LIVE
Loading latest headlines...

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

জুমু’আর নামাযে নারীদের অংশগ্রহণ ও সাহাবায়ে কেরামের পদক্ষেপ -ইসলামিক আলোচনা-৭ম পর্ব

 


জামাতের বিধান নারীদের জন্য নয় :

——————————————————-

ফরয নামায জামাতের সহিত আদায় করা পুরষদের জন্য ওয়াজিবের পর্যায়ের। অসংখ্য হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত। কিন্তু মসজিদের জামাতে নারীদের অংশগ্রহণ ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, নফল কোনোটাই নয়। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে এটাই স্পষ্ট প্রমাণিত। নমুনাস্বরূপ কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত হলো।

১.

যেসব পুরুষ জরুরতবিহীন মসজিদে না এসে ঘরে নামায পড়ে তাদের বিষয়ে রাগান্বিত হয়ে রাসূল (সা.) ধমকিস্বরূপ বলেন, “যদি ঘরগুলোতে নারী ও শিশুসন্তান না থাকত তাহলে আমি এশার নামাযের ইমামতির দায়িত্ব অন্যজনকে দিয়ে কিছু যুবক দলকে দিয়ে ঘরের সব কিছু জ্বালিয়ে দিতাম।” (মুসনাদে আহমাদ, হা. ৮৭৯৬, মুসনাদে আবী দাউদ ত্বায়ালিসি, হা. ২৪৪৩)


উক্ত হাদীসে নারী ও শিশু না থাকলে ঘর জ্বালানোর কথা এ জন্যই বলা হয়েছে যেহেতু মহিলা ও শিশুর ওপর মসজিদের জামাত নেই, তাই এখানে বালেগ পুরুষদেরই উক্ত ধমকি দেওয়া হয়েছে। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে মসজিদের জামাতের বিধান নারীদের জন্য নয়।


২.

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,  “ওই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন! আমার ইচ্ছা হয় কাউকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ প্রদান করি। আর কাউকে আযান দেওয়ার হুকুম করি। অতঃপর একজনকে ইমামতি করার আদেশ করে স্বয়ং নিজে গিয়ে সেসব পুরুষের ঘর জ্বালিয়ে দিই, যারা জামাতে অংশগ্রহণ করেনি।” (বোখারী হা. ৭২২৪)


এই হাদীসে শুধুমাত্র পুরুষদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ধমকি দেওয়া হয়েছে। বোঝা গেল নারীদের জামাতে অংশগ্রহণ করার বিধান শরীয়তে নেই।


৩.

ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত আরেক হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, নারীদের জামাতে কোনো কল্যাণ নেই।……কারণ তারা কোনো স্থানে সমবেত হলে স্ব ভাবসুলভ আলাপচারিতায় মত্ত হয়। (আল মুজামুল কাবীর, হা. ১৩২২৮)


মুসলমান মাত্রই এ কথা জানে যে মসিজদ ইবাদতের জায়গা। আলাপচারিতার স্থান নয়। আর এটাও বাস্তব সত্য যে, নারীদের স্বভাবসুলভ ব্যাপার হলো, তারা কোনো স্থানে একত্রিত হলে পরস্প রে বিভিন্ন আলাপচারিতায় মগ্ন হয়, যা মসজিদের পবিত্রতার পরিপন্থী কোনো সন্দেহ নেই।

.

এ কারণেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সমবেত হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই মর্মে ঘোষণা করেছেন। এর পরও কি দ্বীন ও সাওয়াবের দোহাই দিয়ে নারীদের  জামাতে অংশগ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, কল্যাণকর বলার অবকাশ আছে? নাকি সরলমনা মুসলিম নারীদের নামাযের নামে মসজিদে একত্রিত করে তাদের দ্বারা রাষ্ট্রবিরোধী এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করিয়ে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ধূলিস্যাৎ করে দেওয়াই কোনো কুচক্রী মহলের অভীষ্ট লক্ষ্য। দৈনিক খবরের কাগজে নজর বোলালেও এর সত্যতার প্রমাণ মেলে।


জুমু’আর নামাযে নারীদের অংশগ্রহণ :

—————————————————

নারীদের জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে আলাদা সুব্যবস্থা রাখার জন্য অনেকে নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। তারা মনে করে, এটা অনেক বড় সাওয়াব ও পুণ্যের কাজ। কথিত এই দ্বীনি কাজের জন্য তাদের মাতম চোখে পড়ার মতো।


কারো মাতমে প্রভাবিত না হয়ে আমাদের দেখতে হবে, বুঝতে হবে ইসলামী শরীয়ত নারীদের ওপর জুমু’আর নামায পড়ার বিধান রেখেছে কি না? হাদীসের বিশাল ভান্ডার অনুসন্ধান করে দেখা যায়, নারীদের ওপর জুমু’আ ওয়াজিব নয়। তাদের কোনো জুমু’আ নেই। এখানে কিছু হাদীস প্রদত্ত হলো।


১.

হযরত আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “জামাতে জুমু’আর নামায পড়া প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অকাট্য ওয়াজিব, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়। (সুনানে আবী দাউদ, হা. ১০৬৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা. ১০৬২)


ইমাম হাকেম (রহ.) বলেন, হাদীসটি ইমাম বোখারী ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হাফেয যাহাবি (রহ.)ও হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (আল মুস্তাদরাক-টীকাসহ-১/২৮৮)


২.

হযরত মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে তার ওপর জুমু’আ ফরয, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়।” (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা. ৫২০০)


হাদীসটির বিশুদ্ধতায় কোনো সন্দেহ নেই। (দেখুন, মা’রিফাতুস সুনানী ওয়াল আসার, হা. ৬৩৬৩)


সাহাবায়ে কেরামের পদক্ষেপ :

——————————————

সাহাবায়ে কেরামের যুগে কোনো নারী জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে চলে এলে তাঁরা তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করতেন? কী পদক্ষেপ নিতেন? নিম্নের বর্ণনাসমূহ দ্বারা বিষয়টি অনুধাবন করা যায়।

১.

হযরত আবু আমর শায়বানী (রহ.) থেকে বর্ণিত, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমু’আর দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা মসজিদ থেকে বের হয়ে ঘরে চলে যান। কারণ আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য নামাযের উত্তম স্থান। (আল মু’জামুল কাবীর, হা. ৯৪৭৫)

আল্লামা হাইসামী (রহ.) বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। (মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৫)

২.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) জুমু’আর নামায পড়ার জন্য কোনো নারী মসজিদে এলে তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন এবং তাদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। (উমদাতুল কারী ৬/১৫৭)


৩.

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি জুমু’আর দিন নারীদের পাথর মেরে মেরে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৭৬১৭)


উপর্যুক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে বোঝা গেল, সাহাবায়ে কেরাম নারীদের জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে ব্যবস্থা রাখা তো দূরের কথা, কেউ চলে এলে তাকে বারণ করতেন এবং বের করে দেওয়ার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। উল্লেখ্য, তাঁদের এই পদক্ষেপ নারী জাতিকে অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আল্লাহর আজাব থেকে তাদের এবং মুসলিম উম্মাহকে বাঁচানোর জন্য ছিল। এই হলো ইসলামের সোনালি যুগের ঘটনা। যে যুগের লোকদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হওয়ার স্বীকৃতি স্বয়ং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের মোবারক যবানে দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর পর আজও সাহাবাদের আমল থেকে বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও অন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে।


কোন মন্তব্য নেই:

ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png