LIVE
Loading latest headlines...

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

কুরআন- হাদীসের আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমন ও জামাআতে নামায আদায়ের হুকুম- ইসলামিক আলোচনা-১২তম পর্ব

 


মহিলাদের মসজিদে যাওয়া জায়েয – ভুল ফতোয়া

÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

কুরআন- হাদীসের আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমন ও জামাআতে নামায আদায়ের হুকুমঃ

—————————————————————————————————————————

বর্তমান যুগে আমরা ফেৎনার মধ্যে বসবাস করছি। চারিদিকে শুধু ঈমান বিধংসী ষড়যন্ত্র। নেক সুরতে শয়তান আমাদেরকে ধোকা দিয়ে চলেছে। আমরা না বুঝে শয়তানের পাতা জালে আটকে যেয়ে ঈমান আমল সব বরবাদ করছি। যেটা সাওয়াবের কাজ না, সেটা নিজের পক্ষ থেকে সাওয়াবের কাজ বানিয়ে তার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছি।


এমনই একটা ফেৎনা হলো মহিলাদের নামাযের জন্য মসজিদে আর ঈদগাহে যাওয়া। তথাকথিত কিছু আহলে হাদীস, বিদয়াতী এবং নফসের পূজারী ব্যক্তিবর্গ মা-বোনদেরকে সাওয়াবের রঙ্গীন স্বপ্ন দেখিয়ে জুমুয়ার জামাআত, ঈদের জামাআতে শরীক হয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। মা-বোনরাও অধিক সাওয়াব অর্জনের আশায় গৃহকোণ ত্যাগ করে মসজিদে ঈদগাহে ছুটে যাচ্ছে। অথচ মহিলাদের উপর জুমুয়ার নামায বা ঈদের নামায কোনটিই ওয়াজিব না। তাহলে তারা কোন্‌ উদ্দেশ্যে এসব নামায আদায়ের জন্য মসজিদে ছুটে যাচ্ছেন? পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য মহিলাদের মসজিদে না যেয়ে ঘরে পড়ার মধ্যে বেশি সাওয়াব। সাওয়াবের যদি নিয়ত থাকত তাহলে তারা ঘরেই নামায আদায় করতেন। তাহলে কি উদ্দেশ্যে তাদেরকে ঘর থেকে বের করা হচ্ছে?


মহিলাদের জন্য নামায ঘরে পড়া উত্তম নাকি মসজিদে যেয়ে পড়া উত্তম। এ সম্পর্কে বিশদ জানার আগে জানতে হবে মহিলাদের উপর যে পর্দা করা ফরজ করা হয়েছে সে পর্দার হাকীকত কি? স্বরণ রাখা দরকার যে, কুরআনে পাকের ৭টি আয়াতে এবং নবিয়ে করিম (সাঃ) –এর অনেক সহীহ হাদীসে মহিলাদেরকে পর্দা পালন করার তাকীদ করা হয়েছে। সে সব আয়াত ও হাদীস পর্যালোচনা করলে বুঝে আসে যে, এখানে বিশেষভাবে খাছ পর্দার কথা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যতদূর সম্ভব মহিলাদের স্বীয় গৃহে অবস্থান, একান্ত অপারগতা ও ঠেকা ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। চাই সেটা নামাযের জন্য হোক বা দুনিয়াবী অন্য কোন কাজে হোক।


এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ উসুল মনে রাখা দরকার যে, ইসলাম যে সমস্ত কাজকে গোনাহে পতিত হওয়ার নিকটবর্তী কারণ বর্ণনা করে হারাম ঘোষণা করেছে সেটা চিরদিনই হারাম থাকবে। অবস্থার পরিবর্তনের কারণে তাতে কোন পরিবর্তন আসবে না। যেমন মহলাদের বেপর্দা থাকাকে গোনাহে পতিত হয়ার কারণ উল্লেখ করে পর্দা করা ফরজ এবং বেপর্দা থাকা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখন কোন মহিলা যদি কোন পীর সাহেবের সামনে এই বলে বেপর্দায় যায় যে, পীর সাহেব তো বুযুর্গ মানুষ, তার সামনে গেলে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে কি এই মহিলার বেপর্দায় যাওয়া জায়েয হবে? হবে না। কেননা এখানে বাস্তবে কেউ গোনাহে লিপ্ত হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় পর্দা করা ফরয।


পক্ষান্তরে যে সব জিনিসকে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার দুরবর্তী কারণ হিসেবে উল্লেখ করে হারাম বলা হয়েছে সেখানে ঐ কাজের দ্বারা যদি গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তা হারাম। আর যদি গোনাহে পতিত হওয়ার আশংকা না থাকে তাহলে তা হারাম নয়। অবস্থার পরিবর্তনের সাথে এ ধরণের জিনিসের হুকুম ও পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন মহিলাদের ঘরের বাইরে বের হওয়া বোরকা বা লম্বা চাদর পরিধান করে গোনাহে পতিত হওয়ার দুরবর্তী কারণ। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এর হুকুমও বদলাতে থাকবে। বোরকা পরিধান করে বা পর্দা সহকারে বাইরে বের হওয়া যদি কখনও ফেৎনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন বোরকা পরিধান করে বাইরে যাওয়াটাও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারটাও ঠিক এই মূলনীতির উপরে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। [1]


রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর যুগে কিছু সংখ্যক মহিলারা ওয়াক্তিয়া নামাযের জন্য মসজিদে হাজির হতেন। ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহেও যেতেন। কিন্তু সেদটা ছিল উত্তম যুগ। কোন ধরণের ফেৎনার আশংকা ছিল না। রাসূলে করিম (সাঃ) স্বশরীরে বিদ্যমান ছিলেন। ওহী অবতীর্ণ হচ্ছিল। নতুন নতুন আহকাম আসছিল। সকলেই নতুন মুসলমান ছিলেন। নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদির হুকুম আহকাম জানার প্রয়োজন ছিল। তার চেয়েও বড় পাওয়া ছিল রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর পিছনে নামায পড়ার সৌভাগ্য। হূযুর(সাঃ) স্বপ্নের তাবীর বলতেন, ইলমী আলোচনা করতেন। তাই মহিলাদেরও সে সব জায়গায় উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল। তবে পুরুষদের মত তাদের এই হাজির হওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল না। কেননা পুরুষের মত মহিলাদের জামাআতে নামায পড়া জরুরি না। জামাআতের সাথে নামায পড়লে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব। মসজিদে নববীতে নামায পড়লে প্রতি রাকাআতে এক হাজার রাকাআতের সাওয়াব।[2] এতদস্তত্বেও মহিলাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছিল বাড়ীতে নামায পড়ার জন্য।


রাসূলে আক্রাম(সাঃ) এর যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরামের যুগেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। হযরত উমর(রাযিঃ) তার খেলাফতের যুগে সাহাবায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকাহ(রাযিঃ) এই ঘোষণা সমর্থন করে বলেন, আজকের যুগে মহিলাদের যে অবস্থা এটা যদি রাসূরুল্লাহ(সাঃ) দেখতেন তাহলে তিনিও মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন।


এখানে স্বরণীয় যে,হযরত উমর(রাযিঃ) এবং হযরত আয়েশা(রাযিঃ)-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট সাহাবী দ্বারা রাসূলে কারীম(সাঃ)- এর বিরোধীতা করা বা তার হুকুমের খেলাফ করার কোন কল্পনাও করা যায় না। এতদস্বত্তেও তারা এই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এই জন্য যে, যে সব শর্তের সাথে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া জায়েয ছিল এখন সে সব শর্ত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মসজিদে যাওয়ার হুকুম আপনা আপনিই রহিত হয়ে গেছে। এখানে রাসূলে কারীম(সাঃ)-এর বিরোধীতা করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।


বস্তুত কোন যুগেই মহিলাদের মসজিদে যাওয়া পছন্দনীয় ছিল না। সব সময় তাদের বাড়ীতে থাকতে এবং গৃহকোণে নামায আদায় করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরজ। বিনা জরুরতে বাহিরে বের হলে পর্দার লংঘন হবে, ফেৎনা ছড়াবে, সে জন্য জামাআতের মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও তাদের জন্য মাফ করে দেয়া হয়েছে।


মহিলাদের নামায সংক্রান্ত অসংখ্য হাদীস রয়েছে যাতে তাদেরকে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে ঘরে নামায পড়তে বলা হয়েছে এবং মসজিদে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা প্রথমে সেসব হাদীসগুলি এখানে উল্লেখ করব। অতঃপর বিরুদ্ধ বাদীদের পেশকৃত হাদীস উল্লেখ করে তার বাস্তবতা পর্যালোচনার চেষ্টা করব।

মসজিদে না যাওয়া সম্পর্কিত হাদীসসমূহ

———————————————————

হাদিস ১

হযরত উম্মে হুমাইদ (রাযিঃ) একবার রাসূলে মাকবুল (সাঃ) –এর খিদমতে হাজির হয়ে আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথে নামায পড়ার আমার খুবই ইচ্ছে হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন আমি জানি, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে ভালবাস। কিন্তু মনে রেখ, বন্ধ ঘরে তোমার নামায পড়া খোলা ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর খোলা কামরার নামায বারান্দার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর বারান্দার নামায মহল্লার মসজিদে নামাযের চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদের নামায আমার মসজিদের (মসজিদে নববী) নামাযের চেয়ে উত্তম। এই এরশাদ শ্রবণের পর হযরত উম্মে হুমাইদ (রাযিঃ) স্বীয় ঘরের সবচেয়ে নির্জন কোণে বিশেষভাবে নামাযের জায়গা তৈরী করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই নামায পড়তে থাকেন।

— মুসনাদে আহমাদ, ছহীহ ইবনে খুযাইমা, ছহীহ ইবনে হিব্বান, সূত্র, তারগীবঃ ১-১৩৫


ইবনে খুযাইমা এই হাদীস বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, মহিলাদের স্বীয় ঘরে নামায পড়া মসজিদে নববীতে নামায পড়ার তুলনায় হাজার গুণে উত্তম। যদিও মসজিদে নববীতে নামায পড়া অন্য মসজিদে নামায পড়ার তুলনায় হাজার গুণে উত্তম। কিন্তু এই ফযীলত শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়।


হাদিস ২

হযরত উম্মে সালামা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে খোদা (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের বদ্ধ কামরার মধ্যে নামায পড়া খোলা কামরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর খোলা কামরার নামায বারান্দার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর ঘরের বারান্দার নামায মহল্লার মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম।

— তাবারানী শরীফ-সূত্র-কানযুল উম্মালঃ ৮-২৬৮


হাদিস ৩

হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) রাসূলে কারীম (সাঃ)- এর ইরশাদ নকল করেন যে, নারী জাতি গোপন থাকার জিনিস। তারা যখন বারী থেকে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মানুষের দৃষ্টিতে তুলে ধরে। পক্ষান্তরে মহিলারা স্বীয় বাড়ীর সবচেয়ে গোপন স্থানে আল্লাহ পাকের অধিক নৈকট্য লাভ করে থাকে।

— তাবারানী ফিল আওসাত-সূত্র-তারগীবঃ ১-১৩৬


হাদিস ৪

হযরত ইবনে সালামা (রাযিঃ) রাসূলে কারীম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ হলো তাদের বারীর গোপন কক্ষ।

— ছহীহ ইবনে খুযাইমা, মুসতাদরাকে হাকেম-সূত্র-তারগীব


হাদিস ৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের নামায তাদের ঘরে, বাড়ীর নামাযের চেয়ে উত্তম। আর ঘরের নির্জন কোণে নামায পড়া এটা ঘরে নামায পড়ার চেয়েও উত্তম।

— আবু দাউদ-ছহীহ ইবনে খুযাইমা-সূত্র তারগীবঃ ১-১৩৫


হাদিস ৬

রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মহিলারা গোপন থাকার বস্তু।যখন তারা বের হয় শয়তান তখন তাদের দিকে উকিঝুঁকি মারতে থাকে।

— জামে তিরমিযী, ছহীহ ইবনে খুযাইমা, ছহীহ ইবনে হিব্বান-তারগীবঃ১-২২৭


হাদিস ৭

হযরত আবুল আহওয়াস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাকের নিকট মহিলাদের ঐ নামায সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয় যা সে স্বীয় ঘরের সবচেয়ে নির্জন জায়গায় আদায় করে।

— ছহীহ ইবনে খুযাইমা, তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনযিরীঃ ১-১৩৬


হাদিস ৮

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) রাসূলে খোদা (সাঃ) এর ইরশাদ নকল করেন যে, তোমরা মহিলাদের মসজিদে আসতে বাধা দিওনা তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম।

— আবুদাউদতারগীব১-২২৬


হাদিস ৯

আবু আমর শায়বানী বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) কে দেখেছি তিনি জুমুআর দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন তোমরা বের হয়ে যাও। তোমাদের ঘরই তোমাদের জন্য উত্তম।

— তাবারানী-তারগীবঃ ১-১৩৬


হাদিস ১০

মহিলাদের জন্য জেহাদও নাই জুমুআও নাই এবং জানাযায় শরীক হওয়া নাই

— তাবারানী ফিছ ছগীর-কানযুল উম্মালঃ ৮-২৬৪


হাদিস ১১

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ مُوسَى بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ مُدْرِكٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ جَالِسٌ فِي الْمَسْجِدِ إِذْ دَخَلَتِ امْرَأَةٌ مِنْ مُزَيْنَةَ تَرْفُلُ فِي زِينَةٍ لَهَا فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ انْهَوْا نِسَاءَكُمْ عَنْ لُبْسِ الزِّينَةِ وَالتَّبَخْتُرِ فِي الْمَسْجِدِ فَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَمْ يُلْعَنُوا حَتَّى لَبِسَ نِسَاؤُهُمُ الزِّينَةَ وَتَبَخْتَرْنَ فِي الْمَسَاجِدِ ‏

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসা ছিলেন। ইতিমধ্যে মুযায়না গোত্রের এক নারী মোহনীয় সাজে সজ্জিত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের জৌলুসপূর্ণ ও চোখ ধাঁধানো পোশাক পরিহিত অবস্থায় মসজিদে আসতে নিষেধ করো। কেননা বনী ইসরাঈলের নারীরা জৌলুসপূর্ণ সাজে সজ্জিত হয়ে মসজিদে না আসা পর্যন্ত তাদের উপর অভিশাপ বর্ষিত হয়নি।

— ইবনে মাজাহ-হা/৪০০১


হাদিস ১২

রাসূলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে আসা থেকে বাধা দিওনা, কিন্তু তারা যেন সুগন্ধি ব্যবহার ছাড়া বের হয়।

— আবু দাউদঃ ১-৮৪, কানযুল উম্মালঃ ১৬-৪১৪


হাদিস ১৩

যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আস্তে চায় তখন যেন সুগন্ধির ধারে কাছেও না যায়।

— কানযুল উম্মালঃ ১৬-৪১৪


হাদিস ১৪

যখন কোন মহিলা সুগন্ধি লাগিয়ে বের হয় আর লোকেরা তার খুশবু পায় সেই মহিলা ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হয়।

— নাসাই-ইবনে খুযাইমা তারগীব তারহীব, আহকামুল কুরআন থানভীঃ ৩-৪৪৮


হাদিস ১৫

যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসতে চায় তখন সে যেন তার সুগন্ধি এমনভাবে ধুয়ে ফেলে যেমন (গুরুত্বের সাথে) সে ফরজ গোসল করে থাকে।

— কানযুল উম্মালঃ ১৬-৪১৪


এতক্ষণ যাবৎ আমরা যে সহীহ হাদীসগুলি উল্লেখ করলাম তার দ্বারা কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেলোঃ(ক) রাসূলে কারীম (সাঃ)- এর যুগে মহিলাদের জন্য জামাআতে শরীক হওয়া অত্যাবশ্যকীয় ছিল না। শুধুমাত্র অনুমতি ছিল। তবে সেটাও এমন অপছন্দের সাথে এবং শর্ত সাপেক্ষে যে তারা নিজেরাই মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ত।(খ) মহিলাদের মসজিদে যাওয়াটা ওয়াজিব, ফরয কিছুই ছিল না বরং মোবাহ ছিল। তাতে বাড়তি কোন সাওয়াব ছিল না।(গ) হযরত উম্মে হুমাইদ (রাযিঃ) হুযুরে পাক (সাঃ)-এর ইরশাদ উপর আমল করার জন্যই মসজিদ ছেড়ে সারা জীবন বাড়ীর নির্জন প্রকোষ্ঠে নামায আদায় করেছেন। এবং সে যুগের মহিলারা সাধারণভাবে এটাই করতেন।


আজ শত আফসুস ঐ সব নব্য পণ্ডিতদের উপর যারা মহিলাদেরকে মসজিদেযাওয়ারজন্য উৎসাহিত করে রাসূলে পাক (সাঃ)-এর ইচ্ছা এবং শিক্ষার বিরোধিতা করছে। আশ্চর্য্যের বিষয় হলো সেটাকে আবার সুন্নাত বলে চালিয়ে দিতে সচেষ্ট হচ্ছে। মহিলাদের জন্য মসজিদে যেয়ে নামায পপড়া যদি সুন্নাত হ্য় এবং তাতে সাওয়াবও বেশী হত তাহলে রাসূলে করিম (সাঃ) কেন বললেন যে, মসজিদে নামাযের চেয়ে ঘরের নামাযই উত্তম। তাহলে কি সুন্নাত তরক করার উপর সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে?


এখানে স্বরণ রাখা দরকার যে, রাসূলে মাকবুল (সাঃ)-এর যুগে মহিলাদের যে মসজিদে আসার অনুমতি ছিল সেটা কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে ছিল। যথা-

(ক) সেজে গুজে খুশবু লাগিয়ে আসতে পারবে না।

(খ) বাজনাদের অলংকার চুড়ি ইত্যাদি পরে আসতে পারবে না।

(গ) কাজকামের সাধারণ ময়লা কাপড় পড়ে আসতে হবে। যাতে কেউ আকৃষ্ট না হয়।

(ঘ) অংগভংগি এবং অহংকারী চালে চলতে পারবে না। সর্বোপরি তাদের এই বের হওয়া, ফেৎনার কারণ না হতে হবে।


উল্লেখ্য যে,রাসূলে আকরাম (সাঃ) – এর অফাতের কিছুদিন পর থেকেই যখন শর্তগুলি বিলুপ্ত হতে শুরু করল এবং মহিলাদের মধ্যে স্বাধীনচেতা ভাব দেখা দিল তখন মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার হুকুমও অটোমেটিকভাবে রহিত হয়ে গেল। হযরত উমর ফারুক (রাযিঃ) স্বিয় খেলাফতের যুগে যখন মহিলাদের এই অবস্থা দেখলেন এবং ফেৎনার আশংকাও দিন দিন বাড়তে লাগল তখন তিনি এবং বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম আদেশ জারি করলেন মহিলাদের মসজিদে না আসার। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন। কেননা তারা জানতেন যে, মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদেশের বিরোধিতা করা হয় নাই বরং তার ইচ্ছার উপরেই আমল করা হয়েছে।


