নি, বরং তাঁর ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো হুকুমের বিরোধিতা করার কল্পনাও করা যায় না। এতদসত্ত্বেও তাঁরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এ জন্য যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মনোবাসনা এটাই ছিল।


উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.), যিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মেজাজ বুঝতেন, চাহিদা উপলব্ধি করতেন তাঁর উক্তি থেকেই বিষয়টি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন, “নারীরা যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা যদি রাসূল (সা.) দেখতেন, তবে বনী ইসরাঈলের নারীদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন।” (সহীহ বোখারী, হা. ৮৬৯)


বোখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (রহ.) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, “বর্তমান যুগে নারীরা শরীয়তবিরোধী যেসব পথ অবলম্বন করছে , পোশাক-পরিচ্ছদ আর রূপচর্চায় তারা যে নিত্যনতুন ফ্যাশন আবিষ্কার করছে, যদি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা.) এই দৃশ্য দেখদেন তাহলে আরো কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন।” (উমদাতুল কারী ৬/১৫৮)


আল্লামা আইনি (রহ.) আরো বলেন, “হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রা.)-এর উক্ত মন্তব্য তো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্বন্ধে। অথচ এ যুগের নারীদের বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সেকালে ছিল না। তাহলে এ অবস্থা দেখলে তিনি কী মন্তব্য করতেন?” (উমদাতুল কারী ৬/১৫৯)


এখানে চিন্তার বিষয় হলো, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (রহ.) স্বীয় যুগ তথা হিজরী নবম শতাব্দীর নারীদের সম্বন্ধে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর এ যুগে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা আর উলঙ্গপনার দিকে ছুটে চলেছে। বেপর্দা আর বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের পোশাক পরছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তা-ঘাটে বেড়াচ্ছে, সমানাধিকারের স্লোগান দিয়ে শরীয়তের বিধানাবলির লঙ্ঘন করছে। বোরকার মতো পবিত্র পোশাকের পবিত্রতা নষ্ট করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে এই ফেতনা-ফ্যাসাদের মধ্যে অবলা মা-বোনদের সাওয়াবের রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার অপচেষ্টা বোকামি বৈ কিছু নয়। অথচ দলিল-প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগের নারীদের।


প্রশ্ন হলো, এ যুগের নারীরা কি সে যুগের নারীদের মতো? কস্মিনকালেও না। তা সত্ত্বেও সে যুগেই মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে এ যুগের মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে নামাযের জন্য উৎসাহিত করা হবে?


ইমাম ইবনে আব্দিল বার (রহ.) স্বীয় কিতাব ‘আততামহীদ’-এ উল্লেখ করেন, স্ত্রী আতেকা বিবাহের সময় স্বামী উমর (রা.)-কে মসজিদে নববীতে গিয়ে নামাযের অনুমতি দেওয়ার শর্ত করেছিলেন, এ জন্য উমর (রা.) অপছন্দ করা সত্ত্বেও স্ত্রীকে নিষেধ করতে পারছিলেন না। কিন্তু উমর (রা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত যোবায়ের (রা.)-এর সাথে আতেকার বিবাহের পর স্বামী হযরত যোবায়ের (রা.)ও তাঁর মসজিদে যাওয়া অপছন্দ ও নিষেধ করতেন। তারপর কৌশলে তাঁর বের হওয়া বন্ধ করেন।


একদিন যখন আতেকা এশার সময় বের হলেন যোবায়ের (রা.) লুকিয়ে তাদের পশ্চাৎদেশে খোঁচা দিলেন। ওই দিন আতেকা (রা.) ঘরে ফিরে এসে বললেন, আল্লাহর পানাহ! মানুষ বিগড়ে গিয়েছে। অতঃপর আর কোনো দিন নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হননি। (আল ইসাবাহ ৮/২২৮)


হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা :

————————

অনেকে একটি হাদীসের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে মসজিদে গিয়ে নারীদের নামায আদায় সুন্নাত বা সাওয়াবের কাজ প্রমাণ করার অপচেষ্টা করে থাকে। হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ করো না। (বোখারী, হা. ৪৪২)


