![]() |
নারীদের নামাযের সর্বোত্তম স্থান : |
মুসলমান মাত্রই তার ভেতর এই আবেগময় প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে যে পুরুষরা তো মসজিদে জামাতের সহিত নামায আদায় করে অসংখ্য নেকী অর্জনে সক্ষম। দ্বীনদার মুসলিম নারীরা মসজিদে যেতে না পারলে এই নেকী কিভাবে অর্জন করবে? এই আবেগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু সব কাজ আবেগের বশীভূত হয়ে করা যায় না। বিপদ ডেকে আনতে পারে।
বিশেষ করে নামাযের মতো একটি ইবাদত আবেগ দিয়ে নয় বরং দলিল ও প্রমাণের আলোকে সম্পাদন করতে হবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মতের নারী সদস্যদের এই আবেগের যথার্থ মূল্যায়ন করে মসজিদে গিয়ে নামায পড়ার চেয়ে বেশি সাওয়াব অর্জনের পথ ও স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন, নারীগণের ঘরের নির্জন কক্ষের নামায মসজিদের নামাযের তুলনায় বেশি ফজীলতপূর্ণ। এ মর্মে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত হলো।
১.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারীদের ক্ষুদ্র কক্ষের নামায বড় কামরার নামাযের তুলনায় উত্তম। ঘরের নির্জন কোণের নামায ক্ষুদ্র কক্ষের নামাযের তুলনায় উত্তম।” (আবু দাউদ, হা. ৫৭০)
অপর বর্ণনায় হাদীসটি হযরত উম্মে সালামা (রা.)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) থেকে আরো বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, “এবং নারীদের বাড়িতে নামায পড়া বাড়ির বাইরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।” (আল মু’জামুল আওসাত, হা. ৯১০১) ইমাম নববী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সূত্র ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায় সহীহ। (খুলাসাতুল আহকাম ২/৬৭৮)
.
ইমাম হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি ইমাম বোখারী ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হাফেয যাহাবী (রহ.)-ও তাঁর সমর্থন করেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-১/২০৯)
২.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে আরো বর্ণিত আছে, “নারীদের কোনো নামায আল্লাহর নিকট তার ওই নামায অপেক্ষা পছন্দনীয় নয়, যা সে তার ঘরের অন্ধকার কক্ষে আদায় করে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ২১১৫)
নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ :
————————————
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরের নির্জন কক্ষকে নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ আখ্যায়িত করেছেন এবং সেখানে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াব শুধু সাধারণ মসজিদই নয় বরং মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের সাওয়াবের চেয়েও বেশি বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ তাদের ঘরের নির্জন কক্ষ। (মুসনাদে আহমাদ, হা. ২৬৫৪২)
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা বুসিরী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সূত্র সহীহ। (ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারা ২/৬৪)
৩.
আব্দুল্লাহ ইবনে সুয়াইদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা উম্মে হুমাইদ (নামক একজন মহিলা সাহাবী), যিনি আবু হুমাইদ সা-ইদি (রা.)-এর স্ত্রী, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে নামায আদায় করতে আগ্রহী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, “আমি জানি তুমি আমার সাথে নামায আদায় করতে পছন্দ করো। কিন্তু তোমার জন্য গৃহের অন্দরমহলে নামায পড়া উত্তম; বড় কামরার তুলনায়। বড় কামরায় নামায পড়া উত্তম বারান্দার চেয়ে। বারান্দা উত্তম তোমার পাড়ার মসজিদের চেয়ে। নিজ পাড়ার মসজিদ উত্তম আমার মসজিদ থেকে।” এ কথা শোনার পর উম্মে হুমাইদ (রা.) তাঁর গৃহের নির্জন স্থানে একটি নামাযের স্থান বানানোর নির্দেশ দিলেন এবং সেখানেই মৃত্যু পর্যন্ত নামায আদায় করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা. ২৭০৯০, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হা. ১৬৮৯)
হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান। (ফাতহুল বারী ২/২৯০)
এই হাদীসে মুসলিম নারীদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে। মসজিদে নববীতে নামাযের ফজীলত : হযরত আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত বোখারী শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী, “মসজিদে নববীর এক নামাযে অন্য মসজিদের এক হাজার নামাে যর সাওয়াব পাওয়া যায়।” (বোখারী, হা. ১১৯০)
অপর হাদীসে রয়েছে, “একাকী নামাযের তুলনায় জুমু’আর মসজিদের নামাযে পাঁচ শত গুণ সাওয়াব বেশি।”
এতে প্রমাণিত হলো, একাকী নামাযের তুলনায় মসজিদে নববীর নামাযে পাঁচ লক্ষ গুণ সাওয়াব বেশি। তাহলে এবার চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোষণা থেকে বোঝা যায়, নারীদের “ঘরের নির্জন কক্ষে” আদায়কৃত নামাযের সাওয়াব মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের চেয়ে পাঁচ লক্ষ গুণ বেশি উত্তম !!!
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে বিরোধিতা :
—————————————————————————————
পরিতাপের বিষয় হলো, আজকাল কিছু লোক সরলমনা মুসলিম নারীদের মসজিদে গিয়ে জামাতে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে সুন্নাত মনে করে। সুন্নাত জিন্দা করার নাম দিয়ে তারা এই মিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্য পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
শুধু মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধেই নয় বরং স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধেও। যদি মসজিদে এসে নারীদের নামায আদায় ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, নফল কোনো একটি বিধানের আওতায় পড়ত তবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীদের ঘরের নির্জন কক্ষে আদায়কৃত নামাযকে মসজিদে নববীতে আদায়কৃত নামাযের তুলনায় বেশি ফজীলতপূর্ণ কেন বললেন?
.
তবে কি তাদের ভাষায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুসলিম নারীদের সুন্নাত পরিপন্থী কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন? নাউযুবিল্লাহ।
মনে রাখতে হবে, একজন রাসূলপ্রেমিক সাচ্চা মুমিনের দৃঢ়বিশ্বাস এটাই হতে হবে যে মসজিদে হারাম এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের পর সর্বোত্তম মসজিদ মসজিদে নববী। পৃথিবীর সমস্ত মসজিদের সমন্বিত ফজীলত মসজিদে নববীর সমমানের কস্মিনকালেও হবে না। বরং কোনো মসজিদকে মসজিদে নববীর সাথে তুলনা করাটাই চরম ধৃষ্টতা এবং চূড়ান্ত মূর্খতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন