LIVE
Loading latest headlines...

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

নারীদের মসজিদে নামাজ ( বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল ও মন্তব্য ) ইসলামিক আলোচনা- ১১তম পর্ব

বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল ও মন্তব্য


————————————————————–

আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনুল খত্তাব রা.

حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: كَانَتِ امْرَأَةٌ لِعُمَرَ تَشْهَدُ صَلاَةَ الصُّبْحِ وَالعِشَاءِ فِي الجَمَاعَةِ فِي المَسْجِدِ، فَقِيلَ لَهَا: لِمَ تَخْرُجِينَ وَقَدْ تَعْلَمِينَ أَنَّ عُمَرَ يَكْرَهُ ذَلِكَ وَيَغَارُ؟ قَالَتْ: وَمَا يَمْنَعُهُ أَنْ يَنْهَانِي؟ قَالَ: يَمْنَعُهُ قَوْلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ» (رَوَاه الْبُخَارِىُّ فِىْ بَاب هَلْ عَلَى مَنْ لَمْ يَشْهَدِ الجُمُعَةَ غُسْلٌ مِنَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ وَغَيْرِهِمْ؟)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে বর্ণিত: হযরত উমার রা.-এর এক স্ত্রী ছিলেন। (তাঁর নাম ছিলো আতিকা) তিনি ফজর এবং ইশার নামাযে মসজিদের জামাআতে হাজির হতেন। তাঁকে বলা হলো-আপনি কেন মসজিদে যান? অথচ আপনি জানেন যে, হযরত উমার এটা অপছন্দ করতেন এবং আত্মমর্যাদাহানিকর মনে করতেন। তিনিবললেন: আমাকে নিষেধ করে দিতে তাঁকে (উমারকে) কিসে বারণ করেছিলো? হযরত ইবনে উমার বললেন: “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণী তাঁকে বাধা দিয়েছিলো। (বুখারী: ৮৫৪)


হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। এ হাদীসটি ইমাম বুখারীর উসতাদ ইবনে আবী শাইবাও তাঁর মুসান্নাফ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। (ইবনে আবীশাইবা: ৭৬৯০)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত উমার রা. তাঁর স্ত্রীর মসজিদে যাওয়া অপছন্দ করতেন। যদিও রসূলুল্লাহ স.-এর বাণীর কারণে তিনি স্ত্রীকে বাধা দিতে পারেননি। “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মর্মার্থ যারা তাঁর সংশ্রবে থেকে বুঝেছেন তাঁরা মহিলাদের মসজিদে গমন অপছন্দ করতেন।আর সেই বাণী থেকেই আজ আমরা অনুমতি খুঁজে পাচ্ছি। বিষয়টা কি আমরা ভুল বুঝছি না হযরত উমার রা. ভুল বুঝেছিলেন?


হযরত ইবনে মাসউদ রা.

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أنا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أنا مَعْمَرٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ، أَنَّهُ: رَأَى ابْنَ مَسْعُودٍ، يُخْرِجُ النِّسَاءَ مِنَ الْمَسْجِدِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَقُولُ: «اخْرُجْنَ إِلَى بُيُوتِكُنَّ خَيْرٌ لَكُنَّ») خُطْبَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَمِنْ كَلَامِهِ:بَابٌ-۱۱)

হযরত আবু আমর শাইবানী বলেন: আমি হযরত ইবনে মাসউদ রা. কে দেখেছি জুমআর দিনে মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছেন এবং বলছেন: তোমরা ঘরে ফিরে যাও, এটাইতোমাদের জন্য কল্যাণকর। (তবারানী কাবীর: ৯৪৭৫)

হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। ইসহাক বিন ইবরাহীম দাবারী ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ইসহাক বিন ইবরাহীমের বর্ণনাকে আল্লামা উকাইলী রহ. সহীহ বলেছেন। আল্লামা আবু আওয়ানা তাঁর সহীহ কিতাবে ইসহাকের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। ইমাম দারাকুতনী তাঁকে সত্যনিষ্ঠ বলেছেন। (লিসানুল মীযান: ৯৯৫)