এক শ্রেণীর লোক হাদীসের শাব্দিক অনুবাদ থেকে এটাই বোঝে যে মসজিদে গিয়ে নারীদের নামায পড়া সুন্নাত। তাদের মসজিদে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। এটা অন্যায়-গোনাহের কাজ।


সঠিক ব্যাখ্যা :

——————

হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা জানার আগে হাদীসটির মতন ‘মূল ভাষ্য’ জেনে নেওয়া সমীচীন। হাদীসের কিতাবপত্র অধ্যয়ন করলে হাদীসটির মতনে ‘মূল ভাষ্যে’ কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে সূত্র, অর্থাৎ বর্ণনাকারী সাহাবী একজন। তিনি হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)। নিম্নে বর্ণনাগুলোর ভিন্নতা তুলে ধরা হলো। এক বর্ণনায় আছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অন্য এক বর্ণনায়ও আছে।


উভয় হাদীসের শাব্দিক অর্থ একই। অর্থাৎ তোমাদের কোনো স্ত্রী লোক তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে তাকে নিষেধ করো না। (বোখারী, মুসলিম) আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের স্ত্রী লোকদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য ইবাদতের সর্বোত্তম স্থান। (আবু দাউদ : ৫৬৭)


পর্যালোচনা :

——————

ওপরে আমরা ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে একই বিষয়ে বর্ণিত হাদীসের চার ধরনের মতন তথা মূল ভাষ্য পেলাম। যার থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট বুঝে আসে। এক. নামাযের জন্য নারীদের মসজিদে গমন করা ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব বা নফল কোনো বিধানের আওতায় পড়ে না।


কেউ এই হাদীস দ্বারা কোনো একটি বিধানের প্রমাণ করার চেষ্টা করলে সেটা হবে তার দ্বীনি জ্ঞানের ব্যাপারে দৈন্যতার প্রমাণ। কারণ কেউ যদি কাউকে বলে, তুমি অমুককে অমুক স্থানে যেতে বাধা দিয়ো না। এর অর্থ এই নয় যে অমুকের জন্য সেখানে যাওয়া জরুরি বা অন্য কিছু।


চিন্তা করলে দেখা যাবে, বাধা দেওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে। তবুও বিশেষ কোনো কারণে বাধা না দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। আর সেই বিশেষ কারণটি হলো সরাসরি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শরীয়তের বিধিবিধাান শেখা ও জানা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে এ কারণটিও রহিত হয়ে যায়।


দুই.

স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনো নারী ধর্মীয় কাজের জন্যও ঘর থেকে বের হতে পারবে না।


তিন.

কোনো নারী নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বামী বা অভিভাবক তাকে অনুমতি দিতে বাধ্য নয়। বরং যথাসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করবে যে নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করা এবং ঘরের নির্জন কক্ষে নামায আদায় করা মসজিদে গিয়ে আদায় করার চেয়ে অনেক বেশি ফজীলতপূর্ণ।


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদীসটির দ্বিতীয় অংশে ‘তাদের ঘরই ইবাদতের সর্বোত্তম স্থান’ বলে স্বামী ও অভিভাবকদের এই দিকনির্দেশনাই দিয়েছেন এবং নারীদের এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে মসজিদ নয়, ঘরই হলো তাদের নামাযের সর্বোত্তম স্থান। হাদীসের মূল ভাষ্যে সামান্য চিন্তা করলেই এই বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এ মর্মে আরো কিছু হাদীস ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে।


চার.

শরীয়তের একটি মূলনীতি হলো, হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবী যদি নিজেই তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের বিপরীত আমল করেন, তাহলে ওই হাদীসটি আমল ও প্রমাণযোগ্য থাকে না। বরং বুঝতে হবে হাদীসটির বিধান রহিত হয়ে গেছে অথবা সাধারণ মানুষ বাহ্যিকভাবে যা বোঝে হাদীসের প্রয়োগ ক্ষেত্র তা নয়, অন্য কিছু। বা বুঝতে হবে হাদীসি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ।


ইবনে উমর (রা.)-এর আমল :

—————————————

পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে হাদীসটি ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত। আরো উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য আগত নারীদের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করতেন এবং তাদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। অন্য আরেক বর্ণনায় উল্লেখ করা হবে, তিনি পরিবারের নারী সদস্যদের ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করার জন্য ঘর থেকে বের হতে দিতেন না।


এ ছাড়া তাঁর সূত্রে এই হাদীসও উল্লেখ করা হয়েছে যে নারীদের জামাতে কল্যাণ বলতে কিছু নেই। ইবনে উমর (রা.)-এর বাস্তব আমল তার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের বিপরীত হওয়াটা কি এই বার্তা বহন করে না যে হাদীসটির বিধান রহিত হয়ে গেছে বা প্রয়োগ ক্ষেত্র বাহ্যিকভাবে যা বুঝে আসে তা নয় বরং অন্য কিছু। এর পরও একটি মহল মসজিদে নারীদের নামাযের ব্যবস্থার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লাগা সরলমনা মুসলমানদের সাথে প্রতারণা ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ।

পাঁচ.

রাষ্ট্রপ্রধান, ইমাম ও অভিভাবকদের দায়িত্ব।

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বিদগ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনে হজর মক্কী (রহ.) বলেন, “যখন মসজিদে বা পথে পুরুষের সাথে মেলামেশা অথবা নারীদের অত্যধিক রূপচর্চা বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার কারণে ফিতনার আশঙ্কা হয় তখন তাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে যাওয়া হারাম এবং তারা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে স্বামী বা অভিভাবকদের অনুমতি প্রদান করাও হারাম। আর রাষ্ট্রপ্রধান, ইমাম বা তাঁদের প্রতিনিধিগণের ওপর নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ করা ওয়াজিব।” (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৮৩৬)


এই দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রপ্রধান, ইমাম, খতীব ও অভিভাবকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মসজিদের প্রতিষ্ঠাতাগণ ও ব্যবস্থাপকগণকেও এ ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।



নারীদের নামাযের সর্বোত্তম স্থান -ইসলামিক আলোচনা- ৮ম পর্ব

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে


নারীদের নামাযের সর্বোত্তম স্থান :


মুসলমান মাত্রই তার ভেতর এই আবেগময় প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে যে পুরুষরা তো মসজিদে জামাতের সহিত নামায আদায় করে অসংখ্য নেকী অর্জনে সক্ষম। দ্বীনদার মুসলিম নারীরা মসজিদে যেতে না পারলে এই নেকী কিভাবে অর্জন করবে? এই আবেগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু সব কাজ আবেগের বশীভূত হয়ে করা যায় না। বিপদ ডেকে আনতে পারে।


বিশেষ করে নামাযের মতো একটি ইবাদত আবেগ দিয়ে নয় বরং দলিল ও প্রমাণের আলোকে সম্পাদন করতে হবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মতের নারী সদস্যদের এই আবেগের যথার্থ মূল্যায়ন করে মসজিদে গিয়ে নামায পড়ার চেয়ে বেশি সাওয়াব অর্জনের পথ ও স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন, নারীগণের ঘরের নির্জন কক্ষের নামায মসজিদের নামাযের তুলনায় বেশি ফজীলতপূর্ণ। এ মর্মে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত হলো।


১.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত,  “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারীদের ক্ষুদ্র কক্ষের নামায বড় কামরার নামাযের তুলনায় উত্তম। ঘরের নির্জন কোণের নামায ক্ষুদ্র কক্ষের নামাযের তুলনায় উত্তম।” (আবু দাউদ, হা. ৫৭০)


অপর বর্ণনায় হাদীসটি হযরত উম্মে সালামা (রা.)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) থেকে আরো বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, “এবং নারীদের বাড়িতে নামায পড়া বাড়ির বাইরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।” (আল মু’জামুল আওসাত, হা. ৯১০১) ইমাম নববী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সূত্র ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায় সহীহ। (খুলাসাতুল আহকাম ২/৬৭৮)

.