ফতোয়ার বিখ্যাত গ্রন্থ বাদায়িউস সানায়িতে বলা হয়েছে,

যুবতী মহিলাদের মসজিদে যাওয়া মুবাহ নয় ঐ রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে যা হযরত উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি যুবতী মহিলাদেরকে বাইরে বের হতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কেননা মহিলাদের ঘর থেকে বের হওয়া ফেৎনা। আর ফেৎনা হারাম। সুতরাং যে জিনিস হারাম পর্যন্ত নিয়ে যায় সেটাও হারাম।

— বাদায়িউস সানায়ি ১/১৫৭


এই ফেৎনার কথা উপলব্ধি করেই হযরত আয়িশা (রাযিঃ) বলেছিলেন,

যদি রাসূলে খোদা (সাঃ) মহিলাদের এই (দুঃখজনক) অবস্থা দেখতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন। যেমন নাকি বনী ইসরাইলের মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল।


— বুখারী শরীফঃ ১-১২০

আল্লামা আইনী (রহঃ) বলেন, আর আজকের যুগ! খোদার পানাহ। আজকের যুগে মহিলারা যে বিদ’আত আর নিষিদ্ধ জিনিস অবলম্বন করছে, পোষাক পরিচ্ছদ আর রূপচর্চায় তারা যে নিত্যনতুন ফ্যাশন আবিষ্কার করছে, বিশেষ করে মিশরের মহিলারা। যদি হযরত আয়েশা (রাযিঃ) এই দৃশ্য দেখতেন তাহলে আরো কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন। এর পরে আল্লামা আইনী (রহঃ) বলেন, হযরত আয়েশা (রাযিঃ) উক্ত মন্তব্য তো রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর ইন্তেকালের কিছুদিন পরের মহিলাদের সম্বন্ধে। অথচ আজকের যুগের মহিলাদের উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সেকালে ছিল না। তাহলে এ অবস্থায় তিনি কি মন্তব্য করতেন? [3]


আল্লামা আইনী (রহঃ) হিজরী নবম শতাব্দীর মহিলাদের সম্বন্ধে এই কথা বর্ণনা করেছেন। তাহলে চিন্তা করুন আজ হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর এই সূচনা লগ্নে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা আর উলংগপনার দিকে ছুটে চলেছে, বেপর্দা আর বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন ছেলেদের পোষাক পরছে, বব কাটিং করছে, পেট পিঠ খুলে পার্কে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে, সমানাধিকার শ্লোগান কুদ্রতী ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে ঠিক সেই মুহূর্তে এই ফেৎনা ফাসাদের মধ্যে অবলা মা-বোনদেরকে সাওয়াবের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে মদজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার অপচেষ্টা ইসলামের চিহ্নিত শত্রুদের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ দলিল দেয়া হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগের মহিলাদের দ্বারা। তাহলে সেই যুগের মহিলাদের মত আপনি কি এই যুগের মহিলাদের জন্য এই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে, তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দৃষ্টি অবনত রেখে, খুশবু পাউডার না লাগিয়ে, সাধারণ পোষাক পরিধান করে, শয়তান বদমাশদের কুদৃষ্টি এড়িয়ে, পুরুষের জটলার মধ্যে না যেয়ে, সর্বোপরি কোন ফেৎনার কারণ না হয়ে মসজিদে বা ঈদগাহে আসবে? তাছারা এই যুগের পুরুষদের সম্বন্ধেও কি আপনি এই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে, তারাও পুরাপুরি পবিত্রতা বজায় রাখতে পারবে। ফেৎনার মধ্যে পতিত হবে না!!


কোন মন্তব্য নেই:

ফটো গ্যালারী

1/6
ওহুদ যুদ্ধ - হযরত মহাম্মদ (সা:) এর বিপ্লবী জীবন
2/6
মুসলিম নারীর বিধান
3/6
ইসলামি অর্থনীতিতে উপার্জন ও ব্যয়ের নীতিমালা
4 / 6
ইসলামীক জিজ্ঞাসাঃ লাঠি হাতে নিয়ে জুমার খুতবা দেয়া কি সুন্নত?
5/6
মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা
6/6
উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব

Islam-icon Profile.png