আল্লামা হাইসামী বলেন:

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ

“হাদীসটি ইমাম তবারানী তাঁর মু’জামে কাবীরে বর্ণনা করেছেন এবং বর্ণনাকারী গণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২১১৯)

সারসংক্ষেপ : হযরত ইবনে মাসউদ রা. মৃত্যুবরণ করেন ৩২ হিজরীতে, হযরত উসমান রা.-এর খিলাফাত আমলে। তাহলে হযরত ইবনে মাসউদ রা.-এর এ কাজটি ঘটেছে খুলাফায়ে রাশেদার যুগে এবং সাহাবায়েকিরামের ব্যাপক উপস্থিতিতে জুমআর মসজিদে। “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মর্মার্থ আজ আমরা যেভাবে বুঝার চেষ্টা করছি সাহাবায়ে কিরাম যদি সেভাবে বুঝতেন তাহলে খুলাফায়ে রাশেদার যুগে সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপক উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে জুমআর মসজিদে হযরত ইবনে মাসউদ রা. কোনক্রমেই এমন করতে পারতেন না। বরং সাহাবায়ে কিরামের পক্ষ থেকে কোন বাঁধা বা প্রতিবাদ সৃষ্টি না হওয়া এরই প্রমাণ বহন করে যে, সাহাবায়ে কিরাম মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া বা তাদেরকে মসজিদে না আনার বিষয়ে হযরত ইবনে মাসউদ রা.-এর সঙ্গে একমত ছিলেন। আর এটাই নারীদের মসজিদে না যাওয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের ঐকমত্য বা ইজমা।


হযরত ইবনে আব্বাস রা.

حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ثنا إِسْرَائِيلُ، عَنْ عَبْدِ الْأَعْلَى، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتْهُ عَنِ الصَّلَاةِ فِي الْمَسْجِدِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَقَالَ: «صَلَاتُكِ فِي مَخْدَعِكِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِكِ فِي بَيْتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِكَ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكَ» (مصنف ابن ابى شيبة: مَنْ كَرِهَ ذَلِكَ: يعنى لِلنِّسَاءِ فِي الْخُرُوجِ إِلَى الْمَسْجِدِ)

হযরত সাঈদ বিন যুবাইর বলেন: কোন এক মহিলা হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে জুমআর দিনে মসজিদে গিয়ে নামায আদায়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো। জবাবে হযরত ইবনে আব্বাস রা. বললেন: তোমার ঘরের নির্জন স্থানের নামায তোমার খাছ কামরার নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার খাছ কামরার নামায তোমর ঘরের নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার ঘরের নামায তোমার কওমের মসজিদের নামায অপেক্ষা উত্তম। (ইবনে আবী শাইবা: ৭৬৯৭)


হাদীসটির স্তর: হাসান, মাওকুফ। আব্দুল আলা ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর আব্দুল আলা সত্যনিষ্ঠ তবে সন্দেহে পড়েন। (তাকরীব: ৪১৫২)

ইমাম তিরমিজী তাঁর বর্ণনাকে হাসান বলেছেন। (তিরমিজী: ১৩২৮)

হাকেম আবু আব্দুল্লাহ এবং ইমাম জাহাবী তাঁর বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন (মুসতাদরাক: ৩৪৮৭)

সারসংক্ষেপ : হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর ফতওয়া থেকেও পরিস্কার হয়ে গেলো যে, উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবায়ে কিরামের মন্তব্য এবং আমল দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায়ের চেয়ে মহিলাদের উত্তম নামাযের উত্তম স্থান হলো নিজ গৃহের নির্জন কামরা।