ইমাম হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি ইমাম বোখারী ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হাফেয যাহাবী (রহ.)-ও তাঁর সমর্থন করেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-১/২০৯)


২.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে আরো বর্ণিত আছে, “নারীদের কোনো নামায আল্লাহর নিকট তার ওই নামায অপেক্ষা পছন্দনীয় নয়, যা সে তার ঘরের অন্ধকার কক্ষে আদায় করে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ২১১৫)


নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ :

————————————

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরের নির্জন কক্ষকে নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ আখ্যায়িত করেছেন এবং সেখানে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াব শুধু সাধারণ মসজিদই নয় বরং মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াবের চেয়েও বেশি বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ তাদের ঘরের নির্জন কক্ষ। (মুসনাদে আহমাদ, হা. ২৬৫৪২)


প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা বুসিরী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সূত্র সহীহ। (ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারা ২/৬৪)


৩.

আব্দুল্লাহ ইবনে সুয়াইদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা উম্মে হুমাইদ (নামক একজন মহিলা সাহাবী), যিনি আবু হুমাইদ সা-ইদি (রা.)-এর স্ত্রী, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে নামায আদায় করতে আগ্রহী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, “আমি জানি তুমি আমার সাথে নামায আদায় করতে পছন্দ করো। কিন্তু তোমার জন্য গৃহের অন্দরমহলে নামায পড়া উত্তম; বড় কামরার তুলনায়। বড় কামরায় নামায পড়া উত্তম বারান্দার চেয়ে। বারান্দা উত্তম তোমার পাড়ার মসজিদের চেয়ে। নিজ পাড়ার মসজিদ উত্তম আমার মসজিদ থেকে।” এ কথা শোনার পর উম্মে হুমাইদ (রা.) তাঁর গৃহের নির্জন স্থানে একটি নামাযের স্থান বানানোর নির্দেশ দিলেন এবং সেখানেই মৃত্যু পর্যন্ত নামায আদায় করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা. ২৭০৯০, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হা. ১৬৮৯)


হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান। (ফাতহুল বারী ২/২৯০)

এই হাদীসে মুসলিম নারীদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে। মসজিদে নববীতে নামাযের ফজীলত : হযরত আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত বোখারী শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী, “মসজিদে নববীর এক নামাযে অন্য মসজিদের এক হাজার নামাে যর সাওয়াব পাওয়া যায়।” (বোখারী, হা. ১১৯০)


অপর হাদীসে রয়েছে, “একাকী নামাযের তুলনায় জুমু’আর মসজিদের নামাযে পাঁচ শত গুণ সাওয়াব বেশি।”

এতে প্রমাণিত হলো, একাকী নামাযের তুলনায় মসজিদে নববীর নামাযে পাঁচ লক্ষ গুণ সাওয়াব বেশি। তাহলে এবার চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোষণা থেকে বোঝা যায়, নারীদের “ঘরের নির্জন কক্ষে” আদায়কৃত নামাযের সাওয়াব মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের চেয়ে পাঁচ লক্ষ গুণ বেশি উত্তম !!!


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে বিরোধিতা :

—————————————————————————————

পরিতাপের বিষয় হলো, আজকাল কিছু লোক সরলমনা মুসলিম নারীদের মসজিদে গিয়ে জামাতে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে সুন্নাত মনে করে। সুন্নাত জিন্দা করার নাম দিয়ে তারা এই মিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্য পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।


শুধু মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধেই নয় বরং স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধেও। যদি মসজিদে এসে নারীদের নামায আদায় ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, নফল কোনো একটি বিধানের আওতায় পড়ত তবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীদের ঘরের নির্জন কক্ষে আদায়কৃত নামাযকে মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের তুলনায় বেশি ফজীলতপূর্ণ কেন বললেন?

.

তবে কি তাদের ভাষায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুসলিম নারীদের সুন্নাত পরিপন্থী কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন? নাউযুবিল্লাহ।


মনে রাখতে হবে, একজন রাসূলপ্রেমিক সাচ্চা মুমিনের দৃঢ়বিশ্বাস এটাই হতে হবে যে মসজিদে হারাম এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের পর সর্বোত্তম মসজিদ মসজিদে নববী। পৃথিবীর সমস্ত মসজিদের সমন্বিত ফজীলত মসজিদে নববীর সমমানের কস্মিনকালেও হবে না। বরং কোনো মসজিদকে মসজিদে নববীর সাথে তুলনা করাটাই চরম ধৃষ্টতা এবং চূড়ান্ত মূর্খতা।




জুমু’আর নামাযে নারীদের অংশগ্রহণ ও সাহাবায়ে কেরামের পদক্ষেপ -ইসলামিক আলোচনা-৭ম পর্ব

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২১ 0
বার দেখা হয়েছে

 


জামাতের বিধান নারীদের জন্য নয় :

——————————————————-

ফরয নামায জামাতের সহিত আদায় করা পুরষদের জন্য ওয়াজিবের পর্যায়ের। অসংখ্য হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত। কিন্তু মসজিদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণ ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, নফল কোনোটাই নয়। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে এটাই স্পষ্ট প্রমাণিত। নমুনাস্বরূপ কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত হলো।

১.

যেসব পুরুষ জরুরতবিহীন মসজিদে না এসে ঘরে নামায পড়ে তাদের বিষয়ে রাগান্বিত হয়ে রাসূল (সা.) ধমকিস্বরূপ বলেন, “যদি ঘরগুলোতে নারী ও শিশুসন্তান না থাকত তাহলে আমি এশার নামাযের ইমামতির দায়িত্ব অন্যজনকে দিয়ে কিছু যুবক দলকে দিয়ে ঘরের সব কিছু জ্বালিয়ে দিতাম।” (মুসনাদে আহমাদ, হা. ৮৭৯৬, মুসনাদে আবী দাউদ ত্বায়ালিসি, হা. ২৪৪৩)


উক্ত হাদীসে নারী ও শিশু না থাকলে ঘর জ্বালানোর কথা এ জন্যই বলা হয়েছে যেহেতু মহিলা ও শিশুর ওপর মসজিদের জামাত নেই, তাই এখানে বালেগ পুরুষদেরই উক্ত ধমকি দেওয়া হয়েছে। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে মসজিদের জামাতের বিধান নারীদের জন্য নয়।


২.

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,  “ওই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন! আমার ইচ্ছা হয় কাউকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ প্রদান করি। আর কাউকে আযান দেওয়ার হুকুম করি। অতঃপর একজনকে ইমামতি করার আদেশ করে স্বয়ং নিজে গিয়ে সেসব পুরুষের ঘর জ্বালিয়ে দিই, যারা জামাতে অংশগ্রহণ করেনি।” (বোখারী হা. ৭২২৪)


এই হাদীসে শুধুমাত্র পুরুষদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ধমকি দেওয়া হয়েছে। বোঝা গেল নারীদের জামাতে অংশগ্রহণ করার বিধান শরীয়তে নেই।


৩.

ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত আরেক হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, নারীদের জামাতে কোনো কল্যাণ নেই।……কারণ তারা কোনো স্থানে সমবেত হলে স্ব ভাবসুলভ আলাপচারিতায় মত্ত হয়। (আল মুজামুল কাবীর, হা. ১৩২২৮)


মুসলমান মাত্রই এ কথা জানে যে মসিজদ ইবাদতের জায়গা। আলাপচারিতার স্থান নয়। আর এটাও বাস্তব সত্য যে, নারীদের স্বভাবসুলভ ব্যাপার হলো, তারা কোনো স্থানে একত্রিত হলে পরস্প রে বিভিন্ন আলাপচারিতায় মগ্ন হয়, যা মসজিদের পবিত্রতার পরিপন্থী কোনো সন্দেহ নেই।

.