নমুনা স্বরূপ কয়েক জন সাহাবায়ে কিরামের মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা হলো। এ ছাড়াও অনেক সাহাবা থেকে অনুরূপ মতামত বর্ণিত রয়েছে। উল্লিখিত হাদীসের প্রত্যেকটির মধ্যেই মহিলাদেরকে মসজিদে গিয়েজামাআতে নামায আদায় করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সাথে সাথে তাদের ঘরে আদায়কৃত নামাযকে মসজিদে গিয়ে জামাআতে আদায়কৃত নামায অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। এমনকি মসজিদে নববীতে রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে আদায়কৃত নামাযের চেয়েও নিজ গৃহের অন্দরমহলে আদায়কৃত নামাযকে বেশী উত্তম বলা হয়েছে।


অতএব, মহিলারা যদি নামায আদায়ের মাধ্যমে অধিক সওয়াব অর্জন করার আশা করে তাহলে তাদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে পুরুষের জামাআতে শরীক না হয়ে আপন ঘরের অভ্যন্তরে একাকী নামায আদায়করা।


এর বিপরীতে যেহেতু বেশ কিছু সহীহ হাদীসে মহিলাদেরকে  মসজিদে যেতে বাঁধা না দেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং  রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে মসজিদে নববীতে ব্যাপকহারে মহিলাদের জামাআতে অংশগ্রহণের অগণিত প্রমাণও রয়েছে, সেহেতু উক্ত  হাদীসগুলোতে নির্দেশিত আমলের বিষয়টি কেমন হবে তা নিয়ে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতেই পারে। এবিষয়টির সুরাহা করতে গেলে আমাদেরকে  তিনটি দিক লক্ষ্য করতে হবে।


প্রথম লক্ষণীয় বিষয় হলো:

রসূলুল্লাহ স. বহু হাদীসে  স্বামীদেরকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে যেতে বাঁধা দিও না অথবা বলেছেন যে, স্ত্রীগণ তোমাদের নিকটে অনুমতি চাইলে তাদেরকে অনুমতি দিও। কিন্তু মহিলাদেরকে সম্বোধন করে কোথাও বলেছেন যে, তোমরা মসজিদে যাও বা  স্বামীদের থেকে যাওয়ার অনুমতি চাও এমনটি দৃষ্টিগোচর হয়নি। এমনকি উম্মে হুমাইদ রা. রসূলুল্লাহ স.-এর নিকটে খাছ পরামর্শ নিতে আসলে রসূলুল্লাহ স. কিন্তু তাকে অনুমতি দেননি; বরং তাকে ঘরমুখী করার চেষ্টা করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ: ২৭০৯০)


যদি মহিলাদের মসজিদে উপস্থিতিই রসূলুল্লাহ স.-এর লক্ষ্য হতো তাহলে তাদেরকে নির্দেশ দিলেই যথেষ্ট হয়ে যেতো। এমনকি রসূলুল্লাহ স.-এর নির্দেশ পেলে স্বামীদের অনুমতি গ্রহণেরও প্রশ্ন থাকত না। এ সব কিছু গভীরভাবে পর্যক্ষেণ করলে বুঝা যায় যে, “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এই বাণীর মর্মার্থ আজ আমরা যেভাবে বুঝার চেষ্টা করছি রসূলুল্লাহ স.-এর উদ্দেশ্য তা ছিলো না।


দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয় হলো:

“আল্লাহর বান্দীদেরকে  মসজিদে যেতে বাঁধা দিও না” অথবা “স্ত্রীগণ তোমাদের নিকটে অনুমতি চাইলে তাদেরকে অনুমতি দিও” রসূলুল্লাহ স.-এর এ নির্দেশের ভাষা যদিও ব্যাপক, কোন স্থান বা কালের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়; কিন্তু প্রকৃত অর্থে এটা মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর বৈশিষ্ট।  হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে তবারানী কাবীর: ৯৩৬০ এবং  সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী: ৫৩৬৪ নম্বরে একটি মাওকুফ হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে,  মহিলাদের জন্য ঘরের নির্জন কামরার নামাযই সর্বোত্তম। তবে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর নামায এর থেকে ব্যতিক্রম।


তৃতীয় লক্ষণীয় বিষয় হলো:

রসূলুল্লাহ স.-এর জীবদ্দশায় নিম্ন বর্ণিত কারণে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো যা পরবর্তীতে আর থাকেনি। এ কারণে রসূলুল্লাহ স.-এর ওয়াফাতের পরে  সাহাবায়ে কিরাম মহিলাদের মসজিদে যাওয়া অপছন্দ করতেন।


প্রথম কারণ :

সে সময়ে মহিলা সংক্রান্ত বিভিন্ন  শরঈ আহকাম নাযিল হচ্ছিলো যা বুঝার জন্য মহিলাদের উপস্থিতি  প্রয়োজন ছিলো। তারা মসজিদে উপস্থিত না হলে রসূলুল্লাহ স.-এর আমল সরাসরি দেখার সুযোগ পেত না। অথচ এর প্রকৃত পদ্ধতি নারী মহলে তুলে ধরতে আমলগুলো মহিলাদের সরাসরি দেখার প্রয়োজন ছিলো। কেননা, রসূলুল্লাহ স.-এর বাণী “আমাকে যেমন নামায পড়তে দেখ তোমরা তেমন নামায পড়” মৌলিকভাবে নারী-পুরুষ সবার জন্য তা প্রযোজ্য। (বুখারী: ৬০৪)


সুতরাং “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদ  যেতে বাঁধা দিওনা” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মূল উদ্দেশ্য এমন কিছু হতে পারে যা স্পষ্ট করে উক্ত হাদীস সমূহে বর্ণনা করা হয়নি। কিন্তু এখন নবীও বেঁচে নেই আর নববী শিক্ষার কেন্দ্রও মসজিদ নয়; বরং যারা জামাআতে যায় তারা নামাযের জন্যই যায়।


দ্বিতীয় কারণ :

মুসলমানদের সংখ্যা তখন পর্যন্ত কম ছিলো যা বিজাতির ওপর প্রভাব বিস্তারের পর্যায়ের ছিলো না। অথচ কোন কাজে মানুষের ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ অন্যদেরকে এ দিকে আকৃষ্ট করে এবং অন্যদের অন্তরে এর প্রভাব সৃষ্টি করে। মহিলাদের জামাআতে অংশ গ্রহণ করে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য প্রকাশও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো।উল্লিখিত কারণের বড় প্রমাণ উম্মে আতিয়াহ রা.  থেকে বুখারী শরীফে বর্ণিত ৯২৮ নম্বর হাদীস। যে হাদীসে রসূলুল্লাহ স. হায়েযা মহিলাদেরকেও ঈদের জামাআতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।সাথে সাথে এর কারণও বর্ণনা করেছেন যে, তারা যেন মুসলমানদের দুআ ও কল্যাণে শরীক হয়। অর্থাৎ, ঈদের জামাআতে তাদের উপস্থিতি নামাযের জন্য নয়। সুতরাং “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাঁধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এ বাণীর মূল উদ্দেশ্য এমন কিছু হতে পারে যা স্পষ্ট করে উক্ত হাদীস সমূহে বর্ণনা করা হয়নি। রসূলুল্লাহ স. দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন ইসলামকে  শক্তিশালী এবং বিজয়ী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরে। আর এটাই ছিলো নবী পাঠনোর দ্বারা আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্য। (সূরা ছফ: ৯)


তৃতীয় কারণ :

রসূলুল্লাহ স.-এর সংশ্রবে তাদের  দ্বীনী জযবা বৃদ্ধি করা। নারী জাতি স্বভাবতই দ্বীনী  জযবা থেকে গাফেল। তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব কম থাকা সত্ত্বেও তারা অধিক সংখ্যায় জাহান্নামী হবে। (বুখারী: ২৯৮)


আর রসূলুল্লাহ স.-এর সংশ্রব ছিলো এমনই বরকতময়, সেখানে থেকে মনে হতো যেন জান্নাত-জাহান্নাম দেখছি। (মুসলিম শরীফ:بَابُ فَضْلِ دَوَامِ الذِّكْرِوَالْفِكْرِ)


মহিলাদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদেরকে দ্বীনের ওপর উঠানো কষ্টসাধ্য ছিলো। কিন্তু মসজিদে এলে একই সাথে সবাইকে পাওয়া যেতো, তাদেরকে প্রয়োজনীয় নছিহত করা যেতো।  এর একটি বড় প্রমাণ হলো: মহিলাদের দ্বীন শিক্ষার নিমিত্তে তাদের জন্য রসূলুল্লাহ স. একটি স্বতন্ত্র মজলিস কায়েম করেছিলেন। (বুখারী: ৬৮১২)


সুতরাং “আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিও না” রসূলুল্লাহ স.-এর এই বাণীর মূল উদ্দেশ্য এমন কিছু হতে পারে যা স্পষ্ট করে উক্ত হাদীস সমূহে বর্ণনা করা হয়নি। কিন্তু এখন নবীও বেঁচে নেই আর নববী শিক্ষার কেন্দ্রও মসজিদ নয়; বরং যারা জামাআতে যায় তারা নামাযের জন্যই যায়।


পূর্বোক্ত কারণগুলোর পাশাপাশি  তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতি আর পরবর্তী পরিবেশ পরিবেশ-পরিস্থিতির বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন-


এক. রসূলুল্লাহ স.-এর যুগে নারী-পুরুষের ঈমানী চেতনা অত্যন্ত দৃঢ় ছিলো। সে যুগে মহিলাদের পর্দা ও সতীত্ব রক্ষার গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম।আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের চিন্তা তাঁদের  মজ্জাগত হয়ে গিয়েছিলো।সামাজিক অবস্থাও এমন ছিলো যে, অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছিলো খুবই জোরদার। কারও মধ্যে অন্যায়ের বাসনা সৃষ্টি হলেও সামাজিক প্রতিরোধের মুখে তা বাস্তবায়নের সাহস হতো না। অগত্যা গোপনে বা নির্জনে কারও দ্বারা কোন অন্যায় ঘটে গেলেও পরকালের শাস্তির ভয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর সামনে এসে নিজেকে অপরাধী সাব্যস্ত করে শাস্তি দাবি করতেন নিজেরাই। (বুখারী: ৫০১)

সামাজিক ও মানসিক এ অবস্থা আমাদের মাঝে বিদ্যমান আছে কি? হযরত আয়েশা রা.-এর মন্তব্য থেকেই বুঝা যায় যে, তাঁর জীবদ্দশাতেই সেই সোনালী  সমাজ বহুলাংশে বিদায় নিয়েছিলো। (বুখারী: ৮২৭)


তাহলে সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তনে কী করণীয় সে ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ তো আমাদের সামনে রয়েছেই।


দুই. নারীঘটিত যে কোন অঘটন প্রতিরোধে  রসূলুল্লাহ স. অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। যেমন, পুরুষদের সামনের কাতার আর নারীদের পেছনের কাতারকে উত্তম ঘোষণা দেয়া যেন নারী-পুরুষ একে অপর  থেকে বেশীদূরত্ব বজায় রাখতে উৎসাহী হয়। (মুসলিম: ৮৬৯)


রসূলুল্লাহ স. ও পুরুষ মুসল্লীরা সালাম ফিরিয়ে আপন জায়গায় বসে  থাকতেন, মহিলারা আগে বের হয়ে ঘরে পৌঁছে যেতেন। এরপর রসূলুল্লাহ স. ও পুরুষ মুসল্লীরা বের হতেন যেন মসজিদের দরজা বা রাস্তায় পরস্পরের সাথে সাক্ষাত বা বাক্যবিনিময় না ঘটে। (বুখারী: ৮২৪)


মসজিদে আসার ক্ষেত্রে খুশবুবিহীন সাধারণ কাপড়ে আসার প্রতি তাকীদ দেয়া যেন তার প্রতি পরপুরুষ আকৃষ্ট না হয়। (আবু দাউদ: ৫৬৫)


রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক মহিলাদের জন্য ভিন্ন দরজা নির্ধারণ করার বাসনা প্রকাশ এবং হযরত ইবনে উমার রা. কর্তৃক মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ না করা (আবু দাউদ: ৫৭১)


এ সব প্রতিরোধ ব্যবস্থার কিয়দাশংও এখন খুঁজে পাওয়া যাবে কি?

উপরোল্লিখিত কারণগুলোর প্রতি যদি আমরা একে  একে লক্ষ্য করি, তাহলে আমাদের সামনে  দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এ যুগে নারীদেরকে মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায আদায়ের প্রতি উৎসাহ দান কোনক্রমেই দ্বীনের স্বার্থে হতে পারে না। নারী উন্নয়নের শ্লোগানে মুখরিত আমাদের সমাজে বেহায়াপনা মহামারীর রূপ ধারণ করেছে এবং মহিলাদেরকে পর্দার আড়ালে রাখতে চাইলে  তথাকথিত মানবাধিকারের পরিপন্থী হওয়ায় সুশীল সমাজের চক্ষুুশূল হতে হচ্ছে। এতসব প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও শুধু কয়েকটি হাদীসের শব্দ  দেখে যারা মহিলাদেরকে মসজিদমুখী করতে তৎপর আসলে তাদের  নিয়াত কী তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত আয়েশা রা.-এর মন্তব্য  থেকে তো এ ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর মৃত্যুর পরে সাহায়ে কিরামের যুগেই মহিলাদের অবস্থার যে পরিবর্তন হয়েছিলো তা যদি রসূলুল্লাহ স. নিজে দেখতেন, তাহলে মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন। সে যুগের মেয়েদের অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে আমাদের যুগের মেয়েদের অবস্থা দেখলে রসূলুল্লাহ স.-এর ফায়সালা কীহতো তা  বুঝতে কারও বাকী থাকার কথা নয়। বাড়তি সওয়াবের প্রতি আগ্রহী হয়ে কেউ মসজিদের জামাআতে যেতে চাইলে  তার উচিত পূর্ব বর্ণিত উম্মে হুমাইদের আমল অনুসরণ করে অন্দর মহলে নামায আদায় করা। কেননা, পুরুষের জন্য জামাআতে নামাযের যে পরিমাণ সওয়াবের অঙ্গীকার রয়েছে হযরত ইবনে উমার রা. থেকে  বর্ণিত হাদীসে নারীদের একাকী নামাযে সে পরিমাণ সওয়াবের অঙ্গীকার রয়েছে।


হাদীসটি নিম্নরূপ :

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ يُوسُفَ، ثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ سَلَّامٍ، ثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، أَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنِي أَبُو عَبْدِ السَّلَامِ، حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «صَلَاةُ الْمَرْأَةِ وَحْدَهَا تَفْضُلُ صَلَاتَهَا فِي الْجَمِيعِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ دَرَجَةً» ( رواه ابو نعيم فى تاريخ اصفهان فى ترجمة عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ سَلَّامٍ)

হযরত ইবনে উমার রা. বলেন: আমি রসূলুল্লাহ স. কে বলতে শুনেছি যে, মহিলাদের একাকী নামায তার জামাআতের নামাযের তুলনায় পঁচিশ গুণ বৃদ্ধি পায়। (তারীখে আসফাহান: আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন সাল্লামের জীবনী বর্ণনায়, রাবী নম্বর- ২৬৭)


হাদীসটির স্তর : হাসান। এ হাদীসের রাবীগণের মধ্যে  আহমাদ বিন ইবরাহীম, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ এবং আবু আব্দুস সালাম ব্যতীত  সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর আহমাদ বিন ইবরাহীম কে ইমাম জাহাবী রহ. الإِمَامُ، المُحَدِّثُ،  “ইমাম ও মুহাদ্দিস” বলে  পরিচয় দিয়েছেন।(সিয়ারু আলামিন নুবালা: তবকা- ২০, রাবী নম্বর- ১৮) 


আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদকে হাফেজ আবু নুআইম  শায়খ বলে প্রশংসা করেছেন। তবে এটাও বলেছেন যে, فِيهِ لِينٌ “তাঁর মধ্যে কিছু শিথিলতা আছে”। (তারীখে আসফাহান: রাবী নম্বর- ২৬৭)


আবু আব্দুস  সালামের ব্যাপারে হাফেজ ইবনে  হাজার রহ. বলেন:

وثقه ابن حبان و ابن شاهين

“ইবনে হিব্বান এবং ইবনে শাহীন তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন”। (তাহজীবুত তাহজীব: সালেহ বিন রুস্তুমের জীবনী আলোচনায়)


বাকিয়্যাহ বিন ওয়ালীদ মুসলিমের রাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ব্যাপারে তাদলীসের  অভিযোগ আছে। কিন্তু এ হাদীসে তিনি স্পষ্ট حَدَّثَنِي শব্দ ব্যবহার করেছেন। সুতরাং তাঁর তাদলীস এখানে ক্ষতিকর নয়। রাবীগণের কারও কারও মধ্যে যৎসামান্য দুর্বলতা থাকলেও হাদীসটির বিষয়বস্তু সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত। কারণ, এ হাদীসে মহিলাদের একাকী নামাযকে জামাআতের নামাযের তুলনায় পঁচিশ গুণ উত্তম বলা হয়েছে। আর একাধিক সহীহ হাদীসে মহিলাদের একাকী নামাযকে জামাআতের নামাযের তুলনায়  উত্তম বলা হয়েছে। সুতরাং এহাদীস দ্বারা সহীহ হাদীসে  বর্ণিত উত্তমতার সামান্য ব্যাখ্যা  হয়েছে মাত্র।


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত  হয় যে, পুরুষরা জামাআতে যে ছওয়াব পায় নারীগণ সে সওয়াব পেতে  চাইলে তার মাধ্যম হলো একাকী নামায আদায় করা। কারণ, পুরুষের জামাআতের সওয়াব আল্লাহ  তাআলা মহিলাদের একাকী নামাযে রেখেছেন।


মহিলাদের জামাআতে নামায আদায়ের দলীল হিসেবে অনেকে হজ্জ-উমরা বা  বাইতুল্লাহর নামাযের উদাহরণ পেশ করে বলেন যে, সেখানে যখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের উলামায়ে কিরাম এবং মহামনীষীদের সামনে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে নির্বিঘ্নে নামায আদায় করছে; তখন আমাদের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মহিলারা কেন পারবে না? এ উক্তির জবাবে নিম্নে দুটি হাদীস পেশ করা হচ্ছে যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হজ্জ-উমারা এবং মসজিদে হারাম বা মসজিদে নববীর বিষয়টি অন্যান্য মসজিদ থেকে ভিন্ন।

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بن عَبْدِ الْعَزِيزِ، حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بن الْمِنْهَالِ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بن سَلَمَةَ عَنْ سَلَمَةَ بن كُهَيْلٍ عَنْ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ:مَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ فِي مَكَانٍ خَيْرٌ لَهَا مِنْ بَيْتِهَا إِلا أَنْ يَكُونَ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ أَوْ مَسْجِدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلا امْرَأَةً تَخْرُجُ فِي مَنْقَلَيْهَا”يَعْنِي خُفَّيْهَا.) المعجم الكبير للطبرانى: خُطْبَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَمِنْ كَلَامِهِ :بَابٌ-۱۱ والبيهقى فى بَابُ خَيْرِ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ بُيُوتِهِنَّ)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন: মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর পরে মহিলাদের নামাযের সর্বোত্তম জায়গা হলো তার নিজ গৃহ। তবে (বৃদ্ধা মহিলা) নিকটবর্তী কোন স্থানে সাধারণ কাপড়ে নামাযের জন্য যেতে পারে। (তবারানী কাবীর: ৯৪৭২, সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী: ৫৩৬৪)


হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। আলী বিন আব্দুল আযীয ব্যতীত  এই হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর আলী বিন আব্দুল আযীয আল বাগাবী অত্যন্ত প্রসিদ্ধ হাফেজে হাদীস। (সিয়ারু আলামিননুবালা: তবকা- ১৫, রাবী নম্বর- ১৬৪)


আল্লামা হাইসামী বলেন: হাদীসটি ইমাম তবারানী তাঁর মু’জামে কাবীরে  বর্ণনা করেছেন এবং এর রাবীগণ সবাই-ই সহীহ হাদীসের  রাবী। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২১১৩)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বের যে কোন মসজিদের চেয়ে মহিলাদের নিজ গৃহের নির্জন কামরার  নামায উত্তম। তবে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর নামায এ নিয়মের বাইরে। ওই দুই মসজিদের তুলনায় নির্জন কামরার নামায বেশী উত্তম নয়।

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بن إِبْرَاهِيمَ الدَّبَرِيُّ، عَنْ عَبْدِ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَبَّ هَذِهِ الدَّارِ يَحْلِفُ فَيَبْلُغُ بِالْيَمِينِ”مَا مِنْ مُصَلَّى الْمَرْأَةِ خَيْرٌ لَهَا مِنْ بَيْتِهَا إِلا فِي حَجٍّ أَوْ عَمْرَةٍ إِلا امْرَأَةً يَئِسَتْ مِنَ الْبُعُولَةِ فَهِيَ فِي مَنْقَلَيْهَا”، قُلْتُ: مَا مَنْقَلَيْهَا؟ قَالَ:”امْرَأَةٌ عَجُوزٌ قَدْ تَقَارَبَ خَطْوُهَا”..) المعجم الكبير للطبرانى: خُطْبَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَمِنْ كَلَامِهِ :بَابٌ-۱۱)

হযরত আবু আমর শাইবানী বলেন: আমি এই ঘরের মালিক (আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.)-এর নিকটে শুনেছি, তিনি মজবুত শপথ করে বলেন: হজ্ব বা উমরা ব্যতীত মহিলাদের  নামাযের সর্বোত্তম স্থান হলো তার নিজ গৃহ। তবে স্বামী গ্রহণের ভাবনা থেকে নিরাশ (অতিবৃদ্ধা) মহিলা সাধারণ কাপড়ে যেতে পারে। আবু আমর বলেন: আমি জিজ্ঞেস করলাম: مَنْقَلَيْهَا শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য কী? তিনি বললেন: বয়োবৃদ্ধা মহিলা, যার চলার কদম ছোট হয়ে  গেছে। (তবারানী কাবীর: ৯৩৬১)


হাদীসটির স্তর : ইসহাক বিন ইবরাহীম দাবারী ব্যতীত  এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ইসহাক বিন ইবরাহীমের বর্ণনাকে আল্লামা উকাইলী সহীহ বলেছেন। আল্লামা আবু আওয়ানা তাঁর সহীহ কিতাবে ইসহাকের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। ইমাম দারাকুতনী তাঁকে সত্যনিষ্ঠ বলেছেন। (লিসানুল মীযান: ৯৯৫)


আল্লামা হাইসামী বলেন: হাদীসটি ইমাম তবারানী তাঁর মু’জামে কাবীরে বর্ণনা করেছেন  এবং এর রাবীগণ সবাই-ই সহীহ হাদীসের রাবী। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২১১৪)


সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বের যে কোন মসজিদের চেয়ে মহিলাদের নিজ গৃহের নির্জন কামরার  নামায উত্তম। তবে হজ্ব এবং উমরার সময়ে মক্কা-মদীনার নামায এ নিয়মের বাইরে। ওই দুই সময় ব্যতীত সব সময়ে মহিলাদের জন্য নির্জন কামরার নামায বেশী উত্তম হবে।


এ সহীহ হাদীস দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হজ্ব-উমরার সময় বা অন্য সময়ে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে মহিলাদের জামাআতের নামায উত্তম হলেও সে হুকুম উক্ত বিষয়ের সাথেই সম্পর্কিত; তার ওপর তুলনা করে অন্য কোথাও এ হুকুম জারী করা যাবে না।


কোন মন্তব্য নেই:

ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png