এ কারণেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সমবেত হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই মর্মে ঘোষণা করেছেন। এর পরও কি দ্বীন ও সাওয়াবের দোহাই দিয়ে নারীদের  জামাতে অংশগ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, কল্যাণকর বলার অবকাশ আছে? নাকি সরলমনা মুসলিম নারীদের নামাযের নামে মসজিদে একত্রিত করে তাদের দ্বারা রাষ্ট্রবিরোধী এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করিয়ে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ধূলিস্যাৎ করে দেওয়াই কোনো কুচক্রী মহলের অভীষ্ট লক্ষ্য। দৈনিক খবরের কাগজে নজর বোলালেও এর সত্যতার প্রমাণ মেলে।


জুমু’আর নামাযে নারীদের অংশগ্রহণ :

—————————————————

নারীদের জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে আলাদা সুব্যবস্থা রাখার জন্য অনেকে নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। তারা মনে করে, এটা অনেক বড় সাওয়াব ও পুণ্যের কাজ। কথিত এই দ্বীনি কাজের জন্য তাদের মাতম চোখে পড়ার মতো।


কারো মাতমে প্রভাবিত না হয়ে আমাদের দেখতে হবে, বুঝতে হবে ইসলামী শরীয়ত নারীদের ওপর জুমু’আর নামায পড়ার বিধান রেখেছে কি না? হাদীসের বিশাল ভান্ডার অনুসন্ধান করে দেখা যায়, নারীদের ওপর জুমু’আ ওয়াজিব নয়। তাদের কোনো জুমু’আ নেই। এখানে কিছু হাদীস প্রদত্ত হলো।


১.

হযরত আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “জামাতে জুমু’আর নামায পড়া প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অকাট্য ওয়াজিব, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়। (সুনানে আবী দাউদ, হা. ১০৬৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা. ১০৬২)


ইমাম হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি ইমাম বোখারী ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হাফেয যাহাবি (রহ.)ও হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-১/২৮৮)


২.

হযরত মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে তার ওপর জুমু’আ ফরয, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়।” (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা. ৫২০০)


হাদীসটির বিশুদ্ধতায় কোনো সন্দেহ নেই। (দেখুন, মা’রিফাতুস সুনানী ওয়াল আসার, হা. ৬৩৬৩)


সাহাবায়ে কেরামের পদক্ষেপ :

——————————————

সাহাবায়ে কেরামের যুগে কোনো নারী জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে চলে এলে তাঁরা তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করতেন? কী পদক্ষেপ নিতেন? নিম্নের বর্ণনাসমূহ দ্বারা বিষয়টি অনুধাবন করা যায়।

১.

হযরত আবু আমর শায়বানী (রহ.) থেকে বর্ণিত, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমু’আর দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা মসজিদ থেকে বের হয়ে ঘরে চলে যান। কারণ আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য নামাযের উত্তম স্থান। (আল মু’জামুল কাবীর, হা. ৯৪৭৫)

আল্লামা হাইসামী (রহ.) বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। (মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৫)

২.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) জুমু’আর নামায পড়ার জন্য কোনো নারী মসজিদে এলে তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন এবং তাদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। (উমদাতুল কারী ৬/১৫৭)


৩.

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি জুমু’আর দিন নারীদের পাথর মেরে মেরে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৭৬১৭)


উপর্যুক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে বোঝা গেল, সাহাবায়ে কেরাম নারীদের জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে ব্যবস্থা রাখা তো দূরের কথা, কেউ চলে এলে তাকে বারণ করতেন এবং বের করে দেওয়ার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। উল্লেখ্য, তাঁদের এই পদক্ষেপ নারী জাতিকে অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আল্লাহর আজাব থেকে তাদের এবং মুসলিম উম্মাহকে বাঁচানোর জন্য ছিল। এই হলো ইসলামের সোনালি যুগের ঘটনা। যে যুগের লোকদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হওয়ার স্বীকৃতি স্বয়ং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের মোবারক যবানে দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর পর আজও সাহাবাদের আমল থেকে বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও অন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে।




ